Jump to ratings and reviews
Rate this book

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল

Rate this book
খুলনার কলাপোতা গ্রামের ইন্দুর বিয়ে হলো কলকাতায়। দোজবরে মাতাল এক পুরুষের সঙ্গে। তিন সন্তান নিয়ে অল্পকালেই বিধবা। তারপর পূর্ব পাকিস্তান যেদিন হলো বাংলাদেশ, সেদিনই ছেনু মিত্তির লেনে প্রথম আঁচ পড়লো ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে। এই উপন্যাসে ছেনু মিত্তির লেনের ইন্দুবালা ভাতের হোটেল ছুঁয়ে থাকে এক টুকরো খুলনা আর আমাদের রান্নাঘরের ইতিহাস– মন কেমনের গল্প।

157 pages, Hardcover

First published July 12, 2020

193 people are currently reading
2034 people want to read

About the author

Kallol Lahiri

5 books131 followers
চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, ফিল্ম, টেলিভিশন ধারাবাহিক ও ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য রচনা এবং তার ফাঁকে ফাঁকে নিজের ব্লগে নানা স্বাদের লেখালেখি-এইসব নিয়েই কল্লোল লাহিড়ী। প্রকাশিত উপন্যাস গোরা নকশাল (২০১৭)। ইন্দুবালা ভাতের হোটেল(২০২০)। নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি (২০২২)। ঘুমিয়ে পড়ার আগে (২০২৪)। স্মৃতিগদ্য গ্রন্থ বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা (২০২১)। লেখক গোরা নকশাল এবং ইন্দুবালা ভাতের হোটেল উপন্যাস দুটির জন্য দুহাজার একুশ সালে ভূমধ্যসাগর পত্রিকার 'শ্রীমতী সাধনা সেন সম্মান'-এ সম্মানিত।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,121 (45%)
4 stars
883 (35%)
3 stars
360 (14%)
2 stars
89 (3%)
1 star
26 (1%)
Displaying 1 - 30 of 498 reviews
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
October 20, 2022
ইংরেজী প্রবাদ আছে,
"Don't judge a book by its cover"
নতুন আরেকটা প্রবাদ সংযোজন প্রয়োজন,
"Don't judge a book by its first chapter"

বইয়ের রেটিং ৪.৩১। Goodreads এ এরকম রেটিং এর বই ভালো হবে ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। হারুন ভাইয়ের রিভিউ এ কিছুটা নেগেটিভিটি দেখেছিলাম, অগ্রাহ্য করে পড়া শুরু করে বুঝেছি উনার রিভিউ টা সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত ছিলো।

বইয়ে একই ঘটনা বারবার উঠে এসেছে। স্মৃতির চর্বিত চর্বন। মনে হচ্ছিলো বুড়ো দাদী বা নানীর মুখে তার অতীতের কাহিনী শুনছি। একই কাহিনী বারবার বলে যান তারা, মাঝে মাঝে নতুন কিছু যোগ হয়। বাংলাদেশ এবং এর স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দলন নিয়ে লেখকের অজ্ঞতা আমাকে বিচলিত করেছে। একেতো বাংলাদেশ লেখকের নিজের মাতৃভাষার আরেকটি দেশ এবং তার নিজের প্রতিবেশি দেশ আর সর্বপরি এই দেশ নিয়ে সে বই লিখেছে, এই দেশ সম্পর্কে তার সাধারণ জ্ঞানের অভাব দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না।

বইয়ের প্রথম অধ্যায় পড়ে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলাম, এর পরের প্রতিটা অধ্যায় পড়ে ততটাই বিরক্ত হলাম। একই কাহিনীর ভিতরে নতুন একটু মশলা যোগ করে প্রতিটা অধ্যায়ে ভিন্ন স্বাদের খিচুড়ি রান্নার চেষ্টা। ২০২২ সালে সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরীর পর এই বই ছাড়া কোন বই এতটা বিরক্তি দিতে পারেনি।

২৭.০৯.২০২২

(প্রথম অধ্যায়টা পড়ার পর নিচেরটুকু লিখেছিলাম)
যাচ্ছি বিয়ে খেতে, সকালে কিছু খাইনি, বই পড়ছি আর জীভে জল আসছে। ভোজনরসিক মানুষরা এই বই প্রচণ্ড পছন্দ করবেন। হুমায়ূন আহমেদের কথা মনে পড়ছে কেনো যেনো, এই লোকটা প্রচুর ভোজনরসিক ছিলো।
ভোজনরসিক মানুষদেরকে এই বই উপহার দেওয়া যায়। আমি ইতিমধ্যে একজনকে নির্ধারণ করে ফেলেছি উপহার দেওয়ার জন্য।

০২.০৯.২০২২
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
April 20, 2021
রমজানে আমার বেশ ভালোই বই পড়া হচ্ছে। কারণ আমি একবারে সেহরী করেই ঘুমাতে যাই। তাই ছোট ছোট বইগুলো একবসাতেই শেষ করা যায়।

আজকে পড়লাম এই বইটা। বইটার কাহিনী হচ্ছে খুলনার কলাপোতা গ্রামের এক মেয়ে, নাম ইন্দুবালা, যার বিয়ে হয় কলকাতার এক মাতাল পুরুষের সাথে, যার কিনা এটা দ্বিতীয় বিয়ে। তারপর একদিন মাতাল স্বামীর মৃত্যু হয়, আর ইন্দুবালার তিনটা ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসা অবস্থা। কারণ বাবার দেওয়া গয়নাগুলোও মাতাল স্বামীর পেটেই গেছে।

তারপর এক বিহারী মাছবিক্রেতা মেয়ে 'লছমী'র সাহায্যে খোলা হয় 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। ' তারপর থেকে ইন্দুবালাকে দারিদ্র্যের মুখ দেখতে হয়নি, কারণ হোটেল বেশ ভালোভাবেই চলছিলো এবং ততোদিনে তাঁর ছেলেমেয়েরাও বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যদিও ইন্দুবালা ছেলেমেয়েদের থেকে কোন সাহায্য নিতেও রাজি ছিলোনা। কারণ সে তাঁর হোটেল নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলেন, যে হোটেল জুড়েই ছিল তাঁর বাপের বাড়ি খুলনার রান্নার স্বাদ, আর তাঁর গ্রাম কলাপোতার অসংখ্য স্মৃতি।

লেখক আমাদেরকে বর্তমান আর অতীত মিলে ইন্দুবালার গল্পটা বলেছেন, যদিও বুঝতে একদমই কষ্ট হওয়ার কথা না, লেখা খুবই ঝরঝরে এবং আপনি যদিও কলকাতার গল্প পড়ছেন, তারপরেও আপনাকে বারবার নিয়ে যাবে কলাপোতা গ্রামে, যেখানে ইন্দুর সবাই ছিল, মা, বাবা, ভাই, ঠাম্মি, মনীরুল, যাদের সবাইকে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনে। যে অভিমান করে ঠাম্মি এবং বাবার মৃত্যুর খবর শুনেও যায়নি, পরবর্তীতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা তাঁর ভাই এবং মাকে সহ কলাপোতা গ্রামের বাড়িটা জ্বালিয়ে দেয়।

আচ্ছা গল্পটাতো ভাতের হোটেল এর, তাইনা? তাহলে খুলনার একটা গ্রামের কথা কেন আসছে বারবার! কারণ ভাতের হোটেলের যে রেসিপি সবগুলোই খুলনায় ইন্দুবালার ঠাম্মি থেকে শিখা, তাই ইন্দু যখনি কিছু রাঁধতে বসেন তখনি সেই রান্নাটা কিভাবে শিখেছেন, সেই স্মৃতিতে চলে যান। বিউলির ডাল, চিংড়ির হলুদ ঝাল ঝোল, কচুবাটা, আলুপোস্ত, আমড়ার চাটনি, আম তেলের রান্না, অনেক রকমের আচার, খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল, মালপোয়া(আমার এখন খেতে ইচ্ছে করতেছে 😤) এমন সব লোভনীয় খাবারের বর্ণনা এতো সুন্দর করে লেখক লিখেছেন, আপনার নিশ্চিত খেতে ইচ্ছে করবে, যেমন আমার কচুবাটা ও খেতে ইচ্ছে করছে বইটা পড়ার সময়।

বইটাতে লেখক আরেকটা বিষয় ফোকাস করেছেন, তা হচ্ছে 'দেশভাগ'। এই টপিক সংক্রান্ত কোন বই পড়লে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে যায়, লাস্ট 'আগুনপাখি' পড়ে কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিল।

"এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া মানুষদের ভিড় বাড়ে। পাসপোর্টে ছাপ পড়ে। বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে মানুষ। এক সময়ে যে দেশটা নিজের দেশ ছিল সেটারই বেড়া টপকায়। প্রত্যেক বছর বৃষ্টি আসে নিয়ম করে দু'দেশেই। তবুও সীমান্তের দাগ মুছে যায়না সেই জলে। ওটা ইন্দুবালার দাদুর স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।"

এটা ইন্দুবালার ও স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়, তাইতো যখন তাঁর ছেলেমেয়েরা কলাপোতা ঘুরিয়ে আনতে চায় তাঁকে নিয়ে, সে যায় না, কারণ কার জন্য যাবে? সবাইতো এখন মৃত।

রিভিউ বেশ বড় হয়ে গেছে, কিন্তু ছোট্ট একটা কবিতা আছে, ওইটা বেশ ভালো লাগছে.....

"ঘুমের মধ্যে শুনতে পেলাম
শঙ্খ চূড়ের কান্না
'এ আনন্দ অসহ্য বোন;
দিসনে লো আর, আর না'।
জেগে উঠলাম; দেখতে পেলাম
আর না দেবার সুখে
কেয়া ফুলটি ঘুমিয়ে আছে
বিষধরের বুকে।"

সবশেষে বলতে চাই রান্না একটা শিল্প, যেটা সবাইকে দিয়ে হয়না। কল্লোল লাহিড়ী এখানে গল্পচ্ছলে রান্নাকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বইটা পড়ার সময় খাবারের বর্ণনা পড়ে আমি যেনো রান্নার মৌ মৌ গন্ধ পাচ্ছিলাম।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews417 followers
November 22, 2022
খাবারের নামগুলো অতিশয় লোভনীয়। বিউলীর ডাল,মালপোয়া, কুচো চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল,আলুপোস্ত,আমড়ার চাটনি,কুমড়োর ছক্কা ইত্যাদি ইত্যাদি।নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়।ভালোলাগা এইখানেই শেষ।বইটা ইন্দুবালার জীবন সংগ্রামের গল্প,বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার গল্প-এটা এখন সর্বজনবিদিত। কিন্তু সেই জীবনসংগ্রাম কাহিনিতে চাক্ষুষ করার সুযোগ হয় না।সব আগেই ঘটে গেছে,লেখক শুধু বর্ণনা করছেন।পাঠক দুশ্চিন্তা করার সুযোগ পায় না।শুধু বাংলাদেশে ইন্দুবালার ঘুরতে আসা বিষয়ক জটিলতার অধ্যায়ে কিঞ্চিৎ দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছিলো। বিচিত্র এক কারণে লেখক প্রতি মুহূর্তে পাঠককূলকে নিশ্চিন্ত রাখতে চান-ইন্দুবালা ভালো আছে,সব ঠিক আছে।কাহিনির কোনো বিকাশ বা ক্রমপরিণতি নেই।কয়েকটা জায়গা পড়ে মনে হয়েছে,লেখক ইন্দুবালার জন্য জোর করে পাঠকের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।পাঠকের স্মৃতিশক্তি সম্বন্ধেও লেখকের আস্থা নেই সম্ভবত।এজন্য ইন্দুবালা অনেক সংগ্রাম করেছেন,তিনি অনেক মহৎ-একথা অনেক অনেক অনেকবার বইতে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে পাঠক এক সেকেন্ডের জন্যেও ব্যাপারটা না ভুলে যায়।
কাহিনিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এসেছে বারংবার।হাস্যকরভাবে লেখকের ধারণা, ভাষার দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে!!!বই প্রকাশনার সাথে এতো এতো মানুষ জড়িত থাকে,কারোই সঠিক ইতিহাস জানা নেই?
দারুণ সুখপাঠ্য লেখা,তরতর করে পড়া যায়।বইটা বাতিঘরে আসা মাত্র হামলে পড়ে পড়েছিলাম।বলাই বাহুল্য,ব্যাপক আশাহত হয়েছি।

