এল ডোরাডো! কাল্পনিক এক শহর! যে শহর পুরোটা মোড়ানো স্বর্ণের আবরণে। কল্পিত এই শহর কি সত্যি রয়েছে? থাকলে কোথায় সেটা? এই শহরের ইতিহাস কীভাবে প্রসারিত হয়েছে? কেন এই শহর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি?
মুভি তৈরির স্বপ্ন দেখে আয়ান ইকবাল। পাইরেটস নিয়ে কল্পনায় শেষ নেই। মেডিকেলের পড়াতে তার আগ্রহ বিন্দুমাত্র নেই বললেই চলে। মায়ামিতে গিয়ে পড়ার কথা বাবাকে জানালে ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা!
অন্যদিকে হ্যামিলটন কামারের কাজ করা ছাপোষা সাধারণ ছেলে। বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটে। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে জানতে পারে তার দাদা ছিলেন একজন নাবিক ও অভিযাত্রিক, যিনি খোঁজ পেয়েছিলেন স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর! এরপর?
সুদর্শন সৈনিক ব্যালেমি ডুবে আছে মারিয়ার প্রেমে। কে এই মারিয়া? ব্যালেমিও বা কে? পাইরেটসদের সাথে তার কী সম্পর্ক? ওদিকে এডওয়ার্ড টিচের সাথে ঘটে গিয়েছে ভয়ানক ষড়যন্ত্র। স্বয়ং রাণীর আদেশ মান্য করতে গিয়ে তার জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকা!?
টাইম ট্রাভেল! পাইরেটস! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! আমাজন জঙ্গল! কিন্তু এইসবের সাথে এল ডোরাডোর কী সম্পর্ক? লুকিয়ে থাকা একঝাঁক রহস্য ও রোমাঞ্চিত উপন্যাস ‘এল ডোরাডো'-তে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
সবেমাত্র যাত্রা শুরু।এখনো অনেক পথ বাকি।বহু চরিত্র, বহু ঘটনার সমাবেশ বইতে।ট্রিলজি'র প্রথম বই যেহেতু,অনেক প্রশ্নের উত্তরের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে।বইটির দৈর্ঘ্য আরেকটু বড় হলে ও তথ্য আরেকটু কম থাকলে মন্দ হতো না।সিরিজের পরবর্তী বই দুটো আরো উত্তেজনাপূর্ণ হবে বলে আশা করছি।
স্টান্ড অ্যালোন হিসেবে এই বই পড়লে বেশ হতাশ হতে হবে। গাদা গাদা চরিত্র 'রাজকাহন' এর মতো। শুধুমাত্র ২য় খন্ডের জন্য এই চরিত্রগুলোকে প্রস্তুত করা। একটা বছর এই চরিত্রগুলোকে মাথায় ঢুকিয়ে পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করা আমার কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর লাগে। বাকি দুটো খন্ড পড়ার জন্য এখন এইটারে আবার পুনরায় পড়া লাগলো। কিন্তু তখনকার বিরক্তির কিছুটা হলেও রিভিউতে প্রকাশ করা উচিত।
এই বইটা পড়ে ডিটেলিংয়ে খানিক ঘাটতিও চোখে পড়েছে। কিছু ব্যাপার একটু বেখাপ্পাও লেগেছে। যেমন ধরুন, আয়ান হ্যামিল্টনের সাথে এল ডোরাডো খুঁজতে চলে গেল অথচ ক্যাপ্টেন হ্যানসনের সাথে সামান্য আলাপও করলো না! তারপর যেমন হ্যামিল্টনের কাছে নিয়ায়ার এল ডোরাডোর পথ স্বীকার করা।
আমিনুলের সহজ স্বাভাবিক লেখা পড়ে বেশ আরাম। আর এজন্য আমার মতো পাঠক তার গল্পের পিছনে ছুটবে। এবং পড়বে। দেখা যাক পরবর্তী যাত্রাতে কি রাখছে লেখক আমাদের জন্য।
এল ডোরাডো! স্বর্ণের শহর। শতাব্দির পর শতাব্দি মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজেছে যাকে। হয়তো খুঁজছে এখনো। এমনই এক শহরের খোঁজে দিনের পর দিন জাহাজ ছুটিয়ে চলছে হ্যামিল্টন। সঙ্গে আছে প্রবীন নাবিক ম্যাসন। এমাজনের গহীনে বুনো ইন্ডিয়ানদের দেবী নিয়ায়া'র কাছে পৌছাতে কেন জীবনের ঝুঁকি নিল হ্যামিল্টন বা টরেস? অন্যদিকে অয়ন গেছে আমেরিকাতে সিনেমা মেকিং নিয়ে পড়তে। কিন্তু যাবার পথে সে কিভাবে খোঁজ পেল হ্যামিল্টনের? ব্যালেমির পথ চেয়ে দিনের পর দিন হাহাকার বেড়ে যাচ্ছে মারিয়ার। কিন্তু ওদিকে বিপুল সম্পদের লোভে ব্যালেমি হয়ে গেছে পুরোদস্তুর পাইরেট। সমুদ্রে একের পর এক জাহাজে আগুন জ্বলছে! সবার মুখে একটাই শব্দ, "ক্যাপ্টেন সান্ডার!"
বলছিলাম লেখক আমিনুল ইসলামের নতুন বই "এল ডোরাডো"-র কথা। পড়তে পড়তে বারবার বিভিন্ন ক্যারেক্টারের মাঝে ঢুকে যাচ্ছিলাম। এতটাই চমৎকার লেগেছে। বই পড়তে পড়তে কখনো নিজেকে আয়ান মনে হচ্ছিল, কখনো টরেস, কখনো ব্যালেমি, কখনো টিচ। কখনো হুট করে মনে হয়, আহা যদি মারিয়ার মত সমুদ্রতীরে আমারও একটা প্রেমিকা থাকতো। এখন মন চাচ্ছে বাসা থেকে পালিয়ে যাই, সমুদ্রে গিয়া একটা জাহাজ চুরি করে "এল ডোরাডো" অভিযানে যোগ দেই। আর আমিও ক্যাপ্টেন জেনিংসকে কমান্ড করব "ব্রিং মি ক্যাপ্টেন সান্ডার!"
ফ্যান্টাসি, এডভেঞ্চার, রহস্য যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য "এল ডোরাডো" অবশ্যপাঠ্য বই। একবার বইটা হাতে নিয়ে বসলে আর শেষ না করে উপায় নেই। এরপর বই শেষ করে আপনারও মন আনচান করবে এর পরের পার্ট কবে আসবে জানার জন্য। ;) আর দেরি কেন! পড়ে ফেলুন। নেমে পড়ুন এল ডোরাডো আবিষ্কারে। লম্বা এই জার্নিতে আপনি কিন্তু একা নন। এই বইয়ে কোন খুঁত নেই। কতিপয় বানান ভুল ছাড়া।
“ এল ডোরাডো! এল ডোরাডো প্রধানত একটি সোনার শহরকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই শহর মোটেও অন্য সব শহরের মতো নয়। এ শহরের সবকিছু তৈরি হয় সোনা দিয়ে। হ্যাঁ, এটাই সোনার শহর! নামটি শুনতেই কেমন জানি একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করে, তাই না? সোনার শহর নিয়ে লেখা আছে অসংখ্য বই আর পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে দারুণ সব সিনেমা আর কাহিনি। মনে প্রশ্ন জাগে আসলেই কি এই শহরের অস্তিত্ব আছে? না-কি পুরোটাই গল্প উপন্যাস কিংবা মিথ? যেটা সময়ের সাথে সাথে তিল থেকে হয়েছে তাল। তাহলে সেই মিথটা কী? কী সেই গল্প? ”
বাংলাদেশের একটি মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আয়ান। মায়ের ইচ্ছেতে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলো কিন্তু পড়ালেখায় মনোযোগ নেই তার। সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখে সে, জলদস্যু নিয়ে কল্পনার শেষ নেই। আকস্মিক এক দূর্ঘটনার পর ফিল্ম মেকিং শিখতে মায়ামির উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি জমায় আয়ান। কিন্তু পথিমধ্যে প্লেনটা ক্র্যাশ করে, ঘটনাচক্রে একসময় জলদস্যুদের এক জাহাজে গিয়ে উঠে সে। তবে এরই মধ্যে ঘটে গেছে এক অদ্ভুত ঘটনা, নিজের অজান্তেই সে জড়িয়ে গেছে অতীতের সুক্ষ্ম কোনো বেড়াজালে। সমুদ্র-জাহাজ-জলদস্যু এসব নিয়ে কল্পনায় ভাসলেও, বাস্তবটা মেনে নেওয়া আয়ানের জন্য মোটেও সুখকর ছিলো না। কারণ জলদস্যুদের ভাষ্যমতে সময়টা আঠারো শতক, কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? প্লেনটা যখন ক্র্যাশ করলো তখন তো বিংশ শতাব্দী চলছিলো, তাহলে?
স্প্যানিশ ট্রেজার ফ্লিডের সন্ধ্যানে সমুদ্রে জাহাজ ভাসিয়েছে দুই যুবক। একজন হলো সাবেক ব্রিটিশ সৈন্য স্যামুয়েল ব্যালেমি, ক্যাপ কোডের সমুদ্রপাড়ে এক নীল নয়না তার প্রতীক্ষায় দিন গুণছে। একবার ট্রেজার ফ্লিডের সন্ধান পেয়ে গেলেই আর কোনো চিন্তা নেই দুজনে মিলে চলে যাবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহরে। আরেকজন হলো পল, পলগ্র্যাভস উইলিয়াম। সমুদ্রের সান্নিধ্য তার কাছে প্রেমিকার চেয়ে কম কিছুনা, তাই তো ট্রেজার ফ্লিডের সন্ধান পেলে বড় একটা জাহাজ কিনে সেও শুরু করবে তার সলিল সংসার। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে দুইজনের নামের সাথেই জুড়ে গেছে পাইরেটস তকমা। পল আর ব্যালেমি কি ট্রেজার ফ্লিডের সন্ধ্যান পাবে ? নাকি ভাগ্য তাদের নিয়ে যাবে অন্য কোনো স্রোতে?। শেষমেশ কী আছে তাদের কপালে?
কামারখানার ছাপোষা একজন কর্মী হ্যামিল্টন, তবে তার দাদা ছিলেন একজন বিখ্যাত নাবিক। শেষবার সবকিছু বিক্রি করে হ্যামিল্টনের বাবাকে সাথে নিয়ে বেড়িয়েছিলেন এল ডোরাডোর খোঁজে, এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। এক পর্যায়ে হ্যামিল্টনও তার পূর্বপুরুষদের পদছায়া অনুসরণ করে জাহাজ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে, সঙ্গী হিসেবে দাদার বিশ্বস্ত বন্ধু ম্যাসন আর সম্বল বলতে দাদার রেখে যাওয়া পুরোনো এক ডায়েরি। কিন্তু এল ডোরাডো খোঁজার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে হ্যামিল্টন পৌছে যায় আমাজনের গভীর জঙ্গলে, এবার তার সঙ্গী টরেস, কিছু ইন্ডিয়ান দাস আর গুরুত্বপূর্ণ একজন ( এই একজনের নামটা না হয় বই পড়েই জেনে নেবেন)। প্রায় মরতে মরতে তারা এক গ্রামে গিয়ে পৌছে, যেখানকার লোকেরা পুজো করে চিমিনিগাগুয়া নামক এক দেবতার। আমাজন জঙ্গল! যেখানে পদে পদে রয়েছে মৃত্যু ফাঁদ, এল ডোরাডো খুঁজতে বের হয়ে এখানে কেনো এসেছে হ্যামিল্টন ? অচেনা ভাষার এই অসভ্য আদিবাসীদের কাছে কিই বা জানার থাকতে পারে তার? নিয়ায়া নামক এই অদ্ভুত নারীটিই বা কে?
এছাড়াও আরও কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মধ্যে রয়েছে এডওয়ার্ড টিচ এবং বেঞ্জামিন হরনিগল্ড। জলদস্যু নিয়ে যারা অল্পবিস্তর জানেন তারা নাম দুটোর সাথে পরিচিত থাকার কথা, অন্তত ব্ল্যাকবিয়ার্ড খ্যাত এডওয়ার্ড টিচ এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। আর যারা শোনেন নি তারা না-হয় এই বই পড়ে নতুন করে পরিচিত হবেন এক কিংবদন্তির সাথে, জানতে পারবেন রয়েল নেভির একজন সৈন্যের ভয়ঙ্কর জলদস্যু বনে যাওয়ার পেছনের কাহিনী। যদিও 'এল ডোরাডো' তে তাকে নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়নি, আশা করছি সিরিজের পরবর্তী বইয়ে আমরা এডওয়ার্ড টিচের দুর্ধর্ষ কিছু অভিযানের সাক্ষী হবো।
একদিকে হ্যামিল্টন তার সঙ্গীদের নিয়ে যাচ্ছে সোনার শহর খুঁজতে অন্যদিকে এডওয়ার্ড টিচ অভিযানে বেড়িয়েছে। আবার শেষ দিকে আবির্ভাব হয়েছে ডেভিল নামক এক ব্যক্তি যার চোখে জ্বলছে নীলচে আগুনের শিখা, সে খুঁজে বেড়াচ্ছে 'ক্যাপ্টের সান্ডার'কে। আচ্ছা, কে এই ক্যাপ্টেন সান্ডার?
এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই এল ডোরাডো বইটা পড়তে হবে। নাম 'এল ডোরাডো' হলেও বইয়ের কাহিনী কিন্তু শুধু সোনার শহরেই সীমাবদ্ধ নেই। সোনার শহর, ফ্রান্সিকো পিজারো, স্প্যানিশ ট্রেজার ফ্লিড, ইনকা সভ্যতা কিংবা মুইস্কান সভ্যতা ইত্যাদি ইতিহাস নিয়ে বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। এই অংশগুলো পড়ে বোঝা যায় এল ডোরাডো লেখার জন্য লেখককে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে।
এর আগে আমিনুল ইসলামের লেখা দুটো বইয়েই পড়ার সুযোগ হয়েছে, উনার লেখার হাত ভালো। আগের দুই বইয়ে যে ভাষাগত সমস্যা ছিলো এল ডোরাডো তে সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন। যদিও কয়েকটা জায়গায় শব্দের ব্যবহারে একটু আধটু গড়মিল চোখে পড়ে। তবে উনার লেখনীর যে উন্নতি হচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। যারা বাকি দুইটা বই পড়েছেন তারাও আমার সাথে একমত হবেন আশা করি। বইয়ের প্রচ্ছদটা বেশ চমকপ্রদ, বাঁধাই আর পৃষ্ঠা গুলোও চমৎকার, কাহিনীর মাঝে মাঝে কিছু ইলাস্ট্রেশনও চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে একদম হাতে নিলেই মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো একটা বই।
যারা এবছর বইমেলায় প্রকাশিত দারুণ কিছু খুঁজছেন সাত-পাঁচ না ভেবে বইটা লিস্টে যোগ করে ফেলুন কিংবা সুযোগ হলে এখনই বগলদাবা করে ফেলুন। টাইম ট্রাভেল! জলদস্যু! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! ট্রেজার ফ্লিড! আমাজন জঙ্গল! এসবের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একঝাঁক রহস্য ও রোমাঞ্চকর উপন্যাস 'এল ডোরাডো' তে আপনাকে স্বাগত।
নটিক্যাল-ফ্যান্টাসি-হিস্টরিক্যাল থ্রিলার। অনেক জনরাতেই পড়ে যায় বইটা। এল ডোরাডো নিয়ে কম সাহিত্য হয়নি। সেই হিসেবে পাঠকরাও কমবেশি এর সাথে পরিচিত।
আমিনুল ইসলামের এই বইটিতেও মোটাদাগে স্বর্ণের শহরের খোঁজে বের হওয়া একদল লোকের রোমাঞ্চকর যাত্রার বর্ণনা রয়েছে। তবে কাহিনীতে নতুন ট্রোপ যুক্ত করেছে এর ফ্যান্টাসি আর হিস্টোরিক্যাল আস্পেক্টগুলো।
বইয়ের ভালো খারাপ দুই দিক থাকলেও ভালোর পাল্লা যথেষ্ট ভারীই বলতে হবে। প্রথমত আজকালকার লেখকরা ভাল কাহিনীর বই লিখলেও ভাষা আর মাধুর্যের দিকে খেয়ালই করেন না। ফলাফল- একেবারে নিচুমানের রিডিং এক্সপেরিয়েন্স। এল ডোরাডো এমন নয়। অসাধারণ কাহিনীর সাথে পিকচারেস্ক বর্ণনা সাথে টানটান উত্তেজনা সবই পাবেন। বর্ণনাভঙ্গি মেদহীন, স্থূল-অযথা বর্ণনার বালাই একদমই নেই।
বইয়ের কয়েক জায়গায় লেখক কাহিনী থেকে একেবারে সরে এসে ইতিহাস বর্ণনা করেছেন- এই অংশগুলো বিপুল ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, পড়ার ফ্লো নষ্ট করেছে। ইতিহাসটুকু অন্যভাবে প্রেজেন্ট করলে মনে হয় ভাল হত। এছাড়া কাহিনী শেষ হয় ক্লিফহ্যাঙ্গারে, ঘটনার এন্ডিং ও হয় না বইতে। কোন ধরণের একটা শেষ বোধহয় দরকার ছিল।
কোন বইই পারফেক্ট হয় না। যে বই আমাকে বিরতিহীন পড়তে বাধ্য করবে সেটাই সার্থক থ্রিলার বই। এল ডোরাডো পাঠককে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেবে, নীল সাগরের সাদা কুয়াশায় অনাদিকাল থেকে মানুষের যে আকর্ষণ সেই অদ্ভুত আকর্ষণের জালে আটকাবেন আপনি। আর দ্বিতীয় কিস্তির প্রহর গুনবেন, শত হোক কৌতুহলপ্রবণ মানিব মনকে প্রবোধ দেয়া সহজ নয়।
শুরু করার আগে বুঝতে পারিনি বইটা এতোটা মন ছুঁয়ে যাবে। এজন্য দায়ী প্রধানত বইয়ের চরিত্রগুলো। প্রথম দিকে অবশ্য কাহিনীটাকে ক্যারেকটার ড্রিভেন মনে হচ্ছিল না। তবে ধীরে ধীরে চরিত্রগুলো নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসে গল্পটাকে।
বইটা কোথাও ঝুলে পড়েনি। একটু ধীর গতিতে কাহিনী এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। তবে তার প্রধান কারণ কয়েকটা কাহিনীর একসাথে এগিয়ে যাওয়া। চরিত্রগুলোর মধ্যে সংযোগ খুঁজে পেতেও বেশ সময় লেগেছে। তবে আমার মনে হয় ট্রিলজির প্রথম বই আর শুরু হিসেবে লেখক সময় নিয়েছেন চরিত্রগুলোকে ভালোভাবে গড়ে নিতে। এই বইয়ে চরিত্রগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে গেলে পরের বইগুলোয় আর সমস্যা হবে না। বরং যেরকম একটা মায়া সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আপাতত অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
লেখকের লিখনশৈলীর প্রশংসা না করে পারছি না। একইসাথে মেদহীন ও পর্যাপ্ত ডিটেইলড্ লেখা। চোখের সামনে ভেসে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত বর্ণনা। খুবই স্মুথ লেখা। এটা সম্ভবত ওনার দ্বিতীয় বই। তবে লিখেছেন বেশ অভিজ্ঞ লেখকের মতোই কাহিনীর পাশে লেখা উপভোগ করতে পারলে অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে।
এই বইয়ে একইসাথে অনেকগুলো জনরার মিশ্রণ ঘটিয়েছেন লেখক। ইতিহাস, ফ্যান্টাসী, মিথ, টাইম ট্রাভেল। তার সাথে খানিকটা মানবিক অনুভূতি আর ভালোবাসার গল্প। ইতিহাসের প্রায় সবই সত্য। শুধু ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে কাহিনীর সাথে মেশানো হয়েছে। সে হিসেবে লেখকের প্রশংসা করতেই হয়।
ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট ভালো ছিল। তবে আমার মনে হয় এদিকটায় আরেকটু নজর দেওয়া উচিত। কেননা প্রথমদিকে চরিত্রগুলোকে একটু খাপছাড়া মনে হচ্ছিল। এডওয়ার্ড টিচ, মারিয়া, ব্যালেমি, আয়ান, টরেস সবগুলোকে চরিত্রকেই বেশ ভালো লেগেছে। আপাতত কাহিনীটাকে মাথা থেকে দৌড়াতে হবে। নয়তো পরের বই বের হওয়ার আগে শান্তি পাবো না। কেননা নিশ্চিতভাবেই সেখানে অজানা প্রশ্নের উত্তর থাকবে।
সবমিলিয়ে, বাংলা মৌলিক বইয়ের মধ্যে এই প্রথম কোনো ট্রিলজি বা সিরিজ নিয়ে আমি এতো আশাবাদী। লেখকের প্রতি অনুরোধ রইলো ধারাটা যেন বজায় থাকে। এই ট্রিলজিটা মাস্টারপিস হতে পারে ওনার।
লেখক প্রথম পার্টে চরিত্রগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি। প্রথম পার্টের শেষ কয়েক অধ্যায় পড়ে মনে হলো দারুণ কিছু হবে। আশা করছি পরের দুই পার্টে দারুণ কিছু পাবো।
লেখক দারুণ গল্প বলতে পারেন। মেদহীন ঝরঝরে লেখা। এতোটাই যে মাঝেমাঝে মনে হবে এই অধ্যায়টা বোধহয় লেখক একটু বড় করতে পারতেন! ভীষণ ভালো সময় কাটলো ট্রিলজির প্রথম বইটির সাথে। নিশ্চয়ই পরবর্তী দুটো আরো ভালো হবে...
এইমাত্র পড়ে ফেললাম হিস্টরিকাল এডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি উপন্যাস এল ডোরাডো। পড়ার সময় পড়িনি, গিলেছি শুধু। এত সাবলিল ভাষায় লেখা! আর কি ছিল না বইতে? পাইরেটস লাগবে?আছে। ফাটাফাটি একশান লাগবে? আছে। ট্রেজার হান্ট লাগবে? সেটাও আছে। সেই রকম ধুয়াধার একটা ভিলেন লাগবে? হ্যা সে খানাও আছে। আর কি চাই? বোনাস হিসেবে ইলাস্ট্রেশানও আছে। আমার মতে এটাই হতে যাচ্ছে আমিনুল ভাইয়ের গেম চেঞ্জিং উপন্য���স। আর পাঠকরাও পাবে বাসায় বসেই সাগরে সাগরে, জংগলে জংগলে ঘুরে বেরানোর আনন্দ। বইটিতে এতোটাই ডুবে ছিলাম যে সব খেই হারিয়ে ফেলেছি।
প্লট- সোনার শহর এল ডোরাডো। খুজতে বেরিয়েছিল হাজারো এডভেঞ্চার প্রেমিক। উদ্দেশ্য ছিল খুঁজে বের করা স্বর্ণে লেপা সেই শহরকে। চোখের দেখা একটি বারের জন্য। কিন্তু আজো পারে নি। আচ্ছা, এল ডোরাডো কি সত্যি আছে? নাকি শুধুই একটা কল্পনা? এ প্রশ্নের উত্তর আছে আপনার কাছে?
আয়ান একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র। পড়া লেখার চেয়ে তার বিভিন্ন এডভেঞ্চার থ্রিলার বইয়ে ডুবে থাকতেই ভালো লাগে। স্বপ্ন হল বিশ্বমানের ফিল্মমেকার হবার। তাই সে পাড়ি জমালো ভিন দেশে। হায় ভাগ্যের পরিহাস! যে প্লেনে যাত্রা করেছিল, পথিমধ্যেই সেটা পড়ল ঝড়ের কবলে। ধ্বংস হয়ে গেল পুরো পুরি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বেচে গেল আয়ান। নিজেকে আবিষ্কার করলো এক নিরালা দ্বীপে। কিন্তু সেই দ্বীপে সে একা না,কেউ একজব অপেক্ষা করছিল তার জন্যে। তাহলে তার বেচে যাওয়া কি শুধুই ভাগ্য? নাকি এর পিছনে আছে কোন উদ্দেশ্য? এরপর শুরু হয় বইয়ের আসল কাহিনি, জাহাজ, প্রেমিক পুরুষ ব্যালেমি, ভয়ংকর জলদস্যু ব্লাকবিয়ার্ড, আমাজন।
ব্যাক্তিগত বক্তব্য- এল ডোরাডো লেখকের প্রকাশিতব্য তৃতীয় বই। প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পর তিনি আসছেন এডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি নিয়ে।
নেতিবাচক -এই দিকটা এই বইটি নিয়ে বলার ইচ্ছা নাই। কারণ যে সময়টা পার করছি! কিন্তু আরও শ খানেক পাতা যদি পাওয়া যেত মন্দ হত না। আমাদের এডভেঞ্চার জনরা বরাবরের মতো পিছিয়ে থাকলেও এখন চমৎকার এক বই এসে পড়ছে। আর এই বই নাকি ট্রিলজি হবে। আশা করি শীঘ্রই পেয়ে যাবো।
পড়ে ফেললাম আমিনুল ইসলামের লেখা এল ডোরাডো ট্রিলজির প্রথম বই " এল ডোরাডো"। পাঠ প্রতিক্রিয়ার শুরুতে একটা কথা বলে নিতে চাই,এই বইটি পড়তে নেওয়ার আগে যেই প্রত্যাশা রেখেছিলাম,বইয়ের অর্ধেক পথ গিয়েই সেই প্রত্যাশা অনেক খানি ম্লান হয়ে গিয়েছিলো যদিও শেষের দিকে কাহিনী বর্ননায় লেখক বেশ ভালোই দক্ষতা দেখিয়েছে। বইয়ের প্লট চমৎকার। বইটিকে যদি তিন ভাগে ভাগ করি,তাহলে বলবো প্রথম দুই ভাগ একটু স্লো,কিন্তু শেষের ভাগটি ছিলো অত্যন্ত গতিশীল এবং শেষের দিকটার জন্যই এই ট্রিলজির পড়ের দুইটি পার্ট পড়ার জন্য আগ্রহ অনুভব করছি। মুলত আসল কাহিনীই শুরু হয়েছে এই বইয়ের শেষে। লেখক শেষের দিকে একটি সাসপেন্স রেখে দিয়েছেন।
এই বইয়ের তেরো নাম্বার অধ্যায়টা আমার সবথেকে বিরক্ত লেগেছে। এই জায়গাতে লেখক ক্যারিবিয়ান সাগরের জলদস্যুদের ইতিহাস বর্ননা করেছেন। ইতিহাসের বর্ননা পড়তে আমার সবসময়ই ভালো লাগে, কিন্তু লেখক এইখানে অনেক কঠিন ভাবে তা বর্ননা করেছেন। বাক্যগঠনে অনেক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। এইরকম সমস্যা আরো অনেক অধ্যায়তেই পড়ে দেখেছি। এর জন্য পড়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে,অনেক জায়গায় প্রিন্টিং মিস্টেক বিরক্তির কারন হয়েছে। অপরদিকে আমাজন জঙ্গলের অভিযানের অধ্যায় গুলো সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে।
এল ডোরাডো! কাল্পনিক এক শহর! যে শহরের পুরোটাই নাকি স্বর্ণের আবরণে মোড়ানো। এই পৃথিবীর বুকে কল্পিত এই শহরের অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে? থাকলেও সেটা কোথায় ?
