Jump to ratings and reviews
Rate this book

লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী

Rate this book
হাজার বছর আগে আমাদের প্রধান কবি, কাহ্নপাদ, বলেছিলেন: নগর বাহিরেঁ ডোম্বি গোহারি কুড়িআ। তাঁর মতো কবিতা লিখেছিলেন আরো অনেক কবি। তাঁদের নামগুলো আজ রহস্যের মতো লাগে: কুইপা, কুক্কুরীপা, বিরুআপা, ভুসুকুপা, শবরপার মতো সুদূর রহস্যময় ওই কবিদের নাম। তারপর কেটে গেছে হাজার বছর, দেখা দিয়েছে অজস্র কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার। তাঁরা সবাই মিলে সৃষ্টি করেছেন আমাদের অসাধারণ বাঙলা সাহিত্য। বাঙলা সাহিত্য চিরকাল একরকম থাকে নি, কালে কালে বদল ঘটেছে তার রূপের, তার হৃদয়ের। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন সৌন্দর্য। মধ্যযুগের কবিরা লিখেছেন পদাবলি, লিখেছেন মঙ্গলকাব্য্ উনিশশতকে বাঙলা সাহিত্য হয়ে ওঠে অপরূপ অভিনব। তখন কবিতায় ভরপুর বাঙলা সাহিত্যে দেখা দেয় গদ্য, বাঙলা সহিত্য হয়ে ওঠে ব্যাপক ও বিশ্বসাহিত্য। বিশশতকের বাঙলা সাহিত্যের শোভার কোনো শেষ নেই। বাঙলা সাহিত্যের অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে, আর কবি হুমায়ুন আজাদ বাঙলা সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, যা শুধু বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস নয়, এটি নিজেই এক সাহিত্য সৃষ্ট্ কবি হুমায়ুন আজাদ হাজার বছরের বাঙলা সাহিত্যকে তুলে ধরেছেন কবিতার মতো, জ্বেলে দিয়েছেন বাঙলা সাহিত্যের নানান রঙের দীপাবলি। এ-বই কিশোরকিশোরীদের তরুণতরুণীদের জন্যে লেখা, তারা সুখ পেয়ে আসছে এ-বই প’ড়ে, জানতে পারছে তাদের সাহিত্যের ইতিহাস; এবং এ-বই সুখ দিয়ে আসছে বড়দেরও। লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী এমন বই, যার সঙ্গী হ’তে পারে ছোটোরা, বড়োরা, যারা ভালবাসে বাঙলা সাহিত্যকে। বাঙলার প্রতিটি ঘরে আলো দিতে পারে এ-বই।

141 pages, Paperback

First published October 1, 1976

108 people are currently reading
1090 people want to read

About the author

Humayun Azad

85 books296 followers
Humayun Azad (Bangla: হুমায়ূন আজাদ) was a Bangladeshi author and scholar. He earned BA degree in Bengali language and literature from University of Dhaka. He obtained his PhD in linguistics from the University of Edinburgh in 1976. He later served as a faculty member of the department of Bengali language and literature at the University of Dhaka. His early career produced works on Bengali linguistics, notably syntax. He was regarded as a leading linguist of the Bangla language.

Towards the end of 1980s, he started to write newspaper column focusing on contemporary socio-political issues. Through his writings of 1990s, he established himself as a freethinker and appeared to be an agnostic. In his works, he openly criticized religious extremism, as well as Islam. In 1992 Professor Azad published the first comprehensive feminist book in Bangla titled Naari (Woman), largely akin to The Second Sex by Simone de Beauvoir in contents and ideas.

The literary career of Humayun Azad started with poetry. However, his poems did not show any notable poetic fervour. On the other hand his literary essays, particularly those based on original research, carried significant value.

He earned a formidable reputation as a newspaper columnist towards the end of 1980s. His articles were merciless attacks on social and political injustice, hypocrisy and corruption. He was uncowed in protesting military rule. He started to write novels in 1990s. His novel Chappanno Hazar Borgomile is a powerful novel written against military dictatorship. Azad's writings indicate his distaste for corrupt politicians, abusive military rulers and fundamentalist Islam. Nevertheless, his prose shows a well-knit and compact style of his own. His formation of a sentence, choice of words and syntax are very characteristic of him. Although he often fell victim to the temptation of using fiction as a vehicle of conspicuous political and philosophical message, he distinguished himself with his unique style and diction.

On August 11, 2004, Professor Azad was found dead in his apartment in Munich, Germany, where he had arrived a week earlier to conduct research on the nineteenth century German romantic poet Heinrich Heine. He was buried in Rarhikhal, his village home in Bangladesh.

In 2012, the Government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously. Besides this, he was honored with Bangla Academy Award in 1986.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
688 (57%)
4 stars
400 (33%)
3 stars
81 (6%)
2 stars
16 (1%)
1 star
7 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 134 reviews
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
March 20, 2021
বাংলা সাহিত্যকে ভালোবাসি সেই ছোট্ট বেলা থেকে। তখন শুধু পড়তাম হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল স্যার, অদ্ভুতুড়ে, কাকাবাবু আর ফেলুদা। এগুলো পড়তে পড়তেই কৈশোর শেষ। তখন এগুলোই ছিল আমার কাছে স্বর্গ। যখন বড় হলাম তখন বুঝলাম এই বাংলা সাহিত্য কত সমৃদ্ধ। আর আমি মাত্র তার ছোট্ট একটা কোনায় পড়ে আছি। আজ যখন এই বইটি পড়ছিলাম তখন সত্যি চোখের সামনে ভেসে উঠছিল প্রত্যেকটি সাহিত্যিক আর তাদের সাহিত্যকর্ম। মনে হচ্ছিল ইশশ!! সবগুলো বই যদি এক নিমিষেই পড়ে ফেলতে পারতাম!!

অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি এই বইটাকে।লেখক সত্যি খুব সুন্দর করে বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ উপস্থাপন করেছেন। তবে কিছু কবি সাহিত্যিককে বেশ মিস করেছি। যেমন : লালন শাহ, ফররুখ আহমদ। যাইহোক এ সাহিত্যই আমার একমাত্র প্রান, যা থেকে প্রতিনিয়ত যে অমৃতসুধা পান করছি তা কী অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব? ককখনও না।

বইয়ের প্রথম লাইনগুলোই একজন সাহিত্যপ্রেমিক কে মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।

“যদি তুমি চোখ মেলো বাঙলা সাহিত্যের দিকে, তাহলে দেখবে জ্বলছে হাজার হাজার প্রদীপ; লাল-নীল-সবুজ, আবার কালোও। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে রচিত হচ্ছে বাঙলা সাহিত্য। এর একেকটি বই যেনো একেকটি প্রদীপের মতো আলো দিচ্ছে আমাদের। বুক ভরে যায় সে আলোকের ঝরনাধারায়; সে আলোকে ভরে যায় টেবিল, ধূসর সাদা খসখসে পাতা, পৃথিবী ও স্বপ্নলোক।”...
Profile Image for Hasnat Sujon.
36 reviews15 followers
June 19, 2020
গুডরিডসে এই বইয়ের এতো রিভিউ দেখে তাজ্জব হলাম। আমার ধারনা ছিল, বাঙ্গালী মাত্রই (পড়ুন অধিকাংশ বাঙ্গালী মাত্রই) বিসিএস পরীক্ষার্থী। আর বিসিএস পরীক্ষার আগে বাঙ্গালী এই বইটা কেনে। বইটা কেনে প্রথম পাতায় নিজের নাম লেখে। তারপর বন্ধ করে গাইড বই পড়তে বসে যায়। তবে এই বইটা বিসিএস পরীক্ষার আগে কেনা ফরজে আইন। সবাইকে কিনতে হবে। নাহলে পরীক্ষায় ফেল।

উপরের ধারনা আসলে আমার নিজের জীবন থেকে পাওয়া। আমি নিজেও বিসিএস পরীক্ষার আগে এই বই কিনেছি। তবে আনন্দের কথা হচ্ছে, গাইডের পাশাপশি আমি এই বই চার-পাঁচবার পড়েছি। প্রবল আনন্দ নিয়ে আমি এই বইটা পড়েছি। বইটা পড়ে আমার বৈষ্ণব পদাবলী আর মধুসূদনের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মায়। লাল নীল দীপাবলি পড়েই আমি মাইকেলের নাটক আর কাব্য পড়েছি।

