উস্তাদ মুহাম্মাদ হুবলস। অস্ট্রলিয়ান দাঈ। প্রচন্ডভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। মানুষের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিতে পারেন। জাহিলিয়াত থেকে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসা, বস্তুবাদি যান্ত্রিক আটপৌরে জীবনে হাঁপিয়ে উঠা এই আমাদেরকে আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেওয়া, জান্নাতের পথে চলার সীমাহীন শক্তি যোগাতে এই উস্তাদের তুলনা তিনি নিজেই। . উস্তাদের লেকচার অবলম্বনেই এই বইটি। বর্তমান সময়ে আমরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছ তা ভয়াবহ। ফিতনার সময় চলছে। আমাদের অনেক সমস্যা, অনেক প্রতিবন্ধকতা। তার মধ্যে অন্যতম মুসলিম পরিবারে জন্মেও উম্মাহর একটা বড় অংশ্যই এখনও কাফেরদের লাইফ স্টাইলে চলে। অনেকসময় আমরা বুঝি যা করছি ভুল করছি, এটা সঠিক পথ নয়, কিন্তু ভুলের সেই চক্র থেকে বের হতে পারি না। তখন আমাদের একটি ধাক্কার দরকার পড়ে। এমন কিছু যা আমাদের অন্তরকে কাঁপিয়ে দিবে। বস্তুবাদ, চোখ ধাঁধানো আলোর এই মোহের জগৎ নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে দিবে। এই বইটি সেই ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে।
কিছু বই আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শিখায়, নতুন ভাবে জীবনটাকে দেখতে শিখায়। এই বইটাও সেরকমই 💙
❝ মানুষের সুন্দর মৃত্যু হঠাৎ ভাগ্যক্রমে হয়ে যায় না। এটার জন্য আপনাকে মেহনত করতে হবে। আন্তরিক ভাবে চাইতে হবে মহান আল্লাহর কাছে। যদি আপনি আন্তরিক হোন এবং দুনিয়ার এই জীবনে মহান আল্লাহর অানুগত্যে নিষ্ঠার সাথে দৃঢ় থাকেন, তবে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আপনাকেও এমন সম্মানের মৃত্যু দান করবেন, যেভাবে তিনি আমাদের ভাই খোদরকে দান করেছেন। আসুন আমরা এবার নিজেদেরকে প্রশ্ন করি, আপনাদের দিনগুলো কীভাবে অতিবাহিত হচ্ছে? কীভাবে কেটে যাচ্ছে আমাদের রাতগুলো? কেমন মৃত্যুই বা আমাদের কপালে লেখা আছে? প্রশ্নগুলো নিজেই নিজেকে করুন। আপনার মৃত্যু কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে আজকের দিনগুলো আপনি কীভাবে অতিবাহিত করছেন তার উপর। সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।❞ - এপিটাফ.
▪যিনা করতে পারার ক্ষমতা কাউকে 'পুরুষ' বানায় না। একটার পর একটা গার্লফ্রেন্ড পাল্টানো কারো পুরুষত্বের ক্রাইটেরিয়া নয়। সত্যিকারের পুরুষ হলো যারা দায়িত্ব নিতে জানে। সত্যিকারের পুরুষ যিনার পথ বন্ধ করে। সত্যিকারের পুরুষ বিয়ের পথ বেঁচে নেয়। সত্যিকারের পুরুষ জানে এই বিয়ে কোনো ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড নয়, এটা চ্যালেঞ্জ, স্যাক্রিফাইস__যা সবাই পারে না। এর জন্য শুধ্য 'Male' হলে হয় না, 'Man' হতে হয়।
▪আজকাল অনেকে নারীদের বিপথে যাওয়া নিয়ে কথা তোলেন।দেখুন ভাই, মেয়েরা কিভাবে বিপথে যাচ্ছে, পর্দা ছেড়ে দিচ্ছে, ফাহেশা কাজে লিপ্ত হচ্ছে! কিন্তু, এটা একদিনে হয় নি। যেসব নারীরা বিপথে যাচ্ছে, তাদের আগে তাদের পুরুষরা বিপথে গেছে। বিপথে যাওয়া নারীরা হায়া হারানোর আগে, এসব নারীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পুরুষেরা তাদের হায়া, গীরাহ, পৌরুষ হারিয়েছে।
