তন্ত্রসিদ্ধ সাধকরা দশমহাবিদ্যার যে দেবীদের সাধনা করেন, তাদের মধ্যে সপ্তম 'মা ধূমাবতী'। ভয়ংকর যার ক্ষিদে, শ্মশানে বাস, কাকবাহনা বিধবাবেশী কিন্তু বীভৎস তার রূপ! প্রতিশোধের স্পৃহায় তার আরাধনা করলে আয়ত্ব করা যায় উচাটন মারণবিদ্যা৷
কলকাতার সূরা ব্যবসায়ী কুমারেশ ও মহীতোষ সাউয়ের একান্নবর্তী পরিবারটি সুখী যে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বংশের ওপর রয়েছে কালো ছায়া, শেষ বয়সে সকলে উন্মাদ হয়ে যায়।
কুমারেশ সাউ এক সন্ধ্যায় স্বপ্নে দেখলেন গলা কাটা একটি মেয়ে আর তার পাশে সাদা থান করা এক নারীমূর্তি, শরীরে কেবল হাড়, সর্বগ্রাসী তার চোখ! স্বপ্ন, নাকি সত্যি? জেগে জেগে কি মানুষ স্বপ্ন দেখে? কুমারেশ কেমন জানি রজনীগন্ধার ঘ্রাণ পাচ্ছেন চারপাশে, যেমনটা মৃত্যুর আগে পেতেন তার পূর্বপুরুষরা।
খবর পেয়ে এলেন গ্রামের বৃদ্ধ কবিরাজ রামচরণ মুখুটি। দেখেই রায় দিলেন, দেবীর আছর পড়েছে। শত বছর আগে দেবীকে পাপাচারে ডেকেছিল কেউ, সেই দেবী জেগে উঠেছেন আবারও। মুক্তির উপায় একটাই, পুরনো এক পুঁথি লুকোনো আছে পরেশের বাড়ির কোথাও, খুঁজে বের করতে হবে তা। এক সাধক আসবেন পরিত্রাণের জন্য, তিনিই পারবেন দেবী ধূমাবতীকে ক্ষান্ত করতে।
তন্ত্রসাধনা ও দশ মহাবিদ্যা নিয়ে পড়েছিলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায়। এবার লেখক মনীষ মুখোপাধ্যায় এর কলমে পেলাম 'ধূমাবতীর মন্দির'। বিভূতিভূষণ জোর দিয়েছিলেন কামনা ও প্রলোভনের দেবী ভৈরবীর ওপর, মনীষ বেছে নিলেন অলক্ষ্মী ধূমাবতীকে।
দেবী ধূমাবতীর ভয়ংকর রূপের পাশাপাশি, একটি কোমলস্বভাবও রয়েছে। শত্রুনাশের উদ্দেশ্যে তিনি পূজিত, অকল্যানের জন্য তাকে ব্যবহার করলে যেমন ভয়ংকরী তিনি, সর্বত্যাগী শুদ্ধাচারীর প্রতি তেমনই দয়াশীল। ধূমাবতীর এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করেই লেখক গল্প সাজিয়েছেন যথাযথভাবে।
লেখকের লেখা অন্য কোন বই পড়া হয়নি এর আগে। বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেন থেকে শুরু করে তন্ত্রমন্ত্র এবং ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে লেখা গল্পটি সুখপাঠ্য সন্দেহ নেই। প্লট খুব শক্তিশালী না হলেও, তার গল্প বলার ধরণ বেশ ভালো লেগেছে। যদিও ভৌতিক আবহ ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কখনো কখনো মনে হচ্ছিলো গতানুগতিক ভৌতিক সিনেমার দৃশ্যের বর্ণনা পড়ছি। পরিত্রাতা শঙখশুভ্র মূল চরিত্র হলেও, গল্পের মধ্যখানে এসে সেভাবে জায়গা করে নিতে পারলো না মনে হলো।
'ধূমাবতীর মন্দির' এর প্রচ্ছদটি চমৎকার, যদিও নামটা ঠিক ফুটে উঠেনি। বানান ভুল ছিল, গুরুচন্ডালী দোষও কিছুটা পাওয়া যায়। লেখক গল্পের শেষে রহস্যের রয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত রেখেছেন। তাই এর পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। সেইসাথে তন্ত্রসাধনা নিয়ে লেখা লেখকের অন্য বই 'রক্ষাকবচ' পড়ার ইচ্ছে থাকলো।
অভিশপ্ত এক পরিবার, নদীর চরে এক পরিত্যক্ত মন্দিরের কাছে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া একটি ছেলে, আর বিরজাহোম করে সংসারের মোহ বিসর্জন দেওয়া এক সাধক— এই ত্রিভুজ নিয়ে গড়ে উঠেছে 'ধূমাবতী'র মন্দির' বইটি। কেন এই বই প্রকাশের পর থেকেই বেস্টসেলার, আর কেন এই বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড-র পাণ্ডুলিপি চেয়ে প্রকাশক খাঁড়া হাতে লেখকের পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে— বেশ বুঝতে পারলাম বইটা পড়তে গিয়ে। একে-একে সেই উপলব্ধির কারণগুলো লিখি~ ১. বইটি আনপুটডাউনেবল। একবার শুরু করে শেষ না করে একে ছাড়া যায় না। ২. ভয়োৎপাদক উপাদানের প্রাচুর্যে এবং বিবরণে এই কাহিনি একেবারে আদর্শ তান্ত্রিক হরর! ৩. ইতিহাস, পুরাণ এবং আচারের মিশ্রণে কীভাবে এক ভয়াবহ হিংসা ও প্রতিহিংসার চক্র সৃষ্টি হল— সেটি চমৎকার ন্যারেটিভ ও সংলাপের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খুব সঙ্গতভাবেই কিছু অপ্রাপ্তি রয়ে গেল এই লেখা নিয়ে। সেগুলো হল~ ১) গল্পের ক্লাইম্যাক্স বড়ো হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল। তার ফলে তাতে কিছু ফাঁক রয়ে গেল। ২) সিকুয়েলের জন্য ওই হুক ছেড়ে রাখাটা অস্বস্তিকর লাগল। এ-বাদে বইখানা খাসা। বানান-টানান আরেকবার দেখিয়ে নিলে।পারতেন প্রকাশক। ধূমাবতী'র মন্দিরে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি নিশ্চয় সেই যত্নটা নেবেন। সুযোগ পেলে অবশ্যই পড়ুন।
বইটির সঠিক মূল্যায়ণ বেশ কষ্টকর। কিছু জায়গায় লেখক অসাধারণ লিখেছেন আবার কিছু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন অতি নিম্ন মানের mediocre story writing এর।
যাই হোক আসি ভালো দিকে, 1)গল্পের আবহাওয়া বর্ণনা অতুলনীয়। ভৌতিক এবং অতিলৌকিক পরিবেশ এত সুন্দর ভাবে জীবন্ত করে তোলা যায় ভাষার খেলায়, তা লেখকের লেখা না পড়লে বোঝা যায় না। 2)তথ্যসমৃদ্ধতার প্রশংসা করতেই হয়। গল্প পড়লেই প্রাচীন শাস্ত্র-পুরাণাদির ওপর research চোখে পড়ে। 3)গল্পটি প্রথম থেকে শেষ অব্দি বেশ বেগে এগোতে থাকে। কোথাও কোন থামাথামি নাই। এতে বইটি চটজলদি সারতে বেশ উৎসাহ পাওয়া যায়।
এবার আসি খারাপ দিক, ভূত - অতিলৌকিক নিয়ে গল্প, তা কেবলই উপভোগ করার জন্য। এর মাঝে সেই নিম্নমানের একটি "বিজ্ঞান কিছু জানে না সুতরাং অলৌকিক hero তর্কে জিতবে" ধরনের প্লট বানানোর কোন দরকার ছিল না। আর মনের cosmic consciousness এর মত একটা কাল্পনিক জিনিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে quantum physics না গুঁজলেই কি চলছিল না??
