Jump to ratings and reviews
Rate this book

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম

Rate this book
পুজোয় ‘দুগগাবিডি’ আসবেন বরিশালের রুনসী নদীর তীরবর্তী এক প্রত্যন্ত গ্রাম, কীর্তিপাশায়।

সেখানে পুজোর প্রসাদ রাঁধবেন খলিল ‘ঠাহুর’।
উজাগরী রাত্রে ছোমেদ মেঞা শোনাবেন সারি গান।

বাঙালির ইতিহাসে যাঁর দেশভাগের আখ্যান যুগান্তকারী, মর্মভেদী ও সবথেকে সত্যনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেই মিহির সেনগুপ্ত-র কলমে আসছে ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’।

লেখকের নিজের জবানি থেকেই উদ্ধৃত করা যাকঃ

“সব মানুষেরই থাকে এক সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। সে মোকামের ঠিকানা একেকজনের একেক রকম। কেউ বা প্রযত্নে থাকে মঠ-মন্দির-মসজিদ-গির্জার, কেউ বা আবার গগনচুম্বি অট্টালিকার, সাতমহলা বাড়ির, ধন-ঐশ্বর্যের চোখধাধানো সমারোহের। আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকামখানা রয়েছে আমার হৃদয়েশ্বরী জলেশ্বরীর কোলের মধ্যে। সেখানে ভূপ্রকৃতির ইতিহাস নবীন কিন্তু মানুষ প্রাচীন। সে এখনও আধুনিকতার ধরতাই-এ হাটি হাটি পা পা। তার কথার লব্জে, চলার ছন্দে সামন্ত-পরম্পরার শ্লথ ভাবটি এখনও প্রবল। তথাপি হৃদয়বৃত্তের অলখ বলয়ের সাতরঙের হাতছানিতে সে আমাকে পৌছোয় যে স্থানে, সেই আমার মোকাম-আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। সেই মোকামের সওদাগর আমি। ফকিরসাব, মোকছেদ, কার্তিক এবং সর্বশেষ, হ্যা—আমার শেকড়ের শেকড়, পিতৃকল্পপুরুষ ছোমেদ, আমার মহাজন। প্রত্যেক পরম্পরায়ই একজন বীজপুরুষ থাকে। তাকে ঘিরে থাকে তার পুষিপোনা-শিষ্যশাবকেরা। এখানে এই রচনায় উপস্থিত যে-সব মানুষ, তারা সবাই ফকিরসাব, মোকছেদ, কার্তিক এবং ছোমেদের শিষ্যশাবক, পুষিপোনা। এরা কেউই কথাকারের সৃষ্ট একান্ত কাল্পনিক চরিত্র নয়। আমি এমত বলতে বা শপথ করতে পারব না যে, “এই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরা সবাই সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্র, যদি কোনও বাস্তব ঘটনা বা চরিত্রের সঙ্গে এর কোনও মিল পাওয়া যায়, তা নিতান্ত আকস্মিক” । না, এ-রকম বলার কোনও উপায় আমার নেই। কেননা এরা সবাই বাস্তব চরিত্র সবাই জীবিত, এমনকী এইসব নামেই। লেখাও হল তাদের কথ্যপাঠ অনুসারেই। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল, এই ছ’-বছরে একবার করে হলেও শারদীয় উৎসবের সময় আমার এই উজানযাত্রা ঘটেছে।”

পাঠক আসুন, সঙ্গী হোন এই উজানযাত্রার।

254 pages, Hardcover

First published September 1, 2020

8 people are currently reading
99 people want to read

About the author

Mihir Sengupta

29 books7 followers
Mihir Sengupta is an Indian writer of Bengali origin, best known for his 2005 autobiography Bishaad Brikkho (Tree of Sorrow). It describes the 1947 partition as seen by the author, who was uprooted from his native Barisal in present-day Bangladesh and ended up in Calcutta as a refugee. Bishaad Brikkho is regarded as an important literary document of the 1947 partition and won the Ananda Puroshkar literary prize. His current residence is in the West Bengal state of India.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
24 (53%)
4 stars
18 (40%)
3 stars
2 (4%)
2 stars
1 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 7 of 7 reviews
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
November 9, 2024
"দিন যায়, শোক হয় পাতলা। তারপর কবরের মাটিতে দুর্বা ঘাস গজায়। যত গজায় ততই শোক হয় স্বচ্ছ। এক সময় সেই শোক হয় স্মৃতি।"

