Jump to ratings and reviews
Rate this book

যোগেন মণ্ডলের বহুজনবাদ ও দেশভাগ

Rate this book
যোগেন মণ্ডল আজ এক বিস্মৃত নাম। একসময় উপমহাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা, যিনি বিভিন্ন সময়ে ছিলেন দেশভাগ পূর্ব বাংলার মন্ত্রী, দেশভাগের প্রাক্কালে গঠিত অন্তবর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী, দেশটির সংবিধান সভার প্রধান এমন গুরুত্বপূর্ণ সব পদে। তার প্রভাবে ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র এখন যেমন আছে অন্যরকম একটা কিছু না হয়ে তেমন হয়েছে বললেও ভুল বলা হয় না। তফসিলি হিন্দুদের এই প্রায় অবিসংবাদিত নেতা হিন্দুদের কাছে চিহ্নিত হয়েছেন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে, তার এককালীন মিত্র মুসলিম লীগের কাছে পরবর্তীতে হয়ে গেছেন গুরুত্বহীন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন ভারতে, সেখানেও রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কিছুই অবদান রাখতে পারেন নি।তাকে নিয়ে, তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলতাফ পারভেজ এর এই বই।

144 pages, Hardcover

First published January 1, 2019

1 person is currently reading
43 people want to read

About the author

Altaf Parvez

20 books39 followers
আলতাফ পারভেজের জন্ম ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬। দর্শনশাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শেষ করেন। ছাত্রত্ব ও ছাত্র রাজনীতির পর সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবন শুরু। পরে গবেষণা ও শিক্ষকতায় সংশ্লিষ্টতা। প্রকাশিত গ্রন্থ ছয়টি। যার মধ্যে আছে—‘কারাজীবন, কারাব্যবস্থা, কারা বিদ্রোহ : অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা’, ‘অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ, কর্নের তাহের ও জাসদ রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের নারীর ভূ-সম্পদের লড়াই’, 'মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ'।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
5 (31%)
4 stars
11 (68%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 5 of 5 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,650 reviews418 followers
October 26, 2024
যোগেন মণ্ডল দলিত-তফসিলি সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন।বর্তমানে তিনি বিস্মৃতপ্রায়। অথচ কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বাইরে দেশভাগের সময় রাজবংশী ও নমশূদ্রদের মতো বড় জনগোষ্ঠীগুলোর বিপুল রাজনৈতিক সক্রিয়তা ছিলো।আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বরিশালের যোগেন মণ্ডল। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ভারতে অন্তত ৬০ লাখ মানুষকে অস্পৃশ্য বিবেচনা করা হতো। গ্রামীন বাংলা দুটি অংশে বিভক্ত ছিলো ;একদিকে এই অস্পৃশ্যরা,অন্যদিকে ব্রাহ্মণ-সৈয়দরা। বর্ণহিন্দুরা দলিতদের রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে ছিলো খুবই বিরক্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে যোগেনের "বহুজনবাদ" ছিলো মনুবাদের বিরোধিতা অর্থাৎ " জাতিঘৃণা ও সামাজিক বিভেদবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। " তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু ও ম্লেচ্ছ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে বহুজনবাদী রাজনীতি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।  এই সমস্বার্থবোধ থেকে কংগ্রেসকে সমর্থন না করে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে দাঁড়ান। হয়ে ওঠেন পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম সভাপতি  ও আইনমন্ত্রী। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ'র মৃত্যুর পর যোগেন মণ্ডলের স্বপ্নেরও অপমৃত্যু হতে শুরু করে। লিয়াকত আলী খান ও মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতারা তফসিলিদের স্বার্থ রক্ষায় মোটেও উৎসাহী ছিলেন না। ক্রমাগত সেসময় হিন্দুদের ওপর ছোট ছোট হামলা ও বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তাদের দেশত্যাগে উৎসাহ দেওয়া হয়। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের স্বার্থ এতো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে এসময় যোগেনকে "বিশ্বাসঘাতক" উপাধি শুনতে হয়। অনেক চেষ্টা করেও অশান্তি দমন করতে না পেরে, বিশেষত ১৯৫০ এ সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর যোগেন ভগ্ন হৃদয়ে দেশত্যাগ করেন।  লিয়াকত আলী খানকে পাঠানো তার পদত্যাগপত্রটা খুবই ভয়াবহ। নিস্পৃহভাবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত দেশভাগের পরবর্তী (মুসলিম লীগ সমর্থিত) পরিকল্পিত সন্ত্রাসের যে বর্ণনা যোগেন মণ্ডল দেন তা পড়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। অথচ এই অপতৎপরতা, এর কুফল আমাদের কথাসাহিত্যে প্রায় অনুপস্থিত। আলতাফ পারভেজ যোগেন মণ্ডল ও তার সময়টা আমাদের সামনে সংক্ষেপে কিন্তু সফলভাবে তুলে ধরেছেন। শাসক এলিটরা তাদের শাসনাস্ত্র হিসেবে ব্রাহ্মণ্যবাদকে আজো বহাল রেখেছে, তাই যোগেনের "বহুজনবাদ" ও তিনি আজো গুরুত্বপূর্ণ।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
December 8, 2024
দেশভাগ কেন এবং কীভাবে হলো এই আলাপে সর্বপ্রথম আসে 'হিন্দু-মুসলমান' প্রসঙ্গ। একে অপরের দোষারোপ, সমালোচনা যেটাই করা হোক না কেন সব মিলিয়ে দেশভাগের কার্যকারণ অনুসন্ধান করলে এ দুটি ভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠী তথা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যেই তা আবর্তিত হতে থাকে।।

