বিশেষত বোনদের উদ্দেশ্যে লিখা হলেও ছোট্ট এই বইটি সবার জন্যই অনেক উপকারী প্রমাণিত হবে ইন শা আল্লাহ। বোনদের জন্য তাদের যোগ্য ও আদর্শ রোল মডেলদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এরকম কাজ আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত। রোল মডেল সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া ব্যতীত কারো জন্যেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে স্থীর থাকা ও সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া দুষ্কর।
বইয়ের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে নারী সাহাবিদের জীবন থেকে নেয়া অসাধারণ কিছু ঘটনা। যা অনেকটা গল্প আকারে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাগুলো শিক্ষায় যেমন ভরপুর তেমনি পড়তেও সুখকর। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আনুগত্য, কোরবানি, হ্বকের উপর অবিচল থাকার মতো মহৎ সব গুণাবলি। যা যে কারো ঈমানী চেতনা সতেজ করতে সক্ষম ইন শা আল্লাহ। শুধু একটাই অভিযোগ যে বইয়ের সেরা এই অংশটুকু কেন আরও দীর্ঘ হলো না কেন আরও কয়েকটা অধ্যায় যোগ করা হলো না!
বাকি অংশটুকু সাজানো হয়েছে মূলত জীবনের নানান সময়ে বর্তমান যুগের মেয়েদের মনে যেসকল চিন্তাভাবনা সাধারণত ঘুরপাক খেতে থাকে সেগুলো নিয়ে। স্বচ্ছ মনমানসিকতা ও চিন্তাভাবনা গড়ার ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে নানান উপকারী উপদেশ। উত্তম আখলাক গঠন ও নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে খুব সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। যা পাঠ করলে শুধু বোনেরা না সকলেই অনুপ্রাণিত হবেন ইন শা আল্লাহ। অতএব বইয়ের এই অংশটুকুরও প্রচুর গুরুত্ব ও উপকারিতা রয়েছে।
নতুন কোনো বোনকে দ্বীনের পথে আগ্রহী করতে এটি একটি সেরা অপশন হতে পারে। তাছাড়াও প্র্যাক্টিসিংরাও অনেক লাভবান হবেন ইন শা আল্লাহ। এমন সুন্দর একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন। সকল প্রশংসা এই বিশ্বজাহানের একক স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর।
"হে আমার আশা-ভরসা! হে আল্লাহ! উদাসীনতায় অলসতায় ডুবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে আপনার অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকি। জীবনের নতুন একটি পাতা শুরু করতে চাই, যা বরফের মতো সাদা, বৃষ্টির পানির মতো পবিত্র - মানুষের নিঃশ্বাস যাকে নোংরা করেনি।" - আমীন।
ড. হানান লাশিনের এই ছোট্ট বইখানির পরতে পরতে রবের কাছ থেকে অনুগ্রহ পাওয়ার এমন তীব্র আকাঙ্খা ছড়িয়ে আছে। লেখিকার লেখার ধরণটা প্রশংসনীয়। উপদেশ দেয়ার আগে তিনি ঐ উপদেশ সম্পর্কিত ঘটনার অবতারণা করেছেন, কখনো মহীয়সী নারী সাহাবাদের জীবন থেকে তুলে আনা ঘটনা দিয়ে ; কখনো আমাদের চারপাশের অতি সাধারণ কোনো দৃশ্য দিয়ে, এতই সাধারণ যে আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় সেসব কিছু কিংবা এতটাই উদাসীন হয়ে আছি জ্ঞানের অভাবে বা দুনিয়ার ফিতনায় যে তা আর আমাদের নজর কাড়ে না, চিন্তার উদ্রেক ঘটায় না। তাই যে উদ্দেশ্যে ড. হানান লাশিন লিখছেন তা সফল হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় একজন নারী হিসেবে আমাকে আমার রব কিভাবে দেখতে চান।
বইটা ইনশাআল্লাহ আরো পড়া হবে সামনে। নিজের তাগিদেই। কারণ মানুষ ভুলে যায়, তার মাঝে শিথিলতা আসে। প্রতিনিয়ত রিমাইন্ডার তার প্রয়োজন। এমন বই নিজে পড়ার পর মনে হবে অন্য কোনো বোনকে দেই পড়তে, ইচ্ছে করবে কাউকে উপহার হিসেবেই দিয়ে দেই। একটাই শুধু অনুযোগ এই বই নিয়ে, নারী সাহাবিদের আলোচনা আরো দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত ছিল। বইটাই আরো খানিক পুরু হলে ক্ষতি কি ছিল?
নিঃসন্দেহে নবি-রাসূলদের পর যাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন সাহাবীগণ। তাদের মতো হতে পারলে আমাদের জীবনটা কতই না সুন্দর হতো!!!
