অভীক দত্তের প্রথম উপন্যাস সমগ্র ১-এ থাকছে চারটি উপন্যাস।
1) অন্তবিহীন- বাণী মিত্র ভেলভেট প্রোডাকশানের সর্বময় কর্ত্রী। সিরিয়াল জগতের রাণী। তার ছেলে বুবকা ভালবাসে তার চেয়ে বারো বছর বড় বৈভবীকে৷ বাণী মিত্রের কিছুতেই পছন্দ নয় সেটা৷ তারপর কী হয়?
2) অসময়ের বৃত্তান্ত- আদিত্যর শালী ঝুমকি হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ভিন ধর্মের এক ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে ঝুমকি। কী হল মেয়েটার?
3) নীল কাগজের ফুল- যে ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা কয়েক দিন পরে, সে ছেলেটা হঠাৎ চলে গেল এক্সিডেন্টে। এদিকে বাড়ি থেকে ক্রমাগত জিনিয়াকে চাপ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিয়ে করার জন্য। বিয়ে তাকে করতেই হবে। ভুলতে হবে প্রাক্তনকে। জিনিয়া ঠিক কী করবে?
4) শেষের পরে- মামার বাড়ি বেড়াতে এসে স্বামীকে খুন হতে দেখল মেয়েটা। অনার কিলিং? হতে পারে আদৌ?
অভীক দত্তের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের একটা যোগাযোগ আছে/ছিল। সেই আদরের নৌকা থেকেই আমি তাঁর ছোটগল্পের ভক্ত। নিজেও আমি আদরের নৌকায় ৩-৪ খানা গদ্য লিখেছি। অভীক একজন অত্যন্ত শক্তিশালী গল্পকার। তাঁর গল্পের মজা হল, গল্প পড়তে পড়তে কখনো মনে হয় না যে লেখক অকারণ জ্ঞান দিচ্ছেন বা চরিত্রের মনস্তত্ত্ব অতিরিক্ত বিশ্লেষণ করে চলেছেন। এই ধরনের সাইকোলজিকাল মারপ্যাঁচ আবার অনেকেই পছন্দ করেন। অভীকের গল্প একটা ধর-তক্তা-মার-পেরেক টাইপ। বেশিরভাগটাই সংলাপ ধর্মী। মাঝে দু’একটা ছোটখাটো বাক্য থাকলেও সংলাপই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রচন্ড দ্রুততার সঙ্গে। এ ধরনের গল্প হুমায়ূন আহমেদ পড়লে পাওয়া যায়। ইনফ্যাক্ট অভীক একটা ছোট গল্প লিখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধার জানিয়ে, তার নাম ছিল ‘কেউ কোথাও যাবেনা’। জানিনা এখন পাওয়া যায় কিনা। তবে আমি কিনেছিলাম। সৃষ্টিসুখ থেকে প্রকাশিত বইটির মধ্যে বেশ কয়েকটি গল্প আছে যা পড়লে মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ যেন আবার লিখছেন। তখনই বুঝেছিলাম যে অভীক হুমায়ূন আহমেদের মতন জনপ্রিয় লেখক এর কাছাকাছি পৌঁছানো একটা কৃতিত্বের দাবি করেন। এ এক্কেবারে সহজ কাজ নয়। কিন্তু অভীক কেবল হুমায়ূন আহমেদকে নকল করেই থেমে থাকেননি, তিনি তাঁর গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অসীম পরিশ্রম ও কনসিসটেন্সির সঙ্গে। যে দুটো না থাকলে কোনক্ষেত্রেই টিকে থাকা ভীষণ মুশকিল। যারা দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতির জগতে টিকে আছেন তাদের মূল লক্ষ হলো নিজে কে ক্রমাগত পাল্টে ফেলা এবং বারবার ভেঙেচুরে এক অন্যপথে নিজেকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেটা ক্রমাগত করে যেতে হয়। জয় গোস্বামীর কবিতায় এইভাবেই লেখার ধরন বদলেছে। ধারাবাহিকভাবে জয়ের কবিতা না পড়ে গেলে এটা উপলব্ধি করা মুশকিল। যাইহোক যে কথা বলতে গিয়ে