ভূমিকা (সত্যজিৎ রায়): “ফিল্ম তৈরির কাজটাকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম হল লেখা, দ্বিতীয় ছবি তোলা, আর তৃতীয় ছবি জোড়া।
যে ছবি লোকে পর্দায় দেখবে, সেটাই প্রথমে গল্পের মতো করে গুছিয়ে লেখা হয়। একে বলে চিত্রনাট্য।
এই চিত্রনাট্য অনুসরণ করে যখন যখন ছবি তোলা শুরু হয়, তখন সে কাজটার জন্য প্রধান হাতিয়ার হল ক্যামেরা আর শব্দযন্ত্র। এই কাজটাকেই বলে শুটিং।
শুটিং হয়ে গেলে, টুকরো টুকরো ভাবে তোলা দৃশ্যগুলো চিত্রনাট্য যেমন আছে তেমন করে পর পর সাজিয়ে যে জিনিসটা তৈরি হয় সেটাই লোকে পর্দায় দেখে।
এর মধ্যে শুটিং পর্বের কাজেই সব চেয়ে বেশি ঝামেলা আর পরিশ্রম। এই কাজটা অনেক সময় স্টুডিওর ভিতর না হয়ে হয় বাইরে, প্রাকৃতিক পরিবেশে।
গত পঁচিশ বছরে আমাকে ছবির শুটিং-এর জন্য ভারতবর্ষের নানান জায়গায় যেতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে তিনটে ছবিতে—গুপী গাইন বাঘা বাইন, সোনার কেল্লা, আর জয় বাবা ফেলুনাথ। বীরভূমের গ্রাম, বেনারসের অলিগলি আর ঘাট, সুদূর পশ্চিম রাজস্থানের মরু অঞ্চল, সিমলার বরফের পাহাড় ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করতে গিয়ে আমাদের যে সব অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই কয়েকটার কথা বলা হয়েছে এই বইতে।
এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলেই মেহনতটা আর গায়ে লাগে না। আর বাধা যেসব আসে, সেগুলো অতিক্রম করে কাজটা যদি ঠিক মতো উতরে যায় তা হলে তো আর কথাই নেই।”
সূচি: * অপুর সঙ্গে আড়াই বছর * বাঘের খেলা * হুণ্ডী-ঝুণ্ডী-শুণ্ডী * হাল্লারাজার সেনা * উট বনাম ট্রেন * ফেলুদার সঙ্গে কাশীতে * তোমার পায়ে পড়ি বাঘ মামা
Satyajit Ray (Bengali: সত্যজিৎ রায়) was an Indian filmmaker and author of Bengali fiction and regarded as one of the greatest auteurs of world cinema. Ray was born in the city of Calcutta into a Bengali family prominent in the world of arts and literature. Starting his career as a commercial artist, Ray was drawn into independent filmmaking after meeting French filmmaker Jean Renoir and watching Vittorio De Sica's Italian neorealist 1948 film, Bicycle Thieves.
Ray directed 36 films, including feature films, documentaries and shorts. He was also a fiction writer, publisher, illustrator, calligrapher, graphic designer and film critic. He authored several short stories and novels, primarily aimed at children and adolescents.
Ray's first film, Pather Panchali (1955), won eleven international prizes, including Best Human Documentary at the Cannes Film Festival. This film, Aparajito (1956) and Apur Sansar (1959) form The Apu Trilogy. Ray did the scripting, casting, scoring, and editing, and designed his own credit titles and publicity material. Ray received many major awards in his career, including 32 Indian National Film Awards, a number of awards at international film festivals and award ceremonies, and an Academy Award in 1992. The Government of India honoured him with the Bharat Ratna in 1992.
Early Life and Background: Ray's grandfather, Upendrakishore Ray Chowdhury was a writer, illustrator, philosopher, publisher, amateur astronomer and a leader of the Brahmo Samaj, a religious and social movement in nineteenth century Bengal. Sukumar Ray, Upendrakishore's son and father of Satyajit, was a pioneering Bengali author and poet of nonsense rhyme and children's literature, an illustrator and a critic. Ray was born to Sukumar and Suprabha Ray in Calcutta.
Ray completed his B.A. (Hons.) in Economics at Presidency College of the University of Calcutta, though his interest was always in Fine Arts. In 1940, he went to study in Santiniketan where Ray came to appreciate Oriental Art. In 1949, Ray married Bijoya Das and the couple had a son, Sandip ray, who is now a famous film director.
Literary Works: Ray created two of the most famous fictional characters ever in Bengali children's literature—Feluda, a sleuth in Holmesian tradition, and Professor Shonku, a genius scientist. Ray also wrote many short stories mostly centered on Macabre, Thriller and Paranormal which were published as collections of 12 stories. Ray wrote an autobiography about his childhood years, Jakhan Choto Chilam (1982). He also wrote essays on film, published as the collections: Our Films, Their Films (1976), Bishoy Chalachchitra (1976), and Ekei Bole Shooting (1979).
