Jump to ratings and reviews
Rate this book

এথনো-পলিটিক্স ইন সাউথ এশিয়া #৩

বার্মা : জাতিগত সংঘাতের সাত দশক

Rate this book
একটি দেশ তার প্রতিবেশী পাল্টাতে পারে না। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী বার্মা। কিন্তু বার্মার সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সম্পর্কে সামান্যই জানে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে কক্সবাজার উপকূলে লাখ লাখ। রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢেউয়ের মুখে প্রথম ভালো করে বার্মার দিকে মনোযোগ পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু দেশটির জাতিগত সংঘাতের ধরন এবং তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক তাৎপর্য নিয়ে এখানকার সমাজে গভীর কোনো বোঝাপড়া নেই।
বার্মা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং তার ঐতিহাসিক পরম্পরা না জানার কারণে বাংলাদেশ-বার্মা সম্পর্কও প্রত্যাশিত মাত্রায়। বিকশিত হয়নি। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক সংস্থা, একাডেমি ও প্রচারমাধ্যমে বার্মা সম্পর্কে অস্পষ্টতার বিষয়টি নানানভাবে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গত দুই বছরে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি বলছে বাংলাদেশের বার্মাচর্চা বাড়ানো জরুরি। সে লক্ষ্যেই এই প্রকাশনা। এই গ্রন্থে বার্মার রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের চুম্বক ধারণাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যা আগ্রহীদের বার্মা বিষয়ে অধিকতর অধ্যয়ন-অনুশীলনে আগ্রহ তৈরি করবে। একই সঙ্গে তা বহু জাতিসত্তায় বিভক্ত বার্মার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণে বাংলাদেশিদের সঠিক রণকৌশল প্রণয়নেও সহায়ক হতে পারে।

96 pages, Hardcover

Published January 1, 2019

3 people are currently reading
49 people want to read

About the author

Altaf Parvez

20 books39 followers
আলতাফ পারভেজের জন্ম ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬। দর্শনশাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শেষ করেন। ছাত্রত্ব ও ছাত্র রাজনীতির পর সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবন শুরু। পরে গবেষণা ও শিক্ষকতায় সংশ্লিষ্টতা। প্রকাশিত গ্রন্থ ছয়টি। যার মধ্যে আছে—‘কারাজীবন, কারাব্যবস্থা, কারা বিদ্রোহ : অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা’, ‘অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ, কর্নের তাহের ও জাসদ রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের নারীর ভূ-সম্পদের লড়াই’, 'মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী ইতিহাসের পুনর্পাঠ'।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
11 (29%)
4 stars
18 (48%)
3 stars
5 (13%)
2 stars
3 (8%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 10 of 10 reviews
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
November 11, 2024
এই বইটাকে ইতিহাসগ্রন্থ বা গবেষণাগ্রন্থ কোনোটাই বলতে রাজি নই। এটাকে বড়জোর 'টীকা সমগ্র' বলা যেতে পারে। একাডেমিক পরীক্ষাগুলোতে যেমন বিভিন্ন বিষয়ে টীকা লিখতে হয় তেমনই বেশকিছু বিষয়বস্তুর ওপর টীকা লেখা হয়েছে, এবং কোনো ধারাবাহিকতা ছাড়া।

মায়ানমারের জাতিগত সমস্যা, রাজনৈতিক সংকট অনেক জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এমন টপিকের ওপর বিশ্লেষণধর্মী/অনুসন্ধানমূলক লেখা আলতাফ পারভেজের হাত থেকেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু এই বইটা প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও দিতে পারেনি। নির্দিষ্ট টাইমলাইন ছাড়া গোঁজামিল লেখা।

