আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা - লেখক আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন ডঃ শামসুল আরেফিন। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” আরিফ আজাদ এর বই মানেই একুশে বইমেলায় বেস্ট সেলার, এতটাই জনপ্রিয় এ লেখক। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা লেখকদের একজন আরিফ আজাদ।
১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এ লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে। একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রথম বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিদ বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে। আর এসব কথোপকথনের মধ্য দিয়েই বইটিতে অবিশ্বাসীদের অনেক যুক্তি খণ্ডন করেছেন লেখক। বইটি প্রকাশের পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এটি ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ - ২’ প্রকাশিত হয়ে এবং এটিও বেস্টসেলারে পরিণত হয়। সাজিদ সিরিজ ছাড়াও আরিফ আজাদ এর বই সমগ্রতে আছে ‘আরজ আলী সমীপে’ এবং ‘সত্যকথন’ (সহলেখক) এর মতো তুমুল জনপ্রিয় বই।
এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই আমার জানা এবং প্রতিটি গল্পই রাসূল (সঃ) এর সীরাতের কিতাবে বর্নিত হয়েছে। তবে রাসূল (সঃ) এর জীবন দশায় প্রতিটি গল্পই মুসলিম উম্মার জন্য এক একটি শিক্ষনীয় বার্তা আছে। কিন্তু এই শিক্ষনীয় বার্তা আমরা কতটুকু নিজেদের ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত করতে পরেছি সেই বিষয়গুলি লেখক এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। প্রতিটি গল্পই অসাধারণ এবং প্রতিটি গল্পের শেষে আছে শিক্ষনীয় বার্তা যা ব্যক্তিজীবন,সামাজিক জীবন,পারিবারিক জীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রায়াস।❤️
বইটিতে নবীজি (সাঃ) এর জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং তা থেকে আমরা কি শিক্ষা লাভ করতে পারি, লেখক বিষয়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।আমরা যদি নিজ জীবনে নবীজির সুন্নাহকে ধারণ করতে পারি তাহলেই প্রকৃতভাবে সফল হব।জীবনের খুঁটিনাটি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত,কিভাবে সামাজিক জীবনযাপন করা উচিত তার সুন্দর চিত্র লেখক বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইটি পড়ে আমার নবিজীর সিরাত পড়ার প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের প্রিয় নবীর জীবনযাপনের ধরন কেমন ছিল তা জানতে চাইলে বইটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন।
সুন্দর বই! এখানের প্রায় সবগুলো গল্পই আমার জানা। তবে, একটা গল্প খুব বেশী মনে দাগ কেটেছে।
"যেখানে, আবু বকর (রাঃ) কে এক লোক খুব বেশী গালি-গালাজ করেন। কিন্তু, আবু বকর (রাঃ) চুপ করে ছিলেন। ওনার সাথে ওই মুহূর্তে রাসূল (সাঃ) ছিলেন। এক পর্যায়ে, আবু বকর (রাঃ) ও আর চুপ করে ছিলেন না। গালির জবাবে উনি এমন কিছু বলেছিলেন, যা রাসূল (সাঃ) কখনো আশা করেন নি। এরপর রাসূল (সাঃ), ওনার সঙ্গ ওই মুহুর্তে ত্যাগ করে চলে আসেন। যা আবু বকর (রাঃ) খেয়াল করেন। একদিন আবু বকর (রাঃ), রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করে বসলেন। উনি ওইদিন এভাবে চলে আসলেন কেনো? তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, ওই লোক যতক্ষণ গালি দিচ্ছিলো আর তুমি চুপ করে ছিলে, ততক্ষণ তোমার হয়ে ফেরেশতারা ওই লোককে জবাব দিচ্ছিলো। আর যখনই তুমি মুখ খুললে, ফেরেশতারা অদৃশ্য হয়ে, সেখানে একটা শয়তান এসে হাজির হলো।"
জানা গল্পগুলোও মনে দাগ কাটে না, সুন্দর মতো পড়ে চলে যাই। এতো ভাবিও না! অশ্লীলতার উত্তরে কিছু বলতে নেই এজন্য। বললেও, মুখ নষ্ট/সময়ও নষ্ট।
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের একুশটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে, "নবী জীবনের গল্প" বইটি লেখা হয়েছে। এই পৃথিবীতে হেঁটে যাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যার চরিত্র, সততা, আদর্শে, গুণে মুগ্ধ হয়ে অমুসলিমরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করছে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিয়ে যারা ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেছে তাদের প্রতিবাদে প্রিয় লেখক আরিফ আজাদ স্যারের অবস্থান হলো নবি জীরনের আদর্শ ও জীবনবোধকে তুমুলভাবে প্রচার করা, সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। যারই ফলশ্রুতিতে নির্মিত এই বই 'নবি জীবনের গল্প '
আমার মতে এই সময়ের প্রতিটা মুসলিম যুবকের এই বইটা পড়া উচিত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের আলোকে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। অসাধারণ একটা বই।
ছোটবেলায়, এবং এখনও আম্মুর কাছে বেশ গল্প শোনা হয় নবিজী(স) এর সময়কার। সবসময়ই আকর্ষণের বিন্দুতে থাকতো এইসব গল্প, কিন্তু কোনো বিশাল সীরাহ বা অতিদীর্ঘ কোনো কাহিনী পড়তে আগ্রহ ছিল না। তবে এ বই পড়ার পর আগ্রহ কিছুটা হলেও বেড়েছে, আগ্রহের বিক্রিয়াতে যেন প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বইটি! আবার মনে হত আমি এই গল্পগুলো ছোট ভাইবোনকে কিংবা পরবর্তী প্রজন্মকে ঠিক ঠিক বলতে পারব তো?! আম্মুর মত এতটা সুন্দর করে? এখন হয়তো হালে পানি পাব কিছুটা!
