বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের ঠিক দুই দিন আগে মারা গেল তরুণ বাঙ্গালি বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তী। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই সে জানিয়েছিল, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পাল্টে দেবার মতো এক আবিষ্কার করেছে। খুন কি হতে হলো সেজন্যই? ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ল বর্তমানে নামকরা এক গবেষণা সংস্থার সাথে জড়িত থাকা রাফসান ইবনে সেলিম। উমা চক্রবর্তী বান্ধবী, নিয়তিকে নিয়ে শতাব্দী পুরাতন, কিন্তু প্রায় অজানা এক কিংবদন্তির পেছনে ছুটে পাড়ি জমালো সুন্দরবনে। উমার হত্যাকারীকে পাকড়াও করলেই হবে না, সেই সাথে পুন:আবিষ্কার করতে হবে সেই সঞ্জীবনী ওষুধটাও। এদিকে দুই বিজ্ঞানীর পেছনে লেগেছে রহস্যময় এক সংঘটন-অহিংশ। লেলিয়ে দিয়েছে তাদের নৃশংস আততায়ীকে। কেঁচো খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল সাপ! বাংলাদেশের বুকে মঞ্চায়িত হচ্ছে শুভ আর অশুভের দ্বন্দ্ব!
জন্ম সিরাজগঞ্জে, ১৯৮৮ সালে। এসএসসি. পাশ করেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে, এইচএসসি-রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে। এরপর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সমাপ্ত করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে। বর্তমানে কর্মরত আছেন কক্সবাজার জেলায়।
লেখালেখি শখের বসে, অনুবাদ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রথম প্রকাশিত বই আদী প্রকাশন থেকে-ট্রল মাউন্টেন। সেই সাথে রহস্য পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখি।
মুক্তকণ্ঠে স্বীকার্য, আমার পড়া অন্যতম সেরা থ্রিলার ছিল এই বইটি। এটি শুধু যে মনসামঙ্গলের চেনা আখ্যানকে নতুন রূপ দেয়, তা নয়। তারই সঙ্গে এতে আমরা পাই আরও নানা কথা, উপকথা, আর শেষে এই সময়ের এক রুদ্ধশ্বাস বায়োথ্রিলার। দারুণ উপভোগ করলাম লেখাটা। এতে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের যে কথাগুলো বলা হয়েছে, তার জন্য তারিফ রইল আরও বেশি। লেখককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই তাঁর পরবর্তী প্রয়াসের জন্য।
পাঁচ তারা দেয়ার ব্যাপারে আমি বেশ খুঁতখুঁতে। কেউ হয়তো দেখে স্বজনপ্রীতি ভাববে। তা ভাবুক। তবে মঙ্গলকাব্য আর প্রাচীন মিশরের ব্লেন্ডিংটার জন্যই এটা পাঁচ তারা ডিজারভ করে... কাহিনী এগিয়েছে দুটো ধারায়- অতীত আর বর্তমান। অতীত অংশটার কাহিনী বিল্ড আপ অসাধারণ। আর বর্তমান অংশ- ফাস্ট পেজড। আমার জন্য পারফেক্ট থ্রিলার :)
কিংবদন্তীর সঙ্গে বিজ্ঞানের (আসলে কল্প-বিজ্ঞান) মিশেলটা এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, অসম্ভব বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে পড়ে। মনসা দেবীর গল্প, কেন বিভিন্ন এলাকার কিংবদন্তীগুলোর মধ্যে এত মিল পাওয়া যায় ইত্যাদি এই বইয়ের মূল ফোকাসগুলোর একটা।
আরেকটা ফোকাসে ছিল অহিংশ এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে রাফসানের দৌড়। এই অংশটাও সুন্দর। রহস্যের জট খুলেছে এক্কেবারে শেষে এসে। দারুণ লেগেছে। কিন্তু অ্যাকশনগুলো অতটা মনঃপুত হয়নি কেন যেন, বিশেষ করে ঘরের ভেতরের দৃশ্যায়নটা। সেজন্যই ১ স্টার কম দেওয়া, যদিও ৪.৫ হবে আসলে।
বইটাকে যেকোনো হিসাবে আন্তর্জাতিক থ্রিলারগুলোর পাল্লায় ফেলা যায়। এবং যেকোনো হিসাবেই এটি উৎরে যাবে চমৎকারভাবে। গুপ্তসংঘ অহিংশ, কিংবদন্তীর সর্পদেবী ও তার উপাসকরা, বৈজ্ঞানিক যৌক্তিক ব্যাখ্যা - সব মিলে বইটা হাইলি রেকমেন্ডেড থ্রিলার পাঠকদের জন্য।
বইটা আন্ডাররেটেড। এই বই আরো অনেক আলোচনা ডিজার্ভ করে। পড়ার পরে বোধ হয় যে কেউই একমত হবেন, আমি নিশ্চিত।
এতো লম্বা সময় নিয়ে কোন বই অনেককাল পড়ি নাই। ওয়াজেথের গল্পটুকু ছাড়া বাকি সবকিছু প্রচন্ড বোরিং লেগেছে আমার কাছে। তার সাথে মাঝে মধ্যে উদ্ভট সব শব্দের ব্যবহার তো আছেই। গল্পটাকে হুদাই টেনে অতিরিক্ত লম্বা করা। এমনকি উমার ডায়েরি খানা পড়েও হাসি পাচ্ছিলো। মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে কেউ এমন ডায়েরি লেখে বুঝি?
