ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর নিয়াজী গবেষণা করছিলেন সময় পরিভ্রমণ নিয়ে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সময়কে যেভাবে দেখি আমরা, সময় তেমন নয়। সময়ের প্রকৃত রূপ বুঝতে হলে ডাইমেনশনগুলোকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তবে সেটা কি মানব সভ্যতার জন্য ভালো হবে? নাকি আমাদের চেনা-জানা রিয়েলিটিকে বদলে দেবে চিরতরে? ওদিকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র আবীর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রহস্যময় এক ধরনের মানুষের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। দেখতে অনেকটা মানুষের মতো হলেও তাদের মাথা অস্বাভাবিক রকমের বড়। ক্যাম্পাসের পাহাড়ে, ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে তারা। বের হয় অন্ধকার নামলে। এই প্রাণীগুলো আসলে কী? কোথা থেকে এসেছে? কেন এসেছে? নিয়াজী এবং আবীর যখন একত্রে সময় পরিভ্রমণ নিয়ে গবেষণা শুরু করে, তখন থেকে ঘটতে শুরু করে কিছু অস্বাভাবিক, অকল্পনীয় ঘটনা। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় মহাকালের এক অভিনব ষড়যন্ত্র!
Mohammad Mohaiminul Islam, known as Mohaiminul Islam Bappy is a Bangladeshi thriller and SciFi writer. Born in Barisal. Grew up in Chittagong. Currently Living in Dhaka. He completed B. Sc. (Hon's) and M. Sc. (Thesis) from the University of Chittagong. His first novel "Je Shohore Golpo Lekha Baron" (The Town is Forbidden for Storytellers) was published by the renowned Bangladeshi publisher- Batighar Prokashoni in 2020.
ঠিক জমল না। দারুণ সম্ভাবনাময়ী শুরু ছিল। কিন্তু ঠিক মাঝখান থেকে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন টপার উদ্ভট ধরনের মানুষ দেখতে পায় ক্যাম্পাসে। টের পায় মানুষগুলো সময়ের সীমা অতিক্রম করে অতীত থেকে এসেছে। একজন প্রফেসরের সাথে গবেষণা করে ঐ টপারও টাইম ট্র্যাভেল করে। এরপর টাইম ল্যুপের সম্মুখীন হয়। মাঝখানে কিছু এলোমেলো, প্রেডিক্টেবল টুইস্ট। আপাতদৃষ্টিতে কাহিনী এটুকুই। লেখকের লেখনশৈলী আমার আগে থেকেই ভালো লাগে। এজন্য পড়তে বেগ পেতে হয়নি। একটানা পড়ে যেতে পেরেছি। বইয়ে কাহিনীর চাইতে লেখক থিওরিতে বেশী মনযোগ দিয়েছেন। যদিও টাইম ট্র্যাভেলিং বুঝতে থিওরি জরুরী। কিন্তু চরিত্রদের একের পর এক থিওরি ব্যাখ্যার চক্করে কাহিনী আড়ালে চলে গেলে একটু ক্লিশে হয়ে যায়। তবে নিঃসন্দেহেই থিওরিগুলো ইন্টারেস্টিং। চরিত্রায়ন মোটামোটি করেছেন। তবে প্রধান চরিত্রের আচার আচরণ কিছুটা লেইম লেগেছে। টুইস্ট এর প্রসঙ্গে আসি। একটু মনযোগ দিয়ে পড়লেই টুইস্ট ও কী হতে চলেছে সেটা বোঝা যাবে। টাইম ট্র্যাভেল, প্যারাডক্স ও এন্ট্রপি সম্পর্কে ধারণা থাকলেই ধরে ফেলা যাবে কাহিনীর গতিপথ। যাইহোক লেখকের আগের বই দুটো ভালো লেগেছিল। এবারও এক্সপেক্টেশন বেশী ছিল। কিন্তু পূরণ হল না। টাইম ট্র্যাভেল ও ফিজিক্সের থিওরিগুলো সরিয়ে রাখলে খুবই সাদামাটা কাহিনী। আশা করছি পরের কাজগুলো দারুণ হবে। অপেক্ষায় থাকলাম।
মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী চমৎকার লেখেন। আনকোরা প্লটে এমন প্রভাবমুক্ত ঝরঝরে গল্প বলার ধরন খুব কমই দেখা যায়। ভ্রম সমীকরণ এবং টুকটাক কিছু ছোট গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছি, তাই এই বইটা নিয়ে শুরু থেকে বেশি আগ্রহ ছিল।
'এভাবেও ফিরে আসা যায়' মূলত টাইম ট্রাভেল বিষয়ক একটি সায়েন্স ফিকশন। কিন্তু ওইযে বললাম, লেখকের নিজস্ব একটা স্টাইল আছে; তাই সায়েন্স ফিকশন হয়েও এই বইয়ের ব্যপ্তি সুদূরবিস্তৃত। হার্ডকোর সায়েন্স ফিকশন এলিমেন্টের সাথে দারুণভাবে মিশে গেছে সাসপেন্স, থ্রিল আর টুইস্ট। কঠিন বিষয়কে সহজ-স্বাভাবিকভাবে ব্যাখ্যা করার একটা সহজাত ক্ষমতা মোহাইমিনুল ইসলামের। আপনার ব্রেইন একইসাথে জটিল থিওরি বোঝার চেষ্টা করছে, আবার সাসপেন্স হ্যান্ডেল করে গল্পের ভেতর পুরোপুরি মজে আছে- এই অভিজ্ঞতা সচরাচর হয় না।
ফিকশনের তাত্ত্বিক/নন ফিকশন অংশকে সামলানো একজন গল্পকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হয় লাগাম ছুটে যায়, নাহলে আসল কথাটাই বলা হয় না। এই বিষয়ে লেখক বরাবরই সার্থক। এই বইয়েও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এমনকি প্লট রিভিলের সময় সবচেয়ে জটিল অংশটাই এখানে সবচেয়ে বড় টুইস্ট।
দুই-একটা বিষয় নিয়ে অভিযোগ আছে; গল্পের একেবারে শেষ অংশে হুট করেই অনেককিছু মিলে যেতে শুরু করে। সেই তুলনায় শুরু থেকে মাঝামাঝি অংশ পর্যন্ত বর্ণণা তুলনামূলক বেশি। আর কিছু স্পেসিফিক লাইন হয়তো আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় লেগেছে, সেটাও নিতান্তই ব্যক্তিগত অভিমত। তবে এই গল্পের প্লট আর এক্সিকিউশনের মাহাত্ম্যের বিপরীতে সেই অভিযোগগুলো আপনা-আপনি ম্লান হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশন ধারায় নতুন যুগ শুরু হতে যাচ্ছে। শক্তিশালী, স্বকীয়, অনন্য এক যুগ। "এভাবেও ফিরে আসা যায়" বইটাকে আমি সেই যুগের একটা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ধরব। লেখকের জন্য শুভ কামনা।