শোকের স্মৃতি খুঁজে বলা চমকপ্রদ এক আখ্যান।
খুলনা ও বাগেরহাটকে আলাদা করা ভৈরব নদীটা আমিও পার হয়েছি হাজার বার। সেদিক দিয়ে এ আখ্যানটা একটু হলেও আমার কাছের বলা যায়!
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
July 19, 2023
লেখাটি সরল না জটিল সে আলোচনা করা যেতে পারে। বরিশালের খাস কথ্য ভাষায় রচিত যে অবকাশকালীন স্মৃতি লেখক রচনা করেছেন, তা একজন খাঁটি বাংলাদেশী, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, খাঁটি সুনামগঞ্জী হওয়া সত্ত্বেও আমার উদ্ধার করতে একটু কষ্ট হয়েছে। যারা বাংলাদেশের নানা আঞ্চলিক ভাষা সম্পর্কে অবগত তাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে অনেক অঞ্চলের ভাষাই অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য রীতিমতো দুর্বোধ্য। তাও বরিশালী বলে মোটামুটি সবই বোঝা গেছে, চাটগাঁর হলে অনুবাদ লাগতো আমারও!
যাই হোক, প্রকাশক উপন্যাস বললেও আসলে এটি পশ্চিমবঙ্গীয় প্রবাসী লেখক মিহির সেনগুপ্তের নিজের ভিটেবাড়িতে ফিরে দুর্গাপূজার অবকাশযাপনের একটি স্মৃতিচিত্র।
এই বরিশাল আর তার নানা রঙের, নানা ছন্দের মানুষ লেখকের একান্ত নিজস্ব জায়গা, লেখকের সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।
এখানে কত কথাই উঠে এসেছে। এসেছে অতীত, এসেছে প্রেম। ছোমেদের পদ্যগীতের আদলে উঠে এসেছে নানা গল্প-কাহিনী।
দেশভাগ আর মুক্তিযুদ্ধের দুর্বিষহ মানসিক টানাপোড়েন এর দিকটি এসেছে মর্মস্পর্শীভাবে। সাধারণ মানুষের চোখে এই জাতিভেদ কী রূপ নিয়ে পরবর্তীতে দেখা দিয়েছে তা তাদের ভাষাতেই উঠে এসেছে।
রাস্তায় চলতে চলতে দেখা হয়ে যায় কত অসাধারণ মানুষের সাথে। পদ্মাপাড়ের ভাতের হোটেলের মালিক মোকছেদ তেমনই একজন। যার হোটেলের বয়েরা সব যুদ্ধশিশু আর যার রাঁধুনি আর সে নিজে মিলে যুদ্ধের সময় ঘটায় দু:সাহসিক কাজ৷ মুক্তিযোদ্ধা বলা যায় না কি তাদের?
মোকছেদের গুরু আর গুরুপত্নী আরেক ভাবের মানুষ। তাদের কাছে নারীর সম্মান অতি উচ্চে, মানুষ ভজনা করেন তারা। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই তাদের চোখে আর।
পরিশিষ্টে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এর একটি অনবদ্য প্রবন্ধ এই বইটিকে বুঝতে আরেকটু সাহায্য করে।
ভাষাগত জটিলতাটুকু যদি বাদ দেয়া যায়, সত্যি বলতে জটিল নয়, জানলে সহজই, তবে এই স্মৃতিকথাটি আরো পাঁচটা স্মৃতিকথা থেকে গুণে-মানে এবং গুরুত্বে খুবই আলাদা।
Profile Image for Sohan.
274 reviews74 followers
March 21, 2024
এই পোলায় যে ফাউকাইছে, এ্যাহন য়্যারে লইয়া কি করণ যায়? আসলে পোলায় খারাপ ল্যাহে নাই। বইয়ে আমার ভুল হুদ্রাইছে, বইরহালের বিক্রম লইয়া ম্যালা কথা কইছে। আর ওই যে আমাগো গা-জ্বালান্নিয়া ভাষা—’হেয়ারত’ পিতৃশ্রাদ্ধ করছে, আর ভাষাতত্ত্ব লইয়া যা সব কইছে, মনে হয় জানি সুনীতি চাটুইজ্জা মহায়ের পরদাদা…
—তপন রায়চৌধুরি

মিহির সেনগুপ্ত সম্পর্কে জানতে পারি তপন রায়চৌধুরীর ‘বাঙালনামা’ পাঠ করবার সময়। তখন সেনগুপ্তের ভাটিপুত্রের বরিশালি গদ্যসংগ্রহ বইয়ে রায়চৌধুরীর মুখবন্ধটা পড়েই মূলত আগ্রহ জন্মে তাঁর লেখা পড়বার। মুখবন্ধের খানিকটা দিয়েই তাই শুরু করলাম।

