আঠেরশাে নব্বই সাল। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুঘুডাঙার জমিদারবাড়িতে ঘটে গেলাে এক দুঃসাহসিক চুরি। জমিদারবাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন বিশাল শিবলিঙ্গের মাথা থেকে সােনার ত্রিপুণ্ড্রক খুলে নিয়ে গেলাে এক বিদেশী চোর। অনাথ ভজনকে কোলেপিঠে মানুষ করেছিলাে ডাকাবুকো লেঠেল লখাই সামন্ত। হঠাৎ করে খুন হয়ে গেলাে সে। গ্রামের মহাজন ব্রজনারায়ণ তিওয়ারির নজর পড়লাে তার ভিটের ওপর। তারপর কী হলাে? ভজন কী বাঁচাতে পারলাে তার ভিটে? ঘুঘুডাঙার মিত্তিরদের জমিদারবাড়ির শিবরাত্রির সলতে ব্রজনারায়ণ মিত্তির আজ থেকে পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান। আবার ফিরেও আসেন ধূমকেতুর মতাে। কোথায় গেছিলেন ব্রজনারায়ণ ? ফিরেই বা এলেন কেন? এদিকে ঘুঘুডাঙায় জড়াে হয়েছে বেশ কিছু সন্দেহজনক চরিত্রের নােক। একজন দাঁতের ডাক্তার, এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী আর দু’জন ছদ্মবেশী সি আই ডি অফিসার। এঁরা কারা? কেনই বা এসেছেন এখানে? কী লেখা ছিলাে সেই চুরি যাওয়া সােনার ত্রিপুণ্ড্রকে? তার খোঁজে কে বা কারা উঁকিঝুকি দিচ্ছে ঘুঘুডাঙায়? রহস্য রােমাঞ্চ ভূত আর মজাদার অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস মিত্রিবাড়ির গুপ্তধন।
অভীক সরকারের জন্ম পয়লা জুন, উনিশশো উনআশি সালে। বেড়ে ওঠা প্রাচীন শহর হাওড়ার অলিগলিতে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, মা স্কুল শিক্ষিকা। রয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পেশায় সেলসম্যান, কর্মসূত্রে ঘুরেছেন পূর্ব-ভারতের প্রায় সব শহর ও গ্রাম। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাসা বেঁধেছেন হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মুম্বাই ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে। শখের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশক। লেখালেখির শুরু আন্তর্জালে ও বিভিন্ন ব্লগে। প্রকাশিত বইগুলো হল মার্কেট ভিজিট, তিতিরপাখি ও প্রিন্সেস (সহলেখক অনুষ্টুপ শেঠ), এবং ইনকুইজিশন, খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, চক্রসম্বরের পুঁথি, ইত্যাদি। বিবাহিত। কন্যা সন্তানের পিতা। ভালোবাসেন ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল, ইয়ারবন্ধু এবং ইতিহাস।
শিবলিঙ্গে লাগানো সোনার ত্রিপুণ্ডক চুরি গেল। তার ফলে মন্দিরে পুজো বন্ধ হল। কেটে গেল একশো ত্রিশ বছর। তারপর ঘুঘুডাঙায় এল বেশ কিছু রহস্যময় চরিত্র। ঘটে গেল ক'টি মৃত্যু। মিত্তির বাড়িকে ঘিরে আবার রহস্য ঘনিয়ে উঠল। কেন? এর সঙ্গে কী সম্পর্ক আছে বহু-বহু আগে ঘটে যাওয়া সেই চুরির? শীর্ষেন্দু'র 'অদ্ভুতুড়ে' সিরিজের উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবেই লেখা হয়েছে এই উপন্যাস। কিশোরপাঠ্য বলেই এতে হাসি, ভূত, রহস্য— সবই মেশানো হয়েছে। তবে সেই সিরিজ তো বটেই, লেখকের অন্যান্য লেখার সঙ্গেও এটি ঠিক তুলনীয় নয়। একবার পড়ার পক্ষে ভালো।
