Jump to ratings and reviews
Rate this book

কাঙালসংঘ

Rate this book
নগরের ঝকঝকে আধুনিকতা নেই, আবার গ্রামের কোমলতাও নেই, শহরের পাশে খোস পাঁচড়ার মত গড়ে উঠেছে একটা বস্তি। এখানে ঘুম ভাঙে কলহে, ঘুম আসে কান্নায়। ভাঙাচোরা ঘরগুলো যত কাছাকাছি আছে মানুষগুলো থাকে ততই দূরে। স্বার্থপরতা তাদের টিকে থাকার মন্ত্র, নিঃস্বার্থ হওয়ার মত সামর্থ্যও তাদের নেই। টিকে থাকাটাই এখানে সাফল্য। তবুও কিছু মানুষ দারিদ্র আর বঞ্চনার এই কারাগার থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখে। নিয়তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা এবং অহরহ পরাজিত হয়।

বিদ্যুতের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে মোমবাতির আলোয় এই নোংরা বস্তির এক ভাঙ্গা ঘরে পাঁচজন নিঃস্ব মানুষ সভা বসিয়েছে। এই সভার মধ্যমনণি একজন জেলখাটা আসামি, জেলখানায় আনাড়ি হয়ে ঢুকে অপরাধের সব কলাকৌশল রপ্ত করে বের হয়েছে সে। একপাশে ঘোলা দৃষ্টি মেলে মোমবাতির কম্পমান শিখাটা দেখছে যে, সে একজন নেশাখোর এবং প্রতারক। তার জন্ম হয়েছে রাস্তায়, রাস্তাই তাকে বড় করেছে। কিছুদিন আগেও সে অজ্ঞান পার্টির সদস্য ছিল, সম্প্রতি বহিষ্কৃত। এখন একা একাই ছলনা, প্রতারণা, ছিনতাই করার চেষ্টা করে, এবং প্রায়শই ব্যর্থ হয়। মুখে বার্ধক্যের এবং দ্বিধার অসংখ্য রেখা নিয়ে যে লোকটি বসে আছে, একসময় সে ডিস্ট্রিক ট্রাকের ড্রাইভার ছিল, চোখে ছানি পড়ায় এখন ভিক্ষা করে বেড়ায়। এই সংঘের একমাত্র নারী সদস্যটি একজন কমবয়সি পতিতা, সিনেমা হলের সামনে যৌবনের ফাঁদ পেতে শিকার ধরে সে। শেষ কাঙালটি এই শহরে একেবারেই নবীন, জীবনে প্রথমবার বাসে চড়ে এই শহরে এসেছে সে। দুই পুরুষ ধরে তারা পরাশ্রয়ী, একখন্ড ভূমির জন্য হাহাকার সে পৈতৃক সূত্রে পেয়েছে। ভূমির আশায় সে শহরে আসেনি, তার চেয়েও মূল্যবান কিছু ছিল তার, সেই হারানো সম্পদের খোঁজ তাকে বস্তির এই ঘরে এনে ফেলেছে। এই অভাগা ছেলেটির নাম হচ্ছে মনা। সে জন্ম থেকে রাখালপাড়া নামক গ্রামে থেকে এসেছে, হয়ত মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই থাকত, কিন্তু এক শান্ত সকালে তার জীবনের গতিপথ পাল্টে যায়, দরিদ্র সে আগেও ছিল, সেদিন সে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। সেই রাখালপাড়া থেকেই গল্পটা শুরু।

114 pages, Hardcover

Published March 1, 2021

11 people are currently reading
365 people want to read

About the author

Obayed Haq

11 books286 followers
ওবায়েদ হকের জন্ম ১৯৮৬ সালে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকেন কুমিল্লায়।
প্রকাশিত বইসমূহ-
উপন্যাস-
তেইল্যাচোরা (২০১৪)
নীল পাহাড় (২০১৫)
জলেশ্বরী (২০১৬)
কাঙালসংঘ (২০২১)
আড়কাঠি (২০২৪)
জল নেই পাথর (২০২৪)
উন্মাদ আশ্রম (২০২৫)
গল্প সংকলন-
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা (২০১৪)
নেপথ্যে নিমকহারাম (২০১৭)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
59 (19%)
4 stars
140 (45%)
3 stars
96 (31%)
2 stars
10 (3%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 90 reviews
Profile Image for Wasee.
Author 49 books785 followers
August 15, 2021
"যে মেয়েটি মারা গেল, একটু পরে যে লাশের ব্যাগে করে মর্গে যাবে, সে হয়ে যাবে গল্প, চায়ের সাথে বিস্কুটের বিকল্প। তারপর গল্পটা পানসে হয়ে যাবে, পৃথিবীর আকাশে বাতাসে কিংবা মানুষের মনে অথবা কোনো দীর্ঘশ্বাসে টোকাই মেয়েটার কোন অস্তিত্ব থাকবে না..."

এমন অদ্ভুত বিষণ্ণতায় মোড়া সৃষ্টিকর্মের অপেক্ষাতেই ওবায়েদ হকের জন্য অপেক্ষা করি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর লেখকের নতুন উপন্যাস 'কাঙালসংঘ' হাতে এলো। বিষাদের অনুভূতির জন্য আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করার এমন বিরল উদাহরণ আর হয় না!

শহরের পাশে খোসপাঁচড়ার মতো একটা বস্তি: যেখানে ঘুম ভাঙে কলহে, ঘুম আসে কান্নায়। স্বার্থপরতা যেখানকার বাসিন্দাদের টিকে থাকার মন্ত্র, নি:স্বার্থ হবার মতো সামর্থ্যও যাদের নেই। এমনই এক বস্তির ভাঙা ঘরে নৈশকালীন সভা বসে পাঁচজন নি:স্ব মানুষের। সভার মধ্যমণি এক জেলখাটা আসামি 'গুরু'কে ঘিরে আলোচনায় মত্ত হয় এক নেশাখোর প্রতারক, ঘোলাটে দৃষ্টিশক্তি আর দ্বিধায় জর্জারিত এক প্রাক্তন ট্রাক ড্রাইভার বৃদ্ধ, সিনেমা হলের সামনে যৌবনের ফাঁদ পেতে শিকার ধরা এক কমবয়সী পতিতা আর এক ভাগ্য বিড়ম্বিত পরাশ্রয়ী, কপর্দকশূন্য যুবক। সমাজের অপ্রয়োজনীয়, অচ্ছুত, অপাংক্তেয় এই মানুষগুলো দারিদ্র‍্য আর বঞ্চনার কারাগার থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখে। আয়োজিত হয় বিশেষ এক সভার।

ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় মানুষগুলোর পরিচয়; জানা যায় তাদের অতীত, বর্তমান আর দুর্দশার নানান ইতিহাস। পুরো গল্লটা যেন জোয়ার-ভাটার মতো আন্দোলিত হতে থাকে: কখনও শান্ত, ধীর লয়ে, আবার কখনও প্রচণ্ড বেগে।

ওবায়েদ হকের ভাষার গাঁথুনির তুলনা করা দু:সাধ্য। সমাজের নির্মম বাস্তবতাকে জাদুর ক্ষমতায় তিনি অপরূপ রূপকথার মতো করে তুলে ধরেন বারবার। কাঙালসংঘ বইটা সেই ধারায় আরও একটি নতুন সংযোজন।

বই থেকে আরো একটা অংশ তুলে দিলাম।

"....অসুস্থ মানুষ দেখলে যারা চোখ ফিরিয়ে দায় মেটায়, তারাই প্রতারকের শাস্তি বিধান করার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠল। জনতার গুঞ্জন তখন গর্জনে পরিণত হয়েছে। প্রথমে একজন যখন জলিলের কলার ধরল, সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল; কিন্তু বুঝতে কেউ চায়নি। আরো কয়েকটি হাত তার গায়ের শাটটি টেনে ছিন্নভিন্ন করে দিলো। চোখে ভয়ানক আতঙ্ক নিয়ে জলিল দেখল, একদল লোক ভয়ানক আক্রোেশ নিয়ে তার দিকে ছুটে আসছে। সেই মুহূর্তে প্রাণের তাগিদ অনুভব করে সে, ছুটে বেরিয়ে যেতে চায় উন্মত্ত মানুষগুলোর নাগাল থেকে। কিন্তু পারে না, বৈশাখের ঝড়ো বৃষ্টির মতো চারপাশ থেকে আঘাত আসতে থাকে। এই শহরের মানুষ তার মাকে গর্ভবতী করেছে, যারা তার শরীর থেকে এখন রক্ত ঝরাচ্ছে, তাদের সাথে তার রক্তেরই সম্পর্ক। যে তার কান খামচে ধরে প্রায় ছিঁড়ে ফেলেছে, সে হয়তো তার ভাই। যে তার একটা চোখ থেঁতলে দিয়েছে, সে হয়তো তার চাচা। যে তার বুকের পাঁজর ভেঙেছে, সে হয়তো তার বাবা। জনতা উৎসবমুখর পরিবেশে একটা মানুষ হত্যা করল, খুব একটা সময় লাগেনি। রাস্তার ধুলো খেয়ে বড়ো হওয়া জলিলের এমনিতেই প্রাণশক্তি তেমন একটা ছিল না। এই শহরের মানুষ যে পাপ দীর্ঘদিন আগে করেছিল, আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করল..."
Profile Image for Rifat.
501 reviews327 followers
April 19, 2021
বইয়ের শুরুটা হয়েছে পাঁচজন মানুষের নৈশ সভার ঘোষণা দিয়ে। মোমবাতির আলোয় নোংরা বস্তির ঘরে বসে আছে একজন জেলখাটা আসামি, এক প্রতারক ও ছিনতাইকারী, চোখে ছানি পড়া বয়স্ক ভিক্ষুক, কম বয়সী পতিতা এবং শহরে নবাগত দুর্ভাগা যুবক। একটা অপারেশনের বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে এই সভায়।

