আসিফ নজরুলের জন্ম পুরান ঢাকার গলিতে। নাটকীয় ঘটনাচক্রে তিনি লন্ডনে গেলেন পিএইচডি করতে। বিশ্ববিখ্যাত একজন অধ্যাপক তার গবেষণা দেখে বিস্মিত হলেন এর নিম্নমান ও অগভীরতায়। তার প্রবল তাচ্ছিল্যে লন্ডনের ফুটপাতে বসে কাঁদলেন আসিফ নজরুল। শুরু হলো তাঁর জীবনের ভয়াবহ সংগ্রামের কাহিনি। শুধু পিএইচডি না, এই অভাবনীয় কাহিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়নেরও।
আসিফ নজরুল একজন ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ১৯৯১ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। আন্তর্জাতিক আইনে পিএইচডি করেন লন্ডন থেকে। এরপর জার্মানি ও ইংল্যান্ডে কিছুদিন কাজ করেছেন পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে। সাংবাদিক হিসেবে একসময় খ্যাতি অর্জন করেন। বর্তমানে কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে বহুল পরিচিত। দীর্ঘ বিরতির পর কয়েক বছর ধরে আবার সৃজনশীল লেখালেখি করছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দশের অধিক।
মো. নজরুল ইসলাম, যিনি আসিফ নজরুল নামে পরিচিত তার 'পিএইচডির গল্প' পাঠককে চমৎকার একটা অনুভূতি দেবে। 'সাপ্তাহিক ২০০০' ম্যাগাজিনের ঈদসংখ্যায় শুধু পিএইচডির কাহিনির সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় একদশকের বেশি সময় আগে। বর্তমান বইটি সেই রচনাকে ওপর ভিত্তি করে অনেকটাই বড়ো পরিসরে লেখা। আমি দুইটি লেখাই পড়লাম। ঈদসংখ্যার লেখাটি পড়ার পর এই বইটি পড়লেও পাঠক বঞ্চিত হবেন না। প্রথম লেখাটি অনেক সংক্ষপে লেখা।
মাত্র ১শ ২০ পাতার বইটিকে ড. আসিফ নজরুলের পিএইচডি করার অভিজ্ঞতা-পুস্তক ভাবলে ভুল হবে। অল্পকথায় নিজের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিলাতে পিএইচডি জীবনের গল্প শুনিয়েছেন লেখক।
পুরান ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা আসিফ নজরুলের। বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্র হিসেবে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এরপর ঢাবির আইন বিভাগে। শিক্ষক হবেন না। তাই চুটিয়ে সাংবাদিকতা করতেন তখনকার পাঠকপ্রিয় 'বিচিত্রা'য়। ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে সুনাম ও কদর দুই-ই চলে গেল। অনেকটা নিজের ইজ্জত বাঁচাতে ও 'ক্রাশ'কে মুগ্ধ করতেই আ্যকাডেমিক পড়াশোনা শুরু করেন। আবারও ভালো ফলাফল করতে থাকেন। কিন্তু আচমকা সেই ভালোবাসার মানুষটির হারিয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ধাক্কা দেয় তাকে। অনার্স ও মাস্টার্সে ভালো ফলাফল করলেও সাংবাদিকতার নেশা ছাড়তে পারেননি। কেননা ততদিনে তিনি নামজাদা সংবাদকর্মী। লোকের বাহবা পাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা বেশ কঠিন কাজ।
এখন বিসিএসে যে-কোনো ক্যাডার, এমনকি নন-ক্যাডার পাওয়াও প্রচণ্ড পরিশ্রমসাধ্য। তখন হয়তো তেমন ছিল না। আসিফ নজরুল লিখেছেন, একপ্রকার কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বাবাকে খুশি করতে সরকারি চাকরিতে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। সাংবাদিকতার উদ্দাম জীবনের প্রতিতুলনায় প্রশাসনের চাকরি নিতান্তই রসকষহীন প্রতীয়মান হলো। মাত্র ৩৬ দিনের মাথায় প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে আবার ফিরলেন সাংবাদিকতায়।
আসিফ নজরুলের সরকারি চাকরিজীবী পিতা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে অপছন্দ করতেন৷ চাইতেন না পুত্র এমন পেশায় যুক্ত থাকুক। তাই তিনি আবারও সাংবাদিকতা ছাড়লেন। প্রথমে চবি এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঢাবির আইন বিভাগে যোগ দিলেন। এসব ঘটনার পাশাপাশি আসিফ নজরুল নিজের সংবাদকর্মী জীবনের দু'একটি অভিজ্ঞতা পাঠকের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন।
স্ব-ইচ্ছায় নয়, অনেকটা বিভাগের চাপে আর অন্যান্য সহকর্মীদের দেখে পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নেন আসিফ নজরুল৷ বিষয় হিসেবে বাছাই করেন আন্তর্জাতিক নদী আইন এবং বাংলাদেশ-ভারত জলচুক্তি। তখনও গঙ্গাচুক্তি হয়নি।
ঔপনিবেশিক লুটপাটের কাফফারা দিতেই হয়তো কমনওয়েলথ বৃত্তি দেয় ব্রিটেন। সাধারণত গবেষকদের চাইতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই বৃত্তি মঞ্জুর করতেই বেশি আনন্দ খুঁজে পায় ইউজিসি। প্রথমবার প্রত্যাখ্যাত হলেও দ্বিতীয়বার বৃত্তিটি পেয়ে যান লেখক। এই বর্ণনা পড়ে পাঠক ইঙ্গিত পাবেন বৃত্তি নিয়েও এদেশে কেমন 'রাজনীতি' চলে।
