সেই কতকাল ধরেই 'পবিত্র ভুমি' হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটিকে নিয়ে চলে আসছে যুদ্ধ। কিন্তু কেন?
অগণিত মৃত্যুর কারণ এই জায়গাটিকে ঘিরে ইহুদী ও ইসলাম উভয় ধর্মেরই রয়েছে নিজ নিজ দাবি। গত শতাব্দীতে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিন আজ হয়ে গিয়েছে ইহুদীদের ইসরাইল। ঠিক এ জায়গাটাই কেন চাই? ইহুদীদের নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী জেরুজালেম ও এ অঞ্চলের ওপর তাদের ধর্মীয় দাবি কী? জায়োনিজমের উৎপত্তি হলো কীভাবে? তার চাইতেও বড় কথা, সত্যি সত্যি এ অঞ্চলের আদি নিবাসী কারা? মুসলিম জাতিকে কীভাবে দেখে ইহুদী ধর্ম? ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর আবির্ভাবের পর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁকে এবং ইসলাম ধর্মকে নিয়ে ইহুদী ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি কী? চূড়ান্ত শিখর থেকে কীভাবে পতন হয় ইহুদী জাতির? এরকম হাজারো প্রশ্ন অনেকেরই মনে ঘুরপাক খেয়ে থাকে। কিন্তু খুব সহজ ভাষায় এ বিষয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাঞ্চলভাবে উপস্থাপিত বইয়ের খুব অভাব বাংলা ভাষায়।
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার জন্য পাঠকদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইহুদী ধর্মের প্রাচীন সময়ে, হাজার হাজার বছর আগের মধ্যপ্রাচ্য আর মিসরের মরুপ্রান্তরে। একদম গোড়া থেকে ধীরে ধীরে এ বইতে তুলে ধরা হয়েছে ইসলাম, ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মের পৃথক পৃথক দৃষ্টিকোণ থেকে এ জাতির ইতিহাসকে, যে জাতি 'বনী ইসরাইল' নামেও পরিচিত। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ নয়, ইহুদীদের দ্বারা পবিত্র ভূমি দখলের আড়ালের বিশ্বাসটুকু জানতেও সাহায্য করবে এ বইটি।
Born in Bangladesh, Abdullah Ibn Mahmud passed his childhood in Dubai, the UAE, the tourists' heaven. Returning to his home country, he passed his intermediate from Science department in 2011 from Notre Dame College, Dhaka. After that, he started his B.Sc. in the top-most engineering university of the country, BUET (Bangladesh University of Engineering & Technology) in Electrical & Electronic Engineering (EEE). After obtaining B.Sc., he went on to pursue MBA in 2017 and finished the degree from the highest academic institution in the business line, IBA of Dhaka University.
He started his writing career during his undergrad life and earned huge popularity through his historical writings published in the Bangla version of the popular analyst platform of South Asia, Roar Global. His writings on Roar Bangla have accumulated over 3.6 million readers in the last two years alone.
Abdullah loves to read and impart knowledge to those who like easy-reads. He is one of the pioneers of the country who popularized the reading of non-fiction or history-based contents. His favorite topics include- myths, theological history, tech, and he totally adores Dan Brown & J. K. Rowling, having grown up reading their fictions, but making a career of non-fiction, mostly. His published works now total up to 6, with quite a few in the pipeline, including approved translation works.
শৈশবের গোড়ার ছয়টি বছর কেটেছে আরব আমিরাতের দুবাইতে। ২০১১ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করে আন্ডারগ্র্যাড শুরু করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল বিভাগে। ২০১৭ সালে বুয়েট থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
ভার্চুয়াল জগতে লেখালেখির সূচনা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঢোকার পর থেকে। বুয়েটে শেষ বর্ষে থাকাকালীন লেখা শুরু করেন রোর বাংলা প্ল্যাটফর্মে, যেখানে জনপ্রিয়তা পায় তার শতাধিক ফিচার, তার লেখাগুলো পঠিত হয় সাম্প্রতিক সময়েই প্রায় ৩৬ লক্ষ বার। ভালোবাসেন নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে; প্রযুক্তি আর ফিকশন ছাড়াও পছন্দের বিষয়- বৈশ্বিক ইতিহাস, মিথ এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব।
প্রকাশিত নন্দিত বইগুলোর মাঝে আছে- ইহুদী জাতির ইতিহাস, অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে, এলিরিন, দ্য প্রফেট, সিক্রেট মিশনস, ইত্যাদি।
আর খ্রিস্ট পরবর্তী ইতিহাস না পেয়ে যারপরনাই হতাশ আমি। খুবই আকাঙ্ক্ষা ছিলো এটা ভেবে যে Jew's under Islamic Civilisation ইতিহাসটা জানবো। কিন্তু সেটার জন্য অপেক্ষায় রাখলেন লেখক।
তারপরও বইটা অনেক তথ্যবহুল। অমুসলিমদের কাছে এটা আর পাঁচটা পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে ভিন্ন কিছু মনে হবেনা। কিন্তু মুসলিম হিসেবে এর মূল্যায়ন আমাকে আলাদাভাবে করতেই হবে।
১. ইহুদী জাতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় যেগুলো আগে কোথাও বিস্তারিত পাইনি। মোটামুটি এই একটা বই পড়লে ইহুদীদের সম্বন্ধে সলিড একটা ঐতিহাসিক আউটলাইন পেয়ে যাবেন।
২. একদম ইব্রাহিম (আ) থেকে শুরু করে ইসহাক (আ), ইয়াকুব (আ) হয়ে বনী ইসরাইলের উত্থান এবং পরবর্তী এডভেঞ্চারাস কাহিনী গুলো অধ্যায় আকারে সুন্দর করে দেওয়া আছে।
৩. বইটার কাভারটা সুন্দর লেগেছে। হাতে নিলে একটা ভাব আসে শরীরে (:p)
★খারাপ দিকঃ
১. রোর বাংলা তে আর্টিকেল হিসেবে যেভাবে প্রথম ১৭ টা অধ্যায় পাবলিশ হয়েছিলো (টোটাল চ্যাপ্টার ৩৮ টা, অনলাইনে প্রথম ১৭ টা বের হয়েছিলো) , ছাপার বইতে সেই ১৭ টা অধ্যায় কোনরকম সম্পাদনা/ ছুরি কাঁচি চালানো ছাড়াই উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অনলাইন ব্লগের আর্টিকেল আর ছাপার বই - দুটো জিনিস এক না। দুটো প্ল্যাটফর্মের লেখার ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে অনেক। কিছুটা সম্পাদনা করা উচিত ছিল। সম্পাদক সাহেব (নাকি লেখক নিজেই?) তাড়াহুড়ো করে বই ছাপিয়ে টাকা কামানোর ধান্দায় ছিলেন কিনা সেটা জানার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
২. অনেক জায়গাতেই বাক্যগঠন দুর্বল এবং অপরিপক্ক মনে হয়েছে। এই জিনিসটা চোখে লেগেছে বারবার। তাই উল্লেখ না করে পারলাম না।
৩. প্রচুর পরিমাণে বানান ভুল যেটা অনেক বেশি বিরক্তির উদ্রেক করেছে। প্রুফরিডিং এ মনোযোগ না দেয়ার লক্ষন পরিস্কার। এখানেও কি তাড়াহুড়ো করা হলো?
বই: ইহুদী জাতির ইতিহাস লেখক: আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ প্রকাশণী: ছায়াবীথি পৃষ্টা: ৩২০
কাহিনী সংক্ষেপ:
সেই কতকাল ধরেই পবিত্র ভুমি হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটিকে নিয়ে চলে আসছে যুদ্ধ। কিন্তু কেন? অগণিত মৃত্যুর কারণ এই জায়গাটিকে ঘিরে ইহুদী ও ইসলাম উভয় ধর্মেরই রয়েছে নিজ নিজ দাবি। গত শতাব্দীতে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিন আজ হয়ে গিয়েছে ইহুদীদের ইহুদীদের ইসরাইল। ঠিক এই জায়গাটাই কেন চাই? ইহুদীদের নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী জেরুজালেম ও এ অঞ্চলের উপর তাদের ধর্মীয় দাবি কী? জায়োনিজমের উৎপত্তি হলো কিভাবে? তার চাইতেও বড় কথা, সত্যি সত্যি এ অঞ্চলের আদি নিবাসী কারা? মুসলিম জাতিকে কীভাবে দেখে ইহুদী ধর্ম? ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আবির্ভাবের পর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁকে এবং ইসলাম ধর্মকে নিয়ে ইহুদী ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি কী? চূড়ান্ত শিখর থেকে কীভাবে পতন হয় ইহুদী জাতির? এরকম হাজারো প্রশ্ন অনেকেরই মনে ঘুরপার খেয়ে থাকে।
পাঠ্য প্রতিক্রিয়া:
ছোটবেলা থেকেই অনেকটা বাজে ধারনা নিয়েই আমরা বড় হয়েছি ইহুদি জাতির ব্যাপারে৷ যখন কোরআন ভালভাবে অর্থ সহ পড়া শুরু করলাম বনী ইসরাইলের মত একটা বুদ্ধিমান জাতির কথা জানতে পারলাম। মুসা(আঃ), দাঊদ(আঃ), সলোমান(আঃ) গল্প গুলো আমায় চুম্বকের মত টানতো৷ তবুও দিন শেষে যখন হুজুর বলতেন ওরা অভিশপ্ত তখন ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে সেন্টু খেয়ে তাদের তীব্র ঘৃণা করেছি৷ এছাড়া ইসরাইল ফিলিস্তিনের ইস্যু তো ছিলই৷
একটু বড় হবার পর যখন আরও তথ্য জ্ঞান গেদার করা শুরু করলাম তখন ভাবতে লাগলাম আচ্ছা এই রকম নগ্ন ঘৃণার কারণ কি? ওদের সম্পর্কে জানি৷ প্রথমেই ইউটিউভ ভিডিও অন্যান্য ডকুমেন্টশন দেখে যা বুঝতে পারলাম ধর্মীয় দিক থেকে ওদের সাথে আমাদের যে সাদৃশ পাওয়া যায় সেইটা খ্রিস্টানদের সাথে নেই৷ বনী ইসরাইল নিয়ে অনেক ডকুমেন্টরি ও আর্টিকেল পড়লেও বাংলা ভাষায় কোন ভাল বইয়ের অভাবে ভুগছিলাম৷
একদিন হঠাৎ রোয়ার বাংলায় ইহুদি জাতির ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আব্দুল্লাহ মাহমুদ ভাইয়ের লেখা আশা শুরু করলো। ১৭ পর্বের পর যখন আবার তাও থেমে গেল পেটে ব্যামো হওয়া শুরু করলো। কিন্তু তিনি বেশি দিন অপেক্ষা করালেন না৷ এবারের বইমেলায় যখন ছায়াবীথির স্টলে ইহুদি জাতি ইতিহাস ও অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে বই দুইটা দেখতে পেলাম সাত পাঁচ না ভেবে কিনে ফেললাম৷ এবার এই বই শেষে নিজের অনুভূতির কথা ব্যাখ্যা করা যাক।
প্রথমেই এইটা কোন ধর্মীয় বই নয়৷ তোরাহ, বাইবেল, কোরআনের আলোকে ইহুদি জাতির ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একটি ইতিহাসের বই পড়ার প্রয়াস নিয়ে পড়লে অনেক নতুন তথ্য জানতে পারবেন৷ লেখকের লেখার ভাষা এত প্রাণবন্ত এবং প্রাঞ্জল চুম্বকের মত একটানা পড়ে গিয়েছি কোন অভিযোগ ছাড়া৷
