Jump to ratings and reviews
Rate this book

যে রাতে কাক ডেকেছিল

Rate this book
জহির রায়হানের সঙ্গে ঘুরে আসা যাক মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো থেকে। বড়োভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। এদিকে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র লেফটেন্যান্ট সেলিমের যাত্রাটাও কম রোমাঞ্চকর নয়! এক পর্যায়ে এসে এই দুই অকুতোভয় সূর্যসন্তানের পথ এক রেখায় মিলল। তারপর?
তারপর এলো ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২। স্বাধীন বাংলার মাটিতে বর্তমান মিরপুর ১২ ও পল্লবী এলাকার তুমুল যুদ্ধ!
লেখকের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসিকা “আগুনের দিন শেষ হয়নি” পাঠককে নিয়ে যাবে আমাদের জন্ম-ইতিহাসের গা শিওরানো এক গলিতে।

“হাতে বন্দুক থাকলে সব এক, কী পাঞ্জাবি, কী মুক্তিযোদ্ধা।” চায়ের দোকানদার চাচা নতমুখে জানালেন হাসিবকে। সদ্যই ভারতের শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পা রেখেছে তরুণ বাঙালি। এসে দেখল অত্যাচার শেষ হয়নি। আগে করেছে পাঞ্জাবি। এখন করছে বাঙালি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছেই। স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধ মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি। এই অস্থির সময়েই একটা হিন্দু মেয়ের প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে গেল হাসিব।
‘স্বাধীন বঙ্গে একদিন’ গল্পটি পাঠককে ঘুরিয়ে আনবে ইতিহাস ও বাস্তবতার এক সাররিয়েল জগত থেকে।

ইপুয়েটের ছাত্র রাশেদ মনে প্রাণে পাকিস্তানের সমর্থক। ‘ভারতের দালাল’ হিন্দুগুলো যখন ঢাকায় যুদ্ধ লাগিয়ে দিলো, এক পাঞ্জাবি বন্ধুকে নিয়ে নিরাপত্তার খোঁজে গ্রামে পালিয়ে এলো সে। চাচাজান সাচ্চা ইমানদার, পাকিস্তান বলতে অজ্ঞান। শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান। মেধাবী রাশেদ যোগ দিলো রাজাকারবাহিনীতে। তার মতো ব্রাইট ছেলেরা পাকিস্তানের সেবা না করলে চলবে কেন? এরপরই ঘটতে শুরু করল নাটকীয় সব ঘটনা।
‘স্বাধীনতা আমি’ গল্পটিতে আপনারা দেখতে পাবেন অপরপক্ষের গল্পটা, বাঙালি হিসেবে যার চর্চা আমরা করি না সচরাচর। পাকিস্তানপন্থীদের গল্প।

বান্ধবীর সাথে খালি বাসায় প্রেম করা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সালের আর কোনো দুরভিসন্ধী ছিল না সেদিন। তারপর উর্দু কবি আহমদ ইলিয়াস থেকে শুরু করে হেলাল হাফিজ ভাই, ঢাকা মেডিকেলের গেটে রাতের খাবার খাওয়া কিংবা তাস পেটানো, এই তো জীবন! কিন্তু দিনটির তারিখটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। দিনটি ছিল ২৫ মার্চ, ১৯৭১। সন্ধ্যা ঘনিয়ে নেমে এলো রাত। ঢাকার ইতিহাসে একমাত্র রাত, যে রাতে কাক ডেকেছিল।
‘যে রাতে কাক ডেকেছিল’ গল্পটি এমন এক চোখ থেকে ২৫ মার্চের রাতকে দেখা, যেভাবে সচরাচর আমরা দেখে অভ্যস্ত নই। গল্পটির প্রায় প্রতিটি বাক্যেই অন্তর্নিহিত আছে তৎকালীন সময়, যদিও খালি চোখে মনে হবে এ যেন আমাদের এই ২০২০-এর আরেকটি দিন। প্রথম পাঠের পর পাঠক চাইলে গুগল ও ইতিহাসের বই নিয়ে পরে আবারও পূণর্পাঠ করতে পারেন এই গল্পটিকে।
এছাড়া বইটিতে আছে ‘অ্যাসেট’ ও ‘লাল মাটি’ নামে আরো দুটো চমৎকার গল্প।

191 pages, Hardcover

First published December 30, 2020

5 people are currently reading
129 people want to read

About the author

Kishor Pasha Imon is a famous Bangladeshi crime writer.

Musa Ibne Mannan, known by the pen name KP Imon, is an accomplished writer who initially gained recognition through his short stories on social media. Over the course of his career, he has written over 220 short stories, captivating his online audience with his vivid imagination and storytelling skills. Building on his success in the digital realm, Imon went on to establish himself as a prominent novelist, with his works being published in both Bangladesh and India.

His regular publishers are Batighar publications, Abosar Prokashona Songstha, and Nalonda in Bangladesh. Abhijan Publishers solely publish his books in India. He is the author of 13 novels and translated 9 books to Bengali till date (5/10/23).

He graduated from the Department of Mechanical Engineering at Rajshahi University of Engineering & Technology. Presently, he resides in Dallas, TX, focusing on his PhD studies in Mechanical Engineering at UT Dallas after completing his MS at Texas State University.

His other addictions are PC gaming, watching cricket, and trekking.

Author's Facebook Profile

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
30 (44%)
4 stars
31 (45%)
3 stars
6 (8%)
2 stars
0 (0%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 15 of 15 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,600 reviews407 followers
January 28, 2023
৩.৫/৫

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পে নতুনত্ব বা নতুন চিন্তার খোরাক পাওয়া দুর্লভ ব্যাপার।অথচ অন্বেষণ ও বিশ্লেষণের আছে অনেক কিছু। "যে রাতে কাক ডেকেছিল" বইতে নতুনত্ব আছে, আছে চিন্তার খোরাকও।ডকুমেন্টারি স্টাইলে লেখা মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ বা অপারেশনের বর্ণনা পড়ে মনে হয়েছে আমি নিজেই সেই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলাম।সেই বর্ণনা এতো জীবন্ত! সবচেয়ে ভালো লেগেছে লাল মাটি ও আগুনের দিন শেষ হয়নি। পরের গল্পটি নিয়ে অনায়াসে দুর্দান্ত একটা সিনেমা নির্মাণ করা যাবে।
কিছু লেখা সেই সময়ের দলিল বা চিত্রায়ন হিসেবে যতোটা ভালো, গল্প হিসেবে ততোটা ভালো লাগেনি। তারপরও বইটি আরো বেশি আলোচনা ও পাঠকপ্রিয়তা লাভের যোগ্যতা রাখে।
Profile Image for Sazal Chowdhury.
Author 19 books178 followers
January 5, 2021
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সবার আগ্রহ অনেক। আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প যেন আমাদেরকে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে। আমি খুব ভালোবাসি “আমাদের গল্প” পড়তে।

সৈয়দ শামসুল হকের একটা গল্প পড়েছিলাম বহু আগে। সেই গল্পে কোনো যুদ্ধ নেই, কোনো ইতিহাস নেই। যতদূর মনে পড়ে, গল্পটা এমন, এক যুবক একজন পৌঢ় লোককে দেখে এগিয়ে যায়, জানতে চায় যুদ্ধের সময়কার গল্প। লোকটি অস্বস্তিতে পড়ে যায়। জানায়, যুদ্ধের সময় উনি কেবল পালিয়ে বেড়িয়েছেন, কোনো লাশ দেখেননি, কোনো গোলাগুলির মধ্যে পড়েননি। কেবল এক অস্থিরতায় কাটিয়েছেন পুরোটা সময়। কেমন একটা ভয় কাজ করেছে।

যুবক বলে, এই যে অনুভূতিটা বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছেন, এটাই তো যুদ্ধের আসল অভিজ্ঞতা।

আরেকটা চলচ্চিত্র দেখেছিলাম, মাহমুদুল হকের “খেলাঘর” উপন্যাস অবলম্বনে। যুদ্ধকে সরাসরি দেখানো হয়নি, কিন্তু প্রতি মুহূর্তে যেন যুদ্ধের এক অস্থিরতা। খুব ভালো লেগেছিল।

এই কাজগুলো একটা অনুভূতি দেয় আমাদের। একধরনের শিহরন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটি মানুষই হয়তো যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হয়নি, কিন্তু এই এক অনুভূতি সবার মধ্যেই এসেছিল। তারা বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে যতদিন বেঁচে ছিলেন।

কিশোর পাশা ইমনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংকলন “যে রাতে কাক ডেকেছিল” বইতে একটি উপন্যাসিকা ও ৫টি ছোটো-বড়ো গল্প রয়েছে।

০১. আগুনের দিন শেষ হয়নি
জহির রায়হান ও সেলিম মোঃ কামরুল হাসানের কাহিনি নিয়ে এই উপন্যাসিকা সম্বন্ধে মোটামুটি সবাই জানেন। দীর্ঘদিন আউট অব প্রিন্ট থাকার পর, অবশেষে আবার ছাপার অক্ষরে আসতে যাচ্ছে।

কিশোর পাশা গল্পে গল্পে জহির রায়হানের অন্তর্ধানের রহস্য উদ্ঘাটনের একটা চেষ্টা করেছে যা যে কাউকে ভাবাবে। এতদিনেও তা উদ্ঘাটিত না হওয়া লজ্জিত বোধও হবে। আর সেলিম মোঃ কামরুল হাসানের বীরত্ব আর পরিণতি একইসাথে উজ্জীবিত আর লজ্জিত করবে। কত কথাই না আমাদের অজানা কিংবা আমরা এড়িয়ে চলছি।

০২. লাল মাটি
এটা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধের একটা খণ্ডচিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। একজন মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের জবানিতে এগিয়েছে বড়োগল্পটি। আশা করি, সবার ভালো লাগবে।

০৩. অ্যাসেট
এটাও মুক্তিযুদ্ধের একটা সুন্দর চিত্র বর্ণনা করেছে। অনেক বস্তুনিষ্ট। ওপরের দুটো গল্পের মতো এটাতেও যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। আর তা অনেক বাস্তব। কিংবা বলা যায়, তেমনটাই কিছু ঘটেছিল; কেননা লেখক, এসব বর্ণনা ইতিহাসকে সাথে নিয়ে লিখেছেন। যে-কারো ভালো লাগবে। পাঠশেষে একটা শূন্যতা অনুভব হবে।

০৪. স্বাধীন বঙ্গে একদিন
ওপরের তিনটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার হলেও এটা যুদ্ধের ঠিক পরের কাহিনি। যুদ্ধের পরও কি আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম? খারাপ মানুষদের দূর করতে পেরেছিলাম? কাহিনি অনেকটা ড্রামাটিক হলেও বেশ ভালো লাগবে। মনে হবে, এমনটা হলে মন্দ হতো না।

০৫. স্বাধীনতা আমি
এটাও বেশ ড্রামাটিক, তারপরও খারাপ লাগে না পড়তে।

০৬. যে রাতে কাক ডেকেছিল
২৫ মার্চের একটা টুকরো ছবি তুলে ধরেছেন লেখক। দিনটা কেমন ছিল আর রাতটা আমাদের কেমন লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। গল্পে কিছু প্রশ্ন লেখক তুলে ধরেছেন। সেসব খোঁজার দায়িত্ব আমাদের।

ব্যক্তিগতভাবে প্রথম তিনটি খুব ভালো লেগেছে। চার আর পাঁচ নাম্বার মন ঠান্ডা করা গল্প। আর ছয় নাম্বার আরেকটু বড়ো হলে মন্দ হতো না।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে আগ্রহ থাকলে, কিছু দৃশ্যপট অনুভব করতে চাইলে অবশ্যই সংগ্রহ করুন। এই গল্পগুলোর সবচেয়ে চমৎকার দিকটি হচ্ছে, তথ্যের কোনো ভার নেই। ডকুফিকশন হয়ে ওঠেনি। এগুলো নিখাদ গল্প, আবার সত্যকে কোনোদিক দিয়েই এড়িয়ে যাওয়া হয়নি। উলটো সত্যকে খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে লেখা হয়েছে। যুদ্ধের দৃশ্যগুলো এতটাই চমৎকারভাবে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে যে, চোখের সামনে খুব সহজেই সেগুলো ভেসে উঠবে। বর্ণনাগুলো অনেক নিখুঁত। ভারিক্কি চালে লেখা নয়। বেশ সহজ-সরল লেখা। আমার ধারণা, যে-কারো ভালো লাগবে। আর বইটা পড়ে কারো কারো দেশপ্রেম হয়তোবা আরেকবার রিচার্জ হয়ে যাবে।