'বিচিত্রা'য় সাংবাদিকতা করার মতোই সহজ কাজ পিএইচডি করা - এমন নির্দোষ ভাবনা নিয়েই বিলেত এলেন আসিফ নজরুল। লন্ডনে তার পিএইচডি পরিদর্শক ছিলেন পরিবেশ আইনে বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি ফিলিপ স্যান্ডস ( ইনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত মামলায় আমাদের হয়ে লড়েছেন এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা গাম্বিয়ার মামলায় তিনি আমাদের আইনজীবী)।
ফিলিপ স্যান্ডস হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন পিএইচডি করা কাকে বলে৷ এই বয়ান পড়ে বেশির ভাগ পাঠক পিএইচডি ভীতিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
আসিফ নজরুলের পিএইচডি উপস্থাপনের সাক্ষাৎকারে গঙ্গাচুক্তি বড়ো জায়গা জুড়ে ছিল। সেখানে তিনি ব্যাখা করেছেন এই গঙ্গাচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনতার উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই৷ কারণ তারা ঠকেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইনসাফ পায়নি।
এটুকুতেই সমাপ্ত হলে তিন তারকার অধিক বইটিকে দিতাম না। আসিফ নজরুল অকপটে নিজের প্রথম স্ত্রী, যিনি তার সাবেক ছাত্রী ছিলেন তার কথা উল্লেখ করেন। প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে এই ভদ্রমহিলার কথা আসিফ নজরুল লিখেছেন। পাঠক হিসেবে আমাকে এটা স্পর্শ করেছে। সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করার সময়েই তিনি প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন। অর্থাৎ লেখালিখি করার হাত আসিফ নজরুলের ভালো। পুরো বই জুড়ে গদ্যে হুমায়ূন আহমেদের লেখার নির্যাস পাচ্ছিলাম। যা খারাপ লাগছিল না। বরং পাঠককে ঘটনার সাথে আরও সম্পৃক্ত করে তুলতে সহায়তা করে। মজার ব্যাপার হলো, বইতে দু'একবার আসিফ নজরুল তার 'হুমায়ূন ভাই'কে এবং তার পরিবারের সাথে হৃদ্যতার কথা স্মরণ করেছেন৷ শেষটুকু ছবির মতো এঁকেছেন আসিফ নজরুল। সবটা হয়তো নির্জলা সত্য নয়; কিছুটা জল তাতে মিশলে অবাক হবো না। তবু বইটি পড়ে আনন্দিত হয়েছি।
আসিফ নজরুলকে চিনতাম হুমায়ূন আহমেদের জামাতা হিসেবে। পরবর্তীতে তাঁর লেখক সত্তার সাথে পরিচয় হয়। 'পিএইচডির গল্প' লেখকের প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। নাম ভূমিকায় পিএইচডি থাকলেও বইটিতে পিএইচডির গল্পের পাশাপাশি লেখকের ছোটবেলা হতে পিএইচডি করতে ইংল্যান্ড যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকেও বর্ননা করেছেন।
আসল নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। লেখালেখির সময় নাম পালটে আসিফ নজরুল রাখেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে। ঢাকা বোর্ডে মানবিক বিভাগে স্ট্যান্ড করেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে খবর এসেছিল পেয়েছেন সেকেন্ড ডিভিশন। এত ভালো ছাত্র অথচ সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছেন বিশ্বাস করেনি বড় ভাই। বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করেছেন। তবে স্ট্যান্ড করার খবরটা জেনেছিলেন এক আত্মীয়ের বাসায় খবরের কাগজে।
ঢাকা কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। একই বিভাগে ভর্তি হয় হলিক্রস কলেজ হতে থার্ড স্ট্যান্ড করা দেশসেরা বিতার্কিক শেরেজাদ আহমেদ। তাঁর প্রেমে লেখক তখন পাগল। দৃষ্টি আকর্ষণে তখন লেখালেখিও শুরু করেছিলেন।
বাবাকে খুশি করতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১৯৯০ সালে। লেখকের ভাষ্যমতে হেলাফেলা করে পরীক্ষা দিয়েও বিসিএস(প্রশাসন)-এ দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় মাত্র ৩৬ দিন ম্যাজিস্ট্রেট এর চাকরি করে পদত্যাগ করেন।
১৯৯১ সালে নতুন আইন বিভাগ খোলা হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন তিনি সেখানে প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে নয় দিনের মাথায় জানতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেবে আইন বিভাগে। ঢাকায় থাকা এবং বিচিত্রায় লেখার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। যোগদান করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর পিএইচডি করার জন্য স্কলারশিপের আবেদন করেন। তবে প্রথমবারে আবেদন খারিজ হলেও দ্বিতীয়বারে কমেনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান ১৯৯৪ সালে।
বঙ্গদেশে পিএইচডিকে খুব মহিমান্বিত র��পে দেখা হয়। ইংল্যান্ড যাওয়ার পর সেই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া খুব সমস্যার সৃষ্টি করলো। তবু ভাগ্য ভালো যে দেশীয় বন্ধু-বান্ধব ছিল। তা��াই সাহায্য ও উপদেশ দিয়ে বিভিন্নভাবে উপকার করেছিলেন লেখককে। ইংল্যান্ড যাওয়ার পর দেখলেন বাংলাদেশকে ওখানকার মানুষ চিনে বন্যার সময় দশ হাত পানি আর তসলিমা নাসরিনকে বের করে দেয়ার ঘটনা দিয়ে। আস্তে আস্তে সবকিছুর সাথে মানিয়ে যান। লেখকের পিএইচডির বিষয়বস্তু ছিল আন্তর্জাতিক নদী আইন। বাংলাদেশ নদ-নদীর দেশ এবং এই দেশের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক নদী বহমান।