মোটের ওপর বইটি ভালোই। বেশ ভালো সময় কাটলো পড়ে। একদিনের মধ্যেই সেরে ফেলা যায় এই ১৪৪ পাতার বইটি।
এই বইয়ের হাইপ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যে এটিকে দু তারা দিলে গণ ধোলাই পড়বে। যাক গে। যাই হোক, মোটর ওপর খুব একটা ভালো লাগে নি।
গল্প চলে দুটো ট্র্যাকে। একাধারে চাকদহের প্রাচীন ইতিহাস, ডুমুরদহ গ্রামের বিষাদ মাখা ভয় আর 'বুড়ো বিবির থান'-এর অতিলৌকিক উপাখ্যান। অপরদিকে কলকাতার মদ ব্যাবসায়ী সাউ পরিবারের ওপর নেমে আসা এক ভীষণ অভিশাপ, মৃত্যু আর ভয়ের ছায়ায় জর্জরিত কিছু সাধারন মানুষ। যোগসূত্র? অমঙ্গলময়ী এক প্রলয়ঙ্করী শক্তি, সপ্তম মহাবিদ্যা মাতা ধুমাবতী।
লেখক গল্প ফেদেছেন জব্বর। বিস্তর পড়াশোনার ছাপ স্পষ্ট। ইতিহাস, তন্ত্র ও ভয় কে মে���ানোর প্রচেষ্টা বেশ প্রশংসনীয়। কিন্তু গল্পের বুনন বড্ড নড়বড়ে। লেখা গতিময় তবে ভাষার দাপট ভেসে গেলাম কই? লেখকের অতিপ্রাকৃতের বর্ণনা মন্দ নয়, তবে কেমন মনে হলো এসব যেন আগে বহুবার পড়েছি। খুব একটা ভয় পেলাম না, এখানেই আমার আফসোস।
গল্পের মূল চরিত্র, পরিত্রাতা রুপী শঙ্খ হতাশ করলো। সেভাবে দেখতে গেলে উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের গঠনেই বহুমাত্রিকতার অভাব। চেনা ছকে গল্প এগিয়ে যায় পরিসমাপ্তির দিকে। ক্লাইম্যাক্স টাও বড্ড তাড়াহুড়োয় গুটিয়ে নেওয়া হলো। গল্পের সবচেয়ে বড়ো খামতি হলো এই সল্পদৈর্ঘতা, এত জটিল একটি উপন্যাস কে আরেকটু বেশি পাতায় মেলে ধরলে, গল্প ডানা মেলে উড়তে পেত।
শেষ দু-পাতায় সিক্যুয়েল এর আভাস দিলেন লেখক। খুব একটু একসাইটেড না লাগলেও পরবর্তী বই 'ধুমাবতীর অভিশাপ' পড়ার ইচ্ছে রইল। আপাতত এটার জন্যে বরাদ্দ কেবল দুই তারা। ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। বইটি কিঞ্চিৎ ওভার হাইপড।
বাপরে ভীষণ ভয় পেয়েছি। যতবারই ভাবি এসব ভয়ের বই থেকে দূরে থাকবো, ততবারই লোভ সামলাতে পারি না।রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি। আমি সাজেস্ট করবো যারা একটু ভীতু তারা এই বই পড়বেন না। অ...সা...না...র...ন এটুকু বললেও কম বলা হবে। তন্ত্র সাধনার কথা বললে প্রথমেই আসে দশম মহাবিদ্যার কথা। এখানে সপ্তম মহাবিদ্যা ধূমাবতীকে নিয়ে অতিলৌকিক গল্পের অবতারণা করা হয়েছে। ভয়ের আবহ ভালোই সৃষ্টি করতে পেরেছেন লেখক। আমার তো মনে হচ্ছে এরপর থেকে কারণ ছাড়া হঠাৎ রজনীগন্ধার গন্ধ পেলেই ভয়ে সিঁটিয়ে যাবো।দিনের বেলায়ও আলো জ্বেলে বসে থাকতে হচ্ছে😵। আর বেশি কিছু বলবো না, আপাতত ঘোরের মধ্যে ডুবে আছি।
* মহাদেবের কাছে উমা একবার প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে পৌঁছান, তাঁহার নাকি ক্ষুধা ই মিটছে না, মহাদেবও যখন তাঁহার ক্ষুধার নিবৃত্তি করতে পারলেন না,তিনি তাঁহাকেও গিলে ফেলেন। পড়ে শিবকে উগরে দিলেন উমা।কিন্তু মহাদেব ততক্ষণে রেগে বললেন যে নারী ক্ষুধা মেটাতে তাঁর স্বামীকে ভক্ষণ করে সে আজ থেকে বিধবা।আর মহামায়ার ভয়ংকর এই বিধবা রূপটিই হলো মাতা ধূমাবতী। তাঁর বাহন হল কাক।
বি. দ্র : বইএর প্রচ্ছদটি চমৎকার হয়েছে। যে ছকের মতো ছবি দেখা যাচ্ছে, গুগল থেকে জানলাম ওটা নাকি ধূমাবতী যন্ত্র। গল্প শেষে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে এরপরের পর্বও আসতে চলেছে, তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।
কাট ১ প্রেক্ষাপট : চাকদহ অন্ধকার নেমে যাওয়ার পরও একমাত্র ছেলে বাড়ি না ফেরায় পরেশ ভট্টাচার্য দলবল নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে যেখানে পাওয়া গেল সেই জায়গাটা লোকমুখে 'বুড়ো বিবির থান' নামে পরিচিত। যাই হোক, তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর জ্ঞান ফিরলে সে ঘোরগ্রস্থের মতন বলতে লাগলো, " মানুষ বলি দিচ্ছে, মেয়েমানুষকে বাচ্চা সমেত বলি দিয়ে দিতে যাচ্ছে, ওদের বাঁচাও.. ওদের বাঁচাও.."
