রাতের অন্ধকারে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সালাম । নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে । জমির বুঝতে পারে জাদুবিদ্যা সালামের সহজাত ক্ষমতা । সে খবর দেয় শংকরকে, যে বহুদিন ধরেই এরকম কারো সন্ধানে ছিল! সালাম আবার পালায় । পালাতেই থাকে । মুরশেদ মিয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ । ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই আক্রান্ত হলেন পথে । বুঝতে পারছেন অনেকদিন পর আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার শত্রুপক্ষ । কিন্তু এতদিন পর কেন এই সক্রিয়তা? ওদের উদ্দেশ্য কী? দিল্লিতে তিনি ছিলেন এক গুপ্ত সংগঠনের সদস্য । অনেকদিন পর সেই গুপ্ত সংগঠনের একজন ঢাকায় পা রেখেছে । কিন্তু কেন? ডঃ কামাল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক । খুঁজছেন তার বাবার আসল পরিচয় । যতই খুঁড়ছেন ততই গভীর হচ্ছে রহস্য। মৃত্যুর মহান জাদুকর পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে এই ঢাকায় । তাকে এবার রুখবে কে? ফ্যান্টাসি আর সাসপেন্সে পরিপূর্ণ শরীফুল হাসান’র ‘অন্ধ জাদুকর’ আপনাদের অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে। সেই জগতে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম । বই- অন্ধ জাদুকর।
Shariful Hasan hails from Mymensingh, Bangladesh. He has spent his childhood by the banks of Brahmaputra river. He completed his Masters in Sociology from University of Dhaka and is currently working in a renowned private organization.
Shariful's first novel was published on 2012 titled Sambhala. With two other books, this captivating fantasy trilogy has received widespread acclimation both within and beyond the borders of Bangladesh. The Sambhala Trilogy was translated in English and published from India.
Although his inception consisted of fantasy and thriller, he has later worked on a variety of other genres. These works have been received fondly by the Bangladeshi reader community. Lot of his works have also been published from different publications in West Bengal.
Award- Kali O Kalam Puroshkar 2016 for 'অদ্ভুতুড়ে বইঘর'
ফ্যানটাসি আমার খুব প্রিয় একটা জনরা, এমনকি আমার অন্যতম প্রিয় দুইটা চরিত্রই হইতেসে হ্যারি পটার আর কাজ ব্রেকার। হ্যারি পটার আর গ্রিশাভার্স সিরিজটা যেহেতু আমার খুব ভালোভাবে পড়া, তাই এই দুইটার সাথে শরীফুল হাসানের এই বইটার একটু তুলোনা করবো। এইটা অনেকের ভাল্লাগবে না, তুলোনারে আমরা খারাপ চোখে দেখি। কিন্তু, আমাদের দেশের ফ্যান্টাসিকে যখন বিশ্বমানের ফ্যান্টাসি বলা হইতেসে তখন একজন সাধারণ পাঠক হিসাবে বিশ্বমানের কিছু সিরিজের সঙ্গে তুলোনা আমি করবোই। এইটা না করলে আমার চলবে না। 'বিশ্বমান' খুব কঠিন একটা মানদণ্ড।
ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে যেটা সবচে' বেশি দরকারি, সেইটা হইতেসে নতুন একটা কাল্পনিক বিশ্ব নির্মাণ করা। এইটাই নতুন একটা সিরিজ লেখার ভিত। শরীফুল হাসান এই ভিত তৈরিতে সময় দিছেন, প্রায় দুইশ' ছাপান্ন পেইজ লিখসেন খালি এই কল্পিত দুনিয়া নির্মাণ আর প্লট বুঝাইতে। পড়তে খারাপ না লাগলে দুইশো ছাপান্ন পেইজ তো কি ছয়শো ছাপান্ন পেইজ প্লট নির্মাণে ব্যায় করলেও সমস্যা না। তাই, এই জিনিস নিয়া আমার মাথা ব্যথা নাই। তো আবার ভিত নির্মাণে আসি। হ্যারি পটার বা গ্রিশাভার্স সিরিজে আমরা পুরা আলাদা একটা দুনিয়ায় চলে যাই। ঐ দুনিয়ার নিয়ম আলাদা,কার্য কালাপ আলাদা, বাস্তবতা আলাদা। লেখিকাগণ এই ভিন্নধর্মী দুনিয়া তৈরিতে দারুণ শ্রমব্যায় করছেন এবং একইসাথে পারদর্শীতাও দেখাইছেন। কিন্তু শরীফুল হাসান তা করতে পারেন নাই, উনার এই ''অন্ধ জাদুকর'' বইয়ে আমরা কিছু লোকদের গায়েব হয়ে যাইতে দেখি, কিছু লোককে ড্রাগনের মতো আগুন ছুড়তে দেখি আবার কাউকে দেখি রূপ বদলায় কুকুর-বিড়াল বাঘ সিংহ হয়া যাইতে। এইসব জিনিস(আপাতদৃষ্টিতে যা অবাস্তব) মেনে নিতে হইসে মাত্র একটা মাত্র জিনিস জেনেই, আমাদের এই পৃথিবীতে কিছু লোক আছে, যারা এইসব করতে পারে। একজন পাঠকের জন্য এই একটা জিনিস অবশ্যই বড্ড কম হয়ে যায়। উনি কিছু জায়গায় এই ম্যাজিশিয়ানদের আলাদা একটা সোসাইটির কথা উল্লেখ করছেন, এখন এই সোসাইটি ক্যামনে চলে, কারা চালায়, এইটার পিছনের ইতিহাস কি...কিছুই তোলে ধরেন নাই। আবার সাধারণ লোকজনের সাথে এই সোসাইটির সম্পর্কটাই বা কেমন সেইটা আরও বেশি অপরিষ্কার। লেখকের অপারদর্শীতা বড্ড চোখে পড়লো যার কারণে ম্যাজিশিয়ানদের দুনিয়ার সাথে আমি পুরোদমে মিশে যাইতে পারলাম না।
আরেকটা বিষয়ে আসি। দুইশ ছাপান্ন পেইজের এই বইয়ে গল্প প্রায় কিছুই আগায় নাই। এটা মানা যায়, এবং মানা উচিত কারণ লেখক প্লট নির্মাণ করছেন সিরিজের প্রথম বইয়ে। কিন্তু, প্লটটাও ভীষণ ঘোলাটে। আমি এই মাঝারি সাইজের বই পড়ে প্লট সম্পর্কে মাত্র দুইটা ধারণাই পাইছি, ১. আলো অন্ধকারের সহাবস্থান এই পৃথিবীতে খুব বেশি প্রয়োজনীয় ২. উনিশশো নব্বুইয়ে হঠাৎ করে অন্ধকার বেড়ে গেছে, যার মোকাবেলা অন্ধ জাদুকর করবে ''অন্ধ জাদুকর'' বইয়ের সিক্যুয়েলে(এই লেভেলের ক্লিফ হ্যাঙ্গার আমার ক্ষুদ্র পাঠক জীবনে খুব একটা চোখে পড়ে নি)।
তো, এইবার আরেক জনপ্রিয় লেখককে টানা লাগতেসে। জাহিদ হোসেন। উনিও আলো অন্ধকারের সহাবস্থান নিয়া একটা থ্রিলার লিখছেন, ''কাদ্যুসেয়াস'' নাম। কিন্তু ঐ বইটা এই খানার তুলোনায় অনেক ভালোভাবে লিখিত। সিম্বল, মিথ ঢুকায় বেশ ভালো একটা উপন্যাস লিখসিলেন জাহিদ সাহেব। শরীফুল হাসানও এই বইয়ে প্রাচীন কালের জিনিস টানছেন, পিরামিডের সৃষ্টিতত্ত্বের সাহায্যে ম্যাজিকের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা যেমন করছেন, তেমনই শেষের দিকে প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কেও জড়াইছেন গল্পে। কিন্তু, আজকালকার পাঠকের একটা বদভ্যাস আছে। প্রাচীন কিছুর গন্ধ পাইলেই ধর্ম আর সিম্বল খোঁজে। আমিও এই দোষে দুষ্ট। কিছু জনপ্রিয় সিম্বলের সাথে ম্যাজিশিয়ানদের অস্তিত্ব জড়িত থাকবে, এইটা আশা করসিলাম(ব্যাক কাভারে সজল চৌধুরী একটা সিম্বল আঁকায় দিছেন, সেইটা দেখেও লাগসিলো কিছু একটা থাকবে)। সেইক্ষেত্রেও হতাশ, খালি অপ্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি।
অন্ধকার আর আলো...দুইদলের নেতাকেই শেষপর্যন্ত চিনলাম, কিন্তু আলো অন্ধকারের সহাবস্থান জরুরি কেন? এইটাও পরিষ্কার করেন নাই লেখক। ভালো লাগার মধ্যে খালি একটা জিনিসই আছে, মুরশেদ মিয়ার অতীতটা আমার দারুণ লাগছে।আর বইটা গতিশীল।
শরীফুল হাসান গুডরিডসে আজকাল বেশি সময় দেন না, এইরকম একটা মিথ খাঁড়া করতেসি মনে মনে। এই রিভিউ উনার চোখে পড়ুক, এইরকম ইচ্ছা আমার মোটেও নাই।
