Jump to ratings and reviews
Rate this book

নক্ষত্রপথিক

Rate this book
Two Science Fiction Novels

218 pages, Kindle Edition

Published November 4, 2020

3 people are currently reading
63 people want to read

About the author

Sumit Bardhan

9 books7 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
14 (51%)
4 stars
7 (25%)
3 stars
5 (18%)
2 stars
1 (3%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 8 of 8 reviews
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,862 followers
August 12, 2020
কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের রচয়িতার সামনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হল এটা বুঝে নেওয়া, যে তাঁর রচনায় বিজ্ঞান কতটা রাখা যাবে, আর কতটা জায়গা নেবে কল্পনা।
সুমিত বর্ধনের লেখা এই বইটি পড়তে গিয়ে মনে হল, লেখক তেমন শক্তিমান হলে এই কূট কিন্তু আপাতগ্রাহ্য সমস্যার একটা সরল সমাধান পাওয়া যায়— যদি বিজ্ঞান ও কল্পনা, দুইয়েরই কেন্দ্রে রাখা যায় মানুষের ভাবনাকে।
আলোচ্য বইয়ে দুটি উপন্যাস আছে। দুটিতেই মানুষকে চলে যেতে হয়েছিল পৃথিবী থেকে বহু-বহু দূরে। সেই নতুন আবাসে যে নতুন সভ্যতা তারা গড়ে তুলেছে, তার প্রেরণা ও পরিণতিই এই দুটি উপন্যাসের উপজীব্য। আঁধারের চক্রে পিষ্ট বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন পেছনে ফেলে এগিয়ে চলার কাহিনি বলেই হয়তো এই বইয়ের এমন নাম।

প্রথম উপন্যাস 'যামল'। এতে দুই যুযুধান সহোদরের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে দুটি গ্রহ— স্বরাজ ও স্বরাট। একই বিন্দু থেকে পথচলা শুরু করেও এই দুই গ্রহের সভ্যতা বিকশিত হয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা মত অনুযায়ী। এই দুই গ্রহের শাসকদের বিরুদ্ধেই মানুষকে খেপিয়ে তুলছে 'পথিক' নামের এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। সে লুকিয়ে আছে এক অন্য গ্রহে। তাকে তুলে আনার জন্য দুই যুযুধান গ্রহই গোপন মিশন পাঠাল সেই তৃতীয় গ্রহে।
তারপর কী হল?
ঘনঘোর অ্যাকশন নয়, বরং গভীর চিন্তনের অবকাশ রয়েছে এই উপন্যাসে। দুই গ্রহের শাসকদের বিভিন্ন পদ থেকে শুরু করে রণতরীর নাম— সবেতেই লেখক একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি প্রযুক্তির খোলস নিয়ে আগ্রহী নন। বরং অন্তরালে চলতে থাকা রিপু ও প্রবৃত্তির টানাপোড়েনে মানুষ নানা পরিস্থিতিতে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়— সেটিই তাঁর বিবেচ্য।
এই উপন্যাসে ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিং অসামান্য। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রভাব এর ওপর বড়ো বেশি। সেজন্যই এই কাহিনি শেষ হয়নি। বরং চিরন্তন এক দ্বিধার সামনে দুই মুখ্য চরিত্র তথা পাঠককে ছেড়ে দিয়েই লেখক থেমে গেছেন।
হয়তো এই কাহিনি তথা দুই যুযুধান গ্রহের সমাজকে অন্তিম পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ভার তিনি আমাদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় উপন্যাস 'তোরণ'। এই কাহিনি এক তীর্থযাত্রার। এক অশীতিপর বক্তার সঙ্গে সেই যাত্রায় শামিল হলেন এক ঐতিহাসিক। তাঁদের কথোপকথনে উঠে এল এই কৃত্রিম গ্রহের ইতিহাস।
কৃত্রিম গ্রহ? কে বানিয়েছিল একে? কেনই বা বানিয়েছিল?
চারটি আলাদা সময়কাল বেছে নেওয়া হয়েছিল মানবজাতির ইতিহাস থেকে। সেই সময়ের ভয়ংকরতম সেনাবাহিনীকে তুলে আনা হয়েছিল এই গ্রহে। গিরি, কান্তার, মরু, পারাবার— এই চার পটভূমি থেকে, চারটি তোরণের মধ্য দিয়ে এই গ্রহে এসেছিল তারা। তাদের জোগানো হয়েছিল মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র। রহস্যময় কোনো মহাশক্তি তাদের পারস্পরিক লড়াই আর মৃত্যুমিছিল দেখে উল্লসিত হতে চেয়েছিল।
তারপর কী হয়েছিল? কে সেই 'পন্থ', যাঁর কথায় সেই বধ্যভূমির জায়গায় আজ গড়ে উঠেছে এক অতুলনীয় সভ্যতা?
এই কাহিনিতে একটি সুস্পষ্ট পরিণাম আছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর এতেও দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরিণাম, আর পথনির্দেশ আছে বলেই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর মনে-মনে খুঁজে নেওয়াই যায়। তবে, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে লেখক কয়েকটি জায়গায়, বিশেষত শেষে, বড়ো বেশি লিখে ফেলেছেন। অতটা ব্যাখ্যা হয়তো না দিলেও হত।

