বিখ্যাত হরর লেখক এইচ. পি. লভক্রাফট যে কসমিক হরর সাহিত্যের সৃষ্টি করেছিলেন তাই-ই লভক্রাফটিয়ান হরর! এর মূল উপজীব্য—অজানার ভয়, এক অন্তহীন ভয়! এখানকার খারাপ শক্তিগুলো এতটাই শক্তিমান যে তারাই এখানে মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণকর্তা! এতে আরো রয়েছে আদিম বীভৎসতা, ক্ষণে ক্ষণে হৃদপিণ্ডকে থমকে দেয়ার মতোন তার সৃষ্ট ওল্ড গডস, যোগসথথ, এজাথথ, শাব নিগুরাথ জাতীয় দেবতা বা অপদেবতা! রয়েছে চোখের আড়ালে থাকা অপশক্তির প্রকট হবার আশঙ্কা! এখানে মানবতা খুবই ক্ষুদ্র একটা জিনিস! প্রিয় পাঠক, লভক্রাফটের সেই অদ্ভুত আঁধার ঘেরা দুনিয়ায় স্বাগতম জানাতে তিনজন লেখক নিয়ে এসেছেন ছয়টি মৌলিক লভক্রাফটিয়ান হররের সংকলন—অদ্ভুত আঁধার এক।
চুম্মা—একই কায়দায় পনেরোটা খুন। তিন পেশার ও বয়সের তিন খুনি। খুনের পেছনে প্রভাবক “চুম্মা” নামের কোনো ড্রাগ। তদন্তের ভার আমার ওপর পড়লে নেমে পড়লাম রহস্যানুসন্ধানে। কিন্তু রহস্যের কিনারা যে এভাবে হবে তা আমি কেন কেউই হয়তো ভাবেনি।
আগমন—তানিয়া, অনিমা, ডা. রিচার্ডস আর ড. ন্যান্সি। এই চারজনের কেউই কাউকে চেনে না! কিন্তু তারপরেও অদ্ভুতভাবে একটি ঘটনাতেই জড়িয়ে পড়লো তারা! অবশেষে পৃথিবীতে আসার সময় হয়েছে সেই মহান সত্তার! পৃথিবীর অন্তিম দিন কি সন্নিকটে?
যোগসাজশ—কিছু দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙার পর মনে হয় ওটা স্বপ্ন নয় এক ভয়াল বাস্তব। এমন স্বপ্নই দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে রাহিক ভাবলো একা ঘুরতে যাবে পাহাড়ে। গাইড মোর্শেদ, মাঝি রোমেল চাকমা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তিনজন পর্যটক এবং বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিত অং লাক মারমা এক অদ্ভুত যোগসাজশে জড়িয়ে পড়লেন। কিন্তু কেন? রাহিক ধীরে ধীরে বুঝতে থাকে তার দুঃস্বপ্নের মানে!
অ্যাপোক্যালিপ্স—সম্পর্কের এক অদ্ভুত পর্যায়ে আছে ফারহান আর ইশরাত। সংসারে কেমন একটা অস্বস্তি এসে গেছে ওদের। কিন্তু একদিন সকালে সবকিছু বদলে গেলো! কোন অতিপ্রাকৃত জাহাজ ভেসে উঠেছে নদীর বুকে? নিজেদের অজান্তেই ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়লো ওরা।
আঁধার আর ঈশ্বর—নজরকাড়া সুন্দরী জয়া, অনেক বিত্তবান ঘরের মেয়ে সে। অনেক ছেলেই ওর প্রেমে পাগল, অনেক মেয়েই ওর মতো হতে চায়! কিন্তু নিজের ভেতরে কোন রহস্যকে লুকিয়ে রেখেছে ও? হুট করে রহস্যময় সেই লোকটা কেন কথা বলছে ওর সাথে? সর্বশক্তি এক সত্তা নাকি আসছেন! জয়াকে উদ্ধার করতে!
খুম—জলদেবতা লিশ। যে ফিরিয়ে দিতে পারে জীবন। কিন্তু এমনি এমনি কারো জীবন ভিক্ষা দেয় না। সে চায় সমান প্রতিদান। রাজি?
আসিফ রুডলফায নামে লেখক আসিফ আব্দুল-এর আত্মপ্রকাশ। লেখকের জন্ম ঢাকা শহরে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই শহরেই তার বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা করেছেন নটরডেম কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইনান্স বিভাগে স্নাতক করেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তিনি লেখালিখি শুরু করেন ব্লগিং এর মাধ্যমে। পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাতেও ফিচার রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি লেখালিখির পাশাপাশি শখের ইউটিউবিং এবং ওয়েব শো নির্মাণ করছেন। “কথুলহু” তার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস।
তিন তারাই দিতাম। কিন্তু শেষের গল্পটা পড়ে সিদ্ধান্ত পাল্টালাম।
লুৎফুল কায়সারের তিন গল্পের মাঝে অ্যাপোকালিপ্স গল্পটা সবচেয়ে প্রমিসিং মনে হচ্ছিল। আরো একটু মাল-মশলা যোগ করলে এটাই সংকলনের সেরা গল্প হতো আমার মতে।
জাকিউল অন্তুর ন্যারেটিভ যতটা টেনেছে, গল্প ততটা না। ভ্রমণের বিবরণ চমৎকার ছিল।
