Jump to ratings and reviews
Rate this book

অর্থতৃষ্ণা

Rate this book
অর্থতৃষ্ণা বাংলার প্রথম স্টিমপাংক থ্রিলার। বিংশ শতাব্দীর শুরুর এ এক অন্য কলকাতা। যেখানে আকাশে ওড়ে মহাকায় ব্লিম্প, রাস্তায় হেঁটে চলে কলগোলাম, বাড়ির ছাদে পাহারায় থাকে মাস্কেট হাতে ডানাওয়ালা গরুড়। সেই আশ্চর্য দুনিয়ায় পিশাচের আক্রমণে মারা যাচ্ছে একের পর এক মানুষ। ধূর্জটি আর তাঁর বন্ধু জড়িয়ে পড়ে এক বিপদজনক অভিযানে, এই রহস্য সমাধান করতে গিয়ে। বাংলা কল্পবিজ্ঞান নতুন জীবন পেল সুমিত বর্ধনের কলমে।

122 pages, Paperback

Published July 19, 2019

6 people are currently reading
64 people want to read

About the author

Sumit Bardhan

9 books7 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
26 (31%)
4 stars
32 (38%)
3 stars
18 (21%)
2 stars
4 (4%)
1 star
3 (3%)
Displaying 1 - 23 of 23 reviews
Profile Image for Zahidul.
450 reviews95 followers
January 10, 2023
'অর্থতৃষ্ণা'

'অর্থতৃষ্ণা' গল্পে একটি অলটারনেটিভ পৃথিবীকে দেখা যায় যেখানে সবকিছু মূলত বাষ্পীয় শক্তিতে চলে এবং সেই শক্তির দ্বারাই পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে গিয়েছে। সে সময়ে কলকাতার এক গোয়েন্দা ধূর্জটির কাছে একটি চুরির কেস নিয়ে আসে তার বন্ধু ইন্সপেক্টর হেম। সেই কেসের তদন্ত করতে গিয়ে সে বুঝতে পারে ঘটনার জাল আরো গভীরে। এখন সেই চুরির আসল রহস্য নিয়েই লেখক সুমিত বর্ধনের স্টিমপাঙ্ক ধারার 'অর্থতৃষ্ণা' বইটি লেখা। 
-
'অর্থতৃষ্ণা' বইটি মূলত একটি স্টিমপাঙ্ক সায়েন্স ফিকশন। বাংলা ভাষায় এ ধরনের লেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। স্টিমপাঙ্ক ধারার লেখা হিসেবে এর ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এবং সে অনুসারে টেকনোলজির ব্যবহার ভালোই ছিলো। তবে কিছু জায়গায় জটিল বাংলা শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে এর সহজবোধ্য ইংরেজি টার্ম ব্যবহার করলেই বোধহয় পড়তে আরো সুবিধা হতো। গল্পের সাস্পেন্স পার্টটা গড়পড়তাই লাগলো, তবে স্টিমপাঙ্ক পার্টের জন্য লেখক সাধুবাদ পেতেই পারে। গল্পের বর্ণনাভঙ্গি এবং সংলাপ তার পটভূমির সাথে মানানসই। গোয়েন্দা ধূর্জটি আর তার সাথে থাকা গল্পের ন্যারেটরের ভেতরে শার্লক-ওয়াটসনের ছাপ স্পষ্ট। বইতে বেশ কিছু ইলাস্ট্রেশন ছিলো যা মোটাদাগে ভালোই লেগেছে, তবে পেপারব্যাক হিসেবে বইয়ের ওভারঅল প্রোডাকশন তেমন সুবিধার লাগেনি, ভেতরে টাইপোও ছিলো কয়েকটি। ওভারঅল, বাংলা ভাষায় কিছুটা ভিন্নধারার সায়েন্স ফিকশন পড়তে চাইলে লেখক সুমিত বর্ধনের 'অর্থতৃষ্ণা' বইটা একবার পড়া যায়।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,865 followers
August 9, 2020
কল্পবিশ্ব ওয়েবজিন-এ প্রথম প্রকাশের সময় এই লেখাটি পরে স্তম্ভিত হয়েছিলাম। তারপর, এমনকি বই আকারে প্রকাশের পর আরও একবার পড়ার পরেও এতগুলো দিন কেটে গেছে। কিন্তু এই লেখাটা নিয়ে আমার মুগ্ধতা কমেনি।
কেন?
প্রথমত, ব্যোমকেশের নাম না নিয়েও এ এক বিশুদ্ধ ব্যোমকেশী রহস্যকাহিনি। এমন চেষ্টা হয়তো আগেও হয়েছে। কিন্তু এটা আলাদা লেভেলের।
দ্বিতীয়ত, এ এক স্টিমপাংক আখ্যান। বাংলা কল্পবিজ্ঞানে এই বস্তুর প্রয়োগ এর আগে কখনও হয়েছে কি? আমি তো পড়িনি। তাই এ এক অভূতপূর্ব বস্তু।
তৃতীয়ত, এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কিছু চরিত্র, যারা মানুষ নয়। বরং আমাদের কিংবদন্তি বা পুরাণে উল্লিখিত বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করেছে তারা।
সর্বোপরি, এ এক রুদ্ধশ্বাস কাহিনি, যা পড়তে শুরু করলে থামা যায় না।
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিঙের দিক দিয়ে তো বটেই, অন্যভাবেও পাঠযোগ্যতার ক্ষেত্রে এই বইটা আমাদের সব্বার কাছে অবশ্যপাঠ্য। তাছাড়া, কল্পবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বাদ দিয়েই বলি, একটি চমকপ্রদ রহস্যকাহিনি হিসেবেই এটি পড়া দরকার।
অবশ্যই পড়ুন।
Profile Image for Diptajit Misra.
47 reviews27 followers
August 13, 2019
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া
বইয়ের নাম: অর্থতৃষ্ণা
লেখক: সুমিত বর্ধন
প্রকাশক: কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস
মূল্য: ১৬০₹

বাংলায় লেখা প্রথম স্টিমপাঙ্ক উপন্যাস হল অর্থতৃষ্ণা। স্টিমপাঙ্ক জঁর নিয়ে এর আগে কল্পবিশ্বের পেজে নানারকম আলোচনা হয়েছে। যাঁরা জানেননা, তাঁদের জন্য এককথায় বলে দিই:
স্টিমপাঙ্ককে সায়েন্স ফিকশনের একটা সাবজঁর বলা যায়, যার ভিত্তি হল উনিশ শতক এবং সেই সময়ের নানা রকম আবিষ্কার ও কিছু ক্ষেত্রে কাল্পনিক যন্ত্রপাতি।
অর্থতৃষ্ণা স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার হিসেবে সফল। শেষের পরিভাষার লিস্ট থেকে এটা আন্দাজ করে নেওয়া যায় যে এই উপন্যাসের পটভূমিকা ১৯১৬ থেকে ১৯২৩-এর মধ্যে। বইয়ের থ্রিলারের মেটিরিয়াল হিসেবে সমস্ত কিছুই উপস্থিত। তার সঙ্গে দারুণভাবে ব্লেন্ড হয়েছে স্টিমপাঙ্কের উপাদান। সব মিলিয়ে একটা দারুণ প্রেজেন্টেশন। বইয়ে ছাপার ভুলও খুব একটা চোখে পড়েনি। লেখার মাঝে মাঝে নানা কাল্পনিক জিনিসের ইলাস্ট্রেশন মুগ্ধ করে এবং ঘটনাগুলোকে কল্পনা করতে সাহায্যও করে। ধূর্জটির মধ্যে খানিকটা ব্যোমকেশের আদল স্পষ্ট। শেষ অবধি রহস্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন লেখক। কোনো অংশে প্রেডিক্টেবল মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হল সমানুপাতে থ্রিলার আর সায়েন্স ফিকশন মেটিরিয়ালের ব্লেন্ডিং। কোথাও কখনও মনে হয়নি যে এই উপাদানটা অত্যধিক বা এই উপাদানটা বড় কম। সবটাই পরিমিত ও পরিশীলিত।
লেখকের থেকে আরও স্টিমপাঙ্ক থ্রিলারের আশা রাখলাম।
Profile Image for Dip Ghosh.
Author 49 books17 followers
August 11, 2019
অর্থতৃষ্ণার বাংলা কল্পবিজ্ঞানের গতানুগতিক রোবোটের-চোখের-জলের মাঝে এক নতুন এক্সপেরিমেন্ট, এবং তা সফল। এরকম কাজ বাংলায় যতবেশি হবে ততই কল্পবিজ্ঞানের মঙ্গল।
Profile Image for Swastika.
18 reviews4 followers
June 29, 2021
|| পাঠ প্রতিক্রিয়া ||

