কাল্পনিক গোয়েন্দাকাহিনী তো আমরা প্রতিনিয়তই পড়ি। কিন্তু জটিল এই পৃথিবীতে সত্যিকারের গোয়েন্দাকাহিনীর সংখ্যাই এতো বেশি, সেগুলো পড়তে গেলেই এক জীবন ফুরিয়ে যাবে।
তাছাড়া ফিকশনের তুলনায় নন-ফিকশন স্পাই স্টোরি পড়ার মধ্যে বাড়তি একটা লাভও আছে। এর মাধ্যমে গল্পের পাশাপাশি ইতিহাসের একটা অংশও জানা যায়, জটিল আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
আর সেজন্যই আমার প্রথম বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করেছি ট্রু স্পাই স্টোরিকে। মোট ছয় জন সত্যিকারের গুপ্তচরের কাহিনী বাছাই করেছি, যাদের জীবনের গল্প কাল্পনিক গোয়েন্দা উপন্যাসকেও হার মানায়। চারটা কাহিনী নিয়েছি চারটা বিখ্যাত নন-ফিকশন থ্রিলার বই থেকে। আর বাকি দুটো কাহিনী লিখেছি বিভিন্ন ডকুমেন্টারি, আর্টিকেল এবং লিকড ডকুমেন্ট থেকে তথ্য নিয়ে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে ‘স্পাই স্টোরিজ’-এ একই বইয়ের ভেতর থাকছে এসপিওনাজ জগতের ছয়টা শ্বাসরুদ্ধকর সত্য কাহিনী, যেগুলোতে মূল বইগুলোর থ্রিলিং অংশের আমেজ বেশ ভালোভাবেই উঠে এসেছে, কিন্তু বইগুলোর বাহুল্য অংশগুলো থাকছে না।
কাহিনীগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি বিখ্যাত স্পাইদেরকে এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত, কিন্তু একইসাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পাইদেরকে অগ্রাধিকার দিতে। সেই সাথে চেষ্টা করেছি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পেশাদার স্পাইদের গল্প না বলে এমন স্পাইদের গল্প বলতে, যারা গুপ্তচরবৃত্তির মতো ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে ঘটনাচক্রে– কেউ আদর্শের খাতিরে, কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য, আর কেউ নিছক অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়।
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা। জন্মের পর থেকেই লিবিয়াতে পড়ে আছি। পড়াশোনাও করেছি এখানেই - প্রথমে বাংলাদেশী স্কুলে, পরে লিবিয়ান ইউনিভার্সিটিতে।
২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়ে ছিলাম গাদ্দাফীর জন্ম এবং মৃত্যুস্থান সিরতে। এরপর চাকরির সুবাদে দিন কাটিয়েছি ত্রিপোলিতে, বেনগাজিতে এবং ব্রেগায়।
পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, তবে শখ বিচিত্র বিষয়ে। সেগুলো নিয়ে জানতে, চিন্তা করতে এবং লেখালেখি করতে পছন্দ করি। লিখি ফেসবুকে এবং অনলাইন মিডিয়া হাউজ Roar বাংলায়।
তিন-চারদিন আগে ‘ স্বরে অ' প্রকাশনীর প্রকাশক সাহেব ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন তাঁর প্রকাশনীর বিভিন্ন বই নিয়ে কথা বলতে। তো ‘ স্পাই স্টোরিজ ‘ নিয়ে কথা বলার সময় তিনি একটা তথ্য জানালেন যে বেশিরভাগ পাঠক নাকি বইটা শেষটা করে একটাই মন্তব্য করে ‘ পৃষ্ঠা এত কম কেন!’। বলতে দ্বিধা নেই বইটা শেষ করে আমারও প্রথম প্রতিক্রিয়া ‘ এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল!’
টাইটেল ‘ স্পাই স্টোরিজ ‘ আর সাবটাইটেল ‘ এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি' থেকেই বইটার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। লেখক বইটিতে জেমস বন্ড বা মাসুদ রানার মতো কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র নয় বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিক নির্ণয়কারী ছয়জর রক্তমাংসের মানুষ গোয়েন্দার কাজকারবার তুলে ধরেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের দেশের প্রতি ব্রীতশ্রদ্ধ হয়ে, কেউ কেউ শুধুমাত্র টাকা আর ক্ষমতার লোভে আবার কেউ কেউ দেশ ও জাতির মায়ায় বেছে নিয়েছিলেন গুপ্তচরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু মহাগুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব।
বইটা আমার ভালো লেগেছে দুইটা কারণে। প্রথমত লেখক আমাকে ছয়জন গুপ্তচরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বড় অদ্ভুত এসব মানুষগুলো। এদের মধ্যে যেমন আছে টাকার লোভে শত্রুদেশের হাতে বিলিয়ন ডলার মূল্যের তথ্য তুলে দেওয়া মানুষ আবার রয়েছে সিআইএর নাকের ডগায় বসে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তথ্য সরবরাহ করা মানুষ। একদিকে যেমন রয়েছে বানান না জানা গোয়েন্দা আবার অন্যদিকে রয়েছে এমন একজন মানুষ যার জন্য পৃথিবীর মানচিত্রে এখনও টিকে আছে একটা দেশ। এভাবে লেখক গোপন এক দুনিয়ার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন যার সম্পর্কে আমার বলতে গেলে তেমন ধারণাই ছিল না। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আশরাফ মারোয়ানের কাহিনিটা। সে ছিল এমনই এক গুপ্তচর যাকে এক দেশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করে আর শত্রুদেশ নিজেদের ইতিহাসের সেরা গুপ্তচর উপাধি দেয়! আনোয়ার আল-আউলাকির জঙ্গী হয়ে ওঠার বিষয়টাও বেশ ভাবিয়েছে; প্রচলিত বয়ানে তো আমরা এমন গল্প শুনতে পারি না।
দ্বিতীয় যে বিষয়টা ভালো লেগেছে সেটা হলো লেখকের ভাষার ব্যবহার এবং বর্ণনাভঙ্গি। লেখক আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকায় তাঁর ‘সুস্বাদু’ ভাষা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা ছিল। আবার রোর বাংলায় লেখকের কিছু আর্টিকেল পড়া থাকায় বর্ণনাভঙ্গিও অপরিচিত ছিল না। তাই বইটা যখন পড়া শুরু করলাম তখন বিষয়বস্তু আর লেখকের ভাষা মিলে এমন একটা ঘোরের সৃষ্টি করেছিল যে এক বসাতেই শেষ করে ফেলেছি বইটা! লেখক যেভাবে কাহিনি সাজিয়েছেন, তথ্যের ভারে ক্লান্ত না করে যেভাবে থ্রিলিং ভাবটা ধরে রেখেছেন তা অনবদ্য ছিল। মোটের উপর, এটা ছিল এমন একটা বই যা শুরু করলে আর শেষ না করে ওঠা যায় না!
ভাল লেগেছে বইটা। ছয়টা গল্প আছে, সবগুলোই ভাল। আগ্রহ ধরে রাখার মতো। আর যেহেতু এগুলো সব সত্যি কাহিনী, তাই পড়ার সময় অন্যরকম একটা আনন্দ পাওয়া যায়। থ্রিলার পড়ার পরিপূর্ণ আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে বাস্তবের ব্রিলিয়ান্ট সব স্পাইদের কাহিনী পড়ে! নিঃসন্দেহে মজার ব্যাপার এটা। ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিটাও আরেকটু ভাল করে জানতে ইচ্ছে করে - এগুলো উপরি পাওনা।
বইটা অর্ধেক পড়া হলে মনে হয়েছিল আমি সম্ভবত ৪ দেবো রেটিং, শেষে এসে মনে হলো ৪ দেয়াটা অবমূল্যায়ন হবে, ৫/৫ দিলাম। অপশন থাকলে আমি সম্ভবত ৪.৫/৪.৬ দিতাম। যেটুকু কম, তার কারণ হচ্ছে আমার মনে হয়েছে, লেখকের গল্প বলার ভঙ্গিতে আরেকটু উন্নতি করার সুযোগ আছে। বর্ণনাভঙ্গি আরেকটু সহজ, আরেকটু সাবলীল।
এই বইয়ের সিক্যুয়াল বের হলে বা সিরিজ আকারে আসলে ভাল হতো। আসবে কি?