(৪ অক্টোবর, ২০২১)
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
January 25, 2021
খুলনার মেয়ে ইন্দুবালার বিয়ে হয়েছিল কলকাতায় এক নেশারু দোজবরের সঙ্গে। মনের ভালোলাগা চাপা দিয়ে সব ভুলে চলে গেলেন কলকাতায়।

তিনটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে বিধবা হলেন। পাওনাদার দরোজায়, ছেলেমেয়ের মুখে তুলে দেয়ার মতন এককণা খাবার নেই ঘরে, পাশে দাঁড়ানোর মতন কেউ নেই। এমন অসহায় অবস্থায় এক মাছ বিক্রেতা মহিলা একদিন দুটো টাকা হাতে দিয়ে বললে মা তোমার ঘরে আজ ভাত খাবো।
ইন্দুবালা যত্ন করে খাওয়ালেন তাকে। খুলনায় ঠাম্মার কাছে শিখেছিলেন এই বাংলার রান্না আর বিয়ের পর শাশুড়ীর কাছে শিখেছিলেন পশ্চিম বাংলার রান্না।
পরদিন সেই মহিলা আরো তিনজনকে সাথে নিয়ে এলো। এভাবেই যাত্রা শুরু ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের।

এখন ইন্দুবালার বয়স সত্তর। এই বয়সেও তিনি নিজ হাতে রেঁধে বেড়ে খাওয়ান সকলকে। সেই যে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন এবাড়িতে একদিনেরতরেও আর কোথাও যান নি। না তিনি ধম্ম করেন না, মন্দিরে তেমন যান না, কাশি গয়ায় যাননি কোনদিন। কারন তিনি অতিথির মাঝেই ঈশ্বরকে দেখেন। তাদেরকে পেট পুরে তৃপ্তি নিয়ে খেতে দেখে শান্তি পান। তিনি বিশ্বাস করেন সেই বানী জীবে প্রেম করে যেজন সেজন সেবিছে ঈশ্বর।

মাঝেমাঝেই ইন্দুবালা স্মৃতিকাতর হয়ে পাঠককে নিয়ে যাচ্ছেন তার ছোটবেলার খুলনায়। অকপটে বলছেন অনেককথা যা কোনদিন কাউকে বলেননি। ইন্দুবালার ব্যাক্তিগত কথার মাঝে চলে আসছে ১৯৪৭, ১৯৭১, নকশাল এর কিছু কিছু রাজনৈতিক কথাও।

কল্লোলবাবুর লেখার স্টাইল ভালো। পড়তে আরাম লাগে। সমস্যা একটাই খাবারের বর্ণনা পড়লে মুখে জল আসে। 😋
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,354 followers
February 22, 2022
আমি একেবারেই ভোজনরসিক নই। খাই অতি পরিমিত, পৃথিবীর অর্ধেক খাবার খাই না, কোন ধরনের শাকসব্জি খাই না। ইন আ নাটশেল, পরিপাকতন্ত্রের উসিলায় যাদের 'রিদয়' ছোঁয়া সহজ, সে গোত্রের মানুষ নই। সেই আমি গত প্রায় বছর দুই ধরে খুঁজে খুঁজে জমাচ্ছি রন্ধন + ভোজন বিষয়ক পুস্তকাদি।
সারকাস্টিক না ব্যাপারটা? হে হে৷

রন্ধন বলতে ঠিক ফুড রেসিপি বুক না। এপার- ওপার বাংলার বিভিন্ন ধরনের রান্না, তার সাথে জড়িত সংস্কৃতি এবং উৎসব নিয়ে বেশকিছু ইন্টারেস্টিং বই আছে। শুরুটা হয়েছিল Samran Hudaকে দিয়ে। এরপর ভীষণ ভাল্লাগলো মন্দার মুখোপাধ্যায়ের আশ কথা পাশ কথা পড়ে। সে ঘরানায় খুঁজেপেতে হাতে এলো ইন্দুবালার ভাতের হোটেল।

প্রথমেই বলে রাখি, চারের বেশি কিছুতেই একে দেবো না। মানে এই মুহূর্তে যতটুকু হাইপড হয়ে ইন্দুবালার কাহিনি ঘুরছে হাতে হাতে, তাতে ৫/৫ আসতে পারে বহু রিভিউতেই৷ কিন্তু আমার মনে হয়েছে লাহিড়ী মশাই শেষ অব্দি ব্যালেন্স রাখতে পারেন নি।
ভাজা জিরার গুঁড়ো আছে না, চটপটির ওপর ছড়িয়ে দিতে হয় একটু করে?
কিংবা পাঁচফোড়ন, শীতের সব্জিতে এট্টু দিলেই স্বাদ জমে যায়?
কিন্তু দিতে হয় পরিমাণমতো। বেশকম হয়েছে, তো গেল পুরো খাবারটাই! এতো আর ঘি নয়, পাতে বেশি পড়লে জিব খুলবে আরো!

ইন্দুবালা হোটেলের ব্যাপারটাও তাই! স্বামীহারা সিংগেল মাদার কিভাবে আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজের রান্না আর মনের জোরের বলে একা হাতে টেনে নিয়েছেন জীবন, ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, জীবে দয়া করেছেন আর দান করেছেন অন্ন-- এতটুকুতেই বর্ণনা পরিপূর্ণ ছিল।
ফেলে আসা দেশ আর দেশভাগের বেদনা, তাও ছিল পরিপূরক।

কিন্তু একই বইতে দাম্পত্যকলহ ভরা সাংসারিক জীবনের ব্যক্তিগত বেদনা, নকশাল বিপ্লব, ভাষা আন্দোলন, দাঙ্গা, দেশভাগ আর মুক্তিযুদ্ধ -- উনকোটি অনুপাতের ভীড়ে ইন্দুবালা নিজে হারিয়ে গেছেন অনেকবার।
যতটুকু দক্ষতার সাথে এই সমস্ত উপাদান নিয়েই জমিয়ে ক্ষীর বানানো যেতো, লেখক ততটা পারিপাট্য ধরে রাখতে পারেন নি ঠিক, আমার মতে।

শুধু ডেভিলস এডভোকেটগিরি না করে দুটো ভাল কথাও বলি এবার?

কুমড়ো ফুলের বড়া, বিউলির ডাল, আম তেল কিংবা মালপোয়া-- এরকম একেকটা খাবারের নামে একেকটা অধ্যায় শুরু৷ চিংড়ির হলুদ গালা ঝোলে কলমি শাক আর কচুবাটায় এক থালা ভাত সাপটে শেষ পাতে উঁকি দেওয়া চন্দ্রপুলি। খুলনার চুইঝালের উহ আহ সারিয়ে দেয় কৃষ্ণনগরের সরভাজার মিষ্টি স্বাদ। এমন মায়াময় ভাষায় ইন্দুবালা জানিয়ে দেন পুবের নানা নস্টালজিক খাবারের হাল-হকিকত, জিবে জল আসে বার বারই।

ঠাম্মার হাতের আচারের স্বাদে দুনিয়া ভোলা মেয়েটা সেই কোন যুগে ছেড়ে এসেছিল দেশ, ছেড়ে এসেছিল প্রেম, ছেড়ে এসেছিল সব!
বাঙাল বলে যাকে হতশ্রী করতেন জাঁদরেল শ্বাশুড়ি, গোড়ার দিকে, শেষের দিকে তাকেই ভর করে সংসারে রইলেন ত?
আর সংগে বটের ছায়া দিয়ে রইল ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। মদ্যপ জুয়ারি স্বামীর চিতার আগুন নেভার পর লছমী মাছওয়ালি যার গোড়াপত্তন করে দিয়েছিল!

সেই থেকে ঝড়ে- জলে -বন্যায়- কলেরায়- দাঙ্গায় ইন্দুবালার উনুনের আঁচ নেভে নি আর। সেই উনুনের ভরসায় ইন্দুবালা তারুণ্য হারিয়ে বার্ধক্যে পা দিয়েছেন, উড়িষ্যার উড়ে বামুন ধনঞ্জয়ের সাথে হাত মিলিয়ে শিলে বেটেছেন পোস্ত। বর্ষায় ছেনু মিত্তির লেন মউ মউ করে উঠেছে ভাঁপা ইলিশ আর গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে মুড়িঘন্টর মন কেমন করা সুঘ্রাণে!
বেলা আর বছর গড়াতে গড়াতে কালেক্টর অফিসের গলি থেকে হালের ফেসবুক কমিউনিটিতে ছড়িয়েছে ইন্দুবালার হাতের জয়গান!

পুরসভার লাইসেন্স নেয়া হয়েছিল সেই কবে!
সেই ক্ষয়ে যাওয়া এনামেলের সাইনবোর্ডের দরকার পড়ে না, চেনা বামুনের পইতা লেগেছে কবে আর! ইছামতীর পাড় ছেড়ে গঙ্গায় এসে স্বামী হারা, সম্বল হারা, ভরসা হারিয়ে ফেলা ইন্দুবালাকে ভরসা ফিরিয়ে দিয়েছে কপোতাক্ষের এঁচোড়ের ডালনা, মোচার ঘন্ট আর পাবদা মাছের সুবাস।

শিয়ালদহের ইস্টিশনে নেমে টিনের তোরঙ্গ ভরে যে শেকড়হীন জীবন একদিন নূতন করে শেকড় ছড়িয়েছিল ছেনু মিত্তির লেনের স্যাঁতসেঁতে বাড়িটায়, সে বাড়িতে, হারিয়ে যাওয়া বন্ধু লছমীর বিদায়বেলার আমন্ত্রণে বারান্দার একচিলতে রোদে একদিন পরিতৃপ্ত শংকাহীন মুখে ঘুমিয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ সারথি ইন্দুবালা...
Profile Image for Farhana.
325 reviews202 followers
May 8, 2021
আরও বেশ সকালে উঠে দেখছি বেশ চমৎকার একটা ঠান্ডা বাতাস আজ! বইটা পড়া শেষ করে হাতে গুণে দেখলাম গত ৫মাসে পড়া অন্তত ৫টা (একে যোগ করলে ৬টা) বইয়ের মূল থিম হল নস্টালজিয়া/ স্মৃতিকাতরতা অথবা মন কেমন করা মনে পড়ার সব গল্প! জানি না এ বছরই ফিকশন পড়তে গিয়ে আলাদা করে ব্যাপারটা রাডারে ধরা পড়ল কি না! মনে হয় এত স্মৃতিকাতরতা আর মনে পড়া কি ভাল? ইদানিং নন-অপটিমাল শব্দটা মনে মনে বেশ ব্যবহার করা হয় আর ভাবা হয় যে, "এসমস্তই হচ্ছে নন-অপটিমাল ফিলিং।" জানি না অনুভূতির অপ্টিম্যালিটি আর নন-অপ্টিম্যালিটি এই কনসেপ্ট টা কোন ফাঁকে কবে মাথার ভেতরে ঢুকে পড়ার পর থেকে এখন আবার বসতে পাওয়ার জন্য তালবাহানা শুরু করেছে!