এ বছরে আমার পড়া বেস্ট একটা বই!আমার প্রিয় বইগুলোর সাথে এই বইটিও জায়গা করে নিয়েছে।এত্তো এত্তো ভালো ছিলো বইটা!একেকটা শব্দ,একেকটা লাইন এতটা আছড় কেটেছে মনে। কিছু জিনিস দুনিয়াবি জীবনের উপর মায়া বাড়িয়ে দেয়, আর কিছু জিনিস আখিরাতের জন্য টেনশন বাড়িয়ে দেয়। বইটি ঠিক তেমন! একেক পেইজ পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম, হায়!কী হবে আমাদের! . আলী বানাত (রহ.) এর গল্পটা বেশী ভালো লেগেছে।তার একটা কথা, 'ক্যান্সার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য গিফট।' কারণ,আলী বানাত যখন জানতে পারলো তার হাতে আর কিছু সময় আছে তখনই সে বুঝতে পারলো বিলাসবহুল এইসব জিনিস তার জন্য নয়। তিনি দুনিয়ার আসল মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন।পেরেছেন দ্বীনের পথে আসতে💕
সাহিত্য বিচারে হয়তো নয় তবে নিজ আত্মার ঘুমন্ত সত্বাকে অন্তিম যাত্রার স্মরণ, বেগময় জীবনে পাওয়ার প্রতিযোগিতার পেছনে ছুটে চলাকে থমকে দাড় করিয়ে কাঠগড়ায় তার প্রতিফলন ঘটনোর মত বইটি। ভাষা সরল হয়েও হৃদয়ে আঁচড় কাটার মত, প্রশ্ন করার মত মুসলিম দাবীদার হবার স্থানটিকে আমরা পচা জলে নষ্ট ভেঙ্গে পরা মাচার মত করে ছেড়েছি। সেই নড়বড়ে স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে পশ্চিমা সাঁজে সুখের আকাশচুম্বী অট্রলিকার প্রহর তৈরির পেছনে ছুটছি। হুট করে স্বপ্ন ভেঙ্গে খেয়াল হলে দেখবো আমাদের জীবনের নড়বড়ে স্তম্ভে নামমাত্র মুসলিম শব্দটিকে স্থান দিয়ে বাকি পুরো অংশই পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যাস্ত। বই "এপিটাফ" আমাদের ভুলে যাওয়া জীবনের প্রকৃত অর্থকে তাই সামনে দাড় করিয়ে দেয়, জীবন যখন একবার ধরায় পা দিয়েছে তখন মৃত্যু অবধারিত আর আশ্চর্যের বিষয় কেন যেন আমরা এই চরম সত্যেকে জানতে ভয় পাই। লেখক সেই শঙ্কাকে বিভিন্ন হৃদয়ে একেক রুপে আবিস্কার করেছেন যাদের কেউ ফিরে আসার সময় পায়নি, শেষ সময়ের সচেতনতা কাউকে আবার আমুল বদলে দিয়েছে, কাউকে আবার প্রাচুর্যের হাতছানি ধ্বংসের দাড় প্রান্তে নিয়ে গেছে। আমরা হয়তো লজ্জায় লজ্জিত হব সালাফদের আয়নায় নিজেদের দেখে, গর্বে গর্বিত হব নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর একে দেয়া সাহাবা (রাঃ) দের জীবন প্রতিচ্ছবি দেখে, হয়তো আমাদের সচেতনতা ফিরবে অসুস্থ জ্ঞান প্রতিযোগিতা আর অযৌক্তিক বায়নার পেছনে ইদুর বিড়াল খেলায় নিজ জীবন চক্র দেখে। তবে সকলেই নয় একমাত্র আল্লাহর স্মরণে যে তথাকথিত সামাজিক বলয় থেকে নিজকে আলাদা করবে, দয়াময় আল্লাহ যার হৃদয়ে সরল পথের অনুভুতি আঁকবে।
লেখকের বলে যাওয়া সকল ঘটনার মাঝে আমরা যেন আমাদের চিরাচরিত জীবন প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাই। বোধদয় হয়তো আমাদের প্রশ্ন করতে শেখাবে বদলে যাবার সময় কি তবে এখনও আসেনি? রঙিন জগতের তরি ডুবিয়েই কি তবে ফিরবে? এ জগতের অধিপতি আল্লাহ কি তোমার অপেক্ষায় থাকেনি? কেন তার মুল্য দাওনি?