১৯২ পৃষ্ঠার এই বইটির মুদ্রিত মূল্য মাত্র ২৭০ টাকা। আসছে ভূমিপ্রকাশ থেকে। চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছে জুলিয়ান।

জয় বাংলা। ✊
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
December 27, 2021
⚈ স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এই জাতি ঠিক কতটা তৎপর? জাতির বিচারে যদি দেখতে হয়; তবে প্রথমে চোখ দেওয়া প্রয়োজন স্কুল পড়ুয়া দয়ার্দ্রচিত্ত ছেলেমেয়েদের দিকে। কারণ এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গুণীজ্ঞানীরা যেখানে ঠিকমতো বিশ্লেষণ করতে হাপিত্যেশ ছুটে যায়—সেখানে স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জানাশোনার আগ্রহ আছে কি নেই; না-কি শুধু পড়ার জন্য পড়া আর অনুভূতি নিয়ে খেলা—দিকটাও বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশের কত শতাংশ মানুষ ভাবে? দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী ঘটনা নিয়ে ক’জন শিল্পী চিত্র আঁকে? এইসব গণনা করার মানুষও আজ নেই।

দেশপ্রেমের জোয়ারও যে সারা বছর নিম্নচাপ হয়ে বাঙালির হৃদয়ে ঘুরপাক খায় না—সেটা সকলেই জানে। দেখানোর প্রয়াসে শুধু মাতৃভাষা বাংলা কেন চেয়েছিল; এই নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঝড় তোলে। কেন আর কীভাবে তোয়াক্কা না করে—ইচ্ছামতো একজনের লেখা দশজনে কপি মেরে দেশপ্রেমিক সাজে। বিজয় দিবসের শোকে বাঙালি আরও এক কদম ওপরে; ছাদে প্যান্ডেল বেঁধে হিন্দি গানে নাচে। ভুলে যায় কিংবা গুলিয়ে ফেলে—২১শে ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষার কথা, ২৫শে মার্চের কালো রাত্রির ব্যথা এবং ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় লাভের সার্থকতা। কিন্তু যুদ্ধ যে আজও শেষ হয়নি; জমে আছে না বলা অনেক কথা, চাপা নিঃশ্বাসের ভেসে বেড়ায় এক বুক শূন্যতা।

সেই শূন্যতার কিছু অংশের চিত্র যখন সাজানো থাকে লেখকের ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜ সংকলনে; তখন কিছুটা হলেও পূর্ণতা আনে যুদ্ধের সহিংসতা নিয়ে ভাবা এক পাঠকের মনে।

➲ আখ্যানপত্র—

❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜ সংকলনে মোট পাঁচটি ছোটো গল্প ও একটি উপন্যাসিকা রয়েছে। এই নিয়ে পর্যালোচনা অংশে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি; তাই আখ্যানপত্রের লেখা আর তুলে ধরলাম না।

➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜-এর প্রথম গল্প বা উপন্যাসিকা ছিল লেখক কেপি ইমনের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্��। দীর্ঘ কয়েক বছর প্রিন্ট আউট থাকার পরে নতুন করে সেটা ছাপানো হয় ভূমিপ্রকাশ থেকে৷ পুরো বইয়ের প্রথম গল্পটি আপনার ভাবনার জগতে আলোড়ন তোলা�� জন্য যথেষ্ট। বাকি পাঁচটি ছোটো-বড়ো গল্প বলতে পারেন লেখক থেকে উপহার মাত্র। প্রতিটি গল্প সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত বলেই—গল্পের গভীরে অনায়াসে প্রবেশ করা যায়। লেখকের বর্ণবিন্যাসে প্রশংসা করতে হয়। যে-ভাবে যুদ্ধ-দৃশ্য বইয়ের পাতায় জীবন্ত আকারে ফুটিয়ে তুলেছেন; তা অনবদ্য। সংলাপ ও চরিত্রায়নে লেখক নিজের মুনশিয়ানা প্রকাশ করেছেন।

বইটিকে ডকুমেন্টারি কোনো কিছু ভাবার অবকাশ একেবারেই নেই। গল্পের প্রয়োজন বিস্তর তথ্য-উপাত্ত উঠে এলেও—লেখক সেগুলো গল্পচ্ছলে সাজিয়ে পেশ করেছেন। তাই নির্ভুলভাবে প্রতিটি গল্পের মাহাত্ম্য অনুধাবন করা যায়। চলুন তবে, ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜ সংকলনের গল্পগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক—

● আগুনের দিন শেষ হয়নি—

❝যুদ্ধটা শুধু মাটি থেকে শত্রুকে খেদিয়ে দেওয়া নয়। পৃথিবীর বুকে মুখ উঁচু করে দাঁড়ানো, জনগণ যে জন্য যুদ্ধ করছে সেসব উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করা।❞

শত্রুকে এই দেশ থেকে খেদিয়ে বিধায় করতে পারল কই? ’৭২ সালের জানুয়ারিতে এসেও যদি—দেশে রয়ে যাওয়া কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র তুলে শহীদ হতে হয়; তাহলে স্বাধীনতার মূল্যায়ন করা হলো ঠিক কীভাবে? এই উত্তর আজও আমাদের অজানা। অজানা আরও অনেক কিছু; যা চেয়েও কখনও আমাদের জানা হবে না। এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধের পরবর্তী সময়, বুদ্ধিজীবী সংহার নিয়ে কথা বলতে হয়ে মেপে; কারণ, মাপকাঠিও তারাই ঠিক করে দেয়। কারা এই ‘তারা’? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও সেটা লুকানো গুপ্তধনের মতো গুপ্ত, সভ্যতার বিলুপ্তির মতো রহস্য।

স্বাধীনতার এত বছর পার হওয়ার পরও দেশদ্রোহী কারা—এই নিয়ে আর্কিওলজিস্টের মতো অনুসন্ধান চালাতে হয়। স্বাধীনতার প্রাপ্য সত্যটুকু জানার জন্য লড়াই করতে হয়। গোড়া থেকে যে স্বাধীনতা শুদ্ধ না; সেই শুদ্ধতা নিয়ে ভাবতে হয়। শুদ্ধতার স্পর্শ নেই বলেই; লেফটেন্যান্ট সেলিম মো. কামরুল হাসান, জহির রায়হান-এর মতো বলিষ্ঠ দেশপ্রেমিক ও শহীদের মৃত্যু স্মরণে রাখতে হয়। রেখেও লেখকের মতো—আমাদেরও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতে হয়। সবই করা হয়—তবে মুখে কুলুপ এঁটে।

❛আগুনের দিন শেষ হয়নি❜ উপন্যাসিকা ’৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালপুর পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত কমান্ডার সেলিমের মুক্তিবাহিনী এবং ভারত মাটিতে প্রবাসী সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের গোমর ফাঁস করতে ব্যস্ত জহির রায়হান-এর কাহিনি নিয়ে। শুরুতে গল্প দুদিকে ছড়িয়ে থাকলেও, শেষের দিকে এসে দুটো লাইন একই রেখাতে মিলিত হয়। মূলত বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে এই উপন্যাসের মূল থিম দাঁড় করানো। জহির রায়হানের বড়দা শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোঁজ হওয়ার তদন্ত যখন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্র সেলিম মো. কামরুল হাসানেরও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে, তখনই এই উপন্যাসিকা মোড় ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘুরে।

শেষটা নিয়ে কিছু না বলি, শুধু এটুকু বলি—কেপি ইমনের লেখার ভেলকিতে, পুরো উপন্যাসিকা জীবন্ত হয়ে—ক্ষত বেয়ে নেমে আসা রক্ত হয়ে ঝরে। শেষটা একেবারে গোগ্রাসে গিলেছি। এতটা অভিভূত হয়ে পড়ব; জানা ছিল না। এক গল্পে পড়েই এই উপন্যাসিকার স্বার্থকতা উদ্ধার। যেহেতু অনেক তথ্য নির্ভর করে লেখা; তাই পুরো কাহিনিটি গল্প রূপান্তরিত করা অতটা সহজ ছিল না। কিন্তু লেখক সেটা অনায়াসে করে দেখিয়েছেন। বাস্তব চরিত্রদের মধ্যে—কাল্পনিক চরিত্র ঢুকিয়ে পুরো বিষয়টি ভালোই সামলাতে পেরেছেন। সাধুবাদ জানাতে হয় এ-রকম একটা উপন্যাসিকার জন্য। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়—আগুনের দিন শেষ হয়নি আজও...

● লাল মাটি—

একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারার খণ্ডকথা। ব্যাপ্তি ছোটো হলেও, গল্পে মেশানো রয়েছে পাহাড়-সম অনুভূতি। একটি যুদ্ধের বর্ণনা, এক অকুতোভয় বাচ্চা ছেলের অভাবনীয় কাণ্ড এবং একটি প্রেমপত্র। উত্তম পুরুষে গল্পের বর্ণনায় ছিলেন একজন কমান্ডার। শেষের পরিশিষ্ট অংশে শুধু পরিবর্তন এসেছে।

পঁচিশজনের একটি দল, রিক্রুট করা একগাদা যোদ্ধা। তিয়াত্তরের ঘরে থাকা ভারী দলটার সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে এ-মুহূর্তে ২৫-এ। যাঁদের বয়স আবার আঠারো থেকে চব্বিশের মধ্যে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় থেকে পনেরো মাইল দূরে ফাতিমা নামের এক সিনিয়রের বাসায় আশ্রয়ে থেকে যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত কমান্ডার। পরদিন রাত দশটায় বাস্তবায়ন হবে সেই পরিকল্পনা। এর পর... একটি দীর্ঘ রজনি। বাকিটা জানতে হলে পড়তে হবে—হৃদয় বিদীর্ণ করা সংকলনের ছোটো ❛লাল মাটি❜ গল্পটি।

● অ্যাসেট—

❝বাংলাদেশ এখনও জন্মেনি। জনতারা যদি ক্যাপিটাল হয়ে থাকে, মুক্তিবাহিনী অবশ্যই অ্যাসেট।❞

একটি লাইন, পুরো স্বাধীনতার মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বলিদানের পেছনে কিছু উদ্দেশ্য থাকে। কারণে বা অকারণে কিছু অর্পণের তাগিদে; লুকিয়ে থাকা সার্থের ঝিলিক উপেক্ষা করা কঠিন হয় না। তবে স্বার্থহীন এক মুক্তির নেওয়া শেষ সিদ্ধান্তে, অর্জিত এই স্বাধীনতার স্বাদের পেছনে বেদনাও যে কতটা ব্যথিত—তা ❛অ্যাসেট❜ গল্প না পড়লে বোঝা যেত না।

সংকলনের আরও একটি দারুণ ছোটো গল্প। সম্পদ রক্ষার্থে, প্রীতি ত্যাগের এক মর্মভেদী গল্প ❛অ্যাসেট❜।

● স্বাধীন বঙ্গে একদিন—

❝আমি চাইনি তারা জানুক... চাইনি কেউ জানুক...❞

না জানার ‘আকুতি’কে বাঁচানো যখন একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়, পরিচয় লুকিয়ে রাখা তখন বিলাসিতা হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরের সময়কার ঘটনা। তরুণ বাঙালি হাসিব—শরণার্থী শিবির থেকে যখন নিজ দেশে পদার্পণ করে জানতে পারে হাল আমলের অবস্থা; তখনই চোখ কপালে উঠে, ঘৃণায় গা রিরি করে। তবে সত্য ছিল তখনও লোকচক্ষুর আড়ালে। কী সেই সত্য? পাঠকের জন্য লেখক রেখেছেন—আকস্মিক বিস্ময়ে মোড়ানো এক সুন্দর, তেজোদীপ্ত, রহস্যময় ছোটো গল্প।

হাতে বন্ধুক থাকলে যে বাঙালি; পাকিস্তানি হয়ে যায় না—এই কথার প্রজ্বলিত উদাহরণ ❛স্বাধীন বঙ্গে একদিন❜ গল্পটি। লেখকের চিন্তাশীল ভাবনা এবং সুন্দর একটি প্রেক্ষাপট নির্বাচন করে সেটিকে যথোপযুক্ত লিখনপদ্ধতির সহায়তায়—ভালো একটি গল্পে রূপান্তরিত করেছেন। মুগ্ধ হওয়ার মতোই। উক্ত গল্পে সংলাপ থেকে শুরু করে ভালোবাসার নিদর্শন আর দেশপ্রেমের প্রদর্শন; এই দুইয়ের মেলবন্ধন এবং অন্যান্য সাহিত্যিক বিষয়বস্তু আরও বেশি প্রকটিত হয়েছে।

