লেখালেখির শুরু যায়যায়দিনে; প্রবাস পিঞ্জর ও স্বদেশ বিহঙ্গ শিরোনামের দুটো নিয়মিত কলাম লিখতেন। পড়াশোনা:কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনী ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। মলিকিউলার থেরাপিউটিক্সে পিএইচডি, পোস্ট-ডকে স্টেম সেল রিসার্চ - এখন কাজ করছেন রেগুলেটরী সায়েন্সে । তার আগ্রহ: মনস্তত্ত্ব, ভাষা, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও ধর্ম। ডকুমেন্টারী বানিয়েছেন ঢাকার ইতিহাস নিয়ে। ২০০৪ থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।
"বাঙালির বিপ্লবের গন্তব্য একটাই: সবাই, সবকিছু তার নিজের মতো হয়ে উঠবে। সমতা আর সাম্যের মানে তার কাছে হোলো কাতারে-কাতারে, লাখে-লাখে তার নিজের ক্লোন কিলবিল করবে। আর যারা অন্য রকম, অন্য বিশ্বাসের - তাদের সে 'কিল বিলের' মতো কচুকাটা করবে। "
" বাঙালির বিপ্লব" নামের প্রবন্ধ এভাবেই বাঙালিকে চিহ্নিত করেছেন ফাহাম আবদুস সালাম। মূলত, বাঙালির মনস্তত্ত্ব নিয়ে ব্যবচ্ছেদ, শাহবাগ আন্দোলন ও এদেশে ভিন্নমতের প্রবাহ নিয়ে লিখিত রচনাগুলো সরেস। তাতে হুমায়ুন আজাদের মতো ফ্লেভার পাওয়া যায়। অথচ এই লোক মতাদর্শের দিক থেকে ঠিক তার বিপরীত অবস্থানের মানুষ।
নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষুদ্রতার কারণেই হয়তো ফেসবুক সেলেব্রিটিদের লেখা বই পড়া কিংবা কেনা হয় না। এবার মোটামুটি ব্যতিক্রম হলো। ফেসবুক সেলেব ফাহাম আবদুস সালামের দশটি লেখা কিংবা ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সংকলিত গ্রন্থ "বাঙালির মিডিওক্রিটির সন্ধানে" পড়ে ফেললাম। বাঙালির স্বভাবসুলভ দ্বিচারিতার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতা এবং অপরাপর কয়েকটি বিষয়ে নিয়ে লেখা।
লেখক সম্ভবত কোনো প্রথাগত বানানরীতিকে মর্যাদা দিতে প্রস্তুত নন৷ তাই বোধকরি নিজস্ব বানানরীতি ও শব্দ প্রয়োগে সোচ্চার ছিলেন। যারা প্রথাগত বানান তরিকা দেখে ও পড়ে অভ্যস্ত, তারা বিব্রত হতে পারেন।
মাত্র ১শ ৮০ পাতার বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ৪শ ৬০ টাকা। বিশাল বিশাল ফন্ট ও স্পেস ব্যবহারের মাধ্যমে পৃষ্ঠা বাড়ানো হয়েছে৷ লেখক নিজেকে নৈতিকতার শিরোমণি পর্যায়ের কেউ মনে করেন। অন্তত তার লেখায় এমনটাই প্রকাশ্য। অথচ তার নিজের বইয়ে দাম বাড়ানোর জন্য এমন জুয়াচুরি এককভাবে প্রকাশক করলেন আর লেখক কিছু জানেন না তা বিশ্বাস করা কঠিন৷ লেখার কনটেন্টের কিছু সারবস্তু আছে। তা স্বীকার করছি। তাই বলে বইটির দাম এত বেশি হওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
সেই যে কত বছর আগে সুনামগঞ্জের হাওরে নৌকায় রাত দিন কাটিয়ে শেষ বিকেলে আমাদের ট্রলার ভিড়েছিল কালনীতে। ট্রলার থেকে নেমে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাউল সাধক শাহ আবদুল করীমের অনুরাগী হলুদ পাঞ্জাবি পরা ঘাড় পর্যন্ত তেল চিটচিটে চুলের লোকটার কথা মনে পড়ল হঠাৎ। ভদ্রলোকের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল কী না জিজ্ঞেস করিনি কেউ আমরা। কারও বাড়িতে গেলে শুরুতেই বসতে দিয়ে যেমন আপ্যায়নের বন্দোবস্ত করে মানুষ, তেমনই যেন তিনি ঘাড়ের গামছা দিয়ে চৌচালা ঘরের ময়লা চাদর বিছানো খাটটা ঝেড়ে আমদের বিনয়ের সাথে বসতে দিয়ে হাতে তুলে নিয়েছিলেন দোতারা। কী সুমধুর হৃদয় তোলপাড় করা সঙ্গীত মূর্ছনা। এ-ই ছিল আপ্যায়ন। এরপর মানব-মানবীর প্রেম নিয়ে সাধু-শিষ্যের যে জ্ঞানের কথা শুনলাম তা তো আমি কোনও বই-পুস্তকে পাইনি। এই জ্ঞান তো তার নিজের পর্যবেক্ষণ, নিজের দেয়া আইডিয়া। অনেকেই প্রশ্ন করে, জ্ঞানী কে? জ্ঞানী লোক তো সেই সাধু। আমি তো তার ভক্ত বনে গিয়েছি সেদিনই, নতুন একজন মানুষকে প্রথম সাক্ষাতেই আরও নতুনভাবে আবিষ্কার করা! আমি অনেকবার ভেবেছি, ভদ্রলোকের কথা আমার মনে পড়ে কেন? উত্তর আসে, ওঁর চিন্তা আর আইডিয়ার জন্য।
আসলে বু্দ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ মোটা মোটা বই এসপার-ওসপার করে দেয়া না, সুন্দর করে বাংলা আর ইংরেজি লেখা না, বরং জ্ঞান সৃষ্টি করা। চিন্তার ক্ষেত্র তৈরী করে দেওয়া। যার আইডিয়া শুনে আমরা বলে উঠি “আরেহ তাইতো”, তেমন মানুষদের পানেই তো মুগ্ধতা নিয়ে থাকি আমি/আমরা। তেমনই এক নতুন আইডিয়াবাজকে এবার আবিষ্কার করলাম আমি। তবে, তিনি কালনীর সেই সাধু-শিষ্যের মত না, সমাজের প্রচলিত উচু শ্রেণীর মানুষ। নাম ফাহাম আবদুস সালাম।
বেশ কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নব্বইয়ের দশকের কিছু স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। বারোয়ারি বিতর্কে সম্ভবত কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের এক ছাত্রকে দেখেছিলাম বিতর্ক করছে “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা” বিষয়ে। নাম ফাহাম আব্দুস সালাম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সামনে বিতর্ক মঞ্চে সেই বিতার্কিক বলেছিলেন, ঢাকা শহরের জ্যামের কারণে তো কোথাও হারিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই তিনি মহাখালি পার হবেন না। তিনি হারাবেন অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে। সেই প্রীতি বিতর্কের মডারেটর ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এমাজউদ্দীন আহমদ। বলেছিলেন, হারাতেই যদি হয়, তাহলে গুলশান-বনানী কেন, হারাও না কেন জ্ঞানসমুদ্রে। সেদিনের সেই ক্যাডেট ফাহাম সম্ভবত মনে রেখেছিলেন এমাজউদ্দীন সাহেবের সেই কথা। পরবর্তী জীবনে যে জ্ঞানসমুদ্রেই সাঁতার কাটছেন তা তাঁর লেখা "বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে" পড়েই বুঝতে পারলাম।
ফাহাম আব্দুস সালাম যে সোশ্যাল মাধ্যমে নিয়মিত সক্রিয়, তা আমার জানা ছিল না। চব্বিশের জুলাই মুভমেন্টের একেবারে শেষের দিকে ভদ্রলোককে দেখি ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হয়েছেন। এটুকুই। তিনি কী বিষয়ে লেখেন, ইউটিউবে কী কনটেন্ট দেন, তা নিয়েও আমার এতটুকু ধারণা ছিল না। এখনো নেই। কারণ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া টিউব-সোশ্যালের কন্টেন্ট দেখার দৌড় আমার ঐ ফিল্মের রিভিউ আর কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
বছর দুই আগে বইমেলায় নিষিদ্ধ হওয়ার সুবাদে বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে বইটির নাম সামনে এলেও তখনও লেখককে চিনতাম না।
বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে বইতে কী আছে?