জানিনা, আমার মনে হয় ভাতের হোটেল তো একটা উছিলা মাত্র। এই যে সময়ের সমান্তরালে এক বা একাধিক মানুষের জীবনের গল্প ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় সেখানে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল তো একটা উপলক্ষ মাত্র। এই যে সময়ের ফেরে স্পেস-হারানো অথবা নতুন স্পেস খুঁজে পাওয়া কিংবা স্পেসে আটকে পড়া এতগুলো মানুষ যে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের কমন ���্পেসে এসে মিলেমিশে যেতে পেরেছে, কিছু একটা নিয়ে মেতে থাকবার, আনন্দ করবার, নিজেকে ভুলিয়ে রাখবার এবং বিলিয়ে দেবার মন্ত্র খুঁজে পেয়েছে - এরকম একটা উৎস খুঁজে পেলে মানুষগুলো কি জীবনে একটু স্বস্তি বা আরাম খুঁজে পেত?

বইয়ের নাম আর প্রচ্ছদ দেখে সবসময়ই মনে হয়েছে বিভূতির হিন্দু হোটেলের মত বেশ পুরোনো এক সময়ের কথা হয়ত পাড়বেন লেখক। কিন্তু তা না করে হারানো সময় আর সাম্প্রতিকের মাঝে যে মেল বন্ধন ঘটালেন লেখক তা সত্যিই বেশ চমকপ্রদ! ইন্দুবালার গল্প শুনে মনে হয় এই যে এতগুলো সময়কে নিজের সাথে নিজের করে নিয়ে বয়ে চলা যে মানুষ টা কত শত মানুষের স্মৃতি নিজের ভেতরে চেপে রেখেছেন - কখনও কি আমারও এমন হবে?

বাংলাদেশের হিসেবে ইতোমধ্যে হয়ত হাফ লাইফে বা তার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে গেছি। আরও যদি অনেকগুলো বছর হাতে পাওয়া যায় তখন আমারও কি এরকম হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মুখ বারবার মনে পড়বে - হয়ত কোন বৃষ্টির দিনে, আকাশ জুড়ে মেঘ করলে বা রৌদ্র ফুটে উঠলে, কিংবা কোন পরিচিত শব্দে, ঘ্রাণে, স্বাদে, বা ছবিতে?

এটা আসলে ৫-তারা বই কিন্তু পড়ে আমার কেমন মন খারাপ হয়ে গেল। এই সকাল সকাল মন খারাপ করা দিনের শুরুতে তাই পেনালাইজ করলাম!
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
September 26, 2022
ইন্দুবালার রন্নাঘরে আমার ঢোকা হয়েছে বই হিসেবে তার মুখবইয়ের বিভিন্ন পোস্টে আসার আগে। লাহিড়ী সাহেব ইন্দুদেবীর হেঁশেলের গল্প তখন ব্লগে লিখতেন। কয়েকদিন আগে নতুন করে বইটার রিভিউ পড়ে আবার তার রান্নার এবং কল্লোলদার লেখার স্বাদ নেবার ইচ্ছা হলো।

খাবারের সাথে আমার মনের একটা সম্পর্ক আছে, নিবিড়তম! আমি খেতে তো ভালবাসিই, খাবার এর উপর ডকুমেন্টারি দেখতে, তার ইতিহাস পড়তেও ভীষণ ভালবাসি। তাই আমার ধাঁ ধাঁ করে বেড়ে যাওয়া ওজনের শরীর ও মন এই বই পড়বার জন্য উন্মুখ থাকবে তা তো জানা কথাই ছিল। আরেকটা কারণ ছিল বোধহয় এপার ও ওপার রান্নার মিলন। কারণ তা স্বচক্ষে দেখে আসছি আমার নিজের রান্নাঘরে, আমার দিদার হাতের খুন্তির নাড়ানাড়িতে, প্রায় বছর তিরিশ ধরে। ইন্দুবালা খুলনা হতে গিয়ে যেমন চুই ঝালের তেজ মেশালেন ওপারে, আমার দিদা সিরাকল থেকে এখানে এসে চিনি দিলেন চিংড়ির মালাইকারিতে, ডিম ভুনার ঘন সুরায়। ছিটা পিঠার ছ্যাত ছ্যাত শব্দে শীতের সন্ধ্যায় এখনো বুকের কাঁপন ধরে। তবে তা বেশিরভাগই সুখের। কারণ দুদিনের জ্বাল দেয়া হাঁসের মাংসের জোরালো ঝোল দিয়ে তা যাবে উদরে। বুড়ির কাছে শিখেছি বেগুন ভাজার আগে মশলা মাখিয়ে রোদে ফেলে রাখলে তাতে স্বাদ বাড়ে, যেমন জোয়ারে নদীতে বাড়ে পানি।

তাই বলছিলাম, ইন্দুবালার ভেতরে আমি আমার চিরায়ত রাঁধন প্রিয় দিদাকে দেখি বলেই বোধয় তার প্রতি আমার একটা আলাদা টান আছে। মাতাল স্বামী কপাল থেকে বিদায় নিয়ে স্বর্গে গেলেও মুক্তি পেয়েছে ইন্দুবালা চুলোর গরমে, মশলার গন্ধে কারণ সে ভালবেসেছিল সেই তাত, হাড়ি, ভাত খেয়ে পেট ভরা মানুষের মুখের হাসি। খাবারের গল্প ছাপিয়ে বারবার এক দেশ ছাড়া, বাড়ি ছাড়া নারীর মনের গল্প মিলে যায় চুলোর কালিতে, ভরে দেয় আমাদের মন। এক অজানা অচেনা শহরে সম্বলহীন অবস্থায় সন্তান-সন্ততি নিয়ে কিভাবে ঝড় সয়ে লতার মতো বেড়ে ওঠা যায়, ইন্দু পাকঘরের পিঁড়েয় বসে সে ছবি আমাদের এঁকে দেখায়। তো ঝরঝরা করকরা লেখনী, সদ্য নামানো গরম ভাতে ঘিয়ের গন্ধ পাঁক দিয়ে উঠে যেমন। পাঁচটি তারা তাই গোশত রান্নার শেষে দেওয়া ভাঁজা জিরে গুড়োর মতো দিলাম আজ ছড়িয়ে।

গরম থাকতে থাকতে পড়ে ফেলা ভাল।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
April 14, 2021
কিছু কিছু বইয়ের ব্যাপারে লিখতে গেলে বিশেষণে টান পড়ে যায়। অনুভূতি গুলো কোথায় যেন পাক খেতে থাকে, শব্দ হয়ে আর ধরা দিতে চায় না। সেসব বই মানুষ ধারণ করে হৃদয়ে.. মানুষের মুখে মুখে ফেরে সেসব গল্প।

কল্লোল লাহিড়ী 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' বইটা খুব সম্ভব এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত বই। হার না মানা এক জীবনের গল্প। আর সেই সঙ্গে বইয়ের পাতায় পাতায় অতি মায়ায়, যত্নে রান্না হয়েছে একের পর এক সুস্বাদু সব খাবার। আচ্ছা, আর ভণিতা না। খুলনার কলাপোতা গ্রামের কন্যা ইন্দুবালা। আট-দশ জন কিশোরীর মতোই আমোদে আহ্লাদে কেটে যাচ্ছিল দিন। হঠাৎ করেই ছন্দপতন। বিয়ে হয়ে যায় তার। কাঁটাতারের বেড়া পেড়িয়ে, পাসপোর্ট-ভিসার হাঙ্গামা ডিঙ্গিয়ে, বাবা-মা-ভাই-ঠাম্মা, প্রথম প্রেম, আজন্ম শৈশব লালিত গ্রাম-সব কিছু ফেলে সংসার করতে চলে আসে কলকাতায়। বেশ ক'বছর পর হঠাৎ আবিষ্কার করে জীবনটা কেমন শূন্য হয়ে গেছে তার। তিন তিনটা ছোট বাচ্চা নিয়ে সে সম্পূর্ণ একলা, আর পড়নে... সাদা থান।

রান্না একটা শিল্প। সেই শিল্পকে সুনিপুণভাবে যে ধারণ করে, সেই তো শিল্পী। ইউটিউবের কল্যাণে নিজেদের রান্না ঘরে তৈরী হচ্ছে দেশ -বিদেশের খাবার। নিজ দেশের খাবার, নিজস্ব সংস্কৃতির কথা মনে রাখি ক'জনে? তাই তো ইন্দুবালার অতি সযত্নে তৈরী করা কুমড়োর ছক্কা, বিউলীর ডাল, কুঁচো চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, মালপোয়া, কচুবাটা, ছ্যাঁচড় প্রভৃতি বইয়ের পাতায় পড়ে মনে হয় আহা! সেই শিল্পীর শিল্প যদি একটাবার চেখে দেখা যেতো! এদিকে আমি ভেবে মরছি, কে বড় শিল্পী? ইন্দুবালা? নাকি ইন্দুবালার স্রষ্টা কল্লোল লাহিড়ী? যে মায়ায়, যে যত্নে এতো জীবন্ত চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন, তার লেখার মায়ায় পড়তে যেয়ে মনে হচ্ছিল, ঐ তো উনুনে বড় কড়াইয়ে ফোড়ন দিলেন ইন্দুবালা আর গন্ধটা কেমন মৌ মৌ করে ছড়িয়ে পড়ল চারপাশ... এহ! যা.. রোজার প্রথম দিনেই কি সব ভাবছি! লেখকের শক্তিশালী লেখনীতে এক হয়ে গেছে এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলা। রাজনীতি, সমরনীতি বুঝেন না ইন্দুবালা। তিনি বুঝেন কেবল জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ইশ্বর। এটা কেবল কোন ভাতের হোটেলের গল্প না, জীবনের চেয়েও বড় কিছু। বৃদ্ধা ইন্দুবালার স্মৃতিচারণায় কাতর হয়ে কতোবার যে চোখের কোণে পানি চিকচিক করে উঠেছে.. ইয়ত্তা নেই। ভালো থাকুক ইন্দুবালা... ❤️





বইটায় একটায় একটা জায়গায় একটু কনফিউশন চোখে পড়েছে। :3 কার ভুল বুঝতেসি না। এক জায়গায় লেখা ইন্দুবালার ভাই মুক্তিযুদ্ধে মারা যায়, ঘর বাড়ি সব জ্বালিয়ে দেয় খান সেনারা। আরেক জায়গায় লেখা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তার ভাই। ৫২ আর ৭১ কি গুলিয়ে গেল লেখায়? কনফিউশন কাটলে পুরো পাঁচ তারাই দেব -_-
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews84 followers
January 12, 2023
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' উপন্যাসখানায় গল্প খুব একটা নেই। খুবই সরল গল্প।দেশভাগের পর পূর্ব বাংলার এক মেয়ের পশ্চিমবাংলায় জীবন-সংসারের করুণ কাহিনী। এরকম মেলোড্রামাটিক গল্প আমরা আগেও অনেক পড়েছি,শুনেছি,দেখেছি। তবু ইন্দুবালার কাহিনী পড়ে আমাদের মন খারাপ হয়। কল্লোল লাহিড়ীর intense narrative অগ্রাহ্য করা যায়না। বর্ণনার গুণে এই পরিচিত গল্প, পরিচিত অশ্রুজল চোখে ডেকে আনে।

