দুজন হিন্দু বোন, যারা আশৈশব দেব-দেবীর পূজো-অর্চনা করেছে, মণ্ডপে যারা নিবেদন করেছে গভীর অনুরাগের নৈবেদ্য, তারা কোন জাদুকরী মন্ত্রে খুঁজে পেল ইসলাম? মন্দিরের ঘণ্টার শব্দ, পূজো-পার্বনের কীর্তনের সুর যাদের রক্তে মেশা, তারা কেনই-বা মগ্ন হলো মিনার থেকে ধেয়ে আসা আযানের ধ্বনিতে? ‘ফেরা-২’ এমনই এক যাপিত-জীবনের উপাখ্যান, কিংবা মহাকাব্যের চেয়েও বেশি কিছু।
নওমুসলিমদের ঘটনাগুলো পড়লে মনে হয়, এই আমরা যারা না চাইতেই মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণের এবং ইসলামের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি তারা কত হেলা ফেলায় এই সৌভাগ্যটাকে পায়ে ঠেলে দেই। 'ঈমান' যে কত দামী জিনিস সেটা আমাদের বুঝে আসে না কারণ আমরা ঈমানের জন্য তেমন কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়তো হই না। এ কারণে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ থেকেও হয়তো আমরা বঞ্চিত হই। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও যে আমাদের ঈমানহীন মৃত্যু হতে পারে সেটা কি আমরা বুঝি? এই বইতে উল্লেখিত বোনদের ঘটনাগুলো পড়লে আপনি অবাক হতে বাধ্য যে এরা কত অল্প বয়সে প্রকৃত 'ঈমানের' স্বাদ পেয়েছে এবং এই ঈমানের উপর দৃঢ়পদ থেকে কি পরিমাণ ত্যাগের নজরানা পেশ করেছে। আপনার আমার বিলাসী, আরামদায়ক জীবনে বসে সেটা কল্পনা করাও কষ্ট। এই মানুষগুলো যারা সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে, অসম্ভব রকমের ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে জড়ো হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে কবুল করে নিন। তাদের দেখে আমাদের এই উদাসীন, উদ্ধত অন্তরকে অবনত করে রবের কাছে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন।
একটা সময় ভাবতাম, আমি কে? কোথা থেকে এসেছি? চারপাশের মানুষগুলো কারা? কেন? কীভাবে? প্রশ্নগুলো আমার একার নয়। আমার মতো অসংখ্য প্রাণের গল্প। জীবন বসে থাকে না। পথ খুঁজে ফেরে, কেউ উদাসীনতায় পথভ্রষ্ট হয়। কেউবা বিশ্বাসের অমৃত সুধা পান করে। বইটিতে এমনই দুই বোনের সত্যিকারের গল্প।
আয়িশা। পাকিস্তানের কোনো এক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস। হিন্দু পরিবারের সচেতন মেয়ে। অন্যদের মতো তার জীবনেও দু:খ-কষ্ট আসে, পূর্ববর্তীদের চিরাচারিত দেখানো পথে ছুটে যায় বাড়ির পাশের মন্দিরে। প্রার্থনা করে। ইচ্ছা আকাঙ্খা শেয়ার করে। তবুও, মনের মধ্যে কী যেন খটকা লাগে! উপাসনা তাকে তৃপ্তি দেয় না। ভাবে, সৃষ্টিকর্তাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করাটা সম্ভব? উত্তাল ঝড়ে তার দেহকাঠামো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যে নিজেকে বাঁচাতে পারে না। কীভাবে বাঁচাবে আমাকে?
উদ্দ্যেশ্যহীন জীবনটা বাঁক নিতে শুরু করে। সমাজের রীতিনীতি উপেক্ষা করে নিজেকে আড়াল করতে ভালোবাসে সে। দৃশ্যমান হওয়ার রীতি তার কাছে খাপছাড়া মনে হয়। এমন সব 'অসামাজিক' কর্মকান্ডে প্রচন্ড ক্ষীপ্ত হয় পরিবার। বাপ-দাদাদের নিয়মের ধার ধারে না। এ কেমন মেয়ে!
