ত্রয়োদশী এক কন্যা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে শিকার হলো এক ভয়ংকর বাস দুর্ঘটনার । সাথের সবাই সেই দুর্ঘটনায় মারা গেলেও সে বেঁচে গেল মরতে মরতে। এরপর থেকেই তার সাথী হলো এক অনৈসর্গিক সত্ত্বা। কে এই সত্ত্বা? তার উৎপত্তি কোথায়? কিন্তু এর সাথে প্রফেসর সুলতানের ল্যাবের কী সম্পর্ক? ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসের শীতের সেই রহস্যময় দিনটিতে এমন কী ঘটেছিলো, যা পুলিশ কেস রিপোর্টে এখনো অমীমাংসিত? যেই ঘটনার বয়ে চলছে ফাল্গুনীর রেখে যাওয়া একমাত্র বংশধরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে? মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণাটি যেমন স্থির হয়ে নেই, সব জায়গায় একই সাথে বিচরণ করছে, সেই সত্ত্বাও ঠিক তাই। যার কাছে আকাঙ্ক্ষা করলেই সে বদলে দিতে পারে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। সত্যিই কি তাই? কালবীর আবির্ভাব বইটি আপনাকে ঘুরিয়ে আনবে অদ্ভুত এক সময় সুরঙ্গে; যার সাথে টেক্কা দিতে আপনাকেও পাড়ি দিতে হবে রহস্যময় সেই সত্ত্বার গতিপথে।
পৈত্রিক সূত্রে চট্টগ্রামের মানুষ। যদিও বান্দরবান, ঢাকা আর সিলেটেই থাকা হয়েছে জীবনের বেশির ভাগ সময়। বাবা মোঃ আয়ুব ও মা ফাহিমা পারভীন রিতা। একমাত্র বড় বোন শারমিন আক্তার শিমু। পড়াশোনা করেছি চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। বিএসসি শেষ করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছি চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। ছোটবেলা থেকেই আঁকা আঁকির সাথে ছিলাম। ঘটনাক্রমে লেখক হয়ে গেছি। দুটো শখ মানুষের কখনো থাকে না একসাথে। তবুও মাঝে মধ্যে নিজেকে আঁকিয়ে, কখনো বা লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে আনন্দ পাই। নিজের সম্পর্কে এটুকুই।
The supernatural always makes it seem as though there is nothing super about the natural. - Michael Bassey Johnson, Song of a Nature Lover - "কালবীর (আবির্ভাব)" - মিতুল, স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরী যার পুরো দুনিয়া তার পরিবার এবং স্কুলের বন্ধুবান্ধবকে ঘিরে। কিন্তু স্কুলের পিকনিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ তাদের বাসে ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। ভাগ্যক্রমে মিতুল বেঁচে গেলেও তার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জীবন এ ঘটনার পরে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যায়। - ১৯৭৮ সাল, ড. সুলতান নামের এক প্রফেসর ঢাকা ভার্সিটিতে নিজস্ব পরীক্ষাগারে চালাচ্ছিলেন অদ্ভুত এক এক্সপেরিমেন্ট। এই পরীক্ষাগারে তার সহকারী হিসেবে ছিলেন জুবায়ের, শিরিন, পারভীন এবং ফাল্গুনী। কিন্তু তাদের সেই এক্সপেরিমেন্টে ঘটে ভয়াবহ এক বিপর্যয়। সেই বিপর্যয়ের ফলে পুলিশের ফাইলে যুক্ত হয় আরেকটি অমীমাংসিত কেস। - এখন মিতুলের বাস