Selina Hossain (Bangla: সেলিনা হোসেন) is a famous novelist in Bangladesh. She was honored with Bangla Academy Award in 1980. she was the director of Bangla Academy from 1997 to 2004.
সেলিনা হোসেন (জন্ম: ১৯৪৭) বাংলাদেশের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি এ অনার্স পাশ করলেন ১৯৬৭ সালে। এম এ পাশ করেন ১৯৬৮ সালে। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমীর গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমীর প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন।
গল্প ও উপন্যাসে সিদ্ধহস্ত। এ পর্যন্ত ৭টি গল্প সংকলন, ২০টি উপন্যাস, ৫টি শিশুতোষ গল্প, ৫টি প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু বই। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); কমর মুশতরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭); ফিলিপস্ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮); অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪)। তাঁর গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
পনেরোটি ছোটগল্প নিয়ে সেলিনা হোসেনের ছোটগল্প সংকলন এই 'মানুষটি।' তাঁর কোনো লেখা এর আগে আমি পড়িনি। (এসএসসি লেভেলে পড়া কাকতাড়ুয়া উপন্যাস বাদে।) তাই এটা ছিলো তাঁর লেখাকে নতুন করে জানার এক অভিজ্ঞতা!
মানুষটিঃ মশিউর হাসনাইন নামের একজন সফল মানুষকে নিয়ে লেখা। যার একটি সুন্দর পরিবার আছে। যার ছেলেমেয়েরা ভালো পজিশনে আছে কিন্তু তার মাঝে কোনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনে অসুখী, তুচ্ছ সব ব্যাপার নিয়ে জীবনকে জটিল করে ফেলেন তিনি।
জলহাওয়াঃ নিজের সব দিয়ে ছেলেকে শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠানো কসিরন বেওয়ার স্বপ্ন দিয়ে শুরু। স্বপ্নভঙ্গ দিয়ে সমাপ্তি।
প্রার্থনাঃ স্বরস্বতী চমৎকার পুতুল বানায়। সকলে মুগ্ধ তার সাথে তার পুতুলের প্রশংসা করে। সে চায় কেোনো একজন পুতুলের মতো তাকে দেখুক। তার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করবে। এমন সময় পরিচয় হয় জীবনচন্দ্রের সাথে। জীবন্মৃত পুতুলের সন্ধান পায় স্বরস্বতী!
কষ্টিপাথরঃ ছোটোবেলায় মারা যাওয়া বাবার স্মৃতি মনে নেই জহিরের, কিছুদিন আগে মা মারা যাওয়ার পর সে উঠে আসে চাচার বাড়িতে। কিন্তু চাচা তাকে মিলের দেখাশোনার কাজে লাগিয়ে দেন। সে ভাবে তাকে কাজের লোকের চোখে দেখা হচ্ছে। চাচাতো বোন রিতার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে সে। কিন্তু রিতা তাকে ফিরিয়ে দেয়। ক্রমেই অসহ্য লাগতে শুরু করে তার আর ভাবনাতীত সব সিদ্ধান্ত নিতে থাকে সে!
দাঁড়কাকঃ মান্নানের ইচ্ছে তার নিজের জমি থাকবে। সে চায় না অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের পিতা হতে। কিন্তু এলাকার লোকজন তাকে মাউন্যা বলদ, কাক বলে ডাকে। হুট করে একদিন পাহাড়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। কল্পনায় ভাবতে থাকে সেখানে কেউ তাকে কাউয়্যা বলবে না। চলেও যায়। তার পরিবার ফেলে নতুন করে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু তারপর?
স্পর্শঃ ট্রেনে চাচার সাথে সাথে বেড়াতে গিয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হয় লাবনি। নিজের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। চাচা আমানতের ইচ্ছে ছিল তার বিলেত ফেরত ছেলে হাসিবের সাথে বিয়ে দেয়ার। কিন্তু হাসিব ফিরে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক লাবনি কে দেখতে পায়। সে শুধু স্পর্শেই তাকে চিনতে পারে!
ঘৃণাঃ চান গাজি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তার বর্তমান জীবন দেখে তা বুঝতে পারার উপায় নেই। সে ভাবে এটি তার নতুন জীবন। তাই সে প্রতিনিয়ত সন্তান জন্ম দেয় আর ভাবে তার সৈন্যবাহিনী বড় হচ্ছে। তার আরেকটি ইচ্ছা সাপ পালা। সাপ দিয়ে শত্রু মারবে সে!
