Jump to ratings and reviews
Rate this book

সিনেমাপাড়া দিয়ে ১ম খণ্ড

Rate this book

408 pages, Hardcover

First published April 1, 2021

6 people are currently reading
106 people want to read

About the author

Tarun Majumdar

6 books4 followers
তরুণ মজুমদারের জন্ম বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়, ৮ জানুয়ারি ১৯৩১। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত "চাওয়া পাওয়া" সিনেমা পরিচালনার মধ্যে দিয়ে ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন তরুণ মজুমদার। এরপর একের পর এক বাণিজ্যসফল ছবি তৈরির মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন অর্জন করেছেন। তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত ছবির মধ্যে কয়েকটি হলো : সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ইত্যাদি।
শেষ জীবনে লেখালিখি শুরু করেছিলেন। "সিনেমাপাড়া দিয়ে" নামের আত্মজীবনী লিখে সর্বস্তরের পাঠকের প্রশংসা লাভ করেছেন। মৃত্যুর ঠিক আগে শেষ করেছিলেন তাঁর একমাত্র উপন্যাস "ঘরের বাইরে ঘর"। মৃত্যু - ৪ জুলাই ২০২২ কলকাতায়।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
29 (76%)
4 stars
8 (21%)
3 stars
1 (2%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 11 of 11 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,650 reviews418 followers
June 2, 2023
"সিনেমাপাড়া দিয়ে" প্রথম খণ্ড পড়ে মুগ্ধ হলাম। তরুণ মজুমদারের কলমে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ তার রূপ রস গন্ধসহ আবির্ভূত হয়েছে। কতো শতো গল্প, কতো শতো নাটক একেকটা সিনেমার পেছনে! তরুণ মজুমদার নিজের চাইতে তার আশেপাশের মানুষের গল্প করেছেন বেশি। নিজের সাফল্যের গল্প করেছেন, তবে সংক্ষেপে। বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন সিনেমার সার্বিক পরিবেশ, সিনেমা বানানোর কলাকৌশল, কিংবদন্তির নায়ক নায়িকা, পর্দার আড়ালে থাকা কলাকুশলী, সিনেমা তৈরির ক্লান্তিকর অথচ জমজমাট গল্প, বহু মানুষের নিঃস্বার্থ সহযোগিতা, উত্থান পতন আর ভালোবাসার মানবিক ও মধুর এক উপাখ্যান। পরের খণ্ড পড়ার জন্য তর সইছে না।

(আরেকটা লাভ হোলো। বেশকিছু পুরনো উল্লেখযোগ্য সিনেমার নাম পেলাম। একে একে দেখে ফেলবো ভাবছি।)
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
August 16, 2025
তরুণ মজুমদারের ভাষায় বলি, রোমাঞ্চ কথাটা গল্প উপন্যাসে পড়েছি। 'রোমাঞ্চিত হওয়া। আসলে সে বস্তুটা কী, আজ আবিষ্কার করলাম। সিনেমাপাড়া দিয়ে ১ম খন্ড পড়তে পড়তে... পাতায় পাতায় বিখ্যাত সব মুভি, বিখ্যাত সব গান সৃষ্টির পিছনের গল্প। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দ্যাখ... কাকে ছেড়ে কাকে দেখি!

জোস! জোওওওওওস। পাতার পর পাতা কেবল মুগ্ধতাই ছড়িয়ে গেছে বইটা। এম্নিতেই আমার এরকম স্টাইলের বই পছন্দ। খানিকটা আত্মজীবনী, অনেকখানি আশেপাশের ঘটনাপ্রবাহ... এ টাইপ বইয়ে আসলে নায়ক হয়ে উঠে 'সময়'। বইয়ের পাতায় পাতায় কত্ত যে রেফারেন্স!! উফফ ❤️❤️❤️