আমার ধারনা হুমায়ুন আযাদ এটা দেখলে খুশি হতেন যে তারঁর বাচ্চাদের জন্য লেখা বই বড়রা (বয়সে, মননে সব সময় নয়), এরকম করে পড়ছে। তবে হয়তো অখুশিও হতেন এর পেছনের কারণ জেনে।
Profile Image for Nadia Jasmine.
213 reviews18 followers
January 3, 2018
আমার প্রথম হুমায়ূন আজাদ এটা। কিছুদিন আগে ইংরেজিতে চিত্রনাট্যের ইতিহাস পড়ছিলাম। শেষ করতে পারি নি এখনো। ইতিহাসে কচকচ করে ব্যাটা মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে, মনে হচ্ছিল জাবেদা বই ঘাঁটছি! অথচ, এই বই কেমন তরতর করে শেষ হয়ে গেল! এতো সুন্দর করে আদুরে ভাষায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক! প্রতি বাক্যে তার বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং এর প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলার আন্তরিকতা ভালো লাগে।ইতিহাস শুধু তথ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন নি তিনি। পাশাপাশি নিজের অনুভূতি, মন্তব্য এবং কে কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটিও বলেছেন। ছোট ছোট অধ্যায়ে পরিমিত শব্দে বাংলা সাহিত্যের পুরো চেহারাটা তিনি তুলে ধরেছেন। আদিম আফসোসটাও ঝালাই হয়ে গেল-- "কেন আগে পড়লাম না?"।বছরের শুরুটাই চমৎকার এক বই দিয়ে শুরু হল। ফিলিং ব্লেজড! :D
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
June 24, 2023
হুমায়ুন আজাদ পুরোদস্তুর শিক্ষকের মত করেই সহজ পায়ে বাংলা সাহিত্যের লাল-নীল দীপাবলির লম্বা ভ্রমণটা করিয়ে আনেন। প্রাঞ্জল হাওয়ার প্রাণে লিখেছেন যেন, কোথাও একটুকু সৌন্দর্যের ছেদ পড়েনি। একটা ভাষা, সেই ভাষার সাহিত্য ও দেশপ্রেম বুঝতে গেলে গোড়া থেকেই শুরু করতে হয়। শিশু-কিশোরদের জন্য এমন এমন বই লিখে যেতে হয়।

N.B: একটা ব্যাপার মনে পড়লো, বইয়ে নজরুল ছিলেন অনুপস্থিত। একবার তাঁকে মহাপদ্যকার হিশেবে স্মরণ করা হয় কিন্তু এরপরে তিনি আর নাই কোথাও, নাই কোন কবিতার চরণ। বাংলা সাহিত্যে, গানের জগতে যে জোয়ার নজরুলের রচনাবলী এবং তাঁর ছন্দ এনেছিলো এর কি কোনো তুলনা হয়!
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
February 8, 2023
সময়ের সাথে সাথে সাহিত্যও এগিয়ে চলে৷ যে সাহিত্য বর্তমানে আমরা পাঠ করি তা আগে এইরকম ছিল না, সাহিত্যেরও বিবর্তন হয়। সাহিত্যের বিকাশ হয় রূপান্তর ঘটে, লেখক অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যের আদি থেকে বর্তমান বিভিন্ন সময়ের কবি লেখকদের বর্ণনা, তাদের সৃষ্ট সাহিত্য, খুব সহজ ভাবে গুছিয়ে পুরো ইতিহাসটাকে লেখক এই বইয়ে তুলে ধরেছেন।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
May 13, 2020
ওরেক্ষোদা! বাংলা সাহিত্যের কটকটি মার্কা ইতিহাসগুলো এতো সুন্দর সাবলীল ভাষায় বলে ফেলা যায়!! <3
Profile Image for Akash.
446 reviews149 followers
December 5, 2022
বাংলা সাহিত্যের জীবনীকে এত ছোট পরিসরে সুন্দর-সাবলীল ভাষায় সকল শ্রেণীর পাঠকের পাঠ্য উপযোগী করে কোনো লেখক আমাদের সামনে প্রকাশ করেন নি। বাংলা সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি হয়ে থাকবে বইটি। স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের হুমায়ুন আজাদ। অমর হয়ে থাকবে প্রগতিশীলদের হৃদয়ে।

বাংলা সাহিত্যের তিন যুগ, চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, বৈঞ্চব পদাবলি, বাংলা সাহিত্যের দুই অন্ধকার যুগ, বাংলা সাহিত্যের বিকাশ, উত্থান-পতন, বিদ্রোহ, বিজয়, গদ্য, গদ্যের জনক, আধুনিকতা অর্থাৎ সম্পূর্ণ বাংলা সাহিত্যকে ১৪৪ পাতার মধ্যে মলাটবদ্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। আর সে দুরূহ কাজটা খুব সুন্দর-সাবলীল ভাবে করেছে হুমায়ুন আজাদ।

যারা আমরা বাঙালি তাদের সবার তো অন্তত বাংলা সাহিত্যের জীবনী জানা উচিত। কিন্তু আমরা কয়জন জানি ! এজন্যই তো আমরা সাহিত্যকে ভালোবাসতে পারি না। কারণ আমরা বাংলা সাহিত্যের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম জানি না অথবা জানতে চায় না। অন্তর কালো মেঘে ঢাকা, লাল নীল দীপাবলি জ্বলেনি।

অথচ বাংলা সাহিত্যের জীবনী ও বাংলা ভাষার জীবনী নামক হুমায়ুন আজাদের বই দুটি যদি শৈশবে বাবা-মা আমাদের হাতে তুলে দিতেন তাহলে আমরা সাহিত্য ও ভাষার জীবনী জেনে সাহিত্যনুরাগী হতে পারতাম। কিন্তু আমাদের অধিকাংশের বাবা-মা তা করে নি। এ তো চরম দুঃখের-পরিতাপের বিষয়।

সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন মানে যুগ অন্ধকারে পতিত হওয়া। হুমায়ুন আজাদ আশা করেছিলেন একুশ শতকের তৃতীয় দশকের মধ্যে বাংলা সাহিত্যে নতুন চেতনার সূর্য উদয় হবে। কিন্তু এখন সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন হচ্ছে। আর সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন হওয়���র সাথে সাথে একটা যুগ অন্ধকারে দিকে ধাবিত হয়। যুগের বাতাস বিষাক্ত হয়ে যায়।

বইটা পড়তে সবাইকে অনুরোধ নয়, আদেশ করছি। যারা পড়েন নি, তারা পড়বেন। আপনার পরিবারের সবার হাতে বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়ের হাতে বইটা তুলে দিবেন। সবার ঘরে জ্বলুক লাল নীল দীপাবলি, নিভুক অন্ধকার।

বহুবর্ণের দীপাবলি হয়ে আবার কবে দেখা দিবে বাংলা সাহিত্য !!! চরম নিষিদ্ধ অথচ নৈতিক কথা গুলো কবে প্রকাশিত হবে !!! কবে সাহিত্য হবে স্বাধীন !!!.
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
December 6, 2022
শেষ হলো অতিসুন্দর, কারুকার্যখচিত কাঠের ফ্রেমে সচ্চ আয়নার ভেতরে বাঁধিয়ে রাখার মতো বইটা। হুমায়ুন আজাদের এক অমর সৃষ্টি এই বই। পড়ার সময় মনে হয়,  আর কেউ কী এমন নিপুণ কৌশলে পরবর্তী সময়ের লেখকদের নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে লিখতে পারবে? কেউ কী এতো যত্ন করে বিশ্লেষণ করতে পারবে! কেউ কী খাটবে এমন করে? বের করবে কী কেউ আরও আরও রত্নভান্ডার বাংলা সাহিত্যের?

"হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন –
তা সবে (অবোধ আমি) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহুদিন সুখ পরিহরি।"



লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী নামটা দেখলেই বুঝা যায় লেখক বাংলা সাহিত্যের আদ্যোপান্ত নিয়ে কথা বলবেন। হ্যাঁ, কথা তিনি ওসব নিয়েই বলেছেন। কিন্তু সাথে বলেছেন, বাংলা ভাষার জন্মের কথা, বলেছেন সব জনরার প্রথম সাহিত্যের কথা, বলেছেন বাঙ্গালী জাতীর কথা। আলোচনা করেছেন নতুন সৃষ্টি নিয়ে, আলোচনা করেছেন ক্রমবিকাশ নিয়ে, পরিবর্তন নিয়ে, ধরণ নিয়ে, এক কথায় সকল কিছু নিয়ে। একেকটা বিষয়, যেসব তিনি অল্প কথায় বলেছেন, নিয়ে একেকটা করে সতন্ত্র বই লিখে ফেলা যাবে বা বিশদভাবে জানার জন্য, বিশদভাবে পড়ে ফেলা যাবে এরকম  করেই লিখেছেন তিনি। সামনে রেখেছেন বাংলা সাহিত্যের বিশাল সাগর। যে সাগরে এখন ইচ্ছে করলেই ডুব দেওয়া যাবে। যে সাগরের পানি লবনাক্ত নয়। যে সাগরের সুধা পান করা যাবে তৃপ্তি সহকারে। যে সাগরে ডুবে মরলে চোখে অন্ধকার নয়, দেখা যাবে লাল নীল হাজার রকমের আলো। যে আলোর সংস্পর্শে এলে জীবন হবে ধন্য।

বাংলা ভাষার সৃষ্টি কিভাবে? কোথা থেকে এলো বাংলা ভাষা? বাঙ্গালীরাই বা কোথা থেকে এলো? এদেশের মুসলমানরা, যারা নিজের আরবইরানীও দাবী করতো তাদের দাবীই বা কতোটা যুক্তি যুক্ত! বাংলা সাহিত্যের সূচনা কোথায়? কেমন ছিলো আগের বাঙলা ভাষা? কিভাবে ক্রমবিকাশের মাধ্যমে পেলাম বর্তমানের আধুনিক বাংলা ভাষা সব কিছুই লেখন নিপুনভাবে বলেছেন তার বই "লাল নীল দীপাবলি" তে।

বাংলা ভাষার সৃষ্টি "প্রচীন ভারতীয় আর্য ভাষা" থেকে। তারপর আসলো পালি,প্রকৃত, আধুনিক। মাঝপথে কত শত টানাপোড়ন। লেখকের মতে বাঙলা ভাষাভাষীরা এসেছেন "সিংহলের ভেড্ডারা" কিংবা "মঙ্গোলীয়" কিংবা "ইন্দো-আর্য" থেকে। অথবা একের পর এক ক্রমবর্ধমান হিসেবে।

বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের বিচরণ কম হবার কারন হিসেবে লেখক দেখিয়েছেন মুসলমানদের অনীহাকে। অথচ মুসলমান শাশকদের আগমনের পরেই কবিতা পেয়েছিলো নতুন গতি। উৎসাহ পেয়েছিলো উপমহাদেশের হিন্দু কবিরা। রচনা করেছিলো মহা মহা কাব্য। অনুবাদ করেছিলো সর্বসেরা মহাকাব্যের বই। কিন্তু বই যে ছিলোনা এমন না। বই ছিলো কিন্তু সেগুলো সংগ্রহ করার মতো কেউ ছিলোনা। এখানেই ছিলো তাদের আলস্য। হিন্দু-মুসলমান যে-ই করুক, করেছে তারা বাংলা ভাষাকে আর বাংলা সাহিত্যকে সম্বৃদ্ধ। তবে যারা "আরবইরানীয়" দাবী করত তারাও বাঙ্গালী। লেখকের মতে সেসময়কার ভাষার সাথে তাল মেলাতেই হোক বা রাজা বাদশাদের চাপে পড়েই হোক, তারা চেয়েছিলো উচ্চশ্রেণির মানুষদের মতো বাঁচতে।  এদেশর হিন্দু বাঙ্গালি, এদেশের বৌদ্ধ বাঙ্গালী, এদেশের মুসলমান বাঙ্গালী। 


আমাদের আছে চর্যাপদ, আছে বৈষ্ণব পদাবলি আছে আরও অমর সৃষ্টি।  আমি ভাবতাম উপন্যাস অনেক আগেই এসেছে বাংলা সাহিত্যে।  কিন্তু ওমা ১৮০০ আগে কোনো গদ্যের বিচরণই ছিলোনা।

বাংলা সাহিত্য ১০০০ বছরের পুরোনো সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের আছে তিনটি ভাগ। আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত লেখাতে মানুষের কোনো স্থান ছিলো। ছিলো দেব দেবীর গুনগান, কাহিনি, মিথ। মানুষদের সম্পর্কে লেখা শুরু হওয়ার পেছনে লেখক বলেছেন মুসলমানদের কোনো দেব দেবী না থাকার কথাকে। দেব দেবী না থাকার কারনে তারা ঝুঁকে পড়েছিলো মানুষের জিবন যাত্রা, প্রেম ভালোবাসা নিয়ে লেখাতে। কিন্তু সেখানেও জায়গা পেতো উঁচু শ্রেনীর মানুষ। সাধারণ মানুষদের জীবন নিয়ে রচনার ক্ষেত্রে লেখক বলেছেন বৈশ্বিক সাহিত্যের অবদানের কথা। বলেছেন বাইরের দেশের মানুষের ভুমিকার কথা, বাংলা সাহিত্যকে বিকাশের ক্ষেত্রে। আমরা শাসিত হয়েছি, তুর্কিদের দ্বারা, হয়েছি পর্তুগীজদের দ্বারা, হয়েছি ইংরেজদের দ্বারা। খারাপ অংশ বাদ দিলে যে টুকু ভালো অংশা পেয়েছি তার ভেতর বাংলা সাহিত্য সম্বৃদ্ধির অংশ টুকু বিশাল।


নিজের ভাষা, নিজের সাহিত্য, নিজের দেশ, দেশের মানুষকে জানার আগ্রহ আমার সহ সবারই প্রবল। সে হিসাবে এই এক স্বর্গের নাম। এখানে যেমন আছে পুরাতন সম্রাট "কবিতার" কথা তেমনি আছে নতুন সম্রাট "গদ্যের" কথাও। আছে চর্যাপদের মতো বোধগম্যহীন বাংলা সাহিত্যের আদিপুরুষ খ্যাত বইয়ের কথা, আছে "প্রমথ চৌধুরীর" মতো চলিত ভাষার প্রবর্তকের কথা। সোনালী যুগের কথার সাথে আছে "দেড়শ" (১২০০-১৩৫০) বছরের অন্ধকার যুগের কথা। আছে "রাধা-কৃষ্ণ"র কথা আছে " লাইলি-মজনু"র কথা। আছে স্বদেশে রত্ন রেখে বিদেশ পাড়ি জমানো মধুসূদন দত্তের কথা। এক কথায় কী নেই এই বইয়ে!


বাংলা সাহিত্যের উজ্জল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে "আলাওল" হয়ে পৌছে গেছে শরৎচন্দ্রে, বিভূতিভূষণদের কাছে। কবিতার জগতে রবীন্দ্রনাথ সম্রাট হলেও,  বা সকল ক্ষেত্রে হলেও ঔপন্যাসিক হিসবে "শরৎচন্দ্র" আমার বরাবরই ফেবারিট। এখানে আজাদ সাহেবের কথা আমার অনেক মনে ধরেছে। আমিও এই কথাটিই ভাবতাম। ইদানিং কালে আসলেও "শরৎচন্দ্র"কে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয় হয়না। যারা দেয় তারা তো দেয়ই কিন্তু যারা দেয়না তাদের যুক্তিগুলোও গা গোলানো।  লেখকের ভাষায়ঃ "শরৎচন্দ্র ঔপন্যাসিক হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন। জনপ্রিয়তায় তাঁকে আর কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। ঔপন্যাসিক হিসেবে কয়েক দশক আগে তিনি যে-মর্যাদা পেতেন,  এখন আর তাঁকে তা দেওয়া হয়না; তবে তিনি আবার মর্যাদা পাবেন।"

এক-কথায় অসাধারণ একখানা বই। পড়লে গর্ব তো হবেই বাংলা সাহিত্য নিয়ে তারচেয়ে বেশি হবে জ্ঞান আর বাড়বো পড়ার লিস্ট। হ্যাপি রিডিং❤️।
Profile Image for Farhana Shraboni.
23 reviews33 followers
October 2, 2022
একটা নতুন সকালকে অভিবাদন জানাতে রাতের আঁধার যখন কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, মৃদু বৃষ্টির মূর্ছনায় আমি তখন সুখের ঘুমে লীন। এদিকে অবচেতনে দেহঘড়ি জানান দিচ্ছে; সময় হয়ে গেছে, জেগে ওঠ। মন বলছে; ঘুমাও, আরেকটু, আআআর একটু... ক্ষতি নেই তো।

এমনি করে দেহঘড়ির সাথে মন যখন সুক্ষ্ম দ্বন্দ্বে মত্ত, বেরসিক অ্যালার্ম ঘড়িটাও বাজি বাজি করে প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তক্ষুণি কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের ব্যবধানে আমি হারিয়ে গেলাম স্বপ্নের রঙিন দেশে...