আয়িশার এমন আচরণ নজর এড়ায়নি প্রতিবেশি মুসলিম বান্ধবীর। দাওয়াহর সূবর্ণ সুযোগ। আয়িশা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। বল, মাটির গড়া মূর্তি তোমাকে রক্ষা করবে কীভাবে? মেঘ-বৃষ্টিতে সে নিজেই ভিজে যায়। হালকা আঘাতে চুরমার হয়ে পড়ে। এমন কেউ কিভাবে বিশাল আকাশ আর মেঘমালা সৃষ্টি করবে? পালে হাওয়া লাগে। মেয়েটিও ভাবে। বান্ধবী একসময় তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়। মেয়েটি চির সত্যের মুখোমুখি হয় - 'ইসলাম'।
ইসলামের সত্য বাণী সে গ্রহন করে নেয়। আকড়ে ধরে আল্লাহর বিধান। দ্বীনি বন্ধুর খাতিরে ইসলামি বই, সিডি ইত্যাদি শুনতো। তার ইমান আরও দৃঢ় হয়। জানার পরিধি বিম্তৃত হয়। একসময় ছোট বোন কে দ্বীনের দাওয়াত দেয়। মারইয়াম। ১৫ বছরের কিশোরী প্রথমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। বোনের কাছে থাকার দরুন ইসলাম সম্পর্কে অনেককিছু জানার, বোঝার, বিবেচনার সুযোগ পায়। একসময় সেও ইসলাম গ্রহন করে।
গল্পটা এখানে শেষ হলে পারত। বাস্তব কখনোই গল্পের মতো হয় না। তাদের জীবনের গল্পও এখানে শেষ নয়। বরং, শুরু।...
মেয়েটি বুঝতে পারে, ইসলাম শিখতে হবে। একা একা কতটুকু... কুরআন, সলাত, সাওম সবই সুক্ষ্ণভাবে পালন করার নিয়ম জানতে হবে। চাই শিক্ষক। যে পথ দেখিয়ে দিবে। আশেপাশে মুসলিম প্রতিবেশি থাকায় বিষয়টা কঠিন মনে হয়নি। গল্পটি মোড় নেয়। মায়ের নজরে আসে তাদের কর্মকান্ড। পরিবর্তনগুলো ভাইদের নজর এড়ায়নি। লুকিয়ে সলাত আদায় করা যায়। রমাদানের সিয়াম পালন করবে কীভাবে? একসময় রমাদ্বান আসে। সাওম পালন করে। মাঝে মধ্যেই বাধা হয়ে দাড়ায় পরিবারের সদস্যরা। সে মানিয়ে নিতে জানে।
আকস্মিক পরিবর্তনের দরুন প্রতিবেশিদের কাছ থেকেও ইলম অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবারের বাধায় একসময় একবারে বঞ্চিত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে মা, ভাইয়েরা কিছুটা আঁচ করতে পারে। একসময় সত্য প্রকাশ হয়ে যায়। বোনেরা ঘোষণা দেয় - " আমরা মুসলিম "
শুরু হয় আপন 'মা'র অত্যাচার, ভাইদের অমানবিক আচরণ, বাবার ভর্ৎসনা। মা আঘাত করার সুযোগ খুঁজতো, কখনোবা কারণ ছাড়াই এলোপাথাড়ি নখের আচড়। এমনসব পরিস্থিতি, কাঁচা হাতের লেখায় বুঝাতে পারবো না। ধৈর্য ধরে তারা। মাস শেষে বছর হয়, ছোট বোনটিও বুঝতে শেখে। একজন পাহাড়া দেয়, অন্যজন সলাত পড়ে। সহ্য হয় না পরিবারের। প্রিয় ভাইয়ের আক্রমণে আয়িশার গালে দাগ পড়ে, ধাক্কা, ঘুসি সহ্য করতে না পেরে রক্তাত্য, অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
চক্রান্ত আঁটে মা-বোন-ভাইয়েরা। বংশে কী চুনকালি লাগাবে মেয়েদুটো! একের পর এক বুদ্ধি বের করতে থাকে। এই মেয়েদের 'পথে' ফেরাতে হবে। ক্রমাগত নতুন নতুন সমাধান বের করতে হয় নওমুসলিম বোনদের। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কঠিন হয়। স্রোতের বেগ বেড়ে যায়, বিশালকার স্রোতগুলো ঠেউয়ে পরিণত হয়। মেয়েদুটি একসময় জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তটি নেয়। পরিবার, জন্মদাত্রী মা, প্রাণের বাবার সঙ্গ ত্যাগ করে আল্লাহর জন্য। প্রকাশ্য দ্বীন কায়েম করে। পরিবারকে ইসলামের দাওয়াত দেয়। বাপ-দাদাদের ধর্মকে আঁকড়ে থাকে পরিবার। উল্টো মেয়েদুটির ইসলামচর্চা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিরতর করে তুলে।
পরিবার আয়িশাদের নিজের ধর্মে রিভার্ট করতে তাদের সাহায্যকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে। ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জয়ী হয় দুইবোন, দ্বীনের প্রতি অবিচল, অনড় থাকে। ইমোশনাল ব্লেকমেইল থেকে হুমকি-ধমকি কিছুই কাজে আসেনা। প্রতারণার মোক্ষম সুযোগও কপূরের মত উবে যায়। আল্লাহ যাদের ইস্পাতকঠিন মনোবল দিয়েছেন, তাদের কেইবা পথভ্রষ্ট করতে পারে?
