কাহিনী সংক্ষেপ _______________________________________________________________ শহরে একের পর এক কম বয়সি মেয়ে গুম হয়েই চলেছে। অনেক চেষ্টা করেও হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশদের। এই সময় কেসে দায়িত্ব চলে আসে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের মেঘার হাতে। প্রশ্ন হলো কেও কি ইচ্ছা করে মেঘাকে ফেলছে এমন ঘোরতর পরীক্ষায়? ঠিক পাশের শহরেও চলছে নারকীয়তা। মারা পড়ছে একের পর এক মানুষ, যাদের সবাই কোনো না কোনো ভাবে জড়িত অপরাধজগতের সাথে। এখানেও এসে আটকে গিয়েছে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। দায়িত্ব এসে পড়েছে রাজ আর অনিমেষ এর কাধে। কোনো দিক থেকে সমাধান করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এর সবই কি আত্মকোন্দল নাকি অন্যকিছু? দুই শহরের অপরাধের ভিতরে কোনো যোগসুত্র নেই তো? এর সাথে পঁচিশ বছর আগেই মৃত ফাসির আসামির কি সম্পর্ক? মেঘা, রাজ আর অনিমেষ কি পারবে নিজ নিজ শহরের এই রহস্য সমাধান করতে নাকি হারিয়ে যাবে আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলীতে?
প্রথমে আমি বইটির ভালোলাগা এবং অনুভূতিতে আঘাত হানা অংশটুকু তুলে ধরলাম। বইটি আসলেও সুন্দর। বিশেষ করে লেখকের নির্বাচিত গল্পের থিমটির প্রশংসা না করা আমার জন্য অন্যায় হবে। গল্পের থিমটি যথেষ্ট সুন্দর এবং পরিপক্ব ছিল। থিমের দিক থেকে তুলনা করলে এটি একটি সার্থক বই। থিমের দিকটা একটু পরে যাই। প্রথমে বইটির প্রচ্ছদ নিয়ে বলতে চাই। বইটির প্রচ্ছদ আসলেও অত্যন্ত সুন্দর। প্রচ্ছদে দেখা যায় একটি ঝিল। এবং ঝিলের পাশেই রয়েছে বেশ কিছু উঁচু ভবন। এবং ভবনগুলোর একটি স্থানে ফাঁসির দড়ি ঝুলে আছে। অর্থাৎ বইয়ের থিমের সাথে মিল রেখেই প্রচ্ছদ করা হয়েছে। বইয়েও ফাঁসি বিষয়ক কিছু বিষয় আছে। যা প্রচ্ছদ নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাছাড়া প্রচ্ছদের নিচদিকে রয়েছে খুন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি লোক। খুন হওয়া না হওয়া বিষয়টি খুব সুনিপুণভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। কেননা লাশটির চারপাশে রক্তের ছিঁটেফোঁটার দেখা মিলছে। যা লাশটি বুক থেকে গড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ স্পট দেখে বুঝা সম্ভব, এটি খুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবং বইয়ের পেছনদিকেও রয়েছে একটি মানুষের হৃৎপিণ্ড। এবং তার উপর বসে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ছিঁড়ে হৃৎপিণ্ডটি খাচ্ছে একটি কাক। যা বইয়ের মাঝে খুনের ভয়াবহতার বর্ণনা দেয়। অর্থাৎ বইটির প্রচ্ছদ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বইয়ের মাঝে বিদ্যমান কাহিনি সম্পূর্ণ খুন এবং মারদাঙ্গা নিয়েই। কয়েকটি পৃষ্ঠা উলটাতেই নজরে আসে বইটির উৎসর্গপত্র। উৎসর্গপত্রটি আসলেও প্রশংসনীয়। পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুসারে বহু লেখক বহুভাব পাঠকদের উৎসর্গ করেছে। তবে লেখক নির্জন সাহেবের " আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলী " বইটির উৎসর্গপত্রটি পাঠকদের নিয়ে করা। তবে উৎসর্গপত্রতে সুপ্ত একটি চাপা রাগ কিংবা মন খারাপ এবং মৃদু কৃতজ্ঞতার ছোঁয়া লেগে আছে। কারও চলে যাওয়ার ব্যথাকে উপেক্ষা করে নতুন করে শব্দ বুননের কাজটি আসলেও প্রশংসনীয়। চলে যাওয়া ব্যক্তিটি নিয়ে মৃদু কৃতজ্ঞতা আমার পক্ষ থেকেও। কেননা তার চলে যাওয়ার ব্যথা ভুলতেই লিখতে শুরু করে লেখক। যার ফলশ্রুতিতে আজ আমি এই বইটির রিভিউ আমি লিখছি। এবং অত্যন্ত ভালো একটি থিমের গল্প পড়তে সক্ষম হয়েছি।