বই : অর্থতৃষ্ণা
লেখক : সুমিত বর্ধন
প্রকাশক : কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস
মুদ্রিত মূল‍্য : ১৬০ টাকা

কল্পবিজ্ঞান বিষয়টাই আকর্ষণীয়, তার সঙ্গে যদি আবার যুক্ত হয় ফেলে আসা সময়ের বর্ণনা - কম্বিনেশনটা অদ্ভুত ভালো লাগার জন্ম দেয় বৈকি! লেখক সুমিত বর্ধনের লেখা 'অর্থতৃষ্ণা' বইটি একেবারেই সেরকম। ওনার লেখার সঙ্গে এই প্রথম আমার পরিচয় ঘটল। পড়তে পড়তে কখন যে গল্পে বর্ণিত স্থান দুমলিগড়ে হারিয়ে গেছিলাম, টের পাইনি।

যুদ্ধে লড়াই করে আসা সৈনিক, বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, সত‍্যসন্ধানী আদ‍্যপান্ত এক বাঙালি যুবক, যুদ্ধের পরবর্তী কলকাতার পরিবেশ যেমন গল্পে পাওয়া যায়, তেমনই পাওয়া যায় কাল্পনিক যক্ষ, গড়ুর, কলগোলাম, তোড়াদার জাজেল, ত্রাসপশু, ৎসুচিনোকো, এল্ড্রিচ, আইকর এর উল্লেখ। সব মিলিয়ে এক সুন্দর গোয়েন্দা উপন্যাস গড়ে ফেলেছেন লেখক যা আমাদের প্রফেসর শঙ্কুর গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয় অনেকাংশেই।

যে কোনো বয়সের পাঠকের মনেই এই লেখা জায়গা করে নিতে বাধ‍্য। এবার আমার লেখকের অন‍্য লেখার পড়ার পালা, আশা করি আশাহত হব না। আপনারাও পড়ে ফেলুন, স্পেসশিপে চড়ে শৈশবে ঘুরতে মন্দ লাগবে না।
Profile Image for Sahasrangshu Guha.
36 reviews8 followers
August 13, 2019
অর্থতৃষ্ণা- পাঠ প্রতিক্রিয়া
লেখক - সুমিত বর্ধন
প্রকাশক - কল্পবিশ্ব
মুদ্রিত মূল্য - ১৬০ টাকা

ব্লগটা শুরু করা যাক তিতো দিয়ে মুখ পুড়িয়ে। এই হপ্তা দুয়েক আগে আমার এক বইপোকা বন্ধুর সাথে গুজ গুজ ফুস ফুস চলছিল সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞান নিয়ে। বন্ধুটা একটু বেশিই ইংরেজি আর বিদেশি সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করছে দেখে আমি প্রথম থেকেই একটু লেজ গুটিয়ে ছিলাম। কথাবার্তায় যেটুকু বুঝলাম বাংলায় কল্পবিজ্ঞান বলতে তার জ্ঞানের শুরু এবং শেষ সত্যজিৎ রায় মহাশয়ের ‘শঙ্কু’ এদিকে আমার অধুনা কিছু জ্ঞান লাভ ঘটেছে কল্পবিশ্বের কন্টেন্ট দেখে দেখে তাই আমিও দুএকটা ফুস ফাস ভালোই দিচ্ছিলাম। ইতিমধ্যে তখনই 'অর্থতৃষ্ণার' প্রমোশন শুরু হয়ে গেছে। দুম করে প্রসঙ্গ তুলে ফেললাম স্টিমপাঙ্ক। কিন্তু এর পরেই বাঘা বাঘা কিছু বিদেশি নামের গুঁতো এসে পড়ল আমার উপর, তাঁরা নাকি সব বাঘা বাঘা বিদেশি কল্পবিজ্ঞান লিখিয়ে তাঁরাও নাকি খুব বেশি লেখার সাহস দেখাননি স্টিমপাঙ্ক। তাই বাংলায় কল্পবিজ্ঞান তাও আবার স্টিম পাঙ্ক ব্যাপারটা তো বন্ধুবর উড়িয়েই দিল। আমি লেজ গুটিয়ে গেলেও মনে মনে একটু গর্ব অনুভব করছিলাম লেখক সুমিত বর্ধনের উপর, বন্ধুর বলা নাম মনে না থাকা সেই বাঘেরা নাকি লেখার সাহস দেখাননি, এদিকে বর্ধন বাবু সেটাই করে দেখাতে চাইছেন প্রথম বারের মতো বাংলা ভাষায়। গর্ব তো হবেই বাপু।

যেদিন প্রথম বইটার প্রি-বুকের লিঙ্ক শেয়ার করা হল সেদিনই ঝাঁপিয়ে পরে প্রি-বুক মেরে দিয়েছিলাম। এ সুযোগ ছাড়ার তো প্রশ্নই নেই, দেরিও করা যাবেনা। ইতিমধ্যেই ফেবুর সুবাদে জেনে গিয়েছিলাম ২৭ শে জুলাই রিডবেঙ্গলিবুক স্টোরে বইটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের কথা। গত সপ্তাহের প্রথমেই গুড়ে বালি পরে গেল জীবিকার টানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারবনা। তবে কি বইটা পেতে আরও দেরি হবে? ফেবুতেই জ্বালাতে আরম্ভ করে দিয়েছিলাম প্রকাশক মহাশয়দের। তাঁরা তো আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন ওদিকে আমার নাভিশ্বাস বেড়েই চলেছে। শেষমেশ এই ২৫ তারিখ কাকতালীয় ভাবে আমার জন্মদিনের দিনই সকাল সকাল আমার বাড়িতে বইয়ের প্যাকেট হাজির। জন্মদিনের গরমাগরম গিফ্ট, উদ্বোধনের দুদিন আগেই 'অর্থতৃষ্ণা', বাংলার প্রথম স্টিমপাঙ্ক আমার হস্তগত। খুশিতে গদ গদ হয়ে থাকলেও ফেবুতে তার বহিঃপ্রকাশ দেখানোর সুযোগ মিলল না, কারণ আবার সেই জীবিকা। তবে কি তাই বলে পড়া থেমে থাকে?? কখনোই নয়। শুক্র আর শনিবার অফিস করার ফাঁকে ফাঁকেই পরে ফেললাম বাংলা কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম মাইল ফলক স্বরূপ প্রথম স্টিমপাঙ্ক। এর পরেই আবার শুরু হল জীবিকার তাড়নায় হিল্লি দিল্লি দৌড়ানো। অতএব বিগত সপ্তাহ তিনেক ধরে বার তিনেক বইটি আদ্যোপান্ত পরে এই সবে আজ একটু সময় পেলুম হাতে পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার।

