Jump to ratings and reviews
Rate this book

৩ এ নেত্র

Rate this book

272 pages, Paperback

First published January 1, 2020

1 person is currently reading
20 people want to read

About the author

Amrita Koner

15 books4 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
5 (35%)
4 stars
6 (42%)
3 stars
2 (14%)
2 stars
1 (7%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 7 of 7 reviews
Profile Image for Dipankar Bhadra.
641 reviews61 followers
June 9, 2020
কৃষ্ণেন্দু মন্ডলের করা দুর্ধর্ষ প্রচ্ছদ ও বিভা পাবলিকেশনের দুর্দান্ত মুদ্রণে সমৃদ্ধ ব‌ইটিতে রয়েছে তিনজন লেখিকার তিনটি করে মোট ন'টি গল্প।‌ সেগুলো আমার কেমন লাগলো সেই নিয়েই দু চার কথা বলে সবাইকে একটু বিরক্ত করব..

১. অদ্ভুতুড়ে বৈঠকে.. অমৃতা কোনার : একটি গল্পের ভিতরে ছোট্ট ছোট্ট গল্পের পশড়া সাজিয়ে ক্লাইম্যাক্সে চমকপ্রদ কোনো টুইস্ট দিয়ে শেষ... এই স্ট্র্যাকচারটা নতুন না হলেও খারাপ লাগে না.. যদি তার ভিতরের গল্পগুলো ভালো হয়। আর এক্ষেত্রে সেগুলো বেশ‌ ভালো। শুধু শেষে দীর্ঘ কথোপকথনের পার্ট টা কে আরেকটু ক্রিস্প করলে ভালো হতো। ওভারল ভালো গল্প।

২. জাদুমহল.. বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী : ভাগ্যের ক্রমাগত পরিহাসের পর কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই কথকের কপালে জুটে যায় বিশাল এক প্রাসাদের মালিকানা। ফলে, ভাড়া বাড়ি থেকে সেখানে শিফট করতে সে বেশি সময় নেইনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছে‌ই...
মনে হচ্ছে তো.. সেই এক‌ ধরণের 'হন্টেড হাউস' টাইপ গল্পকে নতুন মোড়কে পরিবেশন করেছে? আজ্ঞে না, কী রান্না হচ্ছে বুঝতে পারলেও তার উপকরণগুলো কী কী.. তা আপনি ধরতে পারেন নি। আমার ক্ষেত্রেও সেম হয়েছিল। দুর্দান্ত গল্প।

৩. উড়োচিঠি.. ইপ্সিতা মজুমদার : নিজের জীবনের এক গুরত্বপূর্ণ ইনিংসে রিয়ার কাছে হঠাৎ‌ করেই আবির্ভাব ঘটে এক উড়োচিঠির (ইমেইল)। পত্র প্রেরক রিয়ার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ দুই এর ঘরের নামতার মতো গড়গড় করে বলে গেলেও রিয়া তার নাম ধাম কিছু‌ই জোগাড় করতে পারে না। শুভাকাঙ্খী বলে পরিচয় দিলেও রিয়ার জীবনে আস্তে আস্তে সে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। কেন? কী তার উদ্দেশ্য?
ছিমছাম গল্পের প্রাণভোমরাটি শেষে খুঁজে পাওয়ার পর বেশ চমকে গেছিলাম। দারুণ প্লট।

৪. নকল হ‌ইতে সাবধান.. অমৃতা কোনার : শহরের বুকে ঘটে চলেছে একের পর এক খুন... সিরিয়াল কিলার ও তার প্যাটার্ন কোনোটাকেই ধরতে বা বুঝতে পারছে না পুলিশ। ক্লু বলতে শুধু একটাই..ভিক্টিমের হাতে পেন নাইফ দিয়ে লিখে রাখা 'নকল হ‌ইতে সাবধান' কথাটি...
বেশ কিছুদিন আগে নাবিল মুহতাসিম-র "জীয়নবিদ্যা" ব‌ইটি পড়বার ফলে এই গল্পে খুনির মোটিভটি প্রেডিক্ট করতে আমার খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে বিশ্বাস করুণ, এতে গল্পটির মান বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয়নি। বরং হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের অফিসার ইন্দ্রজিৎ রায়ের সাথে রূদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চে এগিয়ে গেছি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে।