এই গল্পে ছোট বড় অনেক গুলো চরিত্র রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান চরিত্র আয়ান। মুভি তৈরির স্বপ্ন দেখে সে। পাইরেটস নিয়ে কল্পনায় শেষ নেই। মেডিকেলের পড়াতে তার আগ্রহ বিন্দুমাত্র নেই বললেই চলে। মায়ামিতে গিয়ে মুভি নিয়ে পড়ার কথা বাবাকে জানালে ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা! টাইম ট্রাভেল করে চলে আসে তিনশ বছরের আগের পৃথিবীতে। তারপর কি হবে? জলদস্যুদের সাথে তার স্বাক্ষাত হয় কিভাবে? সে কিভাবে জড়িয়ে যায় এল ডোরাডো অভিযানের সাথে? তার পিঠের জন্মদাগ কি ঈঙ্গিত বহন করে? এতসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে এই বইটি।
বইয়ের প্রচ্ছদ,পেইজ কোয়ালিটি এবং ওভারঅল প্রোডাকশন ভালো ছিলো। আশা রাখি পরবর্তী এডিশনে প্রিন্টিং মিস্টেকগুলো আর থাকবে না।
এল ডোরাডো! একটা শহরের নাম। যেই শহর অন্যসব শহরের মতো নয়। সোনার শহর এল ডোরাডো! এখন আপনি বলতে পারেন "এটি কি আমাদের সোনার বাংলার মতো সোনার শহর?" উত্তরটা হবে "না"! এল ডোরাডো হলো এক রোমাঞ্চকর শহর যার রাস্তা, বাড়ি-ঘর সব সোনার। যেই শহর পবিত্র! যেই শহর দেবতাদের!
কাহিনি সংক্ষেপঃ
মেডিকেলের ছাত্র আয়ান। মায়ের হঠাৎ মৃত্যুর পরই মুভি বানানোর স্বপ্ন নিয়ে মুভি বানানো শিখতে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ইরান পার হয়ে প্লেন যখন জার্মানি, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড পার হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের উপর তখনই ঘটে যায় এক অলৌকিক কান্ড!
হ্যামিলটন একজন সাধারণ একটা ছেলে। সাধারণ হয়েও সে যেনো অসাধারণ। তার দাদা ছিলেন এক বিখ্যাত নাবিক। যিনি তার শেষ অভিযানে বের হয়েছিলেন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে। সোনার শহরের সন্ধ্যানে। তিনি সন্ধান পেয়েছিলেন এল ডোরাডোর! কিন্তু ফিরে আসতে পারে নি! কি সেই রহস্য! তা উদঘাটন করতেই হ্যামিলটন যাত্রা শুরু করে। দাদার অসম্পূর্ণ অভিযানের পূর্নতা দানের জন্যই সোনার শহরের খোঁজে বের হয়!
নৌসেনা ব্যালোমি। হঠাৎ করেই তার জীবনে প্রেম হয়ে আসে মারিয়া। আগুনের মতোই সুন্দর যার রূপ! বিয়ে করতে চায় সে মারিয়াকে। কিন্তু মারিয়ার বাবা সামান্য সৈনিকের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিবে নাহ! অপমানিত ব্যালোমি টাকা কামাতে রওনা হয়!
টাইম ট্রাভেল! পাইরেটস! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! আমাজন জঙ্গল! এসবকিছুর সাথেই যেনো জোরে যায় আয়ান, হ্যামিলটন সহো আরো অনেকে। এইসবের পিছনেই যেনো আছে এল ডোরাডোর রহস্য! টাইম ট্রাভেল, পাইরেটস, আমাজনের পিছনেই যেনো লুকিয়ে আছে এল ডোরাডোর একঝাঁক রহস্য।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইপোকারা সাধারণত বই পড়তে পড়তে কল্পনায় ভেসে যেতে পছন্দ করে বেশি৷ বই পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে যাক সব কাহিনি তাই আমরা চাই৷ এই দিক দিয়ে এল ডোরাডো সফল। কারন বইটি পড়তে পড়তে আমিও যেনো হারিয়ে গিয়েছিলাম টাইম ট্রাভেলের জালে, কখনও আমাজনে তো কখনও পাইরেটসদের জাহাজে!
বইটি আরাম করে পড়তে পারবেন এবং কল্পনার সাগরে ভেসে যাবার নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমি।
এল ডোরাডো নিয়ে আগে তেমন কিছু জানা ছিলো নাহ আমার। শুধু জানতাম সোনার শহর এল ডোরাডো। এই বইটি পড়তে গিয়ে অনেক নতুন সব তথ্য জেনেছি৷ বইটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে লেখকের অনেক পড়াশোনা, ঘাটাঘাটি করে এই বই লিখতে হয়েছে। এদিক দিয়ে উনার পরিশ্রম সফল।
ফ্যান্টাসি থ্রিলার লাভারদের জন্য এই বই ব্ল্যাক ডায়মন্ডের মতো হবে। এক বসায় রহস্যের মাঝে ডুবে গিয়ে শেষ করে দেয়ার মতোই বই এই এল ডোরাডো। আর এটি সিরিজের প্রথম বই৷ এই সিরিজের দ্বিতীয় বই কবে আসবে সেই অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ মানুষ আমি।
বইটির প্রচ্ছদ, বাউন্ডিং অত্যন্ত সুন্দর এবং পেইজের মানও ভালো। বইটিতে তেমন বানান ভুল নেই। মাঝে এক দু��ো টাইপিং মিস্টেক।
সবশেষে বলবো, এল ডোরাডো একটি সুখপাঠ্য বই। আমিনুল ইসলামের পড়া তৃতীয় বই এটি আমার৷ উনার লেখা দিন দিন সুন্দরের দিকেই ধাপিত হচ্ছে। লেখকের জন্য শুভকামনা। এল ডোরাডো পাঠক প্রিয়তা অর্জন করবেই।
মার্কিন লেখক এডগার অ্যালান পো বলেছিলেন, “এল ডোরাডো যেতে চাও, তবে চাঁদের পাহাড় পেরিয়ে, ছায়ার উপত্যকা ছাড়িয়ে, হেঁটে যাও, শুধু হেঁটে যাও…”
স্প্যানিশ ভাষায় এল ডোরাডো মানে হলো সোনা’। এটি এসেছে এল অমব্রে দোরাদো ‘সোনার মানুষ’ থেকে। অনেক দিন আগে দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় এক আদিবাসী গোষ্ঠী ছিল মুইসকা।মুইসকা ঐতিহ্য অনুসারে, নতুন রাজা নির্বাচন করার পর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনার গুঁড়ো মাখিয়ে তাকে গুয়াতাভিতার পবিত্র স্নান করানো হয়। এদের বলা হতো এল ডোরাডো
এলডোরাডো এর মানে কি? এলডোরাডো মানে হলো মিথ নগরী বা সোনার শহর।যেখানে সব কিছু সোনা দিয়ে তৈরী।সত্যিই এমন দেশ ছিলো বা আছে? নাকি নিছক কল্পনাইয়। এই নিয়ে মূলত গল্পটি। সে সাথে ট্রাইম ট্রাভেল। মূল গল্পে যাওয়ার আগে কিছু খুচরা আলাপ সেরে নেই।
আমি বর্তমানে নোয়াখালী তে স্বর্ণদ্বীপ নামে একটি দ্বীপে অবস্হান করছি। স্হানীয় ভাষায় জাইজ্জাচর বলা হয়। এই স্হানটি কয়েকবছর আগেও জলদস্যু বা পাইরেটদের অধীনে ছিলো। তারা ট্রলার বা নৌকা নিয়ে এখানে রাজত্ব করতো। আশে পাশে সুবর্ণচর, হাতিয়াসহ বেশ চর এবং নদীতে তাদের ক্ষমতা ছিলো ব্যাপক।মেয়ে থেকে শুরু করে সকল ধরনে ডাকাতির আস্তানা ছিলো এই চরে। এই গল্প আমরা শুনেছি আমাদের নিজস্ব ম্যাগাজিন থেকে, এখন বর্তমানে সেনাবাহিনীর অধীনে এই দ্বীপ আছে।নামকরণ করা হয়েছে স্বর্ণদ্বীপ।
এই স্বর্ণদ্বীপে বসে এই রকম একটি ফ্যান্টাসি পড়ে, অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। সব কিছু কল্পনায় চলে আসছে, মনে হচ্ছে চোখের সামনে সব কিছু ঘটছে।জলদস্যু, আমাজন জঙ্গল,জঙ্গলী অসভ্য জগতের মানুষজন...
মূলত এই বইটা পড়ার লিস্টে ছিলো অনেক আগেই। বইমেলয়া ঘেটে চলে এসেছিলাম, বিকাশে পেমেন্ট এর ব্যবস্হা ছিলো না বলে কেনা হয় নি।এই দ্বীপে আসার পড় জলদস্যু বা পাইরেট প্রতি বেশি কৌতূহল বোধ করি। সেই সাথে টাইম ট্রাভেল,সোনার শহর সব মিলে বলবো মিক্সড আচারে মতো রয়েছে,তাই বেশি কিউরিয়াস ছিলাম বইটির প্রতি।
হঠাৎ লেখকের কাছ কাঙ্খিত উপহার বলা যায়। এই দেখি মেঘ না চাইতেই জল।তবে লেখক এ্যালার্ট করেছিলো, এখন বইটা না পড়তে।কারণ নেক্সট পার্ট চাইতে পারি,ঠিক তাই হয়েছে। বইতে মাত্র ভিলেন এর এন্টি হয়েছে।সামনে বইতে আসল ঘটনা সূত্রপাত, হয়তো ট্রিলজি আসবে। আর অপেক্ষাই থাকতে হবে..
বইটি পড়তে পড়তে একটা মুভির নাম সামনে আসছে পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান। লেখকের এতো সাবলীল লেখনী ২২৩ পৃষ্ঠার বই কখন শেষ করলাম বুজতে পারি নাই।বছরের প্রথম ফ্যান্টাসি খুব দ্রুত পড়েছি। কিশোর যারা আছেন তারা বেশি ইনজয় করবে বইটি। লেখনী এমন ভাবে লেখা বড়দেরও আশা করি ততোটা খারাপ লাগবে না। টাইম ট্রাভেলিং সহ ঐতিহাসিক অনেক চরিত্র নিয়ে বইটি। পাইরেট এডওয়ার্ড টিচ, আদিম জনগোষ্ঠী কাহিনী সব মিলিয়ে দারুণ এক ফ্যান্টাসিতে ভাসবে পাঠক।
পরিশেষে, এই বলবো এলডোরাডো কল্পনায় ভাসতে একদম মন্দ লাগে নাই।যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা এই ফিকশনটি দেখতে পারেন, আশা করি ভালো সময় কাটবে।
স্প্যানিশ শব্দ "এল ডোরাডো" অর্থ হলো স্বর্ণের শহর। স্রেফ নামকরণটাই বইয়ের প্রতি আগ্রহ জমিয়ে তুলতে যথেষ্ঠ। মানুষ স্বভাবগতই মূল্যবান ধাতুর ব্যাপারে উৎসাহী। আধুনিক মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলনের আগে স্বর্ণ নিয়ে মাতামাতি ছিলো ভয়াবহ পর্যায়ে। সেরকম একটা সময়ে হঠাৎ শোনা গেলো আমাজনের ভিতর কোন এক জায়গায় এমন এক শহরের অস্তিত্ব আছে যার সবকিছু স্বর্ণের তৈরী। এল ডোরাডো!