দুর্ঘটনা কীভাবে তাদের পুরো পরিবারের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছিলো? ড. সুলতানের ল্যাবে সেদিন কী ঘটেছিল? "কালবীর" আসলে কোন ধরনের সত্তা? এই সত্তাটি কীভাবে এ সকল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়? তা জানতে হলে পড়তে হবে মাদিহা মৌ এবং মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব লেখকদ্বয়ের যৌথ সুপারন্যাচারাল ধারার উপন্যাস কালবীর (আবির্ভাব)। - কালবীর (আবির্ভাব) বইটি মোটাদাগে সুপারন্যাচারাল ঘরানার থ্রিলার হলেও বইয়ের অর্ধেকের পরে কিছুটা সায়েন্স ফিকশনের ভাইবও পাওয়া যায়। বইয়ের থিম বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলেও যেভাবে গল্পটি এগিয়েছে তার ধরন বেশ জটিল লাগলো। গল্পের শুরুটা বেশ কনফিউজিং লাগছিলো, তবে অর্ধেকের পরে বইয়ের কাহিনির গতিপ্রকৃতি মোটামুটি ধরতে পারা যায়। - কালবীর (আবির্ভাব) বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর চরিত্রায়ণ। বইতে প্রচুর চরিত্র আসলেও প্রথমদিকে কিছুটা কনফিউজিং প্লটের জন্য চরিত্রগুলোর সাথে কানেক্ট হতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। এখানে আমার মনে হয়েছে কিছু অধ্যায়ের শুরুতে খুবই ওভার ডিটেলিং এ কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যে কারণে গল্পের গতি কোন কোন জায়গায় একেবারেই মন্থর হয়ে গিয়েছে। গল্পের অতিপ্রাকৃত সত্তাটিকে যেভাবে টিজ করা হয়েছে তার পুর্ণ প্রতিফলন এই বইতে পেলাম না, শেষদিকে অবশ্য সিক্যুয়েলের স্পষ্ট আভাস দেয়া হয়েছে, সেখানে হয়তো এই ব্যাপারে আরো জানতে পারবো। বইয়ের প্রথম ভাগ বেশ হরর-সুপারন্যাচারাল ভাইব নিয়ে শুরু হলেও শেষদিকে অনেকটা সায়েন্স ফিকশনের দিকে মোড় নিয়েছে গল্পটা, বিশেষ করে আমার বেশ প্রিয় সিরিজ "ডার্ক" এর কিছু প্যারালাল দেখতে পেলাম সে অধ্যায়গুলোতে। বইটি শেষ হবার পরেও কিছু প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি, সেগুলোও আশা করি পরবর্তী অংশে পাবো। - কালবীর (আবির্ভাব) বইয়ের প্রোডাকশনের দিকে তাকালে দুঃখজনকভাবে আমার বইয়ের বাঁধাই একেবারেই ভালো হয়নি। বইটি পড়ার অর্ধেকের মাঝেই বাঁধাই খুলে আসছিলো একেক ফর্মার। বানান ভুল টুকটাক ছিলো, তবে সেটা ধর্তব্যে নেয়ার মতো না। বইয়ের প্রচ্ছদও গতানুগতিক লাগলো। - এক কথায়, বাংলা সুপারন্যাচারাল ফিকশনের বই হিসেবে বেশ অন্যরকম এক প্রচেষ্টার বই হচ্ছে কালবীর (আবির্ভাব)। কয়েকটি অধ্যায়ের অতিরিক্ত ডিটেলিং এবং কিছুক্ষেত্রে বাহুল্যের ব্যপারটা পাশ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারলে সুপারন্যাচারাল ফিকশন পড়ুয়াদের বইটি ভালো লাগবে আশা করি। বইটির পরবর্তী খন্ডের অপেক্ষায় রইলাম।
"Who reads Incessantly, and to his reading brings not A spirit and judgment equal or superior, (And what he brings what needs he elsewhere seek?) Uncertain and unsettled still remains, Deep versed in books, and shallow in himself.” ― John Milton, Paradise Regained