ইসরাইলের ১২ পুত্র দ্বারা গঠিত হয় বনী ইসরাইল নামক এক বুদ্ধিমান জাতী সত্ত্বা। ইহুদি মতবাদ অনুযায়ী ইয়াকুব(আঃ) এর আরেক নাম ইসরাইল(আঃ)৷ একদা তিনি বীরশেবা থেকে হারান মরুভূমি যাবার পথে সন্ধ্যার দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন মরুর বুকে৷ তখন তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। যা ইহুদি ইতিহাসে জ্যাকবস ল্যাডার ড্রীম নামে পরচিত। তিনি স্বপ্নে দেখলেন পৃথিবী থেকে একটি সিঁড়ি আকাশ ফুঁড়ে উপরে উঠে গেছে৷ সেখানে যাতায়ত করছে ফেরশতার দল। এই সময় আকাশ থেকে গমগম করে ঐশীবাণী আসলো। ঈশ্বর তাকে জানালেন তিনি যেখানে ঘুমিয়ে আছেন এই জমি তাকে দিবেন ঈশ্বর এরপর তার বংশধর ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবী ব্যাপী৷ সেই থেকেই প্রতিশ্রুতি ভূমির যাত্রা শুরু। ইসরাইলের ১২ পুত্র তৈরি করে ১২ গোত্র। এর মধ্যে ইউসুফ(আঃ) গোত্র এলিট হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই বংশ ধারা। এরপরের ইতিহাস তো আমাদের কোরআন পড়ার কারণে কমবেশি জানা আছে৷
তাই বেশি বলে পড়ার স্বাদ কে নষ্ট করতে চাই। এই গ্রন্থে যেমন ধর্মের আশ্রয় নিয়ে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন লেখক আবার মাঝে মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইতিহাসের। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের কথাই বা বাদ যাবে কেন৷ তবে সংবিদ্ধিবদ্ধ সর্তকিকরণ ইহা কোন ধর্মের বই নয়৷ তবে প্রচলিত ধর্ম নিয়ে জ্ঞান থাকলে বইটা পড়ে আনন্দ পাবেন নিশ্চিত। জানতে পারবেন নতুন কিছু৷
যেমন ইব্রাহিম(আঃ) এর তৃতীয় স্ত্রী'র নাম কেতুরা সে কথা কয়জন জানে। এরপর ফারাও জোসারের উজির ইমহোতেপ এর সাথে ইউসুফ(আঃ) এর অদ্ভূত মিলের কথা বাদ দেই কিভাবে৷ ধারনা করা এই দুই ব্যক্তি একই মানুষ হতে পারেন৷ সেই ধারনা সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে বইটি৷ এরপর কোরআনের ফারাও নিয়ে যে ধ্রুমজাল সে নিয়েও উত্তর দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। সে কি ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস, নাকি প্রথম সেটাই বা মারনেপতাহ ও বা বাদ যাবে কেন। দেখতে পারবেন মুদ্রার উপর পিঠ হিসাবে দাগান দেবতার পূজারি ফিলিস্তিনিদের। শুনবেন ফিলিস্তিনি দৈত্য গোলিয়াথের সাথে বাল্য কিং ডেভিড এর যুদ্ধের কাহিনী৷ সলোমান আর রাণী সেবার গল্প রোমান্টিসিজম জোগাবে অবশ্যই৷ এই গল্প শুনেই তো আমাদের বড় হওয়া৷
পুরা বইতে আমি চোখ বড় বড় করে খুঁজেও কোন মেজর ভুল পায়নি বা লেখার কোন খুঁত পায়নি৷ বেশ সাবলীল লেখা বলতে হবে। তবে পুরা বইয়ের শেষ চ্যাপ্টার গুলো ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভালো লাগেনি৷ মোহাম্মদ(সঃ) এর যুগের সাথে ইহুদিদের ইতিহাস ইন্টার কানেক্ট করতে পারছিলাম না৷ পড়ে মনে হচ্ছিলো কি দরকার ছিল লেখা নিখিলেশ৷ মনে হল এইটা যতটা না ইসলামের সময় ইহুদিদের ইতিহাস বলার চেষ্টা হয়েছে ততটা দেখানোর চেষ্টা হয়েছে ইসলাবি আর্বিভাবের পূর্বে আরবের সমাজ ব্যবস্থা। সেইটা নিয়ে আমি কমবেশি জানি তাই ইহুদিদের সাথে সম্পর্কটা রিলেট করতে পারলাম না৷
বইটা কি পড়ার মত? এক কথায় উত্তর অবশ্যই৷ ইহুদি জাতির ইতিহাস বইটি পড়ে আমি আনন্দ পেয়েছি৷ এই বই পড়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনের মূল সমস্যার শেকড়ের যেতে পেরেছি৷ আমাদের ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বৈরথের টাইম লাইনটা ১০০ বছরের ধরলে খুবই ভুল হবে৷ এই দ্বৈরথ যে ঐতিহাসিক৷ সেই খ্রিস্টপূর্ব হাজার বছর থেকে শুরু এই হেসেল এখনও টেনে যাচ্ছে এই দুই দেশ৷
সর্বশেষে আসি বইয়ের ওভার অল প্রোডাকশনের ব্যাপারে৷ প্রথমেই প্রচ্ছদটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে প্রচ্ছদ নিয়ে লেখকের ভাবনা। কাগজের মান থেকে বাইন্ডিং সবই ফাস্ট ক্লাশ৷ লেখকের জন্য শুভ কামনা রইলো পরবর্তী বইয়ের জন্য৷
নবী-রাসূলগণের মাঝে কুরআনে সর্বাধিকবার উচারিত হয়েছে হযরত মূসা আলাইহিসসালামের নাম। সেকারণেই তার নেতৃত্বাধীন জাতি ইসরাইলিদের ইতিহাস জানাটা খুব জরুরী। অনেক গল্প-ঘটনা-উপকথা খাপছাড়াভাবে জানা ছিলো। এই বইটি একটা যোগসূত্র টেনে দিলো। এত সূত্র থেকে পড়াশুনা করে এতটা সাবলীলভাবে বইটা লিখা হয়েছে যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
❛And We gave Moses the Scripture and made it a guidance for the Children of I s r ae l that you not take other than Me as Disposer of affairs. ----- Suraj Al-Isra 17:2.❜
বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ০.২% মানুষ যে বিশ্বাসের বা ধর্মের তারাই নাকি পুরো দুনিয়াকে নাচাচ্ছে! হাজার হাজার বছর পূর্বে তাদের আবির্ভাব। এরপর নানা কূলের পানি পার করে বর্তমান অবস্থা। হাজারো বছরের ইতিহাসের শুরু কোথায়? কেনই বা ক্ষুদ্র এই ধর্মাবলম্বীদের এত দাপট? হ্যাঁ, বলছিলাম ই হু দী দের কথা। বিশ্ব জনসংখ্যা ক্ষুদ্র ভাগের এই মানুষগুলো কী করে নানা দিকে অবদান রাখছে আর কেনই বা তাদের আচরণগুলো মন্দ না ভালো তার ব্যতিরেকে ক্ষমতায় আসীন বড়ো দেশগুলো তাদের সমর্থন করছে? এ এক বিশাল ইতিহাস। যার শুরু হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও সতেরশ বছর পূর্বে। হারান নামে এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলেন তিনি। সে স্বপ্নের থেকেই বলা যায় শুরু হয়েছিল ঘটনাবহুল এক ইতিহাসের। শুরু হয়েছিল ❛প্রতিশ্রুত ভূমি কিংবা প্রমিসড ল্যান্ড বা বলা যায় পবিত্র ভূমি❜ এর। আর স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিটি ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আ)। যাকে আমরা ই স রা ই ল (আ) নামেও চিনি। ই স রা ই ল (আ) এর পূর্বপুরুষ অর্থাৎ হযরত ইব্রাহিম (আ), হযরত ইসহাক (আ) এর বংশ পরম্পরা থেকেই এই ধারা এসেছে। এসেছে ❛ই হু দী❜ শব্দটি। শব্দটি যতটা না ধর্মপরিচয় তার থেকেও বেশি বংশ কিংবা জাতির পরিচয়। ই স রা ই ল (আ) থেকে কীভাবে বনী ই স রা ই ল বংশ এবং ১২ গোত্র এলো আর কেনই বা তারা ❛সেরা জাতি❜ হিসেবে অভিহিত ছিলেন পুরো ইতিহাসই বেশ চমকপ্রদ। মুসলিম, ই হু দী, খ্রিস্টান এই আব্রাহামিক ধর্মের আছে বেশ কিছু মিল। আবার আছে না ভিন্নতা, মতভেদ। অতি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্নভাবে প্রচার প্রসার হতে হতে আজকের এই তিন বিশ্বাস চলছে। তবে এর মূল কি এক? কুরআন, তাফসির, বাইবেল, মিদ্রাশ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যাখ্যা, মতানুসারে এই বিশাল ইতিহাসের আছে জানা অজানা অনেক দিক। আছে লোককথা সহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের বিশ্বাস। বহুল আলোচিত এই তিন ধর্মের ব্যাপারে এই তিন ধর্মই কেমন দৃষ্টিকোণ রাখে কীভাবে দেখে এই ব্যাপারগুলো বিস্তারিত পড়তে গেলে কোনো রোমাঞ্চকর যাত্রার থেকে কম মনে হয় না। প্রচলিত ধ্যান ধারনা এবং বিশ্বাসের বাইরে থেকেও সত্য উদঘাটন, নানা তথ্যের মধ্যে থেকে সম্ভাব্য এবং সর্বজনগগৃহীত সত্যগুলো অনেক সময়েই আছে আমাদের জানা তথ্যের একদম বিপরীত।
লেখাটা অনেক বড়ো হবে। আগেই মাফ চেয়ে নিলাম। উল্টো পাল্টা লেখাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন না হয় এড়িয়ে যাবেন।
পূর্বে বনী ই স রা ই ল কেমন ছিল? ঐ যে গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ইয়াকুব (আ) স্বপ্ন দেখেন, যা ❛জ্যাকব❜স ল্যাডার ড্রিম❜ নামে পরিচিত। সেখানে নাম তিনি রেখেছিলেন ❛বেথেল❜। আর বলেছিলেন এ জায়গায় তিনি একটি ইবাদতখানা নির্মাণ করবেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি পরিবার গঠন করেন এবং বারো পুত্রের জনক হোন। বলা বাহুল্য, যে এই বারো পুত্রের একজনই আমাদের নবী হযরত ইউসুফ (আ)। যে কিনা দাস থেকে মিসরের উজির পদে আসীন হয়েছিলেন। আর বিখ্যাত ইউসুফ-জুলেখার প্রেমকাহিনী কে না জানে! তবে জানার মাঝেও ফাঁক থাকে। শুনার মাঝেও সত্য মিথ্যে আর মূল ঘটনার চিকন এক সুতা আছে যেটা আমরা অনেক সময়েই দেখতে পাইনা। ইউসুফ-জুলেখার ঘটনাও তেমনই এক ইতিহাস। যাকে প্রেমকাহিনী বলে অতিরঞ্জিত করা হয়, প্রেমের আখ্যান হিসেবে যুগলের উদাহরণ দেয়া হয় সেটা পুরোটাই আসলে একপাক্ষিক প্রেমকাহিনী। কুরআন, বাইবেল বা ই হু দী বিশ্বাসমতে ঘটনা একেকভাবে লেখা থাকলেও মূল ঘটনা এমনই। জুলেখা তথা রাজকুমারী রাঈল স্বপ্ন দেখতেন অপরুপ দর্শন এক মিসরের উজিরকে। স্বপ্নেই তার প্রেমে পড়ে যান আর পিতাকে বলে যে করেই হোক মিসরের সেই উজিরকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বপ্নে দেখা সুদর্শন উজির এর বাস্তবে স্বামী হিসেবে পাওয়া সেই উজির কি এক? এখানেই ঘটনার বিশাল টুইস্ট! ইউসুফ (আ) পিতার প্রিয় সন্তান হওয়ায় বাকি ভাইদের ঈর্ষার কারণ হয়েছিলেন। এরপর ভাইয়েরা তাকে বিক্রি করে দেন বা কুয়ায় ফেলে দেন। ইতিহাস বলে নানা কথা। তবে সবাই একদিকে ঠিক বলে। শেষমেষ সুদর্শন ইউসুফ (আ) পৌঁছলেন মিসরে দাস হিসেবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা সুন্দর করে দিতে পারায় দাস থেকে সে মিসরের রাজার কাছের লোক হয়ে যান। এর মাঝে আছে সেই জুলেখার কাহিনি। যাকে স্বুনে দেখেছিলেন সেই তো এই সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু বিয়ে তো তিনি যাকে করেছেন সে ভিন্ন! এই ঘটনা পুরোটা জানতে হলে ইতিহাসের সমুদ্রে ডুব দিতে হবে। দাস থেকে উজির হওয়ার পর মিসরে তাঁর প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদিকে তিনি ফিরিয়ে আনেন তার ভাইদের। মিসরেই থেকে যান বনী ই স রা ই ল গোত্র নিয়ে। আচ্ছা মিসরের মিথলজি বা ইতিহাসে তবে কেন ইউসুফের (আ) নাম নেই? তিনি এত বিখ্যাত এবং সর্বজনবিদিত লোক ছিলেন। কোথাও না কোথাও তো তার নাম স্থান পাওয়ার কথা! একটু ইতিহাস, বিভিন্ন লেখা, আর তথ্য ঘেঁটে দেখলে এর কিছুটা উত্তর মেলে। মিসরের ইতিহাসে ❛ইমহোতেপ❜ পরিচিত নাম। তার উপস্থিতকাল, কার্যক্রমের সাথে আমাদের তাফসীর, এবং ইতিহাসবিদের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। তবে কি তিনিই সেই?