এই গল্পের মূল চরিত্র আয়ান ইকবাল একবিংশ শতকের যুবক। এক রহস্যময় ঘটনাচক্রে সে পিছিয়ে যায় প্রায় তিনশো বছর! সেসময় আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুই ছিলোনা বলতে গেলে। সবচেয়ে ভালো বাহন নৌযান। আর সেসব নৌযানের সবচেয়ে হুমকিস্বরূপ হাজির হতো পাইরেটসরা। আয়ানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে খ্যাতনামা সব পাইরেটসদের। এরপর নিয়তির পরিহাসে আরেক যুবকের সাথে যোগ দেয় আরাধ্য এল ডোরাডোর খোজে।
পাইরেটসদের উত্থান এর গল্প বলতে গিয়ে তখনকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক। পুরো বই জুড়েই রয়েছে প্রণয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এডভেঞ্চার এর ছোয়া। সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্থান পথানের মতো উপন্যাসের রূপ বদলেছে বহু জায়গায়। ছোটখাটো কিছু ব্যাপার বাদ দিলে ভালোই লেগেছে পড়তে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার তেমন পছন্দ না ফ্যান্টাসি জনরা, কিন্তু আমিনুলের বইয়ে বলা চলে অনেকটা বুঁদ হয়ে ছিলাম। পাঠককে টেনে ধরে রাখার একটা সহজাত ধাঁচ দেখা গেলো লেখনীতে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরাধ্য এক শহর এল ডোরাডো। যার খোঁজে বেরিয়েছে সেই সতেরোশো শতক থেকেই সহস্রাধিক অভিযাত্রি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা জানি এসবই আসলে মিথ। কিন্তু আমাদেরই একজন ফিরে যায় তিনশ বছর পূর্বে, দেবতার আশির্বাদে পায় অসাধারণ এক ক্ষমতা, এমনকি ইন্ডিয়ানরা পর্যন্ত একটা পর্যায়ে বাধ্য হয় তার বশ্যতা স্বীকার করতে।
সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় প্লট, সাথে সুন্দর লেখনী। কিন্তু, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন না পাঠক, এমনকি বেশ কিছু চ্যাপ্টার অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, মূল ঘটনা প্রবাহের সাথে মিল খুঁজতে গেলে হোচট খেতে হবে। আবার, এতো বেশি ঘন ঘন টাইমফ্রেম আর প্লেস চেঞ্জ হয়েছে যে দুয়েকপাতা আগে ফিরে গিয়ে ঘটনার রেশ খুঁজে আনতে হয়েছে। শেষে এসে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই শেষ করে দিয়েছেন লেখক, যেন তাড়া ছিলো অমুক সংখ্যক পাতার মধ্যেই সমাপ্তি টানতে হবে। কিন্তু আমার মতে আরো ৩০/৪০ পাতা কলেবর বৃদ্ধি হওয়া উচিত ছিলো। যে এল ডোরাডো আবিষ্কারের জন্য এতো কিছু, তা পাওয়ার পর কী হলো, কেনই বা এই আবিষ্কারের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে না, আয়ানের ভাগ্যেই বা কী হলো, তাকে তার টাইমফ্রেমে ফিরিয়ে দেওয়ার যে শপথ হ্যামিল্টন করেছিলো তা সে রাখতে পেরেছিলো কিনা - এসব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পাঠকের প্রাপ্য।
নবীন লেখক হিসেবে আমিনুল যথেষ্ট প্রমিজিং, কিন্তু ঘষামাজার প্রয়োজন আছে। বাক্য গঠনে আরেকটু সতর্ক হতে হবে, বিশেষ করে ক্রিয়ার ব্যবহারে। শুভকামনা লেখকের জন্য।
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৩.৫
This entire review has been hidden because of spoilers.
আমাজনের গহীনের অ্যাডভেঞ্চার থেকে স্প্যানিশ জলদস্যু সেই সাথে সময় ভ্রমন আর ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধনের গল্প, সবকিছুর একটি দারুণ প্যাকেজ এল ডোরাডো। এর সাথে ফ্যান্টাসি মেশানোয় তা ধারণ করেছে আরও দুর্দান্ত রুপ। ভালো লেগেছে লেখকের সাবলীল লেখার ভঙ্গিমা। দুই এক জায়গায় ইতিহাসের বেশ আলোচনা যখন গল্পের গতিকে একটু ধীর করে দিচ্ছিলো ঠিক তখন লেখক আবার চমকে দিয়ে ফিরে গিয়েছেন আগের গতিতে। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পাঠক হয়ে থাকে নির্দ্ধিধায় হাতে তুলে নিতে পারেন বইটি। দারুণ পেজ টার্নার্স বই, শেষ না করা অবধি রাখতে পারবেন না আর আপনাকে কাহিনি নিয়ে যাবে পাইরেটসদের জাহাজ থেকে আমাজনের গহীনে।
এল ডোরাডো! কাল্পনিক এক শহর! যে শহর পুরোটা মোড়ানো স্বর্ণের আবরণে। কল্পিত এই শহর কি সত্যি রয়েছে? থাকলে কোথায় সেটা? এই শহরের ইতিহাস কীভাবে প্রসারিত হয়েছে? কেন এই শহর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি?
মুভি তৈরির স্বপ্ন দেখে আয়ান ইকবাল। পাইরেটস নিয়ে কল্পনায় শেষ নেই। মেডিকেলের পড়াতে তার আগ্রহ বিন্দুমাত্র নেই বললেই চলে। মায়ামিতে গিয়ে পড়ার কথা বাবাকে জানালে ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা!
অন্যদিকে হ্যামিলটন কামারের কাজ করা ছাপোষা সাধারণ ছেলে। বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটে। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে জানতে পারে তার দাদা ছিলেন একজন নাবিক ও অভিযাত্রিক, যিনি খোঁজ পেয়েছিলেন স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর! এরপর?
সুদর্শন সৈনিক ব্যালেমি ডুবে আছে মারিয়ার প্রেমে। কে এই মারিয়া? ব্যালেমিও বা কে? পাইরেটসদের সাথে তার কী সম্পর্ক? ওদিকে এডওয়ার্ড টিচের সাথে ঘটে গিয়েছে ভয়ানক ষড়যন্ত্র। স্বয়ং রাণীর আদেশ মান্য করতে গিয়ে তার জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকা!?
টাইম ট্রাভেল! পাইরেটস! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! আমাজন জঙ্গল! কিন্তু এইসবের সাথে এল ডোরাডোর কী সম্পর্ক? লুকিয়ে থাকা একঝাঁক রহস্য ও রোমাঞ্চিত উপন্যাস ‘এল ডোরাডো'-তে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ কাহিনী সংক্ষেপ এর মত বলতে গেলে আসলেই এক ঝাঁক রহস্য আর রোমাঞ্চের মধ্যে ডুবে ছিলাম। ইতিহাসভিত্তিক এডভেঞ্চারাস ফ্যান্টাসি জনরার বই এল ডোরাডো, আমিনুল ইসলাম এর থার্ড বই এটি, এর আগে তিনি আরো দুটি বই "শিশি" এবং "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" লিখেছেন। এল ডোরাডো এমন একটি শহর, সোনার শহর বলা হয় এটিকে৷ এই সোনার শহরের খোঁজেই বইটার যাত্রা। তবে এখানেই সীমাবদ্ধ না, ডালপালা গজিয়ে গল্পটি বেশ ভালো বিস্তৃতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশের এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট "আয়ান ইকবাল" হারিয়ে যায় টাইম ট্রাভেল এ, ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। আস্তে আস্তে তৈরী হতে থাকে একের পর এক চরিত্র। সবগুলো চরিত্রের বিল্ড আপ অত্যন্ত নিপুন হাতে করা৷ আয়ান, এনা, স্যাম, মারিয়া, হ্যামিল্টন, টরেস থেকে শুরু করে সব গুলো চরিত্রের সাথে সম্পূর্ণ জাস্টিস হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার এর মধ্যে আলাদা আলাদা করে ঢুকে যাচ্ছিলাম, পরিস্থিতি গুলো উপভোগ করা যাচ্ছিলো। সাগরের প্রত্যেকটা ঢেউ, পাইরেটস দের আক্রমণ, অ্যামাজন এর ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া,ওল্ড ইন্ডিয়ান দের চলার ধরণ,বিভিন্ন প্রাচীন গোত্রের পোশাক, তাদের কালচার সব কিছু পার্ফেক্টলি রিপ্রেজেন্ট করেছেন। বইটি লিখতে বসে প্রচুর পরিমাণ রিসার্চ করেছেন লেখক তা প্রত্যেকটি ইনফো দেখলেই বুঝা যায়৷ বইটির ভাষা অনেক সাবলিল ছিল, প্রত্যেকটা লাইন পড়েই বেশ আরাম পাওয়া যাচ্ছিলো৷
ইতিহাস এ মোড়ানো গল্পে লেখক এডভেঞ্চার, এ্যাকশন, হাল্কা পাতলা রোমান্টিসিজম, ইমোশন সহ সবকিছু কে এমনভাবে গুছিয়েছেন পুরোটা পড়ে একটুও বিরক্তি আসবেনা৷ এল ডোরাডো বইটির স্টোরিটেলিং নিয়ে বলতে গেলে নিঃসন্দেহে লেখকের বর্ণনা ভঙ্গি, বাক্য গঠনের মুন্সিয়ানা অন্য লেভেল এর। পুরো বইটিতে সবগুলো প্রেক্ষাপট এত সুন্দরভাবে এত ডিটেইলে বর্ণনা করেছেন যে লিটারেলি সিন গুলো ফিল করা যাচ্ছিলো। প্রত্যেকটা দৃশ্যপট চোখের সামনে ভাসছিল। ইতিহাস আর ফ্যান্টাসিকে তিনি সুন্দরমত ব্লেন্ড করেছেন যা সত্যিই অনবদ্য। এর সাথে রিলেটেড ইলাস্ট্রেশন গুলো আরো ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। থরের ফ্যান হওয়ার ফলে নাকি অন্য কি কারণে, বইয়ের একটা কাহিনী বর্ণনায় আমার চোখের সামনে থর ভেসে আসছিলো। বজ্রপাতের দৃশ্যে গড অফ থান্ডার এর কথা মনে আসবে না তা কি করে হয়!! যাইহোক মোট কথা সবকটি দৃশ্যেই থেকে থেকে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম৷ অন্য একটা জগতে ছিলাম পুরোটা সময়। বইতে হতাশ হওয়ার মত তেমন বড় কিছু পাইনি, ছোট ছোট কিছু নাটকিয়তা ছিল যা এত ভালোর মাঝে নিমিষেই হারিয়ে যাবে।
এল ডোরাডো সম্ভবত ট্রিলজি, এই বইটি এমন এক জায়গায় শেষ হয়েছে আরো পড়ার তৃষ্ণা বেশ ভালোমত পেয়ে বসেছে, অপেক্ষার পালা বাকি দুটো বইয়ের জন্য। আশাকরি সেগুলোতেও এমন অসাধারণ লেখা পাবো।
আমিনুল ইসলাম এর লেখা এটা তার তৃতীয় বই হলেও আমার পড়া দ্বিতীয় বই। উনার লেখায় অসম্ভব পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। আমার কাছে উনাকে অনেক সম্ভাবনাময় লেখক বলেই মনে হয়। যারা ফ্যান্টাসি, এডভেঞ্চার এসব গল্পে ডুবে যেতে চান তাদের জন্য এল ডোরাডো মাস্ট রিড একটা বই। এই বইটা নিয়ে তেমন আলোচনা সচরাচর চোখে পড়ে না, বেশ আন্ডাররেটেড একটা বই, এই বই নিয়ে আরো বেশী আলোচনা প্রয়োজন।
বই এর প্রোডাকশন যথেষ্ট ভালো বেশ শক্তপোক্ত বাইন্ডিং এর বই। পেজ গুলো ও যথেষ্ট ভালো৷ বই এর প্রচ্ছদ বইটিতে আরো প্রিমিয়াম ফিল নিয়ে আসছে, তবে লর্ড জুলিয়ান আরো খেল দেখাতে পারতেন সম্ভবত। ওহ, বই এর শুরুর পৃষ্ঠায় প্রচ্ছদের জায়গায় ভুলে অন্য একটা নাম দিয়ে দেয়া, সম্ভবত উনি ভেতরের ইলাস্ট্রেশন গুলো করেছে। ইলাস্ট্রেশন গুলো বেশ নজরকাড়া ছিল। বেশ কিছু বানান ভুল ছিল। এছাড়া আর তেমন কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি প্রোডাকশন এ।
বইটিতে বেশ কিছু পছন্দের লাইনের মধ্যে অন্যতম কয়েকটা শিক্ষনীয় লাইনঃ-
★ মানুষের ভাবনা বড়ো আজব প্রাণী। বিপদে পড়লে একসাথে পড়তে চায়; কিন্তু সফলতার বেলায় যাতে একা সফল হতে পারে সেই চেষ্টায় সর্বদা মগ্ন থাকে।
★ কৌতূহলের কাছে যুগে যুগে পরাজয় হয়েছে হাজারো বিপদের সম্ভাবনার।
এল ডোরাডো! কাল্পনিক এক শহর! যে শহর পুরোটা মোড়ানো স্বর্ণের আবরণে। কল্পিত এই শহর কি সত্যি রয়েছে? থাকলে কোথায় সেটা? এই শহ��ের ইতিহাস কীভাবে প্রসারিত হয়েছে? কেন এই শহর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি?
মুভি তৈরির স্বপ্ন দেখে আয়ান ইকবাল। পাইরেটস নিয়ে কল্পনায় শেষ নেই। মেডিকেলের পড়াতে তার আগ্রহ বিন্দুমাত্র নেই বললেই চলে। মায়ামিতে গিয়ে পড়ার কথা বাবাকে জানালে ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা!
অন্যদিকে হ্যামিলটন কামারের কাজ করা ছাপোষা সাধারণ ছেলে। বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটে। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে জানতে পারে তার দাদা ছিলেন একজন নাবিক ও অভিযাত্রিক, যিনি খোঁজ পেয়েছিলেন স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর! এরপর?