একটা কোলাহলমুক্ত, নির্জন জায়গা বেছে নিন। আরাম করে বসুন। আর তারপরে মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়া শুরু করুন। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি, আপনার চিন্তাশক্তি যদি অকার্যকর না হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে এই বইটা পড়ে আপনি প্রচণ্ড ধাক্কা খাবেন। নিজের অবস্থা চিন্তা করে হয়তো লজ্জায় পড়ে যাবেন। লেখাগুলোর মর্ম যদি ভালো করে অনুধাবন করতে পারেন তাহলে হয়তো একটা হাঁসফাঁস করা অনুভূতি তৈরি হবে। সেটা যদি হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। তারমানে এখনও আপনার বোধবুদ্ধি পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়নি। এরকম অন্তরে আলোড়ন তোলা লেখা হরহামেশা চোখে পড়ে না। আর প্রতিটা লেখাই আপনার আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের কি করার কথা আর আমরা কি করছি? তাবৎ পৃথিবীর দোষ খুঁজে বেড়ানো এই আমাদের যে আয়নায় নিজেদের দেখার ফুরসত হয় না সেটা বার বার এই বইয়ের লেখাগুলোয় উঠে এসেছে। এই বই কিনে সাজিয়ে রাখার জন্য না। এই বই পড়ে, করণীয় চিন্তা করা জরুরী। অন্যদের পড়তে দেয়া দায়িত্ব। আমার এই কথাগুলোকে বইয়ের রিভিউ বললে ভুল হবে হয়তো। বই পড়ার পর আমার অনুভূতি বলা যেতে পারে এই কথাগুলোকে। এই বইটা আমি আবার পড়বো। বার বার পড়বো। যখনই মনে হবে অন্তর শক্ত হয়ে যাচ্ছে, দুনিয়ার মোহে হাবুডুবু খাচ্ছি, তখনি আবার পড়বো ইনশাআল্লাহ।
একজন মানুষ মারা যায়। তাকে দাফন করে সেখানে নাম ফলক লাগিয়ে রাখা হয়। এটাকেই সম্ভবত এফিটাফ বলে। বইয়ের উপস্থাপনা খুব লেগেছে। লেখাগুলো হৃদয়স্পর্শী। হৃদয়স্পর্শী না বলে হৃদয়ভেদী বলা ভালো। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে এই বইটা পড়ে মনে হবে কেউ ঘাড় ধরে বসিয়ে দিয়েছে আর বলছে কোথায় যাচ্ছো? ��িসের পেছনে ছুটছো? থামো। আবার ছুটতে শুরু করার আগে ভাবো কোথায় যাচ্ছো। কেন যাচ্ছো?
প্রতিনিয়ত শতশত কঠিন উচ্চমার্গীয় বই না পড়ে মাঝেমধ্যেই এমনকিছু বই পড়া উচিৎ যা আমাকে বুঝিয়ে দিবে যে, এতদিন ধরে পড়া কঠিন-উচ্চমার্গীয় বইগুলো কোনো কাজে আসছে না, এমন বই পড়া উচিৎ যা আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে আমি শুধু পড়েই যাচ্ছি কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কোনো ভাবান্তর আমার মাঝে নেই। প্রতিটি অধ্যায়ই আমাকে শাসিয়ে দিবে প্রচন্ডরকমে। এইরকম একটি বই হলো ‘এপিটাফ’। ব্রাদার মোহাম্মদ হোবলস এর লেকচার অবলম্বনে বইটি লিখেছেন সাজিদ ইসলাম ভাই।
So very interesting. Each article/story/chapter has something different to teach, to impart insights about, to knock some sense into us. An important read for today's human beings.
Updated review: ঈমানদীপ্ত, প্রয়োজনীয়, নির্ভীক, আর... অকৃতজ্ঞতার সাগরে ডুবে ঘুমিয়ে পড়া হৃদয়কে নাড়া নয়, সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টায় রত কিছু মূল্যবান লেখার সমাহার।
সাজিদ ইসলামের "যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির" বইটা আমার খুবই প্রিয়। বইটা শেষ করার সাথে সাথেই এপিটাফ কিনেছিলাম।পড়তে যদিও দেরি হয়ে গেল। কিন্তু এই সময়ে বুঝতে পেরেছি এপিটাফ বইটি পাঠকমহলে খুবই জনপ্রিয়। তাই আর দেরি না করে বইটা পড়ে ফেললাম। এখন মনে হচ্ছে বইটা আসলেই জনপ্রিয়তা পাওয়ার যোগ্য। এই বইটার কনটেন্ট নেওয়া হয়েছে উস্তাদ Mohammad Hoblos এর লেকচার থেকে। বইটি আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, আমাকে আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে এবং জান্নাতের পথে আরো দৃঢ় ভাবে চলতে সাহায্য করেছে। বইয়ের এক জায়গায় সাজিদ ইসলাম লিখেছেন "চোখ ধাঁধানো এই আলোর শহরে উদ্দেশ্যহীন আমাদের এই জীবনগুলোতে সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কিছু ধাক্কার দরকার পড়ে। আমি আশা করি এই বইটি সে ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে। "- কথাটি পুরোপুরি সত্য। এই বইটি আসলেই আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ।
এই বইয়ে মোট ৩৩ টি ছোট ছোট অনুচ্ছেদ রয়েছে। আমার সবচেয়ে পছন্দের অনুচ্ছেদগুলো হল- এপিটাফ, মাতাউল গুরুর, জীবনে রঙ্গশালায়, দ্য গ্যাংস্টার, বাটারফ্লাই বয়।