এরপরে কাহিনী এগিয়েছে, চরিত্রগুলোর পরিচয় উঠে এসেছে। প্রথম কয়েকটা পরিচ্ছদ একটু ধীর গতির ছিল; কিন্তু পড়তে পড়তে একটা আগ্রহও জাগছিল এই চরিত্রগুলো একত্রিত হল কিভাবে!? পড়তে খারাপ লাগে নি। ১০ম পরিচ্ছেদে গিয়ে কাহিনী বেশ গতি পেয়েছে। শুরুর থেকে শেষটাই ছিল চমকপ্রদ। ওবায়েদ হক একটু অন্যরকম করে লেখেন, এটাই ভাল লাগে। সমকালীন জনরার একঘেয়ে প্রেম-ভালবাসাকে কেন্দ্র করে গড়া প্লটকে দূরে রেখে এ ধরনের লেখা পাঠকদের উপহার দেয়া অবশ্যই প্রশংসনীয়।

(একটা জিনিস খেয়াল করলাম। লেখকের উপন্যাসের বই পড়তে গেলে মনে হয় নৌভ্রমণে বের হয়েছি। ভেসে যাচ্ছি আর অনেকগুলো পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে লেখক তার পাঠকদেরকে বিভিন্ন মানুষের জীবনযাত্রা দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। জলেশ্বরী, নীল পাহাড়, তেইল্যা চোরা বই পড়ার সময় এই অনুভূতি তো ছিলই; কাঙালসংঘ পড়ার সময়ও এই অনুভূতিটা হয়েছে।)

বরাবরের মতোই সরল-সুন্দর লেখনী, প্লট অনুযায়ী কম কিন্তু পরিমিত উপমার ব্যবহার। বইটা পড়া শুরু করার সময় তেমন কোনো আশা নিয়ে শুরু করি নি। যেহেতু সে রকম কোনো প্রত্যাশা ছিল না, কাজেই অতো হতাশ হই নি। হাবিজাবি লেখা বাদ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা মাত্র ১০৫, পড়তে বড়জোড় আড়াই ঘন্টা সময় লেগেছে। কাহিনীর মিশ্রণে কেমন যেন একটা ছাড়া ছাড়া ভাব লেগেছে। আমার সময় খারাপ কাটে নি।

রেটিং দিতে গিয়ে ৩ তারা দিচ্ছি। লেখকের তুলনাটা লেখকের সাথেই হবে.....

এমনিতেই লেখকের বইয়ের সংখ্যা কম। ভাল প্লটে ভাল লেখা আসুক।
আশা করি লেখক পাঠকদের এদিকটা দেখবেন।

~৮ এপ্রিল, ২০২১
Profile Image for সোহেল নূর.
8 reviews34 followers
March 21, 2021
ওবায়েদের থেকে প্রত্যাশা অনেক। সে তুলনায় কিছুটা হতাশ হয়েছি। ওবায়দের লেখনীর যে সামর্থ্য সে তুলনায় এটা অন অ্যান এভারেজ।
প্রথম নয় পরিচ্ছদ কেমন যে ওবায়েদীয় ফ্লেভার মিস করছিলাম। অবশ্য ওবায়েদ আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজেকে ভাঙতে চান কিংবা বিগত বছর গুলোতে কালের বিবর্তনে অথবা পাঠাভ্যাস অথবা লব্ধ অভিজ্ঞতার ফলে রুচি পছন্দ কিছুটা বদলে গেছে। যাওয়াটা উচিতও। তবে প্রথম ৯ পরিচ্ছদ আমার কাছে সেভাবে ভালো লাগে নি।
কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু ডিটেইলিং থাকলে ভালো হতো হয়তো।
তবে সব চরিত্র যখন ডেভলাপ হয়ে আমরা মুল কাহিনিতে ঢুকলাম। তখন বেশ তরতরিয়েই পড়া গেছে। শেষের অংশটুকু আমার বেশ ভালো লেগেছে। আগের উপন্যাস গুলোতে ওবায়েদের মুন্সিয়ানা যদি হয় শুরু থেকেই টান টান আবহে কাহিনি এগিয়ে নেয়া এবং শেষের দিকে শিক্ষানবিশ ভাবে সমাপ্তির দূর্বলতা। তাহলে এই উপন্যাসটি হলো প্রথম দিকে কাহিনীর শ্লথ গতী কিন্তু শেষের দিকে একদম পাকা লেখকের মতোই সমাপ্তি টানা। শেষটা পড়ার পর পাঠক কমিনিটের জন্যে কিংবা কয়েক ঘন্টার জন্যে খানিকটা ভাবনা তাড়িত হলেও হতে পারে। আমি হয়েছি। নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি এই জগতে কারা কাঙাল? যাদের আমরা কাঙাল বলি তারা নাকি যারা ধনশালী তারা?
কাঙালসংঘের শুরুটা যদি হয় নড়েবড়ে ব্যাটিং তো শেষটা হলো চমৎকার ফিনিশিং।

যাই হোক এই বই পড়ে আমি মোটেই মুগ্ধ নই। উচ্ছাসিত নই বরং কিছুটা হতাশও। অন্তত ওবায়েদ হকের কাছ থেকে আমি আরো অনেক বেশী আশা করে থাকি৷ তবে খুশী তাও অন্তত তার একটা বই এলো। আর কে না জানে সব ব্যাটসম্যান প্রতি ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকায় না; সব বইই কালজয়ী হয় না। আপাতত এটুকুই সান্ত্বনা।

পুনশ্চঃ বই প্রকাশের আগে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানালাম। তা জিজ্ঞেস করে বিব্রত করবেন না।
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
June 23, 2024
❝যে মেয়েটি মারা গেল, একটু পরে যে লাশের ব্যাগে করে মর্গে যাবে, সে হয়ে যাবে গল্প, চায়ের সাথে বিস্কুটের বিকল্প। তারপর গল্পটা পানসে হয়ে যাবে, পৃথিবীর আকাশে বাতাসে কিংবা মানুষের মনে অথবা কোনো দীর্ঘশ্বাসে টোকাই মেয়েটার কোন অস্তিত্ব থাকবে না।❞
মূল বিষয় হলো আমি এখন লেখকের লেখনীতে বায়াসড। এই লেখনীতে লেখক এভারেজ প্লটের গল্প লেখলেও আমার মন তা মানতে পারবে না ( অনেকের মতে কাঙালসংঘ বিলো এভারেজ)।

কাগজের উপর প্রিন্ট গুলো বুকের ভেতর যে এত নিদারুণ ভাবে বেধে যায় তা সত্যিই খুব কম গল্পে উপলব্ধি করা যায়।
Profile Image for ORKO.
196 reviews198 followers
June 20, 2023
"আর কয়েকদিন পর শহরে একটা খবর রটে যায়,ময়লার ভাগাড়ে টাকার খনি আছে,কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তখন দেখা যায় শহরের ইট-কাঠ-পাথরে সাজানো দালানকোঠা ছেড়ে দলে দলে মানুষজন নেমে আসে ময়লার বড় স্তূপে। টোকাইরা অবাক হয়ে দেখে, যারা এতোদিন তাদের নোংরা শরীর দেখে নাকে কাপড় গুঁজতো, স্পর্শের ভয়ে তটস্থ থাকতো তারাও আজ দুই হাতে ময়লা ঘাঁটছে। তখন টোকাইদের উপলব্ধি হয়,এই লোকগুলো তাদের চেয়েও বেশি কাঙাল।  ময়লার ভাগাড়ে শত শত মানুষ নোংরা কীটের মতো কিলবিল করতে থাকে। ময়লা খুঁচিয়ে সেদিন পলিথিনে মোড়া নয়টি নবজাতকের লাশ আবিষ্কার করে তারা। তারপরও তারা দমে না,টাকার সন্ধানে ময়লা খুঁড়তেই থাকে। সেদিন শহরব্যাপী পঁচে যাওয়া মানুষের বোঁটকা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে......"