আমার মাতৃদেবীর কৃপায় দেশি বাঙালি খাবারের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগ জন্মাবার অবকাশ হয়েছে। যেসব খাবার আমার বন্ধু-বান্ধবী অনেকেই চাখেনি বলে স্বীকার করেছেন, সেসব অনেক খাবার আমার জননী-ভাগ্যে নিয়মিত আস্বাদন করার সৌভাগ্য হয়েছে। যেমন - নারকেল কুড়ো দিয়ে ঝাল হাঁসের মাংস, কাঁচা কাঠালের টক, মাসকলাই ডাল ও শিম দিয়ে সেদ্ধ ভাত,ধুন্দুলের ভাত ইত্যাদি। এই বইতে এরকম নানারকম খাবারের বিবরণ রয়েছে।আসলে বইটি বিখ্যাত ই হয়েছে সেজন্য। বাঙালি খাবারের এমন মুখরোচক আর স্বর্গীয় বর্ণনার জন্য হলেও বইটি পাঠ্য।
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
December 11, 2022
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার 'মায়া-মাখা' সুরে মাতোয়ারা হয়ে ইঁদুরের মত 'আবেগ' সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে যেয়ে ব্রেক কষলাম। কদমে কদমে মায়া মমতা আবেগ গেলানো এবং জীবন সংগ্রামের ভাসা ভাসা কেচ্ছা বাদ দিয়ে ইহা একটি পুষ্টিহীনতায় জর্জরিত গল্প। ( মানুশ কি কেবল খাবারের নাম-গন্ধ শুইকা উৎলা হইয়া গেল ? )
Profile Image for Ashkin Ayub.
464 reviews228 followers
August 27, 2021



এই বইটা পড়তে গেলে আপানাকে হয় ভোজন রসিক হতে হবে, অথবা হয়ত প্রচণ্ড আবেগি - এমনটাই লোকে বলে। হয়ত কোন আধো আলোছায়া ডিনারের বসে আছেন অভিজাত কোথাও, দেয়ালের ওপারে মফস্বল থেকে উঠে আসা হাজার কষ্টের ঝুলিওয়ালা কোন বাবুর্চি বা হালের শেফ আপনার জন্য খাবার প্রস্তুত করছে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নাই আপনার সঙ্গীর। খেয়াল নাই আপনার দিকেও, শীতলতা প্রচণ্ড চারদিক। আবার ঝুম বৃষ্টির দিনে আপনার মা আপনাদের জন্য মাষকলাই এর ডালের খিচুড়ি, গরম গরম বেগুন ভাজা, শুঁটকি ভর্তা আর ডিম ভাজি করছেন, আর আপনি বৃষ্টির কোন ভিডিওর সাথে স্রোতস্বিনী গান জোড়া দিচ্ছেন।

অথবা ভাবুন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছেন জীবনের প্রথম ট্যুরে। ঘুরতে গিয়ে পকেটে টান পড়লো। অনেক খোঁজাখুঁজি করে খুব সস্তা দেখতে রাতের খাবার এর জন্য গেলেন। কয়েকজন মাছ/মাংস নিলেও আপনার অবস্তা একটু বেশিই খারাপ। ভাল আর ডাল। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছেন। হটাৎ হোটেলের বাবুর্চি আপনার ভাতের প্লেটের পাশে একটা বাটিতে দুইটা আলু, ছোট একটা মাছের টুকরা আর বেশ খানিকটা ঝোল রাখলো। অর্ডার দেইনি বলতেই হাতে চাপ দিয়ে বলল 'খেয়ে নেন, সামান্য এক টুকরাই তো, দাম দিতে হবেনা'। আসলেই সামান্য, কিন্তু কেন জানি খেতে খেতে চোখ ভিজে যায়। কেন ভিজে, কে জানে!

খাবার জিনিসটাই খুব অদ্ভুত। কত রকমের কত কিছু কত পাওয়া যায়, খাওয়া যায়! খাবার নিয়ে কত্ত স্মৃতি, কত্ত গল্প আর সামান্য সামান্য অনুভূতি। বিউলীর ডাল, আম তেল, ছ্যাঁচড়া, মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, চন্দ্রপুলি...নাহ, এইসব কোনটাই আমি খাইনি। সুযোগ পেলে খেয়ে দেখবো হয়ত। এপাড়- ওপাড় দুই জায়গার রান্নায় কিন্তু বেশ মজার কিছু পার্থক্য আছে। কেউ কোনটা বেশি দেয়, তো কেউ কোনটা কম দেয়, কিন্তু দুই রসুইয়ের রান্নাতেই ভালোবাসার কোন কমতি নেই!

বই নিয়ে তেমন আর কি বলবো, চাইলে পড়তে পারেন, ভাল লাগবে কি না লাগবে সেই গ্যারান্টি না দিতে পারলেও ক্ষিদা লাগবে, এটা কনফার্ম। ওহ! মায়ের কাছে আবদার করলে, রান্না তো করে দিবেই, কিন্তু সাথে সাথে একটু সাহায্য করবেন, মহামারীর সময়ে সবাইকে নিয়ে সবাই ভাল থাকুক নিজেদের মতো।
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews621 followers
November 23, 2022
দুই টাকা দিয়ে শুরু হয় ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের। প্রথম কাস্টমার লছমী। তারপর আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি ইন্দুবালাকে। ছেলেমেয়েরা যার যার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। মায়ের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা প্রচুর। বুড়ো বয়সেও ইন্দুবালা নিজের হাতে হোটেলের রান্না করেন। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ জন লোক খায়। ছেলেমেয়েদের জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে হোটেল নিয়ে পড়ে থাকতেই তার স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।

মোটা দাগে এই হচ্ছে কাহিনী। গল্পটা তেমন আহামরি মনে হয়নি। কিছু জায়গায় মনে হয়েছে অনেক কিছু বলা হয়নি। যেমন এক ফ্রেন্ড বলছিল, ইন্দুবালাকে তেমন স্ট্রাগল করতে হয়নি। আমার মত হচ্ছে, স্ট্রাগল যথেষ্ট করতে হয়েছে। মাতাল স্বামী নিয়ে সংসার আর দুই টাকা দিয়ে হোটেল শুরু করার ব্যাপারটা নিশ্চয় এত সহজ ছিল না। কিন্তু বইয়ে এই বিষয়গুলোর কোন বিবরণ নেই। এইসব বিবরণ আসলে এই বইয়ের মূল ফোকাস ছিল না। আবার এও ঠিক, এইসব বিবরণ যদি জুরে দেয়া হত তবে অনেক কমন কাহিনী হয়ে পড়ত।

খারাপ দিক থাকলেও মন কেড়ে নেয় ইন্দুবালার অতীতের স্মৃতিচারণ। আর গল্পের মূল আকর্ষণ খুব সাধারণ তরিতরকারি দিয়ে অসাধারণ সব রান্না। বই পড়ে আমার মত সবজী চোরেরও শাক-সবজী খাওয়ার শখ হবে। ভালো মন্দ মিলিয়ে তিন তারাই দিতাম। কিন্তু লেখনী ভালো লেগেছে। সহজ সাবলীল লেখনীর জন্য ৩.৫ তারা।

লেখকের কাছে একটাই প্রশ্ন, ছেনু মিত্তির লেনের বাড়িটা আসলে কত বড় যে রোজ এত লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়?
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
February 3, 2022
বছর তিনেক আগে একটা মালায়ালাম মুভি দেখেছিলাম। উস্তাদ হোটেল। না এই বই এর সাথে মিল নেই বা থিমের সাথেও মিল খুব একটা নেই। যেটা আছে সেটা হলো রান্নার জন্য ভালোবাসার মিল। সেখানে রাঁধক সব ছেড়ে গেছিল আর এখানে রাঁধুনি ভালবাসার কাছে শেষ নিশ্বাস ত্যগ করেছেন।

এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা চিরকালের জন্য একা হয়ে যান। তখন তারা সেই একাই একটা জগতের মধ্যে বাঁচতে ভালােবাসেন। ইন্দুবালার সেই নির্জন জগৎ হলাে তাঁর ভাতের হােটেল।


গল্পটাকে কাল্পনিক বায়োগ্রাফি বলা চলে। তবে যেটা সবচেয়ে মুগ্ধকর লেগেছে আমার কাছে সেটা হলো অতীত, বর্তমান আর একটা ঘটনার পৃষ্টে অন্য ঘটনা মেখে দিয়েও লেখক কত চমৎকার ভাবে গল্প লিখেছেন। না আসে একঘেয়ামি না বুঝার কষ্ট। কষ্ট একটু হয়েছে যদিও শব্দ গুলো পড়ার ক্ষেত্রে।

নিজ গ্রাম পরিবার ছেড়ে আসার কষ্ট, ভালোবাসার কষ্ট, ভুলে থাকার আকাক্ষা কি নেই এই গল্পে। কাছের কোনো মানুষের অসুখ হলে আর যদি মনে হয় হয়তো আর কখনো দেখা হবেনা কথা হবেনা এটা ভাবলেই বুকটা কেমন ফাঁকা হয়ে যায়। যেটা এই গল্প পড়ে হচ্ছিলো আমার। অজানা একটা টান আছে এই বইয়ে। নিজেদের কিছু কথা আছে লুকানো। আছে গ্রামের কথা, আছে শহরের কথা। আছে ভালোবাসা উজাড় করে দেবার কথা, আছে উজাড় করে পাবার কথা। সর্বোপরি চমৎকার বই। ভাললাগার মতো বই। ভালবাসার মতো বই।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
April 25, 2021
বর্ষাকাল এলেই আমাদের বাড়িতে 'শুটকি বড়া' নামক এক ধরনের খাবারের দেখা পাওয়া যায়। এর জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন হয়, বৃষ্টিতে ভিজে টসটসে হয়ে ওঠা কুমড়ো পাতার। তারপর শুটকির কাটা ছাড়িয়ে একটু রসালো ভাবেই ভর্তা করা হয়। সেই ভর্তাটা আবার কুমড়ো পাতায় মুড়িয়ে, বেসনে চুবিয়ে তেলে ছাড়া হতো। ডুবো তেলে বেশ কিছুক্ষণ সাতার কেটে তবেই খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতো সেসব।

এর সাথে আবার মুসুর ডালের ঘন চচ্চড়ি হতো। সামনে থাকা ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের পাশেই চুপটি করে একটা গন্ধরাজ লেবু ও রাখা থাকতো। ভাতে যখন সেটার রস ছড়াতাম তখন শুধু ভাতেই নয়,সমস্ত ঘরেই যেন গন্ধরাজ লেবুর সুবাস ছড়িয়ে পড়তো।

লেবুর রস আর ডাল মাখা সামান্য একটু ভাত মুখে নিয়ে, সদ্য ভাজা ঝালঝাল শুটকি বড়ায় যখন প্রথম কামড়টা বসাতাম, চোখদুটো আবেশে বন্ধ হয়ে যেতো। শুটকি বড়ার মচমচে অথচ রসালো স্বাদ,গন্ধরাজ লেবুর মন কাড়া ঘ্রাণ,ডাল চচ্চড়ির মাখোমাখো আদর সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়েই যেন অনুভব করতে পারতাম।

এহহে....ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি না তো? আসলে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল বইটা আমার কাছে মায়ের হাতের সেই শুটকি বড়া আর ডাল চচ্চড়ির মতোই। প্রত্যেকটা কামড়েই স্বাদে,আদরে, আবেশে মনটা ভরে উঠছিল। মায়ের করা বিশেষ খাবারটা শেষ হওয়ার পর যেমন পরম তৃপ্তি পেতাম,ইন্দুবালা ভাতের হোটেল আমাকে সেই তৃপ্তিই দিয়েছে। এছাড়াও নানান মুখরোচক খাবারের বর্ণনা থাকায় এমনিতেও বারবার মাকে মনে পড়ছিল। এই বইটি যেন 'মায়ের মতোই ভালো'।

আর, লেখক কল্লোল লাহিড়ীকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। তিনি যদি আর কখনো একটা বাক্য ও না লিখেন, এই ইন্দুবালা ভাতের হোটেলটাই তাকে অমর করে রাখবে।

সবাইকে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে স্বাগত। হোটেলে ঢুকার আগে আজকের মেন্যু��া চেক করতে ভুলবেন না যেন!
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews771 followers
August 7, 2023
বহুদিন এমন প্রাণভরে মায়ায় জড়ানো বই পড়িনা!