বাংলাদেশে সায়েন্স ফিকশনের জগতে একটা নিরব বিপ্লব ঘটে চলছে। বেশকয়েক বছর ধরে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্ন কিছু লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রতিভাবান তরুন লেখক। খুবই আশাজাগানিয়া একটি স্রোত ক্রমেই জোড়ালো হয়ে উঠছে।
একযুগ পরে যে কয়েকজনকে এই জনরায় নেতৃত্বের আসনে দেখবো বলে ধারণা করছি, মোহাইমেনুল ইসলাম বাপ্পী তাদের মধ্যে অন্যতম। সাবলীল বাচনভঙ্গি, কাহিনী বিন্যাস, প্লটের অভিনবত্ব, চরিত্রচিত্রণ, সায়েন্স ও কল্পনার যথাযথ ব্লেন্ডিং; সব মিলিয়ে তার লেখা সায়েন্স ফিকশনকে সমসাময়ীক অন্যদের চেয়ে ঢের এগিয়ে রাখবো।
লেখকদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার সুবিধা হচ্ছে বই বের হওয়ার আগেই বেটা রিড করা যায়। ইচ্ছামতো টুকটাক উপদেশ দিয়ে অল্পবিস্তর ভাব নেওয়া যায়। যদিও বাপ্পীভাই এক্ষেত্রে আমাকে তেমন সুযোগ দেননি বললেই চলে।
টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে বিশ্ব সাহিত্যে তো বটেই, বাংলাতেও নেহায়েত কম লেখা হয়নি। সে বিবেচনায় এবিষয়ে অভিনব কিছু লিখে পাঠককে পিলে চমকে দেওয়ার আশা করাটা কষ্টকল্পনায় বলতে হয়। কিন্তু এই কষ্টকর কাজটিই লেখক অবলীলায় করে বসে আছেন "এভাবেও ফিরে আসা যায়" গল্পে।
সায়েন্স ফিকশন লাভারদের কাছে বইটি নিঃসন্দেহে উপভোগ্য হবে।
“Time is not a line but a dimension, like the dimensions of space.” ― Margaret Atwood, Cat's Eye - এভাবেও ফিরে আসা যায় - আবীর, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ডিপার্টমেন্টে টপার এক ছাত্র। কয়েক বছরের জুনিয়র সিনথিয়ার সাথে চমৎকার সম্পর্কের কারণে জীবন বেশ ভালোভাবেই চলছিলো তার। কিন্তু সেই চলায় বাঁধ সাধে যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জুনিয়রের মোবাইলে একটি ছবি দেখতে পায়। সেই ছবির মাধ্যমে আবীর জানতে পারে ভয়াবহ এক সত্য। - প্রফেসর নিয়াজী, আবীরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এক প্রফেসর। আবীরের মাস্টার্সের ফলাফল দেয়ার পরে সে আবীরের কাছে নিয়ে আসে এক অদ্ভুত এবং গোপনীয় কাজের প্রস্তাব। এখন প্রফেসর নিয়াজীর সেই গোপন কাজটি কী? তা আবীরের জীবনকে কীভাবে পাল্টে দেয়? তা জানার জন্য পড়তে হবে লেখক মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পীর টাইম ট্রাভেল ভিত্তিক সায়েন্স ফিকশন গল্প "এভাবেও ফিরে আসা যায়।" - "এভাবেও ফিরে আসা যায়" মূলত টাইম ট্রাভেল ভিত্তিক একটি গল্প। এ ধরণের গল্প হওয়ায় সময় সম্পর্কিত প্যারাডক্সগুলো সম্পর্কে কমবেশি আলোচনা করা হয়েছে বইতে। লেখকের লেখনশৈলী বরাবরই ভালোই লাগে আমার কাছে, এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মূল কাহিনি অবশ্য মোটামুটি লাগলো, কয়েক জায়গায় কিছু ব্যাপার অনেকটা জোর করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে হলো। বইয়ের কয়েকটি সাবপ্লটও অনেক তাড়াহুড়ো করে ক্লোজ করে দেয়া হয়েছে টাইপের লাগলো। - "এভাবেও ফিরে আসা যায়" বইয়ের মূল দুই চরিত্রে ছিলেন আবীর এবং নিয়াজী। কাহিনি অনুসারে চলনসই হলেও কোন চরিত্রই মনে দাগ কাটার মতো ছিল না। বইয়ের প্রোডাকশনের দিকে তাকালে মোটামুটি ভালোই ছিলো প্রোডাকশন, বানান ভুলও তেমন একটা পাইনি। বইয়ের প্রচ্ছদও অবশ্য এভারেজ লাগলো। - এক কথায়, বাংলা সায়েন্স ফিকশনের যে নতুন চল শুরু হয়েছে সেই ধারাকে বেগবান করার মতোই একটি বই হচ্ছে "এভাবেও ফিরে আসা যায়"। যারা বাংলা মৌলিক সায়েন্স ফিকশন বিশেষ করে টাইম ট্রাভেল ভিত্তিক সায়েন্স ফিকশন পড়তে ইচ্ছুক তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
পাবলিক ইউনিভার্সিটির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের টপার ছাত্র আবীর। থিসিস, পাবলিকেশন আর একই ইউন���ভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কয়েক ব্যাচ জুনিয়র সিনথিয়ার সাথে প্রেম করে সময়গুলো ভালোই যাচ্ছিলো তার। কিন্তু হঠাৎই হলরুমে জুনিয়র ব্যাচের শাহরিয়ারের চেঁচামেচি, আবীরের শান্ত জলের দীঘির মত জীবনে বাটারফ্লাই ইফেক্টের ভূমিকা পালন করে। রুম থেকে নিচে হলরুমে এসে শাহরিয়ারের কাছ থেকে জানা যায়, ক্যাম্পাসের এক জায়গায় সে কারও জন্য অপেক্ষা করতে করতে ফোনের ক্যামেরায় নিজের চুলগুলো ঠিক করছিলো আর দুয়েকটা সেলফি তুলছিলো। তখনই সে তার পেছনে অদ্ভুত কোন প্রাণীর দেখা পায় এবং চোখের কোনা দিয়ে সে প্রাণীটাকে এক পলকের জন্য দেখে। তবে ঐ এক পলকই, কারণ তাকে দেখে প্রাণীটা আর ওখানে দাঁড়ায়নি। শাহরিয়ারের এ কথা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই কারণ সেলফি তোলার সময় একটা সেলফিতে সে প্রাণীর ছবিও এসেছে বলে সে জানায়। সবার সাথে সাথে আবীরও সে ছবি দেখে এবং মনে মনে শাহরিয়ার সাথে একমত হয় যে, স্পষ্ট না হলেও যে প্রাণীটাকে আবীরের ফোনের স্ক্রীণে দেখেছে এটা পরিচিত কোন প্রাণী নয়। দেখতে মানুষের মত হলেও প্রাণীটার মাথা মানুষের তুলনায় বড়। 'হয়তো কোন ভিখারি ছিলো, তোকে দেখতে পেয়ে পালিয়েছে' বলে শাহরিয়ার ও নিচে জমায়েত হওয়া সবাইকে যার যার রুমে পাঠিয়ে দিলেও আবীর তার নিজের উক্তিতেই বিশ্বাস করে না। ভাবতে থাকে, ছবিতে দেখতে পাওয়া প্রাণীটা কি? এখানে এলোই বা কোত্থেকে?