বইটিতে নবিজী(স) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পরবর্তী জীবন সহ জীবদ্দশার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে; প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা হয়তো ঘটনাগুলি প্রায় সবই জানেন। কিন্তু সম্ভবত লেখকের যে টার্গেট অডিয়েন্স অর্থাৎ তরুণরা এক্ষেত্রে বেশ লাভবান হবে। আমার মত অলসরা তো আরো বেশি! এক্ষেত্রে বইটিতে ছোট ছোট উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে বিশাল আখ্যান। এতে মোট ২১টি অধ্যায় আছে; তবে বিচলিত হবেন না। অধ্যায়গুলো বেশ ছোট ছোট যাতে আমাদের অলসতা জেঁকে না বসে, এ বিষয়টা বেশ ভাল লেগেছে। নবিজী মুহাম্মদ(স) এর পারিবারিক বিষয়াদি হতে শুরু করে শত্রুর মোকাবিলা সব ক্ষেত্রেরই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে ১৪০ পৃষ্ঠার হালকা(কিন্তু শব্দে ভারী) এ বইটিতে।
নবিজী(স) যে ছিলেন নীতিতে অটল, কিন্তু হৃদয়ে কোমল। সত্যবাদীতার উজ্জ্বল নিশান যিনি বয়ে বেড়িয়েছেন সারাটি জীবন আর যাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছেন কত মুমিন-মুসলিম, সাহাবিগণ, আর তাঁরই সৌভাগ্যবান উম্মত আমরা। উম্মাতে রাসুলুল্লাহ(স), আলহামদুলিল্লাহ! তিনি যে শান্তি রক্ষা করতে চেয়েছেন, নিরুপায় না হওয়া পর্যন্ত জড়াননি যুদ্ধে, কিংবা সকলের দৃষ্টিতে না থাকা কৃশকায় জুলাইবিবের(রা) প্রস্থানে হয়েছেন আবেগপ্রবণ। আবার শত্রুর মোকাবিলায় লড়েছেন বীরদর্পে, এদিকে দুখীর জন্যে-আপনজনের জন্যে কেঁদেছে তাঁর প্রাণ। অপরদিকে মানবজাতির মহান নেতা হয়েও চাপিয়ে দেননি কোনো সিদ্ধান্ত; অপরের মত প্রকাশের জন্য রেখেছেন পর্যাপ্ত সুযোগ। পুরো তায়েফবাসীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অসাধারণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর উদ্দেশ্যের কথা ভুলে যাননি, ভুলে যাননি যে তিনি এসেছেন দাওয়াত দিতে, অভিশাপ দিতে নয়!
শুধু মুসলিমরা নন-অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পড়ে দেখতে পারেন ছোট্ট কিন্তু বিশাল ভাবাদর্শের এ বইটি; অল্প কথায় জানতে পারবেন পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির নানা ঘটনা!
