একটি ভাষার বিন্দুবিসর্গ না বুঝে দিনের পর দিন তিলাওয়াত করে যাচ্ছি, ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ অযৌক্তিক ও অস্বস্তিকর মনে হতো। তাই অর্থ-সহ পড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু যতবারই আমি কুরআনের অর্থ পড়তে গিয়েছি, ততবারই একদম শুরুতে আটকে গিয়েছি। সুরা বাকারার পুরোটা জুড়ে মুসা আলাইসিস সালামের কাহিনি! অথচ কোথা থেকে কী শুরু হলো, কীসের পরে কী হলো—এসবের কিছুই বুঝতাম না তখন আমি। তাই কুরআন পড়ার উৎসাহটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।
আসলে কুরআনের বিবরণশৈলী অনেকটা কথোপকথনের ভঙ্গির মতো। কুরআন কোনো ‘ইতিহাসের বই’ নয়। তাই কাহিনিগুলো এখানে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়নি। বিশুদ্ধ কোনো উৎস থেকে সেসব কাহিনির ক্রম জেনে তবেই অনুবাদ পড়তে হবে। না-হয় মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলার প্রবল আশঙ্কা থেকে যায়। যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে কুরআনে বিবৃত বনি ইসরাইলের ঘটনাটি পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হয়েছে। এতে করে সহজেই বোঝা যাবে—একটি উম্মাহ থেকে কীভাবে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম—এই তিনটি জাতির উদ্ভব হয়েছে। এ বইটি ‘শিকড়ের সন্ধানে’ নিয়োজিত হওয়ার একটি বিনম্র প্রচেষ্টা। আমরা কেন মুসলিম; ইহুদি বা খ্রিষ্টানদের সাথে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও জীবনাচারের পার্থক্যটা কোথায়—এসব আবিষ্কারের একটি অভূতপূর্ব যাত্রা আমাদের বইটি। . . তবে এটা স্রেফ একটি গ্রন্থ নয়, বরং কুরআনীয় ঘটনাগুলোর একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ।
হামিদা মুবাশ্বেরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিতে পিএইচডি করছেন। এর আগে মালয়শিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (IIUM) থেকে ইসলামিক ফিনান্সে মাসটার্স করেছেন। ব্যাচেলর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (IBA) থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় (IOU) থেকে, সেখানে ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী।
হরেক রকমের বই পড়া ও লেখালেখি হামিদা মুবাশ্বেরার কাছে এক ধরনের নেশার মতো। বাবার আকস্মিক মৃত্যু তাকে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে। কী হয় মৃত্যুর পর? এটা নিয়ে কোন ধর্ম কী বলে? কেন আমরা মুসলিম? অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়? নিজের শিকড়, আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের ব্যাক্তিগত যে যাত্রা, সেই পথ থেকে কুড়ানো মণি-মুক্তা নিয়ে লিখেছেন তার বই “শিকড়ের সন্ধানে”।
প্রতিদিন নামাজে কমপক্ষে ১৭ বার সূরা ফাতিহা পড়ে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই তাদের মত না হতে যারা 'অভিশপ্ত' এবং যারা 'পথভ্রষ্ট'। এই পথভ্রষ্ট কারা এবং অভিশপ্ত কারা? মুফাসসিরদের সবাই একমত যে এখানে অভিশপ্ত বলতে 'ইহুদী'দের বোঝানো হয়েছে এবং পথভ্রষ্ট বলতে 'খ্রিস্টান'দের বোঝানো হয়েছে। আমরা তো জন্মসূত্রে মুসলমান। তাহলে আমরা ইহুদী বা খ্রিস্টানদের মত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে এতবার পানাহ চাই কেন? কোরআনের এত বিরাট অংশ জুড়ে কেন ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের কথা বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে? এখান থেকে আমাদেরকে আল্লাহ তা''আলা কি শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন? সূরা ফাতিহায় উল্লেখিত 'সিরাতুল মুস্তাকীম' আসলে কোনটি? এ বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে বুঝতে হলে এবং একটা চমৎকার পাঠভ্রমণ করতে হলে আপনাকে এই বইটা পড়তে হবে। যে কয়টা বই পড়ার পর আমার জনে জনে বিলি করতে ইচ্ছে হয়েছে এই বইটাও সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। অনেক আগেই এই বইটার উন্মুক্ত পিডিএফ নেট থেকে সংগ্রহ করে বই হিসেবে বাঁধিয়ে নিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম। এতই ভালো লেগেছিল যে বই হিসেবে এটা পাবলিশ হওয়ার পর কিনে আবার পড়ে ফেললাম। ভবিষ্যতেও বার বার পড়ার ইচ্ছা আছে।
এই বইটিকে ৫ দেয়া না ছাড়া উপায় নেই। লেখিকা যথাযথ চেষ্টা করেছেন রেফারেন্স, ফুটনোটগুলো ঠিকভাবে দেবার, যা পরবর্তীতে অনেককেই সাহায্য করবে।
বইয়ে উঠে এসেছে মূলতঃ ১/ খ্রিস্টান ও ইহুদিদের পরিচয়। এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক। (অনেক ইন্টারেস্টিং তথ্যগুলো খুব সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলছেন) ২/ কোরআনে যে অংশগুলো এ নিয়ে কথা তা বোঝা ও জানা। ৩/ ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরির ভিত্তিহীন ধর্মীয় দাবিকে পর্যবেক্ষণ। ৪/ আর একটা ধ্রুব সত্য, যে কোন ধর্মের ধর্মীয় বইগুলো নিজেদেরই পড়তে হয়। কোন স্কলার, অথোরিটি, পাদ্রী, পুরোহিত, মোল্লা ইমাম, ওলী ও পীরকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করা যায় না৷ তা যে ধর্মই হোক না কেন।
অনেকদিন পরে খুব অসাধারণ একটা বই পড়লাম।স্টার সংখ্যা ৫ তাই ৫ টা দিতে হলো,আরো বেশি থাকলে তাই দিতাম। গালগল্প বা উপদেশ না দিয়ে লেখিকা এত সুন্দরকরে ঘটনাপ্রবাহের সাথে বইটা লিখেছেন যে মুগ্ধ হতে হয়।আমার কাছে বইটা থ্রিলার লেগেছে,তাও আবার পুরোদস্তুর সত্যি!! এক্কেবারে কুরআন আর হাদিসের রেফারেন্স দেয়া থ্রিলার।প্রতিদিন সুরা ফাতিহায় দিনে অন্তত ১৭ বার যাদের মত হওয়ার থেকে আশ্রয় চাই, তাদের মতো হওয়া আসলে কি? সেইটাই কখনো জানা হয়নাই। ইহুদি,নাসারা শব্দ ২ টা কুরআনের অনুবাদ পড়লে অসংখ্যবার পড়া হয়।কীভাবে শব্দ ২ টা আসল কারা বনী ইসরাইল,কেন তারা বনী ইসরাইল, তাদের মত কেন হওয়া যাবেনা এই চমৎকার বিষয়গুলো আরো চমৎকার লেখনীতে প্রকাশ করেছেন হামিদা মুবাশ্বেরা। সাথে রেফারেন্স টেনেছেন বাইবেলের,ওল্ড টেস্টামেন্ট,নিউ টেস্টামেন্ট,তাওরাতের কমান্ডমেন্ডের। জানা,বা নলেজ গ্যাদার করার জন্য শুধু বইটা নয়। বইটা সত্যিই কাউকে নিয়ে যাবে শিকড়ের সন্ধানে। লেখিকা বনী ইসরাইলদের ভুলগুলোর পরে প্রতিবার জিজ্ঞেস করেছেন, মিল খুঁজে পাচ্ছি কিনা নিজেদের সাথে। অত্যন্ত লজ্জার সাথে দুঃখের সাথে আসলে স্বীকার করতে হয়, সেই একই ভুল আমরাও করে যাচ্ছি। তবে অনুসন্ধান করাটা জরুরি। ভুল জেনে নিয়ে, তা মেনে নিয়ে পরিবর্তনটা জরুরি।
এই বইটা কার্টে যোগ করার সময়ও দ্বিধায় ছিলাম, লেখিকার নাম কখনও শুনি নাই, ভালো হবে কিনা। বইটা পেয়ে প্রথম যেদিন বইটা খুলে দেখি, তখন থেকে শেষ হওয়া অবধি নামাতে পারিনি। এই না হলে বই!
