Jump to ratings and reviews
Rate this book

বাবা

Rate this book
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে মায়ের আত্মত্যাগ যতখানি বিশালাকারে স্থান পেয়েছে, বাবার অবদান হয়তো ততটা স্থান পায়নি! নতুনএই উপন্যাসটি সেক্ষেত্রে নিশ্চিত কৃতিত্বের দাবীদার।

উপন্যাসটির সময়কাল ১লা মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্ব তথা এপ্রিল/মে পর্যন্ত।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য এক গৌরবগাঁথা। আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এই দেশ। একজনবাংলাদেশী হিসেবে সেই ত্যাগের অনুভূতি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে "বাবা" উপন্যাসটি হতে পারে সহায়ক।

142 pages, Hardcover

Published June 1, 2020

1 person is currently reading

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1 (25%)
4 stars
1 (25%)
3 stars
2 (50%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 of 1 review
Profile Image for Nahid Ahsan.
Author 5 books8 followers
May 4, 2021
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত এক অসাধারণ উপন্যাস 'বাবা'। সচরাচর যারা বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তারা অনেকটাই জানে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত উপন্যাসের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু এরপরেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস রচনা করার যে সাহস 'রিয়াজ ফাহমী' ভাইয়া দেখিয়েছেন, তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। শুধু এটুকুনই বলার আছে, উপন্যাসটির পাতা যতো উল্টেছি, ততো মুগ্ধ হয়েছি। হারিয়ে গিয়েছি সেসব গল্পে, নিজেই হাতরে ফিরেছি এই চরিত্র থেকে সেই চরিত্রের জীবনে। বইয়ের শুরু থেকে শেষ অব্দি লেখার সৌন্দর্যের মায়ায় ডুবে যেতে হবে, এটা মোটামুটি হলফ করেই বলা যায়। প্রত্যেকটা স্থান, কাল, চরিত্রকে এতো চমৎকার করে বেঁধেছেন এবং সম্পর্কে মিলিয়েছেন, অসম্ভব সুন্দর বললেও ভুল হবে। চলুন বিস্তারিত জেনে আসা যাক, রিয়াজ ফাহমী রচিত তার দ্বিতীয় উপন্যাস 'বাবা' সম্পর্কে...

প্রচ্ছদশিল্পী শাহরিয়ার সাদাতের করা অসাধারণ এক প্রচ্ছদের কারণে বইটি যেন পূর্ণতা পেয়েছে। চন্দ্রভুক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত রিয়াজ ফাহমীর 'বাবা' বইয়ের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪২। মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ সাহেবকে উৎসর্গ করেছেন এই বইটি। কভার উল্টালেই ফ্ল্যাপে বেশ কিছু ছোট ছোট লেখা দেখা যায়। উপন্যাসের ভেতর থেকে তুলে আনা হয়েছে। সম্পূর্ন উপন্যাসটি দুইটি খন্ডে বিভক্ত। কিন্তু এত চমৎকার ভাবে দুটি খন্ডের মাঝে সম্পর্ক বিদ্যমান, তা পাঠকেরা খুব সহজেই আঁচ করতে পারবে।

" আব্দুস সোবাহান খান। নাম শুনে মনে হয় কোনো মুরুব্বি ধরনের মানুষ। শুধু বয়সে মুরুব্বি না। ভাবেসাবেও মুরুব্বি। এই যেমন, মাথায় সাদা টুপি। আধা পাকা দাড়ি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়েন। মসজিদ থেকে ফেরার পথে, সামনে অল্পবয়সি ছেলে পড়লে দু'চারটে উপদেশ দেন৷

শাঁখারিবাজারের মোড় থেকে দু'শো গজ ভিতরে যে আব্দুস সোবাহান থাকে, সে মোটেই মুরুব্বি নয়। বয়স একুশ। পরিসংখ্যানে অনার্স করছে। তৃতীয় বর্ষ। খুবই নিরীহ লেখাপড়া আর টিউশনি ছাড়া কোনো বিষয়েই তেমন আগ্রহ নেই। নামাজ প্রায় সময়ই ছুটে যায়। জীবনে কাউকে উপদেশ দিয়েছে বলে তাঁর মনে পড়ে না৷ "