রাফসান। গল্পের মূল একটা চরিত্র। ডাক্তার থেকে পুলিশ, পুলিশ থেকে গবেষক, বিজ্ঞানী। আবার তাকেই পুলিশী তদন্তে অনুরোধ করা। এটা বাড়াবাড়ি। আবার এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিটাই যখন গুলি খেয়ে পড়ে আছে তখন পুলিশি কেস ছাড়া অপারেশন করা সম্ভব হয় না এমনকি জান বাঁচানোর জন্যও না। সত্যিকার অর্থেই এটা ঘটে কি না জানি না। ঘটলে ভালো। অন্তত একটা অংশ বাস্তবের সাথে মিল রাখা হয়ছে। প্রেম ব্যাপারটা এ গল্পে খুব ডালভাত জিনিস। বিরক্তিকর ছিল এই জিনিসটা। যাইহোক, সবার সবকিছু ভালো লাগবে এমন কোন কথা নেই। আমি এই জিনিসটাকে কোনভাবেই নিজের কাছে ভালো লাগাতে পারলাম না।
❝People think that stories are shaped by people. In fact, it's the other way around.❞ ― Terry Pratchett, Witches Abroa - ❝চন্দ্রাহত❞ - রাফসান ইবনে সেলিম, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার এবং বর্তমান সময়ের একজন গবেষক। হঠাৎ তার বাসায় আসে তার প্রাক্তন সিনিয়র অফিসার মারুফ হোসেন। ঘটনাক্রমে রাফসান জানতে পারে তার কর্মক্ষেত্রেই ঘটে গেছে এক ভয়াবহ হত্যাকান্ড এবং মারুফ হোসেনের অনুরোধে সে যুক্ত হয়ে যায় সেই কেসের তদন্তে। - উমা চক্রবর্তী, রাফসানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরই আরেক বিজ্ঞানী। এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে থাকা অবস্থায় খুন হয়ে যান তিনি। সেই কেসেরই তদন্তে নামে রাফসান, তার সহযোগী এস.আই. শিহান এবং উমার বান্ধবী নিয়তি। এদিকে তাদের পেছনে লাগে অহিংস নামের এক সংগঠন। - ওয়াজেথ, হাজার বছর আগে মিশরে জন্ম নেয়া এক যুবক। ভাগ্যের ফেরে সে এসে পরে চম্পক নগরে। সেখানে থিতু হবার পরে জানতে সাপ সম্পর্কিত এক কিংবদন্তী যার সাথে রয়েছে তার উপাস্য দেবীর এক অদ্ভুত মিল। কয়েকটি অলৌকিক টাইপের ঘটনার পরে সে ঠিক করে জীবনের বাকি সময় তার দেবীর উপাস্যতা করে যাবে এবং তার সন্তানদেরও শিখিয়ে যাবে এই নীতি। - এখন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঠিক পূর্বমুহূর্তে কেন খুন করা হলো উমা চক্রবর্তীকে? তার সেই আবিষ্কারটি আসলে কী? রাফসান এবং তার দল কী পারবে তার আবিষ্কারকে জন্মসম্মুখে আনতে? এই আবিষ্কারের পেছনে অহিংস সংগঠন কেন লেগেছে? এ সব কিছুর হাজার বছর আগে জন্ম নেয়া ওয়াজেথের সেই নীতির কী সম্পর্ক? এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পড়তে হবে লেখক মো. ফুয়াদ আল ফিদাহ এর মিথোলজিক্যাল/কন্সপিরেসি থ্রিলার ধারার উপন্যাস ❝চন্দ্রাহত❞। - ❝চন্দ্রাহত❞ বইটিকে মূলত মিথোলজিক্যাল এবং কন্সপিরেসি থ্রিলারের মিশ্রণ বলা যায়। লেখকের আর.এন.এ. সিরিজের দ্বিতীয় বই এটি। সংশ্লেষ, উন্মেষ এবং উদ্ভাস নামে তিন ভাগে বিভক্ত এই গল্পের প্লটটির প্রথম অংশ বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো, বিশেষ করে ওয়াজেথের অংশটি। সেই হিসেবে ২য় পর্বটি কিছুটা দুর্বল মনে হলো, শেষ পর্বে আবারো গল্পটি গতি পায়। গল্পের খাতিরে নানা ধরনের মেডিক্যাল ভিত্তিক এবং সায়েন্টিফিক ব্যপার আসলেও সেগুলো বুঝতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি। - লেখকের আর.এন.