মিহির সেনগুপ্তের জন্ম দেশভাগের বছরে। অবিভক্ত বরিশালে। লেখাপড়া ব্রজমোহন কলেজে। তেষট্টিতে কলকাতায় দেশান্তর। এর ত্রিশ বছর পর লেখক হিসেবে কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আত্মপ্রকাশ। তাঁর প্রায় অধিকাংশ লেখার মধ্যে প্রকাশ পায় দেশভাগ, তৎকালীন বাঙালিদের জীবন যাপন, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক ইত্যাদি।

বরিশালি গদ্য আমার কাছে তেমন দুর্বোধ্য নয়। তাই ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ বেশ আনন্দদায়ক অনুভূতি নিয়ে শেষ করেছি। শুধু বইটির বিষয়বস্তু বা কনটেক্সটের গভীরে পৌঁছতে বেশ খানিকটা পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয়েছে। সেনগুপ্ত রসালো গদ্যের কারিগর বটে, তার লেখা পড়তে ভালো লাগে, তবে, এই বইটিতে যে পরিমাণ বিষয় প্রকরণের সন্নিবেশ ঘটেছে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাউল সম্প্রদায়দের জীবনাচরণ, লোকাচার, জারি গানের বৈঠক; এছাড়া নিম্নবর্গের মানুষদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, একজন পাঠক হিসেবে সেই সব বিষয়সংশ্লিষ্ট পূর্বপাঠের অভিজ্ঞতা না থাকলে টেক্সটের পূর্ণ রস আস্বাদন থেকে খানিকটা বঞ্চিত হতে হয়।

প্রেক্ষাপটের শুরু আশির দশকে পূজোর ছুটিতে ওপার থেকে আগত এক পরিবারের রূপসাঘাট হতে বরিশালে (লেখকের ভাষায় সিদ্ধিগঞ্জের মোকামে) দীর্ঘবৎসরকাল পর প্রত্যাগমনের মধ্য দিয়ে। বরিশালে আত্মীবর্গের সাথে পুনর্মিলন ও পূজোর উৎসবে যুক্ত হবার আগে পথে ঘটে যায় আশ্চর্য কিছু অভিজ্ঞতা। রূপসাঘাটের হোটেল ব্যাবসায়ি মোকসেদের মাধ্যমে হুলারহাটে এক ফকিরের সোহবত ও সন্ধ্যানদীর পাড়ে ফকির আর ফকিরবিবির কুটীরে রাত্রিযাপন কেমন এক ঘোর লাগানিয়া অভিজ্ঞতা। সারারাত ধরে সহজিয়া তরীকার মুরশেদের দরবারে চলে অবিরাম সুরের খেলা। সুরের মধ্যে গীতির মধ্যে ইচ্ছে করে বৈষ্ণব রসতত্ত্ব, কালতত্ত্বের মতো কোন তত্ত্বদর্শন হাতড়ে দেখতে তবুও ধৈর্য হারিয়ে শুধু রসমাহাত্ম্যটুকুই উপভোগ করি।

আবহমান বরিশালের লোকায়ত আচার নিয়ে লেখকের রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। হঠাৎ ‘ফলবিয়া’ প্রসঙ্গ চলে আসায় মনে হয় শুধু বরিশাল কেন আবহমান মানব সভ্যতারই অতীত এই লোকাচার! জেমস ফ্রেজারের বইটাতে সেদিন পড়ছিলাম—

“It is significant that among the Baganda the first menstruation was often called a marriage, and the girl was spoken of as a bride.”
“Now it is remarkable that the foregoing two rules - not to touch the ground and not to see the sun - are observed either separately or conjointly by girls at puberty in many parts of the world.”