অপরদিকে বইয়ের মাঝে চিত্রগুলো এবং কুহক পত্রিকাগুলো আসলেও প্রশংসার দাবিদার। সচরাচর বইতে এরকম দৃশ্য দেখা মেলে না। তবে গল্পের ধারাবাহিকতা এবং পাঠকের মাঝে গল্পের ভাবটুকু আরেকটু সুন্দরভাবে প্রকাশিত করতে এই প্রক্রিয়াটুকুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা পাঠকের মস্তিষ্কে গল্পের দৃশ্যটি আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। এবং দৃশ্যে বাস্তবতার মৃদু ছোঁয়া দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। যার জন্য লেখক এবং চিত্রকারকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
গল্পটি নিয়ে বলতে বললে আমি অত্যন্ত নির্দ্বিধায় বলতে পারব, এটি একটি সূক্ষ্ম এবং সুনিপুণ সৌন্দর্য যুক্ত একটি থিম। গল্পের শেষ দিকে ঘুরে যাওয়া দৃশ্যতে আসলেও বাকহারা করে দিয়েছিল। খুনি এত কাছাকাছি থাকার পরেও খুনের নাগাল না পাওয়াটা ছিল রীতিমতো চমকে দেয়ার মতো। বলতে গেলে খুনিকে সকলে ভাবনার বাহিরে রেখেছিল। কেননা তাকে দেখলে বা তাকে ক্রিমিনাল ভাবার কোনো হেতু আসছেই না। যে আইনের রক্ষক তাকে কী করে খুনি ভাবা যায়? যার হেতু কেউ ভাবতেও পারেনি খুনি কে হবে! বিশেষ করে আরেকটি খুনির সাথে পাঠকের মাঝেও প্যাঁচ খেলা হয়েছে। কিছু সময় মনে হয়েছে দুই শহরের খুনি একজনই। আবার কিছু সময় মনে হয়েছে দুজন। আবার কিছু সময় মনে হয়েছে খুনের পেছনে একাধিক জন রয়েছে। যা রীতিমতো আমাকে এবং প্রতিটি পাঠককে ভাবাতে উদ্যত করেছিল। এবং ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো দৃশ্যে ভিন্নতা এবং রহস্যের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে সক্ষম ছিল। লেখকের সৃষ্ট থিম নিয়ে যতই প্রশংসা করি, ততই কম মনে হয়। কিছু প্রশংসার বিষয় অব্যক্ত থাকাই উত্তম।
সমালোচনা: এবার আসি বইয়ের মাঝে বিদ্যমান সমালোচনার অংশগুলো। বইয়ের থিম যতটাই সুন্দর ছিল, সমালোচনার অংশটাও ঠিক ততটাই গাঢ়তর হয়েছে। সাধারণত প্রতিটি বইতে সমালোচনা করার মতো অংশ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমালোচনার অংশ যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে পড়ে, তখন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বইটির থিম যতটাই সুন্দর ছিল ততটাই পড়তে হয়েছিল বিরক্তিতে। বইটি পড়ার সময় বারবার ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি সচরাচর একটা বই যত বড়ই হোক না কেন! তা এক বসায় শেষ করি। কিন্তু এই বইটি পড়তে এতটাই বিরক্তির কারণ সৃষ্টি হয়েছে। টানা সাতবার এই বইটি নিয়ে বসেছি। প্রতিটি বারই বিরক্তি ভাব জন্মেছে।
আমি প্রথমেই সমালোচনা করব বইটির নাম নিয়ে। বইটির নাম "আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলী" রাখা হয়েছে। প্রথম দুটি শব্দ নিয়ে বিপত্তি না থাকলেও শেষ শব্দটি নিয়ে বিশাল দ্বন্দ্বের দৈবীরূপ সৃষ্টি করেছে। শব্দটি হলো " ধুম্রকুহেলী "। এখানে একটি শব্দ বুঝাচ্ছে। কিন্তু অভিধান ঘুটে কোথাও এমন একটি শব্দে পাইনি। অর্থাৎ এখানে দুটি শব্দের সংমিশ্রণে একটি শব্দ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা চাইলেই একটি শব্দের সাথে আরেকটি শব্দ জুড়ে দিতে পারি না। অর্থাৎ এটি নিয়মে নেই। যদি একত্রে উচ্চারণ করতে হয়, তবে পরস্পরে হাইফেন ব্যবহার করা উত্তম। অন্যথায় ফাঁকা। এখানে " ধুম্রকুহেলী " শব্দটি " ধুম এবং কুহেলী " নিয়ে গঠিত। দুটোই শব্দই ভিন্ন ভিন্ন। এখানে হাইফেন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক ছিল।
