Jump to ratings and reviews
Rate this book

Khwabnama

Rate this book
Bengal in the 1940s. Having overcome the famine and the revolt of the sharecroppers, Bengal's peasants are uniting. Work is scarce and wages are low. There is barely any food to be had. The proposal for the formation of Pakistan, the elections of 1946, and communal riots are rewriting the contours of history furiously. Amidst all this, in an unnamed village, a familiar corporeal spirit plunges into knee-deep mud. This is Tamiz's father, the man in possession of Khwabnama.

At first glance, Khwabnama is the tale of a harmless young farmhand who becomes a sharecropper and dreams of a future that has everything to do with the land that he cultivates and the soil that he tills. The fabric of his dreams, though, have as much to do with the history of
the land as its future, and as much to do with memories as with hope.

In this magnum opus, which documents the Tebhaga movement, wherein peasants demanded two-thirds of the harvest they produced on the land owned by zamindars, Akhtaruzzaman Elias has created an extraordinary tale of magical realism, blending memory with reality, legend with history and the struggle of marginalized people with the stories of their ancestors.

552 pages, Hardcover

First published January 1, 1996

111 people are currently reading
1967 people want to read

About the author

Akhteruzzaman Elias

27 books240 followers
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তিনি মাত্র দুটি উপন্যাস রচনা করলেও সমালোচকরা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঔপন্যাসিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। এই দুটি উপন্যাসের বাইরে ইলিয়াস মাত্র তেইশটি ছোটগল্প এবং বাইশটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ইলিয়াস সমাজ, রাষ্ট্র এবং জনগণের একজন একাগ্র পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি তাঁর লেখার চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি এবং অবস্থানের প্রতীক হিসেবে সুদক্ষভাবে রূপায়ন করতেন। লেখার সময় তিনি চেষ্টা করতেন ঐতিহাসিকভাবে নির্ভুল থাকতে, ফলে তিনি পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে লেখার অন্তর্নিহিত গুরুত্বকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যুর ফলে তাঁর সৃজনশীল জীবন খুব দীর্ঘা‌য়িত হতে পারেনি, কিন্তু তাঁর লেখাগুলো বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদী সৃষ্টি হিসেবে স্থান পেয়েছে।

Akhteruzzaman Elias was a Bangladeshi novelist and short story writer. Despite the fact that he only wrote two novels, critics consider him to be one of the finest Bengali novelists. Besides these two books, Elias wrote only 23 short stories and 22 essays. Elias was a good observer of society, state, and people as he created his characters symbolising social classes and positions. He always strived to be historically accurate when writing, even if it meant pushing readers out of their comfort zones. His creative life was cut short by a premature death from cancer, but his writings are regarded as Bangla literature classics.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
394 (63%)
4 stars
175 (28%)
3 stars
38 (6%)
2 stars
5 (<1%)
1 star
5 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 96 reviews
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
July 15, 2016
‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’ চলচ্চিত্রটি দেখার পরেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। সিডনি লুমেটের সেই মাস্টারপিস আমায় এতোই অভিভূত করেছিলো, মনে পড়ে, ঠিক করে ফেলেছিলাম যে সেরা কিছু সিনেমা না দেখেই রেখে দেবো, সেরা কিছু বই ফেলে রাখবো অপঠিতই। তাই ফেলে রেখেছিলাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা। বারবার পড়েও ইলিয়াসের ছোটগল্পের প্রতি মুগ্ধতা আমার যায় না। বইয়ের দোকানে চোখের ভুরুর গিট্টু হয়ে, দাওয়াত খেতে গিয়ে উৎসবে মেতে, অফিস ফেরতা রিকশাওয়ালার শার্ট থেকে ভেসে আসা গন্ধের মাঝে ইলিয়াস ব্যাটা নড়াচড়া করে। চাপাতির গণঅভ্যুত্থান বলো অথবা ‘বলবো না- নড়বো না- করবো না- সেলফি তুলবো কেবল’ সিনড্রোমের চিলেকোঠা বলো, হাড্ডি খিজির হয়ে ইলিয়াস কেবল ডাকে। সেই ইলিয়াসকে শেষ করে ফেলি কী করে? খোয়াবনামা তাই আমার পড়া হয় না বহুদিন। উল্টেপাল্টে দেখি প্রথম কিছু পৃষ্ঠা, কিন্ডলে পিডিএফ নিয়ে নাড়াচাড়া করে আবার অন্য ফাইলে চলে যাই। এক জাদুকরের থলের শেষ যাদুটাও বেরিয়ে যাবে, সে আশঙ্কায় খোয়াবনামায় তাই ধুলো পড়ে। এই শালাকে কিছুতেই শেষ হতে দেয়া যায় না।

তবু রোজার মাসে শুরু করে দেই একদিন। অল্পস্বল্প আগাই, খুব বেশি গতি থাকে না। তারপর একদিন এক তারিখ এসে পড়ে, লোকে গুলশানে খেতে যায়। কিন্তু মধ্যবিত্তের পোলার তো আর ওসবের মাঝে থাকা পোষায় না, আবার ইউরো কী কোপার খেলাও মহা বোরিং। আমি মানুষ, এবং মানুষ বলেই, পলায়নপর। একটা শহর যার রাস্তায় রাস্তায় পানি জমে যায় সামান্য বৃষ্টিতে, একটা শহর যেখানে মানুষ কথা বলে যায় এবং কাজ না করে কথাই বলে যায় শুধু, একটা শহর যেখানে রুপবতীরা ঘুরছে উড়ছে রিকশায় আর ফুচকা অথবা চায়ের কাপে কিংবা সামান্য বাসে ওঠাতেই হাসছে মানুষ- সেই শহর আমার, ধ্বসে পড়ে চোখের সামনে।

আমি পলায়নপর হয়ে ডুবে যাই সাদার মাঝে কালো অক্ষরে। ইলিয়াসের খোয়াবনামায়।

সেই কবে ফকির মজনু শাহের দলের মুনসি বরকতুল্লাহ গোরা সেপাইয়ের গুলি খেয়ে কাৎলাহার বিলের উত্তরের পাকুড় গাছে চড়ে বসলো, তমিজের বাপ যতই ঘাড়ের রগ টানটান করে তার খোঁজ করুক- সন্ধান তার মেলে না। তাই বলে কুলসুম তো আর গন্ধ শোঁকা এড়াতে পারে না। চেরাগ আলি ফকিরের নাতনি সে, তমিজের সৎ মা, ফকিরের ওই খোয়াবের উত্তর লেখা বইয়ের দিকে তো মানুষ আর কম নজর দেয় না। তমিজ চরিত্রটা ঘরের স্বপ্নে বিভোর, মাঝির ছেলে, চাষ করে হুরমুতুল্লাহর জমিতে আর বিয়া করতে চায় সেই বুড়োর ঘ্যাগওয়ালা মেয়ে ফুলজানকে, আগেও একবার ফুলজানের বিয়ে হয়েছে। সেই ভূতপূর্ব স্বামী কেরামত নিজেও ঘোরে চেরাগ আলির খোয়াবের অর্থ লেখা ছেঁড়াফাড়া বইটার খোঁজে, তাকে দিয়ে গান লেখায় ইসমাইল। জাতীয় রাজনীতিতে ইসমাইল সক্রিয় মুখ, কালাম মাঝি আর শরাফত মণ্ডল আর মালাউন মুকুন্দ সাহার নজর আরেকটু নিচে, এলাকার জমি- বিশেষত কাৎলাহার বিল- দখলে।

লক্ষ করি, কী আশ্চর্যভাবে একটি মানুষ অথবা গল্প হয়ে ওঠে পুরাণ। পাকিস্তান আর ইন্ডিয়ার জন্ম নিয়ে ইতিহাস নয় উপন্যাস পড়ছি বলে নিজেকে স্মরণ করাই বারবার- তবু দেখি, এমনকি ইতিহাসেও এর চেয়ে বিশ্বস্ত চিত্র পাই না কোথাও। শেষে মুনসির পাকুড়গাছ কোথায় গেলো কে জানে, ঘাড়ের রগ টানটান করেও যে সেটার দেখা পাওয়া যায় না আর। ‘আমি’ নামক কার্বন আর সিলিকনের এই যৌগে শুধু নিদারুণ মুগ্ধতা থাকে। তারকা হতে হলে শ চারেক উপন্যাস লেখা দরকার হয় এই ব-দ্বীপে, ইদানিং শ চারেক স্ট্যাটাস হলেও হয়ে যায়। কিন্তু শরাফত মন্ডল আর কাদের মাঝি আসে আর যায়, উত্তর সিথানের পাকুড়গাছের মুনসি হয়ে ইলিয়াস শালা হাসে। গলায় তার দুটো উপন্যাসে তৈরি শেকল, সেটা সহসা ছেঁড়ার ভয় নেই।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রভূত প্রশংসা করেও সুনীল গাঙ্গুলি বলেছিলেন, ইলিয়াসের দ্বিতীয় উপন্যাসটি, মানে খোয়াবনামা কিছুটা দীর্ঘ ও নীরস। বড় লেখকরাও অনেক সময়ই ঠিক বলেন না, জেনে গেছি।

মিলান কুন্ডেরা যা বলেছিলেন গ্যাবো মার্কেজের ‘শত বর্ষের নিঃসঙ্গতা’ নিয়ে, আমি কেবল সেই কথাটি খানিক বদলে বলি, খোয়াবনামা একটা জারজ উপন্যাস। বাংলা ভাষায় এ ধরনের উপন্যাস আগে লেখা হয়নি আর, এর কোনো বংশ পরিচয় নেই।
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
April 18, 2018
বেশ কঠিন একটা বই। প্রথম ১০০-১৫০ পেজ অনেক জোর করে যদি পড়ে ফেলতে পারেন তাহলে বই শেষ না করে হাত থেকে রাখতে পারবেন না। আমি অনেক এলোমেলো কথা লিখতে চাইসিলাম, কিন্তু মানুষের সুন্দর সুন্দর রিভিউ পড়ে আমার আর লিখতে ইচ্ছা করতেসে না। বই পড়তে অনেক কষ্ট হইছে, তাই এক তারা কম। ওকে বাই।

বিঃ দ্রঃ একটা প্রশ্ন নিয়ে খুব চিন্তায় আছি, কিন্তু কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না। দেশভাগ না হলে আজকে আমাদের অবস্থা কিরকম হত? কেউ যদি এটা নিয়ে চিন্তা করে থাকেন তবে মতামত জানানোর অনুরোধ রইল।
Profile Image for Sujan.
106 reviews42 followers
April 13, 2018
১. চিলেকোঠার সেপাই পড়ে ক’টা দিন বিরতি দিয়েই আবার পড়া হল খোয়াবনামা। টানা ইলিয়াসের মধ্যে ডুবে থাকায় জাদুবাস্তবময় দু’টা মাস কাটানো গেল। অনেক সমালোচকের মতানুযায়ী খোয়াবনামাই ইলিয়াসের সেরা কর্ম, তবে আমি এই দুইটা উপন্যাসের কোন একটাকে অন্যটার চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারছি না। দুইটাই আমাকে প্রচুর ভালো লাগার অনুভূতি দিয়েছে; আর লেখকের লেখার অসাধারণত্ব দুই উপন্যাসেই আমি সমানভাবে পেয়েছি, আর সমানভাবেই বিস্মিত হয়েছি।

খোয়াবনামা পড়তে গিয়ে চিলেকোঠার সেপাই এর সাথে এর সাদৃশ্যগত ব্যাপারগুলো অনিবার্যরূপেই এসে পড়ে। যেমন দুই উপন্যাসেরই পটভূমি উপমহাদেশের ইতিহাসের একটি বিশেষ ঘটনা। চিলেকোঠার সেপাইয়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটা ছিল ঊনসত্তরের গণঅভূত্থান, আর খোয়াবনামার ক্ষেত্রে এই ঘটনাটা যদিও প্রধানতঃ দেশবিভাগের পূর্ববর্তী পাকিস্তান আন্দোলন, তারপরও এর ডালপালা একশ বছর আগের ফকির আন্দোলন পর্যন্ত বিস্তৃত। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে খোয়াবনামায় কালের বিস্তৃতি চিলেকোঠার সেপাইয়ের চেয়ে দীর্ঘতর। উপন্যাসের কলেবরও কিছুটা বেশি খোয়াবনামায়, সেই সাথে উপন্যাসের চরিত্রের সংখ্যাও বেশি। আবার চিলেকোঠার সেপাইয়ের সাথে খোয়াবনামার লেখার ধরণের মিল বেশ স্পষ্ট। জাদুবাস্তবতার নমুনা দুইটা উপন্যাসেই প্রচুর পাওয়া যায়। বাস্তবতার সাথে কল্পনা অথবা অতিবাস্তবতার সংঘর্ষ ইলিয়াস খুব চমৎকারভাবেই পরিবেশন করেছেন তার দুইটা উপন্যাসেই। এই অতিবাস্তব অথবা জাদুবাস্তব অনুভূতির সাথে আমি বেশ ভালোই পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম চিলেকোঠর সেপাই পড়ে, খোয়াবনামার পর এই অনুভূতির সাথে আমার একরকম আত্মীয়তার বন্ধন হয়ে গেল যেন।

বর্তমান লেখাটা যেহেতু খোয়াবনামা নিয়েই, সেহেতু চিলেকোঠার সেপাইয়ের সাথে খোয়াবনামার সমান্তরাল আলোচনার ইতি এখানেই টেনে বরং চলে যাই খোয়াব দেখার কালে।

২. খোয়াবনামার প্রেক্ষাপট মূলতঃ দেশভাগ পূর্ববর্তী পাকিস্তান আন্দোলন। বাঙলার শিক্ষিত মুসলমান তরুণদের একটা বিশাল অংশ তখন পাকিস্তান আন্দোলন দ্বারা তাড়িত হয়েছিল এই ঐতিহাসিক সত্যটা যেমনি এসেছে, তেমনি এসেছে গ্রামের বঞ্চিত মানুষের তেভাগা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার সত্যটাও। গ্রামের সাধারণ চাষা-জেলে-কলুরা রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা সচেতন কখনোই ছিল না; ���াদের মধ্যে যারা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছে তাদের সমর্থন করার প্রধান কারণ ছিল তারা মনে করেছিল পাকিস্তান হলে জমিদার আর জোতদারদের অত্য���চার কমে যাবে। ধর্মানুভূতি তাদের অতটা না ছিল। মূলতঃ তাদের ধর্মানুভূতিকে অনেক বেশি উসকে দেওয়ার পেছনে দায়ী ছিল পাকিস্তান আন্দোলনে যারা সরাসরি জড়িত ছিল তারা অর্থাৎ মুসলিম লীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিকে কংগ্রেসী হিন্দুদের গোঁড়ামিও তৎকালীন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পেছনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের পাশাপাশি একশো বছরের পুরোনো ফকির আন্দোলনের কথাও উঠে এসেছে এই বিশাল কলেবরের উপন্যাসে।

ইলিয়াসের অসাধারণ কল্পনাশক্তির একটা পরিচয় আমরা পাই ফকির আন্দোলনের উল্লেখের মধ্যে মিথের অজস্র ব্যবহারে। ইলিয়াস ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন ঠিকই, তবে গ্রামের সাধারণ মানুষের কুসংস্কারচ্ছন্ন দৃষ্টিও তার মধ্যে আছে। উপন্যাস তো শেষ বিচারে ইতিহাস নয়, বরং মানুষের জীবনালেখ্য। তাই যখন গ্রামের সাধারণ মানুষ উপন্যাসের চরিত্র হয়ে উঠে তখন সেই সাধারণ মানুষের উপলব্ধি ঔপন্যাসিককেও লাভ করতে হয়, তা না করতে পারলে উপন্যাস কিছুতেই সার্থক হয়ে ওঠে না। ইলিয়াস এই উপলব্ধি অনেকখানিই লাভ করতে পারেন, তাইতো খোয়াবনামার যেকোন সচেতন পাঠকও তমিজের বাপ আর বৈকুন্ঠ হয়ে ওঠে নিমিষে!

