সৌমিত্র বিশ্বাস-এর জন্ম ১৯৬৫ কলকাতায়। শিক্ষা নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলে। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অর্থনীতির ছাত্র। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষে রাজ্য সরকারের আধিকারিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলার অধ্যাপিকা মৈত্রেয়ী সরকারের অনুপ্রেরণায় আরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন সাহিত্যে। দেশ পত্রিকা আয়োজিত রহস্য গল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে তাঁর ‘মুখোশ’ গল্পটি। দ্বিতীয় গল্প ‘নাস্তিক’ও প্রশংসিত। প্রথম উপন্যাস ‘হেরুক’। আবাল্য সত্য সাইবাবার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত মানুষটি ভালবাসেন আড়ম্বরহীন, সৎ জীবনযাপন আর সমাজসেবা। বই ও বন্ধুদের সঙ্গে মননশীল আড্ডায় সমান উৎসাহী।
তন্ত্র! এই আপাত নিরীহ, আদতে ঘোর অ্যাকাডেমিক শব্দটি এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে একে প্রায় বীজমন্ত্রের মতো করে জপে চলেছেন সক্ষম ও অক্ষম লেখকেরা। অন্যদিকে এর প্রকৃত মহিমা থেকে দূরে, আরও দূরে সরে যাচ্ছে সাহিত্য। এই অদ্ভুত পটভূমিতে, তন্ত্রের প্রকৃত গূঢ় রূপ এবং পাঠকের ভয় পেতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চেয়ে লেখা হয়েছে এই দশটি গল্প। এদের প্রতিটির কেন্দ্রে থেকেছেন কোনো-না-কোনো দেবী... বা একজনই দেবী'র নানা রূপ। বইয়ের শুরুতে একটি ভূমিকার মাধ্যমে লেখক স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর এই কাহিনিরা মাতৃরূপ দর্শন করা ও করানোর এক ভিন্নতর প্রয়াস। ঠিক এখানেই এরা বাজারের আর পাঁচটা পিশাচের আরাধনা আর বেতালের বেসুরো তালের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এরপর এসেছে গল্পরা~ ১. হাড় ২. বিকারলক ৩. অবগাহন ৪. হাসি ৫. শুদ্ধচিত্ত ৬. ললিতা ৭. বীররাত্রি ৮. শব্দ ৯. উড়োজাহাজ ১০. নাস্তিক গল্পগুলো সত্যিকারের ভয়ের গল্প। তার চরিত্রায়ন থেকে শুরু করে আবহ নির্মাণ— সবেই আছে বাস্তবের ধুলো আর ঘাম, ক্ষেত্রবিশেষে রক্তের গন্ধ। তবে সব ছাপিয়ে এরা এক অন্য উচ্চতার রহস্য-গল্পও বটে। সে-রহস্যের নাম নারী! তার তল পেতে আমরা যুগ-যুগান্ত ব্যয় করি। তার অর্থ না বুঝে আমরা মানব থেকে দানব হই। তাঁর জন্যই আমরা লুব্ধক নক্ষত্রের মতোই জ্বলে চলি রাতের পর রাত— যাতে একবার তাঁর সেই অহৈতুকী করুণা আমাদের ওপর বর্ষিত হয়। সেই রক্তমাংসের দেবী'র মধ্যে নিহিত রহস্যকে মন্ত্রে, আরাধনায়, অলৌকিকে পাওয়ার, আবার কখনও না-পাওয়ার দশটি ভয়াল আখ্যান হল দশরূপা। গৌতম কর্মকারের অলংকরণ এই কাহিনিদের অন্য মাত্রা দিয়েছে— এও স্বীকার্য। যদি আপনি সত্যিকারের রহস্যের আর ভয়ের গল্প পড়তে চান, তাহলে এই বইটি পড়ুন। হতাশ হবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