উত্তম-সুচিত্রার চাওয়া-পাওয়া দেখেছি, দেখছি দাদার কীর্তি, বালিকা বধূ এইসব মুভিও। আলো দেখিনি কিন্তু প্রচুর খন্ড খন্ড ক্লিপ দেখেছি। তরুণ মজুমদারের মুভিতে ব্যবহৃত হওয়া অনেক গান শুনেছি, বিশেষ করে দেবকীকুমার বসুর পরিচালিত 'পথিক' মুভির কালজয়ী সেই বিজ্ঞাপনের কথা তো আরও কতো কতো জায়গায় পড়েছি!! শুধু জানতাম না কিংবা চিনতাম না ওই মানুষটাকে। সিনেমাপাড়া দিয়ে ১ম খন্ড পড়তে পড়তে এই মানুষটাকেও যেন অনেকখানি চেনা হয়ে গেল। অসম্ভব গুণী আর বিনয়ী এই মানুষটি। নিজের যেটুক কথা না বললেই নয় বিনয়ের সাথে সামান্যভাবে বলে জাহির করেছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশেপাশের মানুষগুলোকে। যেন তারা না থাকলে এই সফলতা আসতোই না! ভাবা যায়?? এবারে ২য় খন্ড পড়ার পালা।

মাস্টরিড এবং ফিল গুড টাইপের একটা বই। ❤️❤️❤️❤️





বি.দ্র. হারুন ভাই, সত্যিই কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা জানা নেই।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
July 28, 2023
চমৎকার একটা বই! ইংরেজিতে যাকে বলে "wholesome"
তরুণ মজুমদার একজন স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। একদম ছোটবেলা থেকেই যার সিনেমার প্রতি দুর্নিবার আগ্রহ। সেই আগ্রহের জোরেই ঢুকে পড়েন সিনেমাপাড়ায়। শুরুটা মোটেই সুখকর ছিলো না বৈকি। তবে ওই যে আগ্রহ, তার বদৌলতেই শত বাধা সত্ত্বেও উপায় মিলেই যায় একটা। শ্যুটিং স্পটে ঘুরাঘুরি আর ছোটোখাটো কাজের ভীড়ে মাঝেমধ্যেই নিজেদের হাতে সিনেমা করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কালজয়ী নায়ক ও উত্তম-সুচিত্রার কাছ থেকে যখন সিনেমা বানানোর উৎসাহ ও সহযোগীতা পান তখন আর বসে থাকতে পারেননি। আঁটসাঁট বেধে নেমে পড়েছিলেন তারা তিন বন্ধু। নাম দিয়েছিলেন "যাত্রিক"। সেই যাত্রিকের গড়া ও ভাঙার গল্প আদ্র হৃদয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি। তার চেয়েও সুন্দর বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন মানুষের স্নেহের দানস্বরূপ আচরণের। একেকটা গল্প পড়তে পড়তে তাদেরকে ভালোবেসে ফেলি আমরা। ভালোবেসে ফেলি সিনেমাপাড়ার গল্প।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,864 followers
August 23, 2022
বই নয়, এ এক মিছিল— ঘটনার, চরিত্রের, অনুভূতির। তা থেকে উত্থিত গুঞ্জন যেন বহু-বহু দশকের ওপার থেকেও আমাদের চোখের পাশাপাশি কানে আর মনেও ধাক্কা মারে।
নাহ্‌, ভুল বললাম। এ আসলে এক সমুদ্র। ঢেউয়ের মতো করে পাঠকের মনে তা আছড়ে ফেলে একের পর এক দৃশ্য, সেই দৃশ্যেরা মনের বালিতে এঁকে দেয় কারুকাজ বা ক্ষত, পরক্ষণেই আসে নতুন ঢেউ— নতুন দৃশ্য। মন প্রথমটা হাবুডুবু খায় সেই দৃশ্যদের ভিড়ে। দুঃখ ও আনন্দ, প্রাপ্তি ও হতাশা, বিস্ময় এবং কৌতুক, অমৃত আর গরল... সব নিয়ে একটু-একটু করে আমাদেরও যেন গ্রাস করে সিনেমাপাড়া।