একটা বিষয় সবসময়ই আমাকে আন্দোলিত করে "হিদায়াত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে"-ব্যাপারটি! একথা যে কতখানি সত্য, কতখানি অনিবার্য তা নবিজী(স) এর চাচা আবু তালিব এর ঘটনা থেকেই বোধগম্য হয়! নিজের অতি কাছের মানুষ, প্রিয় চাচাজান আলিঙ্গন করে নিতে পারেননি ইসলামের শান্তির চাদরকে। নবিজী(স) বহু চেষ্টাতেও মৃত্যুশয্যায় তিনি পড়েননি কালিমা। অথচ আল্লাহর হিদায়াতের পথে, আলোর পথে এগিয়েছেন একসময়কার ইসলামের বিপক্ষের প্রতাপশালী হযরত উমর (রা) যিনি তাঁর প্রতাপ পরবর্তী জীবনে ইসলামের পক্ষে খুব ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। এসব কথা টেনে এনে বলতে চেয়েছি কেননা নবি মুহাম্মদ(স) মানবজাতির মহান শিক্ষক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর এখতিয়ারের বাইরে যেতে পারেন না। আল্লাহ তায়ালা এসব ঘটনায় সেটারই উপলব্ধি প্রদান করেছেন।
লেখকের লেখা আমি পছন্দ করি, তার লেখায় তৃপ্তি খুঁজে পাই। তবে কারোর-ই ডাই হার্ড ফ্যান না আমি, লেখা বিবেচনায় অনেক���রই ভক্ত, আর সেকারণেই তিনিও প্রিয়। প্রথমত এই বই কেনার আপাতত কোনো ইচ্ছা ছিল না, পড়লেও পাঠ-প্রতিক্রিয়া পড়ে তারপর হয়তো সিদ্ধান্ত নিতাম। কিন্তু লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে বইয়ের প্রথম কাহিনীটি (সেটাই প্রথম, বই হাতে নিয়ে জানতে পারি) পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি জীবন যেখানে যেমন এর সাথে এটিও কিনব। তারপর যথারীতি বই হাতে পাওয়ার পর এই বইটি জীবন যেখানে যেমন এর চেয়ে হয়তো কম আকর্ষণীয় হবে ভেবে এটিই আগে পড়া শুরু করি; আর এখন মনে হচ্ছে এটিই বেশি আকর্ষণীয়।
কিছু ক্ষেত্রে শব্দ-অলংকারের একটু বেশি ব্যবহার হয়েছে কি? যদিও সেটা আবেগ কিংবা তাৎপর্য ধরে রাখতে সহায়ক হবে, তবুও কিছু জায়গায় অলংকার-উপমা বেশি লেগেছে। (নাকি আমার পরবর্তী পাতার কাহিনীতে যাওয়ার কৌতুহল এমনটা ভাবিয়েছে?!)
আমার রিভিউয়ে কোনো প্রকার ভুল কিংবা শরী'য়া বিরোধী কোনো কথা বলে থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্স বা ইনবক্সে জানাবেন, ইনশাআল্লাহ আমি শুধরে নিব! -------দি এন্ড অভ ইটারনিটি পড়তে পড়তে ঘুম ধরতেসিল; ভাবলাম এটা লিখে ফেলি। বিস্তারিতভাবে এর রিভিউ লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আদতে কতখানি সফল তা পাঠকরাই বলবেন :) -------
নবিজী (স.)- কে আমরা কতটুকু জানি?_ কেমন ছিলেন তিনি?_ কেমন ছিল তাঁর মানসিকতা, আন্তরিকতা, উদারতা? ❗এককথায় - অসাধারণ❗
তবুও তিনি জীবনাপাত করেছেন অতি সাধারণের মতো। তিনি সম্ভাবনাকে রূপ দিয়েছেন বাস্তবতায়, জয় করেছেন সকলের হৃদয়, শীতল করেছেন অন্তর, জুরিয়েছেন চোখ আর ভরিয়েছেন বুক। তাঁর অন্তর ছিল ক্ষমার সাগরে পরিপূর্ণ। পরম শত্রুকেও তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। সকলের সঙ্গে তিনি অতি উত্তম ব্যবহার করেছেন। নিজে অনাহারে থেকেও অন্যের কথা ভেবে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের সবটুকু।
এমন একজন মহামানব, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবকে আমরা কতটুকু সম্মান করি! তাঁর জীবনাচরণ আমরা কতটুকু অনুসরণ করি! আজ আমরা দুনিয়াবী লাভের আশায় কতই না সফল, অসফল, জনপ্রিয়দের অনুসরণ করতে চাই। একবারও কি ভেবে দেখেছি যিনি আমাদের জন্য উম্মাহ্ উম্মাহ্ করে কেঁদে গেছেন সারাটা জীবন, এমনকি পরকালেও উম্মাহ্ র জন্য তিনি শাফায়াত করার জন্য অপেক্ষায় আছেন_ তাঁকে আমাদের জীবনে কতটুকু প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি!