এই রহস্যের মাঝেই নতুন রহস্য হিসেবে একরাতে তার ফোনে একটা এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজ আসে। ঘাটাঘাটি করে জানা গেল, ম্যাসেজটা পাঠিয়েছেন তারই ইউনিভার্সিটির ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর নিয়াজী। ম্যাসেজে তিনি আবীরকে তার সাথে দেখা করতে বলেছেন। পাগলা কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমান, স্মার্ট প্রফেসর নিয়াজীর সাথে আবীরের আগে কখনো কথা হয়নি, তাই তিনি কেন রাতের বেলা এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজ লিখে আবীরকে দেখা করতে বলেছেন এটা কোনভাবেই আবীরের মাথায় ঢোকে না। পরদিন তার অফিসে গেলে জানা যায় ঐ রহস্যময় প্রাণী কেবল একটা না, আরো আছে এবং প্রফেসর নিয়াজীও এদেরকে দেখেছেন। এবং এই প্রাণীদের উপস্থিতির সাথে আবীরকে তার চেম্বারে ডেকে আনাটা সম্পৃক্ত। এতসব ভূমিকার পরে আবীরকে তিনি যে প্রস্তাবটা দেন, তাতে আবীরের পিলে চমকে যায়। প্রস্তাবটা ছিলো সময় পরিভ্রমণ নিয়ে প্রফেসরের গবেষণায় আবীরের যোগদান এবং প্রফেসর নিশ্চিত খুব অল্প সময়ের মাঝেই তারা সময় পরিভ্রমণের সকল রহস্য উদঘাটন করে ফেলবেন কারণ তাদের কাছে এমন একটি ডিভাইস যা পাল্টে দিতে পারে পৃথিবীর ইতিহাস।
মোটামুটি এই ছিলো স্পয়লার এড়িয়ে গল্পের মূল কাহিনী (তাও স্পয়লার দিয়ে দিয়েছি কিনা কে জানে, অবশ্য এমন কোন তথ্য এখানে নেই যা বইয়ের ফ্ল্যাপে নেই)। এবার চলে যাই পাঠ প্রতিক্রিয়ায়।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : জনরা ফিকশনের কোন বইয়ের মানকে যদি কয়েকটা 'পিলারের' বেসিসে ইভ্যালুয়েট করা হয়, তাহলে শুরুর পিলারটাই হবে প্লট। 'এভাবেও ফিরে আসা যায়' এর প্লট নিঃসন্দেহে দারুণ। আমাদের দেশে যে এত ভালো সায়েন্স ফিকশন লেখা হচ্ছে এটা আমার ধারণায় ছিলো না। যদিও লেখকের 'ভ্রম সমীকরণ' পড়া হয়েছে, তবে লেখক যে এই জনরায় কন্টিনিউ করে মাত্র ১৪৪ পৃষ্ঠায় এত ভালো লিখবেন এটা ধারণাতীত ছিলো। ভালো প্লট হলেও এই জনরায় লিখে সফল বই প্রসব করার জন্য বেশি জরুরী হচ্ছে, লিখনশৈলী। যারা মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পীর লেখা আগেও পড়েছেন তার নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, তিনি সায়েন্স ফিকশনকে শুধু সায়েন্স ফিকশনের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেন না। তার লেখায় গল্পের মধ্য দিয়ে হার্ডকোর সায়েন্স থিওরীর সাথে আস্তে আস্তে যুক্ত হয় থ্রিল, সাসপেন্স এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ্যাডভেঞ্চার। এখানেও তাই হয়েছে। মেদহীন ঝরঝরে লেখায় পাঠক একদম শুরুর পৃষ্ঠা থেকেই গল্পের মাঝে ঢুঁকে যেতে পারবেন। এই মেদহীন লেখা অনেকের কাছে যেমন ভালো লাগে, তেমনি অনেকের কাছে একদম বেশিই শুকনো খটখটে মনে হয়। এই বইয়ের শুরুটা আমার কাছে চমৎকার লাগছিলো। লিটার্যারি ফিকশনে যেমনটা দেখা যায়, চরিত্রদের ব্যাপারে এমন কিছুই জানানো হয় যেটা আসলে গল্পের সাথে সম্পৃক্ত না হলেও চরিত্রগুলোর গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে, পারিপার্শ্বিক জিনিসগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং খানিকটা লেখকের দর্শনও ধারণ করে; ঠিক তেমনভাবে শুরু হয়েছিলো বইটা। এটাকে আমি কোনভাবেই লেখার মেদ বলবোনা, বরং এখানে আমি 'অলঙ্করণ' শব্দটা ব্যবহার করবো। তবে যে নামেই ডাকি, এই জিনিস ৩০-৪০ পাতা হতে হতেই গায়েব। গল্প যখন মূল প্লটে ঢুঁকে যায়, তখন এই সুরটা কেটে যায়। অনেক পাঠকের হয়তো টু-দ্য-পয়েন্টে কথার বলার এ জায়গাটা ভালো লাগতে পারে তবে আমার কাছে শুরুর টোনটাই বেশি ভালো লাগছিলো। গল্পের মাঝখানে বেশ কিছু জায়গা সময়, মাত্রা, স্থানের থিওরী কপচানোয় পাঠকের খানিকতা বোরিং লাগতে পারে তবে সময় পরিভ্রমণ নিয়ে গল্প লিখতে গেলে এই জিনিসগুলোকে ব্যাখ্যা না করলে পাঠকের বুঝতে কষ্ট হতে পারে। আর এই জায়গাটাতে মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছেন। সায়েন্সের টার্ম/থিওরীগুলোকে এতটাই সহজ করে লিখেছেন যে আমার ধারণা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে কোন পাঠকেরই কোন থিওরী বুঝতে সমস্যা হবে না। এমনকি মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং টাইম ট্রাভেল, প্যারাডক্স সম্পর্কে ধারণা থাকলে গল্প কোনদিকে যাচ্ছে সেটা পাঠকও বুঝতে পারবেন। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু টুইস্ট ধরে ফেলাটাও অস্বাভাবিক কিছু না।
মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পীর লেখার ক্ষেত্রে অনেককেই দেখেছি একটা কমন দাবী করেন। তা হলো, তার চমৎকার লেখার হাত থাকলেও শেষটায় অনেক তাড়াহুড়ো দেখা যায়। এখানেও তাই ঘটেছে। শেষের দিকে একের পর এক থিওরী এসেছে যা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হবার সুযোগ সৃষ্টি করে। যদিও জনরা ফিকশন চরিত্র নির্ভর না তবুও পাঠক মাত্রই কিছু স্ট্রং ক্যারেক্টার আশা করে। এ বইতে আবীর বাদে অন্য কোন চরিত্রই খুব একটা পাত্তা পায়নি, এমনকি প্রফেসর নিয়াজীকে নিয়েও সিনের বাইরে খুব একটা কথা বলা হয়নি। বইয়ের তথা প্লটের একটা মেজর টার্ন পয়েন্টে (প্রফেসর নিয়াজীর ইউনিভার্সিটিতে যোগদানের ঘটনা) লেখক একদমই কম মনোযোগ দিয়েছেন। ওটা কতটা বাস্তব সম্বলিত তা নিয়েও একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। আর তাছাড়া একদম