সালাম, মা বাবা হীন এতিম এক ছেলে যে কিনা মামার সাথে তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকে। হঠাৎ এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার কারনে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সে। শুরু হয় তার পলাতক জীবন। - এদিকে দেশের আরেক প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে থাকেন মুরশেদ মিয়া নামক একজন বৃদ্ধ মানুষ, যার অতীত হলো রহস্যে ঘেরা । কিন্তু পথের ভিতরেই হাতে পড়েন এক অদ্ভুত আততায়ীর। - ঢাকার এক ইউনিভার্সিটির নতুন শিক্ষক ডঃ কামাল আরেফিন, প্রাচীন ভারত ও যাদুবিদ্যা নিয়ে যার আগ্রহ অনেক। তার বাবার অতীতও রহস্যে ঘেরা। তাই তিনি খোঁজা শুরু করেন তার বাবার আসল পরিচয়, জানতে পারেন আশ্চর্যজনক কিছু সত্য । - আরেকদিকে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে দিল্লিতে দেখা পাওয়া যায় এক ভয়ঙ্কর গুপ্তসংঘের। সে গুপ্তসংঘের লোকজনকে এতদিন পরে আবারো দেখা যেতে থাকে ঢাকার রাস্তায়। - এখন সালামের পলাতক জীবনের শেষ পরিণতি কি? নিয়তি তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? মুরশেদ মিয়ার অতীত কি? দিল্লির গুপ্তসংঘের আসল কাজ কি? ডঃ কামাল আরেফিন এর বাবা আসলে কে? এ সবকিছু ছাড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন "মৃত্যুর মহান জাদুকর" আসলে কি জিনিস ? তা কি মিথ না বাস্তবতা? এ সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে লেখক শরীফুল হাসানের ফ্যান্টাসি থ্রিলার ধারার "অন্ধ জাদুকর" - বইটিতে। - অন্ধ জাদুকর পড়ার পরে প্রথম যে অনুভূতি মাথায় আসে তা হলো এর কাহিনী যেমন জাদু এবং জাদুকরদের ঘিরে , লেখনীও সেরকমের ম্যাজিক্যাল। কাহিনীর বুনোট এতই ভালো যে একবার গল্পের ভিতরে ঢুকে গেলে শেষ না করে উঠা যায় না। লেখকের এর আগের পড়া প্রিয় বই সাম্ভালার ধাঁচের লেখা যেহেতু, পড়তে তাই দারুন লেগেছে। - অন্ধ জাদুকর বইটির চরিত্রের ভিতরে গল্পের মূল প্রোটাগনিস্ট সালাম হলেও মুরশেদ মিয়ার ব্যাকস্টোরি এবং চরিত্র সবচেয়ে আকর্ষনীয় লেগেছে। লেখকের এর আগের সাম্ভালা সিরিজের একটি চরিত্র আছে এতে। বেশ কিছু ধরনের জাদুকরদের আলাদা আলাদা পার্সোনালিটি তৈরি করায় বেশ সময় নিয়েছে বইটি। তবে সবচেয়ে চমক রয়েছে বইয়ের টাইটেল ক্যারেক্টার "অন্ধ জাদুকর" কে এ বিষয়ে। - অন্ধ জাদুকর এর আরেক আকর্ষণীয় দিক এর ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং। "মৃত্যুর মহান জাদুকর" নামের এক মিথ, বেশ কিছু গুপ্তসংঘ, নানা ধরনের অবিশ্বাস্য জাদুকরী ক্ষমতার দারুন বর্ণনা এ বইয়ের বিশাল প্লাস পয়েন্ট। তবে কাহিনী অনুসারে যে পরিমান একশন এবং জাদুবিদ্যার প্রদর্শন দেখতে চেয়েছিলাম সেটি কিছু পরিমান কম রয়েছে। - অন্ধ জাদুকর এর কাহিনী নন লিনিয়ার হলেও চমৎকার লেখনীর কারণে কোন জায়গায় আটকানো লাগেনি তবে পিরিয়ড ড্রামা বলে কিছু জায়গায় কন্টিনিউটির সমস্যা দেখতে পেয়েছি। তবে বইটি সম্পর্কে আমার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ "শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ" টাইপের ফিনিশিং। কিন্তু লেখক ঘোষণা দিয়েছেন এটি আসলে একটি ট্রিলজির প্রথম পার্ট, তাই সব কিছুর উত্তর আসলে ট্রিলজি শেষ হবার পরে পাওয়া যাবে। - অন্ধ জাদুকর এর টেকনিক্যাল দিক থেকে ধরতে গেলে বইটির প্রোডাকশন এর দামের তুলনায় বেশ উন্নতমানের, বানান ভুল বা প্রিন্টিং মিসটেক খুব একটা চোখে পড়েনি । বইটির আরেক প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এর প্রচ্ছদ যা কাহিনীর হিসেবে একদম পারফেক্ট এবং বইটিকে আরো দারুণভাবে প্রেজেন্ট করেছে, এ কারণে প্রচ্ছদশিল্পীকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়।এছাড়াও বইয়ের বাধাই, কাগজের মান, প্রিন্ট এ সব কিছুই বেশ সন্তোষজনক। - এক কথায়, সাম্ভালার পরে লেখক শরীফুল হাসানের আরেক দারুন সিরিজের সূচনা হলো "অন্ধ জাদুকর" এর মাধ্যমে। দেশীয় ঘরানার ফ্যান্টাসি থ্রিলার পড়তে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য মাস্ট রিড, বাকিদের জন্যও হাইলি রিকোমেন্ডেড। এই সিরিজের পরবর্তী বইগুলো পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
বর্তমান সময়ের লেখকদের মাঝে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক শরিফুল হাসান। ❝ অন্ধ জাদুকর ❞ নিয়ে আমার এক্সপেক্টেশন খুব না থাকলেও পড়ার ইচ্ছা ছিল অনেক বেশি। তার পিছনে অবশ্য ব্যাক স্টোরি আছে একটা। তবে এক্সপেক্টেশন থাকলেও সেইটা অভারকাম করার ক্ষমতা ছিল এই মৃত্যুর মহান জাদুকরের গল্প। পড়ার এক্সপেরিয়েন্স টা ছিল খুবই অদ্ভুত৷ একই সাথে মনে হচ্ছিল বিশাল প্লটের কোনো গল্প পড়ছি, আবার মনে হচ্ছিল একটা গল্পের প্রোলগ মাত্র বইটা।
লেখনী এত দারুন যে শব্দ গুলো ছবির মত চোখে ভেসেছে৷ সেই সাথে এত ক্যারেক্টার, এত ব্যাক স্টোরি, গল্পের বর্তমান সময় সব মিলিয়ে অনেক কমপ্লেক্স একটা প্লট যেখানে শেষ চ্যাপ্টারের আগ পর্যন্ত ধারনা বেশ কঠিন ছিল প্রটাগনিস্ট, এন্টাগোনিস্ট কে বা কার দলের সাথে কারা ছিল। তারপরও গল্পের কোথাও কোনো সাসপেন্স এর অভাব ছিল না, আর সাবলিল আর ফাস্ট পেসড ন্যারেশন তো লেখকের সিগনেচার প্যাটার্ন!
তবে একটা যায়গাই ঘুরে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছি যে গল্পের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল হতে পারতো কিন্তু লেখক সেই বিশাল ব্যাপ্তিকে যেন খুব বেশি ছোট গন্ডির ভেতরে এনে বাকিটা ক্লিফহ্যাং এ রেখেছেন৷
এক কথায় সেকেন্ড বইটা যদি এর কাছাকাছিও হয় আর গল্পটা ঠিক ভাবে শেষ করেন, তাহলে পূর্নাঙ্গ অবস্থায় একটা অন্যতম সেরা একটা ডুয়োলজি পারে৷ ( রেটিং আর রিভিউ দেখে সন্দেহ ধরে গেছে মনে)
শরীফুল হাসানের লেখার একটা ব্যাপার বড্ড ভালোলাগে। লেখা পড়লেই যেনো মনে হয় বড্ড গুছানো আর বেশ স্টাডি করা হয়েছে একটা বিষয়ে। সাম্ভালা পড়ে তার লেখার ফ্যান হয়েছি এবং যথারীতি এই বইটাও হতাশ করেনি। সাম্ভালার ফ্যান রা সাম্ভালার বেশ ভালো রকমের ছোয়া পাবে বইতে। শেষের দিকে এসে খুব দারুণ ভাবে জমানো গল্পটা যদিও ক্ষাণিক টা অসম্পূর্ণ লেগেছে, সম্ভবত সিকুয়েল আসবে; তাই। সুপাঠ্য।
Done. But the story is not done yet. Very little was revealed. But, still enjoyed it mostly. There were redundant parts in the story, which, if refined, could have make the story finer. There is a obscurity which don't let you figure who is good or bad until the later parts of the story. Flashbacks felt nice.
দীর্ঘ ঘন গাড় মাঠ, মাঠের মাঝে কালো আলখেল্লা পরা একলোক, তার চেহারা দেখার জো নেই হাতে লাঠি, সেই লাঠির আগায় সাপের মাথা। কাছে আসছে লোকটি, এবং লাঠি দিয়ে দীর্ঘ আঘাত করলো সালাম এর মাথায়। লুপ!!
