Jump to ratings and reviews
Rate this book

শবনম

Rate this book
A romantic novel set in the 1920s Afghanistan in which Majnun, a Bengali teaching in Kabul falls in love with Shabnam, a 19 year old Afghan girl.

160 pages

First published January 1, 1960

142 people are currently reading
1592 people want to read

About the author

Syed Mujtaba Ali

82 books446 followers
Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী) was a Bengali author, academician, scholar and linguist.

Syed Mujtaba Ali was born in Karimganj district (in present-day Assam, India). In 1919, he was inspired by Rabindranath Tagore and started writing to the poet. In 1921, Mujtaba joined the Indian freedom struggle and left his school in Sylhet. He went to Visva-Bharati University in Santiniketan and graduated in 1926. He was among the first graduates of the university. Later, he moved to Kabul to work in the education department (1927–1929). From 1929 to 1932 he studied at the universities in Berlin, London, Paris and Bonn. He earned Ph.D. degree from University of Bonn with a dissertation on comparative religious studies in Khojas in 1932.
In 1934-1935 he studied at the Al-Azhar University in Cairo. Subsequently, he taught at colleges in Baroda (1936–1944) and Bogra (1949). After a brief stint at Calcutta University (1950), Mujtaba Ali became Secretary of the Indian Council for Cultural Relations and editor of its Arabic journal Thaqafatul Hind. From 1952 to 1956 he worked for All India Radio at New Delhi, Cuttack and Patna. He then joined the faculty of Visva-Bharati University (1956–1964).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
613 (43%)
4 stars
497 (34%)
3 stars
219 (15%)
2 stars
55 (3%)
1 star
41 (2%)
Displaying 1 - 30 of 208 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,356 followers
July 22, 2016
আমি বোকা পাঠক। এ পর্যন্ত পড়া সবচেয়ে সেরা কিংবা সবচেয়ে প্রিয় প্রেমের উপন্যাসের কথা জিজ্ঞেস করলে যেকোন সময়ে গাঁক গাঁক করে একটাই নাম আওড়াই।
শবনম। :)

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কাবুলের একটি কলেজে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষার শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। কাবুলবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস দেশে বিদেশে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় বৈশাখ ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে। সে বইতে উল্লেখিত ঘটনাবলির উপর ভিত্তি করেই তিনি পরবর্তীতে রচনা করেছিলেন আত্মজৈবনিক উপন্যাস শবনম।

উপন্যাস-ই? মুহম্মদ এনামুল হক উত্তর দিয়েছেন এভাবে—
‘ঘটনাপ্রবাহসঞ্জাত চরিত্রসৃষ্টিই উপন্যাসের মূল উপাদান এবং তাহাই ইহাতে অনুপস্থিত।’
তবে নাটক? না, নাটকের কোন বৈশিষ্ট্যও এতে নেই। তবে শবনম কি সাহিত্যের চির অভিজাত শাখা কাব্য?
হ্যাঁ, ভাবমধুর ও রসঘন কাব্যের সমাহার যদি কাব্য হয়, তবে শবনম হয়তো তাই-ই।

শিক্ষকতা পেশার ভিত নিয়েই আলী সাহেব গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। আর প্রভাবশালী স্থানীয় সর্দার আওরঙ্গজেব খানের একমাত্র দুহিতা শবনম। ইংরেজদের মতো সাদামাটাভাবে বলতে গেলে যার ছিল চারটে বি-ই। ‘বিউটি, ব্রেন, বার্থ, ব্যাঙ্ক’।
দুঁদে আঁকিয়ে শবনম কথায় কথায় আওড়াতো কবিতা। তার প্রতি মুহূর্তে উদ্ধৃত পংক্তিমালা শুনেও মজনূন লেখকের মতোই আমিও শুধাইনি কখনো– ‘তুমি বাস্তবে বাস করো না কাব্যলোকে?’
শবনমের কাহিনি এমনই টসটসে কোবতে জারক রসে মাখানো যে, তা থেকে গল্পের বুনোট ছেঁকে সারসংক্ষেপ তুলে আনা প্রায় বেসম্ভব ব্যাপার!
যে ইরানি কবির শ্লোক ধার নিয়ে আলীজা স্বয়ং এই কাব্যগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য ব্যাক্ত করেছেন, তার অনুবাদটুকু ধার নেওয়া যাক—
মা আজ্ আঘাজ্ ব আন্জামি জহনাবি- খবরীম,
ঔব্বল্ ব আখিরি ই-কুহনি কিতাব উফ্ তাদহ্ অসৎ”…
গোড়া আর শেষ এই সৃষ্টির জানা আছে বলো কার?
প্রাচীন এই পুঁথি গোড়া আর শেষে পাতা ক-টি ঝরা তার!
তাইই হয়তো শব-ই- জুফফাফের ফুল শুকোনোর আগেই হারিয়ে যান শবনম।
সেই বিচ্ছেদের আগে বলে গিয়েছিলেন একটি কথাই–
‘আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।’

শবনম নয় আমার মতো সাধারণ ধনজনের বিত্ত। যাকে গ্রন্থালোচনা শ্রেণীতে সারিবদ্ধ করে ছোট্ট পরিসরে পরিচিত করা যাবে অপরিচিত পাঠকের কাছে। ‘কামের চশমা পড়িয়া মোহকে যারা প্রেম বলে, এই প্রেম সেই প্রেম নহে।’
সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর নিয়ে যা– সেই ইনফিনিটি এই শবনম।

যিনি পড়েছেন, তিনি হয়তো জানেন মূল্য.. হয়তো এখনো নয়।
কিন্তু যিনি এখনো পড়েননি, প্রিয় পাঠক– হাতে নিয়েই দেখুন একবার, প্রিয় অবসরে।
যুক্তিহীন মুগ্দ্ধ পাঠকের আলাপচারিতা আপাতত এটুকুই।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
February 28, 2022
"বাদশা আমানুল্লাহর নিশ্চয়ই মাথা খারাপ"- এই দিয়েই শবনমের শুরু। আর তাই দেশে বিদেশে পড়তে গিয়ে বারবার শবনমের কথাই মনে পড়ছিল। অতএব, হোক পুনঃ পাঠ।

শবনম: ভোরের শিশির!

কাহিনীতে এন্ট্রি নেয়ার সময় শবনমের সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে গিয়ে মুজতবা আলী সাহেব পাগমান পাহাড়ের বরফ, মল্লিকার পাপড়িকে নিয়ে টানাটানি করলেও আমি সেই অদেখা জিনিস নিয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। আবার বইয়ের মাঝের দিকে ওর হাতের আঙুলের তুলনা করেছেন ব্যালে নর্তকীর সাথে; মুখ তার সিঁদুরের মতো টকটকে। তবে একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে শবনমের সৌন্দর্যের বর্ণনার জন্য আমাকে আনন্দ বক্সীর লেখা নিয়ে টানাটানি করতে হচ্ছে -
Na kajre ki dhaar, na motiyon ke haar;
Na koyi kiya singar, phir bhi kitni sundar ho.
Ude khushboo jab chale tu,
Bole to baje sitaar,
Na kajre ki dhaar! 🎶🎵


শুধুই কি এই বাহ্যিক সৌন্দর্যই! শবনমের চলা ফেরা, কথায় কথায় কাব্য আওড়ানো, সাহস আর অদ্ভুত সুন্দর ব্যক্তিত্ব বর্ণনা করতে গুলজার সাহেবকেও টানতে হচ্ছে -
Aap ki aankhon mein kuch
Meheke huye se raaz hai
Aap se bhi khoobsurat
Aap ke andaaz hai🎶🎵


এক্সাক্টলি! মাত্র ১৯ বছর বয়সী তরুণী শবনমের চলাফেরা করার স্টাইল, ব্যক্তিত্ব কতটা দীপ্যমান তা টের পাওয়া যায় ভালবাসার মুহুর্তে শবনমের কথা শুনে কিংবা বোরকা পরিধান নিয়ে বলা কথায় - "তুমি ঐ তাম্বু, মানে বোরকা পর কেন?
স্বচ্ছন্দে যেখানে খুশী আসা-যাওয়া করা যায় বলে। আহাম্মুখ ইউরোপীয়ানরা ভাবে ওটা পুরুষের সৃষ্টি, মেয়েদের লুকিয়ে রাখার জন্য। আসলে ওটা মেয়েদেরই আবিষ্কার- আপন সুবিধের জন্য। আমি কিন্তু মাঝে মাঝে পরি, এদেশের পুরুষ এখনো মেয়েদের দিকে তাকাতে শেখেনি বলে-"

কিংবা আব্দুর রহমানকে চা খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করায়ও টের পাওয়া যায় শবনমের বদান্যতা- "আগা আবদুর রহমান, চা খাবে?" ভৃত্যকে বলা হচ্ছে চা খাবে? চা আনো নয়!

