Jump to ratings and reviews
Rate this book

Language movement in East Bengal

Rate this book
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ভাষা আন্দোলন, একে বলা হয় আমাদের আত্মআবিষ্কার বা স্বরূপ-অন্বেষার সূচনালগ্ন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজও এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই উপ্ত ছিল। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্ব বা মহত্ব কেবল ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিল-সংগ্রাম ও শহীদদের আত্মদানের ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি নিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাঙলার মানুষ কিংবা তার সচেতন অংশটির মধ্যে ১৯৪৮ কিংবা তারও আগে অর্থাৎ বিভাগপূর্বকালেই চিন্তাভাবনা শুরু হয় একথা যেমন সত্য, তেমনি বা তার চেয়েও বড় সত্য হল, এই আন্দোলনের তাৎপর্য ভাষা বা সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের দাবি ছাড়িয়ে জাতীয় স্বাধীনতা ও মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ের মধ্যে তার পরিণতি খুঁজেছিল। আপাতদৃষ্টে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নাগরিক সমাজের আন্দোলন বলে মনে হলেও ব্যাপক গণমানুষের ক্ষোভ-প্রতিবাদের জ্বালামুখ হিসেবে কাজ করেছিল সেদিন ভাষা আন্দোলনের ঘটনাটি। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বিচার কিংবা আমাদের জাতীয় জীবনে তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বুঝতে হলে সুতরাং আন্দোলনের সামগ্রিক পটভূমি তথা সমকালীন রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই তা করতে হবে। আর এই অতি প্রয়োজনীয় কাজটিই বদরুদ্দীন উমর করেছেন তিন খণ্ডে সমাপ্ত এবং অজস্র সাক্ষাৎকার, দলিল সমৃদ্ধ তাঁর ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থে ।

Unknown Binding

First published January 1, 2000

8 people are currently reading
107 people want to read

About the author

Badruddin Umar

92 books34 followers
Umar received his MA in Philosophy from Dhaka University and his BA Honors degree in PPE (Philosophy, Politics and Economics) from Oxford University. Umar began his academic career as a teacher at Dhaka University on a temporary basis. In 1963, he joined Rajshahi University as the founder-chair of the Political Science department. He also founded the department of Sociology at the same university, but he resigned from his university positions during the hostile times of the then East Pakistan governor Abdul Monem Khan to become increasingly more active and engaged as a full-time leftist political activist and public intellectual to fight for the cause of oppressed peasants and workers in Bangladesh.

As a follower of Marxist-Leninist principles, Umar began writing anti-colonial articles from the 1970s. In the 1960s he wrote three groundbreaking books––Sampradayikata (Communalism, 1966), Sanskritir Sankat (The Crisis of Culture, 1967), and Sanskritik Sampradayikata (Cultural Communalism, 1969)––that theorize the dialectics of the political culture of ‘communalism’ and the question of Bengali nationalism, thus making significant intellectual contributions to the growth of Bengali nationalism itself. In 1969, Umar joined the East Pakistan Communist Party (Marxist-Leninist), and from February 1970 to March 1971, Umar edited the mouthpiece of the East Pakistan Communist Party––Saptahik Ganashakti—which published essays and articles about the problems and prospects of the communist movement in Pakistan. He was president of both Bangladesh Krishak Federation (Bangladesh Peasant Federation) and Bangladesh Lekhak Shibir–the country’s oldest organisation of progressive writers, intellectuals, and cultural activists.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
8 (42%)
4 stars
8 (42%)
3 stars
3 (15%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 2 of 2 reviews
Profile Image for Shahin Rana.
5 reviews2 followers
Read
April 8, 2021
যে আন্দোলন ছিল ছাত্র-তরুণ ও শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন, তা কী করে দুই দশকের মধ্যে একটি জাতির জাগরণ ঘটিয়ে তাকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নিয়ে আসে! অবশ্য মাও সে তুং বলেছিলেন বটে, স্ফুলিঙ্গ থেকেই দাবানলের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তার তো একটা বিস্তৃত বহুমাত্রিক কাহিনিই থাকার কথা। সেটা জানা বাংলাদেশকে বোঝার ক্ষেত্রে জরুরি। সেই জরুরি কাজটা করেছিলেন রাজনীতি-সংস্কৃতির দক্ষ বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমর আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে। তাঁর ম্যাগনাম ওপাস পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি নামের তিন খণ্ডের বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ আর শেষ খণ্ডের প্রথম প্রকাশের কাল ১৯৮৫।