আসিফ নজরুলের থিসিস সুপারভাইজার ছিলেন তাঁর ছয় বছরের সিনিয়র ফিলিপ স্যান্ডস। লেখকের বয়স ২৮ আর ফিলিপের ৩৪। সকলেই বলেছিল ফিলিপের অধীনে থিসিস না করতে। কারণ তাঁর অধীনে নাকি থিসিস সম্পূর্ণ করা অনেক কঠিন। তবে লেখক সম্পূর্ণ করেছিলেন ১৯৯৯ সালে। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসে তখন ভারতের সাথে নদীর পানি বন্টন নিয়ে চুক্তি করে, তখন আসিফ নজরুলকে তাঁর থিসিসে পরিবর্তন আনতে হয় এবং পুনরায় লিখতে হয়। কারণ ফিলিপের ভাষ্যমতে এত দূর্বল একটি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
বুয়েটের শিক্ষক ড. আইনুন নিশাতের মতে পিএইচডি ছয় প্রকার। জালিয়াতি, তেজারতি, খয়রাতি, মারফতি, মেহনতি ও তেলেসমাতি। নাম দেখেই প্রকারভেদ সম্পর্কে আঁচ করা যায়। আসিফ নজরুল নিজেকে মেহনতি পর্যায়ের পিএইচডিধারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সেই মেহনতি ও ইংল্যান্ড থাকাকালীন সুখ-দুঃখের গল্প দিয়েই সাজানো 'পিএইচডির গল্প'।
লেখকের বর্ননাভঙ্গি চমৎকার। কোনো জটিলতা নেই। একেবারে সহজ-সরলভাবে নিজের জীবনের কিছু কিছু কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা বলে গিয়েছেন। পিএইচডির সময়কালের ঘটনাগুলো একটু দ্রুত বলেছেন, তার চেয়ে ইংল্যান্ড যাওয়ার পূর্বের গল্প ভালো লেগেছে বেশি। সর্বোপরি সুন্দর একটা বই, যা পড়লে পড়ালেখার প্রতি একটা বাড়তি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। হ্যাপি রিডিং।
বর্তমান দেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে কতিপয় কারনে আমি অপছন্দ ই করি। কিন্তু উক্ত বইয়ে বিবৃত তাঁর শিক্ষাজীবনের সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভের দুর্দান্ত গল্প আমাকে চমৎকৃত ও অনুপ্রাণিত করেছে। একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের নানান রূপ থাকে। একজন মানুষ হয়তো রাজনীতিবিদ বা শাসক বা কোন একটা ভূমিকায় বিতর্কিত হতে পারেন, আবার সেই মানুষটা ই হয়তো সৃষ্টিশীলতার কোন ক্ষেত্রে চমৎকার সফলতায় মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন।
আসিফ নজরুলের 'পিএইচডির গল্প'র গল্প শুরু হয়েছে তাঁর শৈশবকাল থেকে। কিভাবে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের অবহেলিত রোগাক্লিষ্ট মধ্যম সন্তান নিজ জেদ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একাডেমিক জীবনের সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছেন তা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। বইটি শুধুমাত্র এই বিষয়টি নিয়ে লিখিত এমনটা না ; আত্মজৈবনিক নানান ঘটনায় আসিফ নজরুলের ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর স্বভাবও উঠে এসেছে এতে। মানুষ হিসেবে আসিফ নজরুল দোষ-গুণ উভয়ের সমন্বয় ই ধরা পড়েছে এতে।
আন্তর্জাতিক নদী আইন এর উপর পিএইচডি করতে গিয়ে লেখক অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যা কিছু পুরে এনেছেন, তা-ই একে একে দেখিয়েছেন পুরো বইজুড়ে। ব্যাপারটা অনেকটা "হোয়াটস ইন মাই ব্যাগ" টাইপের। :-P
ভিনদেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম, হুট করে বিয়ে করে ফেলে খাবি খাওয়া আর কঠোর এক সুপারভাইজার এর আন্ডারে কাজ করে সকল অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে শেষে বিজয়ীর হাসি হাসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে অতীব তরল ভাষায়। সুখপাঠ্য ও সহজপাঠ্য।
"বুয়েটের কিংবদন্তীতুল্য শিক্ষক আইনুন নিশাত স্যারের মতে পিএইচডি ৬ ধরনের: জালিয়াতি, তেজারতি, খয়রাতী, মারফতি, মেহনতি, তেলেসমাতি।"
মাধ্যমিক থেকে ব্যক্তিগত জীবনের হালকা বর্ণনা দিয়ে শুরু। কিভাবে PhD তে গেলেন, অজানা অপরিচিত দেশে মানিয়ে নেয়ার বিড়ম্বনা, আস্তে আস্তে পিএইচডি কি জিনিস তা বুঝতে শেখা, মাঝপথে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তার গবেষণার আবার নতুন করে লিখতে বসা, মাঝের অগোছালো ব্যক্তিগত জীবন, শেষমেশ অমানুষিক পরিশ্রম আর শেষ হাসি- এভাবেই বইটা সাজিয়েছেন লেখক।
এক বসায় শেষ করে ওঠার মত ঝরঝরে লেখা। এই গল্প একদম ঢাকা থেকে লন্ডনে হঠাৎ গিয়ে পড়া ব্রিটিশ কালচারে অনভ্যস্ত একজন মানুষের পিএইচডি জীবনের অনিশ্চয়তার। এই গল্প প্রবাসজীবনে চারপাশের মানুষদের মানসিকতার। লেখার ধরণ বেশ ঝরঝরে, এক বসায় পুরোটা পড়ে ওঠা যায়।
It was a strange journey as a reader of this book! Almost half of the path were really disappointing, where a tragic middle-class memoir is just telling stories but it sounds like a average novella !
