Jump to ratings and reviews
Rate this book

সসেমিরা

Rate this book
উত্তরবঙ্গের হিমালয়ঘেঁষা জেলা শহর কীর্তিমারীতে ছুটি কাটাবার কথা ভাবছেন? চা বাগান আর পাহাড় দেখবার, বা বনে একটু শিকার করবার, বা শহরের রেড লাইট এরিয়ায় একটু মৌজ করবার ইচ্ছা?

আসতে পারেন, খাসা জায়গা। তবে, ইয়ে, জানিয়ে রাখি--এক পলাতক দাগী আসামি ছুরির ঘা খেয়ে মরতে মরতে ফিরে এসেছে শহরে। এক ভয়ানক অপরাধ নাকি করেছে সে, জীবনের শেষ অপরাধ : যেটার সূত্র রেখে গেছে একটা হেঁয়ালিতে। এদিকে শহরের সবচেয়ে বনেদি আর বড়লোক পরিবার বসুনিয়াদের বাড়ির বউ নিখোঁজ, সাথে করে নিয়ে গেছে বাচ্চা মেয়েকে। আর ইন্সপেক্টর রইস এমন সব আলামত পাচ্ছে যাতে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে তার মতো ঝানু অফিসারেরও।

দুটো ঘটনার মাঝে কুৎসিত একটা যোগসূত্র খোঁজার জন্য চালচুলোহীন চেহারার একটা লোক চষে বেড়াচ্ছে পুরো শহর। বিখ্যাত নেহালের পুরি বা সালামের চা খাবার সময় তাকে দেখলে ভড়কাবেন না--'টিকটিকি' কামালের কাজই হচ্ছে গন্ধ শুঁকে বেড়ানো। কিন্তু একেবারে উড়িয়েও দেবেন না তাকে, শহরকে এই সসেমিরা অবস্থা থেকে হয়তো বের করতে পারবে সে-ই।

যাকগে। তো এবারের শরতে চলে আসুন কীর্তিমারীতে--ভুলতে পারবেন না এই জায়গাকে, কথা দিচ্ছি।

160 pages, Hardcover

Published March 14, 2021

4 people are currently reading
134 people want to read

About the author

Nabil Muhtasim

23 books275 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
16 (14%)
4 stars
68 (60%)
3 stars
25 (22%)
2 stars
3 (2%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 36 reviews
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
March 22, 2021
নাবিলের স্বভাবসুলভ যে লেখনী, তার পৃথক বয়ানের দরকার বোধ করছি না। মনোলোগ অনেকেরই ভালো লাগে না, আবার অনেকের লাগে। এটাও আপেক্ষিক। আমি পরের দলে পড়ি। সসেমিরা অনেক কারণেই অনন্য। চেনা পরিবেশে লেখক যখন নিজের একটি শহর তৈরি করে নেন, তা সবসময়ই আকর্ষণ করে আমাকে। সে স্টিফেন কিং এর ক্যাসল রক হোক কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের জলেশ্বরী। কীর্তিমারীও সেই দলে নাম লিখিয়ে নিল।

সসেমিরায় আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ট্র্যাডিশনাল ডিটেক্টিভের ইমেজটা ভাঙ্গার লেখকের প্রচেষ্টা। ফেলুদা বলুন, ব্যোমকেশ কিংবা শার্লক। ডিটেক্টিভ বললে কল্পনায় যে ছবিটা ভেসে ওঠে, সেটাকে ঝেরে ফেলুন প্রথমে। এরপর সসেমিরার পাতায় ডুব দিন, বিলক্ষণ বুঝতে পাবেন কেন এ কথা বলেছি।

রহস্য উপন্যাসের মূল উপজীব্য কি? রহস্য। তবে পাঠকের আকর্ষণও তো ধরে রাখা চাই। নতুবা পাতা ওল্টাবার তাগিদটা আসবে কোত্থেকে? সেদিক বিবেচনায় নাবিল সফল। নাতিদীর্ঘ এই উপন্যাসখানি সব বয়সী রহস্যপ্রেমীদের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে বলেই মনে করি।
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
May 10, 2021
“ডিটেকটিভ গল্প সম্বন্ধে অনেকের মনে একটা অবজ্ঞার ভাব আছে- যেন উহা অন্ত্যজশ্রেণীর সাহিত্য- আমি তাহা মনে করি না। Edgar Allan Poe, Conan Doyle, G.K. Chesterton যাহা লিখিতে পারেন, তাহা লিখিতে অন্ততঃ আমার লজ্জা নাই।”- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
-
সসেমিরা
-
কির্তিমারী, উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এক জেলা। সে এলাকারই একসময়ের দুর্ধর্ষ এক অপরাধী ছিলো রঘুনাথ রায়। অনেকদিন নিখোঁজ থাকার পরে তার খোঁজ পাওয়া যায় মৃতপ্রায় অবস্থায়। সেই কথা শুনতে পেরে তার কাছে ছুটে যান কীর্তিমারী থানার এস.আই. রইস। সেখানে গিয়ে ডেথ বেডে থাকা রঘুর কাছ থেকে জানতে পারেন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বসুনিয়া পরিবার, কীর্তিমারী এলাকার এক বনেদি পরিবার। মৃতপায় অবস্থায় রঘুকে পাওয়ার পরের দিনই পুলিশের কাছে খবর আসে যে তাদের পরিবারের পুত্রবধূ নিশা এবং তার মেয়ে আলিয়া নিখোঁজ। রঘুর কেস অসমাপ্ত রেখে এস.আই. রজত শুরু করেন এই হাই প্রোফাইল ঘটনার তদন্ত। এদিকে বাকিরা রঘুর কেসের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব না দিলেও রইসের এক সোর্স "টিকটিকি কামাল" লেগে থাকে রঘুর কেসের পিছনে। এখন এত বছর পরে রঘুর প্রত্যাবর্তন এবং বসুনিয়া পরিবারের পুত্রবধূর অন্তর্ধান রহস্যের ভিতরে আসলেই কি কোন সম্পর্ক রয়েছে আর থাকলেই বা কি তা জানার জন্য পড়তে হবে লেখক নাবিল মুহতাসিম এর ডিটেকটিভ ঘরানার বই "সসেমিরা"।
-
"সসেমিরা" বইয়ের পটভূমি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের এক কাল্পনিক শহরে। শহরটি কাল্পনিক হলেও লেখকের বর্ণনাভঙ্গির কারণে মনে হয়েছে আমাদেরই চেনা পরিচিত কোন শহর এটি। সীমান্তবর্তী এই জেলার ভৌগোলিক এবং শহরের ভেতরের পরিবেশের বর্ণনা‌- হোক সেটা বসুনিয়া ম্যানসন- "রাজমহল" কিংবা রেড লাইট এরিয়া- "হিরামান্ডি" বেশ ডিটেইল্ডভাবে ফুটে উঠে চোখের সামনে।

"সসেমিরা" বইতে ডিটেকটিভ উপন্যাসের কমন কিছু ব্যাপার থাকলেও তা লেখকের লেখনশৈলীর কারণে পড়তে বেশ উপভোগ্য লেগেছে। গল্পের শুরু থেকে যে রহস্যের বিল্ডআপ হয়েছে তা শেষে এসে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সে কারণে গল্পের কিছু ক্ষেত্রে একটু অতি-নাটকীয় ব্যাপার স্যাপার এবং কিছু অতি কমন ট্রোপ থাকলেও তা মূল গল্প উপভোগে তেমন একটা সমস্যার সৃষ্টি করেনি। গল্পের ভিতরে লেখকের অনেকটা ট্রেডিশনাল লেখনশৈলী এবং হিউমারের প্রয়োগ ভালো লেগেছে।
-
বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং চরিত্র নিঃসন্দেহে "টিকিটিকি কামাল"। লেখক এই চরিত্রের মাধ্যমে আমাদের চিরচেনা প্রথাগত গোয়েন্দা টাইপের চরিত্রের বদলে নতুন এক গোয়েন্দা চরিত্র উপহার দিতে চেয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তিনি আমার দৃষ্টিতে পুরোপুরি সফল। সাধারণ চেহারার পুলিশের এক সোর্স, বইপোকা, ড্রাগ ডিলার, উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা মানুষ আবার একইসাথে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী- এ সব চরিত্রায়ন মিশে "টিকটিকি" বা "ফেউ" কামাল এক অনন্যরূপে আবির্ভুত হয়েছেন। এমনকি বইটিতে টিকটিকি কামালের ছায়ায় পড়ে বাকি চরিত্রগুলো বেশিরভাগ সময়ই লাইমলাইটের বাইরেই ছিলো।"সসেমিরা" বইয়ের নামকরণও বেশ ভালো লাগলো, পাঠকেরাও গল্পটি পড়া শুরু করলে সসেমিরা অবস্থায় পড়ে যাবেন এবং সসেমিরা নামের রহস্যের সাথে গল্পের রহস্য উদ্ঘাটনের সময়ও কিংকর্তব্যবিমূঢ অবস্থায় পড়তে পারেন।
-
"সসেমিরা" বইটির প্রোডাকশন এক কথায় বেশ চমৎকার। পেইজের মান, বাঁধাই ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগ নেই। বইয়ের প্রচ্ছদও মিনিমাল হলেও সুন্দর। তবে একই লেখকের, একই প্রচ্ছদ শিল্পীর, একই বইমেলায় প্রকাশিত একই ফর্মার আরেকটি বইয়ের সাথে তুলনা করলে দামটা একটু চোখেই পড়ে। কারণ দুইটি বইয়ের এত কিছু একই থাকার পরেও সসেমিরা বইটির দাম প্রায় দ্বিগুন বা কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। দামের এই অসামাঞ্জস্যতা বাদে "সসেমিরা" বইটির প্রোডাকশন ভিত্তিক তেমন একটা খুঁত চোখে পড়েনি।
-
এক কথায়, বাংলা সাহিত্যে ডিটেকটিভ ফিকশন বেশ প্রচলিত ধারা হলেও সসেমিরা বলতে গেলে একেবারে অন্য ধারার এক ডিটেকটিভ ফিকশন। ছোটখাট খুটিনাটি ব্যপার বাদ দিলে বইয়ের মূল ঘটনা এবং রহস্য উদঘাটন প্রক্রিয়া পড়ার পুরো সময়ই ভালো লেগেছে। যে সকল পাঠকদের ডিটেকটিভ থ্রিলার বা সাসপেন্স থ্রিলার পছন্দ তাদের জন্য বইটি রেকমেন্ড থাকলো।
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
March 28, 2021
আ ওয়ান্ডারফুল রিড। বেশ ভালো একটা গল্প। সুলেখক নাবিল মুহতাসিমের গল্প বলার ধরন আমার এমনিতেই পছন্দ। গল্প বলেন নিজের মত করে পাঠককে শুনিয়ে। গল্প যেমনই হোক ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করার চেষ্টা থাকে তার। সসেমিরাও এরকমই একটা বই।
গোয়েন্দাগল্পে মানুষ ডিটেকটিভকে প্রধান চরিত্র বানায়। এখানে উনি ডিটেকটিভকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে প্রধান চরিত্র বানিয়েছেন ইনফর্মার কামালকে। যার আবার শার্লক হোমসের মত অনুমান ক্ষমতাও রয়েছে। কামাল পড়ুয়া, বিচক্ষণ, পার্ট টাইম ড্রাগ বেঁচে আর পুলিশের ইনফর্মার। কিন্তু শখ ডিটেকটিভের মত কেস সলভ করা। এই টিকটিকি কামালকে নিয়েই এগিয়ে গিয়েছে গল্প। নিঃসন্দেহে পেজ টার্নার, সাসপেন্স ছিল, টুইস্ট অল্প হলেও অনুমান করার মত নয়। লেখক হিউমারের প্রয়োগ করেছেন ভালো সেইসাথে প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনাও ভালো লেগেছে। অযথা বর্ণনা ছিল না কোনো। শেষের দিকে এক জায়গায় নাম বিভ্রাট ঘটেছে সম্ভবত।
যাইহোক টিকটিকি কামালকে নিয়ে আরও কয়েকটা বই চাই।
Profile Image for উচ্ছ্বাস তৌসিফ.
Author 7 books69 followers
April 19, 2021
পর পর দুটো বই পড়ে শেষ করলাম। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আর সসেমিরা। দ্বিতীয় শব্দটার মানেও একই - কিংকর্তব্যবিমূঢ়! এখানে অবশ্য দ্বিতীয়টা নিয়েই বলব, ছোট্ট করে।