Awards, Honors and Recognitions: Ray received many awards, including 32 National Film Awards by the Government of India. At the Moscow Film Festival in 1979, he was awarded for the contribution to cinema. At the Berlin Film Festival, he was one of only three to win the Silver Bear for Best Director more than once and holds the record for the most Golden Bear nominations, with seven. At the Venice Film Festival, he won a Golden Lion for Aparajito(1956), and awarded the Golden Lion Honorary Award in 1982. In 1992 he was posthumously awarded the Akira Kurosawa Award for Lifetime Achievement in Directing at the San Francisco International Film Festival.
একেই বলে শুটিং লেখাটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্নাঙ্গ আত্মজীবনী না হলেও সেটি যে তাঁর জীবনের একটি বড় অংশের স্মৃতিচারণা তা নিয়ে সন্দেহ নেই – আর এতে লেখক সত্যজিতকে ছাড়াও তার সময়কার বাংলা রূপালী-পর্দার জগৎ, ভারতবর্ষের জনপদ আর বাংলা-সাহিত্যের বিখ্যাত কজন চরিত্রকে আমরা সচরাচরের চাইতে ভিন্নরূপে দেখতে পাই।
সোনার কেল্লা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, আর পথের পাঁচালী – এই পাঁচটি নামগুলির মধ্যে মিল কোথায়? যারা সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের ভক্ত, তারা নিমেষেই এই নামগুলো চিনে ফেলবেন। বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সত্যজিৎ ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর স্রষ্টা হলেও বৃহত্তর পৃথিবীর কাছে তাঁর পরিচয় সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে, আর উপরের নামগুলো তাঁরই দিকনির্দেশিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে কটি। সোনার কেল্লা আর জয় বাবা ফেলুনাথ এর গল্পগুলো যে তারই লেখা, তা ফেলু মিত্তিরের ভক্তরা ভালই জানেন – সেগুলো পড়া যাবে এই সাইটেরই এইখানে আর এইখানে। আর যদিও গুপী-বাঘার গল্পগুলো উপেন্দ্রকিশোর রায় আর পথের পাচাঁলী উপন্যাসটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি, সেগুলোর খ্যাতির ব্যাপক প্রসার কিন্তু ঘটে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমেই।
যাই হোক, চলচ্চিত্রের পিছনের যেই মানুষটি, তাঁর চোখ দিয়ে কি গল্পগুলোকে আমাদের দেখতে ইচ্ছে করে না? মূলত এই জন্যই এই বইটি।
আমি গল্প পড়তে যেমন ভালোবাসি, শুনতেও তেমনি ভালোবাসি। বইটা পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো, সত্যজিৎ রায় অসম্ভব সুন্দর করে গল্প বলতে পারতেন। যদি ওনার সামনে বসে গল্প শুনতে পেতাম!!! ননফিকশন খুব একটা পড়ি না। কিন্তু এই ধরণের বইগুলো পড়লে মনে হয়- এইটুকুই! আরও কিছু লিখতেন। আরও কোন গল্প। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। ছোট বই। যারা এখনো পড়েননি, পড়ে ফেলেন। বেশি সময় তো লাগবে না। এই অল্প সময়টুকুই খুব ভালো কাটবে।
ইউটিউবে কিংবা টিভির পর্দায় হঠাৎ করেই নতুন সিনেমার খবর আসে, ট্রেইলার ও গান দেখতে দেখতে নির্ধারিত সময়ে সিনেমা রিলিজ হয়। তারপর আর কি! টিকেট কেটে সিনেমা দেখে আসা কিংবা ঘরে বসে বসেই আরামসে সিনেমা দেখা। সব অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু কাটসাট করা সিনেমার আড়ালে কত পরিশ্রম থাকে! আবার সেই সিনেমা যদি হয় সাদা কালো যুগের তাহলে তো কথাই নেই, ব্যাপক পরিশ্রমের ব্যাপার। এখন তো কত প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। বাঘ না থাকলেও বাঘের অভিনয় হয় দুর্দান্ত!