(অবশ্য মনে হতে পারে ১৯ বছর বয়সে এমন সব উপলব্ধি আর প্রবল নারীত্ব একটু খেলো হয়ে যায় না! অবশ্য শিশু কন্যার মধ্যেও প্রবল ব্যক্তিত্বধারী নারী লুকিয়ে থাকে ঠিক যেমন করে অপার মায়া লুকানো থাকে। সঠিক লোকের হাতে ট্রেনিং পেলে রাতারাতি নারী না হয়ে যায় কোথায়। নচেৎ ১৩ বছর বয়সী কিশোরীর প্রবল নারীত্ব দেখে আমার জ্বলে যাওয়ার উপক্রম হয়!? ;)

এবার উপন্যাসের দিকে যাওয়া যাক!? :)

শবনমকে রোমান্টিক উপন্যাসের ঘরানায় ফেলা হলেও এতে কবিতার উপস্থিতি ভীষণ ভাবে লক্ষ্যণীয়। তাহলে উপন্যাস না কাব্যগ্রন্থ? উপন্যাস আর কাব্যরস মিলিয়ে যা হয় শবনম তা-ই। বইটার ছোট ছোট তিনটি খন্ড বর্ণনা দেয় প্রেম,পরিণয় আর বিয়োগের।

বাংলাদেশের সিলেটের ছেলে মজনূন চাকরি সূত্রে গিয়েছিল আফগানিস্তানে, অধ্যাপনা করতে। আর কাবুল সর্দার আওরঙ্গজেব খানের আদরের কন্যা শবনম। পিতার ভাষ্য মতে বিউটি,ব্রেন,বার্থ, ব্যাঙ্ক- এই চারটি বিশেষণের অধিকারিণী শবনম আর বাঙালী মজনূনের দেখা হয়েছিল একরাতে; বল নাচের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে।
হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায় এই দুই কাব্য প্রেমীর। শেষে কাব্যালাপের মাধ্যমে ক্ষণকালের পরিচিত মজনূনকে শবনমের বিদায়-
"গোড়া আর শেষ এই সৃষ্টির জানা আছে বলো কার?
প্রাচীন এই পুঁথি গোড়া আর শেষে পাতা ক-টি ঝরা তার!"


১ম দেখায় প্রেম! রিলেটেবল!? যদিও প্রথম দেখায় প্রেম কথাটি একদিক থেকে বিতর্কিত। তবে একেবারেই যে এর অস্তিত্ব নেই তা বলা যায় না। এটা আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার।একজন মানুষকে প্রথমবার দেখে ভালো লাগতেই পারে। এরপর যদি আবারও তারসাথেই দেখা হয় আর ভালবাসার কথা মুখ দিয়ে বেড়িয়েই যায় তখন এটা লাভ এট ফার্স্ট সাইট না হয়ে যায় কোথায়। তবে হ্যা, সময়কাল বড়ই মাপা (প্রথমবার প্রেমে পড়ার পর আবার আরেকজনের প্রেমে পড়লে লাভ এট ফার্স্ট সাইটের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে যাবে যে, তাই উহা আপেক্ষিক ব্যাপার স্যাপার)

একবার দেখা মাত্রই বাঙালী মজনূনের হৃদয়ে এক অজানা শিহরণ, রাতের নিদ্রা পলায়ন করে আকাশের শশী হল সঙ্গী।
তারপর আবার পুনরায় দেখা, দৃষ্টি বিনিময়!!
"সরল হৃদয় মনে করে প্রেম লুকায়ে রাখিতে পারে
কাঁচের ফানুস মনে ভাবে লুকায়েছে শিখাটারে।"


অতঃপর!! প্রেম,মিলন আর বিচ্ছেদ! আর দশটা সাধারণ মানুষ সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যায় তা হোক সুখ বা দুঃখ। অভ্যস্ততা স্রোত হীন শান্ত নদীর মতোন, তাতে কোনো কিছুর উত্তেজনা নেই। <তবু বস্নত যৌবন দুদিনেই লোপ পায় >তাই হয়তো শবনম ভোরের শিশিরের মতো টুপ করে ঝরে যেতে চান নি, প্রিয় মানুষটার মনে ভোরের সতেজ শিউলির মতো ফুটে থাকতে চেয়েছিলেন সর্বদা। চেয়েছিলেন তার প্রিয় যেন তাকে ভালবাসতে গিয়ে একটা অভ্যস্ততায় বাঁধা না পড়েন। আর তাই হয়তো বিদায়ের কালে বলে গিয়েছিলেন -
"আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।"

মজনূন ঠিক কি করেছিলেন!? অভ্যস্ততার বশ মেনেছিলেন নাকি শবনমের কথা মতোই বারংবার বিরহে কাতর ছিলেন!? তুর্কী রমণী শবনম শিউলির কথা বলতে গিয়ে বাঙালী মজনূন এক কোণায় পড়ে গেছে। মজনূন সম্বন্ধে আমি একটা কথাই বলতে পারি- কোমলতার উপরে কাঠিন্যের পারদ লাগানো শ্রুতকীর্তিরা স্বার্থপর প্রেমে তো এমন কাউকেই চাইবে যে মিলন আর বিরহে অভ্যস্ত না হোক! ভালবাসুক আপনার থেকেও বেশি...


একটা জিনিস মনে রাখা ভালো এই কাহিনী সচরাচর দেখা প্রেম কাহিনীর মতো নয়।আবার হঠাৎ করে প্রথম দেখাতেই প্রেম; এক বিদেশীর সাথে শাহজাদীর প্রেমের কাহিনীটা হয়তো একটু নাটুকে। তবে বইয়ের শুরুটা যেমন সুন্দর ছিল শেষটাও ছিল তেমনি করুণ সুন্দর। যা কিছু রোমান্সের আবহে বর্ণিত তার সময়কালটা পবিত্রতার বন্ধনে বাঁধা ছিল; আর শবনমের ছিল এক আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব; হয়তো এ কারণেই ভালো লেগেছে, নচেৎ ভালো লাগলো কেন?

বইটির পাতায় পাতায় মজনূন আর শবনমের চলতি জীবনের প্রেমময় কাব্যরসের ধারা। ভাষা কঠিন; সহজ সরল প্রাঞ্জল নয়; আর সাথে আছে আরবী,ফারসি বয়েতের সংমিশ্রণ। তাই ভেবে চিন্তেই সময় খরচ করবেন!

রেটিং??
আকাশের হাজার তারা!

~ ২৯ জুন, ২০২১ (এডিটেড)
Profile Image for Muhammad .
152 reviews11 followers
July 25, 2016
ইংরেজী ভাষার অভিধানে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০০-১০০০ নতুন শব্দ যোগ হয়ে চলেছে। নতুন এই ইংরেজী শব্দগুলোর একটি বড় অংশেরই জন্ম বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারের বদৌলতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করবার জন্য প্রতিনিয়তই নতুন শব্দ হাতড়ে বেড়ায়। ইদানীংকার যুগের এমনই একটি নতুন উদ্ভাবিত শব্দ স্যাপিওসেক্সুয়্যাল (Sapiosexual), অর্থাৎ কিনা যিনি শারীরিক সৌন্দর্য নয়, বুদ্ধিমত্তাকেই যৌন আকর্ষণের প্রধান উপকরণ হিসেবে গণ্য করেন। বলা বাহুল্য, বুদ্ধিমত্তার দ্বারা ‘যৌনাভাবে’ আকর্ষিত হতে হলে নিজেরও যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা থাকা চাই; পুকুরের পানির গভীরতা মাপতে হলে যেমন দরকার পড়ে শুকনো লম্বা কাঠির। ‘স্যাপিওসেক্সুয়্যাল’ কথাটি বেশ গুরুগম্ভীর এবং এর অর্থটিও মনে হয় সাধারণের নাগালের বাইরে। তবে ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রত্যেকেই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কখনো না কখনো ‘স্যাপিওসেক্সুয়্যাল’ হয়েই যাই! কোন আসরে হঠাৎ পরিচয় এমন কোন ব্যক্তির সাথে যদি প্রিয় চলচ্চিত্র, প্রিয় উপন্যাস কিংবা প্রিয় ব্যান্ড/ সংগীতশিল্পীদের তালিকা গুলো মিলে যায়, আমরা তাঁর সাথে একধরণের আত্নিক সম্পর্ক অনুভব করি। মনে হয় “এ মানুষটা আমার কতদিনের চেনা, কত আপন! কে বলবে পরিচয় মাত্র এখনি হলো?” কর্মব্যস্ততার ফেরে পড়ে যদি স্বল্পপরিচিত এই ব্যক্তির সাথে দেখাসাক্ষাৎ একেবারেই কমও হয়, তবুও প্রতিবারেই দেখা হবার বেলায় অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। এখানে বলে রাখা ভালো, ‘স্যাপিওসেক্সুয়্যাল’ ঠিক যৌনাকাঙ্ক্ষা অর্থে খুব কমই ব্যবহৃত হয় (বুদ্ধিমত্তার স্তরবিশেষে যৌনতার স্থান বরাবরই একটু নড়বড়ে!) এবং এটি সমলিঙ্গ-বিপরীতলিঙ্গ নির্বিশেষে সবার প্রতিই হওয়া চলে। বুদ্ধিমান যন্ত্রপাতির বর্তমান পৃথিবীতে আসলে দুজন বুদ্ধিমান মানুষ একত্র হওয়াটাই বিশাল ব্যাপার। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নারী না কি পুরুষ, লিঙ্গের সীমানা নির্ধারণকারী এই প্রশ্ন বুদ্ধিমত্তার এই ক্ষেত্রে নিতান্তই অগৌণ হয়ে পড়ে। সে যা হোক, বিশেষত প্রেমের ক্ষেত্রে কথিত আছে, ‘আদর্শ জুটি’ বিষয়টি সমাজে অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য। দুষ্ট লোকেরা বলেন, চালাক ছেলেরা নাকি প্রেম করে বোকা মেয়েদের সাথে (ফলে বোকা ছেলেদের চালাক মেয়ে ছাড়া আর কোন ‘গতি’ থাকেনা)। কঠিন এক দুষ্টচক্র! সৈয়দ মুজতবা আলী’র প্রেমের উপন্যাস ‘শবনম’ এদিক দিয়ে অত্যন্ত ব্যতিক্রম। উপন্যাসের নায়ক মজনূন ও নায়িকা শবনম, বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে কেউই কারো চেয়ে কম যান না। দুজনই কাব্যরসিক। একজন হাফিজ থেকে দু চরণ উদ্ধৃত করেন তো আরেকজন প্রত্যুত্তোরে রুমী শুনিয়ে দেন। উভয়ই ফার্সী ও ফরাসী ভাষার ওস্তাদি মারপ্যাঁচ দিয়ে কথা বলতে জানেন। প্রেমের উপন্যাস, তায় আধুনিক ভাষায় ‘স্যাপিওসেক্সুয়্যাল' জুটি, অতএব, প্রথম দেখায়ই প্রেম না হয়ে যায় কোথায়?