নতুন এই ধারাটির বিষয়ে যারা অবগত নন তাঁদের জন্য কল্পবিশ্ব থেকে দুর্দান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছিল, তার থেকে বেশি গুছিয়ে বলা আমার কম্ম নয় অতএব ব্লগের সাথে সেই পোস্টের লিংক দিয়েই ক্ষান্ত দিলাম ( https://youtu.be/ZnHidL-2uLw )।

আমার পড়া লেখক মহাশয়ের দ্বিতীয় বই এটি। প্রথম পড়েছিলাম ‘কৌস্তুভ’, কল্পবিশ্বের পাতায়। বিজ্ঞান কল্পনার মিশেল সেই গল্প পড়ে মন ভরে গেছিল এবং প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল লেখকের প্রতি বহুগুণ। তাই তাঁর কলম থেকেই অর্থতৃষ্ণা আসছে সেটাই একটা বড় ব্যাপার ছিল বইটা সংগ্রহ করার আগ্রহের জন্য। তবে বলে রাখা ভাল আমার পড়া স্টিম পাঙ্ক গোত্রের প্রথম বই এটি। তাই স্টিম পাঙ্ক হিসেবে বইটি কতদূর কিরকম সেটা বিচার করা আমার পক্ষে নেহাতই ধৃষ্টতা। তাই আমি কেবল বইটি পরে আমার যা যা ভালো লেগেছে সেগুলোই ক্রমানুসারে লিখে ফেলছি।

১) ইন্টারনেটে স্টিম পাঙ্কের সংজ্ঞা দেখলেই প্রথমে যে শব্দটির দিকে বার বার চোখ পড়বে সেটি হল ‘রেট্রো ফিউচারিস্টিক’ অর্থাৎ ডিকশনারি মতে বিপরীত মুখী ভবিষ্যৎ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় অতীতের ভিতের উপর দাঁড়িয়েও যা ভবিষ্যৎ মুখী। তোমাদের যদি প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা অর্থটিও প্রাণ জল করা মনে হয় তবে একদম চলতি কথায় এই বইয়ের উদাহরণ টেনে বলা ছাড়া বেশি বিদ্যা নেই আমার। এই গল্পের সময়কাল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আশপাশ দিয়ে হলেও গল্পে মিশেছে কলগোলাম, এয়ার শিপের মতো কাল্পনিক ভবিষ্যৎ-ভিত্তিক উপাদান। এখনো মানে এরপরেও যদি না বুঝে থাকো তাহলে আমাকে করজোড়ে আমার অক্ষমতা স্বীকার করে নিলাম। ১৯২০র দশকের কোনও উপন্যাসে যদি রোবটের আমদানি করা হয় তবে যারা অবাস্তব বলে নাক সিঁটকাচ্ছ তাদের সামনে যোগ্য জবাব এই গল্পটি। পড়ে দেখো ভালো লাগতে বাধ্য।

২) বাংলা ভাষায় কাল্পনিক দুনিয়া বর্ণনা যে কতো বৈচিত্র্যময় হতে পারে এবং এত বৈচিত্র্যময় কল্পনা হয়েও তা যে বিশ্বাসযোগ্যতার গণ্ডী অতিক্রম না করে অবলীলায় অগ্রসর হতে পারে তার পরিচয় সুমিত বর্ধন বাবুর আমার পড়া প্রথম উপন্যাস 'কৌস্তুভ' এ পেয়েছি। ঠিক সেই কলম ই যে এই গল্পেও মুনশিয়ানার দাগ কেটেছে তা বলাই বাহুল্য।

৩) এ বই পড়তে পড়তে অবাক হতে হয় লেখকের কলমের উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে। মানুষের সাথে মানুষ-সম গড়ুর ও যক্ষের কল্পনা, পিশাচ, ত্রাস-পশু, জাকুলিসের মতো কাল্পনিক প্রাণীর উপস্থিতি, কলগোলাম, এয়ার শিপ,অ্যাডমেন্টিয়াম , ক্যালরিক ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি এত কিছু গল্পে এলেও কখনোই তাদের আবির্ভাব অবাস্তব বা অতিরঞ্জিত যে মনে হয়না তা কেবল লেখকের শক্ত হাতে কলমের রাশ টেনে থাকার দরুন। শত কুর্নিশ লেখক মহাশয় কে এরকম শাসনে কলম বেঁধে রাখার জন্য। কল্পনার পাখিকে ইচ্ছে মতো উড়তে দিলে নিঃসন্দেহে দুর্বল লেখকের হাতে এত উপাদান জগা খিচুড়ি হয়ে মণ্ড পাকিয়ে যেত। ভাগ্যিস বর্ধন বাবুর মতো মানুষই প্রথম এ দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

৪) নতুন ধারার এই লেখনী বাঙ্গালী পাঠককুলের কাছে গ্রহণ যোগ্য করে তুলতে সব থেকে বড় সোপান ছিল গল্পের পটভূমি নির্বাচন। কারণ বেশ কিছু অভিজ্ঞতা থেকে আমার ব্যক্তিগত মত এই যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী পাঠককুল খুব সহজে বাংলা সাহিত্যে বড় কোনও বৈচিত্র্যকে সাদরে আলিঙ্গন করেননা বলেই কুখ্যাত। নতুন ধারার কিছু সৃষ্টির সাথে বিদেশী তকমা থাকলে তবেই তা পরে একটু আধটু আহা উঁহু হয়। ওই গেও যোগীর ভিখ না পাওয়ার মতো ব্যাপার আর কি। সেদিক দিয়ে দেখলে বর্ধন বাবুর এই বৈপ্লবিক দুঃসাহসিক প্রয়াস হয়তো পাঠকদের কাছে সমাদৃত হতো না এরকম ভীতি লেখক গল্পের ভূমিকাতেই প্রকাশ করেছেন। কিন্তু লেখনীর প্রতিটি ছত্রে যাঁর মুনশিয়ানা সেই লেখক মহাশয় অত্যন্ত সুচারু ভাবে এই গল্পের পটভূমি এঁকেছেন বাঙ্গালী পাঠককুলের কাছে শতাব্দীর অধিক কাল ধরে সমাদৃত রহস্য রোমাঞ্চের ঘরানায়। এ যেন ঠিক চেনা জগতের মধ্যে থেকে এক অচেনা পৃথিবী বেরিয়ে এসেছে এই উপন্যাসে। পাঠকদের কাছে তা ভাল লাগতে বাধ্য।

৫) এত অসংখ্য অজানি নাজানি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে এই গল্পে যে ভয় হয় পাঠক বুঝি এই হাবুডুবু খেল। এই পরিস্থিতিতে পাঠকের কাছে মুশকিল আসান হয়েছে বর্ণনার সাথে সাথে ছবি। অসামান্য বর্ণনা ও প্রাসঙ্গিক ছবির মিশেল পাঠকের মনে রেট্রো ফিউচারিস্টিক দুনিয়ার রঙ্গিন ছবি ফুটিয়ে তুলতে শতকরা ১০০ ভাগ সফল এই বই।