দুঃস্বপ্ন! দুস্বপ্নে সালাম এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রায় সে এই দুঃস্বপ্ন দেখে। কিন্তু কেন? পিতামাতাহীন এতিম সালাম তার মামার বাড়িতে থাকে। ১৫ বছর বয়সে তাকে করতে হয় অনেক ভারি কাজ। এক রাতে সালাম পালিয়ে গেলো মামার বাড়ি ছেড়ে, চলে এসো ঢাকায়। কিন্তু ইট পাথরে ঘেরা ঢাকায় তার যাওয়ার জায়গা কই? পরিচিত হলো জমির ম্যাজিশিয়ান এর সাথে তার সাথেই থাকা খাওয়া ম্যাজিক শিখা কিন্তু জমির উপলব্ধি করতে পারে সালাম সাধারন কেউ না, পরিচয় হয় শংকর এর সাথে তারপর আবার সালামের পালিয়ে বেড়ানো শুরু।
বৃদ্ধ মুরশিদ মিয়া, মাথায় সাদা চুল বেনী করা, চেহারায় বলি রেখা হলেও অসম্ভব শক্তি এখনো বাহুতে। ঢাকায় আসেন প্রতি মাসে, এবার ঢাকায় পা রেখেই বুঝতে পারেন তারা তার পিছু নিয়েছেন। কিন্তু কারা? যারা অসম্ভব ক্ষমতাধারী।
বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক ডঃ কামাল আরেফিন, খুঁজে চলছে তার বাবার অতীতকে। সবাই জানে তার বাবা মারা গেলেও তার মনে আছে অন্য কিছু। দিল্লীর কোন এক গুপ্তসংঘঠন এর সদস্য ছিলো তার বাবা। সেই রহস্য বারবার হাত ছানি দিচ্ছে ডঃ আরেফিনকে।
এদিকে দিল্লীর গুপ্তসংঘ আবার এক হতে চলছে এই ঢাকায় আবার আগমন ঘটবে "মৃত্যর মহান জাদুকর" এর।
তাহলে সালাম এর ভুমিকা কি এইসবে। আর মুরশিদ মিয়া কে? কি তার আসল পরিচয়। ঐদিকে ডঃ আরেফিন কি খুঁজে পাবে তার বাবার রহস্য, সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে শরীফুল হাসান এর ফ্যান্টাসি উপন্যাস "অন্ধ জাদুকর" এ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া :: শরীফুল হাসান মূলত পরিচিত তার জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি উপন্যাস সাম্ভালা টৃলজি। সাম্ভালা টৃলজি পর বেশ কিছু সামাজিক উপন্যাস লিখে তিনি আবার নতুন ফ্যান্টাসি নিয়ে ফিরে এসেছেন। অন্ধ জাদুকর শরীফুল হাসান এর আরেকটি ফ্যান্টাসি সিরিজ হতে যাচ্ছে। ফ্যান্টাসি বলতে আমরা সাধারনত যা বুঝি যে লেখায় লেখক সবচে বেশি স্বাধীনতা পায়। যে লেখায় কোন ধরা বাধাঁ কিছুই নেই। প্রথমত্ব বলবো ফ্যান্টাসি জনরা তৈরি করতে তিনি পারফেক্ট ভাবে সক্ষম হয়েছে। সেই সাম্ভালাতে তিনি যে নিপুণ হাতে কাজ দেখিয়েছেন অন্ধ জাদুকর এ তা ধরে রেখেছেন। অন্ধ জাদুকর বইয়ের গল্পে জাদুবিদ্যা বা ম্যাজিক্যাল ওয়াল্ড এর বিস্ততর বর্ননা ছিলো দারুণ। চরিত্র তৈরিতে পারফেক্ট ভাবে উত্তীর্ন। তার গল্প বলার ধারনও ভালো ছিলো। কিন্তু এবার তার গল্পে নিজেকে আটকাতে পারিনি। কিছুটা ঢিলে লেগেছে। আর একটা জিনিশ আমার কাছে মনে হলো বইটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলো। শেষ টা মনে হতো হয়নি, যদিও এটার সিকুয়েন্স আসবে সে খানে বাকি প্রশ্নের উত্তর গুলো পাবো সেই অপেক্ষায়।
তাই অভার অল অন্ধ জাদুকর ফ্যান্টাসি হিসাবে দারুণ।
বাতিঘর এবার তাদের বইয়ের গঠনগত দিকে মনযোগ দিয়েছে দেখা ভালো লাগলো। ক্রিম কালার পেজ, বাঁধাইও ভালো, বানান ভুল তেমন নেই। অভার অল বই এর গঠনগত দিক আগের তুলনায় বেশ উন্নত।
ব্যাক্তিগত রেটিং : ৪/৫।।
ফিরে দেখা,,
বইয়ের নাম : অন্ধ জা���ুকর লেখক : শরীফুল হাসান। জনরা : ফ্যান্টাসি থ্রিলার প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারী ২০২০। প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী। প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী পৃষ্টা সংখ্যা : ২৫৬। মূল্য : তিনশত বিশ টাকা ( গায়ের দাম)।
গুনী লেখক শরীফুল হাসানের দুটো বই পড়া হয়েছিল এর আগে। একটা উনার দেশ ব���খ্যাত সাম্ভালা ট্রিলজি আরেকটা ঋভু। সাম্ভালা যতোটা ভালো লেগেছিল, ঋভু ঠিক ততটাই খারাপ। মনে হচ্ছিলো যেন দুজন আলাদা লেখকের বই পড়েছি!
উনার তৃতীয় বই হিসাবে শুরু করেছিলাম অন্ধ জাদুকর। শুরু থেকেই কেমন যেনো সাম্ভালা টাইপ একটা ফীল পাচ্ছিলাম এই বইটার গদ্যশৈলীতে। অতএব নড়েচড়ে আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
বেশ বড় পরিসরের একটা প্লটের ইঙ্গিত দিয়েই বইটা শুরু করেছিলেন লেখক। আমাদের চেনা জগতের আড়ালে থাকা অস্বাভাবিক ক্ষমতা সম্পন্ন সব জাদুকরদের কাহিনী। তবে বইটা দ্রুতই বিশাল প্লট ছেড়ে এসে, শুরুর কিছু সময় পর থেকে মূলত হয়ে যায় সালাম এবং মুরশেদ মিয়া নামের দুই চরিত্রের গতিবিধি এবং কর্মকান্ডের বয়ান। পড়তে খারাপ লাগছিলো না যদিও, এই দুই চরিত্রের আলাদা জার্নি আর অ্যাডভেঞ্চার যে শেষে এসে এক সুতোয় মিলবে তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম। আর তাই বই পড়ার আগ্রহটাও জিইয়ে ছিল পুরোদমে।
তবে শেষটা সে আগ্রহ পানি ঢেলে দিয়েছে। বিশাল প্লট নিয়ে লেখক ট্রিলজি লেখার চিন্তা করতেই পারেন। কিন্তু এই ট্রিলজির প্রতিটা খন্ডের মোটামুটি একটা এন্ডিং আর কিছু রহস্যের খোলাসা থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়। যাতে পাঠক পরের বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে পারে আবার এই এই খন্ডটাও পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে৷ আমাদের দেশের লেখকেরা এই জায়গাটায় আসলে বেশ ভালোভাবেই ব্যর্থ বলা চলে। ট্রিলজি প্ল্যান নিয়ে বের করা বইগুলোর খন্ড বেশীরভাগই কেমন যেন হুট করে শেষ হয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষুধার্ত কারো সামনে মুখরোচক সব খাবার দিয়ে, বেচারা খাওয়া শুরু করার সাথে সাথে সব খাবাড় সরিয়ে ফেলা টাইপ ফীল হয় আমার। এই বইটাও তার ব্যতিক্রম নয়।
লেখকের চমৎকার লিখনশৈলীর দরুণ টানা পড়ে যেতে পারলেও শেষে অনেক প্রশ্নেরই কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়েছি। আবার একইসাথে এতো চমৎকার লিখনশৈলীতে এক প্যারায় এক রকম কথা বলে, পরের প্যারাতেই সেই কথার উল্টোটা বলা চোখে লেগেছে খুব। এরকমটা হয়েছে বেশ কয়েকবারই। কারেক্টারাইজেশন আর পারিপার্শ্বিক বর্ণনা যত দূর্দান্ত হয়েছে, ততটাই সাদামাটা ছিল ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং আর অ্যাকশন সিকুয়েন্সগুলো। জাদুকরদের পাওয়ার হবে জাদুর বিভিন্ন স্পেলের, অথচ এখানে দেখানো হলো তাদের অতিমানবের মতো সব ক্ষমতা!! যেনো জাদুকর নয়, তারা একেকজন মিউটেন্ট! বইয়ে অনেক চরিত্র এলেও, সালাম এবং মুরশেদ মিয়া ছাড়া আর কারো চরিত্রই তেমন একটা ফুঁটে উঠতে পারেনি। সব মিলিয়ে কিছুটা ভালো লাগা আর বেশ খানিকটা হতাশা নিয়েই শেষ করেছি বইটি।
ব্যক্তিগত রেটিং: ০৬/১০ (একদিকে চমৎকার লিখনশৈলী আর প্লট। অন্যদিকে গল্পের একদমই খাপছাড়া এন্ডিং আর অনেক অমীমাংসিত রহস্য খোলাসা না করা, এই দুই মিলিয়ে মিশ্র রেটিং)
শেষ করলাম অন্ধ জাদুকর। সব্যসাচী শরীফুল হাসান সাহেবের লেখনী একপ্রকার জাদুর পরশ বুলিয়ে দেয়। এবার তিনি লিখেছেন জাদু নিয়েই। তার এবারের বইমেলায় প্ৰকাশীত ফ্যান্টাসি উপন্যাস অন্ধ জাদুকর। বেশ কয়েকজন জাদুকরের মেলা বসেছে এই বইয়ে। ইতিহাসের পুরানো এক লড়াই ফিরে এসেছে কাহিনীতে। ভালো বনাম খারাপ। আলো বনাম অন্ধকার। কিন্তু শুরুতে ধরতে পারবেন না কে ভালোর পক্ষে আর কে খারাপের পক্ষে। মাঝামাঝি গিয়ে ব্যাপারটা কিছু পরিষ্কার হবে। কাহিনী শুরু হয় সালাম নামক গ্রাম থেকে পালানো এক ছেলেকে দিয়ে। যে ঢাকা শহরে এসে পাকেচক্রে এক সস্তা জাদুকরের হাতে পড়ে। এরপরেই শুরু হয় ইঁদুর বিড়াল দৌড়। কয়েজকন ভাগ হয়ে তাড়া করে বেড়াচ্ছে সালামকে। কি এমন আছে সালামের মধ্যে? জাদুকর মোর্শেদ কি এমন জিনিসের পেছনে ছুটছেন? কি এমন ক্ষমতা রয়েছে তার?স আসলে কে এই অন্ধ জাদুকর? এসব প্রশ্নের সত্তুর ভাগ উত্তর লুকিয়ে রয়েছে অন্ধ জাদুকর বইটিতে। সম্ভবত বইটি সিরিজ আকারে আসবে। লেখক দারুণ ক্লিফহ্যাঙ্গার রেখেছেন শেষে। লেখনী নিয়ে শরীফুল হাসান ভাইয়ের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। খুব স্বাভাবিক, পরিচিত এক দুনিয়ার সাহায্যেই উনি একটা ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড গড়ে তুলেছেন। যেখানে কোনো বাড়াবাড়ি জাদু নেই। দেখে স্বাভাবিকই মনে হবে। কাহিনী দারুণভাবে এগিয়েছে। পাঠককে ধরে রাখতে যথেষ্ট। একশন সিকোয়েন্স-এ জাদুর প্রয়োগ দেখানো হয়েছে সুন্দরভাবে। দুয়েক জায়গায় সামান্য ক্রিপি বর্ণনাও রয়েছে। তবে কাহিনী শেষ হয়নি। সিরিজ হবে সম্ভবত। আরেকটা ব্যাপার হল, বইটা ফ্যান্টাসি হলেও লেখকের স্ট্রং লেখনীতে দারুণ জীবনবোধও উঠে এসেছে। বাংলার ফ্যান্টাসি ও থ্রিলার প্রেমীদের জন্য দারুণ কিছু হতে চলেছে অন্ধ জাদুকর সিরিজ ও বইটি।
অন্ধ জাদুকর || ফ্যান্টাসি থ্রিলার || ফ্যান্টাসি থ্রিলার হিসেবে বইটি বেশ প্রশংসার দাবিদার। প্লটটা বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু লেখকের নাম যখন শরীফুল হাসান থাকে, তখন Expectation থাকে অনেক বেশী। বলতেই হয়, বইটা expectation অনুযায়ী হয়নি। আরও ভালো কিছু হতে পারতো।
বইটার কাহিনী বেশ ধীরেসুস্থে এগিয়েছে। লেখক ট্রিলজি বানাচ্ছেন, তাই আপাতত এই বইটাতে চরিত্রগুলোর উদ্ভব আর ক্ষমতাগুলোই বেশী দেখা গেছে। তবে, কাহিনীর শুরুর দিকে, "জাদুবিদ্যা" নিয়ে আরেকটু ভেল্কিবাজি দেখানো যেত। আর Action sceneগুলোতে বর্ণনার ঘাটতি চোখে পড়েছে কিছুটা। আশা করি, পরবর্তী সিক্যুয়েলে লেখক বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্ট দিবেন।
তবে, বরাবরের মত একটা বিষয় বইটাতে অবশ্যই বিদ্যমান, সেটা হল আকর্ষণ ধরে রাখা।
বইটা একবার শুরু করলে শেষ না করে উঠা কঠিন। এক্ষেত্রে শরীফুল হাসান ১০০তে ১০০!