বইটিতে মূলত ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত ফাহামের বিভিন্ন কলাম স্থান পেয়েছে। কলামগুলোতে তিনি জাতি হিসেবে বাঙালির মনস্তত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ে একান্ত নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। সেই সাথে স্বাধীন বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিদের অসারতাও যুুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করেছেন, যার সমালোচনাও হয়েছে বেশ।
আবারো বলি, বইটার লেখাগুলো ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে লেখা। চব্বিশে এসে ফাহামের লেখার ধরণ, চিন্তার ধরণ, বক্তব্য ভিন্ন হতে পারে। আমি এই বইয়ের বাইরে লেখকের আর কোনও লেখা পড়ি নি। তাই আমার আলোচনা ফাহামের এই বইয়ে যে চিন্তা প্রকাশ পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। তাঁর এখনকার রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে এই আলোচনার কোনও সংযোগ নেই।
এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলা ভাষা ও শব্দের ব্যবহার নিয়ে তাঁর চিন্তা আর বাঙালির মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা। বাংলা নিউমেরাল বা বাংলা সং্খ্যাবাচক শব্দ নিয়ে লেখাটা মাথার উপর দিয়ে গেলেও আইডিয়াটা নিয়ে চাইলেই গবেষকরা ভাবতে পারেন।
লিঙ্গুইস্টিক রিলেটিভিটি হাইপথেসিসকে সামনে এনে বলেছেন, মানুষের ওয়ার্ল্ড ভিউ তার ভাষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ যা আপনার ভাষায় নেই তা আপনার ভাবনায়ও নেই। উনি বিভিন্ন রথী মহারথীদের রেফারেন্স টেনে নিজের হাইপথেসিসকে শক্তপোক্তভাবে দাঁড় করেছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার চেয়ে ইংরেজী ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে চমৎকার একটি বিশ্লেষণ উনি দিয়েছেন এখানে। “আমার ভাষায় আমার শিক্ষা” বিশেষত বাংলা ভাষায় পুরোপুরি বিজ্ঞান চর্চাকে উনি মধ্যচিত্তের বাঙালির হিপোক্রেসি হিসেবে তুলে ধরেছেন। ফাহাম নিজে একজন লাইফ সায়েন্সের গবেষক। নিজের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার বি���্ঞানীদের রেফারেন্স টেনে উনি শক্তপোক্তভাবে এস্টাব্লিশ করেছেন নিজের বক্তব্যকে।
প্রমিত -অপ্রমিত বিতর্কে তিনি ব্লগস্ফেয়ারে গড়ে ওঠা নতুন ভাষাকে ইতিবাচককে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, ভাষার অন্তরায়কে কাটিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় অন্তরায় প্রমিত বাংলা নিজেই। উনি এ ব্যাপারে ইভানজেলিক জজবা না দিয়ে অনুমান করে বলেছেন, প্রমিত বাংলার রক্ষণশীলতা বাঙালির মানসিকতাকে রক্ষণশীল করে তোলে। বরং ইজি ওয়ে টু কমিউনিকেশনের জন্য যে ধরনের শব্দ ও ভাষা ব্যবহারে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাই ব্যবহৃত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। মনে রাখা ভালো, মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা। কিন্তু প্রমিত বাংলা কয়জনের মাতৃভাষা? আমার মাতৃভাষা তো কুচবিহারি আঞ্চলিক বাংলা! আমি তো মাতৃভাষায় নিয়মিত কথাই বলি না। আমার কাছে তাহলে মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠত্বের অর্থ কী? ভাষা ভাবনা নিয়ে ফাহামের বিভিন্ন হাইপথেসিস আমার কাছে বেশ যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে।
বাংলাদেশের বাঙালিদের মনস্তত্ত্বকে বেশ কিছু প্রবন্ধে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাসপেক্টে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন লেখক। নিজেদের ভাবনার সাথে বেশ রিলেট করা গেছে ওসব। বাঙালির বিপ্লব নিয়ে লিখেছেন–
“বাঙালির বিপ্লবের গন্তব্য একটাই: সবাই, সবকিছু তার নিজের মত হয়ে উঠবে। সমতা আর সাম্যের মানে তার কাছে হলো কাতারে কাতারে, লাখে লাখে তার নিজের ক্লোন কিলবিল করবে। আর যারা অন্য রকম, অন্য বিশ্বাসের– তাদের সে ‘'কিল বিলের’ মত কচুকাটা করবে।”
দেশপ্রেম ও শাহবাগীদের অবস্থান নিয়ে ওনার পর্যবেক্ষণও আমার মনে ধরেছে (বলে রাখা ভালো এখানে উনি শাহবাগী আসলে কারা তার সংজ্ঞায়নও করেছেন)। যদিও এই থিসিস নিয়ে সম্ভবত বিতর্ক হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শাহবাগীরা মেইক বিলিভ ওয়ার্ল্ডে বিচরণ করে– ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেছেন, শাহবাগীদের কাছে কেবল মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশ। তবে তাদের সাইকো-অ্যানালাইসিস করলে ফাহামের ধারণা-
“ দাড়িপাল্লার এক পাশে বাংলাদেশ, আরেক পাশে মুক্তিযুদ্ধ রাখলে তারা মুক্তিযুদ্ধ নামক ইভেন্টটিকে বাংলাদেশের চাইতে বড় মনে করবে।"