এরপর কালের বিবর্তনে বনী ই স রা ই লে র বংশধর হয়ে গেলো মিসরের নির্যাতিত দাস। কেন মিসররাজের ক্রোধের শিকার হয়েছিল ই হু দী জাতি? মিসর রাজ তথা ফা রাও দের অনাগ্রহের শিকার থেকে ই হু দী জাতির শুরু হয় নির্যাতন পর্ব। তারা দাস হিসেবে কাজ শুরু করে। কিন্তু আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ (আ) বলে গেছেন আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করবেন। দুরবস্থা দূর হবে। তবে কে আসবেন পরবর্তীতে তাদের ত্রাতা হিসেবে? মিসরে তখন ফা রা ও য়ে র আদেশে ই হু দী নবজাতকদের হ ত্যা র কাজ চলছে। আবার দাসের সংখ্যা কমে যাবে বিধায় নির্দিষ্ট বছর অন্তর করে মে রে ফেলা হতো নবজাতকদের। কিন্তু আল্লাহর লীলা বোঝা বড়ো দায়! যে বছর নবজাতক হ ত্যার বছর সে বছরই জন্মান আল্লাহর এক নবী। কথায় বলে, আল্লাহর মাল আল্লাহই রক্ষা করেন। যার আদেশে এই হ ত্যা কার্যক্রম চলছিল সেই ফা রা ও য়ের ঘরেই পালন হতে লাগলেন আল্লাহর প্রেরিত সেই শিশু নবী। হ্যাঁ, তার নাম হযরত মূসা (আ)। রাজপুত্র হিসেবে বড়ো হলেন তিনি। ঘটনাক্রমে মিসর থেকে তিনি সিনাই পর্বতে অবস���থান নেন মূসা (আ)। এরপর আবার ফারাওয়ের কাছে উপস্থিতি এবং এক আল্লাহর নিদর্শন দেখানো সহ নানা ঘটনার আবির্ভাব হয়। ই হু দী জাতিকে মিসর থেকে উদ্ধারের জন্য মূসা (আ) এবং তার ভাই হারুন (আ) আল্লাহর নির্দেশে কাজ শুরু করেন। মিসর ত্যাগের জন্য কথা দিয়েও তৎকালীন ফা রা ও নানাভাবে কথার খেলাপ করলে তাদের উপর অভিশাপ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। দশটি অভিশাপের কথা উল্লেখ আছে। আর এই সময়েই ঘটে বহুল আলোচিত সাগর ভাগের ঘটনাটি। কীভাবে লাঠির আঘাতে সাগর ভাগ হয় আর বনী ইস রা ই ল পার হয় বিশাল সাগর আর সাগরে ডুবে যায় ফা রা ও বাহিনী এই ঘটনা কমবেশি সবারই জানা। তবে এখানে প্রচলিত আর মূল ঘটনার নানা রকমফের আছে। যেমন, আমরা যাকে ফা রা ও বা ফে রা উন বলি যে কিনা মূসা (আ) নবীর আমলে সমুদ্রে বাহিনী সমেত ডুবে গেছিলেন সে আসলে কে? কারণ কুরআন, তাফসীর, ই হু দী মত মিলে আমরা জানি ❛ফা রা ও❜ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়। বরং এটি একটি পরিবারের পদবী। অর্থাৎ সাগরে কোন ফা রাও য়ের সলিল সমাধি হয়েছে সেটা এখনো অনেকটা ধোঁয়াশা বিষয়। মিসর থেকে মূসা (আ) তার জাতিকে মুক্ত করে নিয়ে গেলেন। এরপর পতিত হলেন মরুভূমিতে। কিন্তু হায়! যার জন্যে করলেন চুরি তারাই মূসাকে (আ) দোষারোপ করতে থাকলেন। মরুতে পানি খাবারের অভাবে তারা অতিষ্ঠ। নবী আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আল্লাহ তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলেন। জান্নাত থেকে এলো মান্না ও সালওয়া নামের খাবার। যা তারা ৪০ বছর খেয়েছিলেন। কিন্তু এই জাতিকে আল্লাহ্ যতোই দেন না কেন তাদের মন ভরে না। মূসা (আ) যখন তূর পর্বতে নবিত্ব গ্রহণ করছিলেন আর তাঁর উপর নাযিল হচ্ছিল তাওরাত সে সময় ই হু দী জাতি মেতে ওঠে দেব দেবীর পূজায়। শুরু হয় বাছুর পূজা। আল্লাহর বাণী নিয়ে ফিরে এসে যখন নবী এই হাল দেখেন তখন রেগে যান। আর আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিলেন ৪০ বছরের। তারা পবিত্র ভূমির খুব কাছে থেকেও যেতে পারবে না সেখানে। সময়ের ঘূর্ণনে বছর পেরিয়ে যায়। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছান দুই নবী, অর্থাৎ হযরত হারুন (আ) এবং হযরত মূসা (আ)। এরপর কে হবে এই জাতির পথপ্রদর্শক? এরপর এলেন হযরত ইউশা (আ)। আল্লাহর নির্দেশে তিনিও তার দায়িত্ব পালন করে গেলেন। ৪০ বছরের অভিশাপ শেষে আবার তারা বিভিন্ন নগরী, শহর হয় করে জর্ডান নদীর তীরে এসে পৌঁছল। আবারো সেই অলৌকিক ঘটনা। সুবিশাল নদী পার হলেন আর বিপরীত বাহিনীকে অবাক করে দিলেন। এরমধ্যে বলে রাখা ভালো, আল্লাহ্ তাদের দিয়েছিলেন ❛আর্ক অফ দ্য কভেন্যান্ট❜। বলা ছিল এই জিনিস বহন করতে থাকলে ই হু দী জাতি হবে অপরাজেয়। হয়েছিলও তাই। ধীরে ধীরে তারা পবিত্র ভূমি জে রু জা লে মের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তখন কেনান হিসেবেই পরিচিত ছিল তারা। বর্তমান ফি লি স্তিন কে আমরা যেমন দেখি সেই অতীতে কিন্তু তারা আল্লাহ ভীরু ছিল না। তারা ছিল পৌত্তলিক। ইতিহাস কেমন অদ্ভুত! প্রাচীনকালের সেই পৌত্তলিক জাতি আজ আল্লাহ্ ভীরু। সহ্য করছে অকথ্য নির্যাতন। তাও কাদের কাছে? সেই সেরা জাতি নামে পরিচিত হওয়াদের কাছেই। যদিও কালের পরিক্রমায় আমরা যাদের ❛বনী ই স রা ই ল❜ হিসেবে জানি তাদের সাথে বর্তমানের জাতির বিস্তর ফারাক। জে রুজা লে মকে ঘিরে রাখা বিশাল প্রাচীরভেদ করে কীভাবে ই হু দী জাতি তার দখল নেয় এবং সেখানে আল্লাহর বাণী প্রচার করে সেসব ঘটনা নিতান্তই শিহরণ জাগায়। এরমাঝেই আসে পবিত্র নগরীর বিশেষ স্থান, বিশেষ ইবাদতের স্থান। যার নাম ❛আল আকসা❜। তবে সবসময় ছবিতে আমরা যে সোনালী গম্বুজ ওয়ালা ছবিকে আল আকসা ভেবে ভুল করি সেটা ভিন্ন আরেক মসজিদ। যা, মূলত ❛বাইতুল মুকাদ্দাস❜ নামে পরিচিত। এখানেই আসে আমাদের আরেক নবী হযরত দাউদ (আ) তথা কিং ডেভিডের ইতিহাস। কীভাবে ফি লি স্তি নে র বিখ্যাত লড়াকুকে পরাজিত করে তিনি সে সময় আলোচনায় আসেন এবং ই হু দী জাতির অন্যতম বিখ্যাত রাজা হিসেবে উপনীত হোন তার ইতিহাস আব্রাহামিক ধর্মের তিন ক্ষেত্রেই বিভিন্ন আলোকে আলোচনা করা হয়েছে। এইযে এত বছর পেরিয়ে যাচ্ছে এত নবী আর রাজার আগমন হচ্ছে তারা কি সবাই আল্লাহর আদেশে চলেছেন? অর্থাৎ, ই হু দী জাতি কি বিচ্যুত হয়নি? উত্তর, হ্যাঁ হয়েছিল। কোনো না কোনো ভাবেই তারা কখনো পৌত্তলিকতার কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছিল। আবার তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যাই হোক, ইতিহাসে কিং ডেভিডের রাজত্বকাল বেশ আলোকিত এক সময়। তারপরই এসেছিলেন মিথ, কুরআন, তাফসীর, খ্রিস্টধর্ম মত আর অবশ্যই ই হু দী ব্যাখ্যার সেই বিখ্যাত রাজা। কিং সলোমন। সেবার রানী, কিং সলোমনের কাহিনি তো অজানা আছে এমন কেউ নেই। তবে এই ঘটনারও আছে নানা দিক। রাজা বা নবী সুলাইমান (আ) তথা সলোমন ছিলেন দাউদের পুত্র। ই হু দী ইতিহাসের সবথেকে ধনী রাজা। যার ছিল অলৌকিক ক্ষমতা। এই থেকেই আসে টেম্পল অফ সলোমনের কথা। যা দুইবার ধ্বংস হয়েছিল। আর ই হু দী বিশ্বাসমতে তাদের ❛মসীহ❜ এর আগমন হবে তৃতীয় টেম্পল নির্মাণের পর এবং যে কিনা জেরু জা লেম থেকে সারা বিশ্বের শাসন করবেন। কিং সলোমনের ঘটনাগুলো বেশ চমকপ্রদ। কীভাবে পুরো রাজ্যের প্রভাবশালী রাজা যে কিনা ন্যায় বিচার করতেন সে কীভাবে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে লাগলো আল্লাহর অভিশাপে। ভিন্নমত থাকলেও দেখা যায় কুরআনে কিছু ঘটনার উল্লেখ নেই। তবে আছে তাফসীরে। আবার কিছু ঘটনা একেবারেই প্রত্যাখ্যান করে দেয়া হচ্ছে। তবে যাই হোক সেই অতীতে কী ঘটেছিল তার সঠিক তথ্য আজ আমাদের জানার উপায় না থাকলেও আমরা সর্বাধিক স্বীকৃত মতকেই মোটামুটি সত্য বলে ধরে নেই। উইসডম অব সলোমন, লিজেন্ডস অব সলোমন এই ঘটনাগুলো নিয়ে আছে নানা মতভেদ। স্কলারদের মস্তিষ্কের ভালো ব্যায়াম হয়ে যায় এসব ঘটনার সুরাহা টানতে। উত্থানের পরের সময় আসে পতনের। ই সরা য়ে ল জাতির দিগ্বিজয়ী সময় পেরিয়ে এসেছিল পতনের সময়। সুলায়মানের পর তার পুত্র রাজা হলে তাকে মানতে নারাজ হয় ই স রা য়ে ল বাসী। এরপর ভাগ গিয়ে যায় গোত্র । কয়েক দশক বাদশাহ পরিবর্তন আর একেশ্বরবাদী মনোভাব বাদ দিয়ে শুরু হয় নানা ধরনের দেব দেবীর পূজা । এরপর আল্লাহ্ তাদের সঠিক পথে আনতে প্রেরণ করলেন নবী ইলিয়াস (আ) কে। দেবতার পূজা থেকে তাদের আল্লাহর পথে আনার দায়িত্ব পালন করলেন তিনি। এরপর আবার শুরু হলো ই সরা য়েলের পতন। তারা নির্বাসিত হলেন পারস্যে। কথিত ছিল ❛আর্ক অফ দ্য কভেন্যান্ট❜ যতদিন তাদের থাকবে তারা হবে অপরাজেয়। কিন্তু ইতিহাসের এক গলিতেই চুরি যায় বা হারিয়ে যায় মূসা, হারুন সহ তাদের বংশের কিছু দ্রব্য রাখা আর্কটি। ফলে শুরু হয় তাদের পতন। নির্বাসনকালেও আল্লাহ্ প্রেরণ করেন বিভিন্ন নবী। এদের মধ্যে উজাইর (আ) এর নাম আসে। এরপর যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে কাটাতে তারা পৌঁছায় ব্যবলিনে। সেখানে তাদের নবী হোন দানিয়েল (আ)। নানা পরীক্ষার মধ্যে পড়েন তিনি। এরপর রোমান শাসন, বাইজেন্টাইন শাসনে পদদলিত হতে হতে চলতে থাকে নানা লোক কথা। প্রফেসি তথা ঐশ্বরিক বাণী অনুযায়ী ই সরা য়ে ল জাতির ত্রাতা হিসেবে আসবেন একজন ❛মসীহ❜। তারা সে অপেক্ষায় থাকে। আর এরমধ্যেই অনেকেই আছে নিজেদের নবী বলে দাবি করেন। অনেকেই আবার কিছু অনুসারী জুটিয়ে ফেলেন। তাদের পরিণতি কী হয়েছিল? রোমান শাসকদের এবং ই হু দী ইমামদের গুণে (!!) তাদের স্থান হয়েছিল পরকালে। কিন্তু সময়টা তখন খ্রিস্টের জন্মের মাত্র তিন কি চার বছর আগের কথা! তাদের মাঝেই এক কাঠমিস্ত্রির উপস্থিতি হয়। কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি এই সেই ❛মসীহ❜! যে কিনা প্রায় দুশো কোটি মানুষকে তার অনুসারী বানিয়ে ফেলেছে। আর যাকে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বিশ্বাস করে সেই ❛প্রতিশ্রুত মসীহ❜ হিসেবে। কে বলুন তো!! উত্তরটা আপনার জানা।
আপনারা জানেন কি যার জন্মের হিসেবেই আজকের এই ইংরেজি সাল গণনা করা হয় সে নিজেই জন্ম��ছিলেন সে গণনা করা সালের আগে? হ্যাঁ ঠিক তাই। যীশু খ্রিস্ট, খ্রিস্ট ধর্মের প্রভু হিসেবে যে পরিচিত এবং প্রায় তিন ধর্মেই যার আলোচনা আছে তিনি হলেন হযরত ঈসা (আ)। যিনি বেথেলহেমের এক নক্ষত্র। তিনি জন্মেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৪ বা ৩ সালে। আর বর্তমানে যে দিনকে ক্রিসমাস তথা বড়দিন হিসেবে পালন করা হয় সেটা আদৌ নবী ঈসার (আ) আসল জন্ম তারিখ কি না এ বিষয়ে আছে মতভেদ। অনেক প্রমাণাদিই স্বীকার করে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশুর জন্ম নয়। বরং মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের কোনো এক সময়েই জন্মেছিলেন তিনি। ই হু দী জাতির ইতিহাসের প্রায় সমাপ্তি এখানেই। এখানে থেকেই শুরু হয়েছিল আব্রাহামিক আরেক ধর্মের। যে নিজেকে প্রেরিত সেই নবী হিসেবে দাবি করেছিলেন। বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন তিনিই আল্লাহর প্রেরিত নবী। কিন্তু তার পরিণতিও হয়েছিল করুণ। ক্রুশবিদ্ধ হয়ে তিনিও প্রাণ হারান। আর ইসলামী বিশ্বাস এবং কুরআন মতে তিনি সুরক্ষিত আছেন। যার আবির্ভাব ঘটবে আবার শেষ জামানায়। যে দমন করবে আল্লাহর বিরুদ্ধ শক্তির। বলাই বাহুল্য ই হু দী দে র! কী করে কুরআনে সবথেকে বেশি উচ্চারিত হওয়া নবী মূসা (আ) এর জাতির অধঃপতন আর কেনই বা তারা আজ বিশাল এক দ্বৈরথের মূল হিসেবে আছে? কালে কালে আল্লাহর বাণী ভুলে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা বানিয়ে নেয়াই কি তার কারণ?
