গল্পটা মোহাচ্ছন্ন এক আশ্চর্য মায়ানগরীর। যে নগরের বাসিন্দারা অযাচিতই জড়িয়ে আছে একে অন্যের জীবনের জটাজালে। রুপকথার এই গল্পটা নর-নারীর কিছু অনাহুত সম্পর্কের, ক্লেদাক্ত কলুষতার অথবা নিতান্তই মানবিকতার। আদি এবং অন্তে গল্পটা আদতে জাদুর এই শহরের।
সিদ্দিক আহমেদের লেখার ধরন আমার ভালো লাগে। এর আগে হিস্ট্রিক্যাল টাইপ লিখলেও এবার মার্ডার মিস্ট্রি লিখেছেন লেখক। বেশ ভালোই হয়েছে এবারের গল্পটাও। সামাজিক ঘরনার মার্ডার মিস্ট্রি বলা চলে। অতটা ভারিক্কি কিছু না। সহজে যেকোনো পাঠক পড়তে পারবে। সমাজের নিচু স্তরের কিছু মানুষের ক্রাইসিস, অপরাধ, আর এসবের সাথে পুলিশের তদন্ত। এই নিয়েই কাহিনী আরকি। তবে স্বল্প পরিসরে কম চরিত্র এনে ভালোই চরিত্রগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড সমেত ডেভেলপ করেছেন লেখক। এদিকটা ভালো লেগেছে। শেষে হালকা টুইস্ট দিয়েছেন, ন্যাচারাল জাস্টিসের মাধ্যমে এন্ডিং টেনেছেন সবমিলিয়ে ভালোই লেগেছে। নিম্নবিত্ত অটোচালকের পরিবারের ওপর একধরণের সহমর্মিতা ক্রিয়েট করতে পেরেছেন লেখক, এই ব্যাপারটাই ছাপিয়ে গিয়েছে সবকিছুকে। পাঠকদের ভালো লাগবে বইটা আশা করছি।
একদম নির্মেদ, ঝরঝরে উপন্যাস।মাত্র ১৯২ পাতার উপন্যাসে লেখক সিদ্দিক আহমেদ যেভাবে অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে একটা নিটোল কাহিনি সাজিয়েছেন,তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।থ্রিলারটি শুধুমাত্র খুনের রহস্যতে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের চরিত্রের অন্ধকার দিকগুলোতে আলো ফেলেছে।লোভ,অপরাধ,ভালোবাসা,নিয়তি,অবিশ্বাস, অপূর্ণতা ঘিরে রেখেছে এই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের। দুটো বিষয় সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে- ১.অল্প পরিসরের মধ্যেও লেখক মনে রাখার মতো কিছু রক্ত-মাংসের জীবন্ত চরিত্র সৃষ্টি করতে পেরেছেন। ২.উপন্যাসে দারুণ সব টুইস্ট উপহার দিয়েছেন লেখক এবং টুইস্ট দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। চরিত্রগুলোর ভাগ্যে অবশ্য কী ঘটতে পারে তা আন্দাজ করা যাচ্ছিলো। এই পরিণতি কিছুটা জোরপূর্বক দেওয়া হয়েছে যা উপন্যাসের একমাত্র নেতিবাচক দিক। এটা বাদ দিলে বলা যায়,"পিপীলিকার ডানা"-র কাহিনি বেশ উপভোগ্য ও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ।বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
কাহিনী শুরু হতে না হতেই একটা লাশ পাওয়া যায় আর প্রথম পাতায়ই শুরু হয় সেই বহুপরিচিত খুনের তদন্ত। থানা, পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, জবানবন্দী, জেরা, তল্লাশি ইত্যাদির চক্কর শুরু হওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। তবে একটু পরেই মার্ডার মিস্ট্রির আড়ালে ভালোবাসা ও নিয়তির এক গল্প ফুটে উঠে হতাশা ভুলিয়ে দিলো পুরোপুরি৷
উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে মূলত তিনটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। হত্যারহস্য তদন্তকারী ইন্সপেক্টর হাফিজ, প্রত্যক্ষদর্শী কানা ফকির এবং সন্দেহভাজন সিএনজি ড্রাইভার হাসেম। প্রত্যেকটা চরিত্র খুব যত্ন নিয়ে গড়া, তাদের জীবনের গল্পগুলোর, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নগুলোর সূক্ষ্ম বুনন পাঠককে নাড়া দিতে বাধ্য। ঘুনে খাওয়া অথচ আশ্চর্য মায়াময় এই নগরীর গলিঘুপচিতে ঘুরে বেড়ানো সাধারণ কিছু মানুষকেই যেন লেখক অসাধারণ রূপ দান করেছেন। মাত্র ১৯২ পৃষ্ঠায় এতো সুন্দর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। ঢাকা শহরবাসীর খুব চেনা উপাদানগুলো যেমন রাস্তার ভিক্ষুক, মানুষে গিজগিজ করা বস্তি, কোনো বিরোধের কারনে পড়ে থাকা নির্মানাধীন একটা দালান, রাস্তায় জ্যামে পড়ার দুশ্চিন্তা; এসবের ব্যবহারের কারণে উপন্যাসের পরিবেশটাও বেশ চেনা চেনা লাগছিলো।
মেদ বিহীন লেখনী হয়তো একেই বলে। প্রয়োজনের বেশি একটা উপাদানও ছিলো না পুরো উপন্যাসে। একটানে পড়ে ফেলার উপযোগী বই, লেখনী আর টুইস্ট দুইয়ে মিলে আকর্ষণ ধরে রাখতে বাধ্য। পুরোটা বই জুড়ে থ্রিলার আর সামাজিক দুইধারার কাহিনীর মেলবন্ধনও বেশ চমৎকার ছিলো। ধনুর্ধর আর পিপীলিকার ডানা পড়ার পর প্রিয় লেখকদের তালিকায় সিদ্দিক আহমেদের নাম পাকাপোক্ত হয়ে গেলো। আর বইয়ের প্রচ্ছদের কথা না বললেই নয়, স্বপ্নালু এক তৈলচিত্রের মতো, বারবার তাকিয়ে থাকতে মন চায়।
যদি খুব আয়েশ করে গল্প পড়তে চান তাইলে সিদ্দিক আহমেদের লেখা নিয়ে বসে পড়ুন। কিঞ্চিৎ হতাশ হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তার সাথে প্রথম পরিচয় 'ধনুর্ধর' বইটির মাধ্যমে। অসম্ভব পছন্দ হয়েছিল সেটি। এখনও কয়েকদিন পরপর বইটির উপর হাত বুলাই।
এই গল্পটাও ছিমছাম অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প। লেখনীতে যারপরনাই মুগ্ধ। সম্পূর্ণ গল্পটা ঢেলে সাজানো ও পরিপাটি। শুধু হাফিজ সাহেবের টুইস্টটা ঠিক হজম করতে কষ্ট হয়ছে।
❝Towns are like people. Old ones often have character, the new ones are interchangeable.❞ ― Wallace Stegner, Angle of Repose - ❝পিপীলিকার ডানা❞ - হাফিজ, ঢাকার এক থানার ইন্সপেক্টর। একদিন তার থানার আন্ডারে মোটামুটি হাই প্রোফাইল এক খুনের কেস আসে। সেই কেসের তদন্তে দেখা যায় এক সাবেক বামপন্থী নেতাকে গুলি এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। - কালাম ওরফে কানাফকির, এক মার্কেটের সিঁড়ির নিচে ঘুমায়। সেই মার্কেটের সামনেই সাবেক বামপন্থী নেতার লাশ পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ধরে আনে। তাকে জিজ্ঞাসার সময়ে পুলিশ জানতে পারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। - হাশেম, একজন সিএনজি ড্রাইভার। নানা ধরনের সাংসারিক ঝামেলায় থাকা হাশেম বর্তমানে তার ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে। ঘটনাক্রমে সেও জড়িয়ে পড়ে সাবেক বামপন্থী নেতার খুনের কেসে। - এখন সাবেক বামপন্থী নেতার খুন আসলে কে বা কারা করেছে? এই কেসে কানাফকির কালাম আর সিএনজি ড্রাইভার হাশেম কীভাবে জড়িয়ে পড়ে? ইন্সপেক্টির হাফিজ কী শেষ পর্যন্ত এই কেসের রহস্যভেদ করতে পারে? তা জানার জন্য পড়তে হবে লেখক সিদ্দিক আহমেদের মার্ডার মিস্ট্রি এবং সামাজিক থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস ❝পিপীলিকার ডানা❞। - ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইটাকে কিছুটা সামাজিক থ্রিলার ঘরানার মার্ডার মিস্ট্রি বলা যায়। বইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বেশ চমৎকারভাবে শুরুর পরে মূল প্লটটি বেশ ধীরে ধীরে পাঠকদের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে। এই বইতে সমাজের নানা স্তরের মানুষদের যেভাবে দেখানো হয়েছে তা বেশ বাস্তবিক লাগলো, লেখনশৈলীও সুন্দরভাবে খাপ খেয়েছে প্লটের সাথে। ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইয়ের অন্যতম শক্তিশালী একটি দিক হচ্ছে এর সংলাপ, খুবই ভালো লেগেছে এই বইয়ের কিছু সংলাপ। - ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইটি ইন্সপেক্টর হাফিজ, কানাফকির কালাম আর সিএনজি ড্রাইভার হাশেম- এই তিনজন ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। এই বইতে প্রতিটি প্রধান চরিত্রের গল্পের অংশই প্রায় সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে যা বইয়ের কাহিনিকে আলাদাভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। বইয়ের প্রধান চরিত্রগুলোর গল্পের অংশের ভেতরে হাশেমের অংশটা সবথেকে হৃদয়গ্রাহী লাগলো, সে তুলনায় ইন্সপেক্টর হাফিজের গল্পের শেষাংশ কিছুটা জোরপূর্বক গল্পে আনা হয়েছে বলে মনে হলো। ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইটির কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে Changing Lanes নামের একটি ইংলিশ ছবির ঘটনাপ্রবাহ মনে পড়ে গেলো। অবশ্য গল্পের কাহিনি অনুসারে ❝পিপীলিকার ডানা❞ নামটা বেশ মানানসই লাগলো। - ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইয়ের দামের তুলনায় প্রোডাকশন বেশ ভালো হয়েছে। বিশেষ করে প্রচ্ছদ এবং নামলিপি দুটোই বইয়ের কাহিনিকে প্রতিফলিত করতে পেরেছে। বইতে কিছু বানান ভুল এবং টাইপো অবশ্য ছিলো, সেগুলো আসলে খুব বড় কোন সমস্যা নয়। - এক কথায়, সমাজের নানা স্তরের নানা ধরনের মানুষের জীবন কীভাবে একটি হত্যাকান্ড���র ফলে বদলে যায় তার উপর ভিত্তি করে বেশ ভালো মানের একটি উপন্যাস হচ্ছে ❝পিপীলিকার ডানা❞ । তাই যারা এ ধরনের বাস্তবতার ছোঁয়া দেয়া থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন তারা ❝পিপীলিকার ডানা❞ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। লেখকের পরবর্তী বইগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো।
"গল্পটা মোহাচ্ছন্ন এক আশ্চর্য মায়ানগরীর। যে নগরের বাসিন্দারা অযাচিতভাবেই জড়িয়ে আছে একে অন্যের জীবনের জটাজালে। রূপকথার এই গল্পটি নর-নারীর কিছু অনাহুত সম্পর্কের, ক্লেদাক্ত কলুষতার অথবা নিতান্তই মানবিকতার। আদি এবং অন্তে গল্পটি আদতে জাদুর এই শহরের।"
প্লট বা কাহিনীর আলোকপাত নেই, তাও আকর্ষক একটা ফ্ল্যাপ। একটা খুনের তদন্তে গল্পের শুরু, ইন্সপেক্টর হাফিজ ক্রাইম সিনে এসেছেন, একটা কাঠের মার্কেটের সামনে। কোন মায়ানগরী তার উল্লেখ না থাকলেও, পাঠকের মাথায় চট করে চলে আসবে জানাশোনা ঢাকা শহর, মার্কেটটা হয়তো বঙ্গবাজার।
মার্ডার মিস্ট্রি হিসেবে শুরু হওয়া গল্পটা এরপর লিটারেরি ফিকশনের রূপ নেয়, মানে ওই 'সামাজিক গল্প'। এই গল্পের দরকারি চরিত্ররা হয় নিম্নবিত্ত, অথবা অতি নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্ত আছেন হাফিজ একাই। একজন ভিক্ষুকের টিকে থাকা এবং উচ্চাশাও এই গল্পের অনুষঙ্গ , সিএনজি চালক হাশেমের পরিবারও নিজেদের গল্প বলতে এসে দাঁড়িয়েছে। গৎবাঁধা সামাজিক গল্প কিন্তু না সেটা মোটেই। আগাগোড়া এবার চলছে থ্রিলারের দৌড়। ভিক্ষুক, সিএনজিওয়ালা, পুলিশ, খুন এবং তদন্তকাজ, আর সবটুকুর মোটিভ নাকি লুকিয়ে আছে তাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনের মাঝেই, অবাক করে না ব্যাপারটা?
"পিপীলিকার ডানা" মানুষের প্রত্যাশার গল্প। পিঁপড়ের যেমন ওড়ার কথা নয় তবু মরার আগে উড়তে চায়, তেমন সাধারণ জীবনমানের চেয়ে একটু বেশি চেয়ে বসার গল্প, এই উপন্যাস। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জীবনের অনুপ্রেরণা আছে, হাফিজের স্ত্রী, হাশেমের অসুস্থ সন্তান, কালামের গোপন প্রেমিকা — এই যে ছন্দের বাইরে সামর্থ্যের বাইরে উড়তে চাওয়ার বেপরোয়া চিন্তা, এর পেছনে যার যার অনুপ্রেরণা আছে আপন আপন জীবনে। এর সাথে খুন কিভাবে জড়িত? আর কার সাথে সবচে বেশি জড়িত? রহস্যের সমাধান আছে তার মাঝেই।
উপন্যাসটার চমৎকার একটা দিক হলো, শেষদিকে কয়েক জায়গায় 'কালশী', 'মিরপুর' উল্লেখ করা ছাড়া কোথাও ঢাকার কথা না বলা হলেও যেমন মনে হবে, যে, প্রতিটা রাস্তা আপনার চেনা, তেমনই ঘটনাপ্রবাহের আদ্যোপান্ত আপনাকে ভাবাবে, 'এসব তো প্রতিদিনকার ঘটনা। এরকমটাই তো ঘটে।' ঠিক যেভাবে গন্তব্যে যেতে রাজি না হলে সিএনজিওয়ালা 'নবাবের বাচ্চা' গালি শোনে। সংলাপ নির্মাণে লেখক নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন এত সঠিকভাবে তুলে এনেছেন তা পড়ে অবাক লাগে, "হ, ঢাকা শহরে তো খালি আপনেরাই নবাব, আর আমরা খালি চাকর-বাকর।"
হাশেমের মুখে যখন পড়ছিলাম "গরীব মানুষ যহন বিপদে পড়ে, তহন তার হুশ থাকে না। আমারও এহন নাই, স্যার। আমারও এহন মাতা-মুতার ঠিক নেই। তাই স্যার আপনারে আপন ভাইবে বলতিছি, কোনো রিস্ক নিয়েন না।" তখন সত্যি মনে হচ্ছিল চঞ্চল চৌধুরী সংলাপ বলছেন। ওয়েব সিরিজের সুদিনে 'পিপীলিকার ডানা' দারুণ একটা স্ক্রিনপ্লে হতে পারে, সে প্রসঙ্গে যাবার আগে চরিত্র নির্মাণে আরেক পাক ফেরত যাই।
'পিপীলিকার ডানা' কোনো সব-পেয়েছির-দেশের কাহিনী না, আমাদের সমাজের মতোই সেখানে উচ্চাশার সুযোগ খুব অল্প লোকের আছে, সাধারণ মানুষ ওসব মাথায় আনে না। তবু গঁতের বাইরে উড়তে চাওয়ার প্রবণতা কার কেন হলো, সেখানটা লেখক এঁকেছেন দারুণ যত্নের সাথে। কালামের সাথে 'দুনিয়াটা মুতে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছা করে' কখনো পাঠকের, হাশেমের মতো টের পায় 'আফিয়াকে সে ভালবাসে কি না জানে না। তবে আফিয়াকে ছাড়া যে সে থাকতে পারে না, এটা সে বহু আগেই বুঝে গেছে'। চাকরির রুটিনে ক্লান্ত জীবনের ছায়া থেকে ঘর-কে আড়াল করার প্রচেষ্টা হাফিজের মতো করে পাঠক খুব অনুভব করতে পারবেন। আর এর মাঝেই যখন এমন কোনো প্রয়োজন এসে দাঁড়ায় যা পূরণ করার সাধ্য জীবন দিলেও হয়ে যাবে না, তখনই মানুষের দরকার হয় পিঁপড়ের মতো ওড়ার। সমাজে কেউ ওড়ে, বেশিরভাগ না।
কাহিনীর অভিনব গতি আপনাকে শেষ কয়েক পাতায় এনে দুর্দান্ত পরিবর্তনের মুখোমুখি করবে। এবং খুবই অবাক হয়ে খেয়াল করবেন, একাধিক রহস্য উন্মোচনের সূত্র লেখক মাঝে মাঝে আপনাকে দিয়ে এসেছেন, এমন চমৎকার ফোরশ্যাডো হয়তো আপনি সামাজিক গল্পের মেজাজের মাঝে আশাও করেননি। কোনো ছেঁড়া সুতো নেই পুরো বইয়ে, স্বগত চিন্তা থেকে রাস্তার ভিখারী, কোনো উপাদানকে পাঠক অপ্রয়োজনে আনেননি। শেষটুকু একদম কল্পনারও অতীত। আর প্রতিটা চরিত্রের স্বরূপ আরো অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করবেন, যদি শেষ করে আবার আগাগোড়া পড়তে যান বইটা। রীতিমতো, সবটা আমার চোখের সামনেই ছিল, লক্ষ্য করতে হবে বলেই মনে হয়নি আমার!
