Adwaita Mallabarman (Bengali: অদ্বৈত মল্লবর্মণ) (alternative spelling Advaita Mallabarmana) was a Bengali writer. He is mostly known for his novel Titash Ekti Nadir Naam (English: A River Called Titash) which was published in a monthly named Mohammadi five years after his death.
অদ্বৈত মল্লবর্মণ। গল্পের আড়ালে যিনি নিজের সময়টাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন নিখুঁতভাবে। একজন প্রকৃত শিল্পীর সংবেদনশীল মন নিয়ে যিনি গল্প বুনেছেন আত্মিক সৌন্দর্য নিয়ে। অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিখ্যাত উপন্যাসটা আমি পড়িনি। ছোটোগল্পের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় ছোটগল্প দিয়েই শুরু করেছি। আমি সাধারণত ছোটগল্প পছন্দ করি বৈচিত্র্যের জন্যই। এখানে দশটা গল্প আছে। প্রতিটা গল্পের আলাদা আলাদা স্বাদ। বইটার ফ্ল্যাপে সুন্দর কয়েকটা কথা আছে। হুবহু তুলে দিচ্ছি। "উচ্চাকাঙ্খী বা নীরিক্ষাপ্রবণ গল্পলেখকের ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়ে থাকে, গল্পের মুখোশ তৈরি করতে গিয়ে অনেকসময় মুখশ্রী ঢাকা পড়ে যায়। গল্পের বিন্যাসভঙ্গিতে অধরা থেকে যায় জীবনের মাধুর্য-সুষমা-অভিঘাত। অদ্বৈতর গল্পে সেই মুখোশ তৈরির প্রবণতা নেই। জীবনের গভীর চৈতন্যে ঘা দিতে গেলে যে-আত্মলগ্ন নিঃশব্দ অনুসন্ধান প্রয়োজন, অদ্বৈতর গল্পে তার দেখা পাওয়া যায়। তাঁর রচনাশৈলীর ইঙ্গিতময় অভীপ্সা ও প্রসাদগুণ তারই সাক্ষ্য দেয়।"
এই কথাগুলো আমি সবচেয়ে বেশি অনুভব করতে পেরেছি 'জাল ফেলা-জাল তোলা' গল্পটা পড়ে। সবগুলো গল্পই যদিও অনন্য, তবে এই গল্পটাই সবচেয়ে দীর্ঘ রেশ রেখে গেছে মনে।
* তিতাস পাড়ের জেলেদের সংগ্রামি জীবনের গল্প 'জাল ফেলা-জাল তোলা'। অদ্বৈত মল্লবর্মণ নিজে তিতাসপাড়েরই একটি গ্রামের সন্তান। জেলে সম্প্রদায়েরই। সেই গ্রামীণ সংগ্রামের গল্প তিনি তাই বলে গেছেন নিপুণ সৌন্দর্য ছুঁয়ে। গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর সরলরৈখিক জীবনটা জাত-পাতের বিবাদে জড়িয়ে পড়া, তাদের জেলে-জীবনের সরলরেখা ভেঙে দেয়া ফিশারিজ ব্যাঙ্কের কম-সূদে-ঋণ কিভাবে তাদেরকেই শোষণের অস্ত্র হয়ে ওঠে সেই গল্প অকপটে বলে গেছেন অদ্বৈত। নদীপাড়ের ছোট্ট গ্রামটায় তখন দুঃখ-দুর্দশা ডালপালা মেলছিলো। ব্যাঙ্কের বাবুদের জুলুমের ভয়ে, আতঙ্কে কাটানী সেইসব দিনেই মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ-র মতোন দুর্ভিক্ষ।
এই গল্পটা ১৯৪৬ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। তার মাত্র তিন বছর আগেই সারা বাংলায় আঘাত হানে চরম দুর্ভিক্ষ। হ্যাঁ, পঞ্চাশের মন্বন্তর। মন্বন্তরের সর্বগ্রাসী চেহারা, নীরব-শীতল মৃত্যুর সমান্তরালে জীবন যে কিভাবে চলে যাচ্ছিলো! এত মৃত্যু আর মৃত্যু। ক্ষতি আর ক্ষতি। তবু কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে, সেই স্বাপ্নিক প্রাণটিও একদিন কিভাবে যে ভেসে যায় তিতাসের স্রোতে!