‘ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রামাণ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি বই লেখা দরকার’—এই বিবেচনা থেকেই বদরুদ্দীন উমর এই কাজে হাত দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি সঠিকভাবেই বুঝেছিলেন, ‘এই আন্দোলনকে আসলে শুধু ভাষার আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা অথবা ব্যাখ্যা করলে সেটা সঠিক হবে না।’ কারণ শি​ক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ একটি আন্দোলন কীভাবে কৃষক-শ্রমিকসহ গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণে পৌঁছেছিল, সে ইতিহাস তো জানা প্রয়োজন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তখনকার তরুণ বাম বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর বিস্তৃত পরিসরে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, ১৯৪৮ থেকে সূচিত আন্দোলন এবং ’৫২-এর অগ্নিঝরা কয়েকটি দিন এবং তারপরে দেশের নানা প্রান্তে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ কীভাবে ধীরে ধীরে সংগ্রামের পথে এসেছে, সে কথা তথ্য-প্রমাণসহ লিখেছেন। এ ক্ষেত্রে একটি প্রধান বিষয় হলো পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলা ও বাঙালির মূল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার ইতিহাস। সেটি কেবল ভাষার আন্দোলনে সম্পন্ন হয়নি, এ দেশের মূলধারার রাজনীতি এবং কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্র-তরুণদের বিভিন্ন সংঠনের ধারাবাহিক আন্দোলনের অবদানও তাতে কম নয়। তিন খণ্ডের এ বইয়ে এসব কথা সবিস্তারে আছে। বইটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে বোঝা যায় ধীরে ধীরে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবি থেকে বাঙালি কেন ও কীভাবে স্বাধীনতার দাবিতে এসে পৌঁছেছিল।

উমর নিজে বামপন্থী ধারার প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকলেও ইতিহাসের স্বার্থে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছেন। তাঁর বইয়ে ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন যুবলীগ নেতা অলি আহাদের প্রসঙ্গ গুরুত্ব পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি তৃতীয় খণ্ডের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনের অল্প কয়েক বৎসর পর থেকেই রাজনীতিতে তাঁর প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা শুরু হলেও তাঁর বর্তমান রাজনীতি চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও ঘৃণার্হ।’ কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বইটির অনেকখানি তথ্যের জন্য বদরুদ্দীন উমর নির্ভর করেছেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সরকারের কান্ডারি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরির ওপর।