But, when the main part of this book were going to start, a cautious reader will not be able to ignore the spark of a struggling man who was there against all the odds and confronting them with lots of guts! Yes, he is struggling, but he is not giving up and that's a phenomenal show of a wounded person.
Asif Nazrul shortly briefed us about the problems of our Ganga Treaty with India ( 1996) . His supervisor Filiph was in a shocked situation after seeing the treaty which was very weak regarding the basis.
It was a nice journey, gaining some hope for giving a try to involving with some useful venture!
আসিফ নজরুলের লেখা আমার বরাবরই ভালো লাগে। ঝরঝরে ধরনের লেখা। ফেসবুকে পড়া হয় নিয়মিত। কেনো জানিনা আরেকটু বেশী আশা করেছিলাম এই বইটি থেকে। ১১৮ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে খুব অল্প সময় লাগলেও মাঝামাঝি এসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলাম। শেষ করেছি যদিও, শেষের দিকে লেখার সুর-লয় ফিরে এসেছিলো।
পুরো বইটিতেই তাঁর পিএইচডি নামক ব্যাপারটার জন্য সংগ্রামের গল্প লেখা। জীবনের অপমান কিংবা প্রাপ্ত অবহেলার কথাগুলো তিনি লিখে গেছেন অকপটে। প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বেশ স্মৃতিচারণ করেছেন সাবলীলভাবে। এই অংশগুলো ভালো লেগেছে বেশ।
রেটিং দিতে চাচ্ছি ৩.৫। ফ্র্যাকশন দেওয়া যাচ্ছে না বিধায় ৪ দিচ্ছি। চাইলেই বইটি আরও ইন্ট্রেস্টিং করে লেখা যেতো :''(
আসিফ নজরুল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক পরিচিত নাম। তিনি হয়ত আপনার চোখের সামনে এসে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক হিসেবে, অথবা চ্যানেল পরিবর্তন করতে গিয়ে চলতে থাকা কোনো টক শোর শাণি�� যুক্তির পরিবেশনার আঁটকে যাওয়া কোনো মুহূর্তে, আর নয়তো “বিচিত্রা” পত্রিকার সেই নামকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু “পিএইচডির গল্প” নামের প্রথম আত্মজৈবনিক গ্রন্থে আমরা যতটা না খুঁজে পাই মোঃ নজরুল ইসলামের, ডঃ নজরুল ইসলাম হয়ে ওঠার কথা, তার থেকে বেশি খুঁজে পাই তা্র আজকের আসিফ নজরুল হয়ে ওঠার কথা এবং এই বিনির্মাণে তার পিএইচডি জীবনের অবদানের গল্প। যে গল্প তথাকথিত সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বেপরোয়া জেদ আর কঠোর পরিশ্রমের আলোয় উদ্ভাসিত এক তরুণ আসিফ নজরুলের। ঝরঝরে শব্দ আর সাবলীল গল্প বলার ছলে তার যাপিত জীবনের ছায়া ভেসে উঠেছে কখন বইয়ের পাতায়,কখনো পাঠকের চোখের ছায়ায়।
বইয়ের শুরুতেই লেখক আমাদেরকে নিয়ে যাবেন পুরানো ঢাকার গলিতে নিজের বাড়িতে আর চোখের সামনে মেলে ধরবেন বড়ঘরে পড়ে থাকা পত্রিকার পাতাটি। চোখ আটকে যাবে মানবিক বিভাগে ১০ নম্বর সেরা ছাত্রের নামটা দেখে। মোঃ নজরুল ইসলাম, স্কুল ঃ ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল, রোল ঃ ঢাকা, ৩০৮২! বৈঠকি মেজাজে তিনি বলে যাবেন তার শিক্ষানুরাগী পরিবারে বেড়ে উঠার গল্প, মেধাবী বড় ভাইয়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ছিটকে পড়ার আকস্মিকতা, উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়ার জন্য সেই বড় ভাইয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর নাটকীয়তা অনেকটাই লেখনীতে ফুটে উঠেছে কৌতুকের ঘনঘটায়, আবার পরমুহূর্তেই প্রকাশ করেছে তার অভিযোজনের গল্প।এরই মাঝে আমরা পরিচিত হব ১৯৮২ সালে এইচএসসি পাশ করা দেশসেরা সব মেধাবীদের – রুবানা হক, শেরেজাদ আহমেদ শেরী। লেখকের শেরীর প্রেমে পড়ার অকপট স্বীকারোক্তি, তাঁর চোখে পড়ার নিষ্পাপ চেষ্টা অনেকটাই প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এক নতুন আসিফ নজরুলকে খুঁজে পেতে। বিচিত্রার সেই নামকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক চষে বেড়াচ্ছে সারা বাংলাদেশ, খবর সংগ্রহ করতে বাসে, আবার হয়তো কখনো বন্যাদুর্গত সন্দ্বীপে পৌঁছতে হেলিকপ্টারের পেছনের সিটের স্বল্প জায়গায় নিজের শরীরের কিছুটাকে কোনমতে উপুড় করে দিয়ে- আর বাকিটা আটকে আছে পাইলটের চালকের মুগ্ধ চোখে।এই তাহলে সেই সাংঘাতিক সাংবাদিক!