এবার আসি সংকলনের সেরা দুটো লেখায়। এই সংকলনের সবচেয়ে দৌলতমন্দ লেখা চুম্মা ও খুম। দুটারই লেখক আসিফ রুডলফায। চুম্মার কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়। গল্পটার ন্যারেটিভ প্রচন্ড ডিপ্রেসিং কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর। শেষের টুইস্টটা প্রথম থেকেই অনুমান করতে পারা যায় অবশ্য। চাইলে লেখক গল্পটা আরো বড় করতে পারতেন, সেই মাল-মশলা উনার কাছে ছিল।
খুম গল্পটা অবশ্য একদম ঠিক সময়ে শেষ করে দেয়া। গল্পে ভ্রমণের বিবরণ, শেষে টুইস্টের প্রয়োগ টা যুতসই বলে মনে হয়েছে। গল্প আহামরি হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু ভালো। পড়তে আরাম।
ওভার অল, ভালো। বইটা পড়ার আগেই এক তারা দিয়ে দিয়েছিলাম স্রেফ লাভক্র্যাফটিয়ান হরর সংকলন বলে। আশা করি, এ ধরণের গল্প সংকলন ভবিষ্যতে আরো পাবো।
বই: অদ্ভুত আঁধার এক লেখক: আসিফ রুডলফায, লুৎফুল কায়সার, জাকিউল অন্তু জনরা: লভক্রাফটিয়ান প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী প্রকাশনী: ভূমিপ্রকাশ প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪ মুদ্রিত মূল্য: ২৪০/-
লাভক্রাফটিয়ান/ লভক্রাফটিয়ান হরর বা কসমিক হরর কি জানেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন রিভিউয়ের শুরুই কিনা প্রশ্ন দিয়ে। তাহলে একটু খোলসা করি, হরর বই আমরা কমবেশি তো পড়িই। কিন্তু হরর বলতে সাধারণত আমরা কী বুঝি? অশরীরী, অতৃপ্ত আত্মা তো আবার গ্রামবাংলার প্রচলিত পেত্নী, ডাইনী, শাকচুন্নির কথাই মাথায় আসে না? কসমিক হরর কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, অজানাকে ভয়।
এটা তো হলো সংক্ষেপে ধারণা। বিস্তৃতি আরও বিশাল। তবে যাই হোক প্রশ্নটা করলাম এইজন্য যে বইয়ের ছয়টি গল্পই কসমিক হরর বেজড।
চুম্মা— আসিফ রুডলফায তেরোটা মার্ডার, তিনজন কালপ্রিট, বাকি দুইটা খুনের তখনো সুরাহা হয়নি। কিন্তু খুনগুলার প্যাটার্ন হুবহু একই! পনেরোটা বিভৎস লাশ যেন বলছে অন্য কথা কিন্তু কী?
শুরুটা যেমন ছিলো শেষে যেয়ে তেমন জমে নায়। লাস্ট টুইস্টটা প্রেডিক্টেবল। মোটামুটি ধাঁচের বলা যায়।
আগমন— লুৎফুল কায়সার চারজন অচেনা মানুষ। কিন্তু ভাগ্য তাদের বেঁধেছে এক সুতোয়। মহান সত্তার আগমনের কারণ হবে তারা!
খন্ড খন্ড ঘটনা প্রতিটি চরিত্রকে ঘিরে। সমাপ্তিটা ভালো লেগেছে। যদিও তেমন ভয়ের কিছু নায় কিন্তু মৌলিক কসমিক হরর হিসেবে ভালোই।
যোগসাজশ— জাকিউল অন্তু দুঃস্বপ্ন যে পাহাড়ি অঞ্চলে সত্য হয়ে দেখে দিবে কে জানতো! ক্ষতবিক্ষত দুটি লাশ পাওয়ার পর রাহিকের মনে হয় কিছু একটা ঠিক নেই। হঠাৎ শুরু হয় প্রকৃতির পরিবর্তন!
প্রকৃতির বর্ণনা সেরা অংশ ছোট গল্পটার। প্রকৃতি যখন নিজেই শাস্তি বা প্রতিশোধ নিতে জেগে ওঠে তখন? প্লট ভালো কিন্তু শেষে যেয়ে হতাশ হয়েছি।
অ্যাপোক্যালিপ্স— লুৎফুল কায়সার টি-বাঁধের কাছে পাওয়া গেছে একটি লাশ! লাশের উপর অজ্ঞান হয়ে ছিলো ছোট একটি মেয়ে। তার মতে তার বাবা বিশাল বড়ো একটা জাহাজ দেখে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু পদ্মাতে বড়ো জাহাজ আসবে কী করে?
নিজের অতিপরিচিত জায়গা নিয়ে যখন গল্প লেখা হয় কেমন আগে? আমার তো এক্সপেকটেশন অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু পিচ্চি গল্পটা হতাশ করেছে। ফারহান হঠাৎ কেসটা নিয়ে এতো মরিয়া হয়ে কেন উঠলো? যদিও বলা হয়েছে একটা কারণ আছে কিন্তু কারণটা বলা হয়নি। জাহাজ দেখে যদি সবাই নিজেকে শেষ করে দেয় তো বাচ্চাটা কীভাবে বেঁচে গেল? আরো একটু বড়ো করে গুছিয়ে লিখলে ভালো হতো।
আঁধার আর ঈশ্বর— লুৎফুল কায়সার ঈশ্বরকে ডেকে আনার ক্ষমতা সবার থাকে না। কিন্তু যদি যায় তখন?
"আগমন"- এর সাথে কনসেপ্ট মিলে যায় জাস্ট ঘটনা আলাদা। বা এমনও বলা যায় একই গল্পের দুটো রূপ। এতো বেশি মিল থাকার জন্য নতুনত্ব অল্পই। ছবি নিয়ে হক সাহেবের অংশটা পড়ে ঘৃণায় ভিতরটা গুলিয়ে গেছে।
খুম— আসিফ রুডলফায একটা ট্যুর যে এতো বড়ো প্রতিদান নিবে কে জানতো! মিথ যখন সত্য হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে তখন?