৬) গল্পটি পড়তে পড়তেই বেশ কিছু নতুন শব্দের ধাক্কা সামলাতে একটি শব্দ কোষের একটু অভাব বোধ করছিলাম, তখনও অবধি শেষ পাতা উল্টে দেখিনি। অবশেষে দেখি পাঠক এই অসুবিধায় পড়তে পারেন বুঝে সম্পাদক মশাই গল্পের শেষে একটি পরিভাষাকোষ রেখে দিয়েছেন আগেভাগেই। নতুন এই ধারাকে পাঠক চিত্তে প্রাঞ্জল করে তুলতে লেখক ও সম্পাদকের এই যুগ্ম প্রয়াস নিঃসন্দেহে কুর্ণিশের দাবিদার।

ভালো দিক গুলি নির্দিষ্ট করণের পর বলি যে এই গল্পের খারাপ দিক আমার কাছে সেরকম কিছুই চোখে পড়ার মতো খুঁজে পাইনি, পাঠক গণ বলতে পারেন আমি সেভাবে খুঁজিও নি। বাংলার প্রথম স্টিমপাঙ্কের ঘোরে এতটাই বুঁদ হয়ে রয়েছি যে ওরকম ঘুলিয়ে ঘেঁটে খুঁত খুঁজতে আমার বয়েই গেছে।

ছোট একটি বিষয়ে আমার একটি মতামত দেওয়ার আছে যেটা বাকি পাঠ প্রতিক্রিয়ার মতো একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। তা হল বইটির প্রচ্ছদ যদিও বেশ মার্জিত ও অভিনব (এবং স্টিম পাঙ্কের জন্য আদর্শ ) তবু বইয়ের নামটি যেখানে লেখা হয়েছে তার ব্যাকগ্রাউন্ড রঙ্গের জন্য তাকে সজ্জিত বইয়ের প্রথম দর্শনে নামটাই ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। চোখে পড়ছে শুধু লেখকের নামটি।

শেষ মেষ একটা কথা বলতেই হচ্ছে। আমাদের বাড়িতে আমার মতো আমার মা ও বইপোকা। যদিও আমাদের পছন্দের বিষয়ে আকাশ পাতাল ফারাক তবুও মাকে এই বইটি পড়তে দিয়েছিলাম আমি আগু পিছু এত বর্ণনা না দিয়ে। যে মায়ের ���াছে কল্পবিজ্ঞান কস্মিনকালেও সমাদর পায়নি সেই মা যখন রাত জেগে এক নিঃশ্বাসে উপন্যাসটা পড়া শেষ করে সকাল বেলা একগাল হাসিমুখে বইটা আমায় ফেরত দিলো ততক্ষণে এটুকু বুঝে গেছি যে বইটি মায়েরও বেশ ভালো লেগেছে। অতএব নিঃসন্দেহে বলতে পারছি যে কল্পবিজ্ঞান ভালো না বাসা পাঠক কুলের কাছেও এ বই সমাদৃত হবার সমূহ সম্ভাবনা। প্রকাশক কল্পবিশ্বের কাছে এবং লেখক মহাশয়ের কাছে ক্ষুদ্র পাঠক হিসেবে আমার খু��� জোর গলায় আবেদন এই যে অপার্থিব সিরিজে আবার স্টিম পাঙ্ক বর্ধন বাবুর কলমে শীঘ্র যেন পড়তে পাই।

Profile Image for Dripta.
42 reviews14 followers
September 3, 2021
থ্রিলার হিসেবে যথেষ্ট উপভোগ্য হলেও বিশ্বনির্মাণ অর্থাৎ ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং একটু দুর্বল লেগেছে। উপন্যাসিকায় উপস্থিত পিশাচ, গরুড়, যক্ষ ইত্যাদি প্রজাতি সম্পর্কে আরেকটু তথ্য আশা করেছিলাম যেমনটা আশা করেছিলাম কলকব্জাসহ স্টীম/বিদ্যুৎ-চালিত অন্যান্য যন্ত্রপাতির ক্রিয়াপ্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু বিশদে বর্ণনা। যদি কেউ পূর্বে স্টীমপাঙ্ক জঁরটির সম্পর্কে অবহিত না থাকেন, তাঁর পড়তে অসুবিধা হতে পারে। সেইসঙ্গে যে অল্টারনেটিভ টাইমলাইন অর্থাৎ যে বিকল্প সময়কালে উপন্যাসিকাটিকে এনে ফেলা হয়েছে সেই সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য থাকলে ভালো লাগত। সর্বোপরি স্বাদু গদ্য। আশা করি পরবর্তীকালে লেখক এই সিরিজে আরও গল্প-উপন্যাস লিখবেন যেখানে বিশদে বিষয়গুলি নিয়ে বলা থাকবে নতুন রহস্য উন্মোচনের সাথে সাথে। এয়ারশিপে করে আরো কয়েকটি অভিযানের সাক্ষী না হতে পারলে কিছু একটা অপূর্ণ থেকে যাবে কারণ, যতই যাহোক অর্থতৃষ্ণা বাংলায় লেখা (সম্ভবত) প্রথম স্টীমপাঙ্ক।
Profile Image for Gourab Mukherjee.
164 reviews25 followers
December 10, 2019
বইএর উপরে লেখা আছে স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার তো সত্যিই 100 শতাংশ তাইই। 107 পাতা পড়তে হবে গোটা গল্পের জন্য।

গল্পটি একটি *ডিটেকটিভ থ্রিলার*। অনেকগুলি খুনের তদন্ত করে এক ডিটেকটিভ। কিভাবে সব সমাধান হয় সেই নিয়ে এই গল্প। তবে সবথেকে ভিন্ন যেটা তা হল গল্পের প্রেক্ষাপট। গল্প এক কল্পবিজ্ঞানের দুনিয়াতে। সেখানে চিন্তাভাবনার প্যারামিটার আলাদা। সম্ভাবনা আলাদা। এই সম্পূর্ণ আলাদা জগতের সাফারিতে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে গোটা তদন্ত চলাকালীন।
লেখার ধরন খুব সুন্দর। কোথাও অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় বিবরণ দিয়ে সময় নষ্ট করা হয়নি। কল্পবিজ্ঞান আর ক্রাইম থ্রিলারের সংমিশ্রণে এক নতুন এবং অগতানুগতিক শিল্প তৈরি হয়েছে এই গোটা গল্প তথা বই জুড়ে।
পড়তে বেশি সময় লাগবেনা। পড়ে খুব ভালো লাগলো। 😍
Profile Image for Didarul Islam.
137 reviews1 follower
July 5, 2021
গল্পটা আমায় পুরোপুরি আচ্ছন্ন করতে না পারলেও তা নিয়ে অভিযোগ করার মত ধৃষ্টতা দেখানোর সাধ্যি নেই আমার, তা হবে পুরো কৃতঘ্নতার শামিল। কেননা, বাংলা সাহিত্যে প্রথম স্টিমপাঙ্ক ফিকশন এটা। লেখককে ধন্যবাদ বাঙালি পাঠকদের এই অভিনব সাব-জনরার সাথে পরিচিতি ঘটানোর জন্যে।
Profile Image for যাবেদ খান আবু বকর.
7 reviews1 follower
March 19, 2022
রিভিউ
সিরিজ:- অপার্থিব সিরিজ
বই:- অর্থতৃষ্ণা
লেখক:- সুমিত বর্ধন
জনরা:- স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার


বইয়ের নাম:- আমি প্রথমে গল্পের নাম নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বইয়ের নামটা অনেকটা আনকমন। অর্থতৃষ্ণা! নামটার মাঝে বেশ বড়সড় রহস্য আছে। কেননা আমরা সহজ জিনিসের অর্থ আয়ত্ত করে থাকি বা রাখা হয়। কিন্তু অর্থ জানার তৃষ্ণা তখনই জাগে, যখন কোনো অপরিচিত জিনিসের উপর অর্থ দায়ের করা হয়। আমরা সাধারণত অর্থ জানার ভুখা হই তখন, যখন অমিমাংশিত রহস্য আমাদের উপর আছড়ে পড়ে। পুরো বই জুড়ে এরকম অহরহ রহস্য ভেদ অথবা রহস্যের অর্থ জানার আকাঙ্খা কিংবা তৃষ্ণার উপলব্ধি করা যায়। বইয়ের বিবেচনায় নামকে সার্থক হিসেবে উপস্থাপন করাই যায়।

জনরা:- স্টিমপাঙ্ক জনরটা আমার কাছে অনেকটা অপরিচিত লোকের মতো। এই জনরা নিয়ে কাজ না করায় তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু কল্পবিজ্ঞান এবং সাইন্স ফিকশনের সাব-জনরা অনুযায়ী এটিকে খুব একটা অপরিচিত মনে হয় না। তাছাড়া স্টিমপাঙ্ক জনরা নিয়ে আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশে হিউজ পরিমাণ চর্চা হলেও আমাদের দুই পাড় বাংলায় প্রথম স্টিমপাঙ্ক জনরার বই শুরু করেন সুমিত বর্ধন। এবং প্রথম বইটাই ছিল তার লেখা অর্থতৃষ্ণা।


প্রচ্ছদ:- বইয়ের প্রচ্ছদই গল্পের বড়সড় অর্থ বহন করে। একটা বইতে কী কী ঘটনা মজুদ আছে তার আংশিক বার্তা দেয়া হয় প্রচ্ছদের মাঝে। অর্থতৃষ্ণা বইয়ের অর্থ প্রচ্ছদে দেয়া হয়েছে। সাইন্স ফিকশনের আংশিক ভাব প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া বইয়ের মধ্যখানে ডানা যুক্ত করে বুঝানো হয়েছে কল্পকথা কিংবা ম্যাজিককে। বইয়ের ভেতরে ঘটনার আরও অনেককিছু উত্থাপিত করা হয়েছে প্রচ্ছদে। যা সত্যিই আকর্ষণ করতে সক্ষম।

বই:- বইটি পড়ার সময় অনেকটা নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছে মস্তিষ্ক। তথ্য মোতাবেক সৃষ্টি করে চিত্র। যেন আমি নিজেই গল্পের প্রতিটি চরিত্র অভিনয় করছি। গল্পের মাঝে হারিয়ে যাবার চিত্র ছিল অনেক। তাছাড়া গল্পের মাঝে বিদ্যমান ছিল শত রকমের রহস্য। যা একজন থ্রিলারপ্রেমী পাঠককে রহস্যের অতর সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। সাধারণত কোনো বইতে সাইন্স ফিকশন জুড়ে দিলে তা এমনিতেই পড়তে আগ্রহ এবং আকর্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। আর তার সাথে যদি যোগ হয় কল্পবিজ্ঞানসহ কল্পকথা,কল্প ইতিহাস, ম্যাজিক ইত্যাদি। তবে তো কথাই নেই। পাঠককে গোগ্রাসে গিলে নিতে সাহায্য করবে অতি সহজে। ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ বইটাকেই পাঠকের কাছে আকর্ষণী করে তোলে। একজন থ্রিলার পাঠককে দেয় প্রতি মুহূর্তে চমক এবং উত্তেজনা। অর্থতৃষ্ণা বইতেও ঠিক একই কাণ্ড ঘটেছে। প্রতি মুহূর্তে উদযাপন করেছি উত্তেজনা এবং চমক। বইয়ের শুরু থেকে শেষ অবধি যেন রহস্য এবং টুইস্টে ভরপুর ছিল। যা পড়তে আরও বেশি আকর্ষণ জুগিয়েছে।

অসংগতি:- বইটির মাঝে অসংগতি খুব কম। বইয়ের মাঝে স্বল্প কিছু বানান এবং কিছু বাক্যে ত্রুটি ব্যতীত অন্য কোনো অসংগতি তেমন একটা নজরে আসেনি। সম্পূর্ণ বইটাই ছিল আকর্ষণীয়। যা একজন পাঠককে পড়তে উদ্যত করতে সক্ষম।
Profile Image for Zabed Khan  Abu Bakar .
20 reviews
June 14, 2022
রিভিউ
সিরিজ:- অপার্থিব সিরিজ
বই:- অর্থতৃষ্ণা
লেখক:- সুমিত বর্ধন
জনরা:- স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার


বইয়ের নাম:- আমি প্রথমে গল্পের নাম নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বইয়ের নামটা অনেকটা আনকমন। অর্থতৃষ্ণা! নামটার মাঝে বেশ বড়সড় রহস্য আছে। কেননা আমরা সহজ জিনিসের অর্থ আয়ত্ত করে থাকি বা রাখা হয়। কিন্তু অর্থ জানার তৃষ্ণা তখনই জাগে, যখন কোনো অপরিচিত জিনিসের উপর অর্থ দায়ের করা হয়। আমরা সাধারণত অর্থ জানার ভুখা হই তখন, যখন অমিমাংশিত রহস্য আমাদের উপর আছড়ে পড়ে। পুরো বই জুড়ে এরকম অহরহ রহস্য ভেদ অথবা রহস্যের অর্থ জানার আকাঙ্খা কিংবা তৃষ্ণার উপলব্ধি করা যায়। বইয়ের বিবেচনায় নামকে সার্থক হিসেবে উপস্থাপন করাই যায়।

জনরা:- স্টিমপাঙ্ক জনরটা আমার কাছে অনেকটা অপরিচিত লোকের মতো। এই জনরা নিয়ে কাজ না করায় তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু কল্পবিজ্ঞান এবং সাইন্স ফিকশনের সাব-জনরা অনুযায়ী এটিকে খুব একটা অপরিচিত মনে হয় না। তাছাড়া স্টিমপাঙ্ক জনরা নিয়ে আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশে হিউজ পরিমাণ চর্চা হলেও আমাদের দুই পাড় বাংলায় প্রথম স্টিমপাঙ্ক জনরার বই শুরু করেন সুমিত বর্ধন। এবং প্রথম বইটাই ছিল তার লেখা অর��থতৃষ্ণা।


প্রচ্ছদ:- বইয়ের প্রচ্ছদই গল্পের বড়সড় অর্থ বহন করে। একটা বইতে কী কী ঘটনা মজুদ আছে তার আংশিক বার্তা দেয়া হয় প্রচ্ছদের মাঝে। অর্থতৃষ্ণা বইয়ের অর্থ প্রচ্ছদে দেয়া হয়েছে। সাইন্স ফিকশনের আংশিক ভাব প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া বইয়ের মধ্যখানে ডানা যুক্ত করে বুঝানো হয়েছে কল্পকথা কিংবা ম্যাজিককে। বইয়ের ভেতরে ঘটনার আরও অনেককিছু উত্থাপিত করা হয়েছে প্রচ্ছদে। যা সত্যিই আকর্ষণ করতে সক্ষম।

