কলকাতার ইণ্ডিয়ান মিউজিয়মের একতলায় “টেরাকোটা ও মাইনর আর্টস” নামক একটি প্রত্নতত্ত্বের গ্যালারি আছে। একতলায় এই একটি মাত্র গ্যালারির ভিতর ফটো তোলা নিষেধ। কিন্তু কেন এই নিষেধাজ্ঞা? মিউজিয়ামের একতলায় বাকি সমস্ত গ্যালারিতে ক্যামেরার ছবি তোলার অনুমতি আছে, কিন্তু এই গ্যালারিতে কী এমন আছে যার জন্য ফটো তোলার অনুমতি নেই? কক্ষের ঠিক বাইরে, হলওয়ের অপর পার্শ্বে, বিশাল কাঁচের বাক্সের মধ্যে একটা বেলেপাথরের পেটিকা রাখা, পেটিকার ওপরের পাথরের ঢাকনাটা ফাটা। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা কল্পকাহিনি “কপিলাবস্তুর কলস” উপন্যাসটি উপরের প্রত্নবস্তুর ইতিহাস ছুঁয়ে গেছে, ইংরেজদের লেখা আমাদের যে ইতিহাস স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়েছে তার সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন তুলেছে। ইংরেজরা কি আমাদের ইতিহাসের ফাঁক-ফোকরগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে? আর আমরাও কি চাই না সেই ইতিহাসের ধুলোর নিচে চাপা সত্য উন্মোচিত হোক? হার্ভাডের ছাত্রী রিধিমা বোস কি পারবে সেই অন্ধকার ইতিহাসের ওপর সত্যের আলো ফেলতে? কিন্তু কেন তার প্রাণসংশয়?
পাঁচমুড়ো আর প্রাণনাথ এর ক্লাসের না। রানা পড়া থাকলে আসলে এই ধরনের গল্পকে চেনা চেনা লাগবে। প্লট ভালো, তবে গল্পটা আরেকটু ছোট করা যেত। শেষটা ভালোই লেগেছে।
বই = কপিলাবস্তুর কলস লেখক = প্রীতম বসু প্রকাশক = প্রীতম বসু মূল্য= 375 টাকা পৃষ্ঠা = 400
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রহস্য বলে পাঠককে যেটা গেলানো হয়, সেটা পাঁচন ছাড়া কিছু নয়। অনেকক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে গিলে ফেলি, আবার অনেক ক্ষেত্রে বমিও হয়ে যায়।
সেইখানে দাড়িয়ে যে গুটিকয়েক বই, রহস্যের সন্ধানে পাঠককে বইএর শেষ অবধি নিয়ে যায়, তার প্রথম দিকেই থাকবে এই বইটা - কপিলাবস্তুর কলস।
কপিলাবস্তুর কলস = ইতিহাস না রহস্য? এককথায় দুটোই।
1. কপিলাবস্তু জায়গা টা কোথায়? ভারত না নেপালে? 2. একটা কলস যার ভিতরে গচ্ছিত আছে ইতিহাস, উপরে ব্রাহ্মী লিপি। হস্তান্তর হতে হতে শেষ অবধি কোথায় পৌঁছালো সেটা?
প্রশ্ন, অনেক প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে, যেতে হবে বইএর শেষ পর্যন্ত।
ঘটনার সূত্রপাত হত্যা দিয়ে, কিন্তু কেন এই হত্যা, কী চাইছিল খুনি? ইতিহাসকে নিজের মতো পাল্টাতে? না অন্য কোন কারণ আছে?
কে করলো এই হত্যা? ফাঁসানো হলো নিরপরাধ ব্যক্তিকে? নাকি সত্যি সেই খুনি? মিথ্যে বলছে? নাকি কী করেছে, মনে নেই? যদি সত্যি বলে, তাহলে তার কোন প্রমাণ নেই কেন?
খুনের দায় থেকে বাঁচতে একের পর এক আইন অমান্য কাজ। যে সাহায্য করছে, সে কি নিরপরাধ? নাকি নিজের দোষ টা চাপাতে চাইছে কোনো ব্যক্তির উপর?
একদিকে পুলিশ, অন্য দিকে আন্ডারওয়ার্ল্ড দল থেকে বাঁচার লড়াই, পদে পদে বিপদ। তারসাথে শব্দের খেলা, পালাতে গেলে ভেদ করতে হবে শব্দের জাল।
দুটো কাহিনী (তিনটেও বলা যেতে পারে। যদিও একটি অতীতের ঘটনা কিন্তু বাকি দুটি একই সাথে বয়ে যাওয়া একই বিন্দুতে পৌঁছানোর ঘটনা।) সমান্তরালভাবে চলতে চলতে অতীতের সাথে বর্তমানের সংযোগ স্থাপন।
একশ বাইশ বছর আগের ঘটনা থেকে বর্তমানের প্রযুক্তি।
ভারত ও নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্ক। মাঝে চীনের দাদাগিরি।
ভুল বানানে লিপি, ইচ্ছাকৃত? না অনিচ্ছাকৃত? কেউ কি ছিল না সেখানে, যে সঠিক বানান জানে?
শেষ হয়েও শেষ হল না। না না ঘাবড়ানোর কিছু নেই। উপন্যাস শেষ। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে গেছে। এবার? হুঁ, এরপর ও আছে বৈকি বেশ সুন্দর ভাবে, ব্রাহ্মী লিপিকে বাংলা হরফ দিয়ে শেখানো হয়েছে। চাইলে শেখা যেতে পারে। তার সাথে 30 টি গ্রন্থপ্রঞ্জি ও তথ্যসূত্র। একটু বেশি জানার ইচ্ছা হলে, গুগল করে বা বই সংগ্রহ করে পড়ে আসা যাবে সেই লেখা গুলো।
প্রীতম বসুর লেখার সাথে এই প্রথম আমার পরিচয়। প্রথম পরিচয়টা মন্দ হয় নি এটুকু বলতে পারি। থ্রিলার ধর্মী এই লেখায় গতি আছে পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতাও আছে। তাছাড়া বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে যেহেতু ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত সেদিক দিয়ে বইটি অন্যরকম আগ্রহও জাগায়। এ বই না পড়লে জানতেও পারতাম না গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। সেটা ভারত নেপাল সীমান্তের ঠিক কাছেই ভারতের পিতরাওয়াতে বলে ভারতের দাবি, অন্যদিকে নেপালের দাবি শাক্যমুনী গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী বা কপিলাবস্তু নগর এর বর্তমান অবস্থান নেপালের তিলাউরাকুটে। এই বিতর্ককে কেন্দ্র করেই এই উপন্যাসের কাহিনী। তবে উপন্যাসে যদিও সেই রহস্যের একটি সমাধান দেয়া হয়েছে, বাস্তবে বোধহয় সে বিতর্কের অবসান হয় নি। কাহিনীর সময়কাল অবশ্য বর্তমান সময়। হার্ভাড ইউনিভার্সিটির তিন তিনজন অধ্যাপক খুন হয়ে গেলেন রহস্যজনকভাবে। সেই খুনের জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে হার্ভাডেরই বাঙালি পি.এইচ.ডি স্টুডেন্ট রিধিমা বোস যিনি কিনা কয়েক বছর আগে আমেরিকা থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোজ হয়ে যাওয়া ভারতীয় আর্কিওলজিকাল ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ বোসের আপন ছোট বোন। আর রিধিমার নিজের পি.এইচ.ডির বিষয়বস্তুও সেই কপিলাবস্তু আর পিতরাওয়া নিয়ে বা বলা যায় বুদ্ধের জন্মস্থান নিয়ে। সেই রহস্যের কোন সূত্র পেয়েছিলেন চার বছর আগে সিদ্ধার্থ বোস, যার ফলশ্রুতিতে তার গুম হওয়া। কিন্তু সত্যিকার কপিলাবস্তু কথায় তার প্রমাণ নাকি আছে বুদ্ধের হাড়ে, তার চিতা থেকে তুলে নেওয়া হাড় রাখা হয়েছিল তারই জন্মস্থানে স্তুপ বানিয়ে একটি কলসে করে। সেই কলস দিয়েই এই রহস্যের জট খুলতে পারে। এর সাথে জড়িয়ে গেছে আরও সোয়াশো বছর আগের তরাইয়ের একটি থারু পরিবারের কাহিনী, জড়িয়ে গেছে আমেরিকা প্রবাসী একটি ইন্দো গায়ানিজ কমিউনিটিও। সেই সাথে জড়িয়ে আছে একটি টিবেটান বৌদ্ধ মঠ, আর্ন্তজাতিক এক অপরাধী চক্র, হ্যাকিং, ব্রাহ্মী লিপি, গিগশো পাজল কম্পিটিশনজয়ী হরিপ্রসাদ এবং অবশ্যই পেশায় সাংবাদিক (!) টেক এবং হ্যাকিং এক্সপার্ট সুনয়ন সিটাপোটি।
