১৯৬৬ সাল, ১৬ ফেব্রুয়ারি, রাত আটটায় রেডিওতে শোনা গেলো এক বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান গল্পপাঠের অনুষ্ঠান। তার প্রায় একবছর আগে এমনই এক গল্পপাঠের আসরে ছিলেন অদ্রীশ বর্ধন, প্রেমেন্দ্র মিত্র আর দিলীপ রায়চৌধুরী। এবারে তাঁদের সঙ্গে আছেন সত্যজিৎ রায়। গল্পটির নাম 'সবুজ মানুষ', লিখেছেন এই চারজন মিলেই এক একটা অধ্যায়। এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল সেই অনুষ্ঠান শ্রোতাদের অনুরোধে তার পুনঃসম্প্রচার করতে হয়। পরে এই গল্পটি প্রকাশ পায় বেতারজগৎ পত্রিকায়। অদ্রীশ বর্ধনের আগ্রহে পরবর্তীকালে তাঁরই সম্পাদিত পত্রিকায় প্রকাশ পায় গল্পটি, এই সময় 'আশ্চর্য!'-'বিস্ময়'-'ফ্যানট্যাস্টিক' পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে কল্পবিজ্ঞানের গল্প-সাক্ষাৎকার-নানা লেখা। সেখানে প্রকাশিত কিছু প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গল্প আর 'সবুজ মানুষ' নিয়ে ফ্যানটাস্টিক আর কল্পবিশ্ব-র যৌথ প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে "সবুজমানুষ"। এই বইয়ে আছে "সবুজমানুষ" এই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির একটি সংশোধিত সংস্করণ, আকাশবাণীর পাঠের সঙ্গে মিলিয়ে। 'সবুজমানুষ' গল্প অবলম্বনে অদ্রীশ বর্ধন লিখিত একটি নাট্যরূপ, যা অভিনীত হয়েছিল আকাশবানীতেই প্রায় বছরকুড়ি পরে, প্রতিষ্ঠিত অভিনেতারা পাঠঅভিনয় করেছিলেন সেই নাটক। 'সবুজমানুষ' গল্পপাঠের হারিয়ে যাওয়া স্পুল থেকে কিভাবে আদিপাঠটি সংরক্ষণ করা হলো তার বিবরণ। প্রথম সেই সংকলনটির অন্যান্য কল্পবিজ্ঞান গল্পগুলিও এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে— লীলা মজুমদার, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিমল কর, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি। সবুজমানুষদের নিয়ে প্রকাশিত কয়েকটি গল্প। আর আছে সবুজমানুষেরও আগে আকাশবাণীতে পঠিত বারোয়ারি গল্পটি 'মহাকাশযাত্রী বাঙালি'। সব মিলিয়ে বইটি বাংলা কল্পবিজ্ঞানপ্রেমীদের কাছে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণযুগের দলিল।
জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৩২ | কলকাতায় | একটি শিক্ষক পরিবারে ছোট থেকেই অজানার দিকে দুর্নিবার আকর্ষণ | অ্যাডভেঞ্চারের টান জীবনে, চাকরিতে, ব্যবসায়, সাহিত্যে | চোদ্দবার চাকরি বদল | নামী একটি প্রতিষ্ঠানের পারচেস-ম্যানেজার পদে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি চলে আসেন লেখার জগতে | গোয়েন্দাকাহিনী দিয়ে লেখালেখির শুরু | ' রচনারীতি র দিক থেকে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় এর উত্তরসুরী ' - অভিনন্দন জানিয়েছে একটি নামী সাপ্তাহিক | সেরা বিদেশী গোয়েন্দাকাহিনীকে পরিবেশন করেন বাংলায় | বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জগৎ, অতিপ্রাকৃত, অনুবাদ - প্রায় সব ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্বীকৃতি | ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা 'আশ্চর্য'র ছদ্দনামী সম্পাদক | এবং সম্পাদনা করেন 'ফ্যান্টাস্টিক' | সত্যজিত রায়ের সভাপতিত্বে প্রথম 'সায়ান্স ফিকশন সিনে ক্লাব' এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক | পত্রিকা, রেডিও, ফিল্মক্লাবের মাধুঅমে কল্পবিজ্ঞানকে আন্দোলন-আকারে সংগঠিত করেন | একাধিক পুরস্কার | কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান ও পরপর দু-বছর 'দক্ষিণীবার্তা'র শ্রেষ্ঠগল্প পুরস্কার | অনুবাদের ক্ষেত্রে 'সুধীন্দ্রনাথ রাহা'-পুরস্কার | ভালবাসেন: বই | গানবাজনা | দেশভ্রমণ
কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য তথা বাংলা স্পেকুলেটিভ ফিকশনের জগতে 'সবুজ মানুষ' শব্দদ্বয়ের আলাদা তাৎপর্য আছে। ঠিক কীভাবে এই রেডিও নাটকটি পরিবেশিত হয়েছিল, তা অনেকেই জানেন। পরে তার শ্রুতিরূপটি কীভাবে প্রায় হারিয়েই গেছিল - এও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায় এসেছে। তাই সেইসব প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। আমি এই বইটি নিয়েই কথা বলছি। প্রচ্ছদে একটি ছোট্ট কমিক্স দিয়ে কাহিনির পরিপ্রেক্ষিত বোঝানোর প্রয়াসটি অভিনব। এর জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। কিন্তু ছবিগুলোর আঁকা আমার ভীষণ বাজে লাগল। হয়তো ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য, অর্ক পৈতণ্ডী, শুভ্র চক্রবর্তী এবং অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীর আঁকা দেখে অভ্যস্ত বলেই এমন লাগল। বইটি সাজানো হয়েছে যা-যা দিয়ে তা হল~ ১. সবুজ মানুষ: এই অংশটি একটি রত্নখনি। এতে শুধু মূল নাটকটিই নেই। তার সঙ্গে আছে পরবর্তীকালে অদ্রীশ বর্ধনের দেওয়া একটি পৃথক নাট্যরূপ, যাতে চারটি লেখাই ধরা পড়েছিল এক সূত্রে। তার সঙ্গে আছে আরও কিছু লেখা যা সেই সময়ের কল্পবিজ্ঞান চর্চাকে বুঝতে সাহায্য করে। শুধু একটা আক্ষেপ থেকে গেল। বেতার জগৎ পত্রিকায় প্রকাশের সময় 'সবুজ মানুষ'-এর সঙ্গে সমীর সরকারের কিছু অননুকরণীয় অলংকরণ ছিল। প্রয়াত শিল্পীর পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সেই আঁকাগুলো ফিরিয়ে না আনলে এই প্রয়াসের আর্কাইভাল কাজটি কিন্তু অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী এই বিষয়ে তৎপর হবেন, এমন আশা রাখি। ২. অন্যান্য পত্রিকায় সবুজ মানুষ: এখানে তিনটি লেখা আছে। এদের মধ্যে সুদীপ দেবের লেখাটি রসে, ধারে ও ভারে সেরা বলেই আমার মনে হয়েছে। ৩. প্রাক সবুজ মানুষ: 'মহাকাশযাত্রী বাঙালি' নামক এই বারোয়ারি নভেল্লাটি এই বইয়ের মাধ্যমে সামনে না এলে পড়তেই পেতাম না। তাই সম্পাদকদের উদ্দেশে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানাই। তার সঙ্গে একটি অনুরোধও করব। এমন কাহিনির রেওয়াজ যাতে আবার ফিরিয়ে আনা যায়, সেজন্য কল্পবিশ্ব কিছু উদ্যোগ নিলে খুব ভালো হয়। ৪. অন্যান্য কল্পবিজ্ঞানের গল্প: এই অংশটিতে স্থান পেয়েছে সেই লেখাগুলো, যারা ফ্যান্টাসটিক থেকে প্রকাশিত 'সবুজ মানুষ' সংকলনে ছিল। এখানে আছে সিদ্ধার্থ ঘোষের লেখা ডিস্টোপিয়ান 'রোবীন', সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের হাস্যরসাত্মক 'অ-ধরা কামিনী', স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোমাঞ্চকর 'বাঁশি বাজালেন স্যার সত্যপ্রকাশ', লীলা মজুমদারের