বই:- বইটি পড়ার সময় অনেকটা নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছে মস্তিষ্ক। তথ্য মোতাবেক সৃষ্টি করে চিত্র। যেন আমি নিজেই গল্পের প্রতিটি চরিত্র অভিনয় করছি। গল্পের মাঝে হারিয়ে যাবার চিত্র ছিল অনেক। তাছাড়া গল্পের মাঝে বিদ্যমান ছিল শত রকমের রহস্য। যা একজন থ্রিলারপ্রেমী পাঠককে রহস্যের অতর সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। সাধারণত কোনো বইতে সাইন্স ফিকশন জুড়ে দিলে তা এমনিতেই পড়তে আগ্রহ এবং আকর্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। আর তার সাথে যদি যোগ হয় কল্পবিজ্ঞানসহ কল্পকথা,কল্প ইতিহাস, ম্যাজিক ইত্যাদি। তবে তো কথাই নেই। পাঠককে গোগ্রাসে গিলে নিতে সাহায্য করবে অতি সহজে। ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ বইটাকেই পাঠকের কাছে আকর্ষণী করে তোলে। একজন থ্রিলার পাঠককে দেয় প্রতি মুহূর্তে চমক এবং উত্তেজনা। অর্থতৃষ্ণা বইতেও ঠিক একই কাণ্ড ঘটেছে। প্রতি মুহূর্তে উদযাপন করেছি উত্তেজনা এবং চমক। বইয়ের শুরু থেকে শেষ অবধি যেন রহস্য এবং টুইস্টে ভরপুর ছিল। যা পড়তে আরও বেশি আকর্ষণ জুগিয়েছে।

অসংগতি:- বইটির মাঝে অসংগতি খুব কম। বইয়ের মাঝে স্বল্প কিছু বানান এবং কিছু বাক্যে ত্রুটি ব্যতীত অন্য কোনো অসংগতি তেমন একটা নজরে আসেনি। সম্পূর্ণ বইটাই ছিল আকর্ষণীয়। যা একজন পাঠককে পড়তে উদ্যত করতে সক্ষম।
Profile Image for Anushtup.
47 reviews52 followers
December 16, 2024
#অনুষ্টুপ_বইপড়া_২০২৪

কেন জানি না এই বইটি বহুকাল ধরে বাড়িতে থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনি। এবারে মুম্বই আসার পথে যাকে বলে ‘এক সিটিং’এ পড়ে ফেললুম। সেভাবে পড়ার প্ল্যান ছিল না, সত্যি বলতে কী! ভোরের নষ্ট হওয়া ঘুমটা প্লেনে বসে পুষিয়ে নিতেই আমি পছন্দ করি। কিন্তু ঐ যে এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করার সময়ে বইটা খুলে চোখ বোলাতে শুরু করেছিলুম! লেখার গুণে প্রথম থেকে একেবারে গেঁথে যেতে বাধ্য হয় পাঠক, শেষ না করে নিস্তার নেই।

কল্পবিজ্ঞানে স্টিমপাঙ্ক বলে একটি ধারা আছে, ভিক্টোরিয়ান সময়ের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে সেসব কাহিনি। কাহিনির সেই কাল্পনিক অন্য জগতের মূল চালিকাশক্তি বাষ্প আর সেই সময়ের সমসাময়িক অন্যান্য প্রযুক্তি। স্পেকুলেটিভ ফিকশনের ধারা মেনেই তাতে মিশে যায় কিছু ফ্যান্টাসি এলিমেন্ট। এই বইটি বাংলায় লেখা প্রথম স্টিমপাঙ্ক কাহিনি।

কাহিনির স্থান ও কাল ব্রিটিশ ভারতবর্ষের কলকাতা। কিন্তু পাত্ররা কিছু যদি অতীব পরিচিত ধরণের মনে হয়, তো কিছু একেবারেই কাল্পনিক ও অভিনব প্রজাতি। সব মিলিয়ে সে এক চেনা-অচেনার মোড়কে তৈরি কল্পনার জগৎ। গল্পের শুরু হয় এক চুরি ও তার রহস্যভেদের টানটান উত্তেজনা দিয়ে। তারপর মোড় ফিরে আমরা চলে যাই কলকাতা থেকে দূরে, যেখানে একদিকে পিশাচের আক্রমণ, অন্যদিকে বিজ্ঞানচর্চা হাত ধরাধরি করে এগোয়। কে সেই পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে? কেন সেখানে খুন হচ্ছে বহিরাগতরা, পর পর? ধূর্জটির সন্দেহ কি তবে গিয়ে পড়বে মেকানিকাল রোবট কলগোলামের উপরেই? নাকি…

আহ, বলতে অনেক কিছু ইচ্ছা করছে, কিন্তু তাতে সাসপেন্স মাটি হয়ে যাবে। এটুকুই থাক গল্পের কথা। লেখার কথা বলি বরং, দারুণ লেগেছে সাবলীল ভাষা, স্বচ্ছন্দ চলন। কল্পবিশ্বের আর সব বইয়ের মতোই মুদ্রণ সুন্দর। প্রচ্ছদ ভালো, অলংকরণ কাহিনির ধরণের উপযুক্ত।

পড়ুন। এত সাবলীল সুন্দর চলন গল্পের, এমন বৈঠকী মেজাজে সেই সময়টা ফুটে উঠেছে, এত অভিনব উপাদানে ভরপুর অথচ এতটাই জীবন্ত সব কাণ্ডকারখানা যে সবই মনে হয় সম্ভব… এ বই না পড়লে মিস করবেন তো!

----

বই – অর্থতৃষ্ণা
লেখক – সুমিত বর্ধন
প্রকাশক - কল্পবিশ্ব
মুদ্রিত মূল্য – ২০০ টাকা
3 reviews
August 20, 2024
সত্যি বলতে কি স্টিমপাঙ্ক ধারার কথা এর আগে সিনেমাতেই শুনেছিলাম কিন্তু ঠিক করে কোনোদিন বুঝিনি ব্যাপারটা বা কৌতূহল সৃষ্টি হয়নি। এই বইটার বিষয়বস্তু দেখে বেশ ভিন্ন লাগে এবং এই স্টিমপাঙ্ক বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ জাগে।
গল্পটি কোনো এক বিশ্বযুদ্ধর সময় শুরু। কলকাতা তখনও ব্রিটিশদের শাসনে। আমাদের গল্পের দুই নায়ককে ডাকা হয় একটি চুরির বিষয়ে এবং সেই থেকেই এই রহস্য কাহিনীর সূত্রপাত।
চুরির ঘটনাটা মিটলেও একটা খটকা থেকেই যায় ধূর্জটির মনে। সেই চুরির ঘটনার সাথে জড়িত আরো খুনের ঘটনা দেখা দেয় এবং দুই নায়ক আরই গভীর জলে যেতে থাকে সেই ঘটনার দোষীকে সনাক্ত করতে।
স্টিমপাঙ্ক এর নানারকম উপাদান থাকলেও গল্পটির মূল কিন্তু একটি ডিটেকটিভ রহস্য। তন্ত্র এবং ফ্যান্টাসি মিলিয়ে মিশিয়ে একটা দারুন এক্সপেরিমেন্টাল প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। আলকেমি এবং মিথলজি থেকেও নানা উপাদান নিয়ে গল্পটিতে নতুন স্বাদ আনা হয়েছে।
এইরকম স্পেকুলেটিভ ফিকশনের কাজ আরো পড়ার ইচ্ছে রইলো ভবিষ্যতে।
তবে কিছু অনুযোগ ও আছে, যেমন কয়েক জায়গায় একই কথা বারবার রিপিট করা হয়েছে যা অপ্রয়োজনীয় লেগেছে।
গল্পটি আরেকটু বড় হলে ভালো লাগতো, তবে যতটা বড় আছে ওতে আরো কিছু স্টিমপাঙ্ক জড়িত বৈশিষ্ট্য দেখাতে পারলে ভালো হতো।
এছাড়াও বানান ভুল অনেক জায়গায় পেয়েছি, যেটা আশা করি পরের মুদ্রণে ঠিক করে নেবেন প্রকাশকেরা। অলংকরণ ও আছে বেশ কয়েকটি, তবে স্টিমপাঙ্ক-কলকাতা সম্পর্কিত আরও কয়েকটি আঁকা হলে ভালো লাগতো।
কল্পবিশ্বের বইয়ের গুণমান নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে তারা উচ্চমানের বই প্রকাশিত করেন এবং আশা করবো যে ভবিষ্যতে আরো এইরকম বই তারা যেন আমাদের হাতে তুলে ধরেন।
Profile Image for Mrinmoy Bhattacharya.
225 reviews36 followers
May 4, 2020
পড়লাম বাংলায় লেখা প্রথম (?) স্টিমপাঙ্ক উপন্যাস ।

