শুরুতেই বইটিকে কিভাবে পড়বেন তা লেখক আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন। চাইলেই আপনি দ্রুত পঠন করে তৎক্ষণাৎ বইটি গিলে ফেলতে পারেন বা চাইলে নোট নিয়ে,গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ দাগিয়ে নিয়ে ,বইয়ের প্রত্যেকটা লাইন অনুধাবন করার মাধ্যমে বিস্তারিত অধ্যয়ন করতে পারেন-এ দুটি সহ লেখক আরো তিন ধরনের পাঠপদ্ধতি নিয়ে অতিসংক্ষিপ্ত অলোচনা করেন এবং সেসব থেকে যেকোনো একটি বেছে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর থেকেই বইয়ের মূল যাত্রা আরম্ভ হয়। টাইম ম্যানেজমেন্টকে ঘিরে লেখক এ বইটিকে মোট ৬টি ধাপে (অধ্যায়ে) বিভক্ত করেন এবং প্রথম ধাপে যাওয়ার আগে লেখক দেখান কেন বর্তমানে সময়ের বারাকা থেকে আমরা বিচ্যুত হচ্ছি,কেন সময়ের বারাকা কমে যাচ্ছে এবং সেই সাথে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সময় এবং আমাদের মাঝের সম্পর্কটাকে চিত্রিত করেন এরপর নেমে পড়েন প্রথম ধাপে (একটি লক্ষ্য নিয়ে বাঁচা)।
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছাড়াই জীবনযাপন করার কারণে আমরা সময়কে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারি না। তাছাড়া সময় রিযিকের একটি অংশ যা সকলের জন্য সমপরিমাণ এবং নির্ধারিত। এ ক্ষুদ্র সময়কে যথাযথ মূল্যায়নের জন্য দরকার একটি বাস্তবিক লক্ষ্য। এ লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য লেখক আমাদের কাছে S.M.A.R.T ফর্মুলাটি পেশ করেন,যেখানে লক্ষ্যটি হবে সুনির্দিষ্ট,পরিমাপ ও অর্জনযোগ্য,বাস্তবসম্মত এবং সময়মাফিক। এর পাশাপাশি আমরা এ অধ্যায়ে একজন মুমিনের লক্ষ্য কেমন হবে তার আন্দাজ পাই।
(৩৮-৮৫ পৃষ্ঠা)
(২য় অধ্যায়) দ্বিতীয় ধাপ: গতানুগতিক জীবনধারা থেকে সুসংগঠিত জীবনে
বর্তমানে আমরা ‘ইঁদুর দৌড়’ জীবনযাপন করছি,যেখানে কেবল ছোটাছুটি আর ব্যস্ততা।আমরা ভুলেই গিয়েছি জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়গুলোকে।সময়ই যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে অথচ টাইম ম্যানেজমেন্টের একটি মৌলিক সূত্র হলো-সময়কে আপনি নিয়ন্ত্রণ করবেন, সময় আপনাকে না। সময়ের ভিত্তিতে মানুষ মূলত দুভাগে বিভক্ত-একপক্ষ মুহূর্তজীবী ও অপরপক্ষ সময়চারী।টাইম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে আপনাকে এ দু’ ভাবনার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। এর পাশাপাশি এ অধ্যায়ে টাইম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে কিভাবে ৮০/২০ নীতি প্রয়োগ করবেন ও টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য ৩টি পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়েছে: >সাপ্তাহিক পরিকল্পনা পদ্ধতি >টু-ডু লিস্ট >মিশ্র পদ্ধতি (সাপ্তাহিক পরিকল্পনা পদ্ধতি ও টু-ডু লিস্টের মিশ্রণ) এবং মুহাসাবাহর গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।
(৩য় অধ্যায়) তৃতীয় ধাপ: কাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
এখানে গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ধারণা পাবেন যা আপনার টাইম ম্যানেজমেন্টকে আরো সরল করবে। এক্ষেত্রে উদাহরণসহ লেখক আমাদের জরুরি-গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহের একটি মানদন্ড নির্ধারণ করে দেন। তাছাড়া আমাদের অগ্রাধিকারগুলোকে মোটাদাগে ৫টি ভাগে ভাগ করেন- >ধর্মীয় অগ্রাধিকার >ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত অগ্রাধিকার >পারিবারিক অগ্রাধিকার >সামাজিক কর্তব্য >ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার এবং এসব ক্ষেত্রে আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। শেষের দিকে লেখক কিছু ফাঁদ নিয়ে আলোচনা করেন যা অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
(৪র্থ অধ্যায়) চতুর্থ ধাপ: পদক্ষেপ নেওয়া
এখানে দৈনন্দিন জীবনে কাজে গড়িমসি করা নিয়ে আলেচনা করা হয়েছে। সাধারণত আমরা গড়িমসি করি চারটা কারণে- >লক্ষ্যের অভাব >ধোঁকা (শয়তান) >অতিরিক্ত নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা >তাৎক্ষণিক তৃপ্তি পেতে চাওয়া এ অধ্যায়ে লেখক আমাদের গড়িমসি করার পেছনের চারটে কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং তা থেকে উত্তরণের পথও বাতলে দিয়েছেন। এবং কবে গড়িমসি করা আমাদের জন্য উপকারি হবে তাও বলে দিয়েছেন।
(৫ম অধ্যায়) পঞ্চম ধাপ: গতিবেগ ধরে রাখা