সোজা কোথায়, ঋতুমতি মেয়েকে পঞ্চগব্য খাওয়ানো, সূর্যার্ঘ্য দেয়া এসব যেন শুধু ভারতবর্ষ নয়, আফ্রিকাবর্ষ, ইউরোপবর্ষেরাও একসাথে পালন করে আসছে সহস্র বছর ধরে। সেনগুপ্ত তার মোকামে লেখেন—

“বিবাহোত্তর ঋতুকালে দ্বিতীয় বিবাহের আয়োজনকে বলে ফলবিয়া। ঋতুপূর্ব বিবাহে ফলের কথা কেও ভাবে? সেই তো ফলবিয়াকে কেন্দ্র করে নানান লোকাচার, অভিচার পালন করে এই অপবর্গী নারীরা।”

এখানে ‘অপবর্গী’ শব্দটি লক্ষণীয়। সেনগুপ্তের প্রায় প্রতিটি বইয়ে নিম্নবর্গের মানুষকে ‘অপবর্গী’ বলে সম্বোধন করা হয়। আমরা বলি নিম্নবর্গের মুসলমান/হিন্দু কিন্তু সেনগুপ্ত লিখবেন অপবর্গী মুসলমান/হিন্দু।
জাত পাত নিয়ে এই বইয়ে অনেক ‘ক্যাচাল’ আছে। মুসলমানের জাত পাত প্রসঙ্গে এক জায়গায় আছে—

মাইনসে কয় মেয়াগো মইদ্যে নাহি জাইত পাইত ভ্যাদ নাই, আছে খালি হিন্দুগো। হিন্দুগো যে আছে, হেয়া মোগো থিয়া ভালো কেডা জানে? কিন্তু স্যাহেগোও যে ভালমতনই জাইত পাইতের সোমস্যা আছে—হেয়াও কিন্তু মিত্যা না। জোলা, নিকিরি, আনসারি, হাজাম, এ্যারা কি বড় জাইতের মেঞাগো জলচল? এট্টুও না।

জাত-পাত ও ধর্ম বিষয়ক বেশ কিছু কথা আছে এই বইয়ে যা কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক। রাখঢাক বর্জিত কথাগুলো হয়তো একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু/মুসলমানকে দুঃখ দিয়ে ফেললেও ফেলতে পারে তাই বইটি পড়বার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এটি মাথায় রাখাটাও জরুরি।

জাত-পাত আর ধর্মের দ্বন্দ্বের আলাপগুলোকে সরিয়ে রেখে যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা বলি। সেটা হল—রসুর ‘ক’ শেখা।

“কখনও সেই ভোর ফজরে আমরা শোনতাম—উডা উডা উডা। লামা লামা লামা। বেহা, বেহা, বেহা। ব্যাহাইছো? মোর রসু বেয়াক পারে। এইবার বাজান, এইবার এট্টু কাইত্তার করো।—এ এ অ্যাই যে—এই তো অইয়া গেলো। ��াও। এহন যাইয়া মায়ের ধারে দুগগা হুডুম খাও।
আমরা করিমন চাচিকে জিজ্ঞেস করতাম, ও চাচি, চাচায় ওয়া, বেইনাকালে কি উডায় লামায়?
চাচি একগাল হেসে বলতেন, ও হেয়া বুজি তোমরা জানো না। ওয়া রসুরে ‘ক’ লেহায়। তো এইভাবে কুদরৎ চাচা রসুকে ‘ক’ শেখালে।”

এটি ভালো লাগবার খুব সহজ একটা কারণ আছে। মনে আছে আমরা সবাই ছেলেবেলায় কালো শিলেটে এমন ‘উডা লামা’ করে ‘ক’ লেখা শিখেছি। আর এই ভাষা আর অক্ষরই হল, বাংলার ইতিহাসের অবশিষ্টাংশ একমাত্র অস্পৃশ্য অ্যাস্থেটিক যা বাঙালি হিন্দু মুসলমানের এখনও এক।
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
October 3, 2024
সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম মূলত উজান থেকে ভাটির দিকে ছুটে আসা এক মানুষের স্মৃতিচারণ। লেখক তপন রায় চৌধুরীর 'অচেনা পিতৃভূমি, অজানা আত্মজন' নামক প্রবন্ধটি এই বইকে কেন্দ্র করে, সে বইতে তিনি বলছেন '...রচনাটি উপন্যাস নয়, লেখকের জন্মভূমি এবং পাশেই শ্বশুরালয়ের গ্রাম কীর্তিপাশায় অবকাশ যাপনের কাহিনী। আর সেই প্রসঙ্গে ওখানকার মানুষের স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ছবি।' মিহির সেনগুপ্ত একসময় দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতে। বরিশালের কীর্তিপাশা গ্রামে তার শ্বশুরালয় আবার সেই গ্রামের পাশের গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি। এই কাহিনি দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে তার দেশে ফেরার।

