Jump to ratings and reviews
Rate this book

তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি

Rate this book
আড়াই হাজার বছর আগে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ নিখিল জীবনের দুঃখনিবৃত্তির উপায় খুঁজতেই গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, 'মার'কে জয় করে বুদ্ধ হয়েছিলেন| যা মানুষকে পরম সত্য জানতে দেয় না, অন্তিমে দুঃখ দেয়, বৌদ্ধশাস্ত্রে তাকেই 'মার' বলা হয়| পরিশেষে কে প্রকৃতই জয়ী হলেন-- সিদ্ধার্থ নাকি মার? উপন্যাসটির অন্তিমে লেখক সেই নিগুঢ় প্রশ্ন তুলেছেন|

159 pages, Hardcover

Published December 1, 2019

12 people are currently reading
226 people want to read

About the author

Sanmatrananda

15 books97 followers
সন্মাত্রানন্দ

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
47 (47%)
4 stars
39 (39%)
3 stars
11 (11%)
2 stars
2 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 34 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,662 reviews421 followers
September 14, 2022
৩.৫/৫

গল্পটা গৌতম বুদ্ধ আর মারের। সাথে আছে সুজাতা, সৌদয়, ময়ূখ আর পুনর্জন্মের আখ্যান। যারা সিদ্ধার্থের বুদ্ধ হওয়ার পূর্ণ ঘটনা জানেন তারা খুব বেশি নতুনত্ব পাবেন না। কিন্তু অতীত বর্তমান মিলিয়ে লেখক চমৎকারভাবে গল্পের জাল বিস্তার করেছেন। বুদ্ধ আর মারের দ্বৈরথে কে জেতে? আমরা জানি বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছেন কিন্তু মার কি পরাজিত হয়? আমি, আমিত্ব, অহং, লোভ, যুদ্ধ, রক্ত কি মানুষ এড়াতে পেরেছে?আদৌ পারবে কখনো? এ দ্বৈরথ চলবেই।

(১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২)
Profile Image for Yeasin Reza.
509 reviews86 followers
May 14, 2024
এই উপন্যাস গৌতম বুদ্ধ কে নিয়ে নয়। বরং রাজকুমার সিদ্ধার্থ কে নিয়ে যে জীবনজিজ্ঞাসায় জর্জরিত; মোক্ষকামী হয়ে যিনি ঘর ছেড়েছিলেন কোন এক জ্যোৎস্নারাতে, যিনি মানবিক প্রবৃত্তি কিংবা মারের সাথে সংগ্রামরত নির্বাণ লাভের উদ্দেশ্যে - এই উপন্যাস সেই দিকভ্রান্ত রক্তমাংসের যুবককে নিয়ে, বোধিপ্রাপ্ত বুদ্ধ যিনি হোননি।

সম্মাত্রানন্দ এক অনন্যসাধারণ নজরিয়াতে সিদ্ধার্থের বুদ্ধ হবার সময়টার যাকে বলে রি-ইমাজিনেশন করেছেন। অপার কল্পনাশক্তি ও পরম নিবেদিতপ্রাণ না হলে কারো পক্ষে এরকম কোন কিছু লেখা সম্ভব নয়। বাংলা ভাষার বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য এবং শক্তির প্রকৃৃষ্ট উদাহরণ সম্মাত্রানন্দের লেখা। পুরো উপন্যাস ভিন্ন এক জগতের সৌন্দর্য যা হয়তো আমাকে ছুঁয়ে যায় কিন্তু আমি তো এমন অলীক কিছু ছুঁতে পারিনা!!
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews33 followers
February 22, 2022
একদম আলাদা এক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধার্থকে দেখলাম।
Profile Image for Nisha Mitra.
141 reviews39 followers
May 7, 2023
অনেকক্ষণ ধরে আকাশের চাঁদটাকে দেখলাম। চোখ বন্ধ করে অনুভব করলাম চাঁদের আলো চোখের পাতার ওপর পড়ছে। নির্মেঘ আকাশে একটা দুটো তারা। প্রাগৈতিহাসিক আলো। সহস্র, কোটি বছর আগে আমিই হয়তো চাঁদকে দেখে একইরকম মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলাম।

মাত্র দুটি সহস্র বছর আগে তথাগত যে চাঁদের আলোয় বেরিয়ে এসেছিলেন কপিলাবস্তু ছেড়ে, রওনা দিয়েছিলেন ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে, সেই ছেড়ে আসায় ছিল গভীর বিষাদ। সন্দিগ্ধতা। মার - এর পিছুটান রেখে, সংসার - সমাজ ফেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন সিদ্ধার্থ - তার কোনো হিসাব ছিল না। বহুদিন বাদে মধ্যপন্থা আবিষ্কার করেন যখন তিনি। তখনো কি সংসার ছেড়ে আসার দায় নিয়েছিলেন ?
তথাগতর বিশালতা নিজেকে বোঝার মধ্যে। তিনি কোনো গুরুকে দেখে নিজের পথ তৈরি করেন নি। নিজের আদর্শ, দুঃখ এর নিবারণ - তাকে টেনে নিয়ে যায় নৈরঞ্জনা নদীতীরে। মার কে পরাজিত করে বোধি লাভ করেন। সিদ্ধার্থ বুদ্ধ হন। গল্প শেষ হয়। কিন্তু সত্যি ই কী তাই?
তথাগত কেন ছেড়ে এসেছিলেন তার সুন্দর জীবন?
মানুষের একাকীত্ব। সব থেকেও শূন্যতা - এইই চিরকালীন। মায়া, empathy যার যত বেশি সেইই এই বিষাদ এ আরো ঢুকে পড়ে। অজানাকে জানার আগ্রহ , নিজেকে খোঁজা এগুলো শূন্যতা সৃষ্টি করে। না নেগেটিভ কথা বলছিনা। এটা নৈরাশ্যবাদও নয়। যার মনে আশা আছে সেই -ই তো বিষাদ ছুঁয়েছে। যে আশা করেনি তার কিছু হারায়নি।
সিদ্ধার্থ দুঃখ নিবারণের পথ পেয়েছিলেন। আমরা যারা ক্ষুদ্র মানুষ তারা এখনও পথিমধ্যে খুঁজে চলেছি নিজেদেরকে। আমরাও কি বলতে পারিনা ?
তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি - এখনও।
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews195 followers
February 5, 2022
শুরুতেই লেখক বলে দিয়েছেন এ গল্প অর্ধেক তাঁর কল্পনার, বাকি অর্ধেক ইতিহাস আশ্রিত। দুইভাগে এগিয়েছে উপন্যাসটি। শেষে এসে এক সুতোয় চমৎকারভাবে মিলে গিয়েছে। তবে ভাষার আলাদা ব্যবহারটুকু কেন, তা বোধগম্য হয়নি।
যাই হোক, উপন্যাসের দুটি ভাগের একটি বর্তমান, যেখানে ময়ূখ বলে শিক্ষক এবং লেখক একজনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং দ্বন্দ্বের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। ময়ূখের চোখের সামনে একের পর এক অতীতের ঘটনা চলে আসে। সে কি তবে জাতিস্মর? সুজাতা কিংবা সৌদাসই বা কে?
অন্য ভাগটি গৌতম বুদ্ধ এর বোধিলাভ আগের কাহিনী।
আমাদের জীবনের যাবতীয় ভালো-মন্দ আবির্ভূত হয় আমিত্ব থেকে, এখানে এটি মার। মানে নিজ বোধ। এই নিজের সত্তা এবং সিদ্ধার্থের দ্বন্দ্ব, সিদ্ধার্থের মারকে পরাজিত করে বোধিলাভের ঘটনাই বিবৃত হয়েছে উপন্যাসের সিংহভাগ জুড়ে। নানান ফিকির করেও মার, যে নিজেকে অকৃত্রিম বন্ধু বলে পরিচয় দিত, সে ছুঁতে পারেনি বুদ্ধকে।
এইখানে এসেই মিলে গেছে সৌদাস বলে এক কবি এবং তাঁর স্ত্রী সুজাতার গল্প।
দার্শনিক নানান প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে উপন্যাসটি, বেশ অন্যরকম। লেখনশৈলী সুখপাঠ্য। সব মিলিয়ে বেশ লেগেছে।
Profile Image for Soumyabrata Sarkar.
238 reviews40 followers
February 29, 2020
তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি

সিদ্ধার্থ গৌতম নিয়ে প্রথম বড় নিবন্ধ পড়েছিলাম হারমান হেশের "সিদ্ধার্থ"।



তারপর হাস্যচ্ছল চিত্রায়নে, মনে দাগ কাটে জাপানি "মাঙ্গা" কমিক্সের প্রবাদপ্রতিম - ওসামু তেজুকা-র রচিত আট-খন্ড ব্যাপী গ্রাফিক নভেল "বুদ্ধ"।

দাসপুত্র "চাপড়া", জাতিবর্ণবিদ্বেষের শিকারে যে জর্জরিত হয়ে নিজেকে নবরূপে এক শ্রদ্ধেয় শ্রেষ্ঠীতে রূপান্তরিত করতে চায়, প্রত্যুৎপন্নমতি বালক "তত্ত্ব", যার সাচ্ছন্দ সাধারণত উলঙ্গ থাকাতেই প্রস্ফুটিত, এবং যে নিজের বিবেক - শারীরিক দেহের বাইরে প্রক্ষেপিত করে অভূতপূর্ণ ঘটনা অবলোকন করতে পারঙ্গম, ও শ্রমণ "নরদত্ত", যে তাঁর প্রভু, "মহামুনি অসিত"-এর অর্ধসমাপ্ত কার্যকে সফল করতে খুঁজে বেড়ায় - আলোকপ্রাপ্ত এক পুরুষের সন্ধান। এরই মাঝে রয়েছেন "শাক্যসিংহ সিদ্ধার্থ গৌতম", ও তাঁর মধ্যপন্থা।

এই সুবৃহৎ চিত্রপন্যাসে - যেমন একদিকে রয়েছেন যশোধরা, প্রসেনজিৎ, বিরুধক, বিম্বিসার, অজাতশত্রূ, দেবদত্ত, সুজাতা, আনন্দ, অঙ্গুলিমাল সম ঐতিহাসিক সর্বজনবিদিত ব্যাক্তিত্ব, তেমনি আছেন অহংকারী "বন্দক", সিদ্ধার্থের প্রেমাকাঙ্খিনী - ডাকাতিনি "মিগাইলা", কুপিত শমন "ঢেপা", ভবিষৎপ্রবক্তা বালখিল্য "আসাজি", নগরনেত্রী "বিশাখা", দৈত্য "য়াতালা"-র মতো কল্পিতলোকে রচিত অনন্য সব চরিত্ররা।

দৃশ্যত স্পষ্ট রূপক এবং হাস্যকর ও চিন্তা-চিত্তাকর্ষক চিত্রণে এই রচনা অপূর্ব লেগেছিল।



এর ঠিক পরে পরেই হাতে আসে অনিতা কানেকারের রচিত "A Spoke In the Wheel"।
তেজুকা-র কুহক রূপকথার মায়াজাল থেকে, এই রচনা ছুটে গেছে বিপরীত দিকে। এই রচনায়, সামন্তরালে হেটে গেছে দুই প্রধান অধিবক্তা - "সিদ্ধার্থ", ও তার তিনশত বৎসর পরবর্তী সম্রাট অশোকাধিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী "উপাসক" - উপালি, যিনি অশোকের পরামর্শে ব্রতী হয়েছেন সেই সময়ের সবচেয়ে কঠিন কার্যে - সিদ্ধার্থের ধুলায়-ধূসরিত আত্মবিস্মৃত ইতিহাস উন্মোচন করতে।