প্রথম উপন্যাসে কয়েকটি মুদ্রণ প্রমাদ এবং দ্বিতীয় উপন্যাসে হঠাৎ-হঠাৎ কয়েকটি পাতা ফাঁকা থেকে যাওয়ায় একটু ঝটকা লাগে। এ-বাদে বইটির মুদ্রণ ও পারিপাট্য দৃষ্টিনন্দন।
নক্ষত্রপথিক শুধুই কল্পবিজ্ঞান নয়। কল্পনার অন্তরালে এই বইয়ের দুটি কাহিনিই নতুন করে আমাদের সামনে ইতিহাস ও দর্শনের কয়েকটি শিক্ষা তুলে আনে। আড়াই হাজার বছর আগের সেই শিক্ষা আজ হয়তো বিস্মৃতির ধূলায় মলিন, কিন্তু তা বিলীন নয়। আমাদের অন্তরে তার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর আশা নিয়েই গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে এই দুটি কাহিনি।
সুযোগ পেলেই পড়ে ফেলুন!
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,862 followers
May 15, 2023
কল্পবিজ্ঞান বা ফ্যান্টাসি ঘরানার পাঠকমাত্রেই সুমিত বর্ধনের নামের সঙ্গে পরিচিত। এপার বাংলায় সাম্প্রতিক কল্পবিজ্ঞান-চর্চা যাঁদের হাতে বিশ্বস্তরে পৌঁছোনোর স্বপ্ন দেখছে, তাঁদের অগ্রপথিক তিনিই।
আর আমরা, যারা এই ধারায় লেখালেখির চেষ্টা করি, তাঁদের কাছে তিনি এক শিক্ষক— যাঁর কাজ থেকে আমরা পাই এই ধারায় লেখালেখির নানা পাঠ।
দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে মনে হল, আলোচ্য বইটি এই দু'ধারার পাঠকের জন্যই অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
এতে মোট দু'টি লেখা আছে। তারা হল,
(১) নক্ষত্রপথিক: ভবিষ্যতের মহাবিশ্বে, কার্যত মানব-সভ্যতার প্রতিনিধি হয়ে ওঠা একটি গ্রহের সামনে এল দু'টির মধ্যে একটি পথকে বেছে নেওয়ার সুযোগ। কী করবে সেই গ্রহের মানুষেরা?
(২) তোরণ: এক আশ্চর্য তীর্থযাত্রায় চলেছে এক গ্রহের ক'জন মানুষ। সেই পথচলারই ফাঁকে ক্রমশ উন্মোচিত হল এক রক্তাক্ত ইতিহাস, আর তার থেকে উত্তরণের জয়গাথা। কিন্তু তারপর?
পাঠকের জন্য এই দু'টি লেখায় যেমন আছে গভীর দর্শন, তেমনই আছে রোমাঞ্চ।
আর আমাদের জন্য আছে স্তম্ভিত করে দেওয়া ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিং। আছে বাংলা সাহিত্য থেকে আত্তীকৃত পরিভাষা ও অন্য খুঁটিনাটি, যা দিয়ে শুধু আজকের নয়, যুগ-যুগান্ত পরের ঘটনা ও চরিত্রকেও ফুটিয়ে তোলা যায়।
সর্বোপরি, সবার জন্য, এই বইয়ে আছে এক আশার বাণী। তা আমাদের বলে, চরৈবেতি!
চলুন, নক্ষত্রের পথে আমরাও এগিয়ে যাই।
Profile Image for Soumen Dey.
6 reviews2 followers
March 1, 2020
∆ নক্ষত্রপথিক ∆
লেখক ~ সুমিত বর্ধন
প্রচ্ছদ ~ কল্পবিশ্ব
পৃষ্ঠাসংখ্যা ~ ১৮০
মূল্য ~ ২২৫ টাকা