একজন সিরিয়াস কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ছাত্র ব্যতীত এই বই এর প্লটহোল খুজে পাওয়া অসম্ভব। সেইদিকে যাবো না। আমার পড়া লেখকের তৃতীয় বই। লেখকের লেখনশৈলী ভালো লাগে বলে বার বার ফেরত আসি তাঁর কাছে। এবারো হতাশ করেন নি। পুরোটা সময় জুড়ে আমার মনে হইসে গল্পের সিনে আমি সশরীরে উপস্থিত আছি আর ঘটনা-প্রবাহ স্বচোক্ষে দেখছি। আমার চোখের সামনেই ঘটছে সবকিছু। প্রতিটা দৃশ্য-ঘটনাপ্রবাহ আমি উপভোগ করেছি। এক কথায়, পেজ টার্নার ছিলো এবং বই এর সাথে আমার যাত্রাটা অনেক ভালো কেটেছে। হেসেছি বা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। লিনিয়ার স্টোরি-টেলিং, অতিপ্রাকৃত থেকে সাইন্স ফিকশান অব্ধি কনভারশান, এই ২০২১ সালের বাংগাল মুলুকে- লেখক লেখিকার গভীর কল্পনা শক্তির প্রমাণ দেয়। হ্যাটস অফ এই ইফোর্টের জন্য। প্রশংসা করছি দারুণ কাজ হইসে।
স্লো-বার্ণ কাহিনীবিন্যাস আমার কখনোই খারাপ লাগে না। ডিটেইলিং এর ক্ষেত্রেও সেম। বেশি হলে বরং আনন্দিত হই। ভালোই লাগে। তবু এখানে বিরক্ত হয়েছি। স্লোবার্ণের পাশাপাশি অযাচিত বর্ণনা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বা অবস্থার বর্ণনা (ডিটেইলিং) একটু বেশী। বেশি মানে বেশি ই। কোথাও পারিপার্শ্বিক আবহ, প্রকৃতি, কীট-পতঙ্গ বর্ণনা করতে করতে, পিপড়া আর্মির পিপড়া লিডার কিভাবে পিপড়া লিড করছে, সে কি ভাবছে, করছে তাও এসেছে। যা মূল কাহিনী থেকে সরে গিয়েছে বা মূল কাহিনীতে আসতে দেরি হয়েছে বারবার। কয়েক অধ্যায়ে কিছুটা শিশুতোষ বা টীনেইজ ন্যাকামি মনে হয়েছে, মেজাজ বিগড়েছে আমার। স্পষ্টত, শায়লা-শাহেদের রোমান্টিক কনভার্সেশান। লেখক-লেখিকা যেভাবে যেমন চরিত্র একেছেন বা বিল্ডাপ করেছেন, তাঁর সাথে এইটা একটু বেশি 'পুতুপুতু' মনে হয়েছে। বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞ্যতা থেকে যা অনুধাবন করি, স্বামী-স্ত্রীর একান্ত আলাপ আবেগী হলেও কমবয়সীদের মতো বেশি পুতুপুতু আসে না। আসলেও যেরকম চরিত্রে আসা সম্ভব, আমার কাছে মনে হইসে, অঙ্কিত চরিত্রগুলো তেমন ছিলো না।
মনে হয়েছে, লেখক-লেখিকা আত্মগ্লানিতে বা হীনমন্যতায় ভুগছিলেন দার্শনিক ইশ্যু নিয়ে। তারাবাবুর কবি উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই, সাদা-কালো রেসিসমের ইশ্যুকে প্রশ্নোবিদ্ধ করে উত্তর খুজেছেন কত সুন্দরভাবে। কালবীর উপন্যাসে দুই জায়গায়, ভিন্ন দুই চরিত্রের কথাতে এসেছে, নারী বলছে পুরুষ চরিত্রকে, উক্ত নারী অনেক কালো, পুরুষ চরিত্রটি সারাজীবন তাকে ভালোবাসবে কি না। লেখক-লেখিকা জিনিসটা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যার্থ হয়েছেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে আমার মনে হইসে, 'কালো হলে সারাজীবন ভালোবাসে না কেউ, বিয়েও করে না।' তাই বার বার জিজ্ঞ্যাসা করতেসে এবং সেটাই অভিয়াস। আদতে ব্যাপারটা সেরকম না। আমার