শেষে (বই শেষ হবার স্রেফ দু লাইন আগে) যে টুইস্টটা দিয়েছেন এটা একদমই খেলো হয়ে গেছে। স্পয়লার হয়ে যাবার ভয়ে ডিটেইল বলতে পারছি না, তবে এ কাজটা পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই প্রতিদিন করে এবং শুধু একবার সে কাজটা করার কারণে কারো সম্পর্কে এত বড় ডিসিশান এক লহমায় নেয়া যায় বলে আমার মনে হয় না। ওপরের দুই তিনটা পয়েন্ট বাদ দিলে ২০০ টাকা মুদ্রিত মূল্যের 'এভাবেও ফিরে আসা যায়' দারুণ একটা বই। বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যে যে একটা বিপুল জোয়ার আসছে তা সামসময়িক অনেক লেখকের লেখা থেকেই বোঝা যায় এবং এই লেখকদের আকাশে একটা উজ্জ্বল তারার নাম হচ্ছে মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী। অভিনব প্লট, সাবলীল লিখনশৈলী, সহজভাবে সায়েন্সের টার্মগুলো লিখে ফেলতে পারার বিষয়গুলো দেশের পাশাপাশি হয়তো একদিন তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেবে এমনটাই কামনা করছি।
চাইতে পারিনি আমি ও চোখের সোজাসুজি রিকশার ভীষণ তাড়ায়। হয়তোবা কোনোদিন সে সাহস ফিরে পাবো আগামীর কোন সংখ্যায়। এভাবেও ফিরে আসা যায়।
আসল কথাই তো বলা হয়নি। লেখক কিন্তু বইয়ের নামটি নিয়েছেন, কলকাতার বিখ্যাত ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর গান ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ থেকেই। আর আমি ওপরে এই গানের যে পাঁচটা লাইন লিখেছি, বইটা শেষ করার পর কিন্তু অজান্তেই আমার মাথায় এই লাইনগুলো ঘুরছিলো�� কারণ বইয়ের শেষটা এই লাইনগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
রেটিং: ১.৭৫ প্রথমত, কল্পবিজ্ঞানের বইয়ে মূল চরিত্রের ব্যক্তিগত জীবনের এত ডিটেইলস খুবই অপ্রয়োজনীয়।
দ্বিতীয়ত, চেহারা কাছাকাছি হলেও একজন মানুষকে আরেকজনের স্বভাব রপ্ত করতেও বেশ সময় লাগে।ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেললেই প্রথম ব্যক্তি, দ্বিতীয় ব্যক্তিতে পরিণত হয় না। যেটা হয়েছে নিয়াজীর চরিত্রে। মেজর একটা জিনিস, ৪-৫ বাক্যে শেষ! অথচ, এই একই ব্যাপারটা লেখক নিজেই মূল চরিত্রের টুইস্ট হিসেবে লাস্টে দেখিয়েছেন।
তৃতীয়ত, লাস্ট পর্যন্ত প্রচুর কোয়েশ্চেনিং পয়েন্ট ছিল, সেগুলা শেষ না করেই বই শেষ হয়ে গেলো।
শেষে, যেসব থিওরি (!) এর উপর বইয়ের টাইম ট্রাভেলের কনসেপ্ট দাঁড় করানো, গাঁজাখুরি বর্ণনা লাগলো আমার কাছে। টাইম ট্রাভেলের ব্যাপারটা একপাশে রেখে বাকি কাহিনী দেখলে, সেটা অন্তঃসারশূন্য পুরাই। অনেক সময় দিয়ে তাই পড়তেও পারলাম না।
এভাবেও ফিরে আসা যায় - চন্দ্রবিন্দুর বিখ্যাত গান। লেখক সঙ্গত কারণেই এই নাম রেখেছেন তাঁর গল্পের। কিন্তু থিওরির মারপ্যাঁচে এক সম্ভাবনাময় গল্পকে মেরে ফেলেছেন। আবীর একজন মেধাবী কলেজ ছাত্র, মাস্টার্সে দারুন রেজাল্টের দরুন বিদেশ যাওয়া প্রায় পাকা। জুনিয়র সিনথিয়ার সঙ্গে সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক। এহেন আবীর আর সিনথিয়া একদিন দেখে ফেলল তিনটি অদ্ভুত দর্শন প্রাণীকে। তাদের মাথা বড়ো, দেহ পাতলা। আর সঙ্গে ঠিক আবীরের মত দেখতে একজন মানুষ। এই পরিস্থিতিতে আবীরকে ডেকে পাঠায় ইউনিভার্সিটির প্রফেসর নিয়াজী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সে জড়িয়ে পরতে থাকে অদ্ভুত এক রহস্যের বেড়াজালে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সাইন্স ফিকশন বলতে শিবব্রত বর্মন খুব জনপ্রিয়। শিবব্রত বাবু ঠিক যে জিনিসটা করেন, গল্পের বাঁধুনি রাখেন চমৎকার। থিওরিও সবার বোঝার মত। এভাবেও ফিরে আসা যায় গল্পের প্রথম অংশে থিওরি বুঝতে সমস্যা হয়না। কারণ তার সঙ্গে গল্প ও এগোতে থাকে তরতর করে। কিন্তু একদম শেষ কয়েক পাতায় এসে শুধুই পাতার পর পাতা জটিল টাইম ট্রাভেল নিয়ে কথা। প্রথম দিকে লেখক অনেক উদাহরণ দিয়েছেন, শেষের দিকে সেগুলো অমিল। এত দ্রুত শেষ করার তাগিদ থাকায় গুলিয়ে ফেলেছেন বেসিক টুইস্টটাকে। করেছেন বেশ কিছু ভুল। কেউ নন - ডমিনেন্ট হাতে একটা ক্রিকেট বল ক্যাচ ধরলেই সে সেই হাতি হয়ে যান না। এটা মাঠে না নামলেও পারা যায়। তবুও গল্পটা শেষ করা যায় লেখনীর জন্য। তিনি খুব একটা জটিল শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন নি। কিন্তু এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে চলে গিয়েছেন smoothly। এই টুকুই আশা জাগায় যে পরবর্তীকালে আরো better গল্প পাবো, যেটা পড়ে আরাম। বইটা আরো পঞ্চাশ পাতা বড়ো হলে কোনো অসুবিধা হতো না। কারণ বস্কপ মানুষ সম্পর্কে সেরকম কিছু জানলাম না। তারা কিভাবে প্রাচীন যুগে টাইম ট্রাভেল মেশিন তৈরি করে ফেললো সেটাও জানা গেল না। এরকম আধাখেঁচড়া ভাবে গল্প শেষ হয়ে গেলে হতাশ লাগে।
চরম মেধাবী ছাত্র আবীর। ক্যাম্পাসের এক পরিচিত মুখ। বিভিন্ন রিসার্চ পেপার লিখে সাহায্য করেছে টিচারদের। নিয়মে বাঁধা জীবনে বিঘ্ন আসে যখন ক্যাম্পাসে বিকটদর্শন কিছু প্রাণী দেখা যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত হয় আবীর তাদের সাথে এক ব্যক্তিকে দেখে। ব্যক্তিটি যে অতিপরিচিত! কোডেড একটা মেসেজ আসে ফোনে তারপর বদলে যেতে থাকে সব...
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও প্রফেসর নিয়াজী। জানতে পারেন মানুষ থেকে বুদ্ধিমান প্রাণী আছে পৃথিবীতে। যারা বহু আগেই করে ফেলেছে টাইম ট্রাভেল। কিন্তু কীভাবে? মহাকালের এক অদ্ভুত খেল শুরু হয়ে গেছে!