সসেমিরাকে বলা যায় ক্লাসিক ডিটেকটিভ ফিকশন। প্রধান চরিত্র, ক্ষুরধার মস্তিষ্ক বলে যে আসলে গল্পের ডিটেকটিভ, তার নাম 'টিকটিকি কামাল'। ঠিক ধরেছেন, পুলিশের ফেউ বলেই লোকে তাকে টিকটিকি বলে। চরিত্রটাকে আমার ভালো লেগে গেছে। আপনারও লাগবে। না লেগে উপায় নেই। বই পড়ে, একাকী জীবন যাপন করে, জীবন যার ন���ঃসঙ্গ নক্ষত্রের মতো, মিটিমিটি জ্বলে, নিভে গেলেও যার খবর কেউ জিজ্ঞেস করবে না, যার জীবনে স্বপ্নের ঘোরের মতো লেগে আছে এক পতিতার প্রতি টান - জীবনানন্দের কবিতার বনলতা সেনের মতো যে মেয়েটিকে কামাল দেখেছিল এক মুহূর্তের জন্য; সেই 'টিকটিকি কামাল'কে ভালো না লেগে উপায় কী?

দাগী এক আসামীর ডেথ বেডে গল্পের শুরু। নেমেসিস তার এক পুলিশ অফিসার, রইস; যার টিকটিকি কামাল। প্রচণ্ড ঝড়ের রাত শেষ হতে হতে শুরু হলো আসল ঝড়। জানা গেলে, গায়েব হয়ে গেছে বসুনিয়া বাড়ির বউ। শহরের সবচেয়ে বনেদি আর বড়লোক পরিবার এই বসুনিয়াদের। পুলিশ-ই এদের চাকর হয়ে থাকে বাধ্য হয়ে, টিকটিকি কামাল সেখানে তৃতীয় স্তরের প্রাণী, বলাই বাহুল্য। কামালের কাজই হচ্ছে গন্ধ শুঁকে বেড়ানো। এই গন্ধ শুঁকে শুঁকেই ঝড়ের ভেতরে তারা দেখে দেখে দশ দিকের সব সুতোকে এক কোণে মিলিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে কামাল। আর মাঝে মাঝে নাবিল মোহতাসিমের সিগনেচার সাইনের মতো দেখা দেবে কবিতারা।

গল্পটা শুনিয়েছেন লেখক একদম আসর বসিয়ে, বৈঠকি ঢঙে। বিরক্তি আসবে না এক মুহূর্তের জন্যেও। সমাধানটাও দিয়েছেন এমনভাবে, এক মুহূর্তের জন্য বইয়ের নামটা মাথায় ধাক্কা দিয়ে যাবে ঠিকঠিক, সসেমিরা!

পড়া শেষে মনে পড়ে গেল মাসুদ রানার 'অগ্নিপুরুষ' এবং কেইগো হিগোশিনোর 'দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স'-এর কথা। কেন, তা বুঝতে পারবেন পড়া শেষ হলেই। ভালো লেগেছে আমার। কুঁচকে গিয়েছিলাম মনে মনে দাগী আসামী রঘুর জবানবন্দি শুনে। শেষটা তাই ভালো লেগেছে একটু বেশিই। ক্লাসিক ডিটেকটিভ ফিকশন!

এই বইটার বাঁধাই, পৃষ্ঠা - দুটোই বেশ ভালো। তবে আরেকটু ভালো করা প্রয়োজন বাঁধাইতে। তাহলে ষোল আনা পূর্ণ হবে। প্রচ্ছদ করেছেন পার্থপ্রতিম দাস। তাঁরও প্রশংসা প্রাপ্য।

কীর্তিমারিতে যারা আজও ঘুরতে যাননি, ঢুকে পড়তে পারেন সসেমিরা হাতে নিয়ে। ভালো লাগবে, সে কথা বলে দেওয়া যায়।
----------------------------
সসেমিরা
লেখক : নাবিল মোহতাসিম
প্রকাশক : অবসর প্রকাশনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : পার্থপ্রতিম দাস
পৃষ্ঠা : ১৬০
মুদ্রিত মূল্য : ৩০০/-
Profile Image for Payel Nusrat.
89 reviews16 followers
April 9, 2021
সসেমিরা--একটু অপরিচিত শব্দ,তবে বাংলা শব্দই।কালিদাস রচিত দ্বাত্রিংশ পুত্তলিকা গল্পে পাওয়া যায় শব্দটি,অর্থ সংকটজনক অবস্থা।
কাহিনীর পটভূমি উত্তরবঙ্গের কীর্তিমারি।পাহাড়-নদী-সবুজ-নীলে ছাওয়া লেখকের বর্ণনামতে মোটামুটি স্বপ্নালু একটা জায়গা।কীর্তিমারি ও অন্যান্য পরিবেশ বর্ণনার জন্য বিভূতিভূষণের আরণ্যকের ভক্ত লেখককে দশে এগারো দেয়া যায়।এখানেই বাস করে পুলিশ অফিসার রইস এবং তার ইনফরমার টিকটিকি কামাল।বহু বছর পর কীর্তিমারির হাসপাতালে আবির্ভাব হয় মোস্ট ওয়ান্টেড সিরিয়াল কিলার রঘুর,মৃত্যুর আগে রইসের সাথে কথা বলতে চায় সে।কিন্তু জবানবন্দি দেয়ার নাম করে রইসকে যেন খেলাচ্ছে রঘু।ওদিকে শহরের ধনকুবের বসুনিয়া পরিবারের পুত্রবধু ও নাতনি নিখোজ।সেই কেসের দায়িত্বও রইসের।এতদূর পড়ে মনে হচ্ছে না যে সসেমিরার নায়ক রইস??কিন্তু আদতে রইস পার্শ্বচরিত্র।
নায়ক হলো টিকটিকি কামাল,যার সবকিছু হলো অনায়কোচিত।চেহারা,পেশী কিছুই নেই,সামান্য পুলিশের ফেউ,সবাই ডাকেই টিকটিকি নামে।অতএব ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব দিয়ে যে বাকি ঘাটতি সামাল দিবে তাও নেই।কিন্তু নায়ক হওয়ার জন্য তার একটিই অস্ত্র আছে,ধারালো বুদ্ধি,ডিডাকশন পাওয়ার,পড়াশোনার মেলবন্ধনে শান দেয়া একটি মস্তিষ্ক।রঘু ও বসুনিয়া দুটো কেসেই সে নিজের মতো তদন্ত করা শুরু করে,আস্তে আস্তে চাকচিক্যের আড়ালের পঙ্কিলতা বেড়িয়ে আসতে থাকে।

ভালো দিক--
১.পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকের বর্ণনা খুবই চমৎকার
২.অভিনব প্রধান চরিত্র।এতটা নিষ্প্রভ আর জেল্লাবিহীন গোয়েন্দা হতে পারে,এমন নিদর্শন সাহিত্যে খুবই কম।আমার জানামতে শুধু এক অখ্যাত ইংরেজি পেপারব্যাক বইয়ে এমন একটি চরিত্র পেয়েছিলাম।আর প্রধান চরিত্র তৈরিতে লেখকের যত্নের ছাপ স্পষ্ট।
৩.রহস্য উদঘাটন দৃশ্যের কমিক্যাল উপস্থাপনা।
৪.লেখকের কমফোর্ট জোনের বাইরের কিছু বিষয় ও দৃশ্য তার লেখার growth কে তুলে ধরে।
৫.গত বছরের লেখা আর এই বছরের লেখার তুলনা করা হলে পরিবর্তনটা ধনাত্বক ও জ্যামিতিক হারে ঊর্ধ্বমুখী।
৬.শার্প নারী চরিত্র (i will never falter in appreciating this fact)

খারাপ দিক--
১.পার্শ্বচরিত্র গঠনে আরো মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিলো।
২.কিছু কনক্লুশন অ্যান্টিক্লাইমেক্টিক মনে হয়েছে (সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত)।
৩.কিছু চরিত্রের নাম অতি নাটকীয়।
৪.বইয়ের সবাই প্রচন্ড ধুমপান করে বা ধুমপান করার কথা চিন্তা করে (লেখককে সিগারেট আরো বেশি টানতে দিতে হবে মনে হয়,নিকোটিন উইথড্রয়ালের এফেক্ট পড়েছে লেখায়🙄)
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
August 24, 2021
টিকটিকি কামালের ফ্যান হয়ে গেছি। আমার কাছে বইটা বেশ ভালো লেগেছে। আশা করি লেখক এই চরিত্রকে নিয়ে আরো বই লিখবে।
Profile Image for Salman Sakib Jishan.
272 reviews158 followers
June 8, 2021
বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস আবিষ্কার করে চেঁচিয়ে ওঠেন 'ইউরেকা! ইউরেকা!!' বলে!
আর এই গল্পের নায়ক ঝামেলায় পড়লেই বিড়িবিড় করে বলতে থাকেন, 'সসেমিরা। সসেমিরা।' 😝

এই নতুন যুগের লেখকদের মধ্যে লেখক নাবিল মুহতাসিমের নামটার উপর আমার অনেক ভরসা। নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেই যাচ্ছেন, আর দারুণ সব গল্প সৃষ্টি করছেন। সসেমিরা এই বইমেলার একটা ভালো হাইপ তোলা বই, পাঠকনন্দিত ও সুখপাঠ্য।
'সসেমিরা'-র আরেক শাব্দিক অর্থ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বইটা একটা গোয়েন্দা উপন্যাস! মানে লেখক এক নতুন গোয়েন্দা চরিত্র আনতে যাচ্ছেন বাংলায়। যেই গোয়েন্দার বর্ণণা শুনে আসলেই ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। এই চালচুলোহীন, পুলিশের ইনফর্মার লোকটাই এই গল্পের সব? দারুণ একটা ক্যারেক্টার বিল্ডাপ ছিলো বইটা। আমার যে ভালো লেগেছে বইটা এতক্ষণে বুঝে যাবার কথা।
নাবিল মুহতাসিম উত্তরবঙ্গের লোক। তিনি উত্তরবঙ্গকে প্রায়ই তুলে আনেন। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। হুমায়ুন আহমেদ তাঁর সব লেখায় নেত্রকোনা আর ময়মনসিংহের যে ঐতিহ্য তুলে আনতেন, লেখক শরীফুল হাসান যেভাবে আনেন, উনিও ওনার অঞ্চলকে নিজেরমতো তুলে ধরেন সগৌরবে। অত্যন্ত সুন্দর বর্ণণার জন্য বইয়ের ভেতর দিয়েই উত্তরবঙ্গ দেখতে পাচ্ছিলাম। লেখক যে একজন দারুণ পাঠকও, সেটা পড়লেই বোঝা যায়। আরেকটা ব্যাপার যেটা ভালো লাগে, ছোটছোট ডিটেইল, হিউমার, আর ক্যারেক্টার এর মনের কথাগুলোর বর্ণণা। সুন্দর।
বইটা ছোট, ১৫৮ পৃষ্ঠা। গতিশীল ঘটনা, শেষ ৬০পৃষ্ঠা তো দারুণ। ছেঁড়া সুতোগুলোর মিলও দারুণভাবে হয়েছে।

যাহোক, সামান্য কিছু নেগেটিভ দিক আছে অবশ্যই। গল্পটা একটু একচরিত্র কেন্দ্রিক হয়ে গেছে বোধহয় বেশি। অন্য ক্যারেক্টার গুলো হঠাৎ এলো, হঠাৎ পরিণতি পেলো ধরণের। কিছু অমিমাংসীত ব্যাপার বোধহয় ইচ্ছা করেই করেছেন লেখক। এইতো, আরও কিছু থাকলে থাকতে পারে। আমার বই ভালো লেগেছে... সো, 'সাব্যে সত্ত্বা সুখিতা ভবন্ত!'

