আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা - লেখক আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন ডঃ শামসুল আরেফিন। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” আরিফ আজাদ এর বই মানেই একুশে বইমেলায় বেস্ট সেলার, এতটাই জনপ্রিয় এ লেখক। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা লেখকদের একজন আরিফ আজাদ।
১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এ লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে। একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রথম বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিদ বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে। আর এসব কথোপকথনের মধ্য দিয়েই বইটিতে অবিশ্বাসীদের অনেক যুক্তি খণ্ডন করেছেন লেখক। বইটি প্রকাশের পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এটি ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ - ২’ প্রকাশিত হয়ে এবং এটিও বেস্টসেলারে পরিণত হয়। সাজিদ সিরিজ ছাড়াও আরিফ আজাদ এর বই সমগ্রতে আছে ‘আরজ আলী সমীপে’ এবং ‘সত্যকথন’ (সহলেখক) এর মতো তুমুল জনপ্রিয় বই।
সাহিত্য মানেই হলো লেখক সেখানে শব্দের গাঁথুনিতে জীবনের গল্প বলবেন। বাংলা সাহিত্যে লেখক বলতে আমরা যাদের চিনি তাঁদের লেখায় খুব সূক্ষ্মভাবে সত্যিকারের ইসলাম কীভাবে যেন বাদ পড়ে গেছে৷ ইসলাম তাদের লেখায় আসলেও এসেছে নেতিবাচক ভাবে। লেখকরা মনের মাধুরি মিশিয়ে বর্ণনা করেছেন ইসলামকে। মানুষের চরিত্রের নানা বিচ্যুতিকে ইসলামেরই বিচ্যুতি হিসেবে দেখিয়েছেন। ফলস্বরূপ ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্যানুরাগী ছেলে মেয়ে বড় হতে হতে কেমন জানি নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদী হয়ে যায়। ইসলামের সুন্দর দিকগুলো তাঁদের আর চোখে পড়ে না। সৃষ্টিকর্তা হয়ে যায় প্রকৃতি আর ধর্ম হয়ে যায় স্রেফ সংস্কার বা কুসংস্কার।
আরিফ আজাদের "জীবন যেখানে যেমন" এই ধারাবাহিকতার বিপরীত এক স্রোত। ইসলামের প্রেক্ষাপটে চমৎকার কিছু গল্প দিয়ে লেখক সাজিয়েছেন পুরো বইটাকে। প্রত্যেকটা গল্পতেই ইসলামকে খুব সুন্দরভাবে জানার একটা সুযোগ ছিলো৷ জীবনের সবচেয়ে ভযংকর কষ্টের সময়েও কীভাবে আল্লাহর ওয়াদা মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখায় তা নিয়েই প্রথম গল্প " অশ্রু ঝরার দিনে "। শুরুর এই গল্পটা পড়েই মনে হয়েছে, "এমন তো পড়িনি আগে!" কিছু গল্প অনাবিল শান্তি দিয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সুবিশাল অনুগ্রহ আর নিয়ামতের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। বইটার সবচেয়ে প্রিয় গল্প, "আসমানের আয়োজন"। যারা বিশ্বাস করে রিযিক আসমান থেকে আসে, তাঁদের অন্তরের সুকুন ভীষনভাবে নাড়িয়ে দেবে পাঠককে। অন্যরকম আর অসম্ভব সুন্দর একটা বই।
বইঃ জীবন যেখানে যেমন লেখকঃ আরিফ আজাদ প্রকাশনী: সমকালীন প্রকাশন প্রকাশকাল: গ্রন্থমেলা, ২০২১ পৃষ্ঠা: ১৪৬ মলাট মূল্য: ২৩৭ টাকা
পাঠ প্রতিক্রিয়া: আরিফ আজাদের গল্প লেখার ধরণটা দারুণ। আরিফ আজাদের "জীবন যেখানে যেমন" এই ধারাবাহিকতার বিপরীত এক স্রোত। ইসলামের প্রেক্ষাপটে চমৎকার ১৪টি গল্প দিয়ে লেখক সাজিয়েছেন পুরো বইটাকে। প্রত্যেকটা গল্পতেই ইসলামকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন৷ বইটা জীবন কে নতুন করে ভাবতে শেখাবে৷ সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই প্রেম-ভালোবাসা, চাওয়া না-চাওয়া, বিশ্বাস, বাবাদের গল্প।
লেখক সম্পর্কে কিছু কথা: আরিফ আজাদ একজন বাংলাদেশী লেখক। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর লেখক হিসেবেই তিনি বহুল পরিচিত। অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ এ অনলাইন বেস্ট সেলার হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ আজাদ। তারপর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে আরিফ আজাদের অন্যান্য বইগুলো। লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। লেখক আরিফ আজাদ ১৯৯০ সালের ৭ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে। একটি সরকারি কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন।
বইয়ের প্রোডাকশন: সমকালীন প্রকাশন এর পেপারব্যাক বই গুলো কোয়ালিটির দিক দিয়ে এক কথায় চমৎকার। বইয়ে বাঁধাই, পেজের মান, ছাপা সবই ভালো। শক্ত-পোক্ত ছোট বই ধরতে, পড়তে আরাম পাওয়ায়, বানান ভুল পাইনি।
সর্বোপরি সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবন কামনা করছি। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুক.. 🎭
আজ বই নিয়ে কথা বলতে আসি নি। তবে বইটা পড়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ঘটা একটা ব্যাপার নিয়ে বলতে চাই।
বৃষ্টি ছোঁওয়ার অভ্যাস আমার অনেক পুরোনো। বৃষ্টিস্নানে অভিভাবকের নিষেধাজ্ঞা, তাই বৃষ্টি ছুঁতে পারাই সান্ত্বনা। তবে এই বইটা পড়ার পর থেকে আমি প্রায়ই, অনেকটা নিজের অজান্তেই বৃষ্টি দেখলে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিবিন্দু ছুঁতে ছুঁতে আমার মনোজগতের প্রতিবেশীদের জন্য (আর নিজের জন্যও) দুআ করতে থাকি।
"জীবন যেখানে যেমন" পড়ার পর আমার মধ্যে সুন্দরতম অনুভূতি এটাই!