একই সাথে শাহবাগীরা নিজেদের লিবারাল দাবি করলেও মানবাধিকার বা ধর্মীয় বিষয়ে ইসলামোফোবিয়া ব্যাপকভাবে উঠে আসে তাদের আলোচনায়। অনেক ইস্যু নিয়ে উচ্চবাচ্চ্য করলেও মাদ্রাসা ছাত্রদের দুর্দশা নিয়ে কোনওদিন উচ্চবাচ্য করে না- এজন্য তাদের মোরাল হাই গ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লেখক। একই সাথে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের কোনও উচ্চবাচ্য না থাকা, শেখ হাসিনার দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট রেজিম নিয়ে নিরব থাকা– তাদের মোরাল হাই গ্রাউন্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেও উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন লেখক।
আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের মেয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন। ভীষণ গুণী নির্মাতা। বাবার পরিচয়টা দিলাম অন্য কারণে। রুবাইয়াত "মেহেরজান" নামে একটা সিনেমা বানিয়েছিলেন, যাতে অভিনয় করেছিলেন জয়া বচ্চন। একাত্তরে এক পাকিস্তানী পলাতক সৈনিকের সাথে এক বাঙালি মেয়ের প্রেমের গল্প নিয়ে সিনেমাটা। পাকিস্তানী প্রেমিকের সাথে বাংলাদেশি প্রেমিকার গল্প মেনে নিতে পারেনি তখনকার সরকার। তাই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল ছবিটি। অবাক করার মত বিষয় হলো, সেসময়ের ব্লগস্ফেয়ারসহ বিভিন্ন মাধ্যমের রথী-মহারথীরা চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধের পক্ষেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যতিক্রমী কোনও গল্পই শাহবাগী বোদ্ধা-শিল্পীরা মেনে নিতে পারে নি। তাদের জগৎ সেই এক মেইক বিলিভ ওয়ার্ল্ডে আবদ্ধ। অবশ্য সমসাময়িক হয়েও সেই জগতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর মেয়ে স্বাধীন নির্মাতা রুবাইয়াত বিচরণ করেননি।
এই বইয়ে আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লেগেছে ডিডেরো ইফেক্ট নিয়ে আলোচনা। বিশ্বসাহিত্য পাঠচক্রে কনজিউমারিজম প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একবার এই ইফেক্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন ‘ইউনিটি অব বিউটি’-র কথা। এখানে সেই ব্যাপারে অত্যন্ত চমৎকারভাবে আলোচনা করেছেন লেখক। সেই সাথে “উইল ডু’’ জেনারেশন নিয়ে পর্যবেক্ষন আর আস্তিক-নাস্তিক বাইনারী ও ইসলামাইজেশনের আলোচনাও বেশ প্রাসঙ্গিক লেগেছে। যদিও আলোচনাগুলো আরও কয়েক বছর আগের। পলিটিকাল ইসলাম নিয়ে ক্রিটিকাল পর্যালোচনার অভাব নেই, তারপরও গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ইসলামাইজেশনের ফাস্ট গ্রোথ নিয়ে আলোচনাটা বেশ রিলেট করতে পেরেছি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। বড় হতে হতে দেখেছি, আমাদের মায়েদের শাড়ির আঁচলকে গত ২০ বছরে গ্রাস করে নিয়েছে বাহারি নামের সব বোরকা আর নেকাব। এর কারণ হিসেবে ফাহাম বলেছেন, ৬০/৭০’র দশকে তরুণদের দর্শনের ক্ষিদে মিটিয়েছিল সোশ্যালিজম কিন্তু নাইনটিজে এসে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও বামদের আদর্শিক স্খলনে বিশ্বব্যাপী বামপন্থার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে যায়। এই সময়টাতে বঙ্গদেশে তরুণদের আকর্ষন করেছে পলিটিক্যাল ইসলাম। গড়ে উঠেছে নতুন আরবান ইসলামিস্ট ক্লাসও। তবে, ফারহাম পলিটিকাল ইসলামের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট ও নিউ মিডিয়ার প্রসঙ্গ তুলতে সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন।
বইটা পড়ার আগে লেখক সম্পর্কে একজন বলেছিলেন, ভদ্রলোক প্রচুর মুভি দেখেন। মুভির পাশাপাশি যে ভদ্রলোক প্রচুর কোয়ালিটি বই পড়েন মিডিয়োক্রিটিতে চোখ বুলালেই তা বোঝা যায়। তবে অনেকেই ওনার থিসিসের সমালোচনা করেছেন, ডিসাগ্রি করেছেন অনেকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে যাঁদের আরও অনেক বেশি জানা, তাঁরাই হয়তো সহজেই বইটির সমালোচনা করেছেন । আর অনেক কম জানা কিংবা নিজের চিন্তার সাথে বেশি রিলেট করতে পেরেছি তাই হয়তো আমার ভালো লেগেছে আরও বেশি।
অবশ্য এই ভালোলাগার আরেকটা কারণ হল ফাহামের ভাষা আর শব্দচয়ন আর গদ্যের ক্লারিটি। ঝরঝরে মেদহীন। এই ধরনের লেখা আরও অনেকেই লেখেন কিন্তু ফাহাম অযথা তথ্যের ধানাই পানাই না করে স্ট্রেটকাট নিজের যুক্তি দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষন করেছেন। একটা গ্র্যান্ড থিওরি দিয়ে তাঁর বাঙালির মনস্তত্তের আলোচনাকে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। বলেছেন– মোহাম্মদ আজম, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ আগেই এই বিষয়ে বলে গেছেন। তবে, আমার মতে, হুমায়ুন আজাদ, ছফা, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের চেয়ে ভিন্ন অ্যাসপেক্টে বাঙালির বিভিন্ন প্রবনতাকে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। বাঙালির থট প্রভোকিং ও তর্ক বিতর্কের ক্ষেত্রকে কিছুটা হলেও উসকে দিয়েছেন। আর বলছিলাম তাঁর ভাষা আর শব্দের ব্যবহারের কথা। কাউকে অনুসরন না করে নিজেই যে অন্যদের জন্য অনুকরনীয় একটি গদ্যের স্টাইল তৈরি করেছেন সেটা বেশ উপভোগ করেছি। ঈর্ষণীয়ও বটে। তাই তো আমারো অলিভার স্টোনের ফিল্ম ‘ওয়াল স্ট্রিটের’ নায়কের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে– “Greed, for lack of better word, is good.”