মতে, ব্যাপারটা হইতেসে, ইট-কাঠের কর্পোরেট ভালোবাসাবাসি বর্তমান গ্লোবালাইজড এই দেশে আজো এরকম হয়। কালোতে নাক-সিটকানো আসে আজো। সিটকায় যারা তারাও আছে আশেপাশে, সিটকায় না, বদার করে না তারাও আছে। নাক সিটকায় এইটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। কিন্তু সেটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যায় না যে, 'সিটকাতেই পারে। স্বাভাবিক। তুমি সিটকাচ্ছো না কেনো?' জিনিসটা একজন পাঠক হিসেবে আমার বিব্রতকর লেগেছে।
এই উপন্যাস সম্পর্কে রিভিউ দিতে আসলে যেটা বলা যায়, আনপুটডাউনেবল উপন্যাস। একবার বইটা হাতে রাখলে, বন্ধ করা বেশ কষ্টকর। বর্তমান তরুণ লেখকদের মধ্যে খুব কম লেখকদের লেখায় পরিপূর্ণতা আছে, তাদের মধ্যে ফরহাদ চৌধুরী শিহাব অন্যতম। সাথে যোগ হয়েছে মাদিহা মৌয়ের প্রাঞ্জলতা। লেখনীর পর আছে কাহিনী বিন্যাস ও চরি��্রায়ন, সেখানে দুই লেখক-লেখিকা চমৎকার দক্ষতা দেখিয়েছে। এক দক্ষ তাতী যেভাবে সুতা বুনে কাপড় তৈরি করে, তাদের লেখনী, কাহিনী বিন্যাস ও চরিত্রায়নের সাহায্যে সেভাবেই তৈরি করেছে কালবীরের মতো এক উপন্যাস। বইটা পড়ে এক তৃপ্তি পেলেও, তৃপ্তির ঢেকুর তোলার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে পরের বইয়ের জন্য। তবে আমার পরামর্শ হলো বইটা পড়ে ফেলা। কারণ ছোটোবেলায় একটা বই পড়ার পর আরেকটা বইয়ের জন্য যেভাবে অপেক্ষা করতাম, কালবীর আপনাকে সেই অনুভূতি এনে দিবে, আর সেটা এক মিস্টি অনুভূতি।
"Who reads Incessantly, and to his reading brings not A spirit and judgment equal or superior, (And what he brings what needs he elsewhere seek?) Uncertain and unsettled still remains, Deep versed in books, and shallow in himself."
-John Milton, Paradise Regained
মাঝে মাঝে কিছু বই পড়ে এমন অনুভূতি হয় যেনো সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।মনে হয় শূন্যে ভেসে আছি।জগতের কোনো কিছু স্পর্শ করছেনা।আমি সব দেখছি কিন্তু আমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছেনা।আর কিছু কিছু বই পড়ে মনে হয় ওকে কাহিনিটা ঠিক কি হলো?আবার পড়তে হবে এই পার্টটা।কালবীর দ্বিতীয় টাইপের বই।জটিল প্লট আর টাইম ট্রাভেল নিয়ে প্যাঁচানো কাহিনিতে মাথা হ্যাঙ হয়ে যায় মাঝে মাঝে।
যদি কাহিনি সংক্ষেপে বলি তাহলে ঘটনার সূত্রপাত্রটা ঠিক কোথায় হয়েছে বলা মুশকিল।টাইম ট্রাভেলের জটিল ধাঁধায় গল্পের সময়কাল দ্রুত বদলেছে।কখনো ১৯৭৮ কখনো ২০৩৮ কখনো ২০০১ আবার কখনো ১৯৪৯।তবে বেশীরভাগ গল্পই বর্তমান সময়কালের অর্থাৎ ২০১৯ সালের।স্কুলের পিকনিকে গিয়ে ভয়ানক এক বাস দুর্ঘটনায় ক্লাসমেটসহ অনেককে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছে ত্রয়োদশী কন্যা মিতুল।অলৌকিকভাবে বেঁচে তো গেছেই তার উপর মারাত্মক জখম হওয়া হাত অবিশ্বাস্যভাবে ঠিকও হয়ে গেছে।পুরোটাই কি নিয়তি?নাকি কেউ একজন সময়ের কোনো এক অবস্থান থেকে মিতুলকে সারিয়ে তুলছে?কে সে?