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

● সম্পূর্ণ অন্য ধরণের বাংলা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী পড়তে চান? তাহলে পড়ে দেখতে পারেন নক্ষত্রপথিক। অপার্থিব সিরিজের বই 'নক্ষত্রপথিক'-এ পাওয়া যাবে অদ্রীশ বাবুর ভ্রাতুষ্পুত্র এবং যোগ্য উত্তরসূরি শ্রী সুমিত বর্ধন রচিত দু'টি কাহিনী। প্রথম কাহিনী যামল এবং দ্বিতীয়টি তোরণ। যামল এমনই এক কাহিনী যেখানে ভবিষ্যতের মানুষেরা ভাগ হয়ে গেছে দুই ভাগে। এই দুই ভাগ থাকে স্বরাজ এবং স্বরাট নামের দু'টি গ্রহে। এরা পরস্পরকে অত্যন্ত ঘৃণা এবং শত্রুতার চোখে দেখে। প্রবল শক্তিধর দুই গ্রহের শাসনকর্তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তুহিন গ্রহের এক সাধারণ মানুষ, সকলে যাকে পথিক বলে ডাকে। পথিককে অপহরণ করার জন্য দুই গ্রহ থেকেই মহাকাশযান আসে। তাদের মধ্যে কোনও দলের উদ্দেশ্য সফল হয় কিনা, পথিক আসলে কে, স্বরাজ এবং স্বরাটের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত এবং অন্তিম পরিণতি এমন নানা কৌতূহলের উত্তর দেবে যামল। যামলে মহাকাশযানের নাম দিতে সুমিতবাবুর কলম আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে কবিগুরুর কাছে। পাশাপাশি এলবার্ত কাম্যু, রুসো এবং ল্যাটিন প্রবাদের উল্লেখও উঠে আসে সাবলীল দক্ষতায়।

● বইয়ের দ্বিতীয় কাহিনী তোরণ। ঐতিহাসিক চক্ষ এবং অল্লকপ্পের কথোপকথন দিয়ে শুরু হওয়া কাহিনী তোরণ এক মহান সভ্যতার সূত্রপাতের কাহিনী। চারটি ভিন্ন গ্রহ ~ গিরি, কান্তার, মরু এবং পারাবার। এই চার গ্রহের চারটি প্রজাতির ভিন্ন সভ্যতার মিলনস্থল ছিল তোরণ। তোরণ যাঁরা বানিয়েছিলেন, আদৌ সভ্যতাগুলির মিলনের জন্য বানাননি। বরং একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে তারা যাতে বিনষ্ট হয় তারই পথ প্রশস্ত করতে বানানো হয় এই তোরণ। তোরণ কি এবং এই যুদ্ধবাজ সভ্যতারা শান্তির পথ কিভাবে খুঁজে পায় তার এক উজ্জ্বল দলিল তোরণ। সুমিতবাবুর লেখনীতে শব্দের জাদু মনোমুগ্ধকর। নজরুলের লেখা থেকে যেমন তিনি গ্রহের নাম চয়ন করেন তেমনই দর্শনের ধারা তৈরি করতে অবাধে বিচরণ করেন কঠোপনিষদ, মুণ্ডক উপনিষদ, ধম্মপাদ বা আরণ্যক ব্রাহ্মণে। তোরণের কল্পজগৎ নির্মাণে পালি, নাহুতল, ডাহোমি, প্রাচীন আসিরিয় বা প্রাচীন নর্স ভাষার বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