সুদর্শন সৈনিক ব্যালেমি ডুবে আছে মারিয়ার প্রেমে। কে এই মারিয়া? ব্যালেমিও বা কে? পাইরেটসদের সাথে তার কী সম্পর্ক? ওদিকে এডওয়ার্ড টিচের সাথে ঘটে গিয়েছে ভয়ানক ষড়যন্ত্র। স্বয়ং রাণীর আদেশ মান্য করতে গিয়ে তার জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকা!
টাইম ট্রাভেল! পাইরেটস! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! আমাজন জঙ্গল! কিন্তু এইসবের সাথে এল ডোরাডোর কী সম্পর্ক? লুকিয়ে থাকা একঝাঁক রহস্য ও রোমাঞ্চিত উপন্যাস ‘এল ডোরাডো'-তে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। . ◑ পাঠ প্রতিক্রিয়া: . সমুদ্র এবং জলদস্যু নিয়ে এখনো কিশোর, তরুণ এমনকি বয়স্ক মানুষদের মধ্যেও এক ধরনের অবসেশন দেখা যায়। মন চায় আগের দিনকার সেইসব সব জাহাজে করে বেড়িয়ে পড়ি সমুদ্র অভিযানে, অজানাকে জানতে। এই অ���সেশন থেকেই মূলত বইটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। তখনও ঠিক জানতাম না এটা ট্রিলজি হবে। পরবর্তীতে যখন লেখকের অন্যান্য বইগুলো পড়ি, সেই সম্পর্কিত আলোচনার সুবাদে লেখকের থেকেই এটা জানতে পারি। এবং বইটা রিপ্রিন্ট হবে নয়া উদ্যোগ থেকে পাশাপাশি একইসাথে প্রকাশিত হবে ট্রিলজির বাকি দুইটা বইও। তারপর থেকেই অপেক্ষার প্রহর শুরু। অবশেষে সেই ট্রিলজি প্রকাশিত হল এবং অনেক ব্যস্তা কাটিয়ে ট্রিলজিটা পড়ার সুযোগ পেলাম। ষোলো ও সতেরো শতকের দিকে তৎকালীন ইউরোপিয়ানরা বিশ্বাস করত দক্ষিণ আমেরিকার কোথাও লুকিয়ে আছে এল ডোরাডো নামক সোনার শহর। আর এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই তখনকার সময়ে অসংখ্য অভিযাত্রী চষে বেড়িয়েছে সমগ্র আমাজন জঙ্গল। সভ্য দুনিয়ার স্বর্নলোভী মানুষ অত্যাচার করেছে দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত বিভিন্ন উপজাতিদের, ধ্বংস করে দিয়েছে সমগ্র ইনকা সাম্রাজ্য। এল ডোরাডো নামক সম্পদে পরিপূর্ন এক কল্পিত "সোনার শহর" এর ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত মিথ কে উপজিব্য করে লেখক রচনা করেছেন এল ডোরাডো ট্রিলজি। যার প্রথম বই এই "এল ডোরাডো।"
এল ডোরাডো উপন্যাসে লেখক আমাদের নিয়ে গেছেন ৩০০ বছর পূর্বের পৃথিবীতে। যেখানে উঠে এসেছে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া কিছু মানুষের গল্প, দেশপ্রেমের জন্য এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে বেছে নিয়ে সবশেষে নিজের সোনালি স্বপনগুলো বলি দিয়ে আক্ষেপ থেকে সমুদ্রের এক ত্রাস হওয়ার গল্প, নতুন করে স্বপ্ন দেখা, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টারত কিছু মানুষের গল্প, প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতার গল্প। এছাড়াও সমুদ্র আর জলদস্যুদের গল্প। আমাজনের মধ্যে বসবাস করা আদিবাসীদের জীবন চিত্রও দেখা যায় এই বইয়ে।
এসবকিছুর পাশাপাশি স্প্যানিশ সাকসেশন, স্প্যানিশ ট্রেজার ফ্লিটের মতো কিছু বিষয়াদিও উঠে এসেছে এই বইয়ে। অর্থাৎ এখানে কয়েকটা ঐতিহাসিক ঘটনা, ঐতিহাসিক চরিত্রেরও দেখা মিলবে। সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে বইটা। যেহেতু ট্রিলজির প্রথম বই, তাই বেশ অনেকটাই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে কিছু বিষয়ে। সেই হিসেব এটাকে একটা ইন্ট্রো বলা যায়। অনেক অনেক চরিত্র রয়েছে বইয়ে, যেগুলোকে এখনো পর্যন্ত প্রায় বিচ্ছিন্নই বলা চলে, যার যার জীবনকে ঘিরে কাহিনী এগিয়ে চলছে। এবং পরবর্তীতে প্রায় শেষের দিকে ভিলেনের এন্ট্রি হয়। এর মাধ্যমেই শেষ হয় সিরিজের প্রথম কিস্তি। শেষে ক্লিফ হ্যাঙ্গার রেখে দিয়েছেন লেখক। এরপরে পরবর্তী কাহিনীর দেখা মিলবে সিরিজের ৩য় বই অর্থাৎ এ ফেস্টিভাল অভ ব্লাড এন্ড সি তে।
যারা ইতিহাসের মিশেলে তৈরী কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চান, যাদের মনে রয়েছে জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে বেড়িয়ে পড়ার সুপ্ত বাসনা, আমাজনের বুক চিড়ে যারা এক অ্যাডভেঞ্চারাস যাত্রায় যেতে চান, খুঁজে পেতে চান স্বর্নের শহর এল ডোরাডো পাশাপাশি টাইম ট্রাভেল, জলদস্যু নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তুঙ্গে বইটি তাদের জন্য। আশাকরি বইটা নিরাশ করবে না কেউকে। . ◑ চরিত্রায়ন: . লেখক অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে এসেছেন এই বইয়ে। যেমন: আয়ান, স্যামুয়েল ব্যালেমি, পলগ্র্যাভস উইলিয়াম, ম্যাসন, হ্যামিলটন, এনা, ক্যাপ্টেন হ্যানসন, ব্যাঞ্জামিন হরনিগল্ড, এডওয়ার্ড টিচ, মারিয়া, টরেস, স্টেবেসটিয়ান ইত্যাদি। এখানে বেশ কিছু চরিত্রের জন্য লেখক আলাদা আলাদা দৃশ্যপট তৈরী করেছেন। যাদের আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে এসব চরিত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন চরিত্র চরিত্র মনে হচ্ছে। মূল গল্পে এদের ভূমিকা পাশাপাশি সম্পৃক্ততা হয়তো ট্রিলজির তৃতীয় বইয়ে জানা যাবে। এই বইয়ে লেখক চরিত্রদের সাথে শুধুমাত্র পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি কিছু চরিত্র নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে, যেমন: গল্পের মোটামুটি শুরুর দিকে আয়ানের সাথে দেখা হওয়া বৃদ্ধকে অন্তত এখন পর্যন্ত রহস্যময় মনে হচ্ছে। আশা করি এসকল প্রশ্নের উওর তৃতীয় বইয়ে পাওয়া যাবে। এছাড়া লেখক প্রতিটা চরিত্রকেই বেশ দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেছেন। চরিত্রায়ণ নিয়ে অভিযোগ করার মতো কিছু পেলাম না। . ◑ লেখনশৈলী: . তরুণ লেখক আমিনুল ইসলামের লেখা ৩ টা বই পড়ার সুযোগ হয়েছে। প্রতিটা বইয়েই লেখনশৈলীর উন্নয়ন চোখে পড়েছে। বেশ সাবলীল ভাবে লেখক কাহিনী বর্ণনা করে গেছেন। শব্দচয়ন থেকে শুরু করে বাক্য গঠন সব কিছু মোটামুটি লেগেছে। চমৎকার বর্ণনাভঙ্গি থাকলেও ইতিহাস বর্ণানার ক্ষেত্রে কিছুটা জড়তা চোখে পড়েছে। যেহেতু এটা প্রথমদিকে লেখা বই তাই এটুকু ত্রুটি থাকতেই পারে। তবে সব মিলিয়ে ভালো ছিল। . ◑ বানান ও সম্পাদনা: . বইটা পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল বায়ান্ন প্রকাশন থেকে। নতুন প্রকাশনী অর্থাৎ নয়া উদ্যোগ থেকে রিপ্রিন্ট হওয়ার সময় নতুন প্রকাশনী সব কিছু নিজস্ব ভাবে করেছে। নতুন করে প্রুফের পরেও বেশ কিছু ভুল চোখে পরেছে। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে এদিকটায় প্রকাশনী পুনরায় নজর দিবে। এছাড়া সম্পাদনা মোটামুটি ভালোই ছিল। . ◑ প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন ও অন্যান্য: . বইয়ের এই সুন্দর প্রচ্ছদটি করেছেন লেখক, প্রচ্ছদশিল্পী রিয়াজুল ইসলাম জুলিয়ান। পাশাপাশি নয়া উদ্যোগ প্রকাশনীর প্রোডাকশনও ভালো ছিল। বরবরের মতো ভালো প্রোডাকশন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। একদম স্মুদ বাইন্ডিং। বই পড়া যায় আরাম করে। আর সবকিছু বিবেচনায় নিলে দামও হাতের নাগালেই রাখা হয়েছে যতোটা সম্ভব। . ◑ প্রিয় অংশ: . ⊕ মানুষের ভাবনা বড় আজব। বিপদের পড়লে একসাথে পড়তে চায়; কিন্তু সফলতার বেলায় যাতে একা সফল হতে পারে সেই চেষ্টায় সর্বদা মগ্ন থাকে। . ⊕ এই দেশকে অপছন্দ করার অনেক কারণ রয়েছে, বেশিরভাগ মানুষই দেশ ছাড়তে পারলেই খুশি, এমন একটা ভাব করে। কিন্তু ছেড়ে যাবার সময় সবার মনই নিস্তব্ধ এক আশঙ্কায় ভোগে। এটাই হয়তো শিকড়ের টান। . ⊕ মানবজীবনে যদি ভয়ানক কোনো অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করা হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা হচ্ছে কৌতূহল। কৌতূহলের কাছে যুগে যুগে পরাজয় হয়েছে হাজারো বিপদের সম্ভাবনার। ইতিহাসে অসংখ্য মানুষ শুধু অজানাকে জানার জন্য ডুব দিয়েছে মৃত্যুর কুয়ায়। কেউ বা ফিরেছে, কেউ বা ফিরেনি। . ⊕ সভ্য আর এই পৃথিবীর শ্রেষ্�� জীব নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে হত্যার মাধ্যমে। . ◑ ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.২/৫
আমার মত বোরিং মানুষের জন্য সংক্ষিপ্ত আলোচনা। ইহা কোনো রিভিউ নহে।
এল ডোরাডো ট্রিলজির প্রথম বই। ট্রিলজির শুরু হিসেবে ভালো ছিলো। কাহিনি খুবই দ্রুত এগিয়েছে। মনে হলো এই মাত্র শুরু করলাম, এই মাত্রই শেষ হয়ে গেলো। গল্পের প্রোটাগনিস্ট আয়ান ইকবাল। তাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলেই স্পয়লার হয়ে যাবে। বইতে তার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট সম্পূর্ণ হয়নি বলে মনে হলো। ৯০% হয়েছে। তার ইমোশনাল মাইন্ডসেটের পূর্ণাঙ্গ ধারণা ছিলো না এটাতে। সম্ভবত পরবর্তী বইয়ে ফিলাপ করা হয়েছে। অন্য দুইটা মেজর ক্যারেক্টর হচ্ছে হ্যামিল্টন আর, বালেমি। কাহিনি ডেভেলপমেন্টএ এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবুও কেন যেন এ দুইজন সম্বন্ধে খুবই কম জানতে পারলাম বলে মনে হলো। মানে প্রপার ব্যাকস্টোরি ছিলো,ওকে,কিন্তু সেটা তো এনাফ নয়। তাদের মেন্টালিটি সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিলো না।
প্লটটা ফাটাফাটি। প্লটের এক্সিকিউশান দারুণ। কিন্তু ফাইট সিকোয়েন্স গুলো খানিকটা অপাঙয়েক্ত মনে হয়েছে। স্যাটিসফাইং ছিলো না। লিখনশৈলী বিবেচনায় দারুণ। আমিনুল ইসলাম ভায়ের লেখনি স্মুথ। কিন্তু ফল্ট একটা আছে। এ ফল্টটা আবার গডফাদার বইতে পাইনি, পেয়েছি বাটারফ্লাই ইফেক্টে। সেটা হলো দীর্ঘ বাক্যের ব্যাবহার। কখোনও কখনো সাসপেন্সফুল কোনো সিকোয়েন্সে এত লম্বা বাক্য পড়ে কিছুটা স্তিমিত হতে হয়। লিখনশৈলীর আরেকটা সমস্যা হচ্ছে সেম সিলেবেল বারবার ব্যাবহার। লাইক, প্রতিটা বাক্যের শেষে করলো, খেলো, এলো এই একই উচ্চারণের শব্দ ইউস করা, যেটা কিনা খানিকটা ভ্রু কোঁচকানোর উদ্রেক ঘটায়। বাট ওভারঅল, এল ডোরাডো ইজ আ সাকসেস। পরবর্তী বই শীগ্রই শুরু করতে হবে। ফ্যান্টাসি আর এডভেঞ্চার যাদের পছন্দ, তাদের জন্য রেকোমেন্ডেড। ৩.৫/৫
ফাইনালি! ২০২০ এর লকডাউনে জলদস্যুদের নিয়ে একটা প্লট ভাবছিলাম। তখন থেকে আমি অসংখ্য বার ভেবেছি। কীভাবে, কবে এই গল্পটা সমাপ্ত হবে। শুরুতে হিস্টরিকাল দিকে বেশি মন দিলেও ধীরে ধীরে ফ্যান্টাসির দিকে সরে এসেছি। ট্রিলজি সম্পূর্ন হলো, বিষয়টা এখনও প্রায় অবিশ্বাস্য লাগছে নিজের কাছে। আমার কাছে, শুরুর ভাবনা থেকেও ভালো সমাপ্ত হয়েছে। বাকিটা পাঠকের উপর। জলদস্যু, ফ্যান্টাসি, মিথ, অ্যাডভেঞ্চার সবকিছুর কম্বিনেশন এ এল ডোরাডো।
এল ডোরাডো! এমন এক শহরের গোল, যা কেবল কল্পনাতেই বেশি সুন্দর। আর বাস্তবে?