বর্তমানের হট টপিক বা দুঃখজনক এক বিষয় হলো ই স রা য়েল- ফি লি স্তি ন সমস্যা। পবিত্র ভূমি, প্রতিশ্রুত ভূমি আদায় করতে বর্তমান জা য়ো নি স্ট বাদীরা যে র ক্ত ক্ষ য়ী ইতিহাসের তৈরি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তার শেষ তো নেই। তবে শুরু কোথায়? কেন এই দুই জাতি এত শত্রুতা বহন করে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। একসময় পৌত্তলিক ফি লি স্তি ন বাসী আল্লাহর বান্দা বনী ইস রাই লে র কাছে পরাজিত হয়েছিল এরপর কালক্রমে তারাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। আর সেই যুগ যুগ ধরে পবিত্র ভূমির নামে অগণিত নারী পুরুষ শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। যে জে নো সাইডের ব্যাপারে তাবৎ ক্ষমতাশীল মানুষ মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। এই শত্রুতার শুরুটা তো ছিল একেবারেই ভিন্ন ঘটনা! আচ্ছা মুসলিম বিশ্বের প্রেরিত পুরুষ তথা প্রবাদ পুরুষ কে ই হু দী ধর্মমতে কেমন চোখে দেখা হয় জানেন? বলছিলাম, শেষ নবী মেসেঞ্জার অফ গড মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর কথা। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় সতেরশ বছর আগের এবং জন্মের প্রায় ৫০০ বছর পরে জন্মানো আল্লাহর শেষ নবী মুসলিম বিশ্বের নেতা মুহাম্মদ ﷺ এর ব্যাপারে ই হু দী মতে আছে নানা ভিন্নতা। কেউ তাকে মানেই না। কেউ বলে মানলে মানা যায়। না মানলেও সমস্যা নেই। তবে কুরআন সুন্নাহ তাফসীর এবং ইতিহাসবিদের আলোকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ ছিলেন মুসলিম ধর্মের সেরা। যাকে অনুসরণ করে আসছে মুসলিম জাতি। তাঁর জন্মের জানা অজানা কাহিনি গুলো থেকে আরব বেদুইন, আরব তথা মক্কার সেই বিভিন্ন দেবীর পূজা করার কাহিনি এক বালক মুহাম্মদের ﷺ ভিন্ন এক ব্যক্তিত্বের ইতিহাস জানা যায়। হাজার বছর পেরিয়ে আব্রাহামিক ধর্মগুলো ভাগ হয়েছে। প্রেরিত হিসেবে মানছে ভিন্ন কাউকে। তবে তাদের মূল একজন। তবে কেন এই ভিন্নতা? এর ইতিহাসের আনাচে কানাচে জানতে হলে অবশ্যই শুধু চোখ না বুলিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে বইটি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
এতক্ষণ বিশাল এক হাবিজাবি লেখা লিখে শেষ করলাম। ভাবছেন নিজেই ইতিহাসের নিম্নমানের এক লেখা লিখে বসলাম নাকি? নাহ্। পড়া থেকে কিছু অংশ নিজের মতো বইয়ের আলোকে কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আনাড়ি লেখায়। বলছিলাম আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদের ই হু দী জাতির ইতিহাস সিরিজের বই ❝ই হু দী জাতির ইতিহাস❞ এর কথা। অর্থাৎ প্রথম বইটি। পরের বইটি ❛ইস রা য়ে লে র উত্থান পতন❜ হলেও পুরো ইতিহাস ভালো করে জানতে তথা ইয়াকুব (আ) থেকে ঈসা (আ) এর আগমনের আগ পর্যন্ত ঘটনাবলী এবং আগমনের পরে কী হয়েছিল সে সুবিশাল ইতিহাস জানতে এই দুই বইয়ের মাঝে পড়তে হবে ❛বেথেলহেমের নক্ষত্র খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস❜ বইটি। অবশেষে পড়ে শেষ করেছি ❝ই হু দী জাতির ইতিহাস❞। কিছু বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া, রিভিউ লেখা একটা দুঃসাধ্য, কঠিন কাজ। আমার কাছে এই বইটির বেলায় তাই মনে হয়েছে। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস লেখক ৩৮ অধ্যায়ে ৩২০ পাতায় ঠাঁই দিয়েছেন। বইটি গোগ্রাসে গেলার মতো হলেও রয়ে সয়ে পড়তে হয়। কারণ প্রচুর তথ্য, প্রচুর ইতিহাস, নাম, ইতিহাসের জানা অজানা আর যা জানতাম তার ভুল ঠিক এতকিছু হজম করতে গেলে হেঁচকি উঠে যাবে। আমি বেশ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বইটা পড়েছি। কিছু জানা বিষয় ছিল। অনেককিছু নতুন জেনেছি। আর কিছু বিষয় যা জানতাম সেটা ভুল দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছি। লেখক মূলত এই বইয়ের সতেরোটি অধ্যায় ব্লগে দিয়েছিলেন। এরপর বাকিটা বই আকারে এই বইতে একত্র করেছেন। ব্লগের লেখা পড়া না থাকায় আমার কাছে পুরো লেখাটাই নতুন। ব্লগের লেখাই সম্পূর্ণ দিয়েছেন নাকি সে বিষয়ে আমি অজ্ঞ। শেষ দুই বা তিন বছর ধরে আমি লেখকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখাগুলো অনুসরণ করি। এবং আমার আগ্রহের সাথে লেখকের লেখার বিষয় মিলে যাওয়ায় তার লেখা আমার বেশ পছন্দের। এই বইটিও সেই আগ্রহ থেকে সংগ্রহ করা। এই জাতি নিয়ে আগ্রহ বা যেমন অনুভূতি স্বাভাবিক থাকা উচিত আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। সে আগ্রহ থেকেই বইটা সংগ্রহ করা আর বিশাল এর জার্নির সাক্ষী হওয়া। আমার কাছে পুরো বইটা অসাধারণ লেগেছে। কীভাবে সেরা জাতি থেকে পতন হয়ে আজকের এই পর্যায়ে আসা এবং অন্যায়ভাবে এক নির্দিষ্ট জাতির উপর অকথ্য নি র্যাতন কারীর মাস্টারমাইন্ড হয়ে উঠলো তারা এই ইতিহাস শুরু থেকে জানতে পেরে আমি আসলেই অভিভূত। বিশেষ করে ফি লি স্তি ন জাতির পূর্ব অবস্থা আমি আসলেই জানতাম না। নিজ ভূমি থেকে নির্বাসনের ঘটনা থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোটামুটি জানা থাকলেও সে সুদূর অতীতের অনেক ইতিহাস আমার অজানা ছিল। লেখকের অনন্য সুন্দর লেখায় জানতে পেরেছি। প্রতিটা অধ্যায় যেভাবে যত্ন নিয়ে ইতিহাস, তাফসীর, কুরআন, বাইবেল সহ ই হু দী বিশ্বাসের আলোকে রেফারেন্স দিয়ে লেখক উপস্থাপন করেছেন তা সত্যিই পাঠক হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে। যেখানে ধর্মগ্রন্থ কিছু বলেনি সেখানে লোককথা থেকে শুরু করে বাতিল কোনো ইতিহাস কী বলছে সেসব ব্যাপারেও লেখক ধারনা দিয়েছেন। মোটামুটি ৩৬০° ভাবে ইতিহাসের নানা ঘটনা এবং তার ব্যাখ্যা লেখক এই বইতে দিয়েছেন। তবে শেষের চার কি পাঁচ অধ্যায় লেখক এত দ্রুত টেনেছেন আর আমিও রোলারকোস্টার রাইডের মতো গতিতে পড়েছি আর শিউরে উঠেছি। শেষের কয়েকটা অধ্যায় অতি দানবীয় দারুণ ছিল। বর্ণনার পাশাপাশি শতাধিক ছবি এবং ম্যাপের সাহায্য ছিল, যা ঘটনা বুঝতে সহায়তা করেছে। তবে এখানে কিছু বিষয় আমার একটু নাপসন লেগেছে। যেমন, কিছু ম্যাপের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক রঙয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ছবি তো সাদাকালো, সেখানে লাল দাগ নীল দাগ বোঝা সম্ভব না। হয়তো ব্লগের লেখার ছবির কথা উল্লেখ করেছেন। যেহেতু বইতে সাদাকালো ছবি দেখছি সেহেতু আরো স্পেসিফিক করা যেতো। এছাড়াও কিছু শব্দের ক্ষেত্রে অভ্র বিজয় কনভার্টে হয়তো ফোনেটিক ফর্ম চেঞ্জ হয়নি। তাই ❛ড়গর অরহড়❜ এমন দিয়ে গেছিল অনেক জায়গায় সেগুলোর পাশে হিব্রু লেখা ছিল বিধায় এর মূল অর্থ উদ্ধার করতে পারিনি। সম্পাদনার এই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর দেয়া যেতো।
তবে বাংলাভাষায় এত সুন্দর সাবলীলভাবে এই ইতিহাস দুই মলাটে প্রকাশ করার জন্য লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি পড়ার সময় ভাবছিলাম উনার উচিত ইসলামের ইতিহাসগুলো সোজা ভাষায় খন্ড আকারে প্রকাশ করা। সাবলীল লেখা, গল্পের মতো ইতিহাস বলে যাওয়ার দক্ষতায় হাজার বছরের কঠিন ইতিহাসও পড়তে কষ্ট হয়নি।
প্রচ্ছদ:
লেখক বইয়ের প্রচ্ছদের ব্যাপারে আলাদা একটা প্যারা লিখেছেন বলে প্রচ্ছদটা বেশ খুঁটিয়ে লেখকের বর্ণনার সাথে মিলিয়ে দেখেছি। প্রচ্ছদের ব্যাপারে যে কথা বলা উচিত সেটা এই বর্ণনা থেকে ধারনা করা যায়। প্রচ্ছদ টা অবশ্যই সুন্দর এবং অর্থবহ। প্রতিটা খুঁটিনাটি উপাদানই প্রচ্ছদের আলাদা অর্থ বহন করে।
আমার লেখাটি ফুরোলো কিন্তু ইতিহাসের গাছটি কি মুরোলো? ইতিহাস তো প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে��� পবিত্র ভূমি নিয়ে এই সংঘাত, আধিপত্য বিস্তারের শেষ কি নিকটে?
ইতিহাস আশ্রিত পুরাণ মূলত। অনেক শিশুসুলভ বাক্যগঠন আর অপরিপক্ব অনুচ্ছেদ সজ্জা। সার্বিকভাবে হঠকারী রকমের দ্রুততায় সম্পন্ন বোধ হয়েছে। ২ তারকা লেখক���র পাঠের অধ্যবসায় এবং প্রয়াসের জন্য।
ধারাবাহিকভাবে লেখা ব্লগ থেকে বইতে রূপান্তর করতে গিয়ে সম্পাদনার কাজটা আরও ভালো হওয়া জরুরি ছিল। পরবর্তী পর্বের ব্যাপারে ব্লগে যে আগ্রহ থাকে, বইতে পরবর্তী অধ্যায়ের ব্যাপারে একই আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই তৈরি করা সম্ভব না কারণ সেটা সাথে সাথেই পড়ে ফেলা যাচ্ছে। কাজেই "পরবর্তী অধ্যায়ে জানবো" জাতীয় কথাগুলো বিরক্তির উদ্রেক করে। বেশ কিছু বানান ভুল, মুদ্রন প্রমাদ ছিল। ছবিগুলো অস্পষ্ট অনেক ক্ষেত্রেই, আর একই মানুষ বা জায়গার নামের উচ্চারণ আলাদা জায়গায় আলাদা লেখা হয়েছে কয়েকবার।
এগুলো বাদ দিলে, বেশ ছিমছাম সুন্দর লেখা। এক টানেই পড়ে ফেলা যায়, ভালোও লাগে।
Great read, got to know a lot of unbelievable history! Thanks to the writer for fueling my interest about the history of Abrahamic religion even further. I would definitely recommend this book to anyone who is interested in the background of the Israel-Palestine issue as well.
খুবই ভালো বই। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের ন্যারাটিভের বাইরে গিয়ে অন্য ধর্মগুলো বিভিন্ন ঘটনাকে কীভাবে দেখে তার একটা দারুণ বাংলা ডকুমেন্ট এই বইটি। লেখক শুধুমাত্র ঘটনাগুলোকে সংকলন করেই ক্ষান্ত হননি; বরং বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে বইটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বইটি বাংলা ভাষার বেশ গুরুত্বপূর্ণ বই বলেই বোধ করি।
** Very good book. This book is a great Bengali document of how other religions see different events, especially going beyond the narrative of Islam. The author did not stop at just compiling the facts; Rather, he has taken the book to a unique height by referring to various scriptures. I think the book is very important in Bengali language.