আমি ‘প্রথম দর্শনেই প্রেম’ বিষয়টি কখনোই খুব ভালো বুঝে উঠতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়, ‘প্রেম’ শব্দটি এই বিশেষ ক্ষেত্রে সঠিক অর্থ বহন করছেনা, কিংবা, শিল্প সাহিত্যে প্রেম বিষয়টিকে যত মহান করে চিত্রিত করা হয়, কার্যত তা আসলে অত মহান নয়! ১০৫ পাতার গল্পের ১৬তম পাতায় এসে নায়ক নায়িকার তৃতীয় দেখায়ই (কোনটিই আধ ঘন্টার বেশী দীর্ঘ ছিলো বলে তো মনে হয় না) যখন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলা হয়ে যায়, প্রেমের গল্পের ক্ষেত্রে আমার উন্নাসিকতা আরেকটু বেড়েই যায় বটে! শিক্ষিত পরিবারের সন্তানদের ছিচ্ছিকারের পাত্র বাংলা সিনেমাগুলোর সাথে ‘শবনম’ এর পার্থক্য আমার কাছে আরেকটু কমে আসে যখন মজনূন সিনেমার নায়কদের মত বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে ‘কত মেয়েই তো দেখলাম জীবনে, কিন্তু,...... কিন্তু এই মেয়েটি......একেবারেই অন্যরকম’ ভেবে অস্থিরচিত্ত হন। আরো একটি বিষয় আমার কাছে যথেষ্টই দৃষ্টিকটু লেগেছে। সেটি হলো শবনম-মজনূনের বয়েসের তফাৎ। মজনূনের বয়েসের উল্লেখ নেই, তবে বাঙ্গালী ছেলে ভিনদেশ আফগানিস্তানের কলেজের মাস্টারী করছেন, মধ্য বিশ তো ছাড়াবেই অন্তত। শবনমের উনিশ। উনিশ-পঁচিশে ফারাক কম-ই তবে শবনমের অসামান্য বুদ্ধিমত্তার কথা স্বীকার করেই বলছি, উনিশ বছর বয়স্কা তরুণীর প্রেমানুভূতির ব্যাপারে আমি যথেষ্টই সন্দেহবাদী।

‘শবনম’ অত্যন্ত কাব্যময় উপন্যাস। পাতায় পাতায় আছে ফার্সী-সংস্কৃত বয়েৎ। মুজতবা আলী ভিনদেশী বয়েৎ গুলোর অনুবাদও ভালোই করেছেন তবে চরণ গুলোর অন্তর্নিহিত দর্শন ভালো লাগেনি মোটেই। নিতান্ত সাধারণ জীবন দর্শনকে কাব্য করে ভারী ভারী শব্দের প্রয়োগে মহান করে তোলাটাকে আমি মানতে পারিনা কেন যেন; স্বীকার করি, কাব্যরসে আমি অনেকটাই বঞ্চিত।

উপন্যাসটি লেখবার কায়দাও আমার পছন্দ হয়নি। উত্তম পুরুষে বর্ণিত মজনূনের বয়ানে একটা ন্যাকামো আছে যা তীব্রভাবে বিকর্ষণ করেছে আমাকে। ভালো লাগেনি সংলাপ গুলোও। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় হাজার খানিক বছরের। এত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ভাষার সাহিত্যের আধুনিক সময়ের উপন্যাসের সংলাপ যদি সেই শুরুর সময়ের সংলাপের মতই হয়, সেটি দুঃখজনক। নায়িকা শবনমের দুটি সংলাপ এখানে উল্লেখ করছিঃ

ওগো তুমি কেন ভাবো তুমি অতি সাধারণ জন? তোমার ঐ একটিমাত্র জিনিসই আমার বুকের ভেতর যেন ঝড় এসে আমার বুকের বরফ ধুনরীর মত তুলো-পেঁজা করে দেয়। আমার অসহ্য কষ্ট হয়। তুমি কেন আমার দিকে আতুরের মত তাকাও, তুমি কেন তোমার যা হক্ক তার কণাটুকু পেয়েও ভিখারীর মত গদ্গদ হও? তুমি কেন বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণে শেষ না হতেই সদম্ভে কাঁচি এনে আমার জুলফ কেটে দাও না? তুমি কেন আমার মুখের বসন দু হাত দিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেল না? সিংহ যে রকম হরিনীর মাংস টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খায়?

কিন্তু এসব কিছু নয়, কিছু নয়। আসল কথা, সে তোমার মৃত্যুঞ্জয় প্রেম। আমি সুজাতা, সুচরিতা, সুস্মিতা আর আমার প্রেম যেন নব বসন্তের মধু নরগিস – তোমার প্রেম ভরা-নিদাঘের বিরহরসঘন দ্রাক্ষাকুঞ্জ। তারই ছায়ায় আমি জিরবো, তারই দেহে হেলান দিয়ে আমি বসব, সেই আঙ্গুর আমি জিভ আর তালুর মাঝখানে আস্তে আস্তে নিষ্পেষিত করে শুষে নেব। এই যেরকম এখন করছি।

গল্প হিসেবে ‘শবনম’ খুব খারাপ ছিলোনা। যথেষ্ট আবেগ ও বেদনা আছে কিন্তু লেখনীর ধরণ উপন্যাসটি উপভোগ করবার পথে আমার সামনে চীনের প্রাচীর তুলে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত যা আমার অগম্যই রয়ে গেলো (স্যাপিওসেক্সুয়্যাল পাঠক নই, সন্দেহ কী?)। ‘শবনম’ বিয়োগাত্নক উপন্যাস, তবে বইটির ১০৫টি পাতা সম্পূর্ন পড়াটাই আমার কাছে বেশী ‘বিয়োগাত্নক’ হয়ে থাকবে।
11 reviews51 followers
August 2, 2014
পাত্র- মজনূন; পাত্রী- শবনম।
হঠাৎ করেই পরিচয়।
প্রথম দর্শনেই দুর্নিবার আকর্ষণ, নায়কের নিদ্রা হারাম।
দ্বিতীয় দর্শনে বাকরুদ্ধ হলেন নায়ক।
তৃতীয় দর্শনে জানতে পারলেন এ প্রেম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার চিরন্তন নিয়ম মেনে চলেছে; অর্থাৎ শবনমও মজনূনে মজেছেন। শবনম জানিয়ে গেলেন, "আমি তোমাকে ভালবাসি।"

কিছুকাল দূরে থাকার বিরহ। অতঃপর পুনরায় দর্শন, পরিণয়। কিন্তু বিয়ের পরবর্তী দিনেই আবার বিরহে কাতর মজনূন। কারণ, নব-পরিণীতা শবনম অপহৃত। তার সম্পর্কে এতটুকুই জানা যায় কেবল, দুর্বৃত্ত জাফরকে খুন করে পালাতে সক্ষম হয়েছিল সে। কিন্তু কোথায় আছে, কেমন আছে সে- তা অজানাই থেকে যায়। অপেক্ষায় দিন কাটে মজনূনের।

সংক্ষেপে এই হল "শবনম"-এর গল্প।

শুরুর কয়েক পৃষ্ঠা খারাপ লাগছিল না। কিন্তু ঐ যে! প্রথম দর্শনে প্রেম! ঐ ব্যপারটা ঠিক এই বান্দার কখনো বোধগম্য হয় না। শবনমের মত সুন্দরীকে দেখে রাতের ঘুম হারাম হওয়াটা বিশ্বাসযোগ্য বটে। তাই বলে আকাশ-বাতাস-সাত আসমান কাঁপানো প্রেম! শবনম মনে মনে তার দয়িতের যে রূপ কল্পনা করেছিল অবাক হয়ে দেখল সেই রূপ বাস্তবে ধরা দিয়েছে মজনূন হয়ে! অতটা আবার অবিশ্বাস্য ঠেকে। বাণিজ্যিকীকরণের খাতিরে এরকম প্রেমের অবতারণা হর-হামেশাই নাটক-সিনেমায় দেখা যায়, তবে তাকে মহৎ রূপে উপস্থাপনে সাহিত্যের মহত্ত্ব কতটুকু বৃদ্ধি পায়!?