"এপিটাফ" অনুচ্ছেদটি আলী বানাত কে নিয়ে লেখা। যিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি একটা কথা বলেছিলেন -"ক্যান্সার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য গিফট"। দুনিয়া জুড়ে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করে,জীবনের আসল উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিদায় নেওয়া আলী বানাতের জীবন থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আর "বাটারফ্লাই বয়" আমাকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য আরও অনুপ্রাণিত করেছে। বইয়ের অন্য অনুচ্ছেদ গুলোও সমানতালে শিক্ষনীয়। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি বই পড়ার অভিজ্ঞতা হলো।
আত্মহংকার, সৌন্দর্য, টাকা, খ্যাতি এসবের পেছনে দৌড়ে জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে বসেছি। জীবনের আসল মানে কী তানিয়ে ভাবার ফুরসত নেই।
এই বইকে অল্প শব্দে সামারাইজ করা প্রায় অসম্ভব। বহু পয়েন্ট আছে যা আলোচনা বিস্তর সময়সাপেক্ষ।
আমার সবথেকে বড় দূর্বলতা হলো এই বইকে রিভিউ লিখে তার যথাযথ হক আদায় করতে পারব না।
লেখক চিন্তার খুঁটিতে নাড়িয়ে দিয়েছেন বহু লেখায়। ভাবনার বহু খোরাক আছে এতে৷
আমরা কোনো পদক্ষেপকে খুব ছোট ভেবে অবহেলায় ভাবি "এ আর এমন কী!" এই খুব তুচ্ছ একটা মনোভাবের ফলাফল অনেক ভয়াবহ হতে পারে। এমন এক ভয়াবহ গল্পের উল্লেখ করেছেন লেখক। একজন খালেস আবেদ মানুষ সামান্য একটা ওয়াসওয়াসায় পড়ে শেষমেশ কীভাবে মুরতাদ হয়ে মরলো তা পড়ে আপনার ভাবনার ভীত নাড়িয়ে দেবে। আমরা খুব ছোট গুনাহকে অবহেলায় প্রশ্রয় দিচ্ছি তার ফলাফল দূর ভবিষ্যতে খুবই ভয়াবহ হবে।
আমি মনে করি বইটি একবার হলেও পড়া উচিত। আপনার আত্মার শুদ্ধতার সাথে চিন্তার খোরাক জোগাবে।
প্রথমেই বইটির প্রচ্ছদের প্রশংসা করতেই হবে। ইসলামিক বই এর এমন নজরকাড়া প্রচ্ছদ হওয়া উচিত যাতে মানুষের মন থেকে এই বদ্ধমূল ধারণা বের হয়ে যায় যে, ইসলামিক বই মানেই নিম্নমানের প্রচ্ছদ, বাজে মুদ্রণ। যদিও বিভিন্ন ইসলামিক বুক পাবলিকেশন্স এখন বই এর প্রচ্ছদের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। সাধুবাদ জানাই। এটি চমৎকার একটি বই। নতুন করে যারা দ্বীনে এসেছে,তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বই। পাশাপাশি আমরা যারা বেশ কিছু সময় ধরে দ্বীন পালন অনুশীলন করে যাচ্ছি, কিন্তু যথাযথভাবে পারছি না নানান কারণে, তাদের জন্যেও বইটি বেশ উপযোগী। ইসলামকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরার অনুপ্রেরণা যোগাবে বইটি। পড়ে দেখুন। আমি আর কিছু না-ই বা বললাম। পড়বেন এটি দয়া করে; অনুরোধ থাকলো।
“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফ���োস, আমার মৃত্যুর খবর জানানোর জন্য সুটেড বুটেড ডাক্তারের দরকার পড়েছে। ডাক্তার যখন জানাল, কেবল তখনই আমি বিশ্বাস করলাম। অথচ আমার রব সারাটা জীবন ধরে মৃত্যুর বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন, আমি আমার রবের কথায় বিশ্বাস করিনি।” - আলি বানাত (রহ.) . বইয়ের শুরুর দিকের কয়েক পর্বে এমন কিছু মানুষের জীবনের শেষ সময়ের কথা বলা, যাদেরকে তাদের মৃত্যুর সম্ভব্য সময় বলে দিয়েছিল। তারা কেউ ই বৃদ্ধ ছিল না। কিন্তু মৃত্যু নিকটবর্তী জেনে তারা হাতে থাকা সময়টুকুকে নিজের সেরা সময় বানানোর চেষ্টা করে। কারণ মৃত্যু হলেই হিসাব শুরু। বর্তমানেও দেখা যায় মানুষ শুধু বৃদ্ধ বয়সটাকে আল্লাহর জন্য রাখে। কিসের ভিত্তিতে যেন আমরা ধরে নেই যে - বৃদ্ধ হওয়ার আগে আমাদের মৃত্যু হবে না। . প্রথম কয়েক পর্ব পড়ার পর অনেকের মনে হতে পারে যে - আমার মৃত্যুও যদি ক্যান্সারে হতো তাহলে আগে সতর্ক হয়ে মৃত্যুর আগের সময়টা শুধু আল্লাহর জন্যই দিতাম। এরকম সময়ে এসেই লেখক সতর্ক করলেন -