বইটি অবশ্যই শেষ হবে তাঁর পিএইচডি জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত কষ্ট, পিএইচডি সুপারভাইসার ফিলিপের অনিচ্ছাকৃত অবহেলা, উদযাপিত একাকীত্ব আর বিলাতে পরিচিত হওয়া অসংখ্য বাংলাদেশি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার ঘটনাবহুল সময়কাল নিয়ে। লেখায় জীবন্ত হয়ে এসেছে এমন কিছু চরিত্রের মানুষ যাদেরকে আমরা এখন অনেকেই চিনি। লেখক অবলীলায় স্বীকার করেছেন তার পিএইচডি বিষয়ক অনেক অজ্ঞতার কথা আবার একিই সাথে বিদেশে বাংলাদেশিদের বিস্ময়কর অর্জনে অনুপ্রানিত হয়েছেন, আর হয়েছেন অনেক জেদি যার জন্যই হয়তো সফল হয়েছিলেন সেই পিএইচডি জীবনের সুখময় ইতি টানতে।
বইটি শেষ হতেই কিছু প্রশ্ন আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে।বিসিএসে(প্রশাসন)দ্বিতীয় হয়ে ৩৬ দিন কাজ করে নির্দ্বিধায় চাকুরী ছেড়ে দেওয়া বেখেয়ালি এই চরিত্রটি কি তবে আজও সাংবাদিকতাকে মিস করেন? পিএইচডি করতে দেশ ছাড়ার আগের মুহূর্তে শেরীর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আসিফ নজরুলের ঝাপসা চোখে কি সেই জিজ্ঞাসা? এরকম গোটা কয়েক প্রশ্নের শুরু আর হাজারো ঘটনা মিলে মিশে একাকার এই পিএইচডির গল্পে। বইটি খুললেই সুযোগ থাকছে প্রচ্ছদের লাল টেলিফোন বুথে প্রবেশ করার।পাতা ওলটাতেই কল চলে যাচ্ছে, আর ফোনের ওপাশে লেখক আসিফ নজরুল নিজে।বলা শুরু করছেন তার গল্প, আর তার পিএইচডির গল্প।
জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের বই পড়ে ইচ্ছা জেগেছিল, Astrophysics এর কোন বিষয় নিয়ে PhD করব। সাথে যদি ও পরিবারের প্রথম PhD degree ধারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আরেকটা সুপ্ত ইচ্ছাও লুকোনো ছিল। কিন্তু ভার্সিটির thesis করতে গিয়ে বুঝেছিলাম, বামুন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরতে যাওয়ার মত একটা শিশুসুলভ সখ এটা। 😅 B.Sc. এর thesis এই যদি এ অবস্থা হয়, Masters করে তারপর আবার, PhD তে যাওয়া- আমার মত স্বল্প CGPA ধারীর জন্য একটু বেশিই অলৌকিক হয়ে যায়। আরো যে মেয়ে ঢাকা থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরের চাকরিতেই হাসফাস শুরু করে -২ মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেয়, সে আবার বিদেশে গিয়ে PhD করবে। 🤣একসময় অতিরিক্ত Home sick হওয়ার কারণে, দেশের বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছাটাও সম্পূর্ণ উধাও হয়ে যায়।
কিন্তু তাও মানুষের PhD এর গল্প জানতে খুবই ইচ্ছা করে। নিজের Thesis defense এ বিজয়ী বেশে presentation শেষ করার স্মৃতিটা ঘুরপাক খায়।
আসিফ নজরুল স্যারের বই পড়ে সেই আন্দটাই আবার পেলাম। ব্যাপারটা কিছুটা নিজের কাছে বিশ্বজয় করার মত। বইটা পড়ে মনে হল, আল্লাহ যা করে ভালো জন্যই করে, এতো মানসিক চাপ নেয়ার মত মানুষ আমি না😓
একটা মানুষ নতুন দেশে গেলে সেখনে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারটা, মানুষের মানসিকতা, চিন্তুা ভাবনা, আচার ব্যাবহার, পড়ার চাপ, Socialization এর বিষয়টা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। বইটা সম্পূর্ণ ওনার PhD নিয়ে না। ওনার বেড়ে ওঠা নিয়েও। আত্মজীবনী মুলক রচনা বলা যায়। কিছুটা লজ্জিত তার জীবনর সাথে নিজের কোন রকমে পাশ করা জীবনের পার্থক্যটা বুঝতে পেরে। গল্পটায় রসাত্মক ব্যাপার ও ছিল। তাই পড়তে খুবই মজা পেয়েছি। একটু যদিও ১/২ টা জায়গায় খাপছাড়া লেগেছে। তাও সেটা ক্ষমার যোগ্য।
আসিফ নজরুলের ১২০ পৃষ্ঠার এই বইটা অসাধারণ লাগলো। ৭টা অধ্যায়ে ভাগ করা এই বইটি মূলত তার লন্ডন যাওয়া এবং পিএইচডি করার সময়ের গল্প। বিদেশে থাকার আনন্দ বেদনা, পিএইচডির যন্ত্রণা-পরিশ্রম, সব মিলে এক উপভোগ্য স্মৃতিচারণ। পড়লাম খুব আরাম করে। তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে করা স্মৃতিচারণ অংশটি বেশ সুন্দর।
বইটা মূলত আমার একটা ফ্রেন্ডের জন্মদিনে উপহার দিব বিধায় কিনেছিলাম। তবে হাতে পাওয়ার পর, কৌতুহলবশত বইটার প্রচ্ছদ এবং ভূমিকা পড়ে আর নিজেকে থামাতে পারি নাই। উপহার দেওয়ার আগে নিজেই পড়ে ফেললাম বইটা। অসাধারণ একটা বই। এবং পড়তে খুবই ভাল লেগেছে।