ঠিক এরকম একটা বই-ই দরকার ছিল বাংলাদেশি মুসলিমদের। শিকড় বললেই কেন যেন আমরা ‘হাজার বছরের বাঙালি’ বুঝি। আমাদের সমাজ আমাদের ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি যে আমাদের জাতীয়তাবাদী সত্তার অনেক উপরে আমাদের মুসলিম সত্তা। এই বইটা আমাদের সেই মুসলিম সত্তার ব্যাপারে আমাদের সচেতন করে তোলে।
আমাদের আগে আরো দুই নবীর উম্মত (হযরত মুসা আলাইহিওয়াসাল্লাম ও হযরত ঈসা আলাইহিওয়াসাল্লাম) বিপথে গিয়ে আল্লাহ এর অনুগ্রহের বাইরে চলে গেছে। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহিওয়াসাল্লাম এর উম্মত আমরা। আল্লাহ আমাদের উম্মতকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। সেই সাথে কুরআনে আমাদের উম্মতের জন্য অন্যান্য অনেক জাতির উদাহরণও উল্লেখ করেছেন যাতে আমরা তাদের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। এদের মধ্য়ে অন্যতম ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতি। ইহুদিদের জাতি বনি ইসরাইলকে আল্লাহ্ অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলেন। তবে বনি ইসরাইল ছিল চির অকৃতজ্ঞ, তারা আল্লাহর প্রতি শিরক করেছিল এবং আল্লাহ তাদেরকে অভিশপ্ত জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে খ্রিষ্টানরা আল্লাহর নবীকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে মেনে নিয়েছিল এবং তারা নবী ঈসাকে আল্লাহ্ এর সমকক্ষ মনে করে (আস্তাগফিরুল্লাহ্)। এই দুই জাতি নিয়ে একটা জেনারেল ধারণা ছাড়া আমরা কিছুই জানি না। এদের ইতিহাস ও বিশ্বাসের কথা ভালোভাবে না জানলে আমরা কিভাবে বুঝব যে আমরা ওদের পথে আগাচ্ছি না? এসব বিষয় নিয়েই বইটি লেখা হয়েছে। লেখিকা খুব সুন্দর করে একটা জার্নির মতো করে বইটায় এক জাতির সঙ্গে আরেক জাতির যোগসূত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
মুসলিম উম্মাহ্ এর অবস্থা এখন চরম শোচনীয়। দখলদার ইসরাইলী বাহিনী ৭ অক্টোবরের ২০২৩ এর পর থেকে গাজায় ৪১০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি হত্যা করেছে। একইসাথে তারা সিরিয়া ও লেবাননে একাধিক সামরিক অভিযান চালিয়ে লাখো মানুষকে হত্যা করেছে। ইয়েমেনে হুতিদের দমানোর নামে আমেরিকা দফায় দফায় বোমা ফেলছে। চায়নায় উইঘুর মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মিয়ানমারের জানতা সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর অত্যাচার চালিয়ে তাদের নিজেদের ভূখন্ড থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শক্তিধর মুসলিম দেশগুলোও চুপ এ ব্যাপারে। আমাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের ঈমানের দুর্বলতা। যখন মুসলিমদের ঈমানের অবস্থা নড়বড়ে থাকে তখন আল্লাহ্ তাদের শত্রুদের শক্তিশালী বানিয়ে দেন এবং বাস্তবেও আমরা তাই দেখছি। এই ঈমানকে দৃঢ় করতে হলে আমাদেরকে আমাদের শিকড়ের ব্যাপারে জানতে হবে, বুঝতে হবে আমরা কাদের থেকে এসেছি। এই বইটা পড়ে মুসলিম হিসেবে আমার কনফিডেন্স অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। লেখিকা বইটায় বাঙালিদের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যা আসলে অনেক সাহায্য় করেছে মুসলিম বাঙাল��� হিসেবে দীনকে ভালোমতো বুঝতে।
সেই সাথে যে আরেকটা জিনিস বুঝলাম তা হলো কুরআনিক আরবী আমাদের শিখতেই হবে। এটা ছাড়া কখনো অনুবাদ পড়ে কুরআনের মতো সফিসটিকেটেড বই বুঝা সম্ভব নয়।
প্রত্যেকটা মুসলিম বাঙালির এই বইটা পড়া উচিৎ। এই বইটা ২০২৪ এ পড়া শ্রেষ্ঠ বইগুলোর একটা।
বইয়ের শুরুতে বলা হয়েছে লেখিকা '' মুসলিম জাতির আদি ইতিহাসের স্বরূপ সন্ধানের প্রয়াস চালান"। এতে করে আমার ধারনা ছিল, হয়তো কুরআন থেকে বনী ইসরাইলদের কিছু ধারাবাহিক ঘটনার বর্ণনা নিয়ে এই বই লেখা। অধিকাংশ ঘটনাই জানতাম বলে, এই বই থেকে তেমন কিছু আশাও করি নাই। কয়েক পৃষ্ঠা পরেই প্রথম ধাক্কা খেলাম। মুসা (আঃ) এর লাঠি থেকে সাপ হওয়ার ঘটনা দেখে জাদুকররা ঈমান আনে। এই ঘটনা সবারই জানা। কিন্তু এখানে লেখিকা প্রশ্ন করেছেন - ঈমান আনলে প্রাণ হারাতে হবে, এটা জানা সত্ত্বেও জাদুকরেরা কেন ঈমান এনেছিল? লেখিকা নিজেই এর উত্তর দিচ্ছেন - "এর কারণ একটাই - জ্ঞান। জাদুবিদ্যায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বলেই তারা বুঝতে পেরেছিল, মুসা (আঃ) এই কর্মকাণ্ড কোন জাদু কিংবা দৃষ্টির কোন ভ্রান্তি নয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থেই লাঠিটি সাপে পরিণত হয়েছে, যা কোন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব নয়।" আমার অবস্থা তখন ''এভাবে তো ভেবে দেখিনি''। এবং এরপরে বনী ইসরাইলে এত নবী রসূল আসা সত্ত্বেও কিভাবে বার বার আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে, তার ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যাবে। কুরআনে যেহেতু কোন ধারাবিক বর্ণনা নেই, বলার অপেক্ষা রাখে না এতে কুরআন বুঝতে বেশ কাজে দিবে। এবং প্রতিবার লেখিকা আমাদের দেখাচ্ছেন যে, বনি ইসরাইলেরা যে কাজ করে আল্লাহর শাস্তি পেয়েছি, বর্তমান মুসলমানরাও সেই একই পথে হাঁটছে। একপর্যায়ে বনি ইসরাইলে আসেন হজরত ঈসা (আঃ)। ঈসা (আঃ) শুধু ইসরাইলিদের মধ্যে দাওয়াত দিয়েছেন এবং তার শিষ্যদের অ-ইয়াহুদি এলাকায় যেতে নিষেধ করলেও, তখনকার চার্চ আর কিছু আবেগি অনুসারীর কল্যাণে ঈসা (আঃ) এর মূল শিক্ষা থেকে বিকৃত হয়ে আলাদা ধর্ম বিশ্বাসে পরিণত হয়। বাইবেলে এত বিরোধপূর্ণ কথা আছে যে, মানুষ যেন চার্চের অনুসারী থাকে, তার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে এক পর্যায়ে বাইবেল রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। এখনো খ্রিস্টানরা ট্রিনিটি, আদি পাপ আর ঈশ্বর পুত্রে বিশ্বাস করে, তারা তাদের ধর্মীয় বই পড়ে দেখে না, তাতে কি আছে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিণত হয়েছে যিশুর প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে। আজ মুসলিমদের ঘরে ঘরে কুরআন আছে, কিন্তু তারা জানে না এখানে কি আছে বা কি তারা শিখবে। তেমনি ভাবে মুসলিমদেরও আরেক দল এই আবেগ দিয়ে ধর্ম বুঝে শিরক, বেদআতে পড়ে আছে। চার্চের মত ব্যক্তির অনুসারী হয়ে আছে। অন্যদিকে ইয়াহুদিরা যুগ যুগ ধরে তাদের উদ্ধারকর্তায় আশায় ছিল, যখন সেই নবীজি(সাঃ) আসলেন, তারা চিনেও না চিনার ভান ধরল। আল্লাহ তাআলা বলেন - "যাদের আমি কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে তাদের সন্তানদের। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনেশুনে সত্যকে গোপন করে (সুরা বাকারা ১৪৬)"। আজ মুসলমানরা হালাল হারাম জানে। কিন্তু তারপরও সেই জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তার কোন আমল নেই।
একজন মুসলিমকে দৈনিক কমপক্ষে ১৭ রাকাত নামাজে ১৭ বার সুরা ফাতিহা পড়তে হয়। সেই সুরার শেষে আশ্রয় চাওয়া হয় আল মাগদুবি আলাইহিম ( যাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, ইয়াহুদি ) এবং আদ-দল্লিন (যারা পথভ্রষ্ট, খ্রিস্টান) দের কাছ থেকে। ইয়াহুদি আর খ্রিস্টানদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয়তো আমাদের নেই। কিন্তু তারা যে কাজ করে ইসলাম থেকে দুরে সরে গেছে, আমরাও সেই একই পথে হাঁটছি। বইয়ের শেষ অংশে লেখিকা বলছেন - " আমার এখানে যত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে, তারা সবাই নিজ উদ্যোগে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে, তারপর ইসলাম গ্রহন করে, এমন কখনো শুনিনি যে, মুসলিম প্রতিবেশী, কলিগ কিংবা ক্লাসমেটদের দেখে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।... অথচ আগে কি এমন ছিল? সবসময় মুসলিমদের চরিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করত।"