এরপর আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখানে " ধুম্র " শব্দটি আসছে। কিন্তু অভিধানের কোথাও " ধুম্র " নামক কোনো শব্দ নেই। এই শব্দটির উচ্চারণ অনুসারে আরেকটি শব্দ পাওয়া যায়। যা হলো " ধূম্র"। এর অর্থ হচ্ছে, " ধোঁয়া, ধূম। ধোঁয়ার মতো বর্ণবিশিষ্ট, ধূমল।" অর্থাৎ বইটির নাম হওয়া উচিত ছিল, " আঁধার নগরীর ধূম্র-কুহেলী"।
পরবর্তী সমালোচনার অংশে রয়েছে কিছু অপ্রীতিকর শব্দ নিয়ে। লেখক বেশ কয়েকটি স্থানে প্রয়োজন ছাড়াও অপ্রীতিকর শব্দের ব্যবহার করেছেন। গল্পের মাঝে ম্যাক্স চরিত্রটি নিশাত চরিত্রের সাথে শারীরিক সম্পর্কের সময় কিছু অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার মানা যায়। কিন্তু গল্পে একজনের সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দিয়ে যেয়ে উঁচু বুক সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। এসকল শব্দগুলো বড্ড বেমানান। যেন দুধের মাঝে মৃদু আকারে গরুর মূত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া লেখক বেশ কয়েকটি স্থানে নিতম্ব শব্দটির ব্যবহার করেছেন। কিন্তু স্থান ভেদে এই শব্দটির ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমরা এধরণের শব্দ তখনই ব্যবহার করতে পারি, যখন বিকল্প কোনো শব্দ থাকে না। কিন্তু যেখানে বিকল্প শব্দ থাকে সেখানে এরকম শব্দ ব্যবহার করা সৌন্দর্যতা নষ্ট করে। যেমন বাক্যটি রয়েছে, " নিতম্বের সাথে ঝুলে আছে একটি ঝুলন্ত ব্যাগ।" স্থান ভেদে এখানে কোমর জুড়ে ঝুলে আছে একটি ঝুলন্ত ব্যাগ লিখলেই যথেষ্ট ছিল। তাছাড়া ভার্সিটির স্টুডেন্ট কীভাবে কোমরের নিচ অবধি ব্যাগ ব্যবহার করে বুঝলাম না! তারা কি টেনের স্টুডেন্ট নাকি? যে বিশাল একটি ব্যাগ নিয়ে বইখাতা টানবে? অর্থাৎ, স্থান ভেদে এই নিতম্ব শব্দের ব্যবহার আসলেও নিন্দনীয় ছিল।
তাছাড়া গল্পের মাঝে অতিরিক্ত পরিমাণ বর্ণনা অবাঞ্ছনীয় ছিল। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বর্ণনা দিয়ে গল্পের প্রতি একটা তিক্ততা সৃষ্টি করে ফেলেছেন লেখক। যেখানে এক লাইনে বর্ণনার সমাপ্তি ঘটানো যেত, সেখানে লেখক কয়েক বাক্যে বর্ণনা করে পৃষ্ঠা এবং আকারে বিস্তৃত করেছেন।
তাছাড়া লেখক বেশ কয়েকটি স্থানে উলটা সিধা যুক্তি দিয়েছেন। যেমন বইয়ে ২৫৬ পৃষ্ঠায় প্রথম প্যাড়ার শেষ দিকে লিখেছেন, " উপর থেকে পড়ার ভয়ে ব্রেইনে আঘাত পায় সে।" এখানের যুক্তিটি সম্পূর্ণ অনর্থক। এক কথায় বলা যায় বানোয়াট। উপর থেকে পড়ার ফলে মাথায় আঘাত পেতে পারে। কিন্তু উপর থেকে পড়ার ভয়ে ব্রেইনে আঘাত খায় না। স্ট্রক করার কথা। আমার মতে, স্ট্রক করলে এত উপর থেকে নিচে পড়ে সাথে সাথে প্যারালাইজড হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয় সম্পূর্ণ উলটো ঘটিয়ে দেখিয়েছেন লেখক। এছাড়া তিনি এখানে বললেন ব্রেনে আঘাত পায়। কিন্তু গল্পের শেষে লিখেছেন, " গলার কাছে একটা নার্ভ আঘাত পেয়ে হসপিটালাইজ ছিল সে। " প্রথমে বললেন ব্রেনে আঘাত পেয়েছেন। এখন বলছেন গলার কাছে নার্ভে আঘাত পান। মানে আঘাত কি তার স্থান বদল করেছে! যেন এটি মিরাকলেরও বাপ। অর্থাৎ মেডিকেল সাইন্সকেও তিনি সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত করে দিয়েছেন। এরকম আরও অনর্থক যুক্তির কারণে পড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
লেখকের লেখার মাঝে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, একটি বাক্যের মাঝে বচন ভঙ্গি মুহূর্তের মাঝে উচ্চতর হয়ে যায়। আবার মুহূর্তের মাঝে নিম্নতর। আবার কোনো কোনো স্থানে সমানতালে বয়ে যায়। এরকম হুট করে উচ্চচাপ আবার হুট করেই নিম্নচাপ প্রয়োগ লেখার সৌন্দর্যতা নষ্ট করে। এবং পাঠকের পাঠের প্রতি অভক্তি সৃষ্টি করে।