🔸সকলের অবগতির জন্য ‛স্টিমপাঙ্ক’ বিষয়টা একটু বলা দরকার । কল্পবিজ্ঞানেরই একটি শাখা হল ‛স্টিমপাঙ্ক’, যার পটভূমি উনবিংশ শতক এবং সেই সময়ের নানা আবিস্কার । উনবিংশ শতকের শিল্পবিপ্লবের সময় পৃথিবীতে বাষ্পচালিত শক্তির সাহায্যে যে সব যন্ত্রপাতি আবিস্কৃত হয়েছিল সেইসব কিছুই এই গল্পের ভিত্তি ।

🔸তবে এটি কিন্তু একটি আদ‍্যোপান্ত ডিটেকটিভ গল্প । এমন একটি ডিটেকটিভ গল্প যেখানে পাবেন কলগোলাম (রোবট), গরুড় - যক্ষ, পিশাচ এবং নানাপ্রকার ত্রাশ পশুর উপস্থিতি । অর্থাৎ কল্পবিজ্ঞান এবং ফ‍্যান্টাসির ভরপুর মিশেল, যা এককথায় অপূর্ব ।

🔸থ্রিলারের বৈশিষ্ট্য মেনেই লেখকের কলম গল্পের শেষ অবধি থ্রিল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে । বইয়ের মাঝে যে সব কাল্পনিক জিনিসের ইলাস্ট্রেশন আছে তা অপূর্ব । ধূর্জটি চরিত্রটির মধ্যে ব‍্যোমকেশের ছাপ স্পষ্ট, যা আমার একটুও খারাপ লাগেনি । সবমিলিয়ে বলা যায় এটি একটি দূর্দান্ত স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার ।
Profile Image for সরকার.
20 reviews
September 20, 2024
কলেবরে কিঞ্চিৎ বৃহত্তর হলে আরো ভালো হতো। আরেকটু ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এবং এক্সপোজিশন থাকলেও মন্দ হতো না। তবু যেটুকু আছে সেটুকু ও খারাপ নয়, বরঞ্চ বেশ উপভোগ্য। এই জনরা পছন্দ এমন যে কোন মানুষের একবার পড়ে দেখা উচিৎ অর্থতৃষ্ণা।
গরুড়, কুবেরী যক্ষ, এবং অন্যান্য genetically engineered 'মানুষ'দের নিয়ে যদি সিক্যুয়েল আসে অত্যন্ত খ���শি হবো।
কভার নিয়ে একটু অনুযোগ আছে, খুবই দায়সারা ভাবে করা হয়েছে দেখে বোঝা যায়। পরবর্তী সংস্করণ গুলোতে প্রকাশক যদি এদিকে মনোযোগ দেন তাহলে ভালো হয় কারণ এই বই আরেকটু ভালো কভার ডিজার্ভ করে।
Profile Image for Shahriar.
4 reviews1 follower
August 27, 2021
অনায়াসে রেটিং চারে ���ড়াতে পারত যদি কিনা লেখক নতুন এই কোলকাতার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে পরিচয় করাতে পারতেন। গল্পটা বেশিই মেইন প্লট কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সাবপ্লটের বিপুল প্রয়োজনীয়তা। গল্পটা ডালপালা মেলে আরেকটু বড় হলে সুন্দর হতো। চরিত্র গঠনে সামনে আরও সতর্ক হতে হবে।
তবে স্টিমপাংক নিয়ে নতুন ধারার এই লিখাটি প্রশংসা যোগ্যও। নতুন ধারা প্রায় সুন্দর ভাবেই লেখক সামলেছেন। ^_^
Profile Image for Samikshan Sengupta.
212 reviews8 followers
March 1, 2024
Hats off to the imagination of the writer, which has a sound base on science. This can easily pass as an alternate reality story, where phlogiston, caloric, Garur, alchemistry are all real, along with the research of Becher & Stahl.

A fascinating world built on "What if". Mr. Ray would have been delighted reading this book :)
Profile Image for Debraj Moulick.
28 reviews2 followers
June 27, 2024
Oshadharon World Building
Tan tan Goenda Kahini
Kalpabiswa fatiye kaj kore choleche
Profile Image for Soumen Dey.
6 reviews2 followers
August 15, 2019
প্রথম বাংলা স্টিমপাঙ্ক কাহিনী অর্থতৃষ্ণা ~ একটি রিভিউ

বই - অর্থতৃষ্ণা
প্রকাশক- কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস
লেখক- সুমিত বর্ধন
সিরিজ- অপার্থিব
দাম- ১৬০ টাকা
পৃষ্ঠাসংখ্যা- ১২২

প্রথমেই বলি যে সিংহভাগ বাঙালী পাঠক কল্পবিজ্ঞান বলতে যা বোঝেন শ্রী সুমিত বর্ধন রচিত অর্থতৃষ্ণা তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। স্টিমপাঙ্ক ঘরানার কল্পবিজ্ঞান বিশ্বসাহিত্যেই বেশ কম রচিত হয়েছে। ভারতীয় সাহিত্যে স্টিমপাঙ্ক রচিত হয়েছে কিনা তা জানা নেই। তবে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার লেখা নিঃসন্দেহে এই প্রথম। স্টিমপাঙ্ক হল এমন একটি ঘরানা যেখানে বাষ্পীয় শক্তি এবং তার সমকালীন নানা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে সমাজের অগ্রগতি হয়। এই ঘরানার পটভূমি মূলতঃ ঊনবিংশ শতাব্দী। যদিও আমাদের আলোচ্য কাহিনীর সময়কাল বিংশ শতাব্দী। স্টিমপাঙ্ক যদিও কল্পবিজ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হয়, আসলে এটি কল্পবিজ্ঞান এবং ফ্যান্টাসির এক সুন্দর সহাবস্থান। ইংরেজিতে একে স্পেকুলেটিভ ফিকশন বলা হয়।

অর্থতৃষ্ণা একটি স্টিমপাঙ্ক গোয়েন্দা কাহিনী যেখানে মানুষ তো আছেই এবং তার সাথে গরুড়, পিশাচ ইত্যাদি কাল্পনিক প্রাণী। কাহিনীর শুরু কলকাতায়। তবে এই কলকাতা আমাদের চেনা কলকাতার থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে যেমন আছে এয়ারশিপ এবং কলগোলামেরা, তেমনই চর্চা চলে মন্ত্রবিদ্যা এবং কিমিয়াবিদ্যার। এইরকম এক পটভূমিকায় ঘটে চুরি এবং অন্য এক ঘৃণ্য অপরাধ। সেই রহস্য উদঘাটন করার কাহিনীই হল অর্থতৃষ্ণা।