কিছু নতুন আঙ্গিকে নতুনত্বের স্বাদ। গল্প যে এমনো হয়, যা চক্ষুনীড়ে পানি আনতে পারে, জীবন কে নতুন করে ভাবতে শেখায় তা আরিফ আমাদের লেখার মুন্সিয়ানায় দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।।
বছরের পড়া অন্যতম সেরা বই। গতানুগতিক হাদিস বা ধর্মীয় ঘটনার বর্ণনা নয় বরং সারাংশ নিয়ে ভাবিয়ে তোলার মতো ছোট গল্প সংকলন।এমন আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
প্রতিটি গল্পেই রয়েছে পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার চরম উপস্থাপন , গল্প গুলো ছোট হলেও মুলভাব ও ব্যাপ্তি এতটাই বেশি যে , গল্পগুলো পড়ে মনে হলো অনেকগুলো উপন্যাস পড়ে ফেলেছি , প্রতিটি গল্পের শেষে আছে তৃপ্তির ঢেকুর ।
একেকজন মানুষের জীবনের গল্প একেকরকম। সুন্দর করে বর্ণনা করলে, সাধারণ গল্পও অসাধারণ মনে হয়। লেখক সুন্দর করে সবগুলো গল্প লিখেছেন, আবার কিছু গল্পে একটু বেশীই বর্ণনা করে ফেলেছেন।
এই প্রেম ভালোবাসা, জীবনের রকমফের, হিজল বনের গান, সফলতা সমাচার। এই গল্পগুলো বেশ ভালো লেগেছে।
-জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গল্পগুলোকে লেখক তুলে এনেছেন এই বইটিতে।গল্পগুলো যেমন জীবনের কথা বলে,তেমনই জীবনে রেখে যায় বিশ্বাসী মূল্যবোধের গভীর এক ছাপ।গল্পের ফাকে ফাকে লেখক তার পাঠকদের জন্য রেখে গিয়েছেন চিন্তার কিছু খোরাক। পাঠকের ভাবুক মন যদি সেগুলোয় নিবিষ্ট হয়,তাহলে গল্পের পাশাপাশি তারা জীবনের কিছু উপকারী পাঠ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হবে।
-ইসলামিক গল্প যে কত সুন্দর! হালাল সম্পর্ক যে কত সুন্দর হতে পারে! পাঠকদের এটাই বলব, অনেক তো প্রেম কাহিনি পড়লেন, এবার হালাল সম্পর্ক নিয়ে কিছু গল্প পড়ে দেখেন। শান্তি পাবেন।
এখানে কোনো উপন্যাস বা আস্তিকতা -নাস্তিকতা বিষয়ক কোনো লেখা নয় বরং বইটি সাজানো হয়েছে ১৪টি জীবনমুখী ছোটগল্প দিয়ে।
গল্পগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক👉
🔰অশ্রু ঝরার দিনে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ এই গল্প।মৃত্যু দিয়ে গল্পের অবতারণা হলেও মিনুর চিঠি গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।সর্বস্বহারা মিনুর সেই অভিমানি কথা- "ওর জন্য যা কাদার তা তো আমি জায়নামাজেই কেদেছি।আর কোনো জল আমার চক্ষু কোটরে অবশিষ্ট নেই।কোত্থেকে আসবে?"আমার মনে দাগ কেটেছে।
🔰এই প্রেম, ভালোবাসা হারাম মেলামেশার গল্পের মাঝে এই গল্পে হালাল মেলামেশার মাধুর্য লেখক তার লেখনির বুননে অতি নিপুণতার সাথে তুলে ধরেছেন।
🔰আসমানের আয়োজন মহান আল্লাহর প্রতি জমির চাচার অকৃত্রিম বিশ্বাস এবং তকদিরের উপর তার আস্থা এই গল্পকে প্রান দিয়েছে।নিরাশ না হওয়ার ক্ষেত্রে জমির চাচার সরল ভাষা- " যারাই আল্লাহর উপর বিশ্বাস করবো,তাগো উপর আল্লাহ এমন জায়গা দিয়া রিজিক পাঠাইবো যা সে কল্পনাও করার পারবো না।" জমির চাচার কথা গুলো পাঠক মনে ভাবনার উদ্রেক করে।বিশেষ করে- "যে রিজিক আসমান থাইকা আসে তার লাগি এত পেরেশানি কিয়ের?🤷♂️
🔰চাওয়া না-চাওয়া কন্যা সন্তান আল্লাহর রহমত।কিন্তু আধুনিক সভ্যতার এই দিনেও অনেক পিতাই কন্যা সন্তানকে অভিশাপরুপে দেখেন।গল্পের শেষদিকে গল্প কথকের সদ্যোজাত শিশু কোলে মায়ের মৃত্যুর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে ছোট গল্পে লেখক নিপুনভাবে এক সুদুরপ্রসারি বার্তা পাঠক মনে দিয়েছেন।