ঘর জুড়ে জ্যোৎস্নাঃ শাজাহান নামের এক কবর খননকারী কে নিয়ে। যার বাবা অপরাধী ছিল। প্রায় রাত্রেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে কবরে লুকিয়ে থাকতো। শাজাহানের বউ চরিত্রহীন। তার মায়ের সাথে এই নিয়ে খিটিমিটি লেগেই থাকে।
বাঁচাঃ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা নিয়ে লেখা। জীবনের চেয়ে সংস্কার বড় নয় এমনটিই প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তবে এখানে কোথায় যেন মনে হয়েছে হিন্দুদের প্রতি লেখিকার বিরূপ মনোভাব!
বসন্ত বাউরিঃ গয়লা বুড়ির বড় ছেলেকে চক্রান্ত করে হত্যা করেছে সতীনের সন্তানেরা। ছোট ছেলেকে তাই সে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে। নিঃসঙ্গতায় দিন কেটে যাচ্ছিল তার। এরমাঝে গ্রামে বিরাট এক নাম না জানা পাখি আসে। গ্রামের মানুষকে নানানভাবে আহত করে যাচ্ছিল পাখিটি। কয়েকবার সভা বসলেও পাখিকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এরমাঝে গয়লা বুড়ির ছোট ছেলে গ্রামে এসেই পাখির সামনে পরে.. এরপর??
ময়েজের পরাজয়ঃ নতুন বিয়ে করে ময়েজ যেন নতুন দিগন্তের সন্ধান পায়। তার মনে হয় আগে যেভাবে পেটে ভাতে কাজ করতো। সেভাবে করলে হবে না। মাসিক আয় লাগবে। অনেক প্রতিকূলতার মাঝে তারা সরকারের পরিত্যক্ত কুঠিবাড়িতে যেয়ে উঠে। হঠাৎ একদিন ঝড়ে ভেঙে পরে সারা বাড়ি!
শব্দ ও কাঁচিঃ মনতাজের বিয়ের ছয় বছর পার হলেও কোনো সন্তান হয়নি। পাঁচ বছর পর তাদের এলাকায় পাহাড়ি ঢল হলে সে স্তব্ধ হয়ে থাকে। যেন পালিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে এই ধান কাঁটার কাঁচি থেকে তার দূরে থাকা সম্ভব নয়!
ক্রোধঃ খোশনরের স্বামীকে শত্রুরা হত্যা করে। তার বাবার বাড়িতে এসে উঠলেও, বাবা মারা যাওয়ার পর জমি নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয় তার বড় ভাই। সে ঢাকায় বস্তিতে আসে তার ছেলে টিপুকে নিয়ে। এদিকে এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন জেগে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। টিপু তার বস্তির সদস্যদের নিয়ে যোগ দেয় মিছিল-আন্দোলনে!
ঊনসত্তরঃ সাজ্জাদ আর সাহানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে। আইয়ুব খানের ডিকডে আমল উদযাপনকে সামনে রেখে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে। আগরতলা মামলায় আটকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন আরো জোড়দার হয়। ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামে তারা!
থুতুঃ বিত্তশালী বাবার ছেলে মিজান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। বাবার নাম নিয়ে কোনো চাকরি নিতে চায়না সে। তার আশপাশের মানুষকে দেখে, যারা বাবার টাকায় এই পৃথিবীটা রঙিন চশমা দিয়ে দেখছে, তাদের দেখে মুখে থুতু জমে তার। মিজানের ইচ্ছে হয় কোনো পতিতার পেটে তার সন্তান হবে। তাই সে এমন একজন খুঁজেও বের করে.. কিন্তু!!
সবগুলো গল্পই গতানুগতিক। আলাদা করে কয়েকটার কথা বলতে গেলে প্রার্থনা, ঘৃণা, বসন্ত বাউরি আর থুতু, এই চারটির কথা বলা যায়। সেলিনা হোসেনের লেখার নিজস্ব প্যাটার্ন আছে। একটানা পড়লপ তাই কিছুটা একঘেয়েমি লাগে। তবে ছোটগল্প একটানা পড়া উচিতও না। ধীরলয়ে পড়ার জন্যে বেশ ভালো!