অদ্বিতীয় ফ্যান্টাসি 'ফর্মুলা ১৬', এবং আরও বেশ ক'টি উল্লেখযোগ্য কাহিনি। এদের ভিড়ে একমাত্র আবর্জনা নীহাররঞ্জন গুপ্তের 'আগন্তুক'। এইরকম কাহিনি পড়েই বোধহয় একসময় পাঠক কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যকে হাসির খোরাক ভাবতেন। এই লেখাটা বিদায় করলে ভালো হয়। বইটির মুদ্রণ বেশ পরিষ্কার। বানানরীতি আকাদেমি অনুসারী। বিমল দাসের করা প্রচ্ছদটি এতে সাদাকালোয় সংরক্ষিত হয়েছে দেখেও ভালো লাগল। 'সবুজ মানুষ'-কে নিয়ে এই উদ্যোগ সফল হোক। সম্ভব হলে প্রস্তাবিত সংযোজন ও পরিমার্জনগুলো করা হোক - এই অনুরোধ রইল।
ছোটবেলায় সব ভাইবোন অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে খেলেছেন কখনো – যে একজন গল্প বলা শুরু করবে , সে কিছু অংশ বলবে, তারপর অন্য আরেকজন তার মত করে সেই গল্প টেনে নিয়ে যাবে ? এইভাবে সবাই মিলে একটা গল্প শেষ করবে। সবুজ মানুষ বইটার ভূমিকা পড়তে গিয়ে প্রথম এই খেলাটার কথা মনে হয়েছে। এরপর মনে পড়েছে ইউনিভার্সিটির হল লাইফে রাতে লোডশেডিং এর পর আসেপাশের রুমের অনেকে মিলে জ্বিন ভূতের গল্প করতাম। কেউ কারো গল্প জানতাম না। কিন্তু গল্পের থিম সবার এক ই রকম। আপনি আমি তো সাধারণ মানুষ। এবার চিন্তা করেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী চারজন ব্যক্তিত্ব এই এক ই কাজটা করছেন – সবুজ মানুষ নিয়ে গল্প বলতে হবে জানেন , কেউ অন্য তিনজনের গল্পের পুরো প্লট জানেন না। চারজন আলাদাভাবে গল্প লিখে প্রথমবারের মত গল্পটি তাঁরা পাঠ করেন রেডিওতে ১৯৬৬ সালে। বইতে কয়েকটা ভাগ আছে। প্রথম ভাগে চারজন লেখকের পাঠ করা মূল গল্প। সাথে সেই গল্প অবলম্বনে ১৯৮২ সালে রেডিওতে সম্প্রচারিত নাটক। আর আছে প্রায় ৫৩ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মূল গল্পের টেপটির পুনঃরুদ্ধারের গল্প। চারজন লেখকের কেউ ই গল্পটি নিজেদের কোন সংকলন এ রাখেন নি। তাই ২০১৮-১৯ সালে এসে মূল রেকর্ডটি উদ্ধার করতে পারা আসলেই এক বিশাল অর্জন। এরপরে আছে সবুজ মানুষ নিয়ে অন্যান্য লেখকদের প্রকাশিত গল্প, রেডিওতে সম্প্রচারিত প্রথম বারোয়ারী কল্পবিজ্ঞান গল্প, আর অন্যান্য কল্পবিজ্ঞান গল্প। পুরো বইয়ের সব গল্পের কথা বলবনা। শুধু সবুজ মানুষ নিয়ে বলি। যেহেতু বারোয়ারী গল্প কোনভাবেই অন্যান্য গল্পের মত ভাবা যাবে না। পৃথিবীতে সবুজ মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এত হানাহানি, ক্রোধ, হিংসা সবকিছুর মূলে সবুজ মানুষ। কিন্তু এই সবুজ মানুষ সম্পর্কে পুরোপুরি জানানোর আগেই মারা গেল একজন। আরেক জন সব জানতে পেরেছেন , চিঠিও লিখেছেন পত্রিকার সম্পাদকের কাছে, কিন্তু সব নয়। আরো একজন যিনি অনেক বছর আগেই বুঝেছেন কেউ আছে সবুজ মানুষ, কিন্তু পুরোপুরি জানতে পারেননি তাদের সম্পর্কে। কিন্তু প্রত্যেকেই আলাদাভাবে জানেন সবুজ মানুষেরা কিছু একটা করে চলেছে , সেটা কি শেষ পর্যন্ত কাউকে জানাতে পারবেন তারা ? গল্পটা শেষ করেন সত্যজিৎ রায়। বিশ্ব রাজনীতির অনেক গভীর একটা দিক তুলে ধরেন তিনি। বাকি লেখকদের এবং ওই সময়য় বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত সকলের বক্তব্যে সবার শেষে সত্যজিতের গল্প পাঠে নাকি অভিভূত হয়ে গেছিল সবাই। এটা রূপক গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে , ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি তখন চরম অস্থিতিশীল। সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান এর যাত্রা বাংলা সাহিত্যে অনেক আগে শুরু হলেও ওই সময়ই প্রথম জনপ্রিয়তা পায়। আর ওই সময় এরকম একটা রূপক সায়েন্স ফিকশন নাড়া দিয়েছিল সবার মনে। গল্পটা পড়ার পর মনে হয়েছে আমার সাধ্য থাকলে তাঁদের চারজনকেই আবার এনে পাশাপাশি বসিয়ে দিয়ে বলতাম গল্পটা আরো আগানোর জন্য। কিন্তু সত্যজিৎ রায় সম্ভবত এমন একটা জায়গাতেই গল্পটা শেষ করেছেন যেন আমরা আশেপাশে তাকালেই সবুজ মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।
এই বইটা মূলত অদ্রীশ বর্ধনের সম্পাদনায় ৬০-এর দশকে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্য জগতের প্রথম সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিন 'আশ্চর্য' এবং পরবর্তীতে 'ফ্যান্টাস্টিক' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গল্প নিয়ে একটি সংকলন।
সেই সময়টায় প্রথম সায়েন্স ফিকশনের গুরুতর চর্চা কিন্তু নর্থ আমেরিকাতেও মাত্র শুরু হয়েছে। এমন সময়ে অদ্রীশ বর্ধনের উৎসাহে আকাশবাণী বেতারে দু'টি বারোয়ারি গল্পও (যে গল্প একজন শুরু করেন, অন্য আরেকজন তা এগিয়ে নিয়ে যান) প্রচারিত হয় - 'মহাকাশযাত্রী বাঙালি' (প্রেমেন্দ্র মিত্র, দিলীপ রায়চৌধুরী ও অদ্রীশ বর্ধন) আর পরবর্তীতে - 'সবুজ মানুষ' (প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায়) প্রচারিত হয়।
এই বইটির প্রথম অংশে সেই বারোয়ারি গল্প দুইটি এবং তা প্রচার ও পরে 'সবুজ মানুষ' অনুসারে ৮০-এর দশকে লেখা অদ্রীশ বর্ধনের আরেকটি রেডিও নাটক সংকলিত হয়েছে। আরও সংযুক্ত হয়েছে প্রথম 'সবুজ ���ানুষ' রেডিও নাটকের হারিয়ে যাওয়া মূল রেকর্ডিং উদ্ধার ও সংরক্ষণের গল্প।
প্রথম অংশটা আসলে একটি প্রামান্য দলিল বাংলা সাহিত্য জগতে কল্���বিজ্ঞানের জন্যে। যদিও গল্পগুলো আজকের ২০২০ সালে একটু জলো।
দ্বিতীয় অংশে সংকলিত গল্পগুলোর মাঝে লীলা মজুমদারের 'ফর্মুলা ১৬' মজা পেয়েছি পড়ে, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'সায়েন্স' ও মজার ছিলো, বিমল করের 'দ্বিতীয় জগৎ' ভালো লেগেছে, বাকিগুলো কোনমতে চলনসই, এখন এ সময়ে পড়ে মজা পাওয়া মুশকিল। তবে যেমন বলছিলাম, এই সংকলনটি বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের ভূমিকার একটা প্রামান্য দলিল ধরে নিলে সংগ্রহের রাখার জন্যে ভালোই।
শেষ করলাম বাংলা কল্পবিজ্ঞান ইতিহাসের এক অনস্বীকার্য অঙ্গ―‘সবুজ মানুষ’। বছর পঞ্চাশেক আগে আকাশবাণীর ‘সাহিত্যবাসরে’ এই বারোয়ারি গল্পটি পাঠ করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায়। পুরো গল্পটা কেউ কাউকে বলেননি। পরবর্তীকালে এই গল্পের অদ্রীশ বর্ধনকৃত একটি নাট্যরূপও অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রচারিত হয়। ‘সবুজ মানুষ’ যখন পাঠ করা হয়, তখন বাংলা কল্পবিজ্ঞানের সবে পথচলা শুরু। সেসময়ে বসে এরকম একটি অভিনব উদ্যোগ ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজটি করে দেখিয়েছিলেন চার মহারথী। তাঁদের সেই অসামান্য