১৯৭৮ সালের শীতকালীন এক বিকেলে ডাইমেনশন প্রজেক্টের গবেষক প্রফেসর সুলতান তার তিন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে ল্যাব থেকে উধাও হয়ে যান।আরেক গবেষক লেকচারার ফাল্গুনীকে উদ্ধার করা হয় ল্যাবের বেসমেন্ট থেকে।কি ঘটেছিল ফাল্গুনীর সাথে?কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রফেসর সুলতান?কে ফাল্গুনীর বংশ পরম্পরা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর?কে সে?
কালবীর!এক ভয়ানক আলোক বিন্দুর নাম।
কেমন লেগেছে বইটা?আমার কাছে মনে হয়েছে কাহিনি খুবই স্লো এবং প্রচুর অযাচিত বর্ণনায় ভরপুর।এতোটাই যে মাঝে মাঝে পড়তে বিরক্তি চলে আসছিলো।একটানা পড়া সম্ভব হয়নি।ফিজিক্সের জটিল কিছু বিষয় নিয়ে প্লট সাজানো হয়েছে।যখন কাহিনি স্লো হয় এবং কমার্সের স্টুডেন্টের এমন জটিল বিষয় বুঝে পড়তে হয় তখন টানা পড়ে যাওয়া সত্যিই মুশকিল।তবে শেষের দিকে গল্পে গতি এসেছে।মোটামোটি ২২০ পেজের পর টানা পড়ে যেতে পেরেছি।
সিরিয়াস ফিজিক্সের স্টুডেন্ট ছাড়া প্লটহোল খোঁজে বের করা সম্ভবনা।আমি তাই সেদিকে যাচ্ছিনা।তবে আমার কাছে প্লট সলিড মনে হয়েছে।কয়েকটা বিষয়ে খটকা আছে যেমন জুলাই মাসে কৃষ্ণচূড়া ফোটে কিনা,ক্লাস এইটের বাচ্চার ভূরাজনীতি নিয়ে গুরুগম্ভীর ভাষণ দেওয়া এসব।কোনোটাই মূল কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত না যদিও।অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে এ খন্ডে যেগুলোর উত্তর হয়তো পরের খন্ডে পাবো।পরের পর্বে এক্সপেকটেশন থাকবে বাহুল্যতা বর্জন করার।
প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে।বানার ভুল আছে অনেক।৮১ নাম্বার পৃষ্টায় নাম অদল বদল হয়ে গেছে।ভূমি'র বইয়ে এতো বানান ভূল আগে দেখিনি।
Couldn't get into it at first. Thought it's a slow burn, Okay. Hundred and fifty pages in, and it's not a slow read anymore, just has bunch of unnecessary details that doesn't concern the plot at all. Or it could, in the sequel maybe? Dunno.
That does not mean I didn't enjoy it. I did, but could've enjoyed more if the overall pace was maintained throughout the book. It was slow, then fast paced, then got interesting, got boring with unnecessary details, got interesting again, ended.
I'll wait for the next book to come out and then rate this one. Enjoyable read, don't expect much though.