লেখক ওয়েব সিরিজের জন্য চিত্রনাট্য লিখেছেনও, বায়োস্কোপের 'সুন্দরী'। এর আগেও প্রকাশিত 'ধনুর্ধর' উপন্যাসটা লিখেছিলেন মূলত সিনেমার চিত্রনাট্য হিসেবেই। 'পিপিলীকার ডানা' একটা দুর্দান্ত ওয়েব সিরিজ হতে পারে। না হলেও, চিত্রায়ণ এত চমৎকার যে পড়তে গেলে চোখে ভাসবে।
বাঁধাইয়ের মান বাতিঘরের মতোই, তবে যে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়েছে এই বইটিকে, সেটা হলো প্রচ্ছদ। মাহাতাব রশীদ এবং আয়ান এই প্রচ্ছদটা করেছেন, লেটারিং সহ। বইয়ের সাইডে একই লেটারিং ব্যবহৃত হলে দেখতে ভালো লাগতো। এই কাজটার জন্য বইটাকে আরো আউট-অব-দ্য-বক্স মনে হয়েছে, ভেতরে আদতে তা-ই।
আমার কাছে বইটা বেশ ভালো লেগেছে, অনেকটা একটানা শেষ করে ফেললাম। সামাজিক থ্রিলার বলা যায়, সমাজের নানা স্তরের কিছু মানুষের গল্প নিয়ে এই বইটি এবং সাথে কিছু ক্রাইম। একটি খুন এবং খুনের রহস্য উদঘাটনে বরাবরের মতই পুলিশ, একজন সিএনজিওয়ালা এবং ভিক্ষুকের এই কেসে ফেঁসে যাওয়া এবং এই নিয়েই কাহিনী। আশা করি এই ধরনের বই যাদের ভালো লাগে এই বইটিও লাগবে।
শেষ কবে একটা বই পড়ার সময় আমি এতগুলো অনুভুতি একই সাথে ফিল করেছি তা মনে পড়ছে না! শেষের দিকে বইয়ের কাহিনি এত্ত বেশি রিয়ালিস্টিক আর ট্র্যাজিক হয়ে গিয়েছিল যে পড়তে কষ্ট হচ্ছিল আমার। বিশেষ করে ইন্সপেক্টর হাফিজের স্টোরিটায় এমন কিছু হবে ভাবিনি। বইয়ে আলাদা আলাদা এবং একসাথে তিনটা স্টোরি চলেছে। ইন্সপেক্টর হাফিজের স্টোরি ছিল বেস্ট, বাকি দুটোর ব্যাপারে আমার মিক্সড রিয়্যাকশন। সিদ্দিক ভাই এবার হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ছেড়ে শরিফুল হাসান ভাইয়ের ফেমাস 'সামাজিক থ্রিলার' জনরায় লিখলেন, হয়ত এই জন্যেই বইটা শরিফুল হাসান ভাইকে উৎসর্গ করা।
সিদ্দিক আহমেদের "পিপীলিকার ডানা" বইটি অনেক বেশি আন্ডাররেটেড। সাধারণ মার্ডার মিস্ট্রি বা ক্রাইম থ্রিলারের পাল্লায় এই বইকে মাপতে যাওয়া বেশ বড়সড় বোকামি হবে। কেননা, বইটি শুধুই টিপিকাল থ্রিলার বা পেজ টার্নার না। এর বাইরেও বেশ বড় কিছু। "সামাজিক থ্রিলার" নামে ইদানীং যে ট্যাগটা ব্যবহার করা হয় - আমার ধারণা বইটি সে জনরাতেই পড়া উচিত।
লেখকের আগের সব বই পড়ে আমি রীতিমত মুগ্ধ। নটরাজ, দশগ্রীব, ধনুর্ধর, চতুরঙ্গের অশ্বারোহী - সবগুলোই ছিল একেকটা দারুণ পেজ টার্নার। থ্রিলার হিসেবে দুর্দান্ত। (যদিও নটরাজকে আমি এতটাও হাইলি রেইট করব না বাকিগুলোর মত). চতুরঙ্গের অশ্বারোহী বইয়ের রিভিউতে আমি বলেছিলাম - মেদহীন লেখা যাকে বলে বইটি এক্সাক্টলি তাই।
তবে "পিপীলিকার ডানা" বইটি কিঞ্চিৎ আলাদা। বাকি বইগুলোর মত এই বইটি ওরকম ফাস্ট পেসড না। টিপিকাল থ্রিলার না। পার্শ্ব চরিত্র যথেস্ট প্রাধান্য পেয়েছে। ইমোশন, লাইফ স্ট্রাগল, ফ্যামিলি লাইফ - অনেককিছুই বেশ স্ট্রংলি এসেছে, যা সাধারণ থ্রিলারে থাকার কথা না। এখানে শুরুতে অনেক কথাকে মেদ মনে হতে পারে। বাড়তি এবং অযথা মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম না। সচেতন পাঠক বইয়ে অগ্রসর হতে হতেই সেটা ধরতে পারবে।
সিদ্দিক আহমেদের লেখনী সর্বদাই দারুণ। বইটি পেজ টার্নার না হলেও, লেখকের লেখনী এবং কাহিনী গঠনের জন্য বেশ সাবলীলভাবে পড়ে ফেলা যায়।
বইটা সবার জন্যেই রেকমেন্ডেড থাকবে। তবে টিপিকাল থ্রিলার এর এক্সপেকটেশন মাথা থেকে দূর করে। গুডরিডস রেটিং এজন্যেই হয়ত - বইটির প্রকৃত দশা প্রদর্শন করছে না।
একটি লাশ খুঁজে পাওয়া, সেখান থেকে তদন্ত, দৌড়ঝাঁপ দিয়ে শুরু করা ক্রাইম থ্রিলারের গল্পটি থেকে একটা সময় সমাজ, ভালবাসা, জীবনের গল্প খুঁজে পাওয়া গেলো, এই ব্যাপারটা বোধহয় বইটার সবচেয়ে সুন্দর বিষয়। মূল তিন চরিত্র হাফিজ, কালাম ও হাশেমের জীবনের ঘটনাবলী ঘুরে ঘুরে এলো পুরো গল্পে, আর যেভাবে শেষ করলেন লেখক, সবগুলো ঘটনা যখন জুড়লো, তখন অবাক হয়ে ভাবছি, একি হলো। ভাল লেগেছে বইটি খুব।
কাহিনি সংক্ষেপঃ গভীর রাতে কে বা কারা এসে একটা মার্কেটের সামনে এক বৃদ্ধের লাশ ফেলে গেলো। বৃদ্ধের নাম আব্দুর রহমান, মেয়রের খাস আত্মীয়। স্বাভাবিকভাবেই চাপের মধ্যে পড়ে গেলো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। ইন্সপেক্টর হাফিজের ওপর পড়লো এই মার্ডার কেসের তদন্তভার। অবাক ব্যাপার এই যে, আব্দুর রহমানকে গুলিও করা হয়েছে আবার তার গলাও টিপে ধরা হয়েছিলো। তাঁর খুঁতি থেকে লাপাত্তা বেশ অনেক পরিমাণ টাকা। তবে কি নিছকই কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিলো এটা, যা পরবর্তীতে খুনের ঘটনায় বদলে গেছে?