🔰এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা মানুষ মাত্রই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে সে অসহায়।ঠুনকো এই ধারাতে আমাদের ক্ষুদ্রতার সাথে ফাতিমার মানবিকতা ঘটনাপ্রবাহকে চাঞ্চল্য দিয়েছে।একদিকে নিজের ভালোবাসা অন্যদিকে বিবেক,মন আর মস্তিষ্কের এমন মুখোমুখি অবস্থানে ফাতিমার সিদ্ধান্ত সত্যিই অতুলনীয়।
🔰জীবন রকমফের সে আমার ব্যস্ততা আর আমি তার অবসরেও স্থান না পাওয়া দূর্ভাগা। রেবেকার সংসার জীবন এক লাইনে এমনিই। আমরা আধুনিকতার ছোয়াতে নীল-সাদার দুনিয়ায় এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে পরি যে,আপন মানুষগুলোর থেকে নিজের অজান্তেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।সংসার জীবনে নারীর অবদানের সাথে তার মমতাময়ী দিকটি ফুটিয়ে তোলা এবং শহুরে যান্রিকতা, সাংসারিক টানাপোড়েন থেকে গল্পের সুন্দর পরিনতির দিকে নিয়ে ক্ষেত্রে লেখকের পারদর্শীতা প্রশংসনীয়।
🔰হিজল বনের গান মানুষের সবচেয়ে প্রিয় আশ্রয় মা। তার কবরের পাশে সন্তানের এই আজাহারি যে কাউকে মাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
🔰বিশ্বাস ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ- এই উক্তির ই বহিঃপ্রকাশ যেন এই গল্প।যেখানে ধর্মান্ধ গ্রামবাসীর ধর্মান্ধতার সুযোগ নেয় এক ভন্ড পীর।সাথে মতি চরিত্রের মধ্যদিয়ে লেখকের নিরব বার্তা-স্রোতের বিপরীতে থাকা মানেই তুমি ভুল নও।
🔰সুখ হারাম কখনো প্রকৃত সুখ বয়ে আনতে পারে না। হালালের মাঝেই প্রকৃত সুখ,এতেই আত্নার প্রশান্তি।জীবনে চলার পথের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ত লেখকের গল্প শেষের প্রশ্নেই রয়েছে। "এক জীবনে সুখী হতে আর কি লাগে?"
🔰বোধ আল্লাহ কখন কাকে তার পথে কবুল করে নেয় তা কেউ জানে না।গল্পে শাওন চরিত্রের অবতারণা বাউন্ডুলে হিসেবে হলেও ঘটনাপ্রবাহে তার বোধদয় হয়।
🔰বাবাদের গল্প মায়ের মতো বাবারা তাদের ভালোবাসা সরাসরি প্রকাশ করতে পারে না।তাদের ভালোবাসা হয় গোপন কিন্তু গভীর। হয়ত এজন্যই ভালোবাসার ক্ষেত্রে তারা মায়ের তুলনায় Underrated. গল্পে লেখক এক মধ্যবিত্ত বাবার উচ্চবিলাসি সন্তানের বোধদয়ের গল্প সার্থক ভাবে তুলে ধরেছেন।
🔰টু-লেট মধ্যবিত্তরাই ধরনীর আসল রূপ দেখতে পায়।সেই রূপেরই খন্ডচিত্র এই গল্প।
🔰মহীয়সী এটি পুরো বইয়ের মাঝে হোসেন এর সেই "ভিনগ্রহের আগন্তুক" এর মতো।সম্পুর্ন আলাদা একটি গল্প।আর এই গল্পেই সম্ভবত লেখকের লেখক সত্তার সর্বোচ্চটা প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি,"ভিনগ্রহের আগন্তুক" এর মতো লেখালেখির অন্যান্য শাখাতেও প্রিয় লেখকের বিচরণ খুব শীঘ্রই হবে।ইনশা আল্লাহ।
🔰সফলতার সমাচার ইসলামের সৌন্দর্যতা খুব সুন্দরভাবে এখানে লেখক তুলে ধরেছেন।অর্থ আর খ্যাতি অর্জনই সাফল্য নয়।পাশপাশি নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আর আপসহীনতা প্রকাশ পায় আয়িশার কন্ঠে-" আমার ধর্ম আমার স্বকীয়তা। স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে সফল হওয়াকে আমি প্রকৃত সফলতা ভাবতে নারাজ।"