বইটা পড়ে সর্বোচ্চ জোড়াতালি দেওয়া ঝাপসা একটা ধারণা হতে পারে মায়ানমারের জাতিগত তথা রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,651 reviews418 followers
November 2, 2024
বইতে প্রচুর তথ্য আছে কিন্তু লেখকের স্বভাবসুলভ অন্তর্দৃষ্টি কমই পাওয়া যায়। কোনো গভীর আলোচনা অনুপস্থিত।
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
December 14, 2024
তথ্যবহুল কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনাগুলো সময়কাল অনুযায়ী সাজানো নয়। আলতাফ পারভেজের স্বভাবসিদ্ধ গবেষণাধর্মী লেখা ও অনুপস্থিত। লেখক কতগুলা আলাদা অধ্যায়ে ভাগ করে বার্মা নিয়ে টানা লিখেছেন। বইটা বর্ধিত কলেবরে এবং সময়কাল অনুযায়ী পুর্নলিখন জরুরি।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 31, 2022
আলতাফ পারভেজের লেখা 'এথনো-পলিটিক্স ইন সাউথ এশিয়া' সিরিজের তৃতীয় বই 'বার্মাঃ জাতিগত সংঘাতের সাত দশক'। বইটিতে বার্মা তথা মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও জাতিগত অস্থিরতার একাল-সেকাল তুলে ধরেছেন লেখক।


বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ বার্মা তথা মায়ানমার। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর নামানুসারে দেশটির নাম ছিল বার্মা। ১৯৮৯ সালে সেটি পরিবর্তন করে মায়ানমার করা হয়। আমাদের পাশের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা খুব কমই জানি বার্মা সম্পর্কে। তবে সম্প্রতি বড় দুইটি ঘটনা মায়ানমারকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি দিয়েছে ব্যপকভাবে। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্টেট কাউন্সিলর আঙ সাং সুচিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করা।

১৮৮৬ সালে আভা রাজার অধীনে ছিল বার্মা। ব্রিটিশ প্রতিনিধিকে রাজ দরবারে জুতা খুলে প্রবেশ করতে বলায় তারা রাজার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় এবং যুদ্ধের মাধ্যমে বার্মা দখল করে নেয়। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বার্মা ভারতবর্ষের একটি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে যুক্ত থাকলে পরে বার্মাকে আলাদা একটি প্রদেশ ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশদের থেকে। স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে আঙ সাং এর নেতৃত্বাধীন '৩০ কমরেড' সশস্ত্র দলের ভূমিকা রয়েছে।

১৯৬২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নে উইন ক্ষমতা দখল করলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘদিন বার্মা সামরিক শাসনের অধীনে থাকে।এর মাঝে ১৯৮৮ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় তিন হাজার আন্দোলনকারী নিহত হয়।এই আন্দোলন ৮৮৮৮ আন্দোলন নামেও পরিচিত। ৮৮৮৮ আন্দোলনের মাঝেই আঙ সাং সুচির এন এল ডি (ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি) দলের জন্ম হয়।১৯৯০ সালে ৫৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করতে চাইলেও সামরিক জান্তা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং সুচিকে দফায় দফায় গৃহবন্দী করা হয়।২০১৫ সালের নির্বাচনে ফের সুচি নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন কিন্তু পূর্ববর্তী শাসকদের আইন ছিল কোনো ব্যক্তির পিতা-মাতা-স্বামী যদি বিদেশি হয় তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে সুচি নির্বাহী আদেশে নতুন পদ 'স্টেট কাউন্সিলর' সৃষ্টি করেন এবং নিজেকে প্রেসিডেন্টের মর্যাদা দেন এবং পদটি অন্য কোনো রাষ্ট্রে নেই বললেই চলে।

বার্মা এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রথম অ-কমিউনিস্ট দেশ যারা চীনের সমাজতন্ত্রকে স্বাগতম জানায়। ইসরায়েল কিংবা চীন কেউই সেই কথা ভুলে যায় নি। যা আমরা দেখতে পেয়েছি রোহিঙ্গা নিধনে উপরোক্ত দুই দেশের নীরব সমর্থনে। এছাড়া চীন এবং ইসরায়েল বার্মাকে বিপুল পরিমাণে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

আফগানিস্তানের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মাদক সরবরাহকারী হল বার্মা। চীন, লাওস সীমান্তের শ্যান প্রদেশের প্রায় ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মাদকের ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত এবং এই এলাকাকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল বলা হয়। মাদকের স্রোত চীনমুখী হওয়ায় চীন এটাকে দমন করতে বদ্ধপরিকর। আর অন্যদিকে শ্যান প্রদেশের গেরিলাদের দমনে বার্মা সেনাবাহিনী চীনের সাহায্য নিয়ে থাকে।