কাজটিকে যেভাবে আবার পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিল কল্পবিশ্ব, সেটিও কম অত্যাশ্চর্য নয়। মূল বেতার নাটকটির রেকর্ডিং পুনরুদ্ধারের সেই রোমহর্ষক বিবরণও এই বইতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কী কী আছে এ বইতে― ১. সবুজ মানুষ মূল রচনা ২. সবুজ মানুষ নাট্যরূপ ৩. সবুজ মানুষ পুনরুদ্ধারের বিবরণ ৪. সবুজ মানুষ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অন্যান্য লেখকদের রচিত তিনটি গল্প, এর মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সর্বকনিষ্ঠ প্রচেষ্টা সুদীপ দেবের লেখাটি, যা পুরোনো দিনের কল্পবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগের লেখকদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ৫. সবুজ মানুষ এর প্রথম গ্রন্থপ্রকাশে সংযুক্ত কিছু গল্প, যার সঙ্গে যদিও সবুজ মানুষ থিমের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে পাবেন সিদ্ধার্থ ঘোষের আরও একটি অসাধারণ রচনা ‘রোবিন’ আর নীহাররঞ্জন গুপ্তের দুষ্প্রাপ্য রচনা ‘আগন্তুক’, যা আশ্চর্যের পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এছাড়া ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্যর ‘লাল পোকার কাহিনি’, লীলা মজুমদারের ‘ফর্মুলা ১৬’ কিংবা সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘অ-ধরা কামিনী’ মতো স্বর্ণ যুগের লেখাগুলো নস্টালজিক করে তোলে। এই বইয়ের প্রচ্ছদ আর নামাঙ্কন নিয়ে কিছু কথা না বললে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকবে। লংফর্ম-এর করা গ্রাফিক নভেলের ধাঁচে করা প্রচ্ছদ সম্ভবত বাংলা তথা ভারতের প্রথম এজাতীয় আউট অফ দ্য বক্স, বোল্ড প্রয়াস। আমি সাধারণত ‘প্রচ্ছদের জন্যই বইটা কিনে ফেলা যায়’ মতে বিশ্বাসী নই, কিন্তু যদি শুধু এই কারণে একটি বই কিনতে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি এই বইটি। সঙ্গে প্রতিটি গল্পের অসাধারণ নামাঙ্কন করেছে স্যমন্তক। ওকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আর কল্পবিশ্বকে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটা ঐতিহাসিক বইকে পাঠকের কাছে সুলভ করে তোলার জন্য।
কথায় বলে অতি সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট। 'সবুজ মানুষ' গল্পটা তার খুব ভালো উদাহরণ হতে পারে। চারজন বিখ্যাত লেখক গল্পটাকে এগিয়েই নিতে পারেন নি। বলতে গেলে চারজন চারভাবে সবুজ মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। কোন ধরণের পরিণতিই নেই!
'লাল পোকার কাহিনী' গল্পটা ভালো লাগার কারণটা হচ্ছে চার্লসের চাপীয় সূত্র 'র সাহায্যে ভিন গ্রহের পোকাদের(!) ধ্বংস করার কাহিনীটার কারণে।
'বাঁশি বাজালেন স্যার সত্যপ্রকাশ' গল্পটার লেখার স্টাইল এবং বলার ঢং সত্যজিতের শঙ্কুর গল্পের মতোই। গল্পটার একটা লাইনের কারণে একটু ভালো লেগেছে। - 'পরীক্ষা করে দেখা গেছে বায়ুমন্ডলে শব্দের বিভিন্ন মাত্রার কম্পাঙ্ক প্রাণীজগৎ এমনকি গাছপালার ওপরও প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি করতে পারে'। এই লাইনটা সাম্প্রতিককালের একটা গবেষণার ফলাফলকে মনে করিয়ে দেয়। (যদিও আহামরি কিছু না!)