সেখানে আলো-আঁধারীর কি অদ্ভুত খেলা। আরেকটু এগুতেই দেখি হাজার হাজার প্রদীপ; লাল, নীল, সবুজ কি বাহারি রঙ তাদের, আবার কখনো কালোও। একেকটা প্রদীপ নিজ নিজ আলোর যদ���তে মন্ত্রমুগ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আরো সামনের দিকে। আমি হেঁটে চলেছি, বিভোর হচ্ছি, অবাক চোখে তলিয়ে যাচ্ছি আলোর সমুদ্রে, সামনেই হয়তো ফুলের বাগান, হয়তোবা পুরোটা ঘিরেই রয়েছে বাহারি ফুলের বাগান, আমি ঘ্রাণ পাচ্ছি। চোখ বুজে মাঝেমাঝে ঘ্রাণ নিচ্ছি। দৃষ্টি দিয়েই স্বাদ অনুভব করছি জিহ্বায়। এত রঙ, এত আলো এতদিন কোথায় ছিল? কেন পড়েনি চোখে? নাকি কখনো দেখারই চেষ্টা করিনি? এত আলোতেও পূর্ব উদাসীনতার জন্য রাগ হলো নিজের উপরই, ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করল।

তারপর শতাব্দীর পর শতাব্দী আমি হেঁটে যেতে লাগলাম, লাল নীল আলোর দীপাবলি আমায় বিমোহিত ��রে ভাসিয়ে নিল, আমি তলিয়ে গেলাম হাজার বছরের আলো-আঁধারির খেলায়। নিজের অজানাকে আবিষ্কার করলাম নতুন আলোকে।

আমি কে? কি? কোথায়? দেশকালপাত্র সব ভুলে ডুবে গেলাম, হারিয়ে গেলাম। এভাবেই তো হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আজন্ম। তবে কি জন্মের সাধ পূরণ হলো?

সে প্রশ্নের উত্তর পাইনি। ন্যানো সেকেন্ডে দেখা হাজার বছরের আলো কর্কশ অ্যালামের ক্রিংক্রিং শব্দে এক মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। বড্ড রাগ হলো ঘড়িটার উপর। কিন্তু তখন আমি স্বপ্ন-বাস্তবের মোহাচ্ছন্ন সাম্যাবস্থায়। চোখ বুজলাম আবারও। কেবল ঘুমের পরীরা চোখে এসে বসি বসি করছিল, সেই মুহূর্তে বেআক্কেল ঘড়িটা আবার তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দিল। সব রঙ মিলিয়ে অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ঝিম মেরে বসে বৃষ্টির রিমঝিম শুনতে লাগলাম। উঠতেও ইচ্ছে করল না।
কয়েক মিনিটে মনে হলো অনন্তকাল বসে আছি। সম্বিত ফিরিয়ে দিল মসজিদের আজানের ধ্বনি... নেমে গেলাম বিছানা থেকে।

ফরজ কর্তব্য শেষ করে যখন নিয়মমাফিক পড়ার টেবিলে এসে সটান হয়ে বসলাম, সামনে তাকিয়ে চক্ষুস্থির!
হুমায়ূন আজাদ সাহেব আমার টেবিলে রাখা পিসির উপর বসে পা দুলিয়ে হাসছেন। বিদ্রুপের হাসি না, বড্ড মোলায়েম স্নেহপূর্ণ হাসি! শিশুদের দেখে আমরা যেমন আদুরে হাসি দেই। তারপর দেখি উনি নিচে তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টে, যেখানে আমার হাত পড়ে আছে। দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও তাকালাম। সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটা লেখা " লাল নীল দীপাবলি"।

স্বপ্ন শেষে যে আলোর জগৎ হারিয়ে ফেলেছিলাম বলে বড্ড আফসোস হচ্ছিল, সেই আলোর প্রদীপগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমায়; এসো এসো এসো...

এমন আহ্বান অস্বীকার করার সাধ্য কি আছে কারো?
কয়েক সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেল, 'আজ দিনমান তোমাতেই সমর্পণ করবো'।
..................

তাকে প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম কৈশোরে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে। পড়ার টেবিলে অনেক বইয়ের ভীড় থেকে উঁকি দিচ্ছিল। স্বাস্থ্য আমার মতোই হাল্কাপাতলা হওয়াতে সাহস করে হাতে তুলে নিয়েছিলাম। তারপর সবাই যখন গল্প আর আতিথেয়তার জোগাড়যন্ত্রে মশগুল, আমি খাটের কোণায় গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম। সেই অল্প বয়সে অপরিণত বোধের দরজায় কালো অক্ষরগুলি কতটা আলোড়ন তুলেছিল, সেই অনুভব আজ ভুলিয়ে দিয়েছে বিস্মৃতির স্রোত। শুধু মনে আছে, ফেরার সময় ঐটুকুন বস্তুকে বগলদাবা করে নিয়ে না আসতে পারার দুঃখ আর আক্ষেপের কথা। 'ভালো মেয়ে' বলে যে সুনামটা ছিল, বাচ্চাসুলভ জেদ বা আবদার করে সেটা নষ্ট করারও ইচ্ছে ছিল না। তারপর...
তারপর অনেক বছর আমাদের আর দেখা হয়নি।

একেবারে উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভর্তি(যুদ্ধে)র সময় এক বড় আপু হাতে গছিয়ে দিল বইটা। তো এত বছর পর দেখা হওয়াতে আহ্লাদিত হওয়ার বদলে আমি বরং ভয় পেয়ে গেলাম। ভীষণ ভয়! ঐটুকুন বইয়ের প্রায় লাইনে লাইনে দাগ, লীল, নীল, গোলাপি, সবুজ কালির দাগ... সব তথ্য নাকি মনে রাখতে হবে! তাহলেই ভর্তিযুদ্ধে সাহিত্য বিষয়ক শত্রুদের মোকাবিলা করা সহজ হবে।

আমি এক্কেবারে ভিমড়ি খেয়ে পড়লাম। ওরিব্বাস! এত্তকিচ্ছু মনে রাখতে হবে?
মুখস্থের নামে আমার শুধু কলিজা শুকায় না, ফুসফুস, শিরা, ধমনী, রক্ত সব শুকিয়ে যায়। আমি ছেড়ে দিলাম। যাহ! পড়বো না। সেই থেকে বইয়ের এত এত এত প্রশংসা শুনেও পড়ার সাহস কুলিয়ে ওঠেনি। জোর করে শুরু করেও, ভালো লাগলেও, আমি পড়ে শেষ করতে পারিনি।

আজ স্বপ্নে দেখা 'রঙের মেলা' আমার ভয় তাড়িয়ে দিয়েছে। বইটা হাতে তুলে নিলাম সাহস করে... সামনে আজাদ সাহেব হাসছেন এখনো, সৌম্য, সুন্দর মোলায়েম হাসি।

তারপর?

দিনমান কীভাবে কেটে গেল,আর টের পাইনি। ধরে বসে থেকেছি, এমনও না। রুটিনমাফিক খাওয়া, গোসল সব হয়েছে। কিন্তু মনের চোখ নিবদ্ধ হয়ে ছিল কালো অক্ষরের গহ্বরে।