এই গল্পের দুঃখজনক একটা ব্যাপার হলো, মাঝখানের কিছু অংশের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
* ভালো লাগার ভিত্তিতে তালিকা করলে 'জাল ফেলা—জাল তোলা' গল্পের পর কোন গল্পের কথা বলবো তা ঠিক করা যাচ্ছে না। আচ্ছা, আগে আসুক 'বিস্ময়' আর 'তমোনাশের মন' গল্প দুটোর কথা। কারণ এই দুটো গল্পের ফরম্যাট একই। এরপর না হয় 'আশালতার মৃত্যু'র কথা বলা যাবে।
প্রথমে 'বিস্ময়' গল্পের কথা বলি। বিপত্নীক এক স্টেশন মাস্টারের গল্প। নাম শ্রীপতি। স্ত্রী সরযূর প্রতি যার অগাধ শ্রদ্ধা আর নিষ্ঠা। ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মধ্যে এই একটা গুণ আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। বিশ্বস্ততা। সঙ্গীর প্রতি একান্ত বিশ্বস্ততা, গভীর অনুরাগ। চারপাশে এত এত বিচ্ছেদ আর প্রতারণার গল্প নিয়ে বাস করা আমরা যখন মৃত স্ত্রীর প্রতিও এমন শুদ্ধ প্রেমের সমর্পণ দেখতে পাই, অজান্তেই তখন মন কোমল হয়ে ওঠে। কিন্তু জানেন তো, মানুষ কেবলি ভুল করে। শ্রীপতিও তাই করলো। ভেবেছিলো, বিধবা বিনোদিনীর বিরহী গানের সুরে সে নতুন করে অনুভব করবে সরযূকে। তাই গানে মুগ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিয়ে করার। এইটুকু পড়তে গিয়ে বিনোদিনীর জন্য আমার বুক কেঁপে উঠেছিলো। বোকা বিনোদিনী! বিয়ের পর যখন তার বুকের শূন্যতাটুকু পূরণ হয়ে যাবে তখন সে কিভাবে আকুল গলায় বিরহের গান গাইবে? শ্রীপতিকে সুরে আচ্ছন্ন করার জন্য সেই বিরহী সুর সে কোথায় আর পাবে?
* বিস্ময় আর তমোনাশের মন গল্প দুটোর মধ্যে 'বিস্ময়' প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৩৬ এ আর তার দশ বছর পর 'তমোনাশের মন'। এক স্টেশন মাস্টার, তার নিঃসঙ্গতার বেদনা, পারিপার্শ্বিকতা আর স্বপ্নভঙ্গের শূন্যতাকে একই সাথে ভিন্নতা ও অভিন্নতা দিয়ে নির্মাণ করেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ।
শ্রীপতি ছিলো বিপত্নীক আর পরম স্ত্রী-ভক্ত। এদিকে তমোনাশ ভাবে বিয়ে বড়ো ধকল সামলানোর কাজ। তার মনোজাগতিক ভাবনা নানা দিকে ডালপালা গজায়। নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্ব লেগে যায়। 'তমোনাশের মন' গল্পের ভাবটুকু আরো স্পষ্ট, আরো বিস্তারিত। 'বিস্ময়' গল্পে সেটা ছিলো সংক্ষিপ্ত তবে প্রাচুর্যময়। অল্প কথাতেই অনেক কথা। ব্যক্তিগতভাবে 'বিস্ময়' গল্পটা পড়ার সময় আমি বিনোদিনীর গানের কথাগুলো জানার প্রতি আগ্রহবোধ করছিলাম। এই অপূর্ণতাটা এই গল্পে রয়ে গিয়েছিলো। 'তমোনাশের মন' গল্পে তা পূর্ণ হয়েছে। বিনোদিনীকে বিয়ে করার আগে যেই প্রশ্নটা শ্রীপতির মনে জাগার সুযোগ হয়নি, তমেনাশ সে সুযোগ পেয়েছিলো। কাকে চায় সে? বিনোদিনী? না তার গান?