বইয়ের নামঃ মিত্তিরবাড়ির গুপ্তধন লেখকঃ অভীক সরকার প্রকাশকঃ দীপ প্রকাশন মূল্যঃ ২০০/- আলোচকঃ দীপাঞ্জন দাস
বাংলাদেশের গ্রাম ঘুঘুডাঙায় মিত্তিরদের জমিদারবাড়ি থেকে বিজয়া দশমীর রাতে চুরি হল বহুমূল্য সোনার ত্রিপুণ্ড্রক। শিবলিঙ্গের মাথা থেকে এই ত্রিপুণ্ড্রক চুরি করলেন রতিকান্ত মল্লিক। কিন্তু, লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় তিনটি অংশ নিজের কুক্ষিগত করতে পারলেন না। এই ঘটনার পরে পুজো বন্ধ হয়ে গেলো জমিদারবাড়িতে। কিন্তু, এই মন্দিরের সাথে গুপ্তধনের সম্পর্ক কী? আদৌ কি এমন কিছুর সন্ধান আছে এই মিত্তির বাড়িতে? মিত্তিরদের জমিদারীর প্রতিষ্ঠায় বা কীভাবে হল? লেঠেল লখাই সামন্ত খুন হওয়ার পরে তাঁর সামান্য ভিটের দখল নেওয়ার জন্য মহাজন ব্রজনারায়াণ তিওয়ারিই বা কেন এত আগ্রহী? ব্রজনারায়াণ মিত্তির উধাও হয়ে গিয়ে হঠাৎ পাঁচ বছর পরে ফিরে এলেন কেন? তারপরে তাঁর হত্যায় বা হল কেন? গল্পের মধ্যেই পাওয়া যায় দাঁতের ডাক্তার, তান্ত্রিক সন্ন্যাসী, পুলিশ অফিসারদের। প্রফেসর গুপ্তার মতো বিখ্যাত মানুষই বা এইসবে জড়িয়ে পড়লেন কেন? ত্রিপুণ্ড্রকের মধ্যে এমন কি রহস্যবাণী অঙ্কিত ছিল, যার সমাধানে মাষ্টারকেও উদগ্রীব হতে দেখা যায়। সত্যিই কি সেই রহস্য উন্মোচন হবে? এইসব নিয়েই মজাদার অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনি ‘মিত্তিরবাড়ির গুপ্তধন’। আমরা ব্যক্তিগতভাবে এই বইটি ভালো লেগেছে। অন্যান্য পাঠকের ভালো লাগবে বলেই মনে হয়েছে।
মোটের ওপর মন্দ নয়। জগাখিচুড়ী বটে, তবে একবার পড়াই যায়। অভীক সরকার পিশাচ তন্ত্র ছেড়ে শিশুসাহিত্য লিখছেন, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরঞ্চ সাহিত্যিক হিসেবে এখানে তার বহুমুখীতার পরিচয়। তবে গল্প খুব একটা ভালো দাড়ায় নি। আরো চোখে লাগে গল্পে বারংবার টোনাল শিফ্ট, এবং অজস্র ছাপার ভুল।
দেড়শো বছর পূর্বে ঘুঘুডাঙার জমিদার বাড়ির শিব মন্দিরের শিবলিঙ্গের মাথায় বসানো তিনটে সোনার ত্রিপুণ্ড্রক চুরি করে নিয়ে যায় একদল চোর। যাতে অংকিত ছিলো গুপ্তধনের নকশা। দুটি পাত নিয়ে পালায় এক চোর আর বাকিটা রয়ে যায় আরেক চোরের হাতে। দেড়শো বছর পর এসে সেই গুপ্তধন উদ্ধার করতে গিয়ে যজ্ঞ বেধে যায় ঘুঘুডাঙায়। খুন হয়ে যায় দুই লোক। গ্রামে এসে হাজির এক রহস্যময় ডাক্তার আর এক সাধু বাবা। সি আই ডির লোক এসে হাজির। এদিকে দুই ভূতের উপদ্রবে পাগল অবস্থা ভজনের। জয়ন্ত-মানিক, বিমল-কুমার, টেনিদা, ঘনাদা, মামাবাবু আর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ বোতলে ভরে ঝাঁকালে যে জগাখিচুড়ি পাওয়া যায় বইটা মূলত তাই। তবে টাইমপাস হিসেবে ভালোই। রেটিং ২/৫
কাহিনীটা মজাদার,তবে আরো একটু মাজাঘষা করে নিতে পারলে ভালো হত। শীর্ষেন্দু বাবুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের ছায়া থেকে বেরোতে পারেন নি লেখক। এছাড়াও প্রচুর অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার যেগুলোর বাংলা প্রতিশব্দ সহজেই ব্যবহার করা যায়। পদবী দু-একজায়গায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে হয়ে গেছে। এইগুলো বাদ দিলে সুন্দর একটা গল্প।