৫. মৃত্যুশীতল.. বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী: মনের অতলে লুকিয়ে থাকা বিদ্বেষ কীভাবে ঝড় বৃষ্টিতে আটকে থাকা চার বন্ধুর রিইউনিয়নের রাতকে ট্রিগার করে বা করছে.. সেই নিয়েই গল্প। ভালো গল্প। শেষটা মেলোড্রামাটিক হ‌ওয়ায় মনটা একটু খুঁত খুঁত করে এই যা।

৬. সি-ক্রেট.. ইপ্সিতা মজুমদার : গোয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়ে অহনা নিজেকে জড়িয়ে নেয় দু'জন বিদেশির মিসিং কেসে। কিছুটা ফেলুদার ছায়া অনুসরণ করে গল্প এগোলেও এর রহস্যের কুলকিনারা করতে গিয়ে অন্ধকারের যে রূপ উঠে এলো তা সামলাতে বেশ ক'দিন সময় লাগবে। অহনা আবার আসুক.. এরকম আরো কিছু অন্ধকারের গল্প নিয়ে।

৭. মির্জারাজার গুপ্তধন.. অমৃতা কোনার : পরপর ৬টি প্রাপ্তমনস্ক গল্পের পর ইতিহাস, গুপ্তধন ও অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষিদে বাড়িয়ে দেওয়া এই গল্পটি হারিয়ে যাওয়া কিশোরবেলার দিনগুলোকেই ফিরিয়ে আনল। ধ্রুব বন্দোপাধ্যায়‌ শুনছেন? সোনাদার নতুন অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্লটটা কিন্তু দারুণ...

৮. রাংচিতার শেকড়.. বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী : এ গল্পের টিজার দেওয়া যাবে না। শুধু এটুকুই বলব, এটি পড়ার সময় বুঝতে পারবেন গোটা গল্প জুড়ে এক অশুভ অন্ধকার ছায়া আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। শেষ না হ‌ওয়া অবধি সে আপনাকে ছাড়বে না। আর শেষ হবার পর? হুমম.. সে যাবে কিন্তু তার ইম্প্যাক্টটা থেকে যাবে... বেশ কয়েকটি দিন...

৯. ড্যান্সিং ইন রেন.. ইপ্সিতা মজুমদার : দেজা ভু কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে ছোট্ট পরিসরে এক দুর্দান্ত গল্প লিখেছেন লেখিকা। এক কথায় অ..সা..ধা..র..ণ!!

এতকিছু তো বলেই দিলাম। আবার কী বলব? হাইলি রিকোমেন্ডেড। পড়ে ফেলুন।

বি.দ্র: ঋজু গাঙ্গুলীর লেখা ভূমিকাটি জাস্ট ফাটাফাটি। আশা করছি.. লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশক জুটি আবারও এরকম একটি তুখোড় সংকলন পাঠকদের উপহার দেবেন।
Profile Image for Aniruddha Sau.
14 reviews1 follower
June 16, 2020
#ত্রিনয়ন_ও_ত্রিনয়ন_এট্টু_জিরো..