যে গৌতম বুদ্ধ ব্যক্তিপূজা পছন্দ করতেন না তার জন্মস্থান বা স্মৃতিচিহ্নমূলক যেকোন কিছুই আজ ভক্তদের পূজার বস্তু। বুদ্ধ সম্পর্কিত যেকোন প্রাচীন ঐতিহাসিক বস্তুর অর্থনৈতিক মূল্য বিশাল। এর সাথে জড়িয়ে আছে বিদেশী পর্যটক, বিনিয়োগ এমন ঢের ঢের বিষয়। তাছাড়া হয়তো উপন্যাসের রিনপোচে লামার মতো বাস্তবেও এমন অন্ধ বিশ্বাসী ভক্ত থাকা অসম্ভব নয় যারা ধর্মের বিশ্বাসের কারণে ন্যায়-অন্যায়, নীতিবোধ হারিয়ে ফেলে। উপন্যাসের একটাই ব্যাকড্রপ বলবো সোয়াশো বছর আগের ডায়েরীর ধাঁচে লেখা থারু পরিবারের বর্ণনাটি। ইতিহাস ঘেটে একটি অজানা পরিবারের এতটা ডিটেইলড তথ্য বোধহয় জোগাড় করা বাস্তবে সম্ভব নয়। আর পাঠক হিসেবে আমার কাছে প্লাস পয়েন্ট মনে হয়েছে নিউইয়র্ক, হার্ভাড, ইউএন অফিস সম্পর্কিত নানা বাস্তব তথ্য যেন চোখের সামনে দেখছি এমন বর্ণনা যা কখনোই নিজের চোখে দেখা সম্ভব হবে না হয়তো আমার পক্ষে। সেই সাথে ইতিহাসের কিছু না জানা তথ্য, একটি টানটান উত্তেজনাময় থ্রিলার সব মিলিয়ে উপভোগ্যই মনে হয়েছে।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া বই- কপিলাবস্তুর কলস লেখক- প্রীতম বসু দাম- ৩৭৫ ( সেল্ফ পাবলিশড) প্রীতম বসুর চৌথুপীর চর্যাপদ, পঞ্চানন মঙ্গল ও ছিরিচাঁদ পড়ার পরে সম্ভবত খুব বেশি আশা করে বসেছিলাম। অতিলোভে পাঠক ডোবে। যদি কোনও এক্সপেকটেশন না নিয়ে এই বই পড়া হয়, তাহলে দুর্দান্ত থ্রিলারের পর্যায়ে ফেলা যাবে। কিন্তু আপিনি যদি সাত ঘাটের জল খাওয়া (পড়ুন নাক-উঁচু থ্রিলার পাঠক) হন, তাহলে এই বইয়ের বহু ক্ষেত্রেই আপনার কপালে কুঞ্চন দেখা দেবে।
স্পয়লার না দিয়ে বললে গল্পটা মোটামুটি এইরকম- কপিলাবস্তু কোথায়, ভারতের পিতরাওয়া নাকি নেপালে? এই নিয়ে দুই দেশের বিতর্ক বিরোধ তুঙ্গে। তার সঙ্গে কি আবার যুক্ত রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড? এদিকে কোনও এক অজানা রহস্যকে বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে খুন হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক। এবং খুনের দায় মাথায় এসে পড়ে তাদেরই ছাত্রী রিধিমার মাথায়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে মরিয়া ��িধিমার জীবনের আটদিনের যাত্রা নিয়েই গল্প এগোয়। তার সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলে শতাধিক প্রাচীন তরাইয়ের এক পরিবারের গল্প। গল্পে বহু জায়গায় প্লট হোল আছে। বইটা সদ্য বেরিয়েছে, অনেকে এখনও পড়েননি, তাই সেসব দিয়ে তাঁদের পড়ার স্বাদ নষ্ট করব না। পরে না হয় এডিট করে দেওয়া যাবে। তবে উপন্যাসের গল্প ড্যান ব্রাউন স্টাইলে চলতে চলতে কখন সল্লুভাইয়ের সিনেমা হয়ে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। বইটার আর একটা সমস্যা হল, পড়ার আগ্রহ জাগে না। থ্রিলারে যেমন 'কী হবে, কী হবে' ভাব নিয়ে আমরা পাতা উল্টে চলি, এ বইতে সে ইচ্ছা কাজ করছিল না। যেন সবটাই জানা। তবে হ্যাঁ, এই বই নিয়ে সিনেমা যদি বানানো হয়, তা ফাটাফাটি হবে। প্রচুর মুভি মেটিরিয়াল রয়েছে।
বইয়ের বাঁধাই ভাল, কিন্তু ফ্রন্ট কভারের সেলোফেন পেপারটা উঠে চলে আসছে। লেখকের উদ্দেশ্যে নিবেদন- পাঠককে মাথা খাটানোর জায়গা দিন। আপনার উপন্যাসে তাকে অংশীদার করুন, তাতে গল্পের ডিমান্ড বাড়বে। মনে রাখবেন, মুখের সামনে সাজানো গোছানো ওই ভাতের থালাই ঠিক আছে, থ্রিলার নয়। আর সবাই যোগেশও হয় না। সাজানো বাগান অনেকেই কিন্তু পছন্দ করেন না। আমার রেটিং- দশে চার। তবে পাঠকবৃন্দ , পরের মুখের ঝাল খবরদার খাবেন না।
প্রীতম বাবুর লেখা একবার পড়লে আপনি ওনার ভক্ত না হয়ে পারবেন না। কি দারুন লেখে। শব্দ, বাক্য দিয়ে নিজের এমন একটা জগৎ তৈরি করে যে কিছুক্ষনের জন্য আপনি নিজে ওই জগতে ঢুকে যাবেন, চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যাবেন। আর লেখা এতাটা ডিটেলিং হয় যে চোখের সামনে সবকিছু ভাসে। আর থ্রিল তো মারাত্মক পরিমানে থাকে। পড়ে ফেলুন।
পাঠ-প্রতিক্রিয়ার ভূমিকায় বলতেই হয়—প্রচলিত বাংলা থ্রিলারের গতানুগতিক ছক থেকে অনেকটাই সরে এসে কপিলাবস্তুর কলস আমাদের সামনে হাজির করে এক জটিল, বহুস্তরীয়, জিও-পলিটিক্যাল এবং ইতিহাসনির্ভর রহস্যরোমাঞ্চ। এটি সেই বিরলধর্মী উপন্যাস, যা শুধুমাত্র কাহিনির মোচড়ে নয়, পাঠকের মনে সাসপেন্স, উত্তেজনা, বিস্ময়, উদ্বেগ আর প্রতীক্ষার এমন এক অনুভূতির স্রোত বইয়ে দেয়, যা থ্রিলার সাহিত্যের স্বর্ণরেখা হিসেবে বিবেচিত হয়।
— কপিলাবস্তুর কলস এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো সেই বিরলধর্মী থ্রিলার, যা শুধু ‘রহস্য’ নয়, পাঠককে ঘিরে ফেলে আবেগ, ইতিহাস ও আতঙ্কের এক ঘূর্ণাবর্তে।
Thriller বলতে আমরা যে ধরনের গল্প বুঝি—যেখানে "edge of the seat" উত্তেজনা, দ্রুতগতির প্লট, রহস্যাবৃত তথ্যগোপন, রেড হেরিং, ক্লিফহ্যাংগার, চমকপ্রদ মোড় এবং দ্বন্দ্ব-নাটক মিলে এক টানটান আবহ তৈরি করে—কপিলাবস্তুর কলস ঠিক সেই বৈশিষ্ট্যগুলোকেই নিখুঁত দক্ষতায় ব্যবহার করেছে। এটা এমন এক থ্রিলার যেখানে প্রতিটি অধ্যায় যেন একেকটি সিনেমাটিক সিন, আর ভিলেনরা যেন ছায়ার মতো ছড়িয়ে থাকে প্রতিটি মোড়ে, প্রতিটি শব্দে।
তবে এই উপন্যাসের আসল কৃতিত্ব শুধু বুদ্ধের অস্থিকলস বা কপিলাবস্তুর ভূগোল নয়—বরং কীভাবে সেই ইতিহাসকে আজকের পাঠকের মনে শিহরণ জাগানোর মতো করে রূপান্তর করা যায়, সেই শিল্পেই।
এই প্রসঙ্গে রুশ-আমেরিকান লেখক ভ্লাদিমির নবোকভের একটি পর্যবেক্ষণ মনে পড়ে যায়। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্রিলার সাহিত্য নিয়ে আলোচনাকালে তিনি বলেছিলেন: “In an Anglo-Saxon thriller, the villain is generally punished, and the strong silent man generally wins the weak babbling girl, but there is no governmental law in Western countries to ban a story that does not comply with a fond tradition, so that we always hope that the wicked but romantic fellow will escape scot-free and the good but dull chap will be finally snubbed by the moody heroine.”
এই বক্তব্যে নবোকভ থ্রিলারের অদ্ভুত কিন্তু মানবিক দ্বন্দ্বকে ধরতে চেয়েছিলেন। পাঠকের মনোবাসনা অনেক সময় ঐতিহ্যবাহী ন্যায়পরায়ণতার ধারাকে ভেঙে দেয়—খলনায়ককে বাঁচাতে চায়, প্রেমিককে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায়, আর গল্পের সমাপ্তি যেন নিয়মের বাইরের কিছু হয়। কপিলাবস্তুর কলস-এও আমরা এমন কিছু চরিত্র ও ঘটনাপ্রবাহ দেখি, যা নৈতিকতার প্রশ্নকে ঘোলাটে করে দেয়, "ভিলেন" আর "হিরো"-র তফাৎকে অস্পষ্ট করে তোলে, এবং শেষ পর্যন্ত পাঠককে ধাঁধায় ফেলে—কার দিকে দাঁড়ানো উচিত?
জেমস প্যাটারসন তাঁর বিখ্যাত ভূমিকায় লিখেছিলেন: “Thrillers provide such a rich literary feast... what gives the variety of thrillers a common ground is the intensity of emotions they create, particularly those of apprehension and exhilaration... By definition, if a thriller doesn’t thrill, it’s not doing its job.”