১৯৮২ সালের সরকারি স্বীকৃতি হিসেবে ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস বার্মাতে। ১৯৪৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী যারা স্বাধীনতার পূর্বে বার্মায় বসবাস করে আসছে সকলকেই বার্মার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮২ সালের নাগরিক আইনে নতুন শর্ত আরোপ করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। শুধুমাত্র 'কামিয়ান' মুসলিম জনগোষ্ঠী বার্মার একমাত্র স্বীকৃত জনগোষ্ঠী। মূলত ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি করেছে এবং তাদের দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে।

বার্মাতে অনেকগুলো জনগোষ্ঠীর বসবাস। এছাড়া আপার ও লোয়ার বার্মার বিভক্তির কারণে নৃ-তাত্বিক বিদ্বেষ সর্বত্র বিরাজমান। সেনাবাহিনীতে বামার জনগোষ্ঠী ব্যতীত অন্য কাউকে নেয়া হয় না কিংবা সুচির এন এল ডি তে মুসলিমদের মনোনয়ন না দেয়া নিয়ে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে তারই প্রতিফলন দেখা যায় রোহিঙ্গা নিধনে। অথচ বার্মার স্বাধীনতাকালে আঙ সাং এর প্রধান রাজনৈতিক সহযোগীর মধ্যে একাধিক মুসলিম ব্যক্তি ছিলেন।

জাতিগত বিদ্বেষের কারণে বার্মাতে সশস্ত্র দলের সংখ্যাও অনেক। ২০১৫ সালের যুদ্ধবিরতিতে কিছু সংগঠন চুক্তি স্বাক্ষর করলেও কাচিন, কারেন ও আরাকানের প্রধান সংগঠনগুলো চুক্তিতে সম্মত হয় নি এবং প্রায়শই সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এছাড়া পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ সেনাবাহিনীর জন্য আসন বরাদ্ধ থাকায় সেনাবাহিনী-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দ্বৈত শাসন বহাল রয়েছে। অন্যদিকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী কিংবা প্রত্যাখ্যানকারী উভয়ই তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জোরেশোরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বার্মায় মুসলিমদের আরেকটি প্রধান সংকট সকল মুসলিম জাতিগোষ্ঠীই পরস্পর থেকে সামাজিক ও সাংগঠনিকভাবে বিচ্ছিন্ন। পুরো দেশটিকে মুসলিমদের একক কোনো সংগঠন নেই। ভৌগলিকভাবেও তাদের অবস্থান কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। ফলে বামার সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের সামনে পুরো দেশের মুসলমানরা কার্যত অতীতের সাজানো জীবনযাপন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কতটুকু তা বোঝা যায় বার্মার ইতিহাস পড়লে। আমাদের প্রতিবেশীর রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বইটি অবশ্যপাঠ্য। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Tahsina Alam.
108 reviews
April 7, 2021

দক্ষিণ এশিয়ার মাদক (বিশেষত ইয়াবা) চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য বার্মার শ্যান স্টেটের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকা৷ নেটফ্লিক্সের উচিত একটা নার্কোসঃ বার্মা বানায় ফেলা।

ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বার্মার রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা সারাংশ এই বইটা। রোহিঙ্গা জেনোসাইডের ব্যাপারটাও কিছুটা চলে আসছে৷

রিসেন্টলি সামরিক ক্যু এর পর বার্মায় বেশ জোরেশোরে একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হইসে। ১৯৮৮ সালের বিখ্যাত ৮৮৮৮ আন্দোলনের মতই বলা হইতেসে।

ফলো করতে গিয়ে বুঝলাম বার্মা সম্পর্কে ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ খুবই কম। ঐতিহ্যর স্টলে লেখকের অন্য একটা বই কিনতে গিয়ে তাই এটা দেখে কিনে ফেলসি৷ ডিটেলস খুব বেশি না থাকলেও স্টার্টার হিসেবে বইটা ভালো আর রেফারেন্সগুলাও বেশ কাজে দিবে মনে হচ্ছে।
31 reviews1 follower
April 15, 2023
একদমই ব্যাসিক কথাবার্তা, আরেকটু গভীর কিছু আশা করছিলাম!
Profile Image for Hasibul Hasan.
35 reviews65 followers
August 5, 2020
এই বইটা পড়েই বুঝতে পারলাম দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে। ১৯৬২ সালে সেনা শাসক নে উইন ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখনও বার্মা মূলত সেনাবাহিনীরই (স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত টাটমা-ড) অধীনেই আছে বলা চলে। কারণ হিসেবে বলা যায় সাংবিধানিকভাবেই সশস্ত্রবাহিনীকে প্রচুর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যেমনঃ
১। পার্লামেন্টে ২৫% সংরক্ষিত আসন
২। সীমান্ত, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন করে সেনা কর্মকর্তাকে মন্ত্রী হিসেবে রাখার নিয়মসহ আরো অনেক সুবিধা।