পড়ে ফেলুন!🧡
Profile Image for Wasee.
Author 49 books784 followers
January 23, 2022
শুধুমাত্র টিকটিকি কামাল আর কীর্তিমারী শহরের বর্ণনার জোরেই 'সসেমিরা' বইটা মনে দাগ কাটবার মতো। তার সাথে ওয়েল ব্যালেন্সড মিস্ট্রি আর নাবিলের সিগনেচার স্টোরিটেলিং - মণিকাঞ্চন যোগ।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
March 18, 2022
কাহিনিতে তেমন নতুনত্ব বা চমক না থাকলেও টিকটিকি কামালের কথা অনেকদিন মনে থাকবে।
Profile Image for Shanto Hasib.
8 reviews3 followers
April 18, 2021
একেবারেই অন্যরকম এক ডিটেকটিভের গল্প পড়লাম।
আর নাবিল ভাইয়ের স্পেশাল লেখনী 💙💙
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
February 12, 2025
বইটা কাল পড়া শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ডজনখানেক বার আউড়েছি "কী একটা সসেমিরা অবস্থা!" বইটার নামকরণ এতটাই ভালো লেগেছে আমার।

বইটার কাহিনি হলো পুলিশের সোর্স টিকটিকি কামালকে নিয়ে। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর চরম বিশ্লেষণী ক্ষমতার কামালকে কীর্তিমারী শহরের সবাই চেনে। কামাল আসল খেলটা দেখায় মিঠাপুকুরের জোড়া খুনের মামলায়, যদিও কৃতিত্বটা পায় পুলিশ অফিসার রইস।

এলাকার নামজাদা বসুনিয়া পরিবারের বউ নিখোজ, সাথে করে নিয়ে নিয়ে একমাত্র শিশুকন্যাকে।

একই সাথে শহরে ফিরে এসেছে কুখ্যাত আসামী রঘু। সাথে নিয়ে এসেছে ছুরির আঘাত আর কাগজে লেখা এক হেয়ালি। যেই হেয়ালির সমাধান করলে মিলবে কোনো একটা রহস্য।

রঘুর ছুরির আঘাতের মতোই রহস্যময় হলো বসুনিয়া বাড়ির বউ গেলো কোথায়!

তবে সসেমিরা উপন্যাসটি আমার কাছে মনে হয়েছে ক্যারেকটার বেজড উপন্যাস, স্টোরি বেজড নয়। কারণ কাহিনি মোটামুটি সাধারণ আর এর সমাধানও খুব জটিল কিছু নয়। ক্রাইমটাও বড়সড় কিছু নয়।

কিন্তু নাবিল মুহতাসিম ভাই দশে দশ পাবেন ক্যারেক্টার বিল্ডআপের জন্য। কামালকে আপনাত ভালো লাগবেই। সাথে পার্শ্বচরিত্রগুলো যেমন পুলিশ অফিসার রইস কিংবা বসুনিয়া বাড়ির সাইম বসুনিয়াকে আপনার ভালো লাগতে বাধ্য।

কামালের বিশ্লেষণ কিংবা ক্ষুরধার মস্তিষ্কের কারসাজি আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত।

শুরুতে খানিকটা স্লো হলেও এরপর হুট করেই গতি পায় বইটা। যেই গতি থামে একদম শেষে গিয়ে।

টিকটিকি কামালের জন্যই বইটা বেশ উপভোগ্য লেগেছে। বইটি পড়ার রেকমেন্ডেশন থাকলো।

বই: সসেমিরা
লেখক: নাবিল মুহতাসিম
প্রকাশনি: অবসর প্রকাশনা সংস্থা
Profile Image for Junaed Alam Niloy.
86 reviews10 followers
June 6, 2021
ঠিক জমলো না। আরো ভালো হতে পারতো।
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
November 27, 2021
⚈ স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛সসেমিরা❜

❝রঘুর স্বীকারোক্তি, আহত হওয়া, কাগজে লেখা ক্লু, হীরামন্ড, লায়লা লায়লা লায়লা...লায়লা, নিশা বসুনিয়া আর আলিয়ার অন্তর্ধান, ঝোপের ভেতরে রক্তমাখা গাড়ি, ধরা না-দেয়া গানের কলি, রইসের ধমক, আসলামের বন্ধুত্বের হাসি...❞

পুরো এক ঝাঁক সসেমিরা। আচ্ছা, সসেমিরা কী? সহজ ভাষায়—কিংকর্তব্যবিমূঢ় অথবা সংকটাপন্ন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার সময়কে বোঝায়। কখন আসে এই সসেমিরা? সেটার উত্তর অন্তত আমার জানা নেই৷ তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, হুট করে এইরকম এক বাহ্যজ্ঞানশূন্য অবস্থায় আমরা সকলেই হাবুডুবু খেতে থাকি। সেটা হোক সময়ে অথবা অসময়ে। হোক একটি অথবা কয়েকটি। তবে এই ❛সসেমিরা❜ বইটি পড়ার পর—সেই বিমূঢ় অনুভূতি ক্ষণিকের জন্য হলেও জাগ্রত হওয়াটা দোষের কিছু নয়। লেখক পুরো গল্পটি লিখেছেন ঠিক সেইভাবে। পছন্দ করার এবং পছন্দ না করার দুই কারণ-ই বেশ পোক্ত। তবে আমার নিক্তিতে পছন্দের দিকটি ভারী থাকবে এই অভয় দিতে পারি। লেখক শব্দ আর বাক্যের গভীরতা নিয়ে যে খেলা খেলেছেন, তা বেশ প্রলুব্ধ করেছে বটে।

❛সসেমিরা❜ বইয়ের প্লট গতানুগতিক ডিটেকটিভ থ্রিলার হলেও, টেস্ট বা ফ্লেভার পুরোপুরি ভিন্ন। সেই ভিন্নতার মূল কারণ লেখনশৈলী। আঞ্চলিক শক্ত সাহিত্য ও কাব্যিক মনোহারিতা এই কাহিনির আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। আপনি যদি সোজা-সাপটা গল্প রেখার পথে চলতে পছন্দ করেন তাহলে হতাশ হতে পারেন। এই কথাটা আমি আরও কয়েকবার রিপিট করব। বলব না এইটা আপনার জ্ঞানের ঘাটতি; তবে পছন্দের কমতি। লেখকের লেখনশৈলী সম্পর্কে কিছুটাও ধারণা যদি থাকে; তবেই বইটি হাতে তুলে নিন। এর পরে হারিয়ে যান উত্তরবঙ্গের হিমালয়...

➲ আখ্যান—

উত্তরবঙ্গের হিমালয়ঘেঁষা জেলা শহর কীর্তিমারীতে ছুটি কাটাবার কথা ভাবছেন? চা বাগান আর পাহাড় দেখবার, বা বনে একটু শিকার করবার, বা শহরের রেড লাইট এরিয়ায় একটু মৌজ করবার ইচ্ছা?

আসতে পারেন, খাসা জায়গা। তবে, ইয়ে, জানিয়ে রাখি--এক পলাতক দাগী আসামি ছুরির ঘা খেয়ে মরতে মরতে ফিরে এসেছে শহরে। এক ভয়ানক অপরাধ নাকি করেছে সে, জীবনের শেষ অপরাধ : যেটার সূত্র রেখে গেছে একটা হেঁয়ালিতে। এদিকে শহরের সবচেয়ে বনেদি আর বড়লোক পরিবার বসুনিয়াদের বাড়ির বউ নিখোঁজ, সাথে করে নিয়ে গেছে বাচ্চা মেয়েকে। আর ইন্সপেক্টর রইস এমন সব আলামত পাচ্ছে যাতে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে তার মতো ঝানু অফিসারেরও।

দুটো ঘটনার মাঝে কুৎসিত একটা যোগসূত্র খোঁজার জন্য চালচুলোহীন চেহারার একটা লোক চষে বেড়াচ্ছে পুরো শহর। বিখ্যাত নেহালের পুরি বা সালামের চা খাবার সময় তাকে দেখলে ভড়কাবেন না--'টিকটিকি' কামালের কাজই হচ্ছে গন্ধ শুঁকে বেড়ানো। কিন্তু একেবারে উড়িয়েও দেবেন না তাকে, শহরকে এই সসেমিরা অবস্থা থেকে হয়তো বের করতে পারবে সে-ই।

যাকগে। তো এবারের শরতে চলে আসুন কীর্তিমারীতে--ভুলতে পারবেন না এই জায়গাকে, কথা দিচ্ছি।

➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

❛সসেমিরা❜ নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া অদ্ভুত সুন্দর। অদ্ভুত বলার কারণ, আমি গল্পের মধ্যে না যতটা ডুবেছি তার চেয়েও কাব্যিক আর বিস্তারিত লেখনশৈলীর আবহে হারিয়েছি। ঠিক যেন আপন পটভূমির অবয়বের সাথে অনুরূপতা রাখতে এইরকম লেখনশৈলীর অবতারণা। লেখকের বিচক্ষণ চিন্তাশক্তিকে সাধুবাদ জানাতে হয়। আমি বলি, যদি আপনাদের একই রকম বা একঘেয়েমি গল্প আর লেখনশৈলী পড়তে পড়তে ভ্রুকুঞ্চন হওয়ার অবস্থা, তখনই ডিফারেন্ট টেস্টের জন্য এই বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন। যদি আপনি সর্বভুক অথবা বাছবিচারের থোড়াই কেয়ার করা পাঠক হয়ে থাকেন তবেই৷ আপনি ❛সসেমিরা❜ উপন্যাসে একটি সাসপেন্স ও টুইস্টে পূর্ণ গল্প পাবেন, চরিত্রের সাথে খাপ খাওয়ানোর যথোপযুক্ত সময় এবং গল্পের অন্দরমহলে প্রবেশের জন্য পাবেন খোদ লেখকের সহযোগিতা। আশা করছি এর চেয়ে বেশি কিছুর পাঠক হিসেবে আপনার প্রয়োজন হবে না।

● সূত্রপাত—

গল্পের শুরুটা আসামের পাহাড় থেকে কুড়িগ্রামে নেমে আসা হাতির মতো পাছা দুলিয়ে খানাখন্দে ভরা কাদায় মাখামাখি রাস্তায় ধরে চলা পুলিশ ভ্যানের ভেতরে থাকা একজন ড্রাইভার, একজন ইন্সপেক্টর ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে। তাদের যাতায়াতের উদ্দেশ্য—রঘু নামের এক দাগি আসামির জীবনের শেষ অপরাধের বয়ান শোনা। কী সেই বয়ান? অন্যদিকে শহরের সম্ভ্রান্ত বসুনিয়া পরিবারের কুলবধূ তার বাচ্চা মেয়ে নিয়ে নিখোঁজ! গেল কোথায়? একসাথে একই সময়ে জট পাকানো দুইটি সত্য অন্বেষণের গুরু দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে ইন্সপেক্টর রইসের ডান হাত টিকটিকি কামাল! এখন প্রশ্ন কে এই কামাল? সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ডুব দিতে ❛সসেমিরা❜র জগতে।