“ঘুরঘুটিয়ার সেই বিখ্যাত ঘটনাটার কথা আপনার মনে আছে নিশ্চয়?”
লালমোহন বাবু যথারীতি কাছাকাছি উচ্চারণের একটি ভুল ইংরেজি শব্দ প্রয়োগ করে বললেন, “সাডেনলি!”
তারপর একটু থেমে এক মুঠো ডালমুট গালে ফেলে চিবোতে চিবোতে জিজ্ঞেস করলেন, “ওই ধাঁধার মধ্যে পাসওয়ার্ড থাকার ব্যাপারটা তো? যদিও আমারই ব্যাডলাক, সে কেসে সঙ্গে থাকতে পারিনি আপনাদের। কিন্তু হঠাৎ এই কেসটার কথা উঠছে কেন ফেলু বাবু?”
“উঠছে। কারণ..”, এই পর্যন্ত বলে একটা চারমিনার ধরাল ফেলুদা, তারপর বুকসেলফ থেকে একটা ছোটখাটো সাইজের বই নিয়ে এসে লালমোহন বাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “কারণ আপনার এই ত্রিনয়ন এট্টুও জিরোবার অবকাশ দেয়নি আমাকে।”
লালমোহন বাবু আমতা আমতা করে বললেন, “কিন্তু এ বইয়ের নাম তো মশাই তিনে নেত্র, তারসঙ্গে ওই ত্রিনয়নের ইয়েটা তো ঠিক..!”
“ধরতে পারছেন না, তাই তো?”, সিগারেটের ধোঁয়ার একখানা রিং বের করে ফেলুদা জিজ্ঞেস করল, “আপনার কটা চোখ বলুন তো?”
লালমোহন বাবু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “আমি তো দুটো বলেই জানি।”
“ওইটাই আপনার সমস্যা। বুদ্ধিমান মানুষের আসলে আরো একটি নেত্র বা নয়ন থাকে, সেটাকেই বলে ত্রিনয়ন । বাইরে থেকে সেটা দেখা যায় না বটে, তবে সেটা থাকে মানুষের ভিতরে। আর সেজন্যেই দুইয়ে পক্ষ কিন্তু তিনে নেত্র। লিঙ্কটা ধরতে পারলেন?”
লালমোহন বাবু বেজার মুখে জবাব দিলেন, “সে তো বুঝলুম ফেলু বাবু, কিন্তু ওই ত্রিনয়ন কী কাজে লাগে সেইটাই তো বুঝলাম না।”
“এই যেমন আপনার নতুন কেনা পেনটা আপনি আমার হাতে ধরিয়ে দিতেই আমার তৃতীয় নয়ন কাজ করা শুরু করল। ঘন্টা দেড় দুই রিওয়াইন্ড করে স্পষ্ট দেখে এলুম আপনার জাপানি এম্বাসাডরের বেহাল অবস্থা।”
লালমোহন বাবু যথারীতি হাঁ হয়ে গেলেন দেখে ফেলুদা মুচকি হেসে আবার বলতে শুরু করল, “যা এই বাইরের চোখ দুটো দিয়ে দেখা যায় না, তা দেখতে গেলেই ওই তৃতীয় নয়নের সাহায্য নিতে হয়, বুঝলেন? আপনার মেটাল বডি’র দামি পেনটা হাতে নিয়ে বুঝলুম সেটা যথেষ্ট ঠান্ডা, যা বোঝায় আপনি আজ এসি গাড়ি চেপে এসেছেন। তার পর মোবাইলে পরপর দুটো মেসেজ আসার শব্দ শুনে সেটা পড়ে আপনি যখন বিড়বিড় করলেন ফাইভ হান্ড্রেড এইট্টি ফাইভ, বোঝাই গেল হয় ওলা নয় উবার। আর পেনটা দেবার সময় আপনার তর্জনীর ডগায় যে কালো কালির দাগ লক্ষ করলুম, সেটা দেখেই আমার তৃতীয় নয়ন দেখতে পেল, মোক্ষম মুহূর্তে আপনার গাড়িটা বিগড়াল আর আপনিও গাড়ির মেকানিজমের কিস্যু না বুঝে হরিপদ বাবুকে সাহায্য করতে গিয়ে কালিমালিপ্ত হয়ে গেলেন।”
লালমোহন বাবু বেশ খানিকক্ষণ কোনো কথা বলার অবস্থায় রইল না দেখে আমিই আসরে নামলুম।
“কিন্তু ফেলুদা বিভা পাব্লিকেশনের এই বইটা সত্যিই কি নামটা জাস্টিফাই করতে পেরেছে?”
“আলবত পেরেছে”, সিগারেটের শেষ টানটা দিয়ে ফেলুদা জবাব দিল, “তিন জন লেখকের তিনটি করে গল্প, সাথে প্রত্যেক গল্পেই ঘনীভূত রহস্য। আর যেখানেই রহস্য সেখানেই তৃতীয় নয়নের গুরুত্ব। কাজেই নামকরণ যে একেবারে সার্থক হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।”