এই রচনায়, আর্নল্ড এর "Light of Asia", ও অমর চিত্র কথায় বর্ণিত "বুদ্ধ"-র রূপগন্ধস্পর্শ-ময় লাস্য মায়াবিনী জীবনচরিতের বদলে ফুটে উঠেছে - হাহাকার, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের মাঝে বেড়ে ওঠা এক অসহায় মানুষের আর্তনাদ, যে স্বমহিমায় আলোকপ্রাপ্ত হয়েও, শত চেষ্টা করেও মানুষের হিংসা, লোভ ওর চারিত্রিক ত্রুটি দূর করতে অসক্ষম হয়েছেন, এবং সেই দুঃখ নিয়েই প্রস্থান করেছেন নির্বানপথে। উপালি-র চুলচেরা জীবনী বিশ্লেষণে - সিদ্ধার্থের রাজপ্রাসাদিক ও বুদ্ধের বোধিবিল্ব তপোবনের দুঃখবিলাসিক রূপকথা কে ফালাফালা করে চিঁড়ে, রেখে যায় অনুকম্পিত অনন্য করুনাময় ব্যঞ্জনা - যেখানে শাক্যসিংহ নিজেই নিজ-প্রশ্নপাশে জর্জরিত, আত্মসন্দিহান একাকী অভিযাত্রী।



এরপর এক বহু পাঠ-কাঙ্খিত উপন্যাস ধরেও ধরা হয় নি। বাণী বসু-র "মৈত্রেয় জাতক" । ক্রমশ তাও পাঠ করবার আশা রাখি। মাঝে যদিও, অমর মিত্রের "অস্বচরিত"-এ দেখা পাই সিদ্ধার্থ-র প্রিয় "কণ্ঠকের", কিন্তু সে অন্য কাহিনী। অন্য তার ব্রম্ভান্ডিক পরিবেশ।




এই তো গেলো "আগের কথা"। এরপরে আসি ১৪৪ পাতার এই ক্ষুদ্র রচনার কথায়, যা শুধু নামমাত্রেই ক্ষুদ্র, কিন্তু ব্যাপ্তিতে ছাড়িয়ে গেছে বহুমাত্রিক দিকসিন্ধু। সাহিত্যিক(কাব্যিক), ঐতিহাসিক, সামাজিক ও দার্শনিক চিন্তনের পাশাপাশি গ্রন্থিত হয়েছে, "সন্মাত্রনান্দিক - স্থান-কাল-পাত্র ঐকিক উর্ণিজাল" যা তার চিরাচরিত ঐন্দ্রজালিক দক্ষতা।

কমলনয়ন, শ্রমণ চাগ্‌ লোচাবা, পণ্ডিত বাচস্পতি মিশ্র, কুলবধূ স্বয়ংবিদা, মধুসূদন সরস্বতী, কৃষক অনঙ্গ দাস ও তাঁর কন্যা জাহ্নবী, পদ্মাক্ষ, ভামতী, যুবক অমিতায়ুধ, লেখক শাওন, রাজীবলোচন-এর মত জাজ্জল্যমান চরিত্রের ভীড়ে এসে মিশেছে এই উপন্যাসের কল্পিত ও বাস্তব চরিত্রেরা। আরেক কথায় বলতে গেলে, তুলনামূলকভাবে এই বইটির বিষয়বস্তু, "Temptation of the Buddha"। নিকোস কাজানতজাকিস-এর গ্রিক আলেখ্য-র Satan's viewpoint-এর মতই, এই রচনায় এসেছেন অনঙ্গদেব মার্। কিন্তু শুধু মার্-ই কথক নন এই কাহিনীর। আছে ঊর্মিমুখর স্রোতস্বীনি প্রবাহিনী "নৈরঞ্জনা", প্রাচীন নগরী "রাজগৃহ", সন্ন্যাসী "সুগত", এক অজ্ঞাত আখ্যায়ক, সমসাময়িক অধ্যাপক "ময়ূখ", পায়সপাত্র-চিহ্নিতা পল্লীবধূ "সুজাতা", কালস্রোতে বিস্মৃত তাঁর স্বামী "কবিবর সৌদাস", ও শাক্যসিংহ সিদ্ধার্থ নিজে।

চন্দ্রস্নাত-রাত্রের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ত্যাগ-সমাপ্তে সিদ্ধার্থের মহানিষ্ক্রমণ মাত্রেই, তাঁর তেজোদীপ্ত শরীর থেকে বেরিয়ে আসেন মার্। যুগপৎ তার সাথেই পথের সহযাত্রী হন। কখনো বন্ধুনামে, কখনো বা মুক-দর্শক, অন্য কোথাও উপেক্ষিত কোলাহল-প্রণেতা। তাঁদের এই যুগলযাত্রার সাক্ষী থাকেন উপরে বর্ণিত ভৌগোলিক জড় চরিত্রেরা, স্বাক্ষরিত হন সেই অভূতপূর্ব অপাংতেয় মুহূর্তগুলির। গ্রাম্য পরিবেশ, নগরীর জাকঁজমকে নিবীড় ক্লান্তি, পাদপসমূহসন্নিৱিষ্ট প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য, নদীর কল্ললিনী স্বরে তার গতানুগতিক কালাতিপাতের কাহিনী, অপরাহ্নের দিক-অপসারিত আদিত্যরশ্মি, সায়াহ্ন-গোধূলির তন্ময়তা, বা রাত্রিনিশীথের ঔদাস্য, সবই বাঙময় লেখকের কলমে। এ এক অমৃত-কুম্ভের ভান্ডার!

তবে, আসল কৃতিত্বের সাধুবাদ প্রাপ্য, শেষ দুই অধ্যয়ের রচনাকৌশলীর। তাঁদের এমনিই প্রসার, যে আমি বাধ্য হলাম, শেষ পর্ব দুটিকে সশব্দে পাঠ করতে। শ্রুতিপাঠে, কিরূপ যে মোহাবিষ্ট হলাম, ঘোর এখনো কাটে নি। মার্-এর শেষ কটূক্তিতে, তিনি বুদ্ধকে পরিহাস করছেন, বলছেন - সিদ্ধার্থের আগামী প্রজন্ম তাঁর এই আত্মপীড়া, বোধিলাভ ও নির্বানের পথে চলা দূরস্থ, তা প্রায় সম্পূর্ণ আত্মবিস্মৃত হবে। সুখদুঃখ সমেত মারবিজড়িত জীবনীই হবে তাদের কাঙ্খিত বস্তু, জগৎ-হিতায় সত্যলাভ নয়। দীপ ও ধুপ সমাহারে সিদ্বার্থেরই মূর্তি পূজিত হবে, হবে দেওয়ালগাত্রে সুশোভিত দর্শনসজ্জার নির্লজ্জ সামগ্রী। আদর্শ ও প্রেমের স্থান নেবে কৃত্তিমতা। হত্যা, হিংসা, মাৎসর্য, যুদ্ধ ও সংকীর্ণতার গাঢ় সুরায় আকণ্ঠ মত্ত হবে মানবসমাজ। কেউ মনে রাখবে না তাঁর করুণাঘন বাণী। শীতল যান্তবযানে নেমে আসবে মারণাস্ত্র। ধূলিসাৎ করে দেবে লক্ষকোটি প্রাণ। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শেষে, সংকেত আসবে বুদ্ধ-হাসির। প্রেমের বাণী থেকে কান ফিরিয়ে নিয়ে, এই ভবিষ্যতের উপহাস-ই হবে তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে, তাঁর কাঙ্খিত দান।

এর উত্তরে বুদ্ধ কি বললেন, তাই এই রচনাটির উপসংহারিক আলোকসংকেত।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
362 reviews34 followers
February 24, 2023
তথাগত, যাকে ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নানা বইয়ে নানা ভাবে দেখানো হয়েছে। তাঁর বুদ্ধত্ব অর্জনের দীর্ঘ পথ চলায় সঙ্গী হয়েছেন যাঁরা , নানা দেশের পথে পথে ক্ষনিকের জন্য আলাপ পরিচয় হয়েছে অনেকের সাথে সবই উঠে এসেছে তাঁকে নিয়ে লেখা লেখকের কলমে কিন্তু মূখ্য হয়ে থেকেছেন তিনি সবখানেই। অন্য সব চরিত্র এক ঝলক আলোর মত এসে আবার মিলেয়ে গেছেন।
লেখক সন্মাত্রানন্দ " তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি " বইটাতে লিখেছেন সিদ্ধার্থ কে নিয়ে, মূল চরিত্র হিসেবে সিদ্ধার্থ থাকলেও তিনি পার্শ চরিত্র গুলোকেও টেনে লম্বা করেছেন তাঁর কলমের আঁচড়ে। তিনি চরিত্র গুলোকে কিছুটা নিজের মন মত রুপ দিয়েছেন।

উপন্যাস টি দুইটা ধারায় বয়ে চলেছে, যেখানে সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের যাত্রা পথের পাশাপাশি লেখকের কল্পনা সমান ভাবে এগিয়ে চলেছে।
লেখকের কল্পনায় বর্তমান সময়ের মনস্তাত্ত্বিক আলোচনার সাথে সাথে সিদ্ধার্থের বোধি প্রাপ্তির আগের সময়টা সমান তালে চলেছে।

লেখকের লেখায় আলাদা একটা মাধুর্য আছে তা না পড়লে বোঝা যায় না। আর গৌতম বুদ্ধ কে নিয়ে অনেক বই আছে তবে এটা একটু আলাদা রকমের চমৎকার এক উপন্যাস জীবনী নয়।
Profile Image for শাওন  বড়ুয়া .
12 reviews2 followers
Read
February 19, 2025
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা 'মারকে পরাজিত করে সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভ'- এই বইয়ের উপজীব্য। সিদ্ধার্থকে পায়েসান্নদাতা সুজাতা আর তার লেখককল্পিত স্বামী সৌদাসের জন্মজন্মান্তরের প্রেমকাহিনী অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে।
মারের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখাগুলো বেশ আগ্রহ জাগানিয়া।
'জীবনকে উপভোগ করো'- এই উক্তি দিয়ে মার আমাকে পেয়ে বসেছে.
Profile Image for Ghumraj Tanvir.
253 reviews10 followers
July 11, 2021
দুর্দান্ত।
গোগ্রাসে পড়লাম।
Profile Image for Dhiman.
178 reviews15 followers
December 17, 2024
3.5/5
অনকে গভীর বিষয়। গোগ্রাসে গিলবেন না বইটি। ধীরে সুস্থে মাথা ঠান্ডা করে প্রতিটি লাইন প্রতিটি শব্দ বুঝে যদি রস আস্বাদন করতে পারেন তখন ভাল লাগবে। আমি এই ভুলটিই করেছি। কম পৃষ্ঠা দেখে গোগ্রাসে গিলেছি।
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
March 24, 2022
কাহিনীর অনেকটাই জানা যদিও বৌদ্ধধর্ম নিয়ে নানা বই পড়ার সুবাদে, এই বই ব্যতিক্রমী তবু তার দৃষ্টিভঙ্গীর ও লেখার ভঙ্গীতে। গৌতম বুদ্ধ বা সিদ্ধার্থ কিংবা তথাগত যে নামেই ডাকি ন��� কেন একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক ঘটনা তার সাধনা এবং বুদ্ধত্ব অর্জনের চেষ্টা কিংবা সফলতাও। তবু সে বর্ণনা আমরা পড়েছি ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে কখনো বা ভক্তের ভালোবাসায়। এই বইয়ে সিদ্ধার্থের এই বুদ্ধত্ব অর্জনের যাত্রাকে দেখা হয়েছে কখনো মারের চোখ দিয়ে, কখনো সেই চোখ সুজাতা যে কিনা বোধিবৃক্ষের নিচে সাধনারত সিদ্ধার্থকে পায়েস খাইয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কখনো সেই যাত্রাকে দেখা হয়েছে সুজাতার নাম না জানা স্বামী সৌদাসের চোখ দিয়ে যে কিনা একজন কবি এবং প্রেমিক। কখনো সৌদাস হয়েছে বহু জন্ম পরের একালের মধ্যবয়সী স্কুল শিক্���ক ময়ূখ হয়ে, কখনো সে হয়েছে মাঝের কোন জন্মের বৌদ্ধ শ্রমণ উদাত্ত, সুজাতা হয়েছে শ্রেষ্ঠীকন্যা মল্লিকা বা একালের সারনাথের হরিণী। তবে সৌদাস কিংবা উদাত্ত কিংবা একালের ময়ূখ হয়েছে জাতিস্মর, সুজাতা কিংবা মল্লিকা হয় নি অথবা সে কেবলই ময়ূখের কল্পনা। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের যাত্রার মধ্যে এ এক অন্য কাহিনী, অন্য প্রেমের গল্প সৌদাস এবং সুজাতার গল্প। আর ময়ূখ তো লেখকেরই ছায়াসত্ত্বা