তারপর আমরা আবিষ্কার করি, ওইসব অলি-গলি দিয়ে হেঁটে, 'কাট্‌!' আর 'লাইটস্‌!'-এর মাঝের সময়টাতে কখন যেন আমরাও হয়ে উঠেছি এক চরিত্র। সময়ের সমুদ্রে আমরাও সাঁতার কাটছি আর দেখছি, কীভাবে "কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়।"
আমাদের হাতটাকে ধরে রেখেছেন, স্বয়ং তরুণ মজুমদার!
Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
November 19, 2025
তপন মজুমদারের স্মৃতিকথা সিনেমার মতই টানটান; সবসময় একটা উত্তেজনা যে কি হয় কি হয়! আত্মজীবনী না বলে স্মৃতিকথা বলছি কারণ নিজের চেয়ে তিনি তাঁর দেখা, বা যাদের সাথে কাজ করেছেন তাদের কথা বলেছেন অনেক বেশি, আর সেটার মাঝে কোন তিক্ততা বা সমালোচনা নেই বললেই চলে। পুরো প্রথম খণ্ডটাই মনে হয়েছে যেন তার পরিচালক হওয়া বা সিনেমা বানানোর পেছনে যাদের ন্যূনতম অবদানও আছে তাদের সকলের প্রতি এক ধরণের শ্রদ্ধাঞ্জলী, সে নায়িকা কাননবালা বা সুচিত্রা সেন কিংবা মহানায়ক উত্তমকুমার অথবা ছবি বিশ্বাসের মত কিংবদন্তী হোন, অথবা সিনেমার নাম না জানা টেকনিশিয়ান হোন। তিক্ততা হয়তো অনেকই ছিল, কিন্তু শুধু সামান্য ইশারা দিয়েই সেখান থেকে সরে গেছেন। মনটাকে অনেক অনেক বড় করতে না পারলে এই কাজ সম্ভব নয়; সেজন্য তাঁর প্রতি আমারও শ্রদ্ধা থাকলো।
তপন মজুমদার সত্যজিত রায়ের মত ঘোর সাংস্কৃতিক পরিবার থেকে আসেননি, বা ঋত্বিকের মত পাগলা জিনিয়াসও সম্ভবত ছিলেন না, বরং তাঁর লেখা পড়লে মনে হয় তিনি একেবারে প্রোডাকশন সহকারী থেকে ধাপে ধাপে কাজ শিখে পরিচালক হয়েছেন। এমন লোকজন অনেকেই ব্যাপক হামবড়া হয়, কিন্তু তাঁর লেখায় বারবারই নিজের একদম শেকড় থেকে উঠে আসার পথটা তুলে ধরেছেন, আর সেই সাথে কৃতজ্ঞতা। প্রথম খণ্ডে তাঁর প্রথম দিকের কয়েকটা সিনেমা বানানোর গল্প আছে, বম্বে থেকে ডাক পাওয়ার কাহিনী আছে, সেগুলোও একেকবারে উত্তেজনাপূর্ণ সামাজিক ড্রামা যাকে বলে। যদিও সিনেমা বানানোর কাহিনী যতটা এসেছে, তার পেছনের চিন্তাভবানা ততটা আসেনি, এলে ভাল হতো। খুঁত বলতে এটুকুই। ২ খণ্ডের দাম যথেষ্টই বেশি; ১ বছর লেগেছে কেনার টাকা হাতে জমতে। কিন্তু বিষ্যুৎবার রাতে ধরে শনিবার দুপুরের মাঝে ৪০০ পৃষ্ঠার বেশি বইটা একেবারে শেষ করে মনে হলো, এতদিন অপেক্ষা করা সার্থক। সিনেমা-আত্মজীবনী-স্মৃতিকথা, যেটাতেই আগ্রহ থাকুক আপনার, কিনলে ঠকবেন না।
Profile Image for Indranil Mukherjee.
4 reviews1 follower
January 10, 2022
বাংলা স্বর্ণযুগের সিনেমা পর্যায়ে , যাঁকে বলা যেতে পারে -The last of the Mohicans -- সেই তরুণ মজুমদার লিখিত দুইখন্ড বিস্তৃত সুবৃহৎ, সার্থক ইলাস্ট্রেসনসহ স্মৃতিকথা -- ‘ সিনেমা পাড়া দিয়ে’ । বইটি পাঠকমহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে এবং প্রশংসিতও হয়েছে ; অন্তত ডজনখানেক রিভিউ বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে । বইটি কিন্তু ঠিক তনুবাবুর আত্মজীবনী নয় , বরং বলা যেতে পারে দীর্ঘ চলচ্চিত্র-জীবনে টালিগঞ্জ এবং কিঞ্চিৎ মুম্বাই ফিল্ম জগতে তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার স্মৃতির সরণি বেয়ে চলা এক আখ্যান ।