দেশীয় প্রেক্ষাপটে দারুণ একটা সায়েন্স ফিকশন ❝এভাবেও ফিরে আসা যায়❞। সময়ের প্যারাডক্স নিয়ে লেখক যে গল্প বলেছেন এককথায় ❝অদ্ভুত সুন্দর❞। বইয়ের শক্তিশালী দুটো দিক হলো; সময় প্যারাডক্স নিয়ে টাইমলাইন ও টাইম লুপের প্লট এবং থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা। এতো সহজে যে এতো জটিল কনসেপ্ট লেখক গল্পচ্ছলে বলেছেন ভাবনায় পড়ে গেছিলাম কোনটা নন-ফিকশন আর কোনটা ফিকশন। সাসপেন্স, থ্রিলার, এডভেঞ্চারও আছে সাথে। কিছু প্রেডিক্টেবল টুইস্ট।
বইয়ের শুরু আবীরের বিকটদর্শন প্রাণীগুলোর খোঁজার মাধ্যমে কিন্তু শেষ সময়ের খেলা দিয়ে। প্রথম দিকে সময়, স্থান, কাল নিয়ে আবীর ও প্রফেসরের যে কথোপকথন ও ভাবনা দেখানো হয়েছে সেগুলো বেসিক থিওরি। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের পাঠক ইজিলি বুঝতে পারবে। এতো ডিটেইলস আলোচনা অনেকের কাছে বিরক্ত লাগতেই পারে। মাঝামাঝি এসে একসাথে টাইমলাইন ও টাইম লুপ মার্জ করে গেছে সাথে যুক্ত হয়েছে বিস্তর থিওরি। শেষের দিকে এসে টাইপ লুপগুলো যেভাবে প্যারাডক্স দিয়ে বুঝিয়েছেন লেখক জাস্ট অসাধারণ বিশেষ করে ফাইভ আর সিক্স ডাইমেনশন। কিন্তু সমাপ্তিতে এসে লেখক কেন বস্কপ মানবদের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন! যাদের নিয়ে কাহিনী শুরু তারাই হঠাৎ উধাও। তবে আরও কিছু খটকা আছে। ধরে নেওয়ায় যায় বস্কপেরা মানুষ থেকে অনেক বুদ্ধিমান তাই বলে মানুষ যখন প্রস্তর যুগে তারা তখনই টাইম মেশিন বানিয়ে ফেললো! এটা কি অতিকল্পনা নয়? একটা মেটাল বডি বানাতেই তো কতো জিনিস, প্রযুক্তি ও মেটাল লাগে। আর তারা গুহায় বসে অল্প কয়েকজন কয়েকটা টাইম মেশিন বানিয়ে ফেললো! শেষে যে টুইস্ট লেখক দিয়েছেন তা না দিলেই ভালো হতো। অলমোস্ট দেড় মাস একজনকে ট্রেনিং দেওয়া হলো আর সে কোন হাত দিয়ে কাজ করে কারো চোখেই পড়লো না! বেশ কয়েকবছর আগে একটা সায়েন্স ফিকশন বইয়ে পড়েছিলাম ফোর্থ ডাইমেনশনে কেউ ঘুরে থার্ড ডাইমেনশনে আসার পর মিরর কপি হয়। মানে ডান, বাম আর বাম, ডান হয়ে যায়। ওই বইয়ে দেখানো হয়েছিল চরিত্রটির হৃদপিণ্ড বাম থেকে ডানে চলে আসে। এখানেও যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে টেস্টের পরও কিছু কেন ধরা পড়লো না? আরও স্পষ্ট করার দরকার ছিল।
টুকিটাকি কিছু বানান ভুল আছে। ২৫ পেজে- জিভ দিয়ে দাঁত কামড়ে ধরলো সিনথিয়া। এছাড়া আর কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি। প্রচ্ছদ মোটামুটি।
বইটা শেষ করার পর বিতর্কিত টপিক, ❝ডিম আগে না মুরগি আগে❞- এর কথা মনে পড়েছিল। সময় প্যারাডক্স নিয়ে লেখক যে খেলা দেখালেন মনে থাকবে বহুদিন।
১) বইয়ের শুরুর খানিকটা অংশে বর্ণনাভঙ্গি ঠিক জমছিলো না। লেখকের ভ্রম সমীকরণের সাথে তুলনা করে মনে হচ্ছিলো বর্ণনাভঙ্গির ধার কমে গেছে। বাক্য গঠন কিছু জায়গায় খাপছাড়া লাগছিলো। তবে কিছুদূর আগানোর পর এবং গল্পে আরও ভালোভাবে ঢুকার পর এই সমস্যা কেটে গিয়েছিলো। একটানা পড়ার মতো বই।
২) ‘‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ এর ’প্লটের বিল্ডাপটা আগ্রহ জাগানিয়া ছিল মুল প্লটটা তা ডেলিভার করতে ব্যর্থ হয়েছে আমার মতে । শুরুর ধাপ পার করে গল্পে একবার ঢুকে গেলে লেখক আপনার মনোযোগ ধরে রাখবেন। আবিরের বস্কপ মানবদের সাথে এনকাউন্টার , তারপর প্রফেসর নিয়াজীর সাথে গবেষণা শুরু আর তারপর…… তারপরই মনে হবে যে প্লট আসলে কি এতটুকুই ? এই বই নিয়ে আর অনেকের মতো আমারও একই অভিমত যে মাঝে এসে গল্প খুব বাজেভাবে ঝুলে গেছে। বইটাকে হার্ড সাইন্স ফিকশন বলা যায় আই গেস। তাত্ত্বিক অংশটুকুর বর্ণনা বেশ সাবলীলভাবে করেছেন লেখক। চরিত্রদের সংলাপে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো বারবার বিশদভাবে আসলেও খারাপ লাগেনি। কিন্তু আমার অভিযোগ তাত্ত্বিক বর্ণনার আধিক্য বা চরিত্রদের তা নিয়ে একটানা বয়ান দেওয়া নিয়েও না। আউট অফ দ্য বক্স কিছু না হলেও বাংলায় হার্ডকোর সাইফাই এলিমেন্ট সমৃদ্ধ সাবলীল, সুন্দর বর্ণনা পড়ার অনুভূতিটা দারুণ। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? উত্তর হলো প্লটের সাথে থিওরির ব্লেন্ডটা একেবারেই জমেনি বইতে। পাতার পর পাতা থিওরি পড়ে স্বাভাবিকভাবেই গল্পের সাথে ফাটাফাটি একটা সংযোগ প্রত্যাশা করছিলাম। তবে কানেকশনটা খুবই জেনেরিক , প্রেডিক্টেবল ও এক পর্যায়ে একঘেয়ে ঠেকেছে। থিওরি আর ফিকশনের ব্যালেন্সটা ঠিক ছিল না বলে মনে হয়েছে। কমন টাইম ট্রাভেল ট্রোপের ছড়াছড়ি বইতে এবং দুঃখের বিষয় বর্ণনা যতই সহজ ও সুন্দর হোক না কেনো ট্রপগুলোর উপস্থাপনেও কোন নতুনত্ব নেই। যতই বইয়ের সমাপ্তির দিকে আগাচ্ছিলাম ততই মনে হবে থিওরি যতই থাক প্লটটা আদতে এক জায়গাতেই আটকে আছে।