ভাষা আন্দোলনের পরিণতি থেকে তাঁর উপলব্ধি, ‘ভাষা আন্দোলনের কোনো একক রাজনৈতিক নেতা ও নায়ক ছিল না। জনগণই ছিলেন তার প্রকৃত নায়ক।’ সেই সঙ্গে এই অভিমতও তিনি স্পষ্ট ভাষায় দেন যে, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন নিছক রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন ছিল না।’ তত দিনে বাঙালি মুসলমানের পাকিস্তান নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে শুরু করেছিল। কারণ, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ধ্বনি দিয়ে তারা তো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনের প্রত্যাশা থেকে। কৃষক ভেবেছিল তারা জমি পাবে, শ্রমিক ভেবেছিল কাজ পাবে ও বাঁচার মতো মজুরি পাবে, ছাত্রদের জন্য শিক্ষা হবে সুলভ, শি​ক্ষিত যুবকেরা পাবে চাকরি ও জীবিকার নিশ্চয়তা। ক্রমে বাঙালির অধিকার চেতনা প্রখর হয়েছে। তারা কেন্দ্রে সব​ ক্ষেত্রে সমমর্যাদা ও সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানের স্রষ্টা জিন্নাহর অনমনীয় মনোভাব, লিয়াকত আলীর গোঁয়ার্তুমি, পাকিস্তানের অবাঙালি আমলাদের বাঙালিবিরোধী ভূমিকা, আর অন্যান্য পাকিস্তানি ও পাকিস্তানপন্থী বাঙালি রাজনীতিকদের দোলাচল ও আপসকামিতায় প্রথমে তারা আস্থা হারায় মুসলিম লীগের ওপর। মুসলিম লীগের এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই এবং প্রধানত বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের ফলেই মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ঘটে। উমর উল্লেখ করেন, ‘১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকেই অবশ্য তাঁরা সকলে প্রথমে ধীরে এবং পরে দ্রুতগতিতে উপলব্ধি করলেন যে, যে স্বপ্ন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে তাঁরা দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন তৎকালীন মুসলিম লীগ শাসনের দ্বারা বাস্তবে রূপায়িত হওয়া সম্ভব নয়।’ উমর বাঙালি মুসলমানের এই মনোভাব পরিবর্তনের পেছনে দেশে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষাবস্থার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখায় বৈষম্য, বঞ্চনা এবং পাকিস্তানি শাসকদের ঔপনিবেশিক মনোভাবের প্রসঙ্গগুলো উঠে এসেছে। আর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে যেসব রূপান্তর ও পটপরিবর্তন ঘটেছিল, সেসব কথাও তুলে ধরেছেন। উমরের বিবেচনায় ভাষা আন্দোলনে সাংগঠনিকভাবে যুবলীগের ভূমিকা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ ছাত্রদের দাবি গৃহীত হওয়ার পেছনে যুবলীগের সমর্থনই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। আর এই সাহসী কাজের ফলেই সেদিন পুলিশের গুলিবর্ষণ ও পরবর্তী প্রতিরোধ পর্যন্ত ঘটনা গড়িয়েছে।

উমর তাঁর অভিমত স্পষ্টভাবেই তুলে ধরেছেন তৃতীয় খণ্ডের সমাপনী অনুচ্ছেদে, ‘যেভাবেই দেখা যাক, এ কথা অনস্বীকার্য যে ২০শে ফেব্রুয়ারি তারিখ রাত্রি থেকে আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে কম্যুনিষ্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্কিত ছাত্র ও যুবলীগ কর্মীরাই সাংগঠনিকভাবে সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’ (পৃ. ৪৯৩)

উমর মনে করেন, ‘আন্দোলনের মধ্যে কোন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিক না থাকলেও তার অপর একটি গণতান্ত্রিক দিক ছিল খুব স্পষ্ট। এবং সে দিকটি হলো তার সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতার দিক।’ (পৃ. ৪৯৭)

সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতার ঘাটতিকে লেখক এ আন্দোলনের একটি দুর্বলতা হিসেবেই দেখেছেন। কথাটা সত্য হলেও এ আন্দোলনের ফলেই আমরা দেখি এ দেশে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন মূলধারার রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। আর সেভাবেই একসময় বাম প্রগতিশীলদের ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি মুখ্য হয়ে ওঠে। এ রাজনীতি ধারণ করেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল।

পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে ও সাম্প্রতিক কালে উদ্ঘাটিত তথ্য-প্রমাণে বোঝা যায়, পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাঙালির মুক্তির সম্ভাবনা যে কম, বিশেষ করে মুসলিম লীগের বাঙালি নেতৃবৃন্দের ভূমিকায় এটা যে অসম্ভব, সেসব বিষয় বঙ্গবন্ধু প্রায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পর থেকেই উপলব্ধি করেন। আর তিনি যেহেতু বসে থাকার মানুষ ছিলেন না, তাই সে অনুযায়ী পদ​ক্ষেপও নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিকাশের দিক থেকে তাঁর সে ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাৎপর্যপূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে সেকালের অন্যান্য প্রধান আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা। ভাষা আন্দোলনের অধিকাংশ সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও দেখা যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। উমরের লেখায় পাচ্ছি, ‘নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখে (১৯৫১) শেখ মুজিবুর রহমানকে চিকিৎসার জন্যে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই সময়ে কিছু রাজনৈতিক কর্মী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।’ (পৃ. ২১৪) এই ঘটনার বর্ণনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীত��ও আছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি হাসপাতালে আছি। সন্ধ্যায় মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদ দেখা করতে আসে।...আমি ওদের রাত একটার পরে আসতে বললাম। আরও বললাম, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহবুব আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে খবর দিতে।...বারান্দায় বসে আলাপ হল এবং আমি বললাম সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে।’ (পৃ: ১৯৬) অলি আহাদের সাক্ষাৎকারেও এ ঘটনার বর্ণনা মেলে, ‘প্রহরী-পুলিশের ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ততার সুযোগ গ্রহণ করিয়া আমরা তাঁহার সহিত হাসপাতালেই কয়েক দফা দেখা করি।’ (ব.উ. ২৪০, ফুটনোট)। এ প্রসঙ্গ একটু বিস্তারিতভাবে বলা এ কারণে যে তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু জাতির নানা সংকটকালে বাঙালির স্বার্থের অনুকূলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা যে রেখে চলেছিলেন তা বোঝা যায়। বাংলাদেশের পরবর্তীকালের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে ভাষা আন্দোলনেও বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা আজ আরেকটু গুরুত্বসহকারে আলোচনার দাবি রাখে।

তবে এ কথা মানতেই হবে, বদরুদ্দীন উমরের পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি এ দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পথিকৃৎ দৃষ্টান্ত, এই ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি আকরগ্রন্থ, যার প্রাসঙ্গিকতা আজকের দিনেও বহাল রয়েছে।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 31, 2022
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পাঠ্য বইতে সংক্ষিপ্ত আকারে পড়লেও বিস্তারিত জানার আগ্রহ সবসময় ছিল। খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারলাম সুলেখক বদরুদ্দীন উমর তিন খন্ডে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস লিখেছেন। তবে বইটিকে শুধু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বলা ভুল হবে; কারণ ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি তৎকালীন সময়ের পাকিস্তানের রাজনীতির চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। সহজ সাবলীল বাক্যে ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ননা ও বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। প্রথম খন্ডে দেশভাগ পূর্ববর্তী ভাষা আন্দোলনের শুরু হতে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বইটির প্রথম খন্ড ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়; বাকি দুই খন্ড যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে বা কোনো কিছু লিখতে গেলে এই বইটির প্রয়োজনীয়তা ইতিহাসের পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন।

আমরা ভাষা আন্দোলন বলতে শুধু ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনাপ্রবাহকে চিহ্নিত করি। মূলত ভাষা আন্দোলনের সময়সীমা আরো বিস্তৃত। পাকিস্তান সৃষ্টি যখন প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে তখন থেকেই ভাষার প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার যে অভিমত ব্যক্ত করেন তার অসারতা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার দায়িত্ব নেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে 'তমদ্দুন মজলিশ' নামক যে সংগঠন সৃষ্টি হয়; ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অনস্বীকার্য। পশ্চিমাদের মূল দাবি ছিল সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাদের প্রধান যুক্তি ছিল উর্দু ইসলামের সংস্কৃতি বহন করে। আরো নানারকম অসার যুক্তি দ্বারা বিভিন্নভাবে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায় তারা। ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার উদ্দেশ্যে তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

পাকিস্তান গণপরিষদে সর্বপ্রথম বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্ন উত্থাপন করেন গণপরিষদের কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আরো অনেকেই এই দাবিকে সমর্থন করেন। গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ এবং তা সংশোধন নিয়ে ব্যপক বিতর্ক হয়। তবে পশ্চিমাদের একগুঁয়েমির কাছে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমী সদস্যদের বক্তব্য টিকতে পারেনি। সিলেটে নুরুল আমিনের প্রভাব থাকার দরুন একটা বড় অংশ উর্দুর পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করে এবং সেখানে বিভিন্ন সমাবেশে গুন্ডা দিয়ে হামলাও চালানো হয়।