মূল কাহিনী সিদ্ধার্থের পথ খুঁজে পাবার গল্প, আর মারের তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার গল্প। মারের সম্পর্কে জানতাম না তেমন আগে শুধু নামটি ছাড়া। মারকে দেখিয়েছেন নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা অন্য সত্ত্বাকে যা নিজেকে বারবারই লক্ষচ্যুত করে রাখে, বারবারই ভোলায় মায়া এবং মোহে। নিজের অন্তরে থাকা আকাঙ্খাই মার যা আসে মায়ার রূপ ধরে। মারকে অতিক্রম করে সিদ্ধার্থ কিভাবে বুদ্ধ হলেন, কেমন করে খোঁজ পেলেন যাবতীয় দুঃখের অবসানের পথ খুঁজে পেতে এ সেই গল্প। এই পথ সিদ্ধার্থকে খুঁজতে হয়েছিল নিজেই, অন্য কারো কাছে তিনি তা পাননি, তবে চেয়েছিলেন সবার জন্যই। বুদ্ধের সেই পথ মার কি ভুলিয়ে দিয়েছে? বুদ্ধ বিস্মৃত হন নি, কিন্তু সেই পথ কি আজ বিস্মৃত? অথবা বুদ্ধত্ব লাভের যাত্রা সবারই নিজের মতো, আলাদা, সেই পথ অন্য কোথাও নেই আছে নিজের মধ্যে, নিজেতেই। মার সবসময় সাথে সাথে থেকেছে সিদ্ধার্থের। শুধু এ জন্মে না, জন্মে জন্মে,চেষ্টা করেছে সিদ্ধোর্থের বুদ্ধ হবার পথে বাঁধা হতে তবু কখনো তাকে ছুঁতে পারে নি, এই মারের অন্তিম উপলব্ধি।

উপন্যাসটি পড়ে মনে হয়েছে নাস্তিক পন্ডিতের ভিটার মতোই এ উপন্যাসেও কতোগুলো অপ্রয়োজনীয় চরিত্র। সুজাতার উল্লেখ বাদে সৌগত, উদাত্ত, ময়ূখ বা সুজাতার চোখ দিয়ে সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের বর্ণনা দেখার চেষ্টাকে অপ্রয়োজনীয় এবং কলেবর বৃদ্ধিই মনে হয়েছে। মাঝপথে গিয়ে উপন্যাস তাই তার গতি হারিয়েছে, হারিয়েছে আকর্ষণ। শেষে সিদ্ধার্থ আর মার সংলাপ সেই গতি, সেই আকর্ষণ আবার ফিরে এসেছে। গল্পটা শুধু সিদ্ধার্থ আর মারের হলেই সবটুকু বলা হতো বলেই মনে হয়েছে, মাঝের কিছুটা বাদ দিয়ে। সেটাই সুন্দর, সেটাই আসল, সেটাই এই উপন্যাসের সত্যিকারের সম্পদ। আর বইয়ের বাড়তি পাওনা সম্রাট কনিষ্কের সভাকবি অশ্বঘোষ প্রণীত বুদ্ধচরিতের নির্বাচিত কিছু শ্লোকের বঙ্গানুবাদ এর সংযুক্তি যা অবশ্যই বইটির আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
Profile Image for Rito.
39 reviews
December 19, 2023
এত ভালো লাগবে ভাবতে পারিনি।

নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা চমৎকার লেগেছিল। অসাধারণ ছিল। তবে ছায়াচরাচর পড়ে হতাশ হয়েছিলাম। তারপর সেই হতাশার ছাপেই এই বইটা কেনা থাকা সত্ত্বেও অনেকদিন অপঠিত অবস্থায় ছিল।

কিন্তু পড়ে শুধু মুগ্ধ হলাম। লেখক অন্যান্য বুদ্ধজীবনী খুব মন দিয়ে পড়েছেন। তার ছাপ এই লেখায় আছে। বৌদ্ধ দর্শনের গভীরে লেখক যাননি। তবে মূল বিষয়গুলি খুব অল্প করে ছুঁয়ে গেছেন। উপযুক্ত গাম্ভীর্য, সরলতা সব বজায় রেখেই।

এই বইয়ের খুঁত ধরবার মতো একেবারেই নেই।

প্রথমে পড়তে গিয়ে বুদ্ধের গৃহত্যাগের দৃশ্য পড়ে মনে হয়েছিল- বুদ্ধের প্রকৃত জীবনীতে জড়া, ব্যাধি, মৃত্যু এসব দেখে একদিনে মন পরিবর্তন করে সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণের কথা নেই। সেটা বহুলপ্রচলিত শিশুতোষ কাহিনী। সহজপাচ্য। কিন্তু মূল জীবনীতে অন্যরকম ছিল।

পরের অধ্যায় গুলি পড়েই ভুল ভাঙলো। না, বুদ্ধভক্ত, বুদ্ধানুরাগী লেখক সমস্তটা সযত্নে ধরেছেন। এই মাপের আখ্যানে যতটা ধরা যায়।

পড়ে অসাধারণ ভালো লেগেছে।

গল্প হলেও, হাতের কাছে "কার-পরে-কী-হয়েছিল" একটা বুদ্ধজীবনের, সিদ্ধার্থমননের একটা দলিল পাওয়া গেল।

পরমকারুণিক বুদ্ধের চরম ত্যাগ, সর্ব সংসারের কল্যাণের জন্য- এখানে বারবার ফুটে উঠেছে। সেটা ভালো লেগেছে। বুদ্ধ তো মহামানব, কবিশ্রেষ্ঠ জয়দেবের প্রণামস্তোত্রের বিষ্ণু অবতার। কিন্তু সিদ্ধার্থের মহানুভবতা, পরম ত্যাগ, কঠোর তপস্যা - সেটা কি ফেলে দেওয়ার? না, সেটাও আদর্শ।

একজন সিদ্ধার্থভক্ত হিসেবে আরেকজন সিদ্ধার্থভক্তের এই নিবেদন মন ছুঁয়ে গেছে।

বাণী বসুর মৈত্রেয় জাতকের মতো এই উপন্যাসেরও পাওনা হল- এতে অলৌকিকতা, দেবত্ব অনুপস্থিত। কিন্তু সেগুলো ছাড়াও সুমহানতার স্তম্ভ নির্মাণে লেখক সার্থক। আবার একেবারে কাঠখোট্টা, ম্যাজিকহীন আখ্যানও এটা নয়। লেখক খুব নিপুণ হাতে, শ্রদ্ধার সাথে, সব মিশিয়েছেন।

বৌদ্ধ দর্শনের দিকে লেখক যাননি। কিন্তু তাঁর মৌলিক অবদানগুলির কিছু তুলেও ধরেছেন।

সব মিলিয়ে এই বইটা আমার বেশ মনে লেগেছে। পাঁচতারা দিয়েছি, ১০ এ ৯.৫।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
May 11, 2025
৩.৫/৫

সিদ্ধার্থ গৌতমের জীবন নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে সন্মাত্রানন্দ ‘মার’ নামে এক ধারণার কথা আমাদের জানান। ব্যক্তির মধ্যেই স্থিত এই সত্ত্বা মূলত আমাদের চেতনার ঋণাত্মক দিক। যে কারণে, আমরা কর্তব্যকর্ম না করে শুয়ে বসে দিন কাটাই, পড়াশোনা না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকি মোবাইল ফোনে, খারাপ জেনেও খারাপ কাজটা করি; সেই কারণ হলো মার।

সিদ্ধার্থ যখন যৌবনে একদিন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে জ্ঞাত হন দুঃখের বিষয়ে, জীবনের অনিঃশেষ দুঃখ ধরা হয় তাঁর চোখে, তখন, সত্য কি সেই খোঁজে যখন বেরিয়ে আসেন সমস্ত জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধিসম্পন্ন সংসার থেকে, সেই মুহূর্ত থেকেই তাকে বাধা দিতে থাকে মার। সিদ্ধার্থ চান সত্যের অনুসন্ধান করতে, মার চায় থাকে সংসারের মায়াজালে ফিরিয়ে আনতে। নিজের অন্তরেরই এক অংশের সাথে সিদ্ধার্থের যে লড়াই, সন্মাত্রানন্দ নিজের সুন্দর গদ্যে তুলে ধরেছেন সেটাকে।

অবশ্য, এরপরে, সুজাতা ও তার স্বামী সৌদাস ও তার জাতিস্মরসত্ত্বাকে নিয়ে আসা হয়। এতে, গল্পের ফ্লো নষ্ট হয়ে গেছে। যদিও একেবারে শেষে, গৌতম যখন মার-এর সমস্ত প্রলোভনকে পেছনে রেখে বুদ্ধ হয়ে ওঠেন, এই অংশটুকু সুন্দর। তবে সাধুভাষার প্রয়োজনীয় ছিল না।
Profile Image for Koyel Bhattacharyya.
Author 3 books2 followers
April 24, 2022
মহাভিনিষ্ক্রমণের রাতে পথ রোধ করে অনঙ্গ মার বলেছিল— যেয়ো না সিদ্ধার্থ যেয়ো না। শয্যাপানে চেয়ে দ্যাখো তোমার জগতের সমস্ত রূপের কলানিধি যশোধরা শুয়ে আছে। শুয়ে আছে অষ্ট দিবসের শিশুপুত্র। তাদের অনাথ করে তুমি চলে যাবে? এই রাজপ্রাসাদের সুখ সমৃদ্ধি ফেলে বনে তপস্যায় বসে তুমি কি পাবে! আমি তোমার‌ই আরেক সত্ত্বা, তোমায় বারবার বাধা দেব। তোমাকে আকণ্ঠ ভোগবিলাসে ডুবিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চাইব। ও কি! তুমি চলে যাচ্ছ কেন! আমার ডাক শুনতে পেলে না!

নৈরঞ্জনাতীরে দণ্ডায়মান সৌদাস‌ও সুজাতার ডাক শুনতে পায়নি সেদিন। বুঝি অশ্বত্থতলে ধ্যানমগ্ন বনদেবতার কৃপাদৃষ্টি পড়েছিল। অনন্তর একদিন দেব-সম্মুখে উপবিষ্ট হয়ে সে হৃদয়ের যন্ত্রণা অভিব্যক্ত করল। দেবদর্শন রহিত সংসারে তার বীতরাগ জন্মেছে। সুজাতা সারারাত্রি তার প্রতীক্ষায় কেঁদেছে। সৌদাস স‌ইতে পারেনি সুজ��তার চোখের জল। আজ সে সহসা টের পেল তার ঔদাসীন্য ঘুচে যাচ্ছে। বিনা সাধনে সে কোন অমূল্য কৃপাধন কুড়িয়ে পেয়েছিল, সব হারিয়ে যাচ্ছে। হায়, সৌদাস কি বলে তাঁকে বিদায় দিল! সৌদাস তাঁকে চিনতে পারল না! এত কাছে পেয়েও ছুঁতে পারল না!