৩) আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার- শুরুর ধাপটার পর বর্ণনাভঙ্গিতে জড়তা লক্ষ না করা গেলেও সংলাপ কিছু জায়গায় ঠিকঠাক তো কিছু জায়গায় একদমই খাপছাড়া ও অবাস্তব মনে হয়েছে । থিওরি নিয়ে প্যাঁচাল যতক্ষণ চলবে সমস্যা মনে হবে না। তবে যখন চরিত্রদের মধ্যে সাধারণ কথোপকথন চলছিল ( বিশেষ করে আবির ও তার বান্ধবীর মধ্যে) তখন কয়েক জায়গাতেই থেমে থেমে ভাবছিলাম যে , ‘ এমনে কে কথা বলে ভাই?”। আরেকটা ব্যাপার হলো চরিত্রদের ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলতে লেখক ভালো পরিমাণে শব্দ খরচ করলেও পাঠক হিসেবে কারো সাথেই কানেক্টেড ফিল করিনি । বইয়ের কোন চরিত্রের জন্যই সেভাবে ইমোশন কাজ করেনি এবং কারো পরিণতিই পাঠক হিসেবে আমাকে তেমন একটা ভাবাচ্ছিলো না।
৪) এভাবেও ফিরে আসা যায় এর এন্ডিংটাও হতাশাজনক। অতিরিক্ত প্রেডিক্টেবল ও দুর্বল টুইস্ট দিয়ে কোনমতে সমাপ্তি টানা হয়েছ। টুইস্ট এবং টুইস্টের এক্সিকিউশন উভয়ই খুবই কমন লেগেছে। বইয়ের শেষভাগ অতিরিক্ত রাশড। ফলস্বরূপ সাবপ্লটগুলোও পরিপূর্ণতা পায়নি। বস্কপ মানব নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আরও কিছু আশা করছিলাম। স্পয়লার হয়ে যাবে তাই বিস্তারিত আলাপ উহ্য রাখলাম।
৫) প্রছদ , প্রোডাকশন এগুলো ভালো। মুদ্রণ প্রমাদও খুব বেশি চোখে পড়েনি। বইয়ের নামকরণটাও বেশ সুন্দর।
যথারীতি বাপ্পী সিন্ড্রোমে আক্রান্ত আরেকটা বই! মোটামুটি প্লট দাঁড়ানোর পরেই তাড়াহুড়ো সমাপ্তি। যেখানে এমনিতেই মো.ই.বা বইয়ের কন্সেপ্ট যথেষ্ট কৌতূহলউদ্দীপক হয়, সেখানে 'টাইম ট্রাভেল' এর মত কনসেপ্ট বাড়তি রসোদ্দীপনার যোগান দেয়৷ কিন্তু আখের তাক খাপছাড়া প্লটের বিভীষিকায় হতাশ হতে হল৷ লেখকের তৃতীয় বই, অথচ বর্ণনাভঙ্গি অপরিপক্ক ঠেকলো৷ মনযোগ ধরে রাখাটা দুষ্কর হয়ে পড়ছিল। তাত্ত্বিক আলোচনা প্রচুর, যা কমিয়ে [ পাশাপাশি সিনথিয়ার রুপ-সমন্ধীয় গুণগান/ উত্তাল প্রেমন্ধীয় আলাপ ] গল্পের ঘটনাসূত্র বাড়ানো যেত৷
লেখকের ফ্যান হয়েছিলাম 'যে শহরে গল্প লেখা বারণ' দিয়ে। অপ্রয়োজনীয় একগাদা চরিত্র বা অপ্রাসঙ্গিক কাহিনি টেনে বই বড় না করার ব্যাপারটা ভালো লাগে৷ এটাও এক বসায় পড়ে শেষ করে ওঠার মতই বই। অনেক থিওরি ছিল গল্পে। কারো কারো কাছে সেগুলো অপ্রয়োজনীয় বা বিরক্তিকর মনে হলেও, সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড না কিংবা ছোটবেলা থেকে সায়েন্স ফিকশন পড়ে বড় হয় নাই এমন পাঠকের মাথার উপর দিয়ে যেত এই থিওরি গুলো এক্সপ্লেইন না করা হলে।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এভাবেও ফিরে আসা যায় লেখকঃ মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
ভ্রম সমীকরণ পড়ে লেখক মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পীর মোটামুটি ভক্ত হয়ে পড়ি৷ উনার লেখার ধরনের আলাদা স্বকীয়তা আছে। এ কারণেই এ বছরে প্রকাশিত এভাবেও ফিরে আসা যায় উপন্যাসিকা বের হবার সাথে সাথেই সংগ্রহ করতে মুখিয়ে থাকি৷
নিয়াজী নামক একজন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ও তাঁর শিষ্য আবিরকে নিয়ে সময়ের বিভিন্ন মাত্রা নিয়ে অজানা রহস্যের সন্ধানে মত্ত হয়ে অভাবনীয় কিছু আবিষ্কার করা নিয়েই এই এক মহাযাত্রার উদ্ভব ঘটে৷
লেখকের পূর্বের বইতেও আমি যে ভালো দিকটা পেয়েছি সেটা হলো বৈজ্ঞানিক টার্মগুলোকে সহজবোধ্য ভাষায় ব্যাখ্যা করা গল্পের মাঝে বিন্যস্ত করা৷ মেদহীন বর্ণনা, সরাসরি মূল থিমে প্রবেশ করা একটা চমৎকার টুইস্ট ও সমাপ্তি;সবই রয়েছে এতে৷
কিছু জায়গায় অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘায়ন অবশ্য রয়েছে, যা হয়তো বাদ দেওয়া যেত,এছাড়া তেমন কোন নেগেটিভ দিক দেখি নি৷
সব মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিসেবে "এভাবে ফিরে আসা যায়" উপন্যাসিকাটি বেশ উপভোগ্য৷ আশা করি, এমন কিছু অনন্য উপন্যাস তিনি আমাদের উপহার দিবেন৷
ডিম আগে নাকি মুরগী আগে? এই ধারণা থেকেই বোধয় এই লেখার সৃষ্টি😄 যাইহোক।। এই বই এর মূল থ্রিল ধরতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপেক্ষিকতা,সময় প্রসারণ,সংকোচন এই বিষয়ে বিশদ ধারণা রাখতে হবে।।।
যাইহোক শুরুটা যা দূর্দান্ত ছিল,মাঝে ততটাই বিরক্তিকর ছিল,শেষে এসে যা একটু জমে উঠেছিল কিন্তু ঘটনার ব্যপ্তিতা ধরে রাখতে পারেনি আমাকে।।
বইটা আদতে টাইম ট্রাভেল নিয়ে গল্প। তবে এখানে টাইমলুপটা মুখ্য। টাইমলুপ নিয়ে ইন্টারেস্টিং গল্প বা মুভি বানানো চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক মুভি আর গল্প পড়েছি টাইমলুপ নিয়ে যেটা একেবারেই ফালতু লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মশিউর রহমান আনন্দের সাইফাই শর্ট একটা পড়েছিলাম লুপ নিয়ে অনেক জোস লেগেছিল। এখন পড়লাম এটা।
গল্পটা আবীর নামের মাস্টার্সের ছাত্রকে নিয়ে যে সুযোগ পায় টাইম ট্রাভেল নিয়ে গবেষণা করতে নামী বিজ্ঞানীর সাথে। আবার এদিকে মানুষের অন্য কোন প্রজাতিদের দেখা যাচ্ছে আশেপাশে? তাদের উদ্দেশ্য কি? তারা কি বেশী বুদ্ধিমান সেপিয়েন্সদের থেকে? এতকিছুর মাঝে আবীর আর সিনথিয়ার সম্পর্ক ঠিক থাকছে তো?
গল্পের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা, লজিক, মারপ্যাচ সব কিছুই ভালো লেগেছে আমার৷ তবে আরো ভালো লেগেছে সিনথিয়া আর আবীরের সম্পর্কের কন্টিনিউয়েশন, যা অধিকাংশ সাইফাই বইয়ে দুষ্প্রাপ্য। বইয়ের শেষের ক্লিফহ্যাংগারটাও তাদের সম্পর্ক নিয়ে। সুন্দর না?