লালমোহন বাপু এতক্ষণে ধাতস্থ হয়েছেন। এবার আর থাকতে না পেরে প্রশ্ন করলেন, “আর গল্পগুলো?”
“গল্পগুলোও ভালো। যথেষ্ট বৈচিত��রপূর্ণ। প্রাকৃত - অপ্রাকৃত মিলিয়ে বেশ একটা জমজমাট ব্যাপার আছে। কোনো গল্পে রহস্য অত্যন্ত স্পষ্ট, কখনও বা একটা অদ্ভুত রকমের অস্পষ্টতা। কোনো নির্দিষ্ট গোয়েন্দাকে বেস করে গড়ে ওঠেনি গল্পগুলো, রহস্যের প্যাটার্ণগুলোও কোনোটার সঙ্গে কোনোটাই মেলে না। সব মিলিয়ে ১৯৯ টাকায় এ বই কিনে আপনি ঠকেননি এটুকু বলতে পারি।”
আমি অনেকক্ষণ থেকেই কিছু বলব বলব করছিলাম, ফেলুদা তার তৃতীয় নয়নের সাহায্যেই কিনা জানি না, সেটা পরিষ্কার বুঝতে পেরে বলল, “বলে ফ্যাল তোপসে, পেট ফুলিয়ে লাভ নেই।”
আমি মনে মনে একটু গুছিয়ে নিয়ে বললুম, “কিন্তু ফেলুদা, আমার মনে হয় গল্পের সাইজগুলো বেশ খানিকটা কমিয়ে ফেলা যেত। মানে গল্পগুলোকে ঠিক নির্মেদ বলা যায় না।”
আমার সরল এই স্বীকারোক্তিতে ফেলুদা বেমক্কা যে এমন ক্ষেপে উঠবে কে জানত! খামোকা আমার মাথায় একটা গাট্টা কষিয়ে বলে উঠল, “তোদের এই হাস্যকর লজিকের সুবাদেই গপ্প উপন্যাসের চেহারা ক্রমশ কঙ্কালসার হয়ে অণু পরমাণু পেরিয়ে এক লাইনে এসে ঠেকেছে। সাহিত্যে মেদ কথাটাই তো অপ্রাসঙ্গিক রে তোপসে। সেভাবে ভাবতে গেলে যে কোনো ফিকশনাল ক্যারেক্টারই তো আসলে ফ্যাট, জেনুইন স্নেহ পদার্থ। যেদিন সাহিত্য থেকে তোদের এই তথাকথিত মেদটাই সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে, সেদিন সাহিত্য আর সাহিত্য না থেকে ঘটনাক্রমের জাস্ট একটা বিবরণী হয়ে উঠবে। সাহিত্যিকের জায়গায় স্থান করে নেবে খবরের কাগজের মধ্যবিত্ত রিপোর্টার।”
এই পর্যন্ত বলে ফেলুদা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “ওয়েল, আজ এই পর্যন্ত। একজনের সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে, এক্ষুণি বেরোতে হবে। তার আগে এইটুকুই শুধু বলি, অমৃতা কোনার, বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী এবং ইপ্সিতা মজুমদার, তিনজন লেখকেরই হাত বেশ ভালো। ডিটেইলিংয়ে যথেষ্ট মুন্সিয়ানা আছে। সব কটা গল্পই আমার যথেষ্ট ভালো লেগেছে, তারমধ্যে অদ্ভুতুড়ে বৈঠক, জাদুমহল এবং ড্যান্সিং ইন রেইন গল্প তিনটে আমার মন ছুঁয়ে গেছে। তবে রাংচিতার শেকড়, উড়োচিঠি গল্প দুটো যেভাবে শুরু হয়েছিল, শেষটা আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম আমি। আর মির্জারাজার গুপ্তধন গল্পটার ক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই নয়, এত সুন্দর একটা প্লট ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করলেন না লেখক, এটা আমায় যথেষ্ট দুঃখ দিয়েছে। জায়গায় জায়গায় গল্পটা রাজস্থানের ট্র্যাভেল লগ হয়েই তাল কেটেছে বলে আমার ধারণা। তবে হ্যাঁ, সম্পাদকের ভূমিকার কথাগুলো থেকেই ধার নিয়ে বলি, কলমের যত্ন নিলে, জর ফিকশনে বৃদ্ধ রাজার বদলে এই তিন নতুন রানী রাজত্ব করবেন বলেই আমি যথেষ্ট আশাবাদী।”