শবনম অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা। কথায় কথায় কবিতা আওড়ায়। কিন্তু দু'জন তাদের আলাপচারিতায়ও এত অলংকার সমৃদ্ধ ভাষার ব্যবহার করেই যায় যে, এরকম আলাপচারিতা সাবলীল তো মনেই হয় না- বরং অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়। অত্যন্ত অগভীর জীবনবোধকে অলংকৃত ভাষায় মুড়িয়ে দিলেই তা সুগভীর হয়ে যায় না। বিয়ে বাড়ীতে অনেক মহিলার সর্বাঙ্গে সোনার গয়নার ছটা দেখে তাদেরকে গয়নার দোকান বলে ভ্রম হয়। কারো কারো মুখে আবার কয়েক কেজি মেক-আপের আস্তরণ দেখে আসল চেহারাটা ধরতে বড্ড বেগ পেতে হয় আমার ছোট ছোট চোখ দুটিকে। প্রকৃতি, আসবাব, ঘরের সজ্জা, শবনম- যে কোন কিছুর বর্ণনাতেই এত এত উপমা আর অলংকারের ব্যবহার দেখে কেন যেন এই গয়নার দোকান রূপী অথবা সাদা রঙে ঢাকা মহিলাদের মনে পড়ে গেল। শুধু চোখ কেন? তার সাথে মনটাকে জুড়ে দিয়েও আসল রূপটিকে ধরতে পারলাম না।

বিষম ও সুষম- "শবনম" পাঠে এই দুইরকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে মত দিয়েছেন মুহম্মদ এনামুল হক। এই পাঠকের ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া বিষমই হল, বলতে হয়।
Profile Image for Akash.
446 reviews148 followers
December 22, 2022
দ্বিতীয় পাঠঃ

আহা! অমৃতসুধা যেন পান করলাম মাত্র। প্রিয়ার হাতের আদুরে মাখা বিষ খেয়ে অমর হয়ে আনন্দলোকের আনন্দ সাগরের বাসিন্দা হয়ে গেলাম। আত্মা প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।

যারা আমার মতো প্রিয়ার বিরহে কাতর হয়ে সর্বোচ্চ বিরহ সুখে দিনাতিপাত করছে তাদের কাছে সৈয়দ মুজতবা আলীর 'শবনম' যেন আকাশগঙ্গা ছায়াপথের মহামূল্যবান বস্তু। 'শবনম' যেন বিরহীদের আত্মা দশদিক দিয়ে প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে দিতে পারে।

মজনুন যখন পাগল হয়ে শিশিরবিন্দুর সন্ধানে পাগলের মতো ঘুরছিল তখনই শবনম তার সুরভিবাস দিয়ে মজনুনের বিরহকে শান্তিতে রূপান্তর করে। বিরহে মজনুন মহান হয়ে যায়। বিরহের আগুন মজনুনকে কষ্ট দেয়ার বিপরীতে শান্তি দিতে থাকে।

যাই হোক এবার আবেগ থেকে বের হয়ে বাস্তবতায় আসি।

'শবনম' এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পড়ে শেষ করলাম। প্রথমবার যখন পড়েছিলাম তখন কিছুই বুঝি নাই। তবে আজ যখন পড়ে শেষ করলাম তখন হৃদয় দিয়ে পুরোটা হৃদয়ঙ্গম করেছি।

আগে বলতাম 'সোনালী-দুঃখ' আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস, তারপর 'কবি' পড়ার পর বলেছিলাম 'কবি' আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস। তবে আজ যখন দ্বিতীয়বার 'শবনম' পড়ে শেষ করলাম তখন আমি বলতেছি যে আজ থেকে আজীবনের জন্য 'শবনম' আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস হয়ে থাকবে। শবনমের জায়গা আর কোনো প্রেমের উপন্যাস দখল করতে পারবে না।

শবনমের মত প্রেমের উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ছিল না আর আসবেও না। 'শবনম' অমর হয়ে থাকবে আকাশের হৃদয়ে। হতভাগা আকাশও যে মজনুনের মতো পাগল বিরহ সুখে।

তবে 'দেশে বিদেশে' এর সাথে 'শবনম' এর কাহিনীর কিছুটা মিল আছে। মনে হয় মজনুন যেন স্বয়ং সৈয়দ মুজতবা আলী৷

"আকাশ আনন্দপূর্ণ না রহিত যদি
জড়তার নাগপাশে দেহ মন হইত নিশ্চল।"

ভালোবাসি শবনম, ভালোবাসি... ❤️

প্রথম পাঠঃ

কিছু কিছু বইয়ের রিভিউ অশ্রু দিয়ে লিখতে হয় -

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম কোন বই পড়লাম। প্রেমের আখ্যানের কোন কিছু বাকি রাখা হয় নি, পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কাব্যাংশ এর ঝলক মন্ত্রমুগ্ধ করতে যথেষ্ট। কিন্তু শবনম তো ভোরের শিশির, যা সকালের প্রথম রৌদ্রের পরশেই ফুরিয়ে যায়। কেউ কী শবনম'কে সারাজীবন নিজের মতো করে সত্যই পাবে?

শবনমের মোহনীয় রূপ, বুদ্ধিমত্তা, কবিত্ব-রস,যৌক্তিক উচ্চারণ,ভালবাসার মানুষের জন্য মিষ্টি হিংসেমী,লজ্জাবোধের সাবলীল প্রকাশ,দূরদর্শিতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা এ সবকিছু মজনুনকে প্রভাবিত/মনমুগ্ধ করেছে। শবনমের প্রেমে পড়া মজনুনের উপযুক্ত মধুর শাস্তি ছিল। তাই শবনমের মুখ থেকে উচ্চারিত হয় চিরমানবের অন্তর্বেদনা, "আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না, আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না।"

বুকের একদম ভিতরে হিমালয়ের সমান উঁচু হয়ে থাকা বেদনাগুলির ভার কমানোর জন্যও তো একটা মানুষ লাগে! আশেপাশে শত সহস্র মানুষ থাকলেও বিশেষ একজন মানুষ লাগে। যে শুধুই একান্তে, নিভৃতে মনের কথাগুলি বলার মানুষ, মনের কথাগুলি শোনার মানুষ, গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে থাকার মানুষ। অযুত নিযুত সংখ্যার মানুষ আশেপাশে থাকলেও একান্ত পাশে থাকার মানুষের খুবই অভাব এই জীবনে।

হে প্রেম তুমি পবিত্র হলে শবনম-মজনুনের বক্ষমাঝে স্থান পেয়ে !

হে প্রেম, তুমি অমরত্ব পেলে শবনম-মজনুনের হারানোর ভিতর দিয়ে !

হে প্রেম, তুমি ধন্য হলে লায়লি-মজনুর বক্ষমাঝে স্থান পেয়ে !

হে প্রেম, তুমি অমরত্ব পেলে লায়লি-মজনুর মৃত্যুর ভিতর দিয়ে !

খুদাতালার সিংহাসন থেকে ঐশীবাণী উচ্চারিত হল :

হে সুরলোকবাসীগণ ! প্রেমের দহন দাহে দগ্ধ হয়ে অর্জন করেছ তোমরা সুরলোকের অক্ষয় আসন।

হে মর্ত্যবাসীগণ ! সর্বচৈতন্য সর্বকল্পনার অতীত যে মহান সত্তা তিনি তার বিশ্বরূপ ব্রক্ষান্ডস্বরূপের একটিমাত্র রূপ স্বপ্রকাশ করেছেন মর্ত্যালোকে- তাঁর প্রেমরূপ।

ঘড়িতে কি বাজে, 'ঠিক...ঠিক...ঠিক...ঠিক...। না ভুল ঘড়িতে বাজে, শব...নম...শব...নম...শব...নম।

হঠাৎ একদিন আকস্মিকভাবে আসবে তো শবনম ?

শবনম কি মজনুনকে বলে যায়নি, 'বাড়িতে থেকো। আমি ফিরব?'

শবনম কি ফিরেছিল ???
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
May 13, 2018
একটা বই শেষ করার পরের অনুভূতি এতোটা মিশ্র খুব কম সময়েই হয়েছে। 'শবনম' প্রেমের গল্প - ভালোবাসার গল্প, সেদিক থেকে শুধু গল্পের দিকে তাকালে কাহিনী সেকেলে তো বটেই, ভীষণ সাধারণ ও। এমনকি বইয়ের শেষ অংশের কাহিনীর টুইস্ট ও মোটেই নতুন নয় - না এখন, না এই বই লেখার সময়ে। আমার আবার একেবারে তুমুল প্রেমের বই হজম হয় কম। কলেজ জীবনে নিমাই ভট্টাচার্যের 'মেমসাহেব' পড়ে বিরক্তই হয়েছিলাম। তার উপরে কবিতার সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতাও একটু কম আছে - পাঠ্যবইয়ের বাইরে কবিতা পড়ে ভালো লাগছে খুব বেশিদিন হয়নি। কাজেই, শবনম যে সময়ে সময়ে, বিশেষ করে মাঝের দিকে ভীষণ লুতুপুতু এবং কিছু ক্ষেত্রে হাস্যকর লেগেছে - তা প্রথমেই পাঠক হিসেবে নিজের দোষ হিসেবে ধরে নিয়ে কয়েকদিন অন্য বই পড়ে আবার ফেরত এসেছি।