এ. সিরিজের প্ৰথম বইয়ের মতোই এই বইয়ের প্রটাগোনিস্ট ছিলেন রাফসান ইবনে সেলিম। প্রথমে ডাক্তার, এরপরে পুলিশ থেকে এখন গবেষক বনে যাওয়া এই চরিত্রটি জেমস রলিন্সের সিগমা ফোর্সে সহজেই ঢুকে যাওয়ার মতোই একটি চরিত্র। সাপোর্টিং ক্যারেক্টার হিসেবে নিয়তি, শিহান মোটামুটি মানানসই, যদিও উমা চরিত্র বিষয়ক কয়েকটি ব্যাপার আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলে ভালো হতো। গল্পের প্লটের সাথে মিশরীয় এবং হিন্দু পুরাণের মিশ্রণ ভালোই লাগলো। বইয়ের লেখনশৈলী মোটামুটি ভালোই, তবে প্রথম পর্বে বেশ কয়েকবার গল্পের হালকা টার্নিং পয়েন্টকেও "বোমা ফাটানো" টাইপ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা খুবই গতানুগতিক ধাঁচের বর্ণনাভঙ্গি মনে হয়েছে। - ❝চন্দ্রাহত❞ বইয়ের সার্বিক দিক দিয়ে বলতে গেলে এর বাহ্যিক প্রডাকশন তেমন উন্নত মনে হয়নি আমার। খুবই আঁটসাঁট বাঁধাই এর কারণে বইয়ের মাঝখান থেকে বলতে গেলে পড়াই যাচ্ছিলো না, পাতাগুলোও বেশ পুরোনো ধাঁচের ছিলো। বইয়ের প্রচ্ছদ, বিশেষ করে নামলিপি আমার পছন্দ হয়েছে। সম্পাদনার জা��়গা থেকে অবশ্য তেমন কমপ্লেইন নেই আমার। - এক কথায়, ছোটখাট ত্রুটি বিচ্যুতি বাদ দিলে বাংলা মিথোলজিক্যাল/কন্সপিরেসি থ্রিলার হিসেবে ❝চন্দ্রাহত❞ বেশ উপভোগ্য এক বই। তাই যাদের এ ধরণের মিথোলজি এবং কন্সপিরেসি থ্রিলারের মিশ্রণ টাইপ বই পড়তে আগ্রহ রয়েছে তারা বইটি পরে দেখতে পারেন।
কোথায় ভারত আর কোথায় মিশর.. কতো হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব। ভিন্ন দুইটি মহাদেশের দুইটি দেশের আচার ব্যবহার, সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদি আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আশ্চর্য হতে হয় তখনই.. যখন উপমহাদেশের সাপের দেবী মনসার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় মিশরের সর্প-দেবী ওয়াজেঠথের। চমকে উঠার মতোই কথা। ঘটনার শেষ নয় এখানেই, দেবীদ্বয়ের দেশ ভিন্ন হলেও আকার-আকৃতি কিংবা আচার-আচরণে ফারাক আছে খুব সামান্যই। এটা কীভাবে সম্ভব জানা নেই কারও..
পুরাণের কথা থাক। বর্তমানে আসি। তরুণ বাঙ্গালি বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তী। কিছুটা নীরবে-নিভৃতে গবেষণা করে চলেছেন। মাইক্রোবায়োলজিস্ট এ নারীর যুগান্তকারী আবিষ্কার পাল্টে দিতে পারে চিকিৎসা ব্যবস্থা। কাজ প্রায় শেষ.. আর ক'দিন বাদে বিশ্ববাসী পরিচিত হবে তার এই আবিষ্কারের সাথে। ঠিক তখুনি ছন্দপতন!
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে কে বা কারা ল্যাবেই খুন করে যায় প্রতিভাবান এই বিজ্ঞানীকে! যথারীতি তদন্তে নামে পুলিশ।
নীল নক্সার রাফসানকে মনে আছে? :D সেই ডাক্তার-পুলিশ হ্যান্ডসাম নায়কের কান্ধে চাপে খুনের তদন্তের ভার। আদনান তো নেই.. তবে কী উপায়? সঙ্গী হিসেবে এবারে রাফসানের সাথে জুটে এস এই শিহান। তদন্তে নামে দু'জন। খুনের মোটিভ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে বের হয়ে আসে অজানা আরেক রহস্য। যে রহস্যের শুরু কয়েক শতাব্দী আগে... বর্তমান আর অতীত হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। ঘটনার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সাপের দেবী মনসা আর তার হলে হতেও পারে টুইন মিশরের সর্প-দেবী ওয়াজেঠথ।
সব কিছুর উত্তর মিলবে সুন্দরবনে.. দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যবশত ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ে বিজ্ঞানী উমার বান্ধবী নিয়তি। তাকে সঙ্গী করে সুদূর সুন্দরবন পর্যন্ত হাজির হয় ডা. রাফসান.. বিভীষিকার মতো ওদের পিছু নিয়েছে রহস্যময় সংগঠন-অহিংশ।