সেই সাদা-কালোর যুগের শুটিং এর কথাই শোনালেন সত্যজিৎ রায়। অপু, দূর্গা, গুপি-বাঘা, ফেলুদা, জটায়ু, তোপসেদের চিনেন না এমন বাঙালী পাঠক নেই বললেই চলে। এই চরিত্রদের রূপ দিতে গিয়ে যে কতটা কষ্ট, ঝামেলা আর মজার কান্ড ঘটেছে তা-ই উঠে এসেছে এই বইতে।
পথের পাঁচালীর শুটিং চলেছিল আড়াই বছর ধরে। মূলত আর্থিক সংকটের কারণেই বারবার শুটিং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন সত্যজিত। দীর্ঘদিন ধরে শুটিং চলার কারনে নানা ধরনের বিচিত্র সমস্যার মুখে পড়েছিলেন তিনি। ছবিতে ভুলো নামের এক কুকুরের দৃশ্য ছিল। একবার শুটিঙের পর ছয়মাসের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গেল। টাকা পয়সা জোগার করে ছয়মাস পর আবার গিয়ে দেখেন সে কুকুর মারা গেছে। পরে ভুলোর মত দেখতে আরেকটা কুকুর ম্যানেজ করে বাকি কাজ সারা হল। শুধু কুকুর না মানুষ নিয়েও একই রকম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল পথের পাঁচালীকে। পথের পাঁচালীর সবচেয়ে বিখ্যাত দৃশ্য সম্ভবত অপু-দূর্গার প্রথম ট্রেন দেখার দৃশ্য। কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ট্রেন আসছে আর তা দেখার জন্য দুই ভাইবোন সাদা কাশফুলে ভরা মাঠের মাঝখান দিয়ে ছুটে যাচ্ছে! এই দৃশ্যের শুটিং এর সময়ও ঘটেছিল বিচিত্র ঘটনা। অপু-দূর্গার মন কষাকষি চলছে, দিদিকে পিছু ধাওয়া করে অপু গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে এসে পৌছেছে কাশবনে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা কাজ করে এই দৃশ্য শ্যুট করা হল। ট্রেনের দৃশ্যের শুটিং হবে আরও দিন সাতেক পর। দিন সাতেক পর শুটিং ইউনিট নিয়ে একই জায়গায় পৌছে সত্যজিতের তো আক্কলেগুরুম। কোথায় গেল সেই কাশফুলে ভরা মাঠ! কিচ্ছু নেই সেখানে! স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ঘটনা। কাশফুল নাকি গরুর খাদ্য। এই সাতদিনে সব কাশফুল খেয়ে গেছে তারা! মাথায় হাত পড়ল সত্যজিতের। এখন যে অবস্থায় দাড়িয়ছে জায়গাটা, সেখানে শুটিং করলে প্রথম দিনের তোলা ছবির সাথে মিলবে না। এ দৃশ্যের বাকি অংশ তোলা হয়েছিল পরের বছরের শরৎকালে যখন আবার নতুন কাশফুলে মাঠ ভরে গেছে! আরেকটা ফাউ তথ্য জানা হলো পড়তে পড়তে, পথের পাঁচালীর শুটিং হয়েছিল যেখানে, সেখানে একটা ছোট নদী আছে। নদীটার নাম ময়ূরাক্ষী!
দারুন মজার মজার সব ঘটনা ঘটেছিল গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবির শুটিং এর সময়ও। বিশেষ করে বাঁশবনের ধারে বাঘা যখন বাঘের সামনে পড়ে যায় সেটার শুটিং এর সময়ও সার্কাস থেকে ভাড়া করা বাঘ দিয়ে শুটিং এর সময় নানা রকম বিপত্তি ঘটেছিল। কিন্তু অনেক কাঠখর পুড়িয়ে নেয়া শটগুলো শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় অতিরিক্ত কালো হয়ে যাওয়ায়। শেষ পর্যন্ত অন্য জায়গায় আবার এই দৃশ্যের শুটিং করা হয় একই বাঘ দিয়ে, তখন ঘটেছিল আরেক মজার ঘটনা। যারা গুপী গাইন বাঘা বাইন মুভিটা দেখেছেন তাদের হয়তো একটা দৃশ্যের কথা মনে আছে। ভূতের রাজার বর পাওয়া গুপী আর বাঘা পরস্পরের হাত এক করে তালি বাজিয়ে কোন জায়গার নাম বললে নিমিষেই সেই জায়গায় চলে যায়। ষুন্ডীর বদলে ভুল করে ঝুন্ডি বলায় তাঁরা চলে যায় বরফের রাজ্য ঝুন্ডিতে। ঝুন্ডি থেকে আবার ভুল করে হুন্ডি বলায় এবার চলে যায় মরুর রাজ্য হুন্ডিতে। তিন মিনিটের দৃশ্য, কিন্তু এই দৃশ্যের শুটিং করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝুন্ডির দৃশ্যের শুটিং এর জন্য পুরো শুটিং ইউনিট নিয়ে ট্রেনে চেপে চলে গিয়েছিলেন হাজার মাইল দুরের শিমলায়। আর মরুরাজ্য হুন্ডির জন্য রাজস্থানে। ফেলুদাকে নিয়ে সত্যজিত নির্মিত দুটো মুভি সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ এর শুটিং এর সময়টা আগাগোড়া দারুন সব বিচিত্র ঘটনাতে ঠাসা! সোনার কেল্লার মধ্যে ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ুর