Jump to ratings and reviews
Rate this book

সাদা পালকের নির্জনতা

Rate this book
আধুনিকায়নের এই সময়ে আঙুলের ছোঁয়ায় নিমেষেই বদলে ফেলা যায় চোখের সামনের স্ক্রিন। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির রোলারকোস্টারে চেপে এক তুড়িতে হওয়া যায় নিঃশেষিত। কিন্তু তাই বলে সহজ হয়ে যায়নি কিছুই। বাইরে থেকে সাদামাটা হয়ে থাকা ঘটনাগুলো দিনশেষে হয়ে ওঠে ট্রল কিংবা ডার্ক কমেডি। তবে নানান বৈচিত্র্যের মাঝে মানচিত্রের সব প্রান্তের গল্পগুলো সম্ভবত অনেকটাই এক। শব্দচয়ন, চরিত্র, ভাষা কিংবা স্মৃতিচারণ যেমনই হোক না কেন, দিনশেষে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় প্রলোভনটুকু হয়তো মানুষ নিজেই। তাই আটচল্লিশ ফুট উঁচু ঝুল বারান্দার মতো বেদনা বা উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার স্ট্রেইঞ্জনেস না বরং পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় নিঃসন্দেহে মানুষের মন কিংবা মস্তিষ্ক।

248 pages, Hardcover

First published January 20, 2021

3 people are currently reading
38 people want to read

About the author

Mahrin Ferdous

8 books208 followers
Mahrin Ferdous is the author of eleven books across adult and children’s literature. Her fiction inhabits the border of surrealism and magic realism, where social upheaval collides with psychological dislocation and the hidden architectures of memory. Her stories blur reality and the uncanny, drawing readers into worlds that are unsettling yet deeply human.

In 2019, she was named one of Bangladesh’s five most promising young writers by Banglalink Telecom. She received the BRAC Bank–Samakal Literary Award in 2022 for her contributions to Bangla literature. Beyond her books, she serves as Vice President of the Pencil Foundation, a nonprofit dedicated to youth creativity and social engagement.

She now lives in New York, where she continues to write and work.

Email: mahrinauthor@gmail.com

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
14 (38%)
4 stars
11 (30%)
3 stars
11 (30%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 23 of 23 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,654 reviews419 followers
April 30, 2022
৩.৫/৫

বইটিকে "dark coming of age story" বলা যায়।ট্রমা, মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক সমস্যা ও প্রবাস জীবনের সংকটকে উপজীব্য করে লেখা এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র ঋতু, লিলিয়ানা, কেলেন, জ্যাক, মিনিম্যান ও প্রফেসর আয়মান। এদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামষ্টিক জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। লেখনশৈলী ভালো কিন্তু সবক্ষেত্রে মসৃণ নয়।কিছু জায়গায় আড়ষ্টতা ও ছাড়া ছাড়া ভাব আছে, যে কারণে গল্পের সাথে সবক্ষেত্রে একাত্ম হওয়া যায় না বা একটানা উপন্যাস পাঠের মজাটা পাওয়া যায় না ঠিকভাবে।গল্পকার মাহরীন ফেরদৌসকে মিস করেছি এক্ষেত্রে। এতো কথা বললাম কারণ মূল কাহিনি অসাধারণ। লেখিকার প্রজ্ঞা, চিন্তাভাবনার প্রাগ্রসরতা ও জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা মুগ্ধ করার মতো। ঋতুর যাত্রাপথ ও ক্রমোন্নতি জীবন সম্পর্কে আমাদের আশাবাদী করে তোলে।
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
April 4, 2021
"Sometimes words aren’t the right words to say"

অবশেষে বইটা শেষ করলাম। বইটা নিয়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। বইয়ের শুরুটা অসম্ভব ধীরগতির। তারপরেও এই ধীরগতির মধ্যেও আপনি আশা করবেন যে কিছু একটা হোক, কাহিনীর মোড় টা অন্যদিকে যাক, কিন্তু ১৫০ পেইজ পড়ার পরেও কিছুই হয়না। কাহিনী ধীরগতিতেই চলতে থাকে। আরেকটা নেগেটিভ দিক হচ্ছে বড্ড বেশি উপমার ব্যবহার। আমি বলছিনা এটা খারাপ, কিন্তু এটার কারণে মাঝেমাঝে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। আরেকটা জিনিস আমার ভালো লাগেনি 'কারেক্টার ডেভেলপমেন্ট' নামে একটা টার্ম আছে, যেটা এই বইয়ে আমি পাই একদম শেষ ৫০ পেইজে গিয়ে।

আর ভালো দিক হচ্ছে, অনেক সময় আপনার মনে হয়না একটা বই শুরুর দিকে পড়তে খুবই খারাপ লাগতেছে, কিন্তু বইয়ের শেষটা আচমকা ওই বই সম্পর্কে আপনার ধারণাই পাল্টে দেয়, এবইয়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমি শুধু ওই শেষটুকুর জন্য বইটাকে তিন তারা দিবো।
আর আমার কাছে কোন চরিত্রকে মনে রাখার মতো মনে হয়নি।

সবশেষে বলবো আমার ঔপন্যাসিক মাহরীন ফেরদৌস থেকেও গল্পকার মাহরীন ফেরদৌস অনেক প্রিয়। আশা করছি আপনি আপনার উপন্যাস লেখার দুর্বলতাটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আর আমি আপনার কাছ থেকে আরো গল্পের বই চাইইইই!

ফেসবুকে কয়েকজনকে দেখলাম বইয়ের বাঁধাই নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা বলতে, কিন্তু আমি বলবো আমাদের প্রকাশনী গুলোর সত্যিই অনেক উন্নতি হয়েছে। যেমন এই বইটা 'পেন্সিল' প্রকাশনীর। বইয়ের বাঁধাই থেকে শুরু করে প্রচ্ছদ পর্যন্ত সবই টপ নোচ।
আরেকটা বিষয় খুবই চোখে পড়ার মতো, বইতে কোন অটোগ্রাফ না দিয়ে, একটা চিঠির খাম বইয়ের সাথে আটকে, তার ভেতরে লেখকের অটোগ্রাফটা দেওয়া। অনেক ইন্টারেস্টিং না?!
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,960 followers
December 6, 2022
কেনা বই জমিয়ে রাখার একটা বদভ্যাস আমার আছে। ইদানিংকালে যা একটু বুঝতে শিখেছি, বই কেনা এবং বই পড়া সম্পূর্ণ পৃথক দু'টি অভ্যেস। সাদা পালকের নির্জনতা পড়া শুরু করেছিলাম প্রায় আট মাস আগে। প্রথম দুই অধ্যায় পড়ে আর এগোতে পারিনি। কিছুতেই মন বসছিল কোন এক অদ্ভুত কারণে। গত কয়েক দিনে কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকায় আবারো তুলে নেই বইটা। আমার আরেকটা অভ্যেস হচ্ছে, প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রিডিং ব্লক কেটে যায়। তখন যা-ই পাই, গোগ্রাসে পড়তে ইচ্ছে করে।

'সাদা পালকের নির্জনতা' উপন্যাসটিকে আমি একটি যাত্রার সাথে তুলনা করবো। গল্পের মূল চরিত্র ঋতুর সাথে এই যাত্রায় পাঠকেরাও নিজেদের যাত্রী হিসেবে আবিষ্কার করবে। ঋতুর একাকীত্বে লীন হবে কিছু সময়ের জন্যে। যাত্রাপথের সব দৃশ্য যেরকম ভালো লাগেনা, অস্বস্তির উদ্রেক ঘটায়, ঋতুর কাজকর্মও মাঝে মাঝে ভালো লাগবে না, অস্বস্তির উদ্রেক ঘটাবে। কিন্তু বাস্তবতা মাত্রই কিছু মাত্রায় বিরক্তিকর। সেখানেই উপন্যাসটির স্বার্থকতা ও সৌন্দর্য, আমি বলবো। ভীষণ বাস্তবিক। কোন নাটুকেপনা নেই। বাড়তি হিসেবে লেখিকার পর্যবেক্ষণ, প্রজ্ঞা মুগ্ধতার রাশ ছড়াবে। মোটের উপরে একটা কামিং অফ এইজ স্টোরি(Coming of age)। প্রথম দিকে খুব বেশি ধীর, তবে আমার মতে সেটা গল্পের প্রয়োজনেই। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয়েছে গল্পটা আসলে কি? শুধু কি এলোমেলো অনেকগুলো তথ্যের মিশেল? পরক্ষণেই আবার মনে হয়েছে আমাদের প্রত্যেকের জীবনই তো আসলে অনেকগুলো এলোমেলো গল্পের সমন্বয়। ঋতু, লিলিয়ানা, কেলেন, জ্যাক, মিনিম্যান- সবার জীবনের শূন্যতাই সাদা কালো অক্ষরে গড়াগড়ি খেয়েছে ভেতরের পাতাগুলোয়।

সাদা পালকের নির্জনতা টানা পড়া যায় না। বর্ণনায় কিছুটা আড়ষ্টতা লক্ষণীয়। লেখিকা হয়তো এই টোনেই গল্প বলতে চেয়েছেন। আমার অসুবিধে হয়েছে, সেটা পাঠক হিসেবে আমার ব্যর্থতা হিসেবেই ধরে নেব। লেখনশৈলী দারুণ। ২৪৮ পৃষ্ঠায় বেশ বড় কলেবরে লেখা হলেও ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের অংশটুকু নিতান্তই অল্প; একদম শেষ আখ্যানে।

সব মিলিয়ে সাদা পালকের নির্জনতার পাঠ দারুণ একটি অভিজ্ঞতা।
Profile Image for Pranta Dastider.
Author 18 books328 followers
April 11, 2021
অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা হয়ে রইল বইটি পড়ার সময়টুকু।
Profile Image for Mostafizur Rahman Shuvo.
9 reviews7 followers
January 26, 2021
গল্পটা খুঁজে যাওয়ার। প্রতিনিয়ত খুঁজে যাওয়ার। আমরাও কি খুঁজে যাই কিছু? তারপর পেয়ে যেতে যেতে মনে হয়, 'নাহ, পাজলটা মিললো না!'

ঋতু, লিলিয়ানা, কেলেন, ভিন্ন দেশের এবং ভিন্ন মানসিকতার তিনটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন তিনটি গল্প নিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন ফ্ল্যাটমেট হয়ে যায়। আর সময় গড়ানোর সাথে সাথে পরিচয় হয়ে যায় মিসেস মরিসন, বৃদ্ধ কোচার দম্পতি, ডাস্টিন, ফারজানা, পল, মুডি, জ্যাক, প্রফেসর আয়দিন এবং মিনিম্যানের সঙ্গে।

ঋতু কি খুঁজে যায় অনবরত?
লিলিয়ানা কি হিসেব মেলাতে পারে?
কেলেন নিজের কাছ থেকেই বা কেন পালিয়ে বেড়ায়?
আর মিসেস মরিসন? কেন ঋতুর সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব তিনি?

বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে মার্চের এক শীত শীত বিকেলে যে জার্নিটা আপনি শুরু করবেন, সেই জার্নির এক এক স্টেশনেই মিলে যাবে উত্তর। উত্তর মেলাতে মেলাতে যখন প্রফেসর আয়দিনের সাথে আপনার দেখা হয়ে যাবে, আপনি চমকে যাবেন। আপনি হয়তো ভাববেন আমার মতোই, কেন প্রফেসর আয়দিনের মতো করে সব কিছু দেখা যায় না? অথবা কেন প্রফেসর আয়দিনের মত করে যে কোন পরিস্থিতিকে সহজ করে সামলে নেয়া যায় না?

তারপর এক সময় আপনার দেখা হয়ে যাবে মিনিম্যানের সঙ্গে। মিনি কুপার চালানোর কারণে যার নাম হয়েছে মিনিম্যান। আচ্ছা তার আসল নাম কি? নাহ, কেউ জানে না। এক লাইটহাউজে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জলে আলোছায়ার খেলা দেখতে দেখতে গড়গড় করে মিনিম্যানকে অনেক আগে ঘটে যাওয়া কিছু দুঃস্বপ্নের মতো সব ঘটনা বলে ফেলা ঋতু কি জানে? আচ্ছা, নাম কি জানতেই হয়?

আর শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়ানো কোন মেঘের মতো মিনিম্যান, সেও কি কখনো তার এই ভ্রমণ নিয়ে ভাবে? তারও কি মনে হয়, নাহ অনেক হয়েছে, এবার এই শহরের বৃষ্টি হয়ে যাই!

এই জার্নিতে আপনার দেখা হয়ে যাবে জ্যাকের। জ্যাক অনেকটা হঠাৎ আসা বাতাসের মতো। তবে জ্যাক ঋতুর সা��ে সাথে আপনাকেও একটা গানের সন্ধান দিয়ে যাবে। গানের একটা লাইন কি সুন্দর!

'sometimes words aren't the right words to say...'

আমি গানের সন্ধান দিচ্ছি না। বইয়ের এমন এক মুহুর্তে গানটার সন্ধান দেয়া আছে, যে মুহুর্ততে এই গান শুনতে শুনতে বই পড়ার চেয়ে দারুণ কিছু আর হতে পারে না!

পড়ে ফেলুন মাহরীন ফেরদৌসের সাদা পালকের নির্জনতা। আপনি যদি পড়তে পড়তে ডুবে যেতে চাওয়া এক পাঠক হন, নিঃসন্দেহে আপনার জন্য শব্দের সমুদ্র সেখানে অপেক্ষায়। আর আপনি ব্যাস্ত পাঠক হলে? জেনে রাখুন, পড়ার শহর থেকে মাঝেমধ্যে রেড সিগন্যাল হারিয়ে যায়, আপনার অজান্তেই।

এই দেখুন, বইয়ের শেষটা নিয়ে কিছু বলাই হলো না। আচ্ছা, নাই বা বলি। তবে হ্যাঁ, ভীষণ রকম মন ভালো করা এক এলোমেলো রোদ আর উদাস বাতাসের সকাল নিয়ে শেষটা হয়তো কোন নতুন শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে যাবে আপনাকে।
বই পড়া হোক আনন্দময়।
Profile Image for Tahjiba Adrita.
103 reviews34 followers
January 28, 2022
উপন্যাসের শুরুটা খুব স্লো,কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হতে লাগলো উপন্যাস টা যেনো বিভিন্ন মানুষের জীবনের বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো কীভাবে একবিন্দু তে এসে মিলিত হয় সেই গল্প বলছে। আসলেই কিন্তু তাই, ঋতু,লিলিয়ানা,কেলেন কিংবা প্রফেসর বা প্রতিবেশী বুড়ো দম্পতি সবার জীবনের গল্প গুলো ভিন্ন,কষ্ট গুলো ভিন্ন কিন্তু সবাই কীভাবে যেনো আবার একই সূত্রে গাঁথা। উপন্যাস টা পড়ে মনে হতে পারে অনেক এলোমেলো তথ্য আবার এই এলোমেলো তথ্যগুলোই কেমন যেনো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে। এটাই বোধহয় এই উপন্যাসের সৌন্দর্য। প্রতি পাতায় পাতায় এক অন্যরকম বিষাদ আর প্রচন্ড রকম একাকীত্বের উপন্যাসটি মনে একধরনের মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করে। কেমন জানি একা একা লাগে।পুরো উপন্যাস জুড়ে কেমন জানি শূণ্যতা। এই উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে উপন্যাস টা প্রচন্ড রকমের বাস্তবভিত্তিক।বাস্তবে আমরা সকলেই তো একা, সারাক্ষণ আমরা সবাই কিছু না কিছু খুঁজে বেড়াই। উপন্যাস টাও এইরকম কিছু একটা খোঁজার মধ্যে দিয়েই শেষ হয় আবার মনে হতে পারে আসলে শেষ হয় না কিছু একটার শুরু বুঝি হলো।
Profile Image for Anika Kibria.
1 review
February 20, 2021
" মানুষ যখন জানে কেউ একজন তাকে আর ভালোবাসে না তখন সে সবার আগে কী অনুভব করে? নিশ্চয়ই তাৎক্ষণিকভাবে শূন্য হয়ে যায়! আর মানুষ যখন বুঝতে পারে কেউ একজন অনুভব করার পরেও থাকতে পারছে না, তখন সে হয়ে ওঠে নীরব। হয়ে ওঠে একটা নিঃসঙ্গ সেতু। যার অনেক অনেক নিচে জল। যেখানে কোন ছায়া পড়ে না, কেউ আসেও না... "

~The moment I opened the book, I had to smile. There was a little token of delight from the author. So, readers are in for a surprise that’s going to put a smile on their faces.

First of all, I have to say it was an AMAZING read, a page turner, sets out to deliver a realistic and insightful look at the lives and emotions of a handful of city dwellers, in a small town of the Midwest, USA. I simply loved the way the author has dealt with the aspects like solitude, agony, and of course, growth through these amazing and diverse personalities which is praiseworthy.

The story focuses on the cynical yet dreamer protagonist, Ritu, those close to her, and the relations among them. I must say the representation of the lead was incredibly done. It was truly refreshing to read a flawed, complicated yet relatable character whose perceptions, regrets, courage all of us share in some way or the other.

But that's not all. There were other characters that were, now and again, my top picks and, furthermore, dominated the plot from time to time. Like perfectionist Liliana, wandering Kellen, idealist Aidin and, mysterious Mini Man. All these characters have offered something amazing. Sometimes a learning, sometimes acknowledgment and sometimes just a sigh.

But I have to confess that, for me, proud transsexual Marylyn, in a real sense, stole the show. She kept me hooked to this book from her entry to till where she left. She is courageous, fiery yet mindful and adoring, always speaking her mind and is never reluctant to give a reality check when required. However, beneath her pride is a warm heart that she shares with her friends. There were times I applauded her, wanted to hug her, wished for her friendship.

To be honest, "Shada Paloker Nirjonota" is about individuals and also a story about an endless journey and a transition as seen through a millennial's eye. And the 'Nirjonota' is not a solitude of an individual, its collection of thoughts from all the characters, silent as the sea and with spontaneity of waves. ~🖤
Profile Image for Mosharof Zitu.
24 reviews3 followers
February 6, 2021
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো কারো ডায়েরীর পাতা পড়ছি যে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। কিংবা খুঁজে পেলেও হারিয়ে ফেলছে। হয়তো সে নিজেকেই খুঁজছে। মাহরীন ফেরদৌসের লেখার সাবলীলতা ভালো লাগে। চরিত্রের অযথা অলংকরণ নেই, অপ্রয়োজনীয় মাহত্ম তুলে ধরা নেই। আর দশটা উপন্যাসের মতো মনে হয় না কোন কালজয়ী কাহিনী পড়তে বসেছি, মনে হয় খুব সাধারণ, আশপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোন গল্প পড়ছি যা হয়তো নোটিশ করি না সাধারণত। এই উপন্যাস পড়তে পড়তে নিজেকে ঋতুর আশপাশে আবিষ্কার করেছি। লিলিয়ালা-কেলেন বা নেপালী মেয়েটাকে ঋতুর চোখে দেখেছি। জ্যাকের সরলতা, মিনিম্যানের কোথাও একটা শূন্যতা কিংবা প্রফেসর আয়দীনের স্নেহ-ভালবাসা - সব কিছুই অনুভব করতে পারছিলাম ঋতুর মতো করেই। গত দিন দিন রাতেই অল্প অল্প করে বইটা পড়ে শেষ করে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। হাজারো পাওয়া না পাওয়ার ভীড়ে শূন্যতাই বাসা বাঁধে, তবুও চলতে হয়। নতুন করে কাউকে খুঁজতে ইচ্ছে করে। নতুন করে শুরু করতে হয়। জীবনটা এমনই বোধহয়!
Profile Image for Nawshin Sadia.
8 reviews14 followers
May 26, 2021
*** কারণ বাস্তবতা হলো, পথে নেমেই মানুষ হারায় পথ আর পৃথিবীতে কেউ কারো ভ্রমণ সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে না। প্রতেক্যেই তার নিজের জীবনের উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র।তাই অন্য কেউ সেটা নিয়ে হয়তো পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে ধারণা পেতে পারে কিন্তু পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব নয়। মানুষকে পথ চলতে হয় একা। তবে দিনশেষে মানুষ আসলে একলা বাঁচে কথাটাও পুরোপুরি ঠিক নয়।মানুষ বাচেঁ তার চারপাশের সবকিছুর ও সবার স্পর্শ নিয়ে-স্মৃতি নিয়ে। যারা তার জীবনে এসেছিল বা এসেছে তাদের সবাইকে জুড়ে থেকে বাঁচে।