বইটিতে মোট ছয় জন গুপ্তচরের কাহিনী আছে। বইটির বিশেষত্ব হল এর প্রতিটি ঘটনাই বাস্তব। প্রতিটি কাহিনীতেই আছে টান টান উত্তেজনা। কাঠখোট্টা বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সহজ ভাষায় লিখেছেন লেখক। ইতিহাস যদি এত সহজ করে লেখা হয়, তাহলে পড়তে কোন ক্লান্তি আসে না। বইটি পড়ার আগ্রহ থাকলেও পড়ি পড়ি করে পড়া হচ্ছিলো না৷ বইটি নিয়ে চমৎকার একটি ভিডিও রিভিউ আছে। আগ্রহীরা চাইলে নিচের লিংকে যেয়ে ভিডিওটি দেখতে পারেন 👇
এবারের বই মেলায় যে বইগুলো নিয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম তার মধ্যে অন্যতম মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা ভাইয়ের ‘স্পাই স্টোরিজ’। রকমারির প্রি-অর্ডারের সৌজন্যে বইটা হাতে পাই অর্ডার করার ১৫ দিন পরে 😊 প্রি-অর্ডার নিয়ে আগেও কয়েকবার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি এইজন্য প্রি-অর্ডারে আর কোনো বই কিনব না বলে ঠিক করেছি। তবে বইটা পড়ার পর তিক্ত অভিজ্ঞতা সব ভুলে গেলাম। লেখক এতটা সরলভাবে জটিল এসপিওনাজ জগত নিয়ে সুন্দর বর্ণনা করেছেন যে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো বইটি পড়তে বাধ্য করেছে।
বইটিতে ছয় জন দুর্ধর্ষ স্পাই বা গুপ্তচরের কিছু অবিশ্বাস্য কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছেন অ্যাডলফ তোলকাচভ। তিনি ছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিলিটারির একজন রাডার বিশেষজ্ঞ। তাকে বলা হতো বিলিয়ন ডলার স্পাই। কারণ, তিনি স্নায়ু যুদ্ধের সময় সিআইএকে প্রথম দিনেই যে পরিমাণ তথ্য দিয়েছিলেন, সিআইএ কোনো স্পাইকে প্রশিক্ষণ দিয়েও এত তথ্য উদ্ধার করতে পারত না। খুবই উপভোগ করেছি এই বিলিয়ন ডলার স্পাইয়ের গল্প। এরপর রয়েছেন ব্রায়ান রিগ্যান। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি স্পাই বানানও করতে জানতেন না। তিনি ছিলেন ডিসলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত। এই রোগীরা প্রচলিত শব্দগুলোকে ঠিকভাবে লেখতে পারে না। রিগ্যানকে দেখে কেউই ভাবতে পারেননি তিনি এত বিপজ্জনক কাজ করতে পারেন! তিন নাম্বারে আছেন এজেন্ট স্টর্ম। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা। ভবগুরে এক শ্বেতাঙ্গ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কীভাবে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে তা জানতে পারবেন। এরপর আছেন শুলা কোহেন। নিজের রূপ আর গুণ দিয়ে কীভাবে শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের থেকে তথ্য উদ্ধার করতেন তা জানতে পারবেন এই অধ্যা���় পড়লে।
বইয়ের ছয়জন স্পাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার লেগেছে পাঁচ নম্বরের আশরাফ মারোয়ানকে নিয়ে লেখাটা। এই লোক ছিলেন মোসাদের মিশরীয় এঞ্জেল। অর্থাৎ, মিশরীয় হলেও তিনি ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিশরীয়রা তাকে তাদের এজেন্ট মনে করে। একইসাথে ইসরায়েলিরাও তাকে মোসাদের এজেন্ট মনে করে! অনেকে বলেন, তিনি ছিলেন ডাবল এজেন্ট। অর্থাৎ, নিজের সুবিধা অনুযায়ী দুই পক্ষের হয়েই কাজ করতেন। কেন তাকে নিয়ে এত বিভ্রান্তি, তা বইটা পড়লেই বুঝবেন। খুবই চাঞ্চল্যকর লেগেছে এই স্পাইয়ের গল্পটা।
সবার শেষে আছেন আনা মন্টেজ। তিনি ছিলেন আমেরিকান নাগরিক, কিন্তু নিজের রাষ্ট্রের সব গোপন তথ্য দিয়ে দিতেন কিউবার কাছে। এই গল্পটা পড়ার পর মনে হবে যেন সিনেমার কাহিনী! কারণ, একদিকে আনা মন্টেজ কিউবার কাছে তথ্য পাচার করতেন, অন্যদিকে তাকে ধরার জন্য এফবিআইয়ের হয়ে কাজ করেন তারই আপন ছোট বোন! তারা কেউই কারো ব্যাপারে জানতেন না যে তারা কার পেছনে ছুটছেন বা কার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন!
সব স্পাইয়ের গল্প পড়লেই বেশ কিছু মিল পাওয়া যায়। তারা গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন নিজের দেশেরই বিরুদ্ধে। শুধু যে টাকার জন্য তারা এমন করেছেন তা না। কেউ করেছেন নিজের রাষ্ট্র দ্বারা যথাযোগ্যভাবে মূল্যায়িত না হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে, কেউ করেছেন নিজের আদর্শের জন্য। সবারই গুপ্তচরবৃত্তির পেছনে এমন একটা কারণ ছিল যা আসলে টাকা দিয়ে মাপা যায় না।
লেখক মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা ভাই অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখি করছেন। বছরখানেকের কিছুটা সময় বেশি হলো তাকে ফলো করি। খুবই সুন্দর ভাষায় গুছিয়ে লেখতে পারেন তিনি। রোর বাংলায় প্রায় ৪০০টি আর্টিকেল লেখেছেন। এই বইয়েও তার সুন্দর গোছানো লেখা এক বসায় বই পড়তে সাহায্য করেছে। বইটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিল কোনো গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ছি, অথচ প্রতিটি ঘটনাই বাস্তব!
বইয়ের আরেকটি চমৎকার দিক, প্রতিটি স্পাইয়ের গল্পের শেষে উপযুক্ত রেফারেন্স দেয়া। এখানে দেখলাম পশ্চিমা বই, সংবাদপত্রের পাশাপাশি আরবীভাষী সাইট, এমনকি হিব্রু ভাষার সাইট থেকেও তথ্য নেয়া হয়েছে। লেখক দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় থাকেন। তাই এসব ভাষায় তার দক্ষতা থাকায় পশ্চিমা ও প্রাচ্য দুই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বইয়ে কাহিনী উঠে এসেছে। এতে লেখকের বায়াসডনেস থাকার সম্ভাবনা কমে গেছে।
ত্বোহা ভাই এর আগে বিভিন্ন সংকলনে দুই একটা লেখা দিলেও তার পূর্ণাঙ্গ বই যতদূর জানি এটাই প্রথম। প্রথম বইয়ের টপিক নির্বাচনেও খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এসব গল্প সাধারণত মানুষের নেতিবাচক দিকগুলোই উঠে আসে। আর নেতিবাচক দিক নিয়ে মানুষের আগ্রহও বেশি থাকে। বইয়ের মার্কেটিংয়েও তিনি খুব যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।
উৎসর্গটা পড়েও ভালো লেগেছে। তিনি বাবা-মাকে উৎসর্গ করেছেন। এখানে একটা কথা বলেছেন তারা পরিবারে সামনাসামনি সমালোচনা করলেও প্রশংসা করতে অস্বস্তিতে ভোগেন। এমন পরিস্থিতি আমার পরিবারেও। লেখক পরিচিতি লেখেছেন রোরের ডেপুটি এডিটর অন্তিক ভাই। তিনিও আরেকজন দুর্দান্ত লেখক ও সম্পাদক। ডেল এইচ খান ভাইয়ার লেখাও আছে বইয়ের ফ্ল্যাপে। উনার আর্ট অব ওয়ার আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকলন লেখাটা সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে খুব দ্রুতই।
বইয়ের নেতিবাচক দিক বলতে ছবি না থাকার কথা দেখেছি কিছু রিভিউয়ে। আমার কাছেও মনে হয়েছে স্পাইদের ছবি থাকলে লেখাগুলো আরো পূর্ণতা পেত। অন্তত বইয়ের প্রচ্ছদে দেয়া যেত ছবিগুলো। আর বইটা খুললেই একটা বাজে গন্ধ নাকে এসে লাগে। এটা ছাপানো সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে হয়েছে শুনলাম। পরবর্তী সংস্করণে এদিকটা লেখক ও প্রকাশক খেয়াল রাখবেন আশা করি। ১১২ পৃষ্ঠার এই বই আপনাকে গোয়েন্দা কাহিনী শোনানোর পাশাপাশি ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়েও অনেক কিছুর ধারণা দেবে।
জীবনে যে অল্প স্বল্প গোয়েন্দা-গল্প পড়ার সুযোগ হয়েছে, মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। কাল্পনিক সেইসব গোয়েন্দার প্রতি অন্যরকম একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুনিয়াজুড়ে সত্যিকারের যে গুপ্তচররা বিশ্ব রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে তাদের গোপন তৎপরতায়, তাদের সম্পর্কে জানতাম খুবই কম। গল্পকে হার মানিয়ে দেয়ার মত সেইসব সত্য কাহিনী নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা লিখেছেন তার "স্পাই স্টোরিজ" বইটি। এসপিওনাজ জগতের ছয় গুপ্তচরে স্পাই জগতে জড়িয়ে পরার কারণ, স্পাই জীবনের উত্থান পতন এবং পরিণতি নিয়ে লেখা হয়েছে বইটি।
অ্যাডলফ তোলকাচভ, সোভিয়েত ইনিয়নের মিলিটারি রাডার ডিপার্টমেন্টে কর্মরত এই ইঞ্জিনিয়ার নিজ দেশের গোপন তথ্য পাচার করতো সিআইএর কাছে। আমেরিকার বিমানবাহিনীর অধিনে কর্মরত ব্রায়ান রিগ্যান তথ্য বিক্রি করতে চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মর্টেন স্টম, উশৃংখল জীবন ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করার পর মেলামেশা শুরু করেন আল-কায়েদার সদ্যসদের সাথে। এরপর আমেরিকার গুপ্তচর হিসেবে পাচার করতে থাকেন আল কায়েদার তথ্য। জায়নিস্ট শুলা কোহেন লেবাননের রাজধানীতে বসে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতো ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতো মিশরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আশরাফ মারোয়ানও। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা আনা মন্টেজ ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নয় বরং দায়িত্ববোধ থেকে শত্রু রাষ্ট্র কিউবার কাছে পাচার করতো গোপন তথ্য!