' নবি-জীবনের গল্প ' -এ রয়েছে তাঁর জীবনের অতি স্মৃতিময়, আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু গল্প। তাঁর জীবনী যেকোনো মানুষকে আটকে ফেলবে ওপর মহিমায়!❤️
কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারে এক টুকরো আলো হয়ে সমস্ত সৃষ্টির রহমত স্বরূপ আগমন ঘটে জগতের শ্রেষ্ঠ মানব, আল্লাহ্ তায়ালার প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল, সমগ্র মানবজাতির আদর্শ, নবী আগমনের সিলমোহর, নবীগণের সর্দার মুস্তফা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাসিম (সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি এমন এক গোত্র, এমন এক সমাজ থেকে উঠে এসেছিলেন যেখানে সামাজিক মর্যাদার বিষয়ে সকলের নিরন্তর আগ্রহ কিন্তু এমন এক সমাজে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। তার ছিল না কোনো নাম, ডাক বা বংশ পরিচয়ের লোভ, না ছিল কোনো ক্ষমতার দাম্ভিকতা, তার বদলে ছিল মাটির মানুষ হয়ে থাকার অনন্য অভিলাষ। নবীজীর জন্য ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন আমরা নিজেদের মধ্যে নবীজীর সুন্নাহ কে, তার জীবনকে ধারণ করতে পারব। সত্যিকারের মুক্তি তো সে পথে, যে পথে পদচিহ্ন রেখে গিয়েছেন জগতের শ্রেষ্ঠ মানব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
নবি জীবনের গল্প বইটি কোনো হাদিস সংকলন নয়, নয় কোনো গৎবাঁধা ধারায় লেখা বই। সম্পূর্ন ভিন্ন আঙ্গিকে, নবীজীর (সা:) জীবনের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে আরিফ আজাদ ভাইয়া তার শব্দের ঝঙ্কার তুলেছেন নবি জীবনের গল্প বইটিতে।
তার অসাধারণ শব্দ চয়ন, মন কেড়ে নেয়া রচনাশৈলী দিয়ে পরতে পরতে বইটিকে সাজিয়েছেন যেন পাঠক তার উপন্যাস, জীবনী ও সীরাত পাঠের তৃষ্ণা এই একটি বই দিয়েই পূর্ন করতে পারেন।
বইটি মূলত, নবীজীর সা: বিস্তারিত জীবনে পাঠে পাঠকদের আগ্রহী করে তোলার একটা সুনিপুণ কৌশল।
তবে বইটিতে লেখক সংযোজন করেছেন কিছু হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ। ও সুনিপুণ কৌশলে যুক্ত করেছেন কিছু সত্যি কথা, যা মানুষ শুনতে আগ্রহী নয়।
বেক্তিগত ভাবে এই বেশ অনেকদিন পরে আমি আবার কোনো বই এ ৫ স্টার দিতে বাধ্য হচ্ছি। মা শা আল্লাহ।
এত চমৎকার লিখন পদ্ধতি, এত সুন্দর শব্দ বিন্যাস কর না মন কেড়ে নেয়!
কয়েকবছর আগের ঘটনা। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র কবে সারা দুনিয়ার মুসলিম উম্মাহ এক হয়ে ডাক দেয় 'ফ্রান্স' বয়কটের। 'বয়কট ফ্রান্স' এবং 'বয়কট ফ্রান্স প্রোডাক্টস' স্লোগানে তখন কাপছিল বিশ্ব।
নবীজি (স.) হচ্ছেন মুসলিমদের চোখের মণি। তিনিই হচ্ছেন মানবজাতির আদর্শ। ফ্রান্সের ঐরকম ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণের বিপরীত তীব্র হুংকার দিয়ে গর্জে উঠেছিল মুসলিম সম্প্রদায়।
নবীজি (স.) এর সম্মানের উপর আঘাত করায় মুসলিম উম্মাহর প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে ঈমানের বহিঃপ্রকাশ ছিল । তবে আফসোস আমরা যেই নবীপ্রেম সেইদিন দেখিয়েছিলাম তা যদি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়মিত দেখাতে পারতাম,নবীজি (স.)-এর আদর্শকে যদি ধারণ করতে পারতাম জীবনের প্রতিটি অংশে, নিঃসন্দেহে তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দরজা আমাদের জন্য খুলে যেত।
আজ উম্মাহ নবীজি (স.) এর আদর্শকে আকড়ে না ধরে আপন করে নিচ্ছে তথাকথিত আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে। ফ্রান্সের পণ্য নাহয় বয়কট করেছিলাম সেদিন , কিন্তু মনের মাঝে যে তাদের বিষাক্ত বীজ বয়ে বেড়াচ্ছি প্রতিনিয়ত–আদর যত্নে লালনপালন করছি , তা বর্জন করব কবে?
