স্যার আর্থার কন্যান ডয়াল এবং হারবার্ট জর্জ ওয়েলস ইংরেজি গোয়েন্দা এবং সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যের দুই দিকপাল। স্যার ডয়াল সৃষ্টি করে গেছেন অমর গোয়েন্দা শার্লক হোমস এবং অমর বৈজ্ঞানিক প্রফেসর চ্যালেঞ্জারকে। ওয়েলস তাঁর সুবিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ‘দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন পিয়ারসনস ম্যাগাজিনে ১৮৯৭ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসে— বইটি প্রকাশ পায় ১৮৯৮ সালের জানুয়ারিতে। ১৯০২ সালের জুন মাসে পৃথিবীর খুব কাছে এসেছিল মঙ্গলগ্রহ এবং ওয়েলস কল্পনা করেন সেই সময়েই লালগ্রহের ভয়ংকররা দানবিক আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছিল অভাগা গ্রহ এই পৃথিবীর ওপরে। শৌর্যেবীর্যে জ্ঞানে বিজ্ঞানে অহংকৃত এবং সমুন্নত মানুষ হেরে গিয়েছিল তাদের কাছে— হারেনি কিন্তু তারাই, যাদের চোখে দেখা যায় না— যারা ছড়িয়ে রয়েছে এই পৃথিবীর সর্বত্র— জীবাণুরা। হোমস এবং চ্যালেঞ্জার কিন্তু আগেই জেনেছিলেন পৃথিবীতে হানা দিতে আসছে মঙ্গলগ্রহীরা। তারপর কী কী ঘটেছিল, তা-ই নিয়েই বিস্ময়কর এই রোমাঞ্চ কাহিনি। বিশ্বের বিখ্যাত দুই চরিত্র হোমস এবং চ্যালেঞ্জার বিশ্বের বিখ্যাত কাহিনি ‘দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’-এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন কীভাবে— তা-ই নিয়েই এই চাঞ্চল্যকর এবং লোমহর্ষক উপাখ্যান। ওয়েলস যা কল্পনাও করেননি কিন্তু পরবর্তীকালে ওদেশের বহু সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক যা নিয়ে ভেবেছিলেন এবং ভাবনার বীজ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও চিঠিপত্রে রোপণ করে গিয়েছিলেন, তা-ই নিয়েই রচিত অতিবিচিত্র এবং অতি-অবিশ্বাস্য এই অতি-কাহিনি ছোটবড় সব্বাইকে রুদ্ধশ্বাসে রাখবে প্রথম পংক্তি থেকে শেষ পংক্তি পর্যন্ত।
জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৩২ | কলকাতায় | একটি শিক্ষক পরিবারে ছোট থেকেই অজানার দিকে দুর্নিবার আকর্ষণ | অ্যাডভেঞ্চারের টান জীবনে, চাকরিতে, ব্যবসায়, সাহিত্যে | চোদ্দবার চাকরি বদল | নামী একটি প্রতিষ্ঠানের পারচেস-ম্যানেজার পদে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি চলে আসেন লেখার জগতে | গোয়েন্দাকাহিনী দিয়ে লেখালেখির শুরু | ' রচনারীতি র দিক থেকে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় এর উত্তরসুরী ' - অভিনন্দন জানিয়েছে একটি নামী সাপ্তাহিক | সেরা বিদেশী গোয়েন্দাকাহিনীকে পরিবেশন করেন বাংলায় | বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জগৎ, অতিপ্রাকৃত, অনুবাদ - প্রায় সব ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্বীকৃতি | ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা 'আশ্চর্য'র ছদ্দনামী সম্পাদক | এবং সম্পাদনা করেন 'ফ্যান্টাস্টিক' | সত্যজিত রায়ের সভাপতিত্বে প্রথম 'সায়ান্স ফিকশন সিনে ক্লাব' এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক | পত্রিকা, রেডিও, ফিল্মক্লাবের মাধুঅমে কল্পবিজ্ঞানকে আন্দোলন-আকারে সংগঠিত করেন | একাধিক পুরস্কার | কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান ও পরপর দু-বছর 'দক্ষিণীবার্তা'র শ্রেষ্ঠগল্প পুরস্কার | অনুবাদের ক্ষেত্রে 'সুধীন্দ্রনাথ রাহা'-পুরস্কার | ভালবাসেন: বই | গানবাজনা | দেশভ্রমণ
'ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস' পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন, তাহলে এই বইয়ের মূল কাহিনি আপনার জানা। ইংল্যান্ডের বুকে কীভাবে হামলা চালিয়েছিল মঙ্গলের প্রাণীরা, শেষে কীভাবে তাদের পরাজয় ঘটল অদৃশ্য শত্রুদের আক্রমণে— এটি এই কাহিনিরও হৃৎপিণ্ড। তবে এর মাথা, হাত ও পা হলেন কোনান ডয়েলের দুই অমর সৃষ্টি জর্জ এডোয়ার্ড চ্যালেঞ্জার এবং শার্লক হোমস। তারই সঙ্গে এই কাহিনিতে নানাভাবে এসে মিশেছে ওয়েলসের অন্য গল্পের ভাবনারা। সব মিলিয়ে এই চেনা হয়েও অচেনা গল্পটি হয়ে উঠেছে এক রোমাঞ্চকর পাঠের বিষয়— যা শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। অদ্রীশ বর্ধনের স্বাদু, মাচো অনুবাদে আমরাও দেখলাম নানা মারণাস্ত্রের কেরামতি, দেখলাম ভয়াল নানা দৃশ্য, শেষে দেখলাম মানুষের বিজয়। কল্পবিশ্বের মুদ্রণ ও বাঁধাই চমৎকার। অধ্যায়ের হেডপিস হিসেবে মোটিফের ব্যবহারটিও আমার বেশ ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে একবার পড়ার পক্ষে এটি বেশ ভালো লেখা। পড়ে দেখতে পারেন। সন্ধেটা বেশ কাটবে। অলমিতি।
আর্থার কোনান ডয়েল কর্তৃক সৃষ্ট দুটি চরিত্র - শার্লক হোমস এবং প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের বিভিন্ন কীর্তিকলাপ বিশ্ববন্দিত। তবে কেমন হয় যদি কোন এক অ্যাডভেঞ্চারে এই দুই চরিত্র একসাথে অবতীর্ণ হয়, টু সেভ দ্য ডে? তারই উত্তর খুঁজেছে এই বইয়ের কাহিনি।
এই বইয়ের কাহিনি ম্যানলি ওয়েড ওয়েলম্যান এবং ওয়েড ওয়েলম্যান রচিত "শার্লক হোমস'স ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস" উপন্যাসের ভাবানুবাদ। এইচ.জি ওয়েলস বিরচিত বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস "ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস"-এর কাহিনির ঘটনাক্রমের সঙ্গে এই কাহিনি সরাসরি যুক্ত।
এই বইটির কাহিনি এগিয়েছে মঙ্গলগ্রহ থেকে আগত ভিনগ্রহীদের পৃথিবীতে অবতরণ, আক্রমণ এবং হোমস-চ্যালেঞ্জার জুটির কাছে কিয়দংশে নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে। তথাকথিত এলিয়েন ইনভেশনের দ্বারা পৃথিবীর বুকে ত্রাস সৃষ্টি করার বিষয়টি এতবার এতরকম মিডিয়াতে দেখার বা পড়ার পরেও, এই বইয়ের কাহিনিতে তা পড়তে বেশ থ্রিলিং-ই লাগে। হোমস-চ্যালেঞ্জার জুটির এপিয়ারেন্সের চমক ছাড়া এই ভিনগ্রহীদের ব্যাপারস্যাপারও গল্পের গ্রিপ মোটামুটি শক্ত হাতেই ধরেছে, ব্যাকফায়ার বড় একটা করেনি।
যেসব পাঠকেরা হোমস বা চ্যালেঞ্জারের একজন বা দুজনেরই গুণগ্রাহী, তাঁদের কাছে এই বইটি এককথায় "ট্রিট"। তার সবচেয়ে বড় কারণ দুটি চরিত্রের চেনা বৈশিষ্ট্যগুলি অনেকাংশেই কোনান ডয়েলের মূল রচনার সাপেক্ষে অবিকৃত। এইচ.জি ওয়েলসের "ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস" পড়া না থাকলেও এই বইটি পড়তে সেরকম অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ১৩৪ পাতার এই ছোট্ট পেপারব্যাক বইটি এককভাবে পড়লেও একটি কমপ্লিট স্টোরি আর্ক দিতে সক্ষম, যার অন্তিম কয়েকটি লাইন কল্পনা আর বাস্তবের সীমারেখা আবছা করে দেয়!
শার্লকপ্রেমী, সাই-ফাই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির গুণগ্রাহী পাঠকদের জন্য সুন্দর একটি উপস্থাপনা (যেটির ক্রেডিট অনেকাংশেই অদ্রীশবাবুর স্বাদু অনুবাদের)।