"স্পাই স্টোরিজ" বইটিতে ছয় গুপ্তচরের গুপ্তচরবৃত্তির বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন লেখক। কেউ টাকার লোভে, কেউ শোষণ- বঞ্চনার শিকার হয়ে, কেউবা দেশপ্রেম থেকে বেছে নিয়েছিল এই পেশা। পদে পদে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে শত্রুর ডেরা থেকে তথ্য পাচারে তাদের শ্বাসরুদ্ধ কাহিনী পড়েছি মুগ্ধ হয়ে। গুপ্তচরদের জীবনের অনুসঙ্গ আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সেই সূত্রে বিশ্ব রাজনীতির কিছু তথ্যও জানা হলো। আশরাফ মারোয়ান ছাড়া অন্য সবার গল্পই আমার কাছে নতুন ছিল। এই রহস্য পুরুষের রহস্য উন্মোচন হলো না এখানেও। ব্রায়ান রিগ্যানের জন্য কেন যেন মায়া লাগছে (স্কুল জীবনে ভুল হওয়ার কথা না এমন বানানে প্রচুর ভুল হতো আমার তাই হয়তো)। নতুন বিষয় 'ডিসলেক্সিয়া'র সম্পর্কে জেনে ভালো লেগেছে। অবাক লেগেছে আনা মন্টেজের গুপ্তচরবৃত্তির কারণ জেনে, মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে একটা মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিল কতো সহজে!
"স্পাই স্টোরিজ" বইটার প্রচ্ছদের 'কালার কম্বিনেশন' পছন্দ হয়েছে তবে প্রচ্ছদের বিষয়বস্তু আরো ক্রিয়েটিভ হতে পারতো। বইয়ের নাম মানানসই। ভাষা সবালীল, গল্প বলার ঢঙেই লেখা। তবে গুপ্তচরদের জীবনে যতোটা টানটান উত্তেজনা লেখকের উপস্থাপনে আনুপাতিকহারে সেটা কম মনে হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ড লিখতে চাইলে এই দিকটাতে একটু নজর দিবেন লেখক তেমন আশা করছি। তথ্যসূত্র দেয়া হয়েছে প্রতি অধ্যায়ের শেষে। তথ্যসূত্রের বিষয়ে যাদের খুঁতখুঁতে স্বভাব আছে, তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন এই বিষয়ে। বইটা রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতি পাঠককে আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম। সব মিলিয়ে এক কথায় বলতে গেলে 'চমৎকার একটা বই' এটাই বলতে হয়।
খুবই আগ্রহব্যঞ্জক ও তথ্যবহুল একটি বই। গোয়েন্দাদের নিয়ে বাংলায় এরকম বই আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমার সাধ্য থাকলে বাংলাদেশের প্রত্যেক গোয়েন্দাবাহিনীতে এটা বাধ্যতামূলক করে দিতাম পড়ার জন্য।
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা ভাই এর লেখার ফ্যান ছিলাম আগেই। তার মত করে এত সুন্দর করে নন ফিকশন লেখতে পারে এখন এমন লোক খুব কমই আছে।
বইটি পড়েছিলাম অনেকদিন আগে৷ আমার এখনো মনে আছে ধরা পরা সেইসব গোয়েন্দাদের। মিশরের প্রধানমন্ত্রী পর��বর্তন এবং হত্যা, ইসরাইল এবং লিবিয়ার সেই মহিলার কথা, মনে পরে সেই লোক যিনি অনেকগুলো রাষ্ট্রীয় তথ্য লুকিয়ে রেখে ছিলেন জংগলে। বিশেষ সব ভাষা আর গাছকে ব্যাবহার করে, এমন আরো কয়েকটা ঘটনা আছে যা সত্য কাহিনীর উপর লিখেছেন মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা। সত্যিই অসাধারন ছিলো বইটি।
সাধারণত, লেখক যখন স্বদেশি হয়েও প্রবাসী হয় তখন পাঠকের মনে শব্দচয়ন আর বাক্যগঠন নিয়ে সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। উপরন্তু, লেখক ত্বোহা জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও তার জীবনের পুরোটাই কেটেছে লিবিয়াতে। তাই এখানে পাঠকের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই ব্যাপারটিই যেন পূর্বাশঙ্কার মতোই আঁচ করতে পেরেছিলেন লেখক। পাঠককে বেশ ভালোই চমকে দিয়েছেন লেখক, নিজের শব্দচয়ন আর সেই শব্দের জালে বুনে বাক্যগঠনের তালে।
সহজ, সাবলীলতা আর প্রাঞ্জলতা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল লেখকের লেখনশৈলীতে। বিন্দুমাত্র ভিন্নতার চিন্তা না করেই একদম চিরাচরিত আর প্রচলিত সাধারণ বয়ানেই গল্প বলে গেছেন তিনি। চেষ্টা করেছেন অতি সহজে যেন গুপ্তচরবৃত্তির জগত থেকে পাঠকদেরকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রে বলতেই হয় যে, বাজিমাত করেছেন তিনি। লেখকের বর্ণনাভঙ্গির প্রাঞ্জলতা যে কোনো পাঠককে নিয়ে দাঁড় করাবে স্নায়ু যুদ্ধের প্রাক্কালে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের সেই গুপ্তচরবৃত্তির মায়াজালে।
ননফিকশন গল্পটাকেই সেমিননফিকশনে রূপান্তরিত করতে পুরোপুরি সফল হয়েছেন লেখক। তাই মনে হয় না পাঠকের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে ননফিকশনের এই উত্তেজনায় পূর্ণ রোলার কোস্টারে চড়ে গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়া থেকে ঘুরে আসতে। প্রতিটা গল্পের শুরুতেই লেখক যে গল্পের ফাঁদ পেতেছেন পাঠকদের উদ্দেশ্য – তা একইসঙ্গে প্রশংসার দাবীদার এবং সফলও বটে। পাঠকদেরকে “তারপর কি হলো?” সূচক প্রশ্নে আঁটকে রেখে পুরো গল্পটা শুনিয়ে দেয়ার দারুণ ছক কেটেছেন লেখক। গুপ্তচরদের নিয়ে লিখতে গিয়েই এমন গুপ্ত কৌশল কিনা তা লেখকই ভালো জানেন!
গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ছক কাটতে হলে এমন নিখুঁতভাবে করতে হয় যেন কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। লেখক তেমনই চেষ্টা করেছেন যেন পাঠক বই নিয়ে দ্বিতীয় কিছু ভাবার বা বলার সুযোগ না পায়। তবুও চাহিদার তো আর শেষ নাই। তাই পাঠকও জানাবেই লেখকের ফাঁকফোকরের কথা। শুরুতেই বলতে হয় ছবি প্রসঙ্গ। কেননা, ননফিকশন বই সত্যতার উপর নির্ভরশীল বিধায় এতে প্রাসঙ্গিক ছবি যুক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক; হোক তা সাদা-কালো বা রঙিন। কেননা, সত্যতার মাঝে তো আর কল্পনার সুযোগ নেই। তাই, ছবির আবশ্যিকতা লেখকের লেখনশৈলীর মুগ্ধতাকেও ছাপিয়ে চোখে লেগেছে।
উপরে উল্লেখিত আছে যে, উনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কাল থেকেই গুপ্তচরবৃত্তি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে গুপ্তচরবৃত্তি এমন এক শিল্পে রূপান্তর লাভ করেছে যে, তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। লেখক মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা রচিত স্পাই স্টোরিজ সেই শৈল্পিক গুপ্তচরবৃত্তিকে সাহিত্যে রূপদান করেছে, একইসঙ্গে গ্রন্থটিও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আপনি কোনোভাবেই শত চেষ্টা করেও এই গ্রন্থের প্রশংসা ব্যতীত সমালোচনার সুযোগ পাবেন না। বইটা খোলা মাত্রই লেখকের পূর্ব পরিকল্পিত ছকে আটকে পড়বে যে কোনো পাঠক। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ গুপ্তচরদের নিয়ে লিখতে গিয়ে পাঠকদের উপর এমন গোয়েন্দাগিরি করার জন্য।
'স্পাই' শব্দটির সাথে অপরিচিত নই অবশ্যই, কিন্তু এটা সত্য যে এটা নিয়ে আমি খুব একটা মাথাও ঘামাইনি। আমার রহস্য রোমাঞ্চ ঘরানাটি বেশ পছন্দের। এই জনরার বা ঘরানার ভালো বই বা চলচ্চিত্র পেলে আমি গিলে ফেলার চেষ্টা করি। এই বইটি আমার পাঠ্য তালিকায় রেখেছি মূলত এই কারনে। "Spy" শব্দটি যেখানে রয়েছে সেখানে রোমাঞ্চকর কোনো অভিজ্ঞতা হবে না তা হয় কি করে?
সুতরাং একটি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে শুধু করেছিলাম বইটি কিন্তু শেষ হয়েছে একটি ছোট্ট অতৃপ্তি নিয়ে। অতৃপ্তির ব্যাপারটা নিয়ে একটু পরে বলছি। তার আগে বইটি নিয়ে কিছু বলি....