এই উপন্যাসের চরিত্রে সংখ্যা অসংখ্য। অনেক বেশি চরিত্র থাকলে প্রত্যেকটা চরিত্রের মধ্যে আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব দেওয়ার কাজটাও খুব দুরূহ হয়ে ওঠে। কিন্তু খোয়াবনামায় প্রতিটা চরিত্রের বিশেষ একটা চারিত্রিক প্যাটার্ণ আমরা সহজেই আবিষ্কার করতে পারি। আবার কোন চরিত্রই পুরোপুরি ভালো বা মন্দ না হয়ে ভালোমন্দের মিশেলে বাস্তবসম্মত চরিত্র হয়ে ওঠায় আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষের কিংবা নিজের সাথে অনেক চরিত্রের ব্যাপক সাদৃশ্যও দেখতে পাই।

৩. বেশ কয়েকটা চরিত্র আমাকে মুগ্ধ করলেও আমি খুব বেশি নাড়া খেয়েছি তমিজের বাপের কাছে। কুসংস্কারচ্ছন্ন এই মানুষটার রহস্যময় আচার-আচরণ আর হ্যালুসিনেশন আমাকে প্রায়ই চিলেকোঠার সেপাইয়ের ওসমানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। ইলিয়াসের দুই উপন্যাসের মধ্যে অনেক পুনরুক্তি আছে যা কোন সচেতন পাঠকের দৃষ্টি এড়ানোর কথা নয়। দুই উপন্যাসের দুই প্রধান চরিত্রের মানসিক রোগী হওয়াটা যদিও পুনরুক্তিই বটে, তারপরও তাদের মনস্তত্ত্বে এবং হ্যালুসিনেশনের প্রকারে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য থাকায় পুনরুক্তিটা বিরক্তিকর হয়ে ওঠেনি কখনোই। তমিজের বাপের কাৎলাহার বিলের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় পাকুড়গাছের উপর কাল্পনিক মুনসীর আত্মাকে দেখার বিবরণে আমি তাই আবারও মুগ্ধ হলাম, যেরকম মুগ্ধ হয়েছিলাম চিলেকোঠার সেপাইয়ের ওসমানের একটা লাশের মধ্যে কয়েকটা লাশের অস্তিত্ব আবিষ্কারের মধ্যে।

তবে খোয়াবনামায় তমিজের বাপ প্রধান একটি চরিত্র হলেও এখানে কোন একক প্রধান চরিত্র না থাকায় পুরো উপন্যাসটা একটা মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি পেয়েছে। তমিজ, কুলসুম, কেরামত, ফুলজান, আবদুল কাদের, বৈকুন্ঠ, শরাফত মন্ডল, এমনকি ঐতিহাসিক চরিত্র বরকতুল্লা মুনসী- এরা সবাই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের মধ্যেই পড়ে। আমি ভেবে কূল পাই না একজন লেখক কীভাবে এত চরিত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারেন। আমি কূল পাই না, এজন্যই সাতপাঁচ চিন্তা না করে তমিজের বাপ কিংবা প্রান্তিক আরও অনেক মানুষের মত খোয়াব দেখা শুরূ করি।

খোয়াবের ব্যাখ্যা করা হয়না আমার। কারণ আমি জানি বিজ্ঞান এখনও খোয়াব দেখার কারণ কিংবা আমরা খোয়াবে কী দেখি তার বিশ্লেষণ করার মত পর্যায়ে যেতে পারে নাই। কিন্তু একজন ব্যক্তি ইলিয়াস ঠিকই আমাকে তমিজের বাপের মত বাধ্য করে খোয়াব দেখার পেছনে আকাশকুসুম কল্পনার ডালা সাজাতে বাধ্য করতে। আমি তমিজের বাপের পর্যায়ে হঠাতই নেমে যাই, অথবা উঠে যাই। আমি বুঝতে পারি তমিজের বাপের মনস্তত্ত্ব। আমি নিজেই তমিজের বাপ হয়ে উঠি।

এই যে আমাকে দিয়ে খোয়াব দেখিয়ে একটা ‘খোয়াবনামা’ দিয়ে এর ব্যাখ্যা করিয়ে নেওয়া, এই অসাধারণ কাজের জন্যই আমি ভালোবাসি সম্ভবত বাঙলা সাহিত্যের সেরা ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে।

(এপ্রিল ২২, ২০১৩)
Profile Image for DEHAN.
275 reviews87 followers
December 16, 2020
প্রথমেই বলে নেই খোয়াবনামায় কিন্তু কোন খোয়াবের বিবরণ দেওয়া নাই সুতরাং আমার মতো ঐ আশা মনে নিয়া খোয়াবনামা পড়তে বসবেন না । খোয়াবনামার মধ্যে যেসব দুই একটা খোয়াবের বিবরণ আছে তাও আজকালকার ক্রিয়েটিভ মানুষরা সচারচর দেখেন না কিংবা দেখলেও অতোটা পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না ।
তাহলে খোয়াবনামাতে কি খোয়াব নিয়ে কিচ্ছু নাই ? আছে । খোয়াবনামাতে খোয়াবের কথা আছে । নানা মানুষের নানা রঙের খোয়াব ।
একটা উপন্যাসের প্রত্যেকটা পাত্র পাত্রীদের মধ্যে প্রাণসঞ্চারের মতো খুব কঠিন একটা কাজ আখতারুজ্জামান সাহেব অনেকটা তুড়ি বাজানোর মতো করে ফেলেন ( মনে আছে চিলেকোঠার সেপাইয়ের কথা ?আচ্ছা থাক অতো স্মৃতি হাতড়ানো লাগবে না । আপনার স্মৃতিশক্তির ক্ষমতা কিংবা খোঁজার ধৈর্য কেউ দেখতে চাচ্ছে না আপাতত । রিভিউ পড়েন মনযোগ দিয়া । এই রিভিউ এক বছর ধরে লেখা হয়েছে । এক বছর তাই ...what ? কে বললো ? ভিড়ের মধ্যে থেকে কে ফিসিফিস করে বললো যে ‘’- এহহ কি এক হনুমান আসছো তুমি লেজে আগুন দিয়া লঙ্কায় অগ্নিসংযোগের শর্টকাট টেকনিক এক বছর ধইরা বইসা বইসা লেখে ফেলছো !’’ who said that ? I want full.....ahhhhh I want full..........well আমার এখন ‘’মনযোগের’’ ইংরেজি মনে পড়তেছে না । কিন্তু আমার পূর্ণ মনযোগ চাই এইখানে okay?) তার মতো এরকম খুব ছোট খাটো ঘটনার নিখুঁত বর্ণনা আগে কাউকে দিতে দেখি নাই । সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার স্যাপার ! কি নাই এই উপন্যাসে ! খোয়াবনামারে আপনি নির্দিষ্ট কোন জনরায় ফেলতে পারবেন না এইটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার । এর মধ্যে সব ঘটনাই আছে । আমি যখন খোয়াবনামা পড়ি আমার মনে হচ্ছিলো আমি একটা বিশাল মহল্লায় ঢুকে পড়েছি । সেই মহল্লার কোন গলিতে টিনের বাড়ি , কোন গলিতে ছনের বাড়ি , কোন গলিতে ইটের বাড়ি , কোন গলিতে টাইলসের বাড়ি । পাঠক যতই সামনে যাবেন ততই উপন্যাস টা ডালপালা ছড়াতে থাকবে । আখতারুজ্জামান সাহেবের আরেকটা গুণ হলো সে গল্পের কাউকে অগুরত্বপূর্ণ বা এক্সট্রা হিসেবে রাখেন না । তার যত গুলা উপন্যাস পড়েছি প্রতিটাতেই লক্ষ্য করেছি সে সবাইকেই খুব যত্ন সহকারে গুরত্ব দিয়ে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেন । খোয়বনামাতেও তাই ... এখানে চেরাগ আলী , তমিজের বাপ , তমিজ , কুলসুম , শরাফত মন্ডল সকলেই নানা ধরনের খোয়াবে আক্রান্ত । কিন্তু সকলের খোয়াবের ই সূতা এক জায়গায় বাঁধা । আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে এই উপন্যাস অনেকে পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে আর আগাতে পারেন না । উপন্যাসের মজাই এখানে, যারা একটু কষ্ট করে সামনে আগাইতে পারে তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না । এই উপন্যাসের একটা বিশেষ দিকের কথা বলি সেটা হলো ‘’গন্ধ’’ ... ঘ্রাণ। মানে উপন্যাসটা এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে পড়ার সময় আপনি শুধু দৃশ্য কল্পনা না , সেটার ঘ্রাণ নেওয়ার ও সুযোগ পাবেন । আমি সত্যিই মাঝেমধ্যে খুব বিস্মিত হই যে একটা সময় বাংলাদেশের লেখকরা কত সৃজনশীল ছিলেন , তারা যখন লিখতেন তখন তাদের চিন্তাভাবনার হাজার হাজার দরজা এবং জানালা এমনভাবে কাহিনীর মধ্যে খুলে দিতেন যে একজন পাঠক একেক সময় একেক রকম আবহাওয়া দেখতে পারতো ।
আমি বর্তমান যুগের উঠতি লেখকদের দেখেও ভয়ানক বিস্মিত হই । আপনি যদি একজন নিয়মিত উঠতি পাঠক হয়ে থাকেন আপনি জানেন উঠতি লেখকরা থ্রিলার ছাড়া কিছুই লিখতে জানেন না কিংবা তিনি যে জানেন সেটা জানাতে আগ্রহী না । আম��� বলতেছি না লোকজন নিস্বা থ্রিলার লেখে ছাপায় দিতেছে ...... না কিছু আছে ভালো থ্রিলার ও লেখে আবার কিছু লেখক অন্য স্বাদের লেখাও উপহার দিতে চাচ্ছেন কিন্তু তা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। কিন্তু বেশিরভাগ লেখকের উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ঐ থ্রিল ই। আপনি একজন লেখক রে বলেন ‘’ভাই আপনি একটা চরিত্র সৃষ্টি করেন যার দুপুরে অনেক ক্ষুধা লাগবে তারপর সে একটা হোটেলে যাবে , গিয়ে পেট ভরে খেয়ে আবার বাসায় ফিরে আসবে । খুবই সিম্পল একটা ঘটনা । সে কি করবে জানেন? সে ঐ লোকটারে হোটেলে পাঠাবে পাঠানোর সময় লোকটার পেছনে অনেক গুলা স্পাই লাগায় দিবে ।ঐ স্পাইগুলার উপস্থিতি চরিত্রকে কোন একটা উপায়ে টের পাওয়ায় দিবে , যার দরুন চরিত্রর মাথার মধ্যে নানান ধরনের সন্দেহ হাডুডু খেলতে থাকবে , তারপর হোটেলে তারে কোন মতে ঢুকানোর পর ভাতের অর্ডার দেওয়াবে । ভাত আসার পর যখন সে ভাত নাড়াচাড়া করতে করতে চিন্তা করবে কোন তরকারি অর্ডার দেওয়া যেতে পারে তখন ভাতের ভিতর সে একটা ছোট্ট চিরকুট পাবে যেখানে লেখা থাকবে " মিস্টার অমুক খুব ভেবেচিন্তে তরকারি অর্ডার দিবেন হোটেলের যেকোন একটা তরকারির আইটেমে কিন্তু বিষ মেশানো আছে । সাবধান আপনি যদি অতি চালাকি করতে গিয়ে ভাত না খেয়ে কিংবা হুদা ভাত খেয়ে উঠে যান তাহলে হোটেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আপনাকে হত্যা করা হবে আর আপনার মৃত্যুর সময় আপনার একটাই দুঃখ থাকবে যে ভালোমন্দ কিছু খেয়ে মরতে পারলাম না । সময় খুব কম তাই দ্রুত একটা তরকারি অর্ডার দেন । উইশ ইউ বিষ বিহীন তরকারিপূর্ণ লাক "
এখন পাঠক শুধু চিন্তা করেন লোকটার মানসিক অবস্থা কি ! আপনি খালি লেখকরে বলেছিলেন ভাই একটা সিম্পল গল্প বানাবেন যেইখানে একটা ক্ষুধার্ত চরিত্র থাকবে ,তার ক্ষুধার বর্ণনা থাকবে , কোন তরকারি দিয়া ভাত খাবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তা থাকবে কিন্তু দুশ্চিন্তা না তারপর তারে ভরপেট খাওয়াইয়া হোটেল থেকে বাসায় নিয়া আসবেন । অথচ সেই লোক বেচারারে ভাত খাওয়ায়তে গিয়া একটা জীবন মরন সমস্যায় ফেলায় দিলো ! আহারে!
ও হ্যাঁ আসল কথা তো বলিই নাই । আরে ভাই লেখকদের কি দোষ আর ! হাটে চাহিদা যেইটার বেশি সেইটার ফলনের চেষ্টাই তো কৃষকের থাকে তাই না ? উঠতি পাঠকরা তো বই মানেই বুঝে থ্রিলার । উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা পড়বে জীবনসম্পর্কিত গল্প , প্রাকৃতিক ভূতের গল্প , বিজ্ঞানসম্মত কৌতূহল সৃষ্টিকারী কল্পকাহিনী , এমন গল্প যেগুলা দৃষ্টিক্ষমতা আরো বিস্তার করবে , কল্পনাশক্তি উন্নত করবে , ইতিহাস জানতে আগ্রহী করবে ……তা না এদের ভেতর ঢুকায় দেওয়া হইতেছে সন্দেহ ! তাদের এমন অবস্থা যে তারা তো পারলে কোন ভিক্ষুকরে বাসায় ভিক্ষা করতে আসছে দেখলেও মনে মনে ভাবে এই হয়তো ভিক্ষুক ভিক্ষার ঝুলি থেকে একটা পিস্তল বের করবে তারপর ভরাট কন্ঠে বলবে ‘’ যাও এক কাপ দুধ চা বানায় নিয়ে আসো ‘’
পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী গল্প বানাচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু রহস্যই তো সব নয় তাই না ? আরে ভাই পৃথিবীতে কেন পাঠানো হইছে , আর পাঠাইলেই বা এই মানুষ পরিচয়েই কেন পাঠানো হয়েছে সেই রহস্যের সমাধান ই তো এখনো করতে পারলাম না । অন্য রহস্য নিয়া চিন্তাভাবনা করবো কখন ? পাঠকদের রুচি পরিবর্তন হবে কিভাবে যদি না আপনারা আপনাদের কলমে মাঝেমধ্যে সাধারন কালি না ভরে সবসময় রক্তই ভরতে থাকেন ? আপনারা কি আস্তে আস্তে পাঠকদের ড্রাকুলা বানায় দিতে চান ?
খোয়াবনামার রিভিউ লেখতে বইসা তো উঠতি লেখকদের বদনাম শুরু করলাম। এখন একটু সুনাম করি?
আচ্ছা করি । আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ এই থ্রিলার ট্রিলারের খিচুড়ি খাওয়ায়া হইলেও আস্তে আস্তে পাঠকের দল ভারী করতে পারতেছেন । Congratulations . Great success
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
September 26, 2022
তমিজের বাপ যে মুগ্ধদৃষ্টিতে চেরাগ আলির দিকে চায়া থাকে, মন চায় ইলিয়াসরে দিকে অমনে চায়া চায়া দেহি