জীবন গল্পের মতো না হলেও জীবনের গল্পেরই সার্থক সমাহার এই বই।গল্প বিন্যাস ছিলো অসাধারণ। এই বইতে অন্য এক আরিফ আজাদ স্যারকে পাওয়া গিয়েছে।আশা করি, তার হাত ধরেই হয়ত নতুন কোনো চরিত্রের সৃষ্টি হবে যেখানে দুঃখ,রোমাঞ্চ,আনন্দ সবকিছু সাথে অবাধ মেলামেশার স্থান পাবে হালাল মেলামেশা।যা তরুণদের আকৃষ্ট করবে ভীষণভাবে।পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে বাচাবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ পরস্পর বিরোধী ভাবে উপস্থাপিত।যেখানে দাড়ি-টুপি দেখলেই জনমনে ভয় জাগে - এ নিশ্চয়ই দেশের শত্রু বা জঙ্গি।যা কোনোকালেই কাম্য ছিলো না।এক্ষেত্রে "আসমানের গল্প"তে লেখকের নিরব কিন্তু দৃঢ় প্রতিবাদ- "যে লোক টুপি বেচে,যে লোকের মাথায় টুপি,মুখে লম্বা দাড়ি,সে লোক মিথ্যে বলতে পারে?সে লোক ছেলেধরা হতে পারে?" মন ছুয়ে গেছে।
লেখক চৌদ্দটা টপিকের উপর গল্প লেখার চেষ্টা করেছেন। টপিকগুলো নিঃসন্দেহে সুন্দর ও শিক্ষণীয়। সাবলীলভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বইটা পড়ে শেষ করেছি। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
লেখক যেহেতু গল্পগ্রন্থ বলছেন, সেদিক দিয়ে বললে, কিছু গল্প পুরোপুরি গল্প হয়নি। কোনো একটা ঘটনার উপর ব্যাসিস করে গল্প লিখেছেন, যেগুলোতে চরিত্রের স্পষ্ট প্রোফাইল নেই, চরিত্রের পরিণতি নেই। একটা ঘটনা যেভাবে শেষ হয় সেভাবে শেষ হয়েছে। আবার কিছু গল্পে এই ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক ও সুন্দর উপস্থাপিত হয়েছে।
লেখকের মতো আমিও মনে করি, ইসলামি সাহিত্যও বাংলা সাহিত্যের একটা অংশ। এই বইটাও তেমন বাংলা সাহিত্যের একটা বই। লেখকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। এই ধরনের বই থেকে পাঠকেরা ভালো কিছু শিখতে পারবে এবং বেশ উপকৃত হবে বলে মনে করি।
তবে 'লেখকের কথা' অংশে লেখকের দ্বিমুখী বক্তব্য আমার পছন্দ হয়নি। সেখানে তিনি এই বই লেখার পেছনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন। ইসলামি সাহিত্যকে কেন বাংলা সাহিত্য বলা হয় না— এই আক্ষেপ থেকেই ইসলামি জীবনধারার গল্প লেখার চেষ্টা করেছেন। এটা ��মার কাছে ভালো লেগেছে। ইসলামি জীবনধারার গল্পের বই আরো রচিত হোক, এটাই কামনা করি। ইসলামি জীবনধারার লেখা কেন বাংলা সাহিত্য বলা হবে না— এটা আমারও প্রশ্ন!
কিন্তু লেখক ইসলামি সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন, আবার সেটাকে উৎখাত করার মনোবাসনাও ব্যক্ত করেছেন। তাই তার এই প্রচেষ্টা কম্পিটিটিভ মনে হয়েছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে বাংলা সাহিত্য রচিত হচ্ছে, ���ার ভেতর সমাজের সব উপাদানই আছে আছে। যারা সাধারণ ধারার গল্প লেখেন সেখানেও অনেক ধর্মীয় সংস্কৃতি উঠে আসে। অর্থাৎ আমাদের দেশের জীবনাচারই বইয়ের পাতায় লিখিত হচ্ছে।
লেখক আরিফ আজাদ দাবি করেছেন, বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষের জীবনাচার বাংলা সাহিত্যে স্থান পায়নি। এটা কীভাবে যৌক্তিক? তাহলে অন্য লেখকেরা কি এলিয়েনদের জীবনাচার নিয়ে গল্প লিখছেন?
তিনি যেটা বলতে পারেন, ইসলামি জীবনাচার নিয়ে আমাদের সাহিত্য ততটা সমৃদ্ধ নয়। তিনি সেই ধরনের ইসলামি জীবনাচার সম্বলিত সমৃদ্ধ সাহিত্য প্রত্যাশা করেন, আমি নিজেও করি।
এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশী সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে গল্প লিখবেন, সেখানে ধর্মীয় সংস্কৃতি থাকবে এটা স্বাভাবিক ও ভালো একটা উদ্যোগ। কিন্তু লেখক ইসলামি সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্য হিসেবে গণ্য করছেন, অথচ তার ভাষ্য হলো— ইসলামি সংস্কৃতির গল্প, উপন্যাস দিয়ে বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য রচনাগুলো ঢেকে দিতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনার উদ্দেশ্যে গণ্ডগোল হয়ে গেল না?