পড়তে গিয়ে ছোট দুই ভাইবোনের কথা খুব মনে পড়ছিল। ভাইটা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে যাবে এ মাসেই, বোন অষ্টম শ্রেণিতে। নেহাত ছোট নয় তারা। কিন্তু বিদ্যের দৌঁড় একাডেমিক সিলেবাস পর্যন্তই। সিস্টেম যেন ওদের মনে খুব করে গেঁথে দিয়েছে; 'যা পরীক্ষায় আসেনা, তা জানার দরকার নেই।' আমার খুব দুঃখ হয়, আফসোস হয়। ছ'ইঞ্চির স্ক্রিনটা যে সাদা পাতায় "কালো অক্ষর"এর চেয়ে বেশি উজ্জ্বল ওদের কাছে, বেশি রোমাঞ্চকর। পুরোনো বা নতুন বইয়ের ঘ্রাণের মাদকতা ওদের ছুঁতে পারেনা, মাতোয়ারা করেনা পাগলের মতো। শব্দের অর্থ না বুঝলে অভিধান ঘাঁটতে হয়না আর, ঐ স্ক্রিনই বলে দেয়। ছোট্ট একটা যন্ত্রে কি বুদ্ধিতে যেন গোটা দুনিয়া পুরে দেয়া হয়েছে। আমি তার বিরোধী নই। বরং আমিও নির্ভরশীল। একবিংশ শতাব্দীর সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হয়ে স্ক্রিন ছাড়া তো চলতে পারিনা আমিও। কিন্তু এইযে নির্ভরশীলতা, এটা যখন কালো অক্ষরের আনন্দ কেড়ে নেয় শৈশব থেকে, তখনই মন বড্ড পোঁড়ায়। রূপকথার গল্প পড়ার বা শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়না এ যুগে এসে, সব দেখা যায় স্ক্রিনেই। দোষ স্ক্রিনেরও না হয়তো! কি জানি! বড় হয়ে ওঠার সময় আমি যেমন একচ্ছত্র মনোযোগ পেয়েছি, শিক্ষিকা মা কি সাংসারিক ব্যস্ততায় ততটা গুরুত্ব দিতে পেরেছেন তাদের? কিংবা আমিই কি পেরেছি বড় বোন বা বন্ধু হিসেবে সময় দিতে? আমাদের "দেয়া উচিত" ভাগের সময় আর আনন্দ তখন হয়তো মুঠোফোন বা টিভির স্ক্রিন দিয়েছে। তাই কাগুজে বইয়ের চেয়ে হাতের মুঠোফোন বড় বন্ধু এখন।

তারপরেও চেষ্টা করেছি, করছি, করে যাবো... তাদেরকে বইয়ের দুনিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে বন্ধুত্ব করে দিতে।

মাস ছয়েক আগে হঠাৎ মনে হলো, চোখের সামনে বই না দেখলে পড়ার আগ্রহ জন্মাবে কি করে? টেবিলে বা ট্রাংকে বই বন্দী করে রাখলে চলবে না, সবসময় চোখের সামনে দেখা চাই, তবুও যদি সামান্য আগ্রহ জন্মায়, তাতেও লাভ। পাঠিয়ে দিলাম ক্ষুদ্র সামর্থ্যে সঞ্চিত সব বইগুলো, মাতৃদেবীও বড্ড সদয় হলেন, আগ্রহ দেখালেন আমার বই-সন্তানদের প্রতি। যত্নের ত্রুটি যেন না হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি অনুরোধ-বিনুরোধ করে পাঠিয়ে দিলাম ওদের।

গরীব ঘরে আর আসবাব থাকুক না থাকুক, এখন বইয়ের ছোট্ট একটা আলমারি আছে। ইদানিং শুনছি, মন ভালো না থাকলে ছোট বোন মাঝেমাঝে গিয়ে বই নাড়াচাড়া করে -এটুকু শুনেই মন আনন্দে নেচে ওঠে। দু'একটা বই উল্টেপাল্টেও দেখছে। ইচ্ছে করছে তাকে আরো আরো আরো অনেক বই কিনে দেই, ভরিয়ে ফেলি ঘরের বাকি জায়গা। আপাতত সেই সামর্থ্য নেই। পর্যাপ্ত বই কেনার সামর্থ্যের সন্ধানেই কিন্তু আজ আমার টেবিলে হুমায়ূনের দীপাবলি। এত বছর পর এমনি এমনি শুধু মনের খায়েশ মেটানোর জন্য হাতে নিয়েছি, এটা বললে ডাহা মিথ্যে কথা বলা হবে। সাহিত্য আজ জানতে হচ্ছে বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাওয়ার জন্য না, ডুবে যাওয়ার জন্যও না। আজ চাহিদাটা যতটা না মনস্তাত্ত্বিক, তারচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। কারণ যা'ই হোক না কেন, এবার আর একে দূরে দূরে সরিয়ে রাখবো না অবহেলায়, হাতের নাগালেই থাকবে সে। উঁকি দেবো মাঝেমাঝেই প্রদীপের দুনিয়ায়। লাগুক চোখে ধাঁধা, ধরুক মনে রঙ। একবারে শেষ নয়, তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে বারংবার।

কালে কালে কিছু বই থাকে, কখনো না পড়লেও শুধু নাম দেখেই চোখ বুজে বলে দেয়া যায়, "এটা ভালো বই", অবশ্যপাঠ্য বই। এই বইটাও তেমন। আমার ক্ষমতা থাকলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই এই বই অবশ্যপাঠ্য করে দিতাম সিলেবাসে।

নাতিদীর্ঘ এই বইখানিতে আজাদ সাহেব আশ্চর্য কলমে কি যাদুবলে যে প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস জানিয়ে গেলেন অল্প কথায়, ভাবলে অবাক হতে হয়। সরল সহজ সরস ভঙ্গিতে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের গল্প বলার ছলে বলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের জন্মকথা। কিন্তু 'বাচ্চাদের বই' বলে বুড়োরা তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন, এমনটা ভাবলেও ভুল হবে কিন্তু! কেন? -এ প্রশ্নের উত্তরে নাহয় বইটাতেই চোখ বুলিয়ে নিলেন!

অবশ্য এও জানি, আমার মতো গোমূর্খ আহাম্মক দেশে খুব কমই আছে। পরিচিত মহলে সম্ভবত কারোরই বইটা পড়া বাকি নেই।

তা যাই হোক, আমার মতো চুনোপুঁটির এ নিয়ে দু লাইন লেখা বা না লেখায় কিচ্ছুটি যায় আসেনা, জানি। তাও বকবক করে গেলাম। কি জানি কেন! সম্ভবত ঘোর লেগেছে, চোখে, মনে, সত্ত্বায়.... লাল নীল দীপাবলির রঙ।



[১৪ই আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
(২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২)]
Profile Image for Tusar Abdullah  Rezbi.
Author 11 books55 followers
October 15, 2022
বাংলা সাহিত্যের এত সহজ আর সাবলীল কোনো বই আছে কি-না জানা নেই। আমি সত্যিই মুগ্ধ!
Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
February 18, 2017
বইটা কোন গল্প-উপন্যাসের না ছিল না। বইটা ছিল স্রেফ একটা জীবনী, তাও কিনা সাহিত্যের জীবনী। বাংলা সাহিত্যের, লেখকের ভাষায় 'বাঙলা' সাহিত্যের।
শত শত বই লিখে ফেলা যায়, লেখা হয়েছেও নিশ্চয়ই এই বাংলা সাহিত্য নিয়ে। এই এতশত কথাকে মাত্র এই কয়টা পৃষ্ঠায় এক মলাটে বলে ফেললেন। সহজ সুন্দর আর সাবলীল। প্রায় শূন্য ধারণা নিয়ে পড়া শুরু করে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমকের মুখোমুখি হয়ে বইটা শেষ করলাম।
প্রাচীন কিংবা মধ্যযুগের সাহিত্যের কিছুই পড়া হয়নি। রামায়ণ বা মহাভারত ছাড়া আর কিছু খুব একটা পড়ার সম্ভাবনাও নাই। বরং গানের মাধ্যমে কিছু পরিচয় হয়েছে, হচ্ছে... হবে।
আধুনিক যুগের প্রথম শতাব্দীর ব্যাপারেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। যাদের হাত ধরে গত শতাব্দীর শেষ সাত আট দশকের সাহিত্য তাদের পরিচয় পেয়েছি বেশ ভালোমতই। এরই মাঝে আরও অনেকের মতই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে লেখকের মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে বারবার। রবিবাবু এবং সাথে মধুসূদন দত্ত আর বুদ্ধদেব বসু, এই তিনজনের প্রতি লেখকের অদ্ভুত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
বইয়ের যে একটা দিক খানিকটা হতাশাব্যঞ্জক মনে হয়েছে তা হচ্ছে, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের পরে যারা সাহিত্যে এসেছেন তাদের কথা লেখক একেবারেই বলেন নি। কারণ আমি জানি না, অনুমান হয়ত করতে পারি খানিকটা। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, আরও একটা পরিচ্ছেদে তাদের কথাটা থাকলে বইটা আরও অনেক উপভোগ্য হতে পারত। তবে এই সামান্য ত্রুটির জন্য একটা তারা কমিয়ে দেয়া যায় না... লাল নীল অসংখ্য রঙিন দীপাবলির মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করিয়ে আনবার জন্যে লেখককে মনে থাকবে বিশেষ করে...
Profile Image for Adwitiya (অদ্বিতীয়া).
297 reviews41 followers
June 26, 2021
৪.৫০ / ৫.০০