এই পাঠকজীবনে কিছু প্রিয় লেখক আছে।এদের মধ্যে এক সময় শরতের লেখা সবচেয়ে ভালো লাগতো।এক সময় শীর্ষেন্দুর সাথে পরিচয় হলো। তখন শরতের চেয়ে শীর্ষেন্দুর লেখা বেশি ভালো লাগে। তারপর শীর্ষ থেকে শীর্ষেন্দুকে নামিয়ে দিল তারাশঙ্কর।

ইলিয়াসের লেখা পড়ার পর আমি নিশ্চিত পছন্দের তালিকার শীর্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেল।আমার তো বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় এই জাদুকরী লেখা চেরাগ আলির শোলোকের মতোই পাওয়া।একজন মানুষের পক্ষে কি এই রচনা সম্ভব!!!
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
April 19, 2020
মানুষের আজকের এই এতকিছুর জন্ম কোথা থেকে? আমার বিশ্বাস, ক্ষুধা থেকে। মানুষ প্রথম যে প্রয়োজনীয়তা মেটাতে চায়, সেটা ক্ষুধা। পেটে খাবার থাকলে তখন আসে যৌনতা। আর দুটো বিষয় যদি মোটামুটিভাবেও মিটে যায়, তখন মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। নানা রকমের স্বপ্ন। সুখের স্বপ্ন, সমৃদ্ধির স্বপ্ন। মানুষ যত এগিয়ে যায় তার স্বপ্ন তত বড় হয়। সে যত পায়, খোয়াব তত বদলে যায়। মানুষের সেই খোয়াব নিয়েই ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’।

মানুষের মাঝে বাঙালীরা বোধয় খোয়াব একটু বেশি দেখে। তারা ঘুমিয়ে খোয়াব দেখে, জেগে জেগে খোয়াব দেখে। সেই খোয়াবে মিশে থাকে ইতিহাস, পুরাণ, ঘটে যাওয়া নানা বিষয়। কিছু কথা, উপকথা মানুষকে এতোটা বেঁধে ফেলে যে সে এখান থেকে বের হতে পারে না কখনও। তার খোয়াব ঘুরপাক খায় ওই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে। তমিজের বাপ এমনই এক লোক।

তমিজের বাপ আবোর, মানে বোকা। তার কেবল খাওয়ার চাহিদা। পেট পুরে ভাত খেতে পারলেই হয়। বাকি আর কিছু চায় না। বুড়ো মানুষটার পাশে যুবতী বৌও তার মাঝে কোন আকাঙ্ক্ষা জাগায় না। তমিজের বাপের খাওয়া মিটে গেলে ঘুমিয়ে থাকে, কিংবা জেগে জেগে খোয়াব দেখে। সে খোয়াব হলো মুনসির খোয়াব। যে নাকি কাৎলাহার বিলের পাশে পাকুড় গাছে উঠে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই তার আরশ।

আদতে ইলিয়াস এই তমিজের বাপের মধ্যে এঁকেছেন আবহমান বাংলার এমন কিছু মানুষের কথা, যারা তাদের বিশ্বাসের মধ্যে এতোটা ঢুকে থাকে যে দুনিয়ার বাস্তবতা তাদের কাছে কোন অর্থ বহন করে না। তমিজের বাপ চিনত বিল, বিলের মাছ আর চেরাগ আলী মুনসিকে। সেখানেই সে থেমে ছিল তার বাকিটা সময়। জীবনভর সে ওই নিয়েই থেকে গেছে।

এদিকে বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতে ভেসেছে তার উত্তরপুরুষ তমিজ। সে খিয়ারে গেছে ধান কাটতে। মাঝির সন্তান হয়েও এক সময় জমি চাষ করে সে থিতু হওয়ার খোয়াব দেখেছে। সেই সঙ্গে খিয়ারে কাজ করতে গিয়ে সে উদবুদ্ধ হয়েছিল নতুন দিনের চেতনায়। মানুষের অধিকারের আদায়ে তার রক্তের মধ্যে প্রতিবাদ এসে জমেছিল।

কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়েই এখানে ক্ষমতার নানা ব্যবহার চলে। সেই ক্ষমতার প্রতিভু শরাফত মণ্ডল। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভূমির মালিকদের দাপট, তাদের ক্ষমতার ব্যবহার এবং মানুষকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা তার মাঝে দেখা যায়। কিন্তু সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। কালাম মাঝিদের মতো মানুষদের খোয়াব থাকে নিজেকে বড় করে তোলার। সে খোয়াব তারা পূর্ণ করে।

এরই মাঝে যারা ক্ষেত, বিল, গ্রামের হাট থেকে বেরিয়ে শহরের বাতাস গায়ে লাগায়, তারা বৃহত্তর পরিমণ্ডলের হাওয়া গাঁয়ে ছড়িয়ে দেয়। তখন কারও কারও মনে পাকিস্তান কায়েম করার খোয়াব জাগে। সে খোয়াব সত্য মনে হয় যখন লীগের লোকজন এসে তাদের তাতিয়ে যায়, আশ্বাস দিয়ে যায়। তখন খোয়াব ভেঙে যায় কারও কারও। পুরাতন আনন্দবাজারের খবরে কলকাতায় মুসলমান হত্যার খবরে এখানেও মারা যায় অনেকে। সেখান থেকে ভেঙে যায় আরও খোয়াব।

কিন্তু এসব খোয়াবের সাথে কোন সংযোগ নেই কুলসুমের। কেননা সে জীবনে প্রায় কিছুই দেখেনি। সে দেখেছে তার দাদা চেরাগ আলীকে, দেখেছে তমিজের বাপকে। একজন শোলোক লিখে গেয়ে বেড়াত, অন্যজন সেই শোলোকে কী পেয়েছিল, কুলসুম কোনদিন বোঝেনি। কিন্তু তার সেই দেখা জগতের মাঝেই ঘুরে বেড়াতে থাকে কুলসুম।

ভাঙা গড়া আর মানুষের একান্ত খোয়াবের মধ্য থেকে বৃহত্তরের ব্যঞ্জনা নিয়ে আসা গল্প, ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’। ইলিয়াসকে নিয়ে লেখা সহজ না, সে ধৃষ্টতা করবো না। তবে খোয়াবনামা নিয়ে কিছু বলাই যায়। অনেক কিছু বলেও ফেলেছি। তারপরও কিছু বাকি থাকে। লেখকের এই উপন্যাসের ভাষা তার ‘চিলেকোঠার সেপাই’ থেকে আলাদা। একদম প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মুখের ভাষায় লেখা এ উপন্যাস।

লেখায় লেখকের সততা বলে একটা ব্যপার আছে। আমাদের আজক��র দিনের লেখায় সে জিনিসটা নানা কারণে অনুপস্থিত। সে নিয়ে পরে কখনও বলা যাবে। বিষয়টা একটু বিস্তৃত। তবে ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ পড়লে বোঝা যায় একজন লেখক তার লেখার প্রতি কতটা সৎ হতে পারেন কিংবা ভাবলে অবাক হতে হয় যে কতটা সৎ হলে এমন একটা উপন্যাস লেখা যায়।

ইলিয়াসের লেখায় জাদুবাস্তবতা আছে কিনা, সে নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু ইলিয়াস তার ‘খোয়াবানামা’য় নানা জায়গায় অসাধারণ ঘোর সৃষ্টি করেছেন। কাৎলাহার বিল, পাকুড় গাছ, তার আশপাশ দিয়ে তমিজের বাপের ঘুরে বেড়ানোর বর্ণনায় অবশ্যই ঘোর তৈরি হয়। তেমনি ঘোর তৈরি হয় যখন কালাম মাঝি চড়ে বসে কুলসুমের উপর।

চরিত্র সৃষ্টি এবং চিত্রণে ইলিয়াস অসাধারণ কিছু কাজ করে গেছেন। ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসে হাড্ডি খিজিরের পর এই উপন্যাসে অবাক করা চরিত্র এই তমিজের বাপ। একটা মানুষ প্রায় কোন কথা না বলে, কোন জায়গায় না থেকে জুড়ে আছে পুরো উপন্যাসে। হাড্ডি খিজির যতটা ‘অ্যাকটিভ’ ছিল, তমিজের বাপ ততটাই ‘প্যাসিভ’। এই থেকে না থাকা বা না থেকেও থাকাটা সবচেয়ে বড় ম্যাজিক ছিল ‘খোয়াবনামা’-র।

শেষটা করবো একটা প্রশ্ন দিয়ে। প্রশ্নটা হলো, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় খোয়াব কী?’

উত্তরটা দিয়ে দেই। মানুষের সবচেয়ে বড় খোয়াব হলো, ‘খাদ্য’।

শরাফত মণ্ডলের ছেলেরা বড় মানুষ হয়ে যেতে পারে। কালাম মাঝি নিজেকে তুলতে পারে নতুন উচ্চতায়। প্রেমে পড়ে কিংবা ছন্নছাড়া হয়ে কেরামত জেলে যেতে পারে। ভাবের আবেশে থাকা মানুষ বৈকুণ্ঠ হতে পারে পাকিস্তান আন্দোলনের বলি। নতুন পাকিস্তানে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারে তমিজ। একদিন হঠাৎ যোগ দিতে পারে তেভাগায়। এতোসব মহৎ কিংবা স্বার্থপর খোয়াব থেকে অনেক দূরে তমিজের মেয়ে সখিনা গিয়ে দাঁড়ায় উইঢিবিতে।

সেখান থেকেই সে দেখে দূরে জ্বলা একঝাঁক জোনাকি। সখিনার মা ফুলজানেরও মনে হয় ওখানে জোনাকির আগুন জ্বালিয়ে হেঁশেল ধরিয়েছে কেউ। কে সে? সে তমিজের বাপ হবে। কেননা মুনসির খোয়াব হারিয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। গ্রামের নতুন কিংবদন্তী তমিজের বাপ। যে কিনা সখিনার দাদা। তাই হয়ত সখিনা, ফুলজান কিংবা অন্য নামের কোন একজন মানুষ, আবহমানকাল ধরে এমন করেই কারও উপর ভরসা করে থাকে।

উনুন জ্বলবে। ভাত হবে। পেট ভরবে।
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
July 14, 2021
[ জুলাই, দুই হাজার বিশ সালের নোটস থিকা — ]