লেখক আরিফ আজাদের ফ্রান্সের ঐ ঘটনার বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ 'নবি-জীবনের গল্প' বইটি। 'নবীজি (স.) কে ভালোবাসি' কথাটি মুখের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। অন্তরে নবীজি (স.) ও তাঁর সুন্নাহকে লালন করতে হবে আমাদের।
বইটিতে লেখক নবীজি (স.) এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন । যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক। এটি মহানবি (স.) এর জীবনের বিবরণীমূলক কোনো গ্রন্থ নয় । কিন্তু তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন শিক্ষামূলক ঘটনা আমাদের সামনে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক।
বইটির ব্লার্ব থেকে :
চৌদ্দ শ' বছর আগের কথা। তপ্ত মরুর বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল এক জনপদ। আঁধারের আস্তরণ সেখানে অনেক বেশি প্রকটা মিথ্যের বেসাতি আর পাপাচারের নগ্নোৎসবে মাতোয়ারা সবাই। বিচ্যুত তারা সকলে, এক অনিবার্য সত্যের পয়গাম থেকে যা এই অঞ্চলে একদিন ফেরি করেছিলেন এক আলোর ফেরিওয়ালা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম।
যে আলো প্রায় নিভুনিভু, সে আলোতে নতুন বিচ্ছুরণ নিয়ে একদিন উন্মেষ ঘটলো এক মহামানবের যার আগমনে বদলে গিয়েছে গোটা পৃথিবী! ইতিহাসের সকল গতিপথ, সকল বাঁক যিনি ভেঙেচুরে গড়েছেন, যিনি অনিবার্য সেই সত্য পয়গামের ধারক হয়েছেন ধরণির বুকে, তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সেই মহামানবের ���হামানবীয় গুণাবলি, যা তাকে সবার চাইতে আলাদা করেছে, যা তাকে সকলের মাঝে অনন্যসাধারণ করে তুলেছে, সেই অনন্যতার গল্প আমাদের জীবনে কতটা নিবিড়ভাবে প্রাসঙ্গিক তা জানতে ডুব দেওয়া যাক 'নবি-জীবনের গল্পে'।
~
আরিফ আজাদের নিপুণ গদ্যশৈলিতা মহানবি (স.) এর জীবনকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। তাই বইটি পড়ার সময় পাঠকের কখনো ক্লান্তি আসবেনা। নবীজি (স.) এর সম্পূর্ণ জীবনি বা সীরাহ পড়ার প্রথম ধাপ হতে পারে 'নবি-জীবনের গল্প'।
মহানবী (স) এর জীবন থেকে বা ইসলামের বিভিন্ন ঘটনাভিত্তিক কোন বই পড়ার আগ্রহ আমার দীর্ঘদিনের। এই বইটা ঠিক সেরকম ঘরানার। মহানবী (স) এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাকে লেখক দুই মলাটে তুলে এনেছেন এখানে, সাথে বেশ প্রাঞ্জলভাবে নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন কীভাবে সেসব ঘটনাগুলোর শিক্ষা আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। ঘটনাগুলো আসলেই মনে রাখার মতো। ঘটনাগুলোর শিক্ষা নিজের জীবনে প্রয়োগ করা গেলে তা নিঃসন্দেহে মানুষ হিসেবে আমাদের উন্নততর করবে।
বেশ ভালো বই। পড়তে পারেন।
বইটার যেদিকগুলো ভালো লাগে নি সেটা সম্ভবত সকল ধর্মীয় বিষয়ে লিখিত বইয়ের বেলাতেই প্রযোজ্য। অতি আলংকারিক ভাষার ব্যবহার। প্রতিটা লেখাতেই অসম্ভব গৌরচন্দ্রিকা পাঠককে বিরক্ত করবে। মহানবী (স) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তার সচ্চরিত্র ও গুনাবলীর প্রশংসা আল্লাহ্ নিজেই করে গেছেন। কিন্তু লেখক পাতার পর পাতা ব্যক্তি মুহাম্মাদের স্তুতি বয়ান করে যেভাবে করেছেন, তা আমার কাছে মনে হয়েছে আবেগের অসংলগ্ন প্রকাশে আবেগের ব্যাপারটাকে কিছুটা খেলো করে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রাসঙ্গিকও। এই কাজ করতে গিয়ে লেখক যে অসংখ্য রিপিটেশন করে গেছেন তা তিনি বা প্রুফ রিডার কেউ-ই খেয়াল করেন নি।
এমন থিমের বই আরও চাই। ধর্মকে সহজ সরল ভাবে বুঝতে এধরণের রচনার খুবই প্রয়োজন।