বইয়ের সেরা গল্প এটাই। নিস্তব্ধ প্রকৃতি, ভয়াবহ একটা ঘটনা ও চরম প্রতিদানের একটা আখ্যান। লাস্টের টুইস্টটা দারুণ। সাথে অল্পস্বল্প হিউমারও আছে।
"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।" -জীবনানন্দ দাশ - অদ্ভুত আঁধার এক - বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের হরর সাহিত্যে বেশ আলোচিত এক সাবজনরা "লাভক্রফটিয়ান হরর"। হরর সাহিত্যের এ সাব জনরার ছয়টি ছোটগল্প নিয়েই এবারের বইমেলায় ভূমিপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে লাভক্রফটিয়ান মৌলিক হরর ছোটগল্প সংকলন "অদ্ভুত আঁধার এক"। - চুম্মা (আসিফ রুডলফায) - শহরে শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিং। একই ভয়াবহ কায়দায় মারা গেছে ১৫ জন মানুষ। এর সাথে তিনজন আনরিলেটেড সাসপেক্ট আর এক ড্রাগের ট্রেইল পান এক পুলিশ অফিসার। সেই ট্রেইল থেকেই অভাবনীয় এক বাঁকে মোড় দেয় গল্পটি।
নিও লাভক্রফটিয়ান হরর জনরার ছোটগল্প হলো চুম্মা। ফার্স্ট পার্সন ভিউতে বলা।শুরুর দিকে কমন প্লট, চমৎকার লেখনী, মানানসই ফিনিশিং। মোটামুটি ভালোই। - আহবান (লুৎফুল কায়সার)- পৃথিবীর চার প্রান্তের চার জন মানুষ বিভিন্নভাবে এক অতিপ্রাকৃত শক্তির সংকেত পান। এখন এই সংকেত আর ফলাফল নিয়েই এই ছোটগল্প।
খুবই প্রেডিক্টেবল স্টোরি। গল্পের প্রায় প্রতি প্যারায় আলাদা করে ওই অংশের একটা নাম দেয়া বিরক্তিকর লেগেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে গল্পের বদলে নাটিকার স্ক্রিপ্ট পড়ছি। গল্পের ভিতরে কারণে অকারণে অযথা বিস্ময় সূচক যতিচিহ্নের ব্যবহার দৃষ্টিকটু লেগেছে। - অ্যাপোক্যালিপ্স (লুৎফুল কায়সার)- ফারহান এবং ইশরাত, ক্যারিয়ারের স্ব স্ব জায়গায় ভালো অবস্থানে থাকা এক দম্পতি। হঠাৎ তাদের জীবন উল্টিয়ে দিলো এক অতিপ্রাকৃত জাহাজ।
মোটামুটি ভালোই লাগলো এই ছোটগল্পটি। বিশেষ করে "সিগারেটস আফটার সেক্স" এর "অ্যাপোক্যালিপ্স" গানটি গল্পের সাথে গেঁথে দেয়া। - আঁধার আর ঈশ্বর (লুৎফুল কায়সার) - জয়া, বিত্তশালী এক মেয়ে। যার রয়েছে অন্ধকার এক অতীত, এটি ঘিরেই এই ছোটগল্প।
টিপিক্যাল গল্প আর লেখনী। লেখকের আগের দুই গল্পের মতোই এতেও ছিল বিস্ময় সূচক যতিচিহ্নের আধিক্য। ভালো লাগেনি একদম ই। - খুম (আসিফ রুডলফায) - পাঁচ বন্ধুর ট্যুর নিয়ে গল্পটি শুরু। কিন্তু এক ঘটনার পড়ে ড্রামাটিক টার্ন নেয় গল্পটি।
চমৎকার লাভক্রফটিয়ান ছোটগল্প। সাসপেন্স প্রথমদিকে কম থাকলেও শেষের টুইস্ট চমকপ্রদ। মোটের উপর ভালো লেগেছে। - এবারে আসি সংকলনে পড়া সেরা গল্প জাকিউল অন্তু এর লেখা "যোগসাজশ" এ। রাহিক নামের এক ছেলে কিছুদিন সমাজ থেকে নিজেকে আইসোলেট করতে একা পাহাড়ে ট্যুর দিতে বেরিয়ে পড়ে এক বিরাট যোগসাজশের ভিতরে পরে যায় এবং কি সেই যোগসাজশ তা নিয়েই মুলত এই ছোটগল্প ।
সাস্পেন্স, হরর, আর লাভক্রফটিয়ান মিথের দারুন মিশ্রণে রচিত এ গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ আকর্ষক। পাহাড় এবং প্রকৃতির বর্ণনাও বেশ লেগেছে। মাঝে গল্প একটু স্লো হলে গেলেও ফিনিশিং দুর্দান্ত, পারফেক্ট লাভক্রফটিয়ান হররের ফিল পেয়েছি এই গল্পটি পড়ে। লেখক এ ধরণের আরো কাজ করবেন, এই আশা করছি। - "অদ্ভুত আঁধার এক" বইটির প্রচ্ছদ একদম পারফেক্ট বইটির কন্টেন্ট এর হিসেবে। বেশ কিছু প্রিন্টিং মিস্টেক চোখে পড়েছে যার ভিতরে কয়েকটি একদমই সিলি মিস্টেক। বইটির বাঁধাই, কাগজের মান দামের তুলনায় চলনসই। যারা লাভক্রফটিয়ান থ্রিলার/হরর টাইপ গল্প পড়তে পছন্দ করেন তাদের ভালো লাগবে আশা করছি।
'খুম' গল্পটা এই সংকলনের সবচাইতে ভালো গল্প। এত ছোট্ট পরিসরেও গল্পের শুরু, ক্ল্যাইমাক্স, এন্ডিং বেশ গোছালো। তবে এই খুম এর চাইতে ভালো হতে পারতো লুৎফুল কায়সারের 'অ্যাপোক্যালিপ্স' আর 'আঁধার আর ঈশ্বর'। তবে তিনি দারুণ ভাবে লেখা গল্পগুলোর এন্ডিং সুন্দরভাবে দিতে পারেননি বলে গল্পগুলো বেস্ট হতে গিয়েও হয়নি। আর জাকিউল অন্তুর লেখা গল্পটা বেশ দারুণভাবে বর্ণনা করা, কিন্তু গল্পটাতে লাভক্রাফটিয়ান যে ছাপটা থাকা দরকার ওটা মিসিং মনে হলো। তবে তা সত্ত্বেও তার গল্পটা বেশ ভালো। সবমিলিয়ে 'অদ্ভূত আঁধার এক' মাস্ট রিড না হলেও পড়বার মত।