● গল্প বুনট • লেখনশৈলী • বর্ণবিন্যাস—

❛সসেমিরা❜ উপন্যাসের প্রতি পাতায় মুগ্ধতার একটা রেশ সারাক্ষণ বজায় ছিল আগ্রহব্যঞ্জক লেখনশৈলী জন্য। বিস্তারিত বর্ণনার নিখুঁত প্রদর্শনের মাধ্যমে গল্প সাজানোর দক্ষতা বেশ সুবিন্যস্ত। ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে সাবলীল বাক্য প্রয়োগ—এক অন্য রকম আবহের সৃষ্টি করেছে। শর্টকাটে গল্প পড়া অথবা অল্পতে কাহিনি বর্ণনার স্বাদ গ্রহণ করা পাঠক শ্রেণি এই দিকটা হয়তো কম পছন্দ করতে পারেন। যদি পরিশুদ্ধ লেখনশৈলীর পারফেক্ট একটা মঞ্চায়ন দেখতে চান, তাহলে এই বই আদর্শ বলে বিবেচিত হবে। লেখকের তীক্ষ্ণ বর্ণবিন্যাস পাঠক মনে পারিপার্শ্বিক আবহ ও সংলাপের প্যাঁচানো সরল স্বাদের ছোঁয়া দিবে। দিক নির্ণয়ের মধ্যে ধাঁধা পূরণ, বৃহৎ বর্ণনার সংক্ষিপ্ত রূপ ও হালকা হিউমারের স্পর্শ থেকে বঞ্চিত করবে না লেখক মোটেও। পুরো তিনটে দিক বিবেচনা করে, বইটি অন্য লেভেলের বলব না তবে অন্য রকম স্বাদের।

● চরিত্রায়ন—

চরিত্র গঠন হয়েছে ধীর লয়ে। একেবারে চারা গাছ রোপণ হতে বেড়ে ওঠা আগ পর্যন্ত নির্ভুল পরিচর্যায় গড়া। প্রত্যকটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ, কাজের উদাহরণ টানলে; পাকা কারিগরের নিপুণ হাতে কাঠ কুঁদে বানানো কোনো নিখুঁত মূর্তির মতো। তবে সেই বিশেষ আর্কষণ ধরে রাখা পুরো গল্পের প্রধান মূর্তি অনেকে হলেও, টিকটিকি কামাল আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। এই গল্পের কামাল চরিত্রটি বেশ আপন মনে হবে। বিষাদে পূর্ণ আর ভবঘুরের এক সত্তার বলয় যেন কামালের চারপাশে ঘুরছে অনবরত। নিজের সাথে রিলেট করার কয়েকটি দিকও পেয়ে যাবেন। বাকি চরিত্রের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে কিছু বলছি না, বইয়ের জন্য তুলে রেখে দিলাম।

● অবসান—

গল্পটার সমাপ্তি যে-ভাবে চেয়েছি; হয়েছেও ঠিক সেইভাবে। শেষ পৃষ্ঠার সংলাপ আর কবিতাটা ছিল বেশ অর্থবহ। নির্দিষ্ট দুইটি সম্পর্কের উল্লেখ আছে এই গল্পে, সাসপেন্স আর টুইস্ট হিসেবে তা না-হয় আপনাদের জন্য তোলা থাক।

● খুচরা আলাপ—

লেখক উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া পুরোটাই যেন এই ❛সসেমিরা❜ উপন্যাসে বন্দি করেছেন। যখন যে সংলাপ আর শব্দ ব্যবহার করা প্রয়োজন সেটা করেছেন। শুরুতে ভেবেছি এই বই নিয়ে ছোটো প্রতিক্রিয়া জানাব, কিন্তু তা আর হলো কই? তা-ও কতটা ব্যক্ত করতে পেরেছি জানি না। তবে বই শেষে তৃপ্তিকর অনুভূতি ঠিকই পেয়েছি।

➣ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

লেখক নাবিল মুহতাসিম ভাইয়ের লেখার সাথে পরিচয় ওনার একটা ছোটো গল্প দিয়ে। যেটা ‘সতীর্থ গল্প সংকলন ২’ গল্প সংকলনে রয়েছে। ওনার ‘বাজি’ ট্রিলজি কালেক্ট করেছি অনেক আগেই কিন্তু এখনো পড়া শুরু করিনি। তবে এখন আর দেরি করাটা ঠিক হবে না। পাশাপাশি ‘বিভং’ আর কেপি ভাইয়ের সাথে কম্বো ‘যুগলবন্দি’ বইটাও আছে।

● সম্পাদনা ও বানান—

সম্পাদনা ভালো হয়েছে, তবে প্রচলিত অনেক বানানের ভুল খুঁজে পেয়েছি। তাতে অবশ্য বিরক্তিকর কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

● প্রচ্ছদ • নামলিপি—

প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে, বিশেষ করে কালার গ্রেডিং আর ❛সসেমিরা❜ নামের ওপর সাদা আর বেগুনি জলবিম্ব ও মানুষ অবয়বের প্রতীকটি আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে।

● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা—

প্রোডাকশন ভালো। শক্ত বাঁধাই, উন্নত মলাট আর ক্রিম কালারের পৃষ্ঠা। তবে দামটা একটু বেশি মনে হয়েছে।

⛃ বই : সসেমিরা • নাবিল মুহতাসিম
⛁ জনরা : ডিটেকটিভ থ্রিলার
⛃ প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২১
⛁ প্রচ্ছদ : পার্থপ্রতিম দাস
⛃ প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা
⛁ মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা মাত্র
⛃ পৃষ্ঠা : ১৬০
Profile Image for Pranta Dastider.
Author 18 books329 followers
June 25, 2021
It's a good read. I specially liked that the author didn't decide to glorify any character here. They were with flaws and quite real. And down to the end they remain so. Plotline is okay, and writing is good most of the parts. Try it if you want a fast read.
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
August 5, 2022
এ বছরের পড়া সেরা বইগুলোর একটা নাবিল মুহতাসিমের 'সসেমিরা'। আফসোস হচ্ছে এই বইটা নিয়ে বেশি আলাপ দেখি না। এত দারুণ লিখনশৈলীতে লেখা বইটা নিয়ে আলাপ কেন এত কম আমি বুঝলাম না। চরিত্রায়ন নিয়ে একটু ঘাটতি থাকলেও লেখা দারুণ স্মুথ। সেই সাথে প্লেইন প্লটটাও বেশ ভালো। ইচ্ছা আছে এই বইটা নিয়ে ডিটেইল কথা বলবো। তবে তা করার আগে বলতে চাই, আপনি যদি খুব চমৎকার লিখনশৈলীর কোন থ্রিলার বই পড়তে চান তবে এ বইটা আপনার লিস্টে অ্যাড হওয়া উচিত।
Profile Image for শোয়েব হোসেন.
193 reviews13 followers
December 29, 2021
লেখার ভঙ্গি ভালোই লাগছে, কিন্তু প্লট কেমন যেন ক্লিশে। তাছাড়া রহস্যটাও ঠিক জমে ওঠার আগেই খোলাসা হয়ে গেল। এবং 'শোয়িং' এর পরিবর্তে প্রচুর 'টেলিং' ছিল।
Profile Image for فَرَح.
188 reviews2 followers
September 10, 2023
কামাল চরিত্রটা বেশ অন্যরকম ছিল। এমন অসহায় আর লোকের চড়-থাপ্পর খাওয়া গোয়েন্দা বেশ বিরল। প্রকৃতির বর্ণনা আর গল্প বলার ধরণটাও সুন্দর।
দিন শেষে আসল জিনিস যেই গল্প, একদম নিরামিষ আর বিরক্তিকর।
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews350 followers
December 4, 2023
বইটার একটা সার্থকতা : আমার কাছে বইয়ের চরিত্রগুলোকে নিতান্ত সাধারণ মনে হয়েছে। গড়পড়তা, ম্যাড়মেড়ে। তথাপি, বাস্তবিক।

এই প্রথম থ্রিলার/মিস্ট্রি গল্পের একজন প্রটাগনিস্টকে দেখলাম, স্পটলাইট যার ওপর নাই, এবং আলোর নিচেও নিতান্ত সাদামাটা। পুলিশের একজন ইনফর্মার সে, যে সালাম দিয়ে চলে ছিঁচকে পকেটমার থেকে পুলিশের ইন্সপেক্টর, সবাইকে। সিস্টেমের যে কেউ তাকে জুতায় পিষতে পারে, স্মাগলিং আর ড্রাগের ব্যবসার গন্ধ যার গায়ে। তবু তার ঘুপচি ঘরে বইয়ের স্তুপ, যেখান থেকে কখনো বেরোয় বিষাদ সিন্ধুর প্রথম সংস্করণ, লেখকের সই সহ। বই পড়া ধারালো মগজ অথবা 'শার্লক-সমতুল' পর্যবেক্ষণশক্তি অবশ্য তার সম্মান কিছুমাত্রে বাড়ায় না। গুণের জোর তাকে তার শ্রেণি থেকে তুলে আনতে ব্যর্থ। 'টিকটিকি কামাল' পাঁকে গড়াগড়ি খায়, লাথি-গুঁতা খায়। হাত কচলায় তামাম পেশার সামনে। পরে পলিস্টারের প্যান্ট, সেকেন্ড হ্যান্ড শার্ট, ফুটপাথে বিশ টাকায় চুল কাটে বলে চেহারা শ্রী-হীন।

এই টিকটিকি কামালের হাতে একে একে রহস্যের জট খুলে যাওয়া একটু তাড়াহুড়ো মনে হয়েছে। অন্তত পাঠককে ভাবার সুযোগ বেশিরভাগ অংশে লেখক দেননি, ক্লু-গুলোও পাঠককে দেখাননি। যেভাবে লেখক লিখেন, তাতে দেড়শ পৃষ্ঠার বিস্তারকে কম বলে মনে হয়েছে।

টিকটিকি কামালকে নিয়ে আরো যত্ন নিয়ে গল্প সাজাতে পারেন লেখক। চরিত্রটা জমবে।

ও হ্যাঁ, সসেমিরা'র সবথেকে ভালো জিনিস বোধহয় লেখকের কল্পিত শহর 'কীর্তিমারি'। এতে জলপাইগুড়ি-দার্জিলিংসুলভ পাহাড়ের উপস্থিতি আছে, মফস্বলেও কেতাদুরস্ত রেড লাইট এরিয়া আছে। আছে ব্রিটিশ আমল থেকে জমিদারী চালানো প্রভাবশালী পরিবার। আর সর্বোপরি, আছে উত্তরবঙ্গের ভাষা। কীর্তিমারী আবার বৃহত্তর রংপুরেই কি না।

সংযোজন : ছাপা'র ভুল ঘটে, তাই বলে 'সাঁওতাল-ওরাওঁ' স্থলে 'সাঁওতাল-ওরাং ওটাং'?
অবসর প্রকাশনা এত দায়িত্বহীন হলো কবে?
Profile Image for Mahmudul Hasan.
16 reviews2 followers
March 31, 2021

বাজারে বা পথেঘাটে তাকে দেখলে দুইবার ফিরে চাইবেন না আপনি। অ��ি সাধারণ চেহারা—মাথার চুল কাকের বাসা, আধভাঙা গালে সাতদিনের না-কামানো দাড়ি, রোদেপোড়া চামড়া নিশ্চয়ই সারা দিন বাইরে ঘোরার ফল, কালচে ঠোঁট দেখে বোঝা যাচ্ছে সিগারেটপ্রীতিটা অতিরিক্ত। একহারা গড়ন, সাড়ে পাঁচ ফিটের একটু বেশি লম্বা। পৌরবাজারে মাছ কেনার সময় বা শ্যামপুর স্টেশনের ভিড়ে এই লোক আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও টের পাবেন না। খালি চোখটা বাদে। ওই তীক্ষ্ণ ছুরির মতো নজর যেন ভেতরটা দেখে ফেলে। এমন চোখের সামনে ন্যাংটো মনে হয় নিজেকে।


এভাবেই দৃশ্যপটে প্রথম প্রবেশ করে নাবিল মুহতাসিমের ডিটেকটিভ 'টিকটিকি' কামাল। শার্লকের মতো অবজারভেশন ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে চমকে দেবার ঝোঁক বাদ দিলে ডিটেকটিভ হিসেবে কামালের মতো ইউনিক ক্যারেক্টারাইজেশন আর দেখিনি!

