ডা. শামসুল আরেফীনের পেশা চিকিৎসা। কিন্তু তার রচনা পড়লে মনে হয়, তিনি একজন জাতলেখক, যিনি কিনা অনেককাল লেখালেখি করে জনপ্রিয় ও মনপ্রিয় একজন; এখন যাবজ্জীবনের লব্ধ ও নির্যাসিত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লিখছেন পাঠকের সাথে বৈঠকি ভাষায়…এর আগে তিনি লিখেছিলেন কুররাতু আইয়ুন-১ : যে জীবন জুড়ায় নয়ন। মুড়ি-মুড়কির মতো সে বই পাঠকের প্রিয়তা ও ভালোবাসা পেয়েছিলো; আজও সে ধারা এতটুক ক্ষুণ্ণ হয়নি। অসংখ্য মানুষ পালটে ফেলেছিলো জীবনের অভিমুখ, আজও পাল্টায়। আমরা মুগ্ধচোখে দেখি, রচনার গুণে এ যুগেও ঘর-সংসার এমনকি জীবনেও লাগতে পারে পরকালের সোনারঙ…সেই ধারাবাহিকতায় লেখকের এবারের রচনা─কুররাতু আইয়ুন-২ : যে জীবন জুড়ায় মনন। এই বই পড়ে পাঠকের মনে হবে—মানুষ ইসলাম জানে না, আমি কী করলাম জীবনে; কোনো দিন কি দাওয়াত দিয়েছি? পড়তে পড়তে মরমে মরে যাবেন আর নতুন উজ্জীবনে এক দাওয়াতি জীবন শুরু হবে আপনার।নারীর প্রতি জীবনে যত অবহেলা, যা কোনো দিন দেখতে পান না, যাদেরকে কেবল মনে করেন—সমস্যার সার, ভাবেন—ফেতনা, বই পড়তে পড়তে দেখবেন, নারীকে কোনো দিন ভালো তো বাসেনইনি, সুবিচারও করেননি তার অধিকার বিষয়ে; দেখবেন, আল্লাহর আদালতে দাঁড়িয়ে আছেন অপরাধী হয়ে।জীবনে ঢুকে পড়েছে অশ্লীলতার নীল ছায়া, বের হতে পারছেন না? খ্যাতি আর মোহ যে লজ্জাহীনভাবে জেঁকে ধরেছে, জানেনই না সে কথা? দ্বীনই আসল ও মূল জানেন, তবু নানা প্রয়োজন ও ‘কিছু জিনিসের দরকার আছে’-র পাল্লায় পড়ে দ্বীনের খেয়ানত করতে থাকেন? বাচ্চা বিগড়ে যাচ্ছে, স্ত্রীকে দেখতে পারেন না, বুজুর্গদের জীবন মনে হয় রূপকথা? প্রিয় বন্ধু, জীবনে একটুও সময় নেই? বাসে ঢুলতে ঢুলতে, রিকশার জ্যামে বসে, ‘জরুরি’ ব্রাউজিংয়ের দশ মিনিট বাঁচিয়ে—মোটের ওপর একটু অবসর করে বইটি হাতে নিন; তারপর, বই কথা বলবে।
আমাদের সমস্যাসঙ্কুল ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে নিয়ত বাস্তবতা হিসেবে জেঁকে বসে আছে অস্থিরতা, অশান্তি, অতৃপ্তি। অথচ ইসলাম আমাদের মন, মননে শান্তি, পরিতৃপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। কেন আমরা নিজেদের মুসলিম দাবী করেও এই প্রশান্তি, স্বস্তির স্বাদ পাই না? আমাদের বাস্তব জীবন ইসলামের রঙে রঙ্গিন করে কেন আমরা চারপাশের এই নোংরা, কর্দমাক্ততাকে পরিচ্ছন্ন করতে পারছি না? দিনশেষে কেন আমাদেরও হতাশা গ্রাস করে? নয়ন, মনন জুড়ানো জীবন পাওয়ার যেই টিপসগুলো ডাক্তার সাহেব এই বইতে শেয়ার করেছেন ইনশাআল্লাহ তা অনেকের উপকারে আসবে (যদি বইটা আমরা কেবল পড়ার জন্য না পড়ে জীবন পরিবর্তনের ম্যানুয়াল হিসেবে চিন্তা করি)। আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন লেখককে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তার লেখায় বারাকাহ দিন।
যে জীবন জুড়ায় মনন এমন জীবন লাভের পথে যে উপায় রয়েছে এবং এর পথে যেই বাঁধাগুলো রয়েছে সেসকল বিষয়েই বইয়ে চমৎকার আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে এমন কিছু বিষয়ে আলোচনা রয়েছে, যে বিষয়গুলো নিয়ে সাধারনত আমরা কথা বলি না, কিন্তু খুবই জরুরি। এছাড়া, ডাক্তার দেখানো, এবং রোগী দেখা সংক্রান্ত লেখাও বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেটা এই প্রথম আমি কোনো বইয়ে পেলাম।
বইয়ের শুরুর অধ্যায়টা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক যেটা নারীদের অবদান এবং সম্ভাবনা নিয়ে। পরের ৩টা অধ্যায় মোটামোটি একই বিষয় আলোচনা করা হয়েছে-সন্তানের যৌনশিক্ষা এবং পর্ণগ্রাফি থেকে বাঁচার উপায়। বয়োঃসন্ধিতে অবতীর্ণ কিশোরের সাথে কিভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আলোচনা করা যায় সেব্যাপারে ডেমো দেওয়া রয়েছে। তবে বিষয়গুলো অনেকবার রিপিট হয়েছে, যেটা লেখক নিজেও স্বীকার করেছেন। ডাক্তা(র)হস্য ও রোগী রহস্য অধ্যায় দুটি ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে। লেখক তাঁর নিজের ডাক্তার হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন এবং বংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের অনেক বিষয় অবতরন করেছেন। বাকী যেই অধ্যায়গুলো আছে সেখানে আত্মোন্নয়ন এবং ইসলামি জীবন যাপনের বেশ কিছুদিক খুব সুন্দরভাবে আলোচনা হয়েছে।