আহা! সারাক্ষণ কি একাডেমিক পড়াশোনা করা যায়? বিরক্তিকর! পড়তে পড়তে একঘেয়েমি চলে আসে ।তখন এসব নেতিবাচকতা মুছতে একটু বিনোদনের দরকার পড়ে। আর সেই বিনোদন যদি বইয়ের দ্বারা আহরণ করা যায় তবে তো কেল্লাফতে। বিনোদনের পাশাপাশি হরেক রকমের জ্ঞানও মেলে।কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো বিষয়। এমনই এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদের ‘নবি জীবনের গল্প’ বইটি হাতে নেওয়া। বহুদিন ধরে পড়ব পড়ব ভাবছিলাম শেষমেষ সে সময়টা দোরগোড়ায় এসে হাজিরা দেয়। বইয়ের শুরুতেই লেখক আরিফ আজাদ বইটি লেখার উদ্দেশ্য সবাইকে জানিয়ে দেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে নবিজিকে ঘিরে ফ্রান্স সরকার যে ধৃষ্টতা ও অপকর্মের প্রদর্শন করে তারই প্রতিবাদস্বরূপ এ বই।আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা ফ্রান্স সরকারের ন্যায় প্রতিনিয়ত নগ্ন আচরণে লিপ্ত।জেনে বা জানতে না চেয়ে তারা রোজই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন দাঁড় করাতে তৎপর।পাল্লাটা যখন নবিজির দিকে মোড় নেয় তখন মোটা দাগে প্রশ্নটা করা হয় উনার পবিত্র আত্মাকে কেন্দ্র করে,উনার চরিত্রকে নিয়ে।কুরআন ঠিকঠাক বুঝে না উঠতেই তারা গর্জে ওঠে-“আরে এই তো কুরআনের ভুল! এটা স্রষ্টার গ্রন্থ তো হতেই পারে না!” “এগারোটা বিয়ে করার মানে কি!” ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজের স্বার্থে সত্য-মিথ্যার তফাৎ না করে কতশত প্রশ্ন নিয়ে তারা প্রস্তুত থাকে নবিজির নামে কুটুক্তি ছড়াতে, মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করতে। অনেক মুসলিমই তাদের ছোবলে পড়ে ঘাবড়ে যায়,বুঝে উঠতে পারে না কোনটা ঠিক। কিন্তু আমরা কি জানি জুলাইবিব (রা.) এর কথা? যার কিনা কোন প্রকারের বংশ মর্যাদা ছিল না,কৃষ্ণ-গাত্রবর্ণ ও কৃশকার দেহের জন্য তিনি সারা আরবে ছিলেন অবহেলিত,তাকে কতই না উত্তম ভাবে মূল্যায়ন করেছেন আমাদের নবিজি। যখন সবাই উমরার জন্য মক্কায় আগমন করতে তৎপর, তখন তিনি নিজ ও পরিবারের স্বার্থের ওপর দ্বীনের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগকেও নাকচ করে শত্রুকে ভালোবাসা দিয়ে বন্ধু বানিয়ে নেওয়ার মহৎ গুণও উপস্থিত ছিলে উনার মাঝে। শত্রুর জন্য হিদায়েতের দোয়া করতেও ভুলতেন না। শুধুমাত্র বেদুইন ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার্থে শত্রুর মুখোমুখি হতেও তিনি দ্বিধা করেননি। এমনই হাজারো গুণে ভরপুর ছিল নবিজির চরিত্র,যা উনাকে মানব থেকে মহামানবে পরিণত করেছে। ‘নবি জীবনের গল্প’ বইয়ে লেখক আরিফ আজাদ নবি জীবনের এমনই ২১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে নিজ ভাষায় সংকলন করেছেন।যারা পূর্বে লেখকের বই পড়েছেন তারা ভালই জানেন শব্দ চয়নে লেখকের রয়েছে অনন্য এক বৈশিষ্ট্য,যা পাঠককে বইয়ের সাথে জব্দ করে রাখতে সক্ষম।আলোচ্য বইটিও এর ব্যতিক্রম নয়৷ এখন প্রশ্ন জাগতে পারে-সিরাহ থাকতে ‘নবি জীবনের গল্প’ বইটি পড়ব কেন? প্রথমত এ বইয়ে প্রতিটি গল্পের শেষপ্রান্তে এসে লেখক উক্ত ঘটনা থেকে কি কি শিক্ষণীয় বিষয় আছে বা ঘটনাটি আমাদের কি শেখায় তা ধরে ধরে দেখিয়ে দেন যা সাধারণ সিরাত গ্রন্থে অনুপস্থিত। দ্বিতীয়ত বইটি একটি আয়নার ন্যায়,যেখানের কাচ তৈরি এক মহামানবের উত্তম চরিত্র ও চিন্তাচেতনার নির্যাস দ্বারা।অন্তত সে মূল্যবান দর্পণে নিজের অবয়ব কেমন দেখায় সে সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য হলেও একবার বইটি পড়া দরকার। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আহ! যদি কোনোভাবে সেই সোনালি সময়টাতে চলে যেতে পারতাম, যদি তাঁর ছায়াসঙ্গী হিসেবে কাটিয়ে দিতে পারতাম সারাটি জীবন, যদি হতে পারতাম তাঁর বন্ধুদের মধ্যে একজন......