এই সংজ্ঞা ধরে দেখতে গেলে, কপিলাবস্তুর কলস নিঃসন্দেহে তার কাজ impeccably করেছে—এটি thrill করে, এবং বারবার করে।
এই উপন্যাসে রয়েছে ঐতিহাসিক থ্রিলার, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিপরীত মতবাদ, আন্তর্জাতিক মাফিয়া, ইউনাইটেড নেশনের অন্দরমহল, এবং একটি জিনগত তদন্তকে ঘিরে চলা প্রাণান্তক অনুসন্ধান। পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে পাঠক বুঝে যায়—এটা শুধুই রহস্যের গল্প নয়, এ যেন ইতিহাসের ভিতরে ঢুকে পড়ার এক অ্যাডভেঞ্চার।
এই থ্রিলারে "thrill" শুধু রক্তপাত নয়, বরং চিন্তার জটিলতা, বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচল, ইতিহাস ও রাজনীতির ফাঁকফোকর গলে গিয়ে ওঠা প্রশ্ন—যার উত্তর কোনো ল্যাব দিতে পারে না, শুধু এক গভীর পাঠানুভব পারে।
কপিলাবস্তুর কলস সেই বিরল থ্রিলার, যা শুধু entertain করে না, educate-ও করে। Suspense ও substance-এর মেলবন্ধন বলতে যা বোঝায়—এ বই সেটার textbook উদাহরণ।
এই উপন্যাসে থ্রিলার কেবল প্লটের গতি বা খুনের রহস্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি এক বিস্তৃত ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত, যেখানে ব্রাহ্মী লিপি, বুদ্ধের অস্থিকলস, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ধর্মীয় মতাদর্শ, আর আধুনিক প্রযুক্তির দুর্ভেদ্য ফাঁদ—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক দমবন্ধ করা অভিযাত্রা। থ্রিলার যে কেবল আতঙ্ক বা রক্তপাত নয়, বরং বুদ্ধিদীপ্ত চ্যালেঞ্জ, সংস্কৃতির অন্ধকার কোণ আর তথ্যভিত্তিক উত্তেজনার সংমিশ্রণও হতে পারে—এই বই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
কাহিনির সারকথা (স্পয়লার-বিহীন):
সব কিছু শুরু হয়েছিল দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে, জানুয়ারির এক কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে—যেখানে গ্লাস কেসের ভেতরে থাকা এক “অস্থি-কলস” ঘিরে চলছিল আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। বলা হয়, তার ভেতরে রাখা আছে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের চিতাভস্ম। কিন্তু আচমকা সেই কলস চুরি যায়। কে চুরি করল? কেন? আর সেই অস্থি আসল তো?—এইসব প্রশ্নে দুলতে থাকে ইতিহাস, বিশ্বাস, আর রাজনীতির সূক্ষ্ম রেখা।
এটাই এক রহস্যের জন্ম দেয়, যার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে কিউরেটর ড. সিদ্ধার্থ বোস। তদন্ত করতে গিয়ে সে মুখোমুখি হয় অপ্রত্যাশিত বিপদের—যেখানে তার অনুসন্ধান যেন ইতিহাসের ধুলোমাখা পাণ্ডুলিপি খুলে দেয়, আর ছায়ার মতো পিছু নেয় এক অতল ছায়াময় শক্তি।
প্রবেশ ঘটে মূল চরিত্র রিধিমা বোসের—হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশীয় পুরাতত্ত্ব নিয়ে পিএইচডি করছেন। গবেষণা তো দূরের কথা, হঠাৎই সে জড়িয়ে পড়ে এক প্রাণঘাতী ষড়যন্ত্রে। ভাইয়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, তিনজন প্রখ্যাত অধ্যাপকের রহস্যময় মৃত্যু, ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা এক অজানা ডায়েরি—সব মিলিয়ে এক বিষাক্ত ছকের মধ্যে ঢুকে পড়ে সে, যার ছায়া পড়ে ভারত, নেপাল, চীন ও আমেরিকার ভূ-রাজনীতিতেও।
এই থ্রিলারে শুধু অ্যাকশন নয়, আছে বহুস্তরীয় নাটক, ইতিহাসের রহস্যময় প্যাঁচ, পুরাতাত্ত্বিক সংকেত, আধুনিক সাইবার হ্যাকিং, এবং একটি অস্থির সময়ের ছায়াচিত্র—যেখানে অতীত আর বর্তমান এ��ে অপরকে আয়নার মতন প্রতিফলিত করে। আর সেই আয়নার ফাঁকে দেখা যায়—একটা প্রশ্ন: সত্যিটা আসলে কোথায়? ইতিহাসের পাতায়? না কি জনশ্রুতির ফিসফাসে?
উপন্যাস না স্ক্রিনপ্লে—কপিলাবস্তুর কলস ঠিক কোথায় দাঁড়ায়?
প্রীতম বসুর কপিলাবস্তুর কলস পড়তে পড়তে একটা প্রশ্ন ক্রমশই পাঠকের মাথায় গেঁথে যায়—এটা কি সত্যিই একটি ঐতিহাসিক থ্রিলার উপন্যাস, নাকি এটি মূলত এক ধরনের ‘cinematic manuscript’, যেটা কোনো এক Spielberg-সদৃশ filmwright-এর জন্য প্রস্তুত রেখে দেওয়া হয়েছে?
এর গঠন, কাঠামো, সিনক্রোনাইজড টাইমলাইনের মিশ্রণ, দৃশ্য বর্ণনার ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ, সংলাপের নি���্ভুল স্পন্দন, এমনকি সাসপেন্স তৈরির কৌশল—সবকিছুই যেন একেবারে থিয়েটারিকাল মোডে তৈরি। যেন এটি কোনও পাঠযোগ্য থ্রিলার নয়, বরং a novel dressed up like a screenplay, looking for its camera.
স্ক্রিনপ্লে বনাম উপন্যাস: সংক্ষিপ্ত পার্থক্য?
James Bonnet এর মতে, একজন novelist তার সৃষ্ট জগতের ঈশ্বর—প্লট, চরিত্র, আবেগ, অভ্যন্তরীণ দোলাচল, সেট, আলোর ছায়া—সবকিছু নিজের হাতে রচনা করেন। অন্যদিকে screenplay হলো একটি সম্মিলিত শিল্পকর্মের একমাত্র কঙ্কাল—যা পরে পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, অ্যাক্টর, সাউন্ড ডিজাইনারদের সহযোগিতায় পূর্ণদেহ লাভ করে। স্ক্রিনরাইটার সেই গল্পকার যাঁর লেখা শেষমেশ পরিচালকের অনুরূপ ফ্রেমিংয়ে আলাদা রূপ নেয়—তিনি মূল নির্মাতা নন, বরং সহচর, একজন সহ-চিন্তক।
Bonnet এটাও বলেন, উপন্যাস মানেই লেখকের নিজের স্টুডিও, নিজের ক্যামেরা, নিজের সম্পাদনা টেবিল। সেখানে বাজেট নেই, Brad Pitt-এর দরকার পড়ে না, কোনও স্টুডিও এক্সিকিউটিভ আপনাকে বলবে না—“এই চরিত্রটাকে ১৮–২৫ বছর বয়সী পুরুষদের টার্গেট করতে হবে।” এখানে লেখকই পরিচালক, প্রযোজক এবং ঈশ্বর, all rolled into one.
তাহলে কপিলাবস্তুর কলস কোথায় অবস্থান করছে?
এই উপন্যাস একাধারে একটি high-concept novel এবং একটি pre-edited visual script। এর মাল্টি-ট্র্যাক ন্যারেটিভ (নিউ ইয়র্ক থেকে তরাই অঞ্চলের ফ্ল্যাশব্যাক), থ্রিলিং পেইসিং, দৃশ্যকল্প বর্ণনা—সব মিলিয়ে একে পড়ে মনে হয়, যেন প্রতিটি অধ্যায় কোনো storyboard-এর অংশ।
আবার, এটি কেবল চাক্ষুষ বর্ণনা নয়। রিধিমা বোসের দ্বিধা, ভক্তির করুণ পরিণতি, দেবচরণের প্রাগৈতিহাসিক নিষ্ঠা—সবকিছুতে লেখক এক অনাবিল সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। পাঠকের সামনে শুধু ঘটনার কাঠামো নয়, আবেগের ভেতরের ঢেউও পরিষ্কার করে তোলেন। এক কথায়, এটি সেই বিরল উপন্যাস, যেখানে দৃশ্যমানতা ও অন্তর্জগৎ পাশাপাশি চলে—সিনেমার চিত্রনাট্য হয়ে ওঠে কাব্যিক উপাখ্যান।
তবে এটাকে সিনেমা বানানো যাবে কি? পাঠকেরা একবাক্যে বলছেন—অবশ্যই যাবে। এটি একেবারে ‘Guardian’-স্টাইল অল্টারনেট হিস্ট্রি থ্রিলার সিরিজের প্রারম্ভিক বই হয়ে উঠতে পারে। একজন মেধাবী পরিচালক চাই, আর হ্যাঁ, একটা বাজেট। কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ—গল্পটা নিজের cinematic charisma নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
Bottomline? কপিলাবস্তুর কলস কোনো সাধারণ থ্রিলার নয়। এটি সেই দৃষ্টান্ত, যেখানে উপন্যাস সিনেমার ভাষায় কথা বলে, অথচ সাহিত্যিক মনন ছাড়ে না। যেখানে ব্রাহ্মীলিপি, থারুদের লোকগাথা, নিউ ইয়র্কের অলিগলি, অথবা UN-এর কনফারেন্স রুম—সবকিছু একসঙ্গে মিশে যায় এক চিত্রনাট্য-সমৃদ্ধ সাহিত্যিক অভিজ্ঞতায়।
এক কথায়? It’s not just a novel dreaming of the silver screen— It’s a novel that already knows its best angles.
থিম্যাটিক ও গবেষণামূলক বিশ্লেষণ: কপিলাবস্তুর কলস কেবল এক থ্রিলার নয়—এ এক ইতিহাস, প্রযুক্তি, ধর্ম ও রাজনীতির স্তরে স্তরে বিন্যস্ত মেটা-টেক্সট
১) ইতিহাস বনাম ভূ-রাজনীতি: বুদ্ধ কোথায় জন্মেছিলেন—ভারতে, না নেপালে?