❝আমি কালবীর। তোমার সর্বশেষ ভূত ও ভবিষ্যৎ কণা। তোমার ইচ্ছাতেই সব প্রবাহ বদলে যাক মানুষ! তুমি তো কেবল চেতনা মাত্র। আমি সর্বগ্রাসী।❞
★কাহিনী সংক্ষেপ- ত্রয়োদশী এক কন্যা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে শিকার হলো ভয়ংকর দূর্ঘটনার, সাথের সবাই মারা গেলেও অদ্ভুতভাবে বেঁচে গেল সে। এরপর থেকেই তার সাথী হলো এক অনৈসর্গিক সত্তা। কে সেই সত্তা? এর সাথে একচল্লিশ বছর আগের প্রফেসর সুলতানের ডাইমেনশন নিয়ে রিসার্চ কীভাবে সম্পর্কিত? ১৯৭৮ সাথে কী এমন হয়েছিল যা আজও ইতিহাসের পাতায় অমীমাংসিত। সেই ঘটনার রেশ বয়ে চলছে ফাল্গুনীর একমাত্র বংশধরের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের নিচ্ছিদ্র চাদর ভেদ করে কী এমন হচ্ছে, যা সময়কালের চিরায়ত নিয়ম ভেঙ্গে দিচ্ছে, চরিত্রগুলো ডুবে যাচ্ছে অস্পৃশ্য বাস্তবতায়, অথবা ভ্রমে? রহস্যময় সত্তা কালবীরের সাথে পাঠককে ভিন্ন ভুবনে স্বাগতম।
★পাঠ প্রতিক্রিয়া- গল্পটা শুরু থেকেই বেশ আগ্রহ জাগানিয়া ছিল। প্রথমেই পাহাড় দূর্ঘটনার মাধ্যমে কাহিনী জাকজমক প্রারম্ভ ঘটে। ঝড়বৃষ্টির কবলে গুমোট থাকা, অন্ধকারাচ্ছন্ন পাহাড়ি পরিবেশ এবং সেখানে দূর্ঘটনা ঘটার প্রতিটা বর্ণনা বেশ জীবন্ত ছিল। তাই শুরু থেকেই গল্পে ডুব দিতে বাধ্য হবেন। নন-লিনিয়ার প্যাটার্নে লেখা গল্পটা, অর্থাৎ একইসাথে একাধিক টাইমলাইনে গল্প এগিয়ে সমাপ্তিতে সব এক সুতোয় মিলবে। নন লিনিয়ার প্যার্টানের জন্যে উপযুক্ত ছিল প্লটটা, যতই গল্প সামনে আগাচ্ছিল ততই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছিল। মাঝে মাঝে অতিপ্রাকৃত আবহ আসত, কখনো মনে হয়েছে সাইফাই পড়ছি, কখনো বা সায়েন্স ফ্যান্টাসি। সবশেষে আমি প্লটটাকে সবকিছুর দারুণ মিশেল বলব। হরর আবহ তৈরি করতে লেখকদ্বয় ষোল আনা সফল ছিলেন। এছাড়া ঘটনার মোড়গুলো এবং টাইমলাইন চেইঞ্জ হওয়াটাও বেশ ছিল, প্রতিবার মনে হচ্ছিল যেন আলাদা কোনো সাবপ্লট। ঘটনা আসলেই বেশ বিস্তৃত, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ একে অপরের সাথে কানেক্টেড। মাঝে মাঝে প্যারারাল ইউনিভার্সের মতনও আবহ আসছিল। এক কথায় বেশ জটিল প্লট বলা চলে, সবকিছুর পার্ফেক্ট মিশ্রণ। এণ্ডিং দেখে মনে হবে শেষ হয়েও হয়নি শেষ। আদতে সব রহস্যের মূল সমাধান যেন এখনো বাকি। গল্পটা এমনই জটিল যে শেষ পর্যন্ত যাত্রা অব্যাহত না রাখলে গেস করতে পারবেন না কোথায় মোড় নিচ্ছে সব।
★চরিত্রায়ন- গল্পের প্রাণশক্তি বলতে গেলে গল্পের চরিত্রায়ন। মিতুল, শাহেদ(মিতুলের বাবা), ফাল্গুনি(মিতুলের দাদি), সাদী এই চার চরিত্র নিয়েই মূলত গল্প এগিয়েছে। এই গল্পের মূল চরিত্র বলা চলে। এছাড়া গল্পের স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্যে যেসব চরিত্র এসেছে তাদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়ন এবং কার্যকালাপ এতটাই নিঁখুত ছিল যে বেশ উপলব্ধি করেছি। প্রতিটা চরিত্র স্বকীয়তা ছিল, সময় এবং গল্পের পরিবর্তনের সাথে সাথে চরিত্রগুলোও যৌক্তিক রেসপন্স দিয়েছে, যা হরর আমেজ অটুট রাখতে বেশ সাহায্য করেছে। এছাড়া চরিত্রগুলোর পরস্পরের সাথে সম্পর্ক থাকা বাস্তব সামাজিকতাই তুলে ধরেছে, তাই ফিকশনের গণ্ডি পেরিয়ে জীবন্ত লাগছিল সব।