উটের পিঠে চরে ট্রেন ধাওয়া করার শুটিঙের সময় বারবার অদ্ভুত ধরনের সব ঝামেলা বাঁধছিল। আবার জয় বাবা ফেলুনাথ মুভির শুরুর দিকের দৃশ্যে দেখা যায় দুটো রিকশায় করে ফেলুদা, তোপসে জটায়ু বেনারসের রাস্তায় ঘুরছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় অতি সাধারণ ���ট। কিন্তু কিভাবে শটটা নেয়া হয়েছিল সেটা জানলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। বইয়ের শুরুতে সংযুক্ত বিভিন্ন ছবির শুটিঙের সময় তোলা অনেক দূর্লভ আলোকচিত্রগুলোও এক কথায় দূর্দান্ত! যারা অপু ট্রিলজি, গুপী গাইন বাঘা বাইন, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ মুভি গুলো দেখেছেন তাঁরা মুভির বিভিন্ন দৃশ্যের সাথে মিলিয়ে বইটা পড়তে বাড়তি মজা পাবেন। বিশ্ব বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রথম পঁচিশ বছরে করা বিভিন্ন চলচ্চিত্রের শুটিং এর সময় যে সমস্ত অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন সেগুলোরই কয়েকটা বর্ননা করেছেন এই বইটিতে। সত্যজিৎ ভক্ত, সিনেমা ভক্ত, ফেলুদা ভক্তদের জন্য মাস্টরীড।
পর্দার এক মিনিটের গল্প তুলতেও যে কতো কষ্ট তা বইটি পড়লেই বুঝা যাবে। কতো টেকনিক, কতো উপায়ে ছবি করা হয়। কিন্তু তবুও যেনো অনেক শান্তি। এইযে ঘুরেঘুরে জায়গা ঠিক করা,এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া,সে জায়গার মানুষের সাথে এক মেল তৈরি হওয়া-এসবের অনুভূতিটাই আলাদা
সত্যজিৎ রায়ের প্রতি আমার আলাদা একটা দূর্বলতা কাজ করে। ওনার প্রতিটি কাজের মন্ত্রমুগ্ধ ভক্ত আমি। ওনার সাথে আমার পরিচয় 'গুপীগাইন বাঘা বাইন' দিয়ে। অবশ্য তখন ছোট ছিলাম, জানতামই না যে এটা মহারাজার সৃষ্টি। বাবা একখানা ডিভিডি নিয়ে এসেছিলো,অনেকবার দেখেছি এই সিনেমাখানা। তারপর যখন গ্রামে ডিশলাইন আসলো,আমি পেলাম বিটিভি ছাড়াও অনেক চ্যানেল। আর এভাবেই দেখা ফেলাম ফেলুদার। তখন আমি গোয়েন্দা বলতে চিনতাম শুধু 'কিশোর রবিন মুসা'-এই তিনজনকে। সোনার কেল্লা দেখে আমি ফেলুদার বুদ্ধিতে মুগ্ধ। এর পরপরই খালামণি 'বাদশাহী আংটি' ধরিয়ে দিয়েছিলো। আর এভাবেই আমার সত্যজিৎ প্রীতির শুরু। এই বই থেকে অনেক কিছু জানলাম। প্রিয় সব সিনেমার পিছনের গল্পগুলোও অনেক সুন্দর। কতো মানুষ!কতো জায়গা!কতো নতুন নতুন পদ্ধতি! আমি চিরকাল চিন্তা করে এসেছি লীলা চরিত্রটি অপু ত্রয়ীতে যোগ করা হয়নি কেনো। কেননা বইয়ে এইটি অপুর জীবনের এক বিশাল অধ্যায়। উত্তর খানা পেলাম এই বইয়ে। উত্তর হলো আমাদের মহারাজা তার কাজের বেলায় পারফেকশনিস্ট ছিলেন। যার কারণে এই চরিত্র বাদ গিয়েছিলো। আরেকটা জিনিস ভাবতে অবাক লাগে সেসময়ের টেকনোলজি এতো উন্নত ছিলো না।অথচ তাই দিয়ে চমক দেখিয়েছেন মহারাজা।ভাবো তো আজকের দিনে তিনি থাকলে আমরা আরো কতো মাস্টারপিস পেতাম! কতো কারসাজি, কতো ফাঁকি যে লুকিয়ে আছে সিনেমাতে তার রেশ নিন এই বই থেকে। এ যেনো গল্পের ভিতরের গল্প।
তর্কসাপেক্ষে বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিৎ রায়।তার ভাষায় - "ফিল্ম তৈরির কাজটাকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়।প্রথম হলো লেখা,দ্বিতীয় ছবি তোলা আর তৃতীয় ছবি জোড়া।"এই ছবি তোলাকেই প্রচলিত ভাষায় বলা হয় শ্যুটিং।পর্দায় যে দৃশ্যটাকে আমরা এক মিনিটে দেখি সেটাকে ঠিকঠাক ভাবে শ্যুট করতে কি পরিমান সময় আর শ্রম প্রয়োজন হয় তার একটা দৃষ্টান্ত এই বই।একজন ভালো পরিচালক সবসময় তার কাজের ক্ষেত্রে আপোষহীন হোন,তিনি যা দেখাতে চাচ্ছেন সেটা যেকোন মূল্য শ্যুট করা একজন ভালো পরিচালকের বৈশিষ্ট্য।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অপু ট্রিলজি,সোনার কেল্লা,জয় বাবা ফেলুনাথ,গুপী গাইন বাঘা বাইন,হীরক রাজার দেশে আমাদের সবারই খুব পছন্দের ছবি।আজকের দিনে যেমন প্রতিটি সিনেমার পেছনের গল্পগুলো আলাদা ভাবে শ্যুট করে 'বিহাইন্ড দ্য সিন' নামে ইউটিউবে শেয়ার করা হয়,তখনকার দিনে তো ইউটিউব ছিলো না সেজন্যে তখনকার বিহাইন্ড দ্য সিন-গুলো সত্যজিতের লেখনীতে হয়ে উঠেছে একেকটা জীবন্ত গল্প।সত্যজিতের প্রাঞ্জল বর্ণনায় মনে হয় সত্যজিতের শ্যুটিং স্পটে আমি নিজেই আছি।