মেয়রের আত্মীয়ের খুনের কেস নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে লাগলো ইন্সপেক্টর হাফিজ। কিন্তু কোন কূল-কিনারা করে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য মনে হচ্ছিলো তার কাছে। মার্কেটের সিঁড়িতে ঘুমিয়ে থাকা কানা ফকির নাকি শুনেছে অনেক কিছুই, কিন্তু ওসব তথ্য আদৌ কোন উপকারে আসবে কি-না জানে না হাফিজ।
অন্ধ সেজে ভিক্ষা করে কালাম। আর তার পরকীয়া প্রেম চলে শামিমার সাথে। কালাম আর শামিমা সত্যিই একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। কালাম স্বপ্ন দেখে, একদিন শামিমাকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে পালিয়ে যাবে। তারপর একট সুখের সংসার পাতবে। কিন্তু এর জন্য তো অনেক টাকা চাই। এতো টাকা কালাম কি ভিক্ষা করে যোগাড় করতে পারবে? মনে হয় না তার। হয়তো সামনে কোন বড় 'দাঁও' মারার সুযোগ আসতে যাচ্ছে কালামের সামনে, কে জানে!
সিএনজি চালক হাশেম সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকে একমাত্র ছেলে কাশেমের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে। এইটুকু একটা বাচ্চা, অথচ কি ভয়াবহ অসুস্থ! প্রচুর টাকার দরকার হাশেমের তার ছেলের চিকিৎসার জন্য। সেজন্যই সে দিন-রাত এক করে খেটে চলেছে। স্ত্রী আফিয়া ও তার এখন একটাই চিন্তা ছেলেকে সুস্থ করে তোলা।
নিঃসন্তান ইন্সপেক্টর হাফিজ ও শিলু দম্পতির জীবনটাও পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে একটা বাচ্চা এলে। আর একটা বাচ্চার জন্য তারা কি-ই না করেছে! মাথার ওপর একটা গুরুত্বপূর্ণ খুনের কেসের তদন্তের ভার আর স্ত্রী শিলুর সাথে তার অম্লমধুর সম্পর্ক নিয়ে দিনগুলো যে আসলে কেমন কাটছে, হাফিজ মাঝেমাঝে বুঝে উঠতে পারে না। আসলে কেমন কাটছে দিন?
হাফিজ, শিলু, কালাম, শামিমা, হাশেম ও আফিয়া। জাদুর শহরের নানা স্তরের এই বাসিন্দাদের সবাই একটা সময় হয়ে উঠলো একটামাত্র গল্পের অংশ। আর সেই গল্পটার নামই 'পিপীলিকার ডানা'।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'দশগ্রীব' ও 'ধনুর্ধর'-এর মতো হিস্টোরিক্যাল থ্রিলারের লেখক সিদ্দিক আহমেদের ক্রাইম থ্রিলারধর্মী 'পিপীলিকার ডানা' প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। এই বছর বইঘর অ্যাপ এই বইটার ই-বুক রিলিজ করে। বইটা কোন একটা কারণে হার্ডকপি কেনা হয়েছিলো না। লিস্টে ছিলো, তাই বইঘর থেকে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ই-বুক কিনে পড়ে ফেললাম।
'পিপীলিকার ডানা' একটা শহরের গল্প। এই শহরের নানা অবস্থানে থাকা কয়েকজন মানুষের গল্প, যারা জুড়ে যায় এক সুতায়। ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার হলেও এই উপন্যাসে লেখক সিদ্দিক আহমেদ ক্রাইমের সাথে সাথে পাঠককে পরিচিত করেছেন মানবীয় কিছু বিষয়ের সাথেও। পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজকে যেমন দেখা যায় খুন হয়ে যাওয়া আব্দুর রহমানের খুনের তদন্ত করতে, তেমনি শিলুর সাথে তার অম্লমধুর দাম্পত্যকেও ফুটে উঠতে দেখা যায়। নীতি-নৈতিকতার ধার না ধারা কালামের ক্রুরতা যেমন দেখা যায়, তেমনি শামিমার জন্য তার টান ও ভালোবাসাও অনুভব করা যায়। 'পিপীলিকার ডানা'-এর অনেকটা অংশ জুড়ে হাশেম ও আফিয়া দম্পতিকে লড়াই করতে দেখা যায় তাদের অসুস্থ ছেলে কাশেমের চিকিৎসা চালানোর জন্য। আর এসব কারণেই উপন্যাসটা নিছক একটা ক্রাইম থ্রিলার না হয়ে একইসাথে হয়ে উঠেছে মানবিক একটা উপাখ্যানও।
সিদ্দিক আহমেদের হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার পড়ে তাঁর লেখার একজন ফ্যান হয়েছিলাম অনেক আগেই। তাই 'পিপীলিকার ডানা'-এর প্রতি আমার এক্সপেকটেশনটা একটু বেশিই ছিলো। সেটা সম্পূর্ণ পূরণ না হলেও আক্ষেপ নেই আমার। ওভারঅল পুরো উপন্যাসটা আমাকে পাঠের আনন্দ দিতে পেরেছে, এতেই আমি খুশি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আলাদা আলাদা সিকোয়েন্সের ফিনিশিংগুলো। ওই জায়গাগুলো পড়তে গিয়ে একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে, বাহ, একেই তো 'পোয়েটিক জাস্টিস' বলে!
বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক চোখে পড়েছে বইটা পড়তে গিয়ে। বিশেষ করে একটা ভুল খুব চোখে লেগেছে। আর তা হলো কালাম চরিত্রটার নাম বারবার কামাল লেখার ব্যাপারটা। আর বইঘর অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে একটা ব্য��পার সাজেস্ট করতে চাই আমি। ই-বুকের অধ্যায় কতোগুলো আছে সেটা জানতে পারলেও কতো পৃষ্ঠার সেটা জানতে পারিনি। এখানে আমি যে পৃষ্ঠাসংখ্যা উল্লেখ করেছি, তা হার্ডকপির। আশা করি পৃষ্ঠাসংখ্যার ব্যাপারটা পরবর্তীতে অ্যাপ ডেভেলপিংয়ের সময় তাঁরা অ্যাড করবেন।
বইটার প্রচ্ছদটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন 'পিপীলিকার ডানা'। যদিও আপাতত সবাই সিদ্দিক আহমেদের নতুন হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার 'স্বর্ণবাজ' জ্বরে ভুগছে। তারপরও, এটাও চেখে দেখতে পারেন।
৩.৫ তারকা ভাল লেগেছে।বেশ ভাল লেগেছে।গোছানো,ঝটপট,কুডমুড়ে। তবে দাঁতের নিচে এলাচ পড়ার মত দু'টো ব্যাপার ও হয়েছে। ১. হাফিজ এর ব্যাপারটা জবরদস্তি টুইস্ট লেগেছে।থ্রু আউট বইতে অল্প, একদম অল্প হিন্ট ড্রপ করলে,ব্যাপারটা মিলত (আমার কাছে)। ২. কয়দিন আগেই টার্ম এ strangulation পরীক্ষা দিলাম কিনা,তাই একটু পণ্ডিতি ফলাচ্ছি আর কি - ম্যানুয়াল স্ট্র্যাংগুলেশন এ " v " মার্ক পড়েনা,hanging এ পড়ে।মানে এটাই জানি আমি।
আপনারা ২য় পয়েন্ট ইগ্নোর করবেন কিন্তু,ইহা কেবল ই আমার ফ্লেক্সিং। 🤣😆
সিদ্দিক আহমেদ ভাইয়ার চতুর্থ উপন্যাস ❝পিপীলিকার ডানা❞।প্রথমবারের মতো ভাইয়ার লেখা পড়লাম।ধনুর্ধর এর আগে সংগ্রহ করলেও এখনো পড়া হয়নি।এটা নিয়ে এক্সপেকটেশন কম দেখে আগে এটাই শুরু করেছিলাম।