টাইম ট্র্যাভেল সম্পর্কিত গল্প দেখে খুব আশা নিয়েই শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষ দিকে এসে যেন সব ভজকট পাকিয়ে গেল।গল্পের শুরু,মাঝখানের অংশটুকু পর্যন্ত দারুণ ছিল কিন্তু গল্পের শেষপ্রান্তে কোথায় যেন তাল কেটে গেল।বেশ তড়িঘড়ি করেই সমাপ্তি টানা হল যেন।কোথেকে কি করে যেন হঠাৎ গল্পের মধ্যে নতুন নতুন চরিত্র আসা শুরু করল।যে "বস্কব মানব" দেখা নিয়ে গল্পের শুরু টা হয়েছিল গল্পের শেষদিকে তাদের কি হল তা একদম স্পষ্ট নয়।শেষ পৃষ্ঠায় ডানহাত বামহাত দিয়ে সিনথিয়ার ক্ষণিকের মুহুর্তে ডুপ্লিকেট স্বামীর পরিচয় বুঝে ফেলাটা একপ্রকার হাস্যকরই লেগেছে আমার কাছে। তবে লেখকের লেখনী ভাল।গল্পের কাহিনীর সাথে আটকে রাখবে।বিজ্ঞানের বেশ জটিল কিছু থিওরি খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে বইয়ে।তাতেই বুঝা যাচ্ছে লেখক বেশ পড়াশোনা করেছেন এই বিষয়ে।
'ছোট মরিচের ঝাল বেশি' কথাটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বোধহয় 'এভাবেও ফিরে আসা যায়' বইটি নিজেই। মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পীর অন্য কোনো বই পড়ার সৌভাগ্য হয়নি বিধায় প্রত্যাশা স্বাভাবিক-ই ছিল। কিন্তু আমার ধারণাকে তীব্র চোখ রাঙানি দেখিয়ে এক অদ্ভুত জগতে নিয়ে গেল বইটা আমাকে। বইটি সাই-ফাই থ্রিলারের আদর্শ উদাহরণ বৈকি! প্রথমেই গল্প বেশ ঢিমেতালে শুরু হওয়ায় সাধারণ প্লট হতে চলেছে ভেবেছিলাম। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে পারিপার্শ্বিক জিনিসপত্র নিয়ে দর্শনধর্মী আলোচনাগুলোও ভালো লেগেছিল। প্রায় মাঝামাঝি চলে আসার পর অনবরত ধামাকা শুরু হয়। লেখক বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো একদম সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন, এমনকি কিছু জিনিস অনেকটাই জটিল ছিল, তবুও লেখক তা সহজেই ব্যাখা করেছেন। অনেক সায়েণ্টিফিক টার্ম আর ডিটেইলস জেনেছিলাম, যা এমন ছোট বইয়ে পাওয়া অপ্রত্যাশিত। বইটা গতানুগতিক টাইম- ট্রাভেল সংক্রান্ত বইয়ের মতো না, বিভিন্ন থিওরি আর হাইপোথিসিস এর মারপ্যাঁচ প্লটটাকে অনন্য বানিয়েছে। বিজ্ঞানপ্রেমী হিসেবে গল্পটা বেশ উপভোগ করেছি। রোমাঞ্চ কম জানার আগ্রহ বেশি ছিল। বইয়ের শেষাংশে একের পর এক ঘটনা বা বৈজ্ঞানিক বিষয়াবলির পরিচিতি ঘটতে থাকায় কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন অনেকে। তাই গল্পটা আরেকটু ধীরে এগুলো, আরেকটু বড় করে লিখলে ভালো হতো। আর বষ্কপ মানুষ বলে এক প্রজাতির কথা বইয়ে আছে, যা আমার কাছে খাপছাড়া লেগেছে। শেষদিকে এদের নিয়ে বড় চমকের অপেক্ষায় ছিলাম, কোনো মীমাংসার অপেক্ষায় ছিলাম। (এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। অন্যদের পরিপূর্ণ লাগতেও পারে)। তবুও বইটি নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই, লেখক প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে এমন তথ্যবহুল সুন্দর উপস্থাপনা তৈরি করেছেন, যা যে কারোই চিন্তার খোরাক যোগাতে যথেস্ট।
পরিশেষে, " এভাবেও ফিরে আসা যায়" নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সাই-ফাই থ্রিলার। বাস্তবিক অর্থেই বইয়ের প্লটটা জটিল, তার উপর মাঝে তাড়াহুড়োর দেখা পাবেন। ফলে অনেকে গভীরভাবে অনেক কিছু নাও অনুধাবন করতে পারেন। তবুও একবার পুরোটা বুঝতে পারলে নিশ্চিতভাবেই এক অদ্ভুত অনুভূতি বয়ে যাবে মনে, নিউরনের উৎপত্তিও বৃদ্ধি পেতে পারে, কে জানে?
এতো কঠিন সব সাইন্টিফিক টার্ম গুলো সহজভাবে বর্ণনা করা, এবং একই সাথে একটা সাসপেন্সফুল আবহ্ বজায় রাখা সত্যিই কঠিন। লেখকের আগের দুইটা বই পড়ে এই বিষয়ে উনার মুন্সিয়ানা ভালই টের পেয়েছি। পেসিং,বর্ণনাভঙ্গি, চরিত্রায়ণ ও টুইস্ট সবকিছু ঠিক থাকলেও শেষ ভাগের ঘটনাগুলো একটু তাড়াতাড়ি ঘটে গেল বলে মনে হয়েছে, কাহিনী আরো একটু লম্বা হতে পারত। বলাই বাহুল্য যে বইটার সাথে বেশ ভালই সময় কেটেছে, লেখকের ‘শুন্যবিন্দু’ সংগ্রহে আছে কয়েকদিন পর ধরবো সেটা।
শুরুটা দারুণ ছিল। মাঝে এসে ঝুলে গিয়েছিল এবং শেষটায় তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট। বস্কপ মানবদের ব্যাপারে আরও কিছু আশা করেছিলাম। প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তির দূরত্বটা অনেক।
ভালোবাসার জন্য আপনি কতদূর যেতে পারবেন? কিংবা, ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে আপনি সর্বোচ্চ কী করতে পারেন?
যে বইটি নিয়ে আলোচনা করছি সেটা একটি সায়েন্স ফিকশন, তাহলে শুরুতেই রোমান্স কপচাচ্ছি কেন? কারণ আছে নিশ্চয়!
ক্যাম্পাসের সবথেকে ব্রিলিয়ান্ট, জিনিয়াস, তুখোড় মেধাবী সহ আরো যেকয়টা বিশেষন যোগ করা যায় সেরকম ছাত্র আবীর। মাস্টার্স ফাইনাল শেষ হয়ে গেলেও এখনো হল ছাড়েনি। কেউ ওকে ঘাটানোর সাহসও করে না। ভার্সিটির প্রভোস্ট থেকে শুরু করে প্রায় সবাই আবীরকে পছন্দ করে। তাছাড়া ম্যাথ অলিম্পিয়াডের আয়োজকদের একজন ও নিজে, টিচাররা ওকে এসিস্ট্যান্ট হিশেবে চায় যেকোনো গবেষণায়। মোটকথা, ভার্সিটির হার্টথ্রব। এরকম ছেলের গার্লফ্রেন্ড হয় সাধারণত ভার্সিটির সবথেকে সুন্দরী মেয়েটা। আবীরের ক্ষেত্রেও তাই, সিনথিয়াকে ভার্সিটির সবথেকে সুন্দরী বলা যায় নির্দ্বিধায়।
এরপর প্রফেসর জামাল নিয়াজির সাথে মিলে শুরু হয় আবীরের গবেষণা। কী নিয়ে? অবশ্যই টাইম মেশিন। চতুর্থ মাত্রার সময় পরিভ্রমন সম্ভব কি না সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষনার পর তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, পঞ্চম মাত্রার সময় পরিভ্রমন সম্ভব হলেও সেটা ওয়ান ওয়ে জার্নি৷ যদিও সময় পরিভ্রমনের আগে সেটা জানতো না আবীর!
কিন্তু ফিরে তো আসতেই হবে। সিনথিয়াকে ছাড়া অন্য একটা জগতে বাস করা আবীরের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে? কীভাবে ফিরবে আবীর?