★ভালো-মন্দ দিকগুলি: ভালো দিক হচ্ছে গল্প ডিটেইলসে পরিপূর্ণ, প্রাকৃতিক দৃশ্য, অতিপ্রাকৃত আবহ কিংবা চরিত্রের কার্যকালাপে ব্যাখা বেশ নিঁখুত ছিল, লেখকদ্বয় ভালো মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে যা কেন্দ্র করে গল্প, তথা ‘কালবীর’(চিরায়ত জগতের বাইরে অন্য মাত্রার কেউ) চরিত্রটার উপস্থিতিই গা ছমছমে ভাব আনত, শেষ অবধি রহস্য অম্লান ছিল। গল্পে প্লটহোল আসতে পারত, কিন্তু জটিল সবকিছু এক বিন্দুতে বেশ দক্ষভাবেই আনা হয়েছে (প্লটহোল থাকলেও আমার দ্বারা তা বের করা বোধহয় সম্ভব নয়, বেশ জটিল)। মন্দ দিক বলতে আসলে, মাঝে মাঝে বর্ণনার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত মনে হতে পারে, তাই বিস্তৃত বর্ণনা যারা পছন্দ করেন না, তাদের ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু শেষ অবধি পড়লে বুঝবেন, বেশ ইউনিক আর দারুন কনসেপ্টে লেখা মৌলিক এটা। এই প্লটকে আমি দশে দশ দিব, মিস্কড জনরার পার্ফেক্ট বই 'কালবীর-আবির্ভাব'। বইটার দ্বিতীয় অধ্যায়ের আখ্যানের অপেক্ষায় রইলাম।
নাম- কালবীর (আবির্ভাব) লেখক- মাদিহা মৌ এবং মো. ফরহাদ চৌধুরি শিহাব প্রকাশনী- ভূমি প্রকাশ
কোন জনরায় ফেলবো? হরর? সুপারন্যাচারাল? সাইন্স ফিকশন? পুরো বইটা আমার কাছে মনে হয়েছে সাইন্স ফিকশন, হরর আর সুপার ন্যাচারাল এর জোটবদ্ধ প্যাকেজ।
শুরু থেকে শেষ অবধি বইটা ধরে রেখেছিলো, যদিও কিছু কিছু অংশে দীর্ঘ বর্ণনা কাহিনীতে কিছুটা ধীর গতি আনলেও বইটা ছিলো অসাধারণ। সুদীর্ঘ এ বইয়ে অনেক চরিত্রের ঘনঘটা থাকলেও চরিত্রায়ন গুলো ভালো ছিলো। বইটা শেষ করে মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে আছি। তব্দা খেয়ে আছি এখনও। বইটা আমার কাছে লেগেছে আন্ডাররেটেড একটা মাস্টারপিছ।
বই : কালবীর আবির্ভাব লেখক : মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব, মাদিহা মৌ প্রকাশনী : ভূমিপ্রকাশ মলাট মূল্য : ৫৩০ টাকা
বাংলাদেশে অতিপ্রাকৃত জনরায় যারা লিখে থাকেন তাদের মধ্যে 'ফরহাদ চৌধুরী শিহাব' অন্যতম পরিচিত মুখ। আর 'মাদিহা মৌ'কে অনুবাদক হিসেবে চেনে অনেকেই। 'কালবীর আবির্ভাব' তার প্রথম মৌলিক ও যৌথ উপন্যাস। প্রায় এক বছর আগে প্রকাশিত এই বইটি ঠিক যতটা পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে, ততোটা আলোচনায় আসেনি। বলতে গেলে একেবারেই আলোচনা হয়নি বইটি নিয়ে। এর কারণ আমার জানা নেই। তবে বইটা নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিল। যাই হোক বইটা নিয়ে ছোট করে একটু আলোচনা করার চেষ্টা করি।
গল্পের খানিকটা- ২৯শে জানুয়ারি, ২০১৭। ত্রয়োদশী কন্যা মিতুল পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে শিকার হলো এক ভয়ংকর বাস দুর্ঘটনার । সাথের সবাই সেই দুর্ঘটনায় মারা গেলেও সে বেঁচে গেল মরতে মরতে। এরপর থেকেই এক অনৈসর্গিক সত্ত্বা সঙ্গী হলো মিতুলের। কে এই সত্ত্বা? তার উৎপত্তি কোথায়?