মল্লিকার দ্বার হতে শূন্যহস্তে ফেরা উদাত্ত ভিক্ষু শুধাল, বৈশাখী পূর্ণিমারাত্রে নৈরঞ্জনাতীরে সিদ্ধার্থ কোন অসম্ভবকে জয় করেছিল। সুভূতি বললেন, বুদ্ধ সর্বোপরি। ব্যক্তি সিদ্ধার্থ অর্বাচীন। উদাত্তর ব্যাকুল অন্তঃকরণ প্রতিবাদ করতে চাইল, না! সিদ্ধার্থ অর্বাচীন না! লোকজ্যেষ্ঠ বুদ্ধ নয়, আমি সেই আদিম সিদ্ধার্থকে আমার প্রেম মেনেছি। আমি জন্মান্তরের নিদ্রাবেশে স্বপ্ন দেখেছি যশোধরার স্বামী, রাহুলের পিতা সেই শাক্য রাজপুত্রকে, যে সমস্ত পিছুটান কাটিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পথে নেমে এসেছে। যে ওই প্রাচীন বৃক্ষমূলে সর্বসহা ধরিত্রীকে তাঁর তপস্যার সাক্ষী রেখেছে। প্রগলভ মার কাম ক্রোধ ভয় লোভের মায়াজাল বিছিয়েও শেষে নতমস্তকে স্বীকার করেছে— তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি। এই নতিস্বীকার কি শুধুই অনঙ্গ মারের স্বগতোক্তি? নাকি এ হাহাকার সৌদাস তথা উদাত্তর মত বিহ্বল ভক্তপ্রাণের, যারা আজ‌ও সিদ্ধার্থকে ছুঁতে অশ্রুসম্পাত করে চলেছে। বুদ্ধ যে অভীষ্ট ছুঁতে পারেনি তা কি সিদ্ধার্থ ছুঁতে পেরেছে? যেখানে বুদ্ধ পরাজিত হয়েছে, সিদ্ধার্থ পেয়েছে কি ভালোবাসা?
____________

সারবত্তার পর :

লেখকের 'নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা' যারা পড়েছেন তাদের কাছে এই ব‌ইটা শিশুসুলভ। এবং থিক হান না'র ওল্ড পাথ হোয়াইট ক্লাউডস যারা পড়েছে তাদের এই ব‌ইয়ের কিছু অংশ নিষ্প্রয়োজন লাগলেও লাগতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার যা মনে হয়েছে। কিন্তু সর্বোপরি মতাদর্শ, লেখকের মত আমিও কোথাও বুদ্ধের চেয়ে বেশি সিদ্ধার্থকে ভালোবেসেছি। তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এ লেখা আমার কাছে বড় প্রাসঙ্গিক। সংসারময় নানা বাধ্যবাধকতার মাঝে সিদ্ধার্থকে আমরা আদৌ কি ছুঁতে পেরেছি? প্রশ্ন উঠুক সবার মনে ..❤️
Profile Image for Himu.
51 reviews
December 21, 2024
আমি বরাবরই ব্যাক্তি গৌতমকে নিয়ে ভিষণ আগ্রহী ছিলাম। কেন এক রাজ কুমার সমস্ত বিলাসিতা ছেড়ে এত কষ্টের জীবন বেছে নিলেন? যার জন্য তাঁর বাবা স্বর্গ রচনা করে রেখেছিলেন। স্বর্গের যেমন কয়েক ধরণ আছে, রাজকুমার সিদ্ধার্থেরও ছয়টি বিলাসবহুল প্রাসাদ ছিল,ছয় ঋতুর জন্য। তবে কেন এত সব ছেড়ে সন্ন্যাস জীবন বেছে নিলেন ? শুধু হুট করে একদিন রাস্তায় এক জরাগ্রস্ত মানুষ বা মৃতদেহ দেখে!

আসলে, তাঁর কাছে জীবন মানে ছিল সুখ, বিলাস, ঐশ্বর্য আর পূর্ণতা। কিন্তু সেদিন পথে যে জীবনের সাথে দেখা হয়েছিল,তা ছিল উলঙ্গ। বিলাসিতার সকল পোশাক খুলে একবারে উলঙ্গ হয়ে রাজকুমার সিদ্ধার্থের সামনে দাড়িয়েছিল। যার সারা দেহে ছিল অজস্র ক্ষত। দুঃখ, হতাশা, ক্ষুভ, হিংসা, রাগ সকল ধরনের ক্ষত চোখের সামন্যে উন্মুক্ত ছিল এবং সর্বশেষ অহেতুক মৃত্যু। কিন্তু জীবনের দুঃখ থেকে কি কোনো মুক্তি নেই !? এই প্রশ্ন নিয়েই রাজকুমার সিদ্ধার্থ সেদিন প্রাসাদে ফিরলেন। আর সব সময় শুধু শুনতে লাগলেন সেই হাহাকার ! তাই একদিন বেড়িয়ে পরলেন।

কিন্তু কেমন ছিল এই বোধি লাভের জার্নি ? আমাদের ভিতরেই একজন থাকে যে, সবসময় আমাদের সুখ, সাচ্ছন্দ্যের দিকে টানে কিন্তু বিনিময়ে দেয় শুধু দুঃখ। রাজকুমার সিদ্ধার্থের ভিতরে এমন একজন ছিল যে তাঁর ভিতরেই থাকতো। সে মার, জীবনের সকল তৃষ্ণা, আর চাহিদার রূপ। যে প্রতিটি পদক্ষেপে রাজকুমার সিদ্ধার্থকে বাধা দেয়। ফিরে যেতে বলে তার নিজের রাজ্যে, তাঁর বৃদ্ধ বাবা, পালিত মা, আর স্ত্রী এবং সন্তানের কাছে।

কিন্তু যে প্রশ্নের জন্য তিনি বেরিয়েছিলেন, তাঁর উত্তর খোঁজতে আশ্রমে আশ্রমে ঘুরতে লাগলেন। কিন্তু তাঁর প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারলো না। তাই নিজেই সাধনায় বসে গেলেন। দীর্ঘ ছয়বছরের উপরে সাধনার পরে বলে উঠলেন "নির্ব্বাণং পরমং সুখম্!"

কিন্তু মার বলে উঠলো, " তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি। কিন্তু তোমার এই ভাবাদর্শ, এত সাধনার ফল লোকে ভুলে যাবে। বরং তোমাকেই ভগবানের আসনে বসিয়ে পূজা করবে। ব্যাবসার সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করবে। তোমাকে ছুঁতে পারিনি কিন্তু তোমার তোমার জ্ঞান আমি লোকের কাছে পৌছাতে দিবো না। "

বইটি মহামতি আর মারের থাকলেও সুজাতা এবং সৌদাস গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল। সুজাতাকে এর আগে আমি কখনো এত কাছ থেকে দেখিনি আর সৌদাসের সাথে আমার প্রথম পরিচয়।
সৌদাস একজন কবি। গল্পকথক নিজেকে একজন জাতিস্মর। তিনি সৌদাসেরই পুনর্জন্ম লাভ করে ময়ূখ হয়েছে। গল্পের স্রোতের ভেসে যাওয়া এই নৌকার যিনি হাল ধরে ছিলেন।

সব মিলিয়ে সুন্দর। তবে মহামতিকে নিয়ে আরও পড়তে হবে।
Profile Image for Suman Das.
37 reviews5 followers
May 30, 2021
বোধিলাভের পূর্ববর্তী সময়ে সিদ্ধার্থ অর্থাৎ গৌতমবুদ্ধের জীবন ভিত্তিক কাহিনী। এই কাহিনীকে ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস বলাটা ভুল হবে। কাহিনীর পরিসর খুব একটা বড় নয়। গৌতম বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে বেশী কিছু আমাদের জানা নেই। তবু যে কয়েকটি বইতে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বর্ণনা রয়েছে লেখক সেগুলোকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে এই কাহিনীটি লিখেছেন। লেখক মূলত এই কাহিনীটির খসড়া রচনা করেছিলেন নিজের ব্যক্তিগত জীবনে বুদ্ধচরিত্র অনুধ্যান করে নিজের মনকে শান্ত ও সুসমাহিত রাখতে। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি বুদ্ধের বোধিলাভ পূর্ববর্তী সাধনার জীবনটি বর্ণনা করেছেন এই কাহিনীতে। পরবর্তীতে এটি বই আকারে প্রকাশ করেন কারণ তিনি মনে করেন সমমনোভাবাপন্ন বা দৃষ্টিভঙ্গির লোক বইটিকে সমাদর করবে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে। কাহিনীটিতে গৌতম বুদ্ধের সাধনার জীবনের বিভিন্ন সময় বা পর্যায়কে লেখক বিভিন্ন মানুষ বা কখনো জড়বস্তুর দৃষ্টিতে বর্ণনা করেছেন। কখনো তা বুদ্ধের দিক থেকে, কখনো সুজাতা ও তার স্বামী সৌদাসের দিক থেকে আবার কখনো মার, নদী ও নগরীর দিকে থেকে। ভিন্ন অধ্যায়ে ভিন্ন ভাষারীতির ব্যবহার হয়েছে। যারা গৌতম বুদ্ধের জীবন কাহিনী জানেন কিংবা বৌদ্ধদর্শন সম্পর্কে অবগত তারা হয়তো খুব বেশী কিছু পাবেন না এই উপন্যাসে তবু লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ কাহিনী একবার পড়ে দেখা যেতে পারে।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,833 reviews366 followers
February 21, 2025
#Binge Reviewing all my past Reads:

বই: তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি
লেখক: সন্মাত্রানন্দ
প্রকাশক: ধানসিঁড়ি
মূল্য: ২৭০/-

মহারাজের এই উপন্যাস ২৫০০ বছর পূর্বে রাজপুত্র সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের পূর্ববর্তী সময়কে কেন্দ্র করে রচিত একটি সাহিত্যকর্ম। এই কাহিনীতে সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ, তপস্যা, এবং 'মার' নামক অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির সঙ্গে তার সংগ্রামের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। লেখক বিভিন্ন চরিত্র ও দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনাবলী উপস্থাপন করেছেন, যা উপন্যাসটিকে বহুমাত্রিকতা প্রদান করেছে।

অন্তর্জাগতিক সংগ্রাম ও 'মার': উপন্যাসের কেন্দ্রীয় থিম হলো মানুষের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি বা 'মার' এর সঙ্গে সংগ্রাম। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের পথে 'মার' বিভিন্ন প্রলোভন ও বাধার সৃষ্টি করে, যা তার মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা নেয়। এই সংগ্রাম মানুষের নিজস���ব দুর্বলতা ও লোভের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক।

এই উপন্যাসে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে পুনর্জন্ম ও সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। লেখক সুজাতা ও তার স্বামী সৌদাসের মাধ্যমে পুনর্জন্মের ধারণা উপস্থাপন করেছেন। সুজাতা, যিনি সিদ্ধার্থকে পায়সান্ন প্রদান করেছিলেন, এবং সৌদাসের সম্পর্ক বিভিন্ন জন্মে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে, যা প্রেম ও সম্পর্কের চিরন্তনতা ও পুনরাবৃত্তির প্রতিফলন।

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনীর উপস্থাপন করেছেনঃ মহারাজ। উপন্যাসে সিদ্ধার্থের জীবনের ঘটনাবলী বিভিন্ন চরিত্র যেমন 'মার', নৈরঞ্জনা নদী, রাজগৃহ নগরী, এবং অন্যান্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই বহুমাত্রিক উপস্থাপনা কাহিনীর গভীরতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করেছে।