কাট ২ প্রেক্ষাপট : কলকাতা কুমারেশ আর মহীতোষ সাউ তাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসাকে খুবই ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দুই ভাই এর মধ্যে ভাব-ভালবাসারও কমতি নেই। তা কোনো এক শুক্রবারে সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে নিজের ঘরে বসে পেগ বানিয়ে গজলের মিঠে তালে গ্লাসে হালকা চুমুক দিতে দিতে কুমারেশ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দেখতে পেলেন, " একটা গলা কাটা মেয়ে মাটিতে পরে ছটফট করছে, তাঁর মুন্ডুহীন শরীরটা অবিরত কাঁপছে।"
দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো না কোনো যোগসূত্র যে রয়েছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। বইটির নাম থেকে এটাও আন্দাজ করতে পারছেন যে দশমহাবিদ্যার সপ্তম রূপ ধূমাবতী কে কেন্দ্র করেই গল্পের ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু কিভাবে সবকিছু একে অপরের সাথে জড়িয়ে? এইসমস্ত কিছুর পিছনেই বা কোন গল্প লুকিয়ে আছে? তা জানতে স্বাভাবিক ভাবেই আপনাকে বইটি পড়তে হবে। উত্তর দেওয়া তো দূরে থাক, এর বেশি কিছু বলতে গেলে স্পয়লার দেওয়ার অপরাধে আমিই ভস্ম হয়ে যেতে পারি। তাই সেইদিকে আর যাচ্ছি না। বরং বইটি পড়ে কেমন লাগলো সেইটা নিয়ে কয়েকটি কথা বলি...
~ ইতিহাস, পৌরাণিক আখ্যান আর অতিপ্রাকৃত বিষয় কে একসাথে মিশিয়ে তা সুনিপুণ ভাবে পরিবেশন করেছেন লেখক।
~ লেখকের সাবলীল ভাষা ও লেখার বাঁধুনির জন্য এক সিটিং এ বইটি শেষ করতে কোনোরকম অসুবিধা হয় না।
~ গল্পের শুরু থেকেই একটা অশুভ ব্যাপার যেন জড়িয়ে রয়েছে এর সাথে। যেটা গল্পের প্রতিটা চরিত্রের সাথে আমাকেও অস্বস্তিতে রেখেছিল। আর বিশেষ একজনের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেই সেই অশুভ ভাবটাও দ্রুত কেটে গেল। তিনি হচ্ছেন শঙ্খশুভ্র মুখোপাধ্যায় ( 'বৃশ্চিক ২' এ 'বেতালি' গল্পটি যারা পড়েছেন তারা ভালোমতন চেনেন ওঁকে )। ক্যারেক্টারটি কে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আশা করছি ওঁকে নিয়ে আরো গল্প লেখক উপহার দেবেন আমাদের। অবশ্য এই গল্পটিরই তো বোধহয়... না থাক্ সেটা আপনারা নিজেরাই পড়ে বুঝুন। আমি কিছু বলছি না।
~ কুশল ভট্টাচার্যের করা প্রচ্ছদটি বেশ ভালো লাগলো।
~ বইয়ে কিছু বানান ভুল ও মুদ্রণ প্রমাদ চোখে পড়ল। আশা করছি পরবর্তী সংস্করণে সেগুলো যাতে আর না হয় সেইদিকে বেঙ্গল ট্রয়কা নজর দেবেন।
শেষে বলব, বইটি পারলে অবশ্যই পড়ুন। আশাহত হবার কোনো চান্স নেই। নমস্কার!
পশ্চিমবঙ্গের চক্রদহ এলাকা - লোকমুখে যার নাম হয়ে গিয়েছে চাকদা। সেখানকার ডুমুরদহ গ্রামের ঘটনা। এক সন্ধ্যেবেলা বন্ধুদের সাথে খেলা শেষে বাড়ি ফেরবার রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রইলো পরেশ ভট্টাচার্যের ছেলে মহেশ। বাড়িতে সকলে চিন্তায় অস্থির, কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছে। অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়া গেলো নদীর চরে গ্রামের পরিত্যক্ত মন্দিরের কাছে। এলাকাটা ভালো নয় বলে শোনা যায়, সেখানে সে কি করছিলো? আর প্রলাপ বকার মতো এসব কি-ই বা বলছে সে? ডেকে আনা হলো গ্রামের তান্ত্রিক-কবিরাজ রামচরণ মুখুটিকে। কিন্তু তিনি জানালেন প্রাচীন এক পুঁথির সাহায্য ছাড়া মহেশকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়।
অপরদিকে কলকাতায় সুখে ঘরকন্না করতে থাকা কুমারেশ আর মহীতোষের জীবনেও নেমে এসেছে ঘোর দুর্যোগ। কোনো এক পূর্বপুরুষের কর্মফলে বহুযুগ ধরে মাথার উপরে অভিশাপের মেঘ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা, যার কবলে প্রাণ নিঃশেষ হবার ভয় সকলের। আশার আলো নিয়ে কেউ একজন আসবে তাদের কাছে। সেই অপেক্ষায় প্রহর গুণতে লাগলো কুমারেশ-মহীতোষের পরিবার। সময় তার আগেই ফুরিয়ে যাবে না তো??