"স্পাই স্টোরিজঃ এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি" বইটিতে স্থান পেয়ে মোট ছয়টি কাহিনি। না, ঠিক কাহিনি নয়। ফিচার কিংবা আর্টিকেলের আদলে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে (আশা করি ভুল বলিনি)। যে ছয়জন গুপ্তচরের জীবন, কর্ম এবং এসপিওনাজ জগতে তাদের পদচারনার ঘটনা বলা হয়েছে, লেখকের ভাষ্যমতে তারা তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। কম পরিচতদের কেন বইটিতে স্থান দেয়া হয়েছে বিখ্যাতদের কেন দেওয়া হয়নি প্রশ্নটি উঁকি দিয়েছে বইকি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, লেখকের অনেকগুলো দায়বদ্ধতার মধ্যে অন্যতম একটি দায়বদ্ধতা হলো পাঠককে নতুন কিছু জানানো। যারা বিশ্ব রাজনীতির খবর রাখেন তারা RAW,BND,MSS,MOSAD, CIA,FCB ইত্যাদি এমপিওনাজ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও জানেন তাই এটি সহজেই অনুমেয় যে বিখ্যাত স্পাইদের জীবন তাদের নখদর্পণে।
সুতরাং, যারা বিখ্যাত তাদের জীবন নিয়ে লেখা কাহিনি সংকলন প্রকাশ করাটা পাঠকের বইয়ের প্রতি আগ্রহবোধ খানিকটা নষ্ট করে। যেহেতু লেখক সত্য কাহিনি অবলম্বনে ছোটগল্প নয় বরং সত্য কাহিনিটিই প্রকাশ করেছেন বইটিতে। আর এখানেই লেখকের বিচক্ষণতা প্রকাশ পায়।
লেখকের পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতা লক্ষণীয় প্রতিটি রচনায়। কাহিনি শেষে প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়েছে ঘটনাগুলোর সন্দেহ নিরসন ও বাহুল্য তথ্যগুলোর অপর্যাপ্ততা নিবারন করার জন্য যা যেকোনো পাঠকই উপকৃত হবে।
লেখকের রচনাভঙ্গি চমৎকার, একজন আটপৌরে, সাধারন পাঠক তার মনে ও মগজে যে ভাষার রচনা ধারন করতে পারবেন ঠিক তেমন সহজ, প্রাঞ্জল এবং মসৃণ লেখা হয়েছে। সুতরাং যেকোনো পরিস্থিতি, যেকোনো পরিবেশে এই বই পড়া সম্ভব (আমি শাটল ট্রেনে করে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে এই বইয়ের প্রায় পুরোটা পড়ে ফেলেছিলাম 🙃🙃)
এবার আমার অতৃপ্তির কথা বলিঃ
১. বইটি বেশ ছোট। ১১২ পৃষ্ঠার বই, মাত্র ৬ জন গুপ্তচরের কাহিনি। এতো জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লেখা বইটি আরেকটু বড় হলে ভালো হতো। খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল।
২. বইটির নাম বাংলায় হলে ভালো হতো।
৩. বইটিতে বিশেষ তথ্যসম্বলিত বড় কোনো ভূমিকা নেই। গুপ্তচরদের জীবন আমার-আপনাদের মতো ছকে বাঁধা নয়। হয়তো এমন অনেক পাঠক রয়েছেন যারা "এসপিওনাজ" নামটাই শোনেননি। গুপ্তচরদের জীবন এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের হয়ে তারা কাজ করে তাদের সম্পর্কে একটু কিছু বললে বইটা সম্পূর্ণ মনে হতো।
শার্লক হোমস, তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা এসব কাল্পনিক গোয়েন্দাদের গল্প তো অনেক পড়লাম। কিন্তু এই বইটি হয়তো তাদেরকেও হার মানাবে।
সত্যিকারের এসপিওনাজ জগত যে কতটা ভয়াবহ তা আগে জানতাম না । ছয়জন গোয়েন্দার জ���বনী নিয়ে বইটি লেখা। মোসাদ, CIA, FBI এরা প্রাধান্য পেয়েছে।
ছোটবেলায় বাবার মারধর কারণে কর্তৃত্ববাদ বিরোধী মানসিকতা এবং পরবর্তীতে এই কারণে CIA উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিজ দেশের অন্যায় সিদ্ধান্তের কারণে ভুক্তভোগী দেশের জন্য কাজ করেন তাও বিনে পয়সায় স্বেচ্ছায়।তিনি আনা মন্টেজ: যে আমেরিকান স্পাই কিউবাকে ভালোবেসেছিলো।
আমির খান অভিনীত একটি একটি সিনেমা "তেরে জামানে পার" হয়তো অনেকেই দেখেছেন। ঐ সিনেমার প্রধান বিষয় ছিল "ডিসলেক্সিয়া" নামের এক বিরল রোগ।এই শারীরিক অক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এক আমেরিকান স্পাই তার দেশকে ব্ল্যাকমেল করছিল। তিনি ব্রায়ান রিগ্যান: যে স্পাই বানান করতে জানত না।
এবার আসি Egypt ANGEL এর গল্পে। আমার পড়া সবচেয়ে সেরা গল্প এটি। বলছি আশরাফ মারোয়ান এর কথা। মোসাদ তাকে নাম দিয়েছিল মিশরীয় এন্জ্ঞেল। তবে তিনি ছিলেন ডাবল এজেন্ট। ইসরাইল এবং মিশর দুই দেশের বিরুদ্ধে একে অপরের হয়ে কাজ করতেন। তাকে বলা হয়ে থাকে মোসাদের সবচেয়ে সেরা এজেন্ট। কারণ তার দেয়া তথ্যের কারণে ইসরাইল মিশরের একটি গোপন অপারেশনের কথা জেনে যায় এবং বহু ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষ বেঁচে যায়। আবার সে মিশরকেও হতাশ করেনি। ইসরাইলকে দেয়া তথ্যে সে ইচ্ছে করে সামান্য ভুল করেছিল। এভাবে সে মিশরের স্বার্থ রক্ষা করে। বলা হয়ে থাকে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তাকে এই কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। ২০০৭সালের ২৭ জুন দুপুর ১.৩০ মিনিটে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের এক কিলোমিটার দুরে একটি পাঁচ তলা ভবনের বারান্দা থেকে ৬২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে পড়ে যেতে দেখে রাস্তার পথচারীরা। কিন্তু একটু পর দুজন আরবীয় লোককে ঐ বারান্দায় দেখতে পান এক পথচারী। ঐ বৃদ্ধই আশরাফ মারোয়ান।
মিশর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেছে। কিন্তু ইসরাইল তাকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেয়। তার মৃত্যুর রহস্য আজ পর্যন্ত উন্মোচিত হয় নি।
এরকম ছয়টি অসাধারণ গল্প নিয়ে এই বইটি লেখা।
সবশেষে লেখককে কৃতজ্ঞতা না জানালে অন্যায় হবে। তার অসাধারণ লেখনী থ্রিলার পাঠকদের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। কিছু অদ্ভুত সত্য ঘটনা পড়ে গিয়ে বার বার অবাক হচ্ছি।
HAPPY READING.
This entire review has been hidden because of spoilers.
প্রাঞ্জল ভাষায় মনোমুগ্ধকর ও লোমহর্ষক বাস্তব জীবন ভিত্তিক ৬ টি গোয়েন্দা ও প্রতি গোয়েন্দার ঘটনা সংবলিত নাতিদীর্ঘ বইটি পড়তে আমার সময় লেগেছে মাত্র ২ দিন। এতোটাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো একনিঃশ্বাসে পড়ে গেছি। সাধারণত এজেন্ট বা স্পাই হয় ২ ধরনেরঃ টার্নড এজেন্ট এবং ক্যারিয়ার এজেন্ট। টার্গেট ওর্গানাইজেশনের অভ্যন্তরে কর্মরত যে পোটেনশিয়াল এজেন্ট (PA) কে এজেন্ট হ্যান্ডলাররা বিভিন্ন ভাবে মোটিভেট করে নিজেদের এজেন্টে পরিণত করে তারাই মূলত টার্নড এজেন্ট। আর যারা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে নিজেরাই টার্গেট অর্গানাইজেশনে ইনফিল্ট্রেট বা অনুপ্রবেশ করে তারা ক্যারিয়ার এজেন্ট। মূলত ক্যারিয়ার এজেন্টদের কেই আমরা স্পাই ভেবে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টার্নড ও ক্যারিয়ার দুই ধরনের এজেন্টই স্পাই। এই বইয়ের সব কটি ঘটনাই কম বেশি টার্নড এজেন্টের। প্রতিটি এজেন্টের স্পাইং এর পিছনে মোটিভেশন, প্রস্তুতি, এক্সিকিউশন, ক্লান্ডেস্টাইন কমিউনিকেশন ও সর্বশেষ কম্প্রোমাইজড হওয়ার ঘটনা গুলো এতোটাই চমকপ্রদ যে মনে হবে কোনো স্পাই থ্রিলার পড়ছি বা হলিউডের কোনো তীব্র ক্লাইমেক্স সম্পন্ন স্পাই মুভি দেখছি। ডাইস্লেক্সিয়া আক্রান্ত এজেন্ট থেকে শুরু করে আরব জাতীয়তাবাদের জনক গামাল আব্দুল নাসেরের জামাতার ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট হয়ে ওঠার প্রতিটি ঘটনা ছিলো রোমাঞ্চকর ও উত্তেজনায় ভরপুর। নিখুঁত শব্দচয়ন, দক্ষ লিখনশৈলী ও ঘটনাগুলোর টুইস্ট, টার্ন ও ক্লাইমেক্স মিলিয়ে বইটি অবশ্যই একটি সুখপাঠ্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে৷ লেখকের নিকট প্রত্যাশা থাকবে ভবিষ্যতে এধরনের আরো অনেক বই তার কাছ থেকে আমরা উপহার পাবো।
লিউডের স্পাই থ্রিলারগুলো দেখে হয়তো আপনি অভ্যস্ত হতে পারেন, কিন্তু বাস্তব দুনিয়ার এস্পিওনাজ কেমন হয় সেটা জানেন কি? এ বইতে এরকম ৬টি সত্যিকারের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। আমেরিকা, লিবিয়া, মিসর, ইসরাইল, ইংল্যান্ড, রাশিয়া ইত্যাদি দেশজুড়ে ঘটে গিয়েছে যে ঘটনাগুলো। একেকটি ঘটনা যেন অন্যটি দেখে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
একজন ঠিক কেন স্পাই হবার সিদ্ধান্ত নেয়? আপনি পড়ে হয়তো অবাক হবেন, মোটামুটি সবাই নিজে থেকে এগিয়ে এসেছিল স্পাই হবার জন্য। কেউ করেছেন বিনা পয়সায়, কেউ স্পাইং করে হয়েছেন মাল্টিমিলিয়নিয়ার। সবার সিদ্ধান্তের পেছনেই একটি অদ্ভুত কারণ কাজ করত, কিন্তু সবার কারণ আবার একই না।
কাহিনীগুলো কী কী সেটার ভেতরে প্রবেশ করব না, পাঠকই পড়বেন একদিন না একদিন। কিন্তু ঘটনাগুলো সত্য হওয়াতে ভাবতে অবাক লাগে, কীভাবে পেরেছিলো তারা?