ইন্টারে পড়ি তখন। আমার গনিত টিচার ছিলেন তাবলীগ করা লোক৷ তিনি একদিন আসিফ নজরুলের একটা ফেসবুক স্টাটাস শেয়ার করেন৷ পুরো লেখা জুড়ে তাবলীগের গুণগান। মূলত পিএইচডি চলাকালে তাবলীগে কাটানো কয়েকটা দিন কিভাবে তাকে মানসিক প্রশান্তি দিয়েছিলো এসব বিষয় উঠেছে৷ আমি মুগ্ধ হয়ে সেই লেখা পড়ি। এর আগে আসিফ নজরুলকে চিনতাম হুমায়ূন আহমেদের জামাতা হিসেবে৷ তার সম্পর্কে বিশদ জানা ছিলো না৷ এরপর সন্ধান পাই তার 'পিএইচডির গল্প' বইয়ের৷ অনেকদিন শেলফে পড়ে ছিল৷ অবশেষে পড়ে ফেলি। তার পিএইচডির সংগ্রাম অন্যদেরও যেকোনো শ্রমলব্ধ কাজে উৎসাহ দেবে বলে আমি মনে করি।
❛সোয়ার্সের ভেতর দিয়ে, গালফোর্ড স্ট্রিট, টটেনহ্যাম কোর্ট রোড পার হয়ে গুজ স্ট্রিটের মসজিদে। ভেতরে ঢুকে সেজদায় আছড়ে পড়ে আবার কান্না শুরু করি। দোয়া না, সূরা না, নামাজ না। শুধু কান্না। তিনি অন্তর্যামী, এ কান্নার মানে নিশ্চয় বুঝেছেন তিনি।❜
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে আমরা যে লেখাপড়া করি তার ষোলো আনাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিকে হয়ে যায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে নামি। আমার মনে আছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর স্বপ্নের লেখাপড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার বাসনায় উদ্ভাসে কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। চোখে ছিল স্বপ্ন। কিন্তু কোচিং শুরুর এক সপ্তাহ কী দুই সপ্তাহ নিজেকে ❛ব ল দে মোতাহার❜ মনে হচ্ছিল। কী শিখলাম এতদিন! কেনই বা শিখলাম। একসময়ের ভালো ফলাফল, গর্ব অহমিকা সব এক সপ্তাহের ক্লাসে মিলিয়ে গেলো। তাহলে আমার দ্বারা ভালো কিছু হবে না! কোচিংয়ে ক্লাস নিত যে টিচার তিনি বলতেন, ❛তোমাদের তো দেখে লাগেই না পড়ালেখা করো। সবার চেহারা টসটসে, নাদুসনুদুস!❜। এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে সেই লেখাপড়ার সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করা এবং পরবর্তীতে সে পড়ায় আনন্দ পেতে শুরু করা। এখন এসব অতীত। এই অদ্ভুত চক্রে বাংলাদেশী প্রায় সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রীই পড়ে। পড়েছিলেন মো. নজরুল ইসলামও, যাকে আমরা আসিফ নজরুল (লেখকী নাম) নামে চিনি। ১৯৮০ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় স্ট্যান্ড, আইএ পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবার পছন্দ আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছিলেন বেশ ভালোভাবেই। এর মধ্যেই শেরেজাদ নামক আরেক স্ট্যান্ড করা ছাত্রীর প্রেমেও পড়েছিলেন। নজরুল আর দশটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মতোই ছিলেন। হয়তো আরো বেশি সাধারণ। মিতব্যয়ী বাবা তাদের রাখতেন কড়া নিয়মের মধ্যে। সে নিয়মে বা সে মিতব্যয়িতায় ছিল ঈদে সস্তার কাপড়ে বানানো সে সময় হাল ফ্যাশনের ঢোলা প্যান্ট। এরপর টিউশনি করে নিজের কামাই করা, বিচিত্রা পত্রিকায় নিয়মিত লেখা এই দিয়েই তার লেখক জীবন শুরু। বাবার ইচ্ছেতে বিসিএস দিতে বসেছিলেন। প্রশাসনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তবে ক্যাডার জীবন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৩৬ দিন। এরপর নয়দিনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রতিষ্ঠিত আইন বিভাগে চাকরি করে ঠাই হলো অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। সে সময় ভার্সিটির শিক্ষক কিন্তু নামের আগে ড. জুড়ে দেয়ার জন্য পিএইচডি নেই এ নিয়ে বেশ কথা শুনতে হতো নজরুলকে। আশি নব্বই দশকের নজরুল ইসলাম যে কিনা বেশ কয়েকটা বই বের করে ফেলেছেন, পত্রিকায় লিখছেন নিয়মিত, যার র ক্তে মিশে আছে বিচিত্রা পত্রিকার সাংবাদিকতা, কাউকে পরোয়া না করা এবং অহমিকা- তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পিএইচডি করবেন। হাসনাত আবদুল হাইয়ের ❛বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন❜ পড়া নজরুল ছোটকালে কোনোদিন কি ভেবেছিলেন বরফ পড়া ঐ লন্ডনে পিএইচডি করতে যাবেন?