ইলিয়াস সাহেব চেরাগ আলীর মতই শব্দের দাগ কেটে বলতে থাকেন তমিজের বাপ, কুলসুম, চেরাগ আলী, তমিজ, ফুলজান, কেরামত আলী, বৈকুন্ঠ, কালাম মাঝি, শরাফত মন্ডলসহ আরো অনেকের রঙ বেরঙের খোয়াবনামা৷ তমিজের বাপ বোকা মানুষ, যে সারাদিন বিলের উওর ধারে পাকুড়গাছের আশেপাশে রগ টান টান করে কাঁদাপানিতে দাঁড়িয়ে আকাশের ছাই মেঘ সরিয়ে কিংবা রাতভোরে ঘুমের ঘোরে মুনসির খোঁজ করতে থাকে আর সানকি ভর্তি ভাত খেয়ে ঘুমানোতেই তার জীবনের প্রশান্তি৷ খোয়াবে বা সজাগে তমিজের বাপ সেই চেরাগ আলীর শোলক শুনতে পায় যে মানুষের খোয়াব শুনে মাটিতে দাগ কেটে কেটে খোয়াবের তাবির বলতে পারত অথবা হাটে মুনসির মাধ্যমে খোয়াবে পাওয়া শোলক শুনিয়ে স্বপ্নের বয়ান করত। তমিজের বাপ বিয়ে করে চেরাগ আলীর নাতনী কুলসুমকে, যে সারাজীবন শোলক শুনে তমিজের বাপের হাঁ করা মুগ্ধ প্রশ্নবোধক মুখ আর দাদার রেখে যাওয়া বইয়ের এলোমেলো দাগে খোয়াবের অর্থ খুঁজে বেড়ায়৷ তমিজ মাঝির বেটা হয়েও চাষী হুরমতুল্লাহর সাথে শরাফত মন্ডলের জমি বর্গাচাষ করে আর হুরমুতুল্লাহর মেয়ে ফুলজানকে বিয়ের করার খোয়াব সাজায়৷ নির্ভেজাল ভবঘুরে মানুষ বৈকুন্ঠ অপেক্ষা করে পোড়াদহের মেলায় তার পূর্বপুরুষ ভবানী সন্ন্যাসীর দর্শন পাওয়ার৷ শরাফত মন্ডল জমি বর্গা দিয়ে এবং নায়েব থেকে কাৎলাহার বিল পত্তন নিয়ে বক উড়তে থাকা শিমুল গাছের নিচে বসে সমাজের ক্ষমতাবান মানুষ বা শোষকশ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে৷ এভাবেই সময়ের সংঘাতে তেভাগা আন্দোলন এবং দেশভাগে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের নিয়তির ভাঙন গঠন নিয়ে খোয়াবনামার মহাকাব্যিক আখ্যানে চেরাগ আলীর শোলকের মোহে ডুবে যেতে হয়৷

শুরুর দিকে গল্পের গতিপথ খরা হলেও ইলিয়াস সাহেব গল্প বলার সাথে ধীরে ধীরে বাহাত্তর হাত যে জাল গুটিয়ে আনতে থাকেন, সেই জাল কি তমিজের বাপের নাকি তারও বাপের দাদা পরদাদার অথবা কালাম মাঝির, মোষের দিঘির পাড়ে জ্বলন্ত জোনাকির ঝাঁকে সেই হিসাব খুঁজতে আমরা কখন কার্তিকের হিম রাত্রে ইলিয়াস সাহেবের গল্পের জালে অথবা চোরাবালিতে দিশেহারা তমিজের বাপের মত বাঘাড় মাছ হয়ে আটকে পড়ি টের পাওয়া যায় না৷ জোসনার নেশা ধরানো গন্ধ বাঁশগাছের মুন্ডু ছেদ করে যখন গল্পের জালে যমুনার উত্তাল ঢেউয়ের মত ধাক্কা মারে, তখন আমাদের গতরে ছড়িয়ে পড়া জালের নকশাকে মনে হয় চেরাগ আলীর শোলকের গীত, আর খোয়াবে নয়তবা সজাগে বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতে থাকি মরিচা খেতের আলে দাঁড়ানো ফুলজানের ঠোঁটে জোসনার আগুন শিখায় তমিজের শরীরের উত্তাপ আর উত্তেজনায় বিহ্বলিত ভাব এবং তমিজের বাপের ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমানোর শব্দ অথবা কুলসুমের জোর নিশ্বাসে নেওয়া বিলের কাঁদাপানির ও মাছের আঁশটে ঘ্রাণ, তেভাগাকে কেন্দ্র করে বা রাজনৈতিক দলের আশ্বাস উস্কানিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিপর্যয়ে দেশভাগ আর কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানে পাকুড়গাছের মাথায় সেপাইদের সর্দার এর গুলিতে নিহত ফুটো গলার মুনসি বায়তুল্লাহ শাহ আসন নিয়ে বিলের সাথে শাসন করে চাষী - মাঝি- কামার- কলুদের নিয়তি!

কাৎলাহার বিলের দুইধারে গিরিরডাঙার মাঝিদের, নিজগিরিরডাঙার চাষী, কামারপাড়া কিংবা জয়পুর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুরের আধিয়ার অথবা বর্গাচাষীদের জীবনযাত্রা নিয়তি জমিদার জোতদার কর্তৃক শোষিত নির্যাতিত হওয়ায় পূর্বের ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নায়ক ফকির মজনু শাহ নয়তবা সন্ন্যাসী ভবানী পাঠকের চেতনায় কিংবা হতে পারে মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টির উস্কানিতে নায্য আদায়ের নিমিত্তে জমিদার ও জোতদারের বিরুদ্ধে তেভাগা আন্দোলন (ফসলের তিনভাগের দুই ভাগ চাষীদের) গল্পের পটভূমি৷ তেভাগার সুযোগ লুপে রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষদের 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' 'আজাদ পাকিস্তান' এর পানিপড়া গিলিয়ে খাওয়ায় বলে পাকিস্তান হলে মোসলমানদের হক আদায় হবে এবং জমিদার অথবা হিন্দুদের উচ্চ প্রতিপত্তি পাছার কাপড় উঠায়ে পালাবে৷ সাধারণ মানুষ রাতভর খোয়াব দেখে আজাদ পাকিস্তানে তাদের দুঃখ অবসান হবে কিন্তু বাস্তবতার খোঁচায় ভোর হতেই খোয়াব ভেঙে যায়৷ মুকুন্দ সাহার দোকানে 'আনন্দবাজার' পত্রিকায় কলকাতায় হিন্দু মোসলমান বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবরে মানুষদের হুমড়ি খেয়ে পড়ায় অথবা মুনসির লাথির কারণে কাৎলাহার বিলের পয়দা ও মাঘের শেষ বুধবার পোড়াদহের মেলায় ভবানী সন্ন্যাসীর দর্শনে বিশ্বাসী মানুষের শরীরে ধর্মের চেতনার কারণেই হোক, কলকাতা দাঙ্গার আগুনের সেঁকা উত্তরবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে৷ 'নারায়ে তাকবির' 'আল্লাহু আকবর' বলে মনের উটকো ক্ষোভ মেটাতে মাঝিপাড়ার মানুষ হিন্দুদের আগুনে পোড়ায় আর 'বনদে মাতারাম' হুংকারে কামারপাড়ার দল মোসলমান কোপায়! এইসব বিভেদের জোরে কাৎলাহার বিলের শেষে দুইটি বাঙালি নদীর রোগা স্রোতের মতই দেশভাগ ঘটে কিন্তু প্রান্তিক মানুষের নিয়তি রেখার পরিবর্তন ঘটে না৷ শরাফত মন্ডল আর কালাম মাঝির জমি বিল নিয়ে দ্বন্দের জন্য ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে৷ কিন্তু তবুও মানুষ খোয়াব দেখে ল্যাম্ফোর কালচে লাল আলোর সাথে জোছনা মিশে হলদে আলোর প্রবল ঘোরে৷

ইলিয়াস সাহেবের বলিষ্ঠ লিখনশৈলী নিয়ে আলোচনা করার সাহস রাখিনা৷ ইলিয়াস সাহেবের ব্যতিক্রম রচনাশৈলীতে জাদুবস্তবতার মোহে আমরা তমিজের বাপের মতই 'খোয়াবনামা'য় জাগতিক বোধ শূন্যতায় ভুগে আবোর হয়ে থাকি৷ মনে হয় শুকনো রোদ শরীরের মধ্য ঢুকে অস্তিত্ব গিলে খায় আর মাথার ভেতর কেমন তীব্র নেশার ঝাঁঝ লেগে যায়৷ উপরের বিক্ষিপ্ত আলোচনা থেকেও খোয়াবনাম��র তল ও ব্যাপ্তি আরো অনেক বেশি গভীর এবং বিস্তৃত৷ চরিত্রায়ন এবং ভাষার দক্ষতায় ইলিয়াস নিজের সাথেই (চিলেকোঠার সেপাই) টেক্কা দিয়ে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়৷ সামাজিক দৃশ্যপটে লোকবিশ্বাস, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব, মিথ পুরাণ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, চেরাগ আলীর শোলকের সাথে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলনে, দেশভাগ ইতিহাস আর রাজনীতির মিশ্রণে অঙ্কিত 'খোয়াবনামা' আখ্যান মহাকাব্যর কাতারে পড়বে এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসাবে মুনসির মত আসন গেড়ে বসে থাকবে৷

[ শফিক ভাইয়ের দোকানে লাল চায়ে চুমুক মারা মাত্রই খেয়াল আইলো — ইলিয়াস যদি স্প্যানিশ ভাষার লেখক হইতেন কিংবা বইটা যদি স্প্যানিশ হইত, তাইলে নোবেল প্রাইজ ঠ্যাকায় ক্যাডা? ]
Profile Image for Farha Crystal.
46 reviews68 followers
May 29, 2017
অল্প কিছু গান আছে যার সুর প্রথমবার শুনলে তা কানের সাথে লেগে থাকে সারাটা দিন , তখন এমন হয় যে , আশেপাশে প্রত্যেকটা নড়াচড়ার মাঝে ঐ গানের তাল অনুভব করতে থাকি , শুধুকি তাই নিজেকে অর্থব জড় বস্তুর নীরবতা এবং সুরের সাথে মিশিয়ে নৃত্যে নৃত্যে পুরোটা দিন কাটিয়ে দেই স্বপ্নের মাঝে ও ।
অল্প কিছু গানের কথা আছে যা লেপ্টে থাকে মাথার মাঝে , দুই , তিন … … সাতদিন যায় মাথায় ল্যাপ্টানো কথাটিকে ভর্তা করে মাখিয়ে ফেলি নিত্যদিনের কাজ কর্মের সঙ্গে ,
অল্প কিছু মুভি আছে যা প্রথমবার দেখার পর মনে হয় , এক ঘেয়ে ব্যাপারগুলোর মাঝে এ ধরনের ডার্ক হিউমারের ছিটেফোটা লক্ষন ও কেন আগে কখনো আবিষ্কার করে চমৎকৃত হতে পারিনি , এক ঘেয়ে কাজগুলোকে নিখুঁত দৃঢ় ব্যাপার ভেবে কেন তার গভীরে ঢোকার প্রয়োজন অনুভব করিনি ,
আমার মনে আছে প্রথম যখন Lars von Trierএর Dogvile দেখি তখন মুভিটা চোখে লেগে থাকে টানা দুইটা দিন ।তাই তো এরকম চিন্তায় অসঙ্গতি , সমাজ, গভীর বাস্তবতা নিয়ে পুরোটা স্টেইজে তৈরি চলচিত্র আগে কখনো দেখা হয় নি ।
প্রথমবারের মত যখন Krzysztof Kieslowski এর Dekalog দেখলাম, তখন কিছু কিছু পর্ব দেখার সময় মনে হয়েছিল জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত এত জটিল কেন ? জীবনটাকে সর্বোচ্চ কত ঘাতের সমীকরনে প্রকাশ করা যায় , নাকি তা কেবল অসমতার রূপে সাজানো যায় , ঐ জীবনের অপ্টিমাম সমাধানগুলো কি জীবনের কালো দৃষ্টিভঙ্গীগুলো সাথে খিচুড়ি পাকিয়ে চালের মাঝে হারিয়ে যায় নাকি নিজেই ছোট্ট এক পরিসরে কালো কৌতুক হয়ে তালগাছের মাথায় উঠে হাসতে থাকে …
কিছু কিছু বই পড়ার পর কমপক্ষে তিনদিন পর্যন্ত দাঁতে লেগে থাকে , মাথায় ঢুকে বসে থাকে - গল্পের ভিতরে ছোট্ট মাথাটি দিয়ে খুড়তে খুড়তে অন্ধকার কুয়োতলে যাওয়া প্রত্যেকটি চরিত্রের গভীরতা, হয়তো সেখান থেকে কোন নির্দিষ্ট চরিত্রে হাত লাগালেই ঢোকা যায় অজানা কোন অতল গহ্বরে যেখানে কিনা জানা অজানা সকল চরিত্র এক সাথে বুদ হয়ে থেকে চেশ্যায়ার বিড়াল হয়ে হাসতে থাকে আমার দিকে চেয়ে …
One Hundread years of solitude পড়ার পর মনে হয় , ‘হাজার বছর ধরে’ এর পর এই প্রথম আরেকটা উপন্যাস পড়লাম যা মস্তিষ্কে বেঁধে গেল …
এরপর , প্রথম যখন কুন্ডেরাকে পড়ি , তখন মনে হয় এ ব্যাটার লেখার ধরন এত অন্যরকম আর অদ্ভুত কেন … জীবনের সকল উপাদানের সাথে গল্প, চরিত্র, বাস্তব ,অবাস্তব, স্বপ্ন , পরাবাস্তব সে কিভাবে এরকম মিশিয়ে দেখাতে পারে … নাহ কুন্ডেরা অন্য আরেক ক্যাটাগরি, হয়ত কুন্ডেরা ক্যাটাগরি …
সালমান রুশদির Midnight Children পড়ার পর মনে হল , এ লোকটা ও কি অদ্ভুতভাবে গল্প বলতে পারে … না সে ও অন্যরকম একটা ক্যাটেগরি … রুশদি ক্যাটেগরি
অনেকদিন পর বাংলা উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ কে প্রথমবারের মত পড়লাম , যা শুধু ঘ্রানের সাথে আমার গালে,নাকেই লাগেনি বরং … তা লেখক আখতারুজ্জমান ইলিয়াসের উপর এক অদ্ভুত ভাল লাগার খোয়াবী চিত্র এঁকে দিয়ে গেছে মানসপটে …

আমার পড়া আখতারুজ্জামানের প্রথম উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’।
ইহা খোয়াব দেখা মানুষের গল্প কি , মানুষগুলোর খোয়াবের গল্প তা বলা মুশকিল কারন ঘোরলাগা খোয়াবের মধ্যেই ছিল পুরো উপন্যাস , পূর্ববাংলার ঘুমন্ত এক অখ্যাত গ্রাম , কাৎলাহার বিলকে ঘিরে চলা মাঝি পাড়া , কামার পাড়া, বর্গা চাষীরা , লেখকের মাথায় সাঁতরানো আমি ।