আমরা চাইলেই সলাত পড়তে পারি, সাওম পালন করতে পারি। অথচ, আমাদের তুলনায় তারা সুযোগই পায় নি। তারপরেও সলাত, কুরআন শেখা, পর্দা কন্টিনিউ করেছে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। সিজদায় অশ্রুছেড়ে নত হওয়া। রবের কাছে সকল অত্যাচারের বিচার দেয়। ইশ!! যদি আমি এমন হতে পারতাম। গল্পটি সত্যিও কষ্টের। ফলটা আনন্দের।
এত কষ্টের পরেও বোনটি দো'আ করে, " হে আল্লাহ, পৃথিবীর এই বিচ্ছেদ, রক্তের এই ছিন্নতা আপনি কবুল করুন " আমিও দো'আ করি, আল্লাহ যেন আমাদের দ্বীনের পথে কবুল করেন। যেন নীড়হারা পাখিদের ইসলামের সুমধুর বাণী পৌছে দিতে পারি। রক্তের বাধন কিংবা ক্ষমতার বড়াই যেন মহান রবের থেকে বিরত রাখতে না পারে।
(মুসলিম হবার পরের নামগুলো লেখা হয়েছে। তাদের আগের নাম দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছিনা)
"যারা মুসলিম ঘরে জন্মগ্রহণ করে সহজেই ইসলাম পেয়েছেন, তারপরও ইসলাম সম্পর্কে জানেন না, জানার চেষ্টা করেন না, ইসলাম মানেন না -- তারা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কী জবাব দিবেন?"
~ সিহিন্তা শরীফা শেষ কথা
১. ফেরা ~ খ্রিস্টান থেকে দুজন বোনের ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসার গল্প। সিহিন্তা শরীফা ও নাইল��হ আমাতুল্লাহ কীভাবে জীবনে সত্যের দিশা পেল? কেমন ছিল তাদের এই পথের যাত্রা। জানতে হলে বইটা পড়ুন।
২. ফেরা ২ ~ পাকিস্তানের একটি হিন্দু পরিবারের মেয়ে আয়িশা(মনিকা) ও মারইয়ামের(নীলম) ইসলাম গ্রহণের ঘটনা নিয়ে লেখা । বাবা-মা,ভাই-বোনদের ত্যাগ করে কীভাবে আল্লাহর ভালোবাসায় বাড়ি থেকে পালিয়ে মাদ্রাসায় চলে যায়, পরিবারের বিপক্ষে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
বইগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাব না!
বইগুলো আপনি পড়লে ইনশাআল্লাহ বহুত ফায়দা পাবেন। কৌতূহলে হাতে নিন। চারজন বোনের ত্যাগ,বির্সজন ও অবিশ্বাস্য ঈমানি শক্তি আপনাকে ভাবাবে-প্রেরণা যোগাবে। আলোর সন্ধান দিবে সত্যপথের অনুসন্ধানীকে। বইগুলো পড়ে নিজের ঈমানও একটু যাচাই করে নিবেন কেমন?