অনেক স্থানে দেখা গেছে, একটি বাক্যের মাঝে একটি বা দুইটি শব্দ অনুপস্থিত। অথবা দুই তিন বাক্যকে একটা বাক্যে রূপান্তর করা হয়েছে। যা রীতিমতো অনেক বড় ভোগান্তিতে ফেলেছিল। একটি বাক্যের মাঝে একটি বা একাধিক শব্দ যদি মিসিং থাকে, তবে কীভাবে বুঝব লেখকের কথন? সম্পাদক এবং প্রুফরিডার এমনকি খোদ লেখকের নজরেও আসেনি। আসলেও বিষয়টি মর্মান্তিক।
এবার আসি বানান প্রসঙ্গে। বানান প্রসঙ্গ এবং বাক্যের গঠন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার সাহস আমার নেই। বইটি শেষ করেছি কোনোমতে সাঁতরে। তাও বিরক্তি আমার উপর ভর করে সাঁতার কাটা অবস্থাতে ডুবিয়ে দিচ্ছিল বারবার। কোনোমতে পাড় করেছি বইটি। আমি প্রথম দুই পৃষ্ঠার ভুল-ত্রুটিগুলো তুলে ধরলাম। তাও বিরক্তিতে পড়েছি বারংবার।
• " সমাজের শত শত মানুষের ভিড়ে বিকৃত মস্তিষ্কের কত মানুষ আছে সে সংখ্যা হয়তো অনুমান করতে পারি। নির্দিষ্ট করে বলা কারো পক্ষে সম্ভব না। " " সমাজের শত শত মানুষের " সমাজের এবং মানুষের। পরপর দুটি বহুবচন শব্দ। একবার সম্পূর্ণ সমাজকে নির্দিষ্ট করা হলো। পরে আবার শত শত বলা হলো। একটু পরে আবার মানুষের মাঝে নির্দিষ্ট করা হলো। অর্থাৎ তিনটি একই শব্দ পরপর ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া দেখা যায় প্রথম বাক্যেই " কত " শব্দটি লেখা হয়েছে। অর্থাৎ ও-কার বিহীন স্ট্রাকচারে সম্পূর্ণ বইটি গঠন করা হয়েছে। তাই কত লেখা হয়েছে। এবং এখানে আরও একটি ভুল রয়েছে। তা হলো কারো বানান ভুল। অভিধান অনুসারে সঠিক শব্দটি কারও। এবং পরপর দুটি বাক্য একই অর্থবহ হলেও তা যোগসূত্র স্থাপন করা হয়নি। এবং বাক্যের মাঝে ধারাবাহিকতারও ছোঁয়া নেই। কিছু সময় বচন ভঙ্গি উচ্চতর হচ্ছে। আবার নিম্নতর হচ্ছে। আবার কোথাও সমানতালে।
এই বাক্যটি এভাবে লিখলে হয়তো পাঠকের পাঠে সুবিধা হতো। এবং পাঠ করে আরামদায়ক বোধ হতো। " সমাজে শত মানুষের ভিড়ে বিকৃত মস্তিষ্কের কত মানুষ আছে তা আমরা কেবল অনুমান করতে পারি। কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। "
• " একেকজনের সাথে একেকজনের মানুষকিতা কখনো কখনো মিলে গেলেও বেশিরভাগ সময় অমিল রয়েই যায়।" আমার এ অবধি অভিজ্ঞতা অনুসারে এই বাক্যটি কোনোভাবেই একটি সুন্দর এবং পূর্ণ বাক্য হতে পারে না। " একেকজনের সাথে একেকজনের " কোনো সামঞ্জস্যতা বজায় নেই। তাছাড়া লেখা হয়েছে মানুষকিতা। অর্থাৎ টাইপিং ভুল। কিন্তু একজন সম্পাদক এবং একজন প্রুফরিডার ব্যবহার করার পরেও পরপর কয়েকটি স্থানে একই ভুল হওয়া হুমকির বার্তা প্রদান করে। বাক্যটি এরকম হলে হয়তো মন্দ হতো না, " একজনের সাথে অপরজনের মানুষিকতা কিছু সময়ে মিলে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অমিল দেখায়/ দেখা যায়।"
• " কেউ হয়তো পজেটিভ ভাবতে ভালোবাসে কেউ নেগেটিভ ভাবে।" এখানেও ত্রুটি রয়েছে। প্রথমত লেখা হয়েছে পজেটিভ। যা হবার কথা ছিল পজিটিভ। অপর ক্ষেত্রে বাক্যের মাঝে শ্রুতিমধুরতার লোপ এবং ভাবে শব্দটি আলাদা লিখার ত্রুটি। বাক্যটি হওয়া উচিত ছিল, " কেউ হয়তো পজিটিভ ভাবতে ভালোবাসে আবার কেউ নেগেটিভ/নেগেটিভভাবে।"
অনেকগুলো উত্তরসহ লিখে দিয়েছি। এখন কেবল কী কী ভুল হয়েছে তা বলে দেব। আমার আর সহ্যে কুলোচ্ছে না। বিরক্তি আবারও মাথায় ভর করেছে।
• " তেমনি "। অথচ এরকম কোনো শব্দ অভিধানে নেই। অভিধান খুঁজলে পাওয়া যায়, " তেমনই "।