"এটা ভাববেন না যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তারা একে ভালো পথে ব্যবহার করে। আমরা ভাবি, হ্যাঁ ভাই ক্যন্সার ভালো, এটা আপনাকে তাওবা করতে সময়, সুযোগ দেয়, যদি আমার ক্যান্সার হতো! আল্লাহু আকবর! কত বড় স্পর্ধা আমাদের। যখন কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় সবাই আশ্চার্যান্বিত হয়, ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ কি আপনাকে বলেন নি যে, আপনি যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন? আমাদের মাঝে অনেকের কোট-টাই পরিহিত আর সার্টিফিকেট পাওয়া ডাক্তারের কথায় যতটুকু বিশ্বাস আছে, ততটুকু বিশ্বাস রাসূল (সাঃ) এর হাদিসেও নেই। আপনি যখন হাদিস বা আয়াত পড়েন, মৃত্যু যেকোনো সময় আসবে, আপনি তখন আতঙ্কিত হন না, কিন্তু ডাক্তার যখন বলে, ভাই আপনাকে পরীক্ষা করে দেখলাম আপনি হয়তো আর সপ্তাহ দুএক বাঁচবেন, আপনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, দুই সপ্তাহ! এই কয়দিন আছে মাত্র? কিন্তু আপনি এরকম রিএকশান দেখাননি, যখন আল্লাহ বললেন যেকোনো সময় মৃত্যু আসবে!" . মৃত্যুর স্বরণের পর লেখক নিয়ে গেলেন আমাদের দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝতে। এখানে এমন কিছু মানুষের জীবনের গল্প বলা, যারা দুনিয়ায় বাস্তবতা বুঝতে পেরে নিজের জাঁকজমকপূর্ণ জীবন থেকে ফিরে এসেছিল। অনেকেই হয়তো তাদের চিনেন। আর এর মাঝে মাঝে আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হল। সত্যিকার পুরুষ কিরকম হয় তা চিনিয়ে দিল। . আমরা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে গাফেল। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনরতদের সমালোচনায় আমরা বিভোর। গঠনমূলক সমালোচনা খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু আত্মসমালোচনা করতে না পারাটা খারাপ। . যখন আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় তখন আমরা হাজির হই বিভিন্ন অজুহাত নিয়ে। আসলে কীসে আমাদের বাধা দেয়?
"খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) জীবনের শেষ প্রান্তে কুরআন তিলাওয়াত করতেন আর বলতেন, আল্লাহর কসম! যেই জিনিস আমাকে তোমায় হিফয করা হতে বাধা দিয়েছে তা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। সালাহউদ্দীন আইউবি (রহ.) কখনও হজ্ব করেননি। জেরুজালেম জয় করেছেন, কিন্তু হজ্ব করা হয়নি। তিনি শেষ জীবনে বলতেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ছাড়া আর কোনোকিছুই আমাকে হজ্ব করা থেকে বাধা দেয়নি।
এখন নিজেদের প্রশ্ন করে দেখি আপনি-আমি কী বলব? কীসে আমাদের সালাত থেকে, কুরআন থেকে, সুন্নাহ থেকে বাধা দিল? চাকরি? ব্যবসা? নারী? গাড়ি? সন্তান? মদ? কীসে বাধা দিল? আপনি আমাকে বোকা বানাতে পারেন, আমি আপনাকে বোকা বানাতে পারি। কিন্তু নিজেকে নিজে অন্তত বোকা বানাবেন না। আমাদের সবাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, একদিন হুট করে সেই সময়টা চলেও আসবে। আমাদের প্রত্যেকে আল্লাহর সামনে একাকী দাঁড়াব। সেদিন আপনার ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, শাইখ কেউ আপনার সাথে থাকবে না। আপনি একা দাঁড়াবেন।" . আমরা সবাই একটা সুন্দর মৃত্যুর আশা করি অথচ যেসকল কাজ আমাদের সুন্দর মৃত্যু উপহার দিবে তা করিনা। আমরা পরিশ্রম করতে চাইনা কিন্তু ফলাফল ভোগ করে চাই। কিছু সুন্দর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণানা করে কবরের তিন বন্ধু ও তিন শ্ত্রুর কথাও লেখক জানিয়ে দিলেন। . তারপর আসল উম্মাহ এর কথা। এই টপিক আসতেই আমরা আলোচনা জুড়ে দেই। সবাই তখন মহাজ্ঞানী। মুসলিমরা এক না, আরব শাসক / মুসলিম শাসকদের সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আসল সমস্যাটা কি? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি? সবই কিন্তু নবীজি সা. জানিয়ে গেছেন। আমরা সেই সব বিষয় মানছি না, উল্টো যেসব কাজ থেকে সতর্ক করেছেন সেগুলোতেই আমরা জড়িয়ে যাচ্ছি। . বইয়ের শেষটা হয় আল্লাহর বড়ত্ব, আমাদের প্রতি দয়া এবং শয়তানের কৌশল সম্পর্কে সচেতন করে। আর আমাদের সেই আক্ষেপ দিয়ে - "কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? " . বইটা আপনাকে ভাবাবে জীবন সম্পর্কে, বাস্তবতা সম্পর্কে, আর সাবধান করবে মৃত্যুর ব্যাপারে। আপনার অবস্থা যেমনই হোক না কেন বইটাকে আপনি ভালবাসতে বাধ্য হবেন ইন শা আল্লাহ। . কিছু বই থাকে যেগুলো ইচ্ছে করে অন্য সবাইকে পড়াতে। এটাও আমার কাছে এমনই একটি বই।
"এই ধূলোমাটিই হলো সবচেয়ে ধনীদের শেষ পরিণতি। এই ধূলো হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সবচেয়ে সুন্দর শরীরের নারীর শেষ পরিণতি। এই ধূলো হলো ক্ষমতাধরদের শেষ পরিণতি—এই ধূলোই হলো আমাদের সবার শেষ পরিণতি। From dust, to dust..."