ফেলুদা যে আমার কথায় ভয়ানক বিরক্ত হয়েছিল, এবং সে বিরক্তির রেশ এখনও কিছুটা আছে আন্দাজ করেই বোধহয় লালমোহন বাবু বলে উঠলেন, “আরে তপেশ বাচ্ছা ছেলে। চারদিকে লোকজন যা বলছে, ও তাই শুনছে আর ও সেটাই বিশ্বাস করছে। তবে আমি আপনাকে একটা কথা বলছি ফেলুবাবু..”
এই পর্যন্ত বলেই ইচ্ছাকৃত একটা পজ দিলেন তিনি। ফেলুদার অভিব্যক্তিটা একবার মেপে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “আপনাকে তো আগেই একটা উপাধি দিয়েছিলুম আমি, এ বি সি ডি, মানে এশিয়াজ বেস্ট ক্রাইম ডিটেক্টর, আজ আরো একটা দিতে মন চাইছে মশাই আমার..”
ফেলুদাকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলবেন কি বলবেন না ভাবতে ভাবতে শেষমেষ বলেই ফেললেন ভদ্রলোক, “ইয়ে মানে আমার মনে হয় আপনাকে এবিসি মানে এশিয়াজ বেস্ট বুক ক্রিটিক বললেও অত্যুক্তি হবে না।”
স্বভাবসিদ্ধ একপেশে হাসিটা ফিরে এল ফেলুদার। তারপর সুতির একটা পাঞ্জাবি গায়ে গলিয়ে নিয়ে বলল, “ এবিসিডি থেকে একটা এলফাবেট কমে যাওয়াটা প্রমোশন নাকি ডিমোশন হিসাবে নেব সেটাই বুঝতে পারছি না।”
লালমোহন বাবু তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, “আরে প্রমোশন ডিমোশন কিছুই নয়, ধরে নিন আপনার মুকুটে আরো একটা পালক যুক্ত হল। তা রহস্য ত্রিবেণীর তৃতীয় বইটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করলেন না ফেলুবাবু!”
ফেলুদা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল, “আমার মতামতে আর কী আসে যায় লালমোহন বাবু? বৃহত্তর পাঠকের পছন্দ হলে বই মার্কেটে চলবে, নইলে নয়।”
এই বলে ফেলুদা বেরোবার উদ্যোগ নিতেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, “কিন্তু কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছ, সেটা তো বলে দাও!”
ফেলুদা মুখ ফিরিয়ে একটা চিরকুট এগিয়ে দিয়ে বলল, “যাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, তাঁর নাম পদবি এই ধাঁধাটায় লেখা আছে। একটাই ক্লু শুধু দিতে পারি তোদেরকে, রহস্য ত্রিবেণীর তিনটে বই ভালো করে পড়লে এ ধাঁধার সমাধান করতে তৃতীয় নয়নের প্রয়োজন হবে না।”
ফেলুদা এইটুকু বলেই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। লালমোহন বাবু চিরকুটটা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। কিন্তু বার দুয়েক পড়েই ‘হাইলি সাসপিশাস’ বলে রণে ভঙ্গ দিলেন। ধাঁধার নমুনাটা অগত্যা আপনাদের সামনেই রইল, দেখুন তো সমাধান করতে পারেন কিনা!