● স্বাধীন আমি—

ইপুয়েটের (বর্তমানে বুয়েট) ছাত্র রাশেদ মনেপ্রাণে পাকিস্তানের সমর্থক। পাকিস্তানি মিলিটারিরা দেশে ঢালাও ভাবে প্রচার করছে; ২৫ মার্চ ভয়ানক কালো রাত্রিতে হওয়া বাঙালিদের প্রতি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে! ভারতীয়রা দেশটাকে একদম শেষ করে হিন্দুয়ানি কায়েম করতে উঠে-পড়ে লেগেছে।

রাশেদ বিশ্বাস করে সেই কথা। তাই সে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসে গ্রামে; বাবা-মাকে একা ফেলে। এসে উপস্থিত হয় সাচ্চা ঈমানদার—চাচা সালাউদ্দীন চৌধুরীর বাড়িতে। যিনি আবার পাকিস্তান বলতে অজ্ঞান। সেই চাচার এক মেয়ে আছে; নাম—নীলিমা। ষোলো বছরের কিশোরীর মধ্যেও পাকিস্তান নিয়ে দেশপ্রেম ঠাসা। রাশেদের সাথে বেশ মিলে। রাশেদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে; অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ।

❛স্বাধীন আমি❜ বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করা একটি মর্মগ্রাহী উপখ্যান। কাহিনির গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য লেখক পাকিস্তান-পন্থীদের দিক থেকে গল্পটি বর্ণনা করেছেন। কীভাবে বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ভারতীয় বা হিন্দুদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের বীজ রোপণের সুপরিকল্পিত চেষ্টা করা হয়েছে এবং ধর্মের নাম নিয়ে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘৃণিত কাজ করে পাকিস্তানি স্বৈরাশাসন কায়েম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে; তা নিয়ে গল্পের প্রেক্ষাপট নির্বাচন। গল্পের শেষটা বেশ নাটুকে; এই দিকটি পুরো কাহিনিকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে।

● যে রাতে কাক ডেকেছিল—

ঢাকার ইতিহাসে একমাত্র রাত, ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালের দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে লেখা এই গল্প। কাহিনির মঞ্চশিল্পী হিসে���ে পুরোটা জুড়ে ছিল; খালি বাসায় বান্ধবীর সহিত প্রেম করা ও রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামানো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল। দেশের বিপদাপন্ন পরিবেশ ও যুদ্ধের বার্তা নিয়ে কথা বলা উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস-সহ হেলাল হাফিজ ভাই পর্যন্ত সবাই যেখানে জাগ্রত; ফয়সাল সেখানে পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা নিতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা নামলে বুঝতে পারে করুণ সুরে কাক ডাকার মর্ম। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে যায়... সেইদিন বাঙালিদের সাথে ফয়সালেরও ভাবনার রাজ্য—হয়েছিল পরাস্ত।

লেখকের ২৫শে মার্চ দিনটি নিয়ে লেখা ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜ ছিল সংকলনের শেষ গল্প। যে গল্পের নামকরণে রাখা উক্ত বইয়ের নাম। উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াসের সাহসিকতা, ঢাবির ছাত্রনেতাদের নিয়ে কথা; সবকিছুই দেখানো হয়েছিল ফয়সালের দৃষ্টিকোণ থেকে। এই গল্পে কথোপকথনের মাত্রা ছিল বেশি, ঘটনাপ্রবাহ মোটামুটি। সব মিলিয়ে ভালোই।

➣ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

কেপি ইমন ভাইয়ের লেখার সাথে যারা পরিচিত তাঁরা হয়তো জানেন, তিনি কতটা গভীরে প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন৷ এই বইটিতে সেই গভীর আলোচনার বেশ কিছু দিক স্পষ্ট রূপে ধরা দিয়েছে। কল্পনাপ্রসূত হলেও, প্রতিটি গল্পের অন্তরালে যে বাস্তবতা রয়েছে—তা ঠিকই উপলব্ধি করানোর মতো উপকরণ তিনি ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜-এর পাতায় পাতায় দিয়ে রেখেছেন। চাইলেও সেগুলো উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মতো কারবার। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধ সময়কার ঘটনা ফিকশন হিসেবে পড়তে উৎসুক—তাঁদের জন্য এই বইটি উপযুক্ত বলে ধারণা করছি।

● সম্পাদনা ও বানান—

সম্পাদনা ভালো হলেও, বেশ কিছু প্রচলিত বানান ভুল আর টাইপো থেকে গেছে।

● প্রচ্ছদ • নামলিপি—

নামলিপিতে, তৎকালীন সংবাদপত্রে দেওয়া হেডলাইনের অক্ষরগুলো পেনটুল দিয়ে পলিশ করে সাজানো; এতে ওই সময়কার ভাইবটি প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে। দারুণ কাজ বলতে হয়। অন্য দিকে প্রচ্ছদও ভালো লেগেছে।

● মলাট • বাঁধাই • পৃষ্ঠা—

মলাট ঠিকঠাক, বাঁধাই শক্তপোক্ত। পৃষ্ঠার মানও ভালো। ভেতরের ফন্ট নিয়ে করা কারুকাজও বইটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

⛃ বই : যে রাতে কাক ডেকেছিল • কিশোর পাশা ইমন
⛁ জনরা : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংকলন
⛃ প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০২০
⛁ নামলিপি : সজল চৌধুরী
⛃ প্রচ্ছদ : জুলিয়ান
⛁ প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ
⛃ মুদ্রিত মূল্য : ২৭০ টাকা মাত্র
⛁ পৃষ্ঠা : ১৯১
Profile Image for শুভাগত দীপ.
265 reviews48 followers
July 5, 2021
|| রিভিউ ||

বইঃ যে রাতে কাক ডেকেছিল
লেখকঃ কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশকঃ ভূমিপ্রকাশ
প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর, ২০২০
ঘরানাঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনি সঙ্কলন
প্রচ্ছদঃ জুলিয়ান
পৃষ্ঠাঃ ১৯১
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা
ফরম্যাটঃ হার্ডকভার

তরুণ লেখক কিশোর পাশা ইমন-কে অনেকেই চেনেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটা সময় প্রচুর গল্প লিখেছেন তিনি। বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হওয়া 'মিথস্ক্রিয়া', 'মৃগতৃষা', 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল', 'ছারপোকাঃ দ্য ব্যাটল অভ মহেন্দ্রপুর' ও 'জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে' উপন্যাসগুলো পেয়েছে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। মৌলিক লেখালেখির পাশাপাশি করেছেন বেশ কয়েকটা অনুবাদও। 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনি সঙ্কলন। এখানে 'আগুনের দিন শেষ হয়নি' নামের একটা উপন্যাসিকা সহ পাঁচটা গল্প স্থান পেয়েছে। উপন্যাসিকাটা বেশ কয়েক বছর আগে সম্ভবত রাজশাহীর হৃদি প্রকাশ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। নতুনভাবে এটা এবার এলো ভূমিপ্রকাশের ব্যানারে। যাই হোক, এই বইয়ে স্থান পাওয়া কাহিনিগুলো সম্পর্কে নিচে কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি।

উপন্যাসিকা - আগুনের দিন শেষ হয়নিঃ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে প্রবল যুদ্ধ চলছে মুক্তিবাহিনীর। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে আছেন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমান রুয়েট) তরুণ ছাত্র সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান। যেকোন মূল্যে তাঁরা পাকবাহিনীকে প্রতিহত করার মরণপণ চেষ্টায় রত।

ওদিকে কলকাতার অলিগলিতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন তরুণ সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান। প্রবাসী সরকারের ভেতরের শত্রুদেরকে চিহ্নিত করার এক ভয়াবহ জেদই যেন তাঁকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। নিজের দেশের মানুষের ওপর পাকিস্তান সরকারের চালানো ভয়াবহ গণহত্যা নিয়ে তিনি বানাতে চলেছেন ডকুমেন্টারি ফিল্ম 'স্টপ জেনোসাইড'। সেই সাথে দুর্নীতির আগাছা নির্মূলের মিশন তো তাঁর আছেই।

স্বাধীন বাংলাদেশের মিরপুর এলাকা, ১৯৭২ সাল। ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান এই এলাকায় পা রাখলেন নিজের নিখোঁজ বড় ভাই শহীদুল্লাহ্ কায়সারের খোঁজে। আর এরপর থেকেই বাংলাদেশের সমস্ত রেকর্ডে রহস্যময়ভাবে 'নিখোঁজ' দেখানো হয় তাঁকেও! কি ঘটেছিলো সেদিন মিরপুর ১২-তে? লেফটেন্যান্ট সেলিম আর জহির রায়হানের পথ কিভাবে এসে এক বিন্দুতে মিশেছিলো সেই ভয়াবহ অস্থির সময়ে?

প্রতিক্রিয়াঃ অসামান্য তথ্যনির্ভর উপন্যাসিকা 'আগুনের দিন শেষ হয়নি'। এই উপন্যাসিকায় অকুতোভয় লেখক কিশোর পাশা ইমন বাংলাদেশের এমন একটা লুকানো সত্য নিয়ে নির্ভীকভাবে কথা বলেছেন, যে সত্য নিয়ে সচরাচর কোন আলোচনাই হয় না৷ এখানে একই সাথে তিনি দেখিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালপুরের যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সমসাময়িক সময়ে ঘটে চলা বেশ কিছু স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ঘটনাকে। বরেণ্য বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান সম্পর্কেও এমন কিছু তথ্য গোচরে এসেছে, যা হয়তো উপন্যাসিকাটা না পড়লে জানাই হতো না। এটা পড়ে শেষ করার পর বহুদিন ধরে মনের ভেতরে উঁকি দিতে থাকা একটা প্রশ্ন আবারো উদয় হলো, আমরা কি সত্যিই স্বাধীন?

গল্প - অ্যাসেটঃ তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তালহাকে ডাইভার্শন ক্রিয়েট করতে পাঠিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাহের। আর এই সময়টুকুর মধ্যে ওরা হাতে গোনা কয়েকজন কবজা করে নেবে গ্রামের মিলিটারি ক্যাম্প, এমনটাই ছিলো প্ল্যান। ওদিকে হানাদার বাহিনীর এক অংশ তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরকার রাগ ঝাড়ছে নিরীহ বাঙ্গালীদের ওপর। এই নরকগুলজারের শেষ হওয়া দরকার। কিন্তু এর শেষটা দেখার জন্য কতো ক্যাপিটালের জীবন জুয়ায় লাগিয়ে দিতে হবে, জানে না তাহের। তবুও কি বাঁচানো যাবে অ্যাসেট-কে? অ্যাকাউন্টিংয়ের অংকের হিসেব এবার গুলিয়ে যাবে না তো?

প্রতিক্রিয়াঃ চমৎকার একটা গল্প। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটা খণ্ডযুদ্ধের ঘটনা তো 'অ্যাসেট'-এ দেখানো হয়েছেই, সেই সাথে দেখানো হয়েছে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিজের জীবন ছাড়াও আর কি কি বলিদান দিতে হয় সেটাও। আআশ্চর্যরকম মনখারাপ করা এই গল্পের শেষটা আবারো আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে কতো সহস্র স্যাক্রিফাইসের বদৌলতে আমরা আজকের এই দেশটাকে পেয়েছি।

গল্প - স্বাধীন বঙ্গে একদিনঃ যুদ্ধ শেষ হয়েছে। যুদ্ধের ক্ষত শরীরে নিয়ে দেশটা এখনো কাতরাচ্ছে। এই অবস্থায় ভারতের শরণার্থী শিবির থেকে দেশে ফিরলো হাসিব। দেশে ফিরেই দেখলো, অবস্থা খুব বেশি পাল্টেনি। আগে অত্যাচার করতো পাকিস্তানি হানাদাররা আর এখন করছে ভুঁইফোড় বাঙ্গালীরা। বন্দুক হাতে যেন সবাই সমান। এই অবস্থায় হাসিবের সাথে প্রেম হলো হিন্দু মেয়ে আকুতি'র। আর আকুতি'র দিকেই চোখ পড়েছে এক নরপশুর, তাও এই 'স্বাধীন' দেশেই। কি করতে পারে হাসিব?