ঠিক এভাবেই উপন্যাসের শুরু। উপন্যাসটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সোবাহান। তাকে ঘিরেই উপন্যাসের শুরু। সোবাহানের বাবা মা নেই। এতিম। থাকে ছোট চাচার বাসায়। বিনিময়ে ছোট চাচার মেয়েকে পড়াতে হয়। রুমকির বয়স সতের। ছোট চাচার বাসায় বেশ আরামে থাকলেও তার চিন্তার শেষ নেই, ঢাকা শহরে থাকা বিশাল খরচের ব্যাপার, সেখানে চাচার বাসায় নিশ্চিন্তে থাকাটা কেমন দেখায়। চাচি অবশ্য তাকে বেশ আদর করেন। মায়ের মত। চাচি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। সুস্থ হবার সম্ভাবনা কম। কঠিন অসুখ৷ সোবাহানের অন্যতম প্রিয় কাজ ডায়েরী লেখা।

উপন্যাসের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রানুর আগমন, শান্তিনগরের রাস্তার ধারে একতলা বাড়িতে থাকে, টিনের ছাদ। কাকতালীয় ভাবে রানুরও প্রিয় কাজ ডায়েরী লেখা। রানুর স্বামীর নাম অজিত, ছোট মেয়েও আছে, নাম অবনী। রানুর মাথায় ডায়েরী লেখার পোকা ঢুকেছে অবনীর টিচারকে দেখে। অবনীর টিচার ছেলেটা নাকি মেশিন টাইপের। সময় মত আসে, সময় মত চলে যায়। কাকতালীয় ভাবে মেশিন ধরনের এই ছেলেটিই সোবাহান, উপন্যাসের শুরু যাকে ঘিরে।

সম্পূর্ণ উপন্যাস যাবত, এক-দুই অনুচ্ছেদ পর পরই লেখক চমকে দিয়েছেন, এক গল্পের সাথে অন্য গল্পের কী ভীষণ মিল! লেখকের এই বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হয়েছে প্রায় কয়েকশতো উপন্যাস হয়ত ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন, লেখার মধ্যে দারুণ রকমের ম্যাচ্যুরিটি আছে৷ পরিবেশ বর্ণনা, সম্পর্কের সংজ্ঞায়ন, সম্পৃক্ততা রক্ষা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এত চমৎকার ভাবে বুঝাতে পেরেছেন, এ যেন দারুণ সৃষ্টি! দুই খন্ডের সম্পূর্ণ উপন্যাসটি এক বসায় শেষ না করে উঠতেই পারবেন না, মোট আটাশটি অনুচ্ছেদ আপনাকে টেনে শুধু উপন্যাসের গভীরেই নিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের গভীরে। অনেক ভিতরকার সব গল্পে। বুঝেই উঠতে পারবেন না উপন্যাসের শুরু এবং শেষ কোথায়।

পঞ্চম অনুচ্ছেদে সোবাহান, সর্বপ্রথমবার বাসা থেকে মিছিলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। প্রবল উত্তেজিত রাস্তায়, হাজারো তরুণের ভিড়ে সোবাহান পরিচিত কাউকে খুঁজে ফিরে, কাউকেই পায়না। কাউকে না পেয়ে যখন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, হাজির হয় নতুন চরিত্র রফিক, সোবাহানের বন্ধু। গল্প এগোতে থাকে। গুলিবিদ্ধ রফিককে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মেডিকেলের উপরের তলায় দীর্ঘ করিডোরের শেষ মাথায় মেঝেতে বসে কাগজ বিছিয়ে লেখা শুরু করলো সোবাহান।

" ২রা মার্চ, ১৯৭১... "

চারদিন যাবত হরতাল চলছে। ঐদিনের গোলাগুলির পর রানু অজিতকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কোথাও নেই। হারিয়ে গিয়েছে। রফিক হাসপাতালে ভর্তি। সোবাহানের চাচা আনিসুর রহমানকেও নেয়া হয়েছিল হাসপাতালে, কিন্তু কেন?
রানু অজিতকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে ডায়েরী লিখতে বসলো৷

আট নম্বর অনুচ্ছেদে হরিপ্রসাদের আগমন। একটা ক্যান্টিন পরিচালনা করেন। কোলাহলপূর্ণ ক্যান্টিন৷ দেশে অশান্তি বিরাজ করছে, সারাদিন ক্যান্টিনেও তর্কবিতর্ক চলছে। কোলাহল। ঘরেও কোলাহল, বাহিরেও কোলাহল। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে, আছে দুই সন্তান। ছোট মেয়ের বয়স বারো, খুবই চঞ্চল। এভাবেই গল্প এগোতে থাকে।