*** কারণ, মানুষ যত একে অন্যের কাছে আসে তত মেদহীন হয়। তত প্রকট ও স্বচ্ছ হয়ে আসে তার মুখ ও মুখোশ।
Profile Image for Nuha.
Author 9 books25 followers
March 22, 2021
‘শ্যাডেনফ্রয়েডা’ খটমটে একটি জার্মান শব্দ যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘অন্যের দুঃখে সুখী হওয়া’। সাদা পালকের নির্জনতার প্রোটাগনিস্ট ঋতুকে প্রথম পড়বার পর এরকমই মনে হয়েছিলো। ঠিক যেন ওই গানটার মতো- ‘তুমি যদি ভালো থাকো, কষ্টে আমি রই…’
ঋতু বাংলাদেশী মেয়ে। সময়ের গ্যাঁড়াকলে পড়ে যার বর্তমান নিবাস আমেরিকায়। তার ফ্ল্যাটমেট লিলিয়ানা। যার ধ্যান জ্ঞান অধ্যবসায়ে শুধুই অন্যজীবন। সাথে আরও আছে পোড় খাওয়া জীবন নিয়ে চলতে থাকা চরিত্র কেলেন। যার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে ফেলা যায় ‘হাইল হিটলার’। আছে হ্যারি পটার সিরিজের শুভ্র শুশ্রুষা মন্ডিত ডাম্বল্ডোরের মত শুদ্ধ মানুষ প্রফেসর আয়দিন। আর শৈবালে জন্মে থাকা শিশিরের মত ক্ষণ সময়ের আগন্তুক রহস্যময় মিনিম্যান। এদের ঘিরে সৃষ্টি হয় একটা চক্র। সেই চক্রের বাঁকে বাঁকে জমতে থাকে গল্প। আপ্স এন্ড ডাউন্স।
বলা যায়, পালকের মত নাজুক সময়কে কেন্দ্র করা অথচ বাস্তবতা আবর্তিত একটা উপন্যাস সাদা পালকের নির্জনতা। বই হাতে নিতেই প্রচ্ছদের একা মেয়েটাকে কিছুটা পরিচিত লাগে। সাদা এব্রোথেবরো দেয়ালের মাঝে একগুচ্ছ ফুল উপেক্ষা করে কেন সে দাঁড়িয়ে আছে? সে কি বলতে চাইছে, বুকের মধ্যে ঝড় নিয়ে তো অনেকেই চলে, শক্ত হাতে সেই ঝড়কে পরখ করতে পারে কয়জন? উত্তর খুঁজতেই বইয়ের পাতা উল্টে চলে যাই দূর দেশ আমেরিকায়। একলা মেয়ে ঋতুর সাথে পরিচয় হয়। জানতে পারি, অনেক বছর আগে কিছু একটা হয়েছিলো, যা টাইম মেশিনের মতো টেনে ক্ষণিকের জন্য হলেও অতীতে নিয��ে যায়। মাথা ঝেড়ে তারপর ঋতুর বাস্তবে ফেরা। নিজের সাথেই সমঝোতা তার।
ফ্ল্যাটমেট লিলিয়ানা যখন নানা রঙ্গে নিজেকে রাঙ্গিয়ে তুলে, ঋতু তখন নির্বিকার। কেলেনের উপস্থিতিও সেইখানে আঁচড় ফেলতে পারে না। বরং ঋতুর ডার্ক হিউমারে বোঝা যায় জীবনকে অনেকখানিই নেড়েচেড়ে দেখেছে সে। তাই উপন্যাসের পাতায় রঙ চড়তে চড়তে সামনে এগুলেও ঋতুর ভাবভঙ্গি থাকে সাদা-কালো। গল্পের ফাঁকতালে হুট করে চলে আসে ���তুর বন্ধু, রেবেল ফারজানা। জীবনের পোড় খাওয়া অধ্যায় তাকেও কি বাধ্য করে নেয় জীবনের সাথেই সমঝোতা করে নিতে? এই চরিত্রটা ঝড়ের মতো হলেও আপোষ করতে জানে না বলে, ঠিকই দাগ কাটে মনে।
গোলকধাঁধার একেক পরতে বাঁচতে গিয়ে, আমরা এমন কিছু হয়তো খুঁজে পাই যা আমাদের এক টুকরো বাতাস বুক ভরে নিতে সাহায্য করে। সাদা পালকের নির্জনতায় এমন একটি চরিত্রের নাম জ্যাক। জীবন যখন থমকে যায় তখন করুণাধারায় আসতে হয়। জ্যাক যেন বিশুদ্ধ বাতাস। কিন্তু তারপরেও ঋতু আর জ্যাকের গল্পটা আমাদের জানিয়ে দেয়, সব ঠিক থেকেও কখনও কখনও মধুরেণ সমাপয়েত হয়ে উঠে না। তাই দূর থেকে হাত নাড়িয়ে জানিয়ে দিতে হয়, ‘আমি আছি, এই বন্ধুত্বটাই শুধু টিকে যেতে পারে…’ আর পাঠক হিসেবে আমি ভাবি, ম্যাচিওর মানুষদের গল্পগুলো এমন হাহাকার জাগানিয়া হয় কেন?
এক বুক বিষবাষ্প ছেড়ে সুদূর জার্মান থেকে আসা চরিত্র কেলেনও একদিন ঋতুর বন্ধু হয়ে যায়। ঋতুর প্রতিদিনের খাতায় কিংবা ভোরের এক মগ কফির মতো, কেলেন ঋতুকে কখন চিনে নেয় তা বুঝতে বুঝতে আমারও মনে হয় এটাই কি কাঙ্ক্ষিত বন্ধুত্ব? যাদেরকে প্রথম দেখায় আমাদের অতো ভাল লাগে না, তবুও কোন একদিন জেনে যাই, চলার পথে সেই তো দেখেছিলো আমাকে খুঁটিয়ে?
তবে উপন্যাসের যে চরিত্রটিকে নিয়ে একটু বেশি ভাবি তার নাম ‘মিনিম্যান’। মিনিম্যান এঞ্জেল নাকি ডিমন সেই সিদ্ধান্ত আসলে পরের, তবে ঋতুর জন্য সে সেই পরশ পাথর যা লোহাকে স্বর্ণ করে তুলে। কাঠখোট্টা ঋতু তাই খোলস ভেঙ্গে লাল শাড়ি পরে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। যেন বয়ঃসন্ধির প্রথম ভালোবাসা ছুঁয়ে দেওয়ার এত বছর পর সে নারী হলো। হলো একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। মিনিম্যানের পরশেই বরফ গলে হলো হিমালয়ের নদী। অনেক দিন ধরে বুকে চেপে থাকা যে ক্ষরণ, তা গোলাপকলি হয়ে ফুটল। মিনিম্যানও যেন গন্তব্য খুঁজে পেলো এখানে এসেই। তবে জীবন কোন রূপকথা নয়, তাই মিনিম্যানকে আমরা পাই যাযাবরের বেশে। মুসাফির এক প্রাণ, যাকে আটকে রাখা যায় না। শুধু আমরা বুঝে নিই- আমাদের সবার একজনকে প্রয়োজন হয়- যেখানে আত্মাকে খুলে দেয়া যায়। যেখানে গল্প বললে কেউ থামিয়ে দেয় না, যেখানে প্রতি স্পর্শে মনে হয় আমি জানি কেন ‘ডার্কনেস ইজ বিউটিফুল’,। আর উপলব্ধি করতে পারি কেন দুই মিনিটের চেয়ে একশ বিশ সেকেন্ডে বেশি নৈকট্য আসে।
আমরা যখন একটা বই পড়ি কিংবা একটা মুভি দেখি, সাধারণত একটা তীব্র ধারণা থাকে প্রোটাগনিস্টকে আমরা ভালবাসবো। ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ এই জায়গায় এসে একটু ভিন্ন ধাঁচের। অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলেও ঋতুকে ভালোবাসা যায় না। ঋতুর কর্মকান্ড বার বার ভাবায়, এই মানুষটা এমন কেন? এই মানুষটা ভীতু, এই মানুষটা মেপে কথা বলে, এই মানুষটা হিসেবী… তারপর পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকলে এই মানুষটাই একসময় পেখম মেলে ধরে। বুঝতে পারি যা দেখি তা ঠিক না। সময়ের ঘোরটেপে আমরা এই উপন্যাস পড়তে পড়তে একবার অতীতে যাই, আরেকবার আসি বর্তমানে, প্রতিটা সিকুয়েন্স এক সময় মিলে যায় আর এই ব্যাপারটাই মনোযোগ ধরে রাখে বইটি পড়ার জন্য। একের পর এক চরিত্ররা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রমা নিয়ে পর্দার সামনে হাজিরা দিয়ে যায়। আর পাঠককে আরেকটু ভাবায় সুখ পাখি কি আসলেই এক্সিস্ট করে এই বসুধায়? নাকি এই জীবনে হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকাটাই আসলে মূল মন্ত্র। মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টির মত সুখ এসে ছুঁয়ে দিলেও, দৈনন্দিন জীবনে তার দেখা নিয়মিত হয় না কখনওই। অল্প সময়ের ক্ষণিক প্রাপ্তিটাই বেঁচে থাকার রসদ যোগায়, যেন এক মূহুর্তের ভালো থাকা আর অনেকদিন ভালো থাকার কোন পার্থক্য নেই?
সাদা পালকের নির্জনতা ভারী বই। অনেকগুলো পাতা। পাতা উল্টাতে ক্লান্ত হই না তবুও। মৃদু কফির ঘ্রাণের মত আস্তে আস্তে বইয়ের চরিত্রগুলো মিশে যায় আমার মনে। বই শেষ করে ভালোলাগাটাই যেন হাহাকার হয়ে ওঠে। মনে হয় কেন আরো একটু বেশি সময় এই কেলেন, লিলিয়ানারা রয়ে গেলো না সাথে? মনে হয় কোনদিন ট্রেন চেপে কি আমিও দেখা পাবো প্রফেসর আয়দিনের? মিষ্টি হেসে জীবন দর্শনের খাতা খুলে তিনি কি আমাকে বুঝিয়ে দিবেন কিভাবে সন্ধি করে নিতে হয় চড়াই-উৎরাইয়ের সাথে? ঋতু কি ক্লাস আর কাজের ফাঁকে সাবওয়ে থেকে স্যান্ডউইচের এনে চিবুতে চিবুতে একটু তাকাবে আমার দিকে? একেকটা চরিত্রের একেকটা গল্প নিয়ে সময়নদীর মত বয়ে চলা এই উপন্যাসটির জন্য রইলো পাঁচটি তারা। আর লেখকের জন্য রইলো শুভকামনা। নিজেকে ভেঙ্গে এখানে নিয়ে এসেছেন বলে নয়, এই ধারা যাতে চলতে থাকে সেই জন্য।
বইঃ সাদা পালকের নির্জনতা
লেখকঃ মাহরীন ফেরদৌস
প্রকাশনীঃ পেন্সিল পাবলিকেশনস
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ছাড়াও বইটি পাওয়া যাচ্ছে রকমারী সহ অন্যান্য অনলাইন বুকশপে।
Profile Image for Satyajit Roy.
4 reviews2 followers
April 19, 2021
ফরেস্ট গাম্প মুভির একটা উক্তির সাথে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত, ‘আমাদের জীবন হচ্ছে একটা চকোলেট-এর বাক্সের মতোন। আমরা কখনোই জানিনা আমরা কী স্বাদ পেতে চলেছি!’ এমন সুন্দর একটা উক্তির সাথে যদি আমরা খুব হতাশাবাদী বা নেগেটিভ একটা বক্তব্য জুড়ে দেই, তাহলে সেটি হয়তো ঠিক এমনটা হতে পারে, ‘কী স্বাদ পেতে চলেছি আমরা সেটা জানিনা ঠিকই, কিন্তু বাক্স খুললে পরে চকোলেট-ই যে পাবো, তাতে তো আর কোন আশ্চর্যের কিছু নেই!’ একই রকমভাবে বলতে গেলে, বাস্তবতার খেরোখাতায় আমাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্পের প্যাটার্ন আলাদা হয়। কিন্তু প্রতিটি গল্পের যে সারমর্ম কিংবা মূলবক্তব্য থাকে সেটা শেষপর্যন্ত একই হয়ে যায় অথবা কোন না কোনভাবে টুইস্ট/শেষটুকু একে অপরের সাথে মিলে যায় নদীর মোহনার মতো। তাই যখন চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাওয়া চেনা ট্রেনের গল্পের থিম কোন লেখক/লেখিকা তার গল্প/উপন্যাস-এর মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরতে চান, তখন উনার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে দুইটি বিষয়। প্রথমটি হলো, চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করা সেই চেনা ট্রেনের গন্তব্য কেমন হবে? আর দ্বিতীয়টি হলো, গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে পথিমধ্যে কিভাবে কিছু প্ল্যাটফর্মের নতুনভাবে সন্ধান দেওয়া যাবে যেখানে এর আগেও হয়তো ট্রেন থেমেছে ঠিকই কিন্তু সেভাবে চোখ মেলে দেখার অবকাশ হয়নি! আমার নিজস্ব মতামত হলো, যখনই একজন লেখক/লেখিকা এই মূল দুই চ্যালেঞ্জ উৎরে যাবেন, তখনই চেনা ট্রেন থেকে নেমেও পাঠকরা পাবেন ‘শেষ হইয়াও, হইলো না শেষ’-এর স্বাদ। আর পাঠকের এই স্বাদ/তৃপ্তিটুকুই হচ্ছে লেখক/লেখিকার সফলতা।
শুরুতেই এমন জাজমেন্টাল বিশাল ভুমিকা লেখার কারণ হলো জনপ্রিয় লেখিকা মাহরীন ফেরদৌস-এর এবারের উপন্যাস ‘সাদা পালকের নির্জনতা’র মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আমাদের চেনা পরিচিত কিছু জীবনের গল্প; যেখানে রয়েছে সম্পর্কের ভাঙ্গাগড়া, রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন; আরও রয়েছে একাকীত্বের চোরাবালিতে মানুষের নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলার কথা আর বেঁচে থাকাকে সুন্দর করার কিছু জীবনদর্শন। সমসাময়িক ঘটনা কিংবা চিরাচরিত কিছু বিষয় শুধুমাত্র বাক্যবুননের দক্ষতায় কিংবা উপস্থাপনের আলাদা ভঙ্গিতে অন্যরকমভাবে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারা, লেখিকা মাহরীন ফেরদৌস-এর শক্তিশালী একটা দিক বা কম্ফোর্ট জোন। এজন্য তিনি ছোট গল্পের লেখিকা হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। তবে লেখিকার এবারের উপন্যাসের সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে, মূল বিষয়বস্তু চেনা পরিচিত গল্পের হলেও তিনি শুধুমাত্র উনার বাক্যবুননের দক্ষতা ও উপস্থাপনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকেননি। তিনি একইসাথে জোর দিয়েছেন উপন্যাসের চরিত্র বিন্যাস ও পার্থক্য��; গুরুত্ব দিয়েছেন প্রতিটি মানুষকে দেখার/বিশ্লেষণ করার নানান দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং মানুষের একে অপরের সাথে কানেক্ট হওয়ার অদ্ভুত কিন্তু সত্যিকার কারণগুলোতে। লেখায় উনার এই বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল করে একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমি খুশি, কারণ এই বিষয়গুলোই উনাকে লেখিকা হিসেবে আরও বৈচিত্রময় এবং সফল করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের সাধারণত একটা কমন ফ্যান্টাসি থাকে যে উপন্যাস/গল্��/সিনেমার প্রধান চরিত্র হবে আকর্ষণীয় এবং পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, মোটামুটি পারফেক্ট একজন মানুষ, যাকে সহজেই ভালবেসে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ উপন্যাসটির প্রথম কিছু পাতা উল্টালেই দেখা যাবে, প্রধান চরিত্র ‘ঋতু’ মোটেও তেমন একজন মানুষ নয়। সে বরং টিপিক্যাল চিন্তাভাবনার, কিছুটা বিরক্তিকর, পালানো স্বভাবের এবং প্রচন্ড বোরিং একজন মানুষ। শুরুতেই এই ভিন্ন স্বাদটুকু দিতে গিয়ে লেখিকা ‘ঋতু’ চরিত্রটির বিন্যাসে এতো বেশি মনোযোগী হয়েছেন যে উপন্যাসের শুরুটা তাই খুবই ধীর গতির হয়েছে বলে আমার ধারণা। আর এই ধীর গতির কারণে বইটি একটানা পড়ার ইচ্ছায় হঠাৎ একটা ব্যাঘাত ঘটেছে শুরুতে। ‘লিলিয়ানা’ চরিত্রটি ভালই সঙ্গ দিয়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। জীবনের শত মারপ্যাঁচ-এর পরেও সবকিছুকে সাধারণ ও সোজাসাপ্টা ভাবে নেওয়ার এবং পরখ করে দেখার মানসিকতাসম্পন্ন লিলিয়ানা তাই আলাদাভাবে ভাল লাগা তৈরী করেছে এই উপন্যাসে। তবে আমার মনে হয় ‘লিলিয়ানা’ চরিত্রটি দিয়ে যতোটা না আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির একটা গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে, তার চেয়েও বেশি প্রোটাগনিস্ট ঋতু ও সিমপ্লিসিটির মধ্যকার বিশাল পার্থক্যটাকে পারফেক্টলি অনুভব করানো হয়েছে। এর মাধ্যমে লেখিকা নিজের অভিজ্ঞতার একটা ছাপ রেখেছেন। ‘কেলেন’ চরিত্রটিকে পাঠকের খুব কাছের এবং চেনা একজন মানুষ হিসেবে মনে হবে পুরো উপন্যাসে। খুব পরিচিত স্বভাবের একজন মানুষ, যে জীবন থেকে পাওয়া সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যেতে চায় আর সেজন্য সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যায় এদিক সেদিক; যে সব দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রাখতে চায় নিজের ভিতর কিন্তু কেউ একটু কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিলেই সবকিছু শেয়ার করে ফেলে অকপটে। উপন্যাসে ‘কেলেন’ চরিত্রটির মাধ্যমে লেখিকা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, আসলে সব ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া হয়তো সহজ, কিন্তু নিজের থেকে পালিয়ে যাওয়া যায় না কখোনই; তাই পালিয়ে গিয়ে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও সবসময় ভাল থাকা যায় না। ‘প্রফেসর আয়দিন’-এর চরিত্রটি খুব পজিটিভ একটা চরিত্র এই উপন্যাসে। সারাদিন অনেক মেঘ জমে জমে একটা বিচ্ছিরি আবহাওয়ায় বিরক্ত ধরে গেলে, এক পশলা বৃষ্টি যেমন মন ভাল ও শান্ত করে দেয় ঠিক তেমন কিছু অনুভুতি দিয়েছে প্রফেসর আয়দিন-এর প্রতিটি এন্ট্রি এবং তার নিজস্ব জীবনদর্শন। তবে পুরো উপন্যাস শেষ করে মনে হয়েছে এই চরিত্রটি নিয়ে আরেকটু বেশি কাজ করা যেতো। অথবা ঘটনাক্রমে এই চরিত্রের এন্ট্রি কিংবা কিছু জীবনদর্শন আরেকটু বাড়িয়ে দিলে উপন্যাসটি আরও সুখপাঠ্য হতো। উপন্যাসের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড চরিত্র হতে পারে ‘জ্যাক’ চরিত্রটি। উপন্যাসে জ্যাক-এর গল্প যেখানে গিয়ে মোটামুটি শেষ হবে, সেখানে গিয়ে পাঠক নিঃসন্দেহে নিজের ভেতর একটা মিশ্র অনুভুতির সন্ধান পাবে। ঠিক বৃষ্টির আগে/পরের ঠান্ডা ভেজা বাতাসের মতো। কখনো মন ভাল করে দেয় তো আবার কখনো মন ভাল করা কোন স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েই মন খারাপ করিয়ে দেয়। প্রোটাগনিস্ট ঋতু’র বান্ধবী হিসেবে ‘ফারজানা’ চরিত্রটি খুবই যুক্তিযুক্ত হয়েছে। খুব স্বল্প পরিসরে সমসাময়িক কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে এর মাধ্যমে। পুরো উপন্যাসে খুবই পরিমিত এবং যথোপযুক্ত ব্যাবহার হয়েছে এই চরিত্রটির। বিশেষ করে বলবার মতো আর একটা চরিত্রই বাকী থেকে যায়; সেটা হলো ‘মিনিম্যান’। অনেকটা ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ টাইপ বৈশিষ্ট্যর কারণে উপন্যাসের নায়ক হিসেবে সহজেই আখ্যা দেওয়া যায় মিনিম্যানকে। তবে মূল উপন্যাসে মোটেও এতো প্রেডিক্টেবল আর সহজ নয় এই চরিত্র। লেখিকা এই চরিত্রকে আসলে সাজিয়েছেন ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম; এরপর চলে গেলাম’-এর মতো করে। মিনিম্যান-এর চরিত্রটি লেখিকা বুদ্ধিমত্তার সাথে খুব স্বল্প পরিসরে রহস্যময়ভাবে তুলে ধরেছেন কিভাবে সেটা বুঝা যায় যখন উপন্যাসে নিজের সম্পর্কে মিনিম্যান ঋতুকে বলে,
‘এত কিছু ঘটে গেছে এক জীবনে যে আগের সব ভন্ডামি ছেড়ে সৎ ও ভদ্র মানুষের জামা গায়ে দেওয়ার পথে নেমেছি। এতোকিছু বিলীন করে এসেছি জীবনে যে এখন গর্তে লুকিয়ে থাকা প্রাণি বাদে অন্য কিছু মনে হয়না নিজেকে। নিজের ওপর বহুকষ্টে নিয়ন্ত্রন ফিরে পেয়েছি। জায়গা বদল করে পরিযায়ী পাখির মতো ছুটে বেড়ালে টিকে থাকতে পারি। কিন্তু একজনের পাশে থাকলে আমার মনে হয় সেই আমার গন্তব্য। একান্ত নিজের….. মনে হয় যেন শিকড় জন্মে যাচ্ছে!’
খুব ছোট পরিসরে আসা এই চরিত্র তাই সহজেই দাগ কেটে যাবে পাঠকের মনে এবং মিনিম্যান-এর রহস্য জানার আগ্রহ অনেক পাঠকেরই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ বলে, রহস্যময় মিনিম্যান এর রহস্য খোলাসা হয়নি বলেই হয়তো ঋতুর নিজেকে ফিরে পাওয়াটা অনেকটুকু ভাল লাগার অনুভুতি দিয়েছে আর কানেক্ট করতে পেরেছে পাঠককে। তাই আমি চাই মিনিম্যান-এর রহস্য খোলাসা না হোক! পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকুক যারা একই করিডোরে হেঁটেও, একে অপরকে চিনেও, একে অপরকে জানেনা পরিপূর্ণভাবে!
সার্বিক বিবেচনায় ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ উপন্যাসটির বিশেষত্ব হচ্ছে, উপন্যাসে লেখিকা দারুণভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন মানুষ একে অপরের সাথে কতোই না অদ্ভুত আর সামান্য কারণে কানেক্ট হতে পারে! এবং এই কানেক্ট হওয়ার ব্যাপারটা যে শুধুমাত্র পরিচিতিতে থেমে থাকে না বরং দৈনন্দিন জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে খুব গাড়োভাবে এই ব্যাপারটা লেখিকা মূল চরিত্রের বাইরে গিয়েও বুঝিয়েছেন বিভিন্নভাবে। যেমনঃ পার্কিং লটের একাকী বৃদ্ধের চরিত্র দিয়ে, যিনি প্রতিদিন একই জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে একই খাবার খেতেন বলে ঋতুর ইচ্ছা হতো তাকে নিজের টাকা দিয়ে কিনে একদিন স্যান্ডুইচ খাওয়ানোর; কিন্তু সে ইচ্ছা সত্যি হওয়ার আগেই একদিন সে বৃদ্ধ আত্মহত্যা করে বসেন! অথবা কেলেন-এর ঋতুকে বলা সেই অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে,
‘তোমার কারণেই সম্ভবত আমি বিল্ডিং এইটের সাদামাটা ফ্ল্যাটটায় থেকে গিয়েছি। তুমি প্রথম দেখাতেই আমাকে এতো অপছন্দ করলে যে তোমার নাকের সামনে থাকাটুকু আমার জন্য অন্যরকম উপভোগ্য ছিল।’
এছাড়াও লিলিয়ানার সাথে পলের সম্পর্কের সুত্রপাত, জ্যাক-এর সাথে ঋতুর পরিচয় হওয়া ও কাছাকাছি আসার মাধ্যম; কিংবা সেই নিঃসঙ্গ দম্পতি, সন্তানরা যাদের একা ছেড়ে দিয়েছে অপরিচিত এক বিদেশ বিভূঁইয়ে তাদের সাথে ঋতুর ক্ষণিকের দেখাতেও মিষ্টি কিছু সম্ভাষণ; এমন অনেকভাবেই লেখিকা মানুষের সাথে মানুষের পরোক্ষ কানেকশন এবং এর প্রভাবের বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় আর্ট ও মিউজিকের বিভিন্ন মাধ্যম উল্লেখ করে লেখিকা নিজের শিল্প জ্ঞানের বিকাশ এবং রুচির পরিচয় দিয়েছেন। তবে চলমান ঘটনার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই হোক কিংবা উপযুক্ত শব্দের অভাবেই হোক অথবা সঠিক অর্থ বোঝানোর জন্যই হোক, পুরো উপন্যাসে ইংরেজি শব্দের ব্যাবহার একটু বেশি ছিল বলে মনে হয়েছে এবং খানিক মনযোগ বিচ্যুতির কারণ হয়েছে। উপন্যাসের প্রচ্ছদের আলাদা প্রশংসা করতেই হয়, এর শৈল্পিক সৌন্দর্য্যের জন্য। আর বইয়ের পৃষ্ঠার মান এবং লাইন বিন্যাসে যে যত্নের ছাপ রেখেছে প্রকাশনী সংস্থা ‘পেন্সিল’, তার জন্য প্রকাশনী সংস্থার সাথে জড়িত সকলে বাহবা প্রাপ্য। এছাড়াও লেখিকার অন্যরকম উৎসর্গটুকু পাঠকের মনে একটু ভাললাগার জন্ম দিবে।
লেখিকা মাহরীন ফেরদৌস, উনার লেখা উপন্যাস ‘সাদা পালকের নির্জনতা’র শেষ পাতায়, উপন্যাসের মূল চরিত্রকে একটা সাজানো দৃশ্যপটে দাঁড় করিয়ে এবং কিছু জীবনদর্শন
“কাছেই কোথাও আছে সুনীল সমুদ্র। নীরব হয়ে কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যাবে গাংচিলের ডাক, সমুদ্রের পালাবদল করে আছড়ে পড়ার শব্দ। যেখানে পাখিরা কলরব করে উড়ে যাচ্ছে কাগুজে প্লেনের মতো। ঋতু দেখতে পায় সেখানে ও হাঁটছে। ওর করতলে সকালের আলো। বাতাসে গুণগুণ করে অচেনা কোন সুরের গান ভেসে যাচ্ছে; কিন্তু ও একা থেকেও একা নয়। ওর সাথে আছে অন্য কেউ। হয়তো অন্য কোনখানে; কিন্তু আছে। যেখানেই থাকুক, ভুবনের অপর প্রান্ত থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো শব্দে, বর্ষণে, লহমায় সে এসে তাকে ছুঁয়ে যাবে বারবার। অবিরাম.....”
-এর মাধ্যমে এমনভাবে উপন্যাসের ইতি টেনেছেন যেখান থেকে আবার নতুন করে কাহিনী শুরু করা যায়। পাশাপাশি পাঠকরাও যেন পুরো উপন্যাস পাঠের আবেশ ধরে রেখে নিজেদের মতো করে একটা উপসংহার কল্পনা করে নিতে পারেন তার জন্য একটা ছোট্ট স্পেস তিনি রেখে দিয়েছেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, একদম শুরুতে যে দুইটি চ্যলেঞ্জের কথা বলেছিলাম তার মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জটা, লেখিকা পুরোপুরি সফলভাবেই উৎরে গেছেন। আর বাকী যে চ্যালেঞ্জটি থাকে, সেটায় লেখিকা পুরোপুরি সফল না হলেও মোটামুটি সফল হয়েছেন প্রতিটি চরিত্রের কানেকশনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, শেষেরদিকে এসে কেলেনের হয়ে ঋতুকে বলে যাওয়া জীবনদর্শন দিয়ে,
“ঋতু; নিজের স্কেপ মেকানিজমের গভীরে তোমার একটা অনুভুতির জগৎ আছে। এসব ইমোশন একটা ওয়ান ওয়ে জার্নি। তুমি হয়তো সে জার্নির নাম জানোনা; কিন্তু বাকীসব তোমার মধ্যেই আছে। লিলিয়ানা, পল, প্রফেসর আয়দিন, আমিসহ আমরা সকলেই তোমাকে পেয়েছি কোন না কোনভাবে। তুমি যতোই পলায়নপর ভাব দেখাও না কেন, সবার সাথেই জুড়ে আছো তুমি। এমনকি মিনিম্যানের সাথেও। মিনিম্যানের সাথে তোমার কী স্পার্ক কাজ করে সেটা আমি আগেই বুঝেছি কিন্তু বলিনি। কারণ, ডার্কনেস ইজ বিউটিফুল। মিস্ট্রি অলসো। আমার ভালোলাগে তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখতে। তুমি বেশ ভাল মানুষ রিটজ। নিজেকে প্রকাশ করতে না পারা, অথচ সবকিছু নীরবে অনুভব করতে পারা ভালোমানুষ।”
সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, ঔপন্যাসিক হিসেবে মাহরীন ফেরদৌস নিজের দক্ষতার পাশাপাশি বৈচিত্রময়তার প্রমাণ দিয়েছেন এই উপন্যাসে; এবং পাঠশেষে দীর্ঘসময় পাঠকের মনে অনুভুতির রেশ রাখতে পারা অবশ্যই একজন লেখক/লেখিকার জন্য সফলতা।
পুরো উপন্যাস পড়া শেষ করে, পাঠক ঠিক কি ভাববেন কিংবা কি অনুভব করবেন এটা বুঝে উঠতে না পারলে, বইয়ের শুরুতেই লেখিকার সাজেস্ট করা জিম মরিসনের গানটা চুপচাপ শুনতে পারেন। আমাদের জীবন খুব ছোট; আর তার চেয়েও ছোট আমাদের গল্পগুলো। তাই অনেক কিছুই যায় যে ভাবা, কোন কিছুই না ভেবে!
'The days are bright and filled with pain
Enclose me in your gentle rain
The time you ran was too insane
We'll meet again, we'll meet again.....'
-----Jim Morrison