আমার মনে হয় সবারই এই বই একবার হলেও পড়া উচিত। " পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই "। হামিদা মুবাশ্বেরার লেখা "শিকড়ের সন্ধানে" এরকমই একটা বই।
ইসরাইল ফিলিস্তিনের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে লেখা বই খুঁজতে গিয়ে এই বইটা পেলাম। গুডরিডস -রকমারি দুই জায়গায়ি রেটিং দেখে এই বই পড়া শুরু করেছি। বইয়ের ভালো দিক হচ্ছে, লেখক ভালভাবে সিকুয়েন্স মেইনটেইন করতে পেরেছে, ইনফরমেটিভ, এবং পুরো বইটাই ছোটো ছোটো চ্যাপ্টারে ভাগ করা।
মিডল গ্রাউন্ড হচ্ছে, বইটা পুরোপুরি বায়াসড। ইতিহাসের বই যেমন নিরপেক্ষ পড়তে চাই, সেরকম না। হতে পারে লেখক ইচ্ছা করেই ঢালাওভাবে মুসলিমদেরকে সুপিরিয়র, বাকিদের ইনফিরিয়্র করে লিখেছেন, তাই এটাকে খারাপ দিক বলতে পারছি না।
খারাপ দিক হচ্ছে, বইয়ের বেশিরভাগ রেফারেন্সই য়ুটিউব চ্যানেল, এই ব্যাপারটা একদমই ভালো লাগেনি। একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলো 'সার্কুলার রিজনিং', খুব এক্সপ্লেইবল কিছু বলেন নাই। ১১৪ নাম্বার পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন, শয়তান আমাদের রক্তস্রোতে ঢুকে স্নায়ুতে গুতা দেয়। তখন মানুষের ব্ল্যাক ম্যাজিকসহ আরোও নানা কু-ইচ্ছা হয়। রোজা রাখলে শরীর খাবার দাবার পায় না, আর খাবারের অভাবে রক্তনালী শুকিয়ে যায়। তাই শয়তান চলতে পারে না। খুব হেসেছি এতটুকু পড়ে। রক্তনালী শুকিয়ে / সরু হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ atherosclerosis. আর রোজা রাখলে atherosclerosis এর রিস্ক কমে। এখানে পুরোপুরি উল্টা লিখে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন সেটা বুঝতে পারিনি।
অনেক দিন পর একটা বই পড়ে সত্যিকার অর্থে তৃপ্ত হলাম। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর লেখা এই বইটি পড়ে এই বিষয়ক অনন্য বই, গবেষনাপত্র, ডকুমেন্টারি বা লেখিকা যেসব রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন ওগুলো নিয়ে স্টাডি করার জন্য এক তীব্র আকর্ষণ অনুভব করছি। এই বইটি পড়ার পর এখন নতুন ভাবে ইসলামকে উপলব্ধি করতে পারছি। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা।
"শিকড়ের সন্ধানে" পড়ার শুরুতে ভেবেছিলাম এটি বোধহয় ইসলামের ইতিহাসের উপর লেখা কোন গ্রন্থ, যেখানে লেখিকা ইব্রাহিমিয়ো তিন ধর্মের ইতিহাস নিয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা করবেন। হ্যা এই বইয়ের প্রধান উপাদান অবশ্যই ইতিহাস, যেরকম ভেবেছিলাম সেরকমই বনি ইসরাইলের ইতিহাস থেকেই এই বইয়ের শুরু, কিন্তু ইতিহাস বর্ননার পাশাপাশি লেখিকা ঐসব ঐতিহাসিক ঘটনার ধর্মীয় গুরুত্ব নিয়েও সমানতালে আলোচনা করেছেন,বিভিন্ন রেফারেন্স ব্যবহার করে বিষয়টির সত্যতা তুলে ধরেছেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে কুরআনের আয়াত থেকে শুরু করে বাইবেলের ভার্স উল্ল্যেখ করেছেন। ইব্রাহিমিয়ো ধর্মগুলো নিয়ে স্ট্রং ভাবে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের আলাপ পেড়েছেন। তৎকালীন আল্লাহ মনোনিত জাতি বনি ইসরায়েল কিভাবে তাদের উপর প্রেরিত কিতাবের সত্য বানী গোপন এবং বিকৃত করে একটি বংশ কেন্দ্রীক আজকের ইহুদীতে পরিনত হয়ে অভিশপ্ত হলো,কিভাবে হযরত ইসা (আ) বা যিশুর শিক্ষা ভুলে গিয়ে বিকৃত করে তার উম্মতরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেলো, কিভাবে এক উম্মাহ তিন ভাগে বিভক্ত হলো - এসবের চমৎকার বিবরণ লেখিকা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এই বইতে। বইটি যদিও বাংলায় লেখা কিন্তু আমি চাই বইটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বের ইব্রাহিমিয়ো ধর্মগুলো যারা চর্চা করে তাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।
মুসলিম কারা? জন্মসূত্রে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই কি তাকে মুসলিম বলতে হবে? যে কারনে ইহুদীরা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত এবং যে কারনে খ্রিস্টানরা পথভ্রষ্ট, বর্তমানের মুসলিমদের একটি অংশও কি সেই একই কাজে লিপ্ত না? এর থেকে প্রতিকার পেতেই কি আমরা সুরা ফাতিহায় বর্নিত দোয়াটি পড়ে থাকিনা? উত্তর অবশ্যই হ্যা। লেখিকার বর্ননায় আমরা দেখতে পাই একজন মুসলিম��ে দৈনিক কমপক্ষে ফরয ১৭ রাকাত নামাজে ১৭ বার সুরা ফাতিহা পড়তে হয়। সেই সুরার শেষে আশ্রয় চাওয়া হয় "আল মাগদুবি আলাইহিম" যার অর্থ যাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ (ইহুদি ) এবং আদ-দল্লিন যার অর্থ যারা পথভ্রষ্ট, (খ্রিস্টান) দের কাছ থেকে। অর্থাৎ যেই কারনে ইহুদিরা আজকে ইহুদি এবং যেই কারনে খ্রিস্টানরা আজকে খ্রিস্টান সেই একই কারন যাতে আমাদেরকে (যারা বর্তমান সময়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী অর্থাৎ মুসলিম) গ্রাস করতে না পারে এবং আমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না করতে পারে। নামাজে তো সব সময় সুরা ফাতিহা পড়ি কিন্তু এইভাবে কখনো বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারিনি। এইভাবে অনেক জায়গায় কুরআনের আয়াত রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামের সত্যতা সমন্ধে লেখিকা আমার জ্ঞান চক্ষুকে আরো বেশি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই উপলব্ধ জ্ঞান দেওয়ার জন্য লেখিকাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের উচিত বুঝে বুঝে এবং অর্থসহকারে কুরআন তিলওয়াত করা, সবথেকে বেশি ভালো হয় আরবি ভাষা শিক্ষালাভ করা, লেখিকা আরবি ভাষা শিক্ষার উপর বিশেষভাবে জোড় দিয়েছেন। আমরা যদি আরবি ভাষা শিখে তারপর কুরআন শরীফ পড়ি তাহলে এর অলৌকিক ভাষাশৈলীর ব্যাপারটা আমার আরো বেশি ভালোমতো উপলব্ধি করতে পারবো এবং এই উপলব্ধ জ্ঞানই আমাদেরকে কুরআন এবং ইসলামের প্রতি আরো বেশি দৃড় করবে।
এই বইতে মূল যেই বিষয়গুলো লেখিকা ফুটিয়ে তুলেছেন তা হলোঃ ১. ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পরিচয়, ইসলামের সাথে এর সম্পর্ক। ২. কুরআনের সুবিশাল অংশ যা নিয়ে কথা বলে তা জানা এবং বোঝা। ৩. ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার ধর্মীয় দাবি যে ভিত্তিহীন তা বোঝা।
বনি ইসরায়েলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব কম ভাষায় কিন্তু বিশদ ভাবে ধারাবাহিক আলোচনা উঠে এসেছে এই বইটিতে। সেইন্ট পল কিভাবে হযরত ইসা (আ) এর শিক্ষা বিকৃত করে আজকের খ্রিস্ট ধর্মের জনকে পরিনত হলেন এবং খ্রিস্ট ধর্মের এই বিকৃতির পিছনে নাইসিয়া পরিষদের ভূমিকা কিরকম ছিলো এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন লেখিকা। সহজ ভাষায় খ্রিস্ট ধর্মের অসাড়তা এবং পোপ জাজকরা কিভাবে মানুষদের যুগের পর যুগ ধোকা দিয়ে চলেছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে এই বইটিতে। মূল কথা এই বইয়ের প্রধান বিষয়বস্তু হলোঃ আহলে কিতাবদের (ইহুদি, খ্রিস্টান) সাথে আমাদের সম্পর্ক কী তা জানতে,তারা কিভাবে অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট হলো সেই ইতিহাস জানতে এবং তারা যেই কারনে আল্লাহর মনোযোগ থেকে সড়ে গেলো সেসবের কতোটা আজ আমরা ধারণ করছি এবং এর প্রতিকার কি সেসব বিষয়ে জানতে বইটি উৎসাহী পাঠকদের সাহায্য করবে।