কাহিনী সংক্ষেপ: বড়ো কোনো মার্কেটের সামনে একটা অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেলে ইন্সপেক্টর হাফিজ আর কনস্টেবল আতাহার তদন্ত নামে। কানা ফকির নামে পরিচিত কালাম খুনটা সম্পর্কে এমন কিছু জানে যা অন্য কেউ জানে না। সিএনজি চালক হাশেম তার বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে-দুঃখে জীবন কাটালেও একরাতে সব ওলোট পালোট হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে তিনটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা আর তাদের মধ্যকার অদৃশ্য সুতো উন্মোচিত হতে থাকার এক আশ্চর্য কাহিনী ❝পিপীলিকার ডানা❞।যাতে প্রেম,ভালোবাসা,হত্যা,প্রতিশোধ,ঘৃণা,মায়া-মমতা আর সর্বোপরি যে জিনিসটা বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে তা হলো আকাশছোঁয়া অট্টালিকার মাঝে না জানা কিছু জীবনের কাহিনী।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: প্রথমে বইটির জনরা ক্লিয়ার করি।ফ্ল্যাপ আর প্রচ্ছদ দেখে আপনি ভেবে বসতে পারেন বইটা ফ্যান্টাসি টাইপের কিছু হবে।লেখকের প্রথম তিনটা বই বিবেচনা করলে আপনার ধারণা অসম্ভব কিছু না।আমি ফ্যান্টাসি ভেবেই কিনেছিলাম।আর পড়াও শুরু করেছিলাম ফ্যান্টাসি ভেবেই।কিছুদূর যাওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলাম বইটা ফ্যান্টাসি না,প্রচণ্ড রকমের আশাহত হয়েছি তখন। তো তাহলে বইটা কি জনরার? বইটাকে আমি সামাজিক থ্রিলার জনরায় ফেলবো।কিংবা সমকালীন উপন্যাসও বলতে পারেন। আমার মতে সামাজিক থ্রিলার থ্রিলারের এমন একটি জনরা যেখানে সমাজের প্রচলিত অপরাধ আর মানুষের জীবনের খণ্ডচিত্র ফুটে ওঠে।কোনো অধ্যায়ে থ্রিলে পরিপূর্ণ থাকবে,তো কোনো অধ্যায় আবার জীবনের ছোট ছোট চিত্রগুলো তুলে ধরবে। এই যুক্তি অনুসারে বইটিকে সামাজিক থ্রিলার জনরা হিসেবে পরিচয় দিলেই খুশি হবো। প্রথমত বইটি শুরু হয় একটি খুন দিয়ে।তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনসপেক্টর হাফিজ বইটির প্রধান একটি চরিত্র।বইয়ে একইসাথে তার তদন্ত এগিয়ে যায় এবং তার পরিবার,স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা,মানসিক ব্যাপার-স্যাপার সবই উঠে আসে।ব্যক্তিগতভাবে হাফিজ আর তার স্ত্রী শিলুর সম্পর্ক ও তাদের খুনসুটি বেশ ভালো লেগেছে। বইয়ের দ্বিতীয় চরিত্র কানা ফকির ওরফে কালাম চরিত্রটির চাল-চলনও ভালো লেগেছে।অপরাধ আর থ্রিলের সাথে সাথে এই চরিত্রটির উপস্থাপনায়ও লেখক বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছেন। আর তৃতীয় মুখ্য চরিত্রটি হচ্ছে হাশেম।এই চরিত্রটির ব্যাপারে কিছু না বলাই ভালো।কালাম আর হাফিজের মতো এই লোকটিও ওয়েল ক্রাফটেড। অতপর কাহিনীর কথা বলতে গেলে,গল্পটা ভালো ছিল।অপরাধ,জীবনবোধ,চাওয়া-না পাওয়ার আদিম দ্বন্দ্ব আর চরিত্রগুলোর মানসিক দ্বন্দ্ব এতো চমৎকার করে তুলে ধরেছেন যে একবার তো মনে হয়েছে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়ছি। ছোট বইটির গতিও ভালো ছিল।টানা পড়ার মতো।কাহিনী কোথাও আটকে যায়নি।থ্রিলও পরিমাণমতো পেয়েছি।তবে শেষের দিকটাকে দুর্দান্ত গতির থ্রিলারের সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না।টুইস্টগুলোও মোটামুটি ভালোই ছিল।লেখক সবকিছুই অনেকটা উন্মোচন করে দিলেও কিছু প্রশ্ন রয়েই গেছিলো।শেষে সব প্রশ্নের উত্তরই মিলেছে। কিন্তু তারপরও বইটা পড়ে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত নই আমি।কারণ,কিছু প্লটহোল।ঢাকার কোনো এক প্রধান থানার অধীনে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেস,যেখানে উপর থেকে চাপ আসার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে অপরাধীর স্কেচ কেন বানানো হলো না? মোবাইল ট্র্যাকিং করে লেকটার অবস্থান বের করে ফেলা কোনো কঠিন ব্যাপার না।তারপরও কেন তা করা হয়নি?মূলত লেখক চাইলে একটু সাসপেন্স আর থ্রিলের মিশেলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারতেন।কিন্তু এদিকে হয়তো তার নজর পড়েনি। আবার ছয় তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যাকারী একজন মানুষ চিৎকারও দেয় না?ব্যাপারটা যুতসই মনে হয়নি।
বাকি সবকিছুই ভালো লেগেছে আমার।এই প্লটহোলগুলো না থাকলে ৪.৫ দিয়ে দিতাম। আরো একটা কথা,লেখকের লেখনশৈলী নিয়ে প্রশংসা কম শুনিনি।প্রথমবারের মতো পড়ার পর ওনার শব্দচয়ন,বাক্যগঠন আর উপমার প্রয়োগে মুগ্ধ আমি।সত্যিই চমৎকার লেখেন সিদ্দিক আহেমদ ভাইয়া। লেখা ভালো লাগায় বইটা হাত থেকে রাখতেও মন চাইতো না।এই বইটা না হলেও অন্যগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন।
প্রোডাকশন: বানান ভুল একটা দুইটা চোখে পড়েছো,টাইপোও তেমন ছিল না।বাঁধাই ভালে ছিল।পৃষ্ঠার মান,ফন্ট সাইজ,গ্যাপ সবই চলনসই।আর প্রচ্ছদটা যাস্ট ওয়াও! প্রোডাকশনে বাতিঘর বেশ ভালো উন্নতি করেছে।
সহজ সরল ভাব ধরে থাকা কুটিল কিছু মানুষের গল্প। বসবাস তাদের সাধারণ মানুষের ভিড়ে, কংক্রিট দালানের পাথুরে ঘিঞ্জি এই ঢাকা শহরে। প্রাক্তন বাম রাজনীতিবীদের খুনের তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ। ইন্সপেক্টর হাফিজ শার্প মাইন্ডের হলেও কূল কিনারা করতে পারে না এ কেসের। প্রথম দিকে ধীরগতিতে এগোতে থাকা বইয়ের প্রথম দিকটা তাই অনেকটাই একঘেয়ে আর সাদামাটা লাগে। প্রথম সাসপেক্ট কানা ফকির পুলিশের হাতে ধরা পরার পর থেকে কাহিনি গতি পায়। কানা ফকির সেদিন কী দেখেছিল? খুনের পেছনে কার হাত আছে সেই খোঁজে নাজেহাল হাফিজ, সাথে উপর মহলের চাপ। অন্যদিকে মেডিকেল কারণে বাবা না হতে পারার চাপা শোক। সব মিলিয়ে উৎকণ্ঠায় এগিয়ে চলে কাহিনি। বইয়ে কিছু না বলা সত্য উদঘাটন করেছেন লেখক। লালসা, লোভ আর প্রিয়জনের জন্য কিংবা আকাঙ্খিত বস্তু হস্তগত করার জন্যে সর্বস্ব বিলিয়ে দেবার যে আদিম চেষ্টা মানুষের সেটাই দেখিয়েছেন লেখক। পুলিশ প্রসিডিউরাল, ক্রাইম থ্রিলার বলা যায় বইটাকে�� যদিও খুব গভীরে যায়নি সেসব বিষয়ে লেখক। মূলত থ্রিলারের আশ্রয়ে কিছু মানুষের কাহিনি বর্ণনা করে গেছেন। বইটা প্রথমদিকে খুবই স্লো। মনে হয়েছে টেনে লম্বা করা হচ্ছে। কাহিনিতে ঢুকতে ঢুকতেই বইয়ের অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। বিগ রিভিল সব বইয়ের শেষে এক-দুই অধ্যায় জুড়ে করা হয়েছে। এ ধরণের বই তেমন একটা ভাল লাগেনা। ইচ্ছা করে কারণ ছাড়া তথ্য লুকিয়ে রেখে শেষে এসে পাঠককে তাক লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এসব বইতে। থার্ড পার্সনের বর্ণনায় চলতে থাকা বইয়ে এমনটা করলে ভাল লাগে না। ইচ্ছে করে পাঠককে ভুল তথ্য দিয়ে ভুল দিকে চালিত করা হয় আর শেষে এসে 'সারপ্রাইজ মোফো' বলে বিগ রিভিল দেয়া হয়। মোটাদাগে বইটা পড়ার মতোই বলা যায়। খারাপের কাতারে ফেলা যায় না। হয়তো লেখকের অন্য বই পড়ে তার সম্পর্কে এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি ছিল তাই কিছুটা হতাশ হয়েছি।