সত্যজিৎ আর দলবল নিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে আছেন।কখন বৃষ্টি আসবে আর 'পথের পাঁচালি'র সেই বিখ্যাত বৃষ্টির দৃশ্যের শ্যুট করবেন...চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছি এই দৃশ্যগুলো।
একটা সিনেমার পেছনে থাকে অনেক গল্প, পরিশ্রম ও ঝামেলা। আর সেই সিনেমা যদি হয় সাদাকালো, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আমরা আবার অতশত বুঝি না, বিছানা কিংবা সোফায় গা এলিয়ে টিভিতে একটা সিনেমা দেখতে বসে যাই, দেখা শেষে আবার সেটার কথা ভুলেও যাই। আর প্রযুক্তির কারণে সিনেমা বানানোও এখন আগের তুলনায় বেশ সহজ। কিন্তু আগে একটা সিনেমা বানাতে প্রচুর কাঠ-খড় পোড়ানো লাগতো। সেই সময়ে, যখন উন্নত ক্যামেরার ব্যবহার ছিল না, তখন এক একটা অংশের শুটিং করতে কি খাটুনিই না করতে হয়েছে তাদের!
অপু, দূর্গা, গুপি-বাঘা, ফেলুদা, জটায়ু, তোপসেদের চিনেন না এমন বাঙালী পাঠক নেই বললেই চলে। এই চরিত্রদের সিনেমার রূপ দিতে গিয়ে যে কতটা কষ্ট, ঝামেলা আর মজার কান্ড ঘটেছে তা-ই উঠে এসেছে এই বইতে। সত্যজিৎ রায় শুধু তাঁর লেখা নিয়েই না, সিনেমা বানানো নিয়েও খুব ডেডিকেটেড ছিলেন। পাতা আর পর্দার মধ্যে যেন কোনো ফারাক না থাকে, সেটার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন৷ কেমন ছিল তাঁর পরিশ্রম? আর সেগুলোর পেছনের গল্পগুলোই কী? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি নিজের জবানিতেই, এই বইয়ে৷
আর্থিক সংকটের কারণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল 'পথের পাঁচালী'র শুটিং। ফলে পুরো সিনেমাটা তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় আড়াই বছর। শুধু আর্থিক সমস্যাই নাই, এই সিনেমা বানাতে যেয়ে সত্যজিৎ রায় আরো উদ্ভট কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যেমন, ছবিতে ভুলো নামের এক কুকুর ছিল। আর্থিক সমস্যার কারণে শুটিং ছয় মাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টাকা-পয়সা জোগাড় করে তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন দেখলেন সেই ভুলো মরে গেছে। পরে কী আর করা, ভুলোর মতন দেখতে আরেকটা কুকুর জোগাড় করে বাকি চিত্র ধারণ করা হলো। এরপর কাশফুলসহ ট্রেনের দৃশ্য ধারণ করে এক সপ্তাহ পর আরেকটা দৃশ্য নেওয়ার সময় দেখা গেল পুরো কাশবন লাপাত্তা! এরপর প্রথম দৃশ্যের সাথে মিলিয়ে কাশবনে চিত্র ধারণ করার জন্য গোটা এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
এরপর 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' সিনেমার বাঘের শুটিং করতে যেয়েও মজার কিছু ঘটনা ঘটে যায়। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে বাঘের দৃশ্য ধারণ করার পর দেখা যায় ছবিগুলো অতিরিক্ত কালো হয়ে গেছে৷ অগত্যা সবগুলো বাতিল করে আবার নতুন করে শুটিং করা হলো৷
এই সিনেমার তিন মিনিটের হুন্ডি-ঝুন্ডির শুটিং করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝুন্ডির দৃশ্যের শুটিং এর জন্য পুরো শুটিং ইউনিট নিয়ে ট্রেনে চেপে চলে গিয়েছিলেন হাজার মাইল দুরের শিমলায়। আর মরুরাজ্য হুন্ডির জন্য রাজস্থানে।
'সোনার কেল্লা'র মধ্যে ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ুর উটের পিঠে চড়ে ট্রেন ধাওয়া করার শুটিংয়ের সময় বারবার অদ্ভুত সব ঝামেলা বাঁধছিল। আবার 'জয় বাবা ফেলুনাথ' এর শুরুর দিকের দৃশ্যে দেখা যায় দুট��� রিকশায় করে ফেলুদা, তোপসে জটায়ু বেনারসের রাস্তায় ঘুরছে। এই সাধারণ একটা শট নিতেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় একদিনের শুটিং!