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান সংক্রান্ত বিতর্ক আজও ঐতিহাসিক এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তাপ হারায়নি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার ইতিহাস লুম্বিনী এবং কাপিলাভস্তুকে নেপালের তরাই অঞ্চলে অবস্থিত বলে মেনে এসেছে। এর প্রামাণ্য হিসেবে অনেকেই আশোক স্তম্ভের রুম্মিনদেই (Rumindei) শিলালিপিকে তুলে ধরেন। কিন্তু এই একক সূত্রকে ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ইতিহাস ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে—আর কপিলাবস্তুর কলস ঠিক সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই গল্পের ছদ্মবেশে তুলে ধরেছে বিকল্প যুক্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিতর্কের এক রুদ্ধশ্বাস ছবি।
Ajit Tripathy-র প্রবন্ধ অনুযায়ী, রুম্মিনদেই নামটি আদৌ কোনো ঐতিহাসিক গ্রাম বা শহরের নাম ছিল না। বরং গবেষক Dr. Fuhrer নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে এটি ছিল এক ধরনের নামের জালিয়াতি, যাতে নেপালের তরাই অঞ্চলকে বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিপরীতে, তিনি প্রস্তাব করেছেন—আসল কাপিলাভস্তু ছিল ওডিশার ভুবনেশ্বরের প্রাচীন কপিলেশ্বর অঞ্চলে, যার কাছাকাছি ছিল লেম্বাই নামক একটি এলাকা—Tripitaka-তে বর্ণিত লুম্বিনির সঙ্গে যার ধ্বনিগত মিল দেখা যায়।
লেখক প্রীতম বসু উপন্যাসে এই বিতর্ককে শুধুই এক গল্পের নাটকীয় প্রেক্ষাপট হিসেবে রাখেননি। বরং কপিলাবস্তুর কলস-এর আখ্যান এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যেখানে তথ্য, লোকবিশ্বাস, প্রত্নতত্ত্ব এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র একসঙ্গে ফিউশন হয়ে ওঠে। এটি একধরনের সাহিত্যিক রূপকথা নয়—বরং এক fictional hypothesis—যা পাঠককে ঐতিহাসিক পাণ্ডিত্য ও বিকল্প সত্যের সন্ধানে পাঠায়।
Tripathy-র প্রবন্ধটি তুলে ধরে আরও বিস্ময়কর তথ্য:
**১৯২৮ সালে ভুবনেশ্বরের কপিলেশ্বর গ্রামে আবিষ্কৃত হয় আশোক যুগের শিলালিপি-সম্বলিত Birth Plate। **সেখানকার ভাস্করেশ্বর শিবলিঙ্গ আদতে আশোক স্তম্ভের ভগ্নাংশ, যা পরবর্তীকালে ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। **মায়াদেবীর মন্দির, মূলত বুদ্ধের মা-কে ঘিরে গঠিত বৌদ্ধ উপাসনাকেন্দ্র, বর্তমানে ভুলভাবে হিন্দু দেবীর মন্দির হিসেবে দেখা যায়। **রাহুল ভিক্ষুদের উত্তরসূরি মল্লিয়ারা এখনো কপিলেশ্বরে বসবাস করেন—তাঁরা বিশ্বাস করেন এটাই বুদ্ধের জন্মস্থান।
এইসব তথ্য, চরিত্রের কণ্ঠে, সংকেতের আড়ালে, এবং সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে কপিলাবস্তুর কলস পাঠকের সামনে এমন এক কাল্পনিক ইতিহাস রাখে, যা বহুক্ষেত্রে বাস্তব ইতিহাসের থেকেও বেশি সত্যি মনে হয়।
অতএব, এই উপন্যাস শুধু ‘বুদ্ধ কোথায় জন্মেছিলেন?’ এই প্রশ্নে থেমে যায় না। বরং সে প্রশ্নের প্রতিটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাকরণকে খোলস ছাড়িয়ে বিশ্লেষণ করে—আর তাতেই এর থ্রিলারধর্মী প্লটকে আলাদা গভীরতা এবং প্রাসঙ্গিকতা দেয়।
২) ব্রাহ্মী লিপির রম্যরচনা: যখন প্রত্নতত্ত্বের পাঠ হয়ে ওঠে পাজল কপিলাবস্তুর কলস-এর সবচেয়ে চমকপ্রদ থিমগুলির একটি হলো ব্রাহ্মী লিপির ব্যবহার। উপন্যাসের শেষে লেখক যে পরিশিষ্টে পাঠকদের ব্রাহ্মী শেখার পথ দেখিয়েছেন, তা নিছক অলংকরণ নয়—বরং পুরো আখ্যানের একটি গোপন স্তর, এক ধরনের reader's initiation into epigraphy।
ব্রাহ্মী এখানে শুধুই এক লিপি নয়—এটি উপন্যাসের ভেতরে একটি এনিগম্যাটিক কোড। এক অর্থে, এটি সেই “দূরবর্তী মানচিত্র,” যার প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি চিহ্ন, পাঠককে নিয়ে যায় ইতিহাসের গহীনে। পাঠক ক্রমশ যেন হয়ে ওঠে রিধিমা বোসের ছায়াসঙ্গী—একজন symbol-decoding sleuth, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের ধাঁধার মাঝে এক অনিচ্ছাকৃত অভিযাত্রী।
এইখানে একটা মজার তুলনা টানা যেতেই পারে—Dan Brown-র কাল্পনিক Harvard symbologist Robert Langdon-এর সঙ্গে। ঠিক যেমন Langdon রোম, প্যারিস বা ইস্তানবুলের প্রাচীন প্রতীক, লাতিন মন্ত্র ও গুপ্তচিহ্ন পাঠ করে উদ্ধার করেন মিথ, হত্যা, ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্রের রহস্য, ঠিক তেমনভাবেই কপিলাবস্তুর কলস পাঠককে ঠেলে দেয় এক বাঙালি প্রত্নচর্চা-ভিত্তিক Langdon-verse-এর মধ্যে। এখানে cryptogram বা “Vitruvian Man” নেই ঠিকই, কিন্তু আছে ব্রাহ্মী লিপির ভেতরে ঢুকে পড়া প্রাচীন জ্যামিতিক রূপরেখা, অশোকীয় শিলালিপির বিভ্রান্তিকর পুনর্বিন্যাস, এবং এক বিকল্প ইতিহাসের ফাঁকফোকরে হারিয়ে যাওয়া শব্দ।
আর ব্রাহ্মী — এ কোন সাধারণ লিপি নয়। James Prinsep 1837 সালে অশোক স্তম্ভের শিলালিপি বিশ্লেষণ করে প্রথম ব্রাহ্মীর পাঠোদ্ধার করেন। তিনি বুঝেছিলেন—এই অক্ষরগুলোর ধ্বনিগত কাঠামো ভিন্ন, কারণ এগুলো ছিল alpha-syllabic (ধ্বনি ও অক্ষরের মিশ্র রূপ), যা শুধু শব্দ নয়, তার আওয়াজকেও চিত্রায়িত করত। এখনও এর উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত—পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা একে অ্যারামাইক, ফিনিশীয় বা খারোষ্ঠী ঘরানার ভাবেন; অন্যদিকে ভারতীয় ও কিছু প্রগতিশীল বিদেশি গবেষক মনে করেন এটি সম্পূর্ণ স্বদেশীয় উৎপত্তির ফল, যার বীজ নিহিত ছিল পূর্বেকার গাণিতিক রূপরেখা ও প্রতীকে।
এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে, প্রীতম বসুর সাহস ছিল ব্রাহ্মীকে “জাস্ট নামফলক” হিসেবে ব্যবহার না করে একে গল্পের মধ্যে সাংস্কৃতিক কোডের মতো ঢুকিয়ে দেওয়ার। এটি যেন লিপির মাধ্যমে পুরাতত্ত্বের ভেতর ঢুকে পড়ার সাহিত্যমূলক কৌশল, একরকম semiotic seduction।
এটা বলাই যায়—কপিলাবস্তুর কলস-এ ব্রাহ্মী লিপি একরকম “লিটারারি স্যাফায়ার কোড”—যা একদিকে ইতিহাসকে প্রশ্ন করে, আবার অন্যদিকে পাঠকের বৌদ্ধিক সাহসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে। উপন্যাসের চরিত্ররা যখন প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র ধরে সত্য খুঁজে বেড়ায়, তখন পাঠকও তাদের সঙ্গে অনবরত ডিকোডিং করতে থাকে।
আর ঠিক সেই কারণেই এই অংশটা এত স্পেশাল। ব্রাহ্মী এখানে শুধু অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতের একটা চাবিকাঠি—এমন এক চাবি, যা খুলে দেয় ইতিহাসের চুপ করে বসে থাকা দরজা। আপনি যদি পাতার পর পাতা উল্টে নিজেই কোনো লিপি ভেঙে ফেলার রোমাঞ্চ অনুভব করতে চান, তবে এটি আপনার জন্য।
৩) ডিজিটাল ডিস্টোপিয়া ও টেকনো-থ্রিলার: বাংলা সাহিত্যে এক দুর্লভ, সাহসী সংযোজন
Tor, Dark Web, Bitcoin, Cybercrime, AI Surveillance—এই শব্দগুলি হয়তো এখন আমাদের WhatsApp ফরওয়ার্ডে, Netflix স্ক্রলিংয়ে কিংবা evening adda-র গুজবেই বেশি দেখা যায়। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের মূলধারায় এখনও এই শব্দগুলোর অস্তিত্ব অনেকটাই অস্পষ্ট, যেন তারা একরকম techno-taboo। অথচ বিশ্বসাহিত্যে গত দুই দশকে সাইবার থ্রিলার, ডিজিটাল ডিস্টোপিয়া, এবং তথ্য-রাষ্ট্রের থিমগুলো সাহিত্যের অন্যতম প্রধান স্রোত হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষিতে প্রীতম বসুর কপিলাবস্তুর কলস এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই উপন্যাস একটি রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক কাহিনির অন্তরালে techno-political anxiety-র ছায়া ছড়িয়ে দিয়েছে—যেখানে হ্যাকিং, টর নেটওয়ার্ক, ক্রিপ্টো ট্রানজ্যাকশন, আর AI surveillance কেবল প্লট-চালক নয়, বরং নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রশ্ন উত্থাপনকারী একেকটি critical object।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ধরনের সাহিত্যে বাংলা এত পিছিয়ে কেন? এর উত্তর শুধু পাঠকের রুচিতে সীমাবদ্ধ নয়—এর গভীরে আছে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস।