এই বইটা মূলত ইহুদী জাতির খ্রিস্টপূর্ব ইতিহাস। বইটা ঠিক ইসলামিক বই না। নিরপেক্ষ একটা বই, যদিও ইহুদীদের মন্দ দিকটা এখানে স্পষ্ট। বিশেষ করে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে তাদের নির্মম আচরণ ও এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে সেটা ভালোভাবে বোঝা যায়।
যেটা ভালো লেগেছে, ইতিহাসের পাশাপাশি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ব্যাখ্যা করার জন্য 'প্রমাণিত ইতিহাস' অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইত্যাদির বাইরে গিয়ে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বিভিন্ন কিংবদন্তী এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি এসেছে কোরআনের উদ্ধৃতি এবং ইবনে কাসীরের বিভিন্ন বর্ণনা।
এই ইতিহাসগুলোর সবই জানতাম এমনিতে। কিন্তু প্রতিটা ঘটনার-ই ভিন্ন বর্ণনা আছে ইতিহাসে, সেগুলোর অনেক কিছু জানা ছিল না। যেমন, দাউদ ও জালুতের লড়াই যে ইতিহাসে ডেভিড ভার্সেস গোলিয়াথের লড়াই বলে খ্যাত, জানতাম না। জানতাম না মসজিদুল আকসা ও বাইতুল মুকাদ্দাস যে ভিন্ন, সে ব্যাপারটাও। এরকম জিনিসগুলো বিভিন্ন কিংবদন্তী, ওল্ড টোস্টামেন্ট, নিউ টোস্টামেন্ট এবং বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে নেওয়ায় দারুণভাবে এসেছে।
বইটা পড়ার পরে একটু আফসোস থাকবে, এর পরে কী হলো, সেটা জানার জন্য। পরবর্তী পর্ব আসবে, এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এমনিতে, ইহুদীদের পরবর্তী গল্পটা সংক্ষেপে জানা যাবে 'দ্য কিংডম অব আউটসাইডার' বই থেকে, যদিও এই বইয়ের ফ্লেভার পাওয়া যাবে না। সেটা আশা করে লাভও নেই অবশ্য।
রেটিং ৪.৫ তারকা, সেটাই ৪ হিসেবে দিলাম। কিছু জায়গায় আরো ভালো এডিটিং করা দরকার ছিল। এক-দুটো জায়গা খাপছাড়া লেগেছে বর্ণনায়। যেমন, মূসার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা যে অধ্যায়ে আছে, সেখানে খাপছাড়া অংশ আছে কিছু। কিছু অধ্যায়ে আবার আগের কোনো অধ্যায়ের ঘটনা আসলে, টেনে কপি করে পেস্ট করে দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায়ও এডিটিং-এর দুর্বলতা রয়ে গেছে খানিকটা। আবার কিছু অধ্যায়ে প্রত্যাশা যেভাবে বিল্ড করা হয়েছে, অধ্যায়ের শেষ সেটা পূর্ণ করতে পারেনি। সমস্যাটা বর্ণনার না, সমস্যাটা হচ্ছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আশা দেওয়া হয়েছে কিছু অধ্যায়ের শুরুতে। যিশু বা ঈসা (আঃ) কে নিয়ে বর্ণনা অতটা নেই, আবার পাঠককে আগ্রহী করার জন্য অযথা শেষের ২-৩ অধ্যায় আছে রাসুল (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে। দরকার ছিল না এটা করার। ক্লিফ হ্যাঙ্গার বুঝেছি, তবু এটা প্রেফারেবল না। স্টিল, আই এম নাউ রিডিং সীরাতে ইবনে হিশাম ফর দিস। সেজন্য একই সঙ্গে লেখক ধন্যবাদও পাবেন।
সবমিলিয়ে এই হচ্ছে ইহুদী জাতির ইতিহাস। যদি প্রাচীন ইতিহাস জানার আগ্রহ থাকে, হাইলি রেকমেন্ডেড।
বইটির নাম থেকেই আসলে কন্টেন্ট সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা চলে আসে৷ ইহুদী জাতির জন্ম থেকে শুরু করে যীশু খ্রিস্টের জন্ম পর্যন্ত বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে৷ ইহুদী, খ্রিস্টান, ইসলাম - তিনটি ধর্মেরই সোর্স থেকে উদারভাবে রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে৷ এক্ষেত্রে একটি সুবিধা হয়েছে, তিনটি ধর্মই আব্রাহামিক হওয়ায় মূল ঘটনাপ্রবাহে তেমন কোন বিরোধ নেই৷ এর বাইরে বর্ণনাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে এবং ঘটনা পরম্পরার মাঝে যোগসূত্র তৈরি করতে সাহায্য করেছে ঐতিহাসিকদের মতামত, প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ও বিভিন্ন প্যাপিরাসে লিখিত ইতিহাস৷
ব্যক্তিগতভাবে কুরআন-হাদীস ও ইসলামি বইপুস্তক থেকে নবীদের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে জানা থাকায় পড়তে আরও ভালো লেগেছে৷ একটি ঘটনার সাথে অন্য ঘটনার সম্পর্ক এবং কোন নবীর পরে কোন নবী এসেছিলেন, তাদের সাথে ইহুদী তথা বনী ইসরাইলের সম্পর্ক কেমন ছিলো তা বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে৷ মোট ৩৮টি অধ্যায়ের মধ্যে ৩২টি অধ্যায় জুড়ে ইহুদীদের উত্থান পতনের ধারাবাহিক ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি অধ্যায়ে বাইতুল মুকাদ্দাস ও মাসজিদুল আকসার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে৷ অধ্যায়টি পড়ে নিঃসন্দেহে বেশ কিছু ভুল ধারণার অবসান হবে৷ খ্রিস্টের জন্মের পরবর্তী দু'হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে বইটির সিক্যুয়েলে আলোচনা করা হবে৷ পরবর্তী দু'টি অধ্যায়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ও ইহুদীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে, যা বর্তমান দ্বন্দ্ব সংঘাতের স্বরূপ বুঝতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে৷ তবে পুরোপুরি জানতে হলে পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষা করতে হবে৷
শেষ চারটি অধ্যায়ে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর জন্ম, শৈশব-কৈশর ও তারুণ্যের কিছু ঘটনাবলী আলোচনা করা হয়েছে৷ কেননা এখানেও বিচ্ছিন্নভাবে তৎকালীন আরব ইহুদীদের সংশ্লিষ্ট কিছু আলোচনা রয়েছে৷ রাসূল (সা) এর জীবনী নিয়েও লেখকের লেখার আগ্রহ রয়েছে৷ তবে সেটি পরবর্তী বই��ে ইহুদীদের ইতিহাসের বাকি অংশের সাথে যতটুকু সংশ্লিষ্ট ততটুকুই নাকি তাঁর জীবনী নিয়ে আলাদা বই হবে সেটি আমার কাছে পরিস্কার হয় নি৷
বইটি যদিও ধর্মগ্রন্থ না, তবুও খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা ধর্মীয় বইয়ের আমেজ চলে আসে৷ সমালোচনার ক্ষেত্রে বানান ও যতি চিহ্নের ব্যবহারে অসচেতনতার কঠোর সমালোচনা করছি৷ তবে ঘটনাপ্রধান লেখা হওয়ায় পড়তে গিয়ে খুব একটা হোঁচট খেতে হয় নি৷ ২৮তম অধ্যায়ে (জেরুজালেম ধ্বংসের ভবিষ্যৎবাণী) বাইবেল থেকে দেড় পৃষ্ঠার বেশ বড় একটা উদ্ধৃতি রয়েছে, যার আগামাথা কিছুই বুঝি নি৷ যতটুকু বুঝেছি সেটাও তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নি যার জন্য কাঠখোট্টা মূল উদ্ধৃতি উল্লেখ করা লাগবে৷ সেটা কীভাবে জেরুজালেম ধ্বংসের ভবিষ্যৎবাণী হলো বুঝি নি৷ সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে, অনেক নতুন জিনিস জানতে পেরেছি, কিছু ভুল ধারণারও অবসান হয়েছে৷ আর হ্যাঁ, অবশ্যই পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায়৷ ৪.২৫/৫৷
ইহুদিদের আদি ইতিহাস জানার জন্য বেশ তথ্যবহুল বই। বইয়ের বিষয়গুলোয় বৈচিত্র্য আছে। শুধু কুরআন, হাদিস, তাফসির কিংবা তানাখ-তালমুদই নয়, লেখক বিভিন্ন উপকথার রেফারেন্সও টেনেছেন। মোটকথা, সুখপাঠ্য ছিল। এই বইয়ে ইসা আ. পর্যন্ত ইতিহাস দেওয়া ছিল। পরবর্তী খণ্ডে, ইসা আ. থেকে পরবর্তী সময়ের ইতিহাস পাবার আশা করছি। কাগজের মান ভাল ছিল, প্রচ্ছদও গুঢ়ার্থে তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু প্রচ্ছদে আরেকটু একটু শার্পনেস কাম্য। কেমন যেন, ১৪৪ পিক্সেলের মত লাগে!
গুগল বলছে ২০২৩ সালের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুয়ায়ী পৃথিবীতে ইহুদী ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৬ মিলিয়ন তথা ১ কোটি ৬০ লাখ। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২%। এদিকে আমরা যদি বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য নোবেল বিজয়ীদের তালিকার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই সেখানের প্রায় ২০% বিজয়ী ইহুদী। এমন অল্প সংখ্যক জাতি বা ধর্মের মানুষদের মধ্যে এতো প্রতিভাবান মানুষ কেনো? এই প্রশ্নটা করেছিলাম আমার এক আত্মীয়কে, যিনি একজন মাওলান। উনি জবাব দিয়েছিলেন, কারন তারা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বেহেশতের খাবার খেয়েছে! এরপর মাথায় আরো কিছু প্রশ্ন জন্ম নেয় ইহুদীদেরকে নিয়ে। কেনো এই জাতিটাকেই আমাদের পবিত্র কোরআনে মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে ঘোষনা করার পর তাদেরকে আবার অভিশপ্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে? কেনো হিটলারের মতো বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে শুধুমাত্র এই একটা জাতির উপর সবাই আঘাত করতে চেয়েছে? ফিলিস্তিন নিয়েই বা এতো কাড়াকাড়ি কেনো? আর এই সবকিছুর উত্তর বাংলায় জানার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের এই বইটার বিকল্প চোখে পড়েনি আমার।
শুরুতেই বলে নেই বেশ লম্বা পোস্ট হতে যাচ্ছে। যাদের ইতিহাস, বিশেষ করে ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ নেই তারা এড়িয়ে যাবেন দয়া করে। এই ধরণের বইয়ের আসলে রিভিউ হয় না। আমি শুধুমাত্র পুরো বইয়ের বিভিন্ন কন্টেন্টের গল্পগুলো সম্পর্কে একদম মূল কাহিনীর কিছু অংশ জানিয়ে যাবো। এর বাইরেও বইয়ে আরো অনেক কিছু আছে, যেগুলো বিস্তারিত জানতে চাইলে বইটা পড়ার বিকল্প নেই। আর লেখক এই বইটা লেখার ক্ষেত্রে ৩টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন, বাইবেল এবং তাওরাতের পাশাপাশি বিভিন্ন তাফসির, মিদ্রাশ, লোককাহিনীর আশ্রয় নিয়েছেন রেফারেন্স হিসাবে। যেগুলো প্রতিটা কাহিনীর সাথে সাথেই জানিয়েও দিয়েছেন কোন অংশটুকু কোন জায়গা থেকে লিখেছেন। এমনকি যেসব ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত সত্যের ইতিহাস পেয়েছেন, সেগুলাও উল্লেখ করেছেন।
দুই খন্ডে প্রকাশিত এই সিরিজটার নাম "পবিত্র ভূমির ইতিহাস"। এই রিভিউর বই তথা প্রথম খন্ডে আলোচনা করা হয়েছে যীশু খ্রিস্টের জন্মের আগ পর্যন্ত ইহুদি জাতির ইতিহাস নিয়ে।
বইয়ের শুরুতে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় 'ইহুদী' শব্দের সাথে। কিভাবে ইহুদী থেকে ইংরেজিতে Jew শব্দ এলো তা হিব্রু, আরবী এবং গ্রীক শব্দের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। ইহুদী বলতে আমরা ধর্মীয় পরিচয় বুঝলেও এটা আসলে একটি জাতিগত পরিচয়৷ ইহুদীদের মাঝে কেউ নাস্তিক হলেও তাই তাকে 'ইহুদী' হিসাবেই সম্বোধন করা হবে।
একেশ্বরবাদের প্রচারক ইব্রাহিম (আঃ) এর দুই পুত্র ছিলেন ইসমাইল (আঃ) এবং আইজ্যাক তথা ইসহাক (আঃ)। ধর্মীয় ইতিহাস অল্প বিস্তর পড়ে যা বুঝলাম, এই দুই পুত্রের বংশধরদের থেকেই মূলত ইহুদী এবং মুসলিম নামের দুই ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে। ইসমাইল (আঃ) হয়ে আমাদের নবীজী (সাঃ) এর জন্ম অনেক অনেক পরে হয়েছে। এই বইটায় অপর পুত্র ইসহাক (আঃ) এর বংশ থেকে শুরু হওয়া ইহুদী জাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইসহাক (আঃ) এর ছিলো দুই পুত্র ঈস এবং ইয়াকুব তথা জ্যাকব।
তাওরাতে বর্ণিত এক ঘটনা থেকে জানা যায়, কিছু কারনে পিতা ইসহাক (আঃ) পুত্র ইয়াকুব (আঃ) এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এতে করে সেই পুত্র তৎকালীন 'বীরশেবা' অঞ্চল থেকে বের হয়ে 'হারান' নামের অঞ্চলের দিকে রওনা করেন। পথিমধ্যে এক সন্ধ্যায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখেন যে পৃথিবী থেকে একটা সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে, যেটা দিয়ে আল্লাহর ফেরেশতারা উঠানামা করছে। এই স্বপ্নে আল্লাহ তাঁকে জানান যেখানে তিনি শুয়ে আছেন সেই ভূমি তিনি তাঁকে এবং তার বংশধরদেরকে দিবেন। আর এই স্বপ্ন এবং আল্লাহর দেয়া কথা অনুসারেই হাজার হাজার বছর পরের আজকের এই পৃথিবীতেও ইহুদীরা ফিলিস্তিনকে নিজেদের কব্জায় নেয়ার জন্য রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছে। কারন তাদের মতে এটা তাদের "প্রমিজড ল্যান্ড"। আর কথাগুলো কোরআনেও রয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি আসলেই ফিলিস্তিনদের সেখানে মার খাওয়াটা যৌক্তিক? এই স্বপ্নের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে হাজার হাজার বছর, আর সেই সময়ে ঘটেছে আরো অনেক অনেক কাহিনী। মূলত বইতে হাজার বছরের এই ইতিহাসটাই তুলে এনেছেন লেখক। প্রশ্নের উত্তরের ভারটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের চিন্তাভাবনার উপর।
যাইই হোক উপরের তথ্যগুলো আমি এই বই থেকেই জেনেছি। আরো জেনেছি কিভাবে ইয়াকুব (আঃ) এর নাম ইসরাইল (আঃ) দেয়া হয় আর সেখান থেকেই আজকের ইসরাইল রাজ্যের নামকরন। এই ফাঁকে বলে রাখি হিব্রু ভাষায় ইসরাইল শব্দের আক্ষরিক অর্থ "আল্লাহর জয় হয়"। ইন্টারেস্টিং না? আল্লাহর জয়ের জন্য আল্লাহর বান্দাদেরকেই এখন মারা হচ্ছে! পুরো পৃথিবীটা যে কিভাবে ধর্মের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে তা ভেবে আসলে অবাক লাগে।
পরবর্তী তথ্যে যাই, জ্যাকব তথা ইয়াকুব তথা ইসরাইল (আঃ) বিয়ের ঘটনা জানতে পারি আমরা। এটাও জানতে পারি উনার দুই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া ১২ পুত্র থেকে যে বংশধারা বের হয়েছে, তাদেরকেই একত্রে বনী ইসরাইল জাতি বলা হয়। পবিত্র কোরআনে যাদের কথা বারবার উঠে এসেছে।