৩.৫🌟 মোটামুটি ভাল লেগেছে বইটি। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে 'খুম', 'অ্যাপোক্যালিপ্স' এবং 'যোগসাজশ' এই গল্প তিনটি। বইটি পড়ে বেশ ভালো সময় পার করেছি। যাঁরা লভক্রাফটিয়ান হরর গল্প পড়তে পছন্দ করেন, তাঁরা অবশ্যই বইটি পড়ে দেখবেন। আশা করি ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং
লুৎফুল কায়সার ভায়ের লেখা "অ্যাপোক্যালিপ্স", "আঁধার এবং ঈশ্বর" আর আসিফ রুডলফাযের লেখা "খুম" গল্পগুলো অসাধারণ লেগেছে! 👌 এছাড়াও বাদবাকি গল্পগুলোকে অনায়াসে ৩/৫ দেয়া যায়।
চুম্মা: একই কায়দায় পনেরোটা খুন। তিন পেশার ও বয়সের তিন খুনি খুনের পেছনে "চুম্মা" নামের কোনো ড্রাগ তদন্তের ভার আমার উপরে পড়লে নেমে পড়লাম রহস্যানুসন্ধানে। কিন্তু রহস্যের কিনারা যে এভাবে হবে তা আমি কেন কেউই হয়ত ভাবেনি।
উপরে গেলো সংকলনের প্রথম গল্পের কাহিনীসংক্ষেপ। একটু ধীরগতিতে এগিয়েছে গল্পটা মোটামুটি অর্ধেক যাবার পর কাহিনী একটু গতি পায় তবে লাভক্রাফটিয়ান হররের যেমন আবহ সেটা সেভাবে পাওয়া না গেলেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছে গল্পটা। আর একদম শেষের টুইস্ট টাও মোটামুটি ছিলো তবে আমার কেন যেন গল্পের প্রেক্ষাপটের সাথে দেশের প্রেক্ষাপট মেলাতে একটু অসুবিধা হয়েছে।
রেটিং- ৩.৫০/৫
আগমন: তানিয়া,অনিমা,ড.রিচার্ডস আর ড. ন্যান্সি। এই চারজনের কেউই কাউকে চেনেনা! কিন্তু তারপরেও অদ্ভুতভাবে একটি ঘটনাতেই জড়িয়ে পড়ল তারা! অবশেষে পৃথিবীতে আসার সময় হয়েছে সেই সত্তার! পৃথিবীর অন্তিম দিন কি সন্নিকটে?
প্রথম গল্প থেকে এই গল্পটা একটু ভালো লেগেছে তার একমাত্র কারণ হলো লেখক খুব সুন্দরভাবে গল্পের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চারজন মানুষের গল্প বলেছেন। খুব অল্প করে আলাদাভাবে তাদের সাথে পরিচয় করিয়েছেন এবং শেষে গিয়ে তাদের চারজনকে এক সুতোয় বাঁধার একটা চেষ্টা করেছেন। খুব সহজভাবে লেখা বলে সুন্দরভাবে শেষ করতে পেরেছি তবে গল্পের শেষটা নিয়ে এক্সপেকটেশন আরেকটু বেশি ছিলো। ওভারল ভালো বলা যায়।
রেটিং- ৩.২৫/৫
যোগসাজশ: কিছু স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙার পর মনে হয় ওটা স্বপ্ন নয় ভয়াল বাস্তব। এমন স্বপ্নই দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে রাহিক ভাবলো একা ঘুরতে যাবে পাহাড়ে। গাইড মোর্শেদ, মাঝি রোমেল চাকমা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তিনজন পর্যটক এবং বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিত অং লাক মারমা এক অদ্ভুত যোগসাজশে জড়িয়ে পড়লেন। কিন্তু কেন? রাহিক ধীরে ধীরে বুঝতে থাকে তার দুঃস্বপ্নের মানে!
এই গল্পটার প্রথমদিকে পড়ে মনে হচ্ছিলো এটা কোনো ভ্রমণ গল্প। পুরো গল্পেই এমন বর্ণনা রয়েছে তবে লেখক এই গল্পের মধ্যেই প্রবেশ করিয়েছেন হত্যার, পরিচয় করিয়েছেন যুগের পর যুগ মানুষ কিভাবে পাপ করে চলেছে নিজের আনন্দের তাগিদে আর তার বলির পাঠা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই গল্পের শুরুর দু'একটা পেজের লেখা একটু এলোমেলো লেগেছে পরে সেটা ঠিক হয়েছে। তো সবমিলিয়ে কেমন লেগেছে আমার কাছে গল্পটা যদি কেউ প্রশ্ন করেন আমি বলব ভালো লেগেছে।
রেটিং-৩/৫
অ্যাপোক্যালিপ্স: সম্পর্কের এক অদ্ভুত পর্যায়ে আছে ফারহান আর ইশরাত। সংসারে কেমন একটা অস্বস্তি এসে গেছে ওদের। কিন্তু একদিন সকালে সবকিছু বদলে গেলো! কোন অতিপ্রাকৃত জাহাজ ভেসে উঠেছে নদীর বুকে? নিজেদের অজান্তেই ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ল ওরা।
এই গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে তার মূল কারণ হচ্ছে খুব সাধারণ একটা আত্মহত্যা থেকে কাহিনী অন্যদিকে মোড় নেয়ার ব্যাপারটা। প্রথম দিকে বেশ হাস্যরসাত্মক ভাবে কিছু জিনিস উপস্থাপন করা হয়েছে সেজন্য আরো উপভোগ করেছি। তবে এই গল্প পড়ে মনে হলো লেখক মোটামুটি মিউজিক সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখেন। তবে শেষ দিকে একজায়গায় ২৭ তারিখের জায়গায় ২৪ তারিখ দেয়া হয়েছে। সংকলনে বেশ ভালো একটা গল্প ছিল এটা।
রেটিং- ৩.৭৫/৫
আঁধার আর ইশ্বর: নজরকাড়া সুন্দরী জয়া, অনেক বিত্তবান ঘরের মেয়ে সে। অনেক ছেলেই ওর প্রেমে পাগল, অনেক মেয়েই ওর মত হতে চায়! কিন্তু নিজের ভেতরে কোন রহস্যকে লুকিয়ে রেখেছে ও? হুট করে রহস্যময় সেই লোকটা কেন কথা বলছে ওর সাথে? সর্বশক্তি এক সত্তা নাকি আসছেন! জয়াকে উদ্ধার করতে!