সাধারণ লেখকেরাও এই বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন, বাঙালি সংস্কৃতি আর জীবনদর্শন পর্যবেক্ষণ করেই লিখে যাচ্ছেন। সেটাকে মুছে ফেলা অতই সহজ? তারা যা লেখেন, আরিফ আজাদও তাই-ই লিখবেন। পার্থক্য শুধু— কুরআন-হাদিস থেকে মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যেটা শিক্ষণীয় ও ইতিবাচক ব্যাপার। আলহামদুলিল্লাহ। তাছাড়া যাদের প্রতি কম্পিটিটিভ মনোভাব পোষণ করেছেন, তিনি তাদের লেখা পড়েই সাহিত্যের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
লেখক আরিফ আজাদ যদি মনেই করেন, ইসলামি সাহিত্যও বাংলা সাহিত্য। তাহলে অন্যান্য লেখকেরাও তার সহযোদ্ধা, শত্রু নয়। সেখানে সহযোগী মানসিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের বাংলা সাহিত্য সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
যখন তিনি ইসলামি সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্য থেকে আলাদা করে দেখবেন, তার লেখাকে প্রতিযোগী করবেন, সেটা একটা নির্দিষ্ট পাঠকদের জন্যই নির্ধারিত হবে। অন্যদিকে বাংলা সাহিত্য হতে হলে সকল বাংলাভাষীর জন্য হতে হবে। সেখানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বই পড়বে, শিক্ষা নেবে। বুজুর্গ ভাব ধরে থাকলে তো বাংলা সাহিত্যের ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। তখন ইসলামি সাহিত্য কেবল ইসলামের সাহিত্য হয়েই থাকবে।
ইসলামি সাহিত্যকে যারা বাংলা সাহিত্য মনে করেন না, তাদের চিন্তাধারার সাথে লেখক আরিফ আজাদের চিন্তাধারার পার্থক্য পেলাম না।
সাহিত্যরস দিয়ে জীবনের রংবেরঙের প্রতিচ্ছবি কিছু অণুগল্পের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে জীবন যেখানে যেমন বইটি।প্রতিটি অণুগল্পের মধ্যে রয়েছে মুমিন বিশ্বাসী ও বিবেকবান পাঠকদের জন্যে চিন্তার খোরাক এবং আলোর বার্তা।
গল্পগুলোতে প্রিয় লেখক বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি,গ্রামীণ চিত্র রং তুলির সাজে যেমন তুলে ধরেছে তেমনি কংক্রিটের যান্ত্রিক জীবনও টেনে এনে বৈচিত্রময় জীবনের খন্ডচিত্র এবং অনুভূতির কথামালা এক একটি গল্পে বুনেছেন। যাতে ফুটে উঠেছে পবিত্র ভালোবাসার বাঁধন, ধৈর্য, ভরসা, চাওয়া, আত্নত্যাগ, অন্ধবিশ্বাস, বিবেকবোধ।
লেখক তুলে ধরেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী, বাবা ও মহীয়সী নারী মায়েদের গল্পগুলো এবং দেখিয়েছেন প্রকৃত সুখ এবং সফলতার পথ। এক একটি গল্পে এমন সব আলোর বার্তা সুনিপুণ ভাবে সাহিত্যের নির্যাস দিয়ে প্রিয় লেখক 'জীবন যেখানে যেমন' বইটি লিখেছেন।
আমরা সাহিত্য পড়ে মানব মনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এবং মানবজীবনের শাশ্বত ও চিরন্তন অনুভূতি উপলব্ধি করলেও অধিকাংশ কল্পনানির্ভর সাহিত্যে বড় অংশজুড়ে থাকে রোমান্টিক প্রেম ভালোবাসার বার্তা তা শিখি আর পাই সাময়িক বিনোদনের খোরাক। কিন্তু 'জীবন যেখানে যেমন' বইটিতে রয়েছে পবিত্র রোমান্টিক প্রেম ভালোবাসার উপখ্যান। গল্প গুলো পাঠককে যেমন বুঁদ করে ঘোরে রাখবে তেমনি গল্পের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে জীবনের কিছু প্রয়োজনীয় পাঠ।
সবশেষে বলবো, আমরা সাহিত্যপ্রেমী বইপড়ুয়ারা রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিম, বিভূতিভূষণ, শরৎ, মানিক, সুনীল ও হুমায়ুন প্রমুখদের গল্প উপন্যাস পড়ে পড়ে ইসলামি জীবনদর্শন নিয়েও যে অণুগল্প ও সাহিত্য রচিত হতে পারে তা যেন আমরা ভুলেই গেছি। ইসলামি সাহিত্যের সাথে সেই পরিচয় বোধটাই জাগ্রত হবে 'জীবন যেখানে যেমন' বইটি পড়ে।
বই : জীবন যেখানে যেমন লেখক : আরিফ আজাদ প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন মূল্য : ২৩৭ টাকা
রিভিউ লেখক : আঃ কাহ্হার (সিয়াম)
This entire review has been hidden because of spoilers.
আরিফ আজাদের “জীবন যেখানে যেমন” গল্পে লেখক ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ে আমাদের জীবনের বিভিন্ন স্তরের গল্প, নিজস্ব ভংগিমায় উপস্থাপন করেছেন৷ আমি আমার পছন্দের কিছু “ জীবনের গল্পের” সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখছি। # অশ্রু ঝরার দিন- এখানে একজন মায়ের তার মৃত ছেলের প্রতি মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। সেই মা জানেন যদি তার সন্তান চলে যায়, তাহলে পৃথিবী থেমে থাকে না বরং আখিরাতের জন্য তাকে বেচে থাকতে হয়৷ “মানুষ ভাবে, সে মারা গেছে। আমি বলি, সে হারায়নি—সে আমার দোয়ার মধ্যে বেঁচে আছে।” # আসমানের আয়োজন- একজন