ভাটির টানে যে মানুষ ছুঠে আসছেন তার কথায় ভেসে ওঠে বাংলার আপামর জনসাধারণের কথা। এই মানুষগুলোর মধ্যে বিশেষ করে তারাই হয়ে ওঠেছেন নায়ক যারা মাটির সাথে মিশে থাকা ব্রাত্যজন। 
স্মৃতিকথার শুরুতে রূপসার ধারে গড়ে ওঠা হোটেল মালিক মোকছেদের সাথে পরিচয়। তার মুর্শেদ হুলার হাটের ফকির সাহেব। মোকছেদ বলেন, “মোরগা কারবার দিল দরিয়ার তুফানে নাচনের কারবার।” যাত্রা পথে হুলার হাট মোকছেদ নিজে চরণদার হয়ে তার গুরুর কাছে নিয়ে চলেন সেনগুপ্ত পরিবারকে। সেই ফকির সাহেব অপার স্নেহে কাছে টেনে নেন লেখককে।

সেই ফকির বলেন,
"মানুষরতন, কর তারে যতন
যাহা তোমার প্রাণে চায়..."

ঘাটের থেকে তাকে আপ্যায়ন করতে এসেছেন তার আত্মজনেরা। এসব আত্মজনেদের সাথে বাঁধা আছে তার শৈশব। তাদের মধ্যে আছেন, সৈয়দ আলি চাচা, নসু(নাসির), ভাবী সহ অনেকেই থাকেন।
দেখা যায় ভাবী এবং নিবারণকাকার সাথে বাপ বেটির সম্পর্ক। মুঈনউদ্দিন চাচা আর নিবারণকাকার উঠানে রোজ সকালে তারা সকালে কাককে খুদ খাওয়ায়। মুঈনউদ্দিন চাচার কাক মোছলমান আর নিবারণ কাকার কাক হিন্দু।

রাতে যখন বৃষ্টি নামে তখন মন্দিরের পূজা-অঙ্গন কাদায় ভরে ওঠে। অঙ্গন ঢাকার জন্য বাজারের হরিসভায় টিন আনতে পাঠানো হয়। কিন্তু হরিসভার কত্তারা টিন দেয় না, সেখান থেকে জানানো হয় "ওহানে টিন দেওন যাইবে না। ওহামে শ্যাখ, হিন্দু বেয়াকে একলগে খাওনদাওন করে, নাচে কোদে, ওরা মোরা ভালো ঠেহি না।" এর মাঝে জামাই মেম্বারে টিন জোগাড় করে দেয় মীরাকাডি মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত। সেই টিন নিয়ে আসেন ছবুর মোল্লা।
সপ্তমীর সকালে মঞ্চে হাজির হয় কার্তিক যার গানের গলা অসাধারণ। এরপর সন্ধ্যায় এসে হাজির হয় ছোমাদ বয়াতি। রায়বাড়ি তার বাপের বাড়ি। এককালের রায় কর্তাকে সে বাপ ডেকেছিলো। ছোমাদ বয়াতি আসার পর লেখক উল্লাস করে বলে ওঠেন, "ছোমেদ বয়াতি এসেছে, এ সংবাদ আমার কাছে এক অপূর্ব সমাচারের মতো শিহরণ জাগায়। ছোটোবেলার সেই ছোমেদভাই। যে কোনো অবস্থায়, যে-কোনো পরিস্থিতিতে, মুখে মুখে যে শব্দবন্ধ, কবিতা, কথা তৈরি করে যাদুর ভেল্কি দেখাতে পারে, যে মানুষকে চূড়ান্ত নৈরাশ থেকে, বিবর্ণ জীবনযাত্রার কুৎসিত একঘেয়েমি থেকে, ধ্বংসের বিভীষিকা বা দারিদ্র্যের ক্ষীয়মাণতা থেকে মানবিক হৃদয়বৃত্তের বলয়ে স্থাপনা করতে পারে, কিংবা যে তার নিজস্ব মণ্ডলের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির রক্তচক্ষু এবং অত্যাচারকে তুচ্ছ করে, ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির প্রসারণে নিজেকে অতন্দ্র রাখতে পারে, সেই ছোমেদ ভাই এসেছে।"