বইটা লেখা হয়েছে নারী সাহাবিদের নিয়ে। এটাকে তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর একটা ছোট-খাটো সংকলন বলা যেতে পারে। এখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। তাদের জীবন-যাপন, মন-মানসিকতার সাথে তুলনা করলে আমরা অনেক অনেক নিচে অবস্থান করছি। তাঁরা আল্লাহকে ভালোবেসেছিলেন। আর এজন্যই মানুষের জীবন যতটা সুন্দর হতে পারে আল্লাহ তার সবটুকুই তাদেরকে উপভোগ করতে দিয়েছেন। না, অর্থ-সম্পদ দিয়ে নয়, তাঁরা তাদের জীবনকে উপভোগ করেছিলেন আল্লাহর রহমত দিয়ে। দুনিয়ায় থেকেই তাঁরা কিনে নিয়েছিলেন জান্নাতকে। রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।
পড়ে বেশ ভালো লাগলো। বইটা যত্ন করে রেখে দিচ্ছি। একজনকে উপহার দেয়ার জন্য।
জীবন থেকে একেকটা দিন ফুরিয়ে যায়। রেখে যায় শুধু তারিখের সংখ্যা। মাঝে মাঝে ফিরে তাকিয়ে হিসেব করি—কতটা বছর পার হলো, আর কতটাই-বা বাকি আছে! মুহূর্তরা আসে-যায়—কখনো আনন্দের মোড়কে, কখনো আফসোসের ভার নিয়ে। এভাবেই সময় গড়িয়ে যায়। নিস্তরঙ্গ জীবনে কখনো আবেগের জোয়ার এসে ভাসিয়ে দেয়। তখন মনে হয়, ‘হায়, যদি সাহাবিদের যুগে জন্মাতাম!’
অবশ্য তা আর সম্ভব নয়। তবু সেই আকাঙ্ক্ষা মনের ভেতর জিইয়ে রাখতে, আমি ঘুরে বেড়াই সিরাতের পাতায় পাতায়। আগস্টের শুরুতেই পড়েছিলাম ‘তারা ঝলমল’—সাহাবিদের জীবনী নিয়ে লেখা বই। সেই থেকে মনটা আরও আকুল হয়ে উঠলো তাদের জীবন জানার জন্য। সংগ্রহে থাকা বইয়ের ভীড়ে খোঁজ করতে গিয়ে হাতে পেলাম ড. হানান লাশিনের লেখা ‘জীবন যদি হতো নারী সাহাবির মতো’। ছোট্ট বই, এক বসাতেই শেষ করা যায়। আমি পড়েছিলাম দুই বসাতে, কিন্তু শেষ করতে চাইছিলাম না—কারণ বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা হৃদয়ে এমন দোলা দিচ্ছিল, মনে বলছিলো পড়লেই তো শেষ !
বইটি আসলে ছোট ছোট গল্পাকারে সাজানো, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বেশ কয়েকজন নারী সাহাবির জীবন থেকে নির্বাচিত অংশ। যেমন—আসমা বিনতে আবি বকর (রাযি.), উম্মু কুলসুম বিনতে উকবা (রাযি.), ফাতিমা (রাযি.) ও আরও অনেকে। প্রতিটি গল্পে ফুটে উঠেছে তাদের সাহস, ত্যাগ ও ইসলামের পথে অবদান। নারী সাহাবিদের জীবনের মহিমান্বিত দিকগুলোকে সহজ ও হৃদয়গ্রাহীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
যদিও বইটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী নয়, তবে একে বলা যায় একটি ‘গদ্যের সারাংশ’—যা পাঠকের হৃদয়ে নারী সাহাবিদের জীবন সম্পর্কে জানার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলবে। ____________________________ বই : জীবন যদি হতো নারী সাহাবির মতো লেখক: ড. হানান লাশিন অনুবাদক: আব্দুল্লাহ মজুমদার বিষয়: মহীয়সী নারী জীবনী প্রকাশনী: সমকালীন প্রকাশন কভার: পেপারব্যাক পৃষ্ঠা: ১২০ মুদ্রিত মূল্য: ১৮৬ টাকা রেটিং: ⭐ ⭐ ⭐ ⭐ ⭐/৫
তুমিও হয়ে ওঠো একজন নারী সাহাবির মতো। এ পথে চলতে গিয়ে অসাধারণ যে অনুভূতি তোমার হবে তা উপভোগ করো। ঈমানের স্বাদ, আনুগত্যের মজা থেকে অঞ্জলি ভরে নাও। জীবনপথে সুখ-সৌভাগ্যের বাজারটা অতিক্রম করো। আর শেষ কথা হলো, কখনো সৎসঙ্গ ত্যাগ করবে না, যাদের সাথেই থাকবে; তোমার মুক্তি সে পথেই হবে।🌸
---শীতের জলময়ী রোদে বসে বই পড়ায় আলাদা এক শান্তি।বর্ণমালার দিনগুলা আসলেই সুন্দর,প্রশান্তিময়🌸