বিদেশে যেমন গোয়েন্দা বলতেই শার্লক হোমস, তেমনি বাংলায় ব্যোমকেশ-ফেলু। কিন্তু বিদেশে আগাথা ক্রিস্টির মিস মার্পেল থাকলেও বাংলায় সেই অর্থে ম্যাচিওর নারী গোয়েন্দা আছে কি ? সেই অভাব পূরণ করতে হাজির মনোজ সেনের 'রহস্য-সন্ধানী দময়ন্তী'।
প্রায় ৪৫ বছর আগে 'রহস্য-সন্ধানী দময়ন্তী' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে 'রোমাঞ্চ' পত্রিকার পাতায়। মনোজ সেনের স্বাদু কলমে এখনো অমলিন দময়ন্তীর রহস্য সন্ধান ! হারিয়ে যাওয়া সেই রহস্য-সন্ধানীর উপন্যাসগুলিকে একাধিক খন্ডে হাজির করতে চলেছে বুক ফার্ম। প্রকাশিত হল রহস্য-সন্ধানী দময়ন্তী সমগ্র ১। থাকছে টানটান ছয়টি ডিটেকটিভ উপন্যাস।
মনোজ সেন-এর জন্ম ১৯৪০, বেলেঘাটায়। পড়াশোনা শুরু স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। সেখান থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স। অতঃপর বি ই কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিই পাশ করে চাকরি জীবনের শুরু। প্রথম কাজ ভারী নির্মাণ সংস্থা হেড রাইটসনে, শেষ কাজ টার্নকী ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ায় ডিরেক্টর পদে। ১৯৯৭ থেকে অবসর জীবন, মাঝে মাঝে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি।
১৯৭২ সালে প্রথম সাহিত্য পত্রিকা 'রোমাঞ্চ'-তে গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর টানা কুড়ি বছর (১৯৭২-১৯৯২) 'রোমাঞ্চ' পত্রিকায় রহস্য, অলৌকিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, রূপকথা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় হাজার দেড়েক পাতা ছোটো ও বড়োদের উপযোগী কাহিনি লিখেছেন। ১৯৯২ সালে 'রোমাঞ্চ' পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দশ বছর লেখা বন্ধ ছিল। অনিশ দেব আবার লেখা শুরু করান ২০০১ সালে। 'রোমাঞ্চ' ছাড়া লিখেছেন 'সাপ্তাহিক বর্তমান', 'পরমা' ইত্যাদি পত্রিকায়। মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র দময়ন্তী দত্ত গুপ্ত ও খুদে গোয়েন্দা সাগর রায় চৌধুরী-কে নিয়ে লিখেছেন অনেক কাহিনি।
সাহিত্যের অনুপ্রেরণা আগাথা ক্রিস্টি, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ঘোর নাস্তিক হলেও ইতিহাসের সন্ধানে পড়তে ভালোবাসেন ধর্ম সংক্রান্ত বই। এককালে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলের মতো সব খেলাতেই ছিলেন পারদর্শী রসিক এই মানুষটি ভালোবাসেন ক্লাসিক গান, ভ্রমণ ও আড্ডা। তাঁর উল্লেখযোগ্য অধুনা-প্রকাশিত কিছু বই হল 'এবং কালরাত্রি', 'কালসন্ধ্যা', 'রহস্যসন্ধানী দময়ন্তী সিরিজ' প্রভৃতি।
একটি ছোটোগল্প (সরল অঙ্কের ব্যাপার) এবং পাঁচটি বড়োগল্প (নকল হিরে, রাজমহিষীর রহস্য, পর্বতো বহ্নিমান, সূর্যগ্রহণ এবং চরৈবেতি) নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সংকলন। প্রায় চার দশক আগে লেখা হলেও লেখকের বুদ্ধিদীপ্ত লেখনী ও রসবোধের জন্যই এগুলো পড়তে একটুও খারাপ লাগে না। তবে হোমোফোবিয়া, অত্যধিক চরিত্র, অকারণে দীর্ঘায়িত কথন, গল্পকে জটিল করতে-করতে শেষে দুম করে গর্ডিয়ান নট কাটার মতো করে তা শেষ করা— এগুলো খারাপ লাগে আর কি। সুযোগ পেলে পড়তে পারেন। প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ঘরোয়া রহস্যভেদীর কীর্তিকলাপের এই বিবরণ উপভোগ করবেন হয়তো। আমার মন্দ লাগেনি। বইটি অত্যন্ত সুমুদ্রিত। অন্তত একটি করে অলংকরণ থাকলে আরও ভালো লাগত।