ঢাকার পুরনো মার্কেটের সামনে একটি লাশ পাওয়া যায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। গভীর রাতে কে যেন খুন করে লাশটা ফেলে গেছে সেখানে। খুনের অনুসন্ধানে নামেন ইন্সপেক্টর হাফিজ।
এই গল্পটি মহানগরীর তিনজন মানুষের। নিজের সন্তানকে বাচাঁতে মরিয়া এক বাবা, ভালোবাসার মানুষের জন্য যা-কিছু করতে পারা এক প্রেমিক আর ইন্সপেক্টর হাফিজ।
খুনি ধরতে না পারলে উপরমহল আর সাংবাদিক এর চাপ! আর এক বাবার সাত রাজার ধন তিলে তিলে মারা যাচ্ছে শুধু মাত্র টাকার জন্য! আর এক ফকির যুবক তার ভালোবাসার মানুষের সাথে নতুন জীবন শুরু করার জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছে! সবার নিজের আলাদা প্রয়োজন, আলাদা সবার চিন্তাভাবনা। নিজেদের নিয়েই মত্তো এই টাকার শহরে।
এই তিন ব্যক্তির সাথে সেই খুনের সম্পর্ক খুজতে খুজতে একের পর এক অপ্রত্যাশিত সত্যের সম্মুখীন হতে হবে পাঠককে।
গল্পটি আপনার বিবেককে নাড়া দেবে। কে আসলে দোষী আর কেই বা ভালো, এক প্রকার দ্বিধার জন্ম হবে আপনার অন্তরে। উপন্যাসটি বাস্তবিকতার ছোয়া দিয়ে এতো সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন লেখক যে সবার মন ছুয়ে যাবে। 🤍
রেটিং: ৪.৫★/৫★ বইটি পড়ার আগে একটুও আঁচ করতে পারিনি ১৯২ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বইটিতে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছিলো! এজ ইউজুয়াল থ্রিলার মনে করে লুফে নিয়েই পড়তে শুরু করি।কে জানত লেখক এমন খেল দেখাবে? জানলে অবশ্য একটু প্রস্তুত হয়ে বসতাম! . যাই হোক আসল কথায় আসি। এক প্রবীন ব্যাক্তির খুন হওয়া থেকেই উপন্যাস আরম্ভ হয় যার তদন্তের ভার এসে পড়ে ইন্সপেক্টর হাফিজের ঘাড়ে।এগিয়ে যেতে থাকে গল্প। শেষে এসে লেখক এমন সুন্দরভাবে নিজের জাদু দেখাবে তা ভাবনার অতীত ছিল।একের পর এক সুতার গিট খুলতে দেখে নিজের অজান্তেই লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিলো আবার আনন্দে কিংবা দুঃখে শরীর বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিলো! . মনের মানুষকে পাওয়ার আকুতি,নিজের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য ইচ্ছা,দরিদ্রতায় জর্জরিত সমাজের তথাকথিত নিম্নশ্রেণীর মানুষের সুন্দর জীবন যাপনের প্রবল আগ্রহ সবই উঠে এসেছে এই বইটিতে। একদম অন্য আঙ্গিকের,অন্য ধরনের, অনবদ্য প্লটের এমন থ্রিলার রীতিমতো আমাকে অবাক করেছে। পুলিশের চরিত্রটা একটু দুর্বল ঠেকেছে এবং বাতিঘর প্রকাশনীর সবসময়কার বানান ভুল যাত্রাপথে স্পীড ব্রেকারের কাজ করছিলো এই যা! হ্যাটস অফ!!
আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা এক অদ্ভুত মায়ার বন্ধনে আমাদের আবদ্ধ রেখেছে তাই না!! এই মায়ার বন্ধন সুতো যেদিন কাটা পড়বে ঐদিনই হয়তো পৃথিবীর বিনাশ ঘটবে।এই বিনাশ ঠেকানো কার সাধ্যি?
পাঠ-প্রতিক্রিয়া : সিদ্দিক আহমেদের এই বইটি আমার পড়া প্রথম বই। চমৎকার লেখনীতে ঢাকা শহরের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ফুটে উঠেছে। বইটি ৩টি চরিত্রকে ঘিরে চলে। ইন্সপেক্টর হাফিজ, কানা ফকির ও সিএনজি চালক হাশেম।তিন জনের জীবন বাহিনীকে লেখক এক সূত্রে অসাধারণ ভাবে এনে সমাপ্তি দিয়েছেন। সিএনজি চালক হাশেমর জীবন সংগ্রাম আপনার মনে দাগ কেটে যাবে, কানা ফকিরের চাল ও ইন্সপেক্টর হাফিজের ইনভেস্টিগেশন আপনাকে ধরে রাখবে বইটি শেষ করতে। বইটির শেষে টুইস্টের উপর টুইস্ট আছে। যা আপনার আগের তৈরী করা ফলাফলকে ব্যার্থ করবে।
পিপীলিকার ডানা কিছু অন্ধকারের মানুষের গল্প। কিংবা বলা যায় মানুষের জীবনের অন্ধকারের গল্প। একজনের গল্পে যে হিরো সেই হয়ত অন্য কারো গল্পে ভিলেন। কারো চরিত্রের অন্ধকারকে পাশ কাটিয়ে হয়ত আলোকিত একটা দিক সামনে আসে, আবার কারো হয়ত অন্ধকারটাই আলোকে ছাপিয়ে যায়। আমাদের চেনা অচেনা মানুষের গন্ডিটা কিন্তু এমনই। পিপীলিকার ডানাও এমনই কিছু মানুষের গল্প। বইতে থ্রিলারের চেয়ে জীবনবোধটা বেশি প্রখর। সব মিলে ভালো লেগেছে। প্রথমদিকে গতি বেশ স্লো হলেও শেষটা বিষাদমাখা সুন্দর। আর এই বিষাদটাই বইটাকে আর পাঁচটা বই থেকে আলাদা করেছে।
সিদ্দিক আহমেদ এর গল্প বলার ধরন আমার বেশ ভালো লাগে। শব্দচয়ন, সংলাপ, কিছু অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার — অন্যান্য বইয়ের মতো এই বইতেও এসবের ব্যতিক্রম ছিল না। পড়তে ভালোই লাগে। প্লট ভারিক্কি ধরনের না হলেও, এক্সিকিউশন চমৎকার। কাহিনীর গতি, চরিত্রগুলোর প্রায় সমান প্রাধান্য, একজনের আরেকজনকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, কাহিনীর মাঝে মাঝে ছোটখাটো টুইস্ট — উপভোগ্যই বটে। তবে ক্লাইম্যাক্সে একটা মেজর টুইস্ট বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল। এতোটাই অপ্রত্যাশিত যে মনে হয়েছে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই টুইস্টটা ছাড়াই কি ভালো এগোচ্ছিল না কাহিনী? তদন্তের ব্যাপারে বলতে গেলে কিছু কিছু জায়গায় নড়বড়ে লেগেছে। আর চরিত্রগুলোর শেষ পরিণতি কিছুটা ধরা-বাঁধা ধরনের লেগেছে। একটু উনিশ-বিশ করলে আরেকটু অন্যরকম, এক্সাইটিং হতো বোধ করি।
কাহিনি সংক্ষেপ ----------------------------- সাত সকালে টাটকা লাশ দেখতে কারোই ভালো লাগেনা । ইন্সপেক্টর হাফিজেরও ভালো লাগেনা । কিন্তু পুলিশে চাকরি করার কারণে এসব তার রোজকার অভ্যেস হয়ে গেছে । গভীর রাতে কে বা কারা এসে একটা মার্কেটের সামনে একজন বৃদ্��� লোকের লাশ ফেলে রেখে গেছে । অদ্ভুত বিষয় হল বৃদ্ধকে গুলিও করা হয়েছে আবার গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়েছে । গভীর রাতে সকলের অগোচরে ঘটেছে এই ঘটনা । তবে সাক্ষী একজন আছে বটে । সে অবশ্য অন্ধ । সকলে তাকে কানাফকির বলে ডাকে । সে রাত দশটার পরে এই মার্কেটের এক কোণে এসে ঘুমায় । অন্ধ ফকির কি আদৌ জোরালো সাক্ষী হতে পারে? ইন্সপেক্টর হাফিজ কীভাবে সমাধান করবে এই জটিল রহস্য?