ক. ঐতিহ্যবাদী কল্পনাশক্তি ও শিল্পসংস্কারের বীতরাগ: বাংলা সাহিত্যের প্রথাগত কল্পনার পরিসর বহুদিন ধরেই গ্রামীণ বাস্তবতা, মধ্যবিত্ত মানসিকতা এবং অতীতমুখী নস্টালজিয়া-র চারপাশে আবর্তিত হয়েছে। সাহিত্যে প্রযুক্তি মানেই যেন বাস্তবতার “অসভ্যতা”। শিকড় ও মননের ধারার বিপরীতে “ন্যানো-ন্যারেটিভ” বা “সাইবার সংস্কৃতি” বরাবরই অবিশ্বাসের চোখে দেখা হয়েছে। ভবিষ্যৎকে ভয় পাওয়ার এই প্রবণতা, এক অর্থে, ভারতীয় দর্শনের কালবোধ (cyclical time vs linear time)-এর সাথেও যুক্ত।
খ. টেকনোলজিকে আলাদা জগৎ হিসেবে দেখার প্রবণতা: বাংলা সাহিত্য বরাবরই প্রযুক্তিকে “আউটসাইড দ্য হিউম্যান কন্ডিশন” হিসেবেই দেখেছে। বিজ্ঞানচেতনার সাহিত্যে (সত্যজিৎ, লীলা মজুমদার, প্রেমেন্দ্র মিত্র) সীমিত ব্যবহার থাকলেও, মূলধারার সাহিত্যকাররা প্রযুক্তিকে নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছেন, ব্যবহারিক বাস্তবতা হিসেবে নয়। ফলে টেকনোলজির সঙ্গে অস্তিত্ব, ইতিহাস, বা রাজনীতির সংযোগ কখনোই মূল আলোচ্য হয়নি।
গ। বুদ্ধিজীবী পরিমণ্ডলে টেক-অ্যালার্জি: এখনও বাংলা সাহিত্যচর্চার মূল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ‘Big Tech’ বা ‘Algorithmic Ethics’ নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। AI surveillance কিংবা Data colonialism-এর মতো শব্দগুলো সাহিত্যিক পরিসরে “cool” নয়, বরং “corporate” ঠেকে। অথচ এখনকার বিশ্বসাহিত্যে এসবই হল contemporary ethics-এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আর ঠিক এখানেই কপিলাবস্তুর কলস-এর কৃতিত্ব। এই উপন্যাস প্রযুক্তিকে প্লটের বাহন হিসেবে নয়, বরং একধরনের philosophical antagonist হিসেবে ব্যবহার করে। Tor Network এখানে কেবল গোপন ইন্টারনেট নয়—এটি হয়ে ওঠে ইতিহাস ও সত্যের বিকল্প স্তর। Bitcoin-এর উপস্থিতি শুধু লেনদেন নয়, বরং ক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট। Surveillance এখানে Orwell-এর ফ্যান্টাসি নয়, এক ভয়ানক বাস্তব—যেখানে ইতিহাস, মিথ, আস্থা সবকিছুই হ্যাকযোগ্য।
এই উপন্যাস এমন এক literary atmosphere তৈরি করে যেখানে myth meets metadata, relic meets ransomware, belief meets blockchain. এটি শুধু থ্রিল করে না, মনে করিয়ে দেয়—একটি সত্য আধুনিক মানুষকে যতটা ভাবায়, তার চেয়েও বেশি ভয় পাইয়ে দেয় একটি বিকল্প সত্য।
স্বীকার করতেই হয়, উপন্যাসের এই প্রযুক্তিগত স্তর সবার জন্য সহজপাচ্য নয়। যারা এখনও সাহিত্যে চিঠির ঘ্রাণ, জলভেজা পাটকাঠি বা হলুদ আলোয় বাঁধানো পৃষ্ঠার স্মৃতি খোঁজেন, তাঁদের কাছে টার্মিনাল, কোড, ক্রিপ্টো একটু দূরের ভাষা মনে হতেই পারে। কিন্তু এটাও তো সত্য—ভবিষ্যতের সাহিত্যে এই ভাষাটাই ক্রমশ কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছে।
কপিলাবস্তুর কলস বলছে, "ইতিহাস এখন আর শুধু লেখা হয় না—তাকে এনক্রিপ্ট করা হয়, রিকভার করা হয়, আর কখনো কখনো... ডিলিটও।" এবং সেই বার্তাই বাংলা সাহিত্যে এক সাহসী, প্রায় বিপ্লবী সংযোজন।
৪) ধর্ম, রাজনীতি ও পপ-স্পিরিচুয়ালিটির দ্বন্দ্ব: এক বহুস্তরীয়, রাজনৈতিক-মিথিক আলেখ্য
গৌতম বুদ্ধ নিজে ছিলেন ব্যক্তিপূজার ঘোরতর বিরোধী। তাঁর দর্শনে আত্মোদ্ধার ছিল আত্মজিজ্ঞাসার ফল, মূর্তির নয়। কিন্তু ইতিহাসের পরিহাস এটাই — আজ সেই বুদ্ধের দেহাবশেষ, বা relics, কোটি কোটি ডলারের জিও-পলিটিক্যাল এক্সচেঞ্জের মুদ্রা। Relic কালেকশন, স্মারক পূজা, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, এবং ধর্মীয় প্রতীকায়ন — সব মিলিয়ে বুদ্ধ এখন এক ধরনের sacral commodity, যা devotion এবং diplomacy—দুটোকেই একসঙ্গে পুষ্ট করে।
এই পরিহাসেই গড়ে উঠেছে কপিলাবস্তুর কলস-এর আরও একটি গোপন স্তর—যেখানে ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উপনিবেশ-উত্তর মনোবৃত্তির সংঘর্ষ এক মিথিক কাঠামোয় পরিণত হয়েছে।
এখানে ধর্ম শুধু বিশ্বাসের জায়গা নয়—এটি soft power। আর বুদ্ধের রিলিক হয়ে উঠেছে সেই ক্ষমতার প্রতীক, যা ভারত-নেপাল-চীন এই ত্রিমুখী কূটনীতিতে রূপ নেয়। রিনপোচে নামধারী লামারা যে শুধু ধর্মীয় গুরু নন—তারা হলেন আইডিওলজিকাল অপারেটর। চীনা রাষ্ট্রযন্ত্রের কৌশল, নেপালের ভূ-সীমান্তকেন্দ্রিক দাবিদাওয়া, আর ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক অতীত রক্ষা করার অভিপ্রায়—সব এক কুশলী বৌদ্ধমণ্ডপে জমে ওঠে।
উপন্যাসের একটি দৃশ্য স্মরণীয়—যেখানে UN–এর এক ডিপ্লোমেটিক কনফারেন্সে বুদ্ধের হাড়ের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। তাতে বোঝা যায়, বুদ্ধ এখন কেবল অতীতের মানুষ নন; তিনি এক জিওস্ট্র্যাটেজিক সাইট—a movable heritage. ইতিহাস, মিথ, স্পিরিচুয়াল ইকোনমি—সব একসঙ্গে বসে লাঞ্চ করছে।
এইসব উপাদানে কপিলাবস্তুর কলস কেবল থ্রিলার নয়, এক post-truth parable। একদিকে তথ্যবিহীন ভক্তিবাদ, অন্যদিকে তথ্যসমৃদ্ধ নির্মাণবাদ—এই দুই চরমের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে পাঠক, যার হাতে ধরা থাকে ব্রাহ্মী-লিপির জট, আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে a relic behind glass—যার সত্যতা অজানা, কিন্তু বাজারমূল্য অপরিসীম।
এভাবেই এই উপন্যাস পড়তে পড়তে পাঠক অনুভব করে—এ কেবল একটি রহস্য নয়, বরং চারটি স্তরের সাহিত্য-আর্কিওলজি।
ক. প্রথম স্তরে আছে ইতিহাস—আদৌ কোথায় জন্মেছিলেন বুদ্ধ?
খ. দ্বিতীয় স্তরে আছে ধর্ম—কি রকমভাবে ব্যক্তিগত মুক্তির ধারণা রাজনৈতিক পরিসরে পরিণত হয়েছে?
গ. তৃতীয় স্তরে আছে প্রযুক্তি—কিভাবে ক্রিপ্টো ও ডার্ক ওয়েব এই পুরাতাত্ত্বিক সত্যকে পুনর্লিখনের সুযোগ করে দেয়?
ঘ. আর চতুর্থ স্তরে আছে পপ-স্পিরিচুয়ালিটি—এক জাতীয় অদ্ভুত শান্তিবোধ, যা রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক হয়ে উঠেছে। এ বই পড়া মানে শুধু কাহিনির রহস্যভেদ নয়, এক পর্দার আড়াল সরিয়ে দেখা—ধর্মীয় পবিত্রতা বনাম রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা, আস্থা বনাম অধিকার, বিশ্বাস বনাম ব্যবহারের দুঃসাহসিক সংঘর্ষ। আপনি যদি ধাঁধা ভালোবাসেন, তথ্যঘন থ্রিলারে আগ্রহ রাখেন, এবং সাহস পান এই সমস্ত মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে—তবে এই উপন্যাস ঠিক আপনার জন্যই লেখা হয়েছে।
সমালোচনা: প্রায় সকল পাঠকই বলছেন— ৪০০ পৃষ্ঠার গল্প হয়তো ২৫০-৩০০ পৃষ্ঠায় বলা যেত। মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ বেশি হয়ে পড়েছে, এবং সেগুলো বাংলা হরফে লেখায় পড়তে ঝামেলা হয়েছে।
শেষের কথা: এই বই নিছক থ্রিলার নয়, এটি প্রীতম বসুর ‘mainstream crossover’ কাজ। অতএব— Highly Recommended! কিছুটা ধৈর্য চাই, কিন্তু তার বিনিময়ে মিলবে দারুণ এক গল্প। .আর এই বই সিনেমা না হলে বাঙালির অপমান!