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
তন্ত্রসাধনা নিয়ে বই-পত্র খুব একটা পছন্দের নয় আমার। কারণ নতুন কিছু খুঁজে পাই না কোনোটিতেই। এই বই পড়ার পেছনে একটাই কারণ ছিল - পাগলাটে হলেও সত্য, বইয়ের নাম আর প্রচ্ছদ প্রচণ্ড ভালো লেগেছিল।
গল্পের গতি বেশ ভালো ছিল, কিন্তু লেখার ধরণ তেমন একটা মনে ধরে নি। কোথাও খুব ভাবগাম্ভীর্যের সাথে লেখা, আবার কোথাও কেমন যেন গা-ছাড়া ধরণের মনে হয়েছে। কাহিনীপ্রবাহের মধ্যে আহামরি কিছু ছিল না। সারাজীবন ধরে যা পড়ে এসেছি অতিপ্রাকৃত গল্পে, তার পুনরাবৃত্তি লেগেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একটি ��রিত্রও মনে দাগ কাটতে পারে নি। সময় কাটানোর জন্য পড়লে ঠিক আছে, কিন্তু স্মৃতিতে রাখবার মতো কিছু নয়।
তন্ত্র মন্ত্রের সাধনা বা ঐ সব বিদ্যা নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও গল্পে এই সব পড়তে ভালো লাগে।
তন্ত্র সাধনার কথা বললে প্রথমেই আসে দশমহাবিদ্যা র কথা। যেমনঃ কালি, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলমূখী ও কামলা।
আগে থেকেই হিন্দু ধর্ম, তাদের আচার অনুষ্ঠান, দেবতা, বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে আমার কিছু জানাশোনা ছিল তবে ধূমাবতীর নাম কখনো শুনিনি। পরে দেখলাম তন্ত্র বিদ্যার দশ দেবীর অধিকাংশের নামই আমার অজানা।
তন্ত্রের দশ মহাবিদ্যার সপ্তম ধূমাবতী, এক তান্ত্রিক হিন্দু দেবী। ক্ষুধার্ত এই দেবীর ভোগে কোনো বাছ বিচার নেই। নারী, পুরুষ, ছেলে, বুড়ি সবই এক। ধূমাবতীকে বিধবা, বৃদ্ধা ও কুৎসিত বেশে সজ্জিতা হিসেবেই দেখানো হয়। এই দেবী কাক ও কুকুর ইত্যাদি, হিন্দু বিশ্বাস মতে অমঙ্গল জনক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। ধূমাবতীকে কাকপৃষ্ঠে আরোহীতা ও শ্মশানচারিণী রূপে কল্পনা করা হয়।
লেখক মনীষ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন চরিত্রের উপর ধূমাবতীর অভিশাপ, দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা, বলি, মন্ত্র, মন্দির, তন্ত্র সাধনা, দেবী তুষ্টি, ডাকাত ইত্যাদি বিষয় দিয়ে যে ভাবে গল্পটা সাজিয়েছেন, এক কথায় অনবদ্য।
খেলতে গিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো, এখনো বাসায় ফিরে নি পরেশ ভট্টাচার্যের ছেলে মহেশ। খুঁজে বের হলো গ্রামের সবাই। মহেশের বন্ধু থেকে জানা গেলো আজ ওরা ফিরছিল বুড়া বিবির ওদিক দিয়ে। গ্রামের সবচেয়ে বৃদ্ধ লোকটির বুক ছাত করে উঠল সন্দেহ আর সংশয়ে।
কালের পরিক্রমায় ধূমাবতীর মন্দির মাটির নিচে চাপা পরেছে। তবে অনেকেই শুনেছে সেই মন্দিরে কথা, তাই গ্রামের মানুষ ঐ দিকটায় যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। তা ছাড়া সাপের উপদ্রব ঐ জায়গাটিতে বড্ড বেশি তাই কেউ যেতে সাহস করে না। তাহলে কি মহেশ কে দেবী...... নাহ্, আগবারিয়ে কিছু বলতে চায় না বৃদ্ধ। মনের কথা মনেই রইল।
শতবছর আগে গঙ্গারাম ডাকাতের বলি তে তুষ্ট হয়েছিল কালি। তন্ত্রের সাধক এই ডাকাতের অর্জিত হয়েছিল অনেক শক্তি। পিচাশ দেবীদের সে দাসী বানিয়ে ফেলতে পরেছিল। ঘটনাচক্রে হরিসাধণ সূড়ির সাথে বিবাদে জড়িয়ে তাকে বলি চড়িয়ে দেয় কালির সামনে।
গঙ্গারামের উপর প্রতিশোধ নিতে হরিসাধণের ভাই ধূমাবতীর মূর্তি কলকাতার কালিঘাট থেকে সংগ্রহ করে এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকায় দেবীকে জাগ্রত করতে গিয়ে ভুল করে বসে........
সাউ পরিবারের বড় ছেলে কুমারেশ সাউ এক পেগ গলায় ঢেলে দিলেন। পেটে মদ পরতেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো, ঘর ধোঁয়ায় অন্ধকার। কি যেন একটা গন্ধ নাকে ঠেকল। মাথার ঝিমুনী টা কাটিয়ে উঠতে চোখটা ইকটু বন্ধ করলেন।
চোখের সামনে দেখতে পেলেন মন্দিরের বেধিতে একটা মেয়ে। মেয়েটা গর্ভবতী। ছপাত করে নেমে এলো ধারালো অশ্রটা, নিমেষেই পোয়াতি মেয়েটার দর থেকে মাথাটা নেমে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে বজ্র নিনাদ, কানে তালা লাগার উপক্রম হলো। বজ্রপাতে জল্লাদ ছাই হয়ে গেলো। সাদা থান পরা বৃদ্ধা কুমারেশের গলা চেপে ধরল। মাংস বিহীন হাড় হলোর স্পর্শ সে গলায় অনুভব করল। শরীরে কোনো মাংস নেই, চোখের কোঠরি গুলোতে জ্বলজ্বল করছে কিছু একটা। চিৎকার করে সংবিত ফিরে পেলো কুমারেশ। দেখলো সে ঘরেই আছে। ঘর ভরে আছে রজনীগন্ধার গন্ধে।
ছোট ভাই মহীতোষ সাউ এর স্ত্রী শ্রীলা চিৎকার শুনে ছুটে এলো। কি হয়েছে? শ্রীলার কথাটা যেন শুনতেই পেলনা কুমারেশ। জিজ্ঞেস করল রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধ পাচ্ছো? কুমারেশের কথা শুনেই দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো তাঁর। আবার ঘুরে এসেছে সেই অভিশাপ.....
মহেশ কে অজ্ঞান অবস্থায় ফিরে পাওয়া গেলেও জ্ঞান ফিরলে তার অবস্থা স্বাভাবিক হয় না। কে যেন তার মুখ দিয়ে কথা বলছে, ভিন্ন তার কন্ঠ স্বর। আত্মা ভর করেছে মহেশের উপার......