আমি ভোজনরসিক নই। আবেগের অনুভূতিও পারলে কৌটার মধ্যে লুকিয়ে রেখে দেই যেন কেউ টের না পায়। তবু কিছু কিছু বই থাকে এমন দরদ দিয়ে লেখা যে ভেতরের শক্ত ভিত হুরমুর করে ভেঙে চুড়িয়ে দিয়ে যায়। ইন্দুবালার ভাতের হোটেল তেমন এক বই। দেশ ছেড়ে এসেছি আজ এক বছর পুরালো। বাংলা অক্ষরের ছোঁয়া পাবার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকে সারাটাক্ষন। কিন্ডেলের কল্যানে ইংরেজি বই পড়া হলেও বাংলা বই এখনও চারকোনা ডিজিটাল স্ক্রিনে পড়ার অভ্যাস ওভাবে গড়ে উঠেনি। তবু বুকস্টাগ্রামের অসংখ্য রিভিউর লোভে পড়ে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল হাতে না নিয়ে পারলাম না। ভাগ্যিস নিয়েছিলাম! তা না হলে এই মায়ামাখা বইখানি অপাঠ্যই থেকে যেতো বহুদিন।

রান্নার ব্যাপারটা যে শিল্প তা বহু আগেই টের পেয়েছিলাম। সেই শিল্পের গ্রাফিক বিবরণ দিতে গিয়ে কল্লোল লাহিড়ী যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তার জুড়ি মেলা ভার। বর্ণনা পড়তে গিয়ে আমার মতো অভোজনবিলাসীর ও পেটে মোচড় দিয়ে উঠছিল বারবার। আহা, কতদিন দেশী খাবারের স্বাদ পাইনা!

গল্পে গল্পে বেলা বাড়ে। আর আমরা জানতে পারি ইন্দুর জীবন গাঁথা, প্রথম প্রেম, প্রতিটি খাবারের সাথে জড়িয়ে থাকা আবেগের গল্প, দেশভাগের যাতনা। ইন্দুবালার সাহসী সংগ্রামের গাঁথা পড়তে পড়তে আমরাও তার কিছুটা সাহস বুকের মধ্যে পাই। আর বুঝতে পারি, দিনশেষে মানুষ বড় একা!

পাঁচ তারা পাবার মতোই একটা বই।
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
August 13, 2021
বইয়ের নাম ইন্দুবালা ভাতের হোটেল হলেও শুধু খাওয়াদাওয়া নিয়েই বইটা না। বরং জীবনের শেষপ্রান্তে থাকা এক চিরসবুজ বৃদ্ধার স্মৃতিচারণমূলক কাহিনী। বৃদ্ধার স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন পদের খাবারের। যে খাবারগুলো পরিবেশন করা হয় বৃদ্ধার একমাত্র সম্বল হোটেলটাতে। খাবারগুলো খুবই সাধারণ কিন্তু বৈচিত্রময়।
পাবলিক রিভিউ, হাইপ সবকিছু মিলিয়ে যতটুকু আশা করেছিলাম, তার ধারের কাছেও নয় বইটা। বলা যায় সাধারণ-ই। নকশাল আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, জসীমউদ্দীন, মীর মশাররফ হোসেন, হিন্দু-মুসলিম যুবতীর না হওয়া প্রেম বারবার এসব টেনে এনে অতিরিক্ত আবেগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন লেখক। কিন্তু আবেগটা সাধারণ পর্যায়ে রাখলেই মনে হয় বেশি মানাত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর ভাষা আন্দোলন দুইটা ভিন্ন বিষয়। দুয়েক জায়গায় দেখলাম, ‘বাংলা ভাষার রাষ্ট্র’ তৈরির যুদ্ধ বলা হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধকে। আর বৃদ্ধার স্মৃতিচারণের ভেতরে, বৃদ্ধার দাদীর শাশুড়ির স্মৃতিচারণ অংশটা মনে হয়েছে জোর করে ঢোকানো।
বইয়ের পজিটিভ দিক হল, অচেনা পরিবেশে স্বামিহীন বৃদ্ধার স্ট্রাগল, একহাতে হোটেল সামলানো, হার না মানা মানসিকতা। লছমী চরিত্রটা সংক্ষিপ্ত হলেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভালো লেগেছে।
সবমিলিয়ে বইটা সাধারণ-ই বলা চলে। লেখনশৈলীও আহামরি নয়। আমার মধ্যে অতটা আবেগ জাগাতে পারেনি। খাদ্যরসিক হওয়া সত্ত্বেও বইটা খুব বেশি উপভোগ করতে পারলাম না। যাইহোক, সময় থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
April 28, 2023
'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' এক অদ্ভুত মায়াময় উপাখ্যান। যেই উপাখ্যান খোলার শুরু থেকেই চোখের কোণে জমতে থাকা শিশিরকণা একেবারে শেষে এসে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে ইন্দুবালার দীর্ঘশ্বাস গুলোর মতই।

বেশ কিছুদিন আগে একটা রিভিউ তে প্রায় এমন কিছু কথা পড়েছিলাম। তখন যে কথা গুলো মনের ভেতর এতটা গেথে গেছে তা বুঝতে পারিনি। আজ যখন লিখতে বসলাম তখন টের পেলাম। কিন্তু মনেও করতে পারছি না কার রিভিউ ছিল। তবে এটুকু বলতে পারি আপনি নিশ্চয় আপনার লেখা দিয়ে মনে দাগ কাটার ক্ষমতা রাখেন!

হয়তো পড়তে গিয়ে অনেকেই অবাক হচ্ছেন কি ব্যাপার বই নিয়ে কথা, লেখক নিয়ে কথা সেসব কই?
প্রতিদিন যে একই বিষয়ে কথা বলতে হবে তা কে বলল!

ইন্দুবালার দিয়ে আমার ২০২৩ সালের গুডরিডস চ্যালেঞ্জ এর #১০০-তম-বই শেষ হলো! কে জানত ৪ মাসেই ১০০ বই শেষ হবে?
তবে আমরা এত শত বই পড়ি তার বেশির ভাগ কিন্তু আমাদের খুজে বের করা নয়। কারোর রিভিউ নাহয় তো কারোর রিকমেন্ডেশন আবার কারোর বা, যাস্ট " ভাই!!! সেইইই, পইড়ে দেখেন " ।
এত ভালো ভালো বই পড়ার সুযোগ হয়েছে তাদের জন্য যারা বই নিয়ে কথা বলেন, বই নিয়ে দুই লাইন হলেও লেখেন। না লিখলেও রেটিং তো করেন! আপনাদের জন্য বই জ্ঞান চলছে সবার মাঝে। একজন থেকে ১০ জনে!

কৃতজ্ঞতা স্বীকার তাদেরকে যারা সকল বই এর আলো সাধারণ রিডার্স দের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য একটুও কাজ করেছেন!

হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
June 3, 2021
বেশ কিছুমাস ধরেই এইরকম নস্টালজিয়া এনে দেয় এমন বই পড়তে ইচ্ছে করে শুধু। বয়সের ঝিনুক যতো গুটিয়ে যেতে থাকে, শৈশবের সাথে মানুষের দূরত্ব যতো বাড়তে থাকে ততো বোধহয় ছেলেবেলার কথা আরো মনে পড়তে থাকে।

উপন্যাসের নাম প্রচুর শুনেছি। কেন্দ্রীয় চরিত্র ইন্দুবালা কুসংস্কারহীন উদারমনের একজন রন্ধনশিল্পী, গুণী মা, বাস্তববুদ্ধিসম্পন্না, বুদ্ধিমতী অসাধারণ মানুষ। আমি যে তাঁর মধ্যে কতোটা আমার দাদুকে খুঁজে পেয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না।

মনে হয়েছে লেখক আমার দাদা, আমার দাদু আমার শৈশবের গোপন খবর কি করে লিখে ফেললেন!

মালপোয়া পিঠা, আলুপোস্ত, কচুবাটা, বিউলির ডাল আরো কতো কতো বাহারি নাম, সুস্বাদু রান্নার বর্ণনা পড়ে জিভে জল আসতে বাধ্য।

সেইসাথে চোখেও অশ্রু জমে গেছে আমার দাদা আর দাদুকে মনে করে। গত বছর ঠিক আমার জন্মদিনের পরের দিনটাতেই আমার দাদু পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। নিপাট ভদ্র, পরিপাটি সাজগোজ করে পরিষ্কার কাপড় পরে থাকতে পছন্দ করতেন আমার দাদু। দাদুর হাতের রান্নার প্রশংসা পুরো গ্রাম এখনো করে। যেকোনো বড় অনুষ্ঠানে ডাল আর মাংসটা অন্তত আমার দাদুর হাতেই করতে হতো। জীবনে কখনো একটা কটু কথা বলেন নি কাউকে, ছেলের বৌদের আগলে রেখেছেন, কারো সাথে ঝগড়া করেছেন এমন কেউ বলতে পারবে না৷

এই কিছুদিন আগেও চিংড়ি খেতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছি ঝরঝর করে। দাদুকে খুব মনে পড়ে যখন মা দাদুর থেকে শেখা পাটশাকের ভর্তা করে, বা কুচি কুচি আলু দিয়ে বোয়াল মাছ রাঁধে, নাহয় আলু-থানকুনি- কাঁচকলার ঝোল রাঁধে। ঐদিন খেতে বসলে টেবিলের পরিবেশটাই কেমন হয়ে যায়। একফালি শূন্যতাবোধ পরিবারের সবার মাথার উপর ঝুলে থাকে। কেউ কিছু মুখ ফুটে বলে না, কিন্তু সবার মনে পড়ে আরেকটা চেয়ার তো খালি। আরেকজন মানুষ যে এই চিংড়ি- গরুভুনা- এই বড় মাছটা খেতে ভালোবাসতো।


এই অনুভূতিগুলো একান্ত আপন। এই যে আমার দাদু নেই, আর কারো নেই মা অথবা বাবা, দাদু, নানু, প্রিয় বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ- এই ক্ষতস্থানগুলো আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী। অভিযোজনের শর্ত মেনে আমরা ��ীবন বয���ে তো চলি ঠিকই, কিন্তু প্রিয় মানুষদের কেউ আসলে ভুলে যায় না।