একরোখা স্বভাবের তিনি ভেবেছিলেন, যে আমি একটা রিপোর্ট, আর্টিকেল দুইদিনে লিখে নামিয়ে ফেলি তার কাছে পিএইচডি কোনো ব্যাপার! কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ❛আন্তর্জাতিক নদী আইন❜ বিষয়ে পিএইচডি করতে নেমে আর ফিলিপের মতো সুপারভাইজার পেয়ে নজরুল তার জীবনের সবথেকে কঠিন সময় দেখেছিলেন। আর্থিক সমস্যা, দেশের টান, ছেড়ে আসা পত্রিকার টান, ইংরেজিতে দুর্বলতা সব মিলে একসময় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আদৌ পিএইচডি করতে পারবেন কি না। অসহযোগিতা করার মানুষ যেমন ছিল, তেমন ছিল রানা ভাই, মুকুল কিংবা ভিভি, সোনিয়াদের মতো সুন্দর মনের মানুষ। সাড়ে চার বছরের পিএইচডি অভিজ্ঞতা, ডিফেন্স বোর্ড কীভাবে সামাল দিলেন সেসব গল্প জানা যাবে আসিফ নজরুলের লেখনীতে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
আসিফ নজরুলকে আমি লেখক হিসেবে চেনার আগে চিনেছি টিভিতে নিয়মিত টক শো দেখার কারণে। আগে একটা সময় ছিল রাতের বেলা আব্বু বাসায় এসেই টিভিতে টকশো দেখতো, যার সবই ছিল রাজনীতি নিয়ে। আব্বুর সাথে সাথে আমিও সেসব দেখতাম। একেকজনের আলোচনা, আলোচনার পর্যায়ে কা ই জ্জা বেঁধে যাওয়া বেশ উপভোগ করতাম। তবে যেদিন টক শোতে আসিফ নজরুল থাকতেন সেগুলো বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনতাম। উনার কথার ধরন আমার বেশ ভালো লাগতো। এরপর চিনলাম তাকে হুমায়ূন আহমেদের জামাতা হিসেবে। এবং সবশেষে একজন লেখক হিসেবে। তার এর আগেও তিনটে বই পড়েছি। লেখনী আমার দারুণ লাগে। ❝পিএইচডির গল্প❞ লেখকের প্রথম আত্মজীবনীমূলক বই। বইয়ের থিম তার পিএইচডি কালীন গল্প হলেও এখানে প্রাধান্য পেয়েছে লেখকের শৈশব, কৈশোর থেকে যৌবনের সময়গুলোও। একজন মানুষের জীবনের ঘটনা জানতে হলে অবশ্যই তার অতীত জানা প্রয়োজন। এখানেও তাই লেখকের দৈন্য দিনের শৈশব স্মৃতি এসেছে। এসেছে তাগড়া কৈশোর বা যৌবনের ঘটনাও। প্রেম ভালোবাসা এবং বিবাহের ঘটনাও ছিল। তবে যেহেতু মূল আকর্ষণ তার পিএইচডির সময়ের ঘটনা তাই আমিও সে ঘটনাগুলোই বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। হুমায়ূন জামাতা বলেই কী না কে জানে তার লেখার ধরনও বেশ আকৃষ্ট করার মতো। শব্দচয়ন এবং হাস্যরসের ব্যবহারও উপভোগ্য। এখানে লন্ডনের জীবনের ঘটনা, অসহায় দশা থেকে শুরু করে কাছের মানুষের থেকে পাওয়া সাহায্য, উপকারের ঘটনাগুলো লেখক নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন। আবার যারা অসহযোগিতা করেছে তাদের নাম না নিলেও ধরন বুঝিয়েছেন। ১২০ পৃষ্ঠার বইয়ের শুরুর দিক কিছুটা ম্যাড়মেড়ে লাগলেও পিএইচডির গল্পের সূচনা থেকে মেহিনতিপর্ব, মরিয়াপর্ব ছিল দারুণ এক পাঠ অভিজ্ঞতা। এত সুন্দর এবং মোহনীয় ছিল সে বর্ণনা যে কখন বইটা শেষ করে ফেলেছি টের পাইনি। দ্রুত গতির লেখা পাঠককে আটকে রাখবে বইতে। পুরো বইয়ের মধ্যে লেখকের ভালো-মন্দ সবদিকের ঘটনা পড়তে পড়তে আটকে গেছি একদম শেষ অংশে গিয়ে (শুরুতেই যে উদ্ধৃতি দিয়েছি)। কী দারুণ অনুভূতি ছিল! এত কষ্ট, শ্রমের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের অভিজ্ঞতা একমাত্র সাফল্য দেখা ব্যক্তিই জানে। ❛স্বপ্নপূরণ হলে আসলে কেমন লাগে?❜ এই অনুভূতি হয়তো স্বপ্ন ছোঁয়া মানুষগুলোই বলতে পারেন। ব্যক্তি হিসেবে স্পষ্টভাষী, একগুঁয়ে আসিফ নজরুল যখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং নতুন পরিবেশে গিয়ে টালমাটাল অবস্থায় পড়লেন সেখানে থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটলো এটাও বাকিদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। একে আত্মৌন্নয়নমূলক লেখা হিসেবেও বিবেচনা করা যায় কী? কারণ, পত্রিকায় তার এই লেখা অল্প করে ছাপার পর অনেকেই তাকে জড়িয়ে ধরে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন এই বলে যে, এটা তো তাদেরও দূরদেশে পিএইচডি করার গল্প! নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকেই নজরুলের সেই লেখায়। আবার এটা পড়ে দূরদেশে অনেকে হতাশা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করতে পারে তাদের থেমে যাওয়া কোনো থিসিস ডিফেন্স!