এখানে ছিল, আধ-ঘুম, আধ স্বপ্নের মধ্যে কয়েকশত বছর অচল ভাবে পার করে দেওয়া সামন্ততন্ত্রের কড়া শাসন আর ইতিহাস উদ্ভূত নানা প্রাচীন জনপ্রিয় প্রবাদ নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়া তমিজদের গল্প ।

১৯৪৭ এর ভারত উপমহাদেশ ভাগ , জোতদারের শাসনের পরিবর্তনের সুর , তেভাগা আন্দোলনের সম্ভাবনার কথা, হিন্দু - মুসলমানদের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পের প্রভাবে খুনোখুনি আবার সেই খুনোখুনির মধ্যেও একে অন্যকে সাহায্য করার ছোট্ট ইচ্ছে , ক্ষুধাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো ভাতের স্বপ্ন দেখা মানুষ … সবই পাওয়া যাবে এ উপন্যাসে ।

জমিদার শ্রেনী চায় বিশৃঙ্খল প্রজাদের শাসন করে পূর্বেকার মত পোষ মানিয়ে ফেলতে , এদিকে জোতদারদের সাথে চাষীদের নিত্য লড়াই বেঁধেই আছে জমি, ফসল, বিল , মাছ কিংবা জাত নিয়ে ।
‘হামার আম খাবার পারো , আর এটি পানি খালে তোমার জাত যায় কিসক ‘ – শিশু কুলসুমের উক্তি যেন তর্জনী উঁচু করে প্রতিবাদ করে বসে শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসা মৌলবাদী, জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষগুলোকে।
ব্রিটিশরা এক সময় এই ভূখন্ড থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় , তাদের শূণ্যস্থান পূর্ণ করার জন্য চারিদিক থেকে ছুটে আসে তাদের ছাঁচে গড়া কিছু মানুষ …
কংগ্রেস চাইছে পুরো ভারত-ভুখন্ডের শাসন। মুস্লিম লীগ আর হিন্দু মহাসভা ঘোষণা করে দিয়েছে যে হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায় এক সাথে বাস করতে পারে না ।
এদিকে কলকাতায় ঘটা দাঙ্গার খবর গ্রামের ধর্মীয় ভঙ্গুর সম্প্রীতিতে উগ্রভাবে আঘাত করে এক সময় । পাকিস্তানের দাবিতে আয়োজিত মিছিল সভাগুলো গ্রামের সোজা সাপটা ধানের স্বপ্ন দেখা মুসলমানদের মাঝে প্রকৃত-অপ্রকৃত সচেতনতা সৃষ্টি করতে থাকে । হিন্দুদের জাত নিয়ে উপহাস করা ঘুমন্ত মুসলমানেরাই এক সময় দাগী জাতপ্রিয় জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড হয়ে একে অন্যের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।ওদিকে মোষের দিঘির পাড়ে শুকনা খটখটে মাঠের মাটিতে দাঁড়িয়ে কাৎলাহার বিলের উত্তরে সখিনারা দেখতে থাকে জ্বলন্ত হেসেলে বলকানো ভাত!!

মাঝি পাড়া, কামার পাড়া, বর্গাচাষীদের ব্যাক্তিগত স্তরের ক্রমবিকাশ , শ্রেনী পর্যায়ের বিবর্তন , গ্রামীণ সমাজকে অতল পাতলা খোয়াবের জালে আটকে , সেই জালের তলার গভীর অন্ধকারে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সূক্ষ্ম ,গভীর , বিদ্রূপ, বিষাদ, কালো কৌতুকের এক ডিস্টোপিয়ান ছবি ফুঁটে উঠেছে খোয়াবে খোয়াবে ভেসে বেড়ানো শোলক, গান এবং লেখকের আধ-বাস্তব রচনাভঙ্গীতে, যা এক কথায় চমৎকার :)
Profile Image for Sohan.
274 reviews74 followers
September 6, 2021
Remember˺ when Joseph said to his father, “O my dear father! Indeed I dreamt of eleven stars, and the sun, and the moon—I saw them prostrating to me!

সেমেটিক ধর্মে স্বপ্নের ব্যাখ্যার ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে ঐশ্বরিক বার্তা পেতে দেখা যায়। নবী জোসেফকে আমরা দেখতে পাই স্বপ্নের একজন ব্যাখ্যাকার হিসেবে। প্রদত্ত আয়াতটা ঠিক এই কারনে উল্লেখ করলাম।
ফার্সিতে খোয়াব (خواب) শব্দের অর্থ স্বপ্ন। আর খোয়াবনামা (خواب نامه) কথাটার অর্থ হতে পারে এরকম—Ballad of Dreams আর এটাকে বাংলায় বলা যেতে পারে স্বপ্নের পাঁচালি (যদিও এরকম অর্থ না করাই উত্তম)
ফার্সিতে আরেকটা দারুন কথা খুঁজে পেলাম, راه رفتن در خواب উচ্চারণ হবে, র’য়ে রাফতান্দ দার খ’ব, অর্থাৎ—ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা করা।
এই ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা করার একটা সুন্দর ইংরেজি নাম আছে—noctambulism.
আমি কোনদিন কাওকে ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা করতে দেখিনি তবে ইচ্ছে হয় এরকম কিছু দেখি। আমার ভাবতেও খুব অদ্ভুত লাগে, এমন একটা ঘটনা যেখানে, একই সাথে নিদ্রা আর শারীরিক চলাচল সক্রিয়!

আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রাম বাংলায় খোয়াবনামা শব্দটা আসলে এ��টু ভিন্ন নামে পরিচিত। খাবনামা। আপনারা দেখবেন এখনও বইমেলাতে পর্যন্ত খাবনামা নামক বিভিন্ন রকম বই বিক্রি হয়। বিশেষ করে সোলেমানি খাবনামা। এইসব বইয়ে থাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা। এই বইগুলোর কাটতি এখন কেমন জানিনা তবে একটা সময়ে গ্রাম গঞ্জে খাবনামা ধুমচে বিক্রি হতো। স্বপ্নের ব্যাখ্যার প্রতি মানুষের আগ্রহ সে আজকের কথা নয়, বহুকাল আগে থেকেই মানুষ স্বপ্নের রহস্যময়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এও বলে রাখা বাঞ্ছনীয়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর বইটার নাম কিন্তু ওইসব চটি বইগুলোর থেকে নেননি। খুব সম্ভবত কবি ওমর শামসের লেখা খোয়াবনামা নামক কবিতার বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কবি ওমর শামস ছিলেন লেখক ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এসবের সূত্র তাঁদের চিঠিপত্র। এক চিঠিতে ইলিয়াস লিখছেনঃ
‘তোমার অনুমতি নিয়ে রাখলাম। ব্যক্তির খোয়াব কেবল তার নিজের একার সাধ কি গ্লানি, ইচ্ছা কি আশাভঙ্গের কথা নাড়া দিয়ে যায় না, তার পূর্বপুরুষ, তার লুপ্ত পূর্বপুরুষের স্মৃতি, তার সম্প্রদায়ের ঝাপসা অতীত বা অসন্তুষ্ট বর্তমান স্বপ্নে উঁকি দিয়ে যায়’

কবি ওমর শামসের খোয়াবনামার একটু অংশ এখানে না লিখে থাকতে পারছি না। ইচ্ছে করছে পুরোটাই লিখে ফেলি!
নক্ষত্রের তলে কেউ জেগে নেই,
জেগে নেই কেউ আজ রাতে।
সবাই ঘুমোয় ঢের–স্বনিদ্রায় সব্বাই স্বপ্নে বিভোর।


আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা শুরু হয় একরকমের noctambulism দিয়ে। আমার কাছে মনে হয়, গোটা উপন্যাসটাই a journey through noctambulism. আমি যতবার বিরতি নিয়ে বইটি পড়েছি ততবার মনে হয়েছে আমি অতল ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি, অক্ষরগুলো যেন চোরাবালির মতো আমার চোখ মাথা শরীর উপড়ে নিয়ে নিচ্ছে বইয়ের ভেতর...তবু আমি পড়ে চলেছি, পড়ে চলেছি যেন কেও আমায় সম্মোহন করে গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে। গল্পের প্লটের থেকে লেখকের গল্প বলবার ধরনটা আরও অনেক বেশি চমৎকার লাগে। আর ঠিক সে কারনেই সম্মহনগ্রস্থ ব্যাক্তির মতো পড়ার তালে তালে ঢুলে ঢুলে পরতে ইচ্ছে করে। সে অনুভূতি অবশ্য লিখে বা বলে বোঝানো দায়!
যখন লেখেন… দিঘি, এদিকে মাঠের পর মাঠ, উপরে কুয়াশা জড়ানো চাঁদের আলো। তমিজের জমিতে পাতলা কুয়াশা টাঙানো রয়েছে মশারির মতো, মশারির ভেতর চুয়ে-পরা আলোয় তার ধান গাছগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে মাথা ঝুঁকে। চাঁদের আলো এই ধানক্ষেতে ঢুঁকে আর বেরোয় না, ধানের শীষে গাল ঘষতে ঘষতে ধানের রঙ চোষে চুকচুক করে। আবার আলো পোয়াতে পোয়াতে ঘুমায় সারি সারি ধানগাছ।
তখন মনে হয় আহা জ্যোৎস্না রাতে ধানের ক্ষেতের কি অপরূপ বর্ণনা দিলেন কিন্তু পরক্ষনে যখন মরীচের ক্ষেতের একটা বর্ণনা দেন তখন অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবি, ‘আমি কি কখনও শীতের জ্যোৎস্না রাতে মরীচের ক্ষেতের উপর গোলাপি কুয়াশা দেখেছি?’
এরকম অসংখ্য যায়গায় থেমেছি। ভেবেছি। মুগ্ধ হয়েছি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাতা উলটেছি।

আরও একটি অসাধারণ বিষয় হলো আঞ্চলিক ভাষার ব্যাবহার! আমাদের অঞ্চলের ভাষার সাথে একরকমের সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল উত্তরবঙ্গেই কোথাও। পরে ঠিক ধরতে পেরেছি এটা আমাদের পার্শ্ববর্তী বগুরা অঞ্চলের ভাষা। লেখকের জন্ম গাইবান্ধায় হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বগুরা। সে কারনে বোধহয় সেখানকার আঞ্চলিক ভাষার উপর লেখকের বেশ ভাল দখল ছিল।
বাপের ঘরের দরজা খুলে দিয়ে কুলসুম একটু সরে দাঁড়িয়ে বলে, ‘এতো আতেত তুমি কোটে গেসিলা গো? তোমার বাপের ব্যারাম তোমাক ধরিছে?’ দরজায় বাঁশের ডাঁশা লাগাতে লাগাতে সে হাসে, ‘আজ তুমি কোটে কোটে ঘোরো আর তোমার বাপ নিন্দ পারে ঘরের মদ্যে’
	চোপসানো বুকে তমিজ ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ করে, ‘তাঁই ঘরত?’



উপন্যাসের প্রেক্ষাপট চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে হলেও যে নিম্নবর্গের মানুষের গল্প তিনি বলেছেন তাঁদের দুঃখ দুর্দশার কথা বুঝতে গেলে হিস্ট্রিকাল টাইমলাইনে একটু পেছন ফিরে তাকাতেই হয়। মনে পরে যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা আর সে সময়ে কর্ণোয়ালিস আর জন সাহেবের ডিবেটের কথা। জমিদার-জোতদার-রায়তের মধ্যকার জটিল সম্পর্ক নিরীক্ষণের কথা।
সিপাহী বিদ্রোহ থেকে ফকির আন্দোলনের কথা বার বার জটিল আবর্তনে উপন্যাসে চরিত্রগুলোর শয়নে স্বপনে চলনে ঘুরে ফিরে চলে আসতে দেখা যায়। বার বার মনে করিয়ে দেয় পূর্ব পুরুষদের সংগ্রামের কথা। ত্যাগের কথা।
উপন্যাসের একটা বিশেষ অংশজুড়ে তেভাগা আন্দোলনের কথা থাকলেও তেভাগা-ই যে এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয় তা আমার মনে হয় না। গল্পের একটি মূল চরিত্র জাতে জেলে কিন্তু স্বভাবে কৈবর্ত! অভাব তাঁর স্বভাব পাল্টে দিয়েছে। তালুকদার-জোতদারদের বিল দখলের ফলে মাঝিরা জেলেরা হারিয়েছে তাঁদের পূর্ব অধিকার। বিলের ইজারা যার মাছ ধরবার অধিকার তার—এরকম একটা নীতি আমরা লক্ষ্য করি। জেলেরা যখন মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজে প্রবেশ করতে চায় তখন তারা এক রকম সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়, কৈবর্ত সমাজ কিন্তু সহজে তাঁদের গ্রহন করে না। একটা সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব আর সমাজবাস্তবতা এখানে কাজ করে যেটা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস চমৎকার করে তুলে ধরেছেন।
অর্থাৎ—প্রান্তিক চাষিদের ফসলের ন্যায্য পাওনাই শুধু নয়, জেলে সমাজের বিল অধিকারটাও এখানে মুখ্য একটি বিষয় হিসেবে গন্য হয়েছে।
মাঝিদের বার বার বলতে শোনা যায়, পাকিস্তান হয়ে গেলে আমরা বিলে মাছ ধরতে পারব। কেও আমাদের মাছ আর কেড়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
জেলে সমাজের এই আকাঙ্ক্ষা এক সময় বিপর্যস্ত হয়। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আবার চাপা পরতে হয় বাইনারি অপজিশনে। পাকিস্তান হয়। জমিদারি উৎখাত হয়। সে সাথে উত্থান হয় নয়া জমিদারদের, জোতদারের দখল করা জমি বাড়ে। বিলের পত্তনি হাত বদল হয়। গৃহস্থ মাঝির হাতে সে বিলের পত্তনি হলে তার দেয়া প্রাক-পাকিস্তানি ওয়াদা আর নিভানো হয়না।
ফলে নিম্নবর্গের জেলে মাঝিদের অবস্থা যেই কে সেই।