সহজ সরল টুপি বিক্রেতার আখিরাতের প্রস্তুতি, অনেক ত্যাগের পরে সে তার স্বপ্নের মসজিদ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। “যে রিজিক আসমান থেকে আসে, তার লাগি এত পেরেশানি কিয়ের!?” # চাওয়া না চাওয়া - একজন মা যখন বারবার কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে সমাজের ঘৃণা সহ্য করে। এ সমাজ হয়তো একজন কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করে কিন্তু আল্লাহ তা’আলা বলেছেন “তোমরা জানো না তোমাদের জন্য কোনটি কল্যাণকর” সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, সন্তান মানেই পরীক্ষা। # হিজল বনের গান - একজন মৃত মায়ের জন্য তার সন্তানের আকুতি। মা বেঁচে আছেন এবং তার সাথেই আছেন। # টু লেট - মধ্যবিত্তের হাজারো স্বপ্ননিয়ে এই গল্প সাজানো। একজন মধ্যবিত্তের আশা ভঙ্গ এবং তার ছোট স্বপ্নের মাঝে বড় বাধা। # মহীয়সী - এই শব্দটির মাধ্যমে প্রকাশ পায় একজন মায়ের আত্মত্যাগের কথা। “যে শুধু জন্মই দেন না, তিনি গড়ে তোলেন একটি পূর্ণ জীবন” আরো কিছু গল্প বাকি আছে সেগুলো সুন্দর, তবে রিভিউ অনেক বেশি বড় হয়ে যায়। আমার ব্যক্তিগত মতামত ৪.৬/৫
জীবন যেখানে যেমন বইটিতে আছে এমন সব শিক্ষণীয় গল্প, যেগুলো বাস্তব জীবনের সঙ্গে যেন হুবহু মিলে যায়। প্রতিটি অধ্যায়ে লেখক ছোট ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঠককে আলোর পথে চলার বার্তা দিয়েছেন। গল্পগুলো যেমন বাস্তব, তেমনি চিন্তাকে নাড়া দেয়।
এই বইটি পড়ে আরিফ আজাদের মোট পাঁচটি বই পড়া হয়ে গেল। প্রতিটি বইয়ের মতো এখানেও তার লেখার গভীরতা ও স্পষ্টতা প্রশংসার যোগ্য। তিনি নিঃসন্দেহে একজন অসাধারণ লেখক, যিনি পাঠকের হৃদয়ের গভীরে পৌঁছাতে পারেন।
❝এই প্রেম, ভালোবাসা❞ নামের অধ্যায়টি বিশেষভাবে মনে দাগ কেটেছে। একজন স্ত্রী কীভাবে নিজের স্বামীকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে, অচেনা পরিবেশকে আপন করে নিতে পারে, তা অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভালোবাসার সৌন্দর্য ঠিক কতটা পরিপূর্ণ হ��ে পারে, এই অধ্যায়ে তার এক অনন্য উদাহরণ আছে।
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয় কি না, তা জানা না থাকলেও বৃষ্টি আমাকে বরাবরই টানে। তবে সেই টানের মাঝেও কখনও কখনও বিক্ষিপ্ত স্মৃতি আর অজানা কষ্ট এসে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
শুরুর অধ্যায় ❝অশ্রু ঝরার দিনে❞ পড়ে মনে হয়েছে লেখক যেন বাস্তব জীবনের কষ্ট ও সামাজিক কুসংস্কারকে গল্পের ছায়ায় তুলে ধরেছেন। যেন একটা নিরব আহ্বান জানিয়েছেন, এসব ভ্রান্তিকে ছুঁড়ে ফেলে নতুন এক মানবিক সমাজ গড়ার জন্য।
জীবন গল্পের মতো হয় না,আবার মাঝে মাঝে জীবন গল্পের চেয়েও বেশি গল্পময়।শিল্পী তার শব্দের বুননে এঁকে যায় গল্পের রং,আর জীবনের বেলায় সাক্ষাৎ শিল্পীই যেন হয়ে ওঠেন গল্পের রং।
ঢেউয়ের উত্থান আর পতনের মতো জীবনের গতিবিধিও ভীষণ চঞ্চলা কোথাও তার ভরা বর্ষা,কোথাও কাঠফাটা রোদ্দুরে তার বেদম তৃষ্ণা।কোথাও সে সারি সারি ঝাউ-পলাশ আর বাবলা গাছের বন,কোথাও যেন সে পায়ের তলায় কড়কড়ে উত্তপ্ত বালুর ধু-ধু মরুভূমি!কখনো তার চোখভরা বিস্ময়,কখনো সে আকস্মিকতায় ভীষণ আহত!
জীবনের দুটো তীর এক তীরে কেউ সার্থকতায় হাসে,অন্য তীরে কেউ হয়তো হতাশায় পর্যুদস্ত।কেউ হয়তো জীবনে বিলীন হওয়ার মাঝেই খুঁজে নেয় সুখ,কেউ সুখ খুঁজে পায় অনন্ত জীবনের স্রোতে অবগাহনে।জীবন একটাই কিন্তু কী ভীষণ আলাদা তার বয়ে চলার ধরন!
একটা জীবন ভিন্ন ভিন্ন স্রোতে,ভিন্ন ভিন্ন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়৷ অথবা,কখনো কখনো আমরাও তার সুনিপুণ শিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হই।কিছু গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে জীবনের একটা প্রতিচ্ছবি।সেই প্রতিচ্ছবিতে দেখা যাচ্ছে জীবনের অনেকগুলো রূপ,অনেকগুলো বাঁকা জীবন মেলে ধরেছে তার অগুনতি ডালপালা-জীবন যেখানে যেমন🌸
~এতোসুন্দর বর্ণমালার দিন রেখে ঢাকা চলে যেতে হবে ভাবলেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে🙂 -২২.০৬.২৪🌼
জীবন মানেই সংগ্রাম। বলা যায় এটি একটি রণক্ষেত্র। এই জীবন নামক রণক্ষেত্রে রয়ে যায় কতক রকমের গল্প। সেই গল্পে থাকে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ আনন্দ-বিষাদের মতো হাজারো রকমের অনুভূতি।
আরিফ আজাদ স্যার, বর্তমান তরুণদের কাছে জনপ্রিয় একজন কলমের সৈনিক। তার প্রতিটি লিখায় পাওয়া যায় যুবক-যুবতী থেকে ধরে বয়োবৃদ্ধ লোকদের সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আকুলতায় ভরা দ্বীনের দাওয়াত।