ঐ দিকে সাউ পরিবারের সবাই কোনো এক অভিশাপের কারণে মারা যাচ্ছে, মৃত্যুর পূর্বে রজনীগ্ধার গন্ধ পান প্রত্যেকে। কুমারেশের বাবারও মৃত্যু হয়েছে একই ভাবে।
তাহলে কী ভোগে মত্ত ধূমাবতী আবারও তান্ডবলীলায় মেতে উঠেছেন? একে একে সবার কী প্রাণ যাবে? সবাইকে শঙখ শুভ্রের মতো এতো কম বয়সী কেউ কি পরবে বাঁচাতে এই অভিশাপ থেকে?
ইতিহাস থেকে কিছুটা নিয়ে, মন্ত্র-তন্ত্র, দেবী এবং প্রতিশোধ সবমিলিয়ে দারুণ চিত্র আঁকেছেন। গতকাল রাতেই বইটা শেষ হতো কিন্তু আজ শেষ করলাম। রাত ২ টো বেজে গিয়েছিল। কেমন যেন মনে হলো রুদ্রাক্ষ নাচছে, চারিদিকে উচ্চ স্বরে জপ চলছে........
ঔঁ ধুং ধুং ধূমাবতী স্বহাঃ
বইঃ ধূমাবতীর মন্দির লেখকঃ মনীষ মুখোপাধ্যায় প্রকাশকঃ বেঙ্গল ট্রয়কা পাবলিকেশন, ভারত পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৪৪ মুদ্রিত মূল্যঃ ১৬০ (ভারতীয়)
ধূমাবতীর মন্দির - মনীষ মুখোপাধ্যায় চাকদা অঞ্চলের গ্রামের একটি ছেলে এক বিকেলে খুজে পায় পোড়ো এক মন্দির। সেখানেই এক ভয়ংকর বৃদ্ধার মূর্তি ও বেশ কিছু ভয়াল দৃশ্য মানসচক্ষে দেখে ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে ও ভুল বকতে থাকে। অন্যদিকে কলকাতার সাউ পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠ পাচ্ছেন রজনীগন্ধার গন্ধ, যা কিনা তাঁদের পরিবারের সকল পূর্বপুরুষ পেয়ে থাকেন মৃত্যুর আগে। কীভাবে এই সব বিপদ গাঁথা আছে একই সুতোয়? এমন বিপদের সময়ে ত্রাতা হয়ে আসবে কোন মহাপুরুষ?
আগে ভালো ব্যাপারগুলো ঝটপট বলে ফেলি। গল্প বেশ জমজমাট - অসরলরৈখিক সময়কাল, পছন্দসই চরিত্র, ভয়ের আবহাওয়া, অভিশাপের ঝঞ্ঝা এবং সুন্দর সমাপ্তি। লেখক অনেক পড়াশোনা করেছেন আর সেই খাটনি পাতায় পাতায় স্পষ্ট। লেখার ভাষা ভারি সুন্দর এবং বাক্য রচনার মধ্যে বেশ সরল আসর জমানো ভাব আছে যা বেশ চটজলদি মনে ধরে যায়। পারিপার্শিক চরিত্রগুলির মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে character development প্রশংসনীয়। দু-তিনটি পরিবার ও তাদের অতীত-বর্তমান মিলিয়ে একটা টানটান অথচ ছিমছাম গল্প।
এবার আসি খারাপে। ভয়ের গল্প হিসেবে এ গল্প বড়ই সরল। শুকতারার ভূতের গল্প ও সাম্প্রতিক কালের ভয়ের গল্পের মধ্যে একটা ফারাক থাকে। যদি গল্পের বিষয়বস্তু হয় অনৈসর্গিক তন্ত্রসাধনা অথচ লেখনি হয় কিশোরমনস্ক তবে সে লেখা আধসেদ্ধ। বানান, ব্যাকরণগত অনেক ভুল ত্রুটি ও চারিত্রিক গড্ডালিকা প্রবাহে এ বইটি পরিপক্ক। বিদেশে পড়াশনা মানেই তন্ত্রে অবিশ্বাসী, গল্পের নায়ক মানেই সে সব জানে, সমবয়সী মেয়ে মানেই গল্পের শেষে নায়কের প্রেমে পড়তে বাধ্য – আর কত বলব? শেষের কয়েক পাতা নিতান্তই দায়সারা, তবুও সব মেনে নিতাম শুধু দুটি মারাত্মক ভুল রাগের কারণ না হয়ে দাঁড়াত। এক, গুহাবাসী অসামাজিক কোনো তান্ত্রিক কীভাবে প্রথম আলাপেই অচেনা কাউকে গুহ্যতম তন্ত্রসাধনা শেখাতে রাজি হয়ে যায়? দুই, তন্ত্রের যে সমস্ত অধ্যয়নে প্রকৃত ত্যাগির সারা জীবন কেটে যায়, গল্পের নায়ক মাত্র দুই বছরে সব শিখে ফেলে কী করে?