কেরামত আলি কি আর এমনি এমনিই গায়ঃ
ভারতবর্ষে কায়েম করো আজাদ পাকিস্তান
মোসলমানের সকল দুঃখের হইবে অবসান ।।


শুধু দুঃখ দুর্দশাই এই বইয়ের শেষ কথা না। আরও কথা আছে। সমাজের সকল শ্রেণির মনস্তত্ত্ব যেভাবে তুলে ধরেছেন ইলিয়াস সাহেব, ভাবতে অবাক লাগে চরিত্রগুলোকে কতো সূক্ষ্মভাবে নিরীক্ষণ করে নিয়েছেন লেখক।

কবি ওমর শামসের খোয়াবনামা কবিতাটার শেষ অংশ দিয়েই আজকের মতো শেষ করি না হয়ঃ

কোটি-কোটি খোয়াবের রুটি তসবীর দানা হয়ে গেঁথে আছে,
হাজার লবণদানা, লক্ষ ভাতের দানা, অনন্ত তন্দুরী।
ভোর হচ্ছে,
মুখর হয়েছে আবাবিল পাখিরা।
মিনারে-মিনারে আজান,
আমি প’ড়ে চ’লেছি তোমাদের খোয়াবের পবিত্র আয়াত।
সফেদ ডানার জিব্রাইল,
কোথায় ছুটেছো?
নিয়ে যাও, নিয়ে যাও
তাঁহারই প্রশংসার নাম
কোটি-কোটি তন্দুর,
সহস্র সিদ্ধ চাল
সিন্ধু লবণ খচা
রক্তের, মাংশের, মানুষের, মানুষীর অনন্ত তস্বী :
জীবনের খোয়াবের অফুরান ফরিয়াদ!
Profile Image for Biswajit Chakraborty.
25 reviews45 followers
May 22, 2016
তো কথাটা হচ্ছে ��িরে আসলাম; হুম, ফিরে আসাই বলা চলে; না কি, আবার ভাবি; আসলেই কি ফিরে আসছি? আচ্ছা এই ক্যাচালে আপাতত না গিয়ে বরং এটা নিয়ে আগে ভাবি যে কোথায় ছিলাম । ছিলাম তো আসলে খোয়াবে। খোয়াবের মধ্যে তমিজের বাপের মত গলার রগ টানটান করে কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানে পাকুড়গাছ থেকে মুন্সির নির্দেশ শোনার জন্য যতটা পারা যায় উঁচুতে তাকায় ছিলাম। ছিলাম সন্ন্যাসীর থানে নাইলে গোলাবাড়ির হাটে বটতলায় বসে, শুনতেছিলাম ফকিরের গান । ছিলাম গিরিরডাঙ্গা, নিজগিরিরডাঙ্গার মাঝিপাড়া আর চাষিপাড়ায় । ‘শালা মালাউন একটাকও রাখা হবি না’ বলে যখন পালপাড়ায় বা কামারপাড়ায় হামলা হচ্ছিল, ওইখানেও ছিলাম । আবার ‘সব শালা বেন্ন্যার জাত’ বলে নায়েববাবু যখন মুসলমানদের গাল দিচ্ছিল, জমিদারের কাছারিতে বসে সেটাও শুনতেছিলাম । কাৎলাহার বিলের দুইপাশের গ্রামের জমিতে আউশ, আমন বা পেয়াজ-মরিচের আবাদের সাথে সাথে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোয় জোনাকির লাগানো আগুনে সানকি ভরা ভাতের গন্ধও শুঁকতেছিলাম।

তো ফিরে আসার ব্যাপারটা নিয়ে তাইলে কি সমস্যা হচ্ছিল ? হুম, ইলিয়াসের লেখা পড়েই যে খোয়াব তৈরি হয়, সেখান থেকে হয়ত ফিরে আসছি বা শিগ্রই আসব । কিন্তু আমাদের গোটা জীবন আর তার ইতিহাস যে খোয়াবে ভরা, সেখান থেকে তো আর ফিরতে পারি না । যে খোয়াবের শুরু সাতচল্লিশে(নাকি তারও আগে?)।‘বন্দে মাতরম’ অথবা ‘নারায়ে তকবির’ দিয়ে যে খোয়াবের শুরু ।‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, গান্ধি-জিন্নাহর মিলন চাই’ স্লোগানে যে খোয়াবের শুরু ।‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে যে খোয়াব দেখত বর্গাচাষী আর কামলাপাটের দল; পাকিস্তান হলে হিন্দু জমিদার আর রক্ত চুষতে পারবেনা, আরে তখন তো জমিদার-জোতদার এসবই থাকবে না, তেভাগা হবে, দুই ভাগ ফসল পাবে চাষী । হায়রে খোয়াবনামা! ফকির তো ফকির, মুন্সি তো মুন্সি, স্বয়ং ভবানী পাঠক আর মজনু শাহ মিলেও সেই খোয়াবের মর্ম বের করে এমন সাধ্য কই ?

খোয়াবনামার শুরু হয়, কিন্তু শেষ তো আর হয় না; তার মর্মও কেউ উদ্ধার করতে পারেনা । তেভাগার খোঁজে বেরিয়ে পড়া তমিজ অথবা মোষের দীঘির ঢালে ঘাড় উঁচু করে থাকা তার মেয়ে সখিনার মত আমরাও তাই মুন্সির আশায় চেয়ে থাকি, ফকিরের মত পাওনা সব গান আর শ্লোকের মধ্যে খোয়াবের মাজেজা বোঝার চেষ্টা করি, আমাদের বাপ-দাদা অথবা তারও বাপ বা দাদার সময় থেকে পাওয়া এই খোয়াব থেকে আমরা তাই আর যাই করি না কেন, ফিরে আসতে পারি না ।
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
June 2, 2020
খোয়াবনামা আর চিলেকোঠার সেপাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দুটো টুকরো। ইলিয়াস পড়া মানে বাংলা সাহিত্যের পাঠক হিসেবে একটা সোপান অতিক্রম করা। একদিকে তমিজ, তমিজের বাপ, চেরাগ আলি, কুলসুম, আর অন্য দিকে ঢাকার রঞ্জু আর হাড্ডি খিজির- পাঠকের মনে এ কিস্যা এমন করে চেপে বসে, যা আর এ জনমে ভোলা অসম্ভব।
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
August 23, 2025
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা কেবল একটি উপন্যাস নয়, এটি এক অনন্ত নদীর মতো—যার স্রোত বয়ে চলে ইতিহাস, স্বপ্ন আর ফোকলোরের মিশ্র সুরে। এই বই পড়তে বসলে মনে হয় আমরা কোনো কাগজে বাঁধা লেখা পড়ছি না, বরং শুনছি মাটির ভেতর থেকে উঠে আসা কৃষকের নিঃশ্বাস, গ্রামীণ নারীর গান, নদীর তীরে ভেসে থাকা লোককথা আর প্রজাদের চোখে দেখা ভাঙা স্বপ্ন।

উপন্যাসের পটভূমি ১৯৪৬ সালের তেভাগা আন্দোলন, কিন্তু ইলিয়াস কখনো রাজনীতিকে কেবল রাজনৈতিক ভাষায় ধরেননি। তিনি ইতিহাসকে টেনে এনেছেন গ্রামীণ মানুষের জীবনে, তাদের ঘরে-বাইরে, হাসি-কান্নায়। আর এই টানাপোড়েনের ভেতরেই জন্ম নেয় স্বপ্ন—যা আবার ভেঙে চুরমার হয়ে যায় জমিদারের শোষণে, দারিদ্র্যের আঘাতে, কিংবা সময়ের নির্মম সত্যে।

খোয়াবনামার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো এর লোকজ আবহ। আঞ্চলিক ভাষার টান, প্রবাদ-প্রবচনের ঝংকার, ভূত-প্রেতের গল্প, মৌসুমি উৎসব, কৃষকের বিশ্বাস—সব মিলিয়ে বইটি যেনো লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার। এখানে ফোকলোর কোনো অলঙ্কার নয়; বরং মানুষের আত্মপরিচয়, তাদের দুঃখ-সুখ, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রাণশক্তি। লেখক যেনো প্রমাণ করেছেন—ইতিহাসকে বোঝার আসল দরজা ফোকলোরের ভেতরেই লুকিয়ে আছে।

এই উপন্যাসে কোনো একক নায়ক নেই। গোটা গ্রামের মানুষ মিলে গড়ে তুলেছে চরিত্রমালা। তাদের প্রতিটি কণ্ঠ, প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মিলে বইটিকে করে তুলেছে এক মহাকাব্যিক আখ্যান। যেনো সমষ্টিগতভাবে পুরো সমাজই এখানে কণ্ঠস্বর পেয়েছে।

খোয়াবনামা শেষ করার পর মনে হয়, আমরা এক অনন্ত যাত্রা শেষ করে এলাম। বইটা হাত থেকে নামলেও তার আবহ, তার ভাষা, তার চরিত্র আর লোকজ আত্মা দীর্ঘদিন আমাদের ভেতরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। এ কারণেই খোয়াবনামা নিছক উপন্যাস নয়—এটি হলো স্বপ্ন, ইতিহাস আর লোকজ আত্মার মিলনে রচিত বাংলার এক অমর মহাকাব্য।

বইটা পড়েছিলাম গতবারে। হঠাৎ বোধদয় হলো বইটা পড়ে আছে রিভিউ করা দরকার! যেই ভাবা সেই কাজ।
ফোকলোরের লেন্সে বইটা রিভিউ করা হয়েছে।
Profile Image for Prithvi Shams.
111 reviews106 followers
March 9, 2015
ভারতভঙ্গের ম্যাক্রোপলিটিক্সের নেপথ্যে কাৎলাহার বিলের দু’ ধারের গ্রামীণ মাইক্রোপলিটিক্স। একদিকে হিন্দু পুঁজিপতিদের রাজ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, আরেকদিকে নব্য গজিয়ে উঠা মুসলমান এলিটদের পুঁজি দখল ও সম্প্রসারণের লড়াই। অথচ শালা চাষা আর মাঝির জাত শ্রমের মূল্যায়নের আশায় লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। অবশেষে পেয়ারের পাকিস্তানের আগমন, হিন্দু নায়েবের জমি নিল মুসলমান সায়েব, কিন্তু চাষা আর মাঝিরা এখনও আউশ ধানের ক্ষেতের উপর জোনাকির দপদপ দেখে ভাবে জ্বলন্ত হেঁসেলে বলকানো ভাত।
নায়েবরা জনমানসে ভবানী পাঠককে হটিয়ে মা কালীকে আনতে চায়, সায়েবরা মজনু শাহর অনুচর বয়তুল্লাহ মুনসির কেরামতি খারিজ করে প্রতিষ্ঠা করতে চায় দ্বীনের শাসন, মুসলিম লীগের শাসন। আতরাফ মুসলমানরা ধর্ম মানে ঠিকই, কিন্তু তবুও মুনশিকে না খ্যাপানোই ভালো। রাষ্ট্রের ফেডারেল লেভেলে অনেক কিছুই বদল হয়, রাষ্ট্র জোড়া লাগে, আবার রাষ্ট্র ভেঙেও পড়ে। কিন্তু গ্রামগঞ্জের ঝোপে-ঝাড়ে, বনেবাদাড়ে পাকুড়গাছের চূড়ায় বসে শাসন করে মুনসি বয়তুল্লাহ শাহ। তারপর উত্তরাধিকারসূত্রে তমিজের বাপ, তমিজের তনয়া সখিনা। পাকুড়গাছ থেকে নেমে আসা শোলোকেই জীবন বাঁধে হতভাগার দল। খোয়াবনামাই পথচলার পাথেয়।

ইলিয়াসের এই বইটা পড়ার সময় খোয়াবে ধরে। বইটা প্রায় শেষ হয়ে এলেও খোয়াব কাটে না, ফ্ল্যাপের কভারে খোয়াব শিশিরবিন্দু হয়ে টলোমলো করে।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
August 15, 2025
একবার পড়ে ফেললেই তো শেষ, এমন ভাবনা থেকে এতদিন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দুই উপন্যাসের কোনোটিতেই হাত দিইনি। কিন্তু, জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর পর ভাষা কোর্সের প্রভাষকের কাছ থেকে এক রকমের মোটিভেশন লাভ করে খোয়াবনামা শুরু করি।

জমিয়ে উপভোগ করার জন্য পড়েছি শুধু সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে। অন্যান্য দিনে, যখন ক্লাস ও পড়ার নানা চাপের মধ্যে থাকতে হয়, পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া তখন চাইলেও সম্ভব হয় না।

ঘোর লাগা এক কাহিনি ইলিয়াস রচনা করেছেন নিজের শক্তিশালী ভাষা দিয়ে। অবশ্যই এ উপন্যাসের ভাষা তার গল্পের ভাষার থেকে আলাদা৷

সাতচল্লিশের ভারতভাগের কিছুকাল আগে থেকেই এর গল্পের শুরু। শেষ হতে হতে পাকিস্তানের জন্ম হয়ে পেরিয়ে গেছে আরও কিছু দিন।

সাড়ে তিনশো পাতার এই উপন্যাসে, গল্পটি যেন এক চক্র পূর্ণ করে। যে জায়গা থেকে শুরু হয়, সেখানে সমাপ্তি যদিও হচ্ছে না, কিন্তু, কাহিনির উৎকর্ষতার খাতিরে যে বিশাল যাত্রা পরিক্রম করতে হয় সেটার পুরোটাই পূর্ণ হয়েছে।
Profile Image for Daniel KML.
116 reviews31 followers
July 20, 2021
Rich and rewarding blend of history, myth and poetry with notes of social criticism and magical realism - that was my first experience with the author Akhtaruzzaman Elias and Bangladeshi literature in general and I am looking forward to reading more of it.

Kudos to Arunava Sinha for the beautiful translation and for making this work available for a larger audience - I can only imagine the intricate work involved in translating it.

The author's wikipedia article links to this very interesting review which I truly recommend if you enjoyed the book:
https://web.archive.org/web/200801251...