সরল বিনোদিনীর বিহ্বলতার উপর একটা গল্পের শেষ টেনে দিয়ে আরেকটার টেনেছেন তমোনাশের দার্শনিকতায়। যে নিজের ভেতর বিভ্রান্ত।
* 'শান্তলতা গাছের পাতা, গা ঝিমঝিম করে শান্তলতার বিয়ে হবে জমিদারের ঘরে' এই ছড়াটা আমাদের অঞ্চলের। জমিদারের ঘরে বিয়ে হওয়ার পর শান্তলতার কী হয়েছিলো জানা নেই কারো। তবে ব্রিটিশ আমলে যেই আশালতাদের মরে যেতে হয়েছিলো তাদের গল্পটা লিখে গেছেন অদ্বৈত। এক আশালতার বিয়েতে আয়োজন হয়েছিলো বিশাল ভোজের। আরেক আশালতার বিয়েতে এত কাড়ি শাড়ি এসেছিলো যে মেয়েরা ছড়া কাটছিলো, 'আজ আশার অধিবাস, কাল আশার বিয়ে। আশাকে নিতে এলো ঢাকাই শাড়ি নিয়ে।' আরো এক আশালতা ছিলো। যার বরের কাছ থেকে অনেক টাকা পেয়েছিলো বাবা। তার বিয়েতেও মেয়েরা গান গেয়েছিলো। কিন্তু সেই আশালতাদের মৃত্যু হলো কেন? তিনটি মৃত্যুর গল্পের হাস্যকর তদন্ত তুলে ধরে সরকারকে কেন সূক্ষ্ম কৌতুক করলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ? বলছি। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পাঁচ বছর পর প্রকাশিত হয় এই গল্প। বাংলায় দুর্ভিক্ষের করাল থাবা। তখনকার দিনে আশালতাদের মনে হতো, অতীত জীবনে যে প্রাচুর্য্য ছিলো—তা বুঝি কোনো কল্পকথা! অবিশ্বাস্য লাগে তাদের। এক সময় খাদ্য, বস্ত্রেও এত প্রাচুর্যও ছিলো? তখন যদি কিছু জমা করে রেখে দিতে পারতো! এই তীব্র অবুঝ হাহাকার নিয়ে তারা পৃথিবীকে ছেড়ে গেলো যার যার মতো করে। দেশ ও দশে জানলো, কেউ না খেতে পেয়ে, না পরতে পেরে মরে না। সবই পাগলামো।
* এবার মন্বন্তরের আগের বছরের গল্প 'স্পর্ষদোষ'র কথা বলা যাক। কলকাতা শহরের গল্প। শহরের না বলে বরং কলকাতার রাস্তার গল্প বলা যায়। গল্পের শুরু হয় জীবনের অভিজ্ঞতায় পাওয়া এক দর্শনের বর্ণনা দিয়ে। দারিদ্র্য মেনে নিয়ে বাঁচে যে আর দরিদ্র বলে কাঁদে যে—এই দুইয়ের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হয় সেটাই চিত্রায়িত হয়েছে এই গল্পে। "অভাব লইয়া যাহারা বাঁচে, অভাব তাহাদের গা সহা।....... অভাব লইয়া যাহারা কাঁদে, মানুষের বুকে দেয় তাহারা আঘাতের পর আঘাত।" এই হলো, বাস্তবতা। ছোট থেকে বড় প্রতিটা পরিসরে, প্রতিটা প্রেক্ষাপটে এই দর্শন নির্মম সত্য। এবার সেটা অভাবী জীবনের সংগ্রাম হোক বা অন্য কোনো সংগ্রাম। 'স্পর্শদোষ' গল্পে কলকাতা শহরের এক কাগজ কুড়োনো ব্যক্তি হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সাধারণ মানুষের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের প্রতিক। একটা গল্পের মধ্য দিয়ে সময়ের দলিল লিখে রেখে যাওয়া যেন। দারিদ্র্য আর ক্ষুধা কিভাবে একটা মানুষ আর একটা ��ুকুরকে একই শ্রেণিতে নিয়ে আসে সেই চিত্র দেখানো।
* সন্তানিকা গল্পে অদ্বৈত মল্লবর্মণ দেখিয়েছেন নিরাশ্রয় আর নিঃসঙ্গ এক শিক্ষকের বার্ধক্য, ক্ষুধা। একা বেঘোরে পড়ে মরে যাওয়াটাকে যে ভীষণ ভয় পায়। ক্ষুধা যার কাছে বড় অসহ্য। গিন্নিমার ভালোবাসা তার জন্য একপ্রস্থ শান্তির আশ্রয়। এখানে একটা কথা বলি। অদ্বৈত মল্লবর্মণের দশটা গল্পের মধ্যে তিনটারই কেন্দ্রবিন্দু ছিলো ক্ষুধা। কিন্তু কোনোটাই কোনোটার পুনরাবৃত্তি না। বরং ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। প্রতিটা চিত্র এত বেশি জীবন্ত, এমন করুণ!