বইটার ভূমিকা পড়ার পরে বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। ভৌতিক লেখাগুলোর প্রতি আলাদা একটা আগ্রহ থাকার কারণে এই বইটা পড়লে বেশ মজা লাগবে এটা আন্দাজ করেছিলাম প্রথমে। প্রথমদিকে চার বা পাঁচটা গল্প ভালোই লেগেছে। সত্যি কথা বলতে কি এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে এর ভূমিকাটা, যেটা লেখক বেশ কয়েক পৃষ্ঠা ধরে যথেষ্ট আগ্রহ ও ধৈর্য সহকারে লিখেছিলেন।
কিন্তু তারপরেই বইটা বিরক্ত লাগতে শুরু করলো পড়ার সময়। এরপরের প্রায় সব গল্পের ঘটনাই একই রকম লাগলো। মনে হতো গল্পগুলোকে টেনে হেঁচড়ে ইলাস্টিকের মতন বড় করা হয়েছে। শেষের গল্প যেটা, নাস্তিক, এটা পড়া পর আসলে কিছুই বুঝলাম না লেখক কী বুঝাতে চেয়েছেন।
৩-৪ বার পড়ার মাঝখানে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলাম। এর মাঝখানে বিরক্ত হয়ে আরও দুই তিনটা অন্য উপন্যাস পড়ে শেষ করেছি। আমি আবার কোন বই শুরু করলে, সেটা শেষ না করে রেখে দেই না। তাই বাধ্য হয়ে বইটা শেষ করলাম।
এত বড় একটা বই, এত সময় নষ্ট করবে জানতে পারলে, সম্ভবত এই বইটা পড়তে আমি শুরুই করতাম না।
I don’t know...quite eerie and somewhat disturbing....none of these stories have any optimism....who said horror “just” has to be grim, sad and vengeful.... This anthology deserved at least one happy story!!
সৌমিত্র তন্ত্র বিষয়ক পড়াশোনা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই ঠিকই। কিন্তু গল্পগুলো ঠিক যেন দাঁড়ালো না। মানে সাধারণ মানুষ যাদের তন্ত্র বিষয়ে বিশেষ পড়াশোনা নেই (যেমন আমি), তারা গল্পগুলির পুরো রসটা নিতে পারবেন না।
আমার তো মনে হয়েছে গল্পে যখন-তখন যা খুশি ঘটতে পারে। প্রতিটা গল্পেই একাধিক ভয়ের কারণ পর পর ঘটতে থাকে, সাবকনশাস মাইন্ড মোটামুটি ক্লাইম্যাক্স এর জন্য রেডি হয়ে যায়। কাজেই শেষে ব্যাপারটা "ও আচ্ছা ওরকম হোল, বাবা ! কি ভয়ঙ্কর !" এরকম একটা জায়গায় চলে যায়।
গল্পগুলো খারাপ নয় একেবারেই, বরং তন্ত্র-বিষয়ক ভয়ের গল্পের মধ্যে বেশ উঁচু জায়গায় থাকবে হয়তো। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে কতোটা দাগ কাটবে বলা মুস্কিল।
চতুর্থ তারাটি গল্পগুলোর অভিনবত্বের জন্য। তান্ত্রিক হরর জনার এর সাথে হালফিলেই পরিচয় হওয়ায় ই হয়তো এখনও জানা ছিলনা যে আমাদের ঠাকুর-দেবতাদের নিয়েই এরকম ভয়াল ঘটনাবলীর অবতারণা হতে পারে!
গল্পগুলো প্রায়ই চিত্তবিদারক হয়ে ওঠে। যেসব চরিত্ররা সেসব ভয়াল হতবুদ্ধি কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় তারা সকলেই প্রায় মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে! গল্পগুলো গল্প কম, বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার আখ্যান বলে বেশি মনে হয়। সম্ভবতঃ সেই কারণেই কয়েকটা গল্প অসমাপ্ত বলে মনে হয় ও পাঠকের মনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি করে, ভাবিয়ে তোলে ...