ছোমাদ জারি সারি, কীর্তন, রয়ানি, পরণকথা, কথকতায় জারি সারি, কীর্তন, রয়ানি, পরণকথা, কথকতায় কথায় দক্ষ শিল্পী। ছোমাদের আগমন এই বইয়ের একটা বাঁক হিসেবে ধরা যেতে পারে। সেই বাঁক লেখকের এই স্মৃতিকথাকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন অন্যদিকে। তার স্মৃতিকথাকে করে তুলেছেন আরো প্রাঞ্জল, আরো বৈচিত্র্যময়। সপ্তমীর রাতে ছোমাদ জারি গানের আসর বসায়, এই আসরে ছোমাদ যেসব গান বা কথা বলে ওঠেন তা তৎক্ষনাৎ মুখে মুখে বানানো গান। কথাকে নিয়ে যেদিকে গড়ানো যায় সেইদিকে গড়িয়ে যান কথক তার সাধ্যমতো। ছোমাদ কথকথায় নিয়ে আসেন বাস্তবের মানুষজনকে। নিয়ে আসেন বেঁচে থাকা মানুষকজনের কথা। তার গান মন্দির অঙ্গনে তৈরি করে অন্য আবহ। 

মিহির সেনগুপ্তের 'সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম' বাংলা সাহিত্যে আরেকটি অনন্য সংযোজন বলা যায়। এই স্মৃতি কথায় বাংলার বাউল ফকিরদের কথা উঠে এসেছে। তাদের ছুঁয়ে গিয়েছেন লেখক। তারপরে দেখা যায় ব্রাত্য মানুষগুলো যাদের হিন্দু সমাজ এবং মুসলিম সমাজ নীচে দাবিয়ে রেখেছে তাদের মিলেমিশে থাকার চিত্র। তাই তো খলিল হয়ে যান খলিল ঠাকুর। যিনি পূজায় ভোগ রান্না করেন। মিলেমিশে তারা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এ যেন রূপকথার গল্প। আজ ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে আমি গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের কথা পড়ছি অথচ এসবকে রূপকথাই মনে হচ্ছে। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গিয়েছে এই নির্মল গল্প তার চেয়ে বহুগুণ উপরের কথা বলেন। ছোমাদের মতো মানুষেরা জারি সারি, জারি সারি, কীর্তন, রয়ানি, পরণকথা, কথকতা তৈরি করে সেসব মানুষদের মনে আশা জিয়ে রাখেন যারা সমাজের পতিত জন। সে তার কথার মধ্যে জিয়ে রাখে তার বন্ধু দৌলত আর তার স্ত্রী সরেস্বতীর প্রেমের কথা। কারণ ভদ্র সমাজের লিখিত ইতিহাস এসব কথা লিখে রাখে না। এই বইয়ের প্রায় সবখানে বরিশালের কথ্যভাষা প্রধান্য পেয়েছে। আঞ্চলিক এই ভাষা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে হয়তো ধাক্কা খাবেন। তবে এই বইয়ের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে আঞ্চলিক ভাষার সহজ সাবলীল প্রয়োগে। কোন ভণিতা ছাড়া, অসাধারণ ভাবে কথ্যভাষা প্রয়োগ বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে অনেকাংশে।
সর্বোপরি লেখক যে সমাজ এবং যেসব মানুষদের কথা তুলে ধরেছেন তাদের নিয়ে এমন মমতায় আর কেউ কিছু লিখেছেন কিনা জানি না। এই সিদ্ধিগঞ্জের মোকামই তো আমাদের হারাতে বসে থাকা বাংলার এক টুকরো দলিল। সময়ের পরিক্রমায় হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কে আজ ফাটল ধরেছে। বিপন্ন হচ্ছে বাউল, ফকিরদের দর্শন। তাদের করে ফেলা হচ্ছে একঘরে। অত্যাচারীর খড়গ নেমে এসেছে সবখানে। ছোমাদের মতো মানুষ আজ মন খুলে মন্দির প্রাঙ্গণে কথা বলার, গানি ঝাঁপি খোলার আগে দশবার ভাববেন। তার চেয়ে বড় কথা তারা তো হারিয়েই গিয়েছে প্রায়। আমরা আমাদের সমাজের একটা অংশকে সচেতন ভাবেই অগ্রাহ্য করেছি। আর আজ তার ফলে বাংলার এই সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জারি সারি, রয়ানি, পরণকথা, কথকতা মতো নানান জিনিস।
Profile Image for Agnivo Niyogi.
Author 5 books24 followers
January 16, 2021
মিহির সেনগুপ্ত বাংলার অন্যতম অসাধারণ এক লেখক। তাঁর রচনায় উঠে আসে বাংলা ভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল মানুষের কাতর কাহিনী। এপার, ওপার বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে তাই ওনার লেখা কালজয়ী হয়ে ওঠে। আত্মজীবনীমূলক রচনা হলেও, তাঁর মনের কথা যেন বাঙালি জাতির দুঃখের বহমান স্মৃতিকথা।