লেখক বইতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন , শৈশব , বড় হওয়া , শিক্ষা-জীবন , পরিবার নিয়ে আত্মকথা সযত্নে পরিহার করেছেন । ১৯৫১ সালে অর্ধেন্দু মুখার্জির ছায়াছবি সংকেতের সেটে চলচ্চিত্র জগতে প্রথম পদার্পণ থেকে ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই মহানায়কের প্রয়াণ দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ ত্রিশ বছরের জানা-অজানা সিনেমাপাড়ার অজস্র গল্পের ঝাঁপি পাঠকের কাছে খুলে দিয়েছেন । পরিচালক তরুণ মজুমদার ইতিপূর্বেই পত্র-পত্রিকাতে বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে লেখক হিসেবে পরিচিত। ঝরঝরে বাংলায় তাঁর নিখুঁত স্মৃতিকথা যেকোনো পাঠকের মনকে টানবেই ; বিশেষত প্রথম খন্ডে পঙ্কজ মল্লিক, কানন দেবী, উত্তম-সুচিত্রা, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, ছবি বিশ্বাস, প্রেমেন্দ্র মিত্র , ভি শান্তারাম , অনুভা গুপ্ত , হেমন্ত মুখার্জী ,অনুপ কুমার -- এরকম অজস্র মানুষকে জড়িয়ে যে ঘটনার বিবরণ গল্পাকারে তুলে ধরেছেন, তাকে সময় সময় রীতিমতো প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যশ্রেণীভুক্ত বলা যেতেই পারে । স্মৃতিটুকু থাক ছবির সেটে সুচিত্রা সেনের , অসিতবরনকে সর্বসমক্ষে অপমান করার পর, লেখকের সাথে ম্যাডাম সেনের কথা কাটাকাটি এবং যার ফলশ্রুতিতে ছবি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম – এর বর্ণনার পরতে পরতে যেন কথাসাহিত্যের সুললিত ছন্দ। বাংলা ভাষায় চিত্রপরিচালকদের স্মৃতিকথার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর পাঁচালী’ আর মধু বসুর লেখা ‘আমার জীবন’ ছাড়া সেরকম উল্লেখযোগ্য আর কোন বই দেখিনা । মৃণাল সেন এবং তপন সিংহ দুজনেরই দুটো স্মৃতিকথা আছে তবে সে দুটি বইই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার সমাহার । তরুণবাবুর বইতে যেমন সিনেমার বাইরের অনেক ঘটনার বিবরণ আছে, সেই সঙ্গে তাঁর উল্লেখযোগ্য ফিল্মমেকিংএর গল্পগুলোও পাঠককে শুনিয়েছেন ।

শিল্পী রঞ্জন দত্তের আঁকা ছবির সাথে ঘটনার বিবরণ , সময় সময় উপন্যাসকেও হার মানিয়েছে। ইলাস্ট্রেশনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলচ্চিত্র জগতের মানুষগুলোর যথার্থ মুখাবয়ব তুলে ধরেছে । তবে, লেখকের লেখনী খুব সাবধানে সমস্ত রকম বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রেখেছে , ফলে স্মৃতিকথাতে তিনি শুধু তাঁর চারপাশের মানুষের ভালো কথাগুলোই বলেছেন। রুপোলি পর্দার জগতের বিভিন্ন মানুষের সাথে তাঁর চলার পথের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে খুব সাবধানে যখনই কিছু বিতর্কিত ঘটনা এসেছে, সে ক্ষেত্রে পাত্রপাত্রীর নামটি হয় বদলে দিয়েছেন নতুবা উহ্য রেখেছেন । তাই লেখক অভিনেত্রী দীপ্তি রায়কে কিম্বা চাওয়া পাওয়া ছবিতে অভিনেতা জীবেন বসুকে কাল্পনিক নামে ডেকেছেন । ঠিক সেইরকমই বনফুলের অগ্নীশ্বর উপন্যাসের স্বত্ব কেনার পরেও , আলোর পিপাসা ছবিটি ম্যাডাম সেনের সাথে মনোমালিন্যে আর করতে না পারার গল্পটিও শুনিয়েছেন কিন্তু সেই বিরোধের অনুঘটক যিনি , সেই ম্যাডাম নির্বাচিত ছবিটির ফাইনান্সার, মেগাফোনের কমল ঘোষের প্রসঙ্গ আনলেও যথারীতি নামটি উহ্য রেখে দিয়েছেন । অবশ্য আপনারা সবাই জানেন যে পরবর্তীকালে সন্ধ্যা রায় এই ছবির নায়িকা হিসাবে আসেন । সহ পরিচালক দিলীপ মুখার্জি এবং শচীন মুখার্জির সাথে একসাথে যাত্রিক গোষ্ঠীর চাওয়া পাওয়া ছবি দিয়ে পথচলা শুরু এবং পলাতকের পরই তার ছন্দপতন , যার পিছনে তিন বন্ধুর বৌদ্ধিক ভাবনাচিন্তার পার্থক্যই হয়ত দূরত্ব সৃষ্টির কারণ। কিন্তু সেই বিচ্ছেদের শীতলতাকে লেখক বর্ণনা করেছেন মার্জিত ভাবে ; অহেতুক আমি আমি ভাবকে দূরে সরিয়ে রেখে। লেখক শুধু একবারই স্টেপ আউট করে অকপটে নিজের ভালো না লাগার কথা জানিয়েছেন এবং সম্পূর্ন একটি পরিচ্ছদ তার জন্য ব্যয় করেছেন । সেটি হল নব্বুই দশকের সুমন চট্টোপাধ্যায় এবং নচিকেতার জীবনমুখী গানের প্রতি তাঁর কিঞ্চিৎ অপছন্দের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন।