একের পর এক চমক দিয়ে, পাঠকদের মন কখনও ভালো হচ্ছে, কখনোবা ভীষণ মন খারাপের খবর শোনাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, সব অনিশ্চিত। ভাগ্যের খেলা। তবে লেখক যে চরিত্রগুলোর মাঝে দারুণভাবে সম্পর্ক রচনা করেন এবং তাদের প্লটে নিয়ে আসেন, তা দেখে বরাবরই মুগ্ধ হয়েছি। হরিপ্রসাদ একদিন তার চঞ্চল মেয়ে দুর্গাকে নিয়ে ক্যান্টিনে আসেন। কিন্তু কোনভাবেই মেয়ে একজায়গায় স্থীর থাকে না। শুধু দৌড়াদৌড়ি করে। নীচে ৫৭ পৃষ্ঠা থেকে কিছু লাইন হুবুহু তুলে ধরছি :

" হরিপ্রসাদ বাধ্য হয়েই রাত আটটার দিকে ক্যান্টিন বন্ধ করলেন। রাস্তার মোড়ে এসে রিকশা নিলেন। দুর্গার চোখে ঘুম। সে রিকশায় বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ল।

সোয়া আটটার দিকে আনিসুর সাহেব দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনলেন। সোবাহান ছাদে তাঁর রুম থেকে নীচে নেমে এল। দরজা খুলে দেখলো এক ভদ্রলোক বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আনিসুর সাহেব আনন্দ নিয়ে তাকিয়ে আছেন সেদিকে। অনেকদিন পর হরিপ্রসাদকে দেখে তাঁর ভালো লাগছে। তার কিছু বিশেষ অতীত জড়িয়ে এই মানুষটাকে নিয়ে। তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। "

কী সুন্দর তার লেখা!

২৫শে মার্চ, ১৯৭১ এর রাতে সোবাহান হন্যে হয়ে তার ছাত্রী অবনীর মা রানুকে খুঁজে চলেছে, কিন্তু কেন?

হরিপ্রসাদ তার মেয়েকে আনিসুরের কাছে দিয়ে বিদায় নিলেন, কেন?

রাত দুইটার দিকে আনিসুর সাহেবের বাড়ির সামনে দুটো পাকিস্তান আর্মির জিপ থামলো। আনিসুরের পায়ের কাছে তখন তার মেএ রুমকি এবং হরিপ্রসাদের মেয়ে দুর্গা বসা। এরপর কি হয়?

এসব জানতে জানতে প্রথম খন্ড শেষ হয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় খন্ড। পাঠক হিসেবে আপনি হন্য হয়ে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাবেন, কি হবে এরপর, কি হবে এরপর, এই ভেবে!

এতোটা সুন্দর করে, পাঠকের আকর্ষণ ধরে রেখে গল্প পাল্টেছেন, বলে চলেছেন, ভীষণ ভাবে মুগ্ধ হয়েছি। অপলক তাকিয়ে থেকে পৃষ্ঠা উল্টেছি আর ভেবেছি, ইশ! এটা না হলেও হতো!

প্রথম খন্ডের চেয়ে দ্বিতীয় খন্ড অনেক বেশি সাসপেন্সফুল। উপন্যাসের শেষ জানার জন্য লোম দাঁড়িয়ে যাবে। পড়ার গতি দ্রুত হবে। হতেই থাকবে।

সোবাহান, আনিসুর, হরিপ্রসাদ, রুমকি, দুর্গা, রানু, অবনী, র���না, হাসান চরিত্রগুলো হয়ে উঠবে ভীষণ আপন। নিজেদেরই কেউ হয়তো। একান্তই নিজেদের আশেপাশের কেউ।

"নিভৃতে" উপন্যাসের লেখনি যতোটা মুগ্ধ করেছে, তার চাইতে ঢের বেশি মুগ্ধ হবেন রিয়াজ ফাহমীর লেখা "বাবা" পড়ে। এক জীবন এই লেখকের লেখা চলুক, শুভকামনা জানিয়ে পাঠ পর্যালোচনা এখানেই শেষ করছি।

দারুণ এই বইটি অর্ডার করুন আজই। যেখান থেকে সরাসরি অর্ডার করবেন তার লিংক নীচে দেয়া হলো :

রকমারি : https://www.rokomari.com/book/201978

বইয়েরতরী : https://m.facebook.com/113278687121842

বইওয়ালা : https://m.facebook.com/295565617316357

ছাড়পত্র : https://www.charpotro.com/book/baba/

রিয়াজ ফাহমী ভাইয়ার লেখা বই অবশ্যই পড়বেন। দিনশেষে বেশি বেশি বই পড়ার অনুরোধ। বই পড়লেই সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায়। বই নিয়ে কথা বলে যাব আমি এক জীবন।

পাশে চাই সবাইকে। দো'আ চাই। ধন্যবাদ।
Displaying 1 of 1 review

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.