কামাল ইন্সপেক্টর রইসের একজন সোর্স বা ইনফরমার। সে প্রচণ্ড বই পোকা—সারাদিন সস্তা স্মার্টফোনে পিডিএফ পড়ছে। উত্তরবঙ্গের চলিত ভাষা ব্যতীত তাকে কথা বলতে শোনা যায়নি। কিন্তু তাবৎ বিষয় সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল সে, এলাকার কোনো খবর তার অজানা নয়। একটা ক্লোজ-নিট-কম্যুনিটিতে যাওবা গোপনীয়তা থাকার কথা সেটাও কামালের নখদর্পনে রয়েছে। এমন একজন স্ট্রিট-স্মার্ট লোকের অনুসন্ধিৎসু মন থাকা বা গ্রে-সেলের সার্থক প্রয়োগ করতে পারা ব্যাপারটা সেন্স-মেক করে। এই বিচারে কামাল একজন খুবই খুউল ড্যুড—আমার ভীষণ পচ্ছন্দ হয়েছে, মনে দাগ কেটেছে।

সামগ্রিকভাবে সসেমিরা এমনই এক সম্পূর্ন ভিন্ন ধারার ডিটেকটিভ থ্রিলার। সসেমিরার আভিধানিক অর্থ কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তবে এর পৌরাণিক ব্যাপ্তি ভিন্ন। আমার মনে হয়েছে উপন্যাস সসেমিরা সেরকম লার্জার দ্যান লাইফ একটা মাত্রা এনেছে। ডিটেকটিভ উপন্যাসের সীমানা ভেঙ্গেচুরে একাকার করে দিয়েছে। পৌরাণিক সসেমিরার সাথে যে সাদৃশ্য টানা হয়েছে কামালের চিত্রায়ণে তার আবেদন অসামান্য।

গড়পড়তা ডিটেকটিভ উপন্যাসের কমন ট্রোপগুলোও সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধান চরিত্রের থট-প্রসেসে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, বিশেষ করে ১৭তম অধ্যায়ে। সত্যেন্দ্রনাথের ছিন্নমুকুলকে যেভাবে সাংকেতিক ভাষায় ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে তা অতুলনীয়।

২য় চ্যাপ্টার আমার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে! এটা যে কোনো সুস্থ মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে বাধ্য। এই ডিটেইলিংকেই আমি লেখকের ব্রক্ষাস্ত্র ধারণা করি। হোক সেটা ক্যারেক্টারাইজেশনে, গল্পের বুননে কিংবা আবহ, পরিবেশ বর্ণনাতে—মাত্রাছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত উনি। আমার জানা নেই উনাকে কেউ আগে বলেছেন কিনা বা উনার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা তবে আমার বৌ আর আমি, আমাদের নিজস্ব আলাপে কনভিন্সড যে উনি চমৎকার ফ্যান্টাসি লিখতে পারবেন। উনার নিজস্ব পৃথিবী তৈরির সাংঘাতিক ক্ষমতা আছে।

কিছু অতি-নাটকীয় ব্যাপারও যে নেই তা বলবোনা, স্পেশালি নায়কের মার খেয়ে ভর্তা হয়ে যাবার পর কাহিনী ব্যাখ্যা করা, লায়লার সাথে এলাবোরেটেড সিক্যুয়েন্সটা। তবে সেগুলো ধারণা করি পরিমিত মশলা, যার অপব্যবহার হবেনা ভবিষ্যতে।

নোলানের টেনেটের সাথে একটা আনক্যানি রিজেম্‌ব্লেন্স আছে শেষ দৃশ্য সহ, অ্যাবিউসিভ হাসব্যান্ডের পাওয়ারপ্লের দিক থেকে! যদিও সেটা শুধুমাত্র একটা যৎসামান্য মিল ছাড়া আর কিছুনা।

বেশ কিছু অমীমাংসিত ব্যাপার আছে, বিশেষ করে কামালের ব্যাকস্টোরি। আশা করছি টিকটিকি কামালকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ হবে। আমার পড়তে দারুণ লাগবে।

বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন পার্থপ্রতিম দাস, উপন্যাসের সাথে দারুণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। নজরকাড়া, ভিন্নধর্মী টাইপোগ্রাফি যা পৌরাণিক ভাবসহ গল্পের সাথে দারুণভাবে ম্যাচ করেছে।

বইয়ের ফ্ল্যাপটাও চমৎকারভাবে লেখা, গল্পের পাশাপাশি কীর্তিমারি জেলা শহরে যে ইনভিটেশন দেওয়া হয়েছে তা অগ্রাহ্য করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে!

অবসরের বইগুলোর ব্যাপারে একটা কথা না বললেই না, বানান ভুলের পরিমাণ নগণ্য। কাগজ, বাঁধাই এগুলোও দারুণ। তবে আমার বইটার হার্ডকভারটা জুতের না, একটু পড়তে গিয়েই বেঁকে গেছে।

বই : সসেমিরা
লেখক : নাবিল মুহতাসিম
প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা
প্রকাশকাল : ২০২১
প্রচ্ছদ : পার্থপ্রতিম দাস
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৫৯
মলাট মূল্য : ৩০০
Profile Image for Mahbub Mayukh Rishad.
57 reviews15 followers
May 20, 2021
Nabil Muhtasim কে পড়ার জন্য আমাকে রিকমেন্ড করেছিল Avijit Loha যে কিনা আর ছোটবেলার বন্ধু এবং আমাদের বহু বই একসাথেই পড়া হয়েছে স্কুলে।

সাধারণত গোয়েন্দা কে থাকে?

তিন গোয়েন্দায় আমরা দেখি কিশোর পাশাকে। ধনী পরিবারের ছেলে।
শার্লক হোমস। বোমক্যাশ। কিংবা পুলিশ অফিসার( হালের নেটফ্লিক্সে অধিকাংশ তাই)

নাবিলের মূল গোয়েন্দা চরিত্র এদের কেউ নয়। এমন একজন যে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে, সময়ে অসময়ে ড্রাগ স্মামগ্লিং করে। অনাকর্ষণীয় চরিত্র। নাবিল একেই চেষ্টা করেছে ডিটেকটিভ হিসেবে এস্টাবলিশ করার।

গল্পটা ধাঁধার সমাধান নিয়ে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। যে কোনো থ্রিলারের মূল দাবি যে টানটান উত্তেজনা সেটা বিদ্যমান ছিল, গুরুত্বপূর্ণ এটাই। আমার ভালো লেগেছে।

আফসোস? আছে।

একটা চরিত্র দাঁড় করাতে হলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কাজ করতে হয়। যখন বলা হবে পুলিশের সোর্স আমার ডিটেকটিভ এবং সে ড্রাগ চোরাচালানও করে কখনো কখনো তখন কিন্ত তার ঠিক সুবোধ ভাবমূর্তি দাঁড়ায় না। রহস্য পছন্দ করে, রহস্য সমাধান করতে পছন্দ করে বলেই পুরো উপন্যাসে কোথাও কি তার ভেতরে নেগেটিভ কিছু থাকবে না? গল্পের জন্য হয়তো গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু যদি নাবিল কাজটা করত( আমার মতে) তবে বৈচিত্র আসত নিঃসন্দেহে৷ অপরাধ ও অপরাধের পেছনের সাইকোলজির একটা অভাবও অনুভব করেছি বটে। কিন্তু তারপরও আমার উপন্যাসটি ভালো লেগেছে। কেন?

বাক্য ভালো, ভাষা ভালো, গল্পটা ভালো, থেকে থেকে উত্তম পুরুষ নিয়ে আসার কৌশলটাও ভালো।

নাবিলের জন্য শুভকামনা।

বইটি প্রকাশ করেছে অবসর।
Profile Image for Ifsad Shadhin.
115 reviews24 followers
April 24, 2021
বেশ সুখপাঠ্য। লেখনী, বিল্ডাপ সবই ভালো। চরিত্রগুলো বেশি ভালো লেগেছে। গল্পের পার্শ্ব চরিত্ররাও ঠিক দ্বিমাত্রিক না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব গভীরতা আছে।


ভালো লেগেছে বইটা বেশ।
Profile Image for Hasan Tariq Arpo.
15 reviews8 followers
March 31, 2021
নাবিল মুহতাসিম সাহেবের কোন লেখা এই প্রথম পড়লাম আমি। "বাজিকর ট্রিলজি" থেকে ওনার নাম জানা, তবে তার অন্য কোন লেখা দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছিলাম। ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে বেশ আগ্রহ জন্মানোর কারণে এই বইটা দিয়েই শুরু করি।

মোটের ওপর বইটা আমার ভালোই লেগেছে। ট্র‍্যাডিশনাল ডিটেকটিভ থেকে ভিন্ন ধাঁচের মানুষ গল্পের মূল চরিত্র কামাল। এখানে একটু নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছি। বড়সড় জটলার মধ্যে দেখে আপনার বিশেষ কেউ মনেই হবে না তাকে, অথচ ইন্সপেক্টর রইসকে প্রায়শই তার শরণাপন্ন হতেই হয়। এজন্য টিকটিকি, পুলিশের ফেউ - এমন অপবাদ জুটে কামালের, যা সে থোড়াই কেয়ার করে। আমার খুব মজা লেগেছে একটা জিনিস; সেটা হচ্ছে পড়ে মনে হচ্ছে লেখক যেন আমার সাথেই কথা বলছেন। অর্থাৎ পাঠককে সরাসরি ইঙ্গিত করে গল্প বর্ণনা করার যে ব্যাপারটা আরকি।

বইটা পড়তে পড়তে আমার একটা জিনিস মনে হয়েছে, তা হচ্ছে বইয়ের নামকরণ সার্থক। লেখক খুব ভালোভাবে একটু একটু করে সাসপেন্স বিল্ড করেছেন। প্রত্যেক অধ্যায়ে এমন একটা জায়গায় গিয়ে ইতি টেনেছেন, যেন আপনি নিজ থেকেই পরের অধ্যায়ে চলে যেতে উদ্যত হন। মানে পড়তে গিয়ে আমার রীতিমতো সসেমিরা অবস্থা!