মাত্র ৮০ পাতার বই। এক নিশ্বাসে শেষ করে ফেললাম। প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়েছেন কী? খুব সুন্দর না? এটাও সত্যজিৎ রায়ের নিজের করা! বইখানা পড়ে লেখক সত্যজিৎ থেকেও পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পারদর্শীতায় মুগ্ধ হয়েছি৷ ইনাকে আমার কিং মিডাস মনে হয়, যেখানেই হাত দেন তাই সোনা হয়ে যায়। তাঁর গল্প বলার ধরণ নিয়ে কিছু বলার নেই, একদম ঝরঝরে লেখা, কোনো মেকি নেই। সিনেমার পর্দার সবকিছুই সহজ মন��� হয়, কিন্তু পর্দায় সিনেমাটা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার পিছনে থাকে ছোটবড় অনেক গল্প। মারাত্মক একটা বই! সত্যজিৎ ভক্তদের জন্য অবশ্য পাঠ্য!
দাদা-বাবা-ছেলে—তিনজনেরই একটা ঝোঁক ছিল—তারা কেবল কল্পনাগুলোকে লিখেই ক্ষান্ত হত না, সেটাকে এঁকে-টেঁকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দিত—এই যে দেখো, এই হল রামগরুড়ের ছানা, কিংবা এই একটা হাঁসজারু! আমাদের পরম সৌভাগ্য এই যে, দাদা-বাবার আমল পার করে ছেলে যখন বড় হলেন, ততদিনে ‘ক্যামেরা’ নামক একটা জিনিসের বেশ প্রচলন হয়েছে, এবং সত্যজিৎ মনে করেছেন, লেখাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এটাকে কাজেটাজে লাগানো যায়।
ফিল্ম খুব একটা না দেখলেও ছোটবেলা থেকে আম্মুর উৎসাহে অসংখ্যবার করে সত্যজিতের ছবিগুলো দেখা হয়েছে। মনে আছে আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম, বাঘা যে অমন করে বাঘটার কাছে গিয়ে হেলে পড়ল—কামড়ে দেয় যদি? আজ সেই বাঘের গল্প পড়তে গিয়ে রীতিমত হাত-পা ঠাণ্ডা হবার অবস্থা, রবি ঘোষ লোকটা পারেনও বটে! মহাপাজি মন্দার বোসও যে অসাধারণ একটা মানুষ—যিনি সাইলেন্সার লাগানো বিস্কুট খান আর খড়কাটা মেশিনের শব্দে জেগে ওঠেন—সেটাই বা কে জানতো! ওদিকে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ মগনলাল সাহেব যে ঘাট থেকে উঠে সোজা মছলিবাবার সামনে এসে বসলেন—এই দুটো অংশ দু মাস ব্যবধানে তোলার ব্যাপারটা আশ্চর্যের না হলেও, আমি বড় অস্বস্তি বোধ করেছি। এতবার দেখেছি ছোটবেলায়, ঘুণাক্ষরেও এমন কিছু তো টের পাইনি?
আর খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলার লোভ সামলাতে পারছি না, প্রচ্ছদটা আর বইয়ের শিরোনামটা না, যাকে বলে পুরো বিধ্বংসী হয়েছে। উফ, দূরে ফেলুদা-তোপ্সে-জটায়ু, সামনে সত্যজিৎ আঙুল তাক করে আছেন, আর ওপরে বড় বড় করে লেখা, একেই বলে শুটিং, যেন সত্যজিৎ একেবারে দেখিয়ে দিচ্ছেন শুটিং কাকে বলে!
সত্যজিৎ-এর লেখনী নিয়ে নতুন করে বলবার নেই, চলচ্চিত্রের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দারুণ বই। পথের পাঁচালী’র শ্যুটিং পড়ে আবেগী হতে হয়, হীরক রাজার দেশের নির্মাণ কাহিনীও দারুণ। এক চলচ্চিত্রকারের সংগ্রাম, একটা সেটের সাথে মায়ায় জড়িয়ে যাওয়া কিংবা অর্থ সমস্যা। পাঠক একাত্ম হবেন চলচ্চিত্র নির্মাণের সংগ্রামে।
ছবির শুটিং-এর জন্য সত্যজিৎ রায়কে ভারতের নানান জায়গায় যেতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে তিনটে ছবিতে – গুপী গাইন বাঘা বাইন, সোনার কেল্লা, আর জয় বাবা ফেলুনাথ।বীরভুমের গ্রাম, বেনারসের অলিগলি আর ঘাট, সুদূর পশ্চিম রাজস্থানের মরু অঞ্চল, সিমলার বরফের পাহাড় ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করতে গিয়ে যে সব অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই কয়েকটার কথা বলা হয়েছে এই বইতে।
Ray had to travel to various parts of India to shoot the film. I have had to travel the most in three films - Gupi Gain Bagha Bain, Sonar Kella, and Joy Baba Felunath. Some of them are mentioned in this book.