“দু’অক্ষরে নাম তার, স্ত্রী বাচক পদ
প্রথমায় ধেনু আছে, শেষটায় পদ।
নামের শেষের স্বর পদবির শুরু
দুই মিলে ঢকঢক গিলে নাও গুরু।
পদবিতে পাবে খুঁজে শিব অনুচরে
সংকেতে চিনে নাও, চটপট তারে।”
Profile Image for Kaushik Roy.
27 reviews8 followers
August 20, 2021
বইটার ভূমিকাতে ঋজু গাঙ্গুলী মহাশয় একটি প্রবন্ধের উল্লেখ করে বলেছেন, 'আজকের ক্রাইম ফিকশনের জগত কয়েকজন বৃদ্ধ রাজার বদলে এক ঝাঁক রানির দ্বারা শাসিত হচ্ছে।' এই বইটা বোধহয় বাংলা ক্রাইম ফিকশনে তার সার্থক বহিঃপ্রকাশ। আমার ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই একটা আক্ষেপ কাজ করত, যে বাংলায় অন্ধকারের গদ্য বলতেই লোকে ডিটেকটিভ বোঝে আর সঙ্গে একটা বোকা বোকা ভিলেন। সেখানে অন্ধকারের গদ্যগুলোতে যে বাংলায় দিন দিন (নাকি রাত রাত বলব?) অন্ধকারের গাঢ়ত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা পড়ে বেশ ভালো লাগল। এই বইতে তিন লেখিকার মোট নটা গল্প আছে। তারমধ্যে একটা কি দুটি বাদ দিলে গল্পের চরিত্ররা নায়ক নয়, গল্পের প্লটটাই গল্পের নায়ক। অন্ধকারের গদ্যে যেরকম একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে (যিনি সবার পরিত্রাতা), সেটা সেরকম নেই বলেই বোধহয় আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশি ভালো লেগেছে।
খুব খুব খুব ভালো লেগেছে দুটো গল্প। 'রাংচিতার শেকড়' আর 'ড্যান্সিং ইন রেন'। তিনজন লেখিকার লেখাই আমি প্রথমবার পড়ছি। এর আগে কোথাও পড়িনি। তিনজনেই অভিজ্ঞ, বিশেষ কিছু বলার নেই, তবে তিনজনের লেখার কিছু বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল, সেটুকুই বলি।
তিন লেখিকার মধ্যে সব থেকে ভালো উপস্থাপনা লেগেছে বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দীর। ওনার লেখার মধ্যে একটা আকর্ষণ আছে। পড়তে থাকলে কখন শেষ হবে ভাবতে হয়না, গল্পের ফ্লোতে এমনিই পড়া তরতরিয়ে এগিয়ে যায়। গল্পে পড়ার ফোকাস খুব বেশি সরানো যায়না। একভাবে পড়ে যেতে হয়। তবে লেখিকা বোধহয় অলৌকিক গল্পেই বেশি সাবলীল। সব গল্পের বেশ কিছু জায়গায় কিছু অতিপ্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা, সেটা পড়েই মনে হল। সেটা যদিও গল্প উপস্থাপনায় এক্সট্রা গতি দিয়েছে, অস্বীকার করে উপায় নেই।
ইপ্সিতা মজুমদারের গল্পের কন্টেন্টগুলো দুধর্ষ।প্রথম গল্পে সিয়ামিজ টুইন, দ্বিতীয় গল্পে এরোটিফোনোফিলিয়া আর শেষ গল্পে 'দেজা-ভু'! অসাধারণ। সত্যি বলতে আজকাল ভূত, গোয়েন্দা থ্রিলার অনেকেই লিখছে। এখনও নাইন্টিজের বাংলা সিনেমার মতো সিনেমা যেমন এখন আর চলে না, ঠিক তেমনি সেই একই রকম লিখলে পাঠক নতুনের স্বাদ পাবে কি করে? সেখানে দাঁড়িয়ে কন্টেন্ট নতুন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর প্রচুর অবকাশ আছে। শুধু একটু পরিশ্রম আর সাহস দরকার। লেখিকা সেটা করে দেখিয়েছেন। তবে গল্পের উপস্থাপনা কিছু কিছু জায়গায় আমার একটু খাপছাড়া লেগেছে। আরও মসৃণ হয়ত হতে পারত। সম্ভব�� লেখিকার নিজের সন্তানের (লেখাগুলি) প্রতি মমত্ব কিছুটা বেশি।সেজন্যই বোধহয় কঠিন হস্তে তাদের শাসন (এডিট) করেনি। সব কটা গল্পের শেষের টুইস্টগুলো বেশ ভালো, কিন্তু গল্পগুলোর শুরুর দিকে কিছু ক্ষেত্রে আরও খেলিয়ে খেলার সুযোগ ছিল, আর কিছুক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্লিসে ঘটনা না রেখে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যকিছু দিলে উপস্থাপনাটা বেশ জোরালো হত। স্পেসিফিকালি 'উড়োচিঠি'র কথাটা বলি? প্রথম অংশটা পড়তে পড���তে মনে হচ্ছিল, 'কার্তিক কলিং কার্তিক' সিনেমার একটা অংশ কাটা কাটা ভাবে আমায় পড়তে দেওয়া হয়েছে। তবে শেষের টুইস্টটাই মাথা ঘুরিয়ে দেয়। সেটার জন্যই গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে।
অমৃতা কোনারের লেখা এই উপরের দুই লেখিকার সেরা যে অস্ত্রদুটির কথা বললাম, সেই দুটিকে ব্যালেন্স করে মেশালে যে ককটেল তৈরি হবে সেরকম। কিছু নতুন কন্টেন্ট আছে, উপস্থাপনাও যথাযথ। আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লেগেছে 'নকল হইতে সাবধান' (ঐ যে ওটায় অন্ধকার বেশি তো! সেইজন্য!!)। মির্জারাজার গুপ্তধন গল্পে রাজস্থান ও তার চারপাশ, দূর্গ এসবের বর্ণনা বেশ ভালো। তবে আমার লেখিকার বিরুদ্ধে মৃদু একটি অভিযোগও আছে। সম্ভবত লেখিকা স্কুল বা কলেজ পালিয়ে থাকলে সেটা টিফিনের পরে বা দ্বিতীয়ার্ধে পালাতেন। 😊😊 কারণ, তিনটে গল্পতেই প্রথমার্ধে যতটা ছড়িয়ে গল্প বলেন, কোনো অজানা কারণে দ্বিতীয়ার্ধে তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে ফেলেন। সেই গল্পেই পাঠকের মনোযোগ বেশি থাকে যে গল্পের ওঠার আর নামার গ্রাফ মসৃণ। লেখিকার তিনটি গল্পের ক্ষেত্রেই ওঠার গ্রাফ অতিমসৃণ, কিন্তু হট করে যেন দশতলা থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে বলেন, "লে হালুয়া! গল্প শেষ!" এতোতাড়া কিসের? মির্জা রাজার গুপ্তধনে এই সমবন্টন বেশ ভালো, কিন্তু আবার অদ্ভুতুড়ে বৈঠড়ে ঠিক ততটাই অসম-বন্টন!
তবে শেষ একটা কথা না বললেই নয়। নটা গল্পেই ভূত নেই, মানুষ আছে তাও ভয় আছে; গোয়েন্দা নেই, তাও রহস্য আছে। এরকম গল্প সংকলন সত্যিই অনবদ্য।
Profile Image for Tashin Abdullah .
133 reviews1 follower
December 31, 2024
এই বছরে পড়া শেষ বই “তিন এ নেত্র”, যদিও বইটি অনেকদিন আগেই শুরু করেছিলাম কিন্তু নানান ব্যাস্ততায় এতদিন শেষ করা হয়নি। বিভা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত এই সংকলনে বর্তমান সময়ের তিনজন প্রখ্যাত লেখিকা—অমৃতা কোনার, বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী এবং ইস্পিতা মজুমদারের—লেখা মোট নয়টি গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলোর মূল প্রতিপাদ্য ভয়, রহস্য, সাসপেন্স, এবং থ্রিলারের মোড়কে মানুষের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরা। বইটির ফ্ল্যাপে যেমনটা বলা হয়েছে, এগুলো নিছক কালো কিংবা সাদার গণ্ডিতে আটকে নেই; বরং ধূসরতার নান্দনিক বর্ণনায় সমৃদ্ধ।