লেখিকা এই বইয়ে ড. লরেন্স ব্রাউনের অনেক রেফারেন্স টেনেছেন।তাঁর ইসলাম গ্রহণের কাহিনির একটা অংশ পড়ে লেখিকার খুব কষ্ট লেগেছিল। লেখিকা এই বইতে সেই ঘটনা উল্ল্যেখ করেছেন। কি ছিলো সেই ঘটনা? ড. লরেন্সের ভাষ্যে 'সম্ভাব্য সত্য ধর্মের লিস্টে ইসলামকে আমি সবার শেষে রেখেছিলাম, তা ছাড়া বাদবাকি সব ধর্মই আমি ঘেঁটে দেখেছি।' কেন? আমার এখানে যত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে, তারা সবাই নিজ উদ্যোগে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে, তারপর ইসলাম গ্রহণ করে। এমন কখনো শুনিনি যে, মুসলিম প্রতিবেশী, কলিগ কিংবা ক্লাসমেটদের দেখে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।' এই ঘটনার শেষে লেখিকা বলেছেন তিনি যত মানুষের ইসলাম গ্রহণের কাহিনি পড়েছেন, সবগুলো এমনই ছিল। অথচ আগে কি এমন ছিল? সবসময় মুসলিমদের চরিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করত। এই ঘটনাটি পড়ার পর পাঠক হিসেবে আমার মনে হলো,সত্যিই তো আমরা তো এমন কাজ করিনা যার কারনে আমাকে দেখে আমার অমুসলিম বন্ধুটি ইসলাম গ্রহণ করবে। আজকে আমাদের মুসলিমদের যে অধপতন এর জন্য কি আমাদের আচরণই দায়ী নয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করার তৈফিক দিক।
পরিশেষে বলতে চাই, সত্য সন্ধানী সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম বা সংশয়বাদী তাদের জীবনে একবার হলেও এই বইটি পড়া উচিত। এই বইটি তাদের চিন্তার খোরাক যোগাবে।
পবিত্র কুরআন শরিফের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বনী ইসরাইল এর কথা। আমরা সারা দিনে অসংখ্যবার সূরা ফাতিহা তিলওয়াত করি, এতেও রয়েছে তাদের মত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা। কীভাবে বনী ইসরাইল থেকে ইহুদী নামকরণ হল? কীভাবে খ্রিষ্টান ধর্ম বনী ইসরাইল থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য এমনভাবে উপস্থাপিত হতে লাগল? কেন ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করে নবীদের হত্যা করার মত আস্পর্ধা দেখিয়েছিল? ঈসা আঃ এর ঊর্দ্ধারোহণ সম্পর্কে ইহুদী, খ্রিষ্টান আর মুসলিমদের বিশ্বাস কি? কীভাবে এক উম্মাহ থেকে দুই ভাগে ও তারপর তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল? এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর রয়েছে "শিকড়ের সন্ধানে" নামক এই বইটিতে। ইহুদীরা কেন ফিলিস্তিনকে নিজেদের বলে দাবি করে? তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক তা বইয়ের লেখিকা যথেষ্ট তথ্য ও তথ্যের রেফারেন্সের সমাবেশ ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। বইয়ে ইবরাহিম আঃ এর পরবর্তী যুগের বেশ কয়েকজন নবীদের সম্পর্কে জানানো হয়েছে। বইয়ের নাম শিকড়ের সন্ধানে হওয়ার মূল কারণ হয়ত এজন্য যে, আমাদের মতোই একসময় বনী ইসরাইল ছিল আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণকারী। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পরে তারা অনেকেই কুফুরিতে লিপ্ত হয়েছিল। ঈসা আঃ এর শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মের ত্রিত্ববাদি হয়ে যাওয়া, যেখানে তাদের গ্রন্থ পড়লেই এর অসারতা পাওয়া যায়। সেইন্ট পৌলের বানানো মনগড়া কাহিনিতে নিজেদেরকে জড়িয়ে ধরে বিশুদ্ধ তাওহিদের পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার এক লম্বা ঘটনা লেখিকা তার বইয়ে দেখিয়েছেন। কেন অসংখ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মে অনড়? এর মূল কারণ হচ্ছে আগে তাদেরকে বাইবেল নিজেদের কাছে রাখতেই দেয়া হত না, যার ফলে তারা তাদের নিজেদের ধর্ম কি আছে সেটাই জানত না! অপরদিকে নাস্তিকরা খ্রিষ্টান ধর্মকে ব্যবহার করে ইসলাম ধর্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে, কোনটি বিশদ্ধ তাওহীদ আর কোনটি শিরকে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া ত্রিত্ববাদি আকিদা এর মাঝে পার্থক্য করতে না পারার দরুনই হয়ত এমনটা করে থাকে। যেখানে ইসলাম দ্বিনি জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দেয়, চিন্তা করতে বলে। সেখানে খ্রিষ্টান মানুষকে অন্ধবিশ্বাস সেখায় এই দুয়ের মাঝে পার্থক্য না করতে পারাটা বড় রকমের বোকামি! লেখিকা ধর্মান্তরিত মুসলিম চিকিৎসক ও লেখক ড. লরেন্স ব্রাউনের MisGod'ed বই থেকে অনেক রেফারেন্স নিয়েছেন। লেখিকা বইটির পিছনে মাশাআল্লাহ্ যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন, যা পড়লেই বুঝা যায় এছাড়া বইয়ের সম্পাদনা ও শারয়ি নিরীক্ষণও করেছেন বড় বড় মানুষেরা। বইয়ের সব কিছু এক ছোট বুক রিভিউতে তুলে আনা অসম্ভবপ্রায়। তবে বইটি যেকোনো সাধারণ মুসলিমের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে বলা যায় বিশেষত কুরআন বুঝার সুবিধার্থে।
বনী ইসরাইল এবং খ্রিষ্টানদের নিয়ে কুরআনে আলোচিত আয়াত গুলো ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। লেখক একটা আয়াতের সাথে আরেকটা আয়াতের সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি, আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি তা দেখিয়েছেন। সহজ, সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দর আলোচনা।
Apparently 0 star. . লেখিকা ইহুদী, খ্রিস্টানদের তুলোধুনো করেছেন এই বইয়ে। রেফারেন্স গুলোর ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। ম্যাক্সিমাম রেফারেন্স ই ইউটিউব থেকে নেওয়া। লেখিকা এক জায়গায় দাবি করেছেন মুসা (আ) ফেরাউন কে *ইসলামের* দাওয়াত দিয়েছিলেন। বস্তুত ইসলাম যে মুসা (আ) এর সময়ে ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো এর ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। সেইম কথা জেসাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। . লেখিকা বইটা লেখার জন্য একতরফা লেখা গুলোই পড়েছেন। ইতিহাস বিষয়ক কিছু বা ইহুদী / খ্রিস্টান দের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কিছু পড়েছেন বলে মনে হয় নি। লেখিকা এক জায়গায় দাবি করেছেন : " ইহুদী রা খুব করে চাচ্ছিলো ইসলামের সাথে যেন ওদের মিল অনেক বেশি পরিমাণে থাকে, বস্তুত কিবলা পরিবর্তন ওদেত উৎকণ্ঠার ই বহিঃপ্রকাশ " লেখিকার এই রকম পারসোনাল ফ্যাক্ট / হাইপোথিসিস গুলো দিয়ে বই ঠাসা। তিনি এইসব ফ্যাক্ট কোথা থেকে পেয়েছেন তার কোন রেফারেন্স নেই। থাকলেও সবই ইউটিউবের। -_- লেখিকা ইহুদী / খ্রিস্টান দেরকে ভৎসর্না করেছেন তারা কেনো মদ্যপান করে, সুদের কারবার করে,বাট মুসলিম রা ও যে এই পাপাচারে লিপ্ত লেখিকা সেটি এড়িয়ে গেছেন। Last of All, *Comparative Religion * এর Comparative বানান ঠিক নেই। লেখিকার জ্ঞান নিয়ে আমি সন্দীহান।
It was a good read. Provided stories from Quran in chronological order. But I felt like in order to understand this, first you need to read quran (in your native languate).