This is a simple, candid and fact-filled write-up. The book reflects his commitment to filming. It told the stories to signify the persistence in a filmmaker's life. This book has only 80 pages. If you love Satyajit's film, then you may enjoy this book :) pdf link: https://jyotirjagat.files.wordpress.c...
এই মানুষটার সিনেমার জ্ঞান দেখলে খুব আশ্চর্য হই। চাইলেই বড় কোন শিল্পী বা লিখক হতে পারতেন তারপরও আর্ট হিসেবে সিনেমাটাকেই বড় করে বুকে ধারণ করলেন। একটা সময় ওয়ার্ল্ড সিনেমায় বাংলা ছবি ছিলো একদম উপরের কাতারে। এখনকার অনেক বড় বড় ডিরেক্টরদের বলতে শুনি সিনেমার অনেক কিছুই শিখেছেন মি. রায় থেকে। কিন্তু এখনকার বাংলা সিনেমার অবস্থা দেখে খুব আফসোস হয়। পথটাতো ভিন্ন হবার কথা ছিলো। এমন হলো কেন! Tarkovsky'র একটা কথা ছিলো এমন, একটা সময় আসবে যখন সিনেমাকে আর্ট (শিল্প) বলে আর বিবেচনা করা হবে না। তার আশঙ্কাটাই যেন আজ সত্যি হলো! সিনেমা কালের পরিক্রমায় হলে গেলো বিনোদনের খোরাক। ভালো কাজ যে এখন একদম হয়না এমনও না তবে তা হাতে গোনে ফেলা যায়। আমার জীবনের কোন এক সময় আমি একটা সিনেমা বানাবো যেভাবেই হোক। কিন্তু এখনো ডিসাইড করতে পারছি না সিনেমাটা আমার কোন গুরুকে উৎসর্গ করবো! মিস্টার রায় নাকি ঋত্বিক বাবু?
সময় অনেক এগিয়েছে, নতুন প্রযুক্তি এসেছে। কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। যখন এসব প্রযুক্তির খুব বাড়াবাড়ি শুরু হয়নি,তখনকার সময়ে বসে সত্যজিৎ রায় বানাতেন মাস্টারপিস সিনেমা। যিনি আবার কোন ফাঁকি পছন্দ করতেন না,তাঁর কাজ হওয়া চাই খাঁটি এবং খাসা। রায় সাহেব যে কতটা নিখুঁত ছিলেন কাজে,সেটার মজার নমুনা পাওয়া যায় এই ঘটনাতে, শৈলেন মুখার্জি করেছিল ডাক্তার হাজরার পার্ট। তাকে মন্দার বোস ঠেলা মারবে ��েটা শৈলেন জানত,কিন্তু দৃশ্যটা ঠিক কিভাবে তোলা হবে সেটা আমার জানা থাকতেও আমি ওকে বলিনি। ও বোধ হয় ভেবেছিল যে সত্যজিৎ রায় যখন ফাঁকি দেয়া পছন্দ করেন না তখন ওকে বুঝি সত্যিই পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে পড়তে হবে। রাজস্থান যাবার আগে শৈলেন তার বাড়িতে বলে গেল--"যাচ্ছি তো,কিন্তু হাড়গোড় কিছু রেখে আসতে হতে পারে এটা বলে গেলাম"
একেই বলে শুটিং " বইয়ে একেকটা ঘটনা পড়ছিলাম আর অবাক বনে যাচ্ছিলাম। বিশেষ করে বাঘের শ্যুটগুলো,মরুভূমিতে ট্রেনের শ্যুটগুলো,একটা ২/৪ মিনিটের শটের জন্য কি অমানুষিক পরিশ্রম। কাজের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর মেধা ছাড়া এরকম দুরূহ সময়ে ছবি বানানো অকল্পনীয়।
এই বইয়ে আরেকটা জিনিস পড়ে ভীষণ মজা পেয়েছি,সেটা হচ্ছে মন্দার বোস ওরফে কামু মুখার্জি'র ঘটনাগুলো। লেখক বলেছেন উনার ঘটনা গুলো লিখতে গেলেই একটা বই হয়ে যাবে,তাও যে কয়টা ঘটনা লেখক বলেছেন,সেগুলো পড়েই হাসতে হাসতে শেষ।
ছবি দেখি৷ মুগ্ধ হই৷ বাহবা দেই৷ কিন্তু এইসবের পেছনের গল্প— শুটিং, জিনিসটা বড্ড বেশি পরিশ্রম এবং ঝামেলা৷ ফেলুদার জমজমাট দুইটি গল্প আর পথের পাঁচালীর অসামান্যতাকে বইয়ের পাতা থেকে বড় পর্দায় তুলে ধরতে কতই না কাঠখড় পোড়াতে হল৷ তাছাড়া গুপী গাইন বাঘা বাইনের হুন্ডী-ঝুন্ডী-শুন্ডী আর বাঘের সামনে গানের দৃশ্যায়ন ক্যামরাবন্দীতে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ে কি নিপুণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন৷ বইখানা পড়ে লেখক সত্যজিৎ থেকেও পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পারদর্শীতায় মুগ্ধ হয়েছি৷ কড়া বই!