গল্পগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য ছিল যথেষ্ট। কিছু গল্প বেশ চমকপ্রদ ও মুগ্ধকর, আবার কিছু গল্পের ক্ষেত্রে যেন আরও কিছু চাওয়া থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দীর লেখা "রাংচিতার শেকড়" এবং "জাদুমহল" গল্প দুটি অন্ধকার এবং অতিলৌকিকতার দারুণ মিশ্রণে পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁর লেখা সাবলীল এবং গল্পের গতি এমন যে, একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। অন্যদিকে, ইস্পিতা মজুমদারের "উড়োচিঠি" এবং "ড্যান্সিং ইন রেন" গল্প দুটি তাদের নতুন কনসেপ্ট এবং আকর্ষণীয় টুইস্টের জন্য আলাদা করে উল্লেখ করার মতো। যদিও তাঁর কিছু গল্পে উপস্থাপনার মসৃণতার অভাব ছিল, তবে শেষের দিকের চমকগুলো গল্পকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

অমৃতা কোনারের গল্পগুলোতে রহস্য এবং প্লটের ভারসাম্য বেশ ভালো ছিল। বিশেষ করে "মির্জারাজার গুপ্তধন" গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে,যদিও গল্পটি বেশ দ্রুত শেষ হয়েছে,আরেকটু সময় নিয়ে শেষ করলে ব্যাপারটা আরো জমত। কিছু ক্ষেত্রে, তাঁর গল্পের দ্বিতীয়ার্ধে একটি তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যায়, যা গল্পের গতি এবং সমাপ্তির প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দেয়।