এবার ঘটনার জট খুলবার অপেক্ষায়।।
বই:চন্দ্রাহত লেখক:মো. ফুয়াদ আল ফিদাহ প্রকাশনী:আদী
অনেক ভালো হতে পারত। কিন্তু ইন্টারেস্টিং একটা প্লটকে পূর্ণতা দিতে পারেনি লেখকের আনাড়ি শব্দচয়ন। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার চোখে লেগেছে। বার বার গল্পের খেই হারিয়েছি তাই। কিছু কিছু চাইল্ডিশ ফ্রেজের অতিরিক্ত ব্যবহার ছিল হাস্যকর। ২৮০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে ৫-৬ "বোমা ফাটানো" এর মত কথার উল্লেখ অপটু লেখনীর পরিচয় দেয়। বইয়ের মাঝে একটা অংশ ছিল প্রথম পুরুষে লেখা ডায়রি মনোলগ। ওই অংশটুকু বেশ ভালো লেগেছে। এছাড়া কিছু টাইমলাইন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন লেখক, সেটাও খারাপ হয়নি। গল্প ও রহস্যের ব্যাখ্যায় কিছু ফাঁক রয়ে গেছে, বিস্তারিত বলছি না। আমি সব বইকেই কঠোরভাবে বিবেচনা করি,তাই অনেকের কাছেই হয়তো এত খুটিনাটি চোখে পড়বে না। বেশী খুঁতখুতানি না থাকলে বেশ ভালোই লাগতে পারে। ব্যক্তিগভাবে আরো কিছু পরিপক্ক লেখার আশা করছি লেখক থেকে।
প্রাপ্তন পুলিশ অফিসার ডাঃ রাফসান যে কিনা বর্তমানে এক নামকরা গবেষনা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করছে, ঘটনা চক্রে জড়িয়ে পড়ে এক খুনের সাথে। ঢেকি স্বর্গে গেলেও যে ধান ভাঙ্গে তা প্রমানেই যেন রাফসান পুলিশের কনসাল্টেন্ট হিসেবে জড়িয়ে পড়ে ঘটনার তদন্তে। তদন্ত করতে যেয়ে দেখা যায় ভিক্টিম উমা চক্রবর্তী এমন এক জিনিষ আবিষ্কার করে ফেলেছে যে যেটা প্রকাশ হলে পৃথিবীতে ঝড় বয়ে যেত, ভাল খারাপ উভয় অর্থে। ঘটনা চক্রে সামনে আসে উমার বান্ধবী নিয়তি (লেখকের মতে নিয়তিই নাকি প্রধান চরিত্র) যার কাছে থেকে তথ্য জেনে তারা ছুটে যায় সুন্দরবনের গহীনে। উঠে আসে প্রাচীনকালের পুরাতন অনেক সব কাহিনী যার রেশ বর্তমানে যে নেই সেটা কি বলা যাবে?
দুইটা ভিন্ন ভিন্ন টাইমলাইন নিয়ে গল্পটা এগিয়েছে। কিন্তু গল্পের শেষের দিকে আস্তে আস্তে যেয়ে দুই সময়ের কাহিনী এক লাইনে এসে মিলেছে। পৌরানিক কাহিনী সাথে মেডিক্যাল থ্রিলার আর কাল্ট থ্রিলার সব মিলে মিশে এক হয়ে গেছে যেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নীল নকশা অনেক বেশী কমপাক্ট ছিল। সেই তুলনায় এটা অনেক বেশী ইলাবরেট। কেন যেন মনে হয়েছে লেখক এটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছে। অনেকটা হয়ত বর্তমান সময়ে বিভিন্ন যে ...ভার্সের যে দেখা যাচ্ছে সেরকম লেখকও হয়ত ওরকম একটা জগত তৈরী করতে চেয়েছেন। এবং করেছেনও (সিরিজের ২.৫এ যেমন আরেক সিরিজের সাথে ক্রস অভার হয়েছে, আর এই বই এর কাহিনীই ত অন্য একটা সিরিজের ফাউন্ডেশন বলা যায়)। এই কারনে মাঝে কিছু কিছু যায়গা হয়ত একটু একঘেয়ামি লেগছে। আর প্লট হল কিছু ছোট খাট থেকেই গেছে।
সম্মেলনে যাওয়ার আগেই খুন করা হয় বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তীকে। যার আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আবার মারণাস্ত্রও হতে পারে! কিন্তু আবিষ্কারের নথিপত্র যেন বেমালুম উধাও হয়ে গেছে। অনুরোধে রাফসান এগিয়ে আসে। পিছে পড়ে যায় ❝অহিংশ❞...
কতশত বছর আগে ভাগ্যের লীলাখেলায় সুন্দরবনের অজানা এক অংশে এসে উপস্থিত হয় মিশরীয় যুবক ওয়াজেথ। বিশেষ এক দেবীর আরাধনা করে বারবার বেঁচে ফেরে মৃত্যুর দুয়ার থেকে। আদোও কি সত্যি নাকি আছে অন্য কোনো রহস্য?