নিজের একমাত্র ছেলের জটিল অসুখ করেছে । তার অপারেশনের জন্য টাকা জোগাড় করা রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার সিএনজি চালক হাশেমের কাছে । সে দিন আনে দিন খায় ধাচের মানুষ । কিন্তু তাই বলে নিজের সন্তানকে এভাবে মরতে দিতে তো পারেনা । কী করবে সে! কোথায় পাবে এতগুলো টাকা?
শায়লার স্বামী তাকে আদর করে শিলু বলে ডাকে । দুজনের ভীষণ পরিপাটি সংসার । একে অপরকে ভালোবেসে, খুনশুটিতে দিন কেটে যাচ্ছে তাদের । ভালোবাসায় ছেদ পড়ে যেদিন শিলু ���ানতে পারে সে কোনোদিন মা হতে পারবেনা । তার স্বামী তাকে সান্তনা দেয় । তবু শিলুর মন খারাপ ভালো হয়না । সে কোনোদিন মা হতে পারবেনা - এর থেকে কষ্টের সংবার আর কী হতে পারে? তবে তার স্বামী যেটুকু সময় ঘরে থাকে সন্তানের অভাবে পাওয়া কষ্টটা একদম ই মনে আনতে দেয়না । ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে শিলুকে । তার স্বামী পুলিশ ইন্সপেক্টর । নাম হাফিজ ।
অন্ধ সেজে ভিক্ষে করে কালাম । রোজগার বেশ ভালোই । সে এখন বেশ হিসেব করে খরচ করে । ভিক্ষের টাকায় নেশাফূর্তি সে এখন আর করেনা । কেননা তার জরুরি একটা কাজ আছে । সে একজনকে ভালোবাসে । মেয়েটা বিবাহিত । রোজ তার স্বামী তার ওপর নির্যাতন করে । কালাম ঠিক করেছে আর কিছু টাকা জমলেই নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পালিয়ে যাবে দূরদেশে । মেয়েটাকে মুক্ত করবে ঐ স্বামী নামক পাষণ্ডের হাত থেকে ।
জাদুর শহরে সবাই খোঁজে মুক্তি । মুক্তি ঠিক কতটা দূরে কেউ কি জানে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া ---------------------------
লেখক সিদ্দিক আহমেদ আমার সবথেকে প্রিয় তিনজন লেখকের মধ্যে একজন । তার লেখার সাথে পরিচয় দশগ্রীব বইটির মাধ্যমে । এরপর মুগ্ধ হয়ে একে একে পড়েছি ধনুর্ধর, চতুরঙ্গের অশ্বারোহী, স্বর্ণবাজ । সচরাচর হিস্টোরিক্যাল থ্রিলারে আধিপত্য থাকলেও তিনি যে সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্রাইম থ্রিলারেও কম পটু নয় তার প্রমাণ এই 'পিপীলিকার ডানা' ।
এক কথায় বলতে গেলে বইটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে । সিদ্দীক আহমেদের বর্ণনাভঙ্গি আমার পড়া বাকি যেকোনো লেখকের থেকে ভালো । তার লেখা পড়লে মনে হয় যেন প্রতিটা দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি । এই বইতেও একই ব্যাপার । বর্ণনা এতটাই সুন্দর ও জীবন্ত যে পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি নিজেও এই গল্পের একটা অংশ ।
চরিত্রায়নেও বেশ ভালোই ডিটেইলিং করেছেন লেখক । প্রতিটি চরিত্র বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি । হোক সেটা হাফিজ-শিলু দম্পতির ভালোবাসা কিংবা হাশেম-আফিয়া জুটির জীবনে অভাব অনটন কিংবা কালাম-শামীমার পরকিয়া সম্পর্ক - সবগুলো চরিত্র ডেভেলপেই লেখক দারুণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন ।
প্লট বিল্ডাপে লেখক খুব বেশি সময় নেয়নি । শুরু থেকেই লেখক মূল গল্পে প্রবেশ করেছেন এবং এর সমান্তরালে বিভিন্ন ব্যাক স্টোরি ও অন্যান্য ঘটনা তুলে ধরেছেন । ফলে বইটা একইসাথে গতিশীল ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ।
এবারে এই বইয়ের সবথেকে ভালো লাগার বিষয়ে আসা যাক - ক্লাইম্যাক্স । বইটার শেষে এসে রীতিমত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম । শেষ কোন বই পড়ে মন খারাপ হয়েছে খেয়াল নেই । 'পিপীলিকার ডানা' পড়ে মন খারাপ লেগেছে ভীষণ । চাইলে এই গল্পটা ব্যবহার করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একটা ওয়েবসিরিজ বানানো যেতেই পারে ।
বইটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর প্রকাশনী । প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে আমার । বাঁধাই ও পেজ কোয়ালিটি ঠিকঠাক ই বলা চলে । তবে বানান ও সম্পাদনাজনিত অনেক ভুল চোখে পড়েছে । এছাড়া চরিত্রের নামগুলো একদাম কাছাকাছি তাই পড়তে গেলে গুলিয়ে যাচ্ছিল । বিরামচিহ্নজনিত ও বাক্যগঠনে দুয়েকটা ভুল চোখে পড়েছে ।
এই ছিল 'পিপীলিকার ডানা' নিয়ে আমার রিভিউ । আমার পরিচিত অনেকের ই শুনেছি বইটা ভালো লাগেনি । তবে আমার মতামত জানতে চাইলে বলবো বইটা আমার শুধু ভালো নয় - ভীষণ ভীষণ ভালো লেগেছে । আমার তরফ থেকে একদম চোখ বন্ধ করে রিকমেন্ড করার মত বই ।
এক নজরে, বই : পিপীলিকার ডানা লেখক : সিদ্দিক আহমেদ প্রকাশনী : বাতিঘর পৃষ্ঠা : ১৯২ মূল্য : ২২০ টাকা
বাংলা একটা প্রবাদবাক্য আছে, 'পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে'। পিপীলিকার পাখা নাই, যদি গজায়, সেগুলোর বাড়াবাড়ির সীমা থাকে না। পাখা গজালে আগুনকে পর্যন্ত সেই পিপীলিকাগুলি ভয় পায় না। আগুনে ঝাঁপ দিলে যে মৃত্যু ঘটবে, সে তাল জ্ঞানও পাখা গজানো পিপীলিকা হারিয়ে ফেলে। আগুনে ঝাঁপ দেয়ার পর বুঝতে পারে কী ভুল সে করে ফেলেছে। সে ভুল সংশোধনের আর কোন পথ থাকে না। মৃত্যুই তার শেষ পরিণতি হয়। স্বভাবতই কবি মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্য থেকে উঠে আসা এই কথাটাই প্রথম মাথায় এসেছিলো বইটার নাম দেখে।
এ বছর সিদ্দিক আহমেদ এর আরেকটি সেরা বই বের হলো 'পিপীলিকার ডানা' নামে। গল্পটা মূলতঃ একটা খুনকে কেন্দ্র করে হলেও, মূল কাহিনী আমাদের চারপাশের পরিচিত কিছু চরিত্র নিয়ে। পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজ, কানা ফকির কালাম আর সিএনজি ড্রাইভার হাশেমের ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরির উপর ভিত্তি করে সামাজিক ঘরানার একটা ক্রাইম ফিকশন। লোভ, অসংগতি, অভাব, অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা এই চরিত্রগুলোর জীবন কোনো এক ভুলের কারণে এক সুতোয় বাঁধা পরে৷ জীবনের তাগিদে তারা নিঃসংকোচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনের ওপরেই। বইটা থেকে দারুণ একটা সিরিজ হওয়া সম্ভব আমার মতে। গল্পটার প্লট খুব সুন্দর করে সাজানো। এত সহজ স্বাভাবিক গল্প এতো ঘোল পাকাতে পারে চিন্তাও করিনি। দুর্দান্ত পেইজ টার্নার বইটা কখন শেষ হয়ে গেলো টের পাইনি। শেষ পৃষ্ঠা গুলোয় যখন সব ছেঁড়া সুতোর প্রান্ত জোড়া দিলেন লেখক, দারুণ একটা তৃপ্তি পাচ্ছিলাম। চরিত্রগুলোর শূন্যতা সহজেই অনুভব করা যাচ্ছিলো।