ফিল্ম দেখে ফাঁকি ধরা কার সাধ্যি? তবে এই বইখানা পড়লে জানতে পারবেন চলচ্চিত্রের অমায়িক ফাঁকিবাজি ও কতটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে পরিচালনা করা হয়। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ -এই পাঁচটি চিরহরিৎ চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। শুটিংয়ের তোড়জোড় করতে যত হন্যস্ত করা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে- সেই অভিজ্ঞতারই এক রূপ ‘একেই বলে শুটিং’। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক কিভাবে চলচ্চিত্রের কাজ ক্যামেরার পেছনে থেকে করেন তার এক বিস্ময়কর ধারনা পাওয়া যায় এই প্রবন্ধে। অর্থ সমস্যা, অপেক্ষিত মৌসুম, শুটিংয়ের সেট ও নানান ভাল-মন্দের সাথে একজন পরিচালকের সংগ্রাম এর এক অকৈতব আলোচনা।⠀ ⠀ বইটিতে সাদাকালো কয়েকটি ফটোগ্রাফাস্ রয়েছে- যা দেখে বইয়ে লিখিত শুটিংয়ের পুরো ব্যাপারটা আরও বেশী বাস্তব-পূর্ণ লেগেছে। সোনার কেল্লা ছাড়া বাকী চলচ্চিত্রগুলো আমার দেখা হয়েছিল। হয়তো এজন্যই বেশ মজা লেগেছে বইটা পড়তে। পড়া শেষে চলচ্চিত্রগুলো আবারও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, শুধুমাত্র এই বইটিতে উল্লেখিত দৃশ্যগুলোর স্বাদ আরেকবার চোখ দিয়ে নেওয়ার জন্য। এই বইটা অবশ্যপাঠ্য।
সত্যজিৎ নি:সন্দেহে বাংলার সেরা চিত্র পরিচালক। কিন্তু এই মানুষটাই তার সিনেমা নিয়ে লিখে গেছেন অতি অল্প। গোপন প্রেমিকার মত গল্পের পেছনের গল্পগুলিকে ঢেকে রেখেছেন।
তবুও যা অল্পবিস্তর লিখেছেন, তারই অংশ এই বইটা। সত্যজিৎ এর ট্রেডমার্ক লেখনী তো আছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় করা, মেকিং আ সিনেমা যে কত বড় আর্টিস্টের কাজ, তার আন্দাজ পাওয়া যায় এই বইটা পড়লে। শুধু সিনেমা নয়, যেকোনো সৃষ্টিশীল মানুষেরই যে মাথা কতটা ভাল কাজ করে, কতটা যে পরিশ্রম থাকে একটা কাজের পেছনে, সেটা বোঝা যায়। নিজে সৃষ্টিশীল হতে ইচ্ছা করে।
বইটি পড়েননি? মিস করেছেন। একদমই অন্যরকম একটা লেখা মানিকদার। অসাধারণ।
Ahhhhh.... what can I say... Can anyone read something written by Satyajit Ray and not feel satisfied? I have read so many of his books now and this writer never seems to disappoint me.
As assumed from the title,this book is about the behind the scenes of the movies directed by Satyajit Ray. It's a collection of a few incidents that happened during the shooting. While reading it I was smiling to myself sometimes,and sometimes I felt embarrassed thinking about the awkward situations in the set. It felt like I could visualize everything. Such great is the writing style of Satyajit Ray! The way he had to struggle making those movies stunned me! All the actors and the side-actors,everyone had to struggle along with him. The lack of money,lack of a good set,lack of a good camera or lighting,lack of all the facilities the modern movies get nowadays,yet he succeeded in producing some of the best Bangla movies of all time. No matter how mamy obstacles he faced,he figured out a way to solve it. He simply never gave up! Who has this much passion! There's so much to learn from this man. So much.
"একেই বলে শুটিং" - এটি উপন্যাস বা গল্প কোনোটাই না।এখানে সত্যজিৎ রায় তাঁর শুটিং এর ফাঁকে কিছু সত্যিকারের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। শুটিং এর কাজ কখনো স্টুডিওর মধ্যেই হয় আবার কখনো কিছু দৃশ্য শুট করার জন্য বাইরেও যেতে হয়।তো এই সিনেমার শুটিং এর জন্য সত্যজিৎ রায়কে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এই শুটিং করতে গিয়ে ওনার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তারই কিছু এখানে বলা আছে। এছাড়াও শুটিং এর ফাঁকে তোলা কিছু ছবিও দেখানো হয়েছে।
যদি না পড়তাম, সত্যিই অনেককিছু মিস করে যেতাম। বেনারস ও রাজস্থানের জয়সলমির সম্পর্কে কত কি তথ্য জানতে পারলাম। সত্যিই বইটি খুব আগ্রহের সাথে পড়েছি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।
Admirers of Ray tend to follow his writings on film like a manual, but this book is a memoirof Ray's film-making days, esp. those days when he had been busy creating movies that get classified as Children's films. It is a fresh & unpretentious book, full of charming anecdotes and memories. Highly recommended.