'এপিটাফ' বইয়ের কন্টেন্ট নেওয়া হয়েছে মোহাম্মাদ হবলসের লেকচার থেকে। তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান দাঈ। সহজ করে অনুবাদ বা উপস্থাপন করেছেন সাজিদ ইসলাম।
বইটি শুরু হয়েছে আলী বানাতের জীবনী নিয়ে। 'মানুষ মরণশীল'— এই চিরন্তন সত্য জানার পরেও আমরা এক অতল আঁধারে নিমজ্জিত থাকি। অস্থায়ী এই জীবনকে নানা রঙে সাজানোর চেষ্টা করি। অথচ সেই সাজানো জীবনটা মরীচিকা ছাড়া কিছুই না। সুটেড বুটেড ডাক্তার যখন বেঁচে থাকার ক্ষণ বলে দেয়, তখনই কেবল আমাদের টনক নড়ে। যেমনটা হয়েছিল আনি বানাতের সাথে। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করা আলী বানাত যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন, ডাক্তার যখন তাঁর আয়ু বলে দিলেন– সেই জীবনের বাস্তবতা আলী বানাতকে এক ভিন্ন মানুষে বদলে দিলো— 'ক্যান্সার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য গিফট'।
বইয়ের ৩০টি অধ্যায় যেন আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বেশ কিছু অধ্যায় আমাদেরকে পরকালের কথা ভাবিয়ে দিবে এবং অধ্যায়গুলোর শেষে রয়েছে একগুচ্ছ উপদেশ। এখানে রয়েছে, ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীদের কথা; যা আমাদেরকে অস্থায়ী জীবন নিয়ে একটি শিক্ষা দিবে। রয়েছে মূসা আলাইহিস সালাম ও এক গুনাহগারের ঘটনা; যা পড়লে আল্লাহর ক্ষমা সম্পর্কে জানা যাবে। রয়েছে জান্নাতের বর্ণনা, কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনা এবং আমাদের উম্মাহর আজকের এই অবনতির কারণ এবং প্রতিকারের পথ। জানতে পারবো পুরুষত্ব সম্পর্কে– রিজাল এবং যাকার সম্পর্কে। জানতে পারবো, শয়তানের সামান্য ওয়াসওয়াসায় বনি ইসরাইলের এক বড় আবিদ কীভাবে মুশরিক হয়ে মারা গেল।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং পছন্দের অধ্যায়গুলো হলো— ১. MAN VS MALE, ২. পুরুষেরা যেদিন 'পৌরুষ' হারিয়েছে, নারীরা সেদিন 'হায়া' হারিয়েছে, ৩. আমিই দায়ী—চাই এমন স্বীকারোক্তি, ৪. একদিন তারা একত্রিত হবে। —এই চারটা অধ্যায় বিশেষ করে প্রতিটা পুরুষের পড়া উচিত বলে মনে করি। এছাড়া বইয়ের প্রতিটা অধ্যায়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইহকাল-পরকাল, উপদেশ, রিমাইন্ডার, অনুপ্রেরণা– সকল কিছুর এক জ্ঞানভাণ্ডার হলো— এপিটাফ।
‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস, আমার মৃত্যুর খবর জানানোর জন্য সুটেড বুটেড ডাক্তারের দরকার পড়েছে। ডাক্তার যখন জানাল, কেবল তখনই আমি বিশ্বাস করলাম। অথচ আমার রব সারাটা জীবন ধরে মৃত্যুর ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন, আমি আমার রবের কথা বিশ্বাস ক���িনি।’ - আলি বানাত (রহ.)