মানুষের জীবন যেমন শূন্য থেকে শুরু হয়ে ডালাপালা ছড়িয়ে, আবার চিটপিট করে আগুনে জ্বলতে জ্বলতে শূন্যে মিলিয়ে যায়, এমনই আখ্যানে সাজানো ওবায়েদ হকের  সর্বশেষ বই "কাঙালসংঘ"। এর কাহিনী বিন্যাস অনেকটা ডোমিনো'জ ইফেক্টের মতো। ধীরে ধীরে প্রতিটা ক্যারেকটারের অতীতের গল্পকে লেখক সাজিয়েছেন একের পর এক ডোমিনো খাড়া করে। তারপর এক দিক থেকে ধাক্কায় একের পর এক ডোমিনো গা এলিয়ে পড়ে গেছে এন্ডিংয়ে গিয়ে। যারা ব্যাপারটা বুঝেন নি,তাদের জন্য তাসের প্রাসাদের উদাহরণ। হাওয়ার ধাক্কা থেকে বাঁচিয়ে তিলে তিলে তৈরি তাসের প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্তর তাসগুলো যখন টুপ করে সরিয়ে নেয়া হয় তখন হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় সেই প্রাসাদ- সেই শূন্যে মিলানোর মতো।

★কাহিনী সংক্ষেপ★

শহরের পাশে খোসপাঁচড়ার মতো গড়ে ওঠা এক বস্তি। যেখানে ঘুম ভাঙে কলহে,ঘুম আসে কান্নায়।
যাদের একদিন তিলে তিলে দেখা স্বপ্নগুলো পরিণত হয়েছে বুক চেরা দীর্ঘশ্বাসে, রোজ অন্ধকারের সাথে কথা বলে দিন কাটে ... এমন পাঁচজন মানুষ বস্তির এক ভাঙা ঘরে সভা বসায়।
সভার মধ্যমণি তৃতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ মহিউদ্দীন, সাত নাম্বার আসামি হিসেবে জেল খেটেছিল যে দীর্ঘদিন..
বাকি চারজন-

বউ খেদানো অজ্ঞান পার্টির সদস্য জলিল, ব্যর্থতাই যার নিত্য সঙ্গী..

বার্ধক্যের বলিরেখায় দাগাঙ্কিত ষষ্ঠীচরণ - প্রাক্তন ডিস্ট্রিক্ট ট্রাকের ড্রাইভার, বর্তমানে চোখে ছানি পড়ায় ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে সে...

মনা মিয়া এই শহরের অনাহুত এক সরল ছেলে, মায়ের খোঁজে এসেছে এই জলাঞ্জলে ভরা মিথ্যে কথার,মিথ্যে বাঁচার অভিনয়ের শহরে...

আর সভার একমাত্র নারী সদস্য বকুল। বাবা-মা হারিয়ে, বাস্তুভিটা ছেড়ে সে এখন সিনেমাহলের মন্দ দেয়ালে ঠেস দিয়ে খদ্দেরের খোঁজ করে...

এই অন্ধকারের অনিশ্চিত জীবনকে ঝেড়েফেলে ভদ্রস্থ,শান্তির দিনের স্বপ্নের চাবি হাতে পেতে তাদেরকে নিতে হবে ঝুঁকি।সম্মিলিত একটা অপারেশন। বেশি কিছু না... এই ধুলো ধুলো শহরের সীমানা যেখানে গ্রামে গিয়ে মিলেছে,সেখানে দাঁড়িয়ে আছে অসহায়ের রক্তচোষা নিজাম হায়দারের প্রাসাদ। তারই একমাত্র ছেলেকে করতে হবে কিডন্যাপ। তারই হাতে ধরা আছে পাঁচ পাঁচ জন মানুষের নতুন করে বাঁচতে পারার সোনার কাঠি।
তারপর.....

★প্রতিক্রিয়া★

বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের ১১তম জনবহুল শহর...
প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের বসবাস এই আগুনের দিন গোণা সকালের শহরে। কিন্তু সেখানে বাস্তুহারা মানুষদের সংখ্যা কত?
কতশত লোক প্রতিদিন ভাগ্যের অন্বেষনে পাড়ি জমায় এইখানে। তাদের নিয়ে,তাদের মতো করে...কিছু সুখ-দুঃখের গল্প...ফেলে আসা জীবনের কথা... ছেলেমানুষী.... এসব কোথায় যেন হারিয়ে যায় পেটের খিদা আর মাথা গোঁজবার ঠাঁইয়ের খোঁজে। কারো কারো কাঁধে ভর করে। পরজীবীর মতো জীবন অনেকের। কিন্তু তাদের শুষ্ক মুখের নিচে চাপা পড়ে যায় এসব.... রাতের ক্লান্তিমাখা আঁধার তাদের ভিতর থেকে খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসে লাল-নীল সব গুঁড়ো গুঁড়ো স্বপ্নকে। কাঙালসংঘের আখ্যান ঢাকা শহরকে ঘিরে না হলেও, সেসব মানুষদেরকে নিয়ে যাদের ঘামের উপর দাঁড়িয়ে ঘেন্নায় বুকে লাথি কষে দেয় অনেকে। কাহিনীর প্লটটা বেশ পরিচিত হলেও ওবায়েদ হকের লেখনীর ধারে বেশ সুপাঠ্য হয়ে এসেছে।

আগেই বলে রাখা ভালো... ওবায়েদ হকের উপন্যাস এই প্রথম পড়া।
"একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা" বইয়ে যে একজন গল্পকারের লেখনীর বিবর্তনকে ধরা যায়, উনার উপন্যাসের বিবর্তন বোঝার সুযোগটা আর কোনোটা পড়া না থাকায় মূল্যায়নে যেতে পারছি না।
লেখার ধাঁচ যথেষ্ট ভালো। কারণ, বইটা আমি একবসায় শেষ করেছি। আর এটুকু বলতে পারি যে,উনি একজন ভালো স্টোরিটেলার।
একটা উপন্যাস ভালো লাগবার জন্য যে বিষয়গুলোকে আমি খুঁটিয়ে দেখি তা হলো-লেখনী,আদি-মধ্য-অন্তের সমন্বয় আর কাহিনীর ইতি।

কাঙালসংঘের ধারাবর্ণনা লিনিয়ার। মাত্র ১০৯ পৃষ্ঠার বইয়ের ৭০ ভাগে উনি সময় দিয়েছেন চরিত্রায়নে। সুতরাং চরিত্রায়ন বেশ স্ট্রং।
তবে এইটুকু লেখনীর জোরে উপভোগ্য হলেও বিন্যাসের দিক থেকে নড়বড়ে। যদি দৃশ্যায়নের ডিটেইলিংয়ে আরেকটু মনোযোগ দিতেন তবে এটা আরো বেশি রিলেটেবল, বাস্তব আর জ্যান্ত একটা উপন্যাস হতে পারতো।

গল্পের শুরুটা যে না পাওয়া থেকে শুরু করেছিলেন,যে প্রসঙ্গ বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সাপের মতো এঁকেবেঁকে কিছু মানুষের জীবনের ভিতকে নাড়িয়ে ফিরে এসেছে সেই বিন্দুতেই। তাই আদি-মধ্য-অন্তের সমন্বয় আর ফিনিশিং উনি দিয়েছেন বেশ অভিজ্ঞ লেখকের মতো। সবথেকে মর্মন্তুদ মনে হয়েছে, ক্ষুধার তাড়নায়, দীর্ঘ উপবাসের ক্লেশে শুয়োর খেয়ে ফেলা আর এক পতিতার সন্তানকে জীবিকার তাগিদে আগলে রাখতে না পেরে খাঁচায় ভরে রাখাটা।

কাঙালসংঘ পড়ে আমার মনে হয়েছে, মানুষের মনের কুটিলতা-জটিলতা, চাহিদা,মানসিকতার ব্যবর্তনে শব্দচয়নে লেখক বেশ ঘোর সৃষ্টি করতে সক্ষম।
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews88 followers
June 20, 2023
মোমবাতির আলোয় বস্তির এক ভাঙা ঘরে পাঁচজন নিঃস্ব মানুষ কিংবা কাঙাল সভা বসিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা কি এবং কেন এই সভার আয়োজন তার ব্যাকড্রপে তাদের জীবন কাহিনী শুনিয়েছেন ওবায়েদ হক। পাঁচজন কাঙালের জীবনের গল্পের সাথে সাথে উঠে এসেছে একবিংশ শতাব্দীর এই দেশের তথাকথিত সমাজ,সভ্যতা,রাষ্ট্র, মানবজীবনের বিভৎস কিন্তু বাস্তব রুঢ় চিত্র। শেষ করবার পর মাথা ঝিম ধরে আছে। উপন্যাসের গল্পগুলো তো অহরহ ঘটছে প্রতিনিয়ত। শুধু এতো চমৎকার ভাবে কেউ উপস্থাপন করছেনা বলে দেখে ও দেখার অনুভব হচ্ছেনা। বকুল,মনা,গুরুজি, জলিল আর ষষ্ঠীচরণদের আমরা দেখি কিন্তু তবুও তাদের জীবনের গল্প আমাদের ভাবায় না কারন আমরা নিজেদের গল্প গুছাতেই বেশি সচেষ্ট থাকি।