'...বারবার মনে হতে থাকে সমস্ত জীবনটাই একটা প্রহেলিকা এবং ভোরের শিশিরের মতই ক্ষণস্থায়ী এক প্রপঞ্চ। এই আছে, এই নেই।'
ইনভেস্টিগেশনের পার্টটুকুতে আলাদা করে চোখ বুলালে একটা দূর্বলতা চোখে পড়তে পারে। পানি কোনদিক গড়াচ্ছে কিংবা টুইস্ট যা ছিলো তারও বেশ কিছুটা প্রেডিক্টেবল। তবে বইটার ফোকাস যে ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিগুলোর উপর ছিলো তার জন্য বইটা নিঃসন্দেহে সেরা। আশা করি ভালো লাগবে।
গল্পটা মোহাচ্ছন্ন এক আশ্চর্য মায়ানগরীর। যে নগরের বাসিন্দারা অযাচিতই জড়িয়ে আছে একে অন্যের জীবনের জটাজালে। রুপকথার এই গল্পটা নর-নারীর কিছু অনাহুত সম্পর্কের, ক্লেদাক্ত কলুষতার অথবা নিতান্তই মানবিকতার।আদি এবং অন্তে গল্পটি আদতে জাদুর এই শহরের।(ফ্ল্যাপ থেকে)।
একটি খুনের তদন্ত দিয়ে উপন্যাসের শুরু।তদন্তে দায়িত্ব পান অফিসার হাফিয।বই এর শুরু থেকেই থানা-পুলিশ, সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী,সন্দেহভাজন ইত্যাদি নিয়ে আলোকপাত হয়। তিনটি চরিত্র অফিসার হাফিয,কানা ফকির ও ড্রাইভার হাসেম কে ঘিরে এই উপন্যাস। সাথে তাদের ঘিরে আরো কিছু চরিত্র। যেখানে হত্যা রহস্যের আড়ালে ভালোবাসা ও নিয়তির এক মিশেল ফুটে উঠেছে।
বইয়ের প্রতিটি চরিত্র চিত্রায়ণ দারুণভাবে পরিণতি পেয়েছে।সেই সাথে সমাজের নিচু স্তরের মানুষের সমস্যাগুলো খুব নিদারুণভাবে ফুটে উঠেছে বই এ। কোনো সমস্যা সমাধান কিংবা এক্টু ভালো থাকা বা প্রিয়জন কে পাবার জন্য অপরাধকর্মে জড়িয়ে যেতে দ্বিধা করে না এরা।শুধু কি নিচুস্তর এর মানুষেরা? ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকা মানুষগুলোও সম্মান বাচাঁতে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে যায়।
ঠাসা বুনটে ভরপুর বইটি যা পাঠক কে শেষ অব্দি ধরে রাখবে।উপন্যাসের শেষ এ কাহিনীর মোড় এমনভাবে ঘুরে গেলো যা আমার প্রত্যাশার বাহিরে ছিলো। বইটি নিয়ে এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, নিয়তির এক আজব খেলা! লেখক যেভাবে রহস্য ও হত্যার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়! যারা মাডার্র মিস্ট্রি ভালোবাসেন,তবে অফেন্সিভ বিষয়গুলো নিতে পারেন না।ত���রা খুব পছন্দ করবে বইটি।
"গল্পটা মোহাচ্ছন্ন এক আশ্চর্য মায়ানগরীর। যে নগরের বাসিন্দারা অযাচিতভাবেই জড়িয়ে আছে একে অন্যের জীবনের জটাজালে। রূপকথার এই গল্পটি নর-নারীর কিছু অনাহুত সম্পর্কের, ক্লেদাক্ত কলুষতার অথবা নিতান্তই মানবিকতার। আদি এবং অন্তে গল্পটি আদতে জাদুর এই শহরের।"
সিদ্দিক আহমেদ এর পিপীলিকার ডানা অসাধারণ একটি ক্রাইম ফিকশন। গল্পটি মূলত আব্দুর রহমান নামক এক ব্যক্তির খুনকে কেন্দ্র করে হলেও এখানে উঠে এসেছে ইন্সপেক্টর হাফিজ, কানা ফকির কালাম ও সিএনজি চালক হাশেম এর ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি। কেউ নিজের সন্তানের জন্য, কেউবা গোপন প্রেমিকার জন্য, নিজের প্রিয় মানুষদের সুখে রাখার জন্য জড়িয়ে পড়ে অন্যায়-অপরাধে। লোভ,অপরাধ,ভালবাসা,নিয়তি ঘিরে রেখেছে উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে। জীবনের তাগিদে তারা নিঃসংকোচে ঝাপিয়ে পড়ে আগুনের ওপরেই।
'....বারবার মনে হতে থাকে সমস্ত জীবনটাই একটা প্রহেলিকা এবং ভোরের শিশিরের মতই ক্ষণস্থায়ী এক প্রপঞ্চ। এই আছে, এই নেই।'
বইয়ের শেষ কয়েক পাতায় রয়েছে বেশ আনএক্সপেক্টেড কিছু টুইস্ট। হয়তো ভাবছেন এক রকম কিন্তু ঘটনা ঘটলো ঠিক তার উল্টো। যা আপনি কল্পনাও করতে পারেননি।
অসাধারণ একটি ক্রাইম ফিকশন। নিঃসন্দেহে এটি সিদ্দিক আহমেদ এর সেরা একটি বই।
আমি সিদ্দিক আহমেদের ভক্ত। তিনি আমার লিস্টের এমন একজন লেখক, যার বই আমি চোখ বন্ধ করে কিনবো।
তবে দুঃখজনক হলো উনার এই বইটা যথেষ্টই বিরক্ত লেগেছে আমার কাছে। একটা খুনের ঘটনা কিভাবে বেশকিছু মানুষের জীবনে ইমপ্যাক্ট ফেলে সেটার গল্প বলতে চেয়েছেন লেখক। হ্যা, উনার গল্প বলার ধরণ অবশ্যই ভালো ছিলো এখানেও। সমস্যা হলো গল্পটা খুবই সাদামাটা এবং এন্ডিংটা বেশ আরোপিত মনে হয়েছে। এন্ডিং এ বেশ কিছু টুইস্ট ছিলো, যার সবগুলোই জোড় পূর্বক ট্র্যাজিক করার প্রচেষ্টা মনে হয়েছে৷ বিশেষ করে ইন্সপেক্টর হাফিজের চরিত্র পুরো বইতে এমনভাবে ছিলো যে, শেষে এসে তার অমন কান্ডের কোনো মানেই হয় না। তবে প্রতিটা চরিত্রকেই অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন লেখক। এছাড়া জীবনবোধ সম্পর্কিত লেখকের কিছু উক্তিও ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রচ্ছদটাও খুবই ভালো লেগেছে।
এই কাহিনী খুব পরিচিত এক শহরের কাহিনী, চেনা মানুষের অচেনা রূপের কাহিনী, এই কাহিনী ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, ভয়, সন্দেহ ও নিয়তির। গল্পের চরিত্রগুলোর ডিটেইলিং আপনাকে মুগ্ধ করবে, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবেন আপনি। তাদের জটিল মনোস্তত্ত্ব আপনাকে চেনা চিন্তার জগৎকে এলোমেলো করতে বাধ্য!
পিপিলিকার ডানা শুরু হয় একটি খুন কে কেন্দ্র করে। খুনটা বড় অদ্ভুত। আততায়ী একই সাথে গুলি এবং গলা টিপে মেরেছে। একই সাথে এহেন কাজ করার উদ্দেশ্য কী?
গল্পের শুরুটা ভালোই ছিল। ইন্সপেক্টর হাফিজ যে ধারায় খুনিকে পাকড়াও করছিলেন তাতে তার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট টা বোঝা যাচ্ছিল। কানা ফকিরের ক্যারেক্টার ও বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল। কিন্ত আদতে আমার হাসেম এর ক্যারেক্টার টা ভালো লেগেছিল।
মাত্র ৩ টি চরিত্র কে ঘিরেই পুরো ১৯২ পেইজের একটা প্লট সাজিয়ে ফেলল লেখক। কিন্ত সত্যি বলতে বইটা পড়ে মজা পেলাম না। তার একটা কারণ খুনের খোলাশা টা অনেক সাদামাটা যদিও খুনি কে সেটা আন্দাজ করতে পারিনি। আর হাফিজ যে এমন কিছু একটা করবে তা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।
লেখকের অন্যান্য বই ধনুর্ধর এবং স্বর্নবাজ নিয়ে বেশ আশাবাদী।