তবে একটি বিষয়ে লেখক পাঠকদের বঞ্চিত করেছেন বলে আমার ব্যক্তিগত ধারনা । পরিচালক তরুণ মজুমদারের চলচ্চিত্র সৃষ্টির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি সমগ্র বইদুটিতে মানুষ সন্ধ্যা রায় তথা শিল্পী সন্ধ্যা রায় সম্পূর্ণভাবে ব্রাত্য । রাজেন তরফদার পরিচালিত পালঙ্ক ছবির বাংলাদেশ আউটডোরের বিবরণের সময় , শুধু তাঁর লেখাতে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দিয়েছিলেন শিল্পী সন্ধ্যা রায় আর বাকি বইতে শুধুমাত্র বিভিন্ন সিনেমার শিল্পীতালিকাতে নায়িকার নামের উল্লেখ হয়েছে মাত্র । আর কোনো জায়গায় আমরা সন্ধ্যা দেবীকে খুঁজে পেলাম না । অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বোধহয় যথার্থই বলেছিলেন আত্মজীবনী লিখতে চান না কারণ লিখতে গেলে সব সত্যি কথা বলা যাবে না । সন্ধ্যা রায় শুধু তাঁর ছায়াছবির ধারাবাহিক নায়িকা ছিলেন না, তরুণবাবুর চলচ্চিত্র জীবনের সাফল্যের পিছনে ছিল তাঁর সুবিশাল ভূমিকা । তরুনবাবু গ্রামবাংলার পটভূমিতে নির্মিত সিনেমার জন্য খুঁজে খুঁজে প্রায় অগম্য , দৃষ্টিনন্দন ভার্জিন লোকেশনে শুটিং করতেন। সেই সব চূড়ান্ত গন্ডগ্রামের লোকেশনে যে কৃচ্ছ্রসাধন করে শুটিং করতে হত, সেখানে আজকালকার কেন, সেই সময়েও সন্ধ্যা রায় ছাড়া অন্য তারকা নায়িকারাও আউটডোর করতেন কিনা সন্দেহ আছে। এখানে উল্লেখ্য, এই বইতে সিনেমার আউটডোর লোকেশন খুঁজে বেড়ানোর গল্প শোনাও এক মিষ্টিমধুর প্রাপ্তি।

যাই হোক সেটুকু বাদ দিয়েও যা আমাদের কাছে লেখক তুলে ধরেছেন সেটাই গোল্ডমাইন । তবে প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে আরেকটু ভালো সম্পাদনা বা গবেষণার কাজ আশা করা গেছিল । কারণ বর্ষিয়ান পরিচালকের সুদীর্ঘ স্মৃতিকথাতে কয়েক জায়গায় কিছু তথ্যগত বিচ্যুতি থেকে গেছে । যেমন ‘ছেলে কার’ ছবির পরিচালক হিসেবে বিকাশ রায়ের নাম বলা হয়েছে বস্তুত ছবিটি চিত্ত বসু পরিচালিত । সেইরকমই পথের পাঁচালীতে হরিহরের কাছে দুর্গার মৃত্যুসংবাদের দৃশ্যে তারসানাই বাদকের নাম দক্ষিণামোহন ঠাকুরের জায়গায় ভিন্ন একটি নামের অবতারণা করা হয়েছে । আরেকটি বিষয়, অসিত বরণ এবং বসন্ত চৌধুরী – এই দুই অভিনেতাকে নিয়ে একই ঘটনার অবতারণা বইটিতে দুবার হয়ে গেছে ; এটাও বইটির চূড়ান্ত সম্পাদনা ক্ষেত্রে একটা গাফিলতি।