★ বইটির একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল একটি অত্যাধুনিক সভ্যতার ছবি দিয়ে গড়া মনোমুগ্ধকর প্রচ্ছদ। পৃষ্ঠার মান ও মুদ্রণের মান আশানুরূপ। শুধু একটুখানি অপ্রাপ্তির কথা না বললেই নয়। প্রথমতঃ কল্পজগৎ নির্মাণ বা ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে সুমিতবাবুর সমকক্ষ কেউ নেই, কিন্তু চরিত্রনির্মাণে তাঁর সম্ভবতঃ একটু অনীহা আছে। অবশ্য বেশ কয়েকটি চরিত্রের পারস্পরিক বোঝাপড়াকে ঠিকঠাক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে কাহিনীগুলিকে অনেকটাই দীর্ঘায়িত করতে হতো। পরীক্ষামূলক কল্পবিজ্ঞানে হয়তো সুমিতবাবু সেই ঝুঁকিটা নেননি। এটা আমার কোনও অভিযোগ নয়, পাঠক হিসাবে সামান্য অনুযোগ মাত্র। দ্বিতীয়তঃ আর একটি অপ্রাপ্তি হল অলঙ্করণের অভাব। এত সুন্দর কাহিনীতে কয়েকটি অলঙ্করণ থাকলে পাঠক হিসাবে খুব খুশি হতাম। আশা করব সুমিতবাবু পরবর্তী লেখনীতে এই দুই বিষয় নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন।
Profile Image for Mrinmoy Bhattacharya.
225 reviews35 followers
August 22, 2020
বইটিতে দুটি নভেলা আছে - যামল ও তোরণ । গল্পদুটি সম্বন্ধে লেখক ভূমিকায় বলেছেন - ‛ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নেবার পরিবর্তে ইতিহাসের শৃঙ্খলে পুর্নবার জড়িয়ে পড়লে সমাজ কোন পথে এগোয়, সেই প্রশ্ন তোলার কাহিনী যামল । আর তার ঠিক উল্টোদিকে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অতীতকে পিছনে রেখে ভবিষ‍্যতের পথের সন্ধানে পাড়ি দেওয়া সমাজের রূপ কেমন হতে পারে, সেই প্রশ্নের কাহিনী তোরণ ।’

দুটি গল্পেই মানুষকে চলে যেতে হয়েছিল পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে, এক অন্য জগতে । গল্পদুটি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক -

🔸‛যামল’ : এই গল্পে দুই যুযুধান সহোদরের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে দুটি গ্রহ - স্বরাজ এবং স্বরাট । একই বিন্দু থেকে পথ চলা শুরু করেও দুটি গ্রহের সভ‍্যতা বিকশিত হয়েছে ভিন্ন মত অনুসরণ করে । এই দুই গ্রহের শাসকদের বিরুদ্ধেই মানুষকে খেপিয়ে তুলছে ‛পথিক’ নামের এক রহস্যময় ব‍্যক্তিত্ব । সে লুকিয়ে আছে ‛তুহিন’ নামক বরফাবৃত একটি গ্রহে । তাকে তুলে আনার জন্য দুটি যুযুধান গ্রহই গোপন মিশন পাঠালো সেই তৃতীয় গ্রহে। তারপর....

🔸‛তোরণ’ : এই কাহিনীতে এক অশীতিপর বৃদ্ধর সঙ্গে যাত্রায় শামিল হলেন এক ঐতিহাসিক । তাদের কথোপকথনে উঠে এল এক কৃত্রিম গ্রহের ইতিহাস । কৃত্রিম গ্রহ কারা বানিয়েছিলেন? কেনই বা বানিয়েছিলেন?
চারটি আলাদা সময়কাল বেছে নেওয়া হয়েছিল মানবজাতির ইতিহাস থেকে । সেই সময়কালের ভয়ংকরতম সেনাবাহিনীদের তুলে আনা হয়েছিল এই গ্রহে । গিরি, কান্তার, মরু ও পারাবার - এই চার পটভূমি থেকে চারটি তোরণের মধ্যে দিয়ে এই গ্রহে এসেছিল তারা । তাদের যোগানো হয়েছিল মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্র । তাদের পারস্পরিক লড়াই আর মৃত‍্যুমিছিল দেখে উল্লাসিত হতে চেয়েছিলেন কোনো রহস‍্যময় মহাশক্তি । তারপর....