কতো কতো স্মৃতি, স্মৃতিবিজড়িত কতো জিনিশ আমাদেরকে হুট করে আরো বেশি মনে করিয়ে দেয় তাদেরকে। রান্না তো একটা শিল্প, এই রান্নাও মনে করিয়ে দেয় প্রিয় স্মৃতিগুলো। আমার দাদুর কথা বলছিলাম, দাদু নিজে যেমন খুব ভালো রাঁধতেন, সুস্বাদু খাবার খেতেও পছন্দ করতেন। মারা যাওয়ার আগে খুব করে লাউ দিয়ে শিং মাছের ঝোল খেতে চাইতেন। কিন্তু যতোদিনই রাঁধা হতো, মুখে কিছু দিতে পারতেন না।

এই বইটা আমাকে এতো কাঁদালো। ঝুপ করে সব মন খারাপ এসে বুকে জমে গেলো।
Profile Image for Zerin Oyishi (Free Palestine).
31 reviews242 followers
June 18, 2021
কিছু বই বড্ড বেশি মায়ামাখা হয়ে থাকে যার দরুন সে বইখানা নিয়ে লিখতে গেলে শব্দের টান পড়ে।সকল শব্দই যেন অপরাগ অনুভূতিগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে।

এ বছরের আলোচিত বইগুলোর মাঝে কল্লোল লাহিড়ীর ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ নিঃসন্দেহে অন্যতম। বইটি কেনার আগেই ফেসবুকের নানা পোস্ট আর ব্লগ পড়ে ইন্দুবালার হেঁশেলে প্রথম উঁকি দেওয়া।বইটি খুলনার কলাপোতা গ্রামের এক সাদামাটা সংগ্রামী নারীর গল্প, জীবনে হার না মানার গল্প।

খুলনার মেয়ে ইন্দুর ভাগ্যের পরিহাসে বিয়ে হয় দোজবরে এক মাতালের সাথে।তাও এপার বাংলা পেরিয়ে ওপার বাংলায়। পরিবারের সকলকে বিদায় দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে সেই যে ওপারে গেল, আর ফিরে যাওয়া হয়নি। বৃদ্ধা শাশুড়ি আর পাঁড় মাতাল,জুয়ারি স্বামীকে নিয়ে বেশিদিন সংসার করতে হয়নি ইন্দুবালা কে। শাশুড়ি গত হবার স্বল্প সময়ের মাঝে নেশারু রতনলালেরও ইহকালের পাট চুকে যায়।অল্পবয়সী বিধবা ইন্দু ছোট তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে তখন পথে বসার উপক্রম।এক ভিটেমাটি বাদে প্রায় সবই চলে গেছে নেশা আর জুয়ার টাকার জোগানে।

সবকিছু ফেলে আসা এবং অনেক কিছু হারিয়ে ফেলা ইন্দুবালার কেবল এক রান্নার হাত যেন সব সময়ের ছায়াসঙ্গী।দু’টাকা দিয়ে শুরু হয় ইন্দুবালার ভাতের হোটেল আর প্রথম ভোজনকারী মাছ বিক্রেতা লছমী। সেদিন থেকে যেন এক নতুন জীবনের শুরু। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।নিঃস্ব ইন্দুবালার জীবনে যেন নতুন আঙ্গিকে পূর্ণতা আসতে লাগলো।একে একে সবগুলো ছেলে মেয়ে বড় হয়ে,আজ সমাজে সকলে প্রতিষ্ঠিত।অপরদিকে এখনো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ইন্দুবালার ভাতের হোটেলে বারাবার ফিরে আসে মুখে লেগে থাকা স্বাদের জন্য।

ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনী পূর্ণ এ বিশাল পরিবার।তবুও নিঃসঙ্গতা যেন কখনো ইন্দুবালাকে ছাড়েনি। ছেলে মেয়েদের বারবার অনুরোধ কে অগ্রাহ্য করে,ছেনু মিত্তির লেন ছেড়ে একটি দিনের জন্য দূরে কোথাও যায়নি ইন্দুবালা। সত্তর বছরের বৃদ্ধা ইন্দুবালা এখনো রোজ ৩০০-৪০০ জনের রান্না নিজ হাতে করেন। এই রান্নাগুলোই বারবার তাকে নিয়ে যায় অতীতের নানা স্মৃতিতে।

কুমড়ো ফুলের বড়া,বিউলীর ডাল, আম তেল,ছ্যাঁচড়া,মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, চন্দ্রপুলি, কচু বাটা সবগুলো খাবারের সাথে জুড়িয়ে আছে কত না গল্প। এই গল্পের স্মৃতিগুলোই যেন ইন্দুবালার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আর এ বইটি মনে করিয়ে দেয় শত মানুষের ভীড়ে থেকেও দিনশেষে যেন আমরা সকলেই একা।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
July 15, 2022
ছেনু মিত্তির লেনের কালো ক্ষয়াটে এনামেল বোর্ডে ক্ষয়ে আসা শব্দগুলো যাদের নূন্যতম বাংলা বর্ণপরিচয় আছে তাদের চোখ বন্ধ করেও পড়তে অসুবিধা হয় না মোটেই,

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল

এক বাঙাল ঘরের ঘটি বিধবার রান্নার স্বাদে রসনায় মুখরোচক হয়ে আহ্লাদে আবদারে ফিগার কনশাস আধুনিক চিল ডু‍্যড থেকে শুরু করে সেই আটপৌরে চাকরির চাকুরে থেকে আবালবৃদ্ধবনিতার আড়ম্বরে আলোচনার বিষয়বস্তু যে জায়গা.

কপোতাক্ষ ইছামতির পাড় পেরিয়ে ভাগীরথীর তীরে তরী ভেড়ানো কলাপোতা গ্ৰামের কন‍্যা ইন্দুবালার বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে উঠার গল্পের বাঁকে ভোজনরসিক বাঙালির নোলা কে আরেকটু বাড়িয়ে বইয়ের থেকে বাস্তবে নিয়ে আসা সেই সব জিভে জল আনা খাবারের পসরা এই খুচরো জীবনে খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্খা বাড়িয়ে দেয় অনায়াসে অক্লেশে।

প্রেম যেখানে এসেছে চন্দ্রপুলি ,মালপোয়ার পথ ধরে, তেমনি মিলিয়ে গেছে মনিরুলের বাঁশির ও শেষ সুরের টানে।দোজবরে প্রায়ই ঘাটে মড়া জুয়াড়ি স্বামীর নেশার মাদকতা এপাড়া ও পাড়ার প্রসারিনীদের পথ মাড়িয়ে ইন্দুর ছ‍্যাচড়ার স্বাদে ক্ষনিকের টানে কৌমার্যের সবটুকু নিংড়ে পৌরুষের বিজয় চিহ্ন তিন সন্তানের সাথে আকুন্ঠ দেনায় ডুবিয়ে পরপারে প্রস্থানে থেমেছে রতনলাল মল্লিকের জীবনপ্রদীপ।

দরজায় যখন শিরে সংক্রান্তির মতো চেপে বসেছে দেনাদার,ক্ষুধায় কাতর সন্তানের সাথে বাড়ন্ত ভাঁড়ার আগলে বসে থাকা বিপর্যস্ত ইন্দুবালার জীবনে এক বিহারী মাছওয়ালীর লছমীর ঐ কয়েকটি পয়সা দিয়ে শুরু হয়েছে বাহারী এই ভাতের হোটেল,যেখানে অভুক্তের মিলে অনেকদিনের আশ মিটিয়ে খাওয়ার ব‍্যবস্থা,এবেলা খাবার ও বেলায় যাওয়ার আগেই ব‍্যবস্থা হয়ে যাওয়া।

সেই যে শুরু হলো অগ্নিদেব কে উপাস‍্য মেনে অতিথিকে নারায়ন জ্ঞানে পেটপুজোর ব‍্যবস্থা,ঝড়ে জলে রোদে পুড়ে নকশাল আন্দোলনে ইতিহাসের অদল বদলেও গনগনে উনুনের আঁচে আসেনি পরিশ্রান্তির প্রভাব,থামেনি ইন্দুবালার হাতের স্পর্শে সাধারন খাবারের অসাধারণ অমৃত হয়ে ওঠার চমকপ্রদ সব প্রেক্ষাপটের চালচিত্র।বদলেছে সময়,সন্তানেরা হয়েছে সমত্ত সামর্থ্যবান সংসারী,তাদের সাথে যোগাযোগ এসেছে ঠেকেছে বিজয়ার প্রনামী আর হালখাতার পাতায়,সময়ের স্রোতে যেখানে চিঠিপত্তর ল‍্যান্ডফোনের দিনগুলো পালিয়ে মোবাইল ফোন ফেসবুকে ভেসেছে জনজীবন ।শুধু বদলাইনি;

বিউলির ডাল কচুবাটা কুচো চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল ডুমো করে কেটে ডুবো তেলে ভাজা কুমড়ো আলু,বা কুমড়ো ফুলের বড়ার সাথে সর্ষে দিয়ে পার্শে মাছের স্বাদে নিমগ্ন গোটা ছেনু মিত্তির লেন বা দূরদূরান্তের পথ পেরিয়ে আসা পথচারীদের পরিতৃপ্তি ভরে শেষ অন্নটুকু খাইয়ে,চুলোর পাড় আচিয়ে সত্তর পার করে আসা ইন্দুবালার জীবনে শোকতাপের পোড়াকপালের দৃঢ়তার দ্বার ধরে শিখরে গিয়েও শেকড়ে আঁকড়ে থাকার এ গল্প শেষ স্বস্তির বা সন্তুষ্টির সব অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পাঠক মনে শুক্তোর বিনি সুতোয় বাঁধা একরাশ ভালোলাগা আর ভালবাসার সব নিবদ্ধ শব্দ।

বাড়তি পাওনা হিসেবে খুলনার মেয়ে হয়ে চুইঝাল কলাপোতা কপোতাক্ষ যশোরের জীবনের সাথে পরিচয় পর্ব থাকায় পুরোটা সময় জুড়েই আমি জুড়ে থেকেছি ইন্দুবালার স্মৃতির অলিগলির পথে,ঐ হেঁটে চলা মাঠে, ফেলে আসা শৈশব কৈশোরের দিনে।স্বদেশী হওয়ার সুবাদে সরস খাবারের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসা ইন্দুবালা যখন ঐ আম রঙা ট্রেনের পথ মাড়িয়ে সীমান্তের এপারে থেকে ওপারে না যেতে পারার আকুলতা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়া যেন আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছিলো।নিজেও তো বহুদিন হয়ে গেছে ঢাকার বহুদিনের নানা কাজের ধোঁকায়, ধাঁধায় পদ্মা পাড়ি দিইনি।

আহ্ খুলনা! প্রতিটা খাবারের স্বাদে বর্ণে গন্ধে আহ্লাদে আমোদে হারিয়ে যাওয়ার কত স্মৃতি রয়েছে মানসপটে।

শুধুমাত্র কিছু বানান বিভ্রাট আর বাক‍্যবিন‍্যাসের এলোমেলো ভুলের সাথে একাত্তর বায়ান্নের আন্দোলন গুলিয়ে ফেলার বিভ্রান্তি ছাড়া পুরো বইটাই ভীষন সুন্দর সরল সাবলীল।
রেটিং:🌟🌠⭐☀
17/06/21
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
September 9, 2021
এত মায়া জড়ানো একটা বই এর দ্রুত শেষ হয়ে গেল?