ছোট বই, পড়তে সময় লেগেছে তিন ঘন্টা। তিন ঘন্টা একটানা পড়ে শেষ করে ফেলেছি। লেখকের লেখার হাত ভালো, বাক্যগঠন সুন্দর। সবথেকে যে ব্যাপারটা ভালো লেগেছে তা হলো, টাইম ট্রাভেলিং এর যত খুটিনাটি আছে সবই খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তবে গল্পের প্লটে কোনো নতুনত্ব পাইনি। খুবই কমন প্লট। এমন প্লটের গল্প অহরহ পড়েছি কিংবা দেখেছি। যারা ডার্ক সিরিজটা দেখেছেন তারা বইটাতে নতুন কিছুই পাবেন না, কিন্তু পড়তে মজা লাগবে। অন্যভাবে বলা যায় যারা ডার্ক দেখেছেন কিন্তু ভালোভাবে বুঝতে পারেননি, তারা কিছুটা হলেও ব্যাখ্যা পাবেন। এবং ব্যাখ্যাগুলো খুবই সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা।
আর যারা লুপ ব্যাপারটা বোঝেননি বলে বর্তমান সময়ের অনেক জনপ্রিয় বই বুঝতে পারেননি তাদের জন্যও এই বইটা সহায়িকা হিশেবে কাজ করবে। এই বইটা পাঠ করার পর লুপের ব্যাপারটা জলবত তরলং বুঝতে পারবেন আশা করছি।
সময় সুযোগের অভাবে লেখকের আগের দুটো বই এখনো পড়া হয়নি বলে আফসোস হচ্ছে, আশা করছি শীঘ্রই পড়ে ফেলতে পারব।
একটা ব্যাপার না বললেই নয়। এই বইটাতে ভুল বানান একদমই চোখে পড়েনি। বাইন্ডিং, ছাপা সবকিছুই আগের তুলনায় বেশ ভালো।
চাইতে পারিনি আমি ও চোখের সোজাসুজি রিকশার ভীষণ তাড়ায় হয়ত বা কোনোদিন সে সাহস ফিরে পাব আগামীর কোনো সংখ্যায় এভাবেও ফিরে আসা যায় এভাবেও ফিরে আসা যায়....
বইঃ এভাবেও ফিরে আসা যায় লেখকঃ মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পি মুদ্রিত মুল্যঃ ২০০ টাকা জনরাঃ সাইন্স ফিকশন . টাইম ট্রাভেলিং বইয়ের প্রতি আমার বরাবরই একটা আগ্রহ আছে.. সেই আগ্রহ থেকেই মূলত বইটা কেনা.. . মোটামুটি ধরনের একটা বই। মস্তিষ্ককে যথেষ্ট চাপ দিয়েছে। তবে উনি টাইম ট্রাভেলিং এর যে মেথড ইউজ করেছেন তাতে একটা প্যারাডক্স তৈরি হয়েছে যেটার সমাধান উনি দেন নি। বুটস্টার্প প্যারাডক্স, আশা করেছিলাম বইয়ের শেষে উনি সমাধান দেবেন কিন্তু তা না করেই বই শেষ করে ফেলেছেন😐 . প্লটঃ আবীর আরেফিন, পদার্থবিজ্ঞানের তুখোড় একজন ছাত্র। আরেকজন হচ্ছেন প্রফেসর নিয়াজী, যিনি গবেষণা করছেন সময় পরিভ্রমণ নিয়ে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সময়কে আমরা যেভাবে দেখি সেভাবে না দেখে যদি সময়কে আমরা স্থানের মতো কল্পনা করি তাহলে হয়তো টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। (সময় কে কিভাবে স্থানের মতো কল্পনা করবো এটা আমার আগে বুঝতে একটু সমস্যা হতো, এই বইটা পড়ে ক্লিয়ার হয়েছি) . অপরদিকে আবীর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মানুষের মতো দেখতে কিছু অদ্ভুত প্রানী আবিষ্কার করে। এটাও লক্ষ করে তার উপর কেউ নজর রাখছে.. . প্রফেসর নিয়াজী এবং আবীর একত্রে সময় পরিভ্রমণ নিয়ে গবেষনা শুরু করে.. গবেষণা শেষে আবীর কে পাঠিয়ে ভবিষ্যতে.. কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আবীর কে ভবিষ্যতে পাঠিয়েছিলো আবীর নিজেই.. সৃষ্টি হয়ে যায় একটা বুটস্টার্প প্যারাডক্স.. অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে লুপ... অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে আবীর ও সিনথিয়ার গল্প... 💮 . পার্সোনাল রেটিংঃ ৭/১০৷
This entire review has been hidden because of spoilers.
এভাবেও ফিরে আসা যায়- বইতে সময় প্যারাডক্স নিয়ে লেখক একটা মজার খেলা দেখানোর চেষ্টা করেছেন এবং তিনি যে সেটা চমৎকার ভাবে দেখিয়েছেন তার প্রমাণ আমি।
টাইম ডাইমেনশনের প্রতি আমার আগ্রহ আছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু বিশদভাবে জানা হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ এর অনন্ত নক্ষত্র বীথি বইটা পড়ার পর সময় নিয়ে একটু নড়েচড়ে বসেছিলাম। এরপর ফিহা সমীকরণ পড়লাম সেখানেও সময় নিয়ে খেলেছেন লেখক। আমি তখনও টাইম ডাইমেনশন সম্পর্কে ওতপ্রোত ভাবে জানি না। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি কমার্সের স্টুডেন্ট, বিজ্ঞানের অনেক বিষয় নিয়ে আগ্রহ থাকলেও তেমন ভালো জানি না।
সময় নিয়ে লেখা এমন কিছু বইয়ের সাজেশন চাইতেই আমাকে একজন বইটা দিলো, তার থেকে শুনলাম এই বইয়ের লেখক বেশ ভালো লিখেন এবং এটি তার লেখা সময় সংক্রান্ত একটি চমৎকার বই। অতঃপর শুরু করলাম, কয়েক পৃষ্ঠা পড়তেই গল্প বলার সরলতায় একেবারে আটকে গেলাম।
এই বইয়ের সময় প্যারাডক্স এবং টাইম লুপের মতো এতো জটিল কনসেপ্ট লেখক গল্পচ্ছলে ব্যাখ্যা করেছেন। অবাক হচ্ছিলাম আমি এত সহজেই বুঝতে পারছিলাম কি করে!
বোঝা মুশকিল ছিলো কোনটা নন-ফিকশন আর কোনটা ফিকশন। সাসপেন্স, থ্রিলার, এডভেঞ্চারও আছে সাথে।
«সময় এক অদ্ভুত রহস্য!
ক্যাম্পাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র আবীর। সে নানা রিসার্চ পেপার লিখে টিচারদের সাহায্য করে। ক্যাম্পাসে তার বেশ পরিচিতি আছে। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছিলো কিন্তু এরমধ্যে স্বাভাবিকতায় বিঘ্ন ঘটিয়ে কিছু অদ্ভুত প্রাণীর আগমন লক্ষ্য করা যায় ক্যাম্পাসে। কিন্তু আবীর সবচেয়ে বেশি অবাক এবং শঙ্কিত হয় সেই অদ্ভুত প্রাণীদের সাথে থাকা এক ব্যক্তিকে দেখে। যে কিনা আবীরের অতিপরিচিত।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও প্রফেসর নিয়াজী জানতে পারেন পৃথিবীতে মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান প্রাণী আছে এবং যারা বহুবছর আগেই টাইম ট্রাভেল করে ফেলেছে। কিন্তু কিভাবে করলো?
হঠাৎ একদিন আবীরের ফোনে একটা কোডেড মেসেজ আসে। এরপর ঘটনা বদলে যেতে শুরু করে দ্রুত।»
সর্বোপরি বলবো, এখানে টাইম ডাইমেনশনে, টাইম লুপের থিওরি আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। অন্যদের কাছে বিস্তর বর্ননা বিরক্ত লাগতে পারে।