শেষে এসে কেওস-কন্টক এই পৃথিবীতে সবকিছু দিয়ে শুধু সুন্দরকে রক্ষা করার আবেদনও এসেছে লেখকের কলম থেকে। শেষ করব সেখান থেকেই–
মিডিয়োক্রিটি মানে গড়পড়তা বা অ্যাভারেজ আচরণ। অ্যাভারেজ মানুষ অ্যাভারেজ আচরণ করবে তাই তো স্বাভাবিক মনে করতে পারেন অনেকে। তবে এই গড়পড়তা আচরণ হয�� মানুষের মধ্যে চিন্তাশীলতা না থাকলে। সবসময় ক্রাউডকে ফলো করতে গিয়ে যখন একটি বিশাল জনগোষ্ঠি প্রতিনিয়ত গড়পড়তা চিন্তা এবং আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যায় এরপর জাতির বিভিন্ন সংকট এবং সমস্যা নিয়ে সেই আমজনতা যতই একে অপরকে দোষারোপ বা ক্রমাগত অভিযোগ করুক উত্তরণের কোন পথ থাকেনা।
এই প্রবন্ধের বইয়ে ভীড়ের বাইরে এসে চিন্তার জায়গা আছে। অবশ্য ক্রাউডের বাইরের চিন্তা সবসময় ক্রাউডের জন্য এক আতঙ্কের বিষয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুন্দর গদ্যে আলোচনা করা হয়েছে। বাঙালির ভাষা, ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান এবং সবচেয়ে দরকারি সাইকোলজি নিয়ে বেশ কিছু আলাপ আছে "বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে" বইয়ে।
সবচেয়ে যেটা ইন্টারেস্টিং লেগেছে সেটা হল ভাষা এবং ভাষার সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদাহরণসহ তূলনামূলক আলাপ। অনুভূতি হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় যায় না তবে ভাবনাকে তো ফুটিয়ে তুলা যায়। ��াষার লিমিটেশনের বা এডভান্টেজের কারণে একটি জাতি যথাক্রমে পিছিয়ে থাকতে পারে অথবা এগিয়ে যেতে পারে। ভাষার সাথে সংখ্যার সম্পর্ক দেখিয়ে লেখক যেভাবে বাঙালির গণিতে তেমন ভালো না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ দেখিয়েছেন সেটি একদম ইউনিক একটি আইডিয়া লেগেছে। প্রমিত ভাষার দূর্বলতা এবং আগামীতে অপ্রমিতের সম্ভাবনাময়তার কথা উঠে এসেছে তার লেখায়।
বিভিন্ন বিষয়ে সংক্ষেপে লেখকের ক্ষুরধার অবজার্ভেশনের দেখা পাওয়া যায় এই গ্রন্থে। একই সাথে বাংলাদেশের রাজনীতিরও বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন তিনি। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে লেখকের আগ্রহ এবং দখলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যায় তার লেখনীর মধ্য দিয়ে।
অবশ্য লেখকের সব বক্তব্যের সাথে আমি একমত হতে পারিনি। রাজনৈতিকভাবে তিনি সকলের সমালোচনা করলেও লেখার ফাঁকে কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠির প্রতি তার একটা পক্ষপাত আছে বলে মনে হয়। অবশ্য নিজস্ব রাজনৈতিক ধ্যানধারণা যেকোন কারো থাকতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় লেখক মনে হয় অতিসরলীকরণ করে ফেলেছেন। বহুবছর পাশ্চাত্যে কাটালে একধরণের পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় বাঙালির মাঝে। ফাহামের মাঝেও তা কিছুটা যে তৈরি হয়নি তা নয়।
ফাহাম আব্দুস সালাম একজন বেশ দারুন গদ্যকার। তার লেখালেখিতে এক অন্যরকম সুন্দর আকর্ষণ আছে। বাঙালির মিডিয়োক্রিটি বা গড়পড়তা আচার-আচরণ এবং তৎপরতার উপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি সুন্দরভাবে বেশ কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছেন। মিডিয়োক্রিটি আসলে এক ভয়ানক বিষয়। লেখকের সাথে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমার দ্বিমত থাকতে পারে তবে মিডিয়োক্রিটির ব্যাপারে যে মূল সারকথা সেটার সাথে আমি প্রায় একমত। ফাহামের মাঝে তার নিজস্ব কিছু ফিলসফির দেখা পেয়েছি এই বইয়ে।
বাঙালির মিডিয়োক্রিটি নিয়ে তিনিই যে প্রথম লিখেছেন তা না। আহমদ ছফা, হুমায়ূন আজাদ, আহমদ শরীফ, বর্তমান সময়ের মহিউদ্দিন মোহাম্মদ সহ আরো বেশ কিছু লেখক নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে বাঙালির গড়পড়তা আচরণের পিছনের যে মনস্তত্ত্ব তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মবের পিছনে না ছুটে ক্লিয়ার থিঙ্কিং যারা করতে পারেন তারাই প্রথাবিরোধীতা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধীতা করে থাকেন। ফাহামের লেখায় চিন্তার খোড়াক আছে প্রচুর। তিনি চিন্তা করতে পারেন। পারেন চিন্তা করাতে। অতি শুদ্ধাচারিতার জায়গায় বাস্তবতার দিকে তার ঝোক বেশি মনে হয়।
বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধান তিনি বেশ খানিকটা দিতে পেরেছেন।
'২৫ এর বইমেলা থেকে কেনা একমাত্র বই। এ বছর নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা ছিলো টাকা খরচ করে আর নতুন কোন বই কিনবো না, বুকশেলফে আর ট্যাবে পিডিএফ হিসেবে যথেষ্ট রসদ আছে। তবুও মেলায় গেলাম যখন, আর বিগত কয়েক বছর ধরেই ফাহাম আব্দুস সালামের পলিটিক্যাল কমেন্টারির দরুণ প্রাপ্ত ভাইরালিটি থেকে এই বইয়ের নামও শুনা হয়েছিলো যেহেতু বেশ কয়েকবার - কিনেই ফেললাম - অন্তত মেলায় যে আমার ঢুঁ মারা হয়েছিলো তার স্যুভেনির হিসেবে। বাসায় এসে বইটা খুলে যখন বুঝলাম এটা তার লেখা কিছু ফেসবুক পোস্টের কালেশান ছাড়া কিছুই না তখন সত্যি বলতে একটু বিরক্তই হই - কী দরকার ছিলো প্রতিজ্ঞা ভেঙে টাকাটা পকেট বের করে দেয়ার যখন কিনা অনলাইনেই পড়ে নেয়া যেতো। কিন্তু সেই বিরক্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এমন মৌলিক কিন্তু গোছানো চিন্তাভাবনার প্রবন্ধ আমি বাংলায় খুব কমই পড়েছি। তার উপর বিষয়বস্তুগুলোও গত জুলাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে পাক্কা সমসাময়িক (প্রথম প্রবন্ধই তো বাঙালির বিপ্লব নিয়ে)। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে তার ধারণাগুলো চিন্তার খোরাক জোগায় বটে। দেশের আস্তিক-নাস্তিক বাইনারি আর ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথাগুলো শুনার জন্য এরচেয়ে ভালো সবসময় বোধহয় ছিলো না। বইটা আমাকে ভাবিয়েছে অনেক, আর আমার সঙ্গীর সাথে অনেক আগ্রহোদ্দীপক আলোচনার প্রেক্ষাপটও তৈরি করে দিয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ১ মাস বয়সী কন্যা শেহভারের উদ্দেশ্যে লেখকের ২০১৩তে লেখা প্রতিফলনগুলো। এই একটি লেখার জন্য হলেও বইটির কাছে হয়তো আমি বারবার ফিরে যাবে। লেখকের প্রজ্ঞা অসাধারণ - ২৪ এ আওয়ামী সরকারের আকস্মিক পতনের বহু আগেই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে কথাগুলো বলে রেখেছিলেন তার কোনটাই এহেন আমূল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ফেলনা হয়ে যায়নি।