ওবায়েদ হকের লেখনশৈলী বহুল প্রশংসিত;বিশেষ করে উনার কিছু উপমা আর ভাষার আলঙ্কারিক কারুকাজ সত্যই অভিভূত করে দেয়। উনার পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে ভালো লাগছেনা। উনি লিখছেন তো এইসব বিপন্ন মানুষের বিহ্বল গল্প আরো??
Profile Image for Tanim Rahman Papon.
14 reviews42 followers
March 26, 2021
আমার মতে বর্তমান সময়ে গভীর জীবনবোধের গল্প "ওবায়েদ হক" এর মতো করে এতো সুন্দর এবং সহজ ভাবে আর কেউ লিখতে পারে না। বছরের অন্যতম সেরা একটা বই পড়ে শেষ করলাম। বইমেলা থেকে ফিরে রাতে ১১ টার দিকে শুরু করছিলাম মাত্র পড়ে শেষ করলাম। বহুদিন পরে একটানা কোনো বই পড়ে শেষ করলাম।
Profile Image for Zihad Al Faruqe .
33 reviews61 followers
March 15, 2023
আলো আঁধারি পরিবেশে ভাগ্যের ইঁদুর দৌড়ে পরাজিত পাঁচজন বিধ্বস্ত মানুষের সভা দিয়ে গল্পের শুরু। এরপর এলো নিয়তি তাদের কীভাবে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়েছে তার পেছনের বর্ণনা। এরপর খানিকটা প্লট টুইস্টের আভাস পেলেও শেষটা হয়েছে অদ্ভুত বিষণ্ণতায় ঘেরা পরিবেশে। শৈশবে মায়ের আদরের চিহ্ন হিসেবে কুনজর থেকে রক্ষায় এঁকে দেওয়া দাগটিও কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ভাগ্য নিপীড়িতদের জীবনে। সমাপ্তিতে লেখক প্রচ্ছন্নভাবেই একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, যারা হাজার কোটি টাকার পাহাড়ে বসে থাকে আর যারা উচ্ছিষ্ট, নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি করে জীবন সংগ্রামের টিকে থাকে এ দুই শ্রেণির ভেতর কাঙাল আসলে কারা?
Profile Image for Samsudduha Rifath.
426 reviews22 followers
April 1, 2023
"তারা তো ঠিকই লুট কইরা প্রাসাদ বানাইছে, আমাগো লাইগা দিছে ন্যায়-নীতি। আমাগো বান্ধে আইন দিয়া, আমাগো ঘরের ফুটা য্যান বন্ধ না হয়, আমরা য্যান তাগো মাথাত বারি দিতে না পারি। তাগো গোলাম হইয়া থাকি"
Profile Image for Khandaker Sanidulla Sanid.
47 reviews22 followers
July 16, 2021
'যে এতদিন তার পেট দখল করে ছিল আজ ভূমিষ্ঠ হয়ে সে তার পুরো বুক দখল করে নিলো। পৃথিবীতে মায়ের হৃদয়টাই মনার একমাত্র স্থাবর সম্পত্তি'


◾কাহিনী সংক্ষেপ:
বিদ্যুতের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে মোমবাতির আলোয় এই নোংরা বস্তির এক ভাঙা ঘরে পাঁচজন নিঃস্ব মানুষ সভা বসিয়েছে। তাদের একের সাথে অন্যের চেহারায় মিল নেই, নেই তাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক কিন্তু যে জিনিসটি তাদের পাঁচজনকে আজ এক জায়গায় সমবেত করেছে সেটা হচ্ছে 'অসহায়ত্ব'। এই ঘরে থাকা সবাই কোনো না কোনো ভাবে নিঃস্ব। কিন্তু নিঃস্ব হলেও তাদের ভেতরে আছে প্রেম, স্নেহ, মায়া। তাদের সকলের কাজ এই সমাজে স্বীকৃতি না দিলেও সেটার আড়ালে রয়েছে তাদের মধ্যকার একটা ভালো মানুষের মন। এই সভার সদস্যদের মধ্যে একেবারে নতুন সদস্য হচ্ছে মনা যে ভাগ্যক্রমে তার একমাত্র আপনজনকে খুঁজতে চলে আসে এই ইট-পাথরের রাজ্যে যেখানে প্রতি কদমে মানুষের ধাক্কা খেতে হয় আর একেকটা গালি শুনতে হয়। এই শহরে তার কেউ না থাকলেও সে পেয়ে যায় কিছু আপনজন যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তারা যেন একে অন্যের চেনা কেউ। শিক্ষিত ছেলে মনা শহরে এসে আস্তে আস্তে চিনতে পারে শহরের মানুষগুলোকে, পড়ে নিতে শেখে তাদের চোখের ভাষাকে, শেখে নিজের অধিকার আদায়কে। আর তারই সূত্র ধরে একসময় তারা সবাই মিলে পরিকল্পনা করে অন্যের সম্পদে হাত দেবার কিন্তু সে সম্পদ কি আসলেই তার ছিল? যদি থাকেও শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছিলো?


◾চরিত্র:
বইতে মূল চরিত্র মোট পাঁচটি যাদের নিয়ে শুরু হয়েছিলো সভার আয়োজন তবে কাহিনীর প্রয়োজনে তাদের হাত ধরে বেশ কিছু চরিত্র সামনে এসেছে।
তবে লেখক মনা,গুরুজি আর বকুল চরিত্রের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন। এই তিনটি চরিত্রের অতীত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বেশি।
এই তিন চরিত্রের বর্ণনা বেশি হলেও লেখক বাকি দুটি চরিত্রের সাথে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়েছেন। জলিল চরিত্রটিকে প্রথম দিকে একজন ব্যর্থ ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচয় করালেও তার মধ্যেও যে মনুষ্যত্ব রয়েছে সেটাও ব্যক্ত করেছেন স্বল্প পরিসরে।


◾পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা:
প্রথমে বলি ওবায়েদ হক আমার অন্যতম পছন্দের লেখক যার অন্যতম কারণ তার লেখনী। তার লেখনশৈলী আর ভাষার ভান্ডার ই হয়ত তার মূল কারণ। অনেক বই রয়েছে যেখানে পেজ বাড়ানোর তাগিদে লেখক পৃষ্ঠা বাড়াতে থাকেন কিন্তু ওবায়েদ হক অল্পের মাধ্যমেই সেটা বোঝাতে পারেন। বইতে লেখক 'কাঙালসংঘে' আমাদের সমাজে বাস করা এমন কিছু মানুষকে সামনে এনেছেন আমরা হয়ত যাদের নিয়ে চিন্তা করার খোরাক পাইনা। আমাদের সময় হয়না তাদের নিয়ে ভাববার, তারা যেন সবসময়ই অন্ধকারে থাকেন। রাস্তায় একজন পাগল কে আমরা উত্যক্ত করি অথচ কেউ একবার ও ভেবে দেখিনা হয়ত এই পাগলের ও পরিবার আছে, আছে বেঁচে থাকার মত আকড়ে ধরার কেউ। একজন জেল খাটা আসামী কে দেখলেই কথায় কথায় তার নামের আগে 'কয়েদি' উপাধিতে সম্বোধন করতেও আমাদের লজ্জা লাগেনা, ভেবে দেখিনা একজন ছিনতাইকারীর ছিনতাইকারী হবার পেছনে আসলে কারা দায়ী। লেখক এই টুকরো টুকরো ব্যাপার গুলো এক সুতোয় গেথে লিখেছেন 'কাঙালসংঘ'। বই পড়তে পড়তে যখনই একটু চিন্তার সাগরে ডুবে যেতে গিয়েছি ঠিক সে সময়েই লেখক হাসিয়েছেন জালালের হাস্যকর অবস্থার মাধ্যমে। অথচ এই মানুষের মধ্যেও লেখক ঘটিয়েছেন ক্ষণিকের প্রেম, জাগিয়েছেন অনূভুতি। লেখক সেই নাখালপাড়া গ্রাম থেকে মনার হাত ধরে পাঠক কে শহরে এনে দেখিয়েছেন শহুরে বাস্তবতা। আমার মতে যেকোনো পাঠক এরই ভালো লাগবে বইটা।


◾বইয়ের সমাপ্তি:
ওবায়েদ হকের অন্যান্য বই যারা পড়েছেন তাদের অনেকের কাছেই হয়ত বইয়ের সমাপ্তি সন্তুষ্ট করতে পারবেনা কিন্তু লেখক বইতে আমার মতে বাস্তবতার মাধ্যমে পাঠকের চোখে আমাদের সমাজের অবস্থাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন আমার মতে লেখক সেই দিক থেকে সার্থক।
তবে লেখকের নীল পাহাড় আর তেইল্যা চোরা বইয়ের সাথে তুলনা করলে এই বইটা হয়ত একটু পিছিয়ে থাকবে।


◾বানান,প্রচ্ছদ ও অন্যান্য:
'কাঙালসংঘ' বইতে বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়েনি শুধু দু এক জায়গায় টাইপিং মিসটেক ছিলো যদিও তা চোখে পড়ার মত ভুল নয়।
প্রচ্ছদ করেছেন লুৎফি রুনা যে প্রচ্ছদটা বইয়ের সাথে একদম সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে সাদামাটা প্রচ্ছদ হলেও আমার কাছে সেটা বেশ ভালো লেগেছে।
বইয়ের পেজের মান আর বাইন্ডিং দুটোই সন্তোষজনক ছিল যার জন্য পড়ার সময় খুব একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।