আসল রহস্যটা আমি বইয়ের শেষটা পড়ার পর উদঘাটন করতে পারি; নিজে অনুমান করার ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। শেষ অধ্যায়টা পড়ে কেমন একটা বিষণ্নতা গ্রাস করলো আমাকে, কেমন একটা হাহাকার ভাব। পাঠক পড়লেই বুঝবেন কেন। কিছু জিনিস সম্ভবত ইচ্ছা করেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সম্ভবত এর সিকুয়েল আসলে তাতে ব্যাপারগুলো আরও খোলাসা হবে আশা করি।

ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫
Profile Image for Taniya Tahsin Tanjila.
25 reviews
February 21, 2022
"সসেমিরা"
নাম দেখেই পড়ার বেশ আগ্রহ হয়েছিল।

বরাবর ই আমি থ্রিলার প্রেমী কিন্তু নতুন রাইটার্স'দের বই পড়তে আমি কেন জানিনা ঠিক ভরসা পাই না। (উনাকে আমি নতুন রাইটার বলছি এইজন্য যে, এর আগে উনার কোনো বই পড়া হয়নি আমার। এটাই প্রথম) দেখা গেলো, পড়ার পর আমার পছন্দ না হওয়াতে রিডার্স ব্লকে বসে রইলাম অনেকটা সময়।


কিন্তু যা ভেবে পড়া শুরু করেছি তার থেকে��� ভালো কিছু পেয়েছি। আশাহত হতে হয়নি। অসম্ভব ভালো লেখনি মুগ্ধ হয়ে পড়বার মতোন।
Profile Image for Maleeha Tarannum.
48 reviews2 followers
July 26, 2021
আমি নিতান্তই সাদাসিধে, সাদা ভাতের সাথে শিউলি ফুলের উপমার মাহাত্ম্য আমার মোটা মাথায় ঢুকে না। আমার বরং সোজাসাপ্টা উপমাই মনে ধরে বেশি, তা শুনতে যত অদ্ভুতই ঠেকুক! তাই গল্পের প্রথম অনুচ্ছেদেই যখন খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ধুঁকে ধুঁকে চলা পুলিশ জিপকে তুলনা দেয়া হলো পাহাড়ি ডাল বেয়ে নামতে থাকা হাতির পশ্চাদ্দেশের সাথে, তখনই আমার মনে হলো, “এই বইটা আমার ভালো লাগবে!” গল্প শেষ করে যে এই "মনে হওয়াটা" মিথ্যে হয়নি এতেই আমার আনন্দ। ফেলুদা-শার্লক পড়া আমি “ডিটেক্টিভ” ভাবলেই চোখে ভাসতো নজরকাড়া কেউ একজন, যে পোশাকে অবিন্যস্ত হলে সেই অবিন্যস্ত ব্যাপারটাকেও মনে হবে শিল্পনন্দন! কিন্তু আমার “ডিটেক্টিভ”-এর সংজ্ঞা বদলে গেল এই বইটার কামালকে পেয়ে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষা সাধারন মফস্বল শহর কীর্তিমারীর পথে নামলে অতি সাধারন যেসব মানুষের দিকে আপনার চোখও যাবে না, কামাল তেমনই সাধারন। কিন্তু এই কামালই যখন শার্লক-ফেলুদার কৌশল ধার নিয়ে তিনদিন আগের কাহিনী বলে ফেলতে পারবে একটু ধন্দ লাগবে না? অথবা 'নেশা'-র ঘোরে পড়ে কামাল যখন এক হেঁয়ালির সমাধান করে রহস্যের জট ছাড়াতে গিয়ে নিজেই প্রাণজটে জড়াবে তখন কামালের জন্য একটু মন কেমন কেমন করবে না? এই বইয়ের সব চরিত্রই কেমন যেন ভালমন্দের মিশেলেই ভালো লাগার মতো- পুলিশ রইস যে রহস্য সমাধানে বউ কিংবা ফেউ কারো পরামর্শ নিতেই দ্বিধা করে না, রইসের বউ কুশলী নাজমা, অতি নিরীহ ডাক্তার আনিস যে দরকারে হতে পারে কঠিন...
লেখক নাবিল মুহতাসিমের লেখা প্রথম পড়লাম। লেখনী বেশ ঝরঝরে, পড়তে গিয়ে হোঁচট খাইনি। টুইস্ট যখন যেভাবে দেয়া দরকার ছিল, সেভাবেই দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। টুইস্ট আপনার মাথা ঘুড়িয়ে দেবার মতো হয়তো নয় কিন্তু আবার সাদামাটাও নয়। ওদিকে গল্পের কেন্দ্রে থাকা পিচ্চি মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে কামালের সাথে যখন হেঁয়ালির মাঝে ডুবেছি তখনও মন্দ লাগেনি।
বইটার বাঁধাই-ছাপা ভালো ছিল, বানানের ভুলচুক তেমন চোখে পড়েনি।িপ্রচ্ছদ বেশ ভালো লেগেছে, প্রচ্ছদটায় একটা রহস্য রহস্য গন্ধ বেশ টের পাওয়া যায়।
পুরো বই পড়ে মাত্র দু’এক জায়গা নিয়ে খুঁতখুঁত রয়ে গিয়েছে আমার। হেঁয়ালির সমাধানের সময় মনে হয়েছে যদি জায়গাগুলোর ছবি থাকত কিংবা হেঁয়ালি লেখকের লিখাটাই পাঠককে দেখানো হতো তাহলে আরো জমতো। কিন্তু সব মিলিয়ে "সসেমিরা" পড়ে বেশ শান্তি পেয়েছি। কামালের পাগলামি আবার দেখা হবে কি?
Profile Image for Masum Ahmed.
Author 2 books44 followers
February 9, 2023
ওই যে পাহাড় ঘেষা বনটা দেখতে পাচ্ছেন ওটাকে বলা হয় ডাকাতিয়া বন। বন বলা হলেও আসলে অরণ্য, গহীন অরণ্য। ট্রেকিং ফেকিং করে ডাকাতিয়া বনের মাঝখানটায় যেতে কমসেকম ৮ ঘন্টা তো লাগেই। হেন কোনো গাছ নেই যা এই বনে নেই। কোনো কোনো জায়গায় তো সূর্যের আলোও ঠিকমত পৌঁছায় না। তার মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছে একজন লোক। পরনে পলেস্টারের প্যান্ট, ঢোলা শার্ট। ফুটপাতে একধরণের স্যালুন দেখা যায়, দেয়ালে একটা আয়না ঝোলানো থাকে, তার সামনে একটা পিঠউঁচু চেয়ার। সেই স্যালুন থেকে বিশ টাকা দিয়ে কাটা চুল, দেখতে খুবই সাধারণ। আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনি আলাদা করে নজর করবেন না এমন। লোকে তাকে বলে টিকটিকি কামাল, ফেউ, পুলিশের চর। এমন একজন লোকের গহীন অরণ্যে কী কাজ?

ডাকাতিয়া বনের পাশেই কীর্তিমারি শহর। এক পাশে ডাকাতিয়া বনের পাশ ঘেষে লাল পাহাড়, অপরপাশে হিমালয়। বড়ই মনোরম শহর। শহরের দুটা ভাগ, পুরনো শহর আর নতুন শহর। পুরনো শহরটায় প্রশাসনিক ভবন, থানা, কোর্ট কাচারি। আর নতুন শহরটায় রেস্টুরেন্ট, বার, ড্যান্স বার, মডেলিং স্টুডিও থেকে শুরু করে মনোরঞ্জনের সব ব্যবস্থাই আছে। লিটল ভেগাস বলা যায় আর কি। সুন্দর মনোরম শহরটা হঠাৎ করে চঞ্চল হয়ে ওঠে। কারণ? কুখ্যাত সন্ত্রাসি রঘু রায় ডাইয়িং কনফেশন দেবে পুলিশকে। বুকে ছুড়ির ঘা নিয়ে আপাতত ভর্তি আছে কীর্তিমারি মেডিকেল হাসপাতালে।

কুখ্যাত আসামী রঘু রায় ব্যাঙ্ক ডাকাতি, খুন, অপহরন, তহবিল তছরুপ হেন কোনো কাজ নেই করেনি। হঠাৎ করে কীর্তিমারি হাসপাতালে এসে ভর্তি হলো বুকে ছুড়ির ঘা নিয়ে। একটা অটো রিকশায় করে হাসপাতালের গেটে আসার পর টিকটিকি কামাল ওকে চিনতে পেরে নিজেই ভর্তি করায়, ডিউটি ডাক্তারকে দিয়ে পুলিশকে ফোনও করায় সে-ই।

ইনস্পেকটর রইস আহমেদ কীর্তিমারী থানার সেলিব্রেটি ইনস্পেকটর। মিঠাপুকুরের জোড়া খুনের তদন্ত করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। ঝড়ের রাতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে তাকে ছুটতে হচ্ছে হাসপাতালে। ডাইয়িং কনফেশন একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিতে হয়৷ সারাদিন ডিউটি করে বাসায় যাওয়ারও সময় পায়নি রইস। তারমধ্যেই ছুটতে হচ্ছে হাসপাতালে। আর এই রঘুর পেছনে সে ছুটে বেড়াচ্ছে পনেরো বছর ধরে! মৃত্যু পথযাত্রী রঘু শেষ বয়ান দিতে চায় তার সামনেই!

আবার এদিকে এই এলাকার সবথেকে প্রভাবশালী 'বসুনিয়া পরিবার' এর একমাত্র বউ নিশা গায়েব। মিডিয়া জানলে কেলেঙ্কারির একশেষ! মিডিয়াকে না জানিয়ে তদন্ত করতে হবে। পুরো থানার সবথেকে রাশভারি লোকটা বসুনিয়া পরিবারের সামনে আসলেই কেমন যেন নেতিয়ে যায়। এটা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়তেও ছাড়ে না অবশ্য।

এদিকে শেষ বয়ানে এক ভয়ানক অপরাধের কথা স্বীকার করেছে রঘু। হেয়ালিভরা একটা সূত্রও দিয়েছে। হাতে আঁকা একটা ম্যাপ, আর বিখ্যাত একটা ছড়ার কিছু অংশ। ইনস্পেকটর রইস অবশ্য বুঝতে পেরেছে যে রইসকে অপদস্থ করতেই এরকম হেয়ালি। একবারের বেশি তাকায়ওনি কাগজটায়। তবে টিকটিকি কামাল আশা ছাড়তে নারাজ, যেকোনো উপায়েই হোক কাগজটা হাত করতে হবে। এমনিতে রইসের খাসলোক হিশেবে সবকিছুই শেয়ার করে কামালের সাথে, কিন্তু গুরুত্বহীন মনে করে এমনকি কামালকে দেয়ওনি কাগজটা।

যাইহোক, লাল পাহাড় ঘেষা ডাকাতিয়া বনে কামাল কী করছে সেটা দেখা যাক৷

সসেমিরা! সসেমিরা! সসেমিরা!
মানে হলো কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। যখন সামনে কোনো কূলকিনারা পায় না তখনই কামালের মাথায় এই একটি শব্দই ঘুরতে থাকে।

নাবিল মুহতাসিমের লেখা সসেমিরা বইটা দিয়েই তার লেখার সাথে পরিচয়। এর আগে বাজি বইটা অর্ধেক পড়ার পর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় আর শেষ করা হয় না। তবে যতটুকু পড়েছি তা থেকে যা বুঝতে পারলাম, বাজিতে যে নাবিল ছিল, সসেমিরার নাবিল তার গুরু।

এমনিতে গল্পটা খুব সুন্দর, তার সাথে যোগ হয়েছে লেখকের জাদুকরি ভঙিমায় লেখা বর্ণনা। পাহাড়ঘেষা একটা কাল্পনিক শহর বানিয়েছে পরিচিত একটা শহরের আদলে। এই ব্যাপারে শতভাগ সফল বলা যায় তাকে। এত সুন্দর করে শহরের, পাহাড়ের আর জঙ্গলের বর্ণনা দিয়েছেন, একটা লাইনও এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। তাছাড়া পরিস্থিতি ব্যাখ্য�� করার জন্য এমন সব উপমা ব্যবহার করেছেন যাতে করে পরিস্থিতির সম্যক ধারণা পায় পাঠক।

মোটকথা, আমি তৃপ্ত। রাত দশটায় শুরু করে তিনটায় শেষ করেছি। আমি মূলত ফাস্ট রিডার, এত সময়ও লাগার কথা নয়৷ কিন্তু, ওই যে বললাম; এত সুন্দর করে পরিচিত একটা শহরের আদলে কীর্তিমারি শহরটাকে সাজানো হয়েছে যে মাঝে মাঝেই চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে নিয়েছি। তাছাড়া ভাগ্যক্রমে সেই শহরটাও দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বুঝতেই পারছেন, নস্টালজিয়া।