মৃত্যুর পর আমাদের অনন্তকালের জীবন রয়েছে। এ কথা আমরা জীবনে বহুবার শুনেছি। মৃত্যু অবধি মানুষ শুনে থাকি। এর উপর বিশ্বাস এনে আমাদের কর্মজীবন সাজাতে হয়। ইমান আনতে হয়। সেই অনুযায়ী আমল করতে হয়। এতে আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা চাইলে নিজেদের জীবন মহান রবের দেওয়া বিধান অনুযায়ী সাজাতে পারি, আবার নাও পারি। যদি ইসলামি বিধান মেনে চলি, তাহলে আল্লা��� সন্তুষ্ট হয়ে পুরস্কৃত করবেন। বিপরীতে শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এ সবই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যে জিনিসটা আমাদের সামনে চির সত্য সেটা হলো- মৃত্যু।
আমাদের সামগ্রিক জীবনে ইমান, আমল, ইসলামে আমাদের অবস্থান কেমন, আল্লাহকে কতটুকু মান্য করছি, তার পথ থেকে গাফেল হয়ে যাচ্ছি এবং কেন বিপথগামী হচ্ছি, ইসলাম বা মুসলমানিত্ব নিয়ে আমাদের ভ্রান্তি ধারণা প্রভৃতি নিয়ে প্রায় ত্রিশটি বাস্তবধর্মী আলোচনার সংকলন হলো এই এপিটাফ। প্রতিটি আলোচনা শিক্ষণীয় এবং শিক্ষা নিয়ে আমল করতে পারলে মুসলিম হিসেবে জীবন আরো সুন্দর হবে এ আশা রাখা যায়। আলোচনার সারমর্ম আমাদের সবারই জানা। কিন্তু আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হই, কেবল তখনই আমরা মৃত্যু নিয়ে ভাবি।
বইটা ভালো লেগেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামি জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
"এপিটাফ" মোহাম্মদ হবলোস এর ইসলামিক বক্তৃতার একটি সংগ্রহ, একটি শক্তিশালী এবং গভীর মননশীল পঠন। বইটির উপস্থাপনা মুগ্ধকর, এবং বক্তৃতাগুলি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। এগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জটিলতার পর্দা ভেদ করে আমাদের অস্তিত্বের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করতে উত্সাহিত করে।
এই বইটি শুধু একটি বই নয়, বরং একটি জাগরণ। দুনিয়ার ব্যস্ততা ও অহংকারের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে নিজেকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। বইটির মূল কথা হলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি এবং কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদেরকে ইসলামের আদর্শের দিকে ফিরে যেতে হয়।
বইটি আমাদেরকে মৌলিক প্রশ্নগুলি করতে বাধ্য করে: আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমরা কী করছি? পার্থিব ইচ্ছার নিরলস সাধনায়, আমরা প্রায়ই বৃহত্তর চিত্রটি দেখতে পাই না। "এপিটাফ" আমাদেরকে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর প্রকৃতি এবং ইসলামী নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত জীবনযাপনের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
বইটি প্রতিটি মুসলিম এর জন্য অবশ্য পাঠ্য বই। যা আমাদের বিবেককে ঝাঁকুনি দেবে। মনে করিয়ে দেবে আমরা সুমহান রব আল্লাহ এর বান্দা;জান্নাতই আমাদের লক্ষ্য।
নিঃসন্দেহে হেদায়াত একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তবে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই একজনকে তার হেদায়েতের পথে চলতে সহযোগিতা যোগায়। বই মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু, আর বই যদি হয় হেদায়াতের ওছিলা তাহলে তার প্রভাব থাকে অসম্ভব দৃঢ়। এই বইটিও অনেকের ক্ষেত্রেই সেই ভূমিকা পালনের যোগ্যতা রাখে। বইটি জনপ্রিয় দাঈ মোহাম্মদ হুবলস এর লেকচার অবলম্বনে তৈরী। মোহাম্মদ হুবলস এর হৃদয় নিংড়ানো লেকচারগুলো একজন মানুষের হেদায়াতের ওছিলা হওয়ার যোগ্য দাবি রাখে। বইটি নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করবে অবশ্যই সেই সাথে পরকাল যে আসল জীবন সে ব্যপারে একটি বড়সড় রিমাইন্ডার হিসাবেও কাজ করবে। সবমিলিয়ে দারুন একটা অনুভূতির ভ্রমণ এই বইটি যা অনেক কিছু নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
প্রথম লেখাটাতেই আপনাকে আটকে ফেলবে বইটি। শেষ না করে রেখে দেয়াটা খুবই কষ্টকর।
মেদহীন, সহজ সরল ভাষায়, ঝরঝরে অনুবাদে বইটি এগিয়েছে। আলি বানাত রহ. সহ নানান আধুনিক সফল মানুষদের জীবনের ইউটার্নগুলো গদ্যাকারে তুলে এনে পরতে পরতে জীবনঘনিষ্ঠ কিছু নাসীহাহ হাজির করেছেন লেখক। মোহাম্মদ হোবলস এর কথা হৃদয়স্পর্শী। অনুবাদক চেষ্টার কমতি রাখেননি এবং বলা চলে যথেষ্ট সফল হয়েছেন।
বইটি গল্প বলার ফাঁকেই কল্পনাতীত জায়গা থেকে নাসীহাহ হাজির করে যা পড়লে মনে হয়, এভাবে তো মাথায় আসেনি!