এই সংকলনে কল্পবিজ্ঞানের ‛কল্পনা’ এবং ‛বিজ্ঞান’ নয়, তার পরিবর্তে মুখ‍্য হয়ে উঠেছে মানুষের মনস্তত্ত্ব, চিন্তা-ভাবনা । টানটান থ্রিলার নয়, বরং পড়তে পড়তে থেমে গিয়ে আমাদেরকে ভাবতে বাধ‍্য করে এই গল্পদুটি । লেখকের কলমে ‛ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিং’ অনবদ্য, যা পড়তে পড়তে চোখের সামনে ফুটে উঠেছে নতুন জগতের ছবি । কল্পগ্রহের বিভিন্ন নামকরণের বিষয়ে লেখক আশ্রয় নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের কাছে । পাশাপাশি এলবার্ত কাম‍্যু, রুশো এবং বিভিন্ন ল‍্যাটিন প্রবাদের উল্লেখ উঠে আসে লেখকের কলমের দক্ষতায় ।
Profile Image for Shamik.
216 reviews7 followers
July 14, 2022
দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনী। যামল ও তোরণ। ভালোই লেগেছে পড়তে। তবে আমার মনে হয়েছে কাহিনী দুটিই যতোটা না কল্পবিজ্ঞানের তার চেয়ে অনেক বেশি গভীর জীবনদর্শনের।
Profile Image for Sahasrangshu Guha.
36 reviews8 followers
May 19, 2020
নক্ষত্র পথিক - পাঠ প্রতিক্রিয়া
লেখক - সুমিত বর্ধন
প্রকাশক - কল্পবিশ্ব
মুদ্রিত মূল্য - ২২৫
পৃষ্ঠাসংখ্যা - ১৮০


পাঠক হিসেবে আমি নিজেকে অতি সাধারণের পর্যায়ে ফেলি, তার কারণ বইয়ের সংখ্যা নয়, তার কারণ পঠিত বইয়ের মান। আর পাঁচটা থ্রিলার প্রেমীর মতো আমারও অধিকাংশ ক্ষত্রেই মন গিয়ে আটকায় সাধারণ থ্রিলারে। চায়ের সাথে মুচমুচে থ্রিলার না পেলে আমার যেন চলতে চায়না। তো এহেন সাধারণ পাঠক মাঝে মাঝে যে কতিপয় বাদশাহি খানা চেখে দেখেননা তা কিন্তু নয়। বরং সেগুলো একবার পড়ে হজম না হলে বরং কিছুদিন রেখে আবার পড়েন। এই নেশাটাই কাজে লাগল সুমিত বর্ধন বাবুর এই বইটির ক্ষেত্রে। কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত উক্ত বইটি হস্তগত করেছিলাম বইমেলা কুড়ি কুড়িতেই। আনার পরেই পড়াও শুরু করেছিলাম কিন্তু মন ঘুরে গেছিলো অন্যান্য থ্রিলারের দিকে। তখনই বুঝে ছিলাম এ বই আমার বাকি সাধারণ বইগুলোর মতো যখন তখন ২ পাতা পড়ে রেখে দিলে চলবেনা। অতএব এই আগের সপ্তাহান্তে বসলুম ব্যাটাকে বাগে আনতে।

বললে বিশ্বাস করা শক্ত যে, ‘শক্ত’ ভেবে আগেরবার যাকে দূরে সরিয়ে ছিলাম এবার তার খোলা ভেদ করে শাঁস আস্বাদনের মজা পেলাম অচিরেই। এটাই মজা বর্ধন বাবুর বইতে। একটু সময় লাগে, কিন্তু একবার গভীরে ঢুকে পড়লে শেষ না দেখে (পড়ে) স্বস্তি নেই। দুটি মোট গল্প রয়েছে এই বইতে। ‘যামল’ এবং ‘তোরণ‘ গল্পদুটোর ব্যাপারে বলতে সবার প্রথমে লেখকের কথাটাই হুবহু তুলে ধরতে ইচ্ছে করছে। ‘ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নেবার পরিবর্তে ইতিহাসের শৃঙ্খলে পুনর্বার জড়িয়ে পড়লে সমাজ কোন পথে এগোয় , সেই প্রশ্ন তোলার কাহিনী যামল । আর তার ঠিক উল্টোদিকে।, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অতীতকে পেছনে রেখে ভবিষ্যতের পথের সন্ধানে পাড়ি দেওয়া সমাজের রূপ কেমন হতে পারে সে প্রশ্নের কাহিনী তোরণ ’।