* 'সাগরতীর্থ' আর 'বন্দী-বিহঙ্গ' গল্প দুটো আপাত চোখে খুব সাদামাটা সরল গল্প। ছোট ছোট উপলব্ধি। জীবন নিয়ে। জগৎ নিয়ে। টুকরো টুকরো কিছু চিত্র। ব্যক্তিগত ভাবনা। দর্শন।
* 'কান্না' গল্পটার মূল চরিত্র গুরুদয়াল। জটিল মনস্তত্ত্ব তার। কী করে, কী চায় কেউ বুঝে উঠতে পারে না। ক্ষুদ্র এক জীবনবৃত্তেও মানুষ কী করে অনেকখানি জটিল আর হিংস্র হয়ে ওঠে, তা দেখা যায় গুরুদয়ালের মধ্য দিয়ে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার ছন্নছাড়া মন। জগতের প্রতি তীব্র আক্রোশ। এক বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর, সেও পারে তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য পুনরায় বিয়ে। প্রেমহীন গুরুদয়ালের সে কী নির্মমতা, কী নিষ্ঠুরতা! শেষ লাইনে এমন অপ্রত্যাশিত মোচড়টা দ্বিতীয়বার পড়ে টের পেয়েছি। বাইরে মানুষ কী ভাবে, আর সে কেন কাঁদে! আমি ভাবি—ভাগ্যিস, কেউ কারো মন দেখতে পায় না!
* একেবারেই ভিন্ন একটা গল্প 'সাঁঝের মজলিস গানের মূল্য'। টোনা-টুনির গল্পের মতো ভাষ্য। 'এক জোলা ছিল। তার গান গাইবার ভারী সখ।' জোলা-জুলির গল্পের শুরুটা এমন। গল্পটাও লোকমুখে প্রচলিত গল্পগুলোর মতোন। কিন্তু এমন একটা গল্পের এমন কাব্যিক নাম কেন? গল্পের শেষ লাইনে হয়তো বুঝতে পারবেন। ১৯২৯ সালে, মাত্র পনের বছর বয়সে গল্পটা লিখেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ।
ছোটগল্প সংকলন পড়তে গিয়ে একেক গল্পে যদি একেক স্বাদ না পাই, ভালো লাগে না। সবগল্প এক সমানে ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। তবু একই ধাঁচের গল্পের পুনরাবৃত্তি পড়তে মন খচখচ করে। মনে হয়, একরকমে একটা মানুষের এত বেশি লেখার দরকার কী? (হাহা) কম লিখবে, বৈচিত্র রাখবে, একেকটা একেক রকম লিখবে। সেই দিক থেকে এই বইটা আমাকে ষোলো আনাই পরিতৃপ্ত করেছে।
'অদ্বৈত মল্লবর্মণ' এর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে যে উপন্যাসটির নাম আপনাআপনি ভাবেই উচ্চারিত হয় সেটি হলো 'তিতাস একটি নদীর নাম'। আমাদের অনেকের ধারনা 'তিতাস একটি নদীর নাম' 'ই অদ্বৈত মল্লবর্মণের একমাত্র রচনা। কিন্তু এই উপন্যাসের পাশাপাশি অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনা করেছেন আরও উপন্যাস। ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, হাস্যরসাত্মক রচনাও আছে তার সৃষ্টিকর্মে।