পরবর্তী সিক্যুয়েলগুলোর অপেক্ষায় রইলাম। লেখকের জন্য শুভকামনা 😊😊
জগতে দ্বিমুখী স্বত্তাগুলো চলে ঠিক পাশাপাশি। আলোর সাথেই মিশে থাকে অন্ধকার, একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। সত্যিকারের জাদুকরেরাও এর বাইরে না। তাদের মধ্যেও আছে আলো ও অন্ধকারের পূজারী।
বইয়ের শুরুর দিকে অনেকগুলো চরিত্রের একসাথে চলাফেরায় কিছুটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছিলো। গল্পের ব্যাপকতা তখনও বুঝতে পারিনি। তবে ধীরে ধীরে গল্প যখন গুছাতে শুরু করল... আর শেষে এসে লোমহর্ষক এক অভিজ্ঞতার ভিতরে দিয়ে নিয়ে গেল তা নিসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার!
শুভ শক্তি ও অশুভ শক্তির এ লড়াইয়ে কে কোন দলে সেটা বিচার করা খুব কষ্টসাধ্য ছিল! অধীর আগ্রহে পরের বইয়ের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর করণীয় কিছু নেই!
লেখার ক্ষমতা নিয়ে একবারের জন্যও লেখককে প্রশ্নবিদ্ধ করার সাধ্য নেই। এত সাবলীল লেখা, এত সহজ অথচ অবলীলায় একের পর এক নতুন চরিত্র, তাদের পূর্বকথা, গল্পের মূলপ্লটের সাথে তাদের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন৷ গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে সালাম। অলৌকিক ক্ষমতা মাঝে মাঝে প্রকাশ পায় তার মাঝে। তাকে ঘিরে ঘটতে থাকে নানা অদ্ভুত ঘটনা, কারা যেন তাকে খুঁজছে। তার মতো কিশোরকে নিয়ে কেন সবার এত আগ্রত? অন্ধ জাদুকর কে? কারা হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠছে ঢাকার বুকে? এইসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বই শেষ বইটা ভালো। কিছু প্রশ্নের উত্তর মনে হয়েছে অজানা থেকে গেছে। তবে তা লেখকের গল্প লেখার অসাধারণ ক্ষমতায় চাপা পড়ে যায়। See Less
ইতিমধ্যে অনেকেই 'অন্ধ জাদুকর' পড়েছেন এবং অনেক রিভিউ চোখে পড়বে আপনাদের, তাতে করে বইয়ের আগাপাশতলা মিলিয়ে যা কিছু মাথায় আসা সম্ভব পাঠকের, সবগুলো দিকই একেকজনের কথায় পেয়ে যাবেন। এর বাইরেও, কিছু 'সম্ভাবনা' আমি দেখতে পেয়েছিলাম অন্ধ জাদুকর বই এবং সিরিজ নিয়ে। সেখানে যাবার আগে, আমার এবং অন্য রিভিউদাতাদের মতামত মিলিয়ে ভালোমন্দগুলো তালিকায় উল্লেখ করে দিচ্ছি।
বইয়ের প্রশংসাযোগ্য দিক : (১) একদম শেষ অব্দি পাঠক স্থির করতে পারবেন না, এই বইয়ের প্রটাগনিস্ট কে, এন্টাগনিস্ট কে! ভালোর পাশে কারা, কারা মন্দ। একদম শেষ সিকোয়েন্স অব্দি, না! (২) লেখনশৈলী বা ন্যারেটিভ ভাল। শরীফুল হাসান প্রতিষ্ঠিত লেখক, নানান জনরায় চমৎকার লেখেন, লেখার গুণেই ওনার লেখা পড়তে ইচ্ছা হয়। (৩) পুরো বইজুড়ে সাসপেন্স এবং গতি, দুটোই ধরে রেখেছেন লেখক, একদম একই মাপে, কোথাও মনে হয়নি যে ঝুলে পড়লো। (৪) এর বাইরেও, পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছেন পুরো বইজুড়ে, টানটান উত্তেজনা ছিল। (৫) হরর/ফ্যান্টাসি/সাইফাই/থ্রিলার তো গতানুগতিকের একটু বাইরের জনরা, তার জনরা-ভিত্তিক উপাদান নিয়ে খেলতে হয় লেখককে। অনেক লেখকই, পাঠককে নির্দিষ্ট জনরার উপাদানগুলো উপহার দিতে পারলেও, ওই উপাদানগুলো ছেঁকে নিলে যে সাদামাটা গল্পটা থাকে, বলা যেতে পারে, একটা 'সামাজিক' গল্প, যেখানে মানুষগুলো এবং তাদের চিন্তাধারাগুলো ইম্পরট্যান্ট, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই হরর/ফ্যান্টাসি/সাইফাই/থ্রিলার-রা দক্ষতা দেখাতে অপারগ হন। সেগুলো জনরার জোরে জনরার পাঠকের কাছে উতরে যায়। সেই (২) নাম্বার পয়েন্টের কথাই আবার বললাম, শরীফুল হাসান সামাজিক উপন্যাসও চমৎকার লেখেন, এবং তার ফ্যান্টাসি উপন্যাসে ফ্যান্টাসি ইলিমেন্ট বাদ দিলেও, গল্পটার নির্মাণ ভালোই হয়। (৬) এই বইয়ে চরিত্রের নির্মাণ চমৎকার। ছোট কলেবরের মাঝে দরকারি কিছু চরিত্র, মুরশেদ, সালাম, কামাল আরেফিন, তাদের ক্যারেক্টারের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভালো, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এবং তাদের মাথার ভেতর ঢুকেও ভালো সময় কাটবে পাঠকের, সেই সাথে ডেভেলপমেন্টও ভালোই, কামাল আরেফিন বাদে।
বইয়ের ঘাটতির দিকগুলো : (১) ক্লিফ হ্যাঙ্গার। লেখক হয়তো ট্রিলজির প্রথম বইটাকে এখানে এনেই শেষ করাটা পর্যাপ্ত মনে করেছেন, কিন্তু পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা আরামদায়ক ছিল না মোটেই। চারপাশ থেকে সবকিছু ডেভেলপ হতে হতে এগোলো, বেশ খানিকটা ফ্ল্যাশব্যাক, কিছু চরিত্রের অতীত, কাহিনীর আবর্তনের মূল কেন্দ্র, সবই আমরা দেখতে পেলাম, আমরা আশা করছিলাম অসমাপ্ত সিরিজের প্রথম বইতে আপাত-দৃশ্যমান সঙ্কটগুলোর একটা অবসান বা ক্লোজার ঘটবে, তার আগেই বই শেষ হয়ে গেল। ওইদিকে অসম্পূর্ণ রয়ে গেল প্রতিটা ব্যাকস্টোরি-ও। (২) প্রথম পয়েন্টের লেজ ধরে বলি, লেখক প্রথম বইটা পুরো খরচ করে ফেলেছেন পরের বইগুলোর জন্য একটা ভিত্তি তৈরী করতে গিয়ে। আমরা সবে 'অন্ধ জাদুকর'-এর দুনিয়ায় ঢুকতে পারলাম, ওতেই সার, ঘটার মতো কিছু ঘটতে (অর্থাৎ একটা নিষ্পত্তি টানতে) আমরা দেখব পরের বইয়ে, তার আগে অসমাপ্ত একটা কাহিনীর মাঝখানে আমরা অপেক্ষা করতে থাকব। (৩) যেসব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এসেছে, তাদের বর্ণনা অপ্রতুল। প্রথমত, বইয়ের প্রেজেন্ট টাইমলাইন নব্বই শতকে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়। আন্দোলন হচ্ছে, এই আঁচ দিয়েচেহ্ন কেবল লেখক। আমরা কিন্তু ওই সময়কালে খুব বেশি বই পড়িনি। আশপাশের ওই সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ সামনে আনলে আশ মিটতো। একইভাবে, ব্যাকস্টোরি দেখাতে অতীতে যে কয়বার যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়েছে দিল্লিতে, ওখানে বইয়ের চরিত্ররা পথেঘাটে হেঁটে বেড়ালেও, আমরা পথঘাট বা ওই সময়ের কথা খুব একটা পাই না এখানে। (৪) দুটো গুপ্তসঙ্ঘের কথা এসেছে। কিন্তু তাদের মোটিভ, অতীত, ইত্যাদি কিছুই আসেনি। কারা পরিচালিত করছেন তাও না। হয়তো পরের বইগুলোতে আসবে সেসব? আশা করতে পারি।
সবশেষে, একটা সিরিজ/ট্রিলজি হিসেবে আমি কিছু সম্ভাবনা তুলে আনতে চাই। যেমনটা বলেছিলাম, ডেভেলপমেন্ট পূর্ণতাবোধ না দেওয়ায় পাঠককে ক্লিফ হ্যাঙ্গারে রেখে গেছেন লেখক। একইসাথে পারিপার্শ্বিকের নির্মাণ আমরা কম দেখতে পেয়েছি। এখান থেকে কিছু কাজ লেখক পরের বইগুলোতে করতেও পারেন, না-ও করতে পারেন। 'অন্ধ জাদুকর'-এর এমন কিছু সম্ভাবনা হতে পারে : (১) কামাল আরেফিন। এই চরিত্রটা সাম্ভালা-তে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এসেছে। এখানে মনে হচ্ছে কাহিনীতে বড়সড় অবদান রাখবেন, এবং তাকে অন্যতম প্রটাগনিস্ট বানানো হতে পারে। (২) বাক্স, এবং মৃত্যুর মহান জাদুকর - এই দুইয়ের ইতিহাস নিয়ে পেছনে যেয়ে কাজ করা যেতে পারে। মিথ, ফোকলোর, অল্টারেট হিস্টরি। (৩) এই পয়েন্টেও অল্টারনেট হিস্টরির আশা-ই ব্যক্ত করবো। দুটা গুপ্তসঙ্ঘের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। তাদের উদ্ভব এবং সঙ্ঘাত নিয়েই অল্টারনেট হিস্টরি রচনা করতে পারেন লেখক, যে টাইমলাইনগুলোয় আমাদের ফিরিয়ে নিয়েছেন সেগুলোকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে নির্মাণ করলেই। 'সাম্ভলা'য় আমরা এমন বেশ কয়েকটাই অল্টারনেট হিস্টরির টাইমলাইন দেখেছি। সম্রাট অশোক থেকে মিশর, অনেকখানেই গিয়েছে কাহিনী, এবং এই বিষয়টাই পাঠকেরা উপভোগ করেছেন বেশি।