বইয়ের নাম: বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে লেখক: ফাহাম আব্দুস সালাম প্রকাশনী: আদর্শ প্রকাশকাল: ২০২২ রেটিং: ৩/৫
এবছর অনেকটা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল বইটি, বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল করতে দেয়া হয়নি এই বইয়ের জন্য। তখন থেকেই মনে হয়েছিল বইটি পড়ে দেখতে হবে। শেষে এক বন্ধুর কাছে ধার নিয়ে পড়ে ফেললাম "বাঙালি মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে"।
বলতে গেলে হতাশ হয়েছি বইটি পড়ে। কিছু কথা, কিছু মতামত লজিক্যাল লেগেছে, কিন্তু অধিকাংশ-ই সাধারণ, ওভারহাইপড হওয়ার মতো বই না। লেখকের নিজেরও কিছু বিষয়ে চিন্তার বন্ধ্যাত্ব আছে বলে মনে হয়েছে। কিছু টপিকে আরও সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন করা যেত। বইটি নিষিদ্ধ না হলে মনে হয় কারোরই এত আগ্রহ জাগত না। আর দেশের প্রভাবশালী গোষ্ঠী এই বইয়ে কেন এত ভয় পেল? অধিকাংশ লেখা অনেক আগের, ব্লগ টাইপের লেখা।
সাম্প্রতিক সময়ের কোন বইয়ে সমাজ, রাজনীতি, ভাষা, ধর্ম, ইতিহাস নিয়ে এমন চমৎকার বিশ্লেষণাত্মক এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা আলোচনা পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। চমৎকার একটি বই।
বইটি বাঙালি সমাজের সংকট এবং মিডিয়োক্রিটির সমস্যাগুলো জানার জন্য একটি গভীর ও চিন্তনশীল রচনা। আপনার ভাবনা জগতে কিছুটা হলেও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে বইটি।
বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ১৪টা প্রবন্ধ সংকলন করা হইছে। প্রবন্ধগুলা মোটা দাগে বাঙালির স্বভাবের, ভাষার, বিপ্লবের, রাজনীতির, স্বভাব চরিত্রের কথা বলে। বইটা ক্রিটিকাল থিংকিং।
ফাহাম আবদুস সালামকে বা তার চিন্তাভাবনাকে বা তার এজেন্ডাকে (নৈর্ব্যক্তিক অর্থে) আমি কিভাবে দেখি তা নিয়ে বিরাট রচনা লেখার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু সময় এবং তেল কোনোটাই আপাতত নাই। কাজেই এই পার্টিকুলার বই নিয়ে দু’টা কথা বলি আপাতত।
এই বইয়ের “বাঙালির বিপ্লব” রচনাটাতে উনি লিখেছেন, “... তার চেয়ে বেশি কঠিন বাঙালির দেশপ্রেম��� ঘৃণা, ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা, সাম্য আর কৌশলী শঠতাকে আলাদা করা”। ফাহাম সাহেবকে পড়তে গেলে বা শুনতে গেলে এই লাইন মাথায় রেখে পড়তে বা শুনতে হবে। অবশ্য আমি এটাকে দোষের দেখি না এই অর্থে যে, “রাজনৈতিক” লোক মাত্রই প্রোপাগান্ডিস্ট। ফাহাম আবদুস সালাম through and through একজন ডানপন্থী। I will give him that. নিজে সহীহ ডানপন্থী হতে গিয়ে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “systemic racism” নাই”- জাতীয় দাবিও উনি করেছেন, যদিও উনি নিজে অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন এবং সেখানে একজন বাদামী মুসলিম এবং এশিয়ান। উমবের্তো একোকে বেশ ভালো পান। অর্থাৎ তার ডানপন্থার জায়গায় তিনি কনসিস্টেন্ট। তবে তার যাবতীয় “কৌশলী শঠতা”/এজেন্ডাকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারা উচিত- এই আরকি।
বই নিয়ে এবার বলি। উনি বাঙালির মিডিয়োক্রিটি খুঁজতে চান কিন্তু তার পিছনে ১৪ টা রচনার মধ্যে খরচ করেছেন মাত্র ৫ টা যেখানে উনি বাংলা ভাষার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ তুলেছেন। আলাপের মেরিট কতোটা সে যুক্তি দেয়া আমার সাজে না। কারণ আমি নিজে linguist নই। তবে ফাহাম সাহেবও নন। তিনি তার “observation” কিছু তুলে ধরেছেন। এখন এসব যদি linguistic এর প্রাথমিক প্রশ্ন হয়(আমার এগুলাকে খুব একটা কঠিন প্রশ্ন বলেও মনে হচ্ছে না) সেসব নিয়ে যুক্তি-তর্ক হতেই পারে। আলাপ তোলা নিয়ে কথা!
আর বাদবাকি প্রবন্ধ নিয়ে বলবো, তার সাথে আমার বেশ অনেক “observation” ই মিলে গেছে। অর্থাৎ আমার নিজেরও দেশ-সমাজ-রাজনীতি নিয়ে এরকমই “observation”(বলাই বাহুল্য, কনক্লুশন ভিন্ন)। অর্থাৎ এসব দৈনন্দিন জীবন-যাপনের বিষয় নিয়ে তার কথাবার্তাকে মেরিট দিতেই হবে।
কিন্তু একটা ব্যাপার খুব দৃষ্টিকটু লাগলো। ভদ্রলোক নিজেকে সুপেরিয়র প্রমাণ করতে এতো ব্যস্ত! “চিন্তা করতে জানা”, “চিন্তা বুঝতে পারা”- জাতীয় দাবিগুলা আমার কাছে বেশ pretentious-ই লাগলো। কারণটা ব্যাখ্যা করি। ফাহাম আবদুস সালাম যে দাবিগুলো করেন, “রবীন্দ্রনাথ মিডিওকর”, “বাংলা ভাষা হিসাবে খুব দুর্বল” ইত্যাদি আসলে চলমান থিসিসের অ্যান্টিথিসিস। থিসিস থাকলেই অ্যান্টিথিসিস থাকবেই এবং তার স্বপক্ষে দুই-চারটা কথা বলাই যায়। আর উনি বাঙালির মিডিয়ক্রিটি নিয়ে আলাপ করতে গেসেন অথচ ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা বা সাবজেক্ট ম্যাটারের আলোচনা, অর্থাৎ “why we, Bengalis, are destined to be mediocre” এর আলোচনা অল্পই। বরং থিসিস/অ্যান্টিথিসিসের মধ্যে এমন কোনো চিন্তা যেটা আগে কেউ ভাবে নাই- এমন কিছু পেলাম না। কারণ আগেই বলেছি এসব “observation” এর কিছু কিছু আমার মতো অক্ষমেরই এসেছিলো! কাজেই একে “চিন্তার মূলে কুঠারাঘাত করে কুঠার ভেঙ্গে ফেলার” দাবি pretentious ই।
কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ লেখার সারবস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে এবং লেখকের চিন্তার সাথে সহমত পোষণ করতে দ্বিধা হয়নি। ফাহাম আব্দুস সালাম আমাদের রাষ্ট্রীয়, জাতিগত ও ব্যক্তিপর্যায়ের নানা সমস্যা খুঁজে বের করেছেন এবং স্থানে স্থানে তার সমাধান অর্থাৎ সমস্যা হতে উত্তরণের পথও দেখানোর প্রয়াস চালিয়েছেন।
বইটা পড়ে রিভিউ দেওয়ার মতো পরিপক্কশীলতা আমার এসেছে কিনা আমি জানি না। বইটা আপনাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবাবে, যেসব দিক নিয়ে আপনি কখনোই চিন্তা করেননি।
বাঙালির বর্ণনা দিতে যেই শব্দটার সর্বাধিক ব্যবহার হয় তা হলে হিপোক্রিট বা দ্বিচারিতা৷ মিডিয়োক্রিটি মানে গড়পড়তা। আমরা বাঙালি বেশ মিডিয়োক্রিটি, আমাদের স্বভাব আর ১০টা মানুষের মতোই। সবার চিন্তন দক্ষতাও প্রায় একই বললেই চলে৷ এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা সবসময় সংখ্যা গরিষ্ঠ মতবাদকে অনুসরণ করি৷ এই যে কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া সুলতান'স ডাইনের কথাই বলি। সবাই বললো কুকুরের মাংস, ব্যস যাচাই বাছাই না করে সবাই একইসাথে মিম বানিয়ে ট্রল করা শুরু করলাম। আমরা সবাই গড়পড়তা চিন্তা করি আর এভাবেই এসব আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি৷ আমাদের দেশের সবকিছুর মূল সমস্যাই কিন্তু এই মিডিয়োক্রিটিক চিন্তাভাবনা। একটা দেশের টপ পজিশনের মানুষ থেকে শুরু করে লোয়ার লেভেলের মানুষের চিন্তাভাবনা এক।
বাঙালির ভাষা, ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান এবং সবচেয়ে দরকারি সাইকোলজি নিয়ে বেশ কিছু আলাপ আছে। বইয়ের একটা দারুণ ব্যাপার হলো লেখক ভাষার সাথে সংখ্যার সম্পর্ক দেখিয়ে লেখক যেভাবে বাঙালির গণিতে তেমন ভালো না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ দেখিয়েছেন সেটি একদম ইউনিক একটি আইডিয়া লেগেছে। একই সাথে বাংলাদেশের রাজনীতিরও বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন তিনি।
তবে পড়ার সময় যেই জিনিসটা খুব বেশি চোখে লেগেছে তা হলো বানান। খুবই পীড়া দিচ্ছিল। বাক্য গঠনও গতানুগতিক না। যারা ঝরঝরে লেখা পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই বই পড়তে কষ্ট হবে। তাছাড়া অদরকারি স্পেস ও ফন্ট বাড়িয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যার কারণে বইয়ের দামও বেড়েছে।
অবশ্য লেখকের সব বক্তব্যের সাথে আমি একমত হতে পারিনি। তবে যারা ভিড়ের পেছনে না ছুটে স্পষ্ট চিন্তন দক্ষতার মাধ্যমে কোনো কিছু চিন্তা করেন, তারাই প্রথাবিরোধীতা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধীতা করে থাকেন- এই বিষয়ের সাথে আমি একমত।
ফাহাম আব্দুস সালামের লেখার বা, চিন্তাজগতের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে তার একটা ভিডিও। ভিডিওর মূল প্রতিপাদ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ফাহামের অসাধারণ ভাষাশৈলী এবং তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ করেছিল প্রথমবারেই। সেখান থেকেই পরে তার এই বইয়ের সন্ধান পাই।
"বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে" বইটি মূলত অনেকগুলো নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধের একটা সংকলন। বইয়ের শুরুতে লেখক বাংলা ভাষা ব্যবহার রীতি, নিউমেরোলজি নিয়ে লিখলেও যত ই সামনে এগিয়েছি লেখার বিষয় আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। শাহবাগ, দর্শন, নতুন উচ্চবিত্ত প্রজন্মের মাথাচাড়া দিয়ে উঠা সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে লিখেছেন লেখক। শেষ করেছেন তার কন্যাকে একটা খোলা চিঠি দিয়ে। আমার কাছে মনে হয়েছে শেষ অধ্যায়টি অর্থাৎ খোলা চিঠিটা আমাদের প্রজন্মের সবার একবার পড়া উচিত। মত-অমত পরের বিষয় কিন্তু একটা পার্স্পেক্টিভ জানতে পারবে জীবন সম্পর্কে।
মোটের উপর এই বইটির ভাষা খুব ই সাবলীল হলেও যারা নন ফিকশন পড়ে অভ্যস্ত না তাদের কাছে প্রবন্ধের বিষয় গুলা একটু ঠেকতে পারে শুরুতে কিন্তু খোলা মন ও মস্তিষ্ক নিয়ে পড়লে আমার মনে হয় বই টি বেশ উপভোগ্য।
সবশেষে, রেটিং এর কথায় আসলে ৪.৫ রেটিং দেয়া যায় না দেখে ৫ রেটিং দেয়া ।
The author sounds like he is a know-it-all and preaches all the through the book. Bangladeshis have begun idolizing the author but he is very insecure about his own identity. This book could've been better.
বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে লেখক: ফাহাম আব্দুস সালাম বইটি প্রথম দেখা থেকেই পাঠককে আকৃষ্ট করে, বিশেষত তার প্রচ্ছদ। হলুদ ফন্টে লেখা নামটি, "বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে" তবে, বইটির মূল উদ্দেশ্য বাঙালি সমাজের কলুষিত চিন্তাভাবনা ও ভাষাগত সীমাবদ্ধতার দিকে আঙ্গুল তোলা। ১৫০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম তার ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনায় সার্থক হয়েছেন। প্রথম অধ্যায় থেকে শুরু করে, লেখক বাঙালির ভাষার প্রতি এক গভীর সমালোচনা করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে বাংলা ভাষার সীমাবদ্ধতা এবং বাঙালির পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি অন্ধ আকর্ষণ সমাজে একটি মেদবহুল সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে, বাংলা ভাষার ভেতর একটি ইউনিক নাউন এবং ভার্বের অভাব, যার কারণে বাঙালি চিন্তা করতে পারে