তন্ত্রের ���রানায় নবতম সংযোজন দশ মহাবিদ্যার সপ্তম মহাবিদ্যা "দেবী ধূমাবতী" কে নিয়ে লেখা এই আকাল্ট থ্রিলার। বইতে যেমন আছে চাকদহর প্রাচীন ইতিহাস ও গল্প কথা তেমনই সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের তন্ত্র নিয়ে আগ্রহের কথা ও আছে সুনিপুণ ভাবে। আকারে ছোট হলেও লেখনীর গতিতে আর ভাষার বাঁধুনি তে কখনো থেমে থাকতে হয়নি। গল্পের শেষে শঙ্খ শুভ্রর কাছে আসা ফোনে ইঙ্গিত আছে গল্পের দ্বিতীয় ভাগের অর্থাৎ sequel আসার একটা রাস্তা তৈরি করে রেখেছেন লেখক।আবার ইচ্ছাকৃত ভাবে এখানেই গল্পের শেষ বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আশা রাখব পরবর্তীকালে আরো কম্প্যাক্ট ও তথ্য বহুল লেখা নিয়ে আসবেন লেখক
অকাল্ট হরর বা ডার্ক ফ্যান্টাসি নিয়ে এই সময়ে যারা লেখালেখি করছেন তাদের মধ্যে মনীষ মুখোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ওনার লেখার সাথে প্রথম পরিচয় হয় দ্য ক্যাফে টেবিল থেকে প্রকাশিত 'রক্ষাকবচ' নামক বইয়ের মাধ্যমে। এটি তন্ত্র, অপদেবী ও অতিপ্রাকৃত বিষয়ের ওপর লেখা 4টি গল্পের সংকলন (অভিশাপ,পিশাচ,রাতপরী,রক্ষাকবচ)। 4টি গল্পের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লাগে 'রাতপরী' এবং 'রক্ষাকবচ' এই ২টি গল্প। পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল এই লেখাগুলো আর একটু ছড়িয়ে যদি লেখা হত তাহলে এই কাহিনী পাঠের মজা দ্বিগুন হত। লেখকের কাছ থেকে কেমন যেন ৬০রানের একটা ইনিংস পেলাম, অথচ একটু হাত খুলে খেললে অনায়াসে সেঞ্চুরি করতে পারতেন।
সেই আক্ষেপটা মিটল ওনার লেখা 'ধূমাবতীর মন্দির' উপন্যাসটি পড়ে। এটি আগের মতন ছোট গল্পের সংকলন নয়, বরং একটা গোটা উপন্যাস। এই কাহিনীর মূল পটভূমি চাকদহ। কাহিনীতে এই চাকদহের ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এখানকার একনামকরা ডাকাত গঙ্গারামের পৌরাণিক কাহিনী। ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনীর সাথে অপদেবী ও অতিপ্রাকৃত বিষয় মিশিয়ে খুব সুন্দর একটি কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । কাহিনীর প্রয়োজনে এসে হাজির হয়েছে সেনবংশের রাজা বল্লাল সেনের কথা এবং তাঁর তন্ত্র বিষয়ের উপর আগ্রহের কাহিনী। একাহিনীর মূল আকর্ষণ দশ মহাবিদ্যার সপ্তম মহাবিদ্যার দেবী 'ধূমাবতী' এবং তার কার্যকলাপ। সারা কাহিনী জুড়ে রয়েছে এই দেবীর নানান অজানা দিক ও তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়কালে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনাবলী। আর এই সবকিছুকে একটা নিটোল গল্পের মধ্যে দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে পরিবেশন করেছেন লেখক মনীষ মুখোপাধ্যায়। লেখকের লেখনীর গুণে এই বই সুখপাঠ্য, একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে এই বই নামিয়ে রাখা কঠিন।
'ধূমাবতীর মন্দির' মনীষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম সেঞ্চুরি, ইনিংস যার প্রতীক্ষায় এতদিন ছিলাম। তবে একেবারেই কি চান্সলেস ইনিংস? না তা নয়, লেখনীর মধ্যে এখনও বেশ কিছু জায়গায় ফাঁক-ফোকড় আছে, কিছু দুর্বলতা পড়তে গিয়ে চোখে পরে। কিন্তু ওই যে বললাম 'লেখনীর গুণ!' ওই টেকনিক দিয়েই গোটা ইনিংসটা থুড়ি পাঠকদের খুব সুন্দরভাবে ধরে রাখতে পেরেছেন। তাই কিছু শট ব্যাটের কানা দিয়ে গেলেও দিনের শেষে নামের পাশে সেঞ্চুরিই লেখা থাকছে। ইয়ে, এইভাবেই হাত খুলে খেলতে থাকুন, আমরা ভবিষ্যতে আপনার থেকে আরও সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রইলাম।
বি দ্রঃ - বইয়ের প্রচ্ছদ সুন্দর লেগেছে। তবে বইয়ের ব্যাক কভারে লেখক পরিচিতি এরকম 'Eyesight Challenge' মোডে কেন রাখা হয়েছে তা বুঝতে পারলুম না :( চারপাশে অনেক খালি জায়গা তো ছিল।
২০০০ সাল। চাকদহ অঞ্চলের গণ্য ব্যক্তি পরেশ ভট্টাচার্যের তেরো বছর বয়সী ছেলে বাউরির মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুড়ো বিবির থানের কাছে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে জ্ঞান ফিরলেও সে যেন ঘোরের মধ্যে একটি মন্ত্র উচ্চারণ করে যেতে থাকে যা দশমহাবিদ্যার সপ্তম মহাবিদ্যা দেবী ধূমাবতীকে আহ্বান জানানোর বীজমন্ত্র। তিনি উচাটন ও বিদ্বেষণের প্রধান দেবী।
একই সময় কলকাতা শহরের বুকে দুর্ঘটনা ঘটে যায় সাউ পরিবারে। তাদের পরিবারের সকলে শেষ বয়সে এসে হঠাৎ রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধ পান। ধীরে ধীরে তাদের মস্তিষ্কভ্রম দেখা দেয় এবং সকলেই এক ভয়ানক মৃত্যুর সম্মুখীন হয়। বংশপরম্পরায় তারা এই অভিশাপের বিষে জর্জরিত। মাতা ধূমাবতীর ছায়া কি শেষমেশ সাউ পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে? নাকি শক্তি তান্ত্রিক তার ক্ষমতাবলে রক্ষা করতে পারবে পরেশবাবুর পরিবার এবং সাউ বংশধরদের?