দারুণ একটি বই। কেউ জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্ত থাকলে, কারো জীবনের মূল উদ্দেশ্য নিখোঁজ হয়ে গেলে, বইটি আপনাকে হাত ধরে সেখানে নিয়ে যাবে।
অনেক গুলো এলোমেলো বিষয় নিয়ে লিখা বইটা। লেখকের লেখকের হাত খুবই সাবলীল। পড়তে বেশ আরাম। ইসলামের সুন্দর কিছু অনুভূতির পরশ পাবেন প্রতিটা অধ্যায়ে। নিজের জীবনে প্রয়োগ করার মতো অনেক জিনিষ আছে বইটার ভিতর। সেই সাথে বইটা দারুন মোটিভেশান হিশেবে কাজ করতে সক্ষম। আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে বইটা। সাজিদ ভাইয়ের লেখার হাতের ফ্যান আমি😊
‘এপিটাফ’ শব্দটির অর্থ সমাধিলিপি, কবরের ওপর লেখা এক স্মৃতিফলক। এই নামটি পড়লেই মনে পড়ে যায় মৃত্যুর নির্মম বাস্তবতা—যেন কবরের মানুষটি নিঃশব্দে বলে উঠছেন, "আমার সিরিয়াল এসে গেছে, একদিন তোমাদেরও আসবে।"
বইটি উস্তাদ মুহাম্মদ হুবলস-এর লেকচারের সমন্বয়ে রচিত। তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান দাঈ, যিনি হৃদয়ছোঁয়া বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের অন্তর কাঁপিয়ে দিতে পারেন। জাহিলিয়াতের আঁধার থেকে মানুষকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনা, যান্ত্রিক ও বস্তুবাদী জীবনে হাঁপিয়ে উঠা এই সময়ের মানুষকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়াই যেন তার মিশন।
বর্তমান প্রজন্ম নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও উম্মাহর এক বড় অংশ আজ কাফিরদের জীবনধারায় আকৃষ্ট। অনেকে বুঝেও ভুলের চক্র থেকে বের হতে পারে না। ঠিক সেই জায়গাগুলোতেই আলো ফেলেছে ‘এপিটাফ’।
উস্তাদের গভীর ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কথাগুলো আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে শেখায়। আত্মশুদ্ধির তাগিদ দেয়। এ বই তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করবে, দেখাবে সত্য ও সঠিক পথের দিশা।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:-
"এপিটাফ" পড়া শুরু করার পর মনে হয়েছে, এটি আমাদের জীবনের প্রতিদিনের ছোট ভুলগুলোকে সামনে এনে একটি বড় প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে: আমরা আসলেই কোথায় যাচ্ছি? বর্তমানের এই ফিতনার যুগে, যখন আমরা ধর্মের ছায়া হারিয়ে প্রাচুর্যের পেছনে ছুটছি, তখন এই বইটি পাঠকের অন্তরকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। এটি আমাদের ভুলে যাওয়া জীবনের আসল উদ্দেশ্যের দিকে ইঙ্গিত করে এবং আমাদের বর্তমান পথের ফলাফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
বইটির ভাষা খুবই সহজ, কিন্তু সেই সরলতার মধ্যেই আছে হৃদয়গ্রাহী শক্তি। প্রতিটি অধ্যায় যেন একটি করে আঘাত, যা আমাদের ভুলে থাকা আত্মিক সত্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। লেখক অত্যন্ত কৌশলে এমন কিছু গল্প তুলে ধরেছেন, যেগুলো পড়ে আপনার অন্তর কেঁপে উঠবে।
এই বইয়ের বড় বিশেষত্ব হলো, এটি শুধু আমাদের আত্মার গভীরে প্রশ্নের ঝড় তোলে না, বরং সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার অনুপ্রেরণাও দেয়। প্রাচুর্যের মোহ থেকে বেরিয়ে এসে একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করার জন্য এটি এক বিরল সহচর। "এপিটাফ" এমন একটি বই, যা আমাদের প্রতিদিনের ভুলগুলোকে সামনে এনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করার সাহস দেয়।
জীবন কেবল একবার, কিন্তু এর প্রতিটি সিদ্ধান্তের ফলাফল চিরস্থায়ী। নিজেকে বদলানোর জন্য কখনোই দেরি হয় না। আপনি যদি একবার জীবনের গভীরে ডুব দিতে চান এবং আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য একটি সত্যিকারের দিশা খুঁজে পেতে চান তবে "এপিটাফ" আপনার জন্য একটি আদর্শ বই। লেখার সৌন্দর্য এবং অন্তর্দৃষ্টির জন্য "এপিটাফ" আপনার সংগ্রহে রাখতে ভুলবেন না। এটি শুধু আপনার আত্মাকে নয়, আপনার জীবনকেও বদলে দিতে পারে। ————————— বই : এপিটাফ লেখক: সাজিদ ইসলাম (মূল: উস্তাদ মুহাম্মদ হুবলস) প্রকাশনী: বুকমার্ক পাবলিকেশন বিষয়: আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা, দাওয়াহ। মুদ্রিত মূল্য: ২২৮ টাকা। রেটিং: ⭐ ⭐ ⭐ ⭐ ⭐/৫