~ বাংলা কল্পবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সবুজ মানুষ ~
বই- সবুজ মানুষ লেখক- প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী, সত্যজিৎ রায় এবং অন্যান্য প্রকাশক- ফ্যান্টাস্টিক ও কল্পবিশ্ব যৌথ উদ্যোগ প্রচ্ছদ- লংফর্ম কালেকটিভ দাম- ৩২৫ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা- ২৬০
সবুজ মানুষ আপনারা কি দেখেছেন? না দেখারই কথা। দেখলে আপনি আর জীবিত থাকতেন না। ওরা ঠিক মানুষও নয়, সম্ভবতঃ অন্য গ্রহের প্রাণী যারা বেশ কিছুটা মানুষের মত দেখতে। এদের ফিকে সবুজ গায়ের রঙ, হাতের হাঁটুর চেয়েও নীচে পর্যন্ত আর রক্তের রঙ সবুজ। সবুজ মানুষ আমিও দেখিনি আর দেখতেও চাইনা। শুধুমাত্র তাদের কথা পড়েছি। আপনিও পড়ুন সবুজ মানুষের কথা। আর ভুল করে যদি দেখেও ফেলেন, সে কথা ঘুণাক্ষরেও কাউকে জানতে দেবেন না। আপনি যে ওদের কথা জেনে ফেলেছেন সেটা জানলে আর রক্ষা নেই। ওরা কিন্তু নজর রাখছে।
◆ সবুজ মানুষ বইটি পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল ফ্যান্টাস্টিক প্রকাশনীর মাধ্যমে। বর্তমানে নতুনভাবে পরিমার্জিত করে কল্পবিশ্ব ও ফ্যান্টাস্টিক যৌথ উদ্যোগে ফিরিয়ে এনেছে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী কাহিনীকে। ১৯৬৬ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী এবং সত্যজিৎ রায় বেতারে সবুজ মানুষ বারোয়ারি গল্পলিখন ও পাঠে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময় এই বারোয়ারি গল্পপাঠ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। পরবর্তীকালে অন্যান্য পত্রিকাতেও সবুজ মানুষদের নিয়ে গল্প লেখা হয়েছিল, সেগুলিও রয়েছে সবুজ মানুষ বইটিতে। সবুজ মানুষের আগে আরও একটি বারোয়ারি গল্পপাঠ হয়েছিল যার শিরোনাম মহাকাশচারী বাঙালী, গল্পপাঠে ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন এবং দিলীপ রায়চৌধুরী। এই গল্পটিও সবুজ মানুষ গল্প সংকলনে স্থান পেয়েছে। সবুজ মানুষের পাশাপাশি এই বইতে রয়েছে আরও কিছু সমকালীন কল্পবিজ্ঞানের গল্প যেগুলির রচয়িতা লীলা মজুমদার, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
সবুজ মানুষ বইটির পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি কল্পবিশ্ব খুঁজে বের করেছে আকাশবাণীর গল্পপাঠের স্পুল রেকর্ড। সেটির ডিজিটাইজেশনও করা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায়। সেই পুনরুদ্ধার কাহিনীও আছে এই বইটিতে। আর আছে সবুজ মানুষের নাট্যরূপ, তবে এখানে আছে একটি অতিরিক্ত কাহিনী।
বইটির প্রচ্ছদ একটি বাংলা গ্রাফিক নভেলের আকারে করা হয়েছে। গ্রাফিক নভেলের আকারে প্রচ্ছদ তৈরীর কথা বাংলা তথা ভারতে এই প্রথম কেউ ভাবলেন, এবং এই জন্যই বইটিকে কিছু অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া যায়। এই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় প্রচ্ছদটি তৈরি করেছেন লংফর্ম কালেকটিভ।
সবুজ মানুষ পড়ুন, অন্যকে পড়ান। কিন্তু সাবধান! সবুজ মানুষদের খোঁজ নেওয়া বা দেখার চেষ্টা করবেন না। করলে সমূহ বিপদ!