• " ধীরে ধীরে সেটা যেন নেশাতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে নিমিষেই। " এটি একটি বাক্যের গণনায় পড়ে? কী সম্পাদনা করেছে সম্পাদক? বাক্যের প্রথমেই বলছে " ধীরে ধীরে " আবার শেষে গিয়ে লেখা আছে " নিমিষেই "। মানে বিয়ে বাড়িতে যেয়ে লাউ আর কদু দুই আইটেমের খাবার একসাথে খেতে চাচ্ছেন পরিস্থিতি।
• " ব্যার্থতা " অভিধান অনুযায়ী রয়েছে, " ব্যর্থতা "।
• " সামান্য প্রেমে ব্যার্থতা কোন মানুষকে সাইকো বানিয়ে ফেলতে পারে তা হয়তো তাকে না দেখলে অবিশ্বাস্য লাগবে।" প্রথম ভুল " কোন " মানুষ। এটি হবার কথা ছিল " কোনো মানুষ " অর্থাৎ সম্পাদক, প্রুফরিডার এবং লেখক প্রত্যেকে চোখে পট্টি বেঁধে পাণ্ডুলিপি দেখছিলেন।
• " তিন বছরের প্রেমের পর যখন প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র তখন থেকেই ছেলেটির মনে মেয়েদের প্রতি জন্ম নেয় ঘৃণা রূপ নেয় পশুত্বে।" এটি একটি সম্পূর্ণ বাক্য। কিন্তু আমার কাছে এটি একদম ন্যূনতম মানের বাক্যে মনে হয়েছে। বাক্যের মাঝে একটি কমা ও একটি দাঁড়ি আবশ্যক ছিল। কিন্তু তা অনুপস্থিত। তাছাড়া " বছরের প্রেমের "দুটো অসমঞ্জস্য শব্দ। তএবং শেষ দিকে লেখকের কথন বুঝা বড্ড দায় হয়ে পড়েছিল। এরকমটা লিখলে হয়তো মন্দ হতো না। " তিন বছর প্রেমের পর যখন প্রেমিকার বিয়ে অন্যস্থানে হয়ে যায়, তখন থেকেই ছেলেটির মনে মেয়েদের প্রতি জন্ম নেয় ঘৃণার। রূপ নেয় পশুত্বে।"
• "কিছুদিন আগেও যেমন সে একটি মেয়েকে তার সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবাসতো তেমনি আজ মেয়েদেরকে শুধুই ভোগের বস্তু হিসেবে ভেবে আসছে।" আমি এই বাক্যের কোনো আদি বা অন্ত পেলাম না। প্রথমে লিখল যেমন। একটু পরে একই বাক্যে তেমনি লিখেছেন। প্রথমত " তেমনি " কোনো শব্দ নেই। দ্বিতীয়ত " যেমনই-তেমনই এবং যেমন-তেমন " হয়। তাছাড়া "তেমনি"র পর " আজ " লেখা হয়েছে। কিন্তু বাক্যের শেষে " ভেবে আসছে " অর্থাৎ অতীত। কিন্তু আজকের ভেতরে বর্তমানকে অতীতভাবে ভাবনায় আনা যায় তা আমার জানা ছিল না। অর্থাৎ এই বাক্যটি সম্পূর্ণ ভুলের উপর নির্মিত রয়েছে।
• " মুখের উপর একটা ভয়ঙ্কর মুখোশ পড়ে ঝাপিয়ে পড়ে সে।" এই বাক্যে তিনটি ভুল রয়েছে। প্রথম ভুল, " ভয়ঙ্কর "। অভিধান অনুসারে শব্দটি " ভয়ংকর "। দ্বিতীয় ভুল, " পড়ে "। পরিধান বুঝাতে সবসময় ব-এ শূন্য-র হয়। তৃতীয় ভুল, " ঝাপিয়ে " শব্দটি মূলত ঝাঁপ থেকে এসেছে। ঝাঁপ থেকে ঝাঁপানো। সেখান থেকে " ঝাঁপিয়ে "।
•" ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলে পাশে বসে খেলছে। একটা মেয়ে পুতুলের বিশেষ অঙ্গগুলো পরোখ করে দেখছে সে। সোনালী রঙের এই দামি পুতুলটা তাকে কি���ে দিয়েছে ফিল্যান্ডার। "
প্রথমে বলল, একটা বাচ্চা ছেলে বসে খেলছে। এরপরই সে একটা মেয়ে পুতুলের বিশেষ অঙ্গগুলো পরোখ করে দেখে। এরপরই দামি পুতুলটি তাকে ফিল্যান্ডার তাকে কিনে দিয়েছে উল্লেখ করা। কিন্তু কথা হচ্ছে, ছেলেটি খেলছে কিন্তু কী দিয়ে খেলছে? হুট করেই কেন বাচ্চাটা বিশেষ অঙ্গগুলো পরোখ করে দেখছে? আর পরের বাক্যই কেন উল্লেখ করা এটি ফিল্যান্ডার ক্রয় করে দিয়েছে? মূলত বিষয়টি হচ্ছে, এখানে কথকের বর্ণনায় ভুল। বাচ্চাটা খেলতেছে তারপরেই উল্লেখিত করার প্রয়োজন ছিল ফিল্যান্ডার তাকে পুতুলটি ক্রয় করে দিয়েছেন। এবং এরপর ফিল্যান্ডারের দেয়া পুতুলটি নিয়ে কী করছেন তার বর্ণনার প্রয়োজন ছিল। সকল কিছুর একটা ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু লেখক ধারাবাহিকতা বজায় না রেখে এক স্থানেরটা অন্যস্থানে লিখেছেন। তাছাড়া একটা পুতুল দামি হোক বা কমদামি। সাধারণত পুতুলের মাঝে কোনো বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চিহ্নিত করা হয় না বা বুঝা যাবে এরকমভাবে সৃষ্টি করা হয় না। অর্থাৎ এটিও লেখকের ভুল বর্ণনা। এবং শব্দটি পরোখ নয় অভিধান অনুযায়ী শব্দটি পরখ। যার অর্থ, পরীক্ষণ, বিচার। ২ বিবেচনা ; পর্যালোচনা।, বি. গুণাগুণ পরীক্ষা, বিচার, যাচাই।