জানা যায়, বাংলার সিংহাসনে যখন অরিরাজ মদনসংকর লক্ষ্মণ সেন আরোহণ করেছেন সেই সময়কালে তাম্রলিপ্ত তথা সমগ্র বাংলাকে মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে মহারাজ তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে জয়ী হতে চেয়েছিলেন। এই দেবীর সঙ্গে সেন বংশের ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে। দেবীর বাহন দাঁড়কাক। ভয়ঙ্কর তার রূপ। দেবীর ক্ষুধার নিবৃত্তি বড়ই কষ্টসাধ্য।
🔸পাঠ অনুভূতি:
দেবী ধূমাবতী জড়িত বিভিন্ন তন্ত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই উপন্যাসে উঠে এসেছে সেন বংশের ইতিহাস। শঙ্খশুভ্র, কুমারেশবাবু, বিহারী, রামচরণ মুখুটি, সুকন্যা এবং ছোট্ট মেয়ে তুতাই ছাড়াও বহু পার্শ্ব চরিত্রে ভরপুর রয়েছে। সহজ সরল ভাষায় লেখা এই উপন্যাসটি শেষে গিয়ে যেন বড্ড সিনেম্যাটিক হয়ে পড়লো। বুনন আরও শক্ত হলে বেশি খুশি হতাম। লেখার ধরণ এমনই ছড়ানো ছেটানো, আপনাকে হয় একবারেই পুরোটা পড়ে শেষ করতে হবে নয়তো খুব মন দিয়ে পড়তে হবে। কারণ শুরুর দিকে কিছুটা ঘটনা বলে দেওয়ার পর উপন্যাসের মাঝে মাঝে এবং শেষের দিকে সমস্ত ঘটনা একটু একটু করে বলা হয়েছে। পাঠকদের নিজেদের মনে মনে প্রথম থেকে শেষ অবধি সময় ও চরিত্র হিসেবে ঘটনাগুলি পরপর সাজিয়ে নিতে হবে। বানানের দিক থেকে প্রচুর ভুল চোখে পড়েছে। আশা রাখি, পরবর্তী সংস্করণে এই ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করে নেওয়া হবে।
তন্ত্র বিষয়ক উপন্যাস যাঁরা পড়তে ভালোবাসেন, একবার বুড়ো বিবির থান থেকে ঘুরে আসতেই পারেন। আশা করি, খুব একটা মন্দ লাগবে না। আপনারা অনেকেই হয়তো এতদিনে পড়েও ফেলেছেন। আপনাদের পাঠ অনুভূতি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
বি দ্রঃ এই উপন্যাসটি ধূমাবতী সিরিজের প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ডটি "ধূমাবতীর অভিশাপ" কিছুদিন আগেই আমার সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলবো কারণ প্রথম খন্ডটি এমন জায়গায় শেষ হয়েছে, এই সাসপেন্স বেশিদিন ধরে রাখা মুশকিল।
বর্তমানে ভৌতিক অতিপ্রাকৃত উপন্যাসে তন্ত্র-মন্ত্র,তান্ত্রিক, সাসপেন্স,হরর, কিছুটা ইতিহাসের অংশের সমন্বয় না হলে ঠিক ঠাক জমে না।
আগের ঐ চেনা পরিচিত পুরনো বাড়ি,আত্মা ইত্যাদি প্লটের ভৌতিক গল্প এখন প্রায় অতীত।এখন অতিপ্রাকৃত কোন কাহিনী মানেই অকাল্ট থ্রিলার।
মনীষ মুখোপাধ্যায়ের "ধূমাবতীর মন্দির"ও এরকম এক অকাল্ট থ্রিলার।
বইয়ের শুরুতে দেখা যায় তেরো বছর বয়সী এক কিশোর মহেশকে,যে ���ন্ধ্যার সময় বাইরে থেকে খেলা শেষ করে ঘরে ফিরছিল। হঠাৎ নদীর পারের জংলা জায়গাটায় এসে কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয় মহেশের। আশে পাশের পরিবেশটা কিরকম যেন থম মেরে যায়,চারদিকের বাতাসে বিরাজ করে এক গুমোট ভাব। মহেশ তাকিয়ে দেখে রাস্তার পাশে ঝোপ ঝাড়ের ভিতর কেমন এক অদ্ভুত ভাবে বসে আছে বিশাল আকারের ভয়ানক দর্শন একজোড়া দাঁড়কাক। কৌতুহলী মহেশ এগিয়ে যায় ঝোপটার দিকে, ওকে এগিয়ে আসতে দেখে কাক দুটো কিছুটা সরে যায় ঐ জায়গা থেকে। সামনে এগোতেই মহেশ দেখতে পায় ঝোপটার আড়ালে কিছু একটা ছোট গম্বুজের মত বেরিয়ে আছে,আর ওর সামনেই কয়েকটা পোড়া শোল মাছ গম্বুজটার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।এবং এই সময় মহেশ অনুভব করে কেউ যেন তাঁর কানে ফিসফিস করে বলছে যা, আরও এগিয়ে যা,আরো এগিয়ে যা,এক ঘোরের ভিতর পরে মহেশ অজ্ঞান হয়ে যায়....
কলকাতার কুমারেশ আর মহীতোষ সাউ তাদের পারিবারিক ব্যবসাকে বেশ ভালো ভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই পরিবারেই একটি পারিবারিক অভিশাপ রয়েছে। এই পরিবারের যখন কারো মৃত্যুর সময় হয় তখন সকলেই রজনীগন্ধার গন্ধ পায়। একদিন কুমারেশের উপরও সেই অভিশাপ নেমে আসে। সে হঠাৎ হঠাৎ রজনীগন্ধার গন্ধ পায়। আবার মহিতোষের মেয়ে অনন্যার আঁকা একটি চিত্র দেখে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন কুমারেশ এমনকি তাদের পারিবারিক গুরুদেব পর্যন্ত আতকে ওঠে ঐ ছবিটি দেখে। কিসের অভিশাপ রয়েছে এই পরিবারের উপর?