This work is truly deserving of a wider release in UK/US markets and all the potential accolades (e.g., International Booker, etc)
Profile Image for সানি .
14 reviews17 followers
January 17, 2015
গত ৭ বছরে তিনশো,চারশো নাকি তারও বেশি গল্প-উপন্যাসের বই শেষ করার পর, জনা বিশেক লেখকের সাথে বাংলার আনাচেকানাচে হেঁটে বেড়ানোর পর, আমারে থামতে হবে কাৎলাহার বিলের পাকুড় তলাতে!
যেখানে মুন্সি গজার চড়িয়ে ভেড়ার রূপ দেয় প্রতি রাতে।
চেরাগ আলি, তমিজের বাপ, তমিজ আর সখিনা'রা জনমের পর জনম যেখানে পায়ের রগ টানটান করে দাঁড়িয়ে ভাতের গন্ধে-কাদার গন্ধে-মাছের গন্ধে আধাপেট ভরার আশাতে মুন্সির উপর আস্থা করে।
বিভূতিভূষণের 'আরণ্যক'এর পর মানব প্রেম কাহিনী,কিশোর উপন্যাস আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বাহিরে গিয়ে খুঁজে পাওয়া দারুণ এক মাস্টারপিস এই বই। গ্রামীণ মিথ যার সাথে দেশ ভাগ, নির্যাতিত চাষী, মাঝি,সমাজের নীচু স্তরের মানুষের সংগ্রামের বাস্তব চিত্র বাস্তবিক অর্থেই শোলকে,কাব্যে চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলতে সক্ষম হয়েছে লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার লেখা "খোয়াবনামা" উপন্যাসে।
Profile Image for নিশাত জাহান ঊষা.
63 reviews30 followers
August 21, 2022
খোয়াব কি?
ঘুমের ঘোরে অবচেতন চিন্তার প্রতিচ্ছবি? নাকি নতুন সকালে রোজ জেগে উঠার প্রেরণা? নাকি আর কিছু?

খোয়াবনামা এমন এক উপন্যাস, যাকে দরাজ আঙুলে পাঁচটি তারাই দিয়ে দেয়া যায়। তমিজ, তমিজের বাপ, কুলসুম, চেরাগ আলী, ফুলজান, হুরমতুল্লা, শরাফত মণ্ডল, পাকুড় গাছের মুনশী সহ আরো আরো চরিত্রের মাধ্যমে লেখক এঁকে ফেলেছেন এক বিশদ ও গভীর চিত্র যাতে ফুটে উঠেছে তেভাগা আন্দলন, দেশ ভাগ, মানব অস্তিত্বের সংকট ও শ্রেণী বিভাজন, হিন্দু-মোসলমান দাঙ্গা সহ আরো অনেক ব্যাপার যা থেকে বাদ যায়নি তৎকালীন রাজনীতিও! এমনকি এ উপন্যাসে লেখক ১৭৮৭ সালের প্রচন্ড ভূমিকম্পের কথাও তুলে ধরেছেন যার ফলে পরিবর্তিত হয় ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ এবং সৃষ্টি হয় যমুনা নামে আরেক শাখা নদীর। ১৯৪৭ সালের কিছু আগের ও পরের ঘটনা নিয়েই মূলত উপন্যাসটি রচিত। আর গল্পের ধারাবাহিকতায় বিচিত্র চরিত্রসমূহের সাথে সেঁটে দেয়া বিচিত্র সব খোয়াব!

তমিজের বাপের খোয়াব পেট ভরা দুটো খাবার আর মুনসির দেখা পাওয়া। যে মুনসি তমিজের বাপ বাঘাড় মাঝির দাদার আমলে গলায় গোরা সেনাপতির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা পড়ে এবং তারপর আরশ বানিয়ে চড়ে বসে কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানের পাকুড় গাছে। তমিজের খোয়াব কিছু জমি, এক জোড়া গরু-লাঙ্গল। কুলসুমের খোয়াব একটা ওম ওম কাঁথা যেটা দিয়ে শীত পার হবে উষ্ণতায়, ফুলজানের খোয়াব নিজের একটা সংসার.... এমনি সব চরিত্রের বিচিত্র সব খোয়াবের মধ্যে সকলে একটা খোয়াবই প্রকট হয়ে উঠে, ক্ষুধা। হতদরিদ্র মানুষ গুলোর একমাত্র আশ- ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ি, ভাতের ম-ম গন্ধ, সানকি ভরা ভাত, টালা ভরা চাল।

উপন্যাস জুড়ে আছে কোনো বাস্তব গ্রামের মতই মাঝিপাড়া, কলুপাড়া, চাষাপাড়া, কামারপাড়া ইত্যাদি। শ্রেণী বিভাজন ও অস্তিত্বের রেষারেষি যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তার মাঝে সবসময়ই এগিয়ে থাকে শোষক চরিত্র, গ্রামের জোতদার শরাফত মন্ডল। যার শোষণের চিত্রে পাঠকের কাছেও তেভাগা নীতির প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে উঠবে। শরাফত মন্ডল শুধু জমিই না, নিজ ক্ষমতার আওতায় নিয়ে আসে গ্রামের মাঝি শ্রেণীর মাছ ধরবার বিলের মালিকানাও!

উপন্যাসের রচনা বেশ গভীর প্রকৃতির। অনেক জায়গায় ভাবের গভীরতা বুঝতে বার বার পড়তে হয়েছে। বুঝতে পারার পর অবাক হয়ে ভাবতেও হয়েছে! ঔপন্যাসিক ভীষণ দক্ষ হাতে এঁকে গেছেন গ্রাম্য কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস-গোঁড়ামীর ছবি। এরই মাধ্যমে বেশ কিছু জায়গায় অবতারণা করেছেন অলৌকিক পরিস্থিতির। পড়তে হয়েছে ধীরে ধীরে, বেশ সময় নিয়ে।

দেশভাগের কোন্দল, অভ্যন্তরীন রাজনীতি ক্রমেই হিংস্র রূপ নেয়। ঘটনার পরিক্রমায় হারাতে হয় বেশ কিছু প্রিয় চরিত্রকেও! খোয়াবনামা উপন্যাসে চরিত্র সংখ্যা প্রচুর। তবে ঔপন্যাসিক ভীষণ দক্ষতায় প্রাণ ঢেলেছেন সবার মাঝে। প্রত্যেক চরিত্রের এমন কিছু আলাদা বৈশিষ্ট আছে যা অবচেতন মনেই তাদের বাস্তবে চেনা মানুষ বলে ভ্রম তৈরী করে। এখানেই ঔপন্যাসিকের সার্থকতা।
Profile Image for Chitra Ahanthem.
395 reviews208 followers
July 19, 2021
Khwabnama by Akhteruzzaman Elias, translated by Arunava Sinha is a blend of magical realism, lyrical poetry and prose that capture the politics of majoritanism that wreaks havoc on the lives of the common men and women. Told through the aspirations and anxieties of people who fall through the cracks, leaving them out from the larger narrative of a nation and its leaders, the narrative asks a profound question: What are dreams made of and who gets the leisure of a dream? 

Set in the Bengal of the 40s, Khwabnama is an epic in terms of its scope, the historical backdrop, the characters and their stories. It starts like a fable and slowly singes its way with a firm political voice: the despair of starvation, the oppression faced by landless peasants and farmers who work tirelessly in the fields in the hope of some relief only to be denied a fair share of the crop, people who do not count for much except for their labour, except for their votes and numbers in a crowd assembled for a political cause.

The writing is sharp when it ventures into the political space with the characters mirroring their lack of agency: all they want is a lake to fish in abandon, a field to grow rice and vegetables but what they get are rhetoric and laws that do not consider their struggles. The innate poetry describing the squalor and the struggles of the poor, as they get carried by the toss and turn of the winds around them, is deeply poignant and a study in contrasts. The passages that describe the acute hunger of the characters will make you react to the smell, the feel and the taste of food in a way you have not known earlier. Reading this book has been an experience: it's left me reeling. 

Full review here: Full review: https://bookandconversations.wordpres...
Profile Image for Ruhshan Ahmed Ahmed.
Author 1 book21 followers
July 1, 2016
কঠিন বই, কঠিন কিছু করে ফেলতে পারলে একটা ভালোলাগা কাজ করে। তা তো আছেই, বইটা শেষ করে আধা ঘন্টা ঝিম মেরে বসেছিলাম।
অনেকদিন মনে থাকবে কাৎলাহার বিল ও তার আসেপাশের মানুষদের কথা। বিদ্রোহী তমিজ ও 'তমিজের বাপ' এর কথা। লেখক কি খেয়ালে যে সবগুলা চরিত্রের নাম দিলেও 'তমিজের বাপ' চরিত্রটির কোন নাম দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।

সে যাই হোক, যারা সাজেস্ট করেছিলেন তাদের সাথে দেখা হলে জমা প্রশ্নগুলো নিয়ে ধরব। তখন ���ারা 'খোয়াবে পাওয়া প্রশ্নের জবাব হয় নাকি?' টাইপ রসিকতা করলে কিছু করার থাকবেনা :/
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
September 12, 2024
বাংলায় এরকম লেখা হয় নি, হবেও না। ইচ্ছা করেই দেরি করে পড়েছি, কারন উনার উপন্যাস ই মাত্র ২ টা। এই ২ উপন্যাসেই যে কি করে গেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব! সেরা 👌 ৫ স্টার। এখনই পড়ে ফেলুন না পড়া থাকলে!
Profile Image for Molly.
2 reviews3 followers
April 26, 2012
One of the best books I've ever read. The author writes in a way that makes you feel you are in 'majhi para' or in 'girir danga'
Profile Image for Naziur Rahman.
Author 1 book68 followers
June 4, 2018
কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানে যে পাকুড় গাছের যুগ যুগের উপাখ্যান বংশ পরম্পরায় গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ঘোরে সে বিল আর পাকুড় গাছ আসলে বাংলার সব গ্রামেরই অকৃত্রিম চেহারা। সময়ের সাথে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকলেও ঐ অকৃত্রিম রূপের কাহিনী এখনো অবিকল।
উপন্যাস হিসেবে খোয়াবনামা খুব গুছিয়ে পড়বার মত যুত করে ওঠা যায় না। উপন্যাসের গ্রাম বাংলার মতই যেন উপন্যাসের কোন গাছ পাথর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিসের ভেতর দিয়ে শুরু হল আর কোথায় গিয়ে শেষ হল, বা আদৌ শেষ হল কিনা, অথবা শেষ হবার প্রয়োজন আছে কিনা তার কিছুই ঠাহর করে ওঠা যায় না। লেখক ঠিক ইচ্ছাকৃতভাবেই কেন যেন কাহিনীকে জমাট বেঁধে উঠতে দেন না। ভাষার জাদুকর ইলিয়াস তার অদ্ভুত উপমাবিধৃত লেখনী দিয়ে পাঠককে টেনে তার চরিত্রের মাথার ভেতরে (চরিত্রের ভেতরে ���য়) নিয়ে যান, যেখানে বসে বসে পাঠক চরিত্রের সাথেই দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে। লেখকের ভাষা চরিত্রের ভেতর দিয়ে পাঠকের অনুভূতিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু কাহিনী জমাট বাধে না। কাহিনী যেন ঘুরে ফিরে একই বৃত্তে ঘুরপাক খায়। সেই একই জীবনধারা, একই গল্পগাঁথা, একই রূপকথা, একই অলীক বিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন রূপে ঘুরে ফিরে জট পাকায়। মাঝে মধ্যে আন্দোলন হয়, ইংরেজ যায়, তেভাগা হয়, পাকিস্তান আসে, বাংলা হয় কিন্তু এই ঘুরবৃত্ত আর সীমানা ভেঙে বের হতে পারে না। এ এমন এক ধাঁধা যেখানে জাত, ধর্ম,দেশ,রাজনীতি সব দ্বন্দ্ব মিলে মিশে জট বেধে যায়। মিশে গিয়ে একাকারও হতে পারে না আর তেল জলের মত আলাদাও থাকে না। এ এক অদ্ভুত উপাখ্যান!

তবে উপন্যাসের মতই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র তমিজের হুট হাট অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনায় গল্প ছন্দ হারায় যেন। ঠিক কি আবেগের বশে কি চিন্তা করে তমিজ এ আচরণ করে বেড়ায় তা ঠিক বুঝে ওঠা যায় না।
যেই খোয়াবনামা ঘিরে কাহিনীর শুরু সেই খোয়াবনামা গৌণ হয়ে গল্পের মাঝে হারিয়ে যায়, অথবা পুরোগল্পটাই নানা বর্ণের খোয়াবের একটা নামা বা গাঁথা হয়ে যায়। কিন্তু ঐ কিতাবের অদ্ভুত সব অনর্থক জ্যামিতিক দাগের আর কোন অর্থ উদ্ধার হয় না। কেরামত আলির আর ঐ কিতাবের জোরে শোলক লেখা হয় না। গল্পের তোড়ে কিতাব কোন ফাঁকে যেন ফুসমন্তরের মতন হারিয়ে যায়!
ভাষার অদ্ভুত গাঁথনি আর পড়ে শেষ করবার তীব্র ইচ্ছা উপন্যাসের পাঠক হিসেবে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু বার বার খেই হারিয়ে উপন্যাস শেষ করে মাথায় যেন কি এক ধন্দ লেগে থাকে! মনে হয়, এরকম না হলেও তো পারত!
Profile Image for Mrinmoy Kundu.
14 reviews5 followers
May 10, 2020
এটাকে কি ক্ষুদ্র জীবনবোধের গল্প বলবো? যেখানে প্রান্তিক অদৃশ্যপ্রায় মানুষগুলোর জীবন বাহিত হয় কাৎলাহার বিলের কাদায় পা ডুবিয়ে, জার পড়া পাথারে সকালে ক্ষেতের নরম মাটিতে আঙ্গুল বুলিয়ে কিংবা যমুনার গ্রাসে ঘরবাড়ি হারানো ফকির দাদার সাথে ছোট্ট বালিকার শোলক শেখার মধ্য দিয়ে?