❝জীবন যেখানে যেমন❞ আরিফ আজাদ স্যারের লিখা আরেকটি বই। তবে এবার বইটিতে প্রকাশ পেয়েছে ভিন্নধারার গল্প। জীবন থেকে নেওয়া এই গল্পগুলোর এক সম্মিলিত রুপ হচ্ছে ❝জীবন যেখানে যেমন❞ বইটি।
বইটিতে লিখা হরেক রকম গল্প, যেগুলো জীবন নামক রণক্ষেত্র থেকে নেওয়া। এই গল্পগুলো পড়ার পাশাপাশি পাঠক-পাঠিকারা খুব সহজে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবে গল্পের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মূল বিষয়বস্তু। চলার পথে এই গল্প থেকে পাওয়া মূল বিষয়বস্তু খানিকটা হলেও ভাবাতে সক্ষম হবে।
সর্বোপরি একটা কথাই বলবো, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যেন এই বইয়ের উসিলায় আমাদেরকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করেন, সেইসাথে বইয়ের লেখক আরিফ আজাদ স্যার কে যেন উত্তম নিয়ামত দিন, এই কামনাই করি। ভবিষ্যতে উনার কলমের ধারা এভাবেই অব্যাহত থাকুক।
"যে রিজিক আসমান থেইকা আসে, তার লাগি এতো পেরেশানি কিয়ের"
"আসমানের আয়োজন" গল্পটা ছিল গ্রামের এক বৃদ্ধ টুপি বিক্রেতা জমিরুদ্দিন চাচাকে নিয়ে। তিনি গ্রামের সামান্য একজন টুপিবিক্রেতা হয়ে স্বপ্ন দেখেন মসজিদ তৈরির। সে উদ্দেশ্যে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে একখানা জমিও কিনে ফেলেন। ছেলেকে সাথে নিয়ে সেই জায়গায় একটি মাটির মসজিদ তৈরি করে ফেলেন। নয়ন ব্যাপারী তাকে এই মসজিদ তৈরি বাদ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার কথা বলায় তিনি প্রতিউত্তরে বলেছেন, "যে রিজিক আসমান থেইকা আসে, তার লাগি এতো পেরেশানি কিয়ের"। জমিরুদ্দিন চাচার মৃত্যুর পর তার বানানো মসজিদের কি হল? গল্পটা সেদিকেই এগিয়েছে।
এরকম ১৪টি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে "জীবন যেখানে যেমন" বইটি।
কিছু কিছু গল্পো এতটাই প্রানবন্ত মনে হয়েছিল যেন তা আমার জীবনের সাথে মিশে আছে, তার মধ্যে একটি হল "বাবাদের গল্প" গল্পটি।
বই - জীবন যেখানে যেমন লেখক - আরিফ আজাদ রেটিং - ৪.৫/৫
বঙ্গীয় সাহিত্যে জগতকে 'ম্যাগনিফায়িং গ্লাস'দিয়ে খোঁজ করলেও বাংলা সাহিত্য ঢঙ্গে, ইসলামিক অবয়ে চিরাচরিত জীবনের গল্প বলার লেখক খুঁজে পাওয়া প্রায় দুষ্কর। কারন আমাদের তথাকথিত সাহিত্য জগতের ক্ষুদ্রাংশ বাদে পুরোটাই মূলত অবৈধ প্রেম কাহিনী আর কাল্পনিক রোমাঞ্চ নির্ভর। লেখক আরিফ আজাদ পাঠকদের এখান থেকে বের করে এক সময় হারিয়ে যাওয়া ইসলামিক আদলে বাংলা সাহিত্যের গল্পকে নতুন রুপে হাজির করার স্বাদ দিতে চেয়েছেন। প্রতিনিয়ত স্রতে ভেসে যাওয়া জীবনকে ভিন্ন রুপে চিন্তা করতে শিখিয়েছেন, যে চিন্তা বাঁধহীন আধুনিকতায় ডুবে যাবার বদলে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে। ছোট গল্পের সমাহার কখনও গ্রাম্য জীবনের চিরাচরিত ঘটনা কেন্দ্র করে কখনও আবার শহুরে ব্যাস্ততার সাংসারিক আড়ালে, কখনও আপনজনকে হারাবার বেদনা বাস্তব চিত্র দিয়ে, কখনও ভালবাসার মানুষের কাছে নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করে। আর এ সকল ঘটনার পেছনে এক আদর্শ দাড়িয়ে, যে আদর্শ মানব রচিতের বাইরে, যার অভাব আজ আমাদের জীবনের পরতে পরতে।
জীবন যেখানে যেমন বইটিতে রয়েছে শিক্ষনীয় গল্প, প্রতিটা গল্প বাস্তব জীবনের সাথে মিলে যাবে। লেখক বিভিন্ন ছোট গল্পের মাধ্যমে আলোর ���থে চলার বার্তা দিয়েছেন। এই বইটি ধরে মোট পাঁচটি বই পড়া হলো আরিফ আজাদের, তিনি সত্যিই একজন ভালো লেখক। একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি কতো যত্নশীল হতে পারে, কতোটা আপন করে নিতে পারে একটা অচেনা পরিবেশকে, ভালোবাসা কতোটা সুন্দর হতে পারে তার উদাহরণ রয়েছে ❝এই প্রেম, ভালোবাসা❞ নামক অধ্যায়টাতে। জানি না আসলেই বৃষ্টির সময়ের দোয়া কবুল হয়ে যায় কি! তবে বরাবরই বৃষ্টি পছন্দ ছিলো শুধু বিক্ষিপ্ত মন অন্ধকার স্মৃতি টেনে আনে, অজানা কষ্টের সাথে জানো আমায় আষ্টেপৃষ্টে বাঁধে! শুরুর অধ্যায়টা ❝অশ্রু ঝরার দিনে❞ যখন পড়লাম তখন বুঝতে পারছিলাম বাস্তব জীবনকে লেখক গল্পের রূপে প্রকাশ করেছেন, অসুস্থ সমাজের কুসংস্কারকে মুছে ফেলার ডাক জানিয়েছেন।
জীবন ক্ষণস্থায়ী। বরফ যেমন গলতে গলতে একসময় শেষ হয়ে যায়, আমাদের জীবনও তেমনি সময়ের স্রোতে একদিন মিলিয়ে যায়। আচ্ছা, নশ্বর এই জীবনটা কি শুধু ভোগ-বিলাসেই কাটবে? প্রতিদিন মিনারের চূড়া থেকে যে আহ্বান ভেসে আসে— আসো!— আমরা কি সত্যিই সেই আলোর পথে এগিয়ে যাই?