ঘটনার সূত্রপাত নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। পুরো গল্প জুড়ে লেখকদ্বয় খেলেছেন সময় নিয়ে। টাইম ট্রাভেলের অদ্ভুত খেলায় গল্পের সময়কাল পরিবর্তন হয়েছে দ্রুতই। কখনও ২০১৯, কখনও ১৯৭৮ আবার কখনও ২০৩৮..! তবে গল্পের বেশিরভাগ অংশ ২০১৯'র।
১৯৭৮ সাল। ফাল্গুনীর থিসিসের সুপারভাইজার প্রফেসর সুলতান তার কয়েকজন এসিস্টেন্টসহ তার বাড়ির ল্যাব থেকে উধাও হয়ে গেলো। বাড়ির একটি কাচও আস্ত নেই। শুধু ফাল্গুনীকে বাড়ির বেজমেন্টে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। কি হয়েছিলো সেদিন কেউ জানে না। পুলিশ কেস রিপোর্টে এখনও অমীমাংসিত।
২০৩৮'এ প্রাইম-আলফা কর্পোরেশনেও প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। আগাগোড়া কাচের জানালা দিয়ে ঘেরা বাইশ তলা বিল্ডিংটির সবগুলো জানালার কাচ ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো। পুরো বিল্ডিংএ দু'জন মানুষ ছাড়া বাকিরা উধাও। কি ঘটেছে কেউ জানে না।
উপরের তিনটি ঘটনা 'কালবীর আবির্ভাব'এ ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রধান বলতে হবে। কিন্তু এসব ঘটনার সম্পর্ক কোথায়? জানতে হলে পড়ে ফেলুন 'কালবীর আবির্ভাব'।
এক কথায় যদি প্রতিক্রিয়া বলি তাহলে বলতে হবে "দেড় ঘণ্টা পাগল আছিলাম"। টাইম ট্রাভেল ও ভৌতিক আবেশের মিশ্র প্লটে সাজানো হয়েছে গল্পটি। আমাদের পাঠকমহলে টাইম ট্রাভেল নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। এই জনরার পাঠকদের জন্য এই বইটা উৎকৃষ্ট মনে হয়। গল্পটা যদিও কিছুটা ধীরগতির আর কিছু জায়গায় গল্পের কলেবর টেনে বড় করা হয়েছে মনে হলেও যতক্ষণ পড়েছি এবেবারে গল্পে ডুবে ছিলাম। বইতে ভুল বানান কমই ছিল। প্রচ্ছদটাও দেখার মতো। গল্পের সাথে একাবারে খাপে খাপ! সবমিলিয়ে বেশ ভালো। বইটা সবাইকে পড়ার আহ্বান জানাবো। দ্বিতীয় খণ্ডের অপেক্ষায় রইলাম 💙