না বা সঠিকভাবে চিন্তা করার জন্য ভাষাগত সুবিধা পায় না। এভাবে লেখক ভাষার মুদ্রণ পদ্ধতিগত ভুলের দিকেও আলো ছড়ান এবং তাতে নতুন গণনার রূপরেখাও দেন। পাঠক যখন বইটির পরবর্তী চ্যাপ্টারগুলোতে পা রাখেন, তখন তিনি দেখতে পাবেন লেখকের এক ভিন্ন দার্শনিক মূড। "ডেডেরো ইফেক্ট" থেকে শুরু করে, লেখক সৌন্দর্য এবং অসৌন্দর্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করার প্রয়াসে চলে যান। পরবর্তীতে, 'উইল ডু' জেনারেশনের ওপর লিখিত চ্যাপ্টারটি, যেখানে তিনি হাস্যরসের মাধ্যমে বাঙালির ফ্যান্টাসি দুনিয়াকে তুলে ধরেন, মজাদার ও চিন্তাশীলভাবে। শেষাংশে, লেখক তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও তার সদ্য জন্ম নেয়া কন্যার ভবিষ্যতের প্রতি চিন্তা তুলে ধরে। এখানে তিনি নিজের অবস্থানকে একেবারে মানবীয়ভাবে প্রকাশ করেন এবং বাঙালির 'মিডিয়োক্রিটি' থেকে উত্তরণের পথের সন্ধান দেন। মোটকথা, এই বইটি শুধুমাত্র একটি সমাজ ও ভাষাগত সমালোচনা নয়, এটি একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ আলোচনাও যা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সুশীল সমাজের চিন্তাভাবনা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করে।
বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে- এই নামটারে অনেকেই ডেরিগেটোরি হিসেবে নিছে। কিংবা রেসিস্ট। কিংবা কলোনিয়াল হ্যাং ওভারের অভিযোগ আসছে। কিন্তু সবকিছু ছাপায়ে গেছে যখন বইটা বইমেলায় ব্যান হয়ে গেল। বইটা যদিও ’২২ এ বেরোইছিল, কিন্তু এক বছর পর এসে কেন ব্যান হলো- এইটা ভেবে আমার উশখুশ লাগতেসিল। বইটা আমি বের হওয়ার কিছুদিন পরেই কিনছিলাম, কিন্তু পড়ছি এই বছর। ব্যান হওয়ার সুবাদেই। বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ এই অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য।
বইটাতে ফাহাম আব্দুস সালামের বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ১৪টা প্রবন্ধ সংকলন করা হইছে। প্রবন্ধগুলা মোটা দাগে বাঙালির স্বভাবের, ভাষার, বিপ্লবের, রাজনীতির, স্বভাব চরিত্রের কথা বলে।
বইটার প্রথম ভালো দিক হইতেসে, প্রবন্ধ ১৪ টা হইলেও এদের মধ্যে মূল আইডিয়া কিন্তু দুই থেকে তিনটা। একটা সিঙ্গেল প্রবন্ধে একটা আইডিয়া বোঝার চাইতে এরকম কয়েকটা লেখা থাকলে সেইটা লেখা কম আলাপ বেশি হয়, এবং অনেক কিছু কভার করে।
ফাহামের প্রথম আইডিয়া/আর্গুমেন্ট হইতেসে বাঙালির বিপ্লব নিয়ে। বাঙালির যে বিপ্লব বা সে যেইটাকে বিপ্লব ভাবে আর কি, সেইটা কিভাবে প্রবলমেটিক বা মিডিয়োকার- সেইটা।
দ্বিতীয়টা হইতেসে, বাংলা ভাষা নিয়া। বাংলা ভাষার স্ট্রাকচার এবং সেইটা বাঙালি কে মিডিয়োকার করতেসে কি না- এই আর্গুমেন্ট ফাহাম দিছেন বা দেয়ার ট্রাই করছেন। হাইপোথিসিস আকারে।
কেউ যখন একটা হাইপোথিসিস দেয় তখন সেই হাইপোথিসিস যাচাই বাছাই করে সেইটা গ্রহণ বাতিলের একটা ব্যাপার আসে। আমি সেইটা করবো না। শুধু ভাষা নিয়া যা যা ফাহাম লিখছে সেইটা নিয়ে একটু বলি। ভাষা নিয়ে ফাহামের কিছু হাইপোথিসিসে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু প্রমিত নিয়া তার যে অভিযোগ সেই অভিযোগে এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞান চর্চা নিয়া তিনি যেটা বলছেন, সেটার সাথে একমত। আর বাংলা নিউমেরাল প্রসঙ্গে তার যে প্রবন্ধ, এই আইডিয়া/আর্গুমেন্ট চমৎকার করবার মতো।
এখন, এই বইটা আপনি ক্যানো পড়তে পারেন- বয়স শিক্ষা ক্লাস (অর্থনৈতিক এবং লেখাপড়া, দুইটাই) নির্বিশেষে।
এক, বইয়ে অসংখ্য পর্যবেক্ষণ ছড়ানো আছে, যেইগুলা নিয়ে আপনি নাড়াচাড়া করতে পারেন। মানে আপনি এই বই বা ফাহামের বিরোধি হইলেও, পুরা বইকে ছাই আকারে দেখলেও উড়াইয়া দেখতেই পারেন। রতন না পাইলেও, চিন্তা করার সুযোগ পাবেন। দুই, ফাহামের উইট। সোশ্যাল মিডিয়া স্ফেয়ারে যাদের উইট/সেন্স অফ হিউমার আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগে, তার মধ্যে ফাহাম উপরের দিকে থাকবে। এবং এই বইতে ফাহামের সেই উইট বজায়ে ছিল। এই বইটা পড়লে হয়তো বুঝবেন, কেন আপনার নন ফিকশন পড়া উচিত কিন্তু আপনি দেশি নন ফিকশন বা প্রবন্ধের বই খুব একটা পড়তে পারেন না। তিন, বইটার ভূমিকা। বইটার ভূমিকাটাই আসলেই একটা পয়সা উসুল জিনিস। ভূমিকায় কোনো আইডিয়া বা আর্গুমেন্ট নাই ভারী ভারী। যেইটা আছে সেইটা হচ্ছে ফাহামের লিটারারি জিনিয়াসের সিগনেচার। যদিও এইটা পুরা বইয়ে আছে, কিন্তু ভূমিকাতে যা আছে সেইটা দুর্দান্ত।
দ্যাখেন, স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবিদের এই জামানায় যখন ভালো বই খুইজা পাওয়া যায় না, সেইখানে ফাহামের এই কাজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ভালো বই মানে এই না যে সেইটা আপনার আইডিওলজির ভ্যালিডেশনই হবে। ভালো বই মানে যেইটা আপনারে একটা তর্কের মুখে দাড় করাইতে পারে, এবং চিন্তা করার সুযোগ দেয়। Faham Abdus Salam এর বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে এই অর্থে ভালো বই।
মনে কইরা দেখেন, ছোট বেলায় আম্মুরা যেইসকল বই হাত থেকে কেড়ে নিছে বা পড়তে দেয় নাই, সেই সকল বই সুপাঠ্য এবং ভালো হইতো বেশিরভাগ সময়। যদিও সেইগুলাতে আম্মুদের নিয়ে তেমন কিছু লেখা থাকতো না, তারপরও একটা ভয় আম্মুরা পাইতেন। বই পইড়া পোলাপান নষ্ট হইয়া যাবে এবং বেশি কথা কবে। যদিও এতে আম্মুদের অথোরিটির আহামরি কিছু হয় না, কিন্তু টক ঢেকুরের মতো অস্বস্তি তো থাকেই। কিন্তু তাতে তো আপনার মাসুদ রানা পড়া বন্ধ হয়নাই!
স্টিফেন কিং এর একটা কথা মনে করায়ে দেই শেষে, Read, whatever they're trying to keep out of your eyes and your brain, because that's exactly what you need to know.