'গল্পসংগ্রহ' বইটিতে অদ্বৈত মল্লবর্মণের নয় টি ছোটগল্প ও একটি হাস্যরসাত্মক গল্প সংকলিত হয়েছে। যদিও, ধারনা করা হচ্ছে উনার আরও কিছু ছোটগল্প অনাবিষ্কৃত হয়ে গেছে।
বইতে মোট ১০ টি ছোটগল্প সংকলিত। 1. বন্দী বিহঙ্গ 2. সন্তানিকা 3. কান্না 4. স্পর্শদোষ 5. সাগর তীর্থ 6. বিস্ময় 7. জাল ফেলা - জাল তোলা 8. তমোনাশের মন 9. আশালতার মৃত্যু 10. সাঁঝের মজলিস গানের মূল্য
দশটা ছোটগল্পের ভেতর, আমার ভাল লেগেছে 'সন্তানিকা', 'স্পর্শদোষ', 'বিস্ময়' আর 'জাল ফেলা - জাল তোলা' গল্পটি।
বইটির ভূমিকাতে সৌম্য সালেক সবকটি গল্পের ভেতর 'জাল ফেলা - জাল তোলা' গল্পটিকে সবচে জনপ্রিয় আর শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। এই লেখাটা বাস্তবতার উদাহরন আর অদ্বৈত মল্লবর্মণের ব্যাক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা হতে পারে। কারন লেখটা সম্পূর্ন জেলা পাড়াকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আমার কাছে শ্রেষ্ট মনে হয়েছে 'স্পর্শদোষ' গল্পটা। মাত্র দুইটা চরিত্র গল্পে। একজন মানুষ, অপর জন একটি কুকুর। প্রক্ষাপট, মন্বন্তর। 'সন্তানিকা' গল্পটি একজন শিক্ষকের শেষ বয়সের গল্প। তৎকালীন সময়ে, একজন শিক্ষক তার শেষ বয়সে এসে কি পেলেন! এটাই মূখ্য প্রশ্ন গল্পটার। 'বিস্ময়' আর 'তমোনাশের মন' গল্প দুইটি বিপ্রতীপ। তবে, প্লট মোটামুটি এক। এমনকি উভয় গল্পের নায়কের পেশা আর নায়িকার নামও একই। শুধু এতটুকু না, উভয় নায়িকাদের একটি বিশেষ গুণও একই রেখেছেন লেখক। এমনটা সাধারনত দেখা যায় না, যেখানে একই লেখকের স্বল্পপরিসরে লেখা দুইটা ভিন্ন গল্পে এতটা মিল। 'বন্দী বিহঙ্গ' গল্পটার সাথে সাদৃশ্য আছে, বর্তমান সময়ে যারা প্রবাসী। তাদের জীবনের গল্পই যেন রচিত হয়েছে। অদ্বৈত বাবুর রচনার ভেতর, এটাই সম্ভাবত একমাত্র রচনা যেখানে তিনি কোন 'মুসলিম' চরিত্র নিয়ে কাজ করেছেন। যদিও, 'ইদের ছুটি' আর 'রোজার পবিত্রতা' বাদে ধর্মীয় কোন ব্যাপারই উক্ত গল্পে ব্যবহৃত হয় নি। বাকী গল্পগুলোও তার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে সেরা। বইটির প্রকাশক 'প্রকৃতি' আর পরিবেশক হলো 'দ্যু'। বইটার সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভিন্ন দিক হলো বইয়ের শেষে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন পাঠ মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ। যা লিখেছেন 'শান্তুনু কিয়সার', 'হরিশংকর জলদাস', 'ফেরদৌস আরা আলীম', 'মাসউদ আহমদ' আর 'মোঃ সাহাবউদ্দিন'।