🍂📖বইয়ের নাম - কপিলাবস্তুর কলস📖🍂 ✍️লেখক - প্রীতম বসু 📑পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৪০০ 🖨️প্রকাশক - সেলফ পাব্লিশড
🍁🎭শুরু তেই দেখা যায় দিল্লীর ন্যাশনাল মিউজিয়ামের প্রর্দশনী থেকে বুদ্ধর হাড় চুরি হয়ে যায় , কিউরেটার ডঃ সিদ্ধার্থ বোস বলে ‘ ইমিডিয়েট গোপনে একটা ইনভেস্টিগেশন শুরু করতে বলে ! ' এডিজির শুনে নার্ভাস হয়ে যায় ‘ ইনভেস্টিগেশন ? মানে বুদ্ধের হাড়ের DNA টেস্ট ? 'সিদ্ধার্থ কিছু বলার আগেই এডিজির মস্তিষ্ক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় । ‘ আমাদের দেশের ল্যাবের রিপোর্টকে চিনারা বলবে ফেক রিপোর্ট । DNA টেস্ট বিদেশের কোনও রেপুটেড ল্যাব থেকে করাতে হবে । ' ‘ বিদেশে ? গোপন টেস্ট ? ’ বুদ্ধের হাড় কি সত্যিই নকল? (তাহলে তরাইয়ের জঙ্গল ঘেরা চিতওয়ানি , কোচিলা , ডাংগৌরা , মোরাঙ্গিয়া থারুদের গ্রামগুলোতে সাঁঝের হাওয়ায় ফিসফিস করে ঘুরে বেড়ানো দেবচরণ - তুলসী - রাজকুমারীর যে জনশ্রুতি শুনে সে লিপিবদ্ধ করেছে তা মিথ্যে নয় ? কিন্তু তাহলে ব্রিটিশদের লেখা ভারতের ইতিহাস ?) সিদ্ধার্থ এর হাতে একটা ডায়েরি আসে,পৃষ্ঠা উলটাতে গিয়ে ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এল ব্রাহ্মী বাংলা তালিকা । কিন্তু ডায়েরির পাতায় দু'চোখ রেখে কিউরেটার সিদ্ধার্থ বোস কি কক্ষনো ভাবতে পেরেছে যে তার নিয়তিকে ডাকছে মৃত্যুর হাতছানি ? কী ঘটেছিল নেপালের তরাইয়ের জঙ্গলে একশ বাইশ বছর আগে যা দাদা তার ডায়েরিতে গোপন করে রেখে গেছে ? কে খুন করল তিনজন প্রফেসরকে ? কেন ওকে কেউ খুন করতে চায় ? এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আর্কিওলজির ছাত্রী তথা হার্ভার্ডে পিএইচডি গবেষণারত রিধিমা বোস। সে এবং তার দাদা দিল্লি মিউজিয়ামের একদা কিউরেটর সিদ্ধার্থ বোস অস্থিকলসে ধৃত গৌতম বুদ্ধের আসল দেহাস্থির তত্ত্ব-তালাশে জীবনমরণ অনুসন্ধানে ব্রতী। সিদ্ধার্থ বোসের রহস্যঘন অন্তর্ধান সূত্রে রিধিমা সেই অস্থিকলসের সন্ধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। পারবে কি সে তা উদ্ধার করতে? গোটা রহস্যরোমাঞ্চের সূত্রপাত ঘটালো কে ? রিধিমা? ওর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা সুনয়ন ? জিগস পাজলার হরিপরসাদ? অথবা সিদ্ধার্থ বোস ওরফে জোর করে বানানো 'মঞ্জুশ্রী লামা' লামা অন হুইলচেয়ার ! এই উপন্যাসের ভিলেন কে বা কারা? পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদরা? ইন্ভিয়া মিশনের মোহন গুপ্তা? জয়দেব সাহু? মনোজ যোশী? নাকি শয়তানের বাচ্চা লামা রিনপোচে? মাফিয়া সম্রাট জেনারেল লি ঝেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে 'কপিলাবস্তুর কলস' বইটি।🎭🍁
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রহস্য বলে পাঠককে যেটা গেলানো হয়, সেটা পাঁচন ছাড়া কিছু নয়। অনেকক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে গিলে ফেলি, আবার অনেক ক্ষেত্রে বমিও হয়ে যায়। সেইখানে দাঁড়িয়ে যে গুটিকয়েক বই, রহস্যের সন্ধানে পাঠককে বইএর শেষ অবধি নিয়ে যায়, তার প্রথম দিকেই থাকবে এই বইটা - কপিলাবস্তুর কলস। কপিলাবস্তুর কলস = ইতিহাস না রহস্য? এককথায় দুটোই এ বই না পড়লে জানতেও পারতাম না গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। সেটা ভারত নেপাল সীমান্তের ঠিক কাছেই ভারতের পিতরাওয়াতে বলে ভারতের দাবি, অন্যদিকে নেপালের দাবি শাক্যমুনী গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী বা কপিলাবস্তু নগর এর বর্তমান অবস্থান নেপালের তিলাউরাকুটে। এই বিতর্ককে কেন্দ্র করেই এই উপন্যাসের কাহিনী। তবে উপন্যাসে যদিও সেই রহস্যের একটি সমাধান দেয়া হয়েছে, বাস্তবে বোধহয় সে বিতর্কের অবসান হয়নি... যে গৌতম বুদ্ধ ব্যক্তিপূজা পছন্দ করতেন না তার জন্মস্থান বা স্মৃতিচিহ্নমূলক যেকোন কিছুই আজ ভক্তদের পূজার বস্তু। বুদ্ধ সম্পর্কিত যেকোন প্রাচীন ঐতিহাসিক বস্তুর অর্থনৈতিক মূল্য বিশাল। এর সাথে জড়িয়ে আছে বিদেশী পর্যটক, বিনিয়োগ এমন ঢের ঢের বিষয়। তাছাড়া হয়তো উপন্যাসের রিনপোচে লামার মতো বাস্তবেও এমন অন্ধ বিশ্বাসী ভক্ত থাকা অসম্ভব নয় যারা ধর্মের বিশ্বাসের কারণে ন্যায়-অন্যায়, নীতিবোধ হারিয়ে ফেলে।
উপন্যাসের একটাই ব্যাকড্রপ বলবো কয়েকশো বছর আগের ডায়েরীর ধাঁচে লেখা থারু পরিবারের বর্ণনাটি। ইতিহাস ঘেঁটে একটি অজানা পরিবারের এতটা ডিটেইলড তথ্য বোধহয় জোগাড় করা বাস্তবে সম্ভব নয়। আর পাঠক হিসেবে আমার কাছে প্লাস পয়েন্ট মনে হয়েছে নিউইয়র্ক, হার্ভাড, ইউএন অফিস সম্পর্কিত নানা বাস্তব তথ্য যেন চোখের সামনে দেখছি এমন বর্ণনা যা কখনোই নিজের চোখে দেখা সম্ভব হবে না হয়তো আমার পক্ষে। সেই সাথে ইতিহাসের কিছু না জানা তথ্য, একটি টানটান উত্তেজনাময় থ্রিলার সব মিলিয়ে উপভোগ্যই মনে হয়েছে...
বুদ্ধের চিতার হাড় সম্বলিত কলস নিয়ে যত রাজ্যের মারপিট। নেপাল এবং ভারতের মধ্যে কপিলাবস্তুর লোকেশন নিয়ে ডিবেট, এক বৌদ্ধ মনাস্ট্রির বুদ্ধের হাড় কালেক্ট করার বাতিক, বুদ্ধের হাড় জোগাড় করে বিক্রি করায় আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের ঔৎসুক্য, আসল আর নকল বুদ্ধের হাড় নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে হার্ভার্ড স্টুডেন্ট রিধিমার এক জঘন্য চক্রান্তে পা দেওয়া - এসব নিয়েই প্লট গড়ে উঠেছে।
এটি বেসিক্যালি একটি থ্রিলার। তবে কাহিনির সিংহভাগ জুড়ে কেবল পালানোর কাহিনি। মাল্টিপল টাইমলাইন ন্যারেশন রয়েছে কাহিনিতে। অতীতের কাহিনিতেও চরিত্ররা পালাচ্ছে, বর্তমানের কাহিনিতেও পালাচ্ছে। এই পালাপালি করার ড্যান-ব্রাউনীয় স্টাইলের স্টেপ বাই স্টেপ ডিটেল বর্ণনা করতে গিয়েই ৪০০-এর কাছাকাছি পৃষ্ঠাসংখ্যা বইটির। মূল কাহিনির আকর একেবারেই ছোট্ট। সেটা ১৫০-২০০ পাতাতেও বলা সম্ভব। মাঝের দিকে বইটা পড়তে বোরিং না লাগলেও, একটু রাগই হচ্ছিল। আরে আর কত পালাবে? আসল কনক্লুশনে আসুক এবার!
পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গলের সেই অঙ্কের সূত্র দিয়ে খেলা দেখানোর ম্যাজিক টাচ এই কাহিনিতে নেই। ব্রাহ্মীলিপি নিয়ে কিছু কাজ এবং কিছু ওয়ার্ড জাম্বলিং থাকলেও তা মার্ভেলাস মনে হল না অন্যবারের মতোন।
তবে লেখক নিজে নিউইয়র্ক নিবাসী হওয়ায়, সব অলিগলি ধরে পালানোর দীর্ঘ বর্ণনা লিখতে পারা সম্ভবপর হয়েছে। এতটা ডিটেল সেখানকার নিবাসী ছাড়া আর কেউ লিখতে পারবে না। তাছাড়া থারু, কপিলাবস্তু, ব্রাহ্মীলিপি ইত্যাদি নিয়ে লেখকের রিসার্চ প্রশ্নাতীত।
পড়ে খারাপ লাগার মতোন নয়। তবে ৪০০ পাতা জুড়ে কাহিনিকে বিস্তৃত করা অন্যায় হয়েছে। আরেকটু কম্প্যাক্ট করে লিখলে অনেকবারের ডোজ অফ করে বই রেখে দেওয়াটা ঘটতো না।
(বি:দ্র: - আবারো একটা বইয়ের নামের বানান ভুল। "কপিলাবস্তুর" বদলে "কপিলাবস্তর"। আশা করি ভবিষ্যতে কেউ এটা কারেকশন করবে।)
প্রীতম বসু নিজের জেনারে একজন প্রতিঠিত লেখক হয়ে উঠেছেন। পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল , চৌখুপির চর্যাপদ ইত্যাদি ওই এক জেনেরের ই লেখা। তাই কপিলাবস্তুর কলস এরকম কিছু প্রত্যাশা করেছিলাম। চমকপ্রদ পটভূমিকা , লেখার বাঁধুনি চমৎকার , মার্কিন ভাষায় যাকে বলে পেজ টার্নার।
রিধিমা বসু সুপ্রসিদ্ধ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান বিভাগে পিএইচডি এর ছাত্রী। বিষয় বুদ্ধের অস্থি ভস্স এবং কপিলাবস্তু। নানা ঘটনা বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। কলকাতা মিউসিয়া��ে রাখা বুদ্বের অস্থি ভস্স কি সত্যিই নকল ? প্রশ্ন থেকেই যায়।
অফিসের কাজ , বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য অনেকদিন কোনো ভালো বই পড়া হয়ে ওঠেনি। ভিন্ন স্বাদের এই থ্রিলার বেশ ভালো লাগলো। এটাও ভালো লাগলো দেখে - লেখক প্রচুর পড়াশোনা করেছেন বিষয়ের উপর , গ্রন্থপঞ্জী দেখলেই সেটা বেশ বোঝা যায়। ব্রাহ্মহিলিপি নিয়ে এর আগে বাংলা সাহিত্যে কোনো কাজ হয়েছে বলে শুনিনি(আমার অজ্ঞানতা হতে পারে)। তাই এই সংযোজন বেশ ভালো লেগেছে।
প্রীতম বসু দীর্ঘদিন আমেরিকার রয়েছেন , যতদূর IT সেক্টরে কাজ করেন। তাই বিটকয়েন , i - ক্লাউড , tor নেটওয়ার্ক ইত্যাদি উনি যত সহজে লিখেছেন , সাধারণ বাঙালি পাঠক কি এতটা এগিয়ে , সেটা একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করবো।
যাইহোক আমার বেশ লেগেছে আপনিও পড়ুন , আসা করি নিরাস হবেন না।
গল্পের শুরুতেই চারটে খূন দেখে একটু নিরাশ হলাম - এই রে! পাতি হত্যা রহস্যের গল্প নয় তো 😣 কিন্তু আর একটু এগোতেই বুঝযে কেন এই বইটা এত জনপ্রিয়। তিনটে গল্প চলেছে সাথে সাথে আর সব কটায় টান টান উত্তেজনা। আছে বুদ্ধের মৃত্যুর পরের কিছু ঐতিহাসিক তথ্য, international diplomacy আর অত্যাধুনিক cyber hacking/crime আর medical science এর বিস্ময়কর সব তাক লাগানো বিবরণ। এক দিকে New York শহরে রিধিমা বোসের কি হবে সেই নিয়ে চিন্তা হচ্ছে, অন্য দিকে Jigsaw Puzzle champion হরিপ্রসাদ কি পালাতে পারবে? তার উত্তেজনা। আবার ফাঁকে ফাঁকে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের একটা গল্প উঁকি মারছে - রাজকুমারীর ভাগ্য তাকে আর তার মা বাবাকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় আর শেষ পরিণতি কি হয় তাদের? এই সবের উপর বাঙালির ভিতরের ফেলুদা/ব্যোমকেশ মাঝে মধ্যেই অনুমানের রেশ লাগিয়ে দিচ্ছে গল্প গুলো কি কোথাও গিয়ে মিশবে নাকি স্বাধীন ভাবেই চলবে? লেখক কিন্তু "twist"এর চমক অনেক দূর অব্দি দিলেন। মাঝে মধ্যে "এটা একটু বেশি হয়ে গেল না?" ভাবনা আসছে বৈকি কিন্তু এত রোমাঞ্চ যে ওই চিন্তাকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছি বার বার। একটাই নালিশ প্রীতম বাবুর কাছে যে উনি বড্ড বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার কড়েছেন তাও আবার বাংলা হরফে 😏 । ইংরাজিটা Roman হরফে লিখলে পড়তে সুবিধে হতো 😁।
যারা "পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল", "চৌথুপীর চর্যাপদ" পড়ে এই বই পড়ছে, তাদের কাছে এই বই দূর্বল, কারণ আমাদের প্রত্যাশা বেশি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই বই খারাপ। বরং বেশ ভালো। বই শেষ না করে মনে শান্তি আসে না। থ্রিলার হিসেবে প্রচন্ড ভালো। দেবচরণ, তুলসী আর রাজকুমারীর গল্প পড়তে পড়তে শিহরিত হতে হয়। তাহলে যা জেনে এসেছি সবই কি অসত্য? সব নিজেদের সুবিধার্থে বানানো? ভয় হয় রিধিমা, সুকুমার, হরিপরসাদ আর সিদ্ধার্থ-এর জন্যে। মন খারাপ হয় ভক্তির জন্যে।
কিন্তু বড় বেশি technical কচকচানি। সাধারণ মানুষ কি আদৌ cyber crime নিয়ে এত তথ্য জানে? Torr বা Dark Web বা Bitcoin -এর কথা হাতে গোনা মানুষ জানে, তাই তাদের কাছে এটা দুর্বোধ্য হতেই পারে। সেটার সঠিক ব্যাখ্যা নেই।
কিন্তু ব্রাক্ষ্মীলিপি, কপিলাবস্তু ইত্যাদি ইতিহাস নিয়ে লেখকের জ্ঞান প্রশ্নাতীত। সুন্দর করে বর্ণনা করায় পড়তে পড়তে হারিয়ে যেতে হয়। আমি খুব তাড়াতাড়ি বই টা শেষ করেছি। নাহলে যেন ঘুম হচ্ছিল না।
এই প্রীতম বসু লোকটা একটা জিনিস বটে। প্রতিবার ভাবি সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পড়বো কিন্তু তার আর সুযোগ কোথায়? এমন এক একটা বই লিখবে যে একবার শুরু করলে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে পড়ে থাকা লাগবে সারাদিন বইয়ের মধ্যে নাক মুখ চোখ গুঁজে। মানুষটার জ্ঞানের পরিধি দেখে অবাক তো সেই শুরুর দিন থেকেই। যে ডেডিকেশন নিয়ে ধৈর্য ধরে বছরের পর বছর পড়ালেখা করে বই বের করে তার অনুমান যে কেউ বই পড়ার সময় আমার হা করা মুখ আর এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝতে পারবে। প্রতিবার ই নতুন কিছু না কিছু জানা যায় এনার বই পড়লে। এবার ব্রাহ্মী লিপি তা শিখে ফেললাম হিহিহিহি।
একদম অন্যরকম একটি থ্রিলার। ভিন্ন স্বাদের এই বইটি এক অদ্ভূত স্রোতে বয়ে নিয়ে গেল। ধাপে ধাপে সব জট খুলে গেল। গতিময় লেখার ছত্রে ছত্রে প্রবল উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছে। অনেকদিন পর এমন প্রবল বেগে বই পড়লাম। এরকম লেখা ফিরে ফিরে আসুক। রিধিমা থেকে সুনয়ন ,সেখান থেকে হরপরসাদ বা সিদ্ধার্থ বোস। এর মাঝে নজরকাড়া দেবচরণ-তুলসী-রাজকুমারী-চারুদত্তের লড়াই। এককথায় অনবদ্য।
Awesome the thrill about Buddha has always with me and after reading this book it just stirred my curiosity more for Buddha. Thanks to @Shoumik Debnath
জাস্ট বইটা শেষ করেই লিখছি। সাথে সাথে লিখলে, আবেগ-তাড়িত হয়ে যেটা বলার সেটা হয়তো বলা হয়ে ওঠে না, কিন্তু যথাসাধ্য লেখার চেষ্টা করছি। লেখককে দুটো কথা বলার ছিলো। প্রথম, প্রীতম বাবু আপনাকে কুর্ণিশ। দ্বিতীয় – এটা কোনও উপন্যাস হলো। এ তো সিনেমা মশাই। স���্যিই কপিলাবস্তুর কলস কোনও উপন্যাস নয়, এ এক অত্যন্ত উপভোগ্য থ্রিলার সিনেমা। আমি জানিনা, উনি সিনেমা বানাবেন কিনা, কিংবা কোনও প্রয়োজক সংস্থা থেকে অফার পেয়েছেন কিনা তবে এই উপন্যাস সিনেমা বানানোরই যোগ্য। উপন্যাসে এত ডিটেলিং , ভাবাই যায়না। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় আমি খুব ডিটেলিং পেয়েছি, কিন্তু সে সবই গ্রাম্য জীবনের বিবরণ। কিন্তু থ্রিলার রচনায় এধরনের ডিটেলিং দূর্দান্ত ব্যাপার। তবে ডিটেলিং নিয়ে একটু খারাপও লেগেছো কোথাও কোথাও, সে কথাতেও আসছি।