◾বই: কাঙালসংঘ
◾লেখক: ওবায়েদ হক
◾প্রকাশনী: বায়ান্ন' ৫২
◾মুদ্রিত মূল্য: ২৫২ টাকা
◾প্রকাশকাল: মার্চ ২০২১
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
February 6, 2025
"নগরের ঝকঝকে আধুনিকতা নেই, আবার গ্রামের কোমলতাও নেই। শহরের পাশে খোসপাঁচড়ার মতো গড়ে ওঠেছে একটা বস্তি। এখানে ঘুম ভাঙে কলহে, ঘুম আসে কান্নায়। ভাঙাচোরা ঘরগুলো যত কাছাকাছি আছে, মানুষগুলো থাকে ততই দূরে। স্বার্থপরতা তাদের টিকে থাকার মন্ত্র, নিঃস্বার্থ হওয়ার মতো সামর্থ্যও তাদের নেই। টিকে থাকাটাই এখানে সাফল্য। তবুও কিছু মানুষ দারিদ্র্য আর বঞ্চনার এই কারাগার থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখে। নিয়তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা এবং অহরহ পরাজয় বরণ করে।

বিদ্যুতের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে মোমবাতির আলোয় এই নোংরা বস্তির এক ভাঙা ঘরে পাঁচজন নিঃস্ব মানুষ সভা বসিয়েছে।"

বইমেলায় বায়ান্নর স্টলে দাঁড়িয়ে এই লাইন কয়টা পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওব��য়েদ হকের এই বইটাই নেব। গভীর জীবনবোধকে সুনির্দিষ্ট শব্দে গাঁথতে পারার ওবায়েদ হকের যেই দক্ষতা, সেটার সুনাম শুনেছিলাম আগেই। পরিস্থিতি ভেদে বাক্য ও শব্দ গঠনের যেই মুনসিয়ানা রয়েছে তার, সেটাই আমাকে ১০৮ পৃষ্ঠার বইটা শেষ করতে বাধ্য করলো ১ ঘন্টা চব্বিশ মিনিটে, এক বসায়।

ভাগ্য বিড়ম্বিত পাঁচজন মনুষ্য, যারা এই মুহুর্তে উধাও হয়ে গেলে কেউ একবার জানতেও চাইবে না তারা কোথায়; নিয়তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পেটে জেঁকে বসা জমাট ক্ষুধাকে চিরকালের মতো মুক্তি দিতে তারা সভা বসালো বস্তির একটা খুপড়িতে।

দারিদ্র্য আর ভাগ্যের বিড়ম্বনাকে শব্দের চাবুক কষে প্রতিষ্ঠা করেছেন ওবায়েদ হক। যেই ভাবটা 'এভাবে' প্রকাশ করলেও চলে কিন্তু মানব হৃদয়কে স্পর্শ করবে না, সেই ভাবটাকে 'ওভাবে' প্রকাশ করে তিনি চাবুক কষলেন পাঠকের মানসপটে।

"যে মরেছে সে চাকর শ্রেণীর, মৃতের চেয়ে তাই মৃত্যুর কারণটাতেই বেশি আগ্রহ মানুষের।" এই লাইনটা দিয়ে তিনি বোঝালেন গরীব মানুষ মরলে কারো কিছু যায় আসে না।

ভূমিহীন মনু মিয়া একখণ্ড ভুমি পেল, মৃত্যুর পরে!

ভূমিহীন-আশ্রিতা-চাকরানী মায়ের সন্তান মনার যখন জন্ম হয়, ওবায়েদ হক লিখলেন এভাবে "গর্ভের জেলখানা থেকে মুক্তি।" আমরা বুঝলাম গর্ভের জেলখানায় তার খাদ্যের ব্যবস্থা ছিল সংগ্রামহীন, কিন্তু জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে তাকে সংগ্রাম করতে হবে খাদ্যের জন্য৷ কারণ এই বিশাল পৃথিবীর এক কণা মাটিও তার অধিকারে নেই।

খানিকটা গম্ভীর পরিবেশে কাঙালসংঘ রচনা করেছেন ওবায়েদ হক। কঠিন শব্দের বদলে ভারী শব্দ ব্যবহার করে, ভারী বাক্য গঠনে দারিদ্র্য আর ভাগ্যের বিড়ম্বনার সেতু রচনা করেছেন তিনি।

স্যাটায়ারের মাধ্যমেও হয়তো তিনি পোট্রে করতে পারতেন৷ তাতে খানিকটা কাষ্ঠ হাসি হেসে পাঠক উপলব্ধি করতো ভাগ্য কীভাবে মানুষের সাথে খেলাধুলা করে। বরঞ্চ, গম্ভীর পরিবেশ রচনা করে, ভারী বাক্য দিয়ে পাঠককে আঘাত করে ওবায়েদ হক লিখলেন নিঃস্বার্থ হবার সামর্থ্য কেন তাদের নেই। এই গম্ভীর পরিবেশটাই ভালো লেগেছে আমার।

চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশেরই। অন্ন জোগাতে কেউ ঘুষ খায়, জালিয়াতি করে, কেউ বা পকেট মারে, দেহব্যবসা করে। ভাগ্য বিড়ম্বিত এসব মনুষ্যের অপকর্ম দেখে নিজেদেরকে তাদের থেকে আলাদা ভাবার কিছু নেই। স্বার্থে টান পড়লে মানুষের থেকে হিংস্র জীব এ জগতে আর নেই।

তাদের পরিকল্পনা উহ্য থাকুক। ১০৮ পৃষ্ঠার একটা নভেলার শেষটা সম্পর্কে দু'ছত্রের বেশি লিখলে স্পয়লার হয়ে যাবে।

দু'ছত্রে যদি বলি, শেষটা যেমন ভেবেছিলাম তা হয়নি। তা না হয়ে যেটা হয়েছে সেটাই আসলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পরিহাস করে ভাগ্য কখনো আফসোস করে না। ভাগ্যের আফসোস থাকলে কেউ ভাগ্য বিড়ম্বিত হত না।

"স্বার্থে টান পড়লে মানুষ নিজেকে পশুর কাতারে নামিয়ে আনে" বাক্যটার সমর্থনে বইটার শেষ পৃষ্ঠার একটা প্যারা হুবহু তুলে দিচ্ছি। স্পয়লার হবে না তাতে।

"কয়েকদিন পর শহরে একটা খবর রটে যায়, ময়লার ভাগাড়ে টাকার খনি আছে, কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তখন দেখা যায় শহরের দালানকোঠা ছেড়ে দলে দলে মানুষজন নেমে আসে ময়লার বড়ো স্তুপে। টোকাইরা অবাক হয়ে দেখে, যারা এতদিন তাদের নোংরা শরীর দেখে নাকে কাপড় গুঁজত, স্পর্শের ভয়ে তটস্থ থাকত, তারাও আজ দুই হাতে ময়লা ঘাঁটছে। সব খেয়ে তারা এখন টোকাইদের উচ্ছিষ্টেও ভাগ বসাতে এসেছে। তখন টোকাইদের উপলব্ধি হয়, এই লোকগুলো তাদের চেয়েও বেশি কাঙাল। ময়লার ভাগাড়ে শত শত মানুষ নোংরা কীটের মতো কিলবিল করতে থাকে। ময়লা খুঁচিয়ে সেদিন পলিথিনে মোড়া নয়টি নবজাতকের লাশ আবিষ্কার করে তারা। তারপরও তারা দমে না, টাকার সন্ধানে ময়লা খুঁড়তেই থাকে। সেদিন শহরব্যাপী পচে যাওয়া মানুষের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।"

রেটিং ৫/৫

জাবির রাফি
Profile Image for Khowla Hasan Roza.
34 reviews4 followers
June 27, 2023
বস্তির নোংরা এক ঘরে মোমবাতির আলোতে একত্রিত হয় পাঁচজন হতভাগা। ভাগ্যের ফেরে যারা কাঙাল, যন্ত্রণার দরুন যারা যন্ত্র। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আজকের আলোচনা সভা। নিজেদের আগাম মুক্তির স্বপ্নে তাদের চোখ চকচক করে। কিন্তু ঝুঁকি না নেওয়া ছাড়া তো মুক্তি আসবে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ে তারা তবে মুক্তি পায় কি?

ওবায়েদ হক তার লেখনীতে নিয়ে এসেছেন সমাজের এমন এক শ্রেণীর কথা যারা অহরহ আমাদের চোখের সামনে থাকেন ঠিকই, কিন্তু চেতনা বা ভাবনাতে জায়গা করে নিতে পারে না , এই যা। সমাজে তারা অপ্রয়োজনীয়, অচ্ছুত। এই সমাজের মানুষ তাদের হাতকে ব্যবহার করে, কিন্তু তারা যেন মাথা তুলতে না পারে এজন্য আগেভাগে তাদের মাথা কেটে দেয়, কারণ প্রয়োজন তো শুধু হাত। কাঙালদের মাথা দিয়ে এই সমাজের কি কাজ?

অপ্রাপ্তি, দুঃখ এবং ঘৃনা দিয়ে বই শেষ করে লেখক হয়তো এটাই প্রশ্ন করতে চেয়েছেন যে, এই পৃথিবীতে আসলে কাঙাল কারা? ভাগাড়ে ময়লা ঘাটাঘাটি করে পাঁচ টাকার রুটি খুঁজে পেট ভরানো মানুষগুলো? নাকি উচুঁ উচুঁ অট্টালিকাতে পুরো পৃথিবী সমান ক্ষুধা নিয়ে বসে থাকা মানুষেরা?