• " মত "। অভিধান অনুযায়ী এই শব্দটির অর্থ, " মনের ভাব, অভিমত।" কিন্তু লেখকের লিখিত স্থানে এমন কোনো কথা হবারই নয়। সেখানে " তুল্য বা সদৃশ্য " বুঝানোর জন্য লিখেছেন। অর্থাৎ শব্দটি " মত নয় মতো " হবে।
• " শোন বাবা মেয়েদের কখনো ভালোবাসতে হয়না এরা তোমার সুখের জন্যই পৃথিবীতে এসেছে।" প্রথমেই ভুল হয়েছে সম্মোধনে। " শোন বাবা" এরপর একটি কমা ব্যবহার করতে হতো। এরপর " হয় না "র পর দাঁড়ি দিতে হতো। এবং শব্দটি হয়না নয়। না বাচক না সবসময় স্বতন্ত্র পদ হিসেবে বসে। যেমন: " হয় না, যায় না ইত্যাদি "
• " তুই হবি আমার পর আর এক ফিল্যান্ডার। " এখানে আর এক লেখা হয়েছে। শব্দটি আর এক নয়। দুটো মিলিত হয়ে আরেক হবে।
• " ছোট্ট ছেলেটির কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে লোকটি।" এখানে লেখকের সম্মোধন ত্রুটি। পূর্বে লেখা হয়েছে, " সোনালী রঙের এই দামি পুতুলটা তাকে কিনে দিয়েছে ফিল্যান্ডার।" এবং বাচ্চাটা তার কাছেই আছে। তবে ছোট্ট ছেলেটির সামনে লোকটি বলছে বা বলছে লোকটি লিখা ভুল। কেননা লোকটির নাম আগেই কথক প্রকাশ করে দিয়েছে। হাইড ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ না ব্যক্তিটির নাম প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু ব্যক্তির নাম প্রকাশের পর লোকটি বলে সম্মোধন নয় তার নামেই সম্মোধন করতে হয়। হয়তো লেখক ভুলে গেছেন। এবং সম্পাদক ও প্রুফরিডার ঘুমাচ্ছিলেন।
• " মুখোশ পড়ে আছে। " এখানেও সেই পূর্বের ভুল। পড়ে নয় পরে হবে।
• " কোন স্টেশন " কে,কী বা কোনটির ক্ষেত্রে কোন হয়। কিন্তু অনির্দিষ্ট একটি বা একাধিক বুঝাতে কোনো অথবা কোনও লিখতে হয়।
• " ফুটপাতের কোন নারীকে " এখানেও সেই পূর্বের সমস্যা। এখানেও হবে, " ফুটপাতের কোনো/কোনও নারীকে"।
• " ফেললো " আমরা পূর্বেই দেখেছি, কত লেখা হয়েছিল। যা ও-কার বিহীন শব্দ। এবং শুরুতে ও-কারহীন শব্দ ব্যবহার করায় সেই স্ট্রাকচার অনুসারে লিখতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী ফেললো বানান ভুল। সঠিক বানান তবে " ফেলল " হবে।
• " বিছানার চাঁদর " বিছানার যে আবার চাঁদরও আছে তা আমি আজ জানলাম। আগে জানতাম বিছানায় চাদর বিছায়। কিন্তু দিন বদলের পাশাপাশি বিছানার উপর চাদর সরিয়ে চাঁদর বিছানো হয় জানা ছিল না।
• " রাখলো " স্ট্রাকচার অনুযায়ী " রাখলো " বানান ভুল। সঠিক শব্দ " রাখল। "
• " গাউন পড়ে " প্রতিটি স্থানে পরিধান ক্ষেত্রে পড়া বা পড়ে লিখেছেন। যা আসলেও দৃষ্টিকটু।
• " আধখোলা চুলের অনেকটা অংশ বাতাসে উড়ছে। " আমার জানামতে বাতাসে একটা নারীর চুল যদি উড়ে তবে দুই কানের পৃষ্ঠে থাকা চুল উড়ে। এবং তা খুব স্বল্প পরিমাণ। তীব্র বেগের বাতাসেও অনেক চুল একত্রে উড়ে না। আর এত তীব্র বাতাস ঘরের দরজার আসবে কোত্থেকে? অর্থাৎ অনেকটা অংশ দিয়ে বর্ণনার ত্রুটি করা হয়েছে।
• " একটা শুয়োরের মুখোশ" বইয়ের ভাষায় শুয়োর শব্দটা কতটা যুক্তিযুক্ত? আমার মতে জিরো পার্সেন্ট। এখানে বইয়ের মাঝে কথকের বচন ক্ষেত্রে শুকর লেখা যেতে পারে। কিন্তু শুয়োর একটা গালি পর্যায়ে চলে যায়।
• " দূর থেকে একটি মেয়েকে প্লাটফর্মে দাঁড়াতে দেখে থমকে দাঁড়ালো। পায়ের কাছে একটি ব্যাগ রেখে জড়সড় হয়ে বসে আছে মেয়েটি। " আরে ভাই! এটা কোন দেশি যুক্তি! কোন দেশি কথা? আগে বললেন প্ল্যাটফর্মে একটা মেয়েকে দাঁড়াতে দেখে, আবার পরের বাক্যে বললেন জড়সড় হয়ে বসে আছে। মানে কীভাবে সম্ভব! বর্ণনায় এতবড় ত্রুটি! আর তাছাড়া শব্দটি প্লাটফর্ম না প্ল্যাটফর্ম হবে।