প্রীতমবাবুর লেখার ভক্ত আমি, ওনার লেখা তিনটি উপন্যাস পড়ার পরে এটায় হাত দিয়েছিলাম, এবারে উনি কিছুটা হলেও ছক ভেঙেছেন। অন্য উপন্যাস গুলির থেকে এটির ধরণ অনেকটাই আলাদা, অন্যান্য উপন্যাসসকল সম্পূর্ণভাবে ইতিহাসাশ্রতি। এখানে ইতিহাসের ঘটনা একটু গৌণ হয়ে উঠেছে। এখানে প্রীতমবাবুর তথ্য ভাণ্ডার নেই। আমি প্রথমে ব্রাহ্মী লিপি দেখে ভেবেছিলাম হয়তো লিপি নিয়ে বিশেষ কিছু পাবো, কিন্তু সেরকম কিছু পাইনি। কিংবা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস নিয়েই এখানে কিছু নেই। তাহলে এখানে আছে কি যদি জিজ্ঞেস করেন বলতে হয়ে, এখানে আছি নিখাদ থ্রিল।
শহর দিল্লী। সময়টা জানুয়ারীর কোনও শীতলতম সকালবেলা। স্থান ন্যাশানাল মিউজিয়াম। দর্শক বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ভিন্ন দেশ থেকে অভ্যাগত সন্য়াসীবৃন্দ। দর্শনীয় বস্তুটি কি - কপিলাবস্তুর কলস। সেখানে কি আছে - ভগবান বুদ্ধের হাড় । আর এখানেই বিতর্ক । শান্তদর্শকমণ্ডলী থেকে এক লামার বিস্ময়মাখা আক্রোশসিক্ত চিৎকার - এটা নকল। …. এখানেই ঘটনার সূত্রপাত। এরপর কি হয় সেটাই উপন্যাসের ঘটনা। কপিলাবস্তুর সঠিক অবস্থান কোথায়। ভারতে নাকি নেপালে। চীন কেন নেপালকে সাহায্য করছে। ইংরেজ শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে যে সকল এক্সকেভেশন অর্থাৎ খননকার্য হয়েছে তার কতটা সরলতার সাথে হয়েছে, কতটা জালিয়াতিমিশ্রিত সেটা লক্ষ্যনীয়। এই বুদ্ধের নকল হাড়ের কি রহস্য়। কোথায় বা তার প্রকৃত অবস্থান। এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এ এক রুদ্ধশ্বাস উপন্য়াস। বর্তমানে হাড়ের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে এসে যায় অতীতের দেবচরণ তুলসী ও রাজকুমারীর জনশ্রুতি। দুটো টাইমলাইনে ঘটনার প্রবাহতা অত্যন্ত সুচারু হাতে সামলেছেন লেখক। বর্তমান ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ে, হার্ভাডে পিএইচডি রত ভারতীয় ছাত্রী রিধিমা। সেখান থেকে কিভাবে উদ্ধার পাবেন তিনি, সেই নিয়েই এগিয়েছে উপন্যাস, পরতে পরতে থ্রিল উপভোগ করেছি, আপনাদেরকও পড়ার জন্য হাইলি রেকমন্ড করছি।
এবারে আসি উপন্যাসের কিছু ভালো ও খারাপ দিক নিয়ে – ভালো দিক্ তো প্রায় উপরে সবই বলা হয়ে গেছে, তবুও আরও একবার বলি – ১. উপন্যাস হয়েও এ যেন এক দুর্ধষ চলচিত্র ২. উপন্যাসের প্লট ভীষণ সুন্দর। ৩. উপন্যাসে কোনোও লুপ হোল পাইনি। ৪. ব্রাহ্মীলিপির মতো প্রাচীন লিপিকে ব্যাবহার করেছেন সাধ্যমতো। ৫. কিছু ওয়ার্ড পাজল্ দারুণ লাগলো। ৬. চারশো পাতার উপন্যাসে কোনও বানানভুল চোখে পড়লো না।
খারাপ দিক্ – • ৭০ পাতা পড়েও মূল ঘটনা জানতে না পারলে কিছুটা তো বিরক্ত লাগেই। এতো বড়ো উপোদ্ঘাত্ ভালো লাগেনি। (৭০ পাতা পড়েই এটা লিখেছিলাম।) • নিউ ইয়র্কের তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত জনজীবনের প্রতিবেদন চলছে মনে হয়েছে। • এবারের উপন্যাসটি অন্যগুলির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, এখানে অতীত ইতিহাসের তথ্য নেই, আছে শুধু আমেরিকার বর্ণনা। তবে খুব একটা খারাপ লাগছে না। • গাদা গাদা নিউ ইয়র্কের বিবরণ শুধু। • উপন্যাসটি ছোটো হতে পারত। বড্ড বড়ো লেগেছে। • আমি ইতিহাসের তথ্য আশা করেছিলাম ওনার থেকে, আগের উপন্যাসগুলো পড়ে, কিন্ত আমি একটু হতাশ হয়েছি, কিন্তু ভালোও লাগছে যে উনি ছক থেকে বেরিয়ে থ্রিলার লিখেছেন, এবং তাতেও উনি সার্থক আমার কাছে। আপনার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
যাঁরা ছিরিছাঁদ, পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল আর চৌথুপীর চর্যাপদ পড়েছেন, তাঁরা কোনোভাবেই পাঁচ-তারা দিতে পারবেন না, কারণ তাঁদের তেষ্টা পুরোপুরি মিটবে না; তাই আমিও পারলাম না। তবে থ্রিলার হিসেবে খুবই উপভোগ্য। চালিয়ে যান, প্রীতম বাবু।
---নতুন দিল্লী ১৫ জানুয়ারি, ২০১৫ দিল্লীর জানুয়ারির শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে রােজ ভিড় উপছে পড়ছে কাষায় বস্ত্রে শরীর আচ্ছাদন করে ভারতীয় বৌদ্ধদের, সিংহল, থাইল্যাণ্ড, নেপাল, ভুটান, চিন, জাপান থেকেও আসা অনেক বৌদ্ধ লামাদের, অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ, বিভিন্ন রাষ্ট্রের ডিপ্লোমেটিক লুমিনারিস, নানা ঐতিহাসিক, এবং পুরাতত্ত্বের ছাত্র- ছাত্রীদের। গত এক সপ্তাহ প্রদর্শনী ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু ঝামেলাটা আজ বাধল চিনের সরকারি প্রতিনিধিদলের আগমনে।গােটা গ্যালারিতে অখণ্ড নীরবতা, লামারা একে একে এগিয়ে চলেছে। এবার একজন বৃদ্ধ লামা এগিয়ে গেল কাঁচের শাে-কেসের দিকে। প্রণাম করার জন্য ঝুঁকতেই লামার ভুরু যুগলে বিস্ময়ের কুঞ্চন। ---কলকাতার ইণ্ডিয়ান মিউজিয়মের একতলায় “টেরাকোটা ও মাইনর আর্টস” নামক একটি প্রত্নতত্ত্বের গ্যালারি আছে। একতলায় এই একটি মাত্র গ্যালারির ভিতর ফটো তোলা নিষেধ। কিন্তু কেন এই নিষেধাজ্ঞা? মিউজিয়ামের একতলায় বাকি সমস্ত গ্যালারিতে ক্যামেরার ছবি তোলার অনুমতি আছে, কিন্তু এই গ্যালারিতে কী এমন আছে যার জন্য ফটো তোলার অনুমতি নেই? ---ইতিহাসের ধুলোর নীচে চাপা থাকা কোন সত্যপ্রমাণের জন্য নাকি বলা ভালো সত্যিকে লুকিয়ে রাখার দাবিতে খুন হতে হলো হার্ভার্ডের চারজন অধ্যাপককে? কেনো হলো হার্ভার্ডের ছাত্রী রিধিমা বোসের প্রাণসংশয়? কোথায় হারিয়ে গেছে রিধিমার দাদা ডঃ সিদ্ধার্থ বোস?
---সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে প্রীতম বসুর লেখা ইতিহাস নির্ভর কল্পকাহিনী "কপিলাবস্তুর কলস" বইয়ে। বুদ্ধের হাড়। ইতিহাস, মিথ, রিয়ালিটি, আর জিও পলিটিক্স গড়ে তোলা এক নিপুণ উপন্যাস, যার পরতে পরতে লেগে রয়েছে ১৮শ সালের ব্রিটিশ-ভারত-নেপালী সংশ্লেষ আর আধুনিক আমেরিকান সভ্যতা। একদিকে যেমন থাকে ব্রিটিশ ভারতের ঝোপঝাড় ভর্তি তিতাপতি, রামতুলসি, বাথুয়া, ঘেউকুমারীর ঘন জঙ্গল,হড়পা বান, ভূমিকম্প, মশা আর ম্যালেরিয়া নিয়েই তরাইয়ে বাস করা থারুরা।কুলি দেবচরণ, চারুদত্তের সাথে এক থারুকন্যা রাজকুমারী থেকে রেবেকা হয়ে ভক্তি পর্যন্ত এই যাত্রাপথে বয়ে যায় বুদ্ধাপট নেপাল থেকে ভারত। অন্যদিকে উঠে আসে আন্তর্জাতিক অন্ধকার দুনিয়ার বিভিন্ন দিকগুলি, UN, নেপাল-ভারত ডিবেট, হ্যাকিং, জিগস পাজলের 4-D ব্যবহার। উপন্যাসটি যেমন উল্লিখিত প্রত্নবস্তু তথা "ভগবান বুদ্ধের অস্হিকলস"-এর ইতিহাস ছুঁয়ে গেছে, তেমনি আমাদের যে ইতিহাস স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়েছে তার সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন তুলেছে। আমরাও কি চাই না সেই ইতিহাসের ধুলোর নিচে চাপা সত্য উন্মোচিত হোক? লেখাটি পড়তে ভালোলাগে টানটান লেখনীর গুনে, সঙ্গে ইতিহাসকে জানার আগ্রহে,আমাদের দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবার জন্যে । উপন্যাসের শেষে লেখক,পাঠকের সঙ্গে ব্রাহ্মীলিপির পরিচয় ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা করেছেন,যা বেশ আকর্ষনীয়। একবার শুরু করলে শেষ না করে থামা যায়না।
Fast paced but the core theme was weak. Story is not strong enough to hook readers to the book. Also the writing style tried to be more western based rather than Bengali but ended up nowhere . Unnecessary use of accented words.
আমার কাছে লেখকের এখনও অবধি সেরা গল্প । তথ্যের ঘনঘটায় অযথা সময় নষ্ট নেই। প্রথম পাতা থেকে টানটান থ্রিলার। ফিল্মি ভাষায় বললে, প্রতিটা সিনের অসাধারণ স্টেজিং ।