সাদা পালকের নির্জনতা বইটি পাওয়া যাচ্ছে রকমারিতে।
রকমারি লিংক - https://www.rokomari.com/book/207463/...
Profile Image for Rumnaz Fatema.
20 reviews9 followers
Read
March 16, 2021
The writing was simple yet impressive and sometimes poignant. The story is not just about those characters but of us in a way around.
Individualism of each character is one of the applauded parts here.Three persons from diverse country and culture embrace life and trying to find the lost piece of them within everyday occurrence.
It was like all the characters are in search of something. Something that can mend a mind or heart maybe. Did they get that in the end? Let's not reveal here.
The idea of loneliness aptly circulates throughout the story. You will enjoy this loneliness once you can relate.
The only complain I would bring here is the poetic unfair justice to Jack. He seemed perfect.
I loved the closure that creates immense space for imagination.
How about venture through it on a lonely afternoon and feel the story, the characters and the ambiguous ending?
Profile Image for Mashrur Imtiaz.
2 reviews9 followers
March 23, 2021
‘সাদা পালকের নির্জনতা’ ভেঙে বেরুনোর পরে যা কিছু মনে হয় …

‘আইস ব্লু’ কিংবা বরফ নীল রংটা চেনেন? মিনিম্যান চেনে, বোধহয় পছন্দও করে। আপনার চেনা সবচেয়ে পরিপাটি থাকা মানুষ, কিংবা গোছানো স্বভাবের কাউকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন? জেনে রাখুন, তারও আছে একান্ত কিছু উড়ে যাওয়া ভুল বোঝা হতাশ নিঃশ্বাস, কিংবা তারও কান্না জমা থাকে – যেমনটা লিলিয়ানার আছে, থেকেও যাবে। হাতছানি দেয়ার মতো অতীত আছে কার, ঘুমপাড়ানিয়া গানের বদলে সেখানে থাকে অন্ধকারের ভয়- সবারই আছে সম্ভবত। কেলেন, আবার ছাত্র হওয়া এই মানুষটা আসলেই কি আবার শিখতে চেয়েছে সময় নষ্ট করে টিকে থাকার কৌশল? অগোচরে নষ্ট হওয়া সময়টাকে নিয়ে আমরা হয়তো কোনো না কোনোভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করি, কেলেন যেমনটা করেছিলো বা তার চেয়েও বেশি কিছু। আমরা বড় হওয়ার সাথে জেনে যাই শুধুই ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ শব্দের মধ্যেই একটা মানুষকে চেনানো যায় না – কিন্তু প্রফেসর আয়দিনের সাথে আলাপ হলে ‘ভালো’ শব্দটার অর্থ কী সরল হয়, কিংবা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির সাথে মানুষ এইভাবে ‘ভালো’ করে বেঁচে থাকতে পারে! কিংবা সহজ অংকের মতো জ্যাকের প্রায় গাণিতিকভাবে সঠিক ভালোবাসাটাও দেখতে-ভাবতে আনন্দকর বেশ। এরকম অনেক কিছুই মানুষই করে, মানুষই হয়, মানুষই পারে – আলো-অন্ধকার, মাটি-পানি, সমুদ্র-পাহাড় … আরো কতশত নাম না জানা বাইনারির বাইরে থেকে, ধূসর একটা অদৃশ্য জামা গায়ে - এইসব কিছুই ঋতু মানুষের ভিড়ে দেখতে থাকে। ঋতুর দেখার চোখে আমাদের দেখার কথা থাকলেও, আমরা আমাদেরই চোখে বাকী মানুষগুলোকে দেখতে পাই, সাদা পালকের নির্জনতা ভেঙে। কেন যেন ঋতুর প্রধান চরিত্র হওয়া ওঠে না, সে হয়ে ওঠে আমাদের নিজস্ব অন্তরীণ অল্টার ইগোর একটা রূপায়ন, কিংবা আমার বা আপনার কোন এক আনন্দমুখর দিনে মনে হওয়া স্বজন, অথবা ক্ষতদাগের ওপর নোখ ডুবিয়ে যাওয়া দিনে বেঁচে থাকা কেউ একজন। ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ – বইখানার মানুষেরা এরকম, বইখানার মানুষদের এইভাবে দেখা যায় অক্ষরে অক্ষরে। এবং এঁরা ছাড়াও, আরো অনেক ‘অগুরুত্বপূর্ণ’ মানুষেরাও ছোট্ট ক্যানভাসে নিজেদের কথা বলে গেছে এই উপন্যাসে, বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষ মূলত আর কিছুই নয়, স্রেফ মানুষই – সবার গল্প মিলে এক চলমান গল্পের অংশবিশেষ এঁরা সবাই; আমরাও হয়তো তাই।