৩.৫/৫ প্রথম যখন এই নারী রহস্যসন্ধানীর নাম শুনি তখন থেকেই পড়ার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো। গোয়েন্দা গল্প পড়তে আমার এমনিতেই বেশ ভালো লাগে। আর নারী গোয়েন্দাদের প্রতি সহজাত একটা ভালোলাগা কাজ করে। মিতিন মাসি হোক বা গার্গী, কিংবা দ্বীপকাকুর এ্যাসিস্ট্যান্ট ঝিনুক সবাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাই নতুন কোনো নারী গোয়েন্দার খোঁজ পেলেই পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি। কাল তাই বইটা পেয়ে আর দেরী করিনি।
লেখনী বেশ ভালো। পড়তেও ভালো লাগে। কিন্তু রহস্যগুলি ঠিক জমেও যেন জমলো না। প্রথম গল্পটা খাপছাড়া লেগেছে। হয়তো এই চরিত্রটি নির্মাণের সেটি প্রথম প্রচেষ্টা বলেই। তাই সেটি নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই।
বাকি পাঁচটা উপন্যাস বা উপন্যাসিকা বেশ ভালো আমার মতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটু বেশী বেশী গোয়েন্দা গল্প পড়ার দরুণই হোক বা গোয়েন্দা গল্পের প্লট ঘুরেফিরে সব জায়গায় কাছাকাছি হওয়ার কারণেই হোক প্রতিটা উপন্যাসের রহস্য আসলে কি নিয়ে দময়ন্তীর আগে সেটা আমিই পড়তে গিয়ে ধরে ফেলেছিলাম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধী কে হতে পারে সেটাও আগেই বুঝতে পেরে গেছিলাম। ঠিক এই কারণেই উপন্যাসগুলোর লেখা ঝরঝরে হওয়া স্বত্ত্বেও ঠিক তৃপ্তি পাওয়া গেলো না। গোয়েন্দা গল্পে গোয়েন্দার আগে যদি পাঠকই বুঝে যায় অপরাধী কে তবে আর মজা থাকে কই?
শুধু 'পর্বতো বহ্নিমান' গল্পের প্লটটা মোটামুটি ইউনিক লেগেছে। এর আগে এরকম থিম নিয়ে গোয়েন্দা গল্প পড়িনি। রহস্যের পিছনের কারণটা বেশ চমকপ্রদই ছিলো। যদিও অপরাধী কে সেটা আগেই বুঝা হয়ে গেছিলো।
যাইহোক, সব মিলিয়ে বলবো কেউ গোয়েন্দা গল্প পড়ে অভ্যস্ত হলে এই গল্পগুলি নেহাৎই সাদামাটাই লাগবে। তবে লেখকের লেখার জোরে পড়তে মোটেও খারাপ লাগবে না। বরং এক বসায় পড়ার মত বই।
চার তারা দিতে গিয়েও দিলাম না। যদি রহস্যের ধরণ বা অপরাধী কে বুঝতে গিয়ে নাকানিচুবানি খেতাম তবে হয়তো দিয়ে দিতাম। তাই একটি তারার খণ্ডাংশ রেখে দিলুম।
It's fantastic, real gem in the detective fiction. I wonder when will more people take interest to this. The writing style is very matured and humorous. Plots were unique. Fantastic who and why done it scenario. Monoj Sen has earned his respect. And I am really glad to discover him as a crime fiction writer.
অনেক দিন ধরে তাকেই পড়ে ছিল, তাই অবশেষে রহস্য সন্ধানী দময়ন্তী সমগ্র ১ তুলে নিলাম, আর একদমই হতাশ হইনি। ছয়টি উপন্যাস এর এই সংকলনে আছেন দময়ন্তী দত্তগুপ্ত, একজন বিবাহিত ইতিহাসের শিক্ষিকা, যিনি নিজেকে গোয়েন্দা বলতে চান না; তিনি নিজেকে বলেন “রহস্য সন্ধানী”। প্রতিটি গল্পেই তিনি ভিন্ন ধরনের রহস্য সমাধান করেন, আর এখানে জোর দেওয়া হয়েছে খাঁটি রহস্যভেদে, not action or adventure-heavy tropes. সবগুলো গল্পই ভালো লেগেছে, যদিও এক–দুটি একটু মূল প্লট থেকে সরে গেছে বলে মনে হয়েছে। রহস্য আর হালকা থ্রিলার পছন্দ হলে এই সিরিজটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত পাঁচটি খণ্ড বেরিয়েছে, আর আমি বাকিগুলো নিশ্চই পড়বো।