ত্বোহা ভাইয়ের লেখার বরাবরই ভক্ত আমি। সহজ ভাষায় বৈশ্বিক রাজনীতি উঠিয়ে আনাতে সিদ্ধহস্ত তিনি, এবার স্পাই থ্রিলার উঠে আসলো আর কী। গুপ্তচরদের নিয়ে আগ্রহ থাকলে নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন!
বইয়ের ভেতরে ভেতরে যে জিনিসটি মিস করেছি বড্ড বেশি, সেটি হলো ছবি। বইটিতে কোনোই ছবি নেই। অনেক কিছুই কল্পনা করতে হয়েছে, কিন্তু ননফিকশন বই হিসেবে ছবির ব্যবহার থাকলে ভালো হতো।
চমৎকার এক বই। নন-ফিকশন, কিন্তু টোনটা ফিকশন-ঘেঁষা। বাস্তব সব স্পাইয়ের দুর্দান্ত গল্প। আনা মন্টেজের প্রেমে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে পড়তে গিয়ে। মুগ্ধ করবে শুলা কোহেনের কাজ-কর্ম। ব্রায়ান রিগ্যানের গল্প পড়তে গিয়ে কষ্ট লাগবে। আশরাফ মারওয়ানের গল্প মনে করিয়ে দেবে মাসুদ রানার কথা। এজেন্ট স্টর্মের গল্প পড়তে গিয়ে বারবার মনে হবে, আমেরিকার ইসলামোফোবিয়া, প্রতারণা ও নির্মমতা আজকের জঙ্গীবাদকে যেখানে নিয়ে এসেছে, ওরা আরেকটু সহিষ্ণু, উদার হলে তা হয়তো হতো না। আওলাকি হয়তো পরিণত হতেন না জঙ্গিতে। পড়তে গিয়ে বোঝা যায়, পৃথিবীটা সাদা-কালো না, ধূসর। বিলিয়ন ডলার স্পাই তোলকাচভের গল্প একই ইঙ্গিত দেয় সোভিয়েত রাশিয়ার ব্যাপারে।
বাস্তব সব গল্পই এত ইন্টারেস্টিং, পড়তে পড়তে মনে হয়, বানানো গল্প পড়ার দরকার কী!
বইটাতে ছবিটবির খুব দরকার ছিল। স্পাইদের গল্পগুলো দারুণ, বইটাও এক টানে পড়ে ফেলা যায়। বিশেষত শুলা কোহেনের স্পাই স্টোরিটা আমার অসাধারণ লেগেছে, ঘটনাটা নিয়ে একটা ডকু দেখে ফেললাম গল্পটা পড়বার পর। আর আশরাফ মারওয়ানের গল্পটা নেটফ্লিক্স এর একটা সিনেমায় দেখেছিলাম। এই আরকি। কোনোভাবে হাতে আসলে এক টানে পড়ে ফেলতে পারেন। আহামরি কিছু না, আবার ফেলনাও না।
সিনেমায় গোয়েন্দাদের অপারেশনের সাফল্য কিংবা সাহিত্যের পাতায় গোয়েন্দাগিরি আমাদের মনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।তবে বাস্তবজীবনের গোয়েন্��াদের ঘটনাগুলো আরো অবিশ্বাস্য এবং কৌতূহলোদ্দীপক । একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে শুধুমাত্র অস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ করলেই হয় না, এর বাইরেও যে জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো শত্রুপক্ষের শক্তিমত্তা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করা। এর জন্যই দরকার একজন দক্ষ স্পাইয়ের, যিনি কিনা শত্রুর সাথে এক প্লেটে খাবার খাবেন এবং খাবারের বিবরণ জানিয়ে দিবেন তার নিজ পক্ষের কর্তা ব্যক্তিদের।
মোসাদ, কেজিবি, সি আই এ একেকটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা, যাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাঝে। এসপিওনাজ জগতের ৬ জন গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম আলোচিত স্পাইদের গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা নিয়েই বইটি সাজানো হয়েছে।
অ্যাডলফ তোলকাচভঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর রাডার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি। ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার হাতে আসে। সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণার কারণে যোগাযোগ করেন সোভিয়েতের শত্রু আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ এর সাথে। ছয় বছরের এসপিওনাজ জীবনে তিনি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন ২ মিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে তার দেয়া তথ্যের বিনিময়ে আমেরিকার সাশ্রয় হয়েছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। যা তাকে 'বিলিয়ন ডলার স্পাই' নামে পরিচিতি এনে দেয়।
ব্রায়ান রিগ্যানঃ বাপেরও বাপ থাকে অর্থাৎ দাদা আরকি। ইনি ছিলেন সি আই এ এর একজন অ্যানালিস্ট, ছিল টপ সিক্রেট ক্লিয়ারেন্স। যার জন্য খুব সহজেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোপনীয় তথ্য তার হাতের নাগালেই ছিল। খরুচে স্বভাবের হওয়ার কারণে অনেক টাকার ঋণ হয়ে যান তিনি। এছাড়া সহকর্মী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তার সঠিক মূল্যায়ন না করার ক্ষোভ থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন শত্রু রাষ্ট্রের কাছে তথ্য বিক্রি করার। লিবিয়ার কাছে প্রথম চেষ্টাতেই তার তথ্যগুলো হাতে পড়ে যায় লিবিয়ার কনস্যুলেটে থাকা এফবিআইয়ের আন্ডারকভার এক এজেন্টের কাছে!