এই বইয়ের অধিকাংশটা জুড়ে জাদুকররা থাকলেও, ম্যাজিক সিস্টেম দেখাননি লেখক। প্রথম বইয়ে যেটুকু ম্যাজিক এসেছে তাতে সফট ম্যাজিক সিস্টেম বলা যেতে পারে, আর সেটা দিয়েই যেভাবে একশন সিকোয়েন্স এবং ইত্যাদির প্রয়োজন প্রথম বইয়ে মিটে গেছে, তাতে পরে আর হার্ড ম্যাজিক ডেভেলপ করার সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।
কিছু অংশে জাদুর ক্ষমতা সাজাতে গিয়ে লেখক অনেকটাই 'সুপারহিরো ফ্যান্টাসি'-তে চলে গিয়েছিলেন। সেটা পাঠকের খুব একটা ভালো লাগেনি, কয়েকজন জানিয়েছেন সেটা। আসলে জাদু বা ম্যাজিকের প্রতিষ্ঠিত ধারণা অনুযায়ী, জাদু ব্যবহার করে আমরা এবিলিটিগুলো বাড়াব একে একে, যা আগে করতে পারতাম না তা করবো। বেশিরভাগ এমন গল্প পড়ে আমরা এটা মেনে নিতে এবং আশা করতে অভ্যস্ত হয়েছি। এখন, একটা স্কিল-সেট বা এবিলিটি নিয়ে জন্মানো এবং তা প্রয়োগ করতে পারাতেই সীমাবদ্ধ থাকা, এটা অনেকের চোখে লেগে থাকতে পারে, বিশেষত যেটা অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে 'এক্স-মেন ফার্স্ট ক্লাস' সিনেমার দলগঠনের সাথে মিল দেখতে পাওয়া।
একটা ব্যাপার 'অন্ধ জাদুকর'-কে 'সাম্ভালা' ট্রিলজির চেয়ে এগিয়ে রাখবে, তার গতি। বইটা সাম্ভালার একেকটা বইয়ের চেয়ে হালকা, দ্রুত গতির, সাসপেন্স ধরে রেখেছে শুরু থেকে শেষ অব্দি এবং পাঠক একই আবেশে একবারে বইটা পড়ে ফেলতে পারবে। লেখকের কাজ হিসেবে আমার ধারণা এটা সাম্ভালাকে ছাড়িয়ে যাবে, এখন দেখা যাক পরের খন্ডগুলো আমাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারে।
ফ্যান্টাসি জনরায় প্লট সিলেকশনে লেখক বরাবরই দারুন। মাঝে মাঝে অদরকারী, অনারম্বর কিছু বাক্য বাদ দিলে এই বইটা বেশ উপভোগ্য। এটার সিকুয়েলের অপেক্ষায় রইলাম..
শরীফুল ভাইয়ের সব বইই আমি গোগ্রাসে গিলি। এটাও সেরকমই অবস্থা। লিখা দেখে বুঝা গেছে যে সামনে সিকুয়েল আসবে। গল্পের বুনন ভাল ছিল। তাও মনে হল যে সিক্যুয়েলের জন্য ভাইয়া অনেক ইনফো ইচ্ছা করে দেননি। তাই একটু অতৃপ্ত রয়ে গেলাম
শরীফুল ভাইয়ের বই সুখপঠ্য। ট্রিলজির প্রথম বই হিসাবে মাত্র কাহিনী বিল্ডআপ হয়েছে। সে হিসাবে বেশ ভালো। যারা সাম্ভালা পড়েছেন তারা পরিচিত একটি ফ্লেয়ার পাবেন। সেই ধাঁচেই লেখা। ওভারঅল এক বসায় পড়ে ফেলাম মত বই।
রাতের অন্ধকারে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সালাম । নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে । জমির বুঝতে পারে জাদুবিদ্যা সালামের সহজাত ক্ষমতা । সে খবর দেয় শংকরকে, যে বহুদিন ধরেই এরকম কারো সন্ধানে ছিল! সালাম আবার পালায় । পালাতেই থাকে ।
মুরশেদ মিয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ । ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই আক্রান্ত হলেন পথে। বুঝতে পারছেন অনেকদিন পর আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার শত্রুপক্ষ। কিন্তু এতদিন পর কেন এই সক্রিয়তা? ওদের উদ্দেশ্য কী? দিল্লিতে তিনি ছিলেন এক গুপ্ত সংগঠনের সদস্য । অনেকদিন পর সেই গুপ্ত সংগঠনের একজন ঢাকায় পা রেখেছে । কিন্তু কেন?
ডঃ কামাল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক । খুঁজছেন তার বাবার আসল পরিচয় । যতই খুঁড়ছেন ততই গভীর হচ্ছে রহস্য ।
'মৃত্যুর মহান জাদুকর' পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে এই ঢাকায় । তাকে এবার রুখবে কে? ফ্যান্টাসি আর সাসপেন্সে পরিপূর্ণ শরীফুল হাসান’র ‘অন্ধ জাদুকর’ আপনাদের অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে । সেই জগতে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম ।
প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরি, পৃষ্ঠা : ২৪০, মূল্য: ৩২০৳
পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ
শরীফুল ভাইয়ের প্রথম পড়া বই ছিল সাম্ভালা সিরিজ৷ এক কথায় গোগ্রাসে গিলেছিলাম। লেখকের প্রতি অনেক দিনের আহবান ছিল ফ্যান্টাসি সিরিজ নিয়ে নতুন আঙ্গিকে ফিরে আসার৷ সেই কথা রাখতেই যেন ফিরে এলেন অন্ধ জাদুকরের জাদুর ঝাঁপি নিয়ে।
গল্পের বিল্ড আপ হিসাবে ধীরলয়ে সুন্দর ভাবে এগিয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত টেনেছে খুব৷ ট্রিলজির সিরিজের প্রথম বই হিসাবে বেশ ভাল৷ অনেক বড় পরিসরে লেখার প্রথম পর্ব হতাশ করেনি৷ নাগরিক ব্যস্ততার কারণে কোন বই একটানা পড়া হয় না৷ কোন গল্পের পর কোন গল্প ছিল ভাবতে গিয়ে খেঁই হারিয়েছিলাম বহুবার৷ হয়তো আমার পড়ার দুর্বলতার কারণে এই রকম হয়েছে বা লেখায় কোথাও সামান্য ঘাটতি ছিল। বইয়ের প্রধান চরিত্র কে ফোকাস কম করা হয়েছে৷ ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে দেখা যাবে বোধ হয়৷ মুরশিদ মিয়া, সালামের গল্প যেন দুই টাইম লাইনের বলে গেলেন লেখক৷ হয়তো গল্পের প্রয়োজনের তাদের গল্প শুরু করা দরকার ছিল। আমাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে চমক।
শরীফুল ভাইয়ের লেখা ভাল লাগার প্রধান কারণ বড্ড গুছানো৷ তার গল্প বলার ধরণটাও চমৎকার৷ ফ্যান্টাসি থেকে যখন সামাজিক জনরায় ঝাপ দিলেন তিনি একেবারেই মনে হয়নি তিনি এখানে প্রথম লিখছেন৷ নিজেকে ভেঙ্গে গড়ার খেলা প্রতিটা লেখকের মনের সুপ্ত বাসনা৷ সাম্ভালার পর তার সামাজিক উপন্যাস গুলোও গোগ্রাসে গিলেছি৷ তার লেখার প্রতি কোন অভিযোগ নেই৷
এবার বাতিঘরের বাইন্ডিং, কাগজের মান ওভার অল প্রোডাকসন ভাল হলেও তারা তাদের বানান ভুলের সেই আগের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে৷ আমরা পাঠকরাও এইটা কে বাতিঘর ঐতিহ্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছি৷ তারা তাদের ঐতিহ্যের প্রাচীরের ছিদ্রের প্রেমে যে ভাবে মজেছে সে কি আর একদিনে যাবে৷
শেষ কথা অন্ধ জাদুকরের সাথে সময়টা চমৎকার কেটেছে। একটা ভাল বই পড়ে ভাল মন্দ কিছু না লিখে গেলে পাঠকের কিছু দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যায়৷ অন্ধ জাদুকরের সফলতা কামনা করছি৷
ট্রিলজির শুরু। শরীফুল হাসান - বড় একটি প্লট নিয়ে খেলতে নেমেছেন। ট্রিলজির স্টার্টিং হিসেবে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ২৫০ পেজের বই হিসেবে - গল্প তেমন আগায় নি। শুরু থেকে বেশ ধীরগতির এবং মাঝপথে স্টোরি প্রগ্রেস তেমন না হওয়াতে বিরক্তি আসতে পারে। তাড়াহুড়ো করে কিছু আ্যকশন দিয়ে বইয়ের সমাপ্তি।
প্লটটা দারুণ। সাম্ভালার লেখকের থেকে আরেকবার দারুণ কিছু আশা করাই যায়। তবে ট্রিলজির প্রথম বই হিসেবে এক্সপেক্টেশন ছিল আরো বেশি।
সৃষ্টির শুরু থেকেই আলো আর অন্ধকারের একটা দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কিংবা বলা যায় ভালো কিংবা মন্দের দ্বন্দ্ব। তবে এটা ধ্রুব সত্য যে, অন্ধকার আছে বলেই আলোর এত দাম। পক্ষান্তরে মন্দ আছে বলেই ভালোকে আমরা ভালো বলে বুঝি।