(প্রথম পুনঃপাঠ)

ছোটবেলা থেকেই যেকোন জ্ঞানচর্চার ইতিহাস নিয়ে জানতে ভাল লাগে। আমাদের এই ভারতবর্ষে তো জ্ঞানচর্চার ইতিহাস মূলত সাহিত্যচর্চারই ইতিহাস। এমনকি প্রাচীন গণিত, চিকিৎসা বা জ্যোতির্শাস্ত্রেও ভারতদেবীর অর্জনগুলো কাব্যের ছন্দে বাধা পড়েই আমাদের আধুনিক সময় পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। তাই বোর্ড নির্ধারিত সহপাঠের শুরুতে উপন্যাস আর নাট্যসাহিত্যের যে ইতিহাস দেয়া থাকে তা সবসময়ই অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা নিয়ে যে ছোট্ট সুন্দর একটা বই আছে সেটাও পাঠ্যবইয়ের কবিতার শুরুতে হুমায়ুন আজাদের জীবনী অংশটুকু পড়েই জেনেছিলাম। তাই স্কুলের সামনের লাইব্রেরিতে কোন একদিন যখন লাল নীল দীপাবলির হার্ডকপি নজরে পড়ে গেল এক মুহুর্তও দেরি করা সম্ভব হলো না। যতদূর মনে পড়ে ওইদিন রিকশা ভাড়ার অভাবে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিলো।

এটা অবশ্যই বারবার পড়ার মত বই। লেখক বলেছিলেন তিনি নাকি এক ঘোরের মধ্যে থেকে কবিতা লেখার মত একটানা এটি লিখে গিয়েছিলেন। পাঠক হিসেবে আমাদের অভিজ্ঞতাও অনেকটা একই রকম, একবার বইটি পড়তে শুরু করলে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসে। আমি তাও এবার সময় নিয়ে বেশ যত্নসহকারে পড়ার চেষ্টা করেছি। মাত্রই লেখকের আরেক অনুপম রচনা কত নদী সরোবর পড়ে শেষ করেছিলাম, তাই ভাবলাম যুগল বই হিসেবে দুটোকে একসাথে পড়ে নিলে মন্দ হয় না। পড়ুয়া সব বাঙালির জন্য অবশ্যপাঠ্য।


~ ২৬ জুন ২০২১
Profile Image for Nahian.
98 reviews10 followers
February 19, 2023
Short but sweet 🧁 and informative. His Writing style is crisp and clear.
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
February 17, 2023
হুমায়ূন আজাদ হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরেছেন কবিতার মতো, জ্বেলে দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের নানান রঙের দীপাবলি।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
March 3, 2022
কি চমৎকার! কি চমৎকার!
এতো সুন্দর করেও সাহিত্যের ইতিহাস লিখা যায়? হুমায়ুন আজাদ আমাকে মুগ্ধ করেছেন। এই বইয়ের তথ্যবহুল একইসঙ্গে ঝড়ঝড়ে লিখা পড়ে মুগ্ধ হবে যে কেউ। লেখক বাঙলা সাহিত্যের উত্থান-পতন নিয়ে গুছানো আলোচনা করেছেন। সঙ্গে নিজের গঠনমূলক মন্তব্য জুড়ে দিয়েছেন। পাঠক হিসেবে একটা দারুণ ভ্রমণের মতোন লেগেছে।

দ্বিধাহীনভাবে পাচ তারকা দিলাম।
Profile Image for Bibi Rasheda Afrin Rumi.
16 reviews21 followers
September 12, 2021
এতো সুন্দর একটা বই! ♥
এটা একবার পড়ে ফেলে রাখার মতো না। আবার পাঠ্যবইয়ের মতো খটমটও না। এটা বারবার বারবার পড়ার মতো বই।
আবার পড়বো বইটা, এবং জানিনা জীবনে আর কতবার পড়া হবে....
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
February 1, 2023
বাংলা সাহিত্যের আদী অন্ত এই পিচ্চি একটা বইতে। সত্যিই অসাধারণ ❤️❤️❤️
Profile Image for Shahriar Kabir.
107 reviews42 followers
May 7, 2019
একই সাথে এটা একটা বই এবং বাংলা সাহিত্যের Macrocatalogue. তবে সুপার ক্যাটালগ নয়। সকল চিপায় উঁকি দেয়া হয় নি এখানে। কেবল ভাস্বর, যাদের কথা না তুললে আর ক্রম থাকে না তারা সকলে আছেন। তথ্য এত সাবলীল যে, কোথাও পড়তে গিয়ে আবেগে মথিত হতে হয় না, অথচ পরিষ্কার শব্দে গাথা সারাংশ।
সাহিত্য ছাড়া একটা জাতি বড়ও হয় না, বেঁচেও থাকে না। সব কিছু বদলে যাবার মত বদলায় সাহিত্য। সাহিত্য একটা ফসিল। এতে থাকে যুগের ছাপ, চাহিদার কথা, আরাধনার হিস্যা। থাকে কারা স্রষ্টা, কারা পূজনীয়, কী নিয়ে জেগে আছে! কারা জেগে আছে— মানুষ না শাসক? পূজক না পূ্জারী?
কখনো তো আমরা শিক্ষার শিখরে ছিলাম না। বিশ্বের মাঝে বাঙালি যতটা না তার চেয়ে বাঙালি নিজের মাঝে বিশ্ব ঘিরে রেখেছে। সে হিসেবে আজকে পর্যন্ত সাহিত্য সৃষ্টির পরিমাণ নেহাত কম না। আমাদের যে চিরন্তন ত্রুটি সেটি চর্চার দৈন্যতা, সৃষ্টির দৈন্যতা আমার বোধে টেকে নি।
আধুনিক সময়ে এসে বেড়েছে পাঠকের কলেবর। সাহিত্যের কলেবর কত���া বেড়েছে বলতে পারছি না। বই মানেই তো আর সাহিত্য না। যেমন লাল নীল দীপাবলি একটি বই, কোনো সাহিত্য কিন্তু না। সাহিত্য পাঠকদের থেকে বেরিয়ে আসে স্রষ্টা, আমাদের মত বই পাঠকরা কেবল কর্মী মৌমাছি।
দীর্ঘায়িত তো হোকই, একই সাথে ঋদ্ধতর হোক বাংলা সাহিত্য।
Profile Image for Prithvi Shams.
111 reviews106 followers
April 2, 2019
হুমায়ুন আজাদ বিচারপতির আত্মবিশ্বাস নিয়ে রায় দিয়ে দেন - অমুক সাহিত্য ভালো, তমুক সাহিত্য খারাপ, ওই গল্প মানসম্মত হয়েছে, এই কবিতা সাহিত্যমান নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ছাড়পত্র পায়নি! সাহিত্য আইন-আদালতের বিষয় নয় যে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান প্রয়োগে এর মান মীমাংসা করে ফেলা যাবে। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগে কে ভালো সাহিত্য আর কে খারাপ সাহিত্য উৎপাদন করেছে , তথা সৌন্দর্যের মতো বিমূর্ত ব্যক্তিনিষ্ঠ বিষয়কে একটা সংকীর্ণ ধাতব ছাঁকনিতে রুপান্তর করার প্রবণতা বিবেচনায় নিয়েও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে স্বোতঃস্বতী গল্পকথনের রুপদান করায় ৪ তারকা প্রদানে বাধ্য হলাম। হুমায়ুন আজাদের অসূক্ষ্ম চিন্তাচেতনার সাথে একমত হওয়া কঠিন, কিন্তু অলৌকিক লেখনীর জালে তিনি পাঠককে আঁকড়ে ধরেন। একদিনে, এক টানে ল্যাপটপে বইটা পড়ে ফেললাম!
Profile Image for Khulud Binte Harun.
20 reviews22 followers
May 3, 2017
বাংলা সাহিত্য পড়তে ভালো লাগে।আর এই সাহিত্যের জীবনী পড়তে ভালো না লাগার কুনো কারন নেই।পড়তে গিয়ে বারবার অবাক হতে হয়।
"এ দেশের নামের কাহিনী বলেছেন সম্রাট আকবারের সভার এক রত্ন আবুল ফজল।তিনি বলেছেন 'বঙ্গ' শব্দের সাথে 'আল্' মিলিত হয়ে এদেশের নাম হয়েছে 'বাঙ্গাল'।এদশে আছে খেতের পর খেত;এক খেতের সাথে অপর খেত মিলে না যায়,তার জন্এয থাকে আল।দেশে আল আ বাঁধ বেশি ছিল বলেই এদেশের নাম হয়েছে বাঙ্গালা বা বাঙলা।"