এজেন্ট স্টর্মঃ বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠা এক বিপথগামী সন্তান, যার জীবনের একটি অংশ কেটেছে নেশা, ড্রাগস ব্যবসা এবং চুরি ডাকাতে করে।ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু ড্যানিশ পুলিশ এটাকে ভালোভাবে নেয়নি ফলে তার প্রতি আরো শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠে।ইয়েমেনে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসে তার সাথে পরিচয় হয় পরবর্তীতে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আনোয়ার আল-আওলাকি। আফগানিস্তানের জিহাদে যেতে না পেরে স্টর্ম হতাশ হয়ে পড়েন এবং একসময় ইসলাম ত্যাগ করেন। এদিকে আওলাকি এই ব্যাপার জানতেন না এবং স্টর্ম পূর্বের মতই আওলাকির সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যান। আওলাকির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সি আই এ তে একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।
শুলা কোহেনঃ অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার, চমৎকার হাসি কিংবা মানুষকে আকৃষ্ট করার স্বভাবজাত গুণ ছিল তার মধ্যে। মোসাদের আরেক স্পাই এলি কোহেনের সাথে নামের মিল থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল না। শুলা কোহেন যখন তার এসপিওনাজ জীবন শুরু করেন তখন মোসাদের জন্ম হয়নি। সবেমাত্র ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসা শুরু করেছে। রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় তার প্রতি কেউ কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেনি। তিনি প্রায় কয়েক হাজার ইহুদিদের লেবাননের মধ্য দিয়ে ইজরায়েলে প্রবেশ করতে সাহায্য করেন যা ছিল ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উপকরণ।
আশরাফ মারোয়ানঃ ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গোয়েন্দা হিসেবে অভিহিত আশরাফ মারোয়ান ছিলেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসেরের জামাতা এবং নাসেরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সিনিয়র উপদেষ্টা। উচ্চাকাঙ্খী এবং শ্বশুরের কাছ হতে তার যোগ্য সম্মান না পাওয়াটাই তাকে মোসাদের হয়ে কাজ করার উৎসাহ দেয়। ১৯৭০ হতে ১৯৯৮, দীর্ঘ ২৮ বছর তিনি মোসাদের হয়ে কাজ করেছেন এবং মোসাদের কাছ হতে নিয়েছিলেন অন্তত ৩০ লাখ ডলার।১৯৭৩ সালের চতুর্থ আরব ইসরায়েল যুদ্ধের ১৫ ঘন্টা আগে মোসাদের কাছে সম্ভাব্য যুদ্ধের কথা জানিয়ে দেন। তবে আশরাফ মারোয়ানকে অনেকে ডাবল এজেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছে, যার ফলে তার মৃত্যুর ঘটনা এখনো অমিমাংসিত রয়ে গেছে।
আনা মন্টেজঃ আনা মন্টেজ ছিলেন ডি আই এর একজন সিনিয়র অ্যানালিস্ট। তার অন্য দুই ভাই-বোনও ছিল এফবিআইতে কর্মরত। আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য কিউবার কাছে ফাঁস হওয়ার কারণে তদন্ত শুরু হয়, কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা আনা মন্টেজের নাম দেখে তার বিষয়ে দেখেন যে পুরো ক্লিয়ার। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন নাম আসে তখন তারা পুরোদমে তদন্ত শুরু করে দেয় এবং একসময় তথ্য পাচারের সম্পৃক্ততা পায়। তাকে ধরার জন্য অন্তত ৫০ জন এফবিআই এজেন্টকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি ছিলেন আমেরিকায় নিযুক্ত কিউবার সবচেয়ে উচ্চপদস্থ স্পাই। তবে তিনি কিউবার থেকে একটি টাকাও নেন নি। বরং তাদের হয়ে কাজ করেছিলেন নিজের নৈতিক দায়িত্ব হতে, আমেরিকার অন্যায় পররাষ্ট্রনীতির খপ্পর হতে কিউবাকে উদ্ধার করতে।
বইটি সত্যিই অসাধারণ। সত্য কাহিনি হলেও বইটা পড়ার সময় একটা থ্রিলার ভাব চলে আসছিল।আর লেখকের বর্ণনার কোনো ঘাটতি নেই, সাবলীলভাবে তিনি বলে গিয়েছেন এসপিওনাজ জগতের ৬ জন স্পাইয়ের জীবনের আলো-অন্ধকারের অধ্যায়।
টিভি পর্দায় কিংবা সাহিত্যে স্পাই কিংবা এসপিওনাজদের শ্বাসরুদ্ধকর অপারেশন আর অনিশ্চয়তাময় জীবনের গল্প দেখে ও পড়ে আমরা রোমাঞ্চিত হই৷ মনের কোনে হঠাৎ করে উঁকি দেয় সেরকম অ্যাডভেঞ্চারাস ও থ্রিলিং লাইফ লীড করার স্বপ্ন৷ কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, যাহ! এসব কেবল ফিকশনেই সম্ভব৷ কিন্তু সত্যিকারের এসপিওনাজদের গল্প যে একইরকম থ্রিলিং হতে পারে তা অনেকেরই অজানা৷ এর কারণ হচ্ছে সত্যি ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ থাকে না৷ তবে মাঝে মাঝে কিছু গল্প ফাঁস হয়ে যায়, কিছু ফাঁস করে দেয়া হয়৷ এরকমই ছয়জন সত্যিকারের এসপিওনাজের কাহিনী নিয়ে বইটি লেখা৷
অ্যাডলফ তোলকাচভ, রাশিয়ান৷ ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় রিসার্চ করেন রাডার নিয়ে৷ তারপর যোগ দেন রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং এর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে৷ কেজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সোভিয়েত মিলিটারির গুরুত্বপূর্ণ ড্রয়িং, ডায়াগ্রাম ও রাডারের তথ্য পাচার করা কি এরকম লোকের পক্ষে সম্ভব?
ব্রায়ান রিগ্যান, ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত আইরিশ আমেরিকান৷ স্কুলে সহপাঠীদের কাছে, ঘরে, বাইরে এবং পরবর্তীতে কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে থাকেন৷ এরকম বোকা কিসিমের একজন মানুষের পক্ষে কি আমেরিকার বিরুদ্ধে স্পাইগিরি করার চিন্তা করা সম্ভব?
এজেন্ট স্টর্ম, ডেনমার্কে জন্ম নেয়া এক বখে যাওয়া ছেলে৷ বিভিন্ন ঘাটে পানি খেয়ে এক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে আল কায়েদার সাথে যুক্ত হয়ে আমেরিকার টপমোস্ট ওয়ারেন্টেড আনোয়ার আল আওলাকির প্রচণ্ড বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ হন৷ আওলাকি হত্যায় সেই স্টর্ম কি ভূমিকা রাখতে পারে?
শুলা কোহেন, লেবানিজ সম্ভ্রান্ত ইহুদি স্কুলশিক্ষিকা৷ সবার সাথে সদ্ভাব থাকা এই সাদাসিধে নারীকে স্পাই হিসেবে সন্দেহ করার কোন কারণ থাকতে পারে? ধরা পড়লেনই বা কীসের ফাঁদে?
আশরাফ মারোয়ান, মিশরের সাবেক প��রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের জামাতা এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সাদাতের প্রধান সহকারী৷ ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষী এই ব্যক্তি কি সত্যিই মোসাদের এজেন্ট ছিলেন? কী ছিল তার শেষ পরিণতি?
আনা মন্টেজ, আমেরিকার প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএ-র সিনিয়র অ্যানালিস্ট৷ কাজ ছিল কিউবা সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করা৷ কিন্তু কিউবা বিষয়ক এত জ্ঞান কি নিছক প্রফেশনালিজম নাকি আরও ব��় কিছু?
এই সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে বইটিতে৷ ঝরঝরে লেখা ও সুখপাঠ্য৷ এক বসায় পুরোটা শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে হবে৷ আপত্তি আছে গল্পের নামগুলো নিয়ে৷ 'যে অমুক তমুক করেছিলো' টাইপের নামের চেয়ে প্রথমটির মত (বিলিয়ন ডলার স্পাই) বেটার নাম দেয়া যেত৷ যেমন শেষেরটা 'কুইন অব কিউবা' বা আরেকটু ভারিক্কি নাম দিলে মানানসই হত৷ কলেবর আরেকটু বড় হলে আরও ভালো হত৷ চমৎকার কনটেন্ট হিসেবে কাভারটা লাগসই না৷ কনটেন্টে পাঁচ, সবমিলিয়ে সাড়ে চার৷
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা রচিত "স্পাই স্টোরিজ" একটি বাস্তব গুপ্তচরবৃত্তির কাহিনিভিত্তিক বই, যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ছয়জন বাস্তব জীবনের গুপ্তচরের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
বইটি কাল্পনিক চরিত্র জেমস বন্ড বা মাসুদ রানার মতো এজেন্টদের নিয়ে নয়, বরং সত্যিকারের গুপ্তচরদের জীবন, তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব, দেশপ্রেম, লোভ এবং বিশ্বাসঘাতকতার গল্প নিয়ে সাজানো। এখানে এমন ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে যারা কেউ আদর্শের জন্য, কেউ প্রতিশোধের বশে, কেউ অর্থের লোভে বা ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় গুপ্তচরবৃত্তির মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নিয়েছিলেন।
ছয়জন গুপ্তচরের মধ্যে রয়েছেন অ্যাডলফ তোলকাচভ, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের রাডার বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং সিআইএর কাছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য সরবরাহ করতেন। ব্রায়ান রিগ্যান, যিনি ‘স্পাই’ বানানও জানতেন না, অথচ ভয়ংকর তথ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও রয়েছেন এজেন্ট স্টর্ম, যিনি পশ্চিমা নাগরিক হয়েও ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতেন। শুলা কোহেন, যিনি নিজের সৌন্দর্য ও বুদ্ধি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের থেকে গোপন তথ্য বের করতেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র আশরাফ মারোয়ান, যাকে একইসঙ্গে মিশর ও ইসরায়েল উভয় দেশই নিজেদের গুপ্তচর দাবি করে। এবং সর্বশেষ আনা মন্টেজ, যিনি আমেরিকার নাগরিক হয়েও কিউবার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন, এমনকি তার নিজের ছোট বোনও ছিলেন তার বিরুদ্ধে তদন্তকারী!