এতগুলো কথা বললাম তাহল অভীকের ছোটগল্প বা উপন্যাস পড়লে কেবল পাঠক হিসাবে আনন্দই পাওয়া যায়। পড়ে ফেললাম প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস সমগ্র ১। এতে মোট চারখানা উপন্যাস আছে। আমি বেশি কিছু বলব না উপন্যাসগুলি সম্বন্ধে। তবে দুটো সামান্য বক্তব্য রাখতে চাই শেষ দুটি উপন্যাস অনার কিলিং নিয়ে। যেখানে লেখক অভিযোগ করার চেষ্টা করেছেন দুটো ধর্মের অনার কিলিং অথবা লাভ জিহাদ দেখিয়ে। একটি গল্প মুসলমানদের গোঁড়ামি দেখানো হয়েছে আরেকটি গল্পে হিন্দুদের। এখানে যে গল্পে মুসলমানদের গোঁড়ামি দেখানো হয়েছে সেখানে সংলাপের মধ্যে বেশকিছু তৎসম শব্দের উদ্ভব হয়েছে যা ন্যাচারাল মনে হচ্ছে না। কারণ সাধারণত কলকাতাবাসী মুসলিমরা উর্দু ভাষা এবং তারা বাংলা ভাষাতেও যথেষ্ট পরিমাণে উর্দু শব্দের ব্যবহার করেন। যেমন, 'ইমান্দার', 'সাচ্চা' ইত্যাদি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমি বেশ কিছুদিন গার্ডেনরিচ এলাকায় থাকার সময় বহু লোকের কথাবার্তার মধ্যে দিয়েই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। তাই এই ব্যাপারে লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর শেষগল্পে সান্যাল পদবীধারী পরিবারের কথা আছে। গল্পে তাঁদের আদিবাড়ি বাংলাদেশে দেখানো হয়েছে। সান্যালরা মূলত পশ্চিমবাংলার মানুষ। ঘটনার জটিলতা এই নিয়ে বেশ জমজমাট চারখানা উপন্যাস নিয়ে উপন্যাস সমগ্র। পড়লে ঠকবেন না। 1) অন্তবিহীন- বাণী মিত্র ভেলভেট প্রোডাকশানের সর্বময় কর্ত্রী। সিরিয়াল জগতের রাণী। তার ছেলে বুবকা ভালবাসে তার চেয়ে বারো বছর বড় বৈভবীকে৷ বাণী মিত্রের কিছুতেই পছন্দ নয় সেটা৷ তারপর কী হয়? 2) অসময়ের বৃত্তান্ত- আদিত্যর শালী ঝুমকি হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ভিন ধর্মের এক ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে ঝুমকি। কী হল মেয়েটার? 3) নীল কাগজের ফুল- যে ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা কয়েক দিন পরে, সে ছেলেটা হঠাৎ চলে গেল এক্সিডেন্টে। এদিকে বাড়ি থেকে ক্রমাগত জিনিয়াকে চাপ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিয়ে করার জন্য। বিয়ে তাকে করতেই হবে। ভুলতে হবে প্রাক্তনকে। জিনিয়া ঠিক কী করবে? 4) শেষের পরে- মামার বাড়ি বেড়াতে এসে স্বামীকে খুন হতে দেখল মেয়েটা। অনার কিলিং? হতে পারে আদৌ?
4.5. An excellent collection of novels with very diverse and relevant subject materials (in someplaces brave as well!). Very well written in an easy flowing and simple language. Looking forward to more from this Author.
এক কথায় অনবদ্য। ৪টে ভিন্ন ধারার গল্প। প্রতিটা গল্পের প্লট আর টুইস্ট দারুন। একবার ধরলে শেষ না করে থাকা যায়না। অন্তবিহীন একটি টানটান থ্রিলার গল্প। শেষের পরেও তাই। সামাজিক গোঁড়ামি নিয়ে শেষের পরে অসাধারণ। লাভ জিহাদ আর অনার কিলিং - এই বিষয়ে বাংলা সাহিত্যে লেখা আমার পড়া প্রথম। ভীষন ভালো ❤️।