কিন্তু এমন সহজসরল ন্যারেটিভের আড়ালে চাপা পড়ে যায় অখন্ড ভারতের দলিত হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশ। যোগেন মন্ডল ভারতের অস্পৃশ্য(!) তফসিলি সম্প্রদায়কে আনতে চেয়েছিলেন মূলধারার রাজনীতিতে, প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তাদের দাবিদাওয়া। গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ, ফজলুল হক, আম্বেদকরের পাশাপাশি যোগেন মন্ডলের নামও জোরেশোরে আলোচনার দাবি রাখে। তবে দুঃখের বিষয় মূলধারার আগ্রাসী রাজনীতির মুখে যোগেন মন্ডল ও তার ভিন্নধারার রাজনীতি আজ অনেকটাই আলোচনার বাইরে, বলতে গেলে বিস্মৃতপ্রায়।

যোগেন মন্ডল মনে করতেন হিন্দুত্ববাদ তথা ব্রাহ্মণ্যবাদের আগ্রাসনের শিকার দলিত হিন্দু এবং মুসলিম উভয়েই। গান্ধীর হরিজন আন্দলোনের কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি।
কংগ্রেসের সাথে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর তিনি সমর্থন দেন মুসলিম লিগকে, দেশভাগকে ত্বরান্বিত করেন, সিলেট গণভোটে প্রচার প্রচারণা চালান জোরালোভাবে। নতুন দেশে জিন্নাহর পাশে থেকে তফসিলিদের ভাগ্য ফেরাতে পারবেন এ ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন তিনি।
তবে সেসব প্রত্যাশা মুছে যেতে বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক বছরের মাথায় যোগেন মন্ডল আশাহত হোন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের নগ্ন চেহারা ততদিনে দেখাতে শুরু করেছেন।

আজীবন সংগ্রামী যোগেন কোনো দিকেই সুদৃষ্টি পাননি। ভারতীয় হিন্দুদের কাছে তিনি ছিলেন "যোগেন আলী মন্ডল", পাকিস্তানি মুসলমানদের কাছে তিনি ছিলেন "বিশ্বাসঘাতক"। বর্ণাঢ্য, ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন পার করেও যোগেন মন্ডলের ঠাঁই হয়নি উপমহাদেশের শীর্ষ সারির নেতাদের কাতারে, তেমনি দলিতরাও কোনো দেশে পায়নি সমমর্যাদার নাগরিকত্ব, পরিচয়। রাজনৈতিক জীবনে হোক বা দৈনন্দিন জীবনে, দলিতরা সবস্থানেই পদদলিত, লাঞ্চিত বঞ্চিত।

আলতাফ পারভেজের বইটা ছোট, তবে যোগেন এবং তার রাজনীতি জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেবেশ রায়ের "বরিশালের যোগেন মন্ডল" পড়ে দেখা বাকি এখন।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
June 12, 2025
  মহাভারতের যুগ থেকেই, হিন্দুসমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় বর্ণপ্রথা। যদিও হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কাজের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা আলাদা শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু, কোনোকালেই এই নীতির মান্যতা দেখা যায়নি সমাজে। বরং, গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কে কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছে, সেই জিনিসটাকেই।

 দীর্ঘকাল ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে, উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা—প্রধানত ব্রাহ্মণেরা— নিচু বর্ণের মানুষের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে নিজের অর্থ, ক্ষমতা ও শিক্ষার সুযোগকে ব্যবহার করে। ইসলাম ধর্মের আগমনের পর, নিচু বর্ণের হিন্দুরা যে গণহারে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন—তার পেছনে মৃত্যু ভয় ছাড়াও আরেকটা প্রধান কারণ ছিল ব্রাহ্মণ ও অন্যদের হাতে তাদের নিগৃহীত হওয়া।