বইটা পড়তে গিয়ে অনেকবার রবিঠাকুরের 'শেষের কবিতা'র কথা মনে পড়েছে; কাহিনীর মিল বা কোনো তুলনায় না, সে বইটা পড়তে গিয়েও প্রথমে এমন অসহায় বোধ করেছিলাম, তাই! মনে আছে প্রথমে পড়ি স্কুলের শেষে বা কলেজে। এতো অবাক, হতাশ, আর বিরক্ত হয়েছিলাম বলার না। এই হাস্যকর বই নিয়ে এতো মাতামাতি কেনো? কী আছে এর কাহিনীতে ? আর এতো বড় বড় কবিতার মানে কি -_- এর পরে আন্ডারগ্রাজুয়েটের প্রায় শেষ দিকে আবার পড়লাম - বইটা কেমন চোখের সামনে বদলে গেলো! এতো সুন্দর ভাষা! এতো গভীর উপলব্ধি! এতো মুগ্ধতা! তারপরেও, কবিতার কিছু অংশ দ্রুত পড়ে গিয়েছিলাম স্বীকার করবো। কিছুদিন আগে একবার শ্রুতিনাটক শুনলাম - আমার সবচেয়ে পছন্দের অংশ হয়ে গেলো ওই শেষের কবিতাখানি - ই। যখন সব ঘটনা আর চরিত্র আপন হয়ে গেলো, তখন কবিতার প্রতি বর্ণ নিজ নিজ অর্থ নিয়ে বাজতে লাগলো কানে। এই সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিশদ গল্পের মূল কথা একটাই - বইতো আগের মতোই আছে, বদলেছি আমি, আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি আর উপলব্ধির ক্ষমতা।

শবনম পড়তে গিয়ে তাই যতবারই অভ্যস্ত সহজ পাঠক মন গল্পের দিকে মনোযোগ দিয়ে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো, একটু জোর করেই ঘুরিয়ে এনেছি লেখনীর দিকে। প্রেমে যে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায় - সে বাস্তব জীবনে টের না পেলেও গল্প - কবিতা - গান - চলচ্চিত্র - ইত্যাদিতে, এমনকি পত্রিকায় ও নজির তো কম দেখিনি! সেই বিলুপ্তজ্ঞান সময়েও প্রতিটা অনুভূতি আর উপলব্ধির প্রকাশক কাব্য খুঁজে আনা একে যেমন গভীর ভাষাজ্ঞান আর সাহিত্যজ্ঞান এর পরিচায়ক, তেমনি সময়োপযোগী কাব্যচরণ মিলিয়ে আনা সূক্ষ্ম রসবোধেরও ফল। তা সৈয়দ মুজতবা আলীর মধ্যে কখনো এর কোনোটারই কমতি ছিল না বলার দরকার পড়ে না! নিজের ফার্সি, এমনকি সংস্কৃত ও না জানার ফলে অনেক অংশ পড়ে কেমন অতৃপ্তি লেগেছে - অনুবাদ ভালো ছিলো সন্দেহ নেই, তবে কিছুক্ষণ পর পর লাইন পড়ে যাচ্ছি কিছুই না বুঝে, এতে অসহায় ধরনের লেগেছে।

তারপরেও, পুরো বই জুড়ে ভাষার মাধুর্য, সাধারণ দৃশ্য বর্ণনাতেও ভীষণ সুন্দর সব উপমা, কথোপকথনের মধ্যে উঠে আসা গভীর জীবনবোধ- এগুলোকে অস্বীকার করার জো নেই। সব কথার শেষ কথা, ভালো লাগুক আর খারাপ, বাংলা সাহিত্যে আগ্রহ থাকলে অবশ্যই পড়ার মতো বই এটা। আমি বেঁচে থাকলে কয়েক বছর পর আবার পড়ে দেখার ইচ্ছা আছে, এই বইও আমার সামনে বদলে যায় কিনা- তা জানার জন্য :)
Profile Image for Nowrin Samrina Lily.
157 reviews15 followers
September 19, 2021
অনেক ভালো লাগার একটা বই💜💜 এরকম একটা সুন্দর, পবিত্র ভালোবাসা আমার জীবনে আশা করাটা মন্দ নয়
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
September 11, 2025
প্রেম প্রনয় প্রীতি ইশক ভালোবাসা সবকিছুর উপরে বিশ্বাস ভরসা পুনঃস্থাপন পূর্বক,
জীবনে আরো একবার বেলতলায় যাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা উদ্দীপক বইয়ের প্রতি না জানাতে পারছি নিন্দা ,না সম্মোহন স্রোতের বিপরীতে ভেসে থাকার মতো সুবিধাজনক কোনো কারন।

তবুও,
ভালোবেসে মিটলো না আশ,কুলালো না এ জীবনে।

শূন্য জীবনে এমন পূর্ণতা পাবার সেই আদিম অদম্য ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে তোলার জন্য উপহারদাত্রী রিফাত কে অনেক অনেক ভালোবাসা আর আদর।

রেটিং:⭐🌟✨🌠
১১/৯/২৫
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book67 followers
September 27, 2015
উপন্যাস হিসেবে পড়লে শবনম নিতান্তই খাপছাড়া, জোলো, কখনও কখনও একঘেয়ে। কবিতা হিসেবে পড়লে শবনম একেবারেই অন্যরকম। প্রথমবার উপন্যাস হিসেবে পড়েছিলাম, ভালো লাগেনি। এবার তাই কবিতা হিসেবে পড়লাম।
Profile Image for Imran Shorif Shuvo.
86 reviews30 followers
July 15, 2021
ভাগ্যিস, সৈয়দ সাহেব এখনও বেঁচে নেই।

এমন বই আরও লিখতে থাকলে আমার একাডেমিক পড়াশোনায় পাশ করা আর হয়ে উঠত না!
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
March 1, 2023
অমৃতসুধা হয়তো একেই বলে!

তুমি আমার বিরহে অভ্যস্ত হয়ে যেও না। তুমি আমার মিলনে অভ্যস্ত হয়ে যেও না।

কিন্তু জমাট বাধা হৃদয় কিসে বেশি কাদে? বিরহে অভ্যস্ত হতে হতে? নাকি প্রিয়া কে মিলনে না পেলে?
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
March 5, 2016
মুজতবা আলী যাই লেখেন তাই আমি গোগ্রাসে গিলতে বাধ্য হই, অসাধারণ ভাষাশৈলী সত্ত্বেও এ উপন্যাসের গল্পটা অতি নাটকীয় লেগেছে তাই রেটিংটা কম হল!
তিনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ছোট গল্পটি লিখেছেন এ কথা আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু রোমান্টিক উপন্যাস হিসেবে ভাল'র ঘরেও এটাকে ফেলতে পারি নি।
Profile Image for তানিয়া.
5 reviews
January 6, 2023
অসাধারণ একটা বই।
বইয়ের কিছু লাইন অসম্ভব ভালো লেগেছে। যেমন :
"আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না "
"তুমি আমার মিলনে অভ্যস্ত হয়ে যেও না "
"শত্রু বেদনা দেয় মিলনে,,, মিত্র দেয় বিরহে। "
"তোমার কাছে সবচেয়ে যা প্রিয় তাই নিয়ে ধ্যানে বস, সে যদি সত্যিই প্রিয় হয় তবে মন সেটা থেকে সরবে কেন??? "
"আমরা যা কিছুই বলি না কেন তুমি তো সেটা বুঝবার চেষ্টা করবে তোমার মন দিয়ে, সেই মন কি তুমি তাকে চেনো? এ যেন একটি কাঠি দিয়ে কাপড় মেপে দেখলে 12 কাঠি হল, যদি সেই কাঠিটা লম্বা কতখানি সেটা তোমার জানা না থাকে তবে কাপড় মেপে বারবার না বাইশ বার জেনেও তো লাভ হলো না। নিজের মন হচ্ছে মাপকাঠি সে মনকে প্রথম চিনতে শেখো। "
"বাড়িতে থেকো আমি ফিরবো "
Profile Image for Kafil Recherche.
61 reviews2 followers
April 18, 2020
“শবনম” আমার পড়া সবচেয়ে প্রিয় বাংলা প্রেমের-উপন্যাস। কেন এত প্রিয়? সুন্দর গল্প তাই বলে? না। গল্পটার জন্য হয়তো ৩-এর বেশি রেটিং আমি দিতে পারি না। কারণ গল্পটা খুবই সাধারণ বলা যায়। গল্পের প্রত্যেকটা ঘটনা খুবই “প্রেডিক্টেবল”। গল্পের মধ্যে তেমন কোন “সারপ্রাইজিং ইলিমেন্ট” নেই। এক কথায়— খুবই সাদাসিধে একটা গল্প। তবু কেন এত ভাল লাগে যে বার বার পড়তে মন চায় এবং বার বার পড়ি,  এবং বার বার প্রেমে পরি? উত্তর একটা-ই— লেখকের লেখনী-শক্তি আর ভাষার কাব্যময়তা। বিস্তারিত বলা নিষ্প্রয়োজন। কারণ আমরা সবাই সৈয়দ মুজতবা আলীকে চিনি। এবং আমরা জানি উপমা ব্যবহারে তিনি কত শক্তিশালী।  
Profile Image for Rokib Hossen.
16 reviews
September 22, 2024
কিছু বই থাকে গভীরভাবে ছাপ ফেলে। আর কিছু বই থাকে সূক্ষ্মভাবে ছাপ ফেলে। শবনম বইটি দ্বিতীয় ক্যাটাগরির। পাঠকের মনে একটা অতি সূক্ষ্ম ছাপ ফেলে যায়।

বইটি ভিন্ন ধারার প্রেমের উপন্যাস। বেশিরভাগ প্রেমের উপন্যাসেই রগরগে অনেক বর্ণনা থাকে, ঘটনা থাকে, যৌনতা থাকে।

শবনম এত বড় একটা প্রেমের উপন্যাস অথচ একটিও রগরগে বর্ণনা নেই, কোনো শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার নেই।

লেখক এ বইটিতে প্রেমের মনস্তাত্ত্বিক বিষগুলোকেই গুরুত্ব দিয়েছেন সর্বাধিক। যখন কেউ প্রেমে পড়ে, কাউকে ভালোবাসে— তখনকার সময়ের অনুভূতি, ভাবনা, মনের অবস্থা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেই পুরো উপন্যাস।

শরীরকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মনোজগৎ নিয়েও যে কালজয়ী প্রেমের উপন্যাস লেখা সম্ভব — তা সৈয়দ মুজতবা আলী দেখিয়ে দিয়েছেন।

'দেশে বিদেশে' 'জলে ডাঙায়' আর 'পঞ্চতন্ত্র' এর মত��� বইগুলোর লেখক যে এমন একটা প্রেমের উপন্যাসও লিখতে পারে — তা একটু অবাক করার মতো বিষয়!