সমসাময়িক সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বই। প্রতিটি মুসলিম ভাইবোন দের পড়া উচিত বলে আমি মনে করছি। সবার বুক শেলফের মেজর প্রয়োরিটি হওয়া উচিত বইটি। ইহুদিদের ইতিহাস যারা জানেন না, কুরআনের ঘটনা গুলো যারা আগাগোড়া বোধগম্য করতে পারেন না তারা বইটি পড়বেন। . লেখিকা মা শা আল্লাহ কুরআনের ঘটনাগুলো থেকে আমরা কি শিখব, সেই পয়েন্টগুলো বের করে এনেছেন। লেখিকার কলমে রাব্ব বারাকাহ দান করুন আমিন। বইটি পড়তে গিয়ে আপনার মনে হবে “বড্ড দেরি করে ফেলেছি পড়তে!” ইন শা আল্লাহ ।
খুব সহজে আহলে কিতাবদের সাথে সম্পর্ক কী তা জানতে,তাদের পথভ্রষ্ট হবার ইতিহাস,সেসবের কতোটা আজ আমরা ধারণ করছি সেসব জানতে বইটি অবশ্যপাঠ্য। এ বিষয়ে এত্তো সহজ বই অন্য ভাষায় ও নেই বোধহয়।
🔳আচ্ছা! এমন একটি বই হলে নিশ্চয়ই অনেক ভালো হয়, যে বইয়ে থাকবে মুসলিম জাতির আদি ইতিহাস, কিভাবে বনি-ইসরাইল অভিশপ্ত হয়ে ইহুদিতে রূপান্তরিত হলো, আর ইহুদি থেকে নাসারা; অর্থাৎ খ্রিষ্টান, তারপর আবার সেই দুই জাতি থেকে তিন জাতি, অর্থাৎ সর্বশেষ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের উৎপত্তির ইতিহাস। অর্থাৎ এক উম্মাহ'র দুই উম্মাহতে বিভক্ত হওয়া, আর দুই উম্মাহ থেকে তিন উম্মাহতে বিভক্ত হওয়ার ইতিহাস!
🔳আব্রাহামিক তিনটি ধর্মমত বিদ্যমান। খ্রিষ্টান, ইহুদি এবং ইসলাম। কিন্তু, ইহুদি এবং খ্রিষ্টীয় মত অনুযায়ী 'আব্রাহাম' বা 'ইবরাহিম আলাইহিসালাম' এর অবস্থান বাতিল করে দেয় আল কুরআন। যেখানে ইবরাহিম আলাইহিসালামকে উল্লেখ করা হয়েছে 'হানিফ'; অর্থাৎ আল্লাহ'র একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে। যদি আমরা আমাদের শিকড়ের দিকে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখবো, পৃথিবীতে যতো নবি-রাসুল এসেছেন, সবাইই ছিলেন মুসলিম। নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় দিতেন তাঁরা। 'শিকড়ের সন্ধানে' বইয়ের লেখিকা বোন হামিদা মুবাশ্বেরা কুরআনের সেই সূত্র ধরেই মুসলিম জাতির আদি ইতিহাসের স্বরূপ সন্ধানে প্রয়াস চালান।
🔳আমরা যখন নিজেদের প্রকৃত আত্মপরিচয় লাভ করতে সক্ষম হই, মূলত তখনি আমরা আমাদের নিজেদের জীবনের গন্তব্য, উদ্দেশ্য এবং রদবদল সবকিছুকেই সহজভাবে আয়ত্তাধীন করতে পারি। কেন-ই বা আমরা মুসলিম? আমাদের মুসলিম পরিচয়ের সূত্রটা কী? কিভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা নিজেদের পরিচয় দিতেন? এ সবকিছুর উপরই নির্ভর করছে আমাদের আত্মপরিচয়।
🔷আল-কুরআনের এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বনি-ইসরাইলের ইতিহাস। বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে এই ইতিহাসগুলো ভাবধারার প্রয়োজনে। বোন হামিদা মুবাশ্বেরা সেসব ঘটনাগুলোকে একত্র করেছেন। আর উম্মাহ'র ইতিহাসকে এক সুতোয় গেঁথেছেন সুনিপুণভাবে। আমরা কুরআন পড়তে গিয়ে মাঝেমধ্যে খেই হারিয়ে ফেলি। হয়তো ভাবি, এখানে এই আয়াতের যৌক্তিকতা কী? এটা দিয়ে কি বুঝাচ্ছে? বিশেষ করে, নতুন কেউ অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত শুরু করলে অর্থ দুর্বোধ্য ঠেকে বনি-ইসরাইলের কাহিনীগুলো পড়তে যেয়ে। এই বইটি হতে পারে এক্ষেত্রে চমৎকার একটি সমাধান।
🔳সুরা ফাতিহায় শেষেরদিকে المغضوب عليهم (মাগদুবি আ'লাইহিম) এবং الضالين (আদ-দাল্লীন) পড়ি। এখানে 'অভিশপ্ত' এবং 'পথভ্রষ্ট' হওয়া থেকে আমরা মুক্তি চেয়ে থাকি। কিন্তু কারা এই 'অভিশপ্ত' এবং 'পথভ্রষ্ট'? সহিহ তাখরিজু শারহিল আকিদাতিত তাহাবিয়া: ৫৩১ এবং সাহিহাহ: ৩২৬৩ থেকে আমরা জানতে পারি, এখানে 'অভিশপ্ত' হচ্ছে ইহুদি জাতি এবং 'পথভ্রষ্ট' হচ্ছে খ্রিষ্টান জাতি। আমরা এদের কাছ থেকে আশ্রয় চাই। কিন্তু একইসাথে আমাদের জেনে নেয়া উচিৎ এদেরকে এমনটি বলার কারণ, কিংবা তাদের অবাধ্যতার ইতিহাস। যে ইতিহাস উঠে এসেছে 'শিকড়ের সন্ধান' বইয়ে। যা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজেদেরকে তাদের মতো হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি।
⚫️কী-পয়েন্টস: ১) ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পরিচয়, ইসলামের সাথে এর সম্পর্ক।
২)কুরআনের সুবিশাল অংশ যা নিয়ে কথা বলে তা জানা এবং বোঝা।
৩)ই*স*রা*ই*ল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার ধর্মীয় দাবি যে ভিত্তিহীন তা বোঝা।
🔵লেখিকা পরিচিতি: হামিদা মুবাশ্বেরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি করছেন। এর আগে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (IIUM) থেকে ইসলামিক ফিনান্সে মাস্টার্স করেছেন। ব্যাচেলর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের IBA থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় (IOU) থেকে। সেখানে ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন।
🔴শারঈ নিরীক্ষণ: আব্দুল্লাহ মাহমুদ, আবুল হাসনাত, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মুরতাযা
⚫️সম্পাদনা ও বাইবেলের বিভিন্ন উদ্বৃতি ক্রসচেক: মুশফিকুর রহমান মিনার।
আল্লাহ কুরআনের অসংখ্য জায়গায় বনী ইসরাঈলদের ঘটনা সমুহ বর্ণনা করেছেন এবং তা থেকে আমাদের শিক্ষা ��িতে বলেছেন। কুরআন বাংলা পড়তে গিয়ে এসব জায়গায় এসে খেই হারিয়ে ফেলি। এক নবীর ঘটনার সাথে অপর নবীর ঘটনা অথবা একই নবীর ভিন্নভিন্ন ঘটনাসমুহের মধ্যকার ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে পারতাম না কিছুতেই। তখন মনে হয়, নবিদের এসমস্ত ঘটনা যদি ধারাবাহিক বর্ণ্না থাকত, তবে সেসব বুঝতে আরও বেশ সুবিধা হত। কিন্তু, কুরআনের গঠনই এমন, এটা মানবসৃষ্ট কোন বইয়ের মত না।