আর. এন. এ. সিরিজের দ্বিতীয় বই "চন্দ্রাহত"। প্রথমেই বলেনি সিরিজ মেইনটেইন করে পড়তে হবেই এমন না। তবে পড়লে ভালো। " নীল নক্সা" বাদে পড়লে শুধু দুটা জায়গায় বুঝতে সমস্যা হবে। রাফসানের অতীতে কী হয়েছিলো যে পুলিশ ফোর্স ছেড়ে দিয়েছে আর আদনানের কাহিনী কী।
বইয়ের প্লট দুই টাইমলাইনের। অতীতের অংশ পদ্মপুরাণ, খাণ্ডব দাহন ও পারস্য পুরাণ নিয়ে। বর্তমানের অংশ খুন, ষড়যন্ত্র, অহিংসের খেলা নিয়ে। প্রথম থেকেই কাহিনী ধীরেই এগিয়েছে, বর্ণনা ডিটেইলসে করা। মেডিক্যাল, কেমিস্ট্রিের বেশ কিছু টার্ম রয়েছে। মিথের অংশটাই বেশি ভালো লেগেছে। কিন্তু শেষে ফার্মাকোলজিস্টের বলা কিছু পয়েন্ট কেমন যেন খাপছাড়া লেগেছে। এছাড়া ওভারঅল ভালোই লেগেছে। তবে সিরিজ কিন্তু শেষ হয়নি। এরপর আরও একটা বই আছে। তারপরও কাহিনী চলমান। অহিংশের শেষ কোথায়?
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী উমা। সে আবিস্কার করে ফেলেছে মরণঘাতী এক ব্যাধির প্রতিষেধক। যা উন্মোচনের আগেই খুন হতে হল তাকে। কি রহস্য তার খুনের পেছনে তা উদঘাটনের দায়িত্ব দেয়া হল সাবেক পুলিশ রাফসানকে। কি ঘটনা লুকিয়ে আছে এর পেছনে????
হাজার বছর আগের ঘটনা, ওয়াজেথ,এক মিশরীয় বংশোদ্ভূত দাস। যে কালেচক্রে পড়ে চাঁদ সওদাগরের ডেরা হয়ে পড়ে বাংলাদেশের সুন্দরবনে। কি সম্পর্ক তার সাথে এ খুনের???
অহিংস, এক গুপ্তসংঘ, তারা চাই এ প্রতিষেধকের ওপর নিজেদের কন্ট্রোল। কেন তারা কন্ট্রোল করতে চাই এটা??? আর কারাই বা আছে এ গুপ্তসংঘের পেছনে????
বাংলাদেশের থ্রিলার সাহিত্যের অন্যতম সেরা বই বলা চলে এ বইটিকে। আপনি গুপ্ত সংঘ, বিজ্ঞান ইতিহাসের ম���লবন্ধন, কোডব্রেকিং এগুলা জেমস রলিন্স,ড্যান ব্রাউন এর সাহিত্যে রেগুলার দেখলেও প্রথমবারের মত বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে উঠে এসেছে এগুলা। বইটা অনেকটা Impossible to put Down.. শেষ না হওয়ারর আগে বুঝা যাবেনা আসল রহস্য এবং ঘটনার আসল খলচরিত্র। যেটা বইটাকে করেছে আরও ইন্টারেস্টিং। বিশ্বমানের থ্রিলারের টেস্ট পেতে চাইলে এটা মিস করা উচিত হবেনা হয়তো।
নামকরা এক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থায় কর্মরত তরুণ মাইক্রবায়লজিস্ট উমা চক্রবর্তী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের আগে খুন হলো নিজের অফিসে। তার মৃত্যুর আগেই কানাঘুশা চলছিলো যে, বিরাট কিছু একটা আবিষ্কার করেছে সে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা পাল্টে দিতে পারে এই আবিষ্কার। তাহলে ধারনা করে নেয়া যেতে পারে এই গবেষনার জন্যই প্রাণ দিতে হলো উমাকে।
তদন্তের ভার এসে পড়লো রাফসানের উপর। রাফসানকে চিনতে পেরেছেন? নীলনক্সা পড়া থাকলে নতুন করে আর পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। ডাক্তারি পুলিশ বনে যাওয়া রাফসান যে আবার ডাক্তারি পেশায় ফিরে গেছে সেটা তো নীলনক্সার শেষেই দেখেছি। এবার সেই রাফসান পুরোদস্তু গবেষক। তবে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। রাফসান পুলিশের চাকরি ছাড়লেও পুলিশ তাকে ছাড়ে নাই। উমার মৃত্যুর পরে রাফসানের একাডেমিক জ্ঞানের জন্য তদন্তের জন্য রাফসানের সরনাপন্ন হলেন সৈয়দ মারুফ। সহযোগী শিহানকে নিয়ে তদন্ত শুরু করলো সে। কিন্তু এবার সে কোনো সাধারন গ্যাঙের পিছনে লাগে নাই। বিপুল ক্ষমতার অধিকারি এক রহস্যময় সংগঠন- অহিংশ। একদিকে উমার খুনিকে ধরতে হবে, অপরদিকে তার আবিষ্কার খুজে বের করে সেটা খারাপ লোকের হাতে পরা থেকে রক্ষা করতে হবে। তদন্তের শুরু কোনো ক্লু না পেলেও পরে যা ঘটতে শুরু করলো তার জন্য কে প্রস্তুত থাকে?