বর্তমানে লেখকদের মধ্যে পরিচিত নাম ওবায়েদ হক।তার নিখুঁত লেখনশৈলি, শব্দ বাছাই এবং উপমার প্রয়োগের জন্য তার বইগুলো এত বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। আর তার নিদারুণ উপমার প্রয়োগ নিয়ে কিছু বলা আমার জন্য দুঃসাধ্য। যদিও অনেকের মতে এই বইটি লেখকের সবচেয়ে দূর্বল বই তবে এই বইটিও আমার মন্দ লাগেনি পড়তে। বইটি পড়ে সমাজের আসল কাঙালদের নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হবেন যে কেউ।

উপন্যাসের একটি অংশ, "কয়েকদিন পর শহরে একটা খবর রটে যায়, ময়লার ভাগাড়ে নাকি টাকার খনি আছে, কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। তখন দেখা যায় শহরের দালানকোঠা ছেড়ে, রাস্তাঘাট ফাঁকা করে দিয়ে, পুরো শহরকে নির্জনতায় ডুবিয়ে, দলে দলে মানুষজন নেমে আসে ময়লার বড় স্তূপে। টোকাইরা অবাক হয়ে দেখে, যারা এতদিন তাদের দেখে নাকে কাপড় গুঁজতো, তারাও আজ তাদের সাথে ময়লা ঘাটছে। সব খেয়ে তারা এখন টোকাইদের উচ্ছিষ্টেও ভাগ বসাতে এসেছে, তখন টোকাইদের উপলব্ধি হয়, এই লোকগুলো তাদের চেয়েও বেশি কাঙাল। ময়লার ভাগাড়ে শত শত মানুষ নোংরা কীটের মতো কিলবিল করতে থাকে। ময়লা খুঁচিয়ে সেদিন পলিথিনে মোড়া নয়টি নবজাতকের লাশ আবিষ্কার করে তারা। তারপরেও দমে না, টাকার সন্ধানে ময়লা খুঁড়তেই থাকে। সেদিন শহরব্যাপী পচে যাওয়া মানুষের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।"


হ্যাপি রিডিং 🌻
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
362 reviews34 followers
August 8, 2021
"জলেশ্বরী " " নীল পাহাড় " উপন্যাসের লেখক ওবায়েদ হক। লেখক কে চেনার জন্য উনার বইয়ের নামই যথেষ্ট। এছাড়া আর কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে হয়তো বা নিজেই চান না অন্তরালের এই লেখক ওবায়েদ হক। দীর্ঘ বিরতির পর প্রকাশিত হল লেখক এই নতুন উপন্যাস
" কাঙালসংঘ"।

জমাদ্দার সাহেবের বাড়ীর কাজের লোক মনু মিয়া। তাকে স্থায়ী ভাবে রাখার জন্য বুদ্ধি করেই কানা ফকিরের মেয়ে হাজেরার সাথে কোন উৎসব, আশীর্বাদের অপচয় ছাড়াই বিয়ে দেন এবং নিজের বাড়ীতে শক্ত ভাবেই বেঁধে রাখেন। তবে বেশী কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই শক্ত বাঁধন ছিড়েই মনু মিয়া পাড়ি দেন ওপারে, তবে হাজেরাকে একে বারে একা না করে দিয়ে যান না, মনা বাবরই প্রতিচ্ছবি হয়ে মায়ের সম্বল হয়ে রইলো।

হাজেরা মনাকে তার বাবর মত মে���ুদণ্ডহীন কামলা হয়ে দেখতে চায়নি। তাইতো একদিন সকালে যখন মনিবের চোখ রাঙানো ও কটু কথাতেও মনাকে নির্বিকার ও মাথা নিচু করে থাকতে দেখেছে সেদিনই হাজেরা বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে পরে। স্বামী মানু মিয়া মরা যাবার পর একটু অপ্রকৃতিস্থ হয়ে থাকলেও ছেলের এই মেরুদন্ডহীনতায় পুরোপুরি পাগল হয়ে হারিয়ে গেলো একেবারে একা হয়ে।
জন্ম থেকে মায়ের কাছ ছাড়া না হওয়া মানু মাকে খুজতে গিয়ে চিনে ফেললো পুরো পৃথিবীকে।

"কাঙালসংঘ" এর আগে লেখকের তিনটি উপন্যাস ও দুটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের সবগুলো বই পড়েছি। বর্তমান সময়ে এই তীব্র প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রচারণার যুগে লেখক ওবায়েদ হক থেমে থেমে লিখে চলেছেন আপন খেয়ালে।

আমার মনেহয় লেখকের লেখা বরাবরই একটা শ্রেনীর মানুষকে ঘিরে থাকে। অল্প কয়েক পৃষ্ঠায় লেখক সেই সব মানুষদের স্বপ্ন ও বেদনাকে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেন তাঁর লেখনী দিয়ে। লেখকের গল্প বলার ধরন বা চরিত্র সৃষ্টি এসব নিয়ে ভালো লাগা মন্দ লাগা বলা যেতেই পারে বিভিন্ন পাঠকের দৃষ্টিকোন থেকে, তবে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে লেখকের উপমার ব্যবহার যা এই সময়ের অধিকাংশ লেখকের লেখাতেই দেখা যায় না।
লেখকের অন্য বইয়ের সাথে এই বইয়ের তুলনা করতে চাই না তবে নিয়মিত লেখা চাই।
Profile Image for Md. Al Fidah.
Author 126 books549 followers
August 15, 2021
লেখকের সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল লেখা। প্রায় অনুপস্থিত তার সচরাচর লেখনশৈলী।

বানান ভুল তো আছেই, সেই সঙ্গে চ্যাপ্টার ও সাব-চ্যাপ্টারের মাঝে পার্থক্যকারী কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই মেকাপে। লেখার সঙ্গে উপস্থাপনাটাও জরুরি—নিদেনপক্ষে পরবর্তী পর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলে।
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
March 18, 2025
প্রচুর নাম শোনা সত্ত্বেও ওবায়েদ হকের বই পড়ি নাই। এবার এই বইটার নামটা আমাকে টানল দেখে আমিও বইটা টেনে নিলাম।
নিষ্ঠুর এই পৃথিবীকে বিভিন্ন নিরিখে বর্ণনা করতে করতে লেখকেরা মনে হয় আর কোনকিছু বাকি রাখেন নাই। তা সত্ত্বেও ভাষার কারুকাজের বৈচিত্রের শেষ বলে কিছু নেই। সেই প্রতিভাটা সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগিয়েছেন ওবায়েদ হক।
গল্পটা শুরু হয় শোষণের কায়দা দিয়ে। ভূমিহীন মনুমিয়াকে কাজের জন্য বেঁধে রাখার কায়দা দিয়ে। কিন্তু মনুর ছেলে মনার জন্মের আগে মনুর মৃত্যু মনার জীবনের শুরুটাকে করে তোলে বিষাক্ত। মায়ের দুর্ভাগ্যকে চরমভাবে অভিশাপের ফলে মনুর মা হয় নিরুদ্দেশ। মায়ের ভালোবাসা মনুকে টেনে আনে রাস্তায়, মায়ের খোঁজে মনু হাজির হয় নির্মম শহরে। পরিচয় হয় বাটপার জলিল, দেহপসারিনী বকুল আর রহস্যময় গুরুর সাথে। সবাই নিজেদের দুর্ভাগ্যকে বুকে নিয়ে আশা বাঁধে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের। পরিকল্পনা করে এক ভয়াবহ অপরাধের। এই অপরাধ অনেকের জন্য নগন্য ব্যাপার হলেও এই চারজনের জন্য তা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু এরা কি পারবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে নাকি নির্মমতাই তাদের জীবনের চির সংগী হবে?
সত্য বলতে ওবায়েদ হক লিখতে জানেন। ভাষার মনমুগ্ধকর ব্যবহার বইটাকে করেছে অত্যন্ত সুখপাঠ্য। অনেকদিন পর এমন লেখা পড়লাম। তবে গল্পের গাথুনি ভাষার চমৎকারিত্বের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি। মামুলী প্লট দিয়ে বইটা লিখেছেন। চরিত্রগুলা অত্যন্ত যত্ন করে তৈরি করা। কিন্তু কেন যেন মনে হল বইটা লেখাই হয়েছে কয়েকটা চরিত্র পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। এসব দিকে লেখকের অবশ্যই নজর দেয়া উচিত।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews238 followers
April 28, 2022
সেই পুরাতন ওবায়েদ হককে খুঁজে পেলাম না। কাহিনি যদিও ভিন্ন ধারার। বিশেষ এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একসাথে হয়েছে বেশ কয়েকজন হতভাগ্য মানুষ। সেই 'হতভাগ্য'রা কি সফল হতে পারে? উপন্যাসে উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন দিক। কিন্তু তাও লেখক যখন ওবায়েদ হক, প্রত্যাশার মাত্রাটা একটু বেশি-ই থাকে বৈ কী! আশা পুরণ হইলো না।
2 reviews2 followers
April 22, 2022
কাঙাল কারা? যারা নিঃস্ব। সমাজ তাদের পাশে না থাকলেও অভাব,কলহ,দুঃখ তাদের সঙ্গ কখনোই ছাড়েনা। ময়লা আবর্জনা থেকে খাবার খুজে পেলে সেটাই তারা আহার হিসেবে গ্রহন করে। এমনি কিছু কাঙালদের নিয়েই লেখক নির্মান করেছেন কাঙালসংঘ।
লেখক ওবায়েদ হক তার বিষন্ন মাখা লেখনশৈলী দিয়েই সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছেন বলে আমি মনে করি। অভাব, বিষন্নতা, দারিদ্রতা যেন তার কাছে একটা শিল্প, যে শিল্পে তিনি নিঃসন্দেহে পটু।