এরপর এই ১২ পুত্রের এক পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) কিভাবে নিজের পরিবার থেকে হারিয়ে গেলেন আর দাস হিসাবে বিক্রি হয়ে গেলেন প্রাচীন মিশরের ফারাওয়ের কাছে, কিভাবে জন্ম নিলো জগদ্বিখ্যাত ইউসুফ জুলেখার প্রেম কাহিনী, কিভাবে ত��নি রাজবন্দী থেকে মিশরের সবচেয়ে প্রভাবশালী উজির হলেন, কিভাবে উনার মাধ্যমে বনি ইসরাইলের সকল বংশধরেরা মিশরে গিয়ে ঠাঁই পায় তা উঠে এসেছে এই বইয়ে। যথারীতি আলাদা আলাদা ধর্মগ্রন্থ থেকে বিভিন্ন সূত্র মিলিয়ে দূর্দান্তভাবে সবগুলো ঘটনা সাজিয়েছেন লেখক। পাশাপাশি আশ্রয় নিয়েছেন কিছু তাফসির, লোককাহিনীরও।
একটা ব্যাপার অবশ্য আমার বেশ অদ্ভুত লেগেছে। প্রাচীন মিশরের এতো এতো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হয়েছে, অথচ কোথাও ইউসুফ (আঃ) এর নাম পাওয়া যায়নি। এটা অবশ্যই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে মিশরে উনার নাম পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু সেই পরিবর্তীত নামেও কোনোই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি৷ একমাত্র যে সূত্র জোড়া লাগানো যায় তা হলো একটা স্বপ্নের ব্যাখা হিসাবে ধর্মগ্রন্থে যা বলা হয়েছে, প্রায় কাছাকাছি ঘটনাবলীর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বিখ্যাত উজির "ইমহোটেপ" এর নামে। এই ঘটনাবলী এবং নামের মিলের কারনে কেউ কেউ ধারণা করেন "ইমহোটেপ" ই আসলে "ইউসুফ (আঃ)"। যদিও সেক্ষেত্রে টাইমলাইনের একটা বিস্তর ফারাক দেখা যায়। যাইই হোক এই রহস্য হয়তো কালের গভীরেই হারিয়ে গিয়েছে, হয়তো এখনো প্রমাণ আবিষ্কারই হয়নি কিংবা হয়তো সকল প্রমাণ যত্নের সাথে আড়ালেই রাখা হয়েছে।
এরপরের চ্যাপ্টারে লেখক পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের মাউন্ট টেম্পল তথা বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আমি রীতিমতো শকড হয়ে গিয়েছি যখন জানতে পেরেছি মিরাজের ঘটনার সময়ে যে মসজিদে নবীজী (সাঃ) নামাজ পড়েছিলেন বলে উল্লেখ আছে, সেই সময়ে সেই মসজিদের আসলে কোনো স্থাপনাই ছিলো না!! যদিও ম্যাপ সহ সেটার একটা চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক। এই চ্যাপ্টারে ডোম অফ দ্য রক কিংবা ইহুদীদের পবিত্র সিন্দুক আর্ক অভ দ্য কভনেন্ট তথা তাবুতে সাকিনার ব্যাপারসহ অনেক কিছুই উঠে আসে। যদিও পরবর্তী চ্যাপ্টার গুলোতে টাইমলাইন অনুসারে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই ব্যাপারগুলো আরো বিস্তারিত জানতে পারি। তাই এই চ্যাপ্টারের কিছু অংশ পরে আবার রিপিটেট হয়ে যায়।
চলে আসি পূর্বের টাইমলাইনের ঘটনায়। কালের পরিক্রমায় বনি ইসরাইল জাতি মিশরের ফারাওদের দাস জাতি হিসাবে নিযুক্ত হয়ে যায়। তখন এদেরকে ডাকা হতো হিব্রু জাতি, কারন তারা হিব্রু ভাষায় কথা বলতো। এই হিব্রু জাতির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছিলো। এটার সমাধানের লক্ষ্যে, পাশাপাশি মিশররাজ তথা ফারাও এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে নির্দেশ দিলেন যে প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর জন্ম নেয়া সকল হিব্রু ছেলে সন্তানদের মেরে ফেলার নির্দেশ দিলেন। নিজের শিশু সন্তানকে প্রাণে বাঁচানোর তাগিদে ঝুড়িতে করে নীলনদে ভাসিয়ে দিলেন এক দুঃখী মা। সেই ঝুড়ি কুড়িয়ে পেলেন সেই ফারাও এরই স্ত্রী। স্বামীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শিশুটিকে লালন পালন করতে শুরু করলেন তিনি৷ এই শিশুটিই বড় হয়ে দাস হিব্রু জাতিকে মিশরের রাজা থেকে মুক্ত করে। যে শিশুর জন্য এতো হত্যা করলেন ফারাও, সেই শিশু বেড়ে উঠলো তারই প্রাসাদে, তারই খাবার খেয়ে। শিশুটির নাম, মোজেস তথা মূসা (আঃ)। মূসা (আঃ) এর নবুওয়ত প্রাপ্তি সহ মোটামুটি অন্যান্য বিস্তৃত ইতিহাস জানা হয়ে যায় বইটির পরবর্তী কয়েক চ্যাপ্টারের মাধ্যমে।
অবশেষে টানা অনেকগুলো গজবের পর (বইয়ে বিস্তারিত সব আছে, আমি এখানে স্রেফ মূল ঘটনার আউটলাইন লিখে যাচ্ছি) হিব্রুদেরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন ফারাও। হিব্রুদের মুক্ত করেই মূসা (আঃ) প্রায় ৬ লাখ ইহুদীদের নিয়ে রওনা দেন প্রমিজড ল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সেই ল্যান্ড যেখানে শুয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন ইয়াকুব (আঃ), এবং পরবর্তীতে যে জায়গাটা তিনি কিনে নিয়েছিলেন ১০০ ভেড়ার বিনিময়ে। বিশাল মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়ে খাবারের অভাবে কাতর হিব্রু জাতিরা অভিযোগ জানাতে শুরু করলো মূসা (আঃ) এর কাছে, যে এরচেয়ে তো তারা দাস হিসাবেই ভালো ছিলো। তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্য নিয়ম করে দুইবেলা বেহেশতী খাবার পাঠনোর ব্যবস্থা করে দেন। ভোরবেলায় আসতো শিশিরের কনার মতো এক জাতীয় খাবার যার নাম "মান্না" আর বিকেলবেলা আসতো "সালওয়া" নামের এক জাতীয় পাখি। ৪০ বছর ধরে তারা এই খাবার পেয়েছিলো। কিন্তু ইহুদীদের নফরমানি এবং অকৃতজ্ঞতার কারনে প্রমিজড ল্যান্ড পরবর্তী ৪০ বছরের পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম ঘোষনা করেন আল্লাহ তা'আলা। এই সময়ে আসলে অনেক অনেক কিছুই ঘটে যার বিস্তারিত বইটা পড়লে জানতে পারবেন। The Good Samaritan কথাটা অনেকবার শুনেছি, এই কথাটার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা এই বই পড়েই জানলাম। মিশরের কোন ফারাওর আমলে মূসা (আঃ) লোহিত সাগর দ্বিখণ্ডিত করে বনী ইসরাইলকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, ধর্মীয় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ফাইন্ডিংস এর মাধ্যমে সেটার একটা চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক এখানে। এবং সেই ব্যাখ্যা অনুসারে সেটা কিন্তু ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস নন!
লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তাদের প্রমিজড ল্যান্ডের কাছাকাছি পৌছে গেলো বনী ইসরাইল। এরপর কি হলো? লিখলে আসলে আরো অনেক কাহিনীই লিখে ফেলা যাবে বই থেকে। তাই আর সেদিকে যাচ্ছি না। শুধু বলি এরপর একে একে স্যামসনের আলৌকিক ক্ষমতা, নবী দাউদ (আঃ) তথা কিং ডেভিডের কাহিনী, David vs Goliath লড়াই, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে কিং ডেভিডের ইতিহাসে থাকার প্রমাণ পাওয়া, দাউদ (আঃ) এর ছেলে মহা পরাক্রমশালী সুলাইমান (আঃ) বা কিং সলোমন এর বিভিন্ন ক্ষমতার কাহিনী, কিং সলোমনের সাথে সেবার রানীর পরিচয়ের গল্প, সোলাইমান (আ:) কর্তৃক ফার্স্ট টেম্পল নির্মাণ করা, আহাব ও জেজেবেলের কাহিনী, কিভাবে বনী ইসরাইল আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেলো সেগুলোর বর্ণনা, পারস্যের সম্রাট নেবুকাদনেজারের জেরুজালেম ধ্বংস করে দেয়া এবং বনী ইসরাইলের পারস্যে নির্বাসন এগুলা উঠে আসে।
এই জায়গায় এসে ইহুদি এবং খ্রিস্টধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক নবীর কথা বলতে হয় যার নাম ছিলো ইশাইয়া (আঃ) যিনি মসীহ বা খ্রিস্ট আগমনের ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন। মুসলিম তাফসির অনুসারে তিনি ঈসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুইজনের কথাই বলেছিলেন। এই ব্যাপারে খুব চমৎকার একটা ঘটনার উল্লেখ আছে বইয়ে। ইশাইয়া (আঃ) এর অস্তিত্ব প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০১৮ সালে খুঁজে পেয়েছেন।
বইয়ের বাকী কিছু অংশ পারস্যের সম্রাট সাইরাসের রাজত্বকালে ইহুদীদের নিজ ভূমিতে পূনরায় ফিরে আসার কাহিনী, সেকেন্ড টেম্পল নির্মান, জেরুজালেম ধ্বংসের ভবিষ্যতবানী, দানিয়েল (আঃ) এর বিভিন্ন ঘটনা, রোমান শাসনামলে ইহুদীদের করুণ অবস্থা এগুলার বর্ণনা করা হয়েছে। এর মাঝে আমাদের সব নবীর প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন দানিয়েল (আঃ) এরকম একটা ঘটনা পড়ে বেশ অবাক হয়েছি। যাইই হোক ইহুদীদের যীশু আগমনের পূর্ব পর্যন্ত কাহিনীর এখানেই ইতি টানা হয় এই বইয়ে। শেষের দিকের কিছু পৃষ্টায় নবীজী (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে কিছু অংশ লিখেছেন লেখক। যেগুলোর সাথে ইহুদীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ সীরাত পড়া থাকার কারনে এই জায়গার বেশ কিছু ঘটনা আগেই জানা থাকলেও, কিছু অংশ একদমই নতুন ছিলো আমার জন্য। জানার আসলে শেষ নাই।
লেখকের লিখনশৈলী সাবলীল সুন্দর। আমি ২য় সংস্করণ পড়েছি তেমন কোনো ভুলভাল পাইনি৷ অল্প কিছু জায়গায় মনে হয়েছে বাক্যগুলো আরেকটু সুন্দরভাবে লিখা যেতো। অত্যন্ত তথ্যবহুল বই লেখকের ব্যাপক পড়াশোনার গন্ডি সম্পর্কে পাঠককে বেশ ভালোই আইডিয়া দিবে। বইয়ে অনেক ইতিহাস বা তথ্য থাকলেও বেশীরভাগ লেখা হয়েছে গল্পের আদলে। তাই বইটা পড়তে একটুও বিরক্ত লাগেনি। তবে বইটা আমি একটু থেমে থেমে পড়েছি এবং কিছু অংশ বারবার করে পড়েছি। কারন ঘটনাগুলোকে হজম করার জন্য ব্রেইনকে সময় দিতে হচ্ছ���লো। বইয়ের প্রতিটা তথ্য আমার মতো ইতিহাস প্রেমীর জন্য প্রচন্ড উপাদেয় ছিলো। তবে আমার সব প্রশ্নের খোরাক এই পর্বে মিটেনি। আশা করি দ্বিতীয় খন্ড পড়ে আরো কিছু জানতে পারবো।
আমি লেখককে আমার মনের গভীর থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এই বইটা আমাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অনেক অনেক কিছু জেনেছি আমি বইটা পড়ে। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা রইলো।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ১০/১০ (এটাই কি স্বাভাবিক না? আমি কালের গভীরে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই আর এই বইটা সেই চাওয়া পূরণ করতে পেরেছে পুরোপুরি। তাই আমার দিক থেকে এটা পারফেক্ট বই। এমনকি এই বইটাকে কেউ ইতিহাসের বই না ভেবে গল্পের বই হিসাবেও পড়ে যেতে পারবেন, এতোটাই সুখপাঠ্য বইটি)
প্রোডাকশনঃ বইয়ের প্রোডাকশন অসম্ভব অসম্ভব ভালো। বিশেষ করে বাঁধাইটা অনেক চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। পেইজ কোয়ালিটিও বেশ ভালো ছিলো। প্রচ্ছদে কি কি এলিমেন্ট আছে এবং সেগুলা কেনো দেয়া হয়েছে তা নিয়ে লেখকের একটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। তবুও আমার মনে হয়েছে প্রচ্ছদের কালার কম্বিনেশনটা আরেকটু বেটার হতে পারতো। বইটাতে অসংখ্য বাস্তব এবং শিল্পীর আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বইয়ে উল্লেখিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তবে ছবিগুলা কিছুটা ঝাপসা বা অস্পষ্ট। সেই তুলনায় দেখলাম দ্বিতীয় খন্ডের ছবিগুলা অনেক পরিষ্কার। আমার একটা ব্যক্তিগত অনুরোধ থাকবে প্রকাশনীর প্রতি এই বইটার একটা কালেক্টর এডিশন বের করার জন্য যেখানে সব ছবি রঙিন থাকবে। দাম একটু বেশী হলেও আমার মতো কালেক্টেরদের জন্য সেটা বেশ জরুরী।
ইহুদিদের অতীতের ইতিহাস মোটামুটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা অনেকেই ভাবি ইহুদিদের সাথে জেরুজালেম নিয়ে সংঘর্ষের সুত্রপাত ইহুদিরা যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিস্তিন আসে তখন থেকে। কিন্তু তাদের ইতিহাস অনেক পুরানো। মনে হয় মানবজাতির ইতিহাসে তাদের ধর্মীয় ইতিহাস সবচেয়ে পুরাতন। কিভাবে ইউসুফ (আঃ) থেকে আজকের ইজরাইল তার একটা ভাল বর্ণনা এখানে পাবন। অনেক ভুল ধারনা কেটে যাবে এই বই পড়ার পর। তবে ইহুদি জাতির ইতিহাস আর একটু জানতে হলে কি কি পড়তে হবে সেটা ও এই বইতে পাবেন। লেখক চেস্টা করেছেন অনেক ধরনের উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে। ধর্মীয় ইতিহাস অথবা যেকোন ইতিহাস পড়ার ব্যাপারে যার আগ্রহ আছে, তাদের উচিত হবে বইটা পড়া।
বইটি মূলত প্রথম পড়া শুরু করেছিলাম রোর বাংলার ফ্রি আর্টিকেল থেকে তখন থেকেই বইটি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু কেন যেন বইটি কেনা হয়নি তথা পড়া হয়নি। বইটির বেশ কিছু জায়গায় চমকপ্রদ কিছু তথ্য ছিল। তবে আরো ভালো তথ্যনির্ভর বই হিসেবে আশা করেছিলাম এটিকে। বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে বইয়ের বাইন্ডিং কোয়ালিটি আরো ভালো করা দরকার। নতুন সংস্করণের মধ্যে যুক্ত হওয়া অনুচ্ছেদটি ভালো লেগেছে। আর তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখনীটি বেশ চমকপ্রদ ছিল, আশা করছি সেটি নিয়ে অতি শীঘ্রই বই দেখতে পাবো ইনশাআল্লাহ।
অসাধারণ একটি বই। ইহুদিদের ইতিহাসের খুঁটিনাটি সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে একদম শুরু থেকে। তবে বইয়ের শেষের দিকের আলোচনায় ইহুদিদের থেকে মুহাম্মদ স. এর কাহিনী বেশি চলে এসেছে, যা একটু অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে কেননা রাসূল স. এর জীবনী নিয়ে লেখক আরেকটি বই লিখবেন সেখানেই এসব তুলে ধরতে পারতেন।
This entire review has been hidden because of spoilers.