সব মানুষেরই থাকে এক সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। সে মোকামের ঠি���ানা একেকজনের একেক রকম। কেউ বা প্রযত্নে থাকে মঠ-মন্দির-মসজিদ-গির্জার, কেউ বা আবার গগনচুম্বি অট্টালিকার, সাতমহলা বাড়ির, ধন-ঐশ্বর্যের চোখধাধানো সমারোহের। লেখকের সিদ্ধিগঞ্জের মোকামখানা রয়েছে হৃদয়েশ্বরী জলেশ্বরীর কোলের মধ্যে।

দেশভাগের তিরিশ-চল্লিশ বছর পরে, ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল, এই ছ’বছর পূজার সময় মিহিরবাবু নিজের গ্রাম এবং কীর্তিপাশায় ছুটি কাটান। সেই অভিজ্ঞতারই ছবি সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম ফকিরের বাসস্থান। পীর-ফকিরের দরগায় মানুষ যায় গুরুর সন্ধানে, আত্মার শান্তির আশায়। পরগণা সেলিমাবাদের অখ্যাত গ্রামকটির জীবনে সেই মোকামের সন্ধান পেয়েছেন মিহিরবাবু।

দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গের গ্রামাঞ্চলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে সদ্ভাব ছিল, তাই বর্ণিত হয়েছে এই গল্পে। মালাউন নিবারণ আর শ্যাখের ব্যাডা মুইনুদ্দিনের সম্পর্ক কিংবা গ্রামাঞ্চলের দুর্গাপুজোয় তামাসা দেখতে আসা মুসলমানদের কথা মন ভরিয়ে দেয়। দুর্গাপুজোই হোক বা ঈদ সব উৎসবেই একসাথে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। ধর্মের ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে সকলেই বাঙালি হয়ে ওঠে।

আরেকটি কথা না বললেই না। তা হল বইয়ের ভাষা। আমরা যারা শহুরে কলকাতা-কেন্দ্রিক বাংলা পড়তে অভ্যস্ত, তাদের কাছে এই গল্পের ভাষা কঠিন, আবার দুর্বোধ্যও মনে হতে পারে। কিন্তু লেখক তাঁর অঞ্চল (বরিশাল) এর উপভাষা অতি সূক্ষ্ণতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। ওঁর লেখনীর মাধ্যমে নতুন করে পরিচয় হল বাংলা ভাষার সঙ্গে।

দেশভাগ উত্তর পর্বে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওপার বাংলার জনজীবন সম্পর্কিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই এই 'সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম'। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্কের এক সুন্দর আখ্যান এই বই। ফেলে আসা সময়ের হাতছানি এই বই জুড়ে। পূর্ববঙ্গে শিকড় যে সব বাঙালির, তাদের অন্তরে প্রভাব ফেলবেই মিহিরবাবুর লেখা বই।
Profile Image for SUVADIP CHAKRABORTY.
5 reviews3 followers
June 4, 2023
সুর যেখানে ঘরে ফেরে...
----------------

ভিনরাজ্যে ভাড়া বাড়ির পাশেই কোভিড হসপিটাল। ভাইরাস বায়ুবাহিত। আচমকা নিদান তাই, ছাদে ওঠাও যাবে না! খোলা জানালায় রাত-বিরেতে টর্চ। “জি বন্ধ রাখিও!” কিন্তু এভাবে বন্ধ হয়ে কতদিন? পালাতে ইচ্ছা করে যখন খুব, তখনই হাতে এল ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’। কলকাতা থেকে উপহার। আর শুরু হল অমলিন একটা ভেসে চলা।

আমার তো ঠাকুরদার দেশ ছিল নোয়াখালি। ঠাকুমার ছিল কুমিল্লা। গান্ধিজীর মিছিলে হাঁটা ঠাকুরদা বদলে ফেলল দেশ তারপর। নবদ্বীপের কাছে ভান্ডারটিকুরি। চাকরি নিয়ে বাটা সাহেবের কোম্পানিতে তারপর। অথচ দেশ বদল হয় কি সত্যিই? নতুন করে চিনে নিতে ইচ্ছা হয় না ফেলে আসা খাল, বিল, সবুজ?