অং সাং সুচি কেন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি কিংবা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে কেন তিনি ওইভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন নি তার একটা উত্তর এই বইতে আছে। সেটাও সংবিধানের জন্যই। সংবিধানের নিয়মানুসারে কারো স্বামী বা স্ত্রী, পিতা বা মাতা, ছেলে বা মেয়ে কেউ কখনই রাষ্ট্রপতি হতে পারবে না। এই নিয়মটা প্রবর্তনের একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিলো সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকানো কারণ তার স্বামী ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। এই সংবিধানের সংশোধনের জন্য অনেক উচ্চবাচ্য হলেও তা হয়নি এখন পর্যন্ত।

বার্মার সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী এক ব্যক্তির কথা জানতে পারি বইতে, যার নাম থান শুয়ে। ক্লার্ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে সেনাবাহিনীর জেনারেল, কমান্ডার ইন চীফ হয়ে অবসরে যান। ১৯৮৮ সালের গণতন্ত্রের দাবীতে '৮৮৮৮ আন্দোলন' দমনে তার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। এই ব্যাক্তি অবসরে গেলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে জানা যায়। ২০০৯ সালের দিকে তার নাতি ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব কেনার উদ্যোগ নিলে বার্মার সাবেক ঔপনিবেশিক দেশ ব্রিটেনের মানুষজন হতবাক হয়। যদিও পরবর্তীতে বার্মায় সাইক্লোন 'নার্গিস' এ দেড় লাখ লোক নিহত হওয়ায় এই পরিকল্পনা বাদ দিতে হয় তাকে। তবে এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে দীর্ঘ সেনাশাসনে সশস্ত্র বাহিনীর মানুষজন কতটা বিত্তশালী হয়েছে।

৮ টা মূল জাতি গোষ্ঠী আর ১৩৫ টা তাদের স্বীকৃত নৃগোষ্ঠীর বাইরেও আরও অনেক জাতিসত্তা আছে যেমন রোহিংগা, চীনা, ভারতীয় ইত্যাদি। মূল জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশের সাথেই সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব আছে এবং ইতিহাসের কোন না কোন সময় গৃহযুদ্ধও হয়েছে তাদের সাথে।

মিয়ানমার থেকেও বড় দেশ ভারতে এত এত জাতি থাকা সত্ত্বেও যে তাদের মধ্যে যে একতাবোধ বিদ্যমান তার মূল কারণ হলো গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা ছাড়া যে একটা দেশের বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঐক্য আনা যায় না তার উত্তম উদাহরণ হলো মিয়ানমার। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার যতই সমালোচনা করুন না কেন একটি দেশের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা গণতন্ত্র ছাড়া সম্ভব নয়।

এর উপর আছে মিয়ানমারের ভৌগলিক অবস্থান। চীন, ভারতের দ্বন্দ্বের ভূরাজনীতির মারাত্মক শিকার হচ্ছে মিয়ানমার, দুই দেশই তাদের অর্থনৈতিক দাপট বজায় রাখতে একদিকে যেমন এ দেশের দ্বন্দ্বগুলোকে উস্কে দিচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের মত মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
ভারতের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলো স্বাধীনতাকামী হওয়ায় ভারত চায় মিয়ানমারের সাথে কোন ঝামেলায় না জড়াতে। অন্যদিকে স্থলবেষ্টিত চীন চায় মিয়ানমারের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সেজন্যই তারা নানা মেগা প্রজেক্ট যেমন আরাকানের গভীর সমুদ্রবন্দর, আরাকান থেকে চীনের ইউনান পর্যন্ত ২৩৮০ কিমি দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন নির্মানসহ নানা প্রকল্প কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। প্রজেক্টের ক্ষেত্রে ভারতও পিছিয়ে নেই, নিজ দেশের বাইরের সর্ববৃহৎ প্রকল্প "কালাদন বহুমুখী প্রকল্প" কিন্তু মিয়ানমারকে ঘিরেই। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে মিয়ানমারকে যেকোন ইস্যুতে বাছবিচার ছাড়া সমর্থন দেয়া তো আছেই।

এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার যেকোন দেশের মত এখানেও ধর্মের কুপ্রভাব। বৌদ্ধ ধর্মের শান্তির শিক্ষা থেকে ক্রোশ ক্রোশ দূরে গিয়ে ঘৃণাচর্চার এক শস্যক্ষেত্রে পরিণত করেছে বিভিন্ন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। এরা এতই ঘৃণা ছড়িয়েছে যে কয়েকজনের জনসমক্ষে কোন কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী , বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের জন্য।

সবচেয়ে অবাক হয়েছি এটা জেনে যে বার্মার অন্যতম ভালো বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েল সেটা জেনে। বলা হয়ে থাকে ইসরায়েল যার বন্ধু তার আর শত্রুর অভাব হয় না। ইসরায়েল তার অস্ত্র ব্যাবসাকে চাঙ্গা রাখতে ভালোভাবেই ব্যবহার করে যাচ্ছে মিয়ানমারকে।

বইটা ভালোই ইন্টারেস্টিং লেগেছে, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির গতিপথ বুঝতে মিয়ানমার খুব গুরুত্ব বহন করে। তাই এই বিষয়ে ইন্টারেস্ট থাকলে বইটি ব্যাসিক বই হিসেবে সাজেস্টেড।
37 reviews1 follower
July 24, 2024
রোহিঙ্গা শরনার্থী সংকটের একমাত্র ভুক্তভোগী বাংলাদেশ হলেও এ বিষয়ে আমাদের জানাশোনার পরিধি অত্যন্ত সীমিত। জনপরিসরে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মুসলমান পরিচয় নিয়ে আবেগি বয়ান এবং তাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী পর্যায়ের ঘৃণার প্রকাশ ব্যতিত ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তবমূখী আলোচনা বিরল। অথচ গৃহযুদ্ধে ভাঙনের মুখোমুখি বার্মার অভ্যন্তরীণ জাতিগত শ্রেণীবিন্যাস ও সংঘাতের ধারা অত্যন্ত জটিল- রোহিঙ্গারা যার একটি অংশমাত্র। বহু জাতিস্বত্তায় বিভক্ত বার্মার ইতিহাসের পূর্বাপর এবং রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তার ঐতিহাসিক পরম্পরা সম্পর্কে অজ্ঞাত পাঠকের কাছে আলতাফ পারভেজের বইটি চোখ খুলে দেওয়ার মতো। ছোট পরিসরের বইটিতে তেমন বিস্তারিত আলোচনা না করা হলেও বার্মার ইতিহাসের মূল ঘটনাবলী লেখক স্পর্শ করে গেছেন, ফলে কিভাবে জাতিগত ঘৃণা আর সংঘাতের রাজনীতি বার্মা বা মিয়ানমারকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে তার একটি সংক���ষিপ্ত কিন্তু পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায় এখান থেকে। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সংবেদনশীল অথবা এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধানে আগ্রহী যেকোনো পাঠকের জ্ঞানার্জনের সূত্রপাত হতে পারে "বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত শতক" বইটি থেকে।
Profile Image for Ashiqur Rahman.
63 reviews
March 25, 2024
অল্প কথায় সহজ ভাষায় প্রচুর তথ্য
Profile Image for Jubaidul Haque.
9 reviews2 followers
June 10, 2024
মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ হলেও তাদের অভ্যন্তরীর রাজনীতির বিভিন্ন দিক আমাদের এখানে ভারতের মতো ওতোটা আলোচিত নয়। সেদিক থেকে এই বইটা সেই আলোচনার একটা সূচনা বলা যেতে পারে।
Displaying 1 - 10 of 10 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.