আজ থেকে হাজার বছর আগেও জ্ঞান বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিল না। তখন মানুষ ধর্মের উপরও নির্ভর করতো না। নির্ভর করতো জাদুকরের উপর। গুলিস্তান মোড়ে জাদু দেখিয়ে টুপাইস কামানো লোক ঠকানো জাদুকর নয়। সত্যিকারের জাদুকর। এরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যেকোন বিপদ আপদে মানুষকে সতর্ক করতে পারতো। জ্ঞান বিজ্ঞান যতটাই উন্নত হয়েছে, মানুষের কাছে জাদুকরদের গ্রহণযোগ্যতা ততটাই কমেছে। বর্তমান ইন্টার্নেটের দুনিয়ায় জাদুবিদ্যাকে কেউ বিশ্বাস করতেই চাইবে না। আমি আবারো বলছি, হাতসাফাইয়ের জাদুর কথা আমি বলছি না। আমি বলছি সত্যিকারের জাদুর কথা।
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে সৃষ্টিকর্তা অসাধারণ কিছু ক্ষমতা দিয়ে পাঠান। অথবা এভাবেও বলা যেতে পারে, সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই ক্ষমতা দিয়ে পাঠান, কিন্তু খুব কম মানুষই নিজের সেই ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কেউ কেউ নিজের ক্ষমতা খুঁজে বের করতে পারেন, আবার কেউ নিজের মধ্যে অপার ক্ষমতা নিয়েও সারাজীবন পার করে দেন একজন সাধারণ মানুষ হিশেবে।
যখন থেকে জাদুকররা বুঝতে পারেন তাদের ক্ষমতার কথা, তখন তারা মানবজাতিকে সাহায্য করতে চায়। তারা সাহায্য নেয়, আবার একটা সময় দূরেও সরিয়ে দেয়। তখন ঐসব জাদুকররা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন। নিজেদের নিয়ে আলাদা একটা দল গঠন করেন। যখনই কোন মানুষ তার ভেতরে থাকা ক্ষমতা জানতে পারে তখনই তাদেরকে দলভুক্ত করে নেন। একটা সময় সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরে যান তারা, কোনোভাবেই চান না, মানুষ তাদের ক্ষমতা দেখে ফেলুক। কারণ ততদিনে মানুষ বুঝে গেছে, এইসব জাদুকরদের দিয়ে অনেক কিছু করানো যায়। মানুষ বুঝতে পারলেই যুদ্ধ বিগ্রহ বেড়ে যাবে, অস্ত্রের যুদ্ধের চেয়ে জাদুর যুদ্ধই হবে বেশি। আবার জাদুকররা নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধ করতে পারে। কার ক্ষমতা বেশি সেই প্রতিযোগিতায় নামতে পারে।
সেজন্যেই শুরু থেকেই একটা দল গঠন করা হয়। সেই দলের কাজ হলো নিজেদের অস্তিত্ব ফাঁস না করে মানবজাতির উপকার করা। তারা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মানবজাতির উপকার করে আসছেন। কিন্তু, ওই যে শুরুতেই বলেছি আলো আর অন্ধকারের কথা। তাই এখানেও আরেকটা দল তৈরী হয়ে যায়, যাদের কাজই হলো মানবজাতির এবং প্রথম দলের ক্ষতি করা।
আলো আর অন্ধকারের সেই গল্প নিয়েই অন্ধ জাদুকর বইটি। এখানে এত এত চরিত্র কিংবা ঘটনার ঘনঘটার কিছুই আমি উল্লেখ করিনি। উল্লেখ না করার কারণ হলো, বিচ্ছিন্নভাবে ওগুলো জানলেও আপনারা কিছু বুঝতে পারবেন না। কিশোর সালাম থেকে শুরু করে জমির ম্যাজিশিয়ান, সংকরলাল, মুরশেদ মিয়া, পাগলা কুদ্দুস, জাহাঙ্গীর জাদুকর, ফরিদ, বিজয় পান্ডে এরকম অনেক অনেক চরিত্র আছে। তাদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও কে ভালো আর কে খারাপ এরকম একটা ব্যাপার চলে আসবে, আর তা নিয়ে বলতে গেলেই আপনারা স্পয়লার খেয়ে যাবেন। তাই ওদিকে না গিয়ে লেখক নিজে যতটুকু প্রিভিউ দিয়েছেন তাই দিলাম।
রাতের অন্ধকারে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সালাম। নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে। জমির বুঝতে পারে জাদুবিদ্যা সালামের সহজাত ক্ষমতা। সে খবর দেয় শংকরকে, যে বহুদিন ধরেই এরকম কারো সন্ধানে ছিল! সালাম আবার পালায়। পালাতেই থাকে।
মুরশেদ মিয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ। ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই আক্রান্ত হলেন পথে। বুঝতে পারছেন অনেকদিন পর আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার শত্রুপক্ষ। কিন্তু এতদিন পর কেন এই সক্রিয়তা? ওদের উদ্দেশ্য কী? দিল্লিতে তিনি ছিলেন এক গুপ্ত সংগঠনের সদস্য। অনেকদিন পর সেই গুপ্ত সংগঠনের একজন ঢাকায় পা রেখেছে। কিন্তু কেন?
ডঃ কামাল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক। খুঁজছেন তার বাবার আসল পরিচয়। যতই খুঁড়ছেন ততই গভীর হচ্ছে রহস্য।
'মৃত্যুর মহান জাদুকর' পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে এই ঢাকায়। তাকে এবার রুখবে কে?
পড়ার সময় শুরু থেকেই পুরো কনসেপ্টটা একটা জনপ্রিয় এবং আমার প্রিয় মুভি সিরিজের সাথে বেশ ভালোভাবেই মিলে যাচ্ছিল। এটা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে অস্বস্তি কেটে গেছে। শুরুর কনসেপ্টটা মিলে গেলেও পরবর্তী গল্পে আর কোন মিল নেই। আর যেহেতু এটা একটা ট্রিলজির প্রথম বই, এর গল্পটাও বিশাল। অন্ধ জাদুকরকে বলা যায় বিশাল গল্পটার ভূমিকা মাত্র।
শুরু থেকেই টুকরো টুকরো করে অনেকগুলো ঘটনার বর্ণনা আছে। এই প্রথমবার কোনটার পরে কোনটা এটা হিশাব রাখতে বারবার গুলিয়ে ফেলছিলাম। বার বার একটা থেকে আরেকটায় জাম্প করতে করতে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। এটাকে লেখকের দুর্বলতা বলব, নাকি দীর্ঘ সময় পড়ায় বিরতি দেয়ায় আমার দুর্বলতা, বুঝতে পারছি না।
এর আগে লেখকের প্রথম ফ্যান্টাসি সাম্ভালা ট্রিলজি পড়ে লেখকের ভক্ত বনে গেছি। তারপর থেকে অনেকগুলো সামাজিক থ্রিলার লিখে গেছেন, খুবই আনন্দ নিয়ে পড়েছি প্রত্যেকটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সাম্ভালার মতই আরেকটা সিরিজের জন্য মনটা আকুপাকু করছিল। এতদিন বাদে আকুপাকু কমলো কিছুটা। আশা করছি খুব শীঘ্রই বাকিদুটো পড়ার সৌভাগ্য হবে।
আমি আমার প্রায় প্রত্যেকটা রিভিউতেই বাতিঘরের বইয়ের বাঁধাই নিয়ে সমালোচনা করেছি। চাইলেই আরেকটু ভালো করা যায় এরকমটা বলেছি। এবার আমি খুশি, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ভাই আমার কথা শুনেছেন। এবারের প্রোডাকশন আগেরগুলোর থেকে অনেক ভালো। তবে এর থেকে ভালো আশা করছি আমি। আশা করি একদিন তাও পাব।
বাঁধাই আর কাগজের মানে উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি বানানের ব্যাপারগুলো। প্রচুর ভুল বানান, টাইপিং মিস্টেক, লাইন স্পেসিং এর সমস্যা পড়ার সময় খুবই বিরক্ত করেছে।
শরীফুল হাসান ভাইয়ের যতগুলো বই বের হয়েছে তার মধ্যে সবথেকে ভালো প্রচ্ছদ অন্ধ জাদুকরের। এজন্য সজল ভাইকে ধন্যবাদ।
শরীফুল হাসান ভাই এর বইয়ের সব থেকে বেশি ভাল লাগে যেটা আমার তা হলো তিনি অনেক বিশাল একটা প্লটে সাজিয়ে ফেলেন..আর প্রতিটা ক্যারেক্টারই স্বতন্ত্র থাকে..সাম্ভালা পড়ার পর থেকেই ওনার ফ্যান হয়ে গেছি..খুব সুন্দর গতি তে কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক দুর্দান্ত ক্ষমতা আছে তার..আর সে ধারাতেই তিনি অন্ধ জাদুকর এগিয়ে নিতে পেরেছেন..তার বইয়ের অন্যতম সুন্দর দিক হচ্ছে তিনি পাঠক কে বিরক্ত হতে দেন না..অন্ধ জাদুকরের বেলায় ও সেটা একই..কাহিনি এগিয়ে গিয়েছে সুন্দর সাবলীল ভাবে..অনেক অনেক ক্যারেক্টার..সুন্দর বিল্ড আপ ক্যারেক্টার গুলো...তবে এই বইয়ে আমার কাছে একটাই দূর্বল মনে হয়েছে তা হলো বেশি দ্রুতই শেষ করে ফেলেছেন..তারাহুড়ার একটা ছাপ দেখা গেলো.. শেষের দিকেও কাহিনি টা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পর ঠিক মত গুছিয়ে নিতে পারেন নি..তবে তিনি পরের বইয়ে এটা ঠিক করে নিবেন এই ভরসা চোখ বুজেই করা যায়..ধন্যবাদ আবারও সুন্দর প্লটে একটা দুর্দান্ত থ্রিলার উপহার দেয়ার জন্যে...