বই ~ ফেরা (বোন সিহিন্তা শরীফা ও নাইলাহ আমাতুল্লাহ) বই ~ ফেরা ২ ( বিনতে আদিল) প্রকাশনী ~ সমকালীন প্রকাশন পৃষ্টা ~ ১২০ ও ১১৯ মূল্য ~ ১৫০/- ও ১৭২/-
This review is for the Bengali translation of the Urdu book "Khameeri Musalman". I cannot comment on the quality of the translation due to my lack of Urdu reading capability.
In this book, the author Binti Adil collects the testimonial of a Pakistani Muslim convert. It tells the story of how Aisha (formerly Monica) and her sister Maryam (formerly Neelam) converted to Islam from Hinduism. Fera 2 is narrated only from the perspective of the older sister, Aisha, which is in contrast to ফেরা 1 where both sisters wrote from their individual perspectives.
Every convert’s story serves to inspire and strengthen the faith of believers, and this is no exception. Two themes in particular stood out to me in this story, the sisters’ sacrifice and their trust in Allah. This level of devotion can only be the result of intense piety, which is very inspiring to me. However, what surprised me was how early in the book Aisha became a Muslim, it happened in the first third of the book. Most of the book actually deals with how she studied and practiced her faith and the obstacles she faced from her non-Muslim family. At times, the story dealt with very distressing and sad events involving physical and mental abuse of the sisters.
The editing of this book could have been improved. I am assuming this is an issue of the original book and not the translation. The flow of the story can sometimes be abrupt and time-skips were difficult to figure out. Some events were very similar and took place one after another, such as dreaming of visiting family members, which was a bit jarring. I wish the story had more details on Aisha’s study of Islam and her life in the madrasah. I was interested in knowing more about Aisha’s thoughts regarding various aspects of Islam and the Prophet ﷺ’s life. These may have not been as eventful but could have fleshed out the story more.
Regardless, this is a very important story of how the sisters overcame the various challenges and tests that life presented them. It was definitely not a smooth sailing for them, even after leaving their family and home. They even had to fight it out in the court. There are lots of lessons in this book for the rest of us, especially those who had the privilege to be born in a Muslim household.
May Allah give us strength and allow us to practice His religion better.
কঠিন বাস্তবতার সামনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মন যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রকাশে অবিচল থাকে তখন ইসলামের প্রতি একজন মানুষের ভালবাসা কত গভীর তা প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তা যখন ঘটে কোন অমুসলিমের জীবনে তখন তা একজন জন্মগত মুসলিমের জন্য শিক্ষা এবং আলোকবার্তা হিসেবে হাজির হয়। "ফেরা ২" বইতে তেমনি উঠে এসেছে চরম প্রতিকুল পরিবেশে হিন্দু পরিবারের দু বোনের ইসলামে উঠে আসার গল্প, নিরেট বাস্তবতার গল্প। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ব সত্যের প্রতি অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞ মন তাদের প্রতিকুলতার উপর জয়ী করেছে। লেখনীর চেয়ে বাস্তবতার আলোকে বইটি বিচার করলে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে জন্মগত মুসলিম হয়ে কতটা পেরেছি আমরা ইসলামকে বুঝতে, কাছে টানতে?