প্রতিক্রিয়াঃ খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে 'স্বাধ��ন বঙ্গে একদিন'। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের এক চরম সত্য তাঁর এই গল্পে তুলে এনেছেন কিশোর পাশা ইমন। রক্ষকই যখন ভক্ষক হয়, তখন নিজেকেও হয়ে উঠতে হয় বেপরোয়া। গল্পের শেষটা অসাধারণ লেগেছে। মনে থাকবে গল্পটা।

গল্প - স্বাধীনতা আমিঃ রাশেদ মনেপ্রাণে পাকিস্তানের সমর্থক। গ্রামে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিজের চাচার বাড়িতে এসে পাকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেন আফতাব মাহমুদের সাথে পরিচয় হয় তার। শান্তি কমিটিতে যোগ দেয় রাশেদ। উঠতি বয়সী রাজাকারদের সাথে গ্রাম টহল দিয়ে বেড়ানো শুরু করে সে। এদিকে চলতে থাকে অত্যাচার ও ধর্ষণ। সবকিছুই ঘটতে থাকে রাশেদের চোখের সামনে। ওদিকে একইসাথে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটা হাইড-আউটে হামলার প্ল্যান করছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সময় সমাগত।

প্রতিক্রিয়াঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই গল্পটা অনেকটাই ব্যতিক্রমধর্মী। এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়টাকে দেখানো হয়েছে একজন পাকিস্তান সমর্থকের দৃষ্টিকোণ থেকে। চমৎকার লেগেছে 'স্বাধীনতা আমি'। বিশেষ করে গল্পের শেষটা মুগ্ধ করার মতো।

গল্প - যে রাতে কাক ডেকেছিলঃ ২৫শে মার্চ, ১৯৭১। সেদিন সন্ধ্যায় নিজের গার্লফ্রেন্ড অ্যালিনের খালি বাসায় তার সাথে অভিসার সেরে হলে ফেরার পরিকল্পনা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফয়সালের। কিন্তু ফজলুল হক হলে বন্ধু মতিনের সাথে দেখা করতে এসেই সে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু পরিবর্তন টের পায়। ভারী ট্যাংক আর পাকিস্তানি মিলিটারি ভর্তি লরি হানা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে। বাদ যায় না মেয়েদের হলগুলোও। হত্যা, ধর্ষণ আর লুণ্ঠনে মেতে ওঠে পাক হানাদার বাহিনী।

প্রতিক্রিয়াঃ ২৫শে মার্চ রাতকে যেন আবারো জীবন্ত করে তুলেছেন কিশোর পাশা ইমন তাঁর এই গল্পে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের ঝাঁপিয়ে পড়ার চিত্রটা বড় বাস্তব ছিলো। সেই সাথে তাঁর এই গল্পে উঠে এসেছে আহমদ ইলিয়াস নামের এক উর্দুভাষী কবি'র কথা, যিনি বাঙ্গালীর নবজাগরণের পক্ষে ছিলেন।

'লাল মাটি' নামে আরো একটা গল্প ছিলো এই সঙ্কলনে, যেখানে আত্মত্যাগের আরেক গা শিউরানো ঘটনার দেখা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইগুলোর মধ্যে কিশোর পাশা ইমন-এর 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' নিয়ে তেমন কোন আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখিনি আমি। অথচ হওয়া উচিৎ। বইয়ের একমাত্র উপন্যাসিকা আর পাঁচটা গল্পের প্রত্যেকটাই ছিলো মনোমুগ্ধকর। ব্যক্তিগতভাবে বইটা আমি রিকমেন্ড করবো।

বইটার অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রচ্ছদশিল্পী জুলিয়ান। এটা তাঁর সেরা কাজগুলোর একটা।

'যে রাতে কাক ডেকেছিল' পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.২৯/৫

#Review_of_2021_26

#বই_নিয়ে_গল্প_হোক

~ শুভাগত দীপ ~

(৫ জুলাই, ২০২১, দুপুর ৩ টা ১৬ মিনিট; নাটোর)
Profile Image for musarboijatra  .
272 reviews317 followers
January 14, 2021
আমাদের প্রজন্ম, অর্থাৎ স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ না দেখা প্রজন্ম যখন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে গল্প লেখে, তার সবটাই হয় একটা স্বপ্ন কিংবা কল্পনা। আদতে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটাই আমাদের কাছে একটা ফ্যান্টাসির মতো।
কিশোর পাশা ইমন তাঁর প্রথম প্রকাশিত বইটাই লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, 'আগুনের দিন শেষ হয়নি'। উপন্যাসিকা-টার প্লট এবং নির্মাণ মনভরানোর মতো ছিল। তবে তারচেয়ে চমৎকৃত হতে হয়, যখন উপন্যাসিকাটা-র পেছনে তাঁর কাজের হদিস পাওয়া যায়। লে. সেলিম মোঃ কামরুল হাসানের চরিত্র নির্মাণের জন্য তাঁর পাশের রুমের সহপাঠীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, জহির রায়হানের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাঁর পরিবারের সব জীবিত সদস্যদের কাছ থেকে। আরো খুঁজে জানা নায়, কেবল এই উপন্যাসিকা রচনা-ই না, মুক্তিযুদ্ধের ওপর কেপি এবং তাঁর সহকর্মীদের মাট-পর্যায়ের গবেষণা ছিল সুদুরপ্রসারী। রুয়েটের ছাত্রজীবনে কেপি এবং তাঁর ডিপারট্মেন্টাল সিনিয়র, সাব্বির আহমেদ, রাজশাহীর বধ্যভূমিগুলোতে খুঁজে বেড়িয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সঠিক সংখ্যার হদিস। এছাড়াও, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য ও রাজশাহী ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর তাঁদের কাজের কিছু ধারণা পাওয়া যাবে তাঁদের এই য়ুট্যুব চ্যানেলে :
https://www.youtube.com/channel/UCLWU...

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেপি যখন ফিকশন লিখেছেন, সেখানে তাঁর এই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ঘেটেঘুটে দেখার সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তার পদ্ধতি। যখন 'আগুনের দিন শেষ হয়নি' বাজারে আসে, সেটা নাম করেছিল অন্যতম সুন্দর এবং হৃদয়গ্রাহী একটা গল্প হিসেবে, একই সাথে জহির রায়হানের অন্তর্ধানের একটা থিওরি দিয়েছিলেন বলে। অনেকদিন আউট-অব-প্রিন্ট থাকার পর বইটা এবার যুক্ত হয়েছে 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' সংকলনে।

কিন্তু কেপির 'থট প্রসেস'এর আরো বাস্তবতাবাদী রূপ দেখতে পাই 'লাল মাটি', 'অ্যাসেট', 'স্বাধীনতা আমি' গল্পগুলোতে। প্রচন্ড র‍্যাশনাল মানুষ যখন যুদ্ধের আগুনের আঁচে পোড়ামাটির মতো আরো দৃঢ় হয়ে ওঠে, তখন সঙ্কটের সময়গুলোতে তাদের চিন্তাধারা আমাদের অবাক করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের গতানুগতিক 'ফ্যান্টাসি'সুলভ চিত্রটার বাইরে, ওই সময়কার তরুণ যোদ্ধার জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয় এখনকার আমাদের।

যুদ্ধ শেষেও অস্ত্র না-জমা দেওয়া যুবকরা যে ত্রাসের জন্ম দিয়েছিল তার একটা আপাত-নিষ্পাপ ছবি, 'স্বাধীন বঙ্গে একদিন'। আর 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' ২৫ মার্চের একটা ছিন্ন চিত্র। ঢাবি'র ছাত্রদের হল ঘিরে ২৫ মার্চের দুপুরটা রাতে পালটে যাবার মধ্য দিয়ে কেমন করে অভাবিত, অবিশ্বাস্য এক নরক নেমেছিল ঢাকায়, তা নিয়েই গল্পটা।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেপি'র আগ্রহ থেকে এটা আশা করা যায় যে আরো গল্প তিনি লিখবেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। হয়তো কেপির মুক্তিযুদ্ধের গল্পের সঙ্কলন কলেবরে আরো বড় হবে সামনে। এর আগে ভাষা আন্দোলনের টাইমলাইনে একটা সায়েন্স ফিকশন লিখেছিলেন কেপি, সেটা এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

বরাবরই এটা লক্ষ্য করেছি, উপন্যাসের রিভিউ দেওয়ার চেয়ে গল্পসঙ্কলনের (অথবা একটা গল্পেরও) রিভিউ দেওয়াটাই বরং কঠিন। 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' বইটার চোখে পড়ার ব আমনে রাখবার মতো বিষয়গুলো উল্লকেহ করার সাথে এটাই বলা যেতে পারে, যারা 'আগুনের দিন শেষ হয়নি' পড়ার বা সংগ্রহ করার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য বইটা কেনা একটা ভাল সুযোগ। এছাড়াও বাকি ৫টা গল্পের জন্যও 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' বইটা রেকমেন্ডেবল, যেহেতু একই ধাঁচের গল্পগুলোকে এক মলাটে এনে দিয়েছে ভূমিপ্রকাশ। তাছাড়া, কেপি'র ওয়েবসাইটে খুঁজে খুঁজে পড়ে নেওয়ার সুযোগ থাকলে ৫টা গল্প সেখানেও পড়ে নিতে পারেন আগ্রহীরা।
Profile Image for Mitul Rahman Ontor.
161 reviews57 followers
April 21, 2021
আগুনের দিন শেষ হয় নি: 5/5

বাকি ৫টি ছোটগল্প সংকলন: 3/5
Profile Image for MD Sifat.
120 reviews
July 14, 2021
একটি পূর্বপ্রকাশিত উপন্যাসিকা ও পাঁচটি গল্পের সমন্বয়ে লেখা হয়েছে বইটি। বেশ উপভোগ্য একটা বই। কাহিনীর বর্ণনা ও লেখনী দুটোই ভালো ছিল���
আগুনের দিন শেষ হয়নি-
কেপি ইমনের লেখা প্রথম উপন্যাস। যেখানে জহির রায়হান ও ক্যাপ্টেন সেলিম ছিল। যা একটি বাস্তব কাহিনী থেকে নেয়া গল্প। অবশ্য এন্ডিংটা শিওর না। লেখক নিজেই বলে দিয়েছেন। আর সেটা জানা সম্ভব না। উপন্যাসিকাটা দারুণ ছিল। লেখকের যুদ্ধের বর্ণনা, লেখনী, কাহিনি সবমিলিয়ে একটা দারুণ কম্বিনেশন। যা পড়ে পাঠক জানতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের এক ভয়াল ইতিহাস।
রেটিং- ৫/৫
লালমাটি-
এই গল্পটিও ভালো ছিল। শেষে যে টুইস্ট দিয়েছে লেখক সেটার কারণেই গল্পটা ভালো লাগে। এক ভিন্ন স্বাদের গল্প। পড়ে মজা পাবেন পাঠক।
রেটিং- ৪.২৫/৫
অ্যাসেট-
এই গল্পটি অতটাও ভালো লাগে নি।
রেটিং- ৩.৭৫/৫
স্বাধীন বঙ্গে একদিন-
একটা দারুণ গল্প। যেখানে স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশ অত্যাচারিত হচ্ছিল। আগে পাকিস্তানিদের হাতে। এখন বাঙালীদের হাতে। বেশ সুন্দর একটা গল্প। আর এন্ডিংটা....
রেটিং- ৪.৫/৫
স্বাধীনতা আমি-
রাজাকার পন্থীর গল্প ছিল। যেখানে রাশেদ আর তার বন্ধু দেশপ্রেম হিসেবে যোগ দেয়।
এই থিমে হয়তো বাংলা লেখাই হয়নি। বেশ দারুণ সুন্দর এক স্টোরি। এটারও এন্ডিংটা দারুণ ছিল।
রেটিং- ৫/৫
যে রাতে কাক ডেকেছিল-
এই গল্পে একটা আলাদা অ্যাক্সপেকটেশন ছিল। আশাহত হই। ভালো লাগেনি। নাম যতটা সুন্দর লেগেছিল। গল্পটা অতটা সুন্দর ছিলো না।
রেটিং- ৩.৭৫/৫