বই: সবুজ মানুষ লেখক: প্রেমেন্��্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী, সত্যজিৎ রায় ও অন্যান্য প্রকাশনা: ফ্যানটাসটিক ও কল্পবিশ্ব এর যৌথ প্রয়াস রেটিং: ৪.৫/৫.০ পৃষ্ঠা:২৬৮
সবুজ মানুষ বা দ্যা লিটল গ্ৰীন ম্যান হচ্ছে ভিনগ্ৰহ থেকে আগত প্রাণী। সায়েন্স ফিকশন জগতে খুব পরিচিত গল্পের প্লট। অধিকাংশ সায়েন্স ফিকশন পাঠকরা এই শব্দটির সাথে পরিচিত। সায়েন্স ফিকশন প্রেমিকরা অবশ্যই সবুজ মানুষ বইটি পড়বেন এবং পারলে সংগ্ৰহে রাখবেন। ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা 'আশ্চর্য' প্রকাশ করেন ১৯৬৩ সালে অদ্রীশ বর্ধন। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। এই পত্রিকার জনপ্রিয়করণ নিয়ে বারোয়ারী রেডিও গল্পের আয়োজন করা হয়। প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী, সত্যজিৎ রায় এর অসাধারণ বারোয়ারী রেডিও গল্পের সৃষ্টি হচ্ছে সবুজ মানুষ। পরবর্তীতে ১৯৬৬ তে এটি রেডিও নাটকেও রূপান্তরিত হয় তা সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসে ১৯৮২ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও তে। সবুজ মানুষ থিম নিয়ে পরবর্তীতে আশ্চর্য, বিস্ময় ফ্যানটাসটিক পত্রিকার পরে কল্পবিশ্বও অনেক গল্প প্রকাশ করে। এই বইটি মূলত তিন ভাগে ভাগ করা।একভাগে আছে মূল সবুজ মানুষ গল্পের রূপ, আর এক ভাগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সবুজ মানুষ নিয়ে গল্প এবং শেষ ভাগে আছে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ৮০ এর দশকের কিছু সায়েন্স ফিকশন। প্রতিটি গল্পই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। কেমন জানি প্রাচীন প্রাচীন একটি গন্ধ। এই বইয়ের বিশেষ দিক হচ্ছে প্রচ্ছদ। কারণ প্রচ্ছদটি একটি কমিকস যেটি প্রকাশকদের মতে প্রথম বার কোনো বইয়ে হয়েছে যেখানে প্রচ্ছদ একটি কমিকস। আমিও আগে এই ধারনাটি দেখি নায়। এবং নিঃসন্দেহে ধারনাটি অসাধারণ। #ধূসরকল্পনা
লেখক : প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, অদ্রীশ বর্ধন , দিলীপ রায় চৌধুরী এবং প্রমুখ
এই প্রথম আমার সবুজ মানুষ পড়া। এর আগে এই বিষয়ে সত্যি বলতে আমার কোনো ধারণা ছিলো না। এই গ্রুপে আসার পর দিয়ে কল্পবিজ্ঞান এর বিভিন্ন লেখক , তাদের লেখা সম্পর্কে জেনে আমি অভিভূত হচ্ছি। এই সবুজ মানুষ সেই দিক থেকে অনবদ্য এবং পরবর্তীতে সেই বিষয়ক আরো লেখক এর বিভিন্ন লেখাও পরে ভালো লাগছে। এই বইয়ে শুধু সবুজ মানুষের গল্পটি ছাড়াও বিভিন্ন আরো গল্প, কবিতা , একটি নাট্য রুপ ও আছে। বিভিন্ন লেখকের র গল্পের মধ্যে সিদ্ধার্থ ঘোষের রোবিন গল্পটি বিশেষ ভালো লাগা তৈরি করেছে আমার মধ্যে। এখন বেতার রূপটি শুনতে পেলে ষোলকলা পূর্ণ হবে। তাই ওনাদের অনুরোধ বেতাররূপটি যদি কোনোভাবে শোনানোর ব্যবস্থা করেন তো খুব ভালো হয়। সর্বশেষ এরকম একটি বই প্রকাশ করার জন্য কল্পবিশ্ব কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।
সাম্প্রতিক কালে 'সবুজ মানুষ' বইটি বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জগতে এক উজ্জ্বল সংযোজন । সেই ৬৬ সালে চার প্রোথিত জসা সাহিত্যিদের কলমে রচিত ওই নামের বারোয়ারি গল্প পাঠ করা হয় রেডিও তে । সেই গল্পই বইটির মূল আকর্ষণ । এ ছাড়াও রয়েছে ভিনগ্রহীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি ভাল গল্প । লাল পোকার কাহিনী, পঞ্চম শক্তি, বাঁশি বাজালেন স্যার সত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় জগৎ আমার বেশ লাগল । আশাকরি 'লাল পোকার কাহিনী' র মত ব্যতিক্রমী গল্পনিয়ে কোনদিন আরেকটি সংকলন পাব ।
"Any sufficiently advanced technology is indistinguishable from magic." —Arthur C. Clarke