গল্পের শুরু হয় শহরের কোনায় কোনো এক নোংরা বস্তিতে কয়েকজন কাঙালের সভার ঘোষণার মাধ্যমে। কয়েকজন নিঃস্ব মানুষ যারা মনে করে তাদের এই দুর্দশার জন্য সমাজের এলিট শ্রেণীর মানুষরাই দায়ি। সংকল্প করে তারা তাদের এই অভাবের কারাগার থেকে বের হবেই। এই ভেবেই কয়েকজন আনাড়ি লোক নেমে পরে এক অনিশ্চিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে।

সুন্দর সাবলীল ভাষায় লেখা বইটা এক বসায় শেষ করার মতোই। অহেতুক কথা বাড়িয়ে লেখক বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়াননি। অল্পকিছু চরিত্র আর অনেক অনেক অনুভূতিকে এক সুতায় বেধেছেন তিনি। উপরন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই তিনি কতগুলো উপমা ব্যবহার করেছেন যা তার লেখার অলংকারস্বরূপ।


এখানে উপলব্ধি করার মতো অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
• বেশিরভাগ সময় ভাগ্য, দরিদ্র মানুষের প্রতি কোনো করুনা করেনা।
• ক্ষণস্থায়ী সুখের নেশায় কয়েকটা হতভাগা প্রাণের স্থান হয় ডাস্টবিন/ময়লার ভাগারে।
• সমাজের ধনী মানুষগুলো যে কাঙাল শ্রেণীর মানুষ গুলোর দুর্দশার জন্য দায়ী তা খুব ভুল কিছুনা।
• নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই, আর প্রতিশোধের তাড়নায় অন্যায়ের পথে যাত্রা দুটির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত।
• ধনী শ্রেনী আর কাঙাল শ্রেণীর মধ্যে কোনো তফাত নেই। এদের পথ ভিন্ন হলেও এরা একই জিনিসের পিছে ছুটে বেড়ায়... "টাকা"!!।
May 2, 2022
গল্প বলার কী দারুণ ভঙ্গি... সাথে আছে পাঁচ কাঙালের চমৎকার চরিত্রায়ন। জীবনকে ভিন্ন ভিন্ন কিছু দিক থেকে দেখার চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছেন লেখক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বইয়ের প্রতিটি পাতায় যথাযোগ্য অবস্থানে স্থান করে নেওয়া সূক্ষ্ম জীবনবোধ।

বইয়ের ব্যাক ফ্লাপ থেকে :
[ছবির যায়গা শূন্য]
বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। লেখক যুবক নাকি বৃদ্ধ, শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ধনী নাকি দরিদ্র, এগুলি অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্ঠাগুলিকে। কালো হরফের লেখাগুলিকে লেখক নিজের সন্তান মনে করেন, সন্তানের পিতা হিসেবেই তিনি পরিচিত হতে চান।
Profile Image for Ifsad Shadhin.
115 reviews24 followers
April 19, 2021
ঠিক জমে ওঠেনি। বারবার মনে হয়েছে, ওবায়েদ হককে পাচ্ছিনা। আমারই শুধু এমন লাগলো কিনা কে জানে?

বিস্তারিত পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বইটা মনে দাগ কাটতে ভয়ানকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। নট ওর্থ দা এফোর্ট।
Profile Image for Arifur Rahman Nayeem.
205 reviews107 followers
November 14, 2022
‘নীল পাহাড়’ এবং ‘জলেশ্বরী’র তুলনায় কম, তবে ‘তেইল্যা চোরা’র চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews10 followers
November 20, 2021
এটি মনেহয় লেখকের সবচে বেশি সমালোচিত বই। বইয়ের প্লট অসাধারণ, কিন্তু অনন্য না। পূর্বের বই থেকে লেখকের প্রতি এতো বিশাল(ডায়নাসোরের মত বিশাল) এক্সপেক্টেশন এসেছে যে এই বইতে এসে সামান্য মনক্ষুন্ন হয়ে গিয়ে��ে।
স্বর্বহারা মানুষের প্লটে মূল গল্পের গাথনি তৈরী হলেও আমার মনে হয়েছে এতো শক্তিশালী লেখকের এই বইটি বেশ নড়বড়ে হয়ে গেলো। প্রথমত আপনাকে বেশ অনেকক্ষন ধরে ক্যারেক্টর বিল্ড আপ পড়তে হবে। এখানেও মনে হয়েছে গল্পের কাহিনীর চেয়ে চরিত্রগুলোকেই বেশি জোর দিয়ে বড় করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, শেষের দিকে গুরুজির ও নিজাম হায়দারের মূল উদ্দেশ্য যখন সামনে আসে তখন মনে হয়েছিলো 'আরেহ প্লট টুইস্ট ���াকি!?' কিন্তু সেই আশায় ধাপ করে এন্ডিং টেনে আরেকদফা হতাশ করা হয়েছে।
এইটুকু যদি সামান্য সমালোচনা ধরা হয়,তবে এইটুকু সহ্য করলে বইটি বেশ ভালো। শেষটা পড়ে হাত-পা ছড়িয়ে ভেবেছি, এতো করুণ কেনো দুনিয়া?
পেটের ক্ষুধা,টিকে থাকার সংগ্রাম যানো সবাইকে ভাগ্য পরিবর্তনের এক কাহিনীর মূল চরিত্র বানিয়ে দিয়েছে।
হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
June 23, 2021
গল্পের ফ্লো বরাবরের মতোই চমৎকার ছিল। তবে নীল পাহাড় অবশ্যই এর তুলনায় অনেক বেশি ভালো।
Profile Image for Pranta Biswas.
122 reviews4 followers
December 26, 2022
কি জিনিস যে না পড়ে সেল্ফে রেখে দিয়েছিলাম ভেবে আফসোস হচ্ছে
Profile Image for Tozammel Shishir.
66 reviews3 followers
November 14, 2021
কিছু বই আছে পড়ার পর চুপ হয়ে যেতে হয়। নিজেকে প্রশ্ন করতে হয় ঠিক কি পড়লাম?বইটা ঠিক সেরকম। লেখকের পর্যবেক্ষণ শক্তি সত্যি অসামান্য।বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জীবন,জীবিকা,ভাগ্যকে এমন ভাবে তুলে এনেছেন যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এমন সব অবস্থায় নিয়ে পাঠককে দাড় করিয়েছেন যেখানে পাঠক হিসেবে ন্যায় অন্যায়ের বিভেদরেখা ভেদ করতেই সংশয়ে পড়তে বাধ্য। শুরু থেকে শেষ প্রতিটি অংশেই অব্যক্ত প্রশ্ন রেখে গেছেন লেখক যা পাঠককে করবে প্রশ্নবিদ্ধ।সত্যি বইটি অনেক বেশি প্রশংসার দাবীদার
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
May 7, 2021
ওবায়েদ হক বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যে একজন প্রচারবিমুখ বিস্ময়ের নাম। জীবনকে দেখার, উপলব্ধি করার দৃষ্টি যেমন তার আছে তেমনি সেই দেখে ফেলা দৃশ্যগুলোকে মলাটবন্দি করার অদ্ভূত শক্তিশালী ক্ষমতাও তার আছে। 'নীল পাহাড়', 'জলেশ্বরী'তে তার সেই প্রতিভার সবচাইতে ভালো প্রতিফলন ঘটেছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ এর অমর একুশে বইমেলার বই 'কাঙালসংঘ'। ভিন্নধারার নামের এই বইটিও শুরু হয় খানিকটা ভিন্নভাবে৷ আপাত প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর কিন্তু আবেগহীন যন্ত্রের শহরের পাশের কোন একটা বস্তিতে পাঁচজন নিঃস্ব মানুষের সভা দিয়ে শুরু হয় গল্পের ট্রেন। আস্তে আস্তে সে ট্রেনের প্রতিটি বগির সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন লেখক। লেখকের সুনিপুণ আঁচড়ে পাঠকের চোখের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে বইয়ের একেকটি কুশীলব। পাঠক আবিস্কার করে কতগুলো হতভাগা মুখের পেছনের কাহিনী, যাদের হতভাগ্যের ইতিহাস কারোর চেয়ে কারোটা কম নয়৷ এই হতভাগ্য মানুষগুলোই একত্রিত হয়ে তাদের ভাগ্যের ট্রেনকে নিয়ে যেতে চায় এমন এক স্টেশনে, যেখানে গেলে দুমুঠো ভাত জুটবে, থাকার জন্য মাথার ওপর একটা আশ্রয় জুটবে এবং এই সকল চাহিদা পূরণ হলে নিজেদের জীবনে বিলাসবহুল ভালোবাসার চিন্তা করার সময় জুটবে। চকচকে স্বপ্নালু চোখে এসব ভাবতে ভাবতে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেন জার্নির যে পথ তারা বেছে নেয় তাতে কি ট্রেন আদৌ তাদের লক্ষ্যের স্টেশনে পৌঁছে? তারা কি খুঁজে পায় সেই আকাঙ্ক্ষিত স্টেশন?