উপরে বর্নিত এই দুটি ঘটনা কোন সূত্রে একে অপরের সাথে জড়িত, তা জানতে হলেও স্বাভাবিক ভাবেই আপনাকে বইটি পড়তে হবে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী তন্ত্রের দশ মহাবিদ্যার সপ্তম মহাবিদ্যা হলো ধূমাবতী, এক তান্ত্রিক হিন্দু দেবী। ক্ষুধার্ত এই দেবীর ভোগে কোনো বাছ বিচার নেই।ধূমাবতীকে বিধবা, বৃদ্ধা ও কুৎসিত বেশেই দেখানো হয়। এই দেবী কাক ও কুকুর ইত্যাদি, হিন্দু বিশ্বাস মতে অমঙ্গল জনক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। ধূমাবতীকে কাকপৃষ্ঠে আরোহীতা ও শ্মশাণচারিণী রূপে কল্পনা করা হয়।
বইটি বেশ তথ্যসমৃদ্ধ তা বলতেই হয়। বিশেষ করে অনেক অজানা পৌরাণিক বিষয় সমন্ধে জানা যাবে। কাহিনিটিও বেশ গতিশীল,প্রথম থেকে শেষ অব্দি এক বেগে এগোতে থাকে,পড়তে বেশ আরাম লাগে। পৌরাণিক গল্প, ইতিহাস আর অতিপ্রাকৃত বিষয় কে একসাথে মিশিয়ে তা সুন্দর ভাবে কাহিনিতে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। এক কথায় এক বৈঠকে পড়ে ওঠার মত বই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
বইয়ের নামঃ ধূমাবতীর মন্দির লেখকঃ মনীষ মুখোপাধ্যায় প্রকাশকঃ বেঙ্গল ট্রয়কা মূল্যঃ ১৭৫/- আলোচকঃ দীপাঞ্জন দাস
দশমহাবিদ্যার সপ্তম দেবী হলেন দেবী ধূমাবতী। একবার মহাদেবের কাছে দেবী উমা তাঁর ভয়ঙ্কর খিদে নিবারণের জন্য পৌঁছালে মহাদেবও তাতে ব্যর্থ হন। ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য মহাদেবকেও দেবী গিলে ফেলেন। পুনরায় তাকে উগরে দেওয়ার পরে ক্ষুব্ধ শিব তাকে বলেন, যে নারী ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য নিজের স্বামীকে গ্রহণ করতে পারে তাঁর স্বধবা হওয়ার অধিকার নেই। দেবীর এই বিধবা রূপটিই হল দেবী ধূমাবতী যার মধ্যে রয়েছে অসীম ক্ষুধা। সেই মা ধূমাবতীকে নিয়েই লেখক রচনা করেছেন এই গল্পগ্রন্থটি। নদীয়া জেলার চাকদহের ঘটনার কথা উঠে এসেছে লেখকের কথায় কথায়। সেই অঞ্চলকে নিয়েই কাহিনি রচিত হয়েছে। বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার রেশ রয়ে গিয়েছে বহুকাল পড়েও। সাউ বংশের একের পর এক সদস্য মারা পড়েন ভয়ঙ্করভাবে। কী সেই অপরাধ, যা এত বছর পরেও বয়ে চলেছে। আবার রামচরণের ছেলে মহেশ ধূমাবতী মন্দিরের চূড়া দেখার পর থেকেই যে আকস্মিক পরিবর্তন ধরা পড়ে, তা সমস্ত গ্রামেই দুশ্চিন্তার সঞ্চার করে। কিন্তু, এত বছর পরে দেবীর প্রকোপ কেনই বা এসে পড়ল গ্রামবাসীদের উপর? সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠার সাথেই বা তাদের যোগসূত্র কী? তন্ত্রসাধক শঙ্খশুভ্র কি পারবে সেই বাধা কাটিয়ে দিতে? সত্যিই কি এর উপাচার সম্ভব? এতবছর ধরে বয়ে আসা সেই চোরাস্রোতে গল্প ভাসিয়ে অলৌকিকতার এক অপূর্ব মিশ্রণ তৈরি করেছেন লেখক, যা আমার বেশ ভালোই লেগেছে। গল্পের শেষে শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার বিষয়টি গল্পের উৎকর্ষতা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। তন্ত্রপ্রিয় পাঠকেরা এটিকে তন্ত্রের বই না ভেবে একটি কাল্পনিক তন্ত্রনির্ভর গল্পরূপে পাঠ করলে তাঁর স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
Two family doomed by one curse of mohabidya. Death is hiding and slowly approching to each member through a reek. Moreover, another evil spirit shadowing on it. Hence the saviour reaches to the house Shankhasubhra shokti tantrik to retrieve. Spirit could be stopped but how he will put a war against 7th mohabidya.
The detailing of historical facts, worship process of dhumavati even the geometrical shapes also explained very beautifully. Summoning of goddess "Pratyangira" (another name bhadrakali), ascetisim relating to the psychology science (collective conscious mind), mythology behind goddess dhumavati was propitiation to the readers.
Only insinuating factor was ending of two pages trying to keep a sequel. Expected a prequel actually how "সবুজ সাথী বেকহ্যাম" turned to a exemplary tantrik, but this book is highly recommended with lumpsome information.
হিন্দু শাস্ত্রে আমরা অনেক দেব দেবীদের নাম সি=বুনেছি এবং তাহাদের বিষয়ে আমরা বিস্তরে অনেক জেনেছি| দেবী ধূমাবতী এর ব্যাপারে সেটা বলা চলে না| সত্যি বলতে মানুষ মুখোপাধ্যায় এর লেখা ধূমাবতীর মন্দির বই টি না পড়লে আমি জানতেই পারতাম না যে হিন্দু শাস্ত্রে এরম একটি তান্ত্রিক দেবীর অবস্থান আছে| বইটি পড়তে গিয়ে এই দেবীর বিষয়ে অনেক তথ্য সামনে আসে| লেখক খুব সুন্দর ভাবে সেই তথ্য গুলো কে ব্যাখ্যা করেছেন এবং তারই সঙ্গে কিভাবে একটা লোকের অপকৃতি তার পরিবার কে ধংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে সেটিও দেখিয়েছেন| বইটি পড়তে পড়তে শেষ না হওয়া অব্দি নামিয়ে রাখতে পারিনি| এক কোথায় বইটা "আনপুটডাউনবলে"|
একবার শুরু করলে , শেষ না করে ছাড়া যায়না। টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে গল্পও। কিন্তু কেন জানিনা মনে হচ্ছে, লেখক ও মনে হয় উত্তেজনা টা শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে পারেননি, তাই তাড়াহুড়ো করে শেষ করে ফেলেছেন। তবুও বলবো লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগবে।
তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে বাঙালিদের উৎসাহ খুব প্রাচীন। এই নিয়েই আলোচ্য উপন্যাস ধূমাবতীর মন্দির। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নিমিষে পড়ে ফেলা যায়। ভাষাগত কিছু কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে যদিও তা সম্পূর্ণ উপেক্ষণীয়।
বইটির উপস্থাপন এক কথায় অসাধারণ। একটানে বইটি শেষ করে ফেলেছি। লেখনি আটকে রাখে পাঠককে। আর তার সাথে তান্ত্রিকতা। আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে যে দশমহাবিদ্যার সপ্তম দেবি ধূমাবতীকে নিয়ে লেখা যেটা আগে কোন লেখকের বইতে পাইনি।
তথ্যসমৃদ্ধ হলেও তথ্যের ভারে জর্জরিত নয়। মেদবিহীন গল্প যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার মত মিডিওকার পাঠককে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিছু জায়গায় আরো একটু যত্নশীল হওয়া আবশ্যক ছিল, তবে সেই খামতি উনি পূরণ করেছেন এর পরবর্তী গ্রন্থ ধূমাবতীর অভিশাপে। ৩.৫/৫
বইটা যথেষ্ট ভয়ের। দেব-দেবী নিয়ে ছেলেখেলা করলে শাপে পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অনেক চরিত্র, কিন্তু সবাই সূত্রে বাঁধা, কেউ অতিরিক্ত নয়। আর শঙ্খশুভ্র এক অনন্য চরিত্র, তার প্রেমে পড়াই যায়, কিন্তু, সে বিরজাহোম করে সংসারত্যাগী তান্ত্রিক, তাই সে মোহ না করাই ভালো।