গল্পটার সময়কাল ভারতবিভাগের কিছু আগে, পোড়াদহ কিংবা বগুড়া থেকে অদূরে কোন সাধারণ নিজগিরিডাঙাগ্রামে; কিন্তু এই আখ্যানগুলো কোন সময়ে বা স্থানে বাঁধা পড়ে না, প্রাচীনত্বের স্বাদ পাওয়া গল্পগুলো পৌরাণিক, পুরাণের জন্মান্তরের চক্রের মতো ঘুরছে সময় আর স্থানের সাথে সাথে। দুশ বছর আগের ফকির-সন্ন্যাসী-বিদ্রোহ থেকে ভূমিকম্পে যমুনার গতিপথ বদলে যাওয়ার স্মৃতি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে গল্পের চরিত্রগুলো। পাকুড়গাছের মুনসির ভূত বিলীন হয়ে গেলোও সেই লোকশ্রুতির স্থলে চক্রাকারে আবার স্থলাভিষিক্ত হয় তমিজের বাপের চোরাবালিতে উল্টো ঝুলে থাকা ঘাওয়ালা পায়ের গল্প৷

এতো সব স্বাপ্নিক, কার্যত নিষ্পাপ পাড়াগায়ের গল্পগুলোর আড়ালে জাল বুনে আছে আরো এক বৃহৎ জীবনবোধের গল্প - যেখানে দ্বিজাতিতত্ত্বের তাত্ত্বিকসারতা অসারতা পায় কিংবা পায় না, তেভাগা আন্দোলনের মাঝে লাল ভূতের ভয়ে মুসলিম লীগের প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসু হয় কিংবা হয় না, এক রাজার অভিসারের পর অন্য রাজার উত্থান তমিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করে কিংবা করে না। চাষাভুষা মাঝি পাড়ার অশিক্ষিত মানুষগুলো এতো সব বোঝে না, তারা "নারায়ে তাকবির" হ্রেষাধ্বনিতে কামার পাড়ায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করে কখন কাস্তের ঝনঝনানির সাথে "বন্দেমাতরম" শুনিয়ে আরেকদল তাদের পাড়ায় আসবে৷

খোয়াবনামার মতো মহাকাব্যিক শৈলী বাংলা সাহিত্যে আর কোথাও আবির্ভূত হয়েছে কিনা জানি না, নিঃসন্দেহে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এই সৃষ্টি কালের অতীত।
Profile Image for Alauddin Ajad.
40 reviews3 followers
September 28, 2021
হামি আর কি কমু বাপু হামার বাপ তো বাপ তার দাদা নাকি তার দাদার দাদা যিনি হামার গাওত জমিদার আছিলো হে ও এই কেচ্ছার রিভিউ লিখবার পারবু না।

আমার শুধু খারাপ লাগে বৈকুণ্ঠের জন্য।হঠাৎ করে আমাকেই যেন গাল দেয়া হয় বেন্যার বাচ্চা এবং মালাউন বলে।যার ফলে আমার মধ্যে জন্ম নেয় যে ক্রোধ তা কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানে শারাফত মন্ডলের ইটের ভাটায় ভারত এবং মানুষ্যত্ব পুড়ে ছাড়খার হবার মতোই জ্বলে আর ছাই হয়ে যায় মানুষকে সভ্য বলে মনে হওয়ার জীর্ণ পান্ডুলিপি।

রাজা যায় রাজা আসে মানুষ তবু বানে ভাসে
বানে ভাসে রাজা হাসে রাজার কি আসে যাবে
আসে যাবে তড়পাবে খোয়াব মুছে যাবে নতুন খোয়াবে
নতুন খোয়াবে কালের স্বভাবে আমাদের দুঃখ কবে মুছে যাবে?
Profile Image for Tania Sultana.
Author 16 books96 followers
March 16, 2020
বেশ কিছু বই আগেই পড়া হয়েছে। কিন্তু স্মৃতির পাতা হাতড়ে সেগুলোর সব মনে করা সম্ভব নয়। যা মনে আছে, যা আগামীতে পড়বো... সেগুলো নিয়ে এক- দুটো বাক্য টুকে রাখার ইচ্ছে হচ্ছে। আমি কেবল সেসব বই নিয়েই লিখবো যেগুলো আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
'খোয়াবনামা' দিয়েই এই যাত্রা শুরু করা যাক। ইলিয়াস আমার প্রিয় লেখকদের একজন। এটি তাঁর অনন্য সাধারণ এক সৃষ্টি।
Profile Image for NH Shoikot.
31 reviews8 followers
April 26, 2021
ভাষাগত জটিলতা না থাকলে উপন্যাসটা আরো আনন্দময় হতো।
Profile Image for Rehana.
223 reviews4 followers
February 8, 2025
This book took me an excruciatingly long time—over two months and a half—to complete, but it was totally worth it. I sneaked in a few pages during breaks, managed some reading time after work, and religiously carried it around until I flipped that last page to a close. Although only 550 pages long, it is dense with characters and content and is one of the most complex stories ever told with such lyricism, power, and poignancy.

The story is set in the pre-partition era when Bangladesh was still a part of India on the Tebhaga movement that created ripples in the country. The sharecroppers who cultivated their Jomidars and Jotedars’ lands, who were indirectly working for the British, were ripped off their benefits and mistreated. The sharecroppers' revolt against these influential people came as an uprising demanding the formation of Pakistan, who believed that the caste system would be eliminated soon after.

Tamiz, the son of a humble fisherman who took up farming on his own, resisted those who tried to suppress his family. His resistance continued to be the voice of all those who were oppressed until the end. Meanwhile, his father and stepmother, who inherited his maternal grandfather, Cherag Ali’s power to decipher dreams and predict the future, were left vulnerable when his book, Khwabnama, kept switching hands from one person to another.

This book started as a harmless tale set across generations. However, the theme gradually intensified, exploring the class-based discrimination that demanded lives in the 1940s. The book’s exploration of caste politics and power dynamics on the Indian partition was eye-opening. There were elements of magical realism blurring the line between reality, dreams, and the future, but it was one of the best things about the book.

I cannot imagine how one could have translated such rich prose and tale without an error and diverting the readers. Truly, it is one of the greatest novels that could have ever been written and translated. The ending was open for the reader’s interpretation and furiously satisfying. I don’t have an ounce of regret for spending a ridiculous amount of time on this book. I would do it all over again if I could. In short, Khwabnama (A Scroll of Dreams) is a masterpiece in the world of literature and translation.
Profile Image for Rakibul Dolon.
167 reviews24 followers
January 13, 2025
খোয়াবনামায় কোনো স্বপ্নের ব্যাখ্যা নেই। আছে মাঝি-চাষীদের জীবন ও যুদ্ধ। আরও আছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, দেশ ভাগ, গ্রামীণ পরিবেশে দাপটের লড়াই, অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, কাম, আর অতিপ্রাকৃত কিছু বিশ্বাস।
খোয়াবনামা মনে দাগ কেটে গেল। সবার পড়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।
Profile Image for S M Shahrukh.
127 reviews67 followers
July 1, 2017
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের 'খোয়াবনামা' উপন্যাসটা শেষ করতে বেশ কিছুদিন লেগে গেলো। চল্লিশ দশকের গ্রামবাংলা এর দৃশ্যপট- দুর্ভিক্ষ, আধিয়ার বিদ্রোহ ঘণীভুত হয়ে কৃষকের জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা, যুদ্ধের বাজারে কাজের অভাব, বীজ কেনার অক্ষমতা, পানির দামে জোতদার-সুদখোরের কাছে হালের গরু বা জমি বেচা- চারদিকে ক্ষুধা। উপন্যাসের মূল নায়কের কোন নাম নেই - তমিজের বাপ। সে যেন এক প্রেতাত্মা, বর্তমানে থেকেও অতীত আর ভবিষ্যতে অবাধ বিচরণ তার। রাতের পর রাত সে ্খুঁজে বেড়ায় পাকুড় গাছের মুনসিকে। সারা উপন্যাসে ইলিয়াস এই মিথ (Myth)-এর ব্যবহার করে এসেছেন। সেই ইংরেজের সঙ্গে অষ্টাদশ শতকে লড়াই করা ফকির মজনু শাহ- ভবানী সন্ন্যাসির পাঠান সেনাপতি এই মুনসি। সারা উপন্যাসে সেই মুনসির লেজেন্ড ছেয়ে আছে। বিদ্রোহের স্পিরিট যেন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এই লেজেন্ড থেকে।

তমিজ আবার রক্ত মাংশের মানুষ- সে মাঝি গোত্রের হয়েও চায় স্বার্থক চাষা হতে। সারা উপন্যাসে সে বিদ্রোহের এক অটল চরিত্র। তেভাগা অঞ্চল থেকে এসে সে এক ফালি জমির বর্গা-চাষের সুযোগ পায়। মাঝির ছেলে চাষ করবে শুনে প্রথমে খেপে ওঠে মালিকের ভৃত্যসম বর্গাচাষী হুরমতুল্লাহ কিন্তু সেই হুরমতুল্লাহই তাকে চাষে উৎসাহ দেয়, কিছুটা বিরক্ত হয়ে। তার নিজস্ব স্টাইলে তমিজকে উপদেশ দেয়, “হাত দিয়া মাটি ছানা হয় না। জমি চায় নাঙলের ফলা, বুঝলু? জমি হলো শালার মাগীমানুষের অধম, শালী বড়ো লটিমাগী রে, ছিনালের একশ্যাষ। নাঙলের চোদন না খালে মাগীর সুখ হয় না। হাত দিয়া তুই উগলান কি করিস’? বলতে বলতে হুরমতুল্লা গম্ভীর হয়ে যায় এবং কাশির দমক অগ্রাহ্য করে সে জানায়, হাত দিয়ে ছানলে রোদ একটু চড়া হলেই মাটি শক্ত হয়ে যায়। ভেতরে শক্ত হলে সেই মাটিতে ধানের চারা আরাম পায় না।” মাটির ছোঁয়ায় তমিজের শরীর জেগে উঠছে। মাটি-কে ঘিরেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আরেকটু সচ্ছল চাষী হবে সে।

তমিজের বাপের বউ, কুলসুম, যে কিনা আরেক ভবিষ্যত-দ্রষ্টা চেরাগ আলী ফকিরের নাতনী, শ্লোক তার মুখে মুখে। আছে বাস্তববাদি শরাফত মন্ডল যার পূর্বসূরীরা হিন্দু জমিদারের নায়েবদের হাতে নিগৃত হয়েছে বারবার, সে নিজে এখন একজন জোতদার। তার দুই ছেলেদের একজন সরকারী করণিক শ্রেনিতে, আরেকটা মুসলিম লীগের রাজনীতিতে। আছে লোভাতুর কালাম মাঝি যে জোতদার হতে উঠে পড়ে লেগেছে। কাৎলাহারের বিল মাঝিদের নামে মুক্ত করেও সে চায় বিল থেকে খাজনা। তমিজ, তমিজের বাপ তাই সেই বিল উদ্ধারের বিদ্রোহে মত্ত।

তেভাগা আর দেশভাগকে ইলিয়াস আলাদা করে দেখেননি কিন্তু তেভাগার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের মুসলিম লীগের পক্ষে আনা, আর পরে তাদের সাথে চরম বেঈমানি তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। আরো দেখিয়েছেন কীভাবে হিন্দু-মুসলমান বিভেদকে ব্যবহার করে গ্রামের গরীবের মাঝে দ্বন্দ সৃষ্টি করা আর সেই সবের ফসল সেই পুরানো জোতদারদের ঘরে ওঠা। কম্যুনিস্টদের শহুরে মনোভাব নিয়ে শ্রেণি-সংগ্রাম চালানোর চেষ্টা আর তাদের চরম ব্যর্থতাও তিনি তুলে ধরেছেন।

"তেভাগা-দেশভাগের নেপথ্যের উপকথা লিখতে বসে স্মৃতির সঙ্গে বাস্তব, ইতিহাসের সাথে কিংবদন্তী, প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামের পাশাপাশি তাদের পূর্বজদের কথা পরতে পরতে মিশিয়ে দিয়ে ইলিয়াস নির্মাণ করেছেন আশ্চর্য জাদু-আখ্যান। এই কাহিনী ইতিহাস না হয়েও তাই ইতিহাসপাঠের অংশ বটেই।"

চমৎকার magic realism আর stream of consciousness ব্যবহার করে ইলিয়াস সৃষ্টি করেছেন 'খোয়াবনামা'। আমি যৎসামান্যই কিছু সাহিত্য পড়েছি, বাংলা উপন্যাস পড়ার সংখ্যা লজ্জাজনকভাবে কম কিন্তু এমন আরেকটা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা আরো শিক্ষিত মানুষরা বলতে পারবেন। তাঁর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম কিন্তু ‘খোয়াবনামা’ আরো এক ধাপ উপরে।

গ্রামের মানুষের উপর নিপীড়ণ আর তা থেকে তাদের অভাব, বঞ্চনা, আর খিদে- সেই খিদে তমিজের বাপকে রাক্ষসের মত সানকির পর সানকি ভাত খাওয়ায়।

“আশ্চর্য ভাতের গন্ধ রাত্রির-আকাশে
কারা যেন আজো ভাত রাঁধে
ভাত বাড়ে, ভাত খায়।
আর আমরা সারারাত জেগে থাকি
আশ্চর্য ভাতের গন্ধে,
প্রার্থনায়, সারারাত”।

(‘আশ্চর্য ভাতের গন্ধ’, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়)
Profile Image for Alfie Shuvro .
239 reviews58 followers
September 26, 2017
কেনো যেন ভাল লাগে নি খুব একটা। হয়ত দেশ বিভাগ আর তে ভাগা নিয়ে আগে বেশ কয়েকটা বই পড়া হয়েছিল তাই। লেখক যদিও নিজেই লিখেছেন তবুও আগের কোন উপন্যাসে পড়ার কারণে একই কাহিনী গুলো রিপিট হয়েছে তাই হয়ত এরকম লেগেছে। কবিতা গুলো আওসাধারণ ছিল । তবে আঞ্চলিক ভাষার সার্থক প্রয়োগ বেশ দেখার মত।
Displaying 1 - 30 of 96 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.