ভাষা আন্দোলন দমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হিসেবে গ্রেফতার এবং নির্যাতনকে বেছে নিয়েছিল মুসলিম লীগ সরকার। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা আগমন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে আশার সঞ্চার করেছিল যে হয়তোবা এবার জাতির জনক তাদের কথা শুনবেন। কিন্তু উপুর্যপুরি অনুরোধ, দাবির মুখেও তিনি ইসলামি সংস্কৃতি রক্ষায় উর্দুকে নিয়েই পড়ে থাকেন। আর এদিকে বাঙালিরা আশাহত হয়ে জাতির জনকের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।

ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি ইডেন কলেজ, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান ঢাকা কলেজ) এবং দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাত্মভাবে ভাষার প্রশ্নে এক নীতি অবলম্বন করে। বাংলা ভাষা নিয়ে যে কয়টি ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তার মধ্যে জঘন্য একটি হলো আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলন। এই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তৎকালীন সময়ে লাখ টাকা খরচও করা হয়েছিল। বাংলা ভাষাকে পুরোপুরি মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অনেকটা বেহাত হয়ে গিয়েছে। পাঠ্যবই কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে যখন এই ইতিহাস জানতে যাই, দেখা যায় শুধু একটি দলের বন্দনা। আদতে কিন্তু তা ছিল না। ভাষা আন্দোলন ছিল গণমানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলনে কয়েকটি সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে অংশগ্রহণ করে। ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীদের অবদানকে অস্বীকারের হীন প্রয়াস চালিয়েছেন অনেকেই। অথচ অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল মতিন, তাজউদ্দীন আহমদ (বামপন্থী ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন) ব্যক্তিবর্গ নেতৃত্ব না দিলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। ইতিহাস লেখকেরা এই জায়গায় নিরপেক্ষ থাকতে পারেন নি। দলাদলির ইতিহাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসকে কলুষিত করেছে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৪৭ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদ করার কয়েক বছর পর আরবিকে রাষ্ট্রভাষা করার অভিমত ব্যক্ত করা যেন দূর্বল ব্যক্তিত্বের লক্ষণ। পশ্চিমারা বরাবরই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছে অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা উর্দু ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশেও নিজ নিজ ভাষা প্রচলিত ছিল। শুধু গায়ের জোরেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর ছিল মুসলিম লীগ সরকার।

১৯৪৯ সালে টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে অবৈধভাবে খুররম খান পন্নীকে মনোনয়ন দেয় মুসলিম লীগ। তবুও তরুণ শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন তিনি। মুসলিম লীগ এই পরাজয়ে ভয় পেয়ে যায় এবং ১৯৫৪ সালের আগে অন্য কোনো আসনে নির্বাচন দিয়ে রাজি হয়নি। মুসলিম লীগের এহেন কর্মকান্ডে জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশভাগ পরবর্তী সময়ের শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় মুসলিম লীগ অগণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করে। মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী উপদলের সদস্যরা এই দলের সদস্য হয় এবং মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কার্যকরী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের জেলবন্দিদের নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেছেন লেখক। জেলে কয়েদিদের জোরপূর্বক অনশন ভাঙানো কিংবা তাদের হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের ফিরিস্তি পাওয়া যায় বইটিতে��

বদরুদ্দীন উমরের লেখা আগেও পড়েছি। ইতিহাস হোক কিংবা প্রবন্ধ; তাঁর লেখাতে কখনো বিরক্তি আসেনি। তিনি বামপন্থী রাজনীতির লোক বলে অনেকে তাঁর লেখাকে গ্রহণ করতে চান না, তবে আমি বলবো ভাষা আন্দোলনের উপর এমন বিস্তারিত লেখা দ্বিতীয় আর কারো কলমে উঠবেনা। মাত্র প্রথম খন্ড পড়া শেষ হয়েছে। আরো অনেক ইতিহাস জানা বাকি। আশা করি লেখকের লেখায় মুগ্ধতা বজায় থাকবে। হ্যাপি রিডিং।
Displaying 1 - 2 of 2 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.