এই গল্পটার সাথে কেন যেন 'আগমন' গল্পের তানিয়ার একটু মিল আছে বলে মনে হলো। এই গল্পটা মনেহয়না সবাই পড়তে পারবে কেননা এই গল্পে আমাদের সমাজে বসবাস করা খুব নোংরা মানসিকতার এক লোকের পরিচয় করানো হয়েছে যেটা পড়ে হয়ত অনেকেরই গা ঘিনঘিন করতে পারে। তবে বাস্তবতা অনেক সময় আসলে এমনই। তবে লেখকের অন্যান্য গল্পের সাথে তুলনা করলে এই গল্পটা একটু পিছিয়ে থাকবে।
রেটিং- ৩/৫
খুম: জলদেবতা লিশ। যে ফিরিয়ে দিতে পারে জীবন। কিন্তু এমনি এমনি কারো জীবন ভিক্ষা দেয়না। সে চায় সমান প্রতিদান। রাজি?
কথায় আছে ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে। এই গল্পটাও অনেকটা তাই। শুরুটা হয��েছিলো সাডেন ট্যুর প্লান করা কয়েক বন্ধুর মাধ্যমে। ট্যুরে যেমন নানান চিন্তাধারার সঙ্গী জোটে এখানেও তাই। সেভাবেই চলছিল গল্পটা কিন্তু হুট করেই একটা দূর্ঘটনা ঘটে বসে সেখানে আর সেখানে হাজির হয় জলদেবতা লিশ। ভেবেছিলাম গল্পটা হয়ত শেষ কিন্তু পরে দেখলাম শেষ হবার পরেও আরেক দফা শেষ হওয়া বাকি আর সেখানেই সব রহস্যের সমাধান। দুর্দান্ত লেগেছে গল্পটা।
রেটিং- ৪.৫/৫
বই: অদ্ভুত আঁধার এক লেখক: আসিফ রুডলফায,লুৎফুল কায়সার,জাকিউল অন্তু প্রকাশনী: ভূমি প্রকাশ মুদ্রিত মূল্য: ২৪০ টাকা
১৫ টা খুন। সব গুলোই একই রকমভাবে। ভিক্টিমের চোখ জোড়া উপড়ে নেয়া হয়। তারপর লাশের বুক থেকে নাভী পর্যন্ত ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়। এরপর কাটা জায়গার দুইপাশ খামচে ধরে টেনে চামড়া ছিঁড়ে ফেলা হয়। দেখে মনে হয় বিরাট কোনো রক্তচক্ষু। এটা নিশ্চিত, খুনি কোনো সিরিয়াল কিলার। তারপরই তদন্তে নেমে পড়েন পুলিশ বিভাগের চৌকস পুলিশ অফিসারটি। আর নেমেই তাজ্জব বনে যান। খুনি তিনজন। একজন স্কুল ছাত্র, একজন মুদির দোকানের সেলসম্যান , আর একজন ঘোর পাগল…!
তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ বাবুটি একধরনের মাদকের সন্ধান পান। নতুন মাদক, নাম ‘চুম্মা'! এটা খাওয়ার পরই ভিক্টিমের সাময়িক হেলুসিনেশন হয়। তারপরই সেই শিকারী হয়ে যায়। আর তারপর? ভিন্ন রকমের তিন অপরাধীর যোগসূত্র পাওয়ায় এক নোংরা আন্ডারেটেড নাইট ক্লাবের সাথে। কী আছে সেখানে?
★★ আগমন - লুৎফুল কায়সার
“যেদিন চরম পাপাচারের শিকার কোনো সৃষ্টি নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ঈশ্বরকে ডাকবে, সেদিনই তিনি আসবেন, আসবেন অন্ধকার নিয়ে… আমাদের শেষ করে দেয়ার জন্য!" এ দুনিয়া পাপে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর ধ্বংস হবেই। আর যেদিন মহাজাগতিক স্বত্তার ঘুম ভেঙে যাবে সেদিন এই জগৎ ধ্বংস হবে।
ঢাকায় এক পরিবারের কাজের মেয়েটি প্রতিনিয়তই তার গৃহকর্তা কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছে। এ পাপ মেয়েটি আর সইতে পারছে না। সে এখন মুক্তি চায়। একদিন হঠাৎ করে এক লোক তাকে এসে বলে যায় ঈশ্বরকে ডাকার জন্য। কারণ তার ডাকে ঈশ্বরের ঘুম ভাঙ্গবে।
রাজশাহীতে একটি মেয়ে মাথার ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পায়। অনেকটা সুইচ অন অফ করলে যেরকম শব্দ হয় তেমন। এটা একসময় বাড়তে থাকে। সাথে দেখতে থাকে এক দুঃস্বপ্ন। সেখানেও এক লোক তাকে এসে বলে যায় পৃথিবীর ধ্বংসের কথা। আর সে যেনো ঈশ্বরকে ডাকে।
ঠিক এভাবেই কানাডার এক সিম্বোলজিষ্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এক মানষিক হাসপাতালের ডাক্তারের কাছেও এরকম এক লোক যায়। কিন্তু কেন? সত্যিই কী পৃথিবীতে সেই মহাজাগতিক স্বত্তা আসবেন?
★★ যোগসাজশ - জাকিউল অন্তু
ছেলেটি অনেকদিন নিয়মমাফিক চলার পর হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় ঘুরতে যাওয়ার। সেই মাফিক চলে যায় বান্দরবানে। আর সেই পড়ে যায় এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। হঠাৎ করেই গ্রামে পর পর দুইটা মেয়ে খুন হন। আর তাদের খুনিকে তাও যানে সে! ঘটনার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বাহিরের সব দৃশ্য বিলকুল পরিবর্তন হয়ে গেছ। সবুজের সমারোহ, পাখির কলতান, ঝর্ণার জলের গর্জন, কিছুই নেই। সবটাই যেনো মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কেন? কার অভিশাপের দরুন আজ এঅবস্থা? কিসের সাথে এই যোগসাজশ?