এই পৃথিবীর হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে কত অদ্ভুত সব ঘটনার সাক্ষী হতে হয়। বিবর্তনের সূত্র ধরে পরিবর্তন এসেছে মানুষ থেকে মানুষে। জাতি থেকে জাতিতে। কত সভ্যতা হারিয়ে গেল, আবার গড়ে উঠল নতুন সম্রাজ্য। তারই মাঝে কিছু মানুষ ছিল, যারা সবার চেয়ে আলাদা। এই ভিন্নতার কারণেই একসময় তাদের ডাক পড়ে। নতুন এক জগতের সাথে পরিচয় ঘটে। যেই জগতে সে জানতে পারে তাদের এই পৃথিবীতে আগমন বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে। কী সেই উদ্দেশ্য? সত্যিই কি পৃথিবীতে আলাদা কোনো মানুষ থাকে, যাদের ক্ষমতা অন্য সব মানুষের চেয়ে আলাদা? কে জানে? প্রকৃতির খেয়াল যে অন্য রকম। সে তার রহস্য আড়ালে রাখতে পছন্দ করে।
ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারানো সালাম মানুষ মামার কাছে। এখনও যে খুব বড়ো হয়ে উঠেছে তা নয়। তবে এই ছোট্ট জীবনে মামীর অত্যাচার আর তিরস্কার সালামকে যেন এক অন্যরকম সত্তায় পরিণত করছে। খুব গভীর রাতে কোনো এক দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গে। মনে হয় সালাম আর সালামের মধ্যে নেই। এমনই এক দুঃস্বপ্নের রাতে নিজেকে অন্য সত্তায় আবিষ্কার করে এক দুর্ঘটনার পর বাড়ি ছাড়ে সালাম। চলে আসে ঢাকার রাজপথে। যেখানে তার কেউ নেই। ঘুরে ফিরে জায়গা হয় জমির ম্যাজিশিয়ানের কাছে। বদলে যায় সালামের জীবনের গল্প। সালাম কি সত্যিই সালাম? না অন্য কেউ? কেন তার পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল? কী চায় ওরা?
দিল্লির পথেঘাটে ঘুরে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরা মুরশেদ মিয়া মাঝে মাঝে হার���য়ে যান অতীতে। এক বিশেষ কাজের জন্য তাকে তৈরি করা হয়েছিল। বয়স হয়েছে, তবুও যেন নিজেকে সতেজ মনে হয়। এই শেষ বয়সে এসে মনে হচ্ছে এবার কিছু ঘটবে। যে কাজের জন্য তাদেরকে তৈরি করা হয়েছিল, সে সময় উপস্থিত। সে কি পারবে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে? শত্রুপক্ষ যে অনেক শক্তিশালী। তবে মুরশেদ মিয়াও কম যান না। তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাবেন-ই। তিনি অপেক্ষায় আছেন সেই দিনটার, আর যে বেশি দূরে নয়!
ড. আরেফিনকে মনে আছে? সাম্ভালার সেই অধ্যাপক যাকে নতুন এক রূপে আবিষ্কার করা যাবে এই যাত্রাপথে। নৃতত্ত্ব বিষয়ে অগাধ জ্ঞান থাকা সেই অধ্যাপক যেন নতুন এক চিন্তায় মত্ত। বাবার অতীত খুঁজতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করলেন এমন সব সত্য, যা যেন বিশ্বাস-ই হতে চায় না। তবে কি শেষ বয়সে এসে বাবার মতিভ্রম হয়েছি ছোট্ট এক ডায়েরি তো সেসব কথাই জানান দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে আরও কিছু মানুষের, যারা বাবার সাথেই ছিলেন। তাদের খুঁজে বের করতে বেরিয়ে গেলেন ড. আরেফিন। যে সত্য জন্যে পারবেন, বিশ্বাস করবেন তো?
গোপন এক আশ্রমে প্রস্তুতি চলছে ভবিষ্যতের। তৈরি হচ্ছে মানুষজন। কীসের প্রস্তুতি? একটু একটু করে ক্ষণ অতিবাহিত হচ্ছে, আর সময় ঘনিয়ে আসছে। বিশ্বাসঘাতকতার সাক্ষী বহন করে চলে এতদিন যেই সময়ের অপেক্ষা করেছিলেন, তার সময় উপস্থিত। এবার আসবেন তিনি। পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবেন। আসছেন তিনি। আসছেন, "মৃত্যুর মহান জাদুকর'।
দিল্লির গলিঘুপচি থেকে অবশেষে বের হতে হলো বৃদ্ধকে। এতদিনের লুকিয়ে থাকার দিন শেষ। এবার যে বের হতে হয়। শত্রুপক্ষ শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানতে প্রস্তুত। সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না। ঢাকার পথে ছুটতে হবে। কোনো বাঁধা তাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। ঢাকার বুকে যে শক্তির আবির্ভাব হয়েছে, প্রতিরোধ করতে তার যে যেতেই হবে। সে কি পারবে সময় মতো পৌঁছুতে? যদি বড্ড দেরি হয়ে যায়?
▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :
লেখক শরীফুল হাসানের "অন্ধ জাদুকর" বইটি ফ্যান্টাসি ঘরানার বই। জাদুবিদ্যা, আমাদের চেনা পরিচিত কিন্তু ভিন্ন এক জগতের গল্প বলেছেন লেখক। যেই জগতে আলো বা অন্ধকার পাশাপাশি থাকে। একই সাথে পথ চলে। যদি কখনো কেউ একটুও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখনই হয় বিপদ। প্রকৃতি ভারসাম্য নষ্ট পছন্দ করে না। তাই যখনই কোনো শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, বিপরীত শক্তি ঠিক তখনই এগিয়ে আসে। লড়াই চলে সমানে সমান। সাম্যাবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত চলে এ লড়াই।
মানব জাতির ইতিহাস, কিংবা পৃথিবীর ইতিহাস আমরা প্রায় সবাই জানি। কেমন হয়, যদি আমাদের জানার বাইরেও কিছু ঘটে? সবকিছু সবার জানতে হয় না। প্রকৃতি নিজেই নিজের রহস্য গোপন করে। মহেঞ্জোদারো সভ্যতা বা পিরামিডের যে ইতিহাস আমরা জানি, তা কি সত্যিই জানি? না-কি এর পেছনে গভীর কোনো আছে? কে জানে! এই পৃথিবীতে কত কিছুই তো অদ্ভুত ঘটে, তার কতটা আমরা জানি?
শরীফুল হাসান ভাইয়ের লেখনশৈলী সাবলীল। খুব বেশি ভারিক্কি ভাব আনার চেষ্টা তিনি করেন না। সাদামাটাভাবে গল্প বলে যান। আর এতেই দারুণ কিছুর অভিজ্ঞতা হয়। আমি বরাবরই বলি, লেখকের বর্ণনার খুব বড়ো ভক্ত আমি। এই বইতেও তিনি সেই ধারা অব্যাহত ছিল। যদিও মাঝের কিছু অংশের বর্ণনায় আড়ষ্ট ভাব ছিল। বিশেষ করে আক্রমণের দৃশ্যগুলোতে। কখনো তাড়াহুড়ো, আবার কখনো ধীর লেগেছে।
যদি বইটিকে তিনটি অংশ ভাগ করি, তাহলে প্রথম অংশের গতি আমার ঠিকঠাক লেগেছে। মাঝের অংশে গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। আবার শেষভাগে এসে গতি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লেখক বইটি লিখেছেন সূচনা পর্ব হিসেবে। এখানে বিভিন্ন মূল চরিত্রের অতীত উঠে এসেছে, গল্পের গাঁথুনি ঠিক করেছেন। একটা শক্ত ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক। খুব একটা গল্প এগোয়নি। যতটুকু ছিল, আমার কাছে ঠিকঠাক লেগেছে। তবে আরও কিছু প্রত্যাশা ছিল। হয়তো সব পরের বইয়ের জন্য কম রেখেছেন।
এখানে একটা বিষয় আকর্ষণীয় লেগেছে। শুরুর দিকে লেখক যে ঘটনার অবতারণা করেছিলেন, সেই ঘটনার ব্যাখ্যা অনেকক্ষণ পাওয়া যায়নি। আমিও ভাবছিলাম লেখক হয়তো ভুলে গেলেন কি না! সেই অদ্ভুত ঘটনার কিছুই নেই পরবর্তীতে। মনে হলো শুধু গল্পটাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য সেই ঘটনার সূত্রপাত। কিন্তু শেষে এসে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক। বিষয়টা ভালো লেগেছে। নাহলে মনের মধ্যে খচখচ করত। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছিলাম, সালাম যেখানেই যায় সেখানেই এক জাদুকরের দেখা পায়। বিষয়টা আমার কাছে কাকতালীয় মনে হয়েছিল। লেখক সেই ব্যাখ্যাটাও পরবর্তীতে দিয়েছেন। একটি ছোটো শব্দ উল্লেখ করেছেন, "নিয়তি"। সত্যিই তো! এই নিয়তির কারণেই তো কত কিছু করে ফেলা! নিয়তি যেখানে নিয়ে যাবে, ঠিক সেখানেই ছুটতে হবে। কিছু যে করার নেই এখানে
শরীফুল হাসানের আরও একটি বিষয় আমার দারুণ লাগে। তিনি চরিত্র নিয়ে বেশি কচকচানি করেন না। কিন্তু তবুও একটা চরিত্র কী অসাধারণভাবে ফুটে ওঠে! গল্প বলার মাধ্যমে এত সুন্দরভাবে চরিত্রগুলোর উপস্থাপন সচরাচর দেখা যায় না। ছোটো হোক বা, বড়ো সব চরিত্রই কেন প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। প্রয়োজনীয় চরিত্রগুলো টিকে থাকে। বাকিরা গল্পের প্রয়োজন মিটিয়ে হারিয়ে যায়। কখনোই মনে হয় না বাড়তি কোনো চরিত্র এসে অযথাই ভিড় করেছে।
▪️সম্পাদনা ও প্রচ্ছদ :
"অন্ধ জাদুকর" যেহেতু বাতিঘর প্রকাশনীর অনেক পুরনো বই, তাই বানান আর সম্পাদনা নিয়ে বিশেষ কিছু বললাম না। তবে শরীফুল হাসানের লেখায় কি/কী এর ভুল ব্যবহার লক্ষ্য করি প্রায় সময়। এই বিষয়টা ঠিক করে নেওয়া উচিত। নাহলে অর্থ বিভ্রাটের সুযোগ থাকে।
প্রচ্ছদটা ভালো লাগে। যেহেতু আমার হাতে বইটির নতুন মুদ্রণ আছে, বাঁধাই থেকে শুরু করে অন্যান্য কোয়ালিটি আগের চেয়ে ভালো।
▪️পরিশেষে, একটি ফ্যান্টাসি জনরার বইকে বাস্তব মনে করেন উপায় নেই। অনেক তথ্য থাকতে পারে, গল্পের প্রয়োজনে এসেছে; পুরোটাই কাল্পনিক। এই আলো আঁধারের খেলায় কল্পনা আর বাস্তব মিলেমিশে এক হয়ে যায়। কোনটা সত্য, আর কোনটা মিথ্যে বুঝতে বেগ পেতে হয়। তাই সাবধান, সত্যের আড়ালে থাকা মিথ্যের দিকে এগিয়ে গেলে জীবনের গল্প থেমে যেতে পারে।