এবার আসি আমার কথায়। চোখ বন্ধ করে রৌদ্রস্নাত এক সকালের কথা ভাবুন। কেমন হতো যদি কল্পনার ডানায় ভর করে চলে যেতাম সুদূর কোনও এক না জানি কির দেশে। যেখানে রোদ দেয় সূর্য নয় , অন্য এক নক্ষত্র , আকাশে সেথায় দিনের বেলায় দেখা যায় যামল গ্রহকে, মাটিতে সেথায় অজানা গাছের সারি । নদীর তীরে গহীন বনে চড়ে বেড়ায় অজানা সব জানোয়ার। খুব কি আলাদা লাগছে এই নতুন দুনিয়া টাকে । বর্ধন বাবু তাঁর জাদু কলমে পাঠক কে নিয়ে গেছেন সেই নতুন ঠিকানায় যার মর্মস্থলে রয়েছে সেই আমাদের চেনা সমাজ। ভবিষ্যতের অসীম ক্ষমতা নিয়েও মানুষ(নাকি মানুষ নয়) জড়িয়ে পড়ছে আদিম যুদ্ধে। যামল গল্পের এই অজানা দুনিয়ার মধ্যে থেকেও আমাদের খুব পরিচিত সমস্যা-কীর্ণ একটি সমাজকে এঁকেছেন বর্ধন বাবু। অন্যদিকে তোরণে আমার পাচ্ছি আরেক জগতের কথা যেখানে মানুষ অথচ না মানুষেরা অতীতের রক্তাত্ব , কুসংস্কার আচ্ছন্ন সমাজকে গড়ে তুলছে নতুন ভা��ে। ইতিহাসকে বিন্দুমাত্র বিস্মৃতির পথে না ঠেলে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁরা গড়ে তুলছেন নতুন ভবিষ্যৎ। সত্যি গল্পের সার্থকতা বোধহয় এখানেই যে এবই বার বার পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। অচেনা দুনিয়ার মধ্যে হারিয়ে গিয়ে চেনা সমাজটাকে খুঁজে নেবার তাড়নায় বারংবার এই বইয়ের পাতা না উল্টে পাড়া যায়না।

পাঠ প্রতিক্রিয়ার শেষটা করতে চাই একটা প্রশ্ন দিয়ে । জানার আগ্রহে লেখক মহাশয়কে জিজ্ঞাস্য। নতুন দুনিয়া বর্ণনার জন্য আপনি সুনিপুণ ভাবে যে ভাষার মধ্যে সংস্কৃত আর পালির মিশ্রণ ঘটিয়েছেন সেটির কারণ কি তা জানতে ইচ্ছে করছে। উচ্চারণের সুবিধার্থে সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভাষায় অনেক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী । সেই কারণেই কি আপনার এই ভাষার উপর এত যত্নশীল হওয়া ? এখানে অবশ্য প্রকাশক গণকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হচ্ছে যে পাঠকগণের সুবিধার্থে বইয়ের শেষে শব্দকোষ যোগ করার জন্য। নাহলে সত্যি কথা বলতে আমি বেশ কয়েকবার হোঁচট খেতাম আমার সীমিত শব্দ-জ্ঞানের জন্য ।

পাঠক বন্ধুদের খুব করে অনুরোধ জানাবো এই বইটি সংগ্রহ করে পড়ার জন্য। নতুন যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন এই বইয়ের গল্প দুটি।


Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,741 reviews355 followers
July 2, 2025
সুমিত বর্ধনের নক্ষত্রপথিক বইটি যেন বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের এক বোল্ড স্টেটমেন্ট—একসঙ্গে উচ্চস্তরের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, দার্শনিক অন্বেষণ, এবং সাহিত্যিক পরিশীলনের এক দুর্লভ যুগ্মজয়। অপার্থিব সিরিজে প্রকাশিত এই বইতে রয়েছে দুটি উপন্যাস: "যামল" এবং "তোরণ"—যা শুধু কল্পনার রঙে আঁকা নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য মানবিক ও নৈতিক সংকটগুলির প্রতিক্রিয়াশীল রূপ।