মাঝামাঝি গিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিছু জায়গা খাপছাড়া লেগেছে মাঝপথে। তবে শেষদিকের অধ্যায়গুলো বেশ ভালো লেগেছে পড়ে। অজানা অনেক কিছুই জানা গেল।
আবদুল্লাহ ভাইয়ের লেখার ভক্ত আমি। সেখান থেকেই বইটা কেনা। অনেকদিন ধরেই পড়ব পড়ব করেও পড়া হচ্ছিল না। বেশ কিছু লেখা আগে থেকেই পড়া ছিল। বেশ কিছু লেখাতে ব্লগ থেকে বইয়ে নিয়ে আসায় কিছুটা গতির ছেদ লক্ষণীয় ছিল। বরাবরের মতোই উনার লেখায় তথ্যের প্রাচুর্য। কাভারটা আরেকটু অন্যরকম হলে ভাল লাগত। বেশ উপভোগ্য একটি বই, অনেক কিছু জানার আছে। উনার জন্য শুভকামনা রইল।
Books on Jews are very few in Bangla. This is one of those books and a good book I would say. The only problem with the book is editing. It seems like somebody just prints the blog. Looking forward to his next book
A book full of informations. Though there are a lot of typing mistake which could be avoided. Good one to start gaining knowledge about semetic religions in Bengali language.
ইহুদি ও ইসরায়েল এই শব্দ দুটো শুনলেই আমাদের আঁতকে উঠতে হয়, ফিলিস্তিনের উপর তাদের নৃশংস অত্যাচারের কথা মনে পড়ে। আর তাই তাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই তুলে নিয়েছিলাম আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এর লেখা ইহুদী জাতির ইতিহাস বইটি, এবং শেষকরে অবশ্যই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি।
লেখক এখানে ইহুদি, খ্রিস্টান আর ইসলাম ধর্মকে সামনে রেখেই পুরো ইতিহাস বইটিতে মলাট বন্দি করেছেন। যেখানে আমরা দেখতে পাবো যে ইহুদিদের যাত্রা শুরু হয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ) থেকে, হযরত ইব্রাহিম (আ) এর প্রধান দুই ছিলো হযরত ইসমাইল (আ) এবং হযরত ইসহাক (আ), এই হযরত ইসহাক (আ) এর আরেক ছেলে ছিলো হযরত ইয়াকুব (আ), যার আরেক নাম ইসরাইল (আ), যাকে দিয়েই ইহুদি জাতির ইতিহাস শুরু হয়।
হযরত ইয়াকুব (আ.) ভাইয়ের প্রতিহিংসার কারণে মায়ের পরামর্শে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান হারান নামক এক জায়গায়, পথে এক জায়গায় তিনি ঘুমানোর সময় এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন, যে স্বপ্নের মাধ্যমে তিনি পবিত্র ভূমির প্রতিশ্রুতি পান। য���খানেই তৈরি হয় মুসলিম উম্মার প্রথম কেবলা।
হযরত ইয়াকুব (আ) এর ১২জন পুত্র ছিলেন, এই ১২ পুত্রের বংশ পরবর্তীতে ইসরায়েলের ১২ গোত্র অর্থাৎ বনী ইসরায়েল নামে পরিচিত। আর ইহুদী ও খ্রিস্টানরা হলো হযরত ইয়াকুব (আ.) এর বংশধর। এখানে ১২ পুত্রের সন্তানের একজন ছিলেন হযরত ইউসুফ (আ) যার দাসবালক থেকে মিসরের উজির হওয়ার ঘটনা আমরা হয়তো অনেকেই জানি, তারপরও একবার পড়া হয়ে যাবে ইহুদি জাতির ইতিহাস পড়তে গিয়ে।
সেই সাথে মিসরের সমৃদ্ধ ইতিহাসে হযরত ইউসুফ (আ) নিয়ে কিছু লিখা আছে কিনা তা নিয়েও লেখক বইটিতে আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ মিসরীও মিথলজিতে হযরত ইউসুফ (আ.) এবং দুর্ভিক্ষের ঘটনা ঐতিহাসিক ভাবে খোঁজ করেছেন লেখক। সেই সাথে বনী ইসরায়েলের মিসরে পদার্পণের কাহিনিও আছে। আছে ইউসুফ জুলেখার কাহিনির জানা অজানা অধ্যায়।
মাঝে লেখক মসজিদুল আকসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, লেখকের অন্য আরেকটি বই 'মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেমে' আমি এই অংশটা আগেও একবার পড়েছি, যদিও যতবার পড়ি ততবারই নতুন মনে হয়।
মিসরের বনী ইসরায়েলের কাছে আসা হযরত মূসা (আ) এর কাহিনিও উঠে এসেছে বইটিতে, যেখানে রাজদরবারে তাঁর জন্ম, সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে আবার মহান সৃষ্টিকর্তার ঐশীবানী প্রচারের জন্য ফিরে আসা, মিসরের বুকে নেমে আসা অভিশাপ, আবার সেখান থেকে বনী ইসরায়েলকে নিয়ে হযরত মূসা (আ) লোহিত সাগর অলৌকিক ভাবে ভাগ হয়ে সিনাই পর্বতে যাত্রার কাহিনি স্থান পেয়েছে। এর অধিকাংশ কাহিনি জানা থাকলেও আমার এই কাহিনি গুলোর জানার মাঝে অনেক শূণ্যস্থান ছিলো, লেখক ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের মাধ্যমে সেই শূন্যস্থান গুলো পূরণ করে দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে আমরা হয়তো অনেকেই ফিরাউনের গল্প জানি, যার লাশ এখনো মিউজিয়ামে রয়েছে। অনেকেই সেই হযরত মূসা (আ) এর পিছু করতে যাওয়া ফিরাউনই এই ফিরাউন মনে করলেও লেখক এক্ষেত্রে লাশ খুঁজে পাওয়া ফেরাউনই সেই ফেরাউন কি না তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন, যেটা পড়ে যেমন অবাক হয়েছি তেমনি মুগ্ধও হয়েছি। এই অংশটা পড়ে আপনারও অনেক কিছু জানতে পারবেন।
হযরত মূূসা (আ) মিসর থেকে বের হয়ে বনী ইসরায়েলকে নিয়ে সেই মহান সৃষ্টিকর্তার পবিত্র ভূমি বর্তমান ইসরায়েলে ফেরার যাত্রাই এর পরের কাহিনি, এর মাঝে হযরত মূসা (আ) এর তাওরাত লাভ একই সাথে আল্লাহর সাথে কথা বলার কাহিনিও লেখক বর্ণনা করেছেন। সেই সাথে এই ইহুদি জাতিরকে বারবার আলোর পথে আনার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা যেসকল নবীদের প্রেরণ করেছেন তাদের কাহিনিও আছে ধারাবাহিকভাবে।
এসব কাহিনি পড়তে পড়তে আমি বেশ উপলব্ধি করতে পেরেছি যে ইহুদি জাতি কতোই না ভাগ্যবান ছিলো আবার একই সাথে ছিলো বেঈমান, যাদেরকে মহান সৃষ্টিকর্তা বেহেশতি খাবার দেওয়ার পরও, এতো এতো মাজেজা দেখানোর পরও বার বার তারা খোদার সাথে নাফরমানি করেছেন। বারবার অমান্য করেছেন নবীদের আদেশ, নিষেধগুলো।
হযরত দাউদ (আ), হযরত সুলাইমান (আ) এর কাহিনিও বইটিতে স্থান পেয়েছে। পেয়েছে শেবার রাণীর বর্ণনা। নবী দানিয়ালের (আ) এর কাহিনি। সেই সাথে আছে বনী ইসরায়েলের ইসরায়েল জয় সেখান থেকে নির্বাসন হয়ে আবার পবিত্র ভূমিতে ফিরে এসে ফিলিস্তিনের সাথে সংঘাতের কারণ, সেই সাথে জানতে পারবেন ফিলিস্তিনীরাই বা কারা। অর্থাৎ হযরত ইয়াকুব (আ) থেকে হযরত ঈসা (আ) বা যীশু খ্রিষ্টের জন্মের আগ পর্যন্ত পুরো ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক ইতিহাসের পুরোটাই মলাট বন্দি হয়েছে বইটিতে।
শেষের দিকে লেখক হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মগ্রহণের আগমুহূর্ত এবং শৈশবের সময়কালের আরব অবস্থা নিয়ে বর্ণনা করেছেন, আছে আব্রাহার সেই বিখ্যাত কাহিনিও। অবশ্য যারা লেখকের আইয়ামে জাহিলিয়া পড়েছেন তারা এসব ঘটনা সেখানেও পাবেন।
লেখকের ইহুদি জাতির ইতিহাস দারুণ একখান বই, শুরু করার পর শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্তি পাবেন না। একবার শুরু করে দিলে হযরত ইয়াকুব (আ) থেকে যীশু খ্রিষ্টের জন্ম পর্যত পুরো ঘটনা এতো বেশি রোমাঞ্চকর যে বই হাত থেকে রাখতেও ইচ্ছে করেনি। যখনই সুযোগ পেয়েছি, পড়ে গিয়েছি। সেই সাথে এখন এই বইয়ের দ্বিতীয় খন্ড ইসরায়লের উত্থান পতন বইটিও পড়ার আগ্রহবোধ করছি।
বইটি পড়তে গিয়ে একদিকে যেমন আমার জানা ইসলামিক অনেকগুলো ঘটনার মাঝের শূণ্যস্থান পূরণ হয়ে গেছে, সেই সাথে জেনেছি কিছু কিছু ঐতিহাসিক সত্য আর ভ্রান্ত ধারণা নিয়েও। তবে বইটি পড়তে গিয়ে প্রতিবারই বনী ইসরায়েলের প্রতি আমার রাগ উঠেছে, এরা কতোবার যে খোদাতায়ালার নাফরমানি করেছে আপনি ভাবতেও পারবেন না, অথচ প্রতিবারই খোদাতায়ালা তাদের ফিরে আসার ব্যবস্থা করেছে। আহ! এইসব ঘটনাতেই আমাদের উপলব্ধি হবে মহান সৃষ্টিকর্তা কতোই না দয়ালু।
ইহুদি জাতির ইতিহাস নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এবং ঐতিহাসিক ইতিহাস নিয়ে যদি জানতে চান তাহলে বইটি হাতে তুলে নিন, আশাকরি এই বই আপনাকে হতাশ করবে না। বইটির প্রোডাকশনও আমার ভালো লেগেছে। তবে বইটির ছবিগুলো ঠিক স্পষ্ট নয়, এসব ছবির ক্ষেত্রে কালার হলে আরো ভালো হতো। পরিশেষে আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ' আর আরো একটা বই পড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম।
বই: ইহুদি জাতির ইতিহাস লেখক: আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ প্রচ্ছদ: মারযুক রহমান রিফাত প্রকাশক: ছায়াবীথি মূল্য: ৬০০৳ পৃষ্ঠা: ৩২৮
'ইহুদী' ও 'ইসরাইল' _ এ শব্দ দুটো কোথাও পড়লে, কিংবা দেখলেই ধর্মীয় অনুভূতিগতভাবেই হোক আর যে কারণেই হোক, বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেন। এর পেছনে কারণ কী?