যে রাতে কাক ডেকেছিল
কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশনী- ভূমি প্রকাশ
পৃষ্ঠা- ১৯১
মুদ্রিত মুল্য- ২৭০
প্রচ্ছদ- লর্ড জুলিয়ান
নামলিপি- সজল চৌধুরী
জনরা- মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প সংকলন/ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক থ্রিলার গল্প সংকলন।
গড় রেটিং- ৪.৩৭৫/৫
রেটিং-৪.২৫
Profile Image for Minhaz Efat.
23 reviews1 follower
February 2, 2021
যে রাতে কাক ডেকেছিলো কিশোর পাশা ইমন এর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংকলন। বইটিতে আছে একটি নভেলা ও ছোট বড় মিলে আরো ৫ টি গল্প। আগুনের দিন শেষ হয়নি, লাল মাটি, অ্যাসেট, স্বাধীন বঙ্গে একদিন, স্বাধীনতা আমি, যে রাতে কাক ডেকেছিলো- প্রতিটাই বিভিন্ন সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা তবে কল্পনাপ্রসূত।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
যে রাতে কাক ডেকেছিলো উৎসর্গ করা দেশের নয়জন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী সহ ১৯৭১-১৯৭২ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখা প্রত্যেককে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই নিয়ে এমনিতেই প্রচুর আগ্রহ তার উপর কেপির স্টোরিটেলিং ইতিহাস আর কল্পনা কে এত চমকপ্রদ ভাবে ব্লেন্ড করেছে পুরো বই পড়ার সময় একটু পরপর ই গুজবাম্প হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধ সময়কার বা তার আগে-পরের ঘটনা গুলো সব চোখের সামনে ভাসছিল। নতুন করে চিন্তার জগতে নাড়া দিচ্ছিল একেকটা গল্প। লেখক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন মাঠপর্যায়ে, সংগ্রহ করেছেন অনেক তথ্য, নিয়েছেন বেশকিছু সাক্ষাৎকার। রক্ত গরম করার জন্য আলাদাভাবে বাঙালি হওয়ার খুব একটা প্রয়োজন নেই। ২৫শে মার্চের বর্বরতার বর্ণনা শুনলে যেকোনো মানুষের রক্ত গরম হয়ে যাবে। এরকম ই রক্ত গরম করা কিছু কনভার্সেশন ছিল পুরো বই জুড়ে। নিজের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতার ঘোষনা,"অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার, দ্য সুপ্রিম কমান্ডার অব বাংলাদেশ, শেখ মুজিবুর রহমান ডু হেয়ারবাই প্রক্লেইম দি ইন্ডিপেন্ডেনস অব বাংলাদেশ"। দৃশ্যপট অনুভব করতে পারছিলাম। সাধারণ ভাবে লেখা হলেও বর্ণনা গুলো ছিল একদম নিখুঁত। যুদ্ধের প্রত্যেকটা দৃশ্য এমনভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে চোখের সামনে ভাসছিলো প্রত্যেকটা দৃশ্যপট। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের থ্রিল,সাসপেন্স নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই। কিছু কিছু জায়গায় হয়ত আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া যেত। এছাড়া ওভার অল দারুণ একটি বই। আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তবে গল্প, সিনেমা, উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনাগুলো থেকে আমরা কল্পনা করে নেই কেমন ছিল সেই সময়। অনুভব করার চেষ্টা করি বাংলাদেশের অস্তিত্বের শুরুর গল্পগুলো।

১. আগুনের দিন শেষ হয়নি
জহির রায়হানের সঙ্গে ঘুরে আসা যাক মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো থেকে। বড়োভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। এদিকে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র লেফটেন্যান্ট সেলিমের যাত্রাটাও কম রোমাঞ্চকর নয়! এক পর্যায়ে এসে এই দুই অকুতোভয় সূর্যসন্তানের পথ এক রেখায় মিলল। তারপর?
তারপর এলো ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২। স্বাধীন বাংলার মাটিতে বর্তমান মিরপুর ১২ ও পল্লবী এলাকার তুমুল যুদ্ধ!
লেখকের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসিকা “আগুনের দিন শেষ হয়নি” পাঠককে নিয়ে যাবে আমাদের জন্ম-ইতিহাসের গা শিওরানো এক গলিতে।

প্রতিক্রিয়াঃ
সম্ভবত ২০১৬ সালে কেপি এই উপন্যাসিকাটি বের করেছিলো বই আকারে। কিছুদিন পর বইটি আউট অব প্রিন্ট হয়ে যাওয়াতে অনেকেই সংগ্রহ করতে পারেনি।
জহির রায়হান এর অন্তর্ধান নিয়ে আছে নানা রহস্য একেকজন এর একেক মত, আজ পর্যন্ত যে রহস্যের উদঘাটন সম্ভব হয়নি, যা আমাদের জন্য লজ্জার। গল্পের ছলে কেপি যুক্তিযুক্ত ভাবে সেদিনের ঘটনার একটা ধারণা দাঁড় করিয়েছে যা আসলেই ভাবনার সৃষ্টি করে। সাথে উঠে এসেছে লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান এর বীরত্বের কাহিনী। কল্পনা আর ইতিহাসকে একসাথ করে দারুণ এক গল্প উপহার দিয়েছেন লেখক।

২. লালমাটি
বাচ্চাটা মাটি নিয়ে খেলছিল। ছােটো ছােটো হাতদুটো ধুলােতে মেখে একেবারে ধূসর হয়ে আছে। পায়ে পায়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে খেয়াল করেও ভ্রূক্ষেপই করে না ছেলেটা। শান্তভঙ্গিতে ছােট মাটির পাহাড়টার ওপরে আরেকটু মাটি জড়াে করল। দুইপায়ের ওপর ভর করে ওর পাশে বসে পড়লাম।
“পাহাড় বানাচ্ছাে?” কানের পাশে ফিস ফিস করে বললাম।আমার দিকে সামান্য তাকালাে এবার বাচ্চাটা, কিন্তু কিছু বলল না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে ওর খেলা দেখে উঠে দাঁড়ালাম। বয়সে কাঁচা বলেই হয়তাে শুধু ভাষা হারিয়েছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মাঝে সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রতিক্রিয়াঃ
লালমাটি গল্পটি কয়েকজন টগবগে তরুন,যুবক এর। গল্পের কথক একজন কমান্ডার, যিনি তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের একটি খন্ডচিত্র। কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় অল্পকিছু ছেলে থেকে আস্তে আস্তে রিক্রুট করে সংঘবদ্ধ হয়েছে মুক্তিবাহিনী। একজন কমান্ডার এর অবদান, গ্রুপের অন্য সদস্যদের কো অপারেশন, সব মিলিয়ে বেশ সাবলিল সুন্দর একটি গল্প লালমাটি।

৩. অ্যাসেট
বড়াে বড়াে দুই চোখে নিখাদ আতংক নিয়ে হুড়মুড় করে ক্যাম্পে ঢুকে পড়লাে ওরা তিনজন।
শফিক, রিজওয়ান আর তালহা।
সশব্দে হাঁফাচ্ছে। শরীরের জামা ঘামে একেবারে ভিজে আছে। পরনের লুঙ্গিতে রক্তের ছােপ ছােপ ছাপ। শুধুমাত্র তালহার হাতেই একটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল। বাকিরা অস্ত্র নিয়ে বের হয়েছিল আজ সকালে। এখন এসেছে সেগুলাে ছাড়াই। নির্ঘাত খুঁইয়ে এসেছে কোথাও।

প্রতিক্রিয়াঃ
মুক্তিযুদ্ধের সময় একেকজন যোদ্বা ছিল এই দেশের অমূল্য সম্পদ। সেসব কিছু যোদ্ধার অবদানের চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। এই গল্পের শেষটায় অনেক হাহাকার কাজ করেছিলো, এমনটাই হয়েছিলো তৎকালীন সময়ে। যুদ্ধের বর্ণনা বরাবরের মতই অসাধারণ। অনেক সুন্দর গল্প।

৪. স্বাধীন বঙ্গে একদিন
হাতে বন্দুক থাকলে সব এক, কী পাঞ্জাবি, কী মুক্তিযোদ্ধা।” চায়ের দোকানদার চাচা নতমুখে জানালেন হাসিবকে। সদ্যই ভারতের শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পা রেখেছে তরুণ বাঙালি। এসে দেখল অত্যাচার শেষ হয়নি। আগে করেছে পাঞ্জাবি। এখন করছে বাঙালি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছেই। স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধ মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি। এই অস্থির সময়েই একটা হিন্দু মেয়ের প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে গেল হাসিব।
‘স্বাধীন বঙ্গে একদিন’ গল্পটি পাঠককে ঘুরিয়ে আনবে ইতিহাস ও বাস্তবতার এক সাররিয়েল জগত থেকে।

প্রতিক্রিয়াঃ
স্বাধীনতার পর ও এদেশে চলেছিল বর্বরতা, ক্ষমতার অপব্যাবহার করে অনেকেই চালিয়েছে নির্যাতন। অন্য গল্পগুলো মুক্তিযুদ্ধ কালীন হলেও এই গল্পটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের। বেশ নাটকীয়তা ছিল গল্পে। এমন কিছু সাহসী বাঙালী তরুন ই অবদান রেখেছিল তখন।

৫. স্বাধীনতা আমি
ইপুয়েটের ছাত্র রাশেদ মনে প্রাণে পাকিস্তানের সমর্থক। ‘ভারতের দালাল’ হিন্দুগুলো যখন ঢাকায় যুদ্ধ লাগিয়ে দিলো, এক পাঞ্জাবি বন্ধুকে নিয়ে নিরাপত্তার খোঁজে গ্রামে পালিয়ে এলো সে। চাচাজান সাচ্চা ইমানদার, পাকিস্তান বলতে অজ্ঞান। শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান। মেধাবী রাশেদ যোগ দিলো রাজাকারবাহিনীতে। তার মতো ব্রাইট ছেলেরা পাকিস্তানের সেবা না করলে চলবে কেন? এরপরই ঘটতে শুরু করল নাটকীয় সব ঘটনা।
‘স্বাধীনতা আমি’ গল্পটিতে আপনারা দেখতে পাবেন অপরপক্ষের গল্পটা, বাঙালি হিসেবে যার চর্চা আমরা করি না সচরাচর। পাকিস্তানপন্থীদের গল্প।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
গল্পটিতে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি কে দেখানো হয়েছে অপোজিশনের চোখে৷ সচরাচর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবার এর গল্প দেখানো হলেও এখানে দেখানো হয়েছে এক পাকিস্তানপন্থী পরিবার কে। তুলে ধরা হয়ে তাদের চাওয়া পাওয়া, চিন্তা ধারা কে। বেশ ড্রামাটিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই গল্প।

৬. যে রাতে কাক ডেকেছিলো
বান্ধবীর সাথে খালি বাসায় প্রেম করা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সালের আর কোনো দুরভিসন্ধী ছিল না সেদিন। তারপর উর্দু কবি আহমদ ইলিয়াস থেকে শুরু করে হেলাল হাফিজ ভাই, ঢাকা মেডিকেলের গেটে রাতের খাবার খাওয়া কিংবা তাস পেটানো, এই তো জীবন! কিন্তু দিনটির তারিখটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। দিনটি ছিল ২৫ মার্চ, ১৯৭১। সন্ধ্যা ঘনিয়ে নেমে এলো রাত। ঢাকার ইতিহাসে একমাত্র রাত, যে রাতে কাক ডেকেছিল।
‘যে রাতে কাক ডেকেছিল’ গল্পটি এমন এক চোখ থেকে ২৫ মার্চের রাতকে দেখা, যেভাবে সচরাচর আমরা দেখে অভ্যস্ত নই। গল্পটির প্রায় প্রতিটি বাক্যেই অন্তর্নিহিত আছে তৎকালীন সময়, যদিও খালি চোখে মনে হবে এ যেন আমাদের এই ২০২০-এর আরেকটি দিন। প্রথম পাঠের পর পাঠক চাইলে গুগল ও ইতিহাসের বই নিয়ে পরে আবারও পূণর্পাঠ করতে পারেন এই গল্পটিকে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
আসলেই আমরা সচরাচর ২৫শে মার্চের এরকম গল্প পড়ে অভ্যস্ত না। এই গল্পে ২৫শে মার্চ রাতের একটা অংশকে তুলে ধরা হয়েছে অন্য চোখে। খুব সাধারণ কিছু কথোপকথন কিন্ত তাও গল্পটি অনেক অর্থবহ,তথ্যবহুল। এই গল্পটি নিয়ে বিস্তারিত একটি বই দরকার।

কেপির দুর্ধর্ষ থট প্রসেস এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন আরো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পের আশা করছি।
Profile Image for Saiqat .
60 reviews1 follower
July 17, 2021
দুর্ধর্ষ রকমের দুর্দান্ত!

মুক্তিযুদ্ধের সংকলন কিংবা গল্পাতীত যে-কোন গল্পই আমাদের কাছে শিউরণের যোগান! এই বইটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সংকলন তবে লেখকের ভিন্নভাবে লেখার ভঙিমা এনে দিয়েছে একরাশ মুগ্ধতা তেমনি ঘা শিউরানো ঘৃণা আর ক্ষোভ!

লেখকের ভিন্নমাত্রা কলমের চালানের কারণে বইটিতে শব্দগুলো যেনো চিত্র হয়ে ফুটে এসেছে!
কল্পানুমান আর বাস্তব সত্যকে ঘিরে লেখক লিখে গিয়েছেন, পাঠক হিসাবে তা ভেবে গিয়েছি রোমাঞ্চিত হবার সঙে সঙে অনেক তথ্য-ও পেলাম!