"যামল" শুরু হয় দ্বৈত গ্রহ স্বরাজ ও স্বরাট-এর মাঝে চলা এক অন্ধ মহাকাশযুদ্ধ দিয়ে। ভবিষ্যতের দুই সুপারপাওয়ার গ্রহ, যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেরিকা ও জার্মানির ছায়া, একে অপরকে ঘৃণায় গ্রাস করছে। এই যুদ্ধে হঠাৎ মধ্যমণি হয়ে ওঠে তুহিন গ্রহের এক ‘সাধারণ’ মানুষ, যাকে সবাই চেনে পথিক নামে। কিন্তু কে এই পথিক? এক প্রাণী? এক সত্তা? নাকি এক বার্তা?
পথিকের উপর কেন্দ্র করে দুই পক্ষই যুদ্ধবাজ নেশায় মেতে ওঠে—তাকে দখল করতে মহাকাশযান ছুটে আসে। কাহিনির অন্তস্তলে রয়েছে অস্তিত্ববাদী প্রশ্ন, নৈতিক দ্বন্দ্ব, আর এক সত্তার উদ্ভব—যা হয়তো আর্থার সি. ক্লার্কের "Odyssey" সিরিজের পাঠকদের মনে করিয়ে দেবে কিছু চেনা ধ্বনি। মহাকাশযানের নামকরণে এসেছে কবিগুরু; রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বে উঠে এসেছে কাম্যু, রুশো আর ল্যাটিন প্রবাদ। গল্পটি শুধু ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, এক আদর্শের পরীক্ষা।

"তোরণ"—বইটির দ্বিতীয় উপন্যাস—এক মহাকাব্যিক ফ্যান্টাসি, যেখানে চার ভিন্ন গ্রহ (গিরি, মরু, কান্তার, পারাবার) থেকে আগত জাতিগোষ্ঠী জড়ো হয়েছে তোরণ নামক এক রহস্যময় স্থানে। প্রথমে মনে হয় তারা তীর্থযাত্রায় এসেছে, কিন্তু গল্পের গহীনে জানা যায়, তোরণ আদতে তৈরি হয়েছিল এই জাতিগুলিকে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার জন্য।
তবু এই রক্তাক্ত সংঘর্ষের মধ্যেই জন্ম নেয় এক নতুন সভ্যতা, এক উত্তরণ। তোরণ যেন এক আধ্যাত্মিক পোর্টাল, যা যুদ্ধ থেকে শান্তির দিকে নিয়ে যায়।
এই গল্পে উপনিষদ, ধম্মপদ, পালি, নাহুতল, নর্স ও আসিরীয় শব্দশৈলীর ব্যবহার কল্পনার জগতে নতুন ব্যঞ্জনা যোগ করেছে। শব্দের মাধুর্যে, দর্শনের গভীরতায়, আর ভিজুয়াল রচনার বর্ণনায় এই উপন্যাস এক অনন্য উদাহরণ। নজরুল, বৌদ্ধ দর্শন, গ্রহের পুঙ্খানুপুঙ্খ নামকরণ—সব মিলিয়ে তোরণ হয়ে উঠেছে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ‘ঈশপথ’।

বইটির প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ অত্যন্ত মনোগ্রাহী—যথার্থই futuristic। তবে পাঠক হিসেবে একটি ছোটখাটো অনুযোগও উঠেছে—চরিত্রনির্মাণে তুলনায় একটু খামতি। বহু চরিত্র থাকলেও তাদের মনস্তত্ত্বের গভীরে প্রবেশ করেননি লেখক। আবার অলংকরণের অভাবও কিছু পাঠকের জন্য অপূর্ণতা হতে পারে। তবে বিষয়গত বিস্তৃতি ও শব্দ-সম্মোহনের কাছে এই আপাত-অপ্রাপ্তি গুরুত্ব হারায়।

শেষ কথা?
এই দুটি কাহিনী শুধুমাত্র কল্পবিজ্ঞানের ন্যারেটিভ নয়—এরা হল এক মহৎ সভ্যতার প্রতিরূপ নির্মাণের প্রচেষ্টা। ইতিহাসের যেসব ভুল আমরা করেছি—অত্যাচার, ঔদ্ধত্য, যুদ্ধ, নিপীড়ন—এই গ্রন্থ তার ভবিষ্যত পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করে, এবং এক স্পেস-ফিউচারাল ইউটোপিয়া কল্পনার পথ প্রশস্ত করে।

