একটা বৃত্তের কি অনেক গুলো কেন্দ্র হতে পারে? স্প্যাগেটি কি আপনার নিঃসঙ্গতা ভুলিয়ে দিতে পারে? মিজুকি কেন ওর নাম ভুলে যাচ্ছে? বিড়ালের শহরে টেঙ্গো কি করছে? জুনপেই কি তোনকিচি ভাল্লুককে উদ্ধার করতে পারবে? ক্যাঙ্গারু কি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ পাওয়া যাবে? পাওয়া যাক বা না যাক জনপ্রিয় জাপানী লেখক হারুকি মুরাকামির আটটি অসাধারণ সুন্দর ছোট গল্প আপনাকে ভাবাবে, নিয়ে যাবে বিষণ্ণতা এবং নাম না জানা সব অনুভুতির এক অদ্ভুত জগতে।
কৌশিক জামান একজন অপদার্থ। ইংরেজিতে যাকে বলে- গুড ফর নাথিং। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে পরাজিত হতে হতে হাল ছেড়ে দেয়া একজন ব্যক্তি। কিছু মানুষ আছে না এক ভুল বার বার করে? তিনিও ঐ কিসিমের।
তাই নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন একশ স্কয়ার ফিটের একটা রুমে। রুম ভর্তি শুধু বই আর বই। বই পড়তে পড়তে তার মনে হয়েছে কিছু একটা লিখে ফেলা দরকার। এবং অখাদ্য ছাইপাঁশ কিছু আবর্জনা লিখেছেন যেগুলো প্রকাশক একরকম চাপে পড়ে ছাপিয়ে এখন আফসোস করছেন।
টাইম পাসের জন্য পড়া যায় আর কি। তবে মুরাকামির এই ছোট গল্পগুলো আমাকে বেশ একটা ইন্টেলেকচুয়াল কমপ্লেক্সিটিতে ভুগিয়েছে তার জাদু বাস্তবতায় তৈরী গল্পের প্লটের জন্য। মনে হয় যেন কিছুই বুঝলাম না কিংবা মুরাকামি কি বোঝাতে চাইছেন তা বুঝতে পারলাম না। তখন নিজের ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটি নিয়ে একধরনের সন্দেহ তৈরী হয় যেটা ভাল না। অথচ জাদুবাস্তবতার আশ্রয়ে লেখা মুরাকামির ‘কাফকা অন দ্য শোর’ কিংবা মার্কেজের ‘হান্ড্রেড ইয়ার অফ সলিটিউড’ উপন্যাস দুটি পড়ে এ ধরনের সন্দেহে তো ভুগিনি বরং উপভোগই করেছিলাম । কাজেই ঠিক বলতে পারছি না সমস্যা কোথায়। দ্যা ইয়ার অফ স্প্যাগেটি, আ শিনাগাওয়া মাংকি এবং উইথ দ্যা বিটলস এই তিনটা গল্প অপেক্ষাকৃত বেশি ভাল লেগেছে। না পড়লে বিশাল কিছু মিস হয়ে যাবে তা মনে হয়নি।
দুই হালি মুরাকামির পূর্বের বই "এক হালি মুরাকামি"। তাই বলে আবার ভাববেন না যে, এক হালি না পড়লে দুই হালি পড়া যাবে না। অবশ্যই যাবে। বোনাস হিসেবে দুই হালিতে মোট আটটা মুরাকামির গল্প পাবেন। আগেই বলেছি, নাম দেয়াতে বেশ সৃজনশীলতার সাক্ষর রেখেছেন অনুবাদক কৌশিক জামান। নাম শুনে অনেকেই ধন্ধে পড়ে যান বইটা আসলে কী নিয়ে! . যাই হোক, মুরাকামির এই আটটা গল্পের মধ্যে আমার ভালো লেগেছে 'টাউন অফ ক্যাটস', 'ক্রিম', 'উইথ দ্য বিটলস' এই গল্প তিনটি। গল্পগুলো পড়ার সময় ভাবছিলাম, কী সহজ সরল ভঙ্গিতেই না লেখেন মুরাকামি, কোনো ভণিতা নেই, কোনো বড় কিংবা মহৎ গল্প লেখার প্রচেষ্টাও নেই। শুধু মনে হল লিখতে চাই কিছু একটা, ব্যস, লিখে ফেললাম একটা কিছু, আর হয়ে গেল এই গল্প। আবার এই যে গল্পের সাথে নিজের জীবনকে মিলিয়ে দেয়ার বা নিজের জীবনের সাথে গল্পকে মিলিয়ে দেয়ার, যাকে বলা যায়, ব্লেন্ড করে দেয়ার মুরাকামির যে দারুণ প্রতিভা সেটা বেশ অভিভূত করেছে আমায়। বেশ ভালো। তরুণ লেখকদের অনেক কিছু শেখার আছে মুরাকামির গল্প থেকে। অনুবাদটাও বেশ ভালোই লেগেছে।