এই বইটাও আমার ভালোলাগার বইগুলোর একটি হয়ে থাকবে। যেখানে হেরে গেলেও নতুন উদ্যমে কাজ করার জেদ আছে, কঠিন পরীক্ষকের সামনে ভাঙ্গা ইংরেজি দিয়েও তার থেকে সম্মতি আদায় করে নেয়ার স্পৃহা আছে।
পিএইচডির গল্প: পিএইচডি শব্দটা শুনলে বুকের ভিতর ধুক করে উঠে। লোভ হয়। ইশ নিজে যদি একটা পিএইচডি করতে পারতাম। কেউ যদি বলে তোমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছে কোনটা, উত্তর পিএইচডি। দীর্ঘদিন উইশলিস্টে ছিল। পরে নিলাম স্যারের পিএইচডির গল্প। আসিফ নজরুল স্যারের সাথে পরিচয় প্রথম আলো পত্রিকার কলাম পড়ার মাধ্যমে। এখনো স্যারের কলাম নিয়মিত পড়া হয়। স্যার একজন সুবক্তা বটে। স্যারের টিভি টকশো বিভিন্ন ইন্টাভিউ প্রায় দেখা হয়। নজরুল স্যার উচিত কথা বলেন আপোষহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রলায়ের উপদেষ্টা। আমাদের তরুণ প্রজন্মে�� কাছে একজন অতি জনপ্রিয় মানুষ। আত্নজৈবনিক গ্রন্থ। পুরান ঢাকার গলি থেকে শুরু করে লন্ডনে পিএইচডির করার গল্প এখানে টুকরো টুকরো করে তুলে এনেছেন। আছে স্যারের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির টুকরো গল্প। স্যারের কথা যেমন স্পষ্ট আর ঝরঝরে তেমনি বইয়ের লেখা অনেক ঝরঝরে। যেকোনো পাঠকের জন্য আরামদায়ক। গল্পে উঠে এসেছে স্যারের পারিবারিক জীবনের কিছু কথা। পিএইচডির গল্পের সাথে উঠে এসেছে স্যারের লন্ডন জীবনযাপন , কিছু মানুষজন আর একান্ত কিছু গল্প। পড়তে গিয়ে এক লাইন পরে হাসবেন আবার পরের লাইন পরে মন খারাপ হয়ে যাবে। উঠে এসেছে পিএইচডির দিনগুলোতে স্যারের সংগ্রামের কথা। আত্নজৈবনিক বই পড়তে ভালো লাগে আমার। নিজের ভিতর একটা অনুপ্রেরণা যোগায়। ছোটবই। সুখপাঠ্য। বইটি সংগ্রহ করে এক বসায় পরে নিন পিএইচডির গল্প। হ্যাপিরিডিং 📖
নিজের গল্প মানুষ যখন নিজে বলে, তা পড়তে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। কোনো আত্মজৈবনিক গ্রন্থ পড়ে অনেকদিন পর এমন আনন্দ পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল লিখেছেন তাঁর পিএইচডি করার গল্প। পুরান ঢাকায় কৈশোর থেকে শুরু হয়ে এ গল্প ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে লন্ডনে পিএইচডি-সহ তাঁর ব্যক্তিজীবনের নানামাত্রিক টানাপোড়েন পর্যন্ত। আশি এবং নব্বই দশকের ঢাকা শহরের একটা খণ্ডচিত্র মেলে এখানে। পাশাপাশি লেখকের আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব, বিস্তৃত জীবনের প্রত্যাশা এবং নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে লেগে থাকার মানসিকতা পাঠককে এক রকম শক্তি জোগায়।
হুমায়ূন আহমেদের পিএইচডি করার গল্প 'হোটেল গ্রেভার ইন' পড়ে যেমন তৃপ্তি পেয়েছিলাম, এ বইটা পড়ার অনুভূতি অনেকটা তেমন। বইজুড়ে থাকা রসবোধের প্রকাশ এবং লেখার সরল-সাবলীল ভঙ্গি মুগ্ধ করেছে। ১২০ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা বই। পড়তে সময় লেগেছে খুব কম। আসিফ নজরুলের অন্যান্য বইগুলোও পড়ার ইচ্ছে রইলো।
কিছু জায়গা আগোছালো মনে হয়েছে, প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তর আরো নিরবচ্ছিন্ন হতে পারতো। মূল পিএইচডির গল্প একটু দেরিতে শুরু হয়। প্রেক্ষাপট বর্ণনা ভালো, সহজপাঠ্য। দুর্নিবার পরিশ্রম, হার না মানার জেদ, থিসিস ডিফেন্সের বর্ণনা এবং শেষ পর্যন্ত পিএইচডি অর্জনের গল্পটা সুন্দর। অনেক সাধনার প্রাপ্তিটুকু মনে দাগ কাটে।
আসিফ নজরুল নিজের পিএইচডি'র আগের এবং করার সময়কার ঘটনাপ্রবাহ বেশ মুখরোচকভঙ্গিতে আঁটিয়ে ফেলেছেন। উপস্থাপনার রস আর ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর দিলেই আসিফ নজরুলের ফ্ল্যামবয়ান্ট চরিত্র একদম নিখুঁত আয়নার মতন পরিষ্কার হয়ে ধরা দিয়েছে এই আত্মজৈবনিক লেখায়।
এই সাফল্যের গল্পগুলো আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।আসিফ নজরুল যখন লন্ডন থেকে তার মাকে ফোন করে জানায় 'হয়ে গেছে আম্মা,হয়ে গেছে' অজান্তেই আমার চোখ ভিজে যায়,আমার আমি বলে এরকম একটা ফোন তো আমি ও করতে চাই,পাঠক আর লেখকের অনুভুতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তখনি বোধহয়। ২৩ মার্চ,২০২২
কী সুন্দর অকৃত্রিম ভাষায় লেখক তার জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। পড়ে বেশ ভালো লাগলো। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে কীভাবে লেখক ধীরে ধীরে পরিপক্ব হয়ে উঠেছেন, ঠেকে শিখেছেন - সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক এক লেখা। কাহিনির ক্রমধারা হয়তো আরেকটু গোছানো হতে পারতো।
এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করার মতো চমৎকার একটি বই। দুনিয়াবি যুদ্ধে পরাজিত হতে না চাওয়া, আপাতদৃষ্টিতে গোঁয়ার প্রকৃতির একজন সংগ্রামী তরুণকে খুঁজে পাওয়া যাবে বইটিতে।
Worth the time. His writing style feels fresh but familiar. Only sad thing is there was some silly typos maybe in next edition it'll be edited correctly.