★★★…!
এরকম আরো তিনটা গল্প আছে “অদ্ভুত আঁধার এক” বইটাতে। অন্যরকম, ভিন্ন স্বাদের, অন্যরকম অনুভূতির গল্প সব। বিদেশি হরর গল্প লেখক লভক্রফটের হরর গল্পের থীম নিয়ে মৌলিক গল্পগুলো রচনা করেছেন বাংলাদেশের তিন লেখক ‘‘আসিফ রুডলফায, লুৎফুল কায়সা, জাকিউল অন্তু’’। বইটি *ভূমি প্রকাশন* থেকে।
হরর জনরার এই শাখাটি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য একদম নতুন। তাই বুঝতে কিছুটা সমস্যা হবে। মন মানতে চাইবে না। তাই সবাইকে বলব খুব সাবধানে এই বই গুলো পড়বেন নতুনরা। কারণ লাইন ধরতে না পারলে আপনি খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন।
লভক্রফট মনে করতো বিভিন্ন ধর্ম যেভাবে ঈশ্বরকে মহান করে উপস্থাপন করেন, আদতে ঈশ্বর তা নয়। তিনি ঘুমিয়ে আছে। তার সেই ঘুমের জগতেই সৃষ্টি আমাদের এই পৃথিবী। মানে তার স্বপ্নের মাঝেই সৃষ্টি হয় পৃথিবীর। আর তার ঘুম ভাঙ্গলেই এই পৃথিবীরও সমাপ্তি হবে। আদতে লভক্রফটের ঈশ্বর তার সৃষ্টির প্রতি উদাসিন। তিনি কোনো দাম দেন না এই জগতের কোনো সৃষ্টিকে।
মানুষ অন্ধকার ভয় পায়, অজানাকে ভয় পায়। আর এই অজানা ভয় হলো লভক্রফটিয়ান হররের সৃষ্টি।
সবশেষে বলবো, আমার ভালো লেগেছে। তাই বলে আপনার ভালো লাগবে তা না। তাই সাবধানে পড়বেন। এ বইতে পড়েছি “কিছু জ্ঞান অর্জন না করাই বড় অর্জন”
***শহরে নতুন এক সিরিয়াল কিলিং শুরু হয়েছে। চোখ উপড়ে তুলে ফেলা হয়েছে ভিক্টিমের। যাদেরকে সন্দেহভাজন মনে করে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছে পাওয়া গেছে জোড়ায় জোড়ায় চোখ। তাহলে কি কিলার একের অধিক? কিন্তু হিসেব মেলে না। এদিকে [চুম্মা] নামের নতুন এক ড্রাগের কথা শোনা যাচ্ছে। অদ্ভুত।
এই গল্পটা বইয়ের সেরা গল্প। সবচেয়ে ভালো লেগেছে এক্সিকিউশন। শেষটা বেশ নিখুঁত। লেখনীও ঝরঝরে।
***চারজন ব্যক্তি চার দুনিয়ার বাসিন্দা, অর্থ্যাৎ কেউ কাউকে চেনে না। তানিয়া জলিল সাহেবের বাড়িতে কাজ করে। অনিমা বেশ অনেকদিন ধরে একধরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছে যা আর কেউ শুনতে পায় না। ডাঃ রিচার্ডসের হসপিটালের রোগীগুলো হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল। ডাঃ ন্যান্সীর কাছে কে যেন অনেক প্রাচীন একটা বই পাঠিয়েছে যার ভাষা খুব কম মানুষই জানে। আহবান, ইঙ্গিত, বার্তা, সংকেত। এই চারটা ধাপ সম্পূর্ণ হলেই ঘুম ভাঙবে তাঁর। আগমন গল্পে আসবেন তিনি।
এটাও বেশ ভালো। অনেক গুছিয়ে লেখা হয়েছে। তারসাথে আনুষঙ্গিক তথ্যাদিও চমকপ্রদ। আমি নিজেও ঐ ওয়েবসাইট ঘেটে বেশ অবাক হলাম। আমি মাঝে মাঝে আজব ধরণের এক শব্দ শুনতে পাই। যদিও এদের সাথে মেলে না।
***বান্দরবান বেড়াতে গেল রাহিক। কিন্তু প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখছে সে। প্রায়ই একটা কথা শুনছে স্বপ্নে। যোগসাজশ। কি এই যোগসাজশ?
যোগসাজশ গল্পটা অনেক জমতে পারত। আরও সুন্দর হতে পারত। কিন্তু কিছু ঘটনা আমার কাছে একটু বেশি বেশি লেগেছে। শেষটাও ভালো লাগেনি। এই গল্পটাকে সবার শেষে রাখব আমএমই।***কিছু লোক অদ্ভুতভাবে আত্মহত্যা করছে। কিন্তু, কেন? তদন্তে বের হল ফরহাদ। পদ্মার মাঝে এমন এক জিনিস দেখেছে বলে দাবি করছে এক শিশু যেটা ওখানে দেখার কথাই না। এদিকে, পুরো পৃথিবীতে অনেকেই এই জিনিস নানা জায়গায় দেখেছে বলে দাবি করছে। তা কিভাবে সম্ভব? এপোক্যালিপ্স গানের সাথে এর কি সম্পর্ক?