"নক্ষত্রপথিক" কেবল পড়া নয়—এ এক বরণীয় অভিজ্ঞতা। এক মহাবিশ্বের মাঝে বসে, পাঠক হয়ে উঠেন এক যাত্রী, এক স্রষ্টা, এক পথিক।
চরৈবেতি।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Gourab Mukherjee.
164 reviews24 followers
December 31, 2020
এই বই আমার পড়া science fiction genre এর one of the best. বইয়ের দুটো গল্প যা মল আর তোরণ সম্পর্কে অনেকেই review এ বলে দিয়েছেন তাই আমি খাস কিছু বলছিনা।
আমি বলি লেখার ধরন আর পড়ে আমার কেমন অনুভূতি এসেছে সেই নিয়ে।
❄️যামল:
গল্পটি একদম এক অতি ভবিষ্যতে বানানো। লেখক প্রচুর future-tech বানিয়েছেন গল্পের জন্য। যুদ্ধের পরিস্থিতি চারপাশে তাই অনেক high-tech weaponry দরকার, আর একের পর এক এরকম জিনিস লেখক তৈরি করে গেছেন।
🪐প্রতিটা scene একদম masterpiece। হ্যাঁ scene ই বললাম, কারণ এই গল্প বইয়ে পড়লেও আমার মনে সিনেমার মতই চলেছে। কল্পনার VFX আপনার না থাকলে আপনার প্রতি আমার সমবেদনা রইলো।
গল্পের মাধ্যমে পৌঁছানো message টাও দারুন। সব কিছু futuristic হলেও তার মধ্যে একটা human connection খুঁজে পাবেন।

❄️তোরণ:
এই গল্প বস্তুতঃ আগের গল্পের mirror image. এখানে যুদ্ধ যা আছে সব ইতিহাসে বর্তমান একদম বৌদ্ধ ধর্ম লেভেলের শান্ত। চারটে রক্তপিপাসু, যুদ্ধ প্রিয় জাতি এক কাছে জড়ো হয়ে হঠাৎ করে সবাই একসাথে শান্তশিষ্ট হল কিকরে তার গল্প তোরণ।
এই গল্পের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আছে close to nature কিছু scenery। 🏞️এই আপনি পাহাড়ে, তো এই জঙ্গলে, তো এই মরুভূমির মাঝে তো কখনও একদম সাগর সংগমে। এই চারটি পরিবেশকেই লেখক একদম চিত্রানুগ করে তুলেছেন তার ভাষার খেলায়। কিন্তু sci-fi scene কই?
🪐তাও আছে, এই সব প্রকৃতির কাছে থাকা যোদ্ধারা একদিন interdimensional travel করে এসে পড়ল এক গ্রহে। সেখানে তারা হাতে পেল futuristic weapons। সেগুলো আবার তাদের চিন্তা অনুযায়ী রূপ পাল্টায়। লেখক এরকম অনেক scene কে একদম চোখের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আপনার পড়তে পড়তে মনে হবে আপনি একদম যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে সব দেখছেন।
সব শেষে আসি গল্পের টুইস্টে। আপনি পড়তে পড়তে মনে করবেন কেমন যেন সব খাপে খাপে মিলে যাওয়া গল্প। এটা নিয়ে review এ অভিযোগ হাঁকাবো। শেষে দেখবেন লেখক বলেছেন "আমিও চাইছিলাম আপনি ওটাই ভাবুন।" দিয়ে দুম করে সব পাল্টে দিলেন। দারুন লেগেছে সব মিলিয়ে।

🪐To summarize:
আপনার sci-fi যদি ভালো লাগে, আর কল্পনা করতে যদি ভালোবাসেন। (মানে ওই VFX দিয়ে না দেখালে কেঁদে ফেলেন ওরকম টাইপের বলছিনা) তাহলে এই বই আপনাকে একটা (থুড়ি দুটো) নতুন দুনিয়ায় নিয়ে যাবে।
দুদিনে easily সেরে ফেলা যায়। তাই লেগে পড়ুন।

খারাপ দিক: চক্ষ কে মেরে দেওয়াটা ঠিক মানতে পারিনি। 😔
Displaying 1 - 8 of 8 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.