মূলত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এই ভূমি দখলের সমস্ত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের পক্ষবাদী যে ইহুদীরা তাদেরকে জায়নবাদী বা জায়োনিস্ট (Zionist) বলে। ১৮৯৭ সালে থিওডর হার্জল শুরু করেন জায়োনিজম আন্দোলন।
ইহুদীরা মুসলিমদের মতোই বংশ পরম্পরা হিসেব করে হযরত ইব্রাহিম (আ.। ইব্রাহিমের (আ) প্রধান দুই ছেলে ইসমাইল আর ইসহাক (ইহুদী তাওরাত অনুযায়ী ইব্রাহিম (আ) এর পরে আরো ছয় পুত্র হয় তৃতীয় স্ত্রী কেতুরার গর্ভে)। এর মাঝে, হযরত ইসহাক (আ) (ইংরেজিতে isaac) এর ছেলে ছিলেন ইয়াকুব (আ) (Jacob)। ইয়াকুব (আ) এর আরেক নাম ছিল ইসরায়েল (আ); এ নামটাই ইহুদীরা গ্রহণ করেছে।
হযরত ইব্রাহিম (আ)- এর এক পুত্র ইসমাইল (আ), আর আরেকজন ছিলেন হযরত ইসহাক (আ), যাকে ইংরেজিতে আইজ্যাক ডাকা হয়। ইহুদীদের বিশ্বাস, অর্থাৎ আদিপুস্তক (২৫) অনুযায়ী, হযরত ইসহাক (আ) এর বয়স যখন ৪০ বছর, তখন তিনি বিয়ে করেন রেবেকা নামের এক মেয়েকে।
তিনি জমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন। একজনের নাম 'ইসাও, বা আরবে যাকে 'ইস' বলে। আর অপরজন ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আ) বা জ্যাকব। আর ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা হলো হযরত ইয়াকুব (আ) এর বংশধর।
'ইহুদী জাতির ইতিহাস ' গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ মোট ৩৮ টি অধ্যায়ে 'ইহুদী ধর্মের সূচনা' হতে 'ঐশীবাণীর পূর্বে যুবক জীবন' অবধি আলোচনা করেছেন। এর মাঝে বর্তমান বিশ্বে ইসরায়েল- ফিলিস্তিন সংঘাতকে সামনে রেখে টাইমলাইনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এর রাজনৈতিক পটভূমি আলোচনা করা হলো :-
১৮৯৭ - ওয়াল্ড অর্গানাইজেশন থেকে ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণা। বেলফোর ঘোষণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ২৯ নভেম্ভর, ১৯৪৭ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে দিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত "রেজ্যুলেশন ১৮১(২)" গ্রহণ করা হয়। রেজ্যুলেশনে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিন���র ৫৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে গাজাসহ বাকী অংশ আরবদের দেওয়া হয়।
১৪ মে, ১৯৪৮ - ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনে ইহুদিরা। দিনটিকে ফিলিস্তিনরা 'আল- নাকবা ' (বিপর্যয়ের দিন) হিসেবে পালন করতো।
১৫ মে, ১৯৪৮ - আরব-ইসরায়েল ১ম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৫৬ সালে আরব-ইসরায়েল ২য় যুদ্ধে ইসরায়েল কতৃক মিশরের সিনাই উপদ্বীপ দখল হয় এবং সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে মিশর।
১৯৬৪ সালে পিএলও প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শাখা - ফাতাহ। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের আরব-ইসরায়েল ৩য় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও জর্ডানের পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। এছাড়াও আল-আকসা মসজিদ অগ্নিদগ্ধ হলে এরই পরিপ্রেক্ষিতে OIC প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৯৭৮ সালে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের ক্যাম্প ডেভিডে মিশর ও ইসরায়েল এই চুক্তি সাক্ষর করে।
১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা - ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের গণজাগরণ। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলিদের মধ্যে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সাক্ষর করে PLO এবং ইসরায়েল। ১৯৯৫ সালে অসলো ২য় চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির দাপ্তরিক নাম 'গাজা ও পশ্চিম তীর সম্পর্কিত অন্তবর্তীকালীন চুক্তি' যা 'তাবা চুক্তি' নামেও পরিচিত।
২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০০৫ সালে। এই আন্দোলনে ৩,৩৯২ জন ফিলিস্তিনি ও ৯৯৬ জন ইসরায়েলি মারা যায়।
২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু এবং ৭ অক্টোবর, ২০২৩ হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করে। এ হামলার প্রেক্ষিতে ৮ অক্টোবর, ২০২৩ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় ফিলিস্তিন- ইসরায়েল রক্তক্ষয়ী সংঘাত, যা এখনো চলমান।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : লেখকের ইহুদি জাতি সম্পর্কে গতবাধা নিরস ভঙ্গিতে অধ্যায়ভিত্তিক তথ্য প্রদান করাতে আমার বইটি শেষ করার অনুপ্রেরণা জোগাতে বড্ড বেগ পেতে হয়েছে । প্রচুর পরিমানে বানান ভুল বইটিতে।
৩২৮ পৃষ্ঠার এই বইটা আড়াই দিনে শেষ করলাম। বইয়ের প্রতি পাতা ছিলো তথ্যে ঠাঁসা। এটি কোনো সাধারণ ইতিহাস বই নয়-এটি যেন মধ্যপ্রাচ্যের হাজার বছরের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বের ভেতরে পাঠককে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা দরজা খুলে দেয়। বাংলা ভাষায় ইহুদীদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে হলে এই বইয়ের বিকল্প নেই।
হযরত ইয়াকুব (আ) থেকে শুরু করে হযরত হযরত ইউসুফ (আ), বনী ইসরায়েলের মিশর গমন, হযরত ইউসুফ (আ) এবং তৎকালীন ফারাওয়ের ঐতিহাসিক সন্ধান, বনী ইসরায়েলের মিশরীয় দাসে পরিনত হওয়া, ফারাও দের অত্যাচার, হযরত মুসা (আ) এর নেতৃত্বে মিশর থেকে লোহিত সাগরের মাঝ দিয়ে এক্সোডাস, হযরত মুসা (আ) এর তাওরাত লাভ, আর্ক অব দ্যা কভোটেন্ট বা তাবুতে সাকিনার কথা, বনী ইসয়ালের অবাধ্যতা, হযরত ইউশা (আ) এর নেতৃত্বে জেরুজালেমে ঘাঁটি গাড়া, বাদশা তালুতের রাজত্ব, হযরত দাউদ (আ) এর উত্থান এবং জালুতের সাথে যুদ্ধ, হযরত দাউদ (আ) এবং হযরত সুলাইমান (আ) এর বিশ্বব্যাপী রাজত্ব এবং ইসরায়েলের স্বর্নযুগ, বাইতুল মুকাদ্দাস বা ফার্স্ট টেম্পল নির্মাণ, লেজেন্ডস অব সলোমন, ইসরায়েলের পতন, ব্যবিলনের রাজা বখতে নাসর কতৃক নির্বাসন, রাজা সাইরাজ কতৃক জেরুজালেমে ফিরে আসা এবং সেকেন্ড টেম্পল নির্মাণ, হযরত ইসা(আ) এর আগমন এবং তাকে হত্যা। মূলত ইহুদীদের খ্রিষ্ট পূর্ব ইতিহাসের এক পূর্ণাঙ্গ বাংলা দলিল এই বইটি। সমস্থ বিবরণ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন লেখক। এটি যে কত গবেষণালব্দ এবং পরিশ্রমের কাজ তা তার লেখনীতেই উঠে এসেছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, লেখক পুরো বইজুড়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। যদিও ইহুদীদের অনেক আচরণ ধর্মীয়ভাবে সমালোচিত, লেখক তা অন্ধ ঘৃণার জায়গা থেকে উপস্থাপন না করে, তথ্য ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে পাঠকের বিচারবোধের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, বইয়ে উল্লেখ আছে যে ইহুদীরা “জেন্টাইল” (অ-ইহুদি) হত্যা করাকে গুরুতর পাপ মনে করে না। এই মনোভাবের উৎস বোঝাতে লেখক তুলে ধরেছেন ইহুদী ধর্মীয় সূত্রের নানা ব্যাখ্যা, যার মাধ্যমে আজকের গাজায় চালানো গণহত্যার নৃশংস বাস্তবতাকেও ঐতিহাসিকভাবে বোঝা যায়।
বইটির প্রথম ২৭০ পৃষ্ঠা কেবল ইহুদী জাতির খ্রিস্টপূর্ব ইতিহাস ঘিরেই। বাকিটা অংশ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের প্রাক-পর্ব। যদিও এই অংশে ইসলামি আরব সমাজের ব্যাকগ্রাউন্ড এসেছে, আমার মতে ইহুদী ইতিহাসের ধারাবাহিকতা সেখানে কিছুটা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। লেখক হয়তো একটি ক্লিফহ্যাঙ্গার রাখতে চেয়েছেন এখানে, যাতে পরবর্তী খণ্ডের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়-এবং সত্যি বলতে, সেটি সফলভাবেই হয়েছে। লেখক ভবিষ্যতে আলাদা সীরাত গ্রন্থ বের করবে এরকমই আশা করছি।
বর্তমান ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাতের পূর্ব পটভূমি, আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন নিয়ে খুব সংক্ষেপে বেশ বিস্তারিত ভাবে এই বইয়ে একটি অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন লেখক। যদিও এই বইয়ের পড়ের খন্ডে এটি নিয়ে বিস্তারিত আছে। ইহুদী খ্রিষ্ঠান সম্পর্ক, ইহুদী মুসলীম সম্পর্ক, মুসলিমদের প্রতি ইহুদীদের দৃষ্টিভঙ্গি কিরকম এগুলো নিয়ে আগে ভাসা ভাসা জানলেও বর্তমানে এই বইটি পাঠ করার পর এই বিষয়ে বেশ ভালো একটা ধারণা পেয়েছি। এই ফিলিস্তিন ভূমির আসল উত্তরাধীকারিরা কারা, সেই বিষয়েও পাঠক একটা ভালো ধারণা পাবে এই বইটি পাঠ করে। এর আগে ইহুদী জাতি সম্পর্কিত ইতিহাসের লেখা পড়েছিলাম হামিদা মুবাশ্বেরার লেখা বই শিকড়ের সন্ধানে বইটি পড়ে। সেখানে অবশ্য শুধ্যমাত্র ইসলামীক রেফারেন্সই ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এই বইটিতে ইসলামিক রেফারেন্স বাদেও বাইবেল, তাওরাত, তালমুদ সহ অনন্য অমুসলিম রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদ পেইজ কোয়ালিটি এবং বাইন্ডিং বেশ ভালো লেগেছে। প্রত্যেক অধ্যায়ে সংশ্লিষ্ট ছবি থাকার কারনে পড়াটা আরো বেশি রিলেট করতে পেরেছি। এখন ২য় খন্ডটি পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি।
ইহুদী জাতির ইতিহাস জানতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য এ বইটি একটি অপরিহার্য পাঠ্যবই। এটি ধর্ম, ইতিহাস ও রাজনীতির এক চমৎকার সংমিশ্রণ। একদিকে যেমন আপনি পেয়ে যাবেন তথ্যসমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা, অন্যদিকে ধর্মীয় আখ্যানের চিত্রনাট্যমূলক উপস্থাপন আপনাকে ধরে রাখবে পুরো সময়টা। এই বইটি শুধু একটি ধর্মীয় জাতির ইতিহাস নয়, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতির গভীরতর ভিত্তি ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের অন্তরালের এক নিখুঁত চিত্রায়ন।
লেখকের পড়া প্রথম বই। অসাধারণ, অনেক কিছু নতুনভাবে জানলাম আর নতুন ভাবে চিন্তা করার খোরাক নিলাম। কিছু ইতিহাসের ব্যপারে মতভেদ আছে, যেমন বনি ইসরাইলিদের মিসরের ফারাওদের সাথে যে টাইমলাইন বর্ণনায় আছে, তার ব্যপারে ইতিহাসবিদদের মতবিরোধ আছে, এই ব্যপারটা আরও পরিস্কার করা যেতো হয়তো। কিন্তু লেখনী এবং এমন একটা টপিকের উপর গল্পের ছলে ইতিহাস লেখার অসাধারণ কাজকে স্যলুট। ফ্যান হয়ে গেলাম লেখকের, লেখকের বাকি বই শেষ করব দ্রুত।
ইন-ডেপথ একটা লেখা। নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দেখা হয়েছে বলে ওয়াইড রেঞ্জে ইতিহাস কভার করছে। যেহেতু এই বিষয়ে আমার পূর্ব পঠন-পাঠন আছে, তাই বেশ মিলিয়ে নিতে পারছিলাম সব। তবে বইটির সম্পাদনায় মনযোগী হওয়া প্রয়োজন ছিল। একই কথার রিপিটেশান আর পাদটিকার বদলে মূল টেক্সটের সঙ্গেই সোর্স উল্লেখ করাটা বাদ দেয়া যেত। এভাবে লেখা ব্লগে প্রকাশের জন্য ঠিক আছে, বইয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল সম্পাদনার। যাই হোক, এই টপিকে যেমনটা হওয়ার ছিল, ধর্ম আর রাজনীতির খুব সুন্দর উপস্থাপন।