সবশেষ বলবো, এটা একটা অবশ্যপাঠ্য বই যেখান থেকে আপনি এমন অনেক কিছু শিখতে পারবেন যা পাঠ্যপুস্তকে পাবেন না কিন্তু আপনার জীবনকে সুন্দর করার জন্য জানা প্রয়োজন।
এই সিরিজের দুইটা বই হলো পিওর জেম। বারবার পড়বেন, বারবার নতুন স্বাদ পাবেন। একেকটা লেখার পর মনে হয়, হায়! কি করলাম! নিজের ঈমানের জীর্ণ দশা নিয়ে অনুতাপ হয়। একই সাথে কাধে একটা হাত রেখে কেউ যেন বলে ওঠে 'আমাদের মালিক ক্ষমাশীল'। অনুপ্রেরণা দেয় নতুন করে নিজেকে ঝালাই করা; রবের কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়ার। খুব প্রিয় একটা বই।
বইটার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুইটা টপিক হল, ডাক্তার রহস্য আর রোগী রহস্য। এই দুই টপিকে বুঝানো হয়েছে রোগী কিভাবে ডাক্তারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা পাবে আর ডাক্তারদের রোগীর প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত। বইটার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে "মেনথল জীবন" টপিকটা। জীবনের নানা সমস্যায় মনকে কিভাবে স্থির করা যায় এটাই এখানে বুঝানো হয়েছে। জীবনের আরো অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। জীবন দর্শনকে নতুনভাবে জানতে বইটা সহায়ক হবে আশা করি।
সব বইয়ের রিভিউ লেখার যোগ্যতা সবার হয় না, যেমন এই বইয়ের রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নেই। আল্লাহ ডাক্তার সাহেবের কলম দিয়ে আমাদের ঈমানকে বাড়িয়ে নেওয়ার আরো সুযোগ করে দিন এ দোয়াই করি (হাফিজাহুল্লাহ)।
বইয়ে লেখকের আড্ডার ভাষায় দুনিয়াবি অনেক কিছু চলে এসেছে যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমায় শেখায় বা শেখাবে না। বইয়ের ভাষাশৈলি আপন মনে হয়,ইচ্ছে হয় এমন জীবন যাপন করতে।সবকিছু এমন ভাবে গ্রহণ করতে।
অনেকদিন কোনো বইয়ের রিভিউ লিখিনা। বই-ই পড়িনা আগের মতো রিভিউ লিখবো কীভাবে?
কিন্তু ওস্তাদের রচনা করা বই, না লিখে উপায় আছে? পূর্বের বইটার মতোই হয়েছে সিক্যুয়েলটা।
বিশেষ করে শেষের দিকের কয়েকটা চ্যাপ্টার। দ্বিন থেকে যে আমরা কতটা দূরে সরে আছি সেইটাও বেশ ভালো ভাবেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
আসলেই যখন আমরা দুনিয়াইকে থোড়াই কেয়ার করতাম, তখন সারা দুনিয়া আমাদেরকে কেয়ার করেছে। আর আজ যখন আমরা পশ্চিমকে কেয়ার করে ওদের একটা লেভেল আছে বিশ্বাস করে স্যুট-কোট, ক্লিন শেভড হয়ে নিজেদেরকে পশ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছি, তখন দুনিয়াতেই আমরা লাঞ্ছিত হচ্ছি।
Islam is simple. জীবন থেমে থাকেনা, আপনি ডিসকভার চালালেও গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন, রয়েল এনফিল্ড চালালেও গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। এখন শো অফ করার জন্য, লোকে কী বলবে সেই চিন্তা করে ঋণ-সুদের জীবন বেছে নিবেন আর না হয় যা আছে আলহামদুলিল্লাহ বলে শান্তিতে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুমোতে যাবেন।
৪.৫ সর্বমোট ১২ টি টপিকে লিখা বইটি। খুব সুন্দর, সাবলীল ভাষায় ব্যাখা রয়েছে। ইসলাম নিয়ে, হাদিস নিয়ে, প্রাত্যহিক জীবনের নানা বিষয় নিয়ে সুন্দর ব্যাখা রয়েছে। ভেবেছিলাম রেটিং ৫ দিবো। কিন্তু ৪.৫ দিলাম কারণ একটি টপিক ছিলো " ডাক্তার রহস্যা"। যেটা আমার কাছে একদমই ভালো লাগে নি। টপিকটি পড়ে খুব বোরিং হচ্ছিলাম। এই টপিকটি ছাড়া বাকি সব গুলো টপিকেই চমৎকার লিখনি। একদম ' যে জীবন জুড়ায় মনন'!
লেখকের লেখনী বরাবরই আমার পছন্দের। খুব প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেন, যেন পাঠকের সাথে কনভারসেশন করছেন। এই বইটায়ও সেই ব্যাপারটা আছে। তবে বেশি মাত্রায় মনে হয়েছে। বই এর ভাষা কিছুটা বই এর মতই থাকা উচিত। পুরোটাই কনভারসেশন হয়ে গেলে পঠনের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটে। বিষয়বস্তুর দিক থেকে দশে দশ। পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, লেখনীটায় একটু লাগাম টানতে হবে। শুভকামনা তাঁর অন্যান্য বই এর জন্য।