বিশেষ করে সৈয়দ মুজতবা আলীর চিরাচরিত লেখা থেকে বের হয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন ধাচের লেখায় সাজিয়ে তুলেছেন শবনম বইটি।

বইটি পড়ে মনে হলো, এ যেন এক নতুন সৈয়দ মুজতবা আলী!
Profile Image for হাসান নাহিয়ান নোবেল.
105 reviews169 followers
April 26, 2018
শব্‌নম্‌ সম্পর্কে বোদ্ধা, অবোধ এবং নির্বোধেরা সচরাচর বেশ ইতিবাচক কথা বলে থাকেন—সুতরাং এটা আশ্চর্য লাগতে পারে যে, যে শব্‌নম্‌ পড়েনি তাকে যদি পুরো কাহিনীর একটা সারাংশ বলা হয়—তাহলে নির্ঘাত ঢলঢলে একটা প্রেমের কাহিনী ভেবে বসবে। এবং এটা তা-ই হতে পারতো—যদি না মুজতবা আলীর অসাধারণ ভাষা আমাদের চোখে একটা রঙিন চশমা পড়িয়ে রাখতো।

বেশ কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম মুজতবা আলীর শহর-ইয়ার (১৯৬৯)। শব্‌নম্‌ (১৯৬০)-এর সাথে একে মেলানোটা হয়তো ঠিক হবে না, কিন্তু স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে থাকে, তাহলে উপন্যাস দুটো ঠিক না মিলিয়েও পারা যাচ্ছে না। গল্পের দিক দিয়ে না, লেখার গঠনের দিক দিয়ে। দুটো উপন্যাসেই লেখক একটা জীবনবোধ তুলে আনতে চেয়েছেন, বোধটাকে দাঁড় করানোর জন্য একটা কাহিনীর অবতারণা করেছেন, এবং উপন্যাস শেষ হয়েছে সেই বোধ-সংক্রান্ত দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়ে। শব্‌নমে সেটা এসেছে মজনুনের চিন্তার ভেতর দিয়ে, আর অন্যটায় শহর-ইয়ারের চিঠির মধ্য দিয়ে (আবারও, যদি না স্মৃতি প্রতারণা করে থাকে)।

লেখক তাঁর বোধের কতটুকু আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন সেটা তর্কসাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই এই বইয়ের ভাষা নিয়ে। কেবল ভাষার অসাধারণ ব্যবহারের জন্যই মুজতবা আলীর প্রতিটা লেখা পড়ে ফেলা যায়। বাংলা সাহিত্যের খুব বেশি লেখকের ভাণ্ডারে এতগুলো শব্দ ছিলো না—এ আমি অনায়াসে লিখতে দিতে পারি।

আর চেনা শব্দেরও কী শক্তিশালী ব্যবহার! রাতে ঘুমানোর সময় আমরা কতভাবে পাশবালিশকে ধরতে পারি? আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলতাম, জড়িয়ে ধরতে পারি, জাপটে ধরতে পারি, আঁকড়ে ধরা যায়, ছুঁয়েও দেখা যায়। কিন্তু মুজতবা আলীর নায়িকা পাশবালিশ রীতিমত ‘জাবড়ে’ ধরে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমান! ব্যাপারটা খুবই thought intriguing. আমি জড়িয়ে ধরি আম্মুকে, ভয় পেলে জাপটে ধরি বন্ধুকে, দু-হাতে আঁকড়ে ধরি প্রেমিকাকে, কিন্তু পাশবালিশকে একমাত্র জাবড়েই ধরতে পারি—আর কোনো শব্দ ব্যবহার করেই ওটা বোঝানো যায় না, অন্তত এতখানি সার্থকভাবে না।

ধন্য সৈয়দ, ধন্য!

উপমার ব্যবহারেও মুজতবা কম যান কীসে। শব্‌নমের কণ্ঠের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ঘুঙুরওয়ালা চরণচক্রপরা বাড়ির নতুন বউ চলাফেরা করার সময় যেরকম দক্ষিণী বীণা বাজে, ওর গলার শব্দ সেইরকম।”

আর মাঝেমধ্যে বলে ফেলেন ভয়াবহ একেকটা কথা—যেটা শুনে অনেক্ষণ থ মেরে বসে থাকতে হয়। এরপর বিড়বিড় করে বলতে হয়, বেড়ে বলেছেন তো! “সমাজ কি শের না বাবুর, বাঘ না সিংহ, যে তাকে হামেহাল পিস্তল দেখাতে হবে? সমাজ তেজি ঘোড়া। দানাপানি দিবে, তার পিঠে চড়বে। বেয়াড়ামি করলে পায়ের কাঁটা দিয়ে অল্প গুঁতো দেবে, আরও বেশি হলে চাবুক, আর একদম বিগড়ে গেলে পিস্তল। তারপর নতুন ঘোড়া কিনবে—নতুন সমাজ গড়বে।”

শুরুতেই বলেছিলাম, এটা ঢলঢলে একটা প্রেমের উপন্যাস—যা মুজতবা সাহেবের অসাধারণ ভাষাশৈলীর কারণে আমাদের চোখে সুন্দর হয়ে ধরা দিয়েছে। এই প্রেমের প্রসঙ্গে এসে দুটো ব্যাপারে আমি আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত, বর্তমানে কেবল আত্মিক ভালোবাসাকে শৈল্পিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অন্যদিকে দৈহিক প্রেমকে প্রায়শই অশালীনতার দায় নিতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, দেহ এবং আত্মা—এই দুই নিয়েই আমাদের অস্তিত্ব, সুতরাং প্রেমে দুটোর ভূমিকাই অনস্বীকার্য। শব্‌নমে এই বোধটুকু তুলে আনার ক্ষেত্রে সৈয়দ মুজতবা অনেকাংশেই সার্থক।

দ্বিতীয়ত, বিশ শতকের খুব বেশি উপন্যাসে সম্ভবত নায়িকার এতখানি রোমান্টিক বর্ণনা আমরা দেখি না। মধ্যযুগে এই জিনিসটার খুব চল ছিলো, এবং মুজতবা আলী উনিশশো ষাটেও যখন লিখলেন নায়িকার কপাল তৃতীয়ার ক্ষীণচন্দ্রের মত, বন-মল্লিকার পাঁপড়ির মত—তখনও শুনতে বেশ লাগলো। হয়তো বর্ণনার এই সৌন্দর্যগুলো চিরন্তন।

শব্‌নম্‌…শব্‌নম্‌কে ঠিক আমি মুজতবা আলীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মের আখ্যা দিতে রাজি না। বাংলা সাহিত্যে তিনি দেবতুল্য—এর কারণ তাঁর অসাধারণ ভাষায় লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলো—কখনই শব্‌নম্‌ না।
Profile Image for Saqui.
33 reviews
November 21, 2018
God, I wish I get back the time I spent reading this 'masterpiece'. Needed a negative rating scale.
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
Read
June 17, 2016
"গোড়া আর শেষ, এই সৃষ্টির
জানা আছে বল কার?
প্রাচীন এ পুঁথি গোড়া আর শেষ
পাতা কটি ঝরা তার?"


বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশ শেষ হবার পরের অনুভূতি আর পুরোটা শেষ হবার বোধের মাঝে যে কি আকাশ-পাতাল তফাত হতে পারে এই বই পড়ে তা বুঝলাম। কি ব্যপ্তি সে বোধের! সৈয়দ মুজতবা আলী যথার্থ গুরুশিষ্য!