বিদ্যাপতির এক কবিতার ভাবার্থ লেখতে গিয়ে লেখক লেখেন"রাধার মনে হয় কৃষ্ণ তার হাতের আয়না,যাতে সে নিজেকে দেখতে পারে;তারপর মনে হয় কৃষ্ণ তার মাথার ফুল যা তার শুভা বাড়িয়ে দে"

এক কথায় বইটি অসাধারন হয়ে উঠে হুমায়ুন আজাদের সাবলিল লেখনিতে।
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
January 9, 2025
এমন মোহনীয় গদ্যশৈলীতেও সাহিত্যের ইতিহাস লেখা সম্ভব? সম্ভব। দ্বিধাহীনভাবে পূর্ণ রেটিং দিতে তাই কার্পণ্য করলাম না।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সুখপাঠ্য ভাষায় রচনা করেছেন হুমায়ূন আজাদ। একইসাথে বইটা অত্যন্ত তথ্যবহুল। "না পড়লে লস" গোত্রের একটা বই।
Profile Image for Abdus Sattar Sazib.
259 reviews15 followers
December 28, 2021
‘লাল নীল দীপাবলি’ হলো ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের একটি অসামান্য বই। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ অর্থাৎ ৯৫০ থেকে শুরু করে আধুনিককালের ১৯৫০ এর পূর্ব পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সংক্ষেপে বলে গেছেন এ বইয়ে।

এ দেশে সাহিত্যর যুগ শুরুর সময়টি উল্লেখের ক্ষেত্রে তিনি সুনীতিকুমারের মতকেই বেছে নেন। ছোট্ট এই বইটি তিনি লেখেন কিশোরদের বা কিশোর বয়সের আশেপাশে যারা রয়েছেন তাদেরকে মাথায় রেখে। যা কিছু আছে এখানে তা ‘লাল নীল দীপাবলি’ নামে ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক বাংলা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হয়। ১৯৯২ সালে এসে ‘লাল নীল দীপাবলি’র সাথে যুক্ত হয় ‘বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’। এরপর থেকে বইটির নাম হয়ে যায় ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’।

বই নিয়ে কথা বলতে গেলে বা বুক রিভিউ করতে গেলে বইটি বই যে বিষয়ের ওপর রচিত সে বিষয়ের ওপর গভীর চিন্তা করতে হয় এবং আশেপাশে খোঁজ নিয়ে সম্পর্কিত কিছু তথ্য জোগাড় করা জরুরি যেহেতু বিষয়বস্তু সম্পর্কে দুচারটে কথা লিখতে ও তুলনা করে দেখতে এটি প্রয়োজন।

কিন্তু এই ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’ বইটির সঠিকভাবে রিভিউ বা পর্যালোচনা করার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করা প্রয়োজন যাকে আমি পিএইচডি করার সাথে তুলনা করতে পারি। সুতরাং, এই মুহুর্তে যারা আমার এই লেখাটি পড়ছেন তাঁদের বলে নিচ্ছি, এরকম একটি বই নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমি রাখি না। তবে একজন সামান্য পাঠক হিসেবে বইটি নিয়ে আমার মধ্যে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার কিছুটা প্রকাশ করছি মাত্র।

আমি হুমায়ুন আজাদের কোনো লেখা এর আগে পড়িনি তাই তাঁর সম্পর্কে কোনো ধারণা কোনো সময়েই ছিল না। যা ধারণা আছে তা অন্যের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া। এই বইটি পড়ার পর আমি এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের লেখার মোটামুটিভাবে একজন ভক্ত হয়ে গিয়েছি। প্রতিদিনের যোগাযোগে যেসব সহজ ও সরল শব্দ আমরা ব্যবহার করে থাকি সেসবের প্রয়োগে ছোটো ছোটো বাক্যে খুব সুন্দর করে তিনি বাংলা সাহিত্যের লাল নীল দীপাবলির খবর বলে গেছেন।

আমি যখন প্রথম বইটি হাতে নেই এবং বইয়ের প্রথম কয়েকটি লাইন পড়ি, তখনই বুঝতে পারি আমার মতো ধৈর্য্যহীন মানুষের জন্য উপযুক্ত একটি বই ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’। আমি যখন একটি বাক্য পড়ছি ঠিক তখনই অন্য একটি লাইন পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। এই আগ্রহের দুটি কারণ, ১. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস জানার ইচ্ছে এবং ২. হুমায়ুন আজাদের লেখার শক্তি। তবে ইতিহাস বলে বইটি একটানা না পড়ে কিছুটা সময় নিয়ে পড়েছি।

আমি জানিনা হুমায়ুন আজাদের চেয়ে আরও সুন্দর করে সংক্ষেপে আরও কোনো লেখক বাংলা সাহিত্যের গল্প বলেছেন কি না অথবা তাঁর কাছাকাছি মানের কোনো বই আছে কি না। যদি থাকে তাহলে আমি তা পড়তে চাই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Pranjal Kumar Nandi.
57 reviews43 followers
June 26, 2020
ইতিহাস তো বরাবরই গায়ে কাঁটা দেওয়ার জিনিস। কিন্তু সব ইতিহাসের রূপ তো সমান নয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস, রাজরাজড়াদের শাসনের ইতিহাস, এরা যেমন উত্তাল ঢেউয়ের মতো তেমনি ইতিহাসের আরেকটি রূপ আছে যা শান্ত, নীরব কিন্তু খুবই গভীর। যা হাজার বছর পরেও অম্লান থাকে। সে রকম ইতিহাস হলো বাংলা সাহিত্যের সেই হাজার বছরের ইতিহাস যা শুরু হয়েছিল চর্যাপদ থেকে এবং এখনো তা বহমান আমাদের মাঝে। কালের সাথে সাথে সাহিত্য বদলায়, সাহিত্যের ধারা বদলায়; বদলায় তাদের তাৎপর্যতা, আর তাদের ভূমিকা। এক যুগের সাহিত্যই পরবর্তী যুগের সাহিত্যের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এক শতাব্দীর সাহিত্য যা মেটাতে পারে না, আরেক শতাব্দীর সাহিত্য এসে সেই ধারাটিরই সূচনা করে। কিন্তু তাদের মধ্যে বিদ্বেষ নেই, নেই হানাহানি, নেই যুদ্ধ। সবাই তার নিজের কালের সাহিত্য। তাদের ইতিহাস তাই বড় শান্তির, বড় সুন্দর। তাইতো যুগ যুগ ধরে জ্বলতে থাকে তাদের সেই নানা রঙের বাতি।

হুমায়ুন আজাদ এখানে বাংলা সাহিত্যের সব কিছু তুলে ধরেননি। এর পিছে কারণ হয়ত বইটা লেখা হয়েছিল বয়সে অনেক নবীন পাঠক - পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার পরও তিনি যেভাবে সাবলীল ভাষায় বলে গেছেন সব কিছু তা বড় মনোমুগ্ধকর। এখন আফসোস হচ্ছে যদি আগে পড়তাম বইটা আরো। তবে একথা সত্য যে তিনি বিশাল এক জগত উন্মোচন করে দিয়ে গেলেন আমার সামনে। যে উদ্দেশ্য সা��নে রেখে বইটি রচিত তাতে হুমায়ুন আজাদ পুরোপুরি সফল।
Profile Image for Somen Sarkar.
60 reviews2 followers
October 15, 2021
এই বইএর নতুন করে রিভিউ দেওয়ার দরকার একদম ই নেই। এই একটি বই যথেষ্ট আপনাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রেমে ফেলার জন্য। আমার কাছে বইটি খুবই স্পেশাল কারন আমার পিসিমনি বইটি বাংলাদেশ থেকে আমাকে এনে দিয়েছে।
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
Read
June 6, 2023
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ "লাল নীল দীপাবলি "। বেশি কথা না বাড়িয়ে বললে " মাস্ট রিড"।
Profile Image for আকাশ আব্দুল্লাহ.
92 reviews29 followers
July 31, 2022
কি সুন্দর এক বই!