  ইংরেজ আমলে উঁচু বর্ণের হিন্দু আর মুসলিমদের কারণে শোষিত নিচু বর্ণের হিন্দু আর চাষি মুসলিম সমাজের সামগ্রিক নিপীড়ন- এই বইয়ে আলোচ্য ব্যক্তি, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ওরফে যোগেন মণ্ডলের রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়েছে। ভারত ভাগেও তাই পাকিস্তান এর পক্ষে ছিলেন তিনি। কংগ্রেস বাদ দিয়ে সমর্থন দিয়েছেন মুসলিম লীগকে। পাকিস্তানে—তার ধারণা ছিল, তফসিলি হিন্দুরাও মুসলিমদের মতো একই আসনের মানুষে পরিণত হবে। কিন্তু, দেশভাগের পরে—আরও বিশেষ করে বললে, জিন্নাহর মৃত্যুর সাথে সাথেই যোগেন ও তার অনুসারী তফসিলিদের স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। জিন্নাহ যেসব ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য, সেগুলো গুরুত্ব হারায়। পাকিস্তান মোটাদাগে ধর্মনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয়, অধিকার বঞ্চিত হতে থাকে তফসিলি হিন্দুরা এবং যোগেন মণ্ডল আইনমন্ত্রী পদ হতে পদত্যাগ করেন।