'আকাশ আনন্দপূর্ণ না রহিত যদি
জড়তার নাগপাশে দেহ মন হইত নিশ্চল।'
'ফদল' আর 'রহমৎ'- উচ্ছ্বসিত দাক্ষিণ্য ও করুণা...
Profile Image for S M Hridoy.
32 reviews6 followers
September 23, 2016
ভালোবাসার রসে টুইটুম্বর বইখানা হইতে আমি নাদান বালক রস আস্বাদন করিতে পারিলাম না, হুঁচোট খাইলাম ও বটে। বইখানা কি লেখক নিজেই লিখিয়াছিলেন তাহাও বুঝিতে পারিলাম না ।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
March 27, 2023
চার্বাক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। সেই তিনি নাকি মঞ্জুভাষার কাছে তাঁর প্রেমের প্রতিদানের আশা পেয়ে একদিনের তরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছিলেন।
Profile Image for Najmul H Sajib .
60 reviews
May 11, 2021
#অনুভূতির_প্রকাশক

উপন্যাসটা সর্ম্পকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলছেন , " বাঙালি তরুণ-তরুণীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম উপন্যাসটি পড়ে নেয়া উচিত । এমন শিক্ষর্ণীয় প্রেমের উপন্যাস বিশ্বসাহিত্যে আর একটিও নেই ।

অসাধারণ একটি পবিত্র প্রেমের উপন্যাস ।

শিক্ষকতা পেশাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানে মজনুনের আগমন । পথ হারিয়ে শবনমের সহিত প্রথম দেখা , কথাবার্তায় একে অন্যের পরিচয় । প্রথম দেখায় মজনুনের দুর্নির্বায আকর্ষণ , নিন্দ্রা হারাম ।

দ্বিতীয় দেখায় বিদেশিনী শবনমের প্রেমে আবদ্ধ হলেন নায়ক । আস্তে আস্তে মজনুনের ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

তৃতীয় দেখায় জানতে পারেন পারে তাদের প্রেম ক্রিয়া বিক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলছে অর্থাৎ শ���নমও মজনুনের প্রেমে পড়েছেন ।

প্রেম যত গাঢ় হতে থাকে শবনমও মজনুনের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করে । তারপর তাদের কিছু সময়ের বিচ্ছেদ ।
তবুও চিঠিতে যোগাযোগ এবং হঠাৎ শবনমের প্রত্যাবর্তন । পরিশেষে লুকিয়ে বিয়ে । তারপরে পুনরায় আনুষ্ঠানিক বিয়ে । বিয়ের পরেরদিন কোন এক কাজে মজনুন বাইরে গিয়েছিল । এসে জানতে পারেন শবনমকে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে ।
শবনমকে কি উদ্ধার করা হয়েছিল ?
শবনম কি ফিরে এসেছিল ?
কি হয়েছিল মজনুনের ?

জানতে হলে পড়তে হবে রোমান্টিক এই উপন্যাসটি ।
বইটি যারা পড়ে বেশি মজা পাবেন :

১.যাদের বাংলা শব্দ ভাণ্ডার অতিশয় বেশি
২.যারা কবিতা পছন্দ করেন ও কবিতার রস নিতে পারেন ।

উপন্যাস--শবনম
লেখক--সৈয়দ মুজতবা আলী
প্রকাশনী--বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
পৃষ্ঠা--১৪৪
ব্যক্তিগত_রেটিং --১০/১০
Profile Image for Saiqat .
60 reviews1 follower
July 5, 2021
অনন্যসাধারণ এক ও অদ্বিতীয় মনোমুগ্ধকর।

এই বই রেখে রেখে জীবনের বাকিটা দিনগুলোতে বিষন্ন সন্ধার নামকরে পড়া যাবে....

বাড়ির পিছনের নির্জলা পুকুর না হোক
সে বাড়ির পাশের নদী হতে না চাইলেও যে নদী!

খুন ভালো!
Profile Image for Afifah Mim.
38 reviews52 followers
October 27, 2023
এই "রোমান্টিক কাহিনী/কাব্য" জনরা'টাই মেবি আমি ঠিক বুঝি না। নট মাই কাপ অফ টী।

"লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট" আমার কাছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের শামিল।

কাহিনী, আবেগ, ভাষার গাথুনি মাধুর্য্য, বা কাব্যিক সব অসাধারণ অনুবাদ- ওসবের সবই বুঝলাম, কিন্তু ১/২/৩ বার স্বল্প সময়ের দর্শনেই ওরম কঠিন চরম প্রেম হতে পারার মতো "যৌক্তিক কোনো কারণ"টাই ঠিক বুঝলাম না।

গুডরিডসের Muhammad ভাইর রিভিউ এর মতো করেই বলি (তবে আমারটা আরেকটু সফ্ট ইমোশনে হবে, অতোও এক্সট্রিম না):

""" 'শবনম' বিয়োগাত্মক উপন্যাস, তবে বইটির ১০৫টি পাতা সম্পূর্ণ পড়াটাই আমার কাছে বেশী ‘বিয়োগাত্মক' হয়ে থাকবে। """




তবুও কেন পড়লাম?
=> 'দিল্লিকা লাড্ডু'র লোভে। খাইলেও পস্তাইবেন, না খাইলেও পস্তাইবেন। মেবি খেয়ে পস্তানোই বেহ্তার। :)
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
September 12, 2023
পুরো বইয়ে ভালো লাগা কথা পেলাম একটা - তুমি আমার বিরহে অভ্যস্ত হয়ে যেও না!

তা বাদে অমন গদগদ ভক্তিভরা নাটকীয় ব্যাকুল প্রেম আমার একেবারেই অসহ্য লাগে।
Profile Image for Rizal Kabir.
Author 2 books45 followers
May 15, 2020
পাঠ্যবইয়ের ‘রসগোল্লা’র মাধ্যমে সৈয়দ মুজতবা আলীর সাথে পরিচয়। পরিচয়পর্বটা আমাদের সমসাময়িক অনেকের জন্যই বোধ হয় সত্য। তবে পর্বটা সেখানেই শেষ না করে টেনে নিলাম বহুদূর, আজ অবধি। কারণ সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা মানে আমার কাছে অসম্ভব সুস্বাদু লঘুপাক এবং গুরুপাক খাবারের মিশ্রণ। হাস্যরস এবং জীবনবোধকে একই থালায় নিয়ে এসে অসাধারণ কিছু গল্পের উপস্থাপন, প্রকাশভঙ্গি।

আজ পর্যন্ত মুজতবা আলীর যতগুলো লেখা পড়েছি – শব্‌নমকে সেগুলোর কোনটার কাতারেই ফেলা যায় না। কাব্যধর্মী প্রণয়োপাখ্যান বললে বরং সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে। গল্পের পটভূমি আফগানিস্তানে, লেখকের আফগান-জীবনের অভিজ্ঞতার অনেকটাই যে উঠে এসেছে এ উপন্যাসের বর্ণনায় তা বলাই বাহুল্য।

বইয়ের একদম শুরু থেকেই বঙ্গদেশীয় যুবকের সাথে রূপে-গুণে অতুলনীয়া আফগান তরুণী শব্‌নমের প্রেমপর্বের সূত্রপাত। আমরা যাকে ফ্লার্ট বলি – সেটারই খুব উচ্চমার্গীয় কিছু উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রণয় সামনে এগিয়ে গেছে। এদিক থেকে কিছু কিছু জায়গা অতি-নাটকীয়ও বলা যায়। কারণ আজকে থেকে প্রায় একশ’ বছর আগে মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে, এক ভিনদেশী যুবকের সাথে আফগান তরুণীর এত সাবলীল আচরণ, সহসা বাসায় গিয়ে উপস্থিত হওয়া – রীতিমত বিস্ময়কর ঘটনাই বটে।
প্রথম পরিচয়েই বাঙালী যুবক তাই বলে বসেছিল, “এরকম মিষ্টি নামওয়ালী মেয়ে যা – খুশি বলার হক ধরে।”

সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা স্টাইল হলো, অসাধারণ রেফারেন্সিং এবং ট্রিভিয়া। এখানেও সেই প্রমাণ রেখেছেন লেখক, সেই সাথে ফুটিয়েছেন কাব্যের ফুলঝুড়ি। কাবুল থেকে শুরু হলেও প্রেমের টানে মজনুন ছুটে গেছেন কান্দাহার, সেখান থেকে আবার ফিরেছেন কাবুলেই। ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে কখনো শব্‌নমকে কাছে পাওয়ার নেশায় বুঁদ হয়েছেন, কখনো আবার দগ্ধ হয়েছেন বিরহতাপে। দুটো প্রধান চরিত্রের মাঝেই কাব্যপ্রিয়তা উঠে এসেছে বেশ সুন্দরভাবে। পারস্যের রুমি, আমাদের কালিদাস, রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ উল্লেখে নরনারীর প্রেম ছাপিয়ে মিলন ঘটেছে দুই ভিন্ন সংস্কৃতিরও।

ভালোবেসে শব্‌নমকে কখনো হিমিকা কিংবা শরতের শিউলির সাথে তুলনা করা হয়েছে। প্রিয় মানুষের গালের টোলের গভীরতায় কখনো সুরাপান করতে চেয়েছেন প্রেমিক। একই সাথে শব্‌নমের নারীত্ব, প্রেম ও সৌন্দর্যের মোহাবিষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন লেখক পুরো উপন্যাসজুড়েই। প্রেমের তীব্রতায় ছাড়িয়ে গেছেন আফগান হিন্দুকুশ পর্বতমালা – পবিত্রতায় হার মানিয়েছেন কাবুলের শ্বেতশুভ্র তুষারপাতকেও। সেই ধারাবাহিকতায়, শব্‌নমের কণ্ঠের আকুলতায় বারবার ফুটে উঠেছেঃ আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।
উপন্যাস এগিয়েছে, এবং পরবর্তিতে একসময় তা পরিণত হয়েছেঃ আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।
এই দুই আহবানের মধ্যেই যেন বিস্তৃত পুরো উপন্যাস। কাছে আসা এবং হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই প্রেমের ব্যাপ্তি। শারীরিক নৈকট্য থাকলেও কখনোই তা বড় হয়ে ওঠে নি এই প্রেমে, বরং শেষ পর্যন্ত বারবার প্রতীয়মান হয়েছে আত্মিক পরিতৃপ্তি। আত্মাকে বলা হয়েছেঃ অন্তরের অন্তরতম পরিপূর্ণ আনন্দকণা।