অদ্রীশ বাবু বাংলা কল্পবিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। উজ্জ্বলতম বলতেও দ্বিধা নেই. তাঁর লেখা 'সবুজ মানুষ' গল্পগ্রন্থ বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জগতে এক অনন্য সংযোজন। বইটিতে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কল্পনাশক্তির অসাধারণ প্রয়োগ দেখা যায়। বৈজ্ঞানিক কল্পনার পাশাপাশি এখানে রয়েছে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা গল্পগুলোকে এক নতুন মাত্রা দেয়।
"The saddest aspect of life right now is that science gathers knowledge faster than society gathers wisdom." —Isaac Asimov
এই সংকলনের প্রতিটি গল্প ভবিষ্যতের বা বিকল্প বাস্তবতার এক টুকরো চিত্র তুলে ধরে। বইটির শিরোনাম গল্প "সবুজ মানুষ"-এ দেখা যায় এক অদ্ভুত জীব, যে সম্ভবত মানুষের বিবর্তনেরই এক ভিন্ন রূপ। এই গল্প মানবজাতির ভবিষ্যৎ বিবর্তন নিয়ে দার্শনিক প্রশ্ন তোলে—মানুষ কি একদিন এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, যেখানে সে নিজেকে চিনতেই পারবে না?
অন্যদিকে, "রোবটের প্রতিশোধ" গল্পটি এক স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্রের বিদ্রোহ নিয়ে রচিত, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাহীন ক্ষমতা ও মানুষের অবহেলার পরিণতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বর্তমান যুগে AI-এর প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে গল্পটি এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
"We are all just prisoners of our genes, our societies, our histories. But we have one freedom—the ability to choose how we see the world." —Yuval Noah Harari
অদ্রীশ বর্ধনের গল্পগুলো নিছকই বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পনা নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে দর্শনের গভীরতা। "মানুষ কি ঈশ্বর হতে পারে?" গল্পটি এমনই এক প্রশ্ন তোলে, যেখানে দেখা যায় এক বিজ্ঞানী এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে তিনি জীবন সৃষ্টি করতে পারেন। এই গল্প প্রযুক্তির নৈতিকতা এবং মানুষের ঈশ্বরত্ব নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।
"The universe is under no obligation to make sense to you." —Neil deGrasse Tyson
অদ্রীশ বর্ধনের লেখনশৈলী সরল, অথচ গভীর। তিনি এমনভাবে বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকের পক্ষেও সহজবোধ্য হয়। তাঁর ভাষার সুনিপুণ ব্যবহার, সংলাপের স্বাভাবিক গতি, এবং চরিত্রগুলোর স্বতঃস্ফূর্ততা পাঠককে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।
"I’m sure the universe is full of intelligent life. It’s just been too intelligent to come here." —Arthur C. Clarke
সবুজ মানুষ কেবলই কল্পবিজ্ঞান নয়, এটি মানুষের ভবিষ্যৎ, প্রযুক্তির সীমা এবং নৈতিকতার দোদুল্যমান অবস্থা নিয়ে এক গভীর অন্বেষণ।
বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের যে ধারা সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল, অদ্রীশ বর্ধন সেটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এই বই কেবল বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং যে কেউ পড়তে পারেন, যাঁরা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যৎকে কল্পনা করতে ভালোবাসেন।
"Science fiction is the most important literature in the history of the world, because it’s the history of ideas, the history of our civilization birthing itself." —Ray Bradbury