এই এপোক্যালিপ্স গল্প থাকবে ২ নাম্বারে। সবকিছু ব্যলেন্সড। আর সমাপ্তিটা যথেষ্ট সুন্দর। এখানে টেন্টাকলস ওয়ালা কথুলহু না থাকলেও গল্পটা দারুণ উপভোগ করেছি।ই।
***জন্মের কয়েক বছর পরই জয়ার বাবা তাকে পৃথিবীর কলঙক ঘুচাবার এক প্রাচীন ও পবিত্র উদ্দেশ্যে একটা ডাস্টবিনের পাশে রেখে আসেন। জলিল নামের এক লোক তাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে দত্তক নেন। কিন্তু সুদর্শনা জয়ার জীবনে ঘোর এক আধাঁর লুকিয়ে আছে। সেই আঁধার দূর করতে ঈশ্বর আসবেন।
এখানে দুইটা জায়গায় ধোঁয়াশা রয়ে গেছে আমার। শুরু আর শেষে। শুরুরটা না বলি। কিন্তু, শ���ষে ঈশ্বরের যা করার কথা ছিল, সমাপ্তিটা যেভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে শেষ হয়েছে কি?
***সজল। হতাশাগ্রস্থ এক যুবক। বান্দরবান বেড়াতে গিয়ে সুইসাইড এটেম্পট করে মাথা ফাটিয়ে ফেলে। তাকে বাচাতে শরণাপন্ন হতে হলো জলদেবতা লিশের কাছে। কিন্তু, বিনিময়ে কিছু চায় সে?
ছোট এবং ঘটনাবহুল গল্প। এই গল্প মনে হল বেশি বড় হলে ভালো লাগত না। খুব যে ভালো লেগেছে তাও না।
লভক্রফট এমন একজন প্রতিভাবান লেখক যে, তাঁর নামেই একটা আলাদা জনরার সৃষ্টি হয়েছে। অজানা, অচেনা কোনকিছুকে তীব্রভাবে অনুভব করার, ভয় পাওয়ার গল্পগুলোই লভক্রাফটিয়ান হরর নামে সবখানে পরিচিতি পেয়েছে এবং পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে লভক্রাফট নিয়ে নতুন নতুন মৌলিক ও অনুবাদ প্রজেক্ট হচ্ছে। এটা বেশ আশার কথা। ছোট করে বললে লভক্রাফটের সাথে মোটামুটি চেনা পরিচয় হল। ভালো লাগল। সামনে আরও লভক্রাফট পড়ার ইচ্ছে আছে।
“It is a mistake to fancy that horror is associated inextricably with darkness, silence, and solitude.” - HP Lovecraft ভয় কি শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার কিংবা কবরের মতো নীরবতার হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে এক ধাপ এগিয়ে ভেবেছেন লভক্রাফট। অজানার প্রতি ভয় — এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে নিজের স্বকীয়তায় গড়ে তুলেছেন লভক্রাফটিয়ান হরর জনরা। হতাশা আর নৈরাশ্যবাদের এক চমৎকার মেলবন্ধন এই জনরা। অদ্ভুত আঁধার এক: 'অদ্ভুত আঁধার এক' বইটি লভক্রাফটিয়ান মোলিক গল্পের সংকলন। বইটিতে রয়েছে তিনজন লেখকের মোট ছয়টি গল্প।
পাঠ পর্যালোচনা: প্রথমেই বলি, চমৎকার এক ভূমিকা লিখেছেন আসিফ রুডলফায। লভক্রাফটিয়ান হরর আর কসমিক হরর নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই জনরার বৈশিষ্ট্য আলোকপাত করেছেন। লভক্রাফটিয়ান হরর জনরাকে বুঝতে বেশ সাহায্য করবে লেখাটা। গল্প সংকলনে সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্পের দেখা পাওয়া যায়। এই সংকলনে সেই সুযোগ নেই, তবে রয়েছে তিনজন ভিন্ন লেখকের লেখনশৈলী, শব্দচয়ন, ভিন্ন গল্প বলার ধরন। ছয়টি গল্পের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে জাকিউল অন্তুর যোগসাজশ গল্পটি। দারুণ ভ্রমণের বর্ণনা, রেমাক্রিকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। মনে হচ্ছিল যেন রেমাক্রি ট্রেক করছি পড়ার সাথে সাথে। কিছুদিন আগে পড়া অ্যালজারনন ব্ল্যাকউডের দ্য উইলোস বইটির প্রথম দিককার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। যুগ যুগ ধরে করা মানুষের জ্ঞানপাপ, অপচয়, হত্যা — এসব উঠে এসেছে গল্পে।
কাহিনীর ঘনঘটা, শেষে ছোট টুইস্ট, সমাপ্তি সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছে। অং লাক মারমা, রাহিক — চরিত্র গঠনেও ভালো নিপুণতা দেখিয়েছেন। তবে এটাও বলছি, এই গল্পে লভক্রাফটিয়ান ইলিমেন্ট বেশ কম। গল্পটা ভালো লেগেছে আমার। আসিফ রুডলফাযের দুটো গল্পই ভালো লেগেছে। গল্প বলার ধরন চমৎকার। খুম ভালো লেগেছে বেশি। এটাতেও ভ্রমণের বর্ণনা আছে, উঠে এসেছে জলদেবতা লিশের কথা। পাশাপাশি শেষের টুইস্টটা দারুণ। চুম্মা গল্পটা একটু অন্যরকম লেগেছে। শুরুর দিকে সাধারণ থ্রিলার গল্পের মতো প্লট, ঠিক লভক্রাফটিয়ান ধাঁচের মনে হচ্ছিল না। তবে সময় যেতে যেতে গল্পের সবকিছুই বদলে গেছে। বর্ণনা সুন্দর, পড়তে আরাম লাগার মতো। আর শেষটাও ভালো লেগেছে। লুৎফুল কায়সারের তিনটি গল্পের মধ্যে অ্যাপোক্যালিপ্স মোটামুটি ভালো লেগেছে। ফারহান আর ইশরাতের সম্পর্কের টানাপোড়েন, একটা খুনের কেস — ধীরে ধীরে কাহিনী এগিয়েছে। সমাপ্তি ভালো লেগেছে। তবে লেখকের অন্য দুইটি গল্প তেমন ভালো লাগেনি। অতটা চমৎকৃত হতে পারিনি। লভক্রাফটিয়ান ইলিমেন্ট ছিল, তবে এই দুটি গল্প সাদামাটা লেগেছে অন্য গল্পগুলোর তুলনায়। সাথে গড়পড়তা লেখনশৈলী।