এরকম আরও অসংখ্য ভুল ছিল। এতটুকুই লিখেছি বড় কষ্ট করে। এখন হাতে ব্যথা করছে। কদিন ভুগতে হয় কে জানে! একটা পাণ্ডুলিপি লেখার পর লেখক যদি নিজে তিন থেকে চারবার রিভাইস করে। তবে পাণ্ডুলিপিতে ভুলের পরিমাণ যেন ৭০ ভাগ কমে যায়। এবং বাকি ত্রিশ ভাগ প্রুফরিডার এবং সম্পাদক সলভ করেন। কিন্তু একটা বইতে একজন প্রুফরিডার এবং একজন সম্পাদক দিয়ে দেখানোর পরেও পাণ্ডুলিপিতে এত ভুল কী করে থাকে? এতগুলো ভুল কেবল মাত্র দুই পৃষ্ঠাতেই পেয়েছি। এবং তন্মধ্যে অনেকগুলো ভুল ছেড়ে দিছি বিরক্ত হয়ে। কত সম্ভব ভাই? এগুলোতেই তো আমার মস্তিষ্ক জ্যাম হয়ে ছিল।
আমাদের মাঝে এমন এক সিচুয়েশনে হয়েছে যে, প্রকাশকরা ভাবে, আরে বানান ভুল, বাক্যের ভুল ইত্যাদি এগুলো আর কী? এগুলো দিয়ে কিছু হয়। তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, বানান ভুল কতটা মারাত্মক একটা সমস্যা। ভুল হবে না এমন না। তবে ভুলের পরিমাণ তো কমাতে হবে। এইযে এখন প্রকাশকদের উদ্দেশ্য করে কথাটি বললাম। বাস। ইনবক্সে একেকজন প্রকাশক যুদ্ধ শুরু করে দেবেন। নানান রকমের কথা বলবে। বলেন ভাই। আই ডোন্ট কেয়ার। আমার হাতে বই পড়া মানেই আমি একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিতে সমালোচক হিসেবে পড়ব। সমালোচনা নিতে পারলে নেন। না নিলে ঘুম যান।
যাক, বইটির থিমের কারণে এবং কিছু বিষয়ের কারণে মার্কিংয়ে দুই নাম্বার বরাদ্দ ছিল। আমি আশা রাখব, আগামীতে প্রকাশনী এবং লেখক উভয়ে বানান ভুল এবং বাক্যের ভুল ও অন্যান্য বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি রাখবেন। ধন্যবাদ।
তেমন জমলো না। একবছর আগে পড়লেও ৪ স্টার দিতে সমস্যা হতো না। কারণ নতুন ধরণের পাঠক ছিলাম। অনেক কিছু কম জানতাম। যাই হোক, প্রথম বই ভুলত্রুটি থাকবেই। সব মিলিয়ে হতাশা হলেও, উপভোগ করার মতো বিষয় ছিল।
কাহিনী সংক্ষেপঃ শহরে একের পর এক কম বয়সী মেয়ে গুম হয়েই চলছে। অনেক চেষ্টা করেও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না পুলিশ।এই গুমের রহস্য খুজে বের করার দায়িত্ব পরে ইনস্পেক্টার মেঘার উপর। ঠিক এইসময়েই পাশের শহরেও ঘটে চলছে একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ড। এই খুনের কিনারা করতে কাজে নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিটেক্টিভ রাজ ও ইনস্পেক্টার অনিমেষ। হঠাৎ দুই শহরে একই এমন বিশৃঙ্খলার কারণ কি? কোনো ধরনের যোগসূত্র কি আছে তাদের মধ্য? মেঘা, অনিমেষ আর রাজ কি এর কোনো সুরাহা করতে পারবে ? নাকি এর পিছনে লুকিয়ে আছে অতীতের বড় কোনো ঘটনা? জানতে হলে বইটি পড়ে ফেলুন।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইটি এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ ছিল। প্রথম থেকে একটা গা ছমছমে ভাব বজায় ছিল। বইয়ের প্লট ও ফ্লো খুব ভালো ছিলো। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো বইটা পড়ে আমার রিডার্স ব্লক টা কেটে গেছে। এর জন্য নির্জন ভাইকে ধন্যবাদ। বইয়ের কোথাও একটুর জন্যও বোর হইনি। হয়তো খুব বেশি থ্রিলার পড়ার কারণে খুনি সম্পর্কে অনেক আগেই আচ করতে পেরেছি কিন্তু তারপরেও শেষ পর্যন্ত না যাওয়া অবদি কনফিউজড ছিলাম। বইয়ের কিছু কিছু কথা খুব ভালো লেগেছে এবং কঠিন কিছু বাস্তবতা বইয়ে ফুটে উঠেছে। প্রথম বই হিসেবে বেশ ভালো লিখেছেন লেখক। বইয়ের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো বইয়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো। অসাধারণ ছিল সবগুলোই। বইয়ে বেশ কিছু বানান ভুল ছিল, বিশেষ করে "রং" ও "রঙ্গ" এর মাঝে একটু গোজামিল হয়েছে। কিছু ব্যাপারের রিপিটেশন হয়েছে কয়েক জায়গায়। বইয়ে পেইজ খুব ভালো, আমার মতে বাইন্ডিংটা আরেকটু ভালো হলে ভালো হতো। তাছাড়া বাকি সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। তো আর দেরি না করে বইটি পড়ে ফেলুন।