বইটির আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো লেখকের গল্প বলার ধরন। তথ্যের ভারে ক্লান্ত না করে সহজ-সরল ভাষায় রোমাঞ্চকরভাবে ঘটনা উপস্থাপন করেছেন তিনি। গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি এতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইতিহাস ও বিভিন্ন গোপন অপারেশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়।
সামগ্রিকভাবে, "স্পাই স্টোরিজ" শুধুমাত্র একটি থ্রিলার বই নয়, বরং সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এমন এক চমকপ্রদ গ্রন্থ, যা পাঠককে একইসঙ্গে ইতিহাস ও গোয়েন্দা কাহিনির স্বাদ দেয়।
স্পাই স্টোরিজ এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনী নিয়ে লেখক মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বইটি উপস্থাপন করা হয়েছে।লেখকের রোর বাংলায় মধ্যপ্রাচ্যর নিয়ে অনেক গুলো আর্টিকেল পড়েছি।আন্তজার্তিক রাজনীতি নিয়ে আগ্রহের সুবাধেই বইটির আগ্রহের কমতি ছিল না।পড়াটা বিফলে যায় নাই।ধন্যবাদ লেখককে।
বইটি সম্পর্কে বলতে গেলে : আমরা কাল্পনিক অনেক চরিত্র নিয়েই পড়েছি কিন্ত যখন দেখি বাস্তব কিছু কাহিনী নিয়ে বইটি লেখা তখন অন্যরকম এক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এককথায় খুব ভালো লেগেছে বইটি পড়ে, অধের্জ্য না হয়ে, বিরক্তি ভাব ছাড়াই বইটি শেষ করেছি।প্রতিটা ঘটনাই খুব দুর্দান্ত ছিল। একেক টা মোমেন্ট যেন অন্যরকম এক উওেজনাকর কাজ করে।ব্যাক্তিগত রেটিং ৫ এ ৪ যদি অপশন থাকতো ৪.৫ দিতাম।
কাহিনী : মূলত ৬ জন গোয়েন্দা নিয়ে কাহিনী
অ্যাডলফ তোলকাচভ যিনি ছিলেন বিলিয়ন ডলার স্পাই।সোভিয়েত মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্টের উচ্চপর্যায়ের একজন রাডার বিশেষজ্ঞ।কিছু ঘটনার কারণে ভেতরে ভেতরে তিনি ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষতি করা যায়। হটাত তার মাথায় আসলো তার নিজের ডেস্কে পড়ে আছে সোভিয়েত মিলিটারির টপ সিক্রেট ফাইলগুলো এই গুলী আমেরিকার কাছে পাচার করার মধ্য দিয়েই সোভিয়েতের সর্বোচ্চ ক্ষতি করা সম্ভব। এই সুবাধে তিনি সিআইএর হাতে তুলে দেন সোভিয়েত মিলিটারি রিসার্চ প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ন সব ড্রইং, ডায়াগ্রাম, স্পেসিফিকেশন এবং বিশেষ করে তাদের রাডার গুলোর ডিজাইন। আমেরিকার কাছ থেকে তোলকাচভের দেওয়া তথ্য নিয়ে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সহজেই আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। তোলকাচভের এই তথ্যর আর্থিক মূল্য ১০ বিলিয়ন ডলার।১৯৮৫ সালে কেজিবির নিকট তিনি গ্রেপ্তার হয়।অবাক করার বিষয় সিআইএর এজেন্ট যিনি একই সাথে কেজিবির হয়ে কাজ করত (ডাবল এজেন্ট) যিনি তোলকাচভের তথ্য ফাঁস করে দেয়।স্রেফ ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য না হয়ে শুধু মাত্র সোভিয়েতবিরোধী ক্ষোভ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের জন্য এসপিওনাজের জীবনে পা দিয়েছিলেন।
ব্রায়ান রিগ্যান যে স্পাই বানান জানত না
রিগ্যান ছিলেন ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত। এটা হচ্ছে এমন এক ব্যাধি যার কারনে মানুষের অক্ষর চিনতে সমস্যা হয়।নিজের প্রতি নিজের সহকর্মী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন না পাওয়া তার মধ্যে প্রচণ্ড এক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ঠিক তখনই তার মাথায় গুপ্তচরবৃওির ধারণা আসে।যেহেতু তিনি (NRO) তথা ন্যাশনাল রিকনিসন্স অফিসের ইমেজ এ্যানালিস্ট তাই কাজটা তার জন্য মোটেও কঠিন হবে না। লিবীয় নেতা গাদ্দাফিকে উদ্দেশ্য করে পৃথক পৃথকভাবে তিনটি রহস্যময় প্যাকেজ যার মধ্য ছিল কভার লেটার, দুর্বোধ্য সাংকেতিক ভাষায় লেখা কতগুলো পৃষ্ঠা এবং গোপনীয় ডকুমেন্ট এবং ছবি।রিগ্যান নিজেও জানে নাই তার প্যাকেজ গুলো গাদ্দাফির হাতে পোঁছা তো দূরের কথা, লিবিয়ান কোন কর্মকর্তার হাতে পৌঁছার আগেই গিয়ে পড়ে আন্ডার কভারে থাকা এফবিআইর এক স্পাইয়ের হাতে।তার ব্যবহৃত সাইফার কী,কোড বুক খুবই দুর্বোধ্য ছিল যার মর্ম বুঝতে এফবিআর অনেক শ্রম দিতে হয়েছে।পরবর্তীতে এফবিআইর স্পেশাল এজেন্ট স্টিভেন কার দীর্ঘদিন তদন্ত করে খুঁজে বের করে রিগ্যানকে।
এজেন্ট স্টর্ম:যে স্পাই আওলাকিকে ধরিয়ে দিয়েছিল
মর্টেন স্টর্ম ছিলেন বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠা এক বিপদগামী সন্তান, যার জীবনের একটি অংশ কেটেছিল নেশা করে,ড্রাগস ব্যবসা করে এবং চুরি ডাকাতি করে। একসময় সে তার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগের সদস্যকে পিটিয়ে হাড় ভেঙে দেওয়ার পর অনুশোচনায় ভুগে।একদিন তার হাতে একটি বই এসে পড়ে, যা তার জীবনকে পাল্টে দেয়।বইটি ছিল নবী মোহাম্মদ (স) এর একটি জীবনী।পরবর্তীতে ইসলাম বিষয়ক আরো কিছু বই এবং কোরআন শরিফ ঘাটাঘাটি করে।তখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো আনোয়ার আল-আওল���কির সাথে স্টর্মের পরিচয় হয়।স্টর্ম হয়ে ওঠেন আওলাকির বিশ্বস্ত বন্ধু এবং অনুসারী। সোমালিয়ার জিহাদে যেতে না পেরে ইসলামের সত্যতা নিয়ে তার সন্দেহের সৃষ্টি হতে থাকে এবং হঠাৎ করেই তিনি ইসলাম ত্যাগ করেন।ইসলাম ত্যাগ করেই তিনি ড্যানিশ গোয়েন্দা পিইটি ব্রিটিশ গোয়েন্দা এমআইফাইসিক্স এবং মার্কিন গোয়েন্দা সিআইএ এর হয়ে কাজ করেন।তখনো তার ইসলাম ত্যাগ ব্যাপারটা গোপন ছিল।এভাবে স্টর্ম একের পর এক ধরিয়ে দিতে থাকেন আল-কায়েদার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন সদস্যদেরকে এবং এক পর্যায়ে আওলাকিকে হত্যা করা হয়।
শুলা কোহেন:বৈরুতে ইসরায়েলি মাতাহারি
শুলামিত আরাজাই কোহেনের জন্ম ১৯১৭ সালে, আর্জেন্টিনায়।শুলার বাবা মা দুজনেই ছিলেন জায়নবাদী।যেহেতু তিনি মনে প্রানে একজন জায়নিস্ট তাই তিনি স্বেচ্ছায় গুপ্তচরবৃওির মত ঝুঁকিপূর্ন এই পেশায় যোগদান করেন।শুলা যখন গুপ্তচরবৃত্তি করেন তখনো মোসাদ প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। বৈরুতে স্যালন, নাইট ক্লাব, ক্যাফেটেরিয়া নিজস্ব মালিকানার কারনে সুন্দরী নারিদের নিয়োগ করতেন যাদের কাজ ছিল উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তগুলোর চিত্রধারন করে সেই গুলো দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে রাষ্ট্রীয় তথ্য হাতিয়ে নিতেন।অবশেষে সাইমন নামের লেবাননের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তরুণ কর্মকর্তার সাথে পরিচয়।সাইমনকে হাত করার জন্য তিনি সত্যিকারের প্রেমে পড়ে যান। শুলা জানতেন না, যে প্রেমের অভিনয় করে এসপিওনাজ জীবনে শতশত পুরুষকে ধোঁকা দিয়েছিলেন সেই প্রেমই তার জন্য কাল হবে।তিনি জানতেন না সাইমন ছিলেন লেবানীজ গোয়েন্দাবাহিনীর অ্যান্ডারকভার অফিসার মিলাদ আল-কারাহ।দীর্ঘ ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার হন ইসারায়েলের মাতাহারি, এজন্ট পার্ল।মুক্তার মত মূল্যবান এবং আকষর্নীয় হওয়ায় মোসাদে তার ছদ্মনাম ছিল এজেন্ট পার্ল।
আশরাফ মারোয়ান মোসাদের মিশরীয় এঞ্জেল জদিও তাকে ডাবল এজেন্টও বলা হয়। ৬ জন স্পাইয়ের মধ্য আমার নিকট বেস্ট মনে হল আশরাফ মারোয়ানকে।১৯৭৩ সালের চতুর্থ আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধের অগ্রিম সতর্কবার্তা দেওয়ার ঘটনাটিকে ইসরায়েলের প্রতি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অবদান হিসাবে ধরা হয়।এছাড়াও ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে দুবার তিনি ইসরায়েলকে জানিয়েছিলেন, মিশর ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করতে যাচ্ছে যা পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়।এসব কারনে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেন মারোয়ান শুরু থেকেই ছিলেন মিশরের ডাবল এজেন্ট। মারোয়ানের মৃত্যু নিয়ে ছিল এক রহস্য যা রহস্যই রয়ে গেল।