শিকড়ের সন্ধানে বইটা এক্স্যাক্টলি এই জিনিসটা নিয়েই। আদিপিতা ইব্রাহীম (আঃ) থেকে ২ জন পুত্র, ১ম পুত্রের (ইসহাক) বংশ থেকে সমগ্র বনী ইসরাইল, আর অপর পুত্রের (ইসমাইল) বংশ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমন। কালের সুদীর্ঘ পরিক্রমায় এক উম্মাহ বিভক্ত হয়ে পড়ে ৩ টি বৃহৎ উম্মাহয়। কালের এই সুদীর্ঘ যাত্রার সামগ্রিক ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে এই বইতে। শাম থেকে জন্ম নেয়া বনী ঈসরাইলরা কি করে মিশরে চলে গেলেন, এরপর মুসাকে সাথে নিয়ে বনী ঈসরাইলীদের দীর্ঘসময় উদ্দেশ্যহীন ঘুরাঘুরি, এরপর ক্রমান্বয়ে ইউশা ইবনে নুন, তালুত, দাউদ, সুলাইমান (আলাহিমুস সালাম) দের আগমন, বনী ইসরাইলীদের আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এরপর এল তাদের ক্রমান্বয়ে অধপতনের যুগ। আল্লাহর মনোনিত জাতি থেকে পদস্খলন, বনী ইসরাইলী থেকে তাদের ইহুদীতে রুপান্তর, মাঝখানে ঈসা (আঃ) এর আগমনের মাধ্যমে ইহুদী জাতি ২ টি ভাগে ভাগ হয়ে নতুন খ্রিষ্টধর্মের আগমন, ঈসা (আঃ) এর পরিনতির কিছুকাল পর সেন্ট পল নামক এক বিভ্রান্ত লোকের হাতে আজকের বিভ্রান্ত খ্রিষ্টধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বাইবেলকে বিকৃত করে ত্রিত্ববাদের ধারনা অনুপ্রবেশ , এরপর মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনে মুসলিম উম্মাহের সুচনা। মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যাপারে ইহুদী এবং খ্রিষ্টান উভয়ের ধর্মগ্রন্থে ভবিষ্যতবাণী থাকা এবং ইহুদীরা স্পষ্টভাবে তাঁকে চিনতে পারার পরও তাঁকে নিয়ে বিরোধিতা করার পটভুমিটাও জানা যায় এই বইটি পড়ে। দুঃখের ব্যাপার হল, যেই অবাধ্যতার কারণে বনী ঈসরাইলীর জাতির এই অধপতন, আমরা মুসলিম উম্মাহও কিন্তু সেই একই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করছি। অথচ, প্রতি ফরজ রাকাতেই আমরা 'গজবপ্রাপ্ত'(ইহুদি) এবং 'পথভ্রষ্ট'(নাসারা) হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। নিজেদের সিরাতুল মুস্তাকিম এর উপর অটল রাখতে তাদের ভুলগুলো আমাদের জানতে হবে এবং তাথেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এসবগুলো বিষয় নিয়েই এই অবশ্যপাঠ্য বইটি।
* ইসরাইল ফিলিস্তিনের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে লেখা বই খুঁজতে গিয়ে এই বইটা পেলাম। গুডরিডস -রকমারি দুই জায়গায়ি রেটিং দেখে এই বই পড়া শুরু করেছিলাম। বইয়ের ভালো দিক হচ্ছে, লেখক ভালভাবে সিকুয়েন্স মেইনটেইন করতে পেরেছে, ইনফরমেটিভ, এবং পুরো বইটাই ছোটো ছোটো চ্যাপ্টারে ভাগ করা।
Know Thyser সক্রেটিসের বিখ্যাত একটি উক্তি। সক্রেটিস নিজেকে জানতে বলেছেন। নিজেকে জানতে পারার মধ্যেই সক্রেটিস মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজেছেন। সক্রেটিসের এই দর্শন আদতে কানায় কানায় সত্য। মানবজীবন ঠিক তখনই পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে যখন মানুষ নিজেকে জানতে শুরু করে ও আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে প্রলুব্ধ হয়। নিজেকে উদ্ঘাটন করতে পারলেই ঠিক করে ফেলা যায় জীবনের দর্শন। জীবনের গন্তব্য, উদ্দেশ্য এবং রদবদল, সবকিছু সহজ হয়ে যায় যদি নিজেকে জানা যায়। যদি একেবারে শেকড়ে ফিরে চেনা যায় নিজের প্রকৃতি
'মুসলমান হিসেবে এই ব্যাপারটা আরও বিশদভাবে সত্য। আমরা যদি নিজেদের আত্মপরিচয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রদত্ত গৌরবময় মর্যাদা মুসলমানিত্বের সঠিক মর্মার্থই বুঝতে না পারি, তাহলে কীভাবে নির্ধারণ করব নিজেদের গন্তব্য এবং উদ্দেশ্য? কেন-ই বা আমরা মুসলিম, অন্যরা কেন নয়, কীভাবে আমরা মুসলিম হলাম, আমাদের ঠিক আগে, আল্লাহর একাত্মবাদে যারা আসীন ছিলেন, তারা কোন পরিচয়ে ধন্য হয়েছেন, তাদের সাথে আমাদের যোগসাজশ কোথায়? সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্য কী কী -এসব জানতে পারাই হলো আমাদের আত্মপরিচয় সন্ধানের প্রথম সবক।
'শেকড়ের সন্ধানে' বইতে লেখিকা হামিদা মুবাশ্বরা ঠিক আমাদের জন্য এই কাজটিই করেছেন। তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন অতীতে— একেবারে গোড়ায়, যেখান থেকে আমাদের আত্মপরিচিতির শুরু। কত হাওয়া বদল করে, কত বাঁক পেরিয়ে, কত সময় পার করে, কত ঘাত-প্রতিঘাতে আমরা আমাদের শেষ পরিচয়, মুসলমান-এ এসে ঠেকেছি, সেই মহাযাত্রার রহস্যপানে লেখিকা আমাদের ভ্রমণ করিয়েছেন। লেখিকা কেবল আমাদের সোর্স থেকে আমাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা নিবারণ করাননি। তিনি আমাদের কখনো তাওরাতে, কখনো ইঞ্জিলে, আবার কখনো কুরআনে ডুব দিইয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে ঢুকে পড়েছেন বিশাল বিস্তৃত হাদিসশাস্ত্রের ভেতরেও। লেখিকার অন্বেষণ প্রক্রিয়া, জানার তীব্র আকাঙ্খা, সত্যকে আজলা ভরে তুলে আনার চঙ বেশ আশাজাগানিয়া। এ রকম একাডেমিক একটা বিষয়কে তিনি কীভাবে সাধারণ মানুষদের জন্যও উপযোগী করে ফেললেন তা ও বিস্ময় জাগানিয়া!
কুরআন পড়তে গেলে আমরা বনি ইসরাইলের অনেক কাহিনি পাই। এই বনি ইসরাইলের ইতিহাস জানলে আমরা বুঝতে পারবো কিভাবে আমরা এক উম্মাহ থেকে আমরা ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং মুসলিম— এই তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে গেলাম।
আমরা নিজেদের ইতিহাস পড়ে জানতে পারি, মুসলিমরা একসময় দোর্দণ্ডপ্রতাপের সাথে শতাব্দীর পর শতাব্দী এই বিশ্ব শাসন করে গেছে। অথচ এখন সবখানে তারা নিদারুণভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে- এটা দেখতেই যেন আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এই যে একটা চরম সম্মানজনক অবস্থা থেকে লাঞ্ছনার চূড়ান্ত পর্যায়ে নেমে আসা, এটা বনি ইসরাইল ও মুসলিম উভয়ের সাথেই ঘটেছে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, ইতিহাসের ঘটনা-পরিক্রমাগুলো যদি আমরা একটা গ্রাফে উপস্থাপন করি, তাহলে দুটো জাতির অবস্থা পরিবর্তনের যে রুম দেখা যাবে—তার মধ্যে কোনটা বনি ইসরাইলের আর কোনটা মুসলিমের--তা আলাদা করাই দুষ্কর হয়ে পড়বে। অর্থাৎ আমরা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছি।
তাই বনি ইসরাইল সম্পর্কে জানার সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা হলো তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমাদের মাঝে তাদের কাণ্ডকীর্তি নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করার একটা প্রবণতা আছে। অথচ আমরা একবারও ভেবে দেখি না যে, অনুরূপ স্বভাব আমাদের মাঝেও আছে কি না কিংবা আমরাও তেমনটা করছি কি না। তাদের কাহিনি পড়লে আমরা বুঝতে পারব যে, আল্লাহর সাহায্য কোনো জাতির কেনা স্থায়ী সম্পত্তি নয় যে, চাইলেই আকাশ থেকে নেমে আসবে। এটা শর্তসাপেক্ষ, অর্জন করে নিতে হয়। তার মানে সিরিয়াতে, ফিলিস্তিনে কচুকাটা হওয়া নিষ্পাপ শিশুদের মুখ দেখে আল্লাহ কোথায়, আল্লাহ কেন এগুলো ঘটতে দিচ্ছেন—এসব প্রশ্ন অমূলক। এরপর থেকে আমরা অনুধাবন করব যে, এগুলো আমাদেরই কর্মফল, আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে অবস্থার পরিবর্তনে। তাই ঘুরেফিরে এই পুরো বই জুড়ে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করব—আমরা কি সেই সব স্বভাব ধারণ করছি, যার কারণে আল্লাহ বনি ইসরাইলের ওপর থেকে তাঁরই দেওয়া নিআমতসমূহ উঠিয়ে নিয়েছিলেন?