এই সংকলনের ব্যাপারে একটাই আপত্তি আছে। আগমন এবং আঁধার আর ঈশ্বর — গল্প দুইটার লেখার ধরন, প্লট, থিম, সমাপ্তি মোটামুটি একই ধরনের। একই রকম দুইটা গল্প একই সংকলনে না আনলে ভালো হতো বলে মনে হয়েছে আমার। হয়তো আরেকটা ভিন্ন স্বাদের গল্প পেতে পারতাম।
প্রচ্ছদ: প্রচ্ছদ নিয়েও আলাদা ভাবে বলতে হয়। দারুণ এই প্রচ্ছদটা করেছেন সজল চৌধুরী। প্রশংসার দাবিদার সে অবশ্যই।
লভক্রাফটিয়ান হরর যাদের ভালো লাগে, তারা বইটি পড়তে পারেন। মাস্টরিড না হলেও বেশ ভালো। যারা এই জনরার সাথে বিশেষ পরিচিত নন, তারাও পড়তে পারেন। ভালো যদি নাও লাগে, অন্তত ভিন্ন স্বাদ পাবেন নিঃসন্দেহে।
এর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সেরা হয়েছে আগমন আর যোগসাজশ। চমৎকার প্লট আর স্মুথ রাইটিং এর কম্বিনেশন এ পুরোটা গল্পই ছিলো উপভোগ্য। লেখকের নিজস্ব একটা স্টাইল দাড় করানো দেখে ভালো লেগেছে।
আগমন পড়েছিলাম সবার শেষে। এর আগ পর্যন্ত যোগসাজশ গল্পটাকেই সেরা মনে হচ্ছিল আমার। শুরুটা সাদামাটা মনে হলেও অর্ধেক পেরিয়ে যেতেই ভালো লাগা শুরু হয় আর শেষ করে তো মুখ দিয়ে অনায়াশেই বেরিয়ে আসে "ওয়াও"। ভ্রমণের বর্ণনা গুলো সুন্দর ছিলো।
আসিফ রুডলফাজ এর দুটো গল্পের মধ্যে খুম বেশি ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শেষ অংশটুকু গায়ে কাটা দেয়ার মতো। সংকলনের তৃতীয় সেরা গল্প আমার চোখে।
চুম্মা গল্পের প্লটটা ইন্টারেস্টিং। শেষটুকু আগে থেকেই বুঝতে পারা গেলেও সাসপেন্স ধরে রাখার মতো ইলেমেন্ট ছিলো।
লুৎফুল কায়সারের অন্য দুটি গল্পের মধ্যে অ্যাপোক্যালিপ্স ভালো লেগেছে। লভক্রফটিয়ান হরর এর এর ডার্ক ইলেমেন্ট এর পাশাপাশি রোমান্টিসিজম, মানসিক টানাপোড়নের কিছু ব্যাপার আছে।
আঁধার আর ঈশ্বর গল্পটা খুব একটা ভালো লাগেনি। দুর্বল প্লট মনে হয়েছে। সংকলনের অন্যান্য গল্পের তুলনায় একদমই ম্লান ছিলো।
বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়েনি। ডা. আর ড. এর কিছু টাইপিং ভুল ছিলো । প্রতিটা গল্পের সাথে অলংকরণ থাকলে বেশ মানাতো। লভক্রফটিয়ান মৌলিক হরর হিসেবে বেশ ভালো কাজ হয়েছে এটা বলতেই হবে। আশা করি ভবিষ্যতেও
লভক্রাফটিযান হরর জনরার ছয়টি গল্পের সমন্বয়ে বই অদ্ভুত আঁধার এক। এর মধ্যে তিনটি গল্প আমার কাছে খুবই সাধারণ মানের লেগেছে। খুব একটা চমৎকৃত করতে পারেনি। বাকি তিনটি গল্পের বিষয়ে পরে আসছি তার আগে সম্পাদনার ব্যাপারে কথা বলা প্রয়োজন। দৃষ্টিকটু ভুল বানান অনেকবারই মনোযোগ নষ্ট করেছে। এমনকি যোগসাজশ বাদে বাকি পাঁচটি গল্পে প্রচুর বাক্যগঠন দুর্বল, খুবই তাড়াহুড়াই ছাপ। যোগসাজশ, অ্যাপোক্যালিপ্স আর খুম, এই তিনটি গল্প দারুণ লেগেছে। বিশেষত যোগসাজশের লেখক জাকিউল অন্তু নিজের লেখার ধরণ, বর্ণনায় দারুণ সাহিত্যজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন। প্লটকে ঘিরে উপযুক্ত আবহ তৈরি করায় চমৎকার খেল দেখিয়েছেন এই লেখক। তাঁর জন্য শুভকামনা!
রেটিং - ৩.৫ প্রথম গল্প 'চুম্মা' চমৎকার। একদম শেষের ট্যুইস্টটা প্রেডিক্টেবল হলেও, চুম্মা আসলে কি এইটার ট্যুইস্ট এবং বর্ণনা দুর্দান্ত। 'আগমন' গল্পটি স্টোরিটেলিং মোটামোটি ভালো লাগলেও গল্প প্রেডিক্টেবল ছিল। 'যোগসাজশ' গ���্পের প্রকৃতির বর্ণনা খুবই ভালো। সাসপেন্সও খুব ভালো ভাবে বিল্ডআপ ছিল। 'অ্যাপোক্যালিপ্স' গল্পটির কনসেপ্ট বেশ ভালো লেগেছে। গল্পটি আরো একটু বড় করলে সেরা হত। 'আঁধার আর ঈশ্বর' এইটা একেবারেই টিপিকাল এবং প্রেডিক্টেবল গল্প। 'খুম' গল্পটি সেরা হয়েছে। একটানে পড়ে ফেলার মত, একদম কাহিনীতে ফোকাস ছিল। আসিফ রুডলফায দুইটি গল্পই ভালো লেগেছে এই সংকলনে। সামনে আরো আশা করি এই ধরনের সংকলন বের হবে।