টাইম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে গতিবেগ ধরে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টার্ম।কাজকর্মে আমরা হরহামেশাই গতিবেগ হারিয়ে ফেলি,এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে-বদঅভ্যাস। তাছাড়া টাইম ম্যানেজমেন্ট নিজেই কিছু নতুন অভ্যাসের সমষ্টি কেবল। তাই লেখক এ অধ্যায়ে বদঅভ্যাস কেটে উঠতে সহায়ক চারটি পদ্ধতির উপর আলোকপাত করেছেন।
(৮৬-১২৯ পৃষ্ঠা)
ষষ্ঠ ধাপ: এড়িয়ে চলবেন যাদের
এ পাঠে এসে লেখক আমাদের এমন কিছু বিক্ষেপকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন যা এড়িয়ে গেলে আমাদের টাইম ম্যানেজিং আরো ফলপ্রসূ হবে।এরপর দিয়েছেন কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার টিপস।অবশেষে প্রোডাক্টিভিটি ও বারাকা লাভের জন্য কিছু হেলথ টিপ্স ও বারাকা লাভের উপায় বাতলে দিয়ে অধ্যায়ের ইতি ঘটান।তাছাড়া লেখক অধ্যায়ের শেষে কিছু খসড়া মূল্যায়ন ছকের মডেল দেখান যার সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার প্রোডাক্টিভিটির রেকর্ড রাখতে পারেন।
পরিশিষ্ট ১ এ লেখক খারাপ দিনগুলোতে টাইম ম্যানেজমেন্ট করা নিয়ে অলোচনা করেন।
পরিশিষ্ট ২ এ আপনি রামাদানে টাইম ম্যানেজমেন্ট করার জন্য কিছু উল্লেখযোগ্য ফন্দি পাবেন।
পরিশিষ্ট ৩ এ ব্যর্থতার সম্মুখীন হলে কিভাবে তা এড়িয়ে যাবেন তা আলোচিত হয়েছে।
সর্বশেষে গ্রন্থপঞ্জির তালিকা দিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি সমাপ্ত হয়।
আমি সাধারণত আত্ম-উন্নয়ন মূলক বই পড়তে পছন্দ করিনা। কারণঃ বইগুলো অনেক বড় হয় যে পড়তে পড়তে মূল মেসেজ ধরতে অসুবিধা হয়ে যায়। অনেক তথ্যের ভীড়ে কোন একটা বিষয়ে ফোকাস করবো সেটা বুঝতে পারা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে দাঁড়ায়।
তাই আমি প্রতিটা বইয়ের সামারি পয়েন্টস আকারে জেনে নেই। তবে এরচেয়ে ভালো কোর্স করে ফেলা। পজিটিভ সাইকোলজির উপর একটা কোর্স করে অনেক কিছু শিখেছি।
কিন্তু এই বইটি পড়লাম কেন তাহলে? এক/ বইটা ছোট। একশো বিশ পৃষ্ঠা উইথ সূচনা, গ্রন্থপঞ্জি, পরিশিষ্ট। দুই/ নির্দেশনা গুলো স্পেসিফিক। কোনটারই বাহুল্য বর্ননা নেই। তিন/ আমি যে লাইফস্টাইল এখন ফলো করি সেটার ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়েছে। সালাতসহ কিছু আবশ্যিক ব্যাপারকে প্রাধান্য দিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সুন্দর এবং বাস্তবিক উপকারি কিছু দিকের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এইক্ষেত্রে লেখকের রেফারেন্স ছিল সেই বইগুলো যেগুলো আমি বড় বলে শেষ করতে পারিনি। টিমোথি ফেরিস, ডেল কার্ণেগি, ডেভিড লরেন্স, টেসি ব্রায়ান, রিচার্ড কার্লসন প্রমুখ বেস্টসেলার লেখকদের প্র্যাক্টিক্যালি ইফেক্টিভ মেথডগুলো এক মলাটে স্থান পেয়েছে বলে আমার জন্যে বেশি সুবিধা হয়েছে।
আল্লাহ লেখককে তাঁর এই অসাধারণ প্রচেষ্টার জন্যে উত্তম এবং যথার্থ প্রতিদান দিক। আমিন।
সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য অসাধারণ কিছু পরামর্শ এই বইতে উল্লেখ আছে। যা আপনি ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ করে ফলপ্রসূ হতে পারেন। কাজকে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ; জরুরি ও অগুরুত্বপূর্ণ; জরুরি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জরুরি নয় এভাবে ভাগ ক���ে কোন কাজ তাৎক্ষণিক করতে হবে কোন কাজ দেরিতে করলেও চলবে এমন অসাধারণ পরামর্শ সহ আরও কিছু পরামর্শ পাবেন। প্রাত্যহিক জীবনের ট্যাকিং, দুই মিনিট রুলস, মাল্টি টাস্কিং পরিহার, আপনার সক্রিয় সময়, S.M.A.R.T রুলস প্রয়োগ, রারাকাহর জন্য দু'আ, কখন অলসতা ভালো, বার্নিং আউট এড়িয়ে চলা সহ অসাধারণ আরও কিছু পরামর্শ দিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানোর দিকনির্দেশনা পাবেন। মূল কথা আত্মনিয়ন্ত্রণ যা আপনার মধ্যে থাকলে দুনিয়া জয় করে ফেলতে পারবেন। লেখক আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উল্লেখ করতে ভুলেন নি।
Managing time is a very hard task for everyone but not for them who practices Islam in a correct way , the way of peace . Allah is the Creator of All things. So first of all we have to make dua to Allah SWT. Besides we have to lead a organized life . And Those who love to follow tips & tricks they should must read this book. Because for leading a organized life you have to follow some tips & tricks . But a verse of the Quran is enough for leading a organized life. And we know which verse it is.... "By time, mankind is in great loss............"
This entire review has been hidden because of spoilers.