উপরের অংশটুকু বই থেকেই নেয়া। বইটিতে লেখিকা কুরআনে বর্ণিত বনি ইসরাইলের ঘটনাগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে বর্ণনা করেছেন। তাদের ভুলগুলোর সাথে বর্তমান মুসলিম উম্মাহর যে মিল সেগুলো এমনভাবে বলেছেন যে আপনার হৃদয় নাড়া দিবে। মুসলিম হি���েবে আমাদের বনি ইসরাইলের ইতিহাস টা জানা জরুরী আমাদের নিজেদের জন্য, কুরআন বোঝার জন্য।
মুসলিম হিসেবে জন্মের পর থেকে বড়দের, ইমামদের কাছ থেকে ইসলামের বিভিন্ন ইতিহাসই কমবেশি শোনা হয়েছে কিন্তু বিস্তারিত শোনা কিংবা পড়া হয়নি কখনোই। ভাবলাম বয়স তো গুড এনাফ হয়ে গেছে, এবার বিস্তারিত জানা যাক ইসলামের বিভিন্ন সময়ের ইতিহাসের ব্যাপারে।
ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ইতিহাস সম্পর্কিত বইয়ের মান নির্ভর করে লেখক/লেখিকার রিসার্চ এবং লেখার ধরণের ওপর। এই দুই দিকে লেখিকা ‘হামিদা মুবাশ্বেরা' ১০/১০ পেয়েছেন। বনি ইসরাইল গোত্রের জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান সময়ের ইসলাম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান - তিন ধর্মের ব্যাপারে বেশ ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। লেখিকার রিসার্চের মান উপলব্ধি করা যায় তার টেনে আনা বিভিন্ন রেফারেন্স এবং প্রমাণের নমুনা দেখেই। খুবই নিখুঁত লিখনের পাশাপাশি রয়েছে কোরআন, বাইবেল এবং অন্যান্য সোর্সের উল্লেখ্য।
বইয়ের একটা বিরাট অংশে বাইবেল, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের যুগের পর যুগে বিবর্তন এবং তাদের থেকে আমাদের ধর্ম কেনো উত্তম তা বিশ্লেষনসহ খুবই চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। সত্যি বলতে এত অল্প লেখায় এত দারুণভাবে কখনো এদের কাহিনি কোথাও শুনিনি/পড়িনি।
এত এত বছরের ইতিহাস, এত এত লেখা পাঠকের মাথায় যেনো ঘুরপাক না খায় সেটি নিশ্চিত করেছেন লেখিকা তার উপস্থাপনের মাধ্যমে। শিশুদের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার মতো সহজ ভাষা এবং খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন বইটিতে।
একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হিসেবে পাঠকদের নিজ আঙ্গুল দিয়ে চোখে দেখিয়ে দিয়েছেন মুসলিম হিসেবে আমাদের ভুলটা কোথায় হচ্ছে। আমরা পূর্বে করা জাতিদের ভুল থেকে কীভাবে শিক্ষা নিতে পারি তাও বলে দিয়েছেন সুন্দরভাবে। এক কথায়, অসাধারণ!
পরিশেষে, এই বইটি একটি ‘Eye Opener’ হয়ে রইবে অনেকের জন্য...হতে পারে জ্ঞানপিপাসু কারো কিংবা ইসলাম থেকে দূরে থাকা কোনো যুবকের জন্য। প্রত্যেকটি প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের জন্য ‘মাস্ট-রিড' বই মনে হয়েছে এক কথায়! 👌
কয়েকটা বইগ্রুপে খোঁজাখুঁজি করলাম এবং গুটিকয়েক বইয়ের সাজেশন নিয়ে বসলাম। প্রথমেই যে বইটার সাজেশন পেয়েছিলাম সেটিই হচ্ছে হামিদা মুবাশ্বেরা'র ‘শিকড়ের সন্ধানে', এবং এখন বই শেষ করার পর সাজেশনদাতা'রে মন থেকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে! 💖
[ বই রিভিউ করার অভিজ্ঞতা আগে নেই, ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]
ইসলাম, খ্রিষ্ট ও ইহুদি ধর্মের বেশ কিছু সামঞ্জস্য দেখা যায়। কিন্তু কেনো?? ধর্মগুলোর সংযোগ কোথায়??আমরা মুসলিমরা নামজে প্রতি রাকাতেই গযবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে থাকার কথা বলি (সূরা ফাতিহা, ৭ নং আয়াত)। এখানে মূলত গযবপ্রাপ্ত দ্বারা ইয়াহূদী ও পথভ্রষ্ট দ্বারা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কেনো তারা গযবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট ? লেখিকার বইটি লেখার প্রধান কারন কিছু কারন এর একটি হলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা এবং সাধারণ মানুষের জন্য কুরআন এর ঘটনাপ্রবাহ বোঝা সহজ করা।
শিকড়ের সন্ধানে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের সম্পর্ক ও ভিন্নতাসমূহ নিয়ে। এখানে ইবরাহিম আঃ (আব্রাহাম) থেকে ঈসা আঃ এবং মুহাম্মদ সাঃ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কীভাবে মূসা আঃ বনি ইসরাইল এর জন্য প্রেরিত হলেন, তাদের বার বার আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া, রোমান সাম্রাজ্যর কাছে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া, ঈসা আঃ কে অস্বীকার করা, দাউদ ও সুলাইমান এর শাসন আমল, Paul এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের যুগান্তকারী পরিবর্তন, মুহাম্মদ সাঃ কে চিনতে পারার পরও কেবল বংশমর্যাদার কারনে অস্বীকার করা ইত্যাদি ঘটনাসমূহ এর ধারণা পাওয়া যাবে এই বইতে।
শিকড়ের সন্ধানে বইয়ের আমার সবথেকে পছন্দের একটা ব্যাপার হলো এখানে প্রতিটি ঘটনা বিশেষ করে যেগুলি কুরআনে বর্ণিত সেগুলির শিক্ষা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে যে ব্যাপারটা আমার কাছে সবথেকে বিশিষ্ট মনে হয়েছে তা হলো তাদের পথভ্রষ্টতার কারন। সবথেকে বড় কারনটা হলো তারা বেশিরভাগই তাদের ধর্মগ্রন্থ পড়েন না। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে বর্তমানে বেশিরভাগ মুসলিমই কুরআন পড়েন না । এ কারনে মুসলিমরাও ধর্মের ব্যাপারে অজ্ঞ হয়ে পড়ছেন। তারা কেবলই স্কলারদের ফলো করেন। কিন্তু নিজ জ্ঞান এর বিকল্প কি কিছু হতে পারে? এছাড়াও বনি ইসরাইল করা বিভিন্ন ভূল ও কুরআন থেকে আমাদের জন্য বেশ কিছু শিক্ষা সহজভাবে বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে। (এখনে কেবল একটাই উল্লেখ করলাম বইতে অসংখ্য রয়েছে)
বর্তমান সময় সবারই এই বইটি কিংবা এরকম কোনো বই পড়া উচিৎ যাদের এ বিষয় ধারণা নেই।
Personal Rating: 10/10 ⭐
( বইটা প্রায় ২ বছর আগে কেনা হলেও তখন প্রথম ২০ পেজ পড়ে আর কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কেনো আগে পড়লাম না 😐 )
"আমাদের সরল পথ দেখান; সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয়, যাদের উপর আপনার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।" সূরা ফাতিহাতে আমরা আল্লাহর কাছে সরল পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য এবং পথভ্রষ্টদের পথে পরিচালিত না হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি। কিন্তু কারা সেই পথভ্রষ্ট এবং অভিশপ্ত জাতি?
মুসলিম হিসেবে আমরা গর্ববোধ করলেও আমরা আমাদের আত্মপরিচয় জানি না। আমরা জানি না আমাদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে। আমরা জানি না– কীভাবে আমরা মুসলিম হলাম, মুসলিম এবং অন্যদের সাথে পার্থক্য কী, কীভাবে এক উম্মাহ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো ইত্যাদি। নিজেদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে জানতে হলে বনি ইসরাল সম্পর্কে জানতে হবে। কুরআনের একটা বড় অংশ জুড়ে আল্লাহ তা'আলা বনি ইসরাইল নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু কারা সেই বনি ইসরাইল? সেজন্য ইবরাহিম আলাহিস সালাম সম্পর্কে জানা দরকার। যাকে বলা হয় 'Father of faith'। একেশ্বরবাদী তিনটি ধর্ম অর্থাৎ ইহুদি, খৃষ্টান এবং ইসলামে তিনি স্বীকৃতি এবং সম্মানিত। তিনি মুসলিম হলেও তাঁর বাবা ছিলে মূর্তিপূজক। ইবরাহিম আলাহিস সালামের দুইটি সন্তান– ইসমাইল আলাইহিস সালাম এবং ইসহাক আলাহিস সালাম; ইসহাক আলাহিস সালামের ছেলে হলেন ইয়াকুব (আ.), যাঁর আরেক নাম 'ইসরাইল'। বনি ইসরাইল মূলত ইয়াকুব আলাহিস সালামের বংশধর। এই বংশ থেকে আরো অসংখ্য নবি আসলেও ইসমাইল আলাহিস সালামের বংশ থেকে নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কোনো নবি আসেননি।
'শিকড়ের সন্ধ্যানে' বইটিতে লেখিকা আমাদের নিয়ে গিয়েছেন একদম অতীতে, একদম গোড়ায়, যেখান থেকে আমাদের আত্মপরিচয় শুরু। লেখিকা বেশ গুছিয়ে আলোচনা করেছেন বনি ইসরাল থেকে ইহুদি হয়ে যাওয়া এবং তাদের অবাধ্যতা থেকে শুরু করে শেষ নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের আগমন সম্পর্কে। এছাড়া ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় নিয়েও বলেছেন এবং দেখিয়েছেন নিজের আত্মপরিচয়, নিজের ধর্মগ্রন্থ না পড়ার কা���ণে মানুষ কীভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে।
"শিকড়ের সন্ধানে - হামিদা মুবাশ্বেরা" - নামটা শুনেই বোঝা যায় ইতিহাস উন্মোচনকারী ধরনের কোন বই। ঠিক তাই, ইসলাম, খ্রিষ্ট এবং ইহুদি - এই তিনটি ধর্মের ইতিহাস, শুরু (শিকড়) এবং এই সম্পর্কিত ঘটনাগুলো লেখিকা তুলে ধরেছেন। বিশ্বের প্রধান এই তিন ধর্মের মধ্যে মিল-অমিল, এবং যোগসূত্রগুলো খুবই স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে বইটি পড়ে। সেই সঙ্গে মিশর, ব্যাবিলন, জেরুজালেম, আরব, প্যালেস্টাইন এর অনেক প্রাচীন ইতিহাসও উন্মোচন হবে পাঠকের সামনে। তাছাড়া অনেক সত্যের সন্ধ্যান পাওয়া যাবে কিছু মিথ্যা কুসংস্কার দূরের মাধ্যমে।
বইটি পড়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে যা আমাদের মাথায় হয়তো আসে মাঝে মাঝে কিন্তু আমরা এড়িয়ে যাই। যেমন: - ইসলাম ধর্মের শুরু কখন? - মুহাম্মাদ এর আগের নবীরাও কি একই বার্তা নিয়ে এসেছিলেন? - আল্লাহর কাছে যদি একটি ধর্মেরই গ্রহনযোগ্যতা থাকে তাহলে পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন? এগুলো এলো কিভাবে? - ঈসা (আঃ) / যীশু (Jesus) থেকে খ্রীষ্টান ধর্ম এলো কিভাবে? - ইহুদীরা কারা? এদের ধর্ম এলো কখন এবং কিভাবে? - খ্রীস্টান ধর্মের মত ইহুদি ধর্মও কি কোন নবী থেকেই সৃষ্ট? - ইহুদি, খ্রীষ্টানদের সাথে কি আমাদের মিল আছে?