২.৫/৫ প্রথমার্ধ তেমন ভালো লাগেনি। সংলাপ গুলো বেশি নাটকীয় মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধ বেশ চমৎকার। দ্বীনে ফেরার কারণে কতো মানুষকে কতো প্রতিকূলার মোকাবিলা করতে হয়। সেই তুলনায় আমরা কতো সৌভাগ্যবান, কতো বড় নেয়ামত প্রাপ্ত, তা আমারা উপলব্ধি করতে পারিনা।
কোন বই পড়ে কেদেছি বলে মনে পড়েনা। একদিন এক ক্বারী সাহেব কে দেখলাম কুরআন তিলাওয়াতের ফাকে কাদতে। নিচে দিয়ে দেখলাম আয়াত গুলো নুহ আ. ও তার ছেলের ঘটনা। এই বইটাতেও সেরকম একটা ছোয়া পাওয়া যায়। যারা আল্লাহর পথে চলতে চান বা আল্লাহর জন্যে কুরবানী সম্পর্কে জানতে চান তারা যেন এই বইটি অবশ্যই পড়েন।
#ফ্ল্যাপ: নীড়হারা আর কতকাল কেটে যাবে? আর কতকাল ভবঘুরে হয়ে, ভীষণ উদাসীনতায় কেটে যাবে আটপৌরে জীবনের অনাগত স্নিগ্ধ ভাের? এই ঝাঁঝালাে দুপুর, প্রসন্ন বিকেল, ধূসর গােধূলি, নিথর সন্ধ্যা, নির্জন রাত—আর কত দিন কেটে যাবে ভীষণ অন্ধকারে? সব পাখি নীড়ে ফেরে, সব নদী বয়ে যায় আপন ঠিকানায়; ফেরে না কেবল মানুষ! তবু কেউ কেউ ফিরে আসে৷ ফেলে আসে একজীবনের সমস্ত সম্মােহন৷ সেই ফেলে আসা, ছেড়ে আসা, রেখে আসা দুঃসাহসী দু-বােনের সত্যের পানে নির্নিমিখ ছুটে চলার উপাখ্যান দিয়ে সাজানাে হয়েছে ‘ফেরা-২।
জাগতিক নিয়মে, সব পাখি নীড়ে ফেরে। ফুল ফোটে, বৃষ্টি নামে এবং নদী তার আপন পথে বাঁক নেয়। কিন্তু, ফেরে না কেবল মানুষ। অহংকার আর অহমিকার দহনে তার বুকের ভেতরে জিইয়ে রাখে পাহাড়সম আগুন। সেই আগুনে ঝলসে যায় সে নিজে এবং ঝলসে দিতে চায় তার চারপাশ। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ আর বেপরোয়া। সে তার অস্তিত্বের কার্যকারণ ডিঙিয়ে নিজেকে আমিত্বের আসনে দেখতে চায়। নিজের ক্ষুদ্রাকৃতির প্রতি চূড়ান্ত ভাবলেশহীন হয়ে সে নিজেকে অনন্ত-অসীমে কল্পনা করে বসে। ফলে সে বিচ্যুত হয়। পদস্খলন ঘটে তার। যুগে যুগে যাদের ধ্বংসের পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই, তাদের সকলের যেন একই গল্প, একই চিত্রনাট্য—ঔদ্ধত্য, অহংকার আর অনাচার। এক মহাসত্যকে পাশ কাটিয়ে, নিজেকে নিয়ন্ত্রকের আসনে যখনই সে আসীন করতে গেছে, তখনই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে নিপতিত হয়েছে তার ওপর।তবু, কারও কারও গল্পটা অন্যরকম। তবু, কেউ কেউ ফিরে আসে। খুঁজে পায় পথ। খুঁজে নেয় অন্তিম অবসরের অনন্ত আবাসস্থল। ফিরে আসা এমন দুটো পবিত্র আত্মার যাপিত-জীবনের রং-তুলিতে নির্মিত এই বই ফেরা ২।
#পাঠ_আলোচনা: ফেরা বইয়ের পর ফেরা ২ বইতে আরো ২ বোনের দ্বীনের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে দ্বীনের উপর প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝার সাথে লড়াই করে টিকে থাকার এক সাহসী কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। ফেরা" নীড়ে ফেরার গল্প। সারাদিনের কাজ কর্ম, ব্যস্ততা, চড়াই-উতরাইয়ের পর সব জীবের একটাই লক্ষ্য নীড়ে ফেরা। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের পৃথিবীতে সফরে পাঠিয়েছেন। সফর শেষে আবার তাঁর নিক���েই গমন করতে হবে। আমাদের সফর শুরু তাঁর নিকট থেকে, আমার নীড়ের যাত্রাও তাঁর নিকটেই। ফেরা ২ গল্পে ২ জন হিন্দু মেয়ে মনিকা আর নীলম এর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। কিভাবে তারা দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে সেটা গ্রহণ করেছে, দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা জেনেছে, সেসব পালন করতে তাদের কত শত চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। কুরআন শিক্ষা থেকে শুরু করে যাবতীয় সব পালন করতে কত শত ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। হিন্দু মা, ভাই বোনদের অত্যাচার মেনে নিয়ে কিভাবে তারা তাদের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আসলো ইসলামের ছায়াতলে তারই বর্ণনা করা হয়েছে। বইটা পড়লে অন্য যারা অমুসলিম ভাই বা বোন আছেন যারা ইসলামের ছায়াতলে আসতে চান, পরিবার সমাজের জন্য পারছন না তাদের জন্য বইটা লড়াই করার সাহস জোগাবে। আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
❝তিনি তোমাকে পথহারা অবস্থায় পেলেন, অতঃপর পথ দেখালেন❞ [আদ-দুহা, ০৭]
মহান রব্বুল আলামীন যে বান্দাদের উপর কতটা দয়ার চাদর বিছিয়ে রাখেন তা বইটা পড়লেই বোঝা যায়। প্রতিটা বিপদে তাঁর কাছে মন থেকে সাহায্য চাইলে তিনি কল্পনার বাইরে থেকেও যেকোনো ভাবে সাহায্য নিয়ে আসেন। সুবহানআল্লাহ। বইটায় মহান আল্লাহ তা'য়ালার দয়ার দারুণ একটা দিক প্রকাশ পেয়েছে। প্রত্যেকটা বিপদে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর নিকট বিলিয়ে দিলে তিঁনি হাজার বিপদ হলেও রক্ষা করবেন। তিঁনি সর্বদা বান্দার মঙ্গল চান। বইটায় তাহাজ্জুদ এর বিষয়টা বারবার উঠে এসেছে৷ মুসলিম উম্মাহর চাওয়া পূরণ করার জন্য তিঁনি দারুণ একটা পন্থা দেখিয়েছেন। তাহাজ্জুদ। এই নামাজের আজান হয় না বরং আল্লাহ স্বয়ং সাত আসমানের উপরের আরশ থেকে প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বান্দাদের আহ্বান করেন, কার কি চাওয়া, দাবি দাওয়া আছে তাঁকে জানাতে। তিঁনি সবার সব ইচ্ছা পূরণ করবেন। সুবহানআল্লাহ। ফেরা এবং ফেরা ২ প্রত্যেক মানুষের পড়া উচিত। সত্য ও মিথ্যার দন্দ্ব ও দ্বৈরথের ভেতর থেকে মিথ্যের সকল মোহাচ্ছন্ন আবরণকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সত্যকে গ্রহণ করতে পারলেই ব্যক্তি তার সফরে সফলকাম হবেন।
ফেরা থেকে ফেরা-২ এর গল্পটা সত্যিই আমার হ্রদয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দুই বোন। একই রক্ত, একই বাড়ি, কিন্তু যখন দ্বীনের কথা আসে তখন আর কোনো আপস নেই। বাবা-ভাইয়ের চোখের সামনে তারা হিজাব পরে দাঁড়িয়েছে, কুরআন ধরে দাঁড়িয়েছে, আর বলেছে: “আমরা আল্লাহর দিকে ফিরছি। তোমরা যা ইচ্ছা করো।” সেই মুহূর্তগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাবার চিৎকার, ভাইয়ের হুমকি, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ভয়, সমাজের কথা, বিয়ে ভেঙে যাওয়া; শুধু একটা কথাই বারবার বলেছে: “আল্লাহই যথেষ্ট।” এই যে ত্যাগ, এই যে কান্না চেপে রেখে হাসি, এই যে রক্তের সম্পর্কের সাথে মানসিক যুদ্ধ করে ঈমানকে বেছে নেওয়া। এটা শুধু গল্প নয়। এটা বাস্তব। এটা আমাদের চারপাশে ঘটছে। কারও বোনের সাথে, কারও মেয়ের সাথে। আর সবচেয়ে বড় কথা। যখন ওরা শেষ পর্যন্ত একা একা বেরিয়ে এসেছে পথে, তখন আল্লাহ তাদের জন্য এমন দরজা খুলে দিয়েছেন যা কেউ কল্পনাও করেনি। নতুন বাড়ি, নতুন বোনেরা, নতুন জীবন। এই গল্পটা আমাকে শিখিয়েছে। যখন তুমি আল্লাহকে আঁকড়ে ধরো, তখন পুরো দুনিয়া তোমার বিরুদ্ধে গেলেও তুমি জিতবেই। আর জিতবে এমন সুন্দরভাবে যে, যারা তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিল, তারাই একদিন ফিরে এসে বলবে। “তোর সাথে থাকাটাই ছিল সঠিক পথ।” আল্লাহ এই গল্পের শক্তি। আর আমাদের সবাইকে তাদের মতো ঈমানের সাহ দান করুন। আমীন। 🤍