লেখক বিভিন্ন অধ্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষারীতি ও শৈলী ব্যবহার করেছেন, যা সময় ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোথাও সাধু ভা���া, কোথাও চলিত গদ্য, আবার কোথাও কবিতার ছোঁয়া—এই বৈচিত্র্য উপন্যাসের আবহ নির্মাণে সহায়তা করেছে। তবে, এই ভাষারীতির পরিবর্তন কিছু পাঠকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

মহারাজের অন্যান্য কাজের মতো এই উপন্যাসেরও সেই একই গতানুগতিক সমালোচনা। উপন্যাসের জটিল কাঠামো এবং পুনর্জন্মের ধারণা কিছু পাঠকের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন ভাষারীতির ব্যবহারে পাঠের ধারাবাহিকতা মাঝে মাঝে ব্যাহত হতে পারে।

এই প্রসঙ্গেই তুলনামূলক আলোচনা করতে চাইবো আরেকটি বইয়ের। দেখতে চাইবো ও বুঝতে চাইবো যে হারমান হেসের ‘Siddhartha’ ও সন্মাত্রানন্দের ‘তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি’:উপন্যাসের মিল ও পার্থক্য।

হারমান হেসের Siddhartha এবং সন্মাত্রানন্দের তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি — উভয় উপন্যাসই সিদ্ধার্থ নামের এক চরিত্রের আধ্যাত্মিক যাত্রা নিয়ে রচিত। তবে এদের দৃষ্টিভঙ্গি, আখ্যান কাঠামো এবং মূল প্রতিপাদ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই দুই সাহিত্যকর্মের মিল ও পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো:

বই দুটির সাযুজ্য:

১. সিদ্ধার্থ চরিত্রের আত্মঅনুসন্ধান: উভয় উপন্যাসেই সিদ্ধার্থ চরিত্রের আত্মানুসন্ধান ও আত্মজাগরণের বিষয়টি মূল প্রতিপাদ্য।
হেসের Siddhartha-তে সিদ্ধার্থ একজন ব্রাহ্মণ পুত্র, যিনি জীবন ও মোক্ষের অর্থ খুঁজতে গৃহত্যাগ করেন এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আত্মজ্ঞান লাভ করেন। সন্মাত্রানন্দের তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি-তেও গৌতম বুদ্ধের গৃহত্যাগ এবং তার বোধিলাভের পূর্ববর্তী সময়কে কেন্দ্র করে আখ্যান নির্মিত হয়েছে।

২. আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন: দুই উপন্যাসেই আধ্যাত্মিক দর্শন গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে। হেসের উপন্যাসটি ভারতীয় বৌদ্ধ ও হিন্দু দর্শনের সংমিশ্রণে গঠিত। সেখানে সিদ্ধার্থ নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেন এবং আত্মজিজ্ঞাসাকে প্রাধান্য দেন। সন্মাত্রানন্দের উপন্যাসে গৌতম বুদ্ধের বোধিলাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা ‘মার’ (প্রলোভন, সংশয়, কামনা, লোভ) নামক শক্তির ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা আত্মজয়ের পথে প্রধান বাধা।

৩. জীবনের দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম: উভয় লেখকই দেখিয়েছেন, পরম জ্ঞান বা মোক্ষ কোনো গ্রন্থ পড়ে বা শিক্ষককে অনুসরণ করে অর্জিত হয় না, বরং তা ব্যক্তি নিজে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে লাভ করতে পারেন।

বই দুটির বৈপরীত্য:

১. সিদ্ধার্থ চরিত্রের ঐতিহাসিক ও কল্পিত রূপ: হারমান হেসের সিদ্ধার্থ: হেসের সিদ্ধার্থ ঐতিহাসিক গৌতম বুদ্ধ নন; বরং তার সময়কার এক কাল্পনিক চরিত্র, যিনি বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কিন্তু তার অনুসারী না হয়ে নিজস্ব পথ অনুসন্ধান করেন। সন্মাত্রানন্দের সিদ্ধার্থ: উপন্যাসটি সরাসরি গৌতম বুদ্ধের জীবনের এক বিশেষ সময়কে অনুসরণ করে, যেখানে তিনি বোধিলাভের আগে নিজেকে দুঃখ, তপস্যা ও প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত রেখেছেন।

২. আখ্যান কাঠামো ও দৃষ্টিকোণ: হেসের উপন্যাসটি আত্মজীবনীমূলক ধাঁচে লেখা, যেখানে সিদ্ধার্থের বিভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানবজীবনের সারসত্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। সন্মাত্রানন্দের উপন্যাসে আখ্যান কাঠামো ভিন্ন; এখানে শুধু সিদ্ধার্থের নয়, বরং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ (যেমন ‘মার’, নৈরঞ্জনা নদী, নগরীর প্রতিচ্ছবি) থেকে তার যাত্রাকে দেখানো হয়েছে, যা কাহিনীর গভীরতা বৃদ্ধি করে।

৩. সমান্তরাল বাস্তবতা ও পুনর্জন্ম: Siddhartha-তে পুনর্জন্মের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই; বরং এটি ব্যক্তি-অভিজ্ঞতাকে প্রধান্য দেয়।
তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি-তে পুনর্জন্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এখানে সুজাতা ও তার স্বামী সৌদাস বিভিন্ন জন্মে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে ফিরে আসেন, যা বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জন্মের ধারণার প্রতিফলন ঘটায়।

৪. মার চরিত্রের উপস্থিতি: হেসের উপন্যাসে সিদ্ধার্থ প্রধানত নিজের মানসিক ও বস্তুগত লোভের সঙ্গে লড়াই করেন, তবে সেখানে কোনো প্রতীকী ‘মার’ চরিত্র নেই। সন্মাত্রানন্দের উপন্যাসে ‘মার’ চরিত্রটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা সিদ্ধার্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং তাকে পরীক্ষায় ফেলে।

৫. পাঠভঙ্গি ও ভাষা: Siddhartha একটি সহজ, দার্শনিক কাহিনী, যা পশ্চিমা দর্শকদের জন্য ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা তুলে ধরার প্রচেষ্টা। ভাষা সংক্ষিপ্ত ও কাব্যধর্মী। তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি বাংলায় রচিত ও সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণে লেখা, যা স্থান-কালের আবহ ফুটিয়ে তোলে এবং বাঙালি পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য হয়।

হারমান হেসের Siddhartha এবং সন্মাত্রানন্দের তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি উভয়ই আত্মজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তবে, একটির মূল চরিত্র ঐতিহাসিক গৌতম বুদ্ধ না হয়ে কল্পিত সিদ্ধার্থ, আর অন্যটিতে প্রকৃত সিদ্ধার্থের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলোচিত হয়েছে। হেসের উপন্যাস পাশ্চাত্য দার্শনিক প্রভাব ও ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার সংমিশ্রণে রচিত, যেখানে সন্মাত্রানন্দের উপন্যাস মূলত বৌদ্ধধর্ম ও পুনর্জন্মবাদে প্রোথিত।

যারা বৌদ্ধধর্ম, দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার উপর ভিত্তি করে লেখা সাহিত্য পছন্দ করেন, তারা উভয় উপন্যাসই পড়ে উপভোগ করতে পারেন, তবে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।

'তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি' উপন্যাসটির সম্পর্কে শেষত এটুকুই বলার যে এটি একটি সৃজনশীল ও গভীর উপন্যাস, যা মানুষের অন্তর্জাগতিক সংগ্রাম, সম্পর্কের চিরন্তনতা, এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছে। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের পূর্ববর্তী সময়ের এই কাহিনী পাঠকদের নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে। যারা ইতিহাস, দর্শন, এবং মানবিক সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি অবশ্যপাঠ্য।

পড়ে দেখুন। জীবন বদলে দেওয়ার ক্ষমতা বহন করে এই বই।

অলমিতি।
Profile Image for Pratyayee Dutta.
9 reviews2 followers
June 28, 2024
পড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলাম।ভাবনার জগত তৈরী হচ্ছিল।সেই ভাবনার জগতের ভিতর আরও এক ভাবনার জগত এভাবেই একটা গোলকধাঁধার জন্ম নিচ্ছিল মস্তিষ্কে।জীবনের এক অদ্ভুত সময়ে আমি এ লেখা পড়লাম।বলা ভালো যে বইটি নিজেকে পড়িয়ে নিলো আমাকে দিয়ে।কারণ আমি পড়ছিলাম 'নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা'।অথচ সে বই কিছুটা পড়ার পরে মনে হলো এই বইটি আগে পড়া উচিত।এ এক অসম্ভবকে সম্ভব করা যাত্রার গল্প।নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ে নিজেকে জেতানো আবার নিজেকেই একই সাথে হারানোর গল্প।মানুষের দুই সত্তার সমান্তরাল ভাবে ব'য়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্যের গল্প।এ লেখার বিষয়বস্তু তাদের জন্যে নয় যারা 'ত্যাগ' শব্দের মানে অনুভব করেনি।রাজকুমার সিদ্ধার্থ ও মারের দ্বন্ধের মধ্যে দিয়ে সিদ্ধার্থের বুদ্ধ হয়ে ওঠার এক অভূতপূর্ব লেখা পড়লাম যা সঠিক ভাবে অনুভূত হলে জীবন যাপনের ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
Profile Image for Shatabdi Roy.
19 reviews
July 5, 2023
ঘৃতপ্রদীপের আলোয় ঈষৎ উদ্ভাসিত কক্ষ— সেখানে দুগ্ধফেননিভ শয্যায় দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো স্নিগ্ধ সুন্দর এক শিশুকে বুকে নিয়ে নিদ্রিত এক অপরূপা রমণী; যদিও এরা সকলেই শুদ্ধোদনপুত্রের চিরপরিচিত, তবুও এমন অপরিচিতসুলভ সম্ভাষণ— কারণ এই শান্ত জগৎকে ত্যাগ করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তিনি পা বাড়াতে চলেছেন জ্যোৎস্নাস্নাত ওই পৃথিবীর অনিশ্চিত পথে।
তবে কেন তাঁর পা এক মূহুর্তে��� জন্য থেমে গেল? কোন সে কণ্ঠস্বর তাকে বারবার আহ্বান করে চলেছে ফিরে আসবার জন্য? পেছনে চাইলেন তিনি, স্তিমিতালোকে দেখতে পেলেন এক অন্ধকার মূর্তি— যে কিনা তাঁর, সেই সাথে প্রত্যেক রক্তমাংসের মানুষের আজন্ম সঙ্গী— যে কিনা ব্যাধি-জরা-মৃত্যুর সুনিশ্চিত পরিণতিকে নিয়ত ঢেকে রাখে মোহ আর লোভের রমণীয় আচ্ছাদনে — “চিরকালীন কাঙ্ক্ষাময় মোক্ষদ্বেষী মার”।
মারের কূট আহ্বান তাঁকে এক মূহূর্তের জন্য থামিয়েছে বটে, তবে তাঁর গতিকে আজ রুদ্ধ করার সাধ্য মারের নেই। কারণ তিনি শুনেছেন আকাশপথে ভেসে আসা সেই আর্তসংগীত— “কোথা হতে আমরা ভেসে আসি, কোথায় ভেসে যাই আমরা জানি না, আমরা শুধু বিশ্রাম চাই, আমরা শুধু শান্তি চাই… এই আমাদের শুধু ফিরে ফিরে আসা, মিছামিছি শুধু এই কাঁদাহাসা… এর কি কোনো শেষ নেই? কে আমাদের খেলায়? আমরাই বা সে খেলায় কেন অংশ নিই? কী বিচিত্র কুহকে জেগেও ঘুমিয়ে থাকি… এই রাত্রি কি প্রভাত হবে না আর?... উদ্ভ্রান্ত বাতাসের মতো আমাদের এই নিত্য ধাবমানতা… কে আমরা জানি না, জানি না কোথায় এসেছি, কেন এসেছি… কোথায় চলেছি… কত দেশে দেশে ভেসে ভেসে চলেছি… চারিদিকে কত জীবের কলরোল… যাতনার উদযাপন… এই আছে, এই নেই… কী কাজে আসা, কী কাজে জীবন অতিবাহিত হল… প্রবাহের বারিসদৃশ আমরা একস্থানে রইতে পারি না… কূলহারা নদীর মতো আমাদের লক্ষ্যহীন গতিবিধি… কেউ কি নেই যে আমাদের চেতনা দিতে পারে? কবে বিদূরিত হবে আমাদের এই মোহস্বপ্নের যাতাযাত…? হে চেতনার উদিতভানু, তুমি আমাদের এই অজ্ঞানের অন্ধকার নাশ করো…
চিরপ্রসুপ্তমিমং লোকং তমস্কন্ধাধিগুণ্ঠিতম্।
ভবান্ প্রজ্ঞাপ্রদীপেন সমর্থঃ প্রতিযোধিতুম্।।”
তিনি বেরিয়ে পড়লেন অখিল মানবের দুঃখমুক্তির উপায় অন্বেষণে। আস্কন্ধলম্বিত কমনীয় কুন্তলরাশি মুণ্ডিত হল, রাজবেশের স্থান নিল গৈরিক কাষায়বস্ত্র— শুরু হল সিদ্ধার্থ থেকে বুদ্ধ হয়ে ওঠার যাত্রা।
সবকিছু ফেলে গেলেন সত্যি, কিন্তু একজন তাঁর পিছু ছাড়ল না সেই পূণ্য বৈশাখী পূর্ণিমা পর্যন্ত, যেদিন জ্ঞানালোকে অখিল জীবের দুঃখমুক্তির পথ আবিষ্কার করে তিনি অভয় ঘোষণা করলেন, আর তাতেই অন্ধকারের অতলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল তাঁর সেই আজন্ম সঙ্গী- মার।
বোধিলাভের পরের কাহিনি কমবেশি সকলেরই জানা, সেই বুদ্ধ বিশ্বজুড়ে গবেষণার বিষয়বস্তু। কিন্তু এখন কথা বলছি যেই আখ্যান নিয়ে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন সংগ্রামমুখর সিদ্ধার্থ। প্রতিনিয়ত মারের বাণে জর্জরিত সিদ্ধার্থের কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে কখনো বা ধূলিধূসরিত নগরী রাজগৃহ, কখনো স্রোতোস্বিনী নৈরঞ্জনা কিংবা প্রাণচঞ্চল উরুবিল্ব বনের ভাষ্যে। মার কিংবা সিদ্ধার্থ— এরা নিজেরাও কখনো কখনো সরাসরি বাদ-বিসংবাদে নেমেছেন। এছাড়াও আছে দুজন মানুষ— যাদের একজন বোধিলাভের প্রাক্কালে সিদ্ধার্থকে পায়সান্ন নিবেদন করে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু আরেকজন না আছেন ইতিহাসে, না আছেন রূপকথায়; হয়তো তিনি এই আখ্যানলেখকের এক ভিন্ন সত্ত্বা, হয়তো না নন। কিন্তু তাঁর কৌতূহলের সূত্র ধরেই সিদ্ধার্থ পূর্ণরূপে ধরা দেন এই আখ্যায়িকার পাঠকদের কাছে৷
কী সেই রূপ? সিদ্ধার্থ কি শেষ পর্যন্ত সমর্থ হন মারকে পুরোপুরি পরাস্ত করতে? নাকি মারের কলুষিত হাত স্পর্শ করে ফেলে সিদ্ধার্থকে, তাঁর প্রচেষ্টাকে?