'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'কে শুধু ২০২০ এর সেরা বই না, দশকের সেরা বইয়ের তালিকায় অনায়াসে স্থান দেয়া যায়। কল্লোল লাহিড়ীর সুনিপুন লিখনশৈলী তে উঠে এসেছে এক টুকরো খুলনা, কলাপোতা গ্রাম, কলকাতা শহর,ছেনু মিত্তির লেন আর কত কি! শুধু তাই নয়, বইতে উঠে এসেছে ছোট তিনটে ছেলেমেয়ে নিয়ে এক বিধবা মায়ের অচেনা শহরে সংগ্রামের কথা, যে সংগ্রামে পাশে থেকেছে আত্মীয়ের চেয়েও বড় অনাত্মীয় মাছ বিক্রেতা লছমী। বইটা পড়তে পড়তে কখনো মনের মধ্যে উথলে উঠেছে 'চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল' খাবার বাসনা আবার কখনো চোখ বেয়ে নেমে এসেছে দু'ফোঁটা জল। আর এ সবটুকুরই দায় কল্লোল বাবুর। তার জাদুর ছোঁয়ায় পড়তে পারলাম মায়া ভরা বই 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'।

পাঠককে বলছি, আপনি যে জনরার বই পড়েই অভ্যস্ত থাকুন না কেন, এ বইটি অবশ্যই পড়বেন।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews85 followers
October 2, 2021
আজকাল ভালোমন্দ রান্নাবান্না নিয়ে অনেক ভালো ভালো উপন্যাস বের হইতেছে । ট্রেন্ড শুরু করেছিলেন সম্ভবত ভোজনরসিক বিভূতিভূষণের চরিত্র হাজারি ঠাকুর । হোটেলে যারা রাঁধেন তাদের জীবন যুদ্ধ ও খুন্তি নিয়ে ঘুটাঘুটির গল্প মিলেমিশে যে খুব সুন্দর কিছু তৈরি হতে পারে তা ওখান থেকেই জেনেছিলাম । যাই হোক ওকালের হাজারি ঠাকুরের পর একালে এলেন ইন্দুবালা ঠাকরুন । এই বইটির প্রচুর হাইপ তোলার কারণ টা প্রত্যক্ষ হোক আর পরোক্ষ হোক সকলেই কম বেশি স্বীকার অবশ্যই করবেন , করতেই হয় । ওসব তুলনামূলক কথা থাক । ইন্দুবালার কাছে ফিরে আসি । ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের রিভিউ পড়লে বেশির ভাগ রিভিউ তে একটা কমন কথা খুঁজে পাবেন যেটি ‘’প্রচুর মায়া এবং কঠোর পরিশ্রম ’’
লেখক খুব চমৎকার ভাবে সত্তর বছরের বৃদ্ধা ইন্দুবালার স্মৃতি রোমন্থন ও প্রতিটা স্মৃতির সাথে একেকটি খাবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বর্ণনা করেছেন নিঃসন্দেহে । কিন্তু আমার না কেন জানি মনে হলো লেখার মধ্যে জোর করে এক্সট্রা অনেক খানি অপ্রয়োজনীয় মায়া ঢুকায় দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । মানে এই লেখাটা এমনিতেই যথেষ্ট ইমোশনাল মেনে নিচ্ছি কিন্তু লেখক এমন কিছু শব্দ এবং গল্প বলার ভঙ্গি এতে ব্যবহার করেছেন যেন পাঠকের মায়া না লাগলে পাঠক নিজেই একটা অপরাধবোধে ভুগে । আমার কাছে বেশ কিছু জায়গায় একটু ক্রিন... আচ্ছা ইংরেজি তে বললে রূঢ় লাগে বাংলায় বলি , আমার কাছে বেশ কিছু জায়গায় অনর্থক ‘গোলাপের মতো আচরণ’ লাগছে ।
ও ভালো কথা , ইন্দুবালা হলো খুলনার মেয়ে। অল্পবয়সে তার বিয়ে হয় এক অধিক বয়স্ক মদ্যপের সাথে তারপর সেই মদ্যপের সাথেই ভদ্রমহিলা ভারতে চলে আসে । অনেকদিন মানসিক টর্চারের পর মাতাল ভদ্রলোক কোন সঞ্চয় না রেখেই ইন্দুবালাকে বেশ কয়েকটি সন্তানের জননী বানায় দিয়ে মরে যায় । পরে ইন্দুবালা একটি ভাতের হোটেল চালু করে এবং অনেক খ্যাতি অর্জন করে ।
গোলাপের ন্যায় আচরণের আধিক্য জনিত কারণে দুই তারা কাটা হইলো ।
Profile Image for Suchona Hasnat.
251 reviews334 followers
January 26, 2021
শুধু গল্প বললে ভুল হয়, আবার জীবনকথাও যে বলা যাবে তা নয়। পাতায় মোড়ানো মায়ার গল্প এটা। মায়া কাটিয়ে বেঁচে থাকতে গিয়ে নতুন মায়ায় জড়ানোর গল্প।
খুলনার মেয়ে ইন্দুবালার বিয়ে হয় কলকাতার এক মাতাল ছেলের সাথে। ভালোবাসা আর আদরের জীবন ছেড়ে পাড়ি জমান অন্য এক বাংলার ছেনু মিত্তির লেনে। অচেনা দেশে, অচেনা মানুষের ভীড়ে যখন একদিন একেবারেই নিঃস্ব হন, তখন সাথের তিন বাচ্চা ছেলেমেয়ে ছাড়া কিছুই আর তার অবশিষ্ট থাকেনা।
একদিন আবার সব পাবেন বলেই হয়ত, সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছিলেন। জীবনের কঠিন সময়ে জ্ঞাতিগুষ্ঠির কেউই যখন পাশে এসে দাঁড়ান নি, পাশে পেয়েছিলেন অচেনা বিহারী এক মাছওয়ালীকে। সেই যে লছমীকে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু, সত্তর বছর বয়সে এখনও রোজ মানুষের পাতে তুলে দিচ্ছেন দুই বাংলার খাবার। শুধুই কি খাবার সেসব? কত পুরনো কথা, হারিয়ে যাওয়া সময় আর বুকের কাছে দলে পেকে থাকা দীর্ঘশ্বাসের সাক্ষী সেসব।
সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর সুবিশাল কর্মযজ্ঞে। ভাতের হোটেল, ধনঞ্জয় আর হিসাবের খাতা সাথে নিয়ে মাটি আঁকড়ে টিকে আছেন ছেনু মিত্তির লেনে। আগলে রেখেছেন হারানো সময়কে নিজের রান্নার মধ্য দিয়ে, জমিয়ে রেখেছেন মায়া।

নকশাল আন্দোলন, দেশ ভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বারেবারে এসেছে তার স্মৃতিতে। হাহাকারের গল্পগুলো মায়া দিয়ে বোনেন চিংড়ী হলুদ গাদার ঝোল আর বিউলির ডালে।
Profile Image for Tazbeea Oushneek.
156 reviews53 followers
March 16, 2021
প্রথমে শুরু করার পর মনে হচ্ছিল এত সুন্দর খাবারের বিবরণ। এরপর মনে হতে লাগলো এসমস্ত খাবারের সাথে কত স্মৃতি জড়িয়ে। বাসায় সবাই একসাথে খেতে বসলে কোন কোন বিশেষ খাবারে ঠিক যেরকম কত বছর আগের স্মৃতি সবার কথায় উঠে আসে সেরকম।
এই বইটায় শুধু সেই স্মৃতি না, বাবার বাড়ির আদরের মেয়ের সব কিছু ছেড়ে বিয়ে হয়ে এসে অনাদরের একটা বাড়িতে মানিয়ে নেয়া, এই অনাদরের মাঝেও সব আগলে রাখা, একা হাতে সংসার সামলানো সব আছে। ইন্দুবালা - যখন ই যাকে ভালবেসেছে তাদেরকে হারাতে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত আগলে রেখেছে শুধু তার ভাতের হোটেলটাকে। বইটা পড়ার মাঝে কতবার যে কাঁদলাম...
March 1, 2023
অতীতের পিঠে পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকে বর্তমান,চাইলে কী ভুলা যায় সোনালী অতীত, যায় না!!
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল, উপন্যাসের ইন্দু ঠাম্মা কী পেরেছিলেন তার অতীত ভুলতে!! না পারেননি।সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে যখন রাত হতো তখন অতীতের মধুর স্মৃতিগুলো মেঘের পালকে ভর দিয়ে ইন্দু ঠাম্মার ঘরে প্রবেশ করতো।ইন্দু ঠাম্মা এই পূর্ব বাংলার মেয়ে,খুলনার কলাপোতা গ্রামের মেয়ে।বিয়ে হয়ে আসেন কলকাতাতে। এই পূর্ব বাংলা স্বাধীন হয় এবং সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। ইন্দু ঠাম্মা মা-ভাই,সবাইকে হারান স্বাধীনতা যুদ্ধে।কলকাতা তে তার দেহ থাকলেও মন পরে আছে এই বাংলাদেশে আর তিনি বসে বসে ভাবেন শুধু খুলনার কথা।
জীবনে তিনি অনেক কিছু দেখেছেন--যখন স্বামী হারিয়ে,৩ ছেলে-মেয়ে নিয়ে অসহায় তখন তার ঠাম্মি,মার কাছে শেখা রান্নাই তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে এবং তিনি খুলে ফেলেন ইন্দুবালা ভাতের হোটেল।এই হোটেল তার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে,সব কিছু ত্যাগ করতে পারেন কিন্তু হোটেলকে না।সব মানুষ যখন তার রান্না খেয়ে তৃপ্তি পায় তখন তার মন ভরে উঠে আনন্দে।
লেখক এমন ভাবে খাবারের বিবরণ দিয়েছেন মনে হয় খেয়ে দেখি একবার ইন্দুবালার হাতের রান্না।ইন্দুবালা একই সাথে বর্তমানে টিকে আছেন, সে সাথে তিনি অতীত কে আঁকড়িয়ে আছেন এমনভাবে- যেমন মা মুরগী তার বাচ্চাদের উদরের কাছে রাখেন যাতে কেউ যেন তাদের ক্ষতি না করে ঠিক তেমন ইন্দুবালা তার অতীত কে সযত্নে রেখেছেন। অতীতের স্মৃতি, মানুষ গুলো তো তাকে অণুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি পাচ্ছেন লড়াই করার শক্তি। এই সত্তর বছর বয়সে সে তিনশজনের খাবারের বন্দোবস্ত করেন,তিনি শুধু ব্যবসা করছেন এমন টা নয়,অনেক দুস্থ মানুষকে তিনি বিনে পয়সায় খাদ্য দেন,এতে ইন্দুবালার শান্তি।
#যখন ইন্দুবালা বাড়ির কথা ভাবে তার ছেলেবেলার কথা ভাবে, তখন চোখ দিয়ে কেন যেন পানি চলে আসে।একজন ভারতীয় লেখক হয়ে বাংলাদেশের এত সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন, না পড়লে বুজতে পারবেন না।
*ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না,
কাছাকাছি থাকলেই ভালবাসা যায় না,
ভালবাসতে মন লাগে,
যেটা ইন্দুবালার ছিল
কিন্তু কয়জন পেরেছে তা জানতে!!
Profile Image for Mahrin Ferdous.
Author 8 books208 followers
January 6, 2022
উপন্যাসের প্লটের সাথে বিভিন্ন রকমের রান্নার লোভনীয় যাত্রা নিয়ে লরা এস্কিবেলের চমৎকার একটা উপন্যাস পড়েছিলাম গত বছর। কল্লোল লাহিড়ীর 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' নিয়েও কাছাকাছি কিছু পাবার প্রত্যাশা ছিল। বই শেষ করার পর সবার আগে এই প্রশ্নটাই মনে হয়ে হয়েছে, 'কেন খাবারের লোভনীয় বিবরণ ও লছমী চরিত্র বাদে এই বইয়ের কিছুই মনে দাগ কাটলো না?'