বইটির প্রচ্ছদ বেশ নজরকাড়া। পুরানো একটি মানচিত্রের আবছায়ার উপর একটি এয়ারশিপের ছবি রয়েছে প্রচ্ছদে। এটি তৈরি করেছেন শ্রী সুদীপ দেব।

অদ্রীশ বর্ধনের হাত ধরে বাঙালী প্রথম পরিণত কল্পবিজ্ঞানের জগতে পা রেখেছিল। তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র সুমিত বর্ধনের বলিষ্ঠ লেখনীতে বাংলা কল্পবিজ্ঞানে এক নতুন ধারার সূচনা হল। অর্থতৃষ্ণার মূল চালিকাশক্তি হল এর যুগোপযোগী কিন্তু প্রাঞ্জল ভাষা, বলিষ্ঠ ঘটনাপ্রবাহ। অনেক পুরানো বাংলা শব্দের ব্যবহার করার ফলে একটা খাঁটি বাঙালিয়ানা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু শব্দ বুঝতে যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকেও লেখক যথেষ্ট যত্নবান। বইয়ের শেষে একটি সংক্ষিপ্ত পরিভাষাকোষ রয়েছে পাঠকের শব্দতৃষ্ণা মেটাতে। কিছু কিছু অপরিচিত বস্তু বা প্রাণীর বর্ণনা সম্পূর্ণ হয়েছে কিছু অলংকরণের সাহায্য নিয়ে যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাঞ্জল অলংকরণ সুমিতবাবুর কন্যা অদ্রীজা বর্ধনের করা। কলকাতার পরিবর্তিত ইতিহাস রচনা করতে লেখকের মুন্সিয়ানার তারিফ করতেই হয়।

তবে এর মধ্যেও কিছু চাহিদা পূরণ হল না। সুমিতবাবুর পটভূমি গঠন খুব শক্তিশালী হলেও চরিত্র নির্মাণ সেভাবে পেলাম না। কাহিনীর নায়ক, খলনায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রগুলির কোনও ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠল না। আর কিছু কিছু বস্তু বা প্রাণীর উল্লেখ করা হলেও তার কোনও বর্ণনা পাওয়া যায়না। বইটির আয়তন বেশ কিছুটা বড় হওয়ার দাবী রাখে। আশা করব এই পটভূমিতে লেখক আরও কাহিনী রচনা করবেন যেখানে এই চাহিদাগুলি পূর্ণ হবে। অপার্থিব সিরিজের প্রথম বই অর্থতৃষ্ণা। কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনের এই সিরিজের পরবর্তী বইগুলিও নতুন নতুন ঘরানার সন্ধান দেবে এই আশা রাখি।
Profile Image for Dibyendu Singha Roy.
76 reviews4 followers
September 5, 2019
রহস্য ভালোই সাজিয়েছেন লেখক। শেষ অবধি এই রহস্য বজায় ছিল। শেষে কি হতে চলেছে তা শুরু থেকে আন্দাজ করা যায়নি। লেখক নানা কাল্পনিক প্রাণীর অবতরণ করিয়েছেন লেখায়। কিন্ত লেখার বাঁধন আলগা।
যেসব কাল্পনিক অতিমানবিক বা অতিপ্রাকৃত বস্তু লেখক দেখিয়েছেন তার কোনো পূর্ব প্রেক্ষাপট নেই। তাদের আগমন কিছু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।
"সিগারেটের টিনে টকটক শব্দ তুললো ধূর্জটি" বাক্যটি প্রতি অধ্যায়ে বারবার ব্যবহারে জীর্ণ।
আর কখনো কখনো মনে হয়েছে সমস্ত ক্লু যেন গোয়েন্দার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে।
ভালো কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি গল্পগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো পাঠককে বিশ্বাস করার জন্য পরিশ্রম করতে হয়না।
এক্ষেত্রে প্রথম ৮০ পাতা পড়ে বিশ্বাস করতে মন চাইনি। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্লাইম্যাক্স যত এগিয়েছে, গল্প কিছুটা ঘন হয়েছে।
আমার এই রিভিউটা উড়িয়ে দেওয়া যায় কারণ লেখক শুরুতেই লিখেছেন বাঙালি পাঠকের কল্পবিজ্ঞান পড়ার মত মানসিক পরিপূর্ণতা নেই (সেক্ষেত্রে আমারও নেই)।
আমার মতে বাঙালি লেখকেরা কল্পবিজ্ঞান ঠিক মতো লিখতে পারেননি। যে গুটিকয় লেখক লিখেছেন তারা পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত। তাদের তৈরি চরিত্র পাঠকদের কাছে লেজেন্ডের পর্যায়ে। সেক্ষেত্রে লেখার প্রাথমিক ব্যাপার তা হলো বাঁধুনি। পূর্বতন লেখকেরা পারদর্শী ছিলেন এই ব্যাপারে।

কল্পবিশ্ব প্রকাশনীর কাজ যদিও খুবই ইউনিক। তারা খুব নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করছে একটা স্বল্প আলোচিত ধারাকে পপুলার করার। এভাবেই আরো ভাল লেখা আসবে।
বইটার কভার, পাতার কাগজ, বাঁধাই, ভেতরের অলঙ্করণ খুবই ভাল।
Profile Image for Biswadeep Ghosh.
17 reviews3 followers
August 13, 2019
লেখকের পড়া আমার প্রথম বই এটি এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব উপভোগ করেছি গল্পটি। গোয়েন্দা গল্পের ছলে স্টিম পাংক গল্পটিকে বেশ আগ্রহের সাথে পড়তে সাহায্য করে। যেহেতু বইটি নতুন বেরিয়েছে তাই আমি বিশেষ কিছু বলবো না শুধু এটুকু বলবো যে কয়েক জায়গায় একটু খেলো মনে হয়েছে বিশেষ করে শেষের কিছু অংশ। গল্পে কিছু অসাধারণ প্রাণীর কথা আছে যা আমি পড়ার আগে অব্দি জানতাম না, কিন্তু লেখক শেষে একটি তালিকায় সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন এবং অদ্রিজা বর্ধনের আঁকা ছবিও সাহায্য করেছে। একটি প্রাণীর বর্ণনা আমি ঠিক বুঝতে পারি নি সেটা হলো পিশাচ। কেননা বিভিন্ন মতে পিশাচ বলতে বিভিন্ন প্রাণী বোঝায় কিন্তু লেখক ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা পরিষ্কার হয়নি আমার কাছে। আর একটি ছবি যেটা হলো clockwork robot রঘু , সেটিকে দেখে আমার যান্ত্রিক কম পাথুরে বেশি মনে হয়েছে। আমি একে ৫ এ ৪ দেব কেননা বাংলায় আমি এরকম অন্তত কিছু পড়িনি, সুতরাং নতুন কিছু সবসময় তারিফের যোগ্য। লেখক��র পরের বই এবং অপার্থিব সিরিজের পরের বইয়ের অপেক্ষায় থাকলাম।

( মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত)
Profile Image for Sudip Deb.
2 reviews4 followers
August 13, 2019
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে অর্থতৃষ্ণা। যেমন ভাষা, তেমনি প্লট, তেমনি বুনন, তেমনি কল্পনা! বাংলাতেও যে রক গান হতে পারে দেখিয়েছিল মহীনের ঘোড়াগুলি, ফসিলস। বাংলাতেও যে স্টিমপাঙ্ক লেখা যায় সেটা সার্থকভাবে প্রমাণ করলেন সুমিত বর্ধন মহাশয়।
Displaying 1 - 23 of 23 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.