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনি ছিলেন আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত মহামানব, যাঁর মত মহান চরিত্রের অধিকারী কাউকেই আর এই ধরণী ধারণ করবে না। কিন্তু আফসোস! কথা ছিল তাঁর দেখিয়ে যাওয়া পথে চলব সারা জীবন, জীবনের প্রতিটি পদে পদে মেনে চলব সেই ঐশী বাণীর বিধান যা মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন আমাদের কাছে। তিনিই আমাদের আদর্শ। তাঁর মত উত্তম চরিত্রের অধিকারী কেউই ছিল না, আর না কেউ আসবে। কিন্তু তাঁর জীবনী থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে বিমুখ হয়ে পড়ছি; দূরে ছিটকে পড়ছি শান্তির পথ থেকে। এই বইটি তাঁর জীবনী থেকে নেয়া উল্লেখযোগ্য পাঠসমূহ আমাদের অনুধাবন করতে সহযোগিতা করবে। বইটি পড়তে গিয়ে বারবার আপ্লুত হয়েছি; যেন জড়িয়ে পড়েছিলাম কোনো এক অপার্থিব আবেগের সাথে। আমরা কতটা সৌভাগ্যবান যে আমরা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পেয��েছি আমাদের নবি হিসেবে। কিন্তু এই প্রাপ্তির মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে; শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি। জীবনের প্রতিটি কাজে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে আমাদের। এটাই মহান রবের আদেশ, এতেই মহান রবের সন্তুষ্টি। তবেই না আমরা শেষ বিচারের দিন তাঁর সুপারিশ লাভে সমর্থ হবো যা আমাদের পরম আকাঙ্ক্ষিত স্থান- জান্নাত পেতে সাহায্য করবে। তাই নবিজির জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে বদলে ফেলুন নিজের জীবন, আর এই পরিবর্তনের পথে যাত্রা শুরু হোক আজকে থেকেই।
আজকাল প্রকৃত বই পাঠক বা ইসলামের জন্য টান আছে এমন কেউ ছাড়া একটি পূর্ণ সীরাত গ্রন্থ পড়ার সময় অনেকের জন্যই বরাদ্ধ নেই। অন্যদিকে উপমহাদেশীয় সাহিত্যে কালচারে ডুবে থাকা পাঠকদেররও সীরাতের প্রতি আগ্রহ কম। লেখক হয়তো সেই কথা চিন্তা করেই সীরাত থেকে তুলে আনা খণ্ড চিত্র দিয়ে নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর কিছু ঘটনা সংক্ষিপ্ত সময়ে আমাদের জানান দিতে চেয়েছেন, যেন সীরাত না পড়েও সীরাতের এক ঝলক স্বাদ পাঠকগণ নিতে পারেন। এ কাজটি লেখক এতটাই দরদ দিয়ে করতে চেয়েছেন যে তা পড়ার পর যেন আমাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সীরাত পড়ার ভালবাসা তৈরি হয়। আমার মতে লেখক উপযুক্ত সফলতাই পেয়েছেন, আর কেনই বা পাবেননা চরিত্র যখন জগতের শ্রেষ্ঠ মানবকে নিয়ে, যে মানুষটি একই সাথে এত গুনের অধিকারী যে তার ছিটেফোঁটার আদলে গড়ে উঠা কাউকে আমরা যুগ শ্রেষ্ঠ বা অনুসরণীয় তালিকায় ফেলে দিতে পারি। স্বয়ং আল্লাহই যার চরিত্রের প্রশংসা করেই ক্ষান্ত হননি, সঙ্গে মানব জাতির রহমত উপাধিও দিয়েছেন। চলুন সেই মানুষটির জীবন চিত্রের গুটি কয়েক ঘটনা জানি, কতটা মহৎ হলে এমনটা হতে পারে একটু আবিস্কার করি।
আমাদের আচার-আচরণ,ব্যক্তিত্বগঠন থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত কেমন হওয়া উচিত তারই চমৎকার চিত্র নিপুণ গল্পশৈলীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে 'নবি-জীবনের গল্প' বইতে।লেখক আরিফ আজাদ সীরাহ থেকে বাছাই করা টুকরো টুকরো নবিজীবনের গল্পের সাথে সাথে সেই গল্প থেকে আমাদের শিক্ষা, অনুপ্রেরণা,মর্মাঅর্থ এবং জীবনে প্রয়োগের পদ্ধতি চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন।
আশা করি 'নবি জীবনের গল্প' বইয়ের গল্প গুলো পড়তে পড়তে সেই গল্পের ভিতর থেকে কুড়িয়ে আনা আলোয় আমাদের আলোকিত করবে,পরিশুদ্ধ করবে অন্তরকে,উপলব্ধি করাবে দৈনন্দিন জীবনে নবিজি (সাঃ) এর জীবনআদর্শ কতটা প্রাসঙ্গিক ও অনুকরণীয় এবং উজ্জীবিত করবে রাসুল (সাঃ) এর সরীহ গ্রন্থ পড়তে।
বই :নবি-জীবনের গল্প লেখক :আরিফ আজাদ প্রকাশনী :সমকালীন প্রকাশন পৃষ্ঠা :১৩৯ মূল্য :২২০ (২৫ থেকে ৪০% ডিসকাউন্ট) রেটিং :৭/১০
রিভিউ লেখক : আঃ কাহ্হার (সিয়াম)
This entire review has been hidden because of spoilers.