সীমাকে ভালোবেসে করেছে পূজা, ভালোবেসে হয়েছে দাস, তোমার অন্তর আর কারো নয়, সে এক অসীম প্রভুর নিবাস।
এই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা চিরস্থায়ী পরকালের কথা ভুলে যাচ্ছি। অথচ, এপারের সামান্য কষ্টের বিনিময়ে ওপারের অনন্ত শান্তি পাওয়া যায়।
আরিফ আজাদ ইসলামী সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে যে নিরলস পরিশ্রম করছেন, তা সত্যিই অনুকরণীয়। ইসলামের আলোয় তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনতে তাঁর এই প্রচেষ্টা আল্লাহ কবুল করুন।
সারাজীবন গল্পের পিছনে ছুটেছি আমি, ছুটতে ছুটতে বই, মুভি, গেমস, এনিমে সবকিছুই এক্সপ্লোর করেছি৷ কিন্তু আসল গল্প তো জীবনের মধ্যেই নিহিত। জীবনকে দেখার আরেকটা নতুন আয়না হতে পারে এই গল্পের বইগুলো, যারা জীবনকে দেখতে জানে তাদের কাছে লেখকের ভাবনা আর নিজের ভাবনা একই মনে হবে। আর যারা জীবনে দেখতে দেখতে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছেন, আকাশে তাকালে মেঘ ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না তাদের মনের অষুধ হতে পারে এই বই। খুব অবাক হওয়ার মতো বা সাসপেন্স খুব কমই পেয়েছি বইয়ে, কিন্তু পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। পড়ুন বইটা, জীবন বদলাবার সম্ভাবনা আছে।
গতানুগতিক ধারায় বাংলা সাহিত্যের বেশিরভাগ ঘটনাপ্রবাহ হিন্দুয়ানী যেগুলো আমারা বাংলা সাহিত্যের অংশ হিসেবে দেখি । বাংলা সাহিত্যে হিন্দুয়ানী ঘটনাপ্রবাহ বড় কারন বাংলাসাহিত্যের গত দুই শতকের লেখকগন । তবে বাংলায় কেউ ইসলামি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রচনা করলে সেটাকে বাংলা সাহিত্যে না বলে ইসলামী সাহিত্য বলে থাকেন অনেকেই । এই ধারনা থেকে বের করে হয়তে আসতে ভালো সংকলন হচ্ছে 'জীবন যেখানে যেমন'। খুব সাবলীল ভাবেই গল্প বলা হয়েছে, জীবন ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সাথে হয়তো রিলেট করতে পারবেন ।
কবিতার মত শব্দের মূর্ছনাময় গাথুনীর গদ্য (poetry like prose) সমসাময়িক সময়ে চোখে খুব কম পড়েছে। এই বইটি অন্যরকম। মুক্তোর মত শব্দের ঝুনঝুনি গল্পগুলোয় সুখপাঠের এক পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়। কয়েকটি গল্পের আবহ হৃদয় নাড়া দেয়ার মত। যাপিত জীবনের সাদামাটা গল্পগুলো লেখক তুলে এনেছেন শৈল্পিক শব্দের বুননে। সামনের দিনগুলোতে আরো পরিণীত গল্প উপহার দিবেন লেখক ইনশাল্লাহ, এই আশা রাখছি!
বইটা মোটামুটি ভালই লাগলো। এর আগে এই লেখকের কোনো বই আমি পড়িনি, এবারই প্রথম হাতে নিলাম। ইসলামিক আদর্শের ভিত্তিতে বইটি মূলত লেখা হয়েছে, ভাল লেগেছে।
তবে একটা বিষয় ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছুটা বিরক্তি লেগেছে, প্রায় বেশিরভাগ গল্পে মেয়ে চরিত্রের নাম দেয়া হয়েছে একই-'রেবেকা'! মানে আরও তো অনেক নাম আছে দুনিয়ায়!
আসমানের আয়োজন, বাবাদের গল্প নামক গল্পগুলি বেশ ভাল ছিল। বাকিগুলি মোটামুটি ধরণের। বাংলাদেশের সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন দিক গুলির নানা দিক উঠে এসেছে বিভিন্ন গল্পে। গল্পের ধারাগুলোয় ইসলামিক মানসিকতার দিকটা ছিল।
জীবনের সাথে গল্প বিষয়টা দারুন ভাবে জড়িত, জীবন যেখানে যেমনই থাকুক না কেন সেখানে গল্প তৈরি হবেই। জীবনের গল্পগুলো দুঃখের হলেও তা মেনে নিতে হয় মানিয়ে নিতে হয়। বইটিতে এমন কতগুলো গল্প রয়েছে যা আমাদের জীবনের দুঃখের মহূর্তগুলোতে ধৈর্য রাখতে সহায়তা করবে।
This entire review has been hidden because of spoilers.