‘ফেরা ২’ এমন একটি বই, যেখানে ভুলে যাওয়া জীবনের গল্পগুলো ধীরে ধীরে আল্লাহর আলোয় ফিরে আসে। লেখক বিনতু আদিল সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন — একজন মানুষ যত দূরেই ভুলের পথে যাক না কেন, তার জন্য আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ হয় না।
বইটির ভাষা খুব সহজ, কিন্তু প্রতিটি লাইন হৃদয়ে দাগ ফেলে যায়। অনুশোচনা, তওবা, ধৈর্য, ও ইমানের শক্তি — এই চারটি বিষয় বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
যা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে: ✅ আল্লাহর দিকে ফিরে আসা মানে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং নিজেকে খুঁজে পাওয়া। ✅ ধৈর্য ও দুআই কষ্টের সময়ের সবচেয়ে বড় শক্তি। ✅ জীবনের ছোট ছোট পরিবর্তনও একদিন বড় হিদায়াতে পরিণত হয়।
রেটিং: ⭐⭐⭐⭐☆ (৪.৫/৫)
উপসংহার: “ফেরা ২” শুধু একটি বই নয়, এটি এক আত্মার জাগরণ — এক যাত্রা আল্লাহর দিকে ফেরার।
দুই মেয়ের সত্যের পথে এক দুর্ধর্ষ যাত্রা, যার প্রতিমুহূর্তে ছিলো বাধা। যে বাধা রক্তের বাধা, যাকে উপেক্ষা করা মৃত্যুযন্ত্রনা থেকেও কঠিন। তবুও পরম করুনাময় আল্লাহ সুবহানাহুআ তায়ালার প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাদের পিঠ কে করেছিলো দেওয়ালের চেয়েও মজবুত। যে বিশ্বাস গভীর সমুদ্রের মাঝেও তাদেরকে কূলে ফেরাতে সাহায্য করেছিলো।
বিনতি আদিলের “ফেরা ২” একটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও আবেগঘন উপন্যাস। গল্পের ধারাবাহিকতা, চরিত্রগুলোর আবেগের গভীরতা এবং লেখকের সাবলীল ভাষাশৈলী পুরো বইটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। পাঠককে ধরে রাখার মতো টেনশন ও আবেগ—দুটিই খুব সুন্দরভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন লেখক। আমার ব্যক্তিগত মতামত: এই বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে। গল্প পড়ার সময় বারবার থেমে ভাবতে হয়েছে, যা একটি ভালো উপন্যাসের বড় বৈশিষ্ট্য।
বইটির প্রতিটি পাতায় রয়েছে ঈমান মজবুত করার যথেষ্ট খোরাক । গল্পটা একেবারে ডুবে যাওয়ার গল্প নয়, বরং ডুবতে ডুবতে হঠাৎ মাঝ সাগরে জাহাজে উঠার গল্প । নিজেকে নতুন ভাবে জানার গল্প । সত্য গল্প । তাই গল্পটা একটু অন্যরকম । যেকোনো পাষাণ হৃদয় নরম হতে সক্ষম ।
খুবই সুন্দর লিখেছে মা-শা-আল্লাহ। ফেরা১ এর থেকে ফেরা২ বেশি ভাল লেগেছে। অনেকটা ঈমান জাগানিয়া ধরনের বই। অনেকবার নিজেকে ধাক্কা দিয়েছে। আল্লাহ তাদের এবং আমাদের সবাইকে দাঈ হিসেবে কবুল করুন!
সারাংশ: দ্বীন কেবল মুসলিম পরিচয় দেওয়া নয়, দ্বীন হচ্ছে মুসলিম পরিচয়টাকে জিইয়ে রাখার নাম, দিনদিন ঈমানের উন্নতি সাধনের নাম—বইটি পড়ে চমৎকারভাবে বুঝতে পারবেন এই বিষয়টি।
ফেরা ১ এর মতো এই বইটিতেও অমুসলিম ২ জন বোনের ইসলামের পথে ফিরে আসার সত্য গল্প নিয়ে লিখা। তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য কত কষ্ট করেছেন। এবং কিভাবে গ্রহণ করেছেন এই সব কিছু নিয়েই এই বই।