আনা মন্টেজ যে স্পাই কিউবাকে ভালোবেসেছিলেন। আমেরিকার আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির জন্যই তিনি কিউবার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেন।কারাগার থেকে বোন লুসির কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি ব্যাখ্যা করেন, আমেরিকা কিউবার বিরুদ্ধে এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলো ছিল ভয়ংকর, নির্দয় এবং অন্যায্য। তিনি বলেন, তার আনুগত্য আমেরিকার প্রতিও না,কাস্ট্রো ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রতিও না তার আনুগত্য ছিল তার নিজের নৈতিক অবস্থানের প্রতি।।
পরিশেষে বলা যায় একজন স্পাই যেমন হয় দেশপ্রেমিক তেমনি হতে পারে বিশ্বাসঘাতক।কেউ নিজের চলমান ক্ষোভ থেকে স্পাই হয় আবার কেউ নিজের অবমূল্যায়ন থেকেও হতে পারে কেউ হতে পারে আদর্শিক থেকে কেউবা টাকার জন্য।।
বইঃ স্পাই স্টোরিজ লেখকঃ মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা প্রকাশনীঃ স্বরে অ প্রচ্ছদঃ তন্ময় ইরতিজা আঞ্জুম মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা মাত্র রকমারি থেকে প্রি অর্ডার দেওয়ার পরের তিন সপ্তাহে দুইবার বইমেলায় গেলেও বইটি হাতে না পাওয়ায় মনে হল যে বইমেলা থেকেই বইটি কিনে নিয়ে আসব কিনা। অবশেষে ২২ দিন পরে বইটি হাতে পাই। বইটির প্রতি আমার মূল আকর্ষণ ছিল একদম বাস্তবের স্পাই স্টোরিজ। পাঠ সংক্ষেপঃ এসপিওনাজ জগতের ছয়টি সত্য ঘটনা নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার প্রথম বই স্পাই স্টোরিজঃএসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনী। বইটিতে স্থান পেয়েছে অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্পাইদের কাহিনী। বইটি মূলত নন ফিকশনাল বই। ছয় জন স্পাইয়ের অনেকে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে পড়েন গুপ্তচরবৃত্তিতে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বিষ্ময়কর লেগেছে স্পাই আশরাফ মারোয়ানের কাহিনী। তিনি ছিলেন আব্দুল নাসেরের মেয়ে মুনার স্বামী। তাকে মোসাদেরা মিশরীয় এঞ্জেল মনে করেন। একই সাথে আবার মুখবারাতের দাবি মারোয়ান তাদের ডাবল এজেন্ট ছিল। কিন্তু তার মৃত্যু একই সাথে রহস্যময়। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা জানা না গেলেও সে যে আত্মহত্যা করেনি তা নিশ্চিত হয় স্কটল্যান্ডের গোয়েন্দারা। এরপরেই আনা মন্টেজের কাহিনী বিষ্ময়কর লাগে কারণ তিনি আমেরিকান হয়ে কিউবার স্পাই হিসেবে কাজ করেছেন এবং সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এমনকি এজন্যে তিনি কোনো অর্থও নেন নি। তিনি তার নৈতিক মূল্যবোধ থেকে কিউবাকে আমেরিকা থেকে রক্ষা করার জন্য গোয়েন্দাগিরি করেন যা সচরাচর এসপিওনাজ জগতে দেখা যায়না। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই বইটি পড়ার আগে এপোথিওসিস বইটি পড়ায় মোটামুটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। নন ফিকশন গোয়েন্দা কাহিনী এই প্রথম পড়ছি আর এটা অবশ্যই একটা ভালো বই। লেখকের প্রথম বই অনেক সাবলীলভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন আমাদের সামনে। প্রতিটি গল্পের শেষে তথ্যসূত্র যুক্ত করে দেওয়াটা প্রশংসার দাবী রাখে।
থ্রিলার আমার সবচেয়ে পছন্দের জনরা। সেই থ্রিলার যদি হয় বাস্তব ঘটনা তাহলে তো কথাই নেই। আর সত্য ঘটনা কাল্পনিক গল্পকেও হার মানায়- এটা তো চিরন্তন সত্য। তো, সেই আগ্রহ থেকেই বইটি হাতে তুলে নেই।
দুনিয়ার বুকে ফেমাস ও অ্যানোনিমাস ৬ জন গুপ্তচর ও তাঁদের দুঃসাহসিক কাজকর্মের গল্প টেনে রেখেছিল চুম্বকের মতই। টাকার লোভে গুপ্তচরগিরি যেমন করেছেন কেউ, কেউ আবার শুধুমাত্র নীতিগত আদর্শ থেকেই নিজ দেশের বিরুদ্ধে লড়েছেন গুপ্তচর বৃত্তি দিয়েই। এই গুপ্তচরদের দক্ষতা, জ্ঞানের পরিধি, সাহস, বিচক্ষণতা সবই তাঁদের প্রতি সমীহ জাগায়।
লেখকের রচনাশৈলী এবং বাচনভঙ্গি চমৎকার। বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন যা ইতিহাস-রাজনীতির জানার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। বেহুদা প্যাঁচাল না বলে ঘটনার সাথে পারফেক্ট তথ্যগুলো দেয়ায় বোরিং লাগেনি এতটুকু। কিন্তু এত দ্রুত শেষ হয়ে যায় যে মনে হয় আরও কিছু কাহিনী থাকা দরকার ছিল।
অনেকদিন ধরেই সংগ্রহে ছিল কিন্তু পড়া হয়ে উঠছিল না। আজ সকালে কি মনে করে বইটা হাতে নিলাম, এক বসাতেই প্রায় শেষ পর্যন্ত পড়া হলো। গুপ্তচরদের নিয়ে গল্প, ৬ জন গুপ্তচরের সত্য গল্প সংক্ষেপে বলা হয়েছে। লেখনি বেশ সাবলীল তাই বেশ আরামছেই পড়া গেছে। তৃতীয় গল্পটা অর্থাৎ এজেন্ট স্টর্মের আনোয়ার আল আওলাকিকে ধরিয়ে দেয়ার গল্পটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আর আশরাফ মরোয়ানের গল্পটা স্পাই স্টোরি কম ইতিহাস বেশি মনে হয়েছে। এরকম প্রায় প্রতিটা গল্পেই মূল চরিত্রের বাইরে অন্যদের সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে সেটা পড়ার সময় ঈষৎ বিরক্তিকর মনে হয়েছিল বটে তবে পুরো গল্পের প্রেক্ষাপট বুঝাতে এটা প্রয়োজনীয় ছিলো।
তোহা ভাইয়ের লেখা ফেসবুকে পড়ি নিয়মিত । সেখান থেকেই আসলে বইটার প্রতি আগ্রহী হয়েছিলাম । ঢাকায় ঘুরতে গিয়েছিলাম বইমেলায়, শুধু এ বইটাই কিনে চলে এসেছি । জানতাম ভালো হবে! তবে পড়ার পর বলছি,এ টাকাগুলো আমার গচ্চা যায় নি । আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আগ্রহের কারণে বইটা আরো বেশি ভালো লেগেছে । বইটার ভালো দিক হচ্ছে বইটা ডকুমেন্টারি ধরণের । গল্প ঝুলে যায় নি কখনো । ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ভালোভাবেই । তবে আরেকটু মোটা বই আশা করেছিলাম । মোটে ছটা গল্প,সে তো এক বসাতেই শেষ করে ফেলেছি । যা হোক,সিকুয়েলের অপেক্ষায় রইলাম । লেখকের জন্য শুভকামনা ।
বাস্তব জীবনের ছয়জন স্পাইকে নিয়ে লেখা অনবদ্য একটি বই এটি। মুভি সিরিজের স্পাই আর বাস্তব জীবনের স্পাইদের জীবন যে অনেক বেশি আলাদা সেই বিষয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যায় বইটি থেকে। একজন মানুষ কিভাবে এই জীবনে জড়িয়ে যায় তার একটি ধারণাও এই ছয়জন মানুষ এর জীবন থেকে পাওয়া যায়। বইটি নন-ফিকশান এবং অনেক বেশি তথ্যবহুল হওয়া সত্বেও তোহা ভাই এর সহজ ও সাবলীল লেখনীর জন্য আরো বেশি আর্কষণীয় এবং একই সাথে সহজ পাঠ্য হয়ে উঠেছে। এক বসায় শেষ করার মতো একটি বই এবং যাদের এই বিষয়ে আগ্রহ আছে তারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।
২০২০ এর দাখিল পরীক্ষার পর পড়েছিলাম। স্পাই জগত নিয়ে আগ্রহ তখন তুঙ্গে একপ্রকার বলা যায়। মাসুদ রানা, জেমস বন্ড এসবের পর বাস্তব কিছু নিয়ে ঘাটাঘাটি করবো, ভাবতেই আনন্দ উথলে পড়ছিলো।
পরীক্ষার হলের সামনের বেঞ্চের জুবায়ের আমাকে এই বই দিয়েছিলো বইমেলা থেকে কিনে এনে। বইপড়ার স্মৃতি টা মনে আছে এখন, আর কোনো এল এজেন্ট কে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার আখ্যান টা।
স্পাইয়িং বা এসপিওনাজ আমার পছন্দের একটি বিষয়। এই বইয়ে লেখক ছয়জন স্পাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। খুবই বিচিত্র ও রোমাঞ্চকর এই স্পাইদের গোপন জীবন। কিভাবে তারা স্পাই হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে কিভাবে ধরা পড়ে যায় তা সংক্ষেপে সহজ সাবলীলভাবে বর্ননা করা হয়েছে। বইটি বেশি সংক্ষিপ্ত হয়েছে বলে মনে করি। এই লেখকের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম।
"বিলিয়ন ডলার স্পাই" এবং "যে স্পাই বানান করতে জানত না" নামে দুইটি গল্প এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করেছি। গল্প দুইটির প্রতিটি প্যারায় ছিল টানটান উত্তেজনা এবং পরে কি ঘটবে তা জানবার কৌতুহল। গল্প দুইটি পড়ে মনে হয়েছে দুইটি সিনেমা দেখলাম। এটি থ্রিলার ও এসপিওনাজ প্রেমিদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য।