চুলোর আঁচ কমিয়ে দিতে ভুলে যাওয়া কিংবা নিজের টেবিলের অলসভাবে শুয়ে থাকা পরম চেনা কলমদানির মতোই সহজাত জানাশোনায় – বইয়ের নামের সাথে পরিচয়টা পাঠক হিসবে আকস্মিক লাগে না একদমই! তবে, এইটুকু বলে যাওয়া যায়, হুট করে পিয়াল বনের প্রবল আনন্দের মতো ভালোবাসার ছেয়ে যাওয়া, সন্ধ্যারাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরের অকারণ মন খারাপের টুকরো ঘটনাবলি, পুনর্বার পড়ার মতো অজস্র শব্দ-বাক্য-অনুষংগ অবলীলায় চলে আসবে সাদা পালকের ছোঁয়ায়, নির্জনতায় রাশ টানতে। মজার ব্যাপার, এর পরেও কোথাও রয়ে যাবে নৈঃশব্দ্যের রেশ, যেমনটা থেকে গেল এই মানুষগুলোর বহুমাত্রিক গল্পের কৌশলে। ভৌগলিকতার বাইরেও মানুষের সম্পর্ক, ঠিক করে রাখা গন্তব্যের বদলে কোথায় যেন চলে যাওয়া, অদ্ভুত অথচ যৌক্তিক সব পরিচ্ছেদের নাম, নাম না জানা এশিয়ান এক বৃদ্ধ, মিসেস মরিসন, বা মেরিলিন নামের কারো সাময়িক উপস্থিতির চিরস্থায়ী দাগ, অপ্রচলিত শব্দ-গান-ভাবনার মনোলোগ, দূরদেশে এই সময়ের একক অথবা যৌথযাপন, সমাজ-রাজনৈতিক-সম্পর্কের প্রচ্ছন্ন-সতেজ বিবরণ – সব মিলিয়ে একটা একক আখ্যান কি হয়ে উঠেছে এই বইটা? এই ভাবনাটা পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত, সে দায় তার উপরেই চাপিয়ে দেয়া যাক। পাঠক এই বইখানা পড়ুক, এই প্রত্যাশা পুরোপুরি থেকে যায় পড়ার পুরো সময়টুকুতে।

এবং, নিজের পাঠ থেকে, এইটুকু না বললেই নয়, এই বইয়ের জার্নিটা বেশ বেশ বেশ সময়চুরির মতো করে এগিয়ে যায়। পাতার পর পাতা উল্টোনোর সাথে, গল্পের সঙ্গে প্রেক্ষিতের সাথেও একটা বন্ধুতা তৈরি হয়, হয়ে যায়ই। যিনি লিখেছেন, তাকে জানানো যায় যে, এই জার্নিটার সাথে পাঠকদের তিনি একাত্ম করতে পেরেছেন, লেখকেরও একটা দূর্দা��্ত ট্র��ঞ্জিশান বোধহয় এই লেখাটাও। সবশেষে, এসব প্রশ্ন করেই শেষ করা যাক – ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ কি আসলেই আমাদের নির্জনবাসে নিয়ে যায়? নৈঃশব্দ্যে আনে আর ভাবতে শুরু করায়? সেই চিরাচরিত নিজের আর অন্যদের অস্বিত্বের মৌলিক প্রশ্নগুলো সংশয়ে? উত্তরগুলো বইটা হাতে নেয়ার আগে পাঠকরা অনুমান করতে পারেন নিশ্চিত, তবে গল্পের শেষে সেইসব অনুমান ছাপিয়ে নিজেকে আর নিজের চারপাশ নিয়ে আরও প্রশ্নের সামনে দাঁড়াবেন পাঠক স্বয়ং – এটি খুব করে মনে হতে থাকে। প্রশ্নগুলোর সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতার জন্য হলেও – নিজ মনে পড়া যাক, সাদা পালকের নির্জনতা।
Profile Image for Humaira Annur.
9 reviews2 followers
December 19, 2022
কাল রাতে বইটা পড়া শেষ করলাম।
একজন তরুণীর প্রতিনিয়ত প্রবাসে টিকে থাকার ��ড়াই যেটা একান্তই নিজের সাথে, নিজের অবুঝ, বিক্ষিপ্ত মনের সাথে।লেখিকা বইয়ে তুলে ধরেছেন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জীবনের অতি ক্ষুদ্র তবে শিক্ষণীয় কিছু দিক যেখানে পাঠকের মিলবে নিজের বহুদিনের আকাঙ্খিত কিছু প্রশ্নের উত্তর। পাঠক আবিষ্কার করবেন নিজেকে খুঁজে পাওয়ার কিছু পথ।
সব গল্পে দুইজন মানুষের একত্রে সুখী রাখার পথ রেখে দেয়া হয় না। কিছু গল্প শেষমেষ দুইটা হৃদয় এক করে রাখে হোক সেটা বহুদূরে থেকেও। সাদা পালকের নির্জনতা এমনই একটি গল্প যেখানে মূল চরিত্র রিতুকে দেয়া হয়েছে একটি নিজস্ব পরিচয়। কাহিনী প্রথমে অনেকটা ধীরগতিতে চললেও শেষ দিকের প্রশান্তির জন্য সেটা ছিল একান্ত প্রয়োজনীয়।
কিছু কিছু জায়গায় চরিত্রের দীর্ঘশ্বাস যেন আমারই বহুদিনের দীর্ঘশ্বাস ছিল। কিছু ব্যাপার আমাকে সাবধান করে জীবনে হয়তো এমন দিনও দেখতে হবে যেখানে বারবার হোঁচট খেলেও উঠে না দাঁড়ালে হবে মস্ত বড় ভুল। সবমিলিয়ে আমার কাছে বইটা একটা বাস্তবতাসম্পূর্ণ অর্থপূর্ণ বই লেগেছে যেখানে পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবেন বইয়ের বিভিন্ন পাতায়।
Profile Image for চারুলতা আরজু.
Author 2 books12 followers
April 14, 2021
একটি সাদা পালক যখন নীরবে-নিঃশব্দে ঝরে যায়, অথবা শব্দহীন-গন্তব্যহীন হয়ে উড়ে বেড়ায় তখন সেই নির্জনতা হয়তো পৃথিবীর চোখ এড়িয়ে যায়। সেই অদেখা নির্জনতাই শৈল্পিক মাত্রা পেয়েছে এই উপন্যাসে।

ঋতু নামের একটি মেয়ে, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। তারই বয়ে চলা জীবনের একটা অংশ যখন কাটছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্ট নামক শহরে, তখন কয়েকটি নতুন সম্পর্কের সাথে যাপিত জীবন এবং অনুভূতির কিছু চিত্র উঠে এসেছে। ওয়েস্টার্ন লাইফস্টাইল, পার্টি, ডিস্কো, ক্লাব, বন্ধু-বান্ধব সবই রয়েছে, তারপরও একটি বিষণ্ণতা এবং দেশের কথা ভেবে নস্টালজিক হয়ে যাওয়া ঋতু হয়তো মুক্তি চায় একটি নির্জন বিষণ্ণতা থেকে। ঋতু, যাকে অন্য ভাষাভাষীরা রিটু বলে ডাকে, সেই ঋতু কিংবা রিটুর কিছু অব্যক্ত অনুভূতি শব্দ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে এখানে। কেন্দ্রীয় চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে আরও কয়েকটি চরিত্র, যাদের জটিল সম্পর্কের সমীকরণ মিলাতেও ভাবনায় ডুব দিতে হয় বেশ গভীরে।

উপন্যাসে মূলত জীবনবোধ অথবা জীবন দর্শন উঠে এসেছে। এখানে সেরকম চাপা উত্তেজনায় চটকদার গল্প না থাকলেও আছে চিত্তহারী অনুভূতি। ক্ষুদ্র কিছু অণু চিন্তাকে শিল্প শৈলীতে জাগিয়ে তোলার মনোহারি গল্পের একটি দীর্ঘশ্বাস। যে দীর্ঘশ্বাসে রয়েছে তৃপ্তি এবং অতৃপ্তির এক অভূতপূর্ব মিলন।