“যে মহীরুহের শিকড় সুদৃঢ় সংকল্পে প্রোথিত,
আঁশ যার ধৈর্য, চারিত্র‍্য যার পুষ্প,
স্মৃতি আর বুদ্ধি যার প্রসারিত শাখা,
ধর্মফলপ্রদাতা এই প্রবর্ধমান জ্ঞানবৃক্ষ,
এর উৎপাঠন জেনো একান্ত অসম্ভব।”

উত্তরটা সেটাই, যা প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জীবের অন্তরে চিরকাল বিরাজিত। তবুও দৃষ্টি যখন অজ্ঞানতা আর অবিশ্বাসের কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তখন অন্তর্মুখী দৃষ্টিপাতের জন্যেও কারও সহায়তার প্রয়োজন হয় বৈকি! সে-কথা বইটির প্রারম্ভে লেখককথনের মধ্যেও প্রতীয়মান— যেখানে তিনি স্পষ্টতই স্বীকার করেছেন এ উপন্যাসের বুদ্ধ কেবলই ঐতিহাসিক বুদ্ধ নন, তিনি অনেকাংশেই তাঁর ব্যক্তিগত বুদ্ধ। এই বুদ্ধকে পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেবার জন্য যদি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতাস্বীকার না করি, তাহলে সত্যিই ভীষণরকমের অন্যায় হয়ে যাবে। কারণ মানবমনের শুভচিন্তার সাথে মারের যুদ্ধ যেমন চিরন্তন, অনিবার্য; তেমনিই চিরন্তন সিদ্ধার্থের আদর্শকে নবনবরূপে সৃজন এবং তা থেকে শক্তি আহরণের প্রয়োজনীয়তা। তাই নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এই সিদ্ধার্থকে ভালোবাসে গ্রহণ করার মতো পাঠকের কখনো অভাব হবে না, হতে পারে না।
Profile Image for Debolina Chakraborty.
33 reviews16 followers
July 11, 2023
🌟📚পুস্তক - তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি📚🌟
🌟🖊লেখক - সন্মাত্রানন্দ শোভন🖊🌟
🌟📜পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৬০ পাত📜🌟
🌟📖প্রকাশন - ধানসিঁড়ি পাবলিকেশন্স📖🌟
🌟💵মুদ্রিত মূল্য - ২৫০ টাকা💵🌟

ঘটনাটা ঘটল যিশুখ্রিস্ট জন্মাবার ৫৬৩ বছর আগে। তিনি এলেন পৃথিবীতে। তাঁর তো জন্মানোর কথা নেপালের কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদে। কিন্তু তিনি জন্মালেন পথের ধারে শালবনের ঝরা পাতার মধ্যে। অথচ এই ছেলের বাবা শুদ্ধোদন শাক‌্যরাজ্যের রাজা। থাকেন রাজধানী কপিলাবস্তুর বিলাসবহুল প্রাসাদে। কেন প্রাসাদে না জন্মে শুদ্ধোদনের পুত্র জন্মালেন শাল-অরণ্যের ঝরাপাতার বিছানায়?
কারণ সদ্যোজাত পুত্রের মা মায়াদেবী, যিনি শাক‌্যরাজ শুদ্ধোদনের স্ত্রী এবং কোল রাজ‌্য দেবদহের রাজকুমারী – তিনি বাপের বাড়িতে যেতে চাইলেন সন্তানের জন্মের আগে। কিন্তু তা তিনি পারলেন না। পথের ধারে এক শালবনের ঝরা পাতার বিছানায় শুয়ে জন্ম দিলেন তাঁর পুত্রের। এবং মারা গেলেন এক সপ্তাহের মধ্যে। সেই শালবনের কোনও নাম আছে? আছে তো। কপিলাবস্তু থেকে কিছু দূরে লুম্বিনী-র শালবন, সেখানেই জন্ম সিদ্ধার্থর। মাতৃহারা শিশুকে বড় করলেন মাসি ও বিমাতা প্রজাপতি গৌতমী। ছেলেটির তাই নাম রাখা হল সিদ্ধার্থ গৌতম।
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
মহাভিনিষ্ক্রমণের রাতে পথ রোধ করে অনঙ্গ মার বলেছিল— যেয়ো না সিদ্ধার্থ যেয়ো না। শয্যাপানে চেয়ে দ্যাখো তোমার জগতের সমস্ত রূপের কলানিধি যশোধরা শুয়ে আছে। শুয়ে আছে অষ্ট দিবসের শিশুপুত্র। তাদের অনাথ করে তুমি চলে যাবে? এই রাজপ্রাসাদের সুখ সমৃদ্ধি ফেলে বনে তপস্যায় বসে তুমি কি পাবে! আমি তোমার‌ই আরেক সত্ত্বা, তোমায় বারবার বাধা দেব। তোমাকে আকণ্ঠ ভোগবিলাসে ডুবিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চাইব। ও কি! তুমি চলে যাচ্ছ কেন! আমার ডাক শুনতে পেলে না! সৌদাসও যে শুনতে পায়নি সেদিন সুজাতার সেই ডাক। অথচ সুজাতা যে তাঁর প্রতীক্ষায় সারারাত কেঁদেছে একথা জেনেও সৌদাস তাঁর চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারলো কই?
হায়, সৌদাস কি বলে তাঁকে বিদায় দিল! সৌদাস তাঁকে চিনতে পারল না! এত কাছে পেয়েও ছুঁতে পারল না!
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂

যে রাতে যশোধরার স্বামী, রাহুলের পিতা যাবতীয় পিছুটান পেছনে ফেলে রেখে প্রাসাদ হতে বাইরে বেরিয়ে এলো , সেইদিন প্রাচীন বৃক্ষমূলে সর্বংসহা ধরিত্রী কে তার তপস্যার সাক্ষী রেখে
মার কাম ক্রোধ ভয় লোভের মায়াজাল বিছিয়েও শেষে নতমস্তকে স্বীকার করেছে— তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি। এই নতিস্বীকার কি শুধুই অনঙ্গ মারের স্বগতোক্তি? 
যারা আজও বুদ্ধকে আত্মস্থ করার আশায় তাঁকে ছুঁতে পারার আশায় অশ্রুসম্পাত করে চলেছে তাঁদের কাছে স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ প্রশ্ন রেখে গেছেন, যে অভীষ্ট বুদ্ধ কোনোদিন ছুঁতে পারেননি, তা কি সিদ্ধার্থ ছুঁতে পেরেছিলেন? যেখানে বুদ্ধ আহত, অনভিপ্রেত হয়েছেন, সেখানে সিদ্ধার���থ কি ভালোবাসা কুড়িয়ে পেয়েছিলেন?
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂

আড়াই হাজার বছর আগে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ নিখিল জীবনের দুঃখনিবৃত্তির উপায় খুঁজতেই গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, 'মার'কে জয় করে বুদ্ধ হয়েছিলেন| যা মানুষকে পরম সত্য জানতে দেয় না, অন্তিমে দুঃখ দেয়, বৌদ্ধশাস্ত্রে তাকেই 'মার' বলা হয়| পরিশেষে কে প্রকৃতই জয়ী হলেন-- সিদ্ধার্থ নাকি মার? উপন্যাসটির অন্তিমে লেখক সেই নিগুঢ় প্রশ্ন তুলেছেন।
বইয়ের শেষ দুই পাতায় যখন মার গর্জে উঠছে , সিদ্ধার্থের দিকে
একের পর এক হিংসার, ভয়ের কথা ছুঁড়ে দিচ্ছে অকম্পিত হাতে। ঠিক তখনই বুদ্ধ বলে ওঠেন, "না। ইহার পরেও মানুষ স্বান্ত্বনা ও শক্তির জন্য আমাকেই স্মরণ করিবে। ইহার পরেও কেহ না কেহ আমার পথ অনুসরণ করিয়া বোধিলাভ করিবে। আমি তাহাদের নিকট চির অনুপ্রেরণার স্থল হইয়া থাকিব। মনন, ধ্যান, তপস্যার সুমহান আদর্শ দ্বারা আমি ভাবীকালের জীবকূলকে নিত্য অনুপ্রাণিত করিয়া চলিব। হে মার! মানুষ তোমার দ্বারা ক্ষণতরে প্রভাবিত হইতে পারে। কিন্তু কখনোই কেহ তোমাকে আর চরম বলিয়া গ্রহণ করিবে না। "