দুর্দান্ত হইছে!
ভালো লেগেছে!
Profile Image for Tarik Mahtab.
167 reviews3 followers
May 8, 2021
4.25/5
লাল মাটি আর অ্যাসেট ছাড়া সবগুলোই দারুণ।
Profile Image for Rehnuma.
430 reviews22 followers
Read
March 21, 2023
❛....𝙤𝙣 𝙗𝙚𝙝𝙖𝙡𝙛 𝙤𝙛 𝙤𝙪𝙧 𝙜𝙧𝙚𝙖𝙩 𝙣𝙖𝙩𝙞𝙤𝙣𝙖𝙡 𝙡𝙚𝙖𝙙𝙚𝙧, 𝙩𝙝𝙚 𝙨𝙪𝙥𝙧𝙚𝙢𝙚 𝙘𝙤𝙢𝙢𝙖𝙣𝙙𝙚𝙧 𝙤𝙛 𝘽𝙖𝙣𝙜𝙡𝙖𝙙𝙚𝙨𝙝, 𝙎𝙝𝙚𝙞𝙠𝙝 𝙈𝙪𝙟𝙞𝙗𝙪𝙧 𝙍𝙖𝙝𝙢𝙖𝙣 𝙙𝙤 𝙝𝙚𝙧𝙚𝙗𝙮 𝙥𝙧𝙤𝙘𝙡𝙖𝙞𝙢 𝙩𝙝𝙚 𝙄𝙣𝙙𝙚𝙥𝙚𝙣𝙙𝙚𝙣𝙘𝙚 𝙤𝙛 𝘽𝙖𝙣𝙜𝙡𝙖𝙙𝙚𝙨𝙝....❜
ঠিক এই ঘোষণাটির আগে পূর্ব পাকিস্তান নামক ভূখণ্ডটি প্রত্যক্ষ করেছিল নারকীয় এক হ ত্যাযজ্ঞ। ঘোষণাটির মাধ্যমে নি র্যাতিত আর র ক্ত খুঁইয়ে দেয়া পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসেবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার এক সূচনা করলো।
সেলিম মোঃ কামরুল হাসান এবং জহির রায়হান, ৭১ এর উত্তাল সময়ের দুই ভিন্ন নির্ভীক যো দ্ধা। একজন অংশ নিয়েছেন সম্মুখ সমরে, আরেকজন অংশ নিয়েছেন পরোক্ষভাবে। দেশের বাইরে থেকে প্রমাণ জোগাড় করেছেন সরষের মধ্যে থাকা ভূতেদের বিরুদ্ধে।
১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে নির্মাতা সাংবাদিক জানতে পারলেন ১৪ই ডিসেম্বরের ঘটনা। এও জানতে পারলেন একইসাথে নিখোঁজ তার প্রাণপ্রিয় সহোদর শহীদুল্লাহ কায়সার। ভাইকে খুঁজে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেলেন তিনি। বুদ্ধিজীবী হ ত্যার পিছে শুধু পাক বাহিনী ছাড়াও আর কাদের লাভ আছে সে বিষয়ে তদন্ত করতে নিজ উদ্যোগে তদন্ত কমিটি খুলেছিলেন। যু দ্ধের পুরোটা সময় কলকাতায় অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘা তকদের মুখোশ খুলতে প্রমাণ জোগাড় করেছিলেন তিনি। এবার সেসব প্রকাশের পালা। দেশটা পরদেশী শ ত্রুমুক্ত হলেও পুরোপুরি কি শ ত্রুমুক্ত হয়েছিল?
সেলিম প্রত্যক্ষ যু দ্ধের ভয়াবহতা দেখেছেন। দেখেছেন সহযো দ্ধাদের চোখের নিমিষে হারিয়ে যেতে। সতর্কতা আর নিজস্ব গুণে যু দ্ধে গাজী হয়ে ফিরেছেন তিনি। তবে দেশটা স্বাধীন হলেও অনেক প্রশ্ন কুড়ে খাচ্ছে তাকে। ১৪ই ডিসেম্বরের ঘটনা কি শুধুই দেশকে বুদ্ধিহীন করে দেয়ার জন্য পাকিদের একটা চাল, না এর শিকড় আরো গভীরে? এই নিয়ে তদন্ত করছেন তিনি।
আপাতদৃষ্টিতে জহির এবং সেলিমের মধ্যে কোনো যোগ না থাকলেও তারা মিলেছেন এই একটা কাজে। দুজনেই ১৪ই ডিসেম্বরের ঘটনার পিছনের আসল ঘটনা জানতে বদ্ধ পরিকর। একজন সরকারিভাবে, আরেকজন নিজ উদ্যোগে।
ভাইকে খুঁজে পেতে কী না করেছেন জহির! সাথে মুজিববাহিনীর ভেতরে থাকা সুখের মৌমাছিদের মুখোশ উন্মোচনের কাজও অনেকটাই গুছিয়ে এনেছেন। আসছে ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৭২ প্রকাশ হবে তার বই।
ঠিক একইদিনে বঙ্গভবনে সেলিম জরুরি ফোন পেলেন মিরপুর ১২-তে রেই ড দেয়ার। ওদিকে জহির ফোন পেলেন একই স্থানে শহীদুল্লাহ কায়সারের অবস্থান নিয়ে। ভাইকে ফিরে পেতে তাই ছুট দিলেন। হয়তো কোথাও রান্না হচ্ছে বিশাল কোনো ষ ড়যন্ত্রের।
এরপর কী হলো? সত্যটা জানা সবারই। ৩০ তারিখে ববিতা, সুচন্দার অপেক্ষা আর শেষ হলো না। পান্নার ফিরে পাওয়া হলোনা স্বামী আর দেবরকে। হারিয়ে গেলেন জহির, হারিয়ে গেলেন সেলিম। সাথে উধাও হয়ে গেল কিছু দলিল দস্তাবেজ। চাপা পরে গেলো সত্য।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❛আগুনের দিন শেষ হয়নি❜- এটি লেখকের প্রথম লেখা উপন্যাসিকা। রুয়েটিয়ান এই লেখক শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আরেক রুয়েটিয়ান মুক্তিযো দ্ধা সেলিমকে। সাথে তুলে এনে��েন ইতিহাসের গভীরে চাপা পড়া জহির রায়হানের অন্তর্ধানকে। জহির রায়হান আমার খুব প্রিয় লেখক এবং চলচ্চিত্রকার হওয়ায় এই গল্পটা নিয়ে আশা এবং আগ্রহ দুই-ই বেশি ছিল।
উপন্যাসিকার মূল প্রেক্ষাপট জহির রায়হানের অন্তর্ধান। লেখক অনেক রিসার্চ করে, অনেক তথ্য যাচাই করে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ঘটনাগুলোকে নিয়েই কল্পনার মিশেলে লিখেছেন লেখাটি। জহির রায়হানের পাশাপাশি গল্প এগিয়েছে সেলিম মোঃ কামরুল হাসানকে নিয়েও। তরুণ এই যো দ্ধার মনোবল, দৃঢ়তা আর সাহসিকতার অনন্য এক চিত্র এঁকেছেন লেখক।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশটা কতটা স্বাধীন, কতটা নিরপেক্ষ তাই লেখক শেষে আক্ষেপ করে গেছেন। জহির কিংবা সেলিমের হ ত্যাকারীরা স্বাধীন দেশে খোলা হাওয়ায় বিচরণ করে বেড়ায় কিন্তু সত্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে এসে জহির বা সেলিমেরা অতলে হারিয়ে যায়।
সব পাখি ঘরে আসে—
সব নদী—ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
গল্পটা শেষ করে বারবার এই লাইনটাই কেন জানি মনে পড়ছিল। ২৫শে মার্চের ভয়াল রাতের পরেও বাংলাদেশ পরবর্তী ৯ টা মাস কতো কঠিন সময় পার করেছে, কোনরকম একটা ট্রেনিং নিয়ে লড়েছে তখনকার পৃথিবীর এক নাম্বার সেনাবাহিনীর সাথে, হারিয়েছে তাদের, ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য- এই ঘটনাগুলো গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে কিছু বাস্তব আর কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে।
❛আগুনের দিন শেষ হয়নি❜ কে এক বাক্যে অসাধারণ হিসেবেই আখ্যা দেয়া যায়। ঘটনার পিছনেও ঘটনা থাকে, রহস্য থাকে। আর কিছু রহস্য মিথের মতো নানাভাবে চর্চা হতে থাকে। এই লেখাটিও তেমন রহস্যগুলোর মাঝে একটা রহস্যের আদলে গল্প। উপন্যাসিকার সত্যতা যাচাই বিজ্ঞ মহল আরো ভালো করতে পারবেন। তবে ইতিহাসের আশ্রয়ে লেখা ফিকশন হিসেবে আমার মতে লেখকের অন্যান্য লেখা এটি। এই উপন্যাসিকা নিয়ে অনায়েসেই একটা শর্টফিল্ম তৈরি করা যায়। হলে বরং খুশিই হবো।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন - এই প্রবাদের সমার্থক ই মনে হয়েছে আগুনের দিন শেষ হয়নি কে।
না, রিভিউ শেষ হয়নি এখনো। মোটে শুরু হলো। বিশাল লেখার জন্য দুঃখিত।
মুক্তিযু দ্ধের গল্প সংকলন। নামটা শুনলেই আলাদাভাবে একটা আবেগ কাজ করে। সংকলন পড়ে তার রিভিউ লেখায় খুব একটা স্বস্তি অনুভব না করলেও এই বইটা নিয়ে কিছু না লেখা ন্যায্য হবেনা।
গল্প সংকলনে স্থান পেয়েছে ছয়টি গল্প। প্রথম গল্প ❛আগুনের দিন শেষ হয়নি❜। বলাই বাহুল্য আমার সবথেকে পছন্দ হয়েছে প্রথমটি। বিধায় এটা নিয়ে শুরুতেই মনের ভাব প্রকাশ করে ফেলেছি। বাকি পাঁচটা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছি।
**লাল মাটি
দলবেধে যু দ্ধ করা ৭৩ জনের দলটা এক যু দ্ধেই ২৫ এ নেমে এলো। পাক বাহিনির অগণিত সৈন্য আর অস্ত্রের বিপরীতে বাঙালীর অবস্থান নড়বড়ে। তবুও বীরদর্পে লড়ে যাচ্ছে কমান্ডারের বাহিনি। সঙ্গী হারানোর বেদনাকে পাশে রেখে দেশকে স্বাধীনতার সূর্য উপহার দেওয়ার আশায় জীবনের পরোয়া না করে লড়ছে তারা। পরবর্তী অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশ্রয় নিয়েছে ফাতিমা বানুর বাসায়। মুক্তি বাহিনির র ক্তে লাল হচ্ছে বাংলার নরম মাটি। দেশকে মুক্ত করতে জীবনের ১০ বসন্ত পার না করা বাচ্চাও বুক পেতে দিচ্ছে। শহীদের র ক্তে লাল হওয়া মাটি কি পাকিস্তানীদের প্রাপ্য?
জামশেদ তাই বলে,
❛বে জন্মাগুলো এই লাল মাটি ডিজার্ভ করে না।❜
কমান্ডারের জবানীতে বর্ণনা করা এই গল্প মুক্তিযু দ্ধের এক খন্ডচিত্র দেখিয়েছেন। পাশাপাশি সমরে থাকা সহযো দ্ধা মুহুর্তেই যখন পাক বাহিনির গু লিতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তখন শোক করা থেকে সম্মুখ আক্রমণ ঠেকানো, ফাইটব্যাক করাটাই মূল লক্ষ্য থাকে। এমনটাই হয়েছিল সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে যু দ্ধক্ষেত্র গুলোতে।
গল্পটা শেষ করে শুন্য এক অনুভূতি হয়েছে। রাতের যু দ্ধক্ষেত্রের শেষটুক পড়ে শুধু হতবাকই হয়েছি।
**অ্যাসেট
❛বাংলাদেশ এখনও জন্মেনি। জনতারা যদি ক্যাপিটাল হয়ে থাকে, মুক্তিবাহিনী অবশ্যই অ্যাসেট❜।
শুরুটা আর দশটা মুক্তিযু দ্ধের গল্পের মতোই। তবে শেষে গিয়ে যেন সাধারণ গল্প থেকে পুরো অর্থই পালটে গেলো।
বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে বলিদান দেয়ার অনন্য এক নিদর্শন ❛অ্যাসেট❜ গল্পটি।
**স্বাধীন বঙ্গে একদিন
❛সময়টা বক্সিংয়ের না। এইখানে চলে বুলে ট। বু লেট❜।
এমন একটা কথা বঙ্গ স্বাধীন হবার পরপরই শুনতে হলে কেমন অনুভূতি হতে পারে?
অদ্ভুত অনুভব-ই হয়েছিল শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে আসা হাসিবের। পাক বাহিনির লালসার শিকার হওয়া ❛আকুতি❜ বয়ে বেড়াচ্ছে লালসার ফল। পাক বাহিনি থেকে জান ছুটলেও দেশীয় কীটদের থেকে বাঁচার উপায় জানা নেই আকুতির। তাকেই বাঁচাতে হাসিব নিজেকে সামনে আনে। হাসিবের রহস্য কী?
ছোটো একটা গল্পে বিজয় অর্জনের পরে বাংলাদেশের অবস্থার একটা চিত্র দেখিয়েছেন। শেষ পর্যায়ে ছোট্ট কিন্তু দারুণ একটা টুইস্ট দিয়েছেন লেখক।
**স্বাধীন আমি
রাশেদ মনেপ্রাণে পাক সমর্থক। ভারতের দালালদের কর্মকান্ডে বিরক্ত সে। ইপুয়েটের (বুয়েট) ছাত্র রাশেদ তাই গ্রামে আসে ঈমানদার চাচার বাড়িতে। সাচ্চা ঈমানদার চাচা সালাউদ্দিন শান্তি কমিটির হয়ে কাজ করে। একেই দেশপ্রেম মনে করে সে। রাশেদও তাই। দেশপ্রেমের আবেগে উদ্বুদ্ধ রাশেদ তাই নিজেও শান্তি কমিটিতে নাম লেখায়। এরপর-ই বদলে যায় ঘটনাচিত্র। ঘটে অস্বাভাবিক সব ঘটনা।
এই গল্পটাও লেখকের লেখার নৈপুণ্যতায় অনন্য এক মাত্রা পেয়েছে। একটু অবিশ্বাস্য হলেও পড়তে খারাপ লাগেনি। তবে বইয়ের বাকি গল্প থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল লেগেছে আমার কাছে।
**যে রাতে কাক ডেকেছিল
৭০ এর নির্বাচন জেতার পর থেকেই তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতিতে আগ্রহ না থাকা মানুষটাও রাজনীতির আলাপ জুড়ে দিচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করছে।
এত কিছুতেও রাজনীতি আলাপে মন না আসা ফয়সাল আছে অন্য সুখে। বান্ধবীর সাথে অভিসারের খুশিতে আছে সে। তবে বান্ধিবী অ্যালিনও রাজিনীতি নিয়ে বেশ ধারনা রাখে। ৭১ এর মার্চের সময়টা রাজনীতি থেকেও বেশি কিছু।
২৫শে মার্চ বাঙালীর জীবনে এমনই রাত, যে রাতের ভয়াবহতায় কাক ডেকে উঠেছিল। রাতের খাবার শেষ করতে না করতেই অল্প অল্প করে আসা শব্দ হঠাৎ-ই ট্যাংকের শব্দের মতো হয়ে যাওয়ায় যারপরনাই অবাক হয়েছিল সে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় অসাড় হয়ে গেছিল সে। তাইতো উর্দু কবি ইলিয়াসও পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে শায়েরি রচনা করেছেন। নিজ ভাষার লোকেদের পরোয়া না করে সত্য বলা থেকে পিছপা হননি। লিখেছেন,
আমি জানি, আমি জানি
প্রদীপ নিভেছে যে ঘরে
সূর্য সেখানে উঠবেই
সূর্য উঠেছিল। তবে দীর্ঘ সময় পরেও ভয়াবহতা ভুলেনি কেউ। ❛যে রাতে কাক ডেকেছিল❜ গল্পটি সেই ভয়াল রাত নিয়ে লেখা। কালরাত্রির পুর্বে ঢাবির ছাত্রদের অবস্থান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মনোভাব দেখিয়েছেন লেখক। সাথে কবি আহমদ ইলিয়াসের বাংলাকে সমর্থন, রবীন্দ্রসঙ্গীত বন্ধ দাবী করায় তার বিপরীত অবস্থানের কথা চিত্রিত করেছেন। পড়তে ভালো লেগেছে। তবে মনে হয়েছে শেষটা একটু দুর্বল হয়ে গেছে। রাজনীতি নিয়ে মাথাব্যাথা না থাকা ছেলেটা হুট করে এই পরিস্থিতিএ পরলে হয়তো এমন অসাড় হয়েই পড়তো তাই দেখিয়েছেন। তবুও শেষে এসে মনে হয়েছে এর পরিধি আরেকটু বাড়লে মন্দ হতো না।
কেপি ইমনের লেখা আগে কোন বই পড়া হয়নি আমার। এটাই পড়া আমার প্রথম বই লেখকের। সংগ্রহে বইটা থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনি। এই বইটা পড়ে মনে হয়েছে লেখকের লেখা আরো আগেই পড়া উচিত ছিল। মুক্তিযু দ্ধের প্রেক্ষাপট বলেই কি না লেখা এতো দারুণ লেখনী জানা নেই।
প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন:
বইয়ের প্রচ্ছদটা মোটামুটি লেগেছে। ❛আগুনের দিন শেষ হয়নি❜ এর শুরুতে অল্প যেটুক কভার আকারে ছিল সেটা বরং একটু বেশি ভালো লেগেছে।
বইয়ের বাঁধাই বেশ উন্নত। তবে ভূমির বইয়ের পেইজ আমার কাছে অন্যান্য বই থেকে একটু পাতলা মনে হয়। এক পেইজের লেখা আরেক পেইজে দৃশ্যমান হয়ে থাকে।
যাদের বুকের তাজা র ক্ত দিয়ে কেনা এই স্বাধীনতা তাদের মূল্য কি আমরা দিতে পেরেছি? দেশটা কি আসলেই স্বাধীন?
Profile Image for Deepta Sen.
76 reviews1 follower
January 24, 2022
কেপির কোন বই পড়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের বিশেষত এই বইটাই। তবে বই যখন হাতে এলো ব্যস্ততার ডামাডোল। তবে ব্যস্ততার ফাঁকে বইয়ের মূল আকর্ষণ উপন্যাসিকা "আগুনের দিন শেষ হয় নি" শেষ করার অপেক্ষা প্রলম্বিত করি নি। বইটিতে একটি উপন্যাসিকা সাথে পাঁচটা গল্প থাকলেও মূল আকর্ষণ উপন্যাসিকাটিই।