বিজ্ঞান শিক্ষার ভাষা, আমাদের বাংলা ভাষার নিউমেরিকাল সিস্টেমের সমস্যা, প্রমিত অপ্রমিত দোলাচল সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো সুলিখিত এবং চিন্তার উদ্রেককারী। লেখকের পড়াশুনা এবং উপলব্ধির গভীরতা আছে, বায়োসায়েন্স এর গবেষক হিসেবে তার সমাজ কে দেখার যে চোখ, সেইটা ব্যতিক্রমী। বইটা ধরেছিলাম তেমন কোনো এক্সপেকটেশন ছাড়াই, ভেবেছিলাম রাজনৈতিক প্রবন্ধে ঠাসা থাকবে, রাজনৈতিক প্রবন্ধ পড়তে কেনো জানি এখন আর ভালো লাগে না। কিন্তু বইটাতে স্থূল রাজনৈতিক কথাবার��তার টক্সিক বাড়বাড়ন্ত নাই তেমন। আস্তিক নাস্তিক বাইনারী রিলেটেড প্রবন্ধের অনেকগুলো অবজার্ভেশন গুরুত্বপূর্ণ। শেষ প্রবন্ধ, কন্যার প্রতি পিতা হিসাবে তার বয়ান, বেশ সুন্দর ফিনিশিং। ভদ্রলোক ডিবেট করতেন এককালে, একটা ভাইরাল ভিডিও দেখছিলাম। তার যুক্তি উপস্থাপনের টেকনিক এই বই থেকে বড়ো পাওয়া। লেখকের সাথে অনেক বিষয়ে, এমনকি বেশির ভাগ বিষয়ে একমত না হলেও বইটা পড়লে ক্ষতি হবে না। বইয়ের দামটা, কলেবর অনুপাতে বেশি।
বাঙ্গালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে বইটি পড়ার পরে আমি মানসিকভাবে অনেকখানি ধাক্কা খেয়েছি। লেখক এমন সব বিষয় তুলে ধরেছেন, যা আমাদের চোখে সামনে সব সময় ঘটে চলে, কিন্তু আমরা সে বিষয়গুলোর দিকে কখনো চোখ তুলে তাকাই না। কখনো সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করি না।
লেখকের সব কথার সাথে একমত না হলেও, বইটি আমাকে আত্মসমালোচনার করার সুযোগ করে দিয়েছে।
লেখকের অকপটে লেখার ব্যাপারটা অনেক ভালো। ভাষা,রাজনীতি,ধর্ম নিয়ে জগাখিচুরি বানান নাই,ভাষার নিউমেরাল সংক্রান্ত সমস্যা,শাহবাগীদের দেশপ্রেম,আস্তিক-নাস্তিক আলোচনা ও ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত যথাযথ। অনেক রির্সাচবেসড বুক না,লেখকের ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভংগির আলোকে লেখা
বইটা যে আছে, এবং কিনে পড়লাম একমাত্র আওয়ামী জলিমসাহির হতকারিতা করে এই বই নিষিদ্ধ করবার কারণে। কিন্তু এই বইতে এমন কি আছে এই ফাসিস্ক্ট সরকার এর বিরুদ্ধে তাই ধরতে পারলাম না। হালকা রসিকতার সুরে একটা দুইটা খোচা মূলক লাইন আছে হয়তো সরকার এর বিরুদ্ধে, এটাই রেগে টং? আবার বইটা প্রকাশিত হয়েছে দুই বছর আগে, লেখা গুলি অনেক গুলোই প্রকাশিত ২০১৪ সালে। বাঙালির কম উন্নতির পিছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে ফাহাম সালাম কিছু মৌলিক চিন্তা ভাবনা করেছেন যা কিনা রিফ্রেশিং, কিন্তু আমার নিজের এই বিষয়ে জ্ঞান বা পড়াশোনা কম থাকবার কারণে মনে হয় সঠিক না বেঠিক চিন্তা সেটা ধরতে পারি নাই। তবে বইটা বেশ প্রাঞ্জল ভাবেই লেখা, পড়া যায়।
Faham does a great job in critiquing how Bangladeshis are still stuck in a cyclical state of tyranny by their rulers. The critique of language and number system seemed a bit too much at times, although recommendation of opening up Bangla to new words being created more often clearly made sense. It seemed the core message, is to make the reader (a Bangladeshi expected audience) think about ownership of the country or a revolution and how it’s not about what you can take for yourself but rather what you can give. The last chapter is a letter to his daughter, was my absolute favorite.
This will definitely stay as a crucial book in Bangladeshi Epistemology genre.
This entire review has been hidden because of spoilers.
বাংলাদেশী পাবলিক মেন্টালিটি, রাজনীতি, ভাষা, ইন্টার্নাল কনফ্লিক্ট নিয়ে এই বই। বইটা শুরু হয়েছে বাঙালি চিন্তার মিডিওক্রিটি নিয়ে। এরপর বাংলা ভাষার ফর্ম নিয়ে সমালোচনা, ইংরেজি জানার গুরুত্ব ও বাংলা নিউমারেল এর উচ্চারণজনিত সমস্যা ও সমাধান নিয়ে নিজের একটা ব্যক্তিগত গবেষণা। এরপরের আলোচনা বাংলাদেশের সেকুলার ইসলামিস্ট রাজনৈতিক আলোচনা। মাঝে দিয়ে দেশের আল্ট্রা বড়লোক জেনারেশন নিয়ে একটা চাপ্টার। অল্প সাইজের বইতে অনেক কিছুই আলোচনা করেছেন। একটু সময় নিয়ে এই টপিকগুলোর উপরে কয়েকটা বই লেখা যেত। বাংলা নিউমারেল প্রসঙ্গ আর উইল ডু জেনারেশন সেরা চাপ্টার।
"পাণ্ডিত্যই পারে কেবল মনে করিয়ে দিতে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা, হঠকারিতার বিপদ। মনে রেখো মা, মনুষ্যত্বের গুরুতর নির্ণায়ক হোলো সন্দেহ আর দ্বিধা। যে মানুষ সব ব্যাপারে সহজেই নিশ্চিত হয়ে যায়, সে অসম্পূর্ণ বিবর্তনের শিকার, তাকে সমঝে চলো।"
আমার পছন্দের লেখকের তালিকায় লেখক নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। বাঙালির Cognitive Dissonance ধরিয়ে দিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই। আরো অনেক সৃষ্টিশীল কাজ আমাদের উপহার দিবেন এই প্রত্যাশা রেখে গেলাম। তবে হ্যা, সময় নিয়ে লিখুন। ধীরেসুস্থে লিখুন। মাস্টারপিস চাই ফাহাম ভাই। "বাঙালির মিডিওক্রিটির সন্ধানে" বইটি একটি মাস্টারপিস।
The writer's way of expressing himself is very original, and that is one of the best parts of the total articulation.
Faham does not impose one idea, but rather attempts to establish a ground where all the opposing ideas are/could be eliminated (subject to perception). You might not agree to everything he proposes, but you would surely have a good time answering your own self why you do not do so.
চিন্তার উদ্রেককারী বই। জাতী হিসেবে মনে হয় আমরা চিন্তাশীল না, সেই চিন্তার দায় ও সংকট যে কতটা প্রকট এই বইটা আপনাকে তা ভাবাবে। বইয়ের ষোলটা অধ্যায়ে পনেরোটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সবগুলো বিষয় নিয়ে লেখকের সাথে একমত না হতে পারলেও লেখকের যুক্তিনির্ভর ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা অবশ্যই পাঠককে ভাবাবে।হ্যাপি রিডিং💙
চিন্তার চাপ কুলানো কঠিন। অনেক সময় মনে হয় ঠিকই আছে। আবার মনে হয় আরে ধুর বেশি হয়ে গেল। সরকার যত গুরুত্ব দিয়ে ভয় পাচ্ছে, ওত ভয়ের না যদিও। সিম্পল টেক্সট।