অসম্ভব এক জার্নির কথা বলে যায় আমাদের ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’। খুঁজে চলা শিকড়ের টানে ফিরে যেতে যেতে কথক ভুলিয়ে দেন ভাষার দ্বন্দ্ব। বরিশালি ভাষায় আটকে গিয়ে তাই বাবার কাছে ফিরে যাই। অনেকদিন পর। সেই কোন ছোটবেলা পেরিয়ে আসবার পর আবার বই পড়ে শোনাতে শুরু করে বাবা। কথ্য ভাষার মানে বলতে বলতে পেরিয়ে যায় অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ। একসময় পাঠে গতি এসে গেলে বুঝতে পারি, নিজেই পড়ে নেওয়া যাবে। তারপরে নিজেরও সেই জার্নির অংশীদার হয়ে পড়া অগত্যা; পৌঁছতে চাওয়া সেই আলো-হাওয়ার সিদ্ধিগঞ্জের মোকামে।

শুধু নস্ট্যালজিয়া নয়, ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ বরং দুই বাংলার বিচ্ছেদের ইতিহাসটাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায় অনেকখানি। সন্দেহ করতে শিখিয়ে দিয়ে যায় ক্ষমতাকে। খানসেনা হোক বা মুক্তিযোদ্ধা, আদতে যার হাতে বন্দুক, সেই যে একসময় ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছতে অন্যের মাথায় পা রাখবেই— সেই কথাও উঠে আসে কী চমৎকার ভাবে। না, কোনোরকম গবেষণা গ্রন্থ এটা নয়; বরং সেই কথা উঠে আসে সাধারণের কথায়, ভাষ্যে। সংলাপে।

‘জ্বলন্ত সময়ের দলিল’ জাতীয় কোনও বহু ব্যবহারে জীর্ণ শব্দ এই বইয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করে বলা যায় বরং, সাধারণ মননের এক লিখিত ডকুমেন্টারি। সারারাত জেগে হুল্লোড় আছে যেখানে। আছে জাতপাতের সংকীর্ণতার মাঝেও সেসবের মধ্যে অনাবিল ভাবেই মিলিয়ে দেওয়া হিউম্যান সাইকো। দুর্গাপুজোর উৎসব তো ফিকে সেই মিঞা মানুষটার জারি গান ছাড়া। অথবা জাতে মুসলিম, পদবীতে ‘ঠাকুর’ উপাধি যে মানুষটার, সে না থাকলে কীভাবেই বা হবে অত লোকের পুজোর ভোগ? ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ শেষ করতে আমার সময় লেগে যায়, কারণ সময় লেগে যায় ভাষাটার মধ্যে ঢুকতে। একবার ঢুকে গেলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতো সুর আলাপ থেকপ কখন ঝালায় উঠে যে ভাসাতে থাকে উন্মনে, তার হদিশ পাওয়া যায় না।

হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বলে, সুর যেখানে ঘরে ফেরে, সেটাই হল ‘মোকাম’। এমন একটা সময়ে ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ পাঠ শেষ হয়, বাংলাদেশে টালমাটাল করা ব্যাপারটা ঘটে গেছে। ঠাকুরদা-ঠাকুমার ‘দেশে’ই আঘাত বেশি। অথচ এই ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ অন্যই একটা দুর্গাপুজো, জারিগান, হাসি, মজা, কান্নার আবহসঙ্গীত শুনিয়ে যায় আমাদের। ভিন রাজ্যে যে জার্নির শুরু, তার শেষ হয় আমার ছাপোষা মফস্বলের ঘরে, শারদীয়ার পরে যখন কুয়াশা কুয়াশা ভোর। একটা মনখারাপ দিয়ে যায় খুব। কুয়াশার ওপারে দেখতে পাই যেন নিজেরও ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’। যেখানে ভাঙা মন্ডপ নেই। আতঙ্ক নেই। চিৎকার নেই। বরং হাসতে হাসতে এলিয়ে পড়া আছে এ-ওর গায়ে। একে অন্যকে আগলে রাখা আছে অধিকারের আদরে। ওই তো, হিন্দুগো উৎসবে সারা রাত আসর জমাচ্ছে ছোমেদ মিঞা। এই কাঁদাচ্ছে তো, হাসাচ্ছে এই। দমে পাক দাও খলিল ঠাকুর! নিরামিষ পাঁঠার মাংসে জমে উঠুক অষ্টমীর ভোগ। জোরে নাও টানো হে নাইয়া! সিদ্ধিগঞ্জের মোকামে পৌঁছতে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তো...
.
.
.
সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম
লেখক : মিহির সেনগুপ্ত
প্রকাশক : সুপ্রকাশ (Suprokash)
প্রচ্ছদ : তিস্তান
Displaying 1 - 7 of 7 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.