জানতে হলে বসে পড়ুন ১০৯ পৃষ্টার নভেলা 'কাঙালসংঘ' নিয়ে। আমি ওবায়েদ হকের লেখার বেশ বড় ভক্ত হলেও একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এই বইটি লেখকের অন্যান্য বইগুলোর তুলনায় খানিকটা, একদম এক চিমটি হলেও নিষ্প্রভ। নাহ, প্লট বা গল্পের কাহিনীবিন্যাসের বুননে নয়। কারণ ওবায়েদ হকের লেখায় প্লটের চাইতে তার লিখনশৈলীই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার লেখা প্রতিটি লাইনে জীবনবোধ যেমন ঝরে পড়ে, পাঠককে অন্য এক পৃথিবী দেখায়, ভাবতে বাধ্য করে; এ বইতে সেটা কিছুটা কম ছিলো বলে মনে হয়েছে। এটা হতে পারে লেখকের আগের বই গুলো পড়ে তার প্রতি সৃষ্ট এক্সপেক্টেশনের কারণে৷ এটা বললাম কারণ আমি চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখলাম, আমি যদি লেখকের নাম না জেনে বইটা পড়তাম তাহলে নির্দ্বিধায় বইটাকে আমি খুবই ভালো বলতাম (সেটা আদৌ সম্ভব হতো না আসলে, কারণ ওবায়েদ হক তার লেখার মাঝে নিজের ছাপ স্পষ্টভাবে রেখে যান)। কিংবা এটা যদি আমার পড়া ওবায়েদ হকের প্রথম বই হতো, তাহলেও একই কথা খাটতো। কিন্তু দুটোর একটাও না হওয়াতেই খানিকটা কম পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও একটা কথা না বললেই নয়৷ সেটা হলো, উপন্যাসিকার চরিত্রায়ণ৷ ১০৯ পৃষ্ঠার মধ্যে ৫+ চরিত্রের যে ব্যাকগ্রাউন্ড তিনি তৈরী করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। প্রতিটি চরিত্র যেন লেখকের বর্ণনায় আমার চোখে জীবিত কোন সত্ত্বা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শুধু এটুকু বিবেচনায় রাখলেও বইটা আমার কাছে স্বার্থক বলে গণ্য হবে৷ কিন্তু ঐ যে লেখকের নাম, ওবায়েদ হক। চাহিদাটা যে তার কাছে একটু বেশিই।

সবমিলিয়ে আপনি ওবায়েদ হকের পুরনো পাঠক হলেও আপনার বইটা পড়া উচিত, নতুন হলেও পড়া উচিত।
Profile Image for Ahmed Fahmida.
82 reviews2 followers
April 3, 2021
এই থিমটা নিঃসন্দেহে পুরোনো, যার কারণে পড়তে ক্লিশে মনে হতেই পারে।
এবং এই চিরায়ত চিত্রে বর্ণনার ঘনঘটাটা বেশ একটু এক ঘেঁয়ে লেগেছে বৈকি।
কিন্তু লেখার মাঝে চিরাচরিত ওবায়েদ হককে খুঁজে পেয়েছি এটাই কথা।
অন্তত বইএত শেষটুকুতে তার ছাপ পুরোপুরিভাবে রেখেছেন উনি, আপাতত এতেই আমি সন্তুষ্ট।

আমার কাম্য উনি লেখে যাক, ভালোমন্দ যেমনটা লিখুন।
এটা অবশ্যই আশা করা উচিৎ হবেনা একজন লেখক সবসময়ই সেরা লেখা উপহার দেবেন। মাঝেমধ্যেই গ্রাফের খাতায় এক্সপোনেশিয়াল ফ্লো আসতেই পারে। এটাতে হতাশ হবার কারণ আমি দেখিনা।
Profile Image for Sultan Ahmed.
31 reviews28 followers
June 4, 2021
ওবায়েদ হক এমন একজন লেখক যারা লেখা কোনো বই ই এখনও পড়তে খারাপ লাগেনি। উনার লেখার সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা জানেন তার লেখা কেমন অদ্ভুত ঘোরলাগা বিষণ্ণতায় ভরপুর থাকে। এই বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ওবায়েদ হকের লেখা অন্যান্য বইয়ের সাথে তুলনা করলে কাঙালসংঘ সবচেয়ে দূর্বল বই।

রেটিংঃ ৩.৫★
Profile Image for Pritom Mojumder.
36 reviews25 followers
August 11, 2021
Brilliant Plot!

গল্পের শুরু পরিচয় পর্ব দিয়ে। বলতে গেলে বইয়ের অর্ধেকের বেশিই সেই পরিচয় পর্ব চলেছে। সেই পরিচয় পর্ব শুধু নামধাম প্রকাশেই সীমাবন্ধ নয়, বরং সেখানে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে সহজেই পাঠকেরা উপলব্ধি করতে পারে মূল চরি���্রগুলো আসলেই এমন কেন এবং কী তাদেরকে এই ঝকঝকে শহরের আধুনিকতার পাশে আবর্জনার মত পড়ে থাকা বস্তিতে এনে ফেলেছে।

মূল প্লট অসাধারণ হলেও গল্পের বিস্তারে ঘাটতি রয়েছে। তবুও যথেষ্ট উপভোগ্য। এখানে অনেক ঘটনাই হয়তো আমরা প্রতিনিয়ত শুনতে পাই বা চোখে দেখি। কিন্তু পরে আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে কাহিনীগুলো হারিয়ে যায়। লেখক হয়তো চেয়েছেন ছোট ছোট কাহিনীগুলো যাতে হারিয়ে না যাক। লেখকের এই মনোভাব বুঝতে পারি একটি টোকাইয়ের রেলের চাকায় খন্ডবিখন্ড হয়ে যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ্যের মধ্যে দিয়ে।

"যে মেয়েটি মারা গেলো, একটু পরে সে লাশের ব্যাগে করে মর্গে যাবে। সে হয়ে যাবে গল্প, চায়ের সাথে বিস্কুটের গল্প। তারপর গল্পটা পানসে হয়ে যাবে, পৃথিবীর আকাশে বাতাসে কিংবা মানুষের মনে অথবা কোনো দীর্ঘশ্বাসে টোকাই মেয়েটার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।"


এই উপন্যাসটা আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। এখানে মূল ঘটনার পুরোটাই ঘটছে আসলে একটা আধুনিক শহরে। কিন্তু লেখক খুবই সতর্কভাবে সে আধুনিকতার চাকচিক্য মুছে দিয়েছে দৃশ্যপট থেকে। তারপর যা পড়ে রয়েছে তা সত্যের কাছাকাছি কিছু। অবশ্যই কথাসাহিত্যিকদের পরিপূর্ণ সত্য বলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরং বানোয়াট গল্পই আমাদের মূল সত্যকে উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়।
Profile Image for Rasel Khan.
170 reviews8 followers
August 11, 2023
কাঙাল! যাদের একেবারেই কিছু নেই। টাকা-পয়সা, খাবার কিংবা থাকার মত নিজের একটু যায়গা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কিংবা পরিবারের কারো পাপের শাস্তিই যেনো এদের বয়ে বেড়াতে হয় জীবনভর। আমাদের আশেপাশে রয়েছে এমন অনেক কাঙাল। যাদের নিজস্ব একটা জীবন ছিলো, ছিলো নিজস্ব কিছু মানুষ, নিজস্ব কিছু স্বপ্ন। কিন্তু কি কারণে তারা এসব কিছু থেকে বঞ্চিত আমরা তা জানি না বা জানতে চাইও না।

এমন ৪ কাঙালের জীবন নিয়েই এই গল্প। যে গল্পের কাঙালেরা এক হয়েছে জীবনে একটি শেষ রিস্ক নিতে৷ যার মাধ্যমে বলদে যাবে তাদের জীবন৷ থাকবে না তাদের কোনো অভাব অনোটন৷ জীবন তাদের আসলেই বদলে গিয়েছিলো৷ কিন্তু কীভাবে? কী হয়েছিলো তাদের সেই পরিকল্পনার? জানতে হলে পড়তে হবে৷
Profile Image for সুমাইয়া সুমি.
246 reviews2 followers
July 28, 2024
গল্পটা পাঁচ কাঙালের যারা তাদের এই দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজে বেড়ায়। বেঁচে থাকাটাই যেখানে স্বার্থকতা সেখানে সুখী জীবন মানে তো বিলাসিতা।
একজন নিরপরাধ জেলখাটা আসামী, অজ্ঞান পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এক নেশাখোর, চোখে ছানি পরা ভিক্ষুক, একজন কমবয়সী পতিতা এবং ভূমিহীন এক তরুণের প্রতি যখন আপনার খানিকটা মায়া জেগে উঠবে আর মনে হবে আহারে বেচারা, ঠিক তখন আবিষ্কার করবেন এই জগতের সবাই কোন না কোনভাবে কাঙাল।
কারো অনেক আছে তাও তার অভাব শেষ হয় না আর কেউ কেউ অভাবে থেকেও সন্তুষ্ট কিন্তু তার মাথায় স্নেহের হাত পড়ে না। এককথায় কেউ ক্ষমতার কাঙাল আর কেউ মমতার।
কাঙাল সংঘে আপনাকে স্বাগতম।

২০.০৭.২৪
Displaying 1 - 30 of 90 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.