কারণ, যেই স্মৃতিভ্রমণ ও মনোলগ লেখক সত্তর বছর বয়সী ইন্দুবালার মাধ্যমে আঁকতে চেয়েছেন, তা কমিউনিকেটিভ হলেও গভীর না। ছন্দপতন ঘটেছে বেশ কিছু জায়গায়। অনেক অংশই পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে ইন্দুবালার প্রতি আবেগ ও সহমর্মিতার কাপে তিনি কিছু ইতিহাস ( যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে...) মিশিয়ে দিয়ে, এক ধরণের সুস্বাদু পানীয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনবরত। লেখক নিজে যতটা না ইন্দুবালা চরিত্রের প্রতি মায়া অনুভব করেছেন তার চেয়েও বেশি উনি সচেতন থেকেছেন যেন পাঠকের মধ্যে ইন্দুবালাকে নিয়ে মায়া তৈরি হয়। কাহিনীর পরিণতি এমনই হবে বুঝতে পারার পরেও কোথাও একটা প্রত্যশা ছিল আরও নিবিড় কিছু পাবো। সেটাও পাইনি।

জাদুকরের টুপির ভেতরের খরগোশ দেখে ফেলার পর ম্যাজিক শো চলে শুধুই পরিণতির অপেক্ষায়। আর সকল ফুলের কাছে এত মোহময় মনে যাবার পরেও মানুষেরা শেষ পর্যন্ত রন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বলেই হয়তো বইটার জন্য তিনটি তারা।
Profile Image for Rafa.
77 reviews120 followers
March 3, 2024
What a book! What a book!!
This book is written in Bangla and I simply could have written the review in Bangla as well. But I just want everyone (even those who doesn't understand Bangla) to know what this book carries with it.

This book tells the story of Indubala, an elderly woman who is originally from Bangladesh but was married off in India. She starts running a restaurant from home after the death of her husband.

Now, the main attraction of this book are all these recipes and the story behind each, both of the food and the people; and also of both the countries. The story can also be interpreted to help understand the behavior of elderlies as well.

Another important aspect of this book is it explains why an elderly person is the way she is. There's always an explanation behind every act of rudeness and a history behind every drop of tear.

There's just so much to take in!
This really was a good one. I read a newly released Bengali book after so long that truly satisfied me.
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
May 29, 2021
বইটা নিয়ে সবার এত আলোচনা দেখে আগে থেকেই পড়ার বেশ আগ্রহ ছিল। অবশেষে পড়ে ফেললাম। আমার বেশ ভাল লেগেছে। মায়াময় লেখা। আর দিনশেষে আমরা সবাই একা। একে একে আশেপাশের মানুষগুলো আর থাকেনা, থাকেনা ফেলে আসা পুরনো কোনকিছু, শুধু স্মৃতি থেকে যায় সাথে।
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
July 27, 2021
বেশ ভালো। 4 তারা দিবো দিবো করছিলাম। কিন্তু নাহ। আরো অনেক অনেক ভাল হতে পারতো। দারুন একটা কালজয়ী উপন্যাস হতে হতে হল না। তবে দারুন যে সেটা বলতেই হবে।
Profile Image for Musharrat Zahin.
404 reviews490 followers
June 10, 2021
Suchona Hasnat আপুর রিভিউ পড়ে বইটা পড়ার লোভ সামলাতে পারিনি। একটা বই কীভাবে এত মায়াময় হতে পারে? চার মাস আগে বইটা পড়ে শেষ করেছিলাম, এতদিনেও এর একটা রিভিউ গুছিয়ে লিখতে পারিনি। লিখতে গেলেই মনে হয় এই বই নিয়ে কিছু বলার মতন শব্দ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

হাজারি ঠাকুরের আদর্শ হিন্দু হোটেলের কথা মনে আছে? সেটা পড়তে যেয়ে যেমন জিভে পানি চলে এসেছিল, ইন্দুবালার ভাতের হোটেলের কয়েক পদের নাম শুনেই আপনার মুখে পানি চলে আসবে।

দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, পোড়াকপাল, স্মৃতি, নকশাল, ইতিহাস, ভালোবাসা, পরিবার হারানোর গল্প, সন্তানদের সাথে দূরত্ব, নিজের শেকড় আঁকড়ে রাখার চেষ্টা, জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও নিজের হোটেলটাকে বাঁচানোর চেষ্টা- কী নেই এই বইয়ে? আর শেষটুকু? পড়তে যেয়ে হয়তো কান্নার স্রোতে ঢোকটা গিলতেও বেশ কষ্ট হবে৷

কে এই ইন্দুবালা? আমার দিক থেকে হিসেব করলে ইন্দুবালা এপার বাংলারই মেয়ে, খুলনার কলাপোতা গ্রামে যার জন্ম।

জাত-কূল রক্ষার জন্য তার পুরোনো প্রেমিককে ভুলিয়ে দিয়ে এবং নিজের এলাকা থেকে দূরে রাখতে ইন্দুবালাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় ওপার বাংলার এক দোজবরে, মাতাল ও জুয়ারি লোকের সাথে। অবশ্য বেশিদিন সেই মাতাল বরকে সহ্য করতে হয় না তাঁর, তিনটা সন্তান জন্মের পর অচিরেই মারা যায় তাঁর বর।

তারপর থেকেই সাদা থান শাড়ি পরে নতুন এক জীবন শুরু হয় ইন্দুবালার। বরের রেখে যাওয়া দোতলা এক বাড়িকে সম্বল করেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে সে। রঙ যেন তার জীবনে একটু একটু করে আসি-আসি করছে। লছমীর পরামর্শে তার রান্নার কৌশলকে কাজে লাগিয়ে খুলে ফেলে একটা ভাতের হোটেল। সেই থেকেই ছেনু মিত্তির লেনে রান্নার মাধ্যমে উঠে এসেছিল খুলনার কলাপোতা গ্রাম।

বইটার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর খাবারের বর্ণনা এবং প্রতিটা পদ ঘিরে স্মৃতির ঝাঁপি খোলা। কুমড়ো ফুলের বড়া, বিউলির ডাল, ছ্যাঁচড়া, আম তেল, চন্দ্রপুলি, মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল আর কচু বাটা, রান্নাঘরের মশলা, আনাজ, শাক-সব্জিতেই খুঁজে পান ফেলে আসা কলাপোতাকে। গ্রামীণ রান্নার পদগুলোকে লেখক যেভাবে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। একেকটা আইটেমের যেন ইন্দুবালার অতীত এবং বর্তমানের যোগসূত্র বজায় রেখেছেন। খাবারগুলোর বর্ণনা এত রসালো যে জিভে পানি আসবেই!

কিছু উপন্যাস থাকেই মন ভিজিয়ে দেয়া মায়া-আবেগ-ভালবাসার চাদরে মোড়ানো। 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' এর উজ্জ্বল উদাহরণ। লেখক দারুণ একটা কাজ করেছেন। এমন মনকাড়া প্লট, চমৎকার বর্ণনাভঙ্গি, লেখনশৈলীর সন্নিবেশ সচরাচর পাওয়া যায় না। লেখক কল্লোল লাহিড়ী তার আপন মায়ার শব্দজালে বুনেছেন উপন্যাসের প্রতিটি কাহিনীবিন্যাস। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বর্তমানকে সাথে নিয়ে ইন্দুবালার অতীতের ফ্ল্যাশব্যাক। এত সুনিপুণতার সাথে লেখক এ কাজটি করেছেন যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে যেতে হয়েছে পুরো উপন্যাসটি।

আর লেখক বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন খাবারগুলোর বর্ণনায়। কুমড়ো ফুলের মিঠে বড়া পোস্ত ছড়িয়ে, রান্নায় ঝালের জন্য চুইঝালের ব্যবহার, কালো জিরের ফোঁড়নে পার্শে মাছের ঝোল, ইলিশের মাথা ও পুঁইশাকের ছ্যাঁচড়া, সর ভাজা, কাসুন্দি দিয়ে কলমিশাক, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, মালপোয়ার মত খাবারের বর্ণনা এত সহজ সাবলীল শব্দচয়নে এত মায়া, আদর আর অনন্যতায় মিশে ছিলো , মনে হচ্ছিল ইন্দুবালা দেবী আমার সামনে বসেই রান্না করছেন, আর তাঁর অসাধারণ সেসব র��ন্নার ঘ্রাণ যেন আমি এখানে বসেও পাচ্ছি।

বুকভরা অব্যক্ত মায়ায় মোড়ানো বইটির প্রতিটা পৃষ্ঠা। ইন্দু আর লছমীর বন্ধুত্ব তো আরও মায়াময়। বিপদ মোকাবেলা করতে, নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের যে প্রতিবারই লছমীর মতো বন্ধুর দরকার হয় সেটাই যেন লেখক এই বই দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। তবুও জীবনের অনেকটুকু পথ একাই পাড়ি দিতে হয়। তাইতো আজ সত্তর বছর বয়সেও ইন্দুকে একাকীত্বকে সঙ্গী করে ঠেলতে হয় উনুনের কয়লা আর অকাতরে বিলিয়ে গিয়েছেন নিজের হাতের আদরমাখা রান্না।

ইন্দুবালার রান্নার পদগুলোতে কিন্তু তেমন নতুনত্ব ছিল না, এসব খাবার আমরা প্রতিদিনই খাই। কিন্তু রান্না ছিল তাঁর কাছে শিল্প। কোনদিন কুমড়ো ফুলের বড়া, কোনদিন সর্ষে দিয়ে কচুবাটা, কোনদিন আমতেলের কই, কোনদিন আমড়ার চাটনি দিয়ে বিউলির ডাল, কোনদিন আবার শেষ পাতে দুধে ডোবানো চন্দ্রপুলি অথবা রসে ডোবানো মালপোয়া। বইটা পড়া শেষে মনে হচ্ছিল, "ইশ, একটু যদি আমতেলের কুমড়ো ফুলের বড়া আর কচুবাটা দিয়ে ভাত খেতে পারতাম..."

কল্লোল লাহিড়ির লেখাতে এমনই মায়া জড়ানো। সহজ একটা খাবারের রান্নার কথাটাই এমন সুন্দর করে লিখেছেন যেন চোখের সামনে দেখছি। সামান্য বিউলির ডাল রান্নার বর্ননা এমনভাবে দিয়েছেন যেন মনে হচ্ছিল এক প্লেট গরম ভাত নিয়ে ইন্দুবালার সামনে বসে পড়ি।

'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' শুধু গল্প নয়, হয়ে ওঠে জীবন্ত ইতিহাসের দলিল। সাবলীল লেখার টানে আর লোভনীয় সব পদের আকর্ষণে এক বসায় শেষ করে ফেলার মতো দুর্দান্ত একটা বই। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা বই উপহার দেওয়ার জন্য।
Displaying 1 - 30 of 498 reviews

Join the discussion

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.