বইটি বেশ ভালো লেগেছে। সাবলীল লেখনী। বইয়ের শুরু থেকে যথেষ্ট গতি ছিলো। বইয়ের ইলাস্ট্রেশন ও বেশ প্রশংসনীয়। বইয়ের পৃষ্ঠার মান ও ভালো। অল্পকিছু বানানে অসংগতি ছাড়া আর তেমন কোন ভুল চোখে পড়েনি। তবে প্রকাশনীর বই বাধাই এ আরো উন্নতি করা উচিত বলে মনে করি। বাধাই কোয়ালিটি খুব একটা যুতসই না 😥
লেখকের প্রথম বই ছিলো এটি- তবে পড়লে মনে হবে না যে এটা তার ১ম বই। আরো ভালো ভালো কন্সেপ্ট নিয়ে আরো বই নিয়ে আমাদের উপহার দিক- এটাই কামনা।
বইটা অনেক ভালো, এমন রিভিউ দেখে কিনেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে আহামরি কিছু লাগে নি। মার্ডার মিস্ট্রি বইয়ে যদি বুঝা যায় কে মার্ডার করেছে তাহলে সেটার মজা থাকে না। লেখক অল্প বয়সের, আর এটা তার প্রথম বই, যেটা লেখা পড়েই বোঝা যায়। ভুল ছিলো অনেক। আশা করি আস্তে আস্তে হাত আরো পাকা হবে।
"নিতম্বের সাথে ঝুলে আছে একটা ঝুলন্ত ব্যাগ।" -আচ্ছা, নিতম্বের সাথে ব্যাগ ঝুলায় কেমনে?! ম্যাকানিজমটা কি ধরতে পারছেন? এভাবেই মূল রহস্যের চেয়ে গল্পে বর্ণিত মেয়েদের শারীরিক "গুণাবলি"-ই যেন বেশি 'রহস্যময়' হয়ে উঠেছে "আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলী" বইটায়। সমান্তরাল ভাবে চলা দুই খুনের গল্প নিয়েই মোফাচ্ছের হোসেইন নির্জনের লেখা, মার্ডার মিস্ট্রি/ পুলিশ প্রোসিডিউরাল/ থ্রিলার ঘরানার"আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলি"। লেখক কনসেপ্ট আর টুইস্ট ভালো চিন্তা করেছিলেন। গল্পে নাটকীয়তাও ছিল। খুনের শিকারেরা "পরিবহন মন্ত্রী"-র সাগরেদ হওয়াতে এগুলো কি নিছক হত্যা নাকি প্রতিশোধের খাতিরে করা এ নিয়ে ধন্দের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কিন্তু লেখনীতে আরো ভালো করবার সুযোগ আছে। নারীদেহের তেলতেলে বিবরণের বাহুল্য বিরক্তির উদ্রেক করেছে। সংলাপের অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। একটা মাত্র খুন হলেই পুলিশের মনে হয় না যে "সিরিয়াল কিলিং"; মেয়েমানুষ খুন হলেই পুলিশের, বিশেষ করে ফরেনসিক টিমের বিশেষ আলামত ছাড়া ধর্ষণের পর খুন মনে হওয়ার কথা না। তদন্ত প্রক্রিয়াও সহজাত মনে হয়নি কিছু ক্ষেত্রে। ভিকটিমদের কারো কম্পিউটার নেই যেখানে ফেসবুক খোলা থাকতে পারে কিংবা মেয়েরা বন্ধুদের কিচ্ছুটি না বলে, খুশিতে-ঠ্যালায়-ঘোরতে প্রায় অচেনা ছেলের সাথে চলে যায়- ব্যাপারগুলো স্বাভাবিক মনে হয়নি।
লেখক আর তাঁর বন্ধুমানুষদের লেখা অণুকাব্যগুলো ভালোই ছিল। প্রতি অধ্যায়ের শেষের দিকে সেই অধ্যায়ের কাহিনীর সারাংশ একটা পত্রিকার টুকরো খবর হিসাবে উপস্থাপনের আইডিয়াটাও বেশ (যদিও একটা অধ্যায়ে এই কাজ করতে গিয়ে পরের অধ্যায়ের স্পয়লার পাঠককে দিয়ে দেয়া হয়েছিল)।
সারকথা, 'ফর্সা চেহারা' আর নারীদেহের সৌন্দর্যের ধাক্কা হজম করে নিতে পারলে আর প্রথম লেখা হিসেবে লেখনীর অপরিপক্বতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারলে পাগলা খুনীর গল্প জানতে পড়াই যায় "আঁধার নগরীর ধুম্রকুহেলী"।
এই বইটিকে "ডার্ক সিটি সিরিজ"-এর প্রথম বই বলা হচ্ছে। আশা করি, পরের বইটিতে লেখক তাঁর লেখার দুর্বল দিকটুকু কাটিয়ে উঠবেন।