প্রিয় লেখকের সব বইই ভালো লাগে। তবে এই বইটির সাহিত্যমান অন্যান্য বইগুলোর থেকেও বেশ সমৃদ্ধ মনে হয়েছে। বিষয় বস্তু তো টাইটেল দেখেই বুঝা যায়, সিরাতে রাসুল থেকে কিছু নির্যাস নেওয়া হয়েছে এখানে। খুব চেনা কিছু গল্প নিয়েই বইটি লিখা কিন্তু এর উপস্থাপন ছিল আধ্যাত্মিক রকমের সুন্দর। বাংলায় এরকম সিরাহ সাহিত্য খুব সম্ভবত আরেকটি নেই। আশা করি মোটাসোটা একটা সিরাতে রাসুল লিখবেন কোন একদিন আরিফ আজাদ সাহেব। এতো ছোট ছোট বই একেলে পাঠকদের মন ঠাণ্ডা করলেও আমরা কিছু জওয়ানের শরীরের বুড়োরা লুকিয়ে আছি যাদের জন্য ১০০-২০০ পৃষ্ঠার কিতাব, তাও আবার সিরাতে রাসুল, তাও এতো সুন্দর লেখনী! নাহ তবে না শোকর নয়! আল্লাহ্ এই বই সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে উত্তম জাযায়ে খায়ের দান করুন, আমীন।
এই বইটিতে লেখকের অনেক তাড়াহুড়া বিষয়টা বোঝা যাচ্ছে এবং নিজের মত করে অনেক শব্দ ব্যবহার করে বইয়ে ঘটনা শর্ট করে পৃষ্ঠা বেশি করছে মানে একটা র্স্টান্ডার সাইজ রাখছে আরকি। বেশির ভাগ ঘটনাই অস্মাপ্ত। আমার কাছে মনে হইছে সে নিজের মনগড়া শব্দ কম ব্যবহার করলে ঘটনার পূর্নতা দেওয়া যেত। আমি তার আগে বই গুলো পড়েছি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ এই বইগুলো আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লেগেছে বিশেষ করে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২। কিন্তু কেন যানি মনে হচ্ছে লেখক বর্তমানে কোয়ালিটির থেকে কন্টিটির দিকে বেশি ফোকাস করছে।
Wow, This book is one of them which I read in one sitting! Amazing, life and perspective. Every Story with great lessons and at end best solution. May Allah increase his blessings to the writer Arif Azad and increase his knowledge, beauties in writings.
জীবনে প্রথম পাওয়া জিনিসগুলোর প্রতি আমাদের একটা বিশেষ টান থাকে। ঠিক তেমনি প্রথম পড়া বইয়ের জন্য একটা আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হয় মনে ; আর সেটা যদি হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা���্লামের জীবনী নিয়ে তবে সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা দায় ।আমার পড়া প্রথম সীরাত গ্রন্থ ছিল "নবি জীবনের গল্প", আর বইয়ের লেখকও আমার প্রিয় লেখকদের একজন।এই দুইয়ের মেলবন্ধন আমার জন্য সত্যিই ভোলার নয়।
ছোটবেলায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের নানা ঘটনা শুনেছি —কখনো বড়দের মুখে কখনো মক্তবে হুজুরের মুখে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে নবীজির (সা.) জীবনীগ্রন্থ পড়ার সুযোগ কখনোই হয়নি।
পরে যখন নিজের মতো করে বই কেনা ও পড়ার সুযোগ হলো, ধীরে ধীরে সীরাত গ্রন্থও সংগ্রহ করা শুরু করি। আরিফ আজাদ স্যারের বইগুলো হাতে এলেও পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে এবার রমাদানের আগে থেকেই ভাবছিলাম, আমার সংগ্রহে থাকা সীরাত বিষয়ক বইগুলো পড়া শুরু করব। যেহেতু বড় কলেবরের বই পড়ার সাহস পাচ্ছিলাম না, তাই ছোট কোনো বই দিয়েই শুরু করার পরিকল্পনা করলাম। এই ভাবনা থেকেই রোজার প্রথম দিকে "নবি জীবনের গল্প" পড়া শুরু করি।
বইটিতে নবীজির (সা.) জীবনের বিচ্ছিন্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সহজ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নবীজির (সা.) জীবনের ঘটনার মিল খুঁজে দিয়েছেন। এতে কেবল পড়াই নয়, বরং শেখার বিষয়গুলো আমাদের জীবনে সহজে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। যেমন, নবীজির (সা.) ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার ঘটনা পড়ে নিজের জীবনের অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে পেরেছি।
এই বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে, আরও গভীরে গিয়ে নবীজির (সা.) জীবনের ওপর লেখা বিশদ কোনো বই পড়া উচিত। "নবি জীবনের গল্প" কেবল একটি বই নয়, বরং আমার জন্য একটি সুন্দর যাত্রার শুরু।
যারা জীবনীগ্রন্থ পড়তে অভ্যস্ত নন, কিন্তু রাসুলের (সা.) সীরাত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি একটি চমৎকার সূচনা হতে পারে। লেখক সহজ ভাষায় ঘটনাগুলো উপস্থাপন করেছেন এবং আমাদের জীবনের সাথে তার শিক্ষাগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করেছেন, যা বইটিকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। এটি সীরাতের জ্ঞানসমুদ্রের এক গ্লাস জল বলতে পারেন—তরুণ-তরুণীদের জন্য প্রাথমিকভাবে সীরাত পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য দারুণ এক মাধ্যম হতে পারে এই বইটি।