এই বই মানুষের কাছের, আমাদের প্রত্যেকের মনে সিদ্ধার্থের বাস। যা কিছু নীরব, পরাধীন, অনুমান, দ্বিধা ; সেটুকুই সিদ্ধার্থ হয়ে যায় প্রত্যেকের মধ্যে। মার আছে বলেই আমরা নিশ্চিন্তে আছি কারণ সে আছে তাই বুদ্ধ আছে, আর অভয় আছে মনে, সহস্রবিধ আক্রমণ করেও মার বুদ্ধের শুভ প্রচেষ্টার কাছে ব্যর্থ হয়ে স্বীকার করবে, তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি।।

Profile Image for Poulami Chakraborty.
29 reviews1 follower
May 14, 2024
পুস্তক পরিচয়:
নাম - তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি
লেখক - সন্মাত্রানন্দ
প্রকাশনা - ধানসিড়ি প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য - ২২৫ টাকা
সময় অনন্ত প্রবাহমান। প্রবাহিত সময়ে মানুষ কি বারবার ফিরে আসে? যদি অন্ধকারে একটি প্রদীপ জ্বলে, সেই প্রদীপটির শিখাও পরিবর্তিত হয় বারবার। প্রারম্ভ সময়ের শিখা মধ্যভাগের শিখা এবং অন্তভাগের শিখার আকৃতির মধ্যে পার্থক্য ঘটবেই, কিন্তু তার এক এবং অনন্ত পরিচয় যে সে একটি জাজ্বল্যমান শিখা। আমরাও হয়তো পৃথিবীতে এইভাবে বারবার ফিরে আসি বিভিন্নরূপে, বিভিন্নস্থানে ; কিন্তু আমাদের আত্মা এক, অপরিবর্তনীয় এবং অবিনশ্বর।
সন্মাত্রানন্দের লেখা "তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি" উপন্যাসটিও এইভাবে আত্মার স্বরূপের কথা বলে বারবার। এই উপন্যাসটি আসলে শুধুমাত্র মহাকারুনিক গৌতম বুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং রাজকুমার সিদ্ধার্থ থেকে গৌতম বুদ্ধ হয়ে ওঠার কাহিনী। যা মানুষকে পরম সত্য জানতে দেয় না, অন্তিমে দুঃখ দেয়, বৌদ্ধশাস্ত্রে তাকেই 'মার' বলা হয়। আড়াই বছর আগে রাজকুমার সিদ্ধার্থ জীবের দুঃখনিবৃত্তির উপায় অন্বেষণ করার তাঁর সংসার, রাজকীয় ভোগসুখ প্রভৃতি সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে এক নিমেষে পরিত্যাগ করেছিলেন। কিভাবে তিনি মারকে জয় করে মহাবোধি লাভ করেছিলেন সেই গল্পই বলে উপন্যাসটি। বারবার সিদ্ধার্থকে সংগ্রাম করতে হয়েছে মারের দিক থেকে নিজেকে সরিয়ে সাধনাতে সাফল্যলাভ করার জন্যে। তাই এই আখ্যানের কেন্দ্রে রয়েছেন মহামতি বুদ্ধ নয়, বরং এই আখ্যায়িকা চিত্রিত করেছে সংগ্রামমুখর বুদ্ধকে।
এই উপন্যাসে এসেছে সেই সুজাতার কথা যিনি ধ্যানমগ্ন সিদ্ধার্থকে পরমান্ন নিবেদন করেছিলেন। সেই সুজাতা কোনো জন্মে হরিণী, আবার কোনোজন্মে মল্লিকা, কিন্তু আসলে সে একটি চিরাচরিত নারীহৃদয়। সন্মাত্রানন্দের লেখা পূর্বপ্রকাশিত "নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা" উপন্যাসটির কুন্তলা অথবা জাহ্নবীর সঙ্গে বর্তমানের "তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি" উপন্যাসের সুজাতা, অথবা মল্লিকা, অথবা হরিণী বারবার কোথাও যেন হাতে হাত রেখে চলে।
এইবার আসি ভাষাশৈলীর ব্যবহারে... "তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি" উপন্যাসে ভাষার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশরচনা এবং আবহনির্মান করার উদ্দেশ্যে লেখক বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্নপ্রকার ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা এই উপন্যাসটির গতি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই আখ্যানলেখনীর প্রয়োজনে যখন কোনো অধ্যায়ে সাধুভাষা, অথবা কোথাও যদি চলিত গদ্যময় ভাষা, আবার কোথাও যদি তৎসম শব্দবহুল ভাষা ব্যবহার করা হয়, তখন সেটি উপন্যাসটির উৎকর্ষতা অনেকগুণ প্রবর্ধিত করে।
আগেও বলেছি, আবার এখনও বলছি এই কাহিনী গৌতম বুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং এই কাহিনী হল ব্যক্তি সিদ্ধার্থ থেকে দুঃখবিজয়ী মহামানব গৌতম বুদ্ধ হয়ে ওঠার যাত্রাকাহিনী। এটি আসলে প্রতিটি মানুষের নবজন্ম এবং নিজেকে খুঁজে পাওয়ার উপলব্ধি যা দিকভ্রান্ত মানুষকে নতুন পথের দিশা দেয় এবং খুঁজে পাওয়ার সোপান রচনা করে প্রতিবারে, প্রতিমুহূর্তে, এবং প্রতিপলে।
Profile Image for Suvankar GRC.
37 reviews4 followers
January 20, 2023
এই অসহ সময়ে নান্দনিকতার শুশ্রূষার পাশাপাশি, সময়োপযোগী হয়ে ওঠার চেয়ে বৃহত্তর দায় সাহিত্যের, শিল্পের নেই বললেই চলে।

কথক সিদ্ধার্থ, সুজাতা, সৌদাস -- সকলেই বলে চলে পথের কথা, পরিচয়ের কথা, মানুষের কথা। সন্মাত্রানন্দের 'তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি'র আত্মা তৈরি এ'সব কথাতেই। যুগপুরুষ বুদ্ধের রূপায়ণে উৎসাহী নন লেখক, তাই তাঁর আশ্রয় সিদ্ধার্থচরিত -- অনেক বেশি গভীর, মানবিক ও পূর্ণ। তবে সিদ্ধার্থের সাধনার আখ্যান স্বয়ং তাঁর মুখেই শুনি, কি তাঁরই অনুগামী সহজতার ছায়া সুজাতা বা সৌদাসের মধ্যে পাই, এই কাহিনীর রশির অন্য প্রান্ত টানটান করে ধরে আছে 'মার'। শাক্যপুরুষ সিদ্ধার্থের 'বন্ধু' সে, ভিক্ষু সিদ্ধার্থের সে শত্রু, আর বুদ্ধের পদাবনত পরাজেয় ছায়া। 'নাট্য' যাকে বলি আমরা, তার অমোঘ উপস্থিতি সিদ্ধার্থ আর মারের কথোপকথনে। সমগ্র জীবনজুড়ে এই যে আমার ও আরেক আমার উত্তর-প্রত্যুত্তরের দীর্ঘ খেলা, সত্য-মিথ্যার টাগ অফ ওয়ার, তারই কিয়দংশ এই উপন্যাস ব্যক্ত করে।

গল্পের নাট্য, গল্পকারের মুন্সিয়ানা -- সবই বুঝলাম। কিন্তু পড়ে থাকে শেষ প্রশ্ন: সিদ্ধার্থের বোধিলাভের আড়াই হাজার বছর পর (কথক, জাতিস্মর ময়ূখ বার বার সময়ের এই ব্যবধান দেখায়) সেই কাহিনী আবার পড়বো কেন?

পড়বো, কারণ বইয়ের শেষ দু' পাতা। অধ্যায়ের নাম 'মহামারগর্জন'। মারের মুখ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে সিদ্ধার্থের প্রতি একের পর এক হিংসার, ভয়ের কথা। সে শেষবারের মতো চেষ্টা করছে সিদ্ধার্থকে পথভ্রষ্ট করার। যে কথাগুলি মার বলছে, তা আজকের, এই মুহূর্তের, একবিংশ শতাব্দীর ঘোর অন্ধকার কথা। কিন্তু ততক্ষণে সন্মাত্রানন্দ ভাষার কারিগরিতে এবং ন্যারেশনের বহমানতায় আমার willing suspension of disbelief-কে এমন জায়গায় নিয়ে চলে গেছেন, যে মাথার মধ্যে জট পাকিয়ে যায়, লেখক ওই সময়ের, না সিদ্ধার্থ এই সময়ের!

দূরবর্তী কোনও larger than life আখ্যান নয় 'তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি'। বুদ্ধের প্রবোধবাক্যে এই বইয়ের পাতা সেজে ওঠে না। এই বই মানুষের। এই সিদ্ধার্থ মানবিক। দুঃখের অতীত জানতে সে দুঃখ পায়। মারের হুঙ্কারের সামনে দাঁড়িয়ে বুকটান করে বলতে পারে, মানুষে তাঁর ভরসা আছে। মানুষ একদিন ফিরে আসবে অন্ধকার থেকে, আলোর কথা শুনতে, দিবাস্বপ্নে নয়, প্রয়োজনে। একদিন প্রেম উচ্চারিত হবে সবার মুখে, সবার জন্য, কারণ দ্বিতীয় কোনো পথ নেই আর। অনুমান নয়, ভয় নয়, দ্বিধা নয়, এই নিতান্ত ছোট, নীরব, পরাধীন মানুষ নির্বেদকে জানার চেষ্টায় উদ্যম -- এটুকুই প্রত্যেকের সিদ্ধার্থ হয়ে থেকে যায়। মারও থাকে। কিন্তু যতদিন মার আছে, অভয়ও আছে। ওই ��োনা যায়, "এহি পশ্য … নিজে পরীক্ষা করে দ্যাখো, কী পাও।"
Profile Image for Swarnendu Gangopadhyay.
4 reviews
May 21, 2025
ভালোলাগার মতো বই,
'তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি'

মধ্যরাতের নৈঃশব্দ অনুভূতিদের আঁতুরঘর। বন্ধচোখের অন্ধকারে তাদের নিয়ত বিচরণ, শতত কল্পনাবিলাসে। কখনো তা যেন কোনো ম্যাজিকওয়ালার হাতের মোচড়ে চোখের সামনে দিয়ে সরে সরে যাওয়া ক্যালাইডোস্কোপিক দৃশ্যপটের সারি, যা নাকি আবার আড়াই হাজার বছর আগের। সে বাজিকর আর কেউ নন, আমাদের অতি পরিচিত শোভনবাবু ওরফে সন্মাত্রানন্দ।