বইটার পেছনে লেখক অনেক ব্রেইনওয়ার্ক করেছেন। তবে বইটা স্বয়ংসম্পূর্ণ না। পরের কিস্তির জন্যে অপেক্ষা পাঠককে বিরক্ত করতে পারে। আমাদের চেনাজানা জগতের ভেতরই আরেকটা ফ্যান্টাসি তৈরি করতে চেয়েছেন লেখক। সেজন্য তার পরিশ্রম অনেকাংশে সফল বলব। অতিপ্রাকৃত কাহিনী দিয়ে পাঠকের মনযোগ ধরে রাখতে পেরেছেন, এটা লেখকের কৃতিত্ব। সিকুয়াল এর অপেক্ষায় রইলাম।
১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে অন্ধ জাদুকর। বইটা ট্রিলজির প্রথম পর্ব জানার পরও শেষ করার পর কিছুক্ষণ থম মেরে রইলাম। আমি কনফিউজড। এই প্রথম একটা বইয়ের এন্টাগোনিস্ট এবং প্রোটাগনিস্ট আসলে কোন পক্ষ, সেটা বুঝতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পনের বছরের সালাম গ্রামের বাড়িতে এক কীর্তি করে পালায়। ঢাকা শহরে এসে পড়ে এক জাদুকরের খপ্পরে। রতনে রতন চেনে- এই প্রবাদকে সত্য প্রমাণিত করেই যেন জমির জাদুবিদ্যায় সালামের সহজাত ক্ষমতা বুঝতে পারে। এরপর লেখক একের পর এক পাঠকদের দিকে ছুঁড়ে দিতে থাকেন এই বইয়ের চরিত্র। মুরশেদ মিয়া, সালাম এবং কুদ্দুস- এই তিনটি চরিত্র ছাড়া বাকি চরিত্রদের বুঝতে খুব সমস্যা হয়েছে। বইটির আরও দুটো খণ্ড আসবে। সেজন্য এটা নিয়ে আর কিছু বলছি না। হয়ত লেখক দ্বিতীয় খণ্ডে চরিত্রগুলোর বিকাশ ঘটাবেন। তবে পরিচিতি হিসেবে অন্ধ জাদুকরের প্রথম পর্ব আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা ভালো লাগেনি।
এবার বলি ভালো লাগার বিষয়গুলোতে- ১) লেখক এখানে জাদুর মায়াবী এক জগত তৈরি করতে চেয়েছেন, যা আমাদের চর্মচক্ষুর আড়ালে থাকে। সেখানে ভালো আর মন্দের লড়াই সবসময়েই চলছে। এদেরকে নিয়েই অন্ধ জাদুকরের আখ্যান। ২) মুরশেদ মিয়া এবং সালাম- এই চরিত্র দুটোর প্রতি লেখক মনোযোগ দিয়েছেন শতভাগ। সেখানে তিনি সফল। ৩) কুদ্দুসের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর সালাম কিছু অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই জায়গার ডিটেইলিংগুলো ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে জমির ম্যাজিশিয়ান ও সালামের মানবিক দৃষ্টিকোণ। ৪) বইয়ের কাভার ভালো লেগেছে। সজল চৌধুরী ধন্যবাদের দাবিদার। বাঁধাই বেশ ভালো। টাইপো আছে তবে তুলনামূলকভাবে কম।
খারাপ লাগার কিছু বিষয়- ১) ডিটেইলিংগুলো কেমন যেন খাপছাড়া লেগেছে। ১৯৯০ সালের ঢাকা এই গল্পের প্রেক্ষাপট। আমার কাছে তৎকালীন ঢাকার বর্ণনা খুব একটা গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লাগেনি। লেখক এক জায়গায় সালামকে "সিএনজিতে" উঠিয়েছেন। তখন ঢাকা শহরে সিএনজি ছিল নাকি আমার জানা নেই। তবে পরবর্তীতে সিএনজি আবার বেবি ট্যাক্সি হয়ে গিয়েছে। শাহবাগ থেকে মিরপুরের ভাড়া চাওয়া হয়েছে ১৫০ টাকা। তখনকার সময়ের তুলনায় খুব বেশিই নয় কি? ২) ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুরো শহর তখন উত্তাল। মানছি এটা কোনো রাজনৈতিক উপন্যাস নয়। কিন্তু ঢাকার অবস্থা খুবই নাজুক। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে খুবই গরম অবস্থা। লেখক চাইলে এই সময়কার ডিটেইলিংগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে পারতেন। রিলেট করতে সুবিধে হতো, সাথে ইতিহাসেরও একটা সফর হয়ে যেত। এছাড়াও ত্রিশ, ষাট, আশির দশকেও লেখক পাঠকদের ঘুরিয়ে এনেছেন। লেখক সেদিকে যাননি। পুরোটাই ফ্যান্টাসি হিসেবে রাখতে চেয়েছেন। সেটা তিনি করতেই পারেন। পুরো অধিকার এবং স্বাধীনতা আছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগেনি। একটু বর্ণনা করা যেতেই পারত। ৩) ডা কামাল আরেফিন ২৭ বছর বয়সেই পিএইচডি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে ঢুকে গেলেন? খুব কম বয়স হয়ে গেল না? ৪) কিছু কিছু জায়গায় পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে মারভেল ইউনিভার্সের চরিত্রগুলোর বর্ণনা পড়ছি, বিশেষ করে এক্স-মেন। অ্যাঞ্জেল, স্পাইক, এদের কথাই তখন মনে পড়ছিল। লেখকের চরিত্রের কথা নয়। এটা আমার কাছে একটা মাইনাস পয়েন্ট।
শরীফুল হকের চমৎকার লেখনী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আশা করি ট্রিলজির পরের বইগুলোতে তিনি চমৎকারভাবে সবকিছুর উত্তর দেবেন। সালাম এবং মুরশেদ মিয়া কী করে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। শুভকামনা রইল...
তলোয়ারটা হতে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রইল সালাম। যতোই বৃদ্ধ হোক, একটু এদিক-সেদিক হলে আক্রমণ করতে দ্বিধা করবে না "তুমি আরো বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও", বৃদ্ধ বিড়বিড় করে খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন। সালাম তলোয়ারটা নামিয়ে রাখল। " কিসের যুদ্ধ? " "আলো আর অন্ধকারের" "আমরা কোন পক্ষের?" এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না বৃদ্ধ। তিনি সালামের কাধে হাত রাখলেন। " সবকিছুই ভারসম্য দরকার।প্রকৃতিতেও সেই ভারসাম্য দরকার। আলো আর অন্ধকার তাই পাশাপাশি থাকে।" "আমাকে কি করতে হবে?" "সেটা তুমি জানতে পারবে।প্রথম কাজ হবে নিজেকে বাচিয়ে রাখা" "কে আমাকে মারবে?? কেন মারবে?"
রাতের অন্ধকারে মামা বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকা আসে সালাম। নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে। জমির বুঝে যায় জাদুবিদ্যা সালামের রক্তে!! তাই খবর দেয় শংকর লালকে,যে কিনা সালামের মতো একজনকেই খুজছিল। কিন্তু সালাম শংকরের কাছ থেকেও পালিয়ে যায়!! কুদ্দুসের হাতে পড়ে সে, সেখান থেকে এক ভগ্ন মন্দিরে থাকা এক বৃদ্ধ জাদুকরের পাল্লায় পড়ে, বুঝতে পারে সালাম- এক গোলকধাঁধায় আটকা পড়েছে সে! সবাই তাকে খুজছে। কিন্তু কেন?? কে সে?? কি এমন আছে তার মধ্যে?? ময়মনসিংহের মুরশেদ মিয়া, বয়স সত্তরের দিকে। বয়স বেশি হলে তার গায়ে শক্তি তুলনাহীন,কোনো সাধারণ জাদুকর নন তিনি!! মুরশেদ মিয়া ঢাকা আসার পথে শিকার হলেন আক্রমণের। বুঝতে পারছেন পনের বছর আগের যে শক্তিকে তিনি পরাভূত করেছিলেন সেই শক্তি আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন?? এতদিন পর আবার সক্রিয় হলো কেন তারা?? দিল্লীতে এক গুপ্ত সংঘ ছিল, নাম " এলায়েন্স অব ম্যাজিক পিপল " সেই গুপ্ত সংগঠনের সদস্য ছিলেন সাতজন " বিশেষ মানুষ ", প্রকৃতির বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী তারা! আর মুরশেদ মিয়া তাদেরই একজন। সেই গুপ্ত সংঘের একজন সদস্য অনেক বছর পর ঢাকায় এসেছে ' বিশেষ একটা কাজে'। কিন্তু কেন?? কি সেই ' বিশেষ কাজ'?? ডঃ আরেফিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। খুজছেন তার বাবা সামসুল আরেফিনের পরিচয়!! খুজতে গিয়ে বাবার একটা নোটবুক হাতে আসে তার,নোটবুকের যত গভীরে যাচ্ছেন ততই বাড়ছে রহস্য!! কেচো খুড়তে শাপ বেরিয়ে আসছে যেন!!
" মৃত্যুর মহান জাদুকর" সভ্যতার শুরু থেক এই জাদুকর এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে টিকে আছে!! ধ্বংস আর বিপর্যয়ের প্রতীক এই মৃত্যুর মহান জাদুকর। দুই হাজার বছর আগে জেরুজালেমে দেখা যাওয়া এই জাদুকর আবার ফিরে আসে প্লেগ মহামারীর সময়!! আবার পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে সে। আর তার আগমন হতে যাচ্ছে এই ঢাকাতেই। তাকে রুখবে কে?? এই আলো আর আধারে যুদ্ধের ফলাফল কি খুবই ভয়ংকর হতে যাচ্ছে?? পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ উপন্যাসের বেশির ভাগ কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সালামকে ঘিরে, সেই সাথে মুরশেদ মিয়া কুদ্দুস শংকর আর ডঃ আরেফিনের উপস্থিতিতে উপন্যাসটি পেয়েছে পূর্নতা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ টেনে রেখেছে বইটি। একদম শেষ অংশে অন্ধ জাদুকরের পরিচয়টা আসলে অদ্ভুত রোমাঞ্চকর ছিল। কিন্তু সালামের পরিচয় টা আসলে সোজা মাথার নিউরণে ধাক্কা দেয়!! অসাধারণ অনুভূতি হয়েছে বইটি পড়ে!! বইটির দ্বিতীয় পর্ব ইতোমধ্যে পড়া শুরু করেও দিয়েছি