একটি ঘটনার বিবরনের ক্ষেত্রে আমার মনে হচ্ছে প্রবীণ পরিচালকের স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তনুবাবু সেইসময় পলাতকের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে ব্যস্ত মুম্বাইতে । সেখানে একদিন বিমল রায় তাঁকে প্রকাশ স্টুডিওতে আড্ডার নিমন্ত্রণ জানান। লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী সেই সময় বিমলবাবু মীনাকুমারিকে নিয়ে বেনজির ছবির শুটিং করছিলেন এবং সেইদিন মীনাকুমারিকে নিয়ে শুটিংয়ের মাঝে কে আসিফের অনুরোধে মুঘল ই আজমের শীশমহলের সেটে আলোকসম্পাতের বিষয়টি নিয়ে উদ্ভুত কারিগরি সমস্যার সমাধান করে আসেন। লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি স্বয়ং সেদিন মোহন স্টুডিওতে বিমলবাবুর সেই বিস্ময়কর প্রতিভ���র স্বাক্ষর দেখতে পান। এখানে ঘটনাক্রমের সঠিক পারম্পর্য রক্ষা হয়নি। কারণ মুঘল ই আজম বহুদিন ধরে নির্মিত হয়ে ১৯৬০এ মুক্তি পায় এবং পলাতক ১৯৬৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। রাজকমল কলামন্দিরে এর পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছিল মোটামুটি সেই বছরেই। বেনজির ছবিটিও ১৯৬৩ তে মুক্তি পেয়েছিল। বিমলবাবুর প্রযোজনাতে কোনো সিনেমাই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণত শুটিং হত না, এমনকি বিনোদ মেহেতার মীনাকুমারির জীবনীতে এই ছবিটি যে দীর্ঘদিন ধরে শুট হয়েছে একথা জানা যায় নি। যেহেতু কে আসিফের ম্যাগনাম ওপাস প্রায় এক দশক ধরে তৈরি হয়েছিল এবং শীশমহলের শুটিং হয়েছিল সম্ভবত পঞ্চাশের দশকের শেষ অর্ধে, তবে নিশ্চই ১৯৬০ এর মধ্যে। সুতরাং আমার ধারণা ঘটনাটি তরুনবাবু নিশ্চয় চর্মচক্ষে দেখেন নি , শুনেছিলেন। আমার আরো মনে হয় , এই ঘটনাটি বেনজির ছবির শুটিং চলাকালীন হয়নি, সম্ভবত মীনাকুমারি-বিমল রায় যুগলের অন্য ছবি ইয়াহুদীর শুটিং চলাকালীন হয়ে থাকতে পারে। অবশ্য এই জাতীয় ছোটখাট ত্রুটবিচ্যুতি, এই সুখপাঠ্য বইটি পড়ে স্মৃতির সাগরে ভেসে বেড়ানোতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ।

বইটির শেষলগ্নে এসে পাঠক জানতে পারছেন উত্তম কুমারকে বীরকৃষ্ণ দাঁ আর উৎপল দত্তকে কাপ্তেনবাবুর ভূমিকাতে ভেবে লেখক টিনের তলোয়ার ছবির পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেই ভাবনার সলিলসমাধি ঘটে যায় মহানায়কের প্রয়াণে । তবে তার চেয়েও দুঃখের ঘটনা, তরুণবাবুর সেই না হওয়া ছবিটির জন্য, পরবর্তিকালে প্রচুর অর্থব্যয়ে যেটির একটি অক্ষম সংস্করন তৈরি হয়েছিল, গল্প ও ছবিটির নাম- বিভূতিভুষণের চাঁদের পাহাড়।
Profile Image for Shantanu.
4 reviews
May 6, 2024
Wonderful reading. It takes you golden days of Bengali literature and cinema. Recommended
Displaying 1 - 11 of 11 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.