"আগুনের দিন শেষ হয় নি" উপন্যাসিকাটি জহির রায়হানকে নিয়ে এমন একটা কথা অনেকখানেই পড়েছি। তবে কথাটার মধ্যে বেশ একটু ভুল আছে। এই উপন্যাসিকার দুজন প্রাণ পুরুষ, একজন জহির রায়হান অন্যজন সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান, বীরপ্রতীক। এছাড়া মূল গল্পের লেখনীকে এগিয়ে নেওয়ার ও বাস্তবসম্মত করার জন্য এসেছে বেশকিছু অপ্রধান ঐতিহাসিক ও কাল্পনিক চরিত্র। কাল্পনিক চরিত্রগুলো সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য উপন্যাসের আগে লেখা রয়েছে।

লেখার শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীর ওপর, মুখ্য চরিত্রে সেলিম কামরুল হাসান। শুরুর দিকে দুটো আলাদা গল্প। একটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মেঘনা নদী পারাপার করা পাকিস্তানী বাহিনীকে আটকাতে তৎপর মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষের। অন্যটি জহির রায়হানকে ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে আওয়ামী লীগে বেশ কটা ফ্রন্টে বিভক্ত হয়। এরমধ্যে মোশতাকপন্থী অংশটি ছিল পাকিস্তান ঘেঁষা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত এই ফ্রন্টটির ভেতরের খবর বের করবার প্রচেষ্টায় ছিলেন জহির রায়হান। দেশ স্বাধীন হলে দেখা যায় ১০-১৪ ডিসেম্বর দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের বিশাল একটা অংশ শিকার হয় গণহত্যার৷ চলে বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত। এই তদন্তই এক করে দুই অঙ্গনের দুজন মানুষকে, নিয়ে যায় একই পরিণতিতে। ৩০/১/১৯৭২ এ দেশের শেষ দখলীকৃত ভূখন্ড মিরপুর এ চলে অন্য এক ষড়যন্ত্রের খেলা।

পাঠপ্রতিক্রিয়ার দেওয়ার আগে আরো একটি ছোট তথ্য জুড়ে দেওয়ার দায় অনুভব করছি। ১৯৯৯ পর্যন্ত মোটামুটি চেপে রেখার চেষ্টা করে হয়েছিল মিরপুরের সে ঘটনার প্রকৃত ইতিহাস চেপে রাখা হয়েছিল। ১৯৯৯ এ নিকটবর্তী নূরী মসজিদ সংস্কারের সময় বের হয়ে আসা গণকবর ও ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জনাব আমির হোসেন, নিহত সেলিম কামরুল হাসানের ছোট ভাই ডঃ এম.এ হাসান আরো কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় কিছুটা আলো পড়ে চেপে রাখা অন্ধকারে। বাকিটা এখনো ঢাকা আলো-আঁধারির রহস্যের মধ্যে।

অনেকদিন পর কোন সমসাময়িক লেখকের লেখা আমার মনে ধরেছে। মোটামুটি তিনটি কারণ বলছি। প্রথমত মুক্তিযুদ্ধ সময়কার কিছু অপ্রিয় ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে (ঘটনাগুলোর সত্যতার জন্য মূলধারা ৭১ এ চোখ দিতে পারেন)। দ্বিতীয়ত লেখক অনেক জায়গা থেকে তথ্য এনেছেন কিন্তু কপি-পেস্ট করেন নি। লেখায় নিজস্বতা বজায় রেখেছেন। শেষত লেখক উপন্যাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে জুড়েছেন, এক সুতোতে গেঁথেছেন।

এবার আসি খারাপ লাগায়। বেশ কিছু বানান(স্বাক্ষর) ও যতিচিহ্ন এ ভুল আছে, যা ভুমিপ্রকাশের বইয়ে কমই দেখা যায় সাধারণত। বেশ কিছু চলতি শব্দের ব্যবহার ছিল, (যেমনঃ পিনিক) চাইলেই এড়ানো যেতো। যুদ্ধের মুহুর্তগুলো যতটা জীবন্ত লেগেছে অন্য মুহুর্তগুলো তার তুলনায় একটু কম মনে হয়েছে।

পাঁচটি গল্পের একটা যুদ্ধ পূর্ববর্তী, একটা পরবর্তী আর বাকি তিনটে যুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে লেখা। মোটামুটি চারটি গল্পেই যুদ্ধকালীন সংকটে প্রেমের টানাপোড়েন এর কথা এসেছে৷ যদিও প্রতিটা গল্পে যুদ্ধকে ব্যবহার করে আলাদা আলাদা চমক আনার চেষ্টা করা হয়েছে তবে বারবার একইরকম টপিক অনেকের বিরক্ত লাগতেই পারে। গল্পগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা আমি আমার দৃষ্টি সবচেয়ে ভালো আর নামগল্প যে রাতে কাক ডেকেছিল আমার কাছে পুরো বইয়ের সবচাইতে কম আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।
শেষকথায় বলতে চাই এমন কাজ আরো হওয়া উচিত, পাঠকের এধরণের লেখাকে উৎসাহিত করা উচিত

লেখক: কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশনা: ভূমিপ্রকাশ
প্রকাশকাল: ডিসেম্বর, ২০২০
Profile Image for বিনিয়ামীন পিয়াস.
Author 11 books31 followers
March 16, 2023
জহির রায়হানের প্রতি যে আমার একটা দূর্বলতা আছে সেটা আমি শুরুতেই স্বীকার করে নিচ্ছি। "হাজার বছর ধরে," "আরেক ফাল্গুনের" মতো উপন্যাসের রচয়িতা কিনা আটাত্তরের (১৩৭৮ বঙ্গাব্দ) ফাল্গুন না দেখেই হারিয়ে গেলেন! এই ব্যাপারটা কেন যেন আমি কখনো মেনে নিতে পারিনি। আমাদের ক্লাসের বইগুলোতে লেখক পরিচয়ের জায়গায়ও খুব বেশি কিছু লেখা ছিল না। তাই জানতে পারিনি, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী একজন লেখক কীভাবে নিজের ভাইকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার মাটিতেই!