এরকম হাজারও প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এই বইতে; কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি উত্তর না পেলেও একটা ধারনা আসবে যা পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানের আগ্রহ যোগাবে। (ইনশাল্লাহ)
এইসকল প্রশ্নের পাশাপাশি আরও অনেক অনেক প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে, মাঝে মাঝে বিভ্রান্তও হয়ে যাই, কিন্তু তোয়াক্কা না করে অন্ধভাবে দিন কাটাই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের বুদ্ধি সত্য সন্ধ্যান করার জন্যেই দিয়েছেন। সত্য সন্ধানে আমাদের অনীহা নয়, বরং আগ্রহ থাকা জরুরী।
এই ছোট্ট আলোচনা একটা কথা দিয়ে ইতি টেনে দিই-
"ধর্ম কোন বংশগত পরিচয় নয়, বরং ধর্ম হচ্ছে সত্য জেনে বিশ্বাস আর কর্মের মধ্যে দিয়ে অর্জিত পরিচয়।"
কুরআনের অধিকাংশেরই বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে বনী ইসরাইল নামক এক জাতির কথা। আমরা কমবেশি সকলেই জানি বনী ইসরাইল কারা। ইবরাহীম (আ) এর দুই ছেলে: ইসমাঈল (আ) এবং ইসহাক (আ)। ইসহাক (আ) এর ছেলে ইয়াকুব (আ), যার অপর নাম ইসরাইল। তার বংশধররাই বনী ইসরাইল নামে পরিচিত। বইতে বনী ইসরাইলের ঘটনা শুরু থেকেই দেওয়া হয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত, বাইবেলের ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্ট, বিভিন্ন ভিডিও এবং বই কে রেফারেন্স আকারে ব্যবহার করা হয়েছে। কারা ছিল এই "Chosen People"? কেন তারা মনে করে জেরুজালেমে তাদের একচ্ছত্র অধিকার? আল্লাহ যাদেরকে ফেরাউনের মত অত্যাচারী শাসক থেকে রক্ষা করে লোহিত সাগর পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, কেন তারা কিছুদিন যেতেই গাভীপূজার মত শিরকে লিপ্ত হল? এই চরম অবাধ্য জাতি জান্নাতি খাবারকে বিরক্তিকর মনে করেছিল। আল্লাহ তাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দিলে তারা মূসা (আ) এবং তাঁর রবকে যুদ্ধ করতে বলেছিল। কীভাবে সময়ের পরিক্রমায় বনী ইসরাইল ইহুদী জাতিতে পরিণত হল? অতঃপর বিভাজিত হল খ্রিস্টান জাতিতে। তাদের চরম অবাধ্যতার মধ্যে নবী হত্যার মত জঘন্য পাপও আছে।
প্রতিবার প্রতি রাকআত সালাত আদায়ের সময় আমরা সূরা ফাতিহা পড়ি, যেখানে আয়াত রয়েছে, "আমাদের সরল পথ দেখাও। সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।" আয়াতের শেষাংশে ইহুদী ও নাসারার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবার যাদের পথ থেকে বাঁচতে এই দোয়া করি, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে এই বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।
বইটি আমার কাছে তথ্যবহুল মনে হয়েছে। ননফিকশন পড়তে যেমনটা তথ্যের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার মত মনে হয়, তেমন মনে হয়নি।
"শিকড়ের সন্ধানে" একটি গবেষণামূলক বই, যেখানে মানব সভ্যতার অন্যতম প্রধান তিনটি ধর্ম—ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের উৎস, পার্থক্য ও সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
হযরত ইব্রাহিম (আ.)—যিনি তিনটি ধর্মের অনুসারীদের কাছেই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাঁকে বলা হয় The Father of Faith। ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের মূল শিকড় যে এক, সে বিষয়ে বইটিতে যুক্তি ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যার কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, এবং ধীরে ধীরে এই ধর্মগুলোর মাঝে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। লেখিকা সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের বিভিন্ন দিক থেকে এই ধর্মগুলোর মধ্যে পার্থক্য গড়ে উঠেছে।
বইটির একটি বড় গুণ হলো লেখিকার গবেষণাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি কেবল মতামত প্রদান করেননি, বরং প্রামাণ্য দলিল ও ঐতিহাসিক উৎসের আলোকে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে পাঠকরা ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে, 'শিকড়ের সন্ধানে' বইটি তাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, যারা ইসলামিক ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব এবং তিনটি প্রধান একেশ্বরবাদী ধর্মের উৎস ও বিকাশ সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী।
How we became Muslim? Why are there so many stories of the prophets in the Quran? This books mainly focuses on the stories of Bani-Israel & Jesus Christ. What it marvels to do - it explains and relates so many things with the current situation of the world - especially the dire situation the Muslim community are in - which we normally do not think about while reading the stories on our own. It traverses the evolution & history of Judaism, Christianly and their relationship with Islam. An excellent, eye opener book - I hope it will be translated to other languages too.
ঝরঝরে লেখার কারণে বুঝতেই পারিনি যে এত কম সময়ে বইটা পড়ে শেষ করে ফেলতে পারবো! পড়ার সময় লেখিকার এই বইয়ের পেছনের খাটাখাটুনির কথা ভেবে অবাক হচ্ছিলাম।
একটা জাতি থেকে ইহুদী, খ্রিস্টান এবং বর্তমান মুসলমানদের বিভাজনের বয়ানই এই বইয়ের মূল বিষয়। আমরা যারা এই বিষয় সম্পর্কে জানিনা তাদের জন্য বইটা খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করি। শেষের দিকে বাইবেলের বর্ণনাগুলোর বিশ্লেষণ ভালো বুঝতে পারিনি একটু জটিল মনে হওয়ার কারণে। আরো সময় নিয়ে পড়লে বুঝতে পারবো বলে মনে হয়।
বিগত কিছু পড়ার মধ্যে এই বইটা দ্রুত পড়ে শেষ করলাম। আল্লাহ এক আদম আ: কে সৃষ্টি করে ইসলাম দিয়ে হাওয়া আ: সহ দুনিয়াতে পাঠালেন। সেখান থেকে কালের বিবর্তনে এই এক থেকেই বর্তমানের মূলধারার তিন ধর্মের বিভক্তি। লেখিকা খুব সুন্দর করে এটা তুলে ধরেছেন। এখানে বিশেষ করে বনি ইসরাইলের কথা বলেছেন যেখান থেকে অবশ্যই আমাদের শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় আছে। এই বই পড়লে আশা রাখি ইনশাল্লাহ আপনার আগের থেকে কোরআন তাফসীর সহ পড়ার প্রতি আরো আগ্রহ বাড়বে।
১. বইটা আমাকে গিফট করছে প্রিয় একজন মানুষ। ২. বইটা খুবই সুন্দর। ৩. প্রচুর রেফারেন্স দেয়া আছে, তথ্য ভেরিফাই নিজেই করতে পারবেন। ৪. অনেক কিছু জানতে পারবেন। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে আপনার আইডিয়া কম থাকলে লুফে নিন। ৬. বইটা বাসার সবাই পড়তে পারবে এবং ভাল্লাগবে সবার। ৭. এখানে আমাদের ইসলামের বিভিন্ন কাহিনী গুলো (কুরআনের) মেইনলি কম্পাইল করে দেয়া হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে, যার মাধ্যমে আমাদের কুরআনের অর্থ বা তাফসীর বুঝতে সুবিধা হবে।