স্বর্ণের প্রতি মানুষের অবসেশন প্রাচীনকাল থেকেই অনেক বেশি। প্রতিটি মানুষই অধিক ধনী হতে চায়। আর তার এই চাওয়া পূরণ করতে স্বর্ণের চেয়ে দামী আর কী আছে? তাই তো সোনায় মোড়ানো শহরের মতো এক কল্পনার পেছনে মানুষ হামলে পড়েছে। ছুটে বেড়িয়েছে এক অজানার খোঁজে। অনেক বিপদসংকুল পথ পেরিয়েছে, জীবন খুঁইয়েছে অনেকে। তবুও থেমে থাকেনি। প্রাচুর্যের ডাক অগ্রাহ্য করা যায় না। তবুও কি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে? আছি কি এমন শহর? কে জানে? না-কি শুধু মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়ানোই বিফলে যাবে...
"এল ডোরাডো" উপন্যাস টাইম ট্রাভেলের। বর্তমান সময় থেকে ৩০০ বছর পিছিয়ে যাওয়া এক সভ্যতা! আছে মহাসাগরের বুকে জলদস্যুদের অবাধ বিচরণ। এরপর? কতশত ঘটনা। কত ত্যাগ! জীবনের মারপ্যাঁচে, ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে বেছে নিতে হয় অন্ধকার এক জীবন।
আমাজনে বুক চিঁড়ে ছুটে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। প্রতিটি মুহূর্তে মাথায় ঝুলে মৃত্যুর পরোয়ানা। হিংস্র জন্তুদের ভয় তো আছেই, সেই সাথে উপজাতিদের কুসংস্কার আর ভয়াল দর্শন। কখন কোন দিক থেকে আক্রমন আসে, তার দিশা নেই। তবুও লক্ষ্য পূরণে ছুটে চলতে হয়। এছাড়া যে ফিরে যাওয়ার উপায়ও নেই।
"এল ডোরাডো" উপন্যাস ইতিহাস ও পুরাণের সংমিশ্রণে ফ্যান্টাসি ভিত্তিক উপন্যাস। যেখানে উঠে এসেছে ৩০০ বছর আগের পৃথিবী। যেই পৃথিবীর গল্প লেখা হয়েছে সমুদ্রের ওপর... জাহাজে চড়ে। জলদস্যুদের গল্প দারুণভাবে ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। অনেক জলদস্যুদের সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা আছে। যেমন, ব্ল্যাকবিয়ার্ড। কেন তারা এই অন্ধকার পথ বেছে নিলো? এর পেছনের গল্প নির্মম। কেউ খুশিমনে এমন এক জীবনে পা দেয় না, যেখানে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।
লেখক আমিনুল ইসলামের গল্প বলার ধরন মোটামুটি লেগেছে। বইয়ের মাঝে কিছু ইতিহাসভিত্তিক তথ্য ছিল। লেখক যতটা সাবলীলভাবে গল্প বর্ণনা করেছেন, ইতিহাসের তথ্য ততটা খেই হারিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্ণনায় আড়ষ্টতা ছিল। যেমন, প্ল্যান ক্র্যাশের ঘটনা। লেখক ভূমিকায় লিখেছেন শরীফুল হাসানের সাম্ভালা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে রচনা করেছেন "এল ডোরাডো ট্রিলজি"। সেই ছাপ কিছুটা হলেও বইয়ে ছিল। প্লট কিংবা চরিত্রে, সবকিছুর ডেভেলপ করার মূল আমার সাম্ভালার মতোই লেগেছে। অনেকক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্নতা ছিল। লেখকের সৎসাহসের তারিফ করতে হয়। অনুপ্রাণিত অংশ অকপটে স্বীকার করেছেন। অনেক জনপ্রিয় লেখকের মাঝেও এই সাহস লক্ষ্য করা যায় না।
লেখক যে বইটিকে পূর্ণতা দিতে পরিশ্রম করেছেন, তা স্পষ্ট দৃশ্যমান ছিল। সিরিজের প্রথম বই হিসেবে "এল ডোরাডো"কে গল্পের সূচনা হিসেবে ধরা যায়। এর পরে হয়তো কাহিনি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বেশ কিছু বর্ণনা মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনি। আরেকটু বেটার হলে হয়তো উপভোগের মাত্রাটা বাড়ত। তবে লেখকের এমন এক গল্পের প্রশংসা না করে অবশ্য উপায় নেই।
"এল ডোরাডো" ইতিহাসভিত্তিক ফ্যান্টাসি ফিকশন। এখানে ইতিহাস খুঁজতে যাওয়া বোকামি। ইতিহাসকে উপজীব্য করে নিজের কল্পনা আর লেখনী শক্তিতে লেখক এমন এক গল্পকে সামনে এনেছে, যা নিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দ্বিধাবিভক্ত। "সাম্ভালা" ট্রিলজির ক্ষেত্রে একজনকে বলতে দেখেছিলাম, বানোয়াট এক গল্প ইতিহাস বিকৃত করে লেখা। ফিকশন, ফ্যান্টাসিতে যারা ইতিহাস খোঁজে তাদের জন্য এই বই নয়। সাম্ভালা যেমন অবিশ্বাস্য এক শহরের মহাকাব্য, এল ডোরাডোও তেমনই। হয়তো এমন শহরের অস্তিত্ব সত্যিই আছে। কিংবা কল্পনায়। বিস্ময়কর এ পৃথিবীর অসংখ্য রহস্য জানার এখতিয়ার কে আমাদের নেই...
শেষে একটা দুঃখের কথা জানাই। "এল ডোরাডো ট্রিলজি" সিরিজের বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। তৃতীয় বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় এসে বড়ো ধরনের এক স্পয়লার খেয়ে গেলাম।
এমন এক দুঃখজনক ঘটনার পর নিজেরই নিজেকে বলতে ইচ্ছা করছে,
"অতি বার বেড়ো না, ঝরে পড়ে যাবে..." (মুখে হাসি, চোখে পানির ইমোজি)
আয়ানের জন্ম হয় ১৯৯৯ সালে, স্পেনে। আয়ানের মা এলেনা ছেলে হওয়ায় আতংকিত হয়ে যায় কারণ তার মতে "তারা" নিতে আসবে আয়ানকে। আয়ানের বাবা ইকবাল হোসেন এসব উদ্ভট কথা শুনে অবাক হন এবং এলেনার অনুরোধে বাংলাদেশে চলে আসে। তারপর আয়ান বড় হয়, মেডিক্যালে পড়াশোনা করতে থাকে তবে এসবে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। জলদস্যু নিয়ে আয়ানের জানার আগ্রহ অনেক এবং সে এইসব নিয়ে মুভি বানাতে আগ্রহী। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল, হঠাৎ একদিন এলেনা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর বাবাকে একলা রেখে সে পাড়ি দেয় আমেরিকায়।
প্লেনে আয়ান এক বুড়োকে স্বপ্ন দেখে যার পরেই হঠাৎ প্লেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং আয়ান নিজেকে এক অচেনা দ্বীপে আবিষ্কার করে। সে দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা ছিল আয়ানের স্বপ্নে দেখা সে বুড়োটি। বুড়ো যেন তার প্রতীক্ষায় ছিল। আয়ান যখন বুড়োর বাড়িতে গভীর ঘুমে মগ্ন তখন বুড়ো তার পিঠের জন্ম দাগের উপর সোনালি ত্রিশুল এঁকে দেয় যেন এই অংকন তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আয়ান তারপরের দিন ঘুম থেকে উঠে অস্থির হয়ে পড়ে বাড়ি ফেরার জন্য। বুড়ো তাকে পথ দেখায় ঠিকই কিন্তু সেটা আয়ানের বাড়ি ফেরার পথ না, সে পথ হচ্ছে জলদস্যুদের রাজ করার সময়কার পথ যেখানে ক্ষমতা, প্রতিশোধ, ভালোবাসা, লোভ সবকিছুর জন্য জীবন খোয়াতে হয়।
আয়ান বুড়োর দেখা পথে এগোতে শুরু করলো এবং এক জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়লো। আয়ান তাদের থেকে জানতে পারলো তখন আঠাশত শতক চলছে যার অর্থ আয়ান তিনশো বছর পেছনে চলে এসেছে। প্রথমে তাকে নিয়ে সবাই হাসি তামাশা করলেও তার পিঠের দাগ দেখে সবাই আতংকিত হয়ে যায়। আয়ানকে সবাই ক্যাপ্টেন সান্ডার বলে দাবি করছে। ক্যাপ্টেন সান্ডার হলো সমুদ্রের রক্ষাকর্তা, সমুদ্রে ঘটে যাওয়া সকল খারাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ক্যাপ্টেন সান্ডার। বহু বছর ধরে ক্যাপ্টেন সান্ডার ছিলেন নিখোঁজ।
গল্পে আয়ান বাদেও আরো কিছু চরিত্র আছে যাদের গল্পে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।যেমনটা হ্যামিলটন। হ্যামিলটন কামারের কাজ করে। সৎ বাপের অত্যাচারে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং হোটেলে হঠাৎ তার দাদার বন্ধুর সাথে দেখা হয়। হ্যামিলটনের দাদা সেবাস্টিয়ান ছিলেন একজন অভিজ্ঞ নাবিক। একদিন তার দাদা ও তার বাবা হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায়, সেই থেকে তারা নিখোঁজ। দাদার বন্ধু তার হাতে একটা ডায়েরি তুলে দেয় যেখানে তার দাদার নিখোঁজ হওয়ার কারণ জানা যায়। তার বাবা ও দাদা আর কোথাও না এল ডোরাডো শহর খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যায়। এল ডোরাডো হলো স্বর্ণের শহর যেই শহর খুঁজতে গিয়ে বিট্রিশ লোকেরা অনেক সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেয়, অনেক জাতির উপর করে পাশবিক নির্যাতন তবুও এ শহরের সন্ধান পাওয়া যায় না। তবে কি তার দাদা ও বাবা এই শহর খুঁজে পেয়েছিল?
গল্পের আরেকটি অংশ জলদস্যুদের কেন্দ্র করে, কেমন ছিল তাদের জীবন, কেন তারা এমন ভয়ঙ্কর পেশাকে বেছে নিল। ব্যালেমি কিংবা এডওয়ার্ড টিচের কথায় বলা যাক। ব্যালেমি ব্রিটিশ নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা যে মারিয়া নামের এক কিশোরীর প্রেমে মগ্ন, মারিয়াও তাকে প্রাণপণে ভালোবাসে কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলতে হয় ব্যালেমির, তার চাকরি খোয়া যায় এবং এক বেকার যুবকের সাথে মারিয়ার বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন না বলে জানিয়ে দেন। ব্যালেমি মারিয়াকে প্রতীক্ষা করতে বলে , সে শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফিরে আসবে। ব্যালেমি প্রতিষ্ঠিত হলো ঠিকই কিন্তু একজন কুখ্যাত জলদস্যু হিসেবে। ব্যালেমি জানতেই পারলো না তাদের কন্যাসন্তান এই পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছে, সে জানলো না বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে মারিয়ার জন্য কি বিপদ অপেক্ষা করেছিল। অন্যদিকে ব্যালেমির সাথেই যোগ দেয় এডওয়ার্ড টিচ যাকে বৃটিশ বাহিনী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাগে, ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা টিচ হয়ে যায় কুখ্যাত ব্লাকবিয়ার্ড।
ফিরে আসি হ্যামিলটনের কাছে যে আয়ানকে খুঁজে বের করে কারণ এই পথে তার আয়ানকে খুব দরকার। আয়ান তার সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয়, শুরু হয় তাদের আমাজন যাত্রা , সাথে যোগ হয় টরেস। সেখানে এক দেবীকে খুঁজে বের করে তার থেকে এল ডোরাডো শহরের ম্যাপ সংগ্রহ করতে হবে কিন্তু পথ তো সহজ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একের পর এক হামলার শিকার হয় তিনজন তবে সব বাঁধা পেরিয়ে দেবী থেকে তারা পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত বস্তু। এল ডোরাডো শহর তাহলে কোনো মিথ নয় বলে তারা বিশ্বাসী।
জাহাজের একটি দল নিয়ে ম্যাপ অনুযায়ী তারা এর ডোরাডোর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং শেষে তারা খুঁজে পায় সেই স্বর্ণের শহরটিকে। আনন্দের মিছিল বয়ে যায় জাহাজের দলটিতে কিন্তু সব আশায় ভাটা পড়া শুরু করে যখন হ্যামিলটন আয়ান ও টরেসকে জানায় সে অনেক বড় একটা সত্য তাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছিল।
লেখার ধরণ, প্লট, চরিত্রায়ন সবকিছু বেশ গোছানো বলতেই হয়। গল্পের যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা হলো লেখক শুধু মূল চরিত্রের উপর পুরো গল্প না লিখে তার পাশাপাশি অন্য চরিত্রেদের উদঘাটন করে গল্পের মধ্যে বৈচিত্র্যতা আনার চেষ্টা করেছে যার ফলে গল্প অনেক উপভোগ্য ছিল বিশেষ করে জলদস্যুদের কেন্দ্র করে অংশগুলো পড়তে ভীষণ ভালো লেগেছে। লেখক যথেষ্ট শ্রম দিয়েছে এই বইয়ে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
"দেখেছ কি কখনও সোনার শহর, রূপার শহর, স্বর্গের সৌন্দর্য বহন করা শহর? দেখেছ কি কখনও দেবতাদের শহর..."