ওদিকে কয়েক হাজার বছর আগে মিসরের মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া এক যুবক ভাগ্যের তাড়নায় পারস্য, চম্পক ঘুরে অবশেষে সুন্দরবনে এসে ঠাই হলো। আমাদের রাফসানকেও কিন্তু তদন্তের জন্য সুন্দরবন যেতে হচ্ছে। ফ্লাপের লেখার মতই বলতে হচ্ছে, কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে এলো ‘সাপ’!
থ্রিলারের মধ্যে যদি ফ্যান্টাসি যুক্ত হয় তাহলে তার মজা কয়েকগুন বেড়ে যায়। আবার সেই ফ্যান্টাসি বা অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার যদি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। যেটা চমৎকারভাবে এই বইতে করেছেন লেখক। সামান্য কিছু জায়গায় ব্যাকরণগত সমস্যা মনে হয়েছে। তাছাড়া সব ঠিকঠাক।
আদীর বইয়ের পেজ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে বইটার বাইন্ডিং ভালো লাগে নাই। বাইন্ডিং এর জন্য পেজ ভাজ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কিছু জায়গা থেকে পেজ খুলে আসবে। বাইন্ডিং কিছুটা খারাপ হলেও পেজ আর কাভারে মন ভালো হয়ে যাবে। এবার মেলায় এই একটা বই ছিলো কেনার লিস্টে। কেনা শেষ, পড়া শেষ। এখন সারামাস কি করুম?
কাহিনী নিয়ে কিছু বলার দরকার নাই। সেটা ভালোই আছে, আমি আর না বিগড়াই। এরচেয়ে আমার ছোট্ট মতামত লিখি।
এখন মনে হচ্ছে আগের বইগুলো এটার তুলনায় কিছুই না। সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। হিন্দু+ইজিপ্সিয়ান মিথকে সাথে নিয়ে বর্তমানকে মিক্স করে এক অনবদ্য উপন্যাস উপহার দিয়েছে লেখক। তাহলে আমার পড়তে এতদিন কেনও লাগল? এতদিন লাগেনি, অল্পই লেগছে। বইটার গেট আপ খুব ভালো লেগেছে, আর এন্ডিং ও। দুই মিলিয়ে ইচ্ছে করেই সাথে নিয়ে ঘুরেছি, আর ভেবেছি বড় করে কিছু লিখব। সেটা আর হয় নাই, তাই ভাবলাম সময়কে ফাঁকি দিয়ে আর কত! ছুটি পেলাম আজ, বসে আছি, স্ট্যাটাস আপডেট করে দেই।
হিন্দু মিথ নিয়ে আজকাল অনেকেই লিখছে। ভালো লাগল ব্যাপারটা। আমি ভেবেছিলাম হিন্দু মিথ সবাই জানে, নতুন করে লেখার কোনও স্কোপ নাই। আসলে ভাবি নাই এমনটা, কেউ একজন ঠিক এই কথাটাই বলেছিল। তাই আর এইদিকটায় হাত দেই নাই, ইচ্ছা ছিল খুব। তবে এখন দুইটা বই পড়লাম মনসাকে নিয়ে। এই দুইয়ের মাঝে চন্দাহতই উপরে থাকবে। যদিও কিছু জায়গায় একটু আধটু ত্রুটি চোখে লেগেছে।
বইমেলা চলাকালে আদী প্রকাশে গিয়েছিলাম অন্য আরেকটা বই খুঁজতে। সেটা না পাওয়ায় এই বইটা কিনেছিলাম কোনরূপ জানাশোনা ছাড়াই। পয়সা ও সময় উভয়েরই যথার্থ খরচ হয়েছে। পড়তে পড়তে একটা সময় মনে হচ্ছিলো যেন অ্যামাজনিয়ার ছায়ায় চলে যাচ্ছে... তবে শেষ পর্যন্ত সেদিকে আর যায়নি বলে ভালো লেগেছে। আর বৈজ্ঞানিক যেসব বিষয় যেমন ক্যান্সার, প্রো-ভাইরাস, নিউরোটক্সিন এসব বেশ আরামদায়ক পর্যায়েই ছিলো।
দেড় তারকা বইয়ের জন্য, বাকি আধা সময়ের মূল্য! - চরিত্রদের অবস্থান শক্তপোক্ত লাগে নাই৷ - প্লট ডেভেলপমেন্ট দুর্বল৷ তবে আমার কাছে প্লটটাই ঠিক যুতসই ঠেকে নাই৷ মনে হলো অহিংশ সংঘকে পরিচয় করানোই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল৷ - দ্বিতীয় পর্বে উমার ডায়েরি দীর্ঘ এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা৷ - ওয়াজেথের গল্পটা আরো কাটছাট করা যেত৷ ওই লকেটের জন্য এত দীর্ঘ জীবনযাপনের অতিরিক্ত বর্ণনা!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের ঠিক দুই দিন আগে মারা গেল তরুণ বাঙ্গালি বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তী। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই সে জানিয়েছিল, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পাল্টে দেবার মতো এক আবিষ্কার করেছে। খুন কি হতে হলো সেজন্যই? ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ল বর্তমানে নামকরা এক গবেষণা সংস্থার সাথে জড়িত থাকা রাফসান ইবনে সেলিম। উমা চক্রবর্তী বান্ধবী, নিয়তিকে নিয়ে শতাব্দী পুরাতন, কিন্তু প্রায় অজানা এক কিংবদন্তির পেছনে ছুটে পাড়ি জমালো সুন্দরবনে। উমার হত্যাকারীকে পাকড়াও করলেই হবে না, সেই সাথে পুন:আবিষ্কার করতে হবে সেই সঞ্জীবনী ওষুধটাও। এদিকে দুই বিজ্ঞানীর পেছনে লেগেছে রহস্যময় এক সংঘটন-অহিংশ। লেলিয়ে দিয়েছে তাদের নৃশংস আততায়ীকে। কেঁচো খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল সাপ! বাংলাদেশের বুকে মঞ্চায়িত হচ্ছে শুভ আর অশুভের দ্বন্দ্ব! এই হচ্ছে চন্দ্রাহতের সারসংক্ষেপ। পুরাণের সাথে বর্তমান টাইমলাইন মিলিয়ে বেশ ভালো গুছিয়ে লেখা একটা থ্রিলার। মা মনসা, খাণ্ডবদাহন পর্ব, উরগ গোত্রের রহস্যময় চাল চরিত্র নিয়ে জম্পেশ একটা থ্রিলার। খল চরিত্রগুলোকে ভাগ করলে দু’বার চমকে যেতে হয়। কেন? সেটা পাঠকরা পড়বার পরই বুঝবেন। আমার রেটিং দেয়াতে কিছু যায় আসে না, তবুও দেয়া লাগে বলে দিচ্ছি। আমার রেটিং ৮/১০... অনেকগুলো ছোট ছোট টাইমলাইন একসাথে করে বর্তমানে নিয়ে এসেছেন লেখক। এটা বেশ ভালো লেগেছে। তবে মূল চরিত্রগুলো একটু ফিকে লেগেছে আমার কাছে (একান্ত ব্যক্তিগত মতামত) সব মিলিয়ে চন্দ্রাহত আপনাকে আহত করবে না, এটুকু নিশ্চয়তা দিচ্ছি! হ্যাপি রিডিং...
বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের দু’দিন আগে মারা গেল তরুণ এক বাঙালি বিজ্ঞানী,নাম উমা চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন যাবৎ মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিল সে। কিন্তু তার মৃত্যু ক্যান্সারের কারণে হয়নি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পূর্বে সে জয় করতে সক্ষম হয় ক্যান্সারকে। এ যেন ইতিহাসের পাতায় ঘটা বিরল এক ঘটনা। কিন্তু কিভাবে? কি ছিল তার সেই মহৌষধ? আর এই ঔষধের জন্যই কি খুন হতে হল তাকে? . উমা চক্রবর্তীর বান্ধবী নিয়তিকে নিয়ে নাম করা এক গবেষণা সংস্থার সাথে জড়িত রাফসান সেলিম খুঁজতে শুরু করল উমা চক্রবর্তীর সেই চিকিৎসা পদ্ধতি। নিয়তিকে দেয়া উমার চিঠিতেই নাকি লেখা আছে সকল কাহিনী। কিন্তু সেটা তো অতিসাধারণ এক চিঠি। চিঠির অর্থোদ্ধার করে কাহিনীর সূত্রপাত খুঁজতে গিয়ে মিলল অন্য এক তথ্য। সব কিছু যেন দেবী মনসার কৃপা। এই মহৌষধ তৈরি হয়েছে পুরাণে থাকা মনসা আর চাঁদ সওদাগরের আমল থেকে। তাহলে কি এটাই প্রমাণিত হয় যে পুরাণ সত্য। তারমানে আধুনিক বিজ্ঞান কি আরও একবারের জন্য ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু সত্যতা প্রমাণের জন্য যে পাড়ি দিতে হবে খানিকটা দূরের পথ । সুন্দরবনের গহীনে টিয়ার চরেই লুকিয়ে আছে সেই রহস্যের সমাধান। অন্যদিকে তাদের পিছনে এক আততায়ীকে লেলিয়ে দিয়েছে “অহিংশ” নামের এক সংগঠন। নিয়তির হাত ধরে রাফসান কি সর্ষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভূতকে বের করতে পারবে? সত্যটা জানলে যে থমকে যাবে পুরো বাংলাদেশ। বদলে যাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি। নাকি এসব কিছুই পাঠকের নিছক কল্পনা বই কিছু না। সকল প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরও এক বার আর এন এ সিরিজের দ্বিতীয় বই “চন্দ্রাহত” পড়তে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের এ থ্রিলার বইটা (অথবা হয়তো কল্পবিজ্ঞান) পড়ে হতবাক হলাম। এ ধরণের কাহিনি বাংলাদেশের পরিবেশের মধ্যে দেখানো যায় এটা বিশ্বাসই হতো না এ বই না পড়লে। গতিময় কাহিনি ছিলো। বিশেষত বর্ণনা রীতি কিংবা লেখার ধরণের কারণে বাংলাদেশের অনেক মৌলিক থ্রিলার পড়লে মনে হয় যেন বিদেশি বইয়ের অনুবাদ পড়ছি। এ বইটাতে এরকম বিরক্তিকর ব্যাপারটা না থাকায় ৪★ দিলে হয়তো অবমূল্যায়ন হবে না। তবে ওয়াজেথ ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোর নাম ভালো লাগেনি... 