কিশোর পাশা ইমনের "যে রাতে কাক ডেকেছিল" বইটিতে মোট পাঁচটি গল্প ও একটি উপন্যাসিকা রয়েছে। যদিও আমার মতো অনেক পাঠকের কাছেই বইটির মূল আকর্ষণ "আগুনের দিন শেষ হয়নি" নামক উপন্যাসিকাটি। কারণ এখানেই উঠে এসেছে বাহাত্তরে জহির রায়হানের হারিয়ে যাওয়ার পেছনের সম্ভাব্য গল্পটি।
লেখক সম্ভবত পাঠকের ইচ্ছেটা সম্পর্কে অবগতই ছিলেন, তাই বইয়ের একদম শুরুতেই ছিল এই উপন্যাসিকাটি।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় যুদ্ধের ডামাডোল দিয়ে গল্পের শুরু। যেখানে আমরা সফরসঙ্গী হিসেবে পাই সেলিম মোঃ কামরুল হাসানকে। অসম সাহসী এই মুক্তিযোদ্ধার গল্পের সমান্তরালে চলতে থাকে যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব পাকিস্থানে ও ভারতে জহির রায়হানের অভিযানের গল্প। তিনি সাহিত্যিক মানুষ, সিনেমাও তৈরি করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়ার চেয়ে বরং যুদ্ধের ভয়াবহতাটা বহির্বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরো একটা মিশনে তিনি নেমেছিলেন! দেশের মানুষ যখন নিজের সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে যুদ্ধে নেমেছে কিংবা কেউ কেউ হয়তো ঘর ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছে শরনার্থী শিবিরে, ঠিক সেসময় কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ ব্যস্ত ছিল নিজেদের আখের গোছাতে। শরনার্থী শিবিরে যখন ক্ষুধার কান্না, যুদ্ধের ময়দানে এক ফোটা পানির তৃষ্ণা নিয়ে ছটফট করে মা*রা যাচ্ছে কোনো এক যুবক, তখন সেইসব রাজনীতিবিদরা ব্যস্ত ছিলেন দুর্নীতি লব্ধ অর্থ নিয়ে নিজেদের আয়েশ মেটাতে। জহির রায়হান সেইসব রাজনীতিবিদদের পেছনে লেগেছিলেন, তাদের সমস্ত কুকীর্তির আমলনামা সংগ্রহ করতে।
উপন্যাসিকাটিতে দুজন নায়ককে সমান্তরালে রেখে গল্প এগোতে থাকে। জহির রায়হানকে তো আমরা চিনি। সেলিম নামের অপর এই সম্মুখ যোদ্ধাটি কে? তার সাথে জহির রায়হানের সম্পর্কই বা কী! সেটা অবশ্য আমরা পরে জানতে পারব।
জহির রায়হানকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা গল্পটুকুতে যেমন আমরা মুক্তিযুদ্ধের পেছনের গলিপথে হাটতে থাকি, তেমনি সেলিমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত গল্পে আমরা দেখতে পাই সম্মুখ যুদ্ধ, খুব কাছ থেকে।
যুদ্ধের অসংখ্য গল্প তো নিশ্চয়ই আমাদের সবারই পড়া। প��রায় স��� গল্পেই মুক্তিযোদ্ধাদের হিরো দেখাতে গিয়ে অনেক সময় তারা যে মানুষ ছিলেন সেটাই ভুলে গিয়েছিল অনেকে। আর এটাতে বরং সেইসব যোদ্ধাদের অবদানকে খানিকটা খাটো করা হয়েছে। একটা যুদ্ধ, শুধু অস্ত্র আর গোলাবারুদের ঝনঝনানি নয়। গণমানুষের ভাবনা, তাদের আদর্শ, সাহসিকতা-ভীরুতা, ভয় কিংবা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর পাগলের মতো ঝাপিয়ে পড়া এসব কিছুই যুদ্ধ, যুদ্ধের উপাদান। কিশোর পাশা ইমন চেষ্টা করেছেন সেই যুদ্ধটাকেই ক্যাপচার করতে। মুক্তিযোদ্ধাদের খুব কাছ থেকে দেখিয়েছেন সেলিমের সাথে যুদ্ধ করতে করতে!
এই অংশগুলো ছিল মূলত আমাদের মূল যে গল্পটিতে আগ্রহ, সেখানে প্রবেশের আগে চরিত্রসমূহের ব্যাকগাউন্ড জানানোর জন্যই। যুদ্ধ শেষে জহির রায়হানের হাতে যখন দুর্নীতিবাজ সব নেতাদের আমলনামা তৈরি হয়ে গিয়েছে, তখনই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সারকে হারানোর সংবাদে। নিজ উদ্যোগে 'বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি' গঠন করেন তিনি, যা ছিল বেসরকারি পদক্ষেপ।
একই সাথে সরকারীভাবেও বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসানের ওপর।
আর এখানেই আমাদের দুই নায়কের গল্পের যোগসূত্র।
যদিও আমরা সবাই জানি, তাদের পরিণতি কী হয়েছিল, তবুও আমি পরের গল্পটুকু আর উন্মুক্ত করলাম না। আশা করি আগ্রহ পাঠকেরা বইটি পড়ে গল্পটার সমাপ্তি জেনে নিবেন।

এই উপন্যাসিকাটিতে দেয়া তথ্যগুলো লেখক বিভিন্ন মাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে যাচাই করে নিয়েছেন। যদিও জহির রায়হানের অন্তর্ধান নিয়ে অনেকগুলো গল্প রয়েছে, তবে তিনি সবচেয়ে যৌক্তিক গল্পটিকেই বাছাই করেছেন আর তার পক্ষের তথ্যগুলো দিয়েই উপন্যাসিকাটি সাজিয়েছেন। এই উপন্যাসিকাটিতে শুধু যে জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ব্যাপারটিই সামনে এসেছে তা নয়, বরং বুদ্ধিজীবী হ*ত্যার এক নতুন প্রেক্ষাপটও সামনে এসেছে। এই হ*ত্যাযজ্ঞটি কি শুধুই পাকিস্থানিরা নিজেদের সুবিধার্থে করেছিল? নাকি এদেশীয় কারোর স্বার্থও এতে জড়িত ছিল? সেই রহস্য যদিও এখনো আমাদের কাছে রহস্য আর হতাশা হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।
এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া জহির রায়হানকে আমরা সবাই চিনি। কিন্তু উপন্যাসিকাটি পড়ে পরিচিত হয়েছি আরেক অসম সাহসী বীর যোদ্ধা সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সাথে। এজন্য লেখক কেপিকে অনেক ধন্যবাদ।

বইয়ের বাকি পাঁচটা গল্পকে লেখকের পক্ষ থেকে বোনাসই বলা চলে। যেমনটা উপরেই বলেছি, লেখক চেয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাতে, তারাও যে রক্ত মাংসের মানুষ ছিল, আবেগ-অনুভূতি কিংবা ভুল-ত্রুটি যে তাদেরও ছিল এগুলো গল্পে ফোটাতে চেয়েছেন। আর তাছাড়া কেপির লেখার সবচেয়ে চমৎকার যে দিক সেটা হচ্ছে, তার দর্শন।

বইটা অনেকদিন আগে পড়েছি বিধায় সবগুলো গল্পের খুটিনাটি এই মুহুর্তে মাথায় নেই। "লাল মাটি" গল্পটা শেষ করে হয়তো মনে হবে, 'এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার' প্রবাদের স্বার্থকতা!
'অ্যাসেট' একটা সাধারণ যুদ্ধের গল্প হলেও হতে পারত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গল্পটাও হয়ে গেল অসাধারণ! এটাই হয়তো যুদ্ধ, যেখানে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ভেতরে নিয়ে নিতে হয় জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সিদ্ধান্তটি! একাত্তরের সেই কঠিন সময়ে জনগণ যেখানে ছিল 'ক্যাপিটাল' আর মুক্তিযোদ্ধারা 'অ্যাসেট' সেখানে কিছু কিছু ক্যাপিটালকে বলি দেয়ার সিদ্ধান্তটাও পরবর্তীতে হয়তো সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খেয়েছে কাউকে!
'স্বাধীন বঙ্গে একদিন' অন অব দ্য বেস্ট গল্প। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে দেশ কিন্তু সাথে সাথেই স্টেবল হয়ে যায়নি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তারা সবাই যে একই আদর্শের বা ভাবনার ছিল তাও কিন্তু নয়। যুদ্ধ শেষে এটাই পার্থক্য গড়ে দেয়। হাতে অস্ত্র থাকার সুবাদে অনেকেই হয়ে যায় সন্ত্রাসী, অথচ তারাই দীর্ঘ নয় মাস লড়েছিল পাকিস্থানী সন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে! সাধারণ জনগণ বিপাকে পড়ে যায়। ভালো যারা ছিল, সত্যিকার অর্থেই দেশের কল্যাণের জন্য ভাবত, তাদেরও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়ে যায় জনগণের। এই ব্যাপারগুলোই চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে কেপির লেখা 'স্বাধীন বঙ্গে একদিন' গল্পটিতে।
'স্বাধীনতা আমি' গল্পটার একটা ডায়লগ আমার মাথার মধ্যে আজীবনের জন্য গেঁথে রয়েছে।
"রাশেদ ভাই, আপনি হিন্দু মা*গীকে চো*দ*বেন না?"
অনেকেই ভাবতে পারেন বইতে এত এত ডায়লগ বা বর্ণনা থাকতে এমন একটা লাইনকে কেন স্পেসিফিকভাবে বলছি। তার কারণ হচ্ছে, এই লাইনটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে! যুদ্ধ শুরুর আগে এই "হিন্দু মা*গী"ও হয়তো ওদের কারো শৈশবের বান্ধবী বা বন্ধুর বোন কিংবা প্রতিবেশি ছিল। পথে দেখা হলে হয়তো হাসিমুখে একে অপরের কুশল বিনিময় করত। কিন্তু একটা যুদ্ধ, এই রমণীটিকেই বানিয়ে দিয়েছে ভোগের উপকরণ! কারণ, মেয়েটি ভিন্ন ধর্মের। অবশ্য যাদের কথা এখানে আসছে তার নিজ ধর্মের কাউকেও ছেড়ে দেয়নি। তবু ভিন্ন ধর্মের কারো প্রতি তাদের 'আবদার' যেন একটু বেশিই ছিল! স্রেফ এই একটা লাইন আমাকে স্তব্ধ করে রেখেছিল দীর্ঘ সময়।
বইয়ের সর্বশেষ গল্প 'যে রাতে কাক ডেকেছিল' তে লেখক চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর একদম আগের জনজীবনকে কাছে থেকে দেখাতে। ২৫ শে মার্চ দিনটাও যে আর দশটা দিনের মতো ছিল, সাধারণ মানুষের জীবন তখনো যে সাধারণই ছিল এগুলোই তিনি তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর চরিত্রের মাধ্যমে। তবে গল্পে আমার কাছে আরেকটা ইন্টারেস্টিং অংশ মনে হয়েছে, তৎকালীন পাকিস্থানি লেখক-কবিদের যারা বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলতেন তাদের ভূমিকাটা। তারা না আমাদের ইতিহাসে জায়গা পেয়েছেন, না নিজ দেশের ইতিহাসে। ওনারা অনেকটা আড়ালেই রয়ে গেছেন। তবে তারা যে সাহসের সাথে সত্যের পক্ষে কথা বলেছেন তা সত্যিই সাধুবাদ জানানোর মতো একটা ব্যাপার। বর্তমানেও খুব কম সংখ্যক লেখককেই আমরা দেখি ক্ষমতাসীনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখতে।

তো এই ছিল এই বইয়ের উপন্যাসিকা ও গল্পগুলো পড়ে আমার পর্যালোচনা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্যতম সেরা একটা বই 'যে রাতে কাক ডেকেছিল।' শুধু যুদ্ধ ও যোদ্ধাদের গল্পই নয়, এখানে রয়েছে ভাবনার দিগন্ত বিস্তৃত করার মতো অনেক উপাদানই। স্রেফ পড়ার জন্য পড়ে যাওয়া নয়, বরং পড়তে গিয়ে হোচট খেতে হবে বিভিন্ন জায়গায়, ভাবতে হবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। আর এটাই বোধহয় লেখকের স্বার্থকতা।

বই: যে রাতে কাক ডেকেছিল
লেখক: কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশনী: ভূমিপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২৭০৳
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯/১০
Profile Image for Fariha Islam Joyeeta.
1 review1 follower
September 17, 2021
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছোট গল্পের চেয়ে আমার বড় গল্পই বেশি পছন্দ। তবে এই বইটার প্রতিটি গল্পই যেনো আমায় ছুঁয়ে গেছে। এই লেখকের প্রতিটি বইই আমার খুব পছন্দের। এই বইটাও ব্যাতিক্রম নয়।
Displaying 1 - 15 of 15 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.