এল ডোরাডো
এল ডোরাডো'র শুদ্ধ বাংলা স্বর্ণের শহর। স্প্যানিশ এই শব্দযুগল সারা পৃথিবীর তাবড়-তাবড় ইতিহাসবেত্তা থেকে শুরু করে গ্যাংস্টার সবার কাছে ভাইব্রেনিয়াম থেকেও বেশি মূল্যবান। (প্লাটিনাম আবার কোন হনু?) এল ডোরাডো নিযুত ট্রেজার হান্টার্সদের সারাজীবনের অভিলাষী বস্তু। এতকিছু যখন তার সাথে রক্তপাতের ইতিহাস জড়াবে না এ কি কখনো হয়? এই এল ডোরাডো এক রক্তপাতের আখ্যানও বটে। এহেন জিনিসকে কনসেপ্ট বানিয়ে যা সৃজনশীলতা করা হয়েছে সবই একটা থেকে আরেকটা সুন্দর। সেটা সিনেমা হোক বা বই। আমিনুল ইসলামের এল ডোরাডোও এমনই একটি সিরিজ। তবে এ বইটার কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব। গল্প এগিয়েছে অবিশ্বাস্য গতিতে। কিছু জায়গায় আয়ানের কর্মকাণ্ডে মনে পড়ছিল শঙ্করের কথা। চাঁদের পাহাড়ের ফিল যাকে বলে। নিয়ায়ার মাঝে অনেকটা হেনরি রাইডারের 'শী' এর অনুভূতি পাচ্ছিলাম। আমাজন জঙ্গলে আমাজনিয়ার অনুভূতির কথা বলাই বাহুল্য। অনেক জায়গায় আরেকটা বইয়ের কথাও মনে পড়েছিল— দ্য থ্রী মাস্কেটিয়ার্স। আবার কপি বলে ভুল করবেন না। মৌলিক বই তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত বিষয়গুলো লেখক নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন। বিদেশি পটভূমিতে দেশীয় লেখনীতে অসাধারণ বই। গোগ্রাসে গিলেছি। শেষটাও সিনেমাটিক। এল ডোরাডো নিয়ে তৈরি অনেক মুভি দেখেছি। সেগুলোর মধ্যে এই বইটার গল্প, উপস্থাপন সব ইউনিক মনে হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন স্বাদ পেয়েছি বলাই যায়।
আকর্ষণ: ফ্ল্যাপের যে অংশটা পড়ে এই সিরিজটা রিডিং লিস্টে নিতে দুবারও ভাবতে হয়নি সেটাই তুলে দিচ্ছি— "টাইম ট্রাভেল! জলদস্যু! ব্ল্যাকবিয়ার্ড! আমাজন জঙ্গল! কিন্তু এইসবের সাথে এল ডোরাডোর কী সম্পর্ক?" অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমীদের জন্য এ সিরিজকে রিডিং লিস্টে নিতে এই কয়েকটি শব্দই যথেষ্ট।
উপস্থাপন: গুছিয়ে গল্প বলার পদ্ধতিটা দারুণ। প্রথমে চরিত্র ভাগ করা হয়েছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী। একদম বৃত্তের পরিধি থেকে বিভিন্ন রেখার কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হওয়ার মত। চরিত্রগুলো একেকটা রেখা যা একসময় কেন্দ্রে একটা বিন্দুতে মিলিত হয়। এনা আর আয়ানের প্রেমকাহিনী নিয়ে ব্যস্ত না হওয়ায় গল্পের ফ্লো বিঘ্নিত হয়নি। চরিত্রের নাম অনুযায়ীই পরিচ্ছেদের নাম দেয়াটাও ইউনিক। একেতো অ্যাডভেঞ্চার-ফ্যান্টাসি তার উপর ঘন ঘন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন একঘেয়েমির অস্তিত্বই ছিল না। অ্যাকশনগুলোর বর্ণনাও ভালো ছিল। পুরো গল্পটার প্রতি ভালোলাগা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল ডেভিলের একটা ডায়লগ— "ব্রিং মি ক্যাপ্টেন সান্ডারস।" ইনফিনিটি ওয়ারে থর যখন ওয়াকান্ডায় এন্ট্রি নিয়ে "ব্রিং মি থানোস" ডায়লগ দিয়েছিল সম্পূর্ণ সেই গুজবাম্পস ফিলিংসটাই মনে করিয়ে দিয়েছিল এই একটি ডায়লগ। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন এল ডোরাডো বলতে গেলে হলিউড অ্যাডভেঞ্চার মুভির স্ক্রিপ্ট, সিনেমাটিক গল্প। অ্যাডভেঞ্চার, ট্রেজার হান্ট এসব যাদের পছন্দ তারা এই বইটাকে চোখ বন্ধ করে রিডিং লিস্টে রাখতে পারেন। নইলে ঠকতে হবে। গল্পের ছলে ইতিহাস অর্থাৎ ঐতিহাসিক উপন্যাস এমনিতেই ভীষণ পছন্দের। সেই হিসেবে এ বইটার ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর দিকটাতেও ফোকাস করতে হয়। প্রথমেই লেখক এল ডোরাডোর হালকা ইতিহাস সুখপাঠ্যরূপে তুলে ধরেছেন। তাই এ বিষয়ে একেবারে আনকোরাদেরও সিরিজটি শুরু করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। ঐতিহাসিক তথ্যগুলো জানাকে সমৃদ্ধ করেছে। বইটা পড়ার মুনাফাগুলোর মধ্যে এটা একটা। প্রথমদিকে আয়ানের বারমুডা ট্রায়াংগেলে পড়ে অতীতে যাওয়ার ব্যাপারটা আরও বৈজ্ঞানিক এবং ডিটেইলসে না পেয়ে একটু খুঁতখুঁত লাগছিল। তারপর গল্প এগোনোর সাথে সাথে বোঝা গেল লেখকের ফোকাস ঐতিহাসিক রিয়েলিস্টিক অ্যাডভেঞ্চার থেকেও ফ্যান্টাসিতে বেশি। তাই হ্যারি পটারে এই ধরনের ঘটনা যখন চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা হয়েছে এল ডোরাডোতে তা নিয়ে খুঁত খোঁজা অর্থহীন। আর ফ্যান্টাসি অ্যাঙ্গেলে তা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে পরবর্তীতে।
চরিত্র-কথা: মূল চরিত্র আয়ান। যে নিয়তির ফেরে বর্তমান সময়কাল থেকে পিছিয়ে যায় সপ্তদশ শতাব্দীর গোল্ডেন এজ অফ পাইরেসির পৃথিবীতে। যে পৃথিবী লেখকের কল্পনার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে ফ্যান্টাসি এলিমেন্টে ভরপুর। মেরুদণ্ডহীন হওয়ায় গল্পের কেন্দ্রবিন্দু আয়ান হলেও পাঠকের মনে খুব একটা জায়গা করে নেয়ার মত চরিত্র মনে হয় নি। তার চেয়ে হ্যামিলটন বেশি জায়গা করে নেবে পাঠকের মনে। পারসোনালি হ্যামিলটনকে বেশি ভালো লেগেছে। বলা যায় এল ডোরাডো'র অভিযান আর গল্পের কারিগরির প্রধান হর্তাকর্তা হ্যামিলটন। গল্পটিতে স্থান পেয়েছে ঐ সময়ের অনেক কুখ্যাত জলদস্যু। যাদের উপর প্রধান ফোকাস করার ইচ্ছে থাকলেও গল্পে বিশেষ ভূমিকা না থাকায় লেখক খুব একটা করেননি। তাও যতটুকু করা হয়েছে তাতেই এদের ইতিহাস আর কর্মকাণ্ড নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়। ক্যাপ্টেন হ্যানসন, ব্যালেমি, পল, এডওয়ার্ড টিচ, সেবাস্টিয়ান এই চরিত্রগুলোর উপস্থাপনা এমনই যে কখনো তাদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হচ্ছিল, কখনোবা করুণা। একরাশ হাহাকার অনুভব করেছিলাম মারিয়ার জন্য। মনে দাগ কেটে রাখল তার করুণ পরিণতি। পাইরেটস হান্টার সোফিয়া এমনই একটি চরিত্র যার জন্য পাঠক কষ্ট আর শ্রদ্ধা দুটোই অনুভব করবেন। কে জানে একসময় ঘৃণাও অনুভব করবেন হয়ত।
ব্যক্তিগতভাবে বইটির যে অসম্পূর্ণতা পাঠক-চোখে ধরা পড়েছে: অনেককিছু ডিটেইলসে বলা উচিত ছিল। ইচ্ছে করে সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে লেখার গভীরতা হারিয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা কিছুটা বিভ্রান্তি নিয়ে মাথা থেকে সরাতে হয়েছিল লেখক সেসব পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেননি বলে। উপন্যাসের জন্য এ বর্ণনা জিনিসটা খুব দরকার। লেখক সেটাই ইচ্ছে করে এড়িয়ে গিয়েছেন। একদম সহজ-সরলভাবে একটানা লিখে গিয়েছেন। কোথাও ভাবেননি এই জায়গায় এই শব্দটার পরিবর্তে এই শব্দটা বসালে পড়তে আরেকটু ভালো লাগবে। শব্দচয়নের ক্ষেত্রে লেখক কতটা পরিশ্রম করেছেন আমার জানা নেই। অতিরিক্ত সহজ-সাবলীল হওয়ায় লেখনী পানসে লেগেছে। এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য লেখা তাও বলা যায় না। কারণ গল্পের প্রয়োজনে একটু অ্যাডাল্ট ঘটনাও আছে। কাহিনীর ঘোরপ্যাঁচ তো আছেই। বিশাল একটা গল্পকে ছোট করে বলতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে স্বাদও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এককথায় নেগেটিভ দিক বলতে এইটুকুই লেখনী দুর্বল লেগেছে। অবশ্য পরবর্তী দুটি বইয়ে তা কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হয়েছে। মৌলিক বই হিসেবে আরো একটু উঁচুমানের শব্দচয়ন করা যেত। এমনটা মনে হয়েছে বইকে ভাষা শেখার মাধ্যম হিসেবেও দেখি তাই। এটা একান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতি। এত সহজ ভাষা হওয়ায় মৌলিক থেকেও অনুবাদের অনুভূতি পাচ্ছিলাম বেশি। এমন দুটো শব্দও যদি থাকত যাতে বাংলা অভিধান নিয়ে বসার সুযোগ হত তাহলে শব্দচয়নের ব্যাপারে এমন বলতাম না। একদম সহজ-সাবলীল ভাষায় যারা পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য এল ডোরাডো সিরিজ পোয়াবারো । হাতেগোনা টাইপিং মিস্টেক আছে কিছু। কয়েকজায়গায় বিরামচিহ্নের অনুপস্থিতি দৃষ্টিকটু লেগেছে। দুবার হোঁচট খেয়েছি। মানে এই দুজায়গায় গল্পের ফ্লো নষ্ট হয়ে অন্য চিন্তা ঢুকে যাওয়ায় মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিল। বিদেশি কোনো লেখক হলে এরকম দুর্দান্ত প্লটে কমপক্ষে চারশ' পৃষ্ঠার বই লিখে ফেলতেন। ২৪০ পৃষ্ঠায় অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদটা পাওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। এতবড় ফন্ট আর স্পেস না থাকলে দুশো পৃষ্ঠাও হত না। গল্পটিতে ইমোশনের কমতি নেই। ওগুলোতে আরেকটু কাজ করলে গল্পটা পাঠকের মনে আরো দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে পারত। কিছু চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ভালোই ছিল।
এ সিরিজের সবচেয়ে পছন্দের বই এটাই। তাই এটা নিয়ে একটু বেশি বকরবকর করলাম। একটা অ্যাডভেঞ্চার জনরার গল্পে যে উপাদানগুলো আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি পেয়েছি বইটিতে। কিন্তু সংক্ষিপ্তকরণের কারণে বইটি সেভাবে ব্রেনের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। পৃষ্ঠার কোয়ালিটি, বাইন্ডিং ও প্রচ্ছদ ভালোই। এল ডোরাডো ট্রিলজির প্রথম বই এল ডোরাডো। অরিজিন গল্প। তিনটির মাঝে সবচেয়ে পছন্দের বই। দুর্দান্ত এক অ্যাডভেঞ্চার।ঐতিহাসিক-ফ্যান্টাসি পটভূমিতে বাংলা ভাষায় এমন বই বিরল। বাংলা ভাষায় সেরা অ্যাডভেঞ্চার বইগুলোর মাঝে ঘটনাবহুল এই বইটি ঠাঁই করে নিলেও বিস্ময়ের কিছু নেই। বাংলা ভাষায় এমন উঁচুমানের মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার বিরল। অ্যাডভেঞ্চার, ফ্যান্টাসি, ঐতিহাসিক ফিকশন, নটিক্যাল ফিকশন এবং মিথলজি যাদের পছন্দের বিষয় তাদের রিডিং লিস্টে এল ডোরাডো ট্রিলজি রাখা বাধ্যতামূলক করা হল। ভালো জিনিস মিস করার দুঃখ অন্য কিছুতে নেই।
লেখক: আমিনুল ইসলাম জনরা: অ্যাডভেঞ্চার, ঐতিহাসিক ফ্যান্টাসি পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪০ প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান প্রকাশনী: নয়া উদ্যোগ
স্বর্ণের শহর!! যে শহরের সবকিছুই স্বর্ণের। কি শুনতে অবাক লাগছে না?? "এল ডোরাডো" ট্রিলজি এই শহরকে তালাশ করার কাহিনীর উপর লিখীত। ট্রিলজি'র প্রথম বই "এল ডোরাডো"তে যাত্রা প্রারম্ভ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে বলা হয়েছে। আঠারো শতকে হওয়া এই শহর খোজার কাজে আছে একবিংশ শতাব্দীর এক বাঙালি ছেলেও। শ���নে অদ্ভূত লাগছে না? টাইম ট্রাভেল, জলদস্যু, আদিবাসী, দেবতা সব এক হয়েছে এই গল্পে। গডফাদার সিরিজ পড়ার পর থেকেই আমি আমিনুল ভাইয়ের ফ্যান। যুদ্ধের সহস্র বছর পর পড়ার পর বুঝলাম বাংলা ফ্যান্টাসি ফিকশনকে উনি অন্য লেভেলে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় আছে। আমার সেই ধারণা কিছুটা মিলতে দেখলাম এখানেও। ইতিহাস, মিথ, ফ্যান্টাসি - এই ৩টা জিনিসকে তিনি যেভাবে একত্রিত করেছেন তা আসলেই বলার উর্ধ্বে।
বইয়ের নাম: এল ডোরাডো ( এল ডোরাডো #১) লেখক: আমিনুল ইসলাম প্রকাশক: সাফায়েত খন্দকার (নয়া উদ্যোগ) প্রচ্ছদ: রুদ্র কায়সার প্রথম প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২০২২ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪০ মুদ্রিত মূল্য: ৪৫০
'এল ডোরাডো ট্রিলজি'—র প্রথম বই 'এল ডোরাডো'। যেখানে আছে এখন থেকে ঠিক ৩০০ বছর আগেকার সভ্যতার ইতিহাস, মিথলজিক্যাল কিছু টপিক, জলদস্যুদের সাগরের বুকে চষে বেড়ানো, জলদস্যু হয়ে উঠার পেছনের নির্মম ইতিহাস, সর্বোপরি টাইম ট্রাভেল। যেখানে আয়ান নামের একটা ছেলে প্লেন ক্র্যাশ করে ঠিক ৩০০ বছর আগের পৃথিবীতে বিচরণ করছে। এখনকার পৃথিবীর সাথে সেসময়ের বিস্তর ফারাক। সেসময়কার কাঠের জাহাজ এখন রূপান্তরিত হয়ে লোহার হয়েছে, তখন ছিল না কোনো প্লেন, এমনকি তখনকার ভাষার সাথে এখনকার ভাষায়ও রয়েছে বিস্তর ব্যবধান!