শব্‌নম চরিত্রটি আসলেই মুগ্ধ হবার মত। ইউরোপের শিক্ষা, প্রাচ্যদেশীয় সংস্কৃতির ভিত, সপ্রতিভ কথাবার্তা এবং কোমল-কঠোরের সংমিশ্রণ – সব মিলিয়ে শব্‌নম আজ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে এক অন্যতম সেরা চরিত্র আমি বলবো। ধনী রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে হিসেবে কাঠিন্য আছে, কিন্তু নেই অহমিকা। দেশের অস্থিতিশীল অবস্থায়ও বোরখার অন্তরালে উদ্যত রিভলভার নিয়ে তাই সে বের হয়ে পড়েছে বারবার, প্রণয়ের আকর্ষণে। বয়েত কিংবা কবিতার প্রতি সীমাহীন আকর্ষণ তার প্রেমের প্রকাশভঙ্গিকে করেছে কাব্যিক, সুললিত।

ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য সামান্য কিছু খোরাকও দিয়েছেন লেখক। বই পড়তে পড়তে একটু ঘেঁটে বুঝলাম যে ১৯২৯ সালের বাচ্চা-ই-সকাও বাহিনীর আবির্ভাব এবং তৎকালীন আফগান গৃহযুদ্ধকালীন অনিশ্চয়তা দেশের রাজনৈতিক পালাবদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উপন্যাসের কাহিনীর বুননে এবং ঘটনার গতিশীলতায়ও এই ঘটনার তাৎপর্য অপরিসীম।
লাইলী-মজনুর প্রেমগাথার উল্লেখ আছে বেশ কয়েক জায়গায়, সবগুলোই ভাল লেগেছে। যেমনঃ
মজনু যখনই শুনত, তার প্রিয়া লায়লিকে নজদ্‌ মরুভূমির উপর দিয়ে উটে করে সরানো হচ্ছে সে তখন পাগলের মত এ উট সে-উটের কাছে গিয়ে খুঁজত কোন মহমিলে (উটের হাওদা) লায়লি আছে। মজনু মরে গেছেন কত শতাব্দী হল। কিন্তু এখনো তার জীবিতাবস্থার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মরুভূমির ছো��� ছোট ঘূর্ণিবায়ু হয়ে লায়লির মহমিল খুঁজছে। তুমি বুঝি কখনো মরুভূমি দেখো নি? ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু অল্প অল্প ধূলি উড়িয়ে এদিকে ধায়, ওদিকে ধায়, ওদিকে ছোটে, সেদিকে খোঁজে।

না পড়ে থাকলে সর্বভুক পাঠকদের পড়ে ফেলা উচিত শব্‌নম। আর রোমান্টিক পাঠকদের জন্য তো এটা অবশ্য-পাঠ। শব্দশৈলীর দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ এই উপন্যাস। আরবী-ফারসী শব্দ তো আছেই, সংস্কৃতের ব্যবহারও রয়েছে। সুরেলা একটা আবহ রয়েছে পুরো লেখায়। তবে আধুনিক আটপৌরে বাংলার পাঠকদের জন্য একটু কঠিন মনে হতে পারে।
7 reviews43 followers
Read
January 7, 2016
এইটা ঠিক রেটিং দেওয়ার মত জিনিস না। এবং "দী" মুজতবা আলীর কর্ম জাজের চেষ্টা করাটাও প্রচন্ড নির্বুদ্ধিতা হবে আমার দিক থেকে। আমি নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে পারি মাত্র।


প্রথমত শবনম এর বিশাল অংশ প্রচন্ড নাটুকে কপোত কপোতীর শতবর্ষী পুরনো বাকবাকুম। লেখক মুজতবা আলী বলেই ধরে রাখতে পারেন পাঠককে। নাহয় এভাবে বিল্ড আপ হওয়া কাহিনীর শেষ মাথায় পোঁছানো পাঠকের জন্য বেশ একটা স্ট্রাগল।

মুজতবা সাহেব স্কলার হিসেবে উঁচুদরের। বিভিন্ন ভাষার ব্যবহারে তিনি কতটা সাবলীল সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন। এবং তিনি শুধু ভাষাটা বলতে পারেন বা বোঝেন ব্যাপারটা যে এতটুকুতেই শেষ না, তিনি যে একজন নিবেদিত সাহিত্যরস শিকারি পরতে পরতে উদ্ধৃতি গুলাই তার প্রমাণ। কাব্যপ্রেমী হলে "শবনম" নিঃসন্দেহে উপভোগ্য।


দ্বিতীয়ত নামই বলে দ্যায় নায়িকা উপন্যাসের হাইলাইট। বটেও। কিন্তু যে নায়কের দৃষ্টি দিয়ে পাঠক দেখছে সেই নায়ককে একজন বস্তুতই পাগল প্রেমিক ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনাই। চরিত্রটা ঠিক আপন করে নিতে পারেনাই আমার মত দূর্বল পাঠককে। খুব একটা তার সম্বন্ধে আমরা জানিনা। এই অন্ধ প্রেমিককে কিছু কিছু জায়গায় প্রচন্ড দূর্বল লাগছে। অবশ্য এই দূর্বলতাকে তার অন্ধ প্রেম দিয়া জাস্টিফাই করাই যায়। কিন্তু প্রেমিকের তার হিমি সম্পর্কিত প্রেম ভাবনা পাঠককে নাড়া দেবেই - ফর দ্যা সিম্পল ফ্যাক্ট মুজতবা আলীর সর্ববিদিত কবিত্ব।

কিন্তু পঞ্চতন্ত্র বা টুনিমেম বা রসগোল্লায় তাঁর বিখ্যাত বৈঠকি চালের গল্প বলা কিন্তু দৈনন্দিন বাস্তবতাকে প্রচন্ড উপভোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে আটকে ফেলার যেই অবিশ্বাস্য ক্ষমতা দেখি সেটা বেশ ভালোভাবে অনুপস্থিত। আবারো সেই ফ্যাক্টটা ফিরে আসে - এটা নিখাদ প্রেমের গল্প। তবে নায়ক নায়িকার সাহিত্যপ্রেম আমাদেরকে এই বিষয়টা ভুলে থাকতে বলে।


আমার কাছে শেষপর্যন্ত "শবনম" এমন এক উপন্যাস যেখানে আপনার এই যুগলের স্বপ্নালু বাস্তবতায় মিশে যাইতে হবে। যদি পারেন তো এই মোহ - জগতের প্রাচীনতম এই আকুতি, দুইয়ে লীন হয়ে যাওয়ার এই আকুল আবেগ - প্রেম, ভালোবাসা, আকর্ষণ যাই বলেন না কেন আপনারে নাড়ায়ে দিবে।
আর যদি ফ্রেঞ্চ এবং আরবের অদ্ভুত মিশেলের নাচিয়ে, রিভলভার ক্যারী করা অনিন্দ্যসুন্দরী নায়িকারে ভালো না লাগে, যদি প্রথম দর্শনে যুগলের কবিতার ছত্র বিনিময় পরবর্তীতে প্রকট প্রেম হয়ে ওঠা বোধগম্য না হয় তা হইলেও স্রেফ প্রেমের পাঠ নিতেও পড়ে ফেলা যায় "শবনম"
Profile Image for Shahria Mahmud  Aupo.
7 reviews
March 26, 2021
পড়ার মত একটা গল্প কিংবা নাটক কিংবা উপন্যাস যা ইচ্ছে বলা যেতে পারে। এই প্রথম আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর কোন বই পড়লাম৷ প্রথম দিকে বেশ চমৎকার ই লেগেছে, ঘটনা প্রবাহ কিছুটা হলেও ধীর গতির ছিল কিন্তু পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কাব্যাংশ এর ঝলক মন্ত্রমুগ্ধ করতে যথেষ্ট। কাচা পড়ুয়া বলে কিছু কিছু শব্দ বেশ নতুন লেগেছে কিন্তু তাও বুঝার মত ছিল। বসে একটানা পড়ে শেষ করা যাবে। প্রেমের আখ্যানের কোন কিছু বাকি রাখা হয় নি.......
Profile Image for Akash Saha.
156 reviews25 followers
December 27, 2021
সব রোমান্টিক উপন্যাসই এত ট্রাজেডিক কেন? অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করল উপন্যাসটি পড়ে।
Profile Image for Shoumik Hossain.
15 reviews
November 4, 2022
সবসময় না পাওয়ার বেদনার দিকেই আমাদের চোখ যায়, পেয়ে হারানোর দিকে তেমনটা নয়! পেয়ে হারানোর বিরহ কেমন? জানতে হলে পড়তে হবে 'শবনম'।
অনবদ্য একটি উপন্যাস। ভালো সময় কাটানোর জন্য বইটি পড়তে পারেন।
বাংলাদেশী ব্যান্ড মাইলস্, তাদের গাওয়া একটি গান-'নিঃস্ব করেছো আমায়'। মনে হচ্ছে এই গানটি সৈয়দ মুজতবা আলীর 'শবনম' থেকে অনুপ্রাণিত!
Displaying 1 - 30 of 208 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.