আরেকটা ব্যাপার খুবই ভালো লেগেছে সেটা হলো ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। প্রত্যেকটা চরিত্রকেই খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। যাকে যতটুকু গুরুত্ব দেয়ার দরকার ছিল তাকে ঠিক ততটুকুই দেয়া হয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ ছিল কামাল চরিত্রটার ব্যাকস্টোরি ঠিকভাবে দেখানো হয়নি। আমার অবশ্য এ নিয়ে অভিযোগ নেই, যেহেতু এই চরিত্রটাকে নিয়ে আরো কাজ হবে ভবিষ্যতে, ব্যাকস্টোরি দেয়ার প্রচুর জায়গা আছে। তাছাড়া চরিত্রগুলোর মুখ দিয়ে ওখানকার আঞ্চলিক ভাষা খুবই সুন্দর মানিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী একটা শহরের চরিত্ররা যদি প্রমিত বাংলায় কথা বলে তবে সেটা শ্রুতিকটু লাগে। এই দিকেও পূর্ণ মনোযোগ ছিল লেখকের। সুতরাং ২০২১ সালে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সেরা বইটি পড়ে ফেলেছি সেটা বলাই যায়।

অবসর প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের কোয়ালিটি বরাবরই ভালো৷ এই বইটাও তাই। প্রচ্ছদটা খুবই সাধারণ দেখতে হলেও গল্পটার সাথে খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে গেছে।

চমৎকার একটা সময় কাটাতে চলে যেতে পারেন হিমালয় ঘেষা শহর কীর্তিমারিতে। কথা দিচ্ছি, সময়টা মন্দ কাটবে না।
19 reviews9 followers
Read
April 9, 2021



বইয়ের নাম : সসেমিরা 


লেখকের নাম : নাবিল মুহতাসিম


লেখক পরিচিতি : বাজিকর


রিভিউদাতা : মুনতাসির মামুন চৌধুরী 


ঘরানা : থৃলার


প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২০২১


©লেখকের


প্রচ্ছদ : পার্থপ্রতিম দাস


ISBN : 978-984-8799-78-9


মুদ্রণস্থান : নিউ পূবালি মুদ্রায়ণ


পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৫৯


অধ্যায় : ২২


প্রকাশনী : অবসর


মূল্য : ৩০০ টাকা


অনলাইন প্রাপ্তিস্থান : বিবিধ


প্রিভিউ : এক আহত দাগী আসামির শহরে প্রত্যাবর্তন যে তার জীবনের শেষ অপরাধের সূত্র রেখে গেছে একটা হেঁয়ালিতে। এদিকে শহরের সবচে বনেদি পরিবারের বৌ আর তার বাচ্চা মেয়ে নিখোঁজ যাদের খুঁজতে গিয়ে এমন সব আলামত পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো রাতের ঘুম নাই করে দিচ্ছে ঝানু পুলিশ ইন্সপেক্টর রইসেরও।


আর এই দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার জন্য গোটা শহর চষে বেড়াচ্ছে হাড় হাভাতে চেহারার এক লোক। সে কি পারবে এই দুই রহস্যের কিনারায়,কোনো ভূমিকা রাখতে?


ব্যক্তিগত মতামত : 

পাঠক বাহেরা,তোমরাগুলা বসি পড়,নাইলে কিন্তু আমি কথা কবো না।

বসিছো? তাইলে এবার শুরু করি।


আমাদের চারপাশে প্রবল অসুস্থ মন-মানসিকতার অনেক মানুষ বাস করেন যাদের হয়তো আপাতদৃষ্টিতে নিপাট ভদ্রলোক বলেই মনে হয় আমাদের। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন নামকরা শিক্ষক যিনি নৈতিকতার ফেরিওয়ালা, তিনি হয়তো বাড়ির গৃহকর্মী বা স্ত্রী-সন্তানের ওপর শারীরিক-মানসিক অত্যাচার করে আনন্দ পান। কিংবা অফিসের কোনো পুরুষ কর্মকর্তা যিনি বাড়িতে একজন নিপাট ভদ্রলোক,স্নেহময় পিতা, আদর্শ স্বামী তিনি হয়তো তার অফিসের অধস্তন নারী কর্মচারীদের কাছে অস্বস্তির এক নাম। 

আরে এতো দূরে যাবার দরকার কী,এই উপন্যাসের কামালকেই দেখুন না। এরকম গাল ভাঙা হাভাতে চেহারা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা লোকটাকে দেখলে আপনার কখনো মনে হবে যে সে আপনাকে একবার দেখেই বলে দিতে পারবে আজ বিকেলে আপনি শহরের কোন কোণায় বসে কী করছিলেন? 

কিছুটা স্বপ্রণোদিত ভাবেই এই দুই রহস্যের কিনারায় মাঠে(ক্রিকেট গার্ডেনেরটা না) নেমেছিল বইয়ের পোকা স্বশিক্ষিত চালচুলোহীন কামাল কিছুটা সহজাত পর্যবেক্ষণশক্তি আর বই পড়া বিদ্যা নিয়ে। এই উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র এটা। বিশেষ করে তার বর্ণনা যেভাবে জায়গায় জায়গায় দেয়া হয়েছে সেটা এককথায় অসাধারণ। 

এটা এবং লেখকের আগের কিছু লেখা পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উনি সমাজের প্রায় প্রান্তিক চরিত্রগুলোকে অসম্ভব মমতা দিয়ে তৈরী করতে পারেন...এমনকি যারা বাস্তবজীবনে এই শ্রেণীর মানুষজনের সাথে মেশেননি সেভাবে বা শুধুমাত্র টিভির পর্দায় খবরে দেখেছেন শুধু এমন লোকদের, তারাও বোধকরি মোটামুটি জ্যান্ত একটা ধারণা পেতে সক্ষম হবেন তার জীবন্ত লেখনীর কারণে। 

নাবিল মুহতাসিম লেখায় সরাসরি পাঠকের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করেন তার লেখাগুলোতে যা একটা আপন আপন বা আড্ডাসুলভ অনুভূতি দেয় পাঠককে আর পাঠকের মনোযোগ আরো বেশি ধরে রাখে।

আর পাতায় পাতায় টুইস্ট আর সাসপেন্স ধরে রাখা বর্ণনাভঙ্গির কথা তো আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই বইটা উত্তরবঙ্গের মানুষজনের কাছে যতটা আপন হয়ে উঠবে ভাষাগত এবং স্থানগত কারণে, তারা যতটা আনন্দ পাবেন বইটা পড়ে...অন্যরা সে তুলনায় একটু হলেও কম পাবেন। অন্তত আবেগীয় পার্থক্যের বেশকম তো থাকবেই।

বাই দ্য ওয়ে, মিঠাপুকুরের জোড়া খুনের ঘটনাটা নিয়ে আরেকটা উপন্যাস চাই। 


সবশেষে ছাত্রজীবনে শুনে আসা একটা টিপিক্যাল ডায়ালোগ একটু অন্যভাবে দিয়ে ইতি টানবো। 


আপনারা যে লেখকেরা অশ্লীলতা,বিছানা দৃশ্য আর ডাবল মিনিংঅলা সংলাপকে থৃলারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বানিয়ে ফেলেছেন


আপনারা যারা দুনিয়া কাঁপানো আবিস্কার বা গুপ্তসংঘ ছাড়া থৃলার লেখার কথা ভাবতেই পারেন না


আপনাদের যাদের কাছে নায়কমাত্রেই "সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা" দ্বারা পরিচালিত


আপনাদের যারা যারা সিরিজের প্রথম লেখাতেই নায়ককে দেশ-বিদেশখ্যাত বানিয়ে দেন


আপনাদের যারা পশ্চিমা থৃলারের আদলে দেশীয় থৃলারে অবাস্তব সব উপাদানের পসরা সাজান


আপনারা যারা পশ্চিমা থৃলারের ছাঁচবিহীন থৃলারগুলোর প্রসঙ্গ আসলে নাক সিঁটকোন


আপনারা যারা হালের সেবা বিদ্বেষী 


আপনাদের যারা দেশীয় থৃলারের ভিত হিসেবে সেবার অবদানকে অস্বীকার করেন


আপনারা, আপনারা সব্বাই নাবিল মুহতাসিমের পা ধোয়া পানি খান।


এক চিমটি স্মৃতিচারণ : খুব সম্ভব ২০০৯ থেকে বাতিঘরের(আরে ভাই, জানি এটা বাতিঘরের লয়) বই পড়া শুরু করি। প্রায় ১০ বছর মতো হতে চললো। প্রথমদিকে বাতিঘর থেকে খুব বেশি মৌলিক বের হতো না বলে সবগুলোই কেনা হতো, পড়াও। কিন্তু ধীরে ধীরে মৌলিকের সংখ্যা বেড়ে চললো, আগের মতো সব কেনা সম্ভব হয় না। কিছুটা আর্থিক কারণে। বাকিটা বয়স। শারীরিকভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে পাঠক মনের বয়সও। পড়ার অভ্যাসটা একটা নির্দিষ্ট কমফোর্ট জোনের মধ্যে চলে আসছে ধীরে ধীরে, কমছে নতুন লেখকের বই নেড়েচেড়ে দেখার ইচ্ছেটাও। নির্দিষ্ট কিছু লেখকের বইই পড়া হচ্ছে ঘুরে-ফিরে। তাদের মধ্যে নাবিল মুহতাসিম অন্যতম প্রধান। 

বাতিঘরের প্রথমদিকের লেখকেরা এখন বাতিঘর ছাড়াও অন্যান্য জায়গাতেও লিখে থাকেন। তাদের নতুন নতুন বইগুলোর ওপরে প্রকাশনীর লোগোটা হয়তো বদলেছে, কিন্তু বইয়ের ভেতরে ঠিক খুঁজে পাই চেনা বাতিঘরীয় আমেজ।


লেখকেরা বই উৎসর্গ করেন, রিভিউয়াররা রিভিউ উৎসর্গ করতে পারেন কিনা জানি না। পারলে এই রিভিউ উৎসর্গ করবো দুজনকে,

নিয়াজ মেহেদী এবং মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে, নাবিল মুহতাসিম লেখক নাবিল মুহতাসিম হয়েছেন যাদের হাত ধরে।
Profile Image for Kibo Mahojenin  Khan.
52 reviews9 followers
June 29, 2021
কখনো দেখেছেন কোনো মার্ডার মিস্ট্রি বইয়ে পুলিশ বা হোমিসাইড অফিসার আসল হিরো না হয়ে পুলিশের সোর্সকে আসল হিরো হতে?
উত্তরবঙ্গে কীর্তিমারিতে যদি আসেন তবে বোধহয় দেখতে পাবেন কিভাবে একজন পুলিশের ফেউ পুরো শহরকে এক অদ্ভুত রহস্য থেকে উদ্ধার করে।

কীর্তিমারিকে মোটামুটি শান্ত শহরই বলা যায়। কিন্তু হঠাৎ করে এক দাগী আসামি যখন ছুরির আঘাত নিয়ে শহরে ফিরে আসে তখনই সব বদলে যেতে থাকে। সেই রাতেই শহরের সবচেয়ে বনেদি পরিবার, বসুনিয়া পরিবারের বউ নিখোঁজ হয়ে যায়। হারিয়ে যায় মোঘল আমলের চুনি পাথর। শহরের রেডলাইট এরিয়ায় কার যেন আনাগোনা দেখা যায়। এ সব কিছুর মধ্যে কি আসলে কোনো সাদৃশ্য আছে নাকি সবই শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
চারিদিকে যেন সসেমিরা! পুলিশ কি পারবে এই অবস্থার উন্নতি করতে? নাকি ত্রাতা হিসেবে কোনো এক উচ্ছন্নে যাওয়া পুলিশের ফেউকে হাজির হতে হবে?