 যে ভারতকে পেছনে ফেলে পাকিস্তানের জন্মের জন্য জিন্নাহর সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করেছিলেন যোগেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজের মানুষের উন্নতির—ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, তাকে চলে যেতে হয় সেই ভারতেই। যোগেনের রাজনীতি ছিল নিম্নবর্ণের হিন্দুকেন্দ্রিক। কিন্তু, সেই মানুষের চোখেই তিনি পরিণত হন বিশ্বাসঘাতকে। 
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
February 4, 2020
যোগেন মন্ডলের নাম প্রথম জেনেছি ফেসবুকের কল্যাণে, তবে জানাটা ছিল ভাসাভাসা।কয়েকজনের মুখেও পরে তার নাম শুনেছি তবে সে জানাটাও ভাসাভাসাই ছিল। তারপর লাইব্রেরীতে দেবেশ রায়ের ‘বরিশালের যোগেন মন্ডল’ বইটি চোখে পড়েছে বহুবার।কয়েকবার উল্টে পাল্টে দেখলেও এত বড় ও দামী একটা বই কিনতে আগ্রহ হয় নি। কিন্তু যোগেন মন্ডল সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল বরাবরই। তাই এই বইটি চোখে পড়া মাত্রই সংগ্রহ করে নিতে এবং প্রায় এক বসায় শেষ করতে দেরী করিনি। যোগেন মন্ডল, দরিদ্র ও নিম্নবর্গের হিন্দু সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ যে সম্প্রদায়। কিন্তু বর্ণহিন্দুদের অসহযোগীতায় এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা বরাবরই শিক্ষায়, অর্থনৈতিকভাবে ছিল বৈষম্যের শিকার। যোগেন মন্ডল তাই নিজেকে হিন্দু ভাবার আগে ভাবতেন তফসিলি হিন্দু, তাদের অধিকার আদায়ই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। ১৯৩৭ সালে অপ্রত্যাশিতভাবেই তিনি কংগ্রেসের প্রার্থীকে (যিনি ছিলেন জেলা কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট) হারিয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রাদেশিক নির্বাচনে নির্বাচিত হন। আসনটা সংরক্ষিতও ছিল না, তাছাড়া তখন শিক্ষা ও সম্পদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই ভোটার নির্ধারণ করা হতো, মোট জনসংখ্যার ১৫% মানুষই কেবল ভোটার হতে পেরেছিলেন বলে মনে করা হয়। এমন একটি অবস্থায় যোগেন মন্ডলের নির্বাচিত হওয়াটা বিষ্ময়করই বটে। সারা ভারতে সাধারণ আসনে তিনিই একমাত্র তফসিলি সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনকার রাজনীতির ধারা অনুযায়ী তার কংগ্রেসে যোগদানই ছিল স্বাভাবিক কিন্তু তা হয় নি। সুভাষ বোসের সাথে ঘনিষ্ঠতা হলেও সুভাষ বোস কংগ্রেস ছাড়ার পরে তিনিও কংগ্রেসমুখী হন নি। তফসিলিদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন পৃথক রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসকে তিনি বর্ণহিন্দুদের প্রতিনিধি বলেই ভাবতেন, ধারণাটা সেই সময়ে হয়তো অসত্যও ছিল না, কংগ্রেসের নেতৃত্ব তখন ছিল অভিজাত, উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতেই। তাই শ্যামা-হক মন্ত্রিসভার পতনের পর তিনি যে মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন করে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছিলেন এতে অবাক হবার কিছু নেই। তিনি বরাবরই ভাবতেন বাংলার মুসলিম ও তফসিলি সম্প্রদায় উভয়েই সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং এই দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্য জরুরী। তখনও পর্যন্ত এই দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের মিত্রই ভেবে এসেছিল। তাই 1946 এর ডাইরেক্ট একশ্যান ডে এর হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার পরও তিনি মুসলিম লীগকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন। এমনকি এই দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় এই মন্ত্রীসভার পতন যখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী তখনও তিনি মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভার পক্ষে কংগ্রেসেরও কয়েকজন সদস্যের সমর্থন নিয়ে মন্ত্রীসভার পতন রোধ করতে পেরেছিলেন। দাঙ্গার সময়েও তিনি তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষদের এই দাঙ্গা থেকে বিরত থাকতে এবং কোনরকম প্রতিশোধমূলক কাজ হতে দূরে রাখতে কাজ করেছেন। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তিনি মিত্রতা গড়ে তুলেছিলেন আরেক তফসিলি নেতা আম্বেদকরের সাথে এবং আম্বেদকরকে বাংলা থেকে নির্বাচিত করতে তার ভূমিকাই ছিল প্রধান। তাই জিন্নাহ যখন পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তখন যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল জিন্নাহকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। জিন্নাহও তাকে এটা বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তান যদিও ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হবে, কিন্তু এখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাই মুসলিম লীগের সমর্থনে তিনি যোগ দেন বিভাগ পূর্ববর্তী অর্ন্তবর্তীকালীন মন্ত্রীসভায়ও।তফসিলি সম্প্রদায়কে দেশভাগের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করতে ও পূব বাংলার ভিটামাটি ছেড়ে না যেতে তিনি জনমত গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। এমনকি সিলেটে যখন গণভোটের মাধ্যমে আসাম থেকে সিলেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তানের অংশ হয় সেখানেও পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণায় তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পাকিস্তানের পক্ষে তফসিলি সম্প্রদায়ের ভোট চেয়েছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর জিন্নাহ তাকে পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রম মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় স্থান দেন, পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান সভার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাশার দান উল্টে যায়, লিয়াকত আলী খান তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ভাসানী, ফজলুল হক রাজনীতিতে কোণঠাসা। পাকিস্তানের শাসকদের কাছে যোগেন মন্ডল গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন। তার পরিচয় তাদের কাছে তফসিলি হিন্দু নয় কেবল হিন্দু, যাকে বিশ্বাস করা যায় না। তাইন আইনমন্ত্রী হবার পরও তাকে না জানিয়েই আইন পাশ হয়ে যায়। প্রশাসনের সহায়তায় সংগঠিত বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তার প্রতিবাদেও কর্ণপাত করেন না কেউ ই। অবশেষে ক্ষুব্ধ,হতাশ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল যিনি ছিলেন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান এই বলে যে, পাকিস্তান হিন্দুদের জন্য অভিশাপ।পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে তার লিখিত দীর্ঘ চিঠিটি ( যা এই বইয়ে সংযুক্ত আছে) তখনকার পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দলিল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা যে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে এবং হিন্দু বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এই বৈষম্যের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে করাচি কেন্দ্রীক পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের দ্বারা তাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলেও তিনি তফসিলি সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা আর হতে পারেন নি। দেশভাগের বলি উদ্বাস্তু হিন্দুরা তাকে আর বিশ্বাস করতে পারে নি। অনেক হিন্দু তাকে ঘৃণা ভরে ডাকতো যোগেন আলী মোল্লা। শরণার্থীদের যথাযথভাবে পূর্নবাসনের জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন জীবনের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আর কোন নির্বাচনে আর কখনো নির্বাচিত হতে পারেন নি। তারপর একসময় নীরবেই হারিয়ে গেছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন এককালের এই দাপুটে নেতা। ঘৃণা পেয়েছেন হিন্দুদের কাছে আবার বিশ্বাসঘাতক হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছেন পাকিস্তানী শাসকদের কাছে। যোগেন মন্ডল এখন কারো কাছে প্রিয় নন, তিনি তাই এখন ইতিহাসের এক বিস্মৃত নাম।
Profile Image for Vendetta .
34 reviews1 follower
February 23, 2020
দলিত মানুষের রাজনীতি ও সময়ের উত্থান পতনে দলিতদের উপরে শাসকের আচরণের পরিবর্তন বুঝতে পারার জন্য; বইটি গুরুত্বপূর্ণ।
Displaying 1 - 5 of 5 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.