বইটির প্রধান আকর্ষণ ছিল এর গল্পগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্য—গল্পগুলোতে ভৌতিক উপাদান কম থাকলেও ভয়ের সঞ্চার হয়েছে মানবিক প্রবৃত্তি, মানসিক অস্থিরতা এবং অপরাধচক্রের মাধ্যমে। বেশিরভাগ গল্পেই নায়ক বা গোয়েন্দার উপস্থিতি নেই, বরং গল্পের প্লটই ছিল আসল নায়ক। এ দিকটি আমার কাছে বেশ নতুন লেগেছে।

তবে, বইটি নিয়ে আমার একটি মিশ্র অনুভূতি রয়ে গেছে। কিছু গল্পে ক্লিশে উপাদান গল্পের আসল মজা নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় টানটান উত্তেজনার অভাব অনুভব করেছি। গল্পগুলোর শেষটায় আরও সূক্ষ্মতা থাকলে পাঠকের মুগ্ধতা বাড়ত।


Profile Image for Ghumraj Tanvir.
253 reviews10 followers
December 26, 2020
দারুন একটা বই।বেশির ভাগ গল্পই দুর্দান্ত।
Profile Image for Diptanu.
56 reviews7 followers
June 6, 2024
ভাল - খারাপ মিলিয়ে বেশ ভাল সংকলন।
Displaying 1 - 7 of 7 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.