আজাদের লেখকস্বত্ত্বার দুইটা রূপ। কিশোরদের জন্য তার লেখা বইগুলো খুব যত্ন নিয়ে, সুন্দর-কোমল বাক্যবিন্যাসে গল্পচ্ছলে লেখা। আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখাগুলোর লেখনি অন্যরকম; অনেক সময়ই রূঢ়, আক্রমনাত্মক, সোজাসাপ্টা।
এক লেখকের লেখনির এমন রূপভেদ আর দেখেছি বলে মনে পড়ে না। লেখা পড়লে ধরার উপায় নাই দুইটা লেখাই একজন লেখকের।

তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, লাল নীল দীপাবলি, কতো নদী সরোবর এসব বাংলা সাহিত্যের একেকটা জেম। আধুনা এই বিশের দশকের ফ্রী ফায়ার-টিকটকের গাড্ডায় ঘুরপাক খাওয়া স্কুল কলেজের টিনেজ ছেলেমেয়েগুলো জানে না হুমায়ুন - জাফর ইকবালদের বাইরে দেশের সবথেকে বিতর্কিত এক লেখক ইমেজ ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন, মায়া জড়ানো শব্দে স্বপ্নালু চোখের কিশোরদের জন্য কিছু স্বপ্নীল লেখা লিখে গিয়েছিলেন।

যদি ওরা জানতো!
110 reviews
March 12, 2021
'যদি তুমি চোখ মেলো বাংলা সাহিত্যের দিকে,তবে তুমি দেখবে হাজার হাজার প্রদীপ।লাল,নীল,সবুজ-আবার কালোও।হাজার বছরের বেশি সময় ধরে রচিত হচ্ছে বাংলা সাহিত্য।এর একেক্টি বই যেন একেকটি প্রদীপের মত আলো দিচ্ছে আমাদের।বুক ভরে যায় সে আলোর ঝর্নাধারায়।সে আলোকে ভরে যায় টেবিল,ধূসর সাদা খসখসে খাতা,পৃথিবী ও স্বপ্নালোক।'

এমন একটি ভূমিকা যখন কোনো বই দেয়,তখন তার প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না।আমাদের কেও কেও সাহিত্য পছন্দ করে,কেও আবার আত্মজীবনী পড়েন।হুমায়ুন আজাদ করলেন কী,বাংলা সাহিত্যের ই এক জীবনী লিখে বসলেন।চর্যাপদ,বৈষ্ণব পদাবলি,মংগল কাব্যের কাঠ কোট্টা জীবনীকে তিনি পরম স্নেহ ও প্রেমের সাথে উপস্থাপন করেছেন।সেই স্নেহ অব্যাহত ছিল আধুনিক বন্দোপাধ্যায়,চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত।বাংলা সাহিত্যের প্রতি প্রীতি,জিনিস্টা খুব সম্ভবত সংক্রামক।লেখক তা বেশ ভালো ভাবেই পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।বইটা লিখা উঠতি বয়সের কিশোরদের জন্য,তাদের মনে বাংলা সাহিত্যের প্রেম সঞ্চারণ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।আমার ক্ষেত্রে তা শত ভাগ সফল হয়েছে।জনৈক কবির কবিতার ভাবানুবাদে লেখক লিখেছেন, 'রাধার মতে কৃষ্ণ হচ্ছে আমার আয়না,যাতে আমি নিজেকে স্বচ্ছ ভাবে দেখতে পাই,কৃষ্ণ হচ্ছে আমার খোপার ফুল যা আমার শোভা বাড়ায়।'

বইটার নেতিবাচক দিক সাধারণ ভাবে বোঝা যায় না,বেশ সচেতন ভাবে ভাবতে হয়।লেখক বিংশ শতাব্দীতে রবীন্দ্র প্রশংসায় এতোই মোহিত ছিলেন,যে আরো অনেক্কে যথাযথ প্রশংসা বাণী শোনানোর অবসর পাননি।আর উনার গুটি কতক রচনা আমার পড়া হয়েছে।হুয়ামুন আজাদের রচনায় যে বিষয়টি লক্ষণীয়,তা হলো,তিনি বেশ সাবলীল ভাবে যেকোনো সাহিত্যকে অপ সাহিত্যের সনদ পত্র দিয়ে দেন।এই বইএও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এই দু একটা বিষয়কে গোনায় ধরলেও বইটা তার নিজ গুণেই অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
June 26, 2021
কি অসাধারণ একটা বই।
Profile Image for Akash.
446 reviews149 followers
December 5, 2022
বাংলা সাহিত্যের জীবনীকে এত ছোট পরিসরে সুন্দর-সাবলীল ভাষায় সকল শ্রেণীর পাঠকের পাঠ্য উপযোগী করে কোনো লেখক আমাদের সামনে প্রকাশ করেন নি। বাংলা সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি হয়ে থাকবে বইটি। স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের হুমায়ুন আজাদ। অমর হয়ে থাকবে প্রগতিশীলদের হৃদয়ে।

বাংলা সাহিত্যের তিন যুগ, চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, বৈঞ্চব পদাবলি, বাংলা সাহিত্যের দুই অন্ধকার যুগ, বাংলা সাহিত্যের বিকাশ, উত্থান-পতন, বিদ্রোহ, বিজয়, গদ্য, গদ্যের জনক, আধুনিকতা অর্থাৎ সম্পূর্ণ বাংলা সাহিত্যকে ১৪৪ পাতার মধ্যে মলাটবদ্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। আর সে দুরূহ কাজটা খুব সুন্দর-সাবলীল ভাবে করেছে হুমায়ুন আজাদ।

যারা আমরা বাঙালি তাদের সবার তো অন্তত বাংলা সাহিত্যের জীবনী জানা উচিত। কিন্তু আমরা কয়জন জানি ! এজন্যই তো আমরা সাহিত্যকে ভালোবাসতে পারি না। কারণ আমরা বাংলা সাহিত্যের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম জানি না অথবা জানতে চায় না। অন্তর কালো মেঘে ঢাকা, লাল নীল দীপাবলি জ্বলেনি।

অথচ বাংলা সাহিত্যের জীবনী ও বাংলা ভাষার জীবনী নামক হুমায়ুন আজাদের বই দুটি যদি শৈশবে বাবা-মা আমাদের হাতে তুলে দিতেন তাহলে আমরা সাহিত্য ও ভাষার জীবনী জেনে সাহিত্যনুরাগী হতে পারতাম। কিন্তু আমাদের অধিকাংশের বাবা-মা তা করে নি। এ তো চরম দুঃখের-পরিতাপের বিষয়।

সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন মানে যুগ অন্ধকারে পতিত হওয়া। হুমায়ুন আজাদ আশা করেছিলেন একুশ শতকের তৃতীয় দশকের মধ্যে বাংলা সাহিত্যে নতুন চেতনার সূর্য উদয় হবে। কিন্তু এখন সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন হচ্ছে। আর সাহিত্য-সংস্কৃতির পতন হওয়ার সাথে সাথে একটা যুগ অন্ধকারে দিকে ধাবিত হয়। যুগের বাতাস বিষাক্ত হয়ে যায়।

বইটা পড়তে সবাইকে অনুরোধ নয়, আদেশ করছি। যারা পড়েন নি, তারা পড়বেন। আপনার পরিবারের সবার হাতে বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়ের হাতে বইটা তুলে দিবেন। সবার ঘরে জ্বলুক লাল নীল দীপাবলি, নিভুক অন্ধকার।

বহুবর্ণের দীপাবলি হয়ে আবার কবে দেখা দিবে বাংলা সাহিত্য !!! চরম নিষিদ্ধ অথচ নৈতিক কথা গুলো কবে প্রকাশিত হবে !!! কবে সাহিত্য হবে স্বাধীন !!!
Profile Image for Sumaiya Akhter  Lisa.
83 reviews
July 16, 2022
ক্লাস এইটে ছিলাম যখন প্রথম হুমায়ুন আজাদের প্রবন্ধ পড়ি। এরপর নারী বইটা পড়া হলো। কিন্তু সবসময়ই ইচ্ছে ছিল এই বইটা পড়ার। 
সেই চর্যাপদ থেকে আধুনিক কালের সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা! লেখকের শব্দচয়ন খুব গুছানো । একটা লাইনে তো এইরকম বলেন, "তোমরা যখন বড় হবে তখন আরও জানতে পারবে।" কিন্তু আমার মনে হয় না এটা শুধু বাচ্চাদের জন্য লিখেছেন। যেকোনো বাঙালির ঘরে এই বইটা থাকা উচিত। 
Displaying 1 - 30 of 134 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.