কখনো মনে হয়েছে ঋতু সম্পর্কে জড়াতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, কারণ জ্যাক কিংবা রানার প্রস্তাবে সায় না দেয়ার কারণ হিসেবে হয়তো বা মনে হতে পারে তার বাবা মায়ের একটি অসম্পূর্ণ এবং অসুখী দাম্পত্য জীবনকে। অথবা ঋতুর খুব কাছের বান্ধবী ফারজানার প্রভাব। কিন্তু মিনিম্যানের মাঝে ঋতু যখন উজাড় হতে চেয়েছিল, তখন মনে হয়েছিলো ঋতু হয়তো একজন সঠিক সঙ্গীর অপেক্ষায় ছিল বহু বছর। অল্প পরিচয়ের মিনিম্যানের কাছে মনের সব কথা গচ্ছিত রেখে হয়তো সকল প্রকার জীবন-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চেয়েছিলো সে। কিন্তু সেই মুক্তি কি মিলেছে তার? সে জন্য পড়তে হবে উপন্যাসটি।

ঋতুর ফ্ল্যাটমেট লিলিয়ানা এবং কেলেনের জীবনের ঘাত প্রতিঘাত শেষে কি তারা পেয়েছিলো স্থির জীবন? লিলিয়ানার নতুন জীবন শুরু এবং জীবনকে গুছিয়ে এনে নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়াটা কি শুধুই জীবনকে একটি আদর্শ ছকে বাঁধার জন্য নাকি সে সত্যিই খুঁজে পেয়েছিলো মনের মতো কাউকে?

এসবের উত্তর সত্যিই ভীষণ কঠিন। তবে প্রফেসর আয়দিনের বক্তব্যে ঋতু সব সময়ই জীবনের জটিল সমীকরণ মিলিয়ে নিতে পারে। প্রফেসর আয়দিন চরিত্রটির জন্ম হয়েছেই এই উপন্যাসের যতসব জটিল জটলা পাকানো হিসাব মিলাতে এবং সকল প্রকার অতৃপ্ত দীর্ঘশ্বাসে তৃপ্তির সুর বাজিয়ে দেবার জন্য।

চমৎকার কিছু জীবনবোধ বা দর্শন, যা কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে পড়লে দারুণ এক অনুভূতি আর ভালোলাগায় পরিপূর্ণ হতে পারবে পাঠক এবং জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার একটি সুযোগ হয়তো পাবে পাঠক। তাই আমি এই উপন্যাসকে 'স্লো রিড' অথবা 'ধীর গতির পাঠ' সম্পর্কিত একটি উপন্যাস বলতে চাই। কারণ এখানে অনেক কিছু উপলব্ধির ব্যাপার রয়েছে। চট জলদি সমীকরণ মিলিয়ে সহজ তৃপ্তি আস্বাদনের সুযোগ এখানে হয়তো নেই।

বইতে লেখকের কাল, ইতিহাস এবং তথ্য সচেতনতা প্রকাশ পেয়েছে, যেটা উপন্যাসটিকে কালের পরিক্রমায় উঁচু একটি জায়গা করে দেবে বলে আমার মনে হয়েছে। ভাষা ও পদবিন্যাস উপন্যাসটিকে করে তুলেছে দারুণ ভাবে সুখপাঠ্য। ফারজানা এবং মিনিম্যান চরিত্র দুটি অল্প সময়ের জন্য এলেও, এই দুটি চরিত্রে ক্রিয়া প্রক্রিয়া এবং চমৎকার একটি ফ্লেভার ছিল যেটা গল্পকে দারুণ ভাবে জীবন্ত করে তোলে। সমাপ্তিটাও মনে হয়েছে জীবনের মতোই অসমাপ্ত। আমারদের জীবনও তো তাই, কোন এক অসমাপ্ত মোড়ে এসে থেমে যায়। তবে নতুন করে স্বপ্ন দেখার একটি ইঙ্গিত ছিল শেষের দিকে, যেটা আশাবাদকে প্রকাশ করে। সব মিলিয়ে বলতে চাই, দারুণ একটি সুখপাঠ্য উপন্যাস যুক্ত হলো বাংলা সাহিত্যে।
Profile Image for Mehnaz Fatema.
51 reviews1 follower
March 18, 2021
রিভিউ
- স্পয়লার অ্যালার্ট -

বিখ্যাত এক ইংরেজ ঔপন্যাসিক বহু আগে লিখেছিলেন- "একটা বই খুবই সংক্ষিপ্ত মনে হয় তখনই, যখন তা লেখা হয়ে থাকে সুন্দরভাবে..." এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে ঠিক তাই মনে হয়েছে। খুব অল্পতেই যেন হয়ে গেল শেষ!

উপন্যাসে বেশ কয়েকটা চরিত্র উঠে এসেছে অল্প সময়ের জন্য, তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষার সেই সব চরিত্র মনে গভীর দাগ কেটেছে। কিছু চরিত্র মনকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। অল্প পরিসরে লেখক প্রতিটা চরিত্রের মাধ্যমেই সমভাবে মানুষের বিভিন্ন চারিত্রিক দিক তুলে ধরেছেন, রেখেছেন ইনডিভিজ্যুয়ালিটি, যা প্রশংসনীয়।

তবে এ সবের সাথে বিশেষভাবে কিছু চরিত্র নিয়ে না বললেই নয়।

এমনই এক চরিত্র; ষাটোর্ধ্ব প্রফেসর ডক্টর আমির আয়দিন। শুধু ভালোবাসার অদ্ভুত সুন্দর সংজ্ঞা নয় প্রফেসর আয়দিন দিতে পারেন জীবনের জটিল সব সমস্যাকে সহজভাবে দেখার প্রেরণা। জীবনের সর্বস্ব হারিয়েও যিনি জীবনকে দেখতে পারেন ভিন্ন কাঁচে। বাঁচতে জানেন পূর্ণরুপে। ছড়াতে পারেন আনন্দ। এ চরিত্রটি বারবার আমাকে মনে করিয়ে দেয় অনেক আগে দেখা এক মুভির পছন্দের চরিত্র ক্লাউসের কথা,আর হয়ে যাই নস্টালজিক!

অস্তিত্ব সংকটে ভুগে যাওয়া ও মনের মাঝে প্রশ্ন সৃষ্টি করা ভিন্ন এক চরিত্র মেরিলিন উপলব্ধি জাগায় জীবনকে সহজভাবে দেখার জন্য; যার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে ওর বলা একটি কথায়, " সব পেয়ে তবু কেন জীবনটাকে এত জটিল করে তুললে তুমি?"

তবে যে কোন গল্পের মূল চরিত্রকে ঘিরে সচরাচর ভালো লাগার অনুভূতি মোটামুটি শুরু থেকে কাজ করলেও এ উপন্যাসের প্রধান প্রোটাগোনিস্ট ঋতুর ক্ষেত্রে ভালো লাগা কাজ করেছে অনেক পরে। আর সম্ভবত এ কারণেই আমার কাছে উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর আর নির্জন আকাশের মতো শান্ত অধ্যায় 'উড়ে যায়, দূরে যায়'। নিজেকে গুটিয়ে রাখা নেতিবাচক এই চরিত্র, অন্যের উপকার করতে চেয়েও সাতপাঁচ ভেবে অবশেষে উপকার করার সাহসটুকু করতে না জানা এই চরিত্র, ভীত ও দুর্বল এই চরিত্র, ঋতুকেই এক সময় মনে হয় অনেক বেশি সাহসী। বারবার জানতে ইচ্ছে করে, কীভাবে পেসিমিস্ট ঋতু আর মিনিম্যান খুঁজে ফেরে নিজেদেরকে একে অন্যের মাঝে? আর ঠিক তখনই মনে হয়ে যায় হারুকি মুরাকামির উক্তি, “One heart is not connected to another through harmony alone. They are, instead, linked deeply through their wounds. Pain linked to pain, fragility to fragility."

উপন্যাসের আরও একটা উল্লেখযোগ্য চরিত্র জ্যাক। যাকে জেনে খুব মন ছুঁয়ে যায়। চরিত্রটাকে ভালো লাগে শুরু থেকেই কিন্তু 'নির্জন হোক অন্ধকার' অধ্যায়ে এসে এই চরিত্রের জন্য মনে জাগে অদ্ভুত রকমের এক হাহাকার, মায়া। মনকে প্রশ্ন করি, ঔপন্যাসিক কেন বইয়ের শুরুতে লিখে দিয়েছেন জিম মরিসনের গানের পংক্তি?
"The time you ran was too insane.
We'll meet again, we'll meet again?"

এ লাইনগুলো, এই আকুতি আসলে কার জন্য? জ্যাক আর ঋতুর জন্য? নাকি ঋতু আর মিনিম্যানের উদ্দেশ্যে? নাকি স্রেফ ঋতুরই নিজের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া বোঝাতে?

এইসব চরিত্র ছাড়াও 'সাদা পালকের নির্জনতা' উপন্যাসের কিছু মুহূর্ত আছে যা পাঠক মন ছুঁয়ে যাবে। টুকরো টুকরো এমন অনেক লহমা মাহরীন ফেরদৌস এই উপন্যাসে সৃষ্টি করেছেন যা কিনা বাস্তবে দেখতে বা অনুভব করতে পারার মতোই ঘটনা। কেলেনের আগ্নেয়গিরি দেখার অভিজ্ঞতা, জ্যাকের মিস্ট্রি মানডে, ডাউনটাইউন পার্কের সাবলীল বর্ণনাগুলো ছিল অনুভব করতে পারার মতো ভালো কিছু মুহূর্ত। আবার টুকরো পাজলের পিসগুলো জায়গা মতো বসে যাওয়ার মতোই উপন্যাসের ঠিক একটা পর্যায়ে এসে ঋতুর বুঝে যাওয়া যে সে কী করতে চায় বা পেতে চায় তার জীবনে, কেলেনের নিজেকে সামলাতে চাওয়া, লিলিয়ানার গন্তব্য খুজে পাওয়া অন্যভাবে। এই সবদিক দিয়ে চিন্তা করলে উপন্যাসের প্রথম যে নাম 'লহমা' লেখক চিন্তা করেছিলেন, তাই আমার কাছে বেশি সুন্দর বা প্রিয়।

আর পাঠক হিসেবে আমি খুব খুব করে জানতে চাই, কী এমন সত্য বা অতীত রয়ে গেছে রহস্যময় মিনিম্যানের জীবনে? কেন সে ছুটে বেড়ায় পলাতকের মতো? কী তার ট্রমা, বিষাদ? 'সাদা পালকের নির্জনতা'র সিক্যুয়েল আসুক সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে, মিনিম্যানের জীবন রহস্যের কারণ হয়ে, পাঠক আচ্ছন্ন হোক প্রফেসর আয়দিনের আরও কিছু মন্ত্রমুগ্ধকর থিওরীতে, জ্যাক বা মেরিলিনের কাহিনী পাক আরও একটু পূর্ণতা আর ঋতু নতুন করে বুঝে যাক "নিজেকে পূর্ণ করতে সঙ্গী লাগে না"...