😑 কিন্তু সবমিলিয়ে দারুণ একটা বই। বাংলাভাষী অন্যান্য পাঠকদেরও এই বই রেকমেন্ড করবো অবশ্যই... আশা করি এ বই পড়ে হতাশ হবে না কেউ।
পছন্দের বইকে পূর্ণ নম্বর দিতে আমার কোন দ্বিধা নেই। "চন্দ্রাহত" কি প্রিয় বই? হ্যা, প্রিয় বইগুলোর ছোট্ট লিস্টটায় ওপরের দিকেই থাকবে। চোখ বন্ধ করে রিকমেন্ড করবো।
ওয়াজেথ, হাজার বছর আগে মিশরে জন্ম নেওয়া এক তরুন। উপাসনা করে সাপের মুখাকৃতি বিশিষ্ট এক উপাস্যকে। ক্রীতদাস হিসেবে অংশ নেয় সমুদ্র যাত্রায়। নানা জটিলতার পর তাকে প্রায় মৃত অবস্থার উদ্ধার করে ভারতবর্ষের এক বণিক। ক্রীতদাস ওয়াজেথ আশ্রয় পায় চম্পকনগরীর সবচেয়ে ধনী সওদাগরের বাড়িতে (হ্যা,মনসামঙ্গল কাব্য সম্পর্কে ধারনা থাকলে আপনি ঠিকই অনুমান করতে পেরেছেন এই সওদাগর কে)। যাইহোক, আশ্চর্যজনক ভাবে ওয়াজেথ লক্ষ্য করলো তার উপাস্য দেবীর সাথে চম্পকনগরীর এক কিংবদন্তীর অনেক মিল। পরবর্তীতে নানা ঘটনা-দূর্ঘটনার পর ওয়াজেথ সিদ্ধান্ত নেয়, আজীবন উপাসনা করবে এই দেবীর এবং ভবিষৎ প্রজন্মের কাছেও পৌছিয়ে দেবে এই রীতি। । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের মাত্র দুই দিন আগে খুন হয় বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তী। জানা যায় নিভৃতে কাজ করছিলেন এমন এক প্রজেক্টে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারনায় নিয়ে আসবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। গল্পের প্রোটাগনিস্ট রাফসান ইবনে সেলিম, প্রাক্তন ডাক্তার,পুলিশ এবং বর্তমান সময়ের এক গবেষক। কাজ করতেন উমা চক্রবর্তীর সাথে একই সংস্থায়। প্রাক্তন বস এর অনুরোধে উমা চক্রবর্তী হত্যা তদন্ত হাতে নেয় রাফসান। সহযোগী হিসেবে থাকে এস আই শিহান ও উমা-র বান্ধবী নিয়তি। . কেন খুন হলো উমা? তার আবিষ্কার ই কি তার খুন হওয়ার জন্য দায়ী? আর একবিংশ শতাব্দীর এই ঘটনার সাথে হাজার বছর আগের ওয়াজেথ ও তার উপাস্যের কি সম্পর্ক? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়ে ফেলতে পারেন বাংলাদেশী লেখকের এই অসাধারন মৌলিক হিস্টোরিকাল/কাল্ট/ক্রাইম থ্রিলার বইটি। । থ্রিলার হিসেবে বইয়ের মান অসাধারন। কাহিনীতে কোন জড়তা নেই। স্টোরি বিল্ডিং ভাল ছিলো। প্রথমদিকে মিশরীয় মিথোলজির সাথে হিন্দু পুরাণকে লেখক চমৎকার ভাবে ব্লেন্ড করে দিয়েছে। যদিও প্রথমদিকে ওয়ায়জেথের কাহিনী যেরকম ডিটেইলড ছিলো, শেষের দিকে তেমন ডিটেইলড ছিলো না। এক পর্যায়ে মনে হয়েছে লেখক বর্তমান টাইমলাইনের সাথে অনেকটা জোড় করে ব্লেন্ড করে দিছে আগের টাইমলাইন। অনেক জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। তবে মূল কাহিনীও কম যায় না। উমা-র ডায়েরী উদ্ধার, কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিকদারের আবির্ভাব, পুরো ঘটনায় অহিংশের ভূমিকা... সবমিলিয়ে মোটামুটি এক বসায় পড়ে ফেলার মতো বই। টাকা সময় দুই ই উসুল।
ভালো বই। দুটো সময়ের কাহিনী একসাথে এগিয়েছে। তবে অতীতের কাহিনীটা শেষের দিকে এসে যেন একদম তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এটার ফিনিশিং ভালো হলে বইটা আরও ভালো হতো।