পাঠ প্রতিক্রিয়া :
আসলে প্রথমে এই বইটা কিনেছিলাম নাম দেখে। সসেমিরা বলে যে একটা বাংলা শব্দ আছে তাই জানতাম না! এবং বইটি পড়েও একদম হতাশ হতে হয়নি।
গল্পের প্লট খুব সাধারণ। কিন্তু লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে এই সাধারণ প্লটেই সুন্দর গল্প লিখেছেন। সাধারণত এই ধরনের প্লটে লেখা গল্প আমাকে টানতে পারে না। কিন্তু এই বইটা একদম এক বসায় শেষ করেছি।
ছোট একটা শহরকে কেন্দ্র করে লেখা। চরিত্রও আহামরি অনেক না। গল্প যত এগিয়েছে শহরের বাসিন্দাদের সাথেও পরিচয় হয়েছে আবার রহস্যও ঘনীভূত হয়েছে। এ ধরনের শহর কেমন হয় এবং কিভাবে সবাই একে অন্যের সাথে কানেক্টেড থাকে সেসব ফুটে উঠছিল ধীরে ধীরে।
এই বইয়ের চরিত্র গুলো বেশ বিচিত্র ও ইন্টারেস্টিং। এই যেমন কামাল, বস্তিতে থাকে, চেহারা চাল-চলনের কোনো বালাই নাই, অথচ কি বুদ্ধির ধার! লেখক এই চরিত্রের মধ্যে যা যা দেখাতে চেয়েছেন সেসবই ফুটে উঠেছে। আবার সাইফ বসুনিয়া শহরের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অথচ কি রগচটা। লেখক প্রত্যেকটা চরিত্রকেই বেশ যত্ন নিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
তাছাড়া রয়েছে শহরের বর্ণনা। আপনি যদি কখনো নাও গিয়ে থাকেন উত্তরবঙ্গে আপনার চোখের সামনে ভাসতে থাকবে সেখানকার সৌন্দর্য!
কিছু কমন ট্রোপ ছিলো গল্পে যা প্রায় সব মিস্ট্রি বইয়ে থাকে। কিন্তু তাও কোনো জায়গায় গিয়ে মনে হচ্ছিলো না যে এটা বাদ দিলেও চলতো বা এমন কিছু। আর একদম মেদহীন লেখা।
কিন্তু কাহিনীর বিল্ড আপ যত ভালোই হোক না কেন তত ভালো টুইস্ট ছিলো না বইয়ে। সবগুলো টুইস্টই আগে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো। এই একটা ব্যাপার বেশ খারাপ লেগেছে। কিন্তু তরপরও শেষ করতে খারাপ লাগেনি।
Profile Image for Harun Ahmed .
36 reviews1 follower
April 28, 2025
#বই_রিভিউ
বইয়ের নাম ; সসেমিরা
লেখক : নাবিল মুনতাসীম

গল্পটা শুরু হয় আসামের পাহাড় থেকে কুড়িগ্রামে নেমে আসা খানাখন্দে ভরা কাদায় মাখামাখি রাস্তায় ধরে চলা পুলিশ ভ্যানে ভেতরে থাকা একজন ড্রাইভার, একজন ইন্সপেক্টর ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য রঘু নামক এক দাগি আসামির জীবনের শেষ অপরাধের বয়ান শোনা। কি সেই বয়ান।
জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে হোয়ালি ভাবে লেখা একটা ছড়ার মাধ্যমে জানিয়ে দেয় শেষ অপরাধের সুত্র
অন্যদিকে শহরের বসুনিয়া পরিবারের পুত্রবধু নিশা ও তার বাচ্চা আলিয়া নিখোঁজ। একসাথে একই সময়ে জট পাকানো দুটি সত্য অন্বেষনেের গুরু দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে ইনস্পেক্টর রইসের ডানহাত টিকটিকি কামাল।কে এই টিকটিকি কামাল?
দুটো ঘটনার মাঝে কুৎসিত একটা যোগসূত্র খোঁজার জন্য চালচুলোহীন চেহারার একটা লোক চষে বেড়াচ্ছে পুরো শহর। বিখ্যাত নেহালের পুরি বা সালামের চা খাবার সময় তাকে দেখলে ভড়কাবেন না--'টিকটিকি' কামালের কাজই হচ্ছে গন্ধ শুঁকে বেড়ানো। কিন্তু একেবারে উড়িয়েও দেবেন না তাকে, শহরকে এই সসেমিরা অবস্থা থেকে হয়তো বের করতে পারবে সে-ই।
পুলিশের ফেউ খ্যাত টিকটিকি কামাল কি পারবে রঘুর হোয়ালিভাবে দেওয়া সেই সুত্রের রহস্য বের করতে কিংবা বসুনিয়ায় নিখোঁজ হওয়া নিশা ও আলিয়াকে?

বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং চরিত্র নিঃসন্দেহে "টিকিটিকি কামাল"। লেখক এই চরিত্রের মাধ্যমে আমাদের চিরচেনা প্রথাগত গোয়েন্দা টাইপের চরিত্রের বদলে নতুন এক গোয়েন্দা চরিত্র উপহার দিতে চেয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তিনি আমার দৃষ্টিতে পুরোপুরি সফল। সাধারণ চেহারার পুলিশের এক সোর্স, বইপোকা, ড্রাগ ডিলার, উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা মানুষ আবার একইসাথে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী- এ সব চরিত্রায়ন মিশে "টিকটিকি" বা "ফেউ" কামাল এক অনন্যরূপে আবির্ভুত হয়েছেন। এমনকি বইটিতে টিকটিকি কামালের ছায়ায় পড়ে বাকি চরিত্রগুলো বেশিরভাগ সময়ই লাইমলাইটের বাইরেই ছিলো।"সসেমিরা" বইয়ের নামকরণও বেশ ভালো লাগলো, পাঠকেরাও গল্পটি পড়া শুরু করলে সসেমিরা অবস্থায় পড়ে যাবেন এবং সসেমিরা নামের রহস্যের সাথে গল্পের রহস্য উদ্ঘাটনের সময়ও কিংকর্তব্যবিমূঢ অবস্থায় পড়তে পারেন।
-
গল্পটা শুনিয়েছেন লেখক একদম আসর বসিয়ে, বৈঠকি ঢঙে। বিরক্তি আসবে না এক মুহূর্তের জন্যেও। সমাধানটাও দিয়েছেন এমনভাবে, এক মুহূর্তের জন্য বইয়ের নামটা মাথায় ধাক্কা দিয়ে যাবে ঠিকঠিক, সসেমিরা!
Profile Image for Rayan Afif.
13 reviews
April 16, 2021
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সসেমিরা৷
লেখকঃ নাবিল মুহতাসিম৷
পৃষ্ঠাঃ ১৫৯
মূল্যঃ ৩০০ টাকা৷
প্রকাশনীঃ অবসর৷

ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছিল৷ লেখকের বাজি ট্রিওলজি তো বেশ জনপ্রিয়৷ তবে শুরুর দিকে একটা লাইন খুব বাজেভাবে চোখে এসে পড়ে৷ সেটা হলো, "বুনো হাতির মত *** দুলিয়ে খানাখন্দে ভরা কাদায় মাখামাখি ভরা কাদা মাখামাখি রাস্তা ধরে এগোচ্ছিল পুলিশের ভ্যানটা"। এই লাইনটা পড়ে কেন যেন সামনে আর এগুতে ইচ্ছে করে নি৷ প্রথমত, এমন অদ্ভুত উপমা এখানে দেওয়া কতটা শোভন সেটা আমার মাথায় আসে নি৷ হাতির সাথে আপনি পুলিশ ভ্যান মেলাতেই পারেন আকারের কারণে৷ কিন্তু আপনাকে গাড়ির সাথে হাতির ঐ নির্দিষ্ট অংশ মেলাতে গেলে ভ্যান গাড়ির কোন নির্দিষ্ট অংশকে সেটার অনুরুপ দেখাতে হতো৷ ইভেন পশ্চাৎদেশ ব্যবহার করলেও মোটামুটি চলতো, যদিও সেন্সেবল হতো না। আর ঐ শব্দটা সাধারণত কোন ব্যক্তির বক্তব্যে দিলে মানা যেত, কিন্তু লেখক যে ভাষায় লিখবেন তা হবে প্রমিত প্রচলিত বাংলা৷ যাই হোক, তবুও সামনে আগাতে থাকি। এরপর যদিও এমন কিছু চোখে পড়ে নি৷ অনেকটা যাত্রা শুরুতে অমসৃণ রাস্তা ধরে এগিয়ে পাকা মহাসড়কে উঠার মতো আর কি৷

যাই হোক, সীমান্তবর্তী এলাকার প্রেক্ষিতে লেখকের ভৌগোলিক বর্ণনা ও থ্রিল এলিমেন্ট ও এর প্রয়োগ বেশ ভালোভাবেই হয়েছিল৷ তবে সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছিল
একটা ইউনিক ইন্টারএক্টিভ পদ্ধতির অবলম্বন যেখানে পাঠককে ট্যুর গাইডের মত সঠিক পথ দেখিয়ে গল্পের বিভিন্ন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ এই বিষয়টার কারণে লেখকের প্রথমাংশের উপমা জনিত বিরক্তিটাকে মাফ করে দেওয়া যায়৷ অতিকথন তেমন একটা ছিল না, কিছু জায়গা প্রয়োজনের চাইতে বর্ণনা বেশী ছিল যা তেমন আহামরি ধর্তব্য নয়৷ ��বে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, লেখক সেগুলো কি পরবর্তী কোন উপন্যাসে ব্যাখ্যা দিবেন কি না জানি না৷


যাই হোক, সব মিলিয়ে দুই একটা ব্যাপার বাদ দিলে, সসেমিরা বেশ উপভোগ্য ছিল৷ লেখকের পরবর্তী বই পড়ার আগ্রহ নিয়ে এখানে রিভিউ সমাপ্ত করলাম।

আমার ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৫/৫
Profile Image for Bubun Saha.
193 reviews6 followers
February 17, 2024
সসেমিরা
নাবিল মুহতাসিম
বুক ফার্ম
মম: ২৪৯/-

এই বইটি কেনার পিছনে দুটো কারণ। প্রথম, বইটির নাম। দ্বিতীয়, লেখকের নাম।

সসেমিরা কথার অর্থ কিংকর্তব্যবিমূড় বা কোনো দোলাচলে পরে যাওয়া। গল্পের মধ্যে এরকম কোনো কঠিন দোলাচলের অবস্থা আমার অন্তত মনে হলো না। মৃত্যুশয্যাশায়ী অভিযুক্ত আসামি রঘুর হেয়ালিযুক্ত ছড়া ও সুনিপুনভাবে আঁকা মানচিত্র দেখে রহস্য সমাধান করা হলো। কিন্তু একজন অভিযুক্ত আসামি, যে কিনা ক্যান্সার এ আক্রান্ত, তারপক্ষে ছড়া আর মানচিত্র আঁকা কতটা যুক্তিযুক্ত, তর্কসাপেক্ষ।

গল্পে কিছুই ঠিকভাবে ব্যক্ত করা হলো না, ফ্যাক্টস গুলো শুধু বলার জন্য বলা। কেন কামালের টিকটিকি হিসেবে এতো সুনাম, সাইফ বসুনিয়ার saddism এর কারণ, নিশা বসুনিয়ার হঠাৎ করে পালিয়ে যাওয়া, রঘু-নিশার মধ্যে সম্পর্ক (যেটা কিনা সাইফ বসুনিয়া জানতো না!), লায়লা অভিযান কেন, গল্পের শেষে রঘুর চরিত্র সংশোধন (তার প্রমান কি?) এবং ইত্যাদি।

১৪০ পাতার বই, তাই পড়তে শুরু করেছি বলে শেষ করলাম ২ দিনে। নাহলে পড়ার আগ্রহ ৩০-৪০ পাতার পর চলে গিয়েছিলো।

নাবিল মুহতাসিমের দুটো বই পড়েছি। শ্বাপদ সনে - দুর্দান্ত psychological thriller , বিভঙ্গ - অসাধারণ outer-space sci-fi thriller। পরবর্তী ভালো গল্পের আশায় রইলাম।
Displaying 1 - 30 of 36 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.