আয়ান— বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। যাকে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। তার জন্মের পরপরই তার ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত মেরুদণ্ড বরাবর একটা দাগ দেখতে পায় তার মা। সে ভীষণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তার ধারণা কেউ একজন তার ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেবে। কারণ তার ছেলের জন্ম হেলাফেলায় কাটানোর জন্য হয়নি। তবে তার বাবা এসব কথাকে হেঁসেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তার ধারণা, তার স্ত্রীর মাথা ঠিক নেই।
একদিন আয়ান মেডিকেল পড়ায় ইস্তফা দিয়ে মুভি তৈরির জন্য দূর দেশের উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠে। কিন্তু তার আর গন্তব্য পৌঁছানো হলো না। প্লেন ক্র্যাশ করে সে একটা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। সেখানে তার দেখা হয় অদ্ভুত এক বুড়োর সাথে। যে কিনা আয়ানের পিঠের মেরুদণ্ড বরাবর কিছু একটা আটকিয়ে দেয় আর তাকে পথ দেখিয়ে পাঠিয়ে দেয় ৩০০ বছর আগেকার সভ্যতায়। যেখানে সবাই তার পিঠের সেই চিহ্নটা দেখেই ’ক্যাপ্টেন সান্ডার’ বলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে পড়ে। এসব কিছুই আয়ান বুঝতে পারছিল না। বরং ভবছিল কে এই ক্যাপ্টেন সান্ডার? কেন সবাই তাকে এ নামে ডাকছে? ৩০০ বছর পূর্বের এসময়ে আয়ান কিভাবে টিকে থাকবে? তার জন্মই বা কিসের জন্য আর সে তার নিজের ভবিষ্যতে কিভাবেই বা ফিরবে?
হ্যামিলটন— বাবা-মাকে হারিয়ে সৎবাবার অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে পালালো হ্যামিলটন। তার বাবা ও দাদা কোনো এক অজানার খোঁজে বেরিয়ে নিজেরাও হারিয়ে গেছেন পৃথিবীর বুকে। রেখে গেছেন নিজের পরিবারের জন্য চামড়ায় মোড়ানো একটা ডায়েরি। যেখানে লিখা আছে তার জীবনের ইতিহাস, এক অজানা রহস্যের কথা, সোনার শহর এল ডোরাডোর কথা। তিনি চান তার এ অপূর্ণ রহস্য তারই পরবর্তী প্রজন্মের হাতে উন্মোচন হোক। সেই একই উদ্দেশ্যে হ্যামিলটনও চলেছে আমাজন জঙ্গলের দিকে। সাথে আছে ম্যাসন এবং পথিমধ্যে তার পরিচয় হওয়া আয়ানের সাথে। পরিচয় হয় নাকি হ্যামিলটন জেনেশুনেই পরিচিত হয়? সেকি তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে? খুঁজে পায় সেই সোনার শহরটিকে?
এনা— ক্যাপ্টেন হ্যানসনের মেয়ে এনা। এরা সকলেই পাইরেট। আর আয়ান তার ভবিষ্যত থেকে উঠে এসে এদের জাহাজেই আশ্রয় নিয়েছিল। যেখানে এনার সাথে আয়ানের বেশ ভাব হয়। হ্যামিলটনের সাথে রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে সে এনাকে কথাও দেয় যে, আবারো সে ফিরে আসবে। এনার থেকে বিদায় নিয়ে তবেই সে ভবিষ্যতে যাবে। কিন্তু আয়ান চলে যাওয়ার পর এনার জীবনে নেমে আসে নতুন ঝড়। যে বাবার সাথে ছোটবেলা থেকে তার এতো দূরত্ব, সে দূরত্ব কিছুক্ষণের জন্য মিটে গেলেও তার ফলস্বরূপ সারাজীবনের জন্য সে তার বাবাকে হারিয়ে ফেলে। এখন সে থমাসের সাথে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কি আছে তার ভাগ্যে?
ব্যালেমি— ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদস্য। যে ডুবে আছে ধনীর কন্যা মারিয়ার প্রেমে। কিন্তু চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে কন্যার পিতা ব্যালেমিকে প্রত্যাখ্যান করেন। হতাশা গ্রাস করে তাকে। এখন তাকে ধনী হতে হবে, এতোটাই ধনী যাতে সে মারিয়ার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সেসময় তার পরিচয় হয় পলের সাথে। দুজন মিলে ট্রেজার ফ্লিটের সন্ধানে বের হয়। কিন্তু ঘটনার পরিক্রমায় সে পথও বন্ধ হয়ে যায় তার। ভালোবাসাকে নিজের করে পেতে তবে কি ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে? ব্যালেমি কি মারিয়াকে নিজের করে পায়? নাকি হয়ে উঠে ব্লাক সাম ব্যালেমি?
মারিয়া— ব্যালেমি ও মারিয়ার মাঝে গভীর প্রেম। ব্যালেমির ভালোবাসার চিহ্ন মারিয়া বহন করে চলেছে। কিন্তু ব্যালেমি যাওয়ার আগে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করলেও তার আর কোনো খোঁজ পায়নি মারিয়া। এক এক করে অনেকগুলো মাস চলে গেলো। সন্তান জন্ম নিলো আর পৃথিবীও ছাড়লো। যার দায়ভার নিয়ে সন্তানের মা আছে অন্ধকার কুঠুরিতে। কিন্তু এর কিছুই ব্যালেমির জানা নেই। সে আছে কতটা সম্পদ উপার্জন করতে পারে সেসব নিয়ে। যার জন্য এতো আয়োজন, তার জীবনের ঝড় সম্পর্কে ধারণাও করতে পারছে না ব্যালেমি। সে কি কখনো ফিরে আসবে? মারিয়াকে অন্ধকার কুঠুরি থেকে রক্ষা করতে পারবে? জানতে পারবে নিজের সন্তানের ভাগ্য?
এডওয়ার্ড টিচ— ব্রিটিশ লর্ডের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর নিজে সকল সম্পত্তি চাচাতো ভাই-বোন এবং সৎ মায়ের নামে লিখে দিয়ে সে স্থান ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে যোগ দেন নৌবাহিনীতে। রাণীর আদেশে তার হয়ে কাজ করে যুদ্ধে জয়লাভও করেন। ততদিনে রাণীও গত হোন। লিগ্যাল কোনো ডকুমেন্টস না থাকায় নৌবাহিনীর অন্যান্যরা তাকে অপমান করে চাকরিচ্যুত করেন। হতাশা এবং রাগে সে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন। যার ফলস্বরূপ সে ইতিহাসে ব্লাকবিয়ার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। হয়ে উঠে ইতিহাসের কুখ্যাত এক জলদস্যু।
বইটিতে আছে আরো বহু চরিত্র। তবে বেঞ্জামিন হরনিগোল্ড, টরেস, ম্যাসন, খুয়ান মার্টিনেজ, ক্যাপ্টেন সান্ডার এদের মধ্যে অন্যতম। মূল চরিত্রগুলোকে দিয়ে কাহিনিসংক্ষেপটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এতো বড় হয়ে গেলো তবুও মনে হচ্ছে কিছুই তো লিখা হলো না!
এই বইটায় ফ্যান্টাসি, এডভেঞ্চার, মিথলজি, হিস্ট্রি মোটামুটি সবগুলো জনরার ছোঁয়াই রয়েছে। ফিকশনাল বই বলে ইতিহাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বইয়ের মূল থিম। অ্যাজটেক সভ্যতা, মায়া সভ্যতা, ইনকা সভ্যতাসহ আরো কিছু সভ্যতা নিয়ে আলোচনা আছে। এছাড়াও বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কেও অনেকটাই ধারণা পাওয়া যায়। জলদস্যুদের নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি তাদের এতোটা নির্মম হয়ে উঠার পেছনের গল্পও তুলে ধরা হয়েছে। আমাজন বনের ভয়াবহতা, যুদ্ধের দামামা, জলদস্যুদের আতঙ্ক সবটা মিলে এক উত্তেজনাকর সময় পার করেছি। লেখকের একেকটা তথ্য তুলে ধরা দেখেই বোঝা গেছে এই বইটা লিখতে গিয়ে উনার প্রচন্ড স্টাডি করতে হয়েছে।
এবার লেখনী নিয়ে কিছু বলি। লেখনী দারুণ। ঝরঝরে, সাবলীল, সুন্দর লেখনীর লিখা পড়তে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তবে ইতিহাসবিষয়ক টপিকগুলো পড়তে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় লেখনী খাপছাড়াও লেগেছে। বহুত বড় হয়ে গেলো। অনেককিছু লি��া থাকল��ও হলো। তবে সবমিলিয়ে বইটা দারুণ।
দূর্দান্ত একটা বই। জলদস্যু নিয়ে এরকম বই আর খুব একটা পড়িই নাই। আমি জানিনা এই বইটা এতো আন্ডাররেটেড কেন! শেষ দিকে উত্তেজনা চরমে তুলে লেখক বইয়ের ইতি টেনেছেন। যদিও তিনি বইয়ের সিকুয়েলের কথা কোথাও লিখেন নি। চরম আন প্রফেশনাল কাজ। তবে বোঝাই যাচ্ছে সিরিজ হবে। লিলিকে ভীষণ ভাল্লাগছে।
প্রি অর্ডারে কিনলেও বইটি শুরু করতে বেশ সময় লেগে গেল! ট্রিলজির স্ট্রাটার হিসেবে বইটি ভাল লেগেছে ।ছিমছাম মেদবিহীন একটা বই। লেখায় কিছু উন্নতির জায়গা আছে।তবে বইটি তিনভাগে ভাগ না করে একটি বই ই করা যেত হয়তো।
This entire review has been hidden because of spoilers.