কাহিনীর সূচনায় দেখা যায় মধ্যরাত্রির শয়নকক্ষ ছেড়ে মহাভিনিষ্ক্রমণোদ্যত শাক্যরাজপুত্র সিদ্ধার্থ, শয্যায় নিদ্রামগ্ন স্ত্রী-পুত্র আর সঙ্গী মানবচৈতণ্যের চিরন্তন বিপরীত সত্তা 'মার'কে। মানবজীবনের অনাদি দুঃখের উৎস সন্ধানে এ যাত্রায় চির প্রতিদ্বন্দী সেই আদি-অকৃত্রিম 'মার'। উনত্রিশ বছরের বিলাস-ব্যসন, ছয় বছরের কৃচ্ছ্রসাধন, মকখলি গোশাল, নিগন্থ নাথপুত্ত, সঞ্জয় বেলটঠিপুত্তের ভ্রান্ত দর্শনের পর্ব পেরিয়ে মধ্যপন্থী আত্মানুসন্ধানের অতিপরিচিত এ কাহিনী অপরিচিত লাগে তার জীবন্ত ব্যাখ্যানে, যা কখনো 'মার', কখনো নগরী রাজগৃহ, কখনো সিদ্ধার্থবান্ধবী পুণ্যতোয়া নৈরঞ্জনা, কখনো বা স্বয়ং তথাগতর আত্মবয়ানে বর্ণিত। প্রাচীন বৌদ্ধকাহিনী অনুসন্ধিৎসু একুশশতকের ময়ূখের চোখে গৌতম সমকালীন সৌদাস-সুজাতা ও তার পরবর্তী উদাত্ত-মল্লিকার প্রণয়কাহিনীর অদ্ভুত দে-জ্যা-ভূ র মধ্য দিয়ে বারংবার নজর কাড়ে এক আদ্যপান্ত মানুষ সিদ্ধার্থের সন্ধান। পটিচ্চ সমুপ্পাদের দ্বাদশ নিদান অনুলোম ও প্রতিলোম ক্রমে উপলব্ধি করে যিনি করেন চিরকালীন অবিদ্যা নিরোধক অষ্টাঙ্গিক মার্গ প্রদর্শন, হয়ে ওঠেন বুদ্ধ। তিনি নন কোনো মহাকাশচারী অলৌকিক সত্তা, তিনি মর্ত্য পৃথিবীর রক্তমাংসের মানুষ, যাঁকে ছুঁয়ে দেখা যায়, ভালোবাসা যায়। তবু ভয়াল দর্শন 'মার'-এর অভিসম্পাতেই তিনি যুগে যুগে হয়ে ওঠেন ভগবান। তাঁর ত্যাগ ও মানবপ্রেমের আদর্শের কবরের উপর নির্মিত হয় যুগান্তরের দেববিগ্রহ।

১৯৩৫ সালে অনাগারিক ধর্মপালের আমন্ত্রণে মহাবোধি সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার শ্রীধর্মরাজিক চৈত্যবিহারে বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝে দাঁড়িয়ে বিশ্বকবি বলেছিলেন - ‘আমি যাঁকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি, আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি।’ হয়তো এভাবেই শত শত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিভীষিকার শেষে যুগে যুগে জিতে যায় মানুষ, তার চেতনা, তার মহাকরুনাঘন মারবিজয়ী মনুষ্যত্ব, সে যে দেবতার চেয়ে বড়... 🙏
Profile Image for Sangita Das.
3 reviews
June 22, 2022
ব‌ইটি জন্মদিনের উপহারে পেয়েছিলাম । খুবই সুন্দর। লেখক খুব সুন্দর ভাবে শব্দগুলোকে মালার মতো সাজিয়েছেন। কখনও একঘেয়ে বা অতিরঞ্জিত লাগেনি। আমরা সবাই জানি হিন্দু বৈষ্ণব ধর্মের গৌতম বুদ্ধ কে বিষ্ণুর নবম অবতার ধরা হয় (ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত )। যদিও বুদ্ধ নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে বা নিজের অবতারত্ব অস্বীকার করেছিলেন। এই গ্ৰন্থে অবতার বুদ্ধ নয় গুরুত্ব পেয়েছে মানুষ সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ আর মার । যে মার আমাদের সকলকে নিয়ন্ত্রিত করে । যে মার মানুষ কে পরম সত্য জানতে দেয় না।মার এর দিক থেকে সিদ্ধার্থের লড়াই কে দেখানো হয়েছে। যে লড়াই তে সিদ্ধার্থ মার কে জয় করে বুদ্ধ হয়েছিলেন। গল্পের বিভিন্ন চরিত্র যেমন সুজাতা , সৌদাস, ময়ূখ সবার দৃষ্টিভঙ্গি তে সিদ্ধার্থের জীবনের বিভিন্ন রঙ ফুটে উঠেছে। সব থেকে যেটা ভালো লেগেছে সিদ্ধার্থের লড়াই। এই লড়াই টা যেন মানুষের তার নিজের।নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
"সে পথ যত‌ই কঠিন হোক, আমি সেই পথে যাব ।যদি তাতে আমার মৃত্যু হয়, তবু সেই পথ‌ই আমি বরণ করে নিলাম। রক্তাক্ত হোক সে পথে আমার সত্তা, চুর্ণবিচূর্ণ হোক আমার অহং, নিজেকে হারিয়ে আমি নিজেকেই খুঁজে পাবো ।
তবে গল্পের ময়ুখ চরিত্রের সাথে উঠে আসে জাতিস্মরের গল্প ।এই জায়গায় নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা (সন্মাত্রানন্দ) গল্পের খানিকটা যেন মিল খুঁজে পাই । আমি বলতে পারবো না এই জাতিস্মরের প্রসঙ্গ কতটা প্রাসঙ্গিক। আমি খুব ভালো সমালোচক বা খুব বেশী ব‌ই পড়েছি --কোনটাই নয়। সবার উপরে ব‌ইটি অত্যন্ত ভালো।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Azahar Hossain.
55 reviews9 followers
August 31, 2021
তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি - সন্মাত্রানন্দ

সদ্য পড়া শেষ করলাম বইটি। উপন্যাসটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যসম্মত তথ্যসমৃদ্ধ বুদ্ধজীবনী নয়, বরং উপন্যাসে সিদ্ধার্থ কীভাবে বুদ্ধ হলেন, সেই কাহিনি লেখক নিজের মত করে পরিবেশন করেছেন।
মগধ নৃপতি যখন গৃহত্যাগে কারণ জিজ্ঞাসা করেন, উত্তরে সিদ্ধার্থ বলেন, - "আমাদের অস্তিত্বই বেদনাজর্জর। জন্ম দুঃখময়, জীবন দুঃখময়, যৌবন ক্ষণিকের, জরা অপেক্ষমাণ, মৃত্যু ধাবমান। অস্তিত্বই বেদনা। অস্তিত্বই দুঃখাবহ। আমি এই বেদনার উপশম অন্বেষণ করে ফিরছি।"

আর আছে - "মার"। মার হচ্ছে মানুষের অপর সত্তা। অন্ধকার সত্তা। প্রত্যেকের মধ্যে মার আছে। মার'র মধ্যে দিয়ে লেখক সিদ্ধার্থের মনের অবস্থা অতি চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। মার তাঁকে ধ্যান ছেড়ে দিতে বলে, রাজ্যে ফিরে যেতে বলে, কখনও বন্ধুর মতো অনুনয়ের ভাষায়, কখনও প্রবল শত্রুর ন্যায় ভীতিপ্রদর্শন করে।
মারের চোখ দিয়ে, রাজগৃহ নগরীর চোখ দিয়ে, সিদ্ধার্থের চোখ দিয়ে, নৈরঞ্জনা নদীর চোখ দিয়ে - লেখক সিদ্ধার্থের জীবনকথা জীবন্ত করে তুলেছেন।

আর একটা কথা আলাদা করে বলতে হয়, সেটা হচ্ছে ওনার ভাষার ব্যবহার। চমৎকার ভাষা, যেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়ছি।

এর আগে লেখকের "নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা" পড়েছি, খুব খুব প্রিয় একটা উপন্যাস ওটা। এই উপন্যাসটিও পছন্দের তালিকায় যুক্ত হল।
Profile Image for মারিয়াম ছন্দা.
9 reviews15 followers
Read
February 11, 2023
গতকাল বইটা পড়লাম।আমাকে তেমন আন্দোলিত করেনি। মানে দারুণ লেখনীতে সিদ্ধার্থকে খুব কাছের মানুষ মনে হয়েছে ঠিকই কিন্তু এই ৮ বছর ধরে এই নির্বাণ শব্দকে এতোজন এতোভাবে ব্যবহার করেছে, এতো চেষ্টা, জানাশোনা অথচ অনেকেই ন শব্দটা পর্যন্তই পৌছাতে পারেনি। ইগোকে হারাতে গিয়ে আরও বেশি ইগোকে আলিঙ্গণ করা। আরও বেশি অহং এ ডুঁবে যেতে দেখেছি। অনেক আশা, অনেক উত্তেজনা অনেক জিজ্ঞাসা নিয়ে যেয়ে কিছুই ছুঁতে পারিনি কখনও আর না দেখেছি কাউকে পেতে। ফলে এই সংক্রান্ত যেকোনো কিছু কেবল বেদনা ও হতাশাপূর্ণ ভালোলাগা দেয় আর কিছু নয়। তবুও যারা এই বইটি পড়েন নি তারা পড়তে পারেন। একটানে শেষ করে ফেলার মতো করে লেখা। এইভাবে এর আগে কখনও সিদ্ধার্থকে পড়েন নি বলতে পারি। তবে বইটার শুরুর বর্ণনাগুলো লিটল বুদ্ধা সিনেমাতে পাবেন। মানে আমার কাছে পড়ার সময় ওই দৃশ্যগুলোই ভেসে উঠছিলো। কেউ পড়তে চাইলে গুগল থেকেই নামিয়ে পড়ে ফেলতে পারবেন চট করে।
Profile Image for Monisha Mohtarema.
86 reviews2 followers
March 4, 2024
রাত নিশুতি। সত্যিকারের এক রাজপুরির একটি ঘর।রাজপুত্র সিদ্ধার্থের চোখে ঘুম নেই। স্ত্রী ও ছেলে রাহুল পাশে ঘুমের ঘোরে অচেতন। একবার বউ-ছেলের জন্যে মায়ায় চিন্তা বাধা পায়, আরেকবার মার বাঁধা দেয়।

একসময় রাজপুত্র মন শক্ত করে। বলে-এগিয়ে চল।রাজা শুদ্ধোধন কি ভাবতে পেরেছেন তাঁর ভাবী উত্তরাধিকারী সিংহাসনের মায়া ছেড়ে রাজপ্রাসাদ ঘরসংসার আমোদবিলাস সব ফেলে নিরুদ্দেশ হচ্ছে? আর যে রাজকুমার সুখসাচ্ছন্দ্য ছেড়ে রাতের আড়ালে গোপনে বেরিয়ে পড়ছেন তিনিই বা কেন যাচ্ছেন? কী তাঁর উদ্দেশ্য?

তার উদ্দেশ্য ছিলো পৃথিবীর সমস্ত প্রপীড়িত মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করা। সমস্ত জগৎ দুঃখে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিলো। কোথাও কোনো আলো ছিলো না,যে-আলোতে তারা নিজেদের মুখ দেখবে, নিজেদের মার্গ খুঁজে পাবে, সেই আলো প্রজ্ঞার আলো।তিনি সেই আলোক খুঁজে বের করবেন। সকলের জন্য।
Profile Image for Md Golam Mostafa.
3 reviews2 followers
April 24, 2023
বইটি পড়তে শুরু করেছি। বয়ান ভালো লাগছে। শুরুতেই 'মার' এর সাথে সিদ্ধার্থের মনযুদ্ধ। 'অনন্ত নির্বাণ' ও 'বিপণ্ণ বিস্ময়' এক নয় - তবু ১৬ পৃষ্ঠার প্রথম অধ্যায়টিতে জীবনানন্দের 'আট বছর আগের একদিন' কবিতা থেকে লেখক যে সহযোগ ঘটিয়েছেন, সেটি ভালো লেগেছে। দু'জনই মধ্যরাতে ঘর ছেড়েছিলেন, দু'জনেরই "বধূ শুয়েছিলো পাশে— শিশুটিও ছিলো; প্রেম ছিলো, আশা ছিলো—", তবু তাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন, একজন "মানবের মহাবেদনার ডাক শুনে" অন্যজন "যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের— মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা এই জেনে"। মনে হতেই পারে, জীবনানন্দ প্রভাবিত হয়েছেন বুদ্ধের দ্বারা, আর সন্মাত্রানন্দ আলোড়িত হয়েছেন জীবনানন্দের দ্বারা।
Displaying 1 - 30 of 34 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.