সবশেষে না বললেই নয়, অ্যাক্রিলিক পেইন্টিং এর মতো প্রচ্ছদ আর ভেতরে সবুজ খামে বন্দী প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ ঠিক ততটাই মনে দাগ কাটে যতটা ভালো লাগে বইয়ের 'উৎসর্গ' অংশটুকু।

শুভ কমনা বইটির জন্য।


2 reviews2 followers
March 16, 2021
Realistic yet imaginative, mysterious yet communicative, melancholic yet peaceful... Barely we can actually feel a story deeply, however, this one does the job precisely. The immaculate detailing of each character and the flawless storytelling by Mahrin Ferdous মাহরীন ফেরদৌস deserves all the praise.
So if you want to read a real good book, I believe you can go for this one blindly (& thank me later).
Profile Image for Zillur  Rahman Shohag.
46 reviews3 followers
February 15, 2022
ধরা যাক তোমাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে গভীর কোনো এক কুয়ার ভেতর। কুয়ার দলদেশ জুড়ে রয়েছে বিশ্রী অন্ধকার। তুমি খুব করে চাইছো এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে। ছটফট করছো ভয়ে-আতঙ্কে কিংবা বেঁচে থাকবার অনিশ্চয়তায়।
তুমি টের পাচ্ছো কুয়ার তলদেশে অক্সিজেনের সংকট ছাড়াও তোমাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে ভয়াবহ এক নির্জনতা। কুয়ার তলদেশে ভেজা-স্যাঁতসেতে শ্যাওলাধরা দেয়ালটা তোমার অবচেতনে রুপ নিচ্ছে বৃহত কোনো এক টিভি পর্দার এবং তাতে প্রচারিত হতে শুরু করেছে তোমার স্মৃতির খেরোখাতায় এযাবত জমা অতীত ও বর্তমানের বিবিধ ইতিহাস।
তুমি ছটফট করছো মুক্তির আকাঙ্খায়, অধীর হয়ে অপেক্ষা করছো তোমার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া উদ্ধারকারী হাতের জন্য। অথচ তুমি দেখছো ক্রমশই বদলে যেতে শুরু করেছে কুয়ার উপরিতলে হঠাৎ হঠাৎ জড়ো হওয়া তোমার পরিচিত মুখগুলো। তুমি ভাবছো কুয়াতে পড়া মানুষের সাথে হয়তো এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তুমি ভাবছো যদি কখনো এই কুয়ার অন্ধকার থেকে, তারপর পরিচিত গন্ডি ছেড়ে তুমি পালিয়ে যেতে পারো দূরে কোথাও তবেই শেষ হবে এই দুঃস্বপ্নের।
ধরো তুমি শেষমেশ সক্ষমও হলে পালিয়ে যেতে পরিচিত মুখ, পরিচিত জিওমেট্টি ছেড়ে ভিন্ন কোনো দেশে, ভিন্ন কোনো জনপদে। কিন্তু সেখানেও দেখতে পেলে কুয়ার ভেতরকার সেই অন্ধকার-নির্জনতা ঠিকই চলে এসেছে তোমার পিছু পিছু। তোমার আরও জানা হলো দু:স্বপ্ন, অবসাদ ও নির্জনতাও অভিযোজিত হয় স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী।
মাহরীন ফেরদৌসের "সাদা পালকের নির্জনতা" উপন্যাসটি বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকে খুব চেনা মনে হলেও পুরো উপন্যাস জুড়ে তার সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ-নিরীক্ষা ও রচনাশৈলী সহযোগে দ্যাখা মিলবে বেশকিছু চমকপ্রদ দিক যা পাঠককে নিঃসন্দেহে উৎসাহী করে তুলবে নিতান্তই সাধারণ বিষয়বস্তুকে ভিন্ন ও প্রশ্বম্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ও বিচার করবার।
বইটির প্রকাশক: পেন্সিল পাবলিকেশনস
প্রকাশকাল: ২০২১
#Book_review
Profile Image for Aditee.
90 reviews22 followers
June 26, 2022
The profiling and entire psychological mapping of ঋতু- the protagonist, and how she plants uncertainty through cutting cords with safe people and rather be prone to be drawn towards detached, avoidant, somewhat unavailable ones, who themselves are scared of coming out vulnerable... and how the dynamics of her parents' relationship and her own pre-teen trauma did curve the way and shaped her to walk through it- Mahrin nailed it!
Mahrin didn't miss a single spot while she tells the story of ঋতু's depression and all the self sabotaging way she tries to numb it.
Thanks to the writer, not to shame her characters for being human..or just being scared, for that matter.
I loved this book for another one thousand reasons, but I won't recommend it to anyone for a thousand more.
This book finds you. Not the other way around.
Profile Image for Zohuruzzaman.
3 reviews9 followers
April 25, 2021
বইয়ের শুরুতে মনে হচ্ছিল যেন কোন এক আটপৌরে মানুষের প্রবাস জীবনের রোজনামচা। একটু একটু করে কাহিনী হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে বইয়ের শেষে এসে যেন উপন্যাসের নামের সার্থকতা পাওয়া গেল। পুরো লেখা জুড়েই কী যেন নেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষে সেই 'নেই' এর অন্তত একটা অবয়ব পাওয়া যায়, তৃপ্তি পাওয়া যায়।
4 reviews1 follower
March 8, 2022
বইঃ সাদা পালকের নির্জনতা
লেখকঃ মাহরীন ফেরদৌস
পাবলিকেশনঃ Pencil Publications

সিনেমায় ডিটেইলে একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে অনেক লিমিটেশন্স থাকে। তাই আমরা সেলুলয়েডে যা দেখি তা বহু বিষয় পরিবর্তনের পরে। তাই পর্দায় দৃশ���যগুলো যখন আম���দের মাথায় খেলা করে যায়, তখন নতুন কল্পনা আর আসে না তেমন।
কিন্তু একজন লেখকের এইসব লিমিটেশন্স নেই। তিনি চাইলেই নিজের ইচ্ছেমতো ডিটেইলিং দিয়ে গল্প সাজাতে পারেন আর পাঠক যদি কল্পনা-বিলাসী হয় তবে সেই ডিটেইলিং খুব সহজেই পাঠককে করে ফেলে আচ্ছন্ন। প্রতিটি চরিত্র চোখের সামনে এতটা জীবন্ত হয়ে ওঠে, এক একটা জায়গার বর্ণনা এতটাই স্পষ্ট লাগে, যে মনে হয় সেই জায়গাটায় আমিই গিয়েছিলাম।
যাপিত জীবনে দুঃস্বপ্ন, কষ্ট, বিষন্নতা যেগুলো অতিক্রম করি আমরা, সবটা বলে বোঝানো যায় না। অথচ সেই সাফারিংগুলো এমনভাবে বলা হয়েছে এই উপন্যাসে যেন এই ধরণের এক কষ্ট আমার নিজেরও আছে।
মাহরীন ফেরদৌস- এর ‘সাদা পালকের নির্জনতা’ বইটি ঠিক এমন জীবন্ত কিছু অনুভূতিই দিয়ে গেছে। প্রতিটি চরিত্র ইম্পরট্যান্ট ইম্প্যাক্ট রেখেছে। ঋতু, ছোট্ট আনা, কেলেন, প্রফেসর আয়দিন, জ্যাক, পল আর রহস্যময় মিনিম্যান, প্রতিটি চরিত্রর বৈশিষ্ট্য বইতে আলাদাভাবে চোখে পড়েছে।
সবার মাঝে ব্যাক্তিগতভাবে প্রফেসর আয়দিন ক্যারেক্টারের চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তা আমাকে অনেক বেশী আকৃষ্ট করেছে। আর জ্যাকের জন্য কেন জানি না খুব বেশীই কষ্ট লেগেছে। জ্যাকের জীবনের গল্প একটি দুঃখী গানের লিরিকের মতো না হলেও পারতো।
ছোট্ট আনার মায়ের নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যটুকুর বিবরণ এতটা গভীর বোধের ছিল যেন সেই মুহূর্তে বইয়ের ভেতর থেকে বৃষ্টির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।
আমি তেমন বোদ্ধা পাঠক নই। জ্ঞান ও চিন্তার জগত সংকীর্ণ হওয়ায় গল্পের কিছু দৃশ্যপট ক্ষণিকের দ্বন্দ্ব তৈরি করলেও পরক্ষণেই মনে হয়েছে, ঠিক এই ঘটনা না ঘটলে পরের এই বোধটুকুর গভীরতা বোঝা হয়তো সম্ভব হতো না।
উপন্যাসের মূল চরিত্র ঋতু কি মিনিম্যানকে এটাই বলতে চাইল, আর যাই হোক সে যেন 'কথার কথা' দিয়ে না বসে! কারণ কথার ওজন যে ভীষণ ভারী!
আর সবশেষে লিখে যাওয়া একটি কথা বুকের মধ্যে নির্মম করুণ অনুভূতির মতো পাক খেয়ে উঠেছে বারবার-
“মানুষ যখন বুঝতে পারে কেউ একজন তাকে অনুভব করার পরও থাকতে পারছেনা, তখন সে হয়ে ওঠে নীরব।” - সেই নীরবতা জানান দেয় নির্জনতার হয় না বিদায়। বিশাল পৃথিবীর পরিচিত-অপরিচিত সব পরিবেশেই আমাদের নিজস্ব পৃথিবীটা নির্জন থাকে। সেই নির্জনতা আসলে ছুঁতে পারে ক’জন?
তাই, 'সাদা পালকের নির্জনতা' আচ্ছন্ন হয়ে যাবার মতো বই, বারবার পড়ার মত বই।
18 reviews1 follower
February 28, 2022
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে উড়ে আসা এক তরুণীর গল্প। আসলে চাকচিক্যের পিছনে যে কতটা সাদামাটা, একা একা এবং বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর ভাবে।
জীবন হয়তোবা পুরোটাই সংগ্রাম, এর মাঝেই সুন্দর ভাবে থাকা টাই আর্ট।
Profile Image for Shahriar  Fahmid.
113 reviews15 followers
March 29, 2023
বহুদিন পর এরকম এক বিষণ